- Jalal Uddin Laskar Shaheeনবাগত
- Posts : 3
স্বর্ণমুদ্রা : 1219
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-29
কপালের ফের
Tue Jun 01, 2021 7:37 am
গল্প: ফের
জালাল উদ্দিন লস্কর শাহীন
বিএ পরীক্ষার দুইমাস আগে একদিন সকালে হার্ট অ্যাটাকে বাবা মারা গেলেন শহিদুলের।শহিদুল সেদিন বাড়ীতে ছিল না।লোক মারফত খবর পেয়ে জায়গীর বাড়ী থেকে শহিদুল শুধু কাফনে মোড়ানো তার বাবার লাশটা বরং বলা ভালো মুখটাই একঝলক দেখতে পেয়েছিল।
ফজরের নামাজের ওযু করছিলেন আনিসুল হক-শহীদুলের বাবা,হঠাৎ করেই বুকে তীব্র ব্যথা টের পেলেন।ব্যথার মাত্রা বাড়লো,শরীর ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেলো।তিনি তার মাকে ডাক দিলেনঃ
-মা,মা,আমার কেমন লাগতেছে যেন।তাড়াতাড়ি বাইরে আসো মা।
ততোক্ষণে পুরো বাড়ীতে একটা হইচই।
কান্নাকাটি।আনিসুলকে ঘরের বারান্দায় শুইয়ে দেওয়া হয়েছে।পাখার বাতাস করা হচ্ছে।
-আমার বুকটা জ্বলে যাচ্ছে,বুকটা..নিরবতা!
এর মধ্যেই একজন গিয়ে গ্রামডাক্তার সুরেন্দ্র বিশ্বাসকে নিয়ে এসেছে।যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ যাবতীয় উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে থাকা সেই ৩০/৩২ বছর আগের এমন অজপাড়াগাঁয়ের মানুষের ভরসা সুরেন্দ্র ডাক্তারের মতো দুই-একজন পল্লী চিকিৎসক।
সুরেন্দ্র ডাক্তারী ভঙ্গিমায় স্ট্যাথো দিয়ে আনিসুল সাহেবের বুক পরীক্ষা করলেন,নাড়ী দেখলেন।তাপমাত্রা দেখতে বগলের নিচে থার্মোমিটার ঢুকিয়ে দিলেন।
গুরুতর অপরাধের মামলায় রায় শুনতে উৎসুক ভীত সন্ত্রস্ত আসামিপক্ষের লোকজনদের মতো সমবেত মানুষগুলোও পল্লী চিকিৎসক ডাঃ সুরেন্দ্র বাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।সবার প্রত্যাশা খালাস দেওয়ার ভঙ্গিতে সুরেন্দ্র বাবুও বলুক, না তেমন কিছু না।
গ্রামের সবাই আনিসুল হককে ভালোবাসে।ভালো শিক্ষক।মানুষ হিসাবে আরো ভালো।সবাই দোয়া করছে আল্লাহ যেন আনিসুল হককে সুস্থ করে দেন।
চেহারায় স্পষ্ট বিষন্নতা ডাঃ সুরেন্দ্র বিশ্বাসের।তিনি কেবল একবার নিজের মাথাটা দুইদিকে ঘুরালেন।লোকজন বুঝে গেলো আনিসুল হক আর নেই।কান্নার রোল বড় হতে লাগলো।বাড়ীর উঠোন লোকে লোকারণ্য।
বাড়ী থেকে অন্তত চল্লিশ মাইল দূরের এক কলেজের থার্ড ইয়ারে পড়ে শহিদূল।লজিং থাকে কলেজ থেকে হাঁটাপথে দেড় ঘন্টা দূরের গ্রাম সাতপাড়াতে। সেখানে তিন-চারটা ছোট ছেলেমেয়েকে রাতে একটু পড়াতে হয়।
সেদিন ডিসেম্বর মাসের তিন তারিখ।রোববার।সকালে খাওয়াদাওয়ার পর আস্তে আস্তে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় শহিদুল।অন্যদিন তার সাথে থাকে সহপাঠি ফজল।আজ ফজল নেই।কোনো এক কারনে কলেজে যাবে না।
হাঁটাপথে চলতে চলতে শহিদুল কল্পনার জগতে ঘুরে বেড়াতে থাকে।তার কল্পনজর জগতের সবটা জুড়েই আছে সাবিহা-তার ক্লাশ নাইন পড়ুয়া ছাত্রী। সাবিহাকে ঘিরে শহীদুলের মনে হাজারো রঙিন স্বপ্ন।সাবিহাকে ভালো লাগলেও কোনদিন মুখ ফুটে বলা হয় নি।সাবিহাই প্রথম ছোট্ট চিরকুটে আই লাভ ইউ লিখে তার ভালোবাসার কথা জানান দেয় একদিন।কি মধুর অনুভূতি!
কল্পনার জগতে ঘুরতে ঘুরতে শহীদুল পৌঁছে যায় কলেজ ক্যাম্পাসে।কলেজেও সহপাঠী কিছু মেয়ের সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব।দুএকজনকে একটু অন্যরকম ভালোও লাগে শহীদুলের।একটু পরেই কলেজ যাত্রী ছাউনীর সামনে থেমে থাকা লোকাল বাস থেকে নাজমুলকে নামতে দেখে কিছুটা বিস্মিত হয় শহীদুল! সে কি ভুল দেখছে?এ কি মতিভ্রম তার?নাজমুল কেন আসবে এখানে!
শহীদুলের দিকেই এগিয়ে আসছে নাজমুল।নাজমুলকে দেখে স্বাভাবিক হাসি দিয়েই শহীদুল জানতে চায়,কি খবর?তুমি এখানে কি মনে করে?
নাজমুল শহীদুলকে জানায়,তার বাবা অসুস্থ।শহীদুলকে এক্ষুণি বাড়ী যেতে হবে। শহীদুলের মাথায় এমন আকস্মিক খবরে আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।
এই তো সেইদিনই কেবল শহীদুল বাড়ী থেকে এসেছে।কদিনই বা হয়েছে।বড়জোড় পনের দিন।আসার সময় তার বাবা আনিসুল তাকে বাড়ী থেকে খানিকটা রাস্তা এগিয়ে দিয়েছিলেন।শহীদুলের কানে বাবার শেষ কথাটা বারবার বাজতে থাকে।বাবা সেদিন বলেছিলেনঃ
তোমাকে নিয়ে আমার অনেক আশা।লেখাপড়া ঠিকমতো করবে।আর এমন কাজ করবে না যে কাজ করলে আমার মুখ ছোট হয়।
কি এমন হলো বাবার!সন্তান বলেই কি শহীদুলের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।দুমড়েমুচড়ে যেতে লাগলো তার স্বাভাবিক চেতনা।
-নাজমুল,বাবার কি হয়েছে বল আমাকে।কি অসুখ?
কোথায় চিকিৎসা করানো হচ্ছে?
-তেমন কিছু না।বাড়ীতেই চিকিৎসা চলছে।নাজমুলের নিস্পৃহ জবাবে মনে শান্তি পায় না শহীদুল।
-তাহলে চল আমার সাথে।লজিং বাড়ীতে যেতে হবে।এদের বলে যাওয়া দরকার।কিছু কাপড়চোপড়ও নিতে হবে।
-বাবার অসুখের খবর নিয়ে বাড়ী থেকে লোক এসেছে।সোজা বাড়ী না গিয়ে আবার আমাদের বলতে আসার কি দরকার ছিল।যাও তাড়াতাড়ি বাড়ী যাও শহীদুল।
নীলার মায়ের গলায় ঝাঁজ।
নীলার মা শহীদুলকে খুব বেশী স্নেহ করেন।শহীদুল সেটা জানে।মাঝেমধ্যে শহীদুল ভাবে তবে কি নীলার সাথে তার সম্পর্কের কথা খালাম্মা জানেন?
কলেজ থেকে লজিং বাড়ীতে আসার ফলে শহীদুল দুই ঘন্টার ফেরে পড়ে যায়।এই দুই ঘন্টায় সে অনায়াসে বাড়ীতে পৌঁছে যেতে পারতো।বাবার অবস্থাটা নিজের চোখে দেখতে পেতো।
নাজমুল বললো, চল্ বাসে না গিয়ে জীপে সেলামতগঞ্জ পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে ট্রেনে যাওয়া যাবে।ঘোরের মধ্যে থাকা শহীদুল না করলো না।
সেলামতগঞ্জ জংশনে এসে শুনে ট্রেনের অনেক দেরী।কখন আসবে স্টেশন মাস্টারও জানে না।সেলামতগঞ্জ থেকে কিছুদূর পুরানবাজারে গিয়ে চাইলে বাসে যাওয়া যায় শহীদুলের বাড়ী।বাস থেকে নেমে রিক্সা টেম্পুতে এক ঘন্টার রাস্তা।আর ছাতিমতলা রেলস্টেশনে নামলে রিক্সায় বড়জোর মিনিট চল্লিশের পথ।শহীদুলেরা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।কতোদিন ট্রেনে চড়ার সুযোগ হয় না!
ঘন্টা দুয়েক পরে ট্রেনের ঘন্টা পড়লো।ট্রেন আসলে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় সবার মধ্যে।শহীদুল ও নাজমুলও কোনো রকমে একটা কামরায় উঠে পড়লো।তিল ধারণের ঠাঁই নেই ট্রেনের কামরায়।
ছাতিমতলা স্টেশনে নেমে নিজ গ্রামের রিক্সা চালক আছকিরকে দেখতে পায় শহীদুল।আছকির শহীদুলকে দখতে পেয়ে তাড়া দিতে থাকেঃ
-তোমরার লাগি বইসা রইছি বহুত সময় ধইরা।উঠ রিকশাত উঠ।হেদিকে সবাই তোমার অপেক্ষা করতাছে।
শহীদুলকে লক্ষ্য করে বলে আছকির।
আমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে! কেন আমার জন্য অপেক্ষা করছে কেন!শহীদুলের শরীর অবশ হয়ে আসছে।গলা শুকাতে শুরু করে দিয়েছে।
শহীদুলের নার্ভাসনেস টের পেয়ে নাজমুল অন্য প্রসঙ্গে আলাপ তুলে শহীদুল যাতে শক্ত থাকতে পারে।কাঁচা রাস্তা।রিক্সার একেকটা ঝাঁকুনি শহীদুলের জীবনকেও যেন একেকটা ঝাঁকুনি দিয়ে যাচ্ছে।শহীদুল বুঝতে পারে,তার বাবা আর নেই।
বাজারে এসে রিক্সা থামে।সাথেসাথে কয়েকজন এগিয়ে এসে শহীদুলকে শান্তনা দিতে শুরু করে।কেউকেউ তাকে ধরে সামনের দিকে নিয়ে যেতে থাকে।শহীদুল টের পায় তার পায়ের তলায় মাটি নেই।মাথাটা কেমন যেন ফাঁকাফাঁকা লাগছে ঘোরের মধ্যে থাকা শহীদুলের।
ঘোরের মধ্যেই শহীদুলের কানে বাজার মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসা ঘোষণা শেলের মতো বিদ্ধ হতে থাকে।
-মরহুম আনিসুল মাস্টারের জানাজার নামাজ এক্ষুনি আরম্ভ হয়ে যাবে।আপনারা যারা জানাজার নামাজে অংশ নিতে ইচ্ছুক মসজিদের সামনে চলে আসুন।
জালাল উদ্দিন লস্কর শাহীন
বিএ পরীক্ষার দুইমাস আগে একদিন সকালে হার্ট অ্যাটাকে বাবা মারা গেলেন শহিদুলের।শহিদুল সেদিন বাড়ীতে ছিল না।লোক মারফত খবর পেয়ে জায়গীর বাড়ী থেকে শহিদুল শুধু কাফনে মোড়ানো তার বাবার লাশটা বরং বলা ভালো মুখটাই একঝলক দেখতে পেয়েছিল।
ফজরের নামাজের ওযু করছিলেন আনিসুল হক-শহীদুলের বাবা,হঠাৎ করেই বুকে তীব্র ব্যথা টের পেলেন।ব্যথার মাত্রা বাড়লো,শরীর ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেলো।তিনি তার মাকে ডাক দিলেনঃ
-মা,মা,আমার কেমন লাগতেছে যেন।তাড়াতাড়ি বাইরে আসো মা।
ততোক্ষণে পুরো বাড়ীতে একটা হইচই।
কান্নাকাটি।আনিসুলকে ঘরের বারান্দায় শুইয়ে দেওয়া হয়েছে।পাখার বাতাস করা হচ্ছে।
-আমার বুকটা জ্বলে যাচ্ছে,বুকটা..নিরবতা!
এর মধ্যেই একজন গিয়ে গ্রামডাক্তার সুরেন্দ্র বিশ্বাসকে নিয়ে এসেছে।যোগাযোগ ব্যবস্থা সহ যাবতীয় উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে থাকা সেই ৩০/৩২ বছর আগের এমন অজপাড়াগাঁয়ের মানুষের ভরসা সুরেন্দ্র ডাক্তারের মতো দুই-একজন পল্লী চিকিৎসক।
সুরেন্দ্র ডাক্তারী ভঙ্গিমায় স্ট্যাথো দিয়ে আনিসুল সাহেবের বুক পরীক্ষা করলেন,নাড়ী দেখলেন।তাপমাত্রা দেখতে বগলের নিচে থার্মোমিটার ঢুকিয়ে দিলেন।
গুরুতর অপরাধের মামলায় রায় শুনতে উৎসুক ভীত সন্ত্রস্ত আসামিপক্ষের লোকজনদের মতো সমবেত মানুষগুলোও পল্লী চিকিৎসক ডাঃ সুরেন্দ্র বাবুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।সবার প্রত্যাশা খালাস দেওয়ার ভঙ্গিতে সুরেন্দ্র বাবুও বলুক, না তেমন কিছু না।
গ্রামের সবাই আনিসুল হককে ভালোবাসে।ভালো শিক্ষক।মানুষ হিসাবে আরো ভালো।সবাই দোয়া করছে আল্লাহ যেন আনিসুল হককে সুস্থ করে দেন।
চেহারায় স্পষ্ট বিষন্নতা ডাঃ সুরেন্দ্র বিশ্বাসের।তিনি কেবল একবার নিজের মাথাটা দুইদিকে ঘুরালেন।লোকজন বুঝে গেলো আনিসুল হক আর নেই।কান্নার রোল বড় হতে লাগলো।বাড়ীর উঠোন লোকে লোকারণ্য।
বাড়ী থেকে অন্তত চল্লিশ মাইল দূরের এক কলেজের থার্ড ইয়ারে পড়ে শহিদূল।লজিং থাকে কলেজ থেকে হাঁটাপথে দেড় ঘন্টা দূরের গ্রাম সাতপাড়াতে। সেখানে তিন-চারটা ছোট ছেলেমেয়েকে রাতে একটু পড়াতে হয়।
সেদিন ডিসেম্বর মাসের তিন তারিখ।রোববার।সকালে খাওয়াদাওয়ার পর আস্তে আস্তে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় শহিদুল।অন্যদিন তার সাথে থাকে সহপাঠি ফজল।আজ ফজল নেই।কোনো এক কারনে কলেজে যাবে না।
হাঁটাপথে চলতে চলতে শহিদুল কল্পনার জগতে ঘুরে বেড়াতে থাকে।তার কল্পনজর জগতের সবটা জুড়েই আছে সাবিহা-তার ক্লাশ নাইন পড়ুয়া ছাত্রী। সাবিহাকে ঘিরে শহীদুলের মনে হাজারো রঙিন স্বপ্ন।সাবিহাকে ভালো লাগলেও কোনদিন মুখ ফুটে বলা হয় নি।সাবিহাই প্রথম ছোট্ট চিরকুটে আই লাভ ইউ লিখে তার ভালোবাসার কথা জানান দেয় একদিন।কি মধুর অনুভূতি!
কল্পনার জগতে ঘুরতে ঘুরতে শহীদুল পৌঁছে যায় কলেজ ক্যাম্পাসে।কলেজেও সহপাঠী কিছু মেয়ের সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব।দুএকজনকে একটু অন্যরকম ভালোও লাগে শহীদুলের।একটু পরেই কলেজ যাত্রী ছাউনীর সামনে থেমে থাকা লোকাল বাস থেকে নাজমুলকে নামতে দেখে কিছুটা বিস্মিত হয় শহীদুল! সে কি ভুল দেখছে?এ কি মতিভ্রম তার?নাজমুল কেন আসবে এখানে!
শহীদুলের দিকেই এগিয়ে আসছে নাজমুল।নাজমুলকে দেখে স্বাভাবিক হাসি দিয়েই শহীদুল জানতে চায়,কি খবর?তুমি এখানে কি মনে করে?
নাজমুল শহীদুলকে জানায়,তার বাবা অসুস্থ।শহীদুলকে এক্ষুণি বাড়ী যেতে হবে। শহীদুলের মাথায় এমন আকস্মিক খবরে আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।
এই তো সেইদিনই কেবল শহীদুল বাড়ী থেকে এসেছে।কদিনই বা হয়েছে।বড়জোড় পনের দিন।আসার সময় তার বাবা আনিসুল তাকে বাড়ী থেকে খানিকটা রাস্তা এগিয়ে দিয়েছিলেন।শহীদুলের কানে বাবার শেষ কথাটা বারবার বাজতে থাকে।বাবা সেদিন বলেছিলেনঃ
তোমাকে নিয়ে আমার অনেক আশা।লেখাপড়া ঠিকমতো করবে।আর এমন কাজ করবে না যে কাজ করলে আমার মুখ ছোট হয়।
কি এমন হলো বাবার!সন্তান বলেই কি শহীদুলের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।দুমড়েমুচড়ে যেতে লাগলো তার স্বাভাবিক চেতনা।
-নাজমুল,বাবার কি হয়েছে বল আমাকে।কি অসুখ?
কোথায় চিকিৎসা করানো হচ্ছে?
-তেমন কিছু না।বাড়ীতেই চিকিৎসা চলছে।নাজমুলের নিস্পৃহ জবাবে মনে শান্তি পায় না শহীদুল।
-তাহলে চল আমার সাথে।লজিং বাড়ীতে যেতে হবে।এদের বলে যাওয়া দরকার।কিছু কাপড়চোপড়ও নিতে হবে।
-বাবার অসুখের খবর নিয়ে বাড়ী থেকে লোক এসেছে।সোজা বাড়ী না গিয়ে আবার আমাদের বলতে আসার কি দরকার ছিল।যাও তাড়াতাড়ি বাড়ী যাও শহীদুল।
নীলার মায়ের গলায় ঝাঁজ।
নীলার মা শহীদুলকে খুব বেশী স্নেহ করেন।শহীদুল সেটা জানে।মাঝেমধ্যে শহীদুল ভাবে তবে কি নীলার সাথে তার সম্পর্কের কথা খালাম্মা জানেন?
কলেজ থেকে লজিং বাড়ীতে আসার ফলে শহীদুল দুই ঘন্টার ফেরে পড়ে যায়।এই দুই ঘন্টায় সে অনায়াসে বাড়ীতে পৌঁছে যেতে পারতো।বাবার অবস্থাটা নিজের চোখে দেখতে পেতো।
নাজমুল বললো, চল্ বাসে না গিয়ে জীপে সেলামতগঞ্জ পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে ট্রেনে যাওয়া যাবে।ঘোরের মধ্যে থাকা শহীদুল না করলো না।
সেলামতগঞ্জ জংশনে এসে শুনে ট্রেনের অনেক দেরী।কখন আসবে স্টেশন মাস্টারও জানে না।সেলামতগঞ্জ থেকে কিছুদূর পুরানবাজারে গিয়ে চাইলে বাসে যাওয়া যায় শহীদুলের বাড়ী।বাস থেকে নেমে রিক্সা টেম্পুতে এক ঘন্টার রাস্তা।আর ছাতিমতলা রেলস্টেশনে নামলে রিক্সায় বড়জোর মিনিট চল্লিশের পথ।শহীদুলেরা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।কতোদিন ট্রেনে চড়ার সুযোগ হয় না!
ঘন্টা দুয়েক পরে ট্রেনের ঘন্টা পড়লো।ট্রেন আসলে হুড়োহুড়ি পড়ে যায় সবার মধ্যে।শহীদুল ও নাজমুলও কোনো রকমে একটা কামরায় উঠে পড়লো।তিল ধারণের ঠাঁই নেই ট্রেনের কামরায়।
ছাতিমতলা স্টেশনে নেমে নিজ গ্রামের রিক্সা চালক আছকিরকে দেখতে পায় শহীদুল।আছকির শহীদুলকে দখতে পেয়ে তাড়া দিতে থাকেঃ
-তোমরার লাগি বইসা রইছি বহুত সময় ধইরা।উঠ রিকশাত উঠ।হেদিকে সবাই তোমার অপেক্ষা করতাছে।
শহীদুলকে লক্ষ্য করে বলে আছকির।
আমার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে! কেন আমার জন্য অপেক্ষা করছে কেন!শহীদুলের শরীর অবশ হয়ে আসছে।গলা শুকাতে শুরু করে দিয়েছে।
শহীদুলের নার্ভাসনেস টের পেয়ে নাজমুল অন্য প্রসঙ্গে আলাপ তুলে শহীদুল যাতে শক্ত থাকতে পারে।কাঁচা রাস্তা।রিক্সার একেকটা ঝাঁকুনি শহীদুলের জীবনকেও যেন একেকটা ঝাঁকুনি দিয়ে যাচ্ছে।শহীদুল বুঝতে পারে,তার বাবা আর নেই।
বাজারে এসে রিক্সা থামে।সাথেসাথে কয়েকজন এগিয়ে এসে শহীদুলকে শান্তনা দিতে শুরু করে।কেউকেউ তাকে ধরে সামনের দিকে নিয়ে যেতে থাকে।শহীদুল টের পায় তার পায়ের তলায় মাটি নেই।মাথাটা কেমন যেন ফাঁকাফাঁকা লাগছে ঘোরের মধ্যে থাকা শহীদুলের।
ঘোরের মধ্যেই শহীদুলের কানে বাজার মসজিদের মাইক থেকে ভেসে আসা ঘোষণা শেলের মতো বিদ্ধ হতে থাকে।
-মরহুম আনিসুল মাস্টারের জানাজার নামাজ এক্ষুনি আরম্ভ হয়ে যাবে।আপনারা যারা জানাজার নামাজে অংশ নিতে ইচ্ছুক মসজিদের সামনে চলে আসুন।
Polash, Jakir, Halal, Ratul, Alom, Sohel, Akij and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
|
|