সাদা কাগজ
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Go down
avatar
Tothapi
ধুমকেতু
ধুমকেতু
Posts : 13
স্বর্ণমুদ্রা : 1334
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-26

দ্বিতীয় বাসর Empty দ্বিতীয় বাসর

Fri Jun 04, 2021 4:00 pm
আমার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের তোরজোর চলছে,আর এ কাজে সবচেয়ে বেশী উৎসাহ আমার শাশুড়ির। প্রায় প্রতিদিন ই আমার ননদ কে সাথে নিয়ে এ বাড়ি ও বাড়ি মেয়ে দেখতে যায়।অবশ্য আমাকে বলেই যায়।আগে ননদের সাথে আমার সম্পর্ক ভালোই ছিলো,কিন্তু এখন সেও আমাকে এরিয়ে ই চলছে!মায়ের সাথে তাল দিচ্ছে।
আজকে শাশুড়ী ঘরে ঢুকেই আমাকে ডাকতে শুরু করলেন,আমি দৌড়ে গেলাম।
পান চিবুতে চিবুতে বললেন,তারপর কি চিন্তা ভাবনা করলা,থাকবা নাকি যাইবাগা বাপের বাড়ি,আজকে কিন্তু কথা ফাইনাল কইরা আসছি,মাইয়া বেজায় সুন্দর, তার উপ্রে আবিয়াত্তা,বয়স ও কম,এমন মাইয়া সহজে পাওন যায় না,আর দেইখা মনে হলো সুস্থ সবল,আশা করি কোনো সমস্যা নাই তোমার মতো।উনি এক নাগারে কথা গুলো বলে থামলেন।
আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরুচ্ছে না,নিচের দিকে ঝাপসা চোখে তাকিয়ে রইলাম।

হঠাত ই আবির অর্থাৎ আমার স্বামীর ঘরে আগমন,তাকে দেখেই শাশুড়ি দৌড়ে এসে বললেন,আসছিস?আজকে যে মেয়ে দেখে আসছি মাশাআল্লাহ এক কথায় অসাধারণ ,তুই কবে সময় করতে পারবি?তোর ও তো দেইখাশুইনা কথা বইলা বুঝ বনিবনা করন লাগবো!
আবির একটু ভেবে বলল,শুক্রবার যাওয়া যায়,আব্বাকে জিগেস করে দেখো ঐদিন ফ্রী আছে কিনা,বাকি দিন তো আমার অফিস থাকে।

আবিরের মুখে এমন সহজ স্বাভাবিক কথা শুনে বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো।কোনোভাবে নিজেকে সামলাতে পারলাম না,দ্রুত রুমে এসে দরজা ভিড়িয়ে দিলাম।
সত্যি সত্যি আবির তাহোলে বিয়েটা করেই ফেলবে?
নিজের মনকে কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারছিনা।
নিজেকে খুব তুচ্ছ লাগছে।একটা সন্তানের জন্য হাহাকার করতে করতেই বিয়ের ৭ টা বছর পার করলাম,বাকি জীবনটা হয়তো আবিরের হাহাকারেই কাটবে।
আবির রুমে ঢুকেই আমাকে না দেখার ভান করে,কাপড় চোপড় নিয়ে গোসলে ঢুকে গেলো।
অবশ্য গত তিনমাস যাবত আবির আমার সাথে ঠিকভাবে কথাই বলেনা দরকার ছাড়া,আর এখন তো বিয়ের ডিসিশান নিয়ে ই ফেলেছে এখন আর কি কথা ই বলবে আমার সাথে?
আগে আমাকে কাদতে দেখলে আমার সামনে হাটু গেরে বসে থাকতো,চোখের পানি গুলো মুছে জরিয়ে ধরে বসে থাকতো।আর এখন আমি তার চোখের মনের অন্তরালে।
আমার কান্নাভেজা চোখ,প্রতিরাতের আর্তনাদ আবিরের মন পর্যন্ত স্পর্শ করেনা।আমি এখন শুধুই বিরক্তকর আগাছা।

পরিবারের অমতে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম,ক্লাসমেট আবির কে,আহা কতনা ভালোবাসা ছিলো!
টিউশনির টাকা জমিয়ে জমিয়ে দেখা করতাম।
কখোনো রিক্সায় যেতাম না,পায়ে হেটে, না হয় বাসে করে যাতায়াত করতাম ১০/২০ টাকা বাচানের জন্য।
সারাদিন না খেয়ে দুজন হাটতাম,আসোলে খাওয়ার টাকা তেমন থাকতো না।যা সেভিংস করতাম তা দিয়ে আবিরের জন্য এটা সেটা কিনতাম।
অবশ্য ভালোবাসায় আবির আমার চেয়ে কয়েকধাপ এগিয়ে ছিলো,আমাকে একটা ছোট বাচ্চার মতো আগলে রাখতো,এই ছেলেটার জন্য আমার মন খারাপ হতে পারতোনা,হাজারটা কষ্ট নিয়ে হাজির হলেও এক নিমিষেই সব ভুলিয়ে দিতো।

সেই দিনটার কথা এখোনো খুব মনে পরে,দুই ফ্যামিলির চাপ যখন নিতে পারছিলাম না,তখন ই আমরা ডিসিশন নেই পালিয়ে যাবো।
যেই ভাবা সেই কাজ,দুজন কাঁধে দুটো ব্যাগ ঝুলিয়ে সোজা চলে গেলাম বনানী কাজী অফিসে।
রাস্তা থেকে দুজন সাক্ষী ধরে নিয়ে গিয়েছিলাম,
পুরো এডভেঞ্চার লাগছিলো সবকিছু,কিন্তু ঠিক বিয়ের আগসময় আবিরের মুখ অন্ধকার হয়ে আসছিলো,বাবা মাকে ছাড়া বিয়ের জন্যই তার অনুশোচনা হচ্ছে।
তার এই অন্ধকার মুখ দেখে একবার ইচ্ছে হয়েছিলো ফিরে যাই!কিন্তু পারিনাই।
হঠাত আবির আমাকে কাজী অফিসে বসিয়ে রেখে বলল,তুমি বসো আমি পাশের মসজিদ থেকে নামাজ পড়ে আসি,শুভ কাজের আগে অন্তত আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য দোয়া করে আসি,অবশ্য আবির বরাবরই নামাজি ছিলো।
ঐ অপেক্ষার মুহূর্ত টা ছিলো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অপেক্ষার মুহূর্ত, কারন আমি জানি আমার আবির আমাকে একা রেখে কোথাও যাবে না,আবির ফিরে আসবে,ওকে আসতেই হবে,এটা পৃথিবীর কঠিনতম সত্য,এটা আমার বিশ্বাস। আমার বিশ্বাস সত্য হয়েছিলো,আবির এসেছিলো।

ঠিক কবুল বলার সময় আমার অনুশোচনা বোধ জেগে উঠেছিলো,আমি তখন কান্নায় ভেঙে পরেছিলাম।
আম্মুর নিষ্পাপ মুখটা বারবার চোখের সামনে ভাসছিলো।
আবির তখন আমার হাতটা চেপে ধরে বলল,আমি আছি তো তোমার সাথে।আমি ঐ চোখে আমার প্রতি দায়িত্ব দেখেছিলাম, গভীর ভালোবাসা দেখেছিলাম।
কাজী অফিস থেকে বের হওয়ার পর আমি এক অন্য আবিরকে আবিষ্কার করলাম,তার চোখমুখ খুশিতে জ্বলজ্বল করছিলো,আমি বললাম একটু আগেই না মন খারাপ ছিলো?
আবির খুব শান্ত গলায় বলেছিলো,ততখন পর্যন্ত তুমি আমার বউ ছিলেনা,তখন প্রিয় মানুষদের জন্য একটু আফসোস হচ্ছিলো যে আমার এমন দিনে তারা কেউ নেই,কিন্তু সেই আফসোসের জন্য তোমাকে বউ হিসেবে পাওয়ার আনন্দটা বিলীন হতে দেই কি করে বলো?
তারা আমার আপন ছিলো থাকবে,আর তুমি এখন পারমানেন্ট আমার হয়ে গেলা,এটা আমার জন্য কতটা আনন্দের তুমি আন্দাজ করতে পারছো?..।

নাহ সেদিনের সবকিছু মিথ্যে হয়ে গেলো,আমি আর আমার আবিরের নেই,সেই সুন্দর নিষ্পাপ সরল মনের আবিরকে আমি হারিয়ে ফেলেছি।চিরতরে হারিয়ে ফেলতে যাচ্ছি, আল্লাহ আমাকে শক্তি দাও আমি কিভাবে সহ্য করবো?বারবার পুরোনো ভাবনা চিন্তা গুলো মাথায় জেঁকে বসছে,পূরোনো সৃতি গুলো ফ্ল্যাশব্যাকের মতো চোখের সামনে বার বার ভেসে আসছে।

সেদিনের পর আমি আর আবিরে সাথে ঘুমাইনি,নিচে বিছানা করে শুয়েছি,একটা বারের জন্যও আবির আমাকে ডাকেনি,আমি কতটা তুচ্ছ হয়ে গেছি,এখন আর আমার মুখে কোনা মায়া খুজে পায়না,আমার শরীরে মাদকতা খুজে পায়না,পুরোনো ফেলনা আমি!
গত শুক্রবারে মেয়ে ও দেখে এসেছে,তারপর থেকেই আবিরকে বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছে।
আবিরের মুখে আমি সারাটাজীবন হাসি দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু কেনো যেনো আবিরের এই হাসি মুখ আমার ভিতরটা পুরিয়ে ছাড়খার করে দিচ্ছে।
আমি ভেবে পাচ্ছি না কি করব,কোথায় যাবো,কি করব?আমার যাওয়ার অনেক জায়গা ই আছে কিন্তু সারা দুনিয়ার কাছে আবিরকে আমি ফেরেশতা বানিয়ে রেখেছি সেখানে আমি কোন মুখ নিয়ে কারো দরজায় গিয়ে দাড়াবো?
আমার এই অসহায়ত্ব টা কাউকে দেখাতে ইচ্ছে করছেনা।এখোনো যে আবিরের খারাপ টা কাউকে বুঝতে দিতে মন চাচ্ছে না।

আমাকে রান্না ঘরে ঢুকতে দেখেই শাশুড়ী খ্যাঁচখ্যাঁচ শুরু করলো,সামনের শুক্রবার বিয়া,আর বেহায়ীনির এখোনো যাওয়ার কোনো নামগন্ধ নাই,আমার সাফসাফ কথা নতুন বউ আওনের পর ঐ ঘরে যাওয়া বন্ধ, ঐ ঘরে ঢুকলে পা ভাইঙ্গা ফালামু,বহুত কষ্টে মাইয়া যোগাইছি।

এত বিষাক্ত কথা গুলো কানে আসতেই আমার শরীর থরথর করে কাপতে শুরু করলো,হাত থেকে কাচের বাটিটা পরে গুরোগুরো হয়েগেলো,আওয়াজ পেয়ে শাশুড়ী রীতিমতো তেড়ে আসলেন আমায় মারতে,ননদ এসে থামিয়ে বলল,মা তোমার মনে হয় না তুমি একটু বেশী বেশী করছো?
ভাবী এখন হঠাত করে কোথায় ই যাবে?সময় হোক উনি নিজেই বুঝবে উনার জন্য কোনটা ভালো আর মন্দ!
গন্ডগোল শুনে আবির দৌড়ে এসে বলল,এতো চিল্লাচিল্লির কিছু নাই,মিরার ইচ্ছা হলে এ বাড়িতে থাকবে না হয় চলে যাবে,কিন্তু বের করার অধিকার এখোন আমাদের নাই,আইনত এখোনো তার এ বাড়িতে থাকা খাওয়ার অধিকার আছে।
আমি রাজুকে খবর দিয়েছি,কাল এসে স্টোর রুম পরিষ্কার করে,রং করে দেবে,আর একটা সিঙ্গেল খাট অর্ডার করেছি।বাকি যা লাগে ম্যানেজ করে দেয়া যাবে,থাকা নিয়ে সমস্যা হবে না আশাকরি।

কি বলব ভাষা হারিয়ে ফেলেছি আমার স্বামীর মহত্ত্ব দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি ,আমাকে থাকতে দিয়ে করুনা দেখাচ্ছে, বাহ্ আমি জানি এগুলো করছে শুধুমাত্র আল্লাহকে জবাব দেওয়ার ভয়ে, এখানে বিন্দুমাত্র ভালোবাসার ছিটাফোটা থাকলে আবির বুঝতে পারতো আমি কতটা কষ্টে আছি।অধিকার নিয়ে বড় বড় কথা বলল,কিন্তু এটা বুঝলোনা আমার আসল অধিকার ই কেড়ে নিচ্ছে।

তিনদিনেই স্টোর রুম গুছিয়ে টিপটপ করে ফেলেছে,নতুন খাট,ছোট ওয়ারড্রোভ আর টেবিল ও এনেছে,এসব দেখে দেখে আমার শাশুড়ী জ্বলে পুড়ে মরে যাচ্ছে।
বোকা মহিলা উনি বুঝতেই পারছেনা এসব করুনা আমার জন্য সুখের না,গর্বের ও না যে স্বামী লাথি মেরে বের করে দেয় নাই,এগুলো লজ্জার অপমানের,কলিজাফাটা যন্ত্রনার।এগুলো বোঝার ক্ষমতা উনার নেই।

রাতে আমি নিচে বিছানা করছিলাম,আবির আমার দিকে না তাকিয়ে বললো,ও রুমে যাও,অভ্যাস হোক।
আবিরের এ কথায় মনে হলো আমার কলিজাটা কেউ টেনে বের করে এনে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলছে।আমি শুকনো গলায় বললাম,অভ্যাস হয়ে গেছে অনেকটা,আর তো দুটো রাত,তোমার একটু কাছাকাছি না হয় থাকি।
আবার গলা নামিয়ে বলল তোমার ইচ্ছা। সারাটা রাত আমি ঘুমাতে পারিনাই,ফজরের আগেই বিছানা ছেড়ে উঠলাম, হঠাত আবিরের নিষ্পাপ মুখটার দিকে চোখ যেতেই ঝাপসা হয়ে এলো,কি নিষ্ঠুরতম পৃথিবী, আমি চাইলেই আমার আবিরকে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে বলতে পারছিনা আবির আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি মরে যাচ্ছি, আমাকে বাচাঁও, তুমি আমার কলিজার টুকরা,তোমার উপর শুধু আমার অধিকার,তোমার বুকে শুধু আমি মাথা রাখবো, ঐ উষ্ণ বুকের ভালোবাসাটা শুধু আমার।
আমার খুব ইচ্ছে হলো আবিরের বুকে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ি। কিন্তু আমি পারলাম না,অধিকার হারিয়ে অধিকার দেখানোর মতো বিড়ম্বনা আর নেই….

কাল আমার স্বামীর বিয়ে,আমি এখোনো জীবিত আছি আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে প্রায় হারিয়ে ও,নিজের কাছেই খুব অবাক লাগছে,আগে কত রাগারাগি ঝগরার সময় মরে যেতে চাইতাম,কিন্তু এবার কেনো যেনো প্রচন্ড কষ্টে নিজেকে তিলে তিলে মারতেই ইচ্ছে করছে,আমি কেনো সন্তানধারনে অক্ষম সেই শাস্তিটা নিজেকে দিতে ইচ্ছে করছে,যদি কোনো রকম বেচে যাই,আত্মহত্যার মতো ঘৃনিত কাজ না করে থাকতে পারি,তবে জান্নাতে গিয়ে আমি আমার স্বামীর ভাগ বুঝে নিবো,আমার মাথা পাগল হয়ে গিয়েছে কিসব আবল তাবল ভাবছি।
টলতে টলতে রান্না ঘরে গেলাম,আবিরে সব পছন্দের রান্না নিজ হাতে করবো,শেষবারের মতো প্রিয় মানুষটার জন্য কিছু করি,আমার সক্ষমতা তো এইটুকু ই।

রাতে রুমে ঢুকতেই দেখি,আবির গলা নামিয়ে ফোনে কথা বলছে,আমাকে দেখেই ফোনটা রেখে দিলো,
হয়তো হবু বউ এর সাথে কথা বলছে।
আমি বিছানা পত্র নিয়ে যাবো,আজ রাতে এ রুমে থাকলে হয়তো আমি হার্ট অ্যাটাক করে মরেই যাবো,আবিরের মুখটা আমার জন্য বিষ হয়ে গেছে,ঐ চোখে মুখের মায়ায় আমি হাজারবার মরে যাই!!

আমাকে যেতে দেখেই আবির বলল কোথায় যাও?
আমি হাসার চেষ্টা করে বললাম,যেখানে আমার থাকার কথা।
আবির বলল আমার ঘুম আসছেনা, অনেকদিন তোমার সাথে কথা হয়না ঠিকমতো, আজকে রাতটা আমরা গল্প করে কাটাই,কি বলো?

কি নির্মমতা তাইনা?পৃথিবীর কোনো মেয়ের ই হয়তো আজকে গল্প করে কাটাতে ইচ্ছে করবেনা।মুখটাও দেখতে চাইবেনা,কিন্তু আমি ঐযে পাগল,অন্ধের মতো ভালোবাসি,আর প্রতিবার হেরে যাই,তাই আজকেও আবিরের আবদার ফেলার শক্তি আমার হলো না,আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম এমন আবদার হয়তো এটাই শেষ,ফিরাই কি করে বলো?

আবির আমার কথার উত্তর না দিয়ে বললো,জানো মেয়েটা ভারি মিষ্টি, মায়াময় চেহারা,তোমার সাথে খানিকটা মিল আছে,তোমার মতো শান্ত ও বটে।
কেনো যেনো এতোজনের মাঝে আমি তোমার মতোই একজনকে খুজছিলাম।এটাও একটা ভালোবাসা।

আমি মুচকি হেসে বললাম,হু ভালোবাসা ই তো,কিন্তু আমার মতো অপয়া যেনো না হয়।

আমার এ কথায় কথায় আবির খুব রেগে গেলো,খুব বিরক্ত নিয়ে বলল,আজকের এই দিনটার জন্য তুমি দায়ী।তুমি নিজে হাতে তোমার কপালে দুঃখ টেনে এনেছো।

আমি চোখের পানি মুছতে মুছতে বললাম, হু আমি ই দায়ী,আমি অপয়া।

আবির আরো রেগে গিয়ে বললো,দেখো মিরা আমি জানি সন্তান না হওয়ার সামাজিক আর পারিবারিক চাপটা তুমি নিতে পারছিলেনা,কিন্তু কথায় কথায় ঝগড়া হলেই,নিজেকে হেয়ো করে,ছোোট করে আমাকে বারবার বিয়ের কথা তুমি বলোনি?শেষবার যখন ঝগড়া হলো তুমি চিৎকার করে বললে,আমি যেনো বিয়ে করি আর না হয় তোমার মরা মুখ দেখি।
তোমার মরা মুখ দেখতে চাই নাই,তাই এতো কিছু।

আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না,আবিরকে জরিয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,তুমি কেনো বুঝলেনা আবির কোনটা আমার মনের কথা আর কোনটা মুখের কথা?

আবির চোখের পানি আড়াল করে বললো,সব সময় বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব টা কি আমার ছিলো?
তুমিও তো বুঝতে পারতে আমার মনের অবস্থা, কিন্তু না তুমি সবসময় আমাকে প্রেশারাইজ করেছো।

আমি আবিরের গলা জরিয়ে রেখে,কাঁদতে কাঁদতে বললাম,তুমি বুঝোনি,আমি মানসিক কষ্ট নিতে না পেরে তোমার উপর রাগ ঝাড়তাম শুধু,কিন্তু এটা আমার অন্যায় ছিলো।আমি আমার ভুল বুঝতে পারছি,কিন্তু এ ভুলের শাস্তি এতো নির্মম কেনো বলতে পারো?

আবির তার গলা থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে বলল,কিন্তু তোমার বুঝতে বুঝতে অনেক দেরী হয়ে গেছে।এখন আর কিছু করার নেই।

আমি ঢুকরে ঢুকরে কাঁদতে থাকলাম,আমার মনে হলো আমি আবিরের পা ধরে অনুরোধ করি যেনো সে বিয়েটা না করে,কিন্তু পারলাম না,মনে হলো যে যেতে চাইছে তাকে আটকে রাখা বোকামি আর তাছাড়া সত্যিই তো আমি আবির কে কোনো সন্তান দিতে পারবো না,তাই আমার অনুরোধ করা সাজে না।

ফজরের আজান পড়ছে, একটা দুইটা পাখির আওয়াজ ভেসে আসছে,আমি আর আবির দুজনেই মাটিতে হেলান দিয়ে বসে আছি,আমার ঠোট গুলো শুকিয়ে চৌচির হয়ে আছে,চোখ দিয়ে রক্ত পরবে মনে হচ্ছে এতোটা জ্বালা হচ্ছে।মুখ দিয়ে হা করে নিঃশ্বাস নিচ্ছি, আচ্ছা আমার যতটা কষ্ট হচ্ছে আবিরের কি তার অর্ধেক কষ্ট ও হচ্ছে? হলে হয়তো আমাকে একা করতে পারতো না।

আবির উঠতে উঠতে বলল,আমার শেষ একটা অনুরোধ রাখবে?

আমি শুকনো গলায় বললাম হু রাখবো।

আবির আলমারি থেকে একটা ব্যাগ বের করে বলল,আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হবে,কিন্তু তবু আমার জন্য এ শাড়িটা তুমি পড়ো,মাস তিনেক আগে কিনেছিলাম,ঝগড়াঝাটি অশান্তি সব মিলিয়ে দেওয়া হয়নি আর,আমি চাই আজকে তুমি একটু ভালোভাবে পরিপাটি হয়ে থাকো,সকালে ফুল আসবে বাসর ঘর সাজানোর জন্য,তোমার জন্য বেলী আনতে বলেছি,খোপায় পড়ো,আমার নতুন জীবনের শুরুতে তোমার সুন্দরমুখটা দিয়ে শুরু হোক।

আমি শুধু শুনলাম, আবিরের এতো নিষ্ঠুর চাওয়া আমার পক্ষে পূরন করা সম্ভব হবেনা জেনেও আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম।

ননদের মুখে যতটুকু শুনেছি ঘরোয়াভাবে বিয়ে হচ্ছে,শুধু মেয়ের মা বাবা,আর এ পরিবারের আবিরের বাবা মা,আট দশন মিলে বিয়ের কাজ সারবে,সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরবে।
আমিও আমার ব্যাগপত্র গুছিয়ে ফেললাম,আবির আসার পর তার বউটাকে প্রথম এবং শেষবারের মতো দেখেই চলে যাবো এ বাড়ি ছেড়ে।

বুকে অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে আবিরের দেয়া শাড়িটা আর বেলিফুল এর মালা দিয়ে নিজেকে তৈরী করলাম,আমার সাজানো ঘরটায় আজকে ফুলের বাসর সেজেছে অন্যকারোর জন্য।কি সুন্দর করে সাজানো,আমার বাসরটা এতো সুন্দর হয়নি,পালিয়ে বিয়ের সুবাদে।আফসোস আর হতাশা আমাকে আকড়ে ধরেছে।

পুরো বাসায় আমি একা,সবাই গেছে নতুন বউ আনতে,আমি বসে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছি।
সন্ধ্যার পর বাসায় বেল বাজলো,বেলের আওয়াজে আমার শরীর কাপতে লাগলো,কোনোরকম টলতে টলতে দরজা খুললাম,প্রথমেই আমার ননদ খুব হাসি হাসি মুখ করে ঘরে ঢুকলো,কিন্তু তারপর ই আমার শশুড় শাশুড়ি মুখ কালো করে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললো,অলুক্ষনী কোথাকার।
বলেই হনহন করে চলে গেলো,সবার শেষে আবির আসলো,কোলে ছোট্ট একটা বাচ্চা মেয়ে।বছর পাচেক হবে।

ননদ আমাকে শুনিয়ে বললো দেখো তো ভাবি,তোমার নতুন বাচ্চাকে পছন্দ হয় কিনা,
আবির হাসতে হাসতে বলল, পছন্দ হতেই হবে,চেহারা মিলিয়ে এনেছি,দেখ দেখ একদম মিরার মতো।সবাই বলবে মীরার মেয়ে।

আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা,আমার শরীর তখোনো কাপছিলো থরথর করে,আমি শুধু তাকিয়ে দেখছি,মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছিল না,
আবির নীলাকে বললো,যা ওকে ওর রুমে নিয়ে যা।
ওরা চলে যেতেই আবির আমাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল,থ্যাংকস আমার অনুরোধ টা রাখার জন্য,আমি ভেউ ভেউ করে কান্না করে দিলাম,আবির আমাকে আরো জোরে জরিয়ে ধরে বলল,তোমাকে এতো কষ্ট দেওয়ার কারন হলো,তোমাকে বুঝালাম যে সবসময় ই মুখে যা আসে তা বলা উচিত নয়,আর যে কষ্টটা তুমি নিতে পারবেনা সেটা কাউকে করতে বলোনা,আর তুমি কাল বলছিলেনা যে আমি তোমাকে বুঝিনা,কিন্তু সবচেয়ে বড় সত্য হলো আমার চেয়ে ভালো তোমাকে আর কেউ বুঝবেনা।,আর বুঝি বলেই এমন ভালোবাসার মানুষকে হাতছাড়া করতে পারবোনা।

আমি আবিরকে জরিয়ে ই রাখলাম শক্ত করে।

আবির থেমে আবার বলল,একটা সন্তানের প্রয়োজন ছিলো তাই এনেছি,বউ তো আমার আছেই,বাবা মা বুঝেনা,কি আর করা তাই এতো কাহিনী করতে হলো,অবশ্য নীলা আমাকে হেল্প করেছে,ও তোই বাবা মা কে সামলিয়েছে শেষে,বাবা মা তো জানতো আজকে বিয়ে ই,যাই হোক ঐসব পরে বলব,এখন যাও তারাতারি আমার জন্য এককাপ চা বানাও,আর সুন্দর করে সাজো।
তারপর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,চোখে একটু কাজল দিয়ো পারলে,আজকে আমাদের দ্বিতীয় বাসর হবে।

পাহাড় সমান ওজন বুক থেকে নামিয়ে,সেই বুকের সাথে আমার আবিরকে মিশিয়ে জরিয়ে রেখেছি পরম মমতায়,,তাকে বক্ষ মাঝে রাখবো ছেড়ে যেতে দেবো না…..

উম্মে শারমিন নিহা

Ayrin kaTun, Sk nadim, Sofikul alom, Nera akter, Israyeel hossen, RabbY khan, Sk limon and লেখাটি পছন্দ করেছে

Back to top
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum