সাদা কাগজ
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Go down
avatar
Sinthia Debnath
নবাগত
নবাগত
Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1119
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-04

অতৃপ্ত আইডি Empty অতৃপ্ত আইডি

Fri Jun 04, 2021 10:25 pm
১ম_পর্ব

রাত তখন প্রায় ২ টা। ফেসবুকিং করছিলাম। হঠাৎ দেখলাম একটা ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসলো। গিয়ে দেখলাম একটা মেয়ের আইডি, আইডির নাম, 'তামান্না আফরিন'।
আমি প্রোফাইল চেক না করেই রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করে ফেললাম।
রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট করার পর আমি মেয়েটির প্রোফাইলে ঢুকলাম, এবং তার ছবিগুলো দেখতে লাগলাম।
মাশাআল্লাহ! এতো সুন্দর মেয়েটা! বলার বাহিরে!
তার আইডিতে তার সাথে অনেকেরই ছবি আছে। এরা হয়তো তার ফ্রেন্ডস আর ফেমিলি মেম্বার। এসব দেখে এতটুকু নিশ্চিত হলাম যে এটা ফেইক আইডি না।
আমি তার ছবিগুলো দেখতে লাগলাম।
.
মিনিট খানিক পর একটা মেসেজ আসলো। ইনবক্সে গিয়ে দেখলাম এই মেয়েটারই মেসেজ।
মেয়েটি "হাই" দিলো।
আমিও রিপ্লাই দিলাম "হেলো"।
মেয়েটি বললো,
~ কেমন আছেন?
.
-- জি ভালো। আপনি?
.
~ হ্যা ভালো।
.
-- জি, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দেয়ার কোনো কারণ?
.
~ নাহ, এমনিই দিলাম।
.
-- ওহ আচ্ছা।
.
~ আপনাকে ভালো লেগেছে।
.
তার এ কথা শুনে কিছুটা অবাক হলাম। আবার একটু ভালোও লাগলো। কারন ওর ছবিগুলো দেখে ও কে আমার অনেক ভালো লেগেছে।
আমি জবাব দিলাম,
-- ইয়ে..মানে, বুঝতে পারলাম না
.
~ বললাম, আপনাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে।
.
-- ওহ আচ্ছা।
.
~ ফ্রেন্ডশিপ করবেন?
.
-- হ্যা, করবো।
.
~ তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড।
.
-- ঠিকাছে।
...
তার সাথে ফ্রেন্ডশিপ হলো আমার। সারারাত আরো অনেক কথা বললাম তার সাথে। পরিচিত হলাম অনেকটা।
তার নাম তামান্না। ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। মিরা রোডের পাশেই তার বাসা।
আমিও আমার সম্পর্কে সবকিছু বললাম তাকে।
.
এভাবে আমরা কথা বলতে থাকি একে অপরের সাথে। প্রায় তিন মাস হয়ে গেলো আমাদের বন্ধুত্বের। এ তিন মাসেই আমার আলাদা একটা ভালোলাগা কাজ করে তার প্রতি। আর তামান্নাও আমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে।
এ তিনমাস আমি তামান্নার সাথে প্রতিদিন চ্যাট করেছি, এবং তামান্না আমাকে সবসময় একটাই কথা বলতো যে,
"কখনো আমাদের চ্যাটের স্ক্রিনশট নিবে না, আর কখনো আমাকে কোনো পোস্টে মেনশন করবা না"।
.
এ কথাটা তামান্না সবসময় খুব জোর দিয়ে এবং সিরিয়াসলি বলতো। যা আমার কিছুটা অদ্ভুদ লাগে যে সে কেনো সবসময় এক কথা বলে।
যাই হোক, আমি এসব মাথায় না নিয়ে তামান্নার কথামতো কখনো আমাদের চ্যাটের স্ক্রিনশট নেই নি, আর কখনো তাকে কোনো পোস্টে মেনশন করিনি।
.
সে সবসময় তার আইডিকে লুকাতে চাইতো, কারণটা আমার জানা নেই।
.
অনেকদিনই হয়ে গেলো আমরা কথা বলছি, কিন্তু বাস্তবে কোনো দেখা নেই।
আমি তামান্নাকে জিজ্ঞেস করলাম, দেখা করবে কি না।
তামান্না প্রথমে না করলেও, পরে রাজি হয়ে যায়। কারন তারও নাকি অনেক ইচ্ছা আমাকে দেখার।
.
তামান্না আমাকে একটা কফি শপের নাম বলে, নামটি হলো 'ক্যাফেরিনো'।
আমি কফিশপটা না চেনার কারনে তামান্না আমাকে সেই এড্রেস মেসেজে পাঠিয়ে দেই।
সে বললো এই কফিশপে রাত ১১ টার দিকে আসতে।
আমি তামান্নাকে জিজ্ঞেস করলাম,
-- এতো রাতে দেখা করবা?
.
~ হ্যা, আম্মু নানুর বাড়িতে গিয়েছে আর আব্বুর নাইট ডিউটি আছে, তাই আমার পক্ষে রাতের বেলায় দেখা করাটাই সম্ভব।
.
তামান্নার যুক্তিটি মানার মতো। তাই আমি এ নিয়ে আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। আমি বললাম,
-- আচ্ছা ঠিকাছে আজ রাতেই এসো।
.
~ হুম, ঠিকাছে।
.
রাত ১০ টাই আমি বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়লাম। শীতকাল ছিলো, তাই রাস্তাঘাটে মানুষ ছিলো হাতে গুণা কয়েকজন। চারিদিকে ঘন কুয়াশা।
কোনো রিকশা বা বাস নেই। তাই পাঁয়ে হাঠা শুরু করলাম। প্রায় অনেকটা হাঁটার পর একটা রিকশার দেখা মিললো।
রিকশাওয়ালাকে বললাম, মামা সামনে যে 'ক্যাফেরিনো' কফিশপ আছে, ওখানে যাবেন?
.
রিকশাওয়ালা প্রায় ১০/১২ সেকেন্ড ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলো। আর বললো,
~ সত্যি ঐখানেই যাইবেন?
.
-- আরে মা হ্যা, ওখানেই যাবো।
.
সে আবার কিছুক্ষণ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে ছিলো, কিছুক্ষণ পরে বললো,
~ আইচ্ছা, চলেন।
.
রিকশায় উঠে রওনা দিলাম 'ক্যাফেরিনো'র দিকে। বেশ অনেক্ষটা সময় লাগলো পৌঁছাতে।
পৌঁছানোর পর রিকশা থেকে নেমে রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিচ্ছিলাম।
রিকশাওয়ালা ভাড়া নিতে নিতে বললো,
~ মামা! সাবধানে থাকবেন।
.
তার এ কথা শুনে কিছুটা খটকা লাগলো।
যাই হোক, আমি হেঁটে হেঁটে চারিদিকে ঘুরতে লাগলাম। কিন্তু 'ক্যাফেরিনো' নামের কোনো কফিশপ দেখছিলাম না।
চারিদিকে অন্ধকার, কিছুটা দূরে প্রায় ১২/১৫ টা কুকুর একসাথে ঘেউ ঘেউ করছে।
মোবাইলের লাইট অন করলাম। অন করে উপরে তুলতেই দেখলাম উপরে একটা ভাঙাচোরা বোর্ড, যে বোর্ডের উপর লেখা 'ক্যাফেরিনো' কফিশপ।
.
আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম। কারন এই কফিশপটা এখন কফিশপের হালে নেই। প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত। আয়না ভাঙা পড়ে আছে চারিদিকে। পোড়া পোড়া সব চেয়ার টেবিল। দেয়ালগুলো ভেঙে গিয়েছে। আর উপরে ভাঙা দেয়ালে একটা বোর্ড আটকে ছিলো, যেখানে লেখা 'ক্যাফেরিনো' কফিশপ।
আমি প্রচন্ড ভয় পেলাম! হাত-পা কাঁপতে শুরু করলো আমার। আমি কোনোমতে মোবাইলটা বের করে ফেসবুকে ঢুকলাম। দেখলাম তামান্না এক্টিভ।
তামান্নাকে মেসেজ দিলাম,
-- কই তুমি? কখন আসবে? আর এই জায়গাটা এমন কেনো?
~ এইতো আসছি, দু মিনিট।
.
তামান্নার রিপ্লাই পেয়ে মোবাইলটা আবার পকেটে রেখে দিলাম। স্থির হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম সেই অন্ধকার জায়গায়। একটু পর অনুভব করলাম গুড়িগুড়ি বৃষ্টির ফোটা আমার মুখে লাগছে আর তীব্র বাতাস শুরু হয়েছে। আমার বুকটা ভয়ে ধকধক করতে লাগলো।
আমি বৃষ্টি হতে বাঁচার জন্য সেই ভাঙাচোরা 'ক্যাফেরিনো'র ভিতর ঢুকে পড়লাম।
মোটামোটি কিছুটা হলেও বৃষ্টি থেকে বাঁচা যাচ্ছে।
.
সেই ভাঙাচোরা কফিশপের ভিতর দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ খেয়াল করলাম, আমার ঘাঁড়ে কিছু একটা যেনো বারবার স্পর্শ করছে, অনেকটা মেয়েদের ভেজা চুলের মতো।
এটা অনুভব করার পর আমি আর নাড়াচাড়া করতে পারছিলাম না। পেছনে ফেরার মতো সাহসটুকু আমার হচ্ছিলো না। আমি মুখ খুলে 'আয়াতুল কুরসি' পড়তে চাইলেও আমার মুখ যেনো বরফে জমে গেলো। আমি মনে মনেই "আয়াতুল কুরসি" পড়তে লাগলাম আর আস্তে আস্তে পেছনের দিকে তাকাতে লাগলাম।
পেছনে তাকিয়ে দেখলাম সেই কফিশপের ছাদের সাথে একটা কাটা মাথা ঝুলে আছে। একটা মেয়ের মাথা। যে মাথার চুলগুলো বাতাসে বারবার আমার ঘাঁড়ের সাথে স্পর্শ করছিলো।
আমি প্রচন্ড রকমের ভয় পেলাম, আর বাহিরের দিকে দৌঁড় দিতে চাইলাম। কিন্তু আমি কোনোমতে সেই কফিশপ হতে বাহির হতে পারছিলাম না। আমি যতই দৌঁড়ে বাহিরের দিকে যেতে চাচ্ছিলাম, আবার কে যেনো আমাকে বাহির থেকে ধরে এনে ভিতরে আছড়ে ফেলছিলো।
খুব জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতে লাগলাম। কিন্তু কেউই আমার আওয়াজ শুনছিলোনা।
.
একটু পর দেখলাম কে যেনো আমার পাশ দিয়ে তীব্র গতিতে চলে গেলো, অনেকটা বাতাসের মতো। আমি ঝপঝপ ঘামছিলাম। ভয়ে গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেলো আমার।
বাহিরে এখনো তীব্র বৃষ্টি হচ্ছে, আর এখানে ভেতরে আমি একলা।
হঠাৎ দেখলাম আমার কাছ থেকে কয়েক ফুট দূরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটির পরণে ছিলো একটা ছেড়া টপস্ এবং গোলাপি রঙের জামা। চেহারা চুলে ঢাকা। মেয়েটির হাত দুটো ঝলসে গিয়েছে। দেখে মনে হচ্ছিলো আগুনে পোড়ানো হয়েছে তার হাতগুলো।
মেয়েটি আর্তনাদ করে কাঁদছে এবং আমার দিকে তাকিয়ে বলছে, বাঁচাও আমায়, বাঁচাও।
.
আমি এ দৃশ্য দেখে কাঁপতে শুরু করলাম, মনে হচ্ছিলো ভয়ে এক্ষুণি বেরিয়ে আসবে আমার প্রাণ। আর মনে মনে আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে লাগলাম। কিন্তু কিছুতেই যেনো কাজ হচ্ছিলো না। মেয়েটির আরো জোরে আর্তনাদ করতে লাগলো, কাকুতিমিনতি করছিলো তার প্রাণ বাঁচানোর জন্য।
এবং আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলাম সেখানেই। তারপর কি হলো আর কিছু মনে নেই।
.
পরদিন রাতের বেলা জ্ঞান ফিরলো আমার। চোখ খুলে দেখলাম আমি আমার বিছানায়। কয়েকজন লোক নাকি সকালে এনে দিয়ে গিয়েছে আমাকে। তখন থেকেই নাকি আমি অজ্ঞান।
.
আমার হঠাৎ মনে পড়লো কাল রাতের কথা। সাথেসাথেই ঘামতে লাগলাম আমি। আম্মু এক গ্লাস পানি এনে দিলেন, এক শ্বাসে সব পানিই খেয়ে নিলাম।
ঘরের সবাইকে কোনোভাবে মিথ্যা কথা বলে দিলাম, কিন্তু আসলেই কি হয়েছিলো তা কাউকে বললাম না।
.
একটু পর উঠে টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে তামান্নাকে মেসেজ দিলাম,
-- কি ফালতু জায়গায় দেখা করতে ডাকলে কাল?
.
~ কেনো? জায়গাটি তো আমার অনেক ভালো লাগে।
.
-- আর তুমি আসোনি কেনো কাল??
.
~ এসেছিলাম তো, দেখোনি তুমি?
.
-- কি সব আবোলতাবোল বকছো? তুমি তো আসোই নি কাল!
.
~ এসেছিলাম তো। তুমি দেখোনি আমার সেই পোড়া হাত? আমি কত আর্তনাদ করেছি তোমার কাছে, কিন্তু তুমি আমায় বাঁচাও নি।
..
তামান্নার এ রিপ্লাই দেখে আমি সাথে সাথে বিছানায় বসে পড়লাম। দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতাটিই মনে হয় হারিয়ে ফেলেছি। কি হচ্ছে কিছু বুঝছিলাম না।
...

সাদমান সাঈদ চৌধুরী।
_________________চলবে_____________

Abid faraje, Tasmia haq, Hasibul hasan santo, Asha islam, Nafisa akter, Pk monish, Arif howla and লেখাটি পছন্দ করেছে

avatar
Sinthia Debnath
নবাগত
নবাগত
Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1119
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-04

অতৃপ্ত আইডি Empty Re: অতৃপ্ত আইডি

Fri Jun 04, 2021 10:26 pm

২য় পর্ব
...
একটু পর উঠে টেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে তামান্নাকে মেসেজ দিলাম,
-- কি ফালতু জায়গায় দেখা করতে ডাকলে কাল?
.
~ কেনো? জায়গাটি তো আমার অনেক ভালো লাগে।
.
-- আর তুমি আসোনি কেনো কাল??
.
~ এসেছিলাম তো, দেখোনি তুমি?
.
-- কি সব আবোলতাবোল বকছো? তুমি তো আসোই নি কাল!
.
~ এসেছিলাম তো। তুমি দেখোনি আমার সেই পোড়া হাত? আমি কত আর্তনাদ করেছি তোমার কাছে, কিন্তু তুমি আমায় বাঁচাও নি।
..
তামান্নার এ রিপ্লাই দেখে আমি সাথে সাথে বিছানায় বসে পড়লাম। দাঁড়িয়ে থাকার ক্ষমতাটিই মনে হয় হারিয়ে ফেলেছি।
.
তামান্নাকে মেসেজ দিলাম আবার,
-- শুনো তামান্না, মজা করছো না তো? এটা কিন্তু মজা করার বিষয় না।
.
~ সাদমান, বিশ্বাস করো আমার, সত্যি এসেছিলাম আমি। তোমাকে ডেকেছি অনেকবার আমাকে বাঁচাতে। কিন্তু তুমি শুনলেনা।
.
আমি রাগান্বিত হয়ে বললাম,
-- এই চুপ!!! একদম চুপ!
.
~ বাঁচাওনি তুমি আমায়, বাঁচাওনি।
..
হাত কাঁপতে কাঁপতে ফোনটা পড়ে গেলো হাত থেকে। পুরাই ব্ল্যাকআউট হয়েগিয়েছি আমি।
.
মেসেঞ্জারের নোটিফিকেশন টোন টা বার বার বেজে উঠছিলো। একের পর এক মেসেজ দিচ্ছে তামান্না। কিন্তু আমার সাহস হচ্ছিলো না তার মেসেজগুলো সিন করার।
.
ভাবছি বন্ধুদের জানাবো, কিন্তু তারা যদি আবার এসব নিয়ে হাসিঠাট্টা করে?
তাই কাউকে কিছু বলতে পারছিলাম না।
.
এরপর আমার বেস্টফ্রেন্ড আবিরের সাথে শেয়ার করলাম পুরো ঘটনা। তাকে সবকিছু খুলে বলার পর সে বললো,
~ প্রোফাইলটার ক্রিনশট নিয়ে আমায় পাঠা
.
-- পাঠিয়েছি, দেখ তো একটু
...
প্রায় অনেক্ষণ হয়ে গেলো, আবির এখনো রিপ্লাই দিলো না।
একটু পর দেখলাম আবিরের মেসেজ,
~ দোস্ত, এরকম কোনো আইডিই তো খুঁজে পাচ্ছিনা
.
-- অসম্ভব! ভালো করে দেখ।
.
~ আরে সত্যি বলছি।
.
-- আচ্ছা ঠিকাছে।
..
আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে আমার ছোট বোনের মোবাইলটা নিলাম, নিয়ে সার্চ দিলাম, এবং আমার বোনের মোবাইলেও তামান্নার আইডি আসছেনা।
.
এরপর আবার আমার মোবাইল নিয়ে সার্চ দিলাম তামান্নার আইডি, এবং সাথে সাথেই পেয়ে গেলাম।
অর্থাৎ আমি ছাড়া আর কেউই তামান্নার আইডি দেখছিলোনা।
আগের ঘটনাগুলোর পর, এটা আমার ভয়ের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো আমার মাথায়। কে এই তামান্না? আমি ছাড়া তার আইডি আর কেউ দেখছিলোনা কেনো?
একেকটা প্রশ্ন উঁচু উঁচু দেয়ালের মতো ঘিরে আছে আমাকে। সবই যেনো আমার কাছে রহস্য।
কিন্তু আমার এই রহস্য জানতেই হবে।
.
আমি তামান্নার প্রোফাইলে গিয়ে সবকিছু চেক করতে লাগলাম।
হঠাৎ তার এবাউটে ফ্যামিলি মেম্বার লিস্টে একটা মেয়ের আইডি দেখলাম, যা তার সিস্টার হিসেবে এড ছিলো।
আমি সাথে সাথেই উনাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিলাম। প্রায় ১ দিন পর রিকুয়েস্ট এক্সেপ্ট হলো।
আমি সাথে সাথেই মেসেজ দিলাম উনাকে।
-- হাই
.
~ হেলো।
.
-- আপনি তামান্নাকে চিনেন?
.
~ জি।
.
-- তামান্না কি হয় আপনার?
.
~ আপনার এতকিছু জানার দরকার কি?
.
-- প্লিজ বলেন। খুবই দরকার।
.
~ তামান্না আমার ছোট বোন। কেনো আপনাকে কি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছে ফেসবুকে?
.
-- আপনি কেমনে জানেন?
.
~ আমি কেমনে জানি সেটা বাদ দেন। আপনাকে কি 'ক্যাফেরিনো' তে দেখা করতে ডেকেছে?
.
-- হ্যা, কিন্তু আপনি এসব কেমনে জানেন?
.
~ মেসেজে সব বলা সম্ভব হবেনা। আপনি কাইন্ডলি দেখা করতে পারবেন আমার সাথে?
.
-- আচ্ছা ঠিকাছে।
..
তামান্নার বোন দেখা করতে ডাকলো আমাকে, সবকিছু খুলে বলার জন্য।
আমি যাচ্ছিলাম এবং যাওয়ার পথে ভাবছিলাম যে, তামান্না যে আমাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছে, 'ক্যাফেরিনো' তে দেখা করতে ডেকেছে, এসব তামান্নার বোন কিভাবে জানে?
.
এসব ভাবতে ভাবতে পৌঁছালাম পার্কটিতে যেখানে তামান্নার বোন দেখা করতে ডেকেছে। অনেক্ষণ অপেক্ষা করলাম।
একটু পর একটা ছেলে এসে আমাকে বললো,
~ ভাইয়া, আপনার নাম কি সাদমান?
.
-- হ্যা। কেনো?
.
~ ওইদিকে একটা আপু বসে আছে আছে, উনি আপনাকে ডাকছে।
..
আমি গেলাম সেদিকে, গিয়ে দেখলাম তামান্নার বোন বসে আছে একটা বেঞ্চে। আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো সে।
আমি সামনে গেলাম।
তামান্নার বোন আমাকে বললো,
~ বসেন ভাইয়া।
....
____________চলবে________

Masum, Tasmia haq, Sume akter, Hasibul hasan santo, Nafisa akter, Pk monish, Arif howla and লেখাটি পছন্দ করেছে

avatar
Sinthia Debnath
নবাগত
নবাগত
Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1119
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-04

অতৃপ্ত আইডি Empty Re: অতৃপ্ত আইডি

Fri Jun 04, 2021 10:28 pm

শেষ পর্ব

আমি গেলাম সেদিকে, গিয়ে দেখলাম তামান্নার বোন বসে আছে একটা বেঞ্চে। আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলো সে।
আমি সামনে গেলাম।
তামান্নার বোন আমাকে বললো,
~ বসেন ভাইয়া।
.
-- জি।
.
~ আসলে আমি বুঝতে পেরেছি আপনার সাথে কি হয়েছে।
.
-- কেমনে? আপনি কেমনে জানেন?
.
~ বলছি সবকিছু। আগে একটা কথা বলেন তো ভাইয়া, তামান্নার সাথে এ পর্যন্ত আপনার কি কি হলো?
..
আমি সবকিছু খুলে বললাম এ ক'দিন যা কিছু হলো।
তারপর সে বললো,
~ আসলে ভাইয়া আমি জানিনা আপনি আমার কথা কতটুকু বিশ্বাস করবেন, কিন্তু...
.
-- আপনি নিঃসন্দেহে বলেন। আমি বিশ্বাস করবো এবং করতে বাধ্য। কারন আমার কাছে এসব কিছুই রহস্য।
.
~ আচ্ছা ভাইয়া বলছি।
.
-- হুম, বলেন।
.
তামান্নার বোন আমাকে বলা শুরু করলো সবকিছু। প্রথম যে কথাটা বললো সে তা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো।
.
তামান্নার বোন বললো যে,
~ ভাইয়া, আপনি আসলে যার সাথে কথা বললেন সে এখন এই পৃথিবীতেই নেই।
.
-- মানে? কি বলছেন আপনি এসব?
.
~ জি ভাইয়া। তামান্না বেঁচে নেই।
.
-- তাহলে আমি এতদিন কার সাথে কথা বলছি ফেসবুকে?
.
~ আপনি তামান্নার সাথেই কথা বলছিলেন।
.
-- এই মাত্রই তো আপনি বললেন যে তামান্না বেঁচে নেই, তাহলে?
.
~ আসলে ভাইয়া তামান্না দু বছর আগেই মারা গিয়েছে।
.
-- কেমনে?
.
~ আগুনে পুড়ে। আসলে ২ বছর আগে তামান্নার জন্মদিনে আমরা সবাই ওর জন্য একটা বার্থডে পার্টি প্ল্যান করেছিলাম 'ক্যাফেরিনো' কফিশপে।
.
-- যেখানে তামান্না আমাকে দেখা করতে ডেকেছে সেই 'ক্যাফেরিনো' তে?
.
~ জি ভাইয়া। সেদিন আমি সহ তার সব ফ্রেন্ডসরা গিয়েছিলো তার জন্মদিনে। কেক কাটার পর আমরা সবাই মিলে তামান্নার হাতে মুখে কেক লাগিয়ে দিয়েছিলাম, আর তাই তখন তামান্না ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে যায়, ঠিক তখনই সেই কফিশপের ইলেক্ট্রিক্যাল বোর্ডে ছোট ছোট কয়েকটা আগুনের ঝলক দেখা গেলো, আমরা ভাবলাম তেমন কিছু না। কিন্তু সেই আগুন দ্রুততার সাথে পুরো কফিশপে ছড়িয়ে গেলো, আমরা সহ কফিশপের আরো অনেকে তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেলাম, কারোই তামান্নার কথা মনে নেই, এবং ধীরে ধীরে আগুনটা মারাত্নক আকার ধারণ করে। একটু পর আমরা দেখলাম ভেতর থেকে একটা মেয়ে খুব জোরে জোরে কান্না করছে এবং আর্তনাদ করছে, "আমাকে বাঁচাও, বাঁচাও আমাকে।"
আমরা দেখতে পেলাম মেয়েটি হলো তামান্না, আমাদের তখন মনে পড়লো যে তামান্না আমাদের সাথে বের হয়নি, কারন সে ওয়াশরুমে ছিলো। তামান্না অনেক চিৎকার করেছে ভেতর থেকে কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিলো, চারদিক থেকে আগুনের শিখা পড়ছিলো কফিশপের ভেতর। আর একটু পর সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেলো, হ্যা তামান্নাও।
..
এটা বলেই কেঁদে দিলো তামান্নার বোন। আমিও নিজের কান কে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
..
তামান্নার বোন বললো,
~ ভাইয়া, আপনার বিশ্বাস না হলে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন।
..
আমি সাথে সাথেই গুগলে সার্চ দিলাম 'ক্যাফেরিনো কফিশপ' দিয়ে।
হ্যা, তামান্নার বোন সত্য কথা বলছিলো।
গুগলেও দেখলাম যে দু বছর আগেই এই 'ক্যাফেরিনো কফিশপে' এক অগ্নি দূর্ঘটনায় এক মেয়ের নির্মম ভাবে প্রাণ গিয়েছিলো।
.
এখন আমি বুঝতে পারলাম যে রিকশাওয়ালাকে 'ক্যাফেরিনো' কফিশপে যেতে বলার পর কেনো সে কেনো আমার দিকে অবাক হয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিলো।
কিন্তু আমার শুধু এইটুকু জানলে হবেনা, আসল রহস্যটা জানা এখনো বাকি
..
আমি তামান্নার বোনকে বললাম,
-- তামান্না যদি মৃত হয়, তাহলে তার আইডি থেকে আমাকে মেসেজ কে দিচ্ছে?
.
~ আপনাকে তামান্না ই মেসেজ দিয়েছে। আসলে তামান্নার মৃত্যুর পর, আমরা সবাই রিপোর্ট করে তার আইডিটা নষ্ট করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আসল ঘটনাটা শুরু হলো তার পরদিন থেকে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখলাম তামান্নার মেসেজ, "বোন বাঁচালি না আমায়, একা রেখে চলে গেলি"।
তার এ মেসেজ দেখে খুবই ভয় পেলাম আমি। কারন গতকাল ই আমরা তার আইডি নষ্ট করেছিলাম। সবাইকে গিয়ে দেখালাম, আর তার আইডিটা আবার নষ্ট করলাম। কিন্তু আবার তার পরদিন অন্য এক ফ্রেন্ডের মোবাইলে তামান্নার আইডি থেকে একই মেসেজ আসলো। আজ পর্যন্ত অনেকবার তার আইডি বন্ধ করা হয়েছে, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তার আইডি থেকে সবার কাছে শুধু একটা মেসেজ ই যায়, "বাঁচাও আমাকে, বাঁচাও"।
.
-- তাহলে তামান্না আমাকে কেনো মেসেজ দিলো?
.
~ শুধু তোমাকে নয়, আরো অনেককেই ডেকেছে। আরো অনেকের সাথে ঘটেছে এমন ঘটনা। সে সবার সাথেই কয়েকদিন কথা বলে 'ক্যাফেরিনো' তে দেখা করতে ডাকে এবং সবাইকেই একই বাহানা দিয়ে রাতের বেলা ডাকে।
আর যাকে ডেকেছে সে মানুষটি 'ক্যাফেরিনো' তে পৌঁছানোর পরই তামান্না 'ক্যাফেরিনো'র বাহিরে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করে যাতে সেই মানুষটি 'ক্যাফেরিনো'র ভেতরে ঢুকে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আর তারপরই তামান্না তাদের কাছে আর্তনাদ করে তাকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু তামান্না আজ পর্যন্ত কারোই ক্ষতি করেনি, শুধু ডেকে তাকে বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করে।
.
-- এর কি কোনো কারন আছে?
.
~ হয়তো তামান্না সেদিন বাঁচতে চেয়েছিলো। কিন্তু এর কোনো সঠিক ব্যাখ্যা আমরা আজ পর্যন্ত খুঁজে পেলাম না ভাইয়া।
..
তামান্নার বোনের কথা শুনে অনেক্ষণ চুপ হয়েছিলাম। কোনো শব্দই বের হচ্ছিলো না আমার মুখ দিয়ে।
.
তামান্নার বোনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম অঝোরে অশ্রু পড়ছে তার চোখ বেয়ে।
কিন্তু আদৌ কি এসব সত্যি? তা আমি জানিনা।
কিন্তু আমি শুধু এইটুকু জানি যে, এভাবে অঝোরে অশ্রু ঝরিয়ে কেউ মিথ্যা বলতে পারেনা। নিশ্চয় এটা এমন এক সত্য যার কোনো ব্যাখ্যা নেই।
এভাবে আমাদের সবার জীবনেই এমন কিছু ঘটনা ঘটে যার কোনো ব্যাখ্যা আমরা পাইনা, কিন্তু আমাদের এসব ঘটনা বিশ্বাস করতে হয় কারন আমরা এগুলো স্বচোক্ষে দেখে থাকি।
আর এ ঘটনাটিও আমার কাছে তেমনই এক ঘটনা যার কোনো ব্যাখ্যা নেই।
কারন জীবনটাই এমন, বহু কিছুর ব্যাখ্যা আমাদের আমাদের কাছে অজানা থাকে আর বহু রহস্য আমাদের কাছ থেকে লুকনো থাকে।
...
সমাপ্ত

সাদমান সাঈদ চৌধুরী

Masum, Tasmia haq, Sume akter, Hasibul hasan santo, Asha islam, Nafisa akter, Pk monish and লেখাটি পছন্দ করেছে

Sponsored content

অতৃপ্ত আইডি Empty Re: অতৃপ্ত আইডি

Back to top
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum