সাদা কাগজ
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Go down
avatar
Trimatra
ধুমকেতু
ধুমকেতু
Posts : 23
স্বর্ণমুদ্রা : 1246
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-05

এক খামখেয়ালির গল্প Empty এক খামখেয়ালির গল্প

Sat Jun 05, 2021 8:18 pm
-পালিয়েই বিয়ে করলি শেষ পর্যন্ত? আমাদের একবার জানাতেও প্রয়োজন মনে করলি না? (বাবা)

--কেন? তোমার বিয়ের সময় তুমি আমায় বলেছিলে? (আমি)

কথাটা বলার পর জিহ্বা ঠিকই কামড়েছিলাম। ওদিকে পিনপতন নিরবতা। বাবা হয়তো এমন প্রত্যুত্তর আশা করেননি আমার থেকে। অর্শার সাথে পালিয়ে এসেছি আজ তিনদিন হলো। প্রথম দু'দিন ভালোই ছিলাম কেননা তখনও বাবা-মায়ের কানে সংবাদটি পৌঁছায়নি। তবে কথায় আছে যে, বাতসেরও কান আছে। তৃতীয় দিবসে বাবা ঠিকই খবর পেয়ে গেলেন আর আমাকে স্মরণ করলেন।

প্রথমত ভেবেছিলেন হয়তো কোথাও বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছি। এটা ভাবা স্বাভাবিক কারণ আমার মধ্যে এই গুণের ঘাটতি ছিলো না। পরে যখন জানতে পারলেন্ আমি বিয়ের পিড়িতে বসে পড়েছি(যদিও বিয়েটা পালিয়ে ছিলো) তখনই কল পেয়ে বসলাম।

বাবাকে এর থেকে ভালো কি জবাব দেবো খুঁজে পাইনি। তবে ওদিকে বাবার স্পষ্ট নিরবতায় এটি বুঝতে পারলাম তিনি আমায় সামনে পেলে চিবিয়ে খেতেও দ্বিধাবোধ করতেন না। ফ্যামিলিতে অর্শার ব্যাপার নিয়ে বলার সাহস পাইনি। তার পিছনে মূল কারণ একটা হতে পারে যে সে অনাথ। ভালো মন্দ বিবেচনা না করেই পালিয়ে এলাম। হয়তো আমার জন্য এটা ভালো হতে পারে তবে বাবার নামডাক যে ডুববে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ডুবলে ডুবুক, এতে আমার চুলও ছেঁড়া হবে না!

অর্শা অবশ্য আমাকে বলেছিলো বাড়িতে জানানোর কথা। তবে খামখেয়ালীপনায় যে আমি ওস্তাদ আছি সেটা হয়তো পরে বুঝতে পেরেছে। প্রিয় মানুষটার সাথে সারা দিনরাত একসাথে থাকতে পারছি এর থেকে ভালো আর কি হতে পারে?

বাবা আর ফোন দেননি। বিকালের দিকে মা ফোন দিয়েই ন্যাকা কান্না শুরু করে দিলেন। উফ এই মা গুলোও না! কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। অবশ্য বলার মতো মুখ থাকলে তো বলতাম। যে সুকীর্তি করেছি এরপরে কথা বলা তো দূর, ফোনই ধরতে সাহস হয়না। বিরক্ত হয়ে কল কেটে দিয়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু পরমূহুর্তে আবারো রিংটোনের শব্দে ফোন সচল হয়ে উঠলো। নির্ঘাত মা-ই দিয়েছে কল। এটা তো আর বাবা নয় যে সামান্য একটু বললেই রাগে আর কথা বলবে না। মা হয়েছিলেন বলেই হাজার অপমান, বকা দেওয়ার পরেও তিনি সন্তানের প্রতি নারাজ হতে পারেন না।

তবে এতো কল আমার কাছে একদমই অসহ্য লাগছে। বিরক্ত হয়ে ফোনটাই সুইচ অফ করে রাখলাম। আপাতত কারো সাথে কথা বলার প্রয়োজন হচ্ছে না। আর যদি পরবর্তীতে দরকার পড়ে তো সিম চেইঞ্জ করে নিলাম, ঝামেলা শেষ।

পাঁচ দিন চলে গেলো..দশদিন, এক পক্ষ, এক মাস...
এর মধ্যে পরিবারের কারো কথা একবারের জন্য হলেও মাথায় আসেনি। একদিন রাতে বাইরে থেকে এসেই চিৎকার করে বললাম, "আম্মু ক্ষুদা লেগেছে খাবার দাও।" ঠিক যেভাবে বাড়িতে থাকতে মাকে বলতাম। টেবিলে বসে দু'খানা খাবার প্লেটের দিকে তাকাতেই খেয়াল হলো যে আমি তো আরো একমাস আগেই পরিবারের মায়া ত্যাগ করেছি।

অর্শা খাবার নিয়ে ঠিকই এলো, কিন্তু তার মুখে অন্যদিনের মতো হাসি দেখতে পেলাম না। খাবার দিয়ে কোনো কথা না বলেই চুপ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়লো। এমনটা আগে কখনো করেনি। একটু খটকা লাগলো ঠিকই তবে আমলে নেইনি। খাওয়া শেষ করে ফ্রেস হয়ে ঘুমানোর জন্য বেডরুমে গিয়ে অর্শার পাশে শুয়ে পড়লাম। তার এমন অদ্ভুত আচরণের পরেও তাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না। একটু পরে বুঝতে পারলাম সে আমার দিকে ঘুরে আমার বুকের উপর হাতটা রাখলো। তারপর নিজে থেকেই বলতে লাগলো..

-চলোনা আমরা বাড়িতে ফিরে যাই। আমারও তো ইচ্ছা করেবাবা-মায়ের সাথে থাকতে।

হঠাৎ কেঁপে উঠে আমি তার হাত আমার বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিলাম। কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।একটা ধমক দিয়ে তাকে ঘুমাতে বললাম। যদিও ধমকটা মন থেকে দেইনি। হয়তো অর্শাও সেটা বুঝেছিলো তবে আর কিছুই বলেনি।

সেই রাতে ঘুমাতে একটু দেরী করে ফেলেছিলাম। মনের ভেতরে কেমন অর্শার বলা কথাটি গেঁথে গিয়েছিলো। হয়তো তারও ইচ্ছা হয় শশুর-শাশুড়ির সাথে একই সংসারে থাকতে। কিন্তু আমার মনে কখনো বাড়িতে ফেরার সাহসের উদ্ভব হয়নি।

দেরী করে ঘুমানোর জন্য ফজরের আজানেও ঘুম ভাঙতে চাইছিলো না। কানের কাছে মৃদু আওয়াজ আসছিলো-

-আমির আজান হয়েছে, উঠে পড়ো। নামাজ পড়ে নাও।

আমি ঘুমের মধ্যেই বলে ফেললাম-

--আম্মু আর পাঁচ মিনিট ঘুমাই।

এরপর হাল্কা ধাক্কার পর চোখ মেলেই অর্শাকে সামনে দেখতে পেলাম। আমি বুঝেছি আমি কি বলেছি। জানিনা মুখ দিয়ে এটা কেন বের হয়ে গেলো। অর্শার মুখে আবারো সেই গম্ভীরতার ছাপ দেখতে পেলাম। তবুও আমার কিছুই করার ছিলো না। কি করতে পারতাম আমি? যে বাবা-মা এর মুখে চুনকালি দিয়ে আমি পালিয়ে আসতে পেরেছি, সেই বাবা-মায়ের সামনে কোন সাহস নিয়ে যাবো?

এমন আচরণ মনের অজান্তেই মাঝে মাঝেই করতে লাগলাম। কি ভেবে আগের সেই পুরোনো সিমকার্ডটি ওপেন করলাম। মিসড কল এলার্ট অন ছিলো। সিম অন হতেই ম্যাসেজ পেলাম। হাজার বারেরও উপরে কল এসেছিলো। আর তাও শুধুমাত্র আম্মুর নম্বর থেকে। এর একটু পরেই কল পেলাম। আর কেউ নয়, আম্মুরই কল ছিলো। হয়তো অপেক্ষায় ছিলো কখন ম্যাসেজ পাবে যে আমার সিম অন করা হয়েছে। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। জানিনা কেন কল ধরতে পারলাম না। কি বলতাম কল রিসিভ করে? আবারো সিম অফ করে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম।

অবসাদগ্রস্ত দেহটি খুব দ্রুতই নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লো। প্রায় সন্ধ্যার দিকে ঘুম ভাঙলো। প্রতিদিন বিকাল হলেই অর্শা ঘুম থেকে ডেকে তুলতো। আজ কিছুদিন হলো নিজের ঘুম নিজেরই ভাঙাতে হচ্ছে। অর্শার মনের মধ্যে কি চলছে তা বুঝতে পারলেও আমার কিছুই করার ছিলো না। রোজ একসাথে বসেই ডিনার করে শুয়ে পড়তাম। এখন সে চুপ করে টেবিলে আমার ভাত বেড়ে রেখে যায়। ঘুমানোর সময় রোজ আমার বুকের উপর হাত রেখে ঘুমাতো। এখন সে অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে থাকে।

পরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি অর্শা দুটো লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার ঘুম ভেঙেছে বুঝতে পেরে সে বলে উঠলো-

-এখানে একটিতে তোমার ও অন্যটিতে আমার সব জামাকাপড় গোছানো আছে। এখন তুমিই সিদ্ধান্ত নাও। যদি মা-বাবার কাছে ফিরে যাও তাহলে দুটি লাগেজই সাথে নিতে পারবে। আর যদি তা না চাও তাহলে তোমার লাগেজ তুমি রেখে দাও; আমি আমারটি নিয়ে যেখানে ইচ্ছা চলে যাচ্ছি।

বুঝতে পেরেছি সে আর এভাবে ডিপ্রেশনের মধ্যে আমাকেও রাখতে চায় না আর নিজেও থাকতে চায় না। তবে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার মুখ আমার ছিলো না। কিন্তু বাধ্য হয়ে অর্শাকে নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হলো।

গ্রামে পা রাখতেই পরিচিত মানুষদের সাথে দেখা হতে লাগলো। কেউ কেউ কিছু সময় তাকিয়ে থেকে পুনরায় নিজের রাস্তা মাপলো। আবার কেউ কেউ এটা বললো যে,"অমুকের ছেলে না? শুনেছি পালিয়ে বিয়ে করেছিলো। এই তার বৌ বুঝি?"

কথাগুলো শুনে মাথা উঁচু করার ক্ষমতা হচ্ছিলো না। ভাবতে লাগলাম এতোদিন বাবা-মা কিভাবে এসব কথা সহ্য করলেন? বাবা হয়তো বদমেজাজি বলে সহ্য করে গেছেন। কিন্তু মা? তিনি কিভাবে পারলেন এতো বড় ধাক্কা সামলাতে? আজ আমার নিজের প্রশ্ন নিজের বিরুদ্ধে।

বাড়িতে ঢোকার পরেই দেখলাম বাবা বের হচ্ছেন। মা-কে দেখলাম বারান্দায় বসে আছেন। বুঝতে পারলাম আমাকে দেখেই তাঁর মনের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়ে গিয়েছে। বাবা আমার দিকে একবার তাকানোর পর মায়ের দিকে তাকালেন। হয়তো চোখের ইশারা দিয়ে এটা বুঝালেন,"এমন কুলাঙ্গার ছেলের প্রতি যেন কোনো দরদ না দেখানো হয়।"

বাবার সামনে দাঁড়ানোর সাহস হলো না। চুপ করে ঘরে ঢুকে পড়লাম। তবে অর্শা ঠিকই বাবা-মা কে সালাম জানায়। আমার সাথে আসেনি। হয়তো বারান্দায় মায়ের সাথেই বসে আছে। বাবা-মা জানে যে সম্পূর্ণ দোষ তাদের ছেলের। আর ছেলের রাগ ছেলে বৌ এর উপর দেখাবে কেন?

ভাইয়া কম্পিউটারে নিজের কাজ করছে। একবার ভয়ে ভয়ে ডাক দিলাম। কিবোর্ডের উপর হাত দুটি চলমান ছিলো। আমার ডাক শুনে সেগুলো কয়েক সেকেন্ডের জন্য থেমে গেলেও ভাইয়া পিছনে ফিরে তাকালো না। হয়তো অভিমান, নাহলে ক্ষোভ, নয়তো রাগ। মন খানিকটা খারাপ হলো। তবে তাদের মন যে প্রায় দু'মাস ধরে আমি খারাপ রেখেছি একথা ভেবে নিজেকেই গলা টিপে হত্যা করতে মন চাইছিলো।

ভাবিকে দেখলাম নিজের রুমে জামাকাপড় স্ত্রী করছে। ডাক দিলাম, একবার ফিরেও তাকালো তবে কোনো কথা বললো না। ভাইয়ার ছোট্ট ছেলেটার জন্যেও এই ক'দিনের মধ্যে আমার একটু কষ্ট হয়নি। ছোট নিষ্পাপ একটা বাচ্চা। আমাকে দেখার সাথেই "কাকু এসেছে, কাকু এসেছে" বলে দৌঁড়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরলো।

বুঝতে পারলাম আমি কতো বড় পাপ করেছিলাম। যে ভাইয়া ভাবি আমায় নিয়ে সবসময় মজা করতো তারাও কথা বলছে না আমার সাথে। আমার ছোট বোন, যে কিনা বাইরে থেকে আসলেই সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলতো,"আগে চকলেট বের কর।" আজ সেও আমায় দেখে চুপচাপ জ্যামিতি করে চলেছে। এবার তার জন্য চকলেট আনতে ভুলিনি। তবে পকেট থেকে আর তা বেরুনোর ক্ষমতা হয়নি।

অর্শার সাথে কিন্তু সবাই অনেক আন্তরিকতার সাথে কথা বলছে। আমার অপরাধের শাস্তি তো আর তাকে দিতে পারে না। তবে জানি যে অর্শার মন এখনো খারাপ কারণ বাড়ির আদরের ছোট ছেলেটাও আজ অবহেলার পাত্র।

সেদিন রাতে চুপচাপ আমার পুরোনো সেই রুমে একা সময় কাটাচ্ছিলাম। অর্শা হয়তো আছে মায়ের কাছে, নয়তো ভাবির কাছে আর নাহলে গল্প করছে ছোট বোনের সাথে। বাবা এশার নামাযের পরে বাড়িতে ফেরেন। সেদিন ঘরে বসেই এশার নামায পড়ে নিয়েছিলাম। তার অনেক সময় পরে দেখলাম ভাতিজা এসে হাত ধরে বলছে,"কাকু চলো, দাদু ডাকছে।"

আমার কলিজা হঠাৎ কেঁপে উঠলো, হার্টবিট বেড়ে উঠলো। বললাম,"তুই যা, আমি পরে আসছি।"
সে বললো,"না এখনই যেতে হবে। না গেলে কান ধরে টেনে নিয়ে যেতে বলেছে।"

অগত্যা আমি তার সাথেই চললাম। দেখলাম সবাই একসাথেই আছে। বাবা ইজি চেয়ারটাতে দোল খাচ্ছেন, মা আর অর্শা বসে আছে খাটের উপর। ভাইয়া-ভাবি আর ছোট বোন সোফায় বসা। সবাই চুপচাপ, জানিনা কি বলার জন্য ডেকেছে। আবার কি বের করে দিবে আমায়? নাকি নাকে খত দেওয়াবে? নাকি বাবার সেই পুরোনো বেত দিয়ে পিটাবে যেটা আমার জন্যই উঠানো ছিলো?

আমি ঠিক পায়ের বুড়ো আঙুল বরাবর তাকিয়ে ছিলাম। হঠাৎ ইজি চেয়ারটার দোল খাওয়ার গতি বেড়ে গেলো। বুঝতে পারলাম বাবা চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন। হয়তো আমার দিকেই আসছেন। হাতে কি সেই বেতটি আছে? নাকি কোনো ভাঙা তক্তা? আমার মনের ভিতরে ভূমিকম্প হচ্ছিলো তবুও একচুল পরিমাণও নড়বার শক্তি ছিলো না।

খেয়াল করলাম আমার পায়ের বুড়ো আঙুলের সামনে অন্য কোনো পা এসে দাঁড়িয়েছে। বাবা-ই হবে। সেটা দেখার জন্য মুখ তুলতেই ঠাস করে মুখের উপর থাপ্পড় পড়লো। জানিনা ডেন্টাল চেকআপ করানো লাগে কিনা। মুখে হাত দিয়ে আবারো মাথা নিচু করে বুড়ো আঙুলের দিকে মনোনিবেশ করলাম। এরপর কানে সেই পুরোনো কর্কশ শব্দগুলো ভেসে আসতে লাগলো-

"হারামজাদা, মেয়েটাকে ভালোবাসতি সেটা আগে বলিসনি কেন? কি দরকার ছিলো পালিয়ে যাওয়ার? আমরা কি মেনে নিতাম না?"

তবে আগের মতো কর্কশ সেই ভাষার মধ্যে রাগ খুঁজে পেলাম না। যা ছিলো সবই অভিমান আর আমার উপর ক্ষোভ। বাবা আবারো বলে উঠলেন-

"আজ রাতে তোর ভাত বন্ধ।"

[Only admins are allowed to see this link]াপ্ত

Amir Afrid II

21.10.2019

Ahmed Chanchal, Hasibul hasan santo, Abul basar, Sk sagor, Sk imran, Raihan khan, Tanusri roi and লেখাটি পছন্দ করেছে

Back to top
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum