সাদা কাগজ
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Go down
avatar
Sume akter
নবাগত
নবাগত
Posts : 2
স্বর্ণমুদ্রা : 1082
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-04

~সত্য ঘটনা অবলম্বনে~ Empty ~সত্য ঘটনা অবলম্বনে~

Fri Jun 04, 2021 11:01 pm
~ঘটনা নাম্বার এক~

আমার চাচাতো ভাইয়ের কাছ থেকে শুনা, তার ভাষাতেই বলতেছি। সময়টা ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাস, চারদিকে তখন হাড়কাপুনি শীতের আমেজ, আমি (মানে চাচাতো ভাই) সন্ধ্যাবেলা বাড়ির পিছনে বসে আগুন পোহাচ্ছি, চারদিকে শীতের কুয়াশা বইতেছে, আমাদের বাড়ির পিছনে একটা বড় নারিকেল গাছ ছিলো, আমি যেখানে বসে আগুন পোহাচ্ছি, সেই আগুনের ধোয়া সরাসরি নারিকেল গাছে গিয়ে লাগতেছিলো, আমি আর আমাদের সম্পর্কে এক কাকা, এই দুইজন বসে আগুন পোহাচ্ছিলাম, হটাৎ কাকা বললেন যে তার নাকি জরুরী বাড়িতে যেতে হবে, তাই তিনি চলে গেলেন, আমি যেদিন আগুন পোহাচ্ছিলাম, সেদিন আমাদের বাড়িতে কেও ছিলোনা, বাবা ত প্রায় ২ মাস আগে গত হয়েছেন, মা গিয়েছেন আমার বোনের বাড়িতে বেড়াতে, আমরা এক বোন দুই ভাই, আমার ছোট ভাই ক্লাশ থ্রিতে পড়ে, বোনের বাড়িতে যাওয়ার সময় আমার ছোট ভাইকে সাথে করে নিয়ে গেছেন আমার মা। বেশ কিছুক্ষন আগুন পোহানোর পর চারদিকে যখন ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে এলো, তখন আমি বাড়ির পিছন থেকে ঘরের ভিতর চলে আসলাম। নিজেই পাক করেছিলাম আর নিজের করা রান্নাই আমি খেয়ে শুতে গেলাম, তখন আবার আমি বাটম ফোন ইউস করতাম, তাই রাত জেগে মোবাইলে ফেসবুকিং করার অভ্যাস আমার ছিলোনা। আমি খাটে শুয়েই ঘুমিয়ে গেলাম, হটাৎ বাড়ির পিছনের দরজায় খটখট শব্দে ঘুম ভেঙে গেলো, রুমের লাইট জ্বালালাম, কই নাতো! এখন তো আর কোনো শব্দ শুনা যাচ্ছেনা, আমি মনে করলাম হয়তো আমার মনের ভুল, আমি শুয়ে পরলাম বাতি নিভিয়ে। ডানকাতে শুয়ে যেইনা আমি চোখ বন্ধ করেছি, ঠিক তখনি আবার দরজায় ঠকঠক শব্দ, কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম, যদিও আমি ততটা ভীতু নই, তারপরো একলা বাড়িতে এভাবে মধ্যরাতে দরজায় কে শব্দ করবে ভেবে আতকে উঠলাম, আমি খাট থেকেই বলতে লাগলাম, দরজায় কে? শব্দ করে কারা? কতা কয়নাকে? কিন্তু কোনো শব্দ এলোনা, আমাদের বাড়ির আশেপাশে শুধু আমার এক জেঠার বাড়ি, কিন্তু এতো রাতে জেঠা বা জেঠী ত আমার রুমে আসার কথা না, আমি ফের (পুনরায়) বাতি জ্বালিয়ে মোবাইল টা হাতে নিয়ে দরজার কাছে গেলাম, কেমন যেনো ভয় করতেছে, আমি আবার জিঙ্গাসা করলাম, দরজায় কে? কথা বলেন না কেনো? জেঠী নাকি? এই মিয়া কথা বলেন না কেনো? নাহ, কোনো জবাব এলোনা, আমি এবার বুকে সাহস নিয়ে দরজার কাছে গিয়ে বিসমিল্লাহ বলে দরজাটা খুললাম, অবাক করা বিষয়, বাহিরে ত কাওকেই দেখা যাচ্ছেনা, চারদিকে ব্যাপক কুয়াশা পরেছে, আমার মোবাইলের আলো কুয়াশা ভেদ করে বেশী একটা দুরে যেতে পারলোনা, তাই আপাতত আশেপাশে কাওকেই দেখতে না পেয়ে দরজা লাগিয়ে খাটে শুতে গেলাম। ঘুম আসতেছেনা, এতো রাতে দরজায় খটখট শব্দ! মনের ভিতর কেমন যেনো অজানা আতংক কাজ করতেছিলো, ভাবলাম আপুকে একটা ফোন দিবো, কিন্তু এতো রাতে আপু কি ফোন ধরবে, মনে হয় তো ঘুমিয়ে গেছে, কি ভেবে যেনো আপুকে আর ফোন দিলাম না। বাতি নিভাতে যাবো ঠিক এমন সময় মনে হলো যে বাতি নিভালেই ত খটখট শব্দ হয়, তাহলে বাতি জ্বালিয়েই ঘুমাই, তাই বাতি আর না নিভিয়ে খাটে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম, নাহ ঘুম আসতেছেনা, কেমন যেনো শরীরটা অস্থির করতেছে, এতো শীতের মধ্যেও কেমন যেনো আমি ঘেমে যাচ্ছি, শরীরের উপর থেকে কম্বল টা সরিয়ে ফ্যান ছাড়তে হলো আমাকে, এতো অস্থির আমি জীবনে কখনো হইনি। হটাৎ হিসুর চাপ ধরলো, একে ত মনের ভিতর অজানা ভয়, এখন কিভাবে বাহিরে যাবো হিসু করতে, কিছু বুজতে পারতেছিনা। তারপরো খাট থেকে উঠে ধীরে ধীরে দরজার কাছে গেলাম, ভয় হচ্ছিলো দরজা খুলতে, আয়তুল কুরসী পরে দরজা টা খুললাম, টয়লেটে যে ভয় হচ্ছিলো, তাই ওই নাড়িকেল গাছের সাথে একটা ছোট পুকুর ছিলো, পুকুরের এক সাইডে গিয়ে হিসু করলাম, হিসু শেষে টিস্যু নিয়ে দাড়িয়ে আছি, ঠিক এমন সময় রুমের ভিতর কেও প্রবেশ করলে দরজায় যেমন শব্দ হয়, ঠিক তেমন শব্দ পেলাম, থমকে গেলাম আমি, কি হচ্ছে টা কি আমার সাথে, টিস্যুর কাজ শেষ হলে ধীরে ধীরে রুমের দরজায় গেলাম, নিজেকে সাহসী রাখার চেষ্টা করলাম, দরজার কাছে গিয়ে রুমে তাকানো মাত্রই আমার চক্ষু চড়কগাছ, এটা কি করে সম্ভব, পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাবার মত অবস্থা, একটা মৃত মানুষ কি করে আমার রুমে আসতে পারে, আর এই মৃত মানুষ টা অন্য কেও নয়, আমার নিজের বাবা। বাবার একটা পাঞ্জাবী ছিলো সাদা রংয়ের, ঠিক সেই পাঞ্জাবী টাই পরিহিত ছিলেন বাবা, মাথায় সেই ব্যাবহৃত টুপি, আমার খাটের সাথে পড়ার টেবিল ছিলো, সেই টেবিলের চেয়ারে বাবা বসে আছেন, আমার শরীরের শিরা-উপশিরা গুলো কাঁপতেছে, ঠিক এমন সময় কানে ভেসে এলো আজানের ধ্বনি, আমি রুমে তাকিয়ে দেখলাম বাবা দরজার দিকে আসতেছেন, মানে আমার দিকে আসতেছেন, আমি দরজা থেকে সরে বাহিরে চলে গেলাম। বাবা দরজা দিয়ে বেরিয়ে সোজা নাড়িকেল গাছের দিকে হেটে হেটে যাচ্ছেন, মুহুর্তেই বাবাকে আর দেখতে পেলাম না, কোথায় যেনো হারিয়ে গেলো, আসলেই কি বাবা এসেছিলো? মৃত মানুষ কি ফিরে আসে? এটা কি কোনো অশরীরী ছিলো? আজানের শব্দ শুনে মুহুর্তেই কেনো হারিয়ে গেলো বাবা? নানা প্রশ্ন মনে ঘুরপাক খাচ্ছিলো, ঠিক তখনি জেঠা আসলেন আমাদের বাড়িতে, নামাজে যাওয়ার জন্য আমাকে ডাক দিলেন, আমি রুম থেকে গেঞ্জিটা পরে ফ্রেশ হয়ে মসজিদে গেলাম। নামাজে মন বসছিলো না। মনের ভিতর ভয় বাসা বেধেঁছে, নামাজ শেষে বাড়িতে আসলাম, চিন্তা করতেছি কোনো হুজুরের কাছে যাবো কিনা, নাকি আম্মুকে বিষয়টা বলবো, নাহ আম্মুকে বিষয়টা বললে উনি হয়তো ভয় পেয়ে যাবেন অথবা অন্যকোনো চিন্তায় পরে যাবেন, সেদিন বিকালে আম্মু বাড়িতে আসলেন, আম্মুকে বিষয়টা জানালম না, সন্ধ্যার পর পাশের গ্রামে এক হুজুরের কাছে গেলাম, শুনেছি ওনি খুব ভালো হুজুর, হুজুরের কাছে গিয়ে বিষয়টা শেয়ার করলাম, হুজুর বললেন= দেখো মাহফুজ, ওইটা আসলে কোনো মানুষ না, ওইটা একটা খারাপ পিশাচ হবে, তুমার বাবার রুপ ধারন করে সে ওই নাড়িকেল গাছে বাস করে,তুমাদের বাড়িতে কোনো তুলারাশি আছে, তাই সে ওই তুলারাশির প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তুমাদের বাসায় যাতায়াত করে, ঠিক কি কারনে সে তুমার সামনে দেখা দিলো, সেটা আমি বলতে পারবোনা, হতে পারে তুমি নিজেই তুলারাশি, তবে ইসলাম ধর্মে এই রাশিটাশি বিশ্বাস করেনা, তবে আমি তুমাকে কিছু তাবিজ দিচ্ছি, একটা ওই নারিকেল গাছের নিচে পুতে রাখবে, একটা ঘরের দরজার নিচে পুতে রাখবে, আর একটা তুমার নিজের সাথে রাখবে, তবে এই তাবিজ যদি কোনো কারনে তুমার সাথে না থাকে, তাহলে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে আমি দায়ী থাকবো না। হুজুরকে বললাম যে তাবিজ ঠিক থাকবে, এরপর হুজুরের কথা মতো তাবিজগুলো ঠিক জায়গায় পুতলাম। এরপর থেকে আজ অব্দি কোনো সমস্যা হয়নি। তবে ওই ঘটনার পর থেকে এখন পর্যন্ত নারিকেল গাছে আর নারিকেল হয়নি। গেলো বছর নারিকেল গাছ টা কাটা হয়। নারিকেল গাছ কাটার পর নারিকেল গাছ যখন স'মিলে ভাঙা হয়, ঠিক তখন অটোমেটিক নারিকেল গাছ থেকে রক্ত বের হতে থাকে, তবে কি কারনে এমন হয়েছে, টা কেও বলতে পারেনি, যদিও বিষয়টা থানাপুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছিলো, তবে তারাও তদন্ত করে বিষয়টা বের করতে পারেনি, শহরের একজন উদ্ভিতবিজ্ঞানী বিষয়টিকে গাছের কস/রস/তরল পদার্থ, এরকম বিষয়ে একটা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন, পুরো ব্যাখ্যাটা আমার মনে নেই, তবে আদৌ সেটা রক্ত নাকি অন্যকিছু ছিলো, সেটা পরে আর কেও বলতে পারিনি, গাছ থেকে ওই লাল তরল পদার্থ টা পরিক্ষা করা হয়েছিলো, সেটার রিপোর্ট আর পরে কেও খুজ নেয়নি। এই ছিলো আমার দুস্পর্কের কাকাতো ভাইয়ের কাছ থেকে শুনা তার বাস্তব কাহিনী।

চলবে।

নাসির আহাম্মেদ


Last edited by Sume akter on Fri Jun 04, 2021 11:02 pm; edited 1 time in total

Hasibul hasan santo, Santa akter, Sk imran, Tanusri roi, Badol hasan, Asha islam, Sakib sikdar and লেখাটি পছন্দ করেছে

avatar
Sume akter
নবাগত
নবাগত
Posts : 2
স্বর্ণমুদ্রা : 1082
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-04

~সত্য ঘটনা অবলম্বনে~ Empty Re: ~সত্য ঘটনা অবলম্বনে~

Fri Jun 04, 2021 11:02 pm
~ঘটনা নাম্বার দুই~

ঘটনা টা আমার ফুফুর কাছ থেকে শুনা। আজ থেকে প্রায় ৩০-৩২ বছর বা তারো আগের ঘটনা। ফুফুর নতুন বিয়ে হয়েছে। যার সাথে বিয়ে হয়েছে তার নাম করিম, আর আমার ফুফুর নাম আছিয়া। ত উনার ভাষ্যমতে লিখিত আকারে গল্পটা শুরু করছি। আছিয়ার বিয়ে হয়েছে তাদের পাশের গ্রামের রহিমুদ্দিনের দিনমজুর ছেলে করিমের সাথে। বাবার সাথে দিনমজুরের কাজ করা করিমদের তেমন অর্থসম্পদ ছিলোনা, বাবা রহিমুদ্দিনের বাড়ির পাশেই ছিলো একটা পুকুর, পুকুরে রহিমুদ্দিন মাছ চাষ করে দিন চালাতেন, ছেলে করিমের অর্থের অভাবে পড়ালেখা করা হয়নি, রহিমুদ্দিনের বউয়ের অবস্থা ভালোনা, তাই সেবা করার জন্য করিমকে বিয়ে করায় রহিমুদ্দিন। মাটির ঘরে সাধ্যমত রহিমুদ্দিন তার ছেলের বিয়ে সম্পূর্ন করেন। বাড়িতে বিদ্যুৎ ছিলোনা, কূঁপি বাতি জ্বালিয়ে দিন চলতে থাকলো আছিয়ার, নতুন বাড়িতে এসেছে, অসুস্থ করিমের মায়ের সেবা করতে করতে আর রান্নাবান্নায় সময় পার করতে থাকে আছিয়া, কিন্তু ধীরে ধীরে করিমের মায়ের অসুখ বাড়তে থাকে, সাধ্যমতো গ্রামের চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে থাকেন করিমের বাবা রহিমুদ্দিন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, বেশ কিছুদিন অসুস্থ থাকার পর মারা যান করিমের মা। বাড়ির পিছনেই বাশঝাড়ে কবর দেওয়া হয় করিমের মায়েকে। আছিয়া বেগম তখনো যুবতী মেয়ে, বাচ্চাকাচ্চা হয়নি, করিমের মায়ের মৃত্যুর পর একা একা বাড়িতে থাকতে ভয় পান আছিয়া বেগম। তাই করিম মিয়া কখনো সন্ধ্যার পর বাড়ির বাইরে যাননা। হটাৎ একদিন রহিমুদ্দিন করিমকে নিয়ে সন্ধ্যার পর বাজারে যেতে চায়, কারন বাজারে করিমদের পুকুরের মাছ বিক্রির জন্য পাইকারের কাছে যেতে হবে, তাছাড়া ঘরে বাজার সদাই নাই, রহিমুদ্দিনের বাজার থেকে আসতে দেরি হবে, তাই রহিমুদ্দিন করিমকে বাজার করে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে সে বাজারে থাকবে, এই চিন্তা করে করিমকে বাজারে নিয়ে যেতে চায়, কিন্তু ঘর থেকে করিমের বউ আছিয়া বেগম করিমকে বাজারে যেতে মানা করে, বলে যে সে একা থাকতে পারবেনা, তার অনেক ভয় হচ্ছে, বিষয়টা রহিমুদ্দিন শুনতে পেয়ে ধমকের সুরে বলে যে দেখো মা, তুমার এই আধিক্ষেতা আমি দেখতে পারুম না, করিমকে আমার সাথেই বাজারে যেতে হবে, তুমি দরজা বন্ধ করে বসে থাকো, কোনো ভয় নেই। রহিমুদ্দিন এর বয়স ৬০ বছরের উপরে, তবুও তার মুখের এমন কর্কস ভাষা যেনো ২৫ বছরের তাগড়া যুবককে হার মানাবে। করিম মিয়া তার বাবার এমন রাগ দেখে আছিয়া বেগমকে কোনো ভয় হবেনা মর্মে বুজিয়ে শুনিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকতে বলে, আর বলে যে সে খুব তারাতারি চলে আসবে, আছিয়া বেগম করিমকে ছাড়তে চায়না, তবুও করিম আছিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে যে সে তারাতারি চলে আসবে, কোনো ভয় নেই। এটা বলেই করিম তার বাবার সাথে বাজারে চলে যায়। একা একা ঘরে দরজা বন্ধ করে কূঁপি বাতি জ্বালিয়ে বসে থাকে আছিয়া, হটাৎ আকাশে মেঘের ডাক, মুহুর্তেই চারদিকে নামে তুমুল বৃষ্টি, আছিয়া বেগমের এই বৃষ্টি খুব ভালো লাগে, যুবতী মেয়ে বলে কথা। আছিয়া বেগম বৃষ্টির দৃশ্য দেখার জন্য ঘরের দরজা খুলে বাইরে বের হতে চান, হটাৎ মনের ভিতর ভয় ঢুকে গেলো, এই একলা ঘর থেকে একা বের হওয়া কি ঠিক হবে? আছিয়া বেগম আর বাহিরে বেরুলেন না। ঘরের খাটেই বসে রইলেন, এদিকে প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে বাহিরে, মাটির ঘরের টিনের চালে বৃষ্টি পরার শব্দ খুব ভালোমতো উপভোগ করছেন আছিয়া, হটাৎ ঘরের দরজায় শব্দ, কিছুটা চমকে উঠেন আছিয়া, বাহির থেকে করিম মিয়ার আওয়াজ, ভয়ার্ত মনে যেনো স্বস্তি ফিরে এলো, আছিয়া গিয়ে দরজা টা খুললেন, করিম মিয়া ভিজে একাকার, সরাসরি ঘরে চলে আসলেন, এসেই বাজারের ব্যাগটা আছিয়ার হাতে দিয়ে বললেন=বউ, তুমারে যে হেদিন (সেদিন) একটা তাবিজ আইন্না দিছিলাম, হেইডা দেও ত আমারে, আমি ওই হুজুরের কাছ থাইকা নতুন তাবিজ আনছি, তুমার তাবিজ টা কোথায় রাখছো? কোমড়েই ত নাকি? আছিয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে করিমের দিকে, এইতো ৪-৫ দিন আগে ঘুমের ভিতর স্বপ্নে ভয় পেতো আছিয়া, তা ছাড়া রাতে টয়লেটে গেলে কে যেনো পিছনে আসতেছে, এমন শব্দ পেতো আছিয়া। বিষয়টা করিমের সাথে শেয়ার করার পর করিম এলাকার হুজুরের কাছ থেকে শরীর বন্ধের তাবিজ এনে দেয় আছিয়াকে, আর আজকেই সেটা খুলে নতুন তাবিজ দিতে আছিয়াকে নির্দেশ দিচ্ছে করিম। আছিয়ার অবাক চাহনি দেখে করিম আবার বলতে শুরু করলো=কই গো, কোমড় থেকে তাবিজটা খুলে আমাকে দাও, আমি তুমাকে নতুন তাবিজ দিচ্ছি। আছিয়া এবার করিমকে বললো=আরে যান ত আগে গোসল করে আসেন, শরীর ত একদম ভিজে গেছে, আমি বাজারের ব্যাগ থেকে বাজার গুলো বের করি, গোসল করে আসেন, তারপর তাবিজ দিচ্ছি। বাহিরে বৃষ্টি কমে গেছে, করিম মিয়া এবার ধমকের সুরে বললেন=হুজুরে কইছে বাড়িতে গিয়াই এটা তুমারে দিতে, নয়তো সমস্যা হবে। করিম মিয়া যখন তার বউয়ের সাথে কথা বলছে, ঠিক এমন সময় দরজায় ঠকঠক শব্দ, করিম মিয়া দ্রুত বিছানার পাশে থাকা আলনা থেকে লুঙ্গি টা নিয়ে বউকে বললেন আমি গোসলে যাচ্ছি, আর দরজা টা খুলে দেখো ত কে এলো। আছিয়া দরজার কাছে গিয়ে দরজা খুলতেই যেনো পুরোপুরি আতকে উঠলেন, এটা কিভাবে সম্ভব, বাহিরে ত করিম মিয়া দাড়িয়ে আছে, তাহলে তিনি যে দেখলেন করিম মিয়া ভিতরে। আছিয়া বেগম ভিতরে তাকিয়ে দেখলেন ঘরের ভিতর থাকা করিম মিয়া নাই। আছিয়া বেগম এবার বাহিরের করিম মিয়াকে জিঙ্গাসা করলেন=আ আ আপনি ত ভিতরে ছিলেন, এখানে আসলেন কিভাবে?

করিম মিয়া ভ্রু কুচকে অবাক হয়ে জিঙ্গাসা করলেন=মানে, কি কইতাছো? আমি ভিতরে ছিলাম? আমি ত মাত্র বাজার থেকে আসলাম, এই ধরো বাজার, বাবা তুমার জন্য চিংড়ি মাছ কিনে পাঠিয়েছে, দরজা থেকে সরো, ভিতরে যাই

আছিয়া বেগম ভয় পেয়ে গেলেন, এটা কি করে সম্ভব, তাহলে কিছুক্ষন আগে যে ঘরে একজন আসলেন, সে কে ছিলো? আছিয়া বেগম ভয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকেন। করিম মিয়া ভিতরে গিয়ে আছিয়া বেগমকে খাটে বসান, জিঙ্গেস করেন কি হয়েছে, আছিয়া বেগম তার সাথে ঘটা সব বিষয় খুলে বলেন, প্রমান সরুপ ঘরের ভিতরে আগের করিম মিয়ার পায়ের ছাঁপ আর বাজারের ব্যাগ দেখান, করিম মিয়া বাজারের ব্যাগের কাছে গিয়ে ব্যাগ খুলতেই তিনি চমকে উঠেন, কারন ব্যাগের ভিতর কিছু হাড্ডি দেখতে পান তিনি, তবে সেটা কিসের হাড্ডি তিনি বুজতে পারেননি। আছিয়া বেগম এরপরের কাহিনী আর বলতে পারেননি, মানে তিনি জ্ঞান হারান, যখন তার জ্ঞান আসে, তখন তিনি নিজেকে তার বিছানায় আবিস্কার করেন, চেয়ে দেখেন তার সামনে তার শশুর, করিম, একজন হুজুর, ও তার কাকা শশুর দাড়িয়ে আছে। আছিয়া বেগম শুয়া থেকে উঠে বসেন, তখন হুজুর বলতে থাকেন

হুজুর=দেখো মা, আমি তুমাকে চিনি, সেদিন যখন করিমের বৌভাত হলো, সেদিন তুমাকে দেখেছিলাম, তুমি অনেক লক্ষী একটা মেয়ে, তুমাদের বাড়ির পিছনে যে বাঁশের ঝাড় দেখতে পাচ্ছো, সেখানে খারাপ একটা আজর (অশরীরী) থাকে। তুমি যখন নতুন বউ হয়ে এ বাড়িতে আগমন করলে, তখন থেকেই সে তুমাকে চোখে চোখে রাখতো। সে তুমার রক্ত পান করতে চেয়েছিলো, তুমি বাথরুমে যাওয়ার সময় যে ভয়টা পেতে, সেই ভয়টা এই আজরেই (অশরীরী) দেখিয়েছিলো, আজকে রাতে যখন বাড়িতে কেও ছিলোনা, তখনি সে তুমাকে একা পেয়ে ভক্ষন করতে চেয়েছিলো এবং করিম বাবার রুপ ধরে তুমার ঘরে এসেছিলো, ভাগ্য ভালো যে তুমি তুমার শরীর থেকে তাবিজ টা খুলোনি, যদি তাবিজ টা খুলতে, তবে এখন এই মুহুর্তে তুমাকে আমরা জীবিত নাও দেখতে পেতাম। আর যে বাজারের ব্যাগে হাড়গুলো পাওয়া গেছে, ওই হাড়গুলো কোনো মানুষের হবে, তবে কোন মানুষের তা বলতে পারবোনা, আমি হাড়গুলো আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছি, ওই হাড়গুলোই ছিলো আজরের (অশরীরীর) মুল শক্তি। আমি সবকিছু করিমের কাছ থেকে শুনেছি, আর তুমার ওই শরীর বন্ধের তাবিজটা আমিই দিয়েছিলাম। আজকে আমি পুরো বাড়ি বন্ধ করে দিচ্ছি, আজকের পর থেকে ইনশাআল্লাহ আর কখনো কোনো সমস্যা হবেনা। তবে তুমি তুমার কোমড়ের তাবিজের প্রতি খেয়াল রাইখো, আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বা, ঘুমানোর আগে চার কুল ও আয়তুল কুরসী পড়ে ঘুমাবা। আরো বেশ কিছু নিয়মকানুন দিয়ে হুজুর বিদায় নেন। এরপর থেকে আছিয়া বেগমের আর কোনো সমস্যা হয়নি। বর্তমানে আছিয়া বেগম ৪ সন্তানের জননী, কালের বিবর্তনে আছিয়া বেগম এখন ময়মনসিংহ শহরে ফ্ল্যাটে থাকেন, করিম মিয়া কিছুদিন আগে গত হয়েছেন, আছিয়া বেগমের দুই ছেলে পড়াশোনা করতেছে, এক ছেলে পুলিশের দায়িত্বে আর একজন মেয়ে ঢাকায় এমবিবিএস ডাক্তার, সেই ছোট্ট মাটির ঘরের আছিয়া বেগম এখন আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। এই ছিলো আমার দুসম্পর্কের ফুফুর কাছ থেকে শুনা তার জীবনের বাস্তব কাহিনী।

চলবে।

Hasibul hasan santo, Santa akter, Sk imran, Tanusri roi, Badol hasan, Asha islam, Sakib sikdar and লেখাটি পছন্দ করেছে

Back to top
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum