- Ahmed Chanchalধুমকেতু
- Posts : 11
স্বর্ণমুদ্রা : 1293
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-01
Age : 56
Location : Savar,Dhaka,Bangladesh
টাকার গাছ
Sat Jun 05, 2021 9:53 am
পর্ব-১
মায়ের কোল জুড়ে আবারো এক নবজাতকের কান্না।থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নার্স নতুন কন্যা শিশু তুলে দিলেন মা'র কাছে।আলেয়ার বুকে চিকন চিৎকারের নরম কাঁপা স্বর,নতুন জোছনা মুখ।
এমন সময় মা'র কি আর তর সয়,দূর্বল শরীরটাকে কাঁত হয়ে বা দিকে আঁচলের নীচে লুকিয়ে নিলো নিজের সন্তান।মুখে তুলে দিলো,"প্রাণীর প্রথম খাবার-মাতৃদুগ্ধ"।
পায়ের কাছে বসে মিটিমিটি হেসে ওঠা হাস্যোজ্জল আর একটা মুখ।আট বছরের পূর্ণিমা আলেয়ার বড়মেয়ে।
সেই যে কখন,বায়নার দুহাত বাড়িয়ে বসে আছে। আরেক 'আপন' আপনেরে কোলে তুলে নিবে।
একরাজ্য খুশি ভরা বুক গর্বিত কন্ঠে বলতে চাইছে-'আমরা এখন দুই বোন'।
হন্তদন্ত ছুটে এলেন,ষাটোর্ধ বৃদ্ধা আরেক জননী।
: আলো'রে,তর জামাইরে নীচে খুইজা পাইলাম না তো!
আলেয়া মুখ ঘুরিয়ে নিজের মায়ের মুখের পানে তাকিয়ে খুঁজে ফিরে,বিশাল এক ঘোর অন্ধকারের ছায়া।স্তন্যপানের আলগা মুখে আবারও কান্নার স্বর।
: দে,মাইয়াডারে আমার কোলে দে।
পরম তুলতুলে নরম শরীর টারে আলগোছে যত্নে তুলে নিলেন নানীর আঁচলে।কোল থেকে কোলে তুলে নিবার শেষ প্রতিযোগির তো এবার বসে থাকা দায়।নানীর গা ঘেঁষে বসে পূর্ণিমা,কোমল হাতে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দ্যাখে তারচেয়ে বেশি নরম কাদার ঠোঁট,নাক,মুখ,চোখ।
: অই নানী,আমার কোলে দাও না।
কি আর করা,নানী অধির অপেক্ষার নাছোড়বান্দা তৃতীয় কোলে দিলেন- একদলা নরম মাংসপিন্ডের শরীর।
পূর্ণ হলো যেন পূর্ণিমার রাতের আলোর হাসি। এক শিশুকে কোলে জড়িয়ে অন্য শিশুর ঝলমলে সুখের রঙ,দু পলক আনমনে উপভোগ করে দুই জগতের মা।
কোলে এলিয়ে দুলিয়ে বলতে থাকলো,
: আমি পূর্ণিমা,অর নাম দিলাম জোসনা...
: হ তর চাইতে সুন্দরীতো জোসনা'ই অইবো,অহন দে আমার কাছে।
: না,দিমুনা আমি..
নানী-নাতনীর একতাল কাড়াকাড়ি।
সদ্য প্রসবের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া আলেয়ার দূর্বল চাহনিতে মিষ্টি মধুরতা।
গায়ে একচুল শক্তিও নেই উঠে দাড়াবার।তবুও শতভাগ কষ্টে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ "কষ্টসুখ" উপভোগ করে শুধু এই মায়ের জাতি।
হাসপাতালের এক বেডে স্বর্গ সুখের ওরা চারজন,ওপাশের দেয়াল ঘেষা দক্ষিণ দিকের দুটো সিটে অন্য দুজন রোগী ছাড়া - অন্য লোক সমাগম নেই।
রাত দশটা পেরোয়নি।
কেমন যেন নীরব নিস্তব্ধতায় ঘিরে আসছে চারপাশে।ডিউটিতে থাকা নার্স দেখে গেছে।
যাবার সময় বলে দিয়ে গেছেন,
: মা-মেয়ে দুজনেই সুস্থ ও নিরাপদ,কোন সমস্যা নেই,গলা শুকিয়ে এলে দুঢোক পানি খাবেন।
গ্রামের রাত দশটাই রাত্রির গভীরতা।
রাত যত বাড়ছে,পানির তেষ্টা দূরে থাক;অজানা শিহরনে কাঁপছে আলেয়ার বুক।
: কেমন স্বামী না বাপ সেই যে দূপুরে ফেলে গেছে হাসপাতালে,তারপর বেমালুম গায়েব।
ভয়ের ছায়া গিলতে গিলতে আসল কথাটা বলতে পারছে না আলেয়া।
: মা,পানির গেলাস টা দে।
দু ঢোক পানিতে মনে করবার চেষ্টা করে বিগত সকালের কথা। বাড়ি থেকে প্রচন্ড ব্যথায় ডুকরে কেঁদে উঠেছিলো স্বামী করিম মিয়ার নিজের ভ্যানে।মা আর পুর্ণিমা জাপটে ধরে বসেছিল কোমর পায়ের কাছে। রোদ মাথায় কষ্টের প্যাডেলে পা চালাতে চালাতে স্বামী দুইবার ফিসফিসিয়ে বলেছিলো,
: আবার যদি মাইয়্যার মুখ দেখাস,তয় খবর আছে।
রাতের নিস্তব্ধতা ঘিরে একবৃদ্বার কোলে আর কাঁধে ঘুমিয়ে পরেছে দুই শিশু,
আহারে 'জোসনা-পূর্ণিমা'!
ওদিকে মায়ে-ঝিয়ে হতাশার বিষাদে শঙ্কিত উৎকন্ঠা।প্রহর প্রহরে নির্ঘুম অজানা উদ্বেগ-
: না জানি কি আছে তাদের দুই রাজকন্যার কপালে।
(ক্রমশ)
আহমেদ চঞ্চল
Sadia Rahman, Ahmed Chanchal, Hasibul hasan santo, Santa akter, Rasel islam, Sonchita, Rayhan50 and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Ahmed Chanchalধুমকেতু
- Posts : 11
স্বর্ণমুদ্রা : 1293
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-01
Age : 56
Location : Savar,Dhaka,Bangladesh
Re: টাকার গাছ
Sun Jun 06, 2021 5:30 am
টাকার গাছ
পর্ব-২
হাসপাতাল থেকেই মেয়ে হয়েছে শুনবার পর সেই নিরুদ্দেশ,নিজের রিকশা ভ্যান সহ পালিয়েছে করিম মিয়া।জোসনা'র বয়স দুইয়ের কাছাকাছি।সন্তানের মুখটা দেখবার প্রয়োজন মনে করে নাই।সংসার,গ্রাম সবকিছু ছেড়েছুড়ে কোথায় হারিয়ে গেছে বাপ,কেউ তার খবর রাখেনি।
অকারণে বাবা পলাতক হলেও অভাগী আলেয়া দুই সন্তান লয়ে পালাবে কোথায়!
সেই শুরুর এক সপ্তাহেই,দুই সন্তান সহ গলাধাক্কা দিয়ে বিদায় করে নিশ্চিন্ত হয়েছে শ্বশুর-শ্বাশুরী।
তাদের একটাই কথা,
: নিজের বাড়িতে গিয়া সোয়ামী রে খুইজা ল,আমাগো কিচ্ছু করবার নাই।
কোলেপিঠে দুই সন্তানের বোঝা লয়ে ফিরে আসে একমাত্র ভরসার আধামরা মায়ের ঘরে।মেঠোপথের ধারে দুই শতক খালি জায়গায় একটা ছাপরা ঘরের বৃদ্ধা মা ছাড়া ইহজগতে আশ্রয় দিবার মত কেউ নেই ওদের।
এঘর-ওঘর করে দশগ্রামের সবার কাছে ব্যাপারটা জানাজানি হলেও,অমন সোয়ামী না হারামি কে খুঁজে আনবার দায় থাকেনা এ সমাজের কাছে।উন্নত দেশের মতই এমন অঘোষিত বিচ্ছিন্ন বিচ্ছেদ সমাজের টুকরো খবর,এখন সস্তা কথা।
স্বামী হারা আলেয়ার তবুও মন পোড়ায় বারবার,
: আমার স্বামীডার কিছু হয় না-ই তো..আবার।
বারবার শ্বশুর বাড়িতে খুঁজতে গিয়ে অযথা লাঞ্ছিত হয়,তাদের কিন্তু ছেলে হারানোর ভয় নাই।কি অবাক নিশ্চিন্ত সবাই,বউ যেন ঘরে না উঠতে পারে এটাতেই বেশি সোচ্চার।
মোবাইল জামানা,আলেয়ার কারণ বুঝতে অসুবিধা হয় না,তবুও অকারণ মায়া- ভয় জুড়ে থাকে মনে।স্বামী'র নিশ্চিত খবরটা কেউই দিতে পারে না,না কি দেয়না।এটাও তো অনিশ্চিত।
সেদিনও জেনেশুনে আরেকবার লাঞ্ছিত হতে গিয়েছিলো শ্বশুর বাড়ি।উত্তর পাড়া দিয়ে দুপুররোদে আঁচলে মুখ লুকিয়ে কেঁদে বাড়ি ফিরছিলো আলেয়া।খালের মোচড়ে দৌড়ে ছুটে এলো জেলেপাড়ার গোবিন্দ,ওর স্বামীর বন্ধু।
: বৌদি, ও- বৌদি খাড়াও,খাড়াও...
থমকে দাড়ায় আলেয়া।অমন দু একটা পরিচিত মুখই এখন আলেয়ার ভরসা।
: কি দাদা,খবর পাইলেন।
: হ,পাইছি - তয়....
হ্যা,আলেয়াদের জন্য এমনি নিষ্ঠুরতার নীরব গল্প লিখতে হয়!শুনতে হয় মেরুদণ্ড ভাঙ্গার অসম গল্প।বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটে তাদের মাথায়।
ঢাকা শহরের কোন এক অজানা রাস্তায় দেখা হয়েছিলো রূপ বদলানো রিকশা চালক করিম মিয়ার সাথে। একদমে আউরিয়ে যায় গোবিন্দ।
: কইলো,শহরের কোন এক বস্তিতে থাকে,আবার বিয়া করছে।বউ গারমেনসে চাকরি করে,হুনলাম বৌ না কি পোয়াতি।শহরের বড় হাসপাতালে আগাম জানায়ে দিছে- পোলার বাপ অইবো।অয়তো মহাখুশি,তোমাগোর কথা কানেও নিলো না।
: এত্ত তাড়াতাড়ি,এই গুলা ক্যামনে সম্ভব! হাউমাউ করে কেঁদে ওঠা আলেয়ার বিলাপের কন্ঠ,সবুজ বিলের তরতাজা বাতাসে উড়ে গিয়ে হারিয়ে যায়।মূখের শান্তনায় আর কি হয়।
অপরাধির মতোই ভেজামনে বিদায় নেয় গোবিন্দ।
ভরদুপুরের নিরিবিলি পথের ধারে গাছের ছায়ায় অনেকক্ষণ বসে থাকে একটা অসহায় পাখি।
তার বুকের ভিতরে ডানা ঝাপ্টায়,খাবারের অভাবে ম্যারম্যারে রোগা,পটলা শরীরের দুই সন্তান- অজস্র কিচিরমিচির।বাবা পাখি তো ফুর্তিতে উড়বার আকাশে হারিয়ে গেছে, কি হবে এখন!
দুই পা আর চলতে চাইছে না আলেয়ার।মনে মনে এমন কিছুরই আঁচ করেছিলো আলেয়া।আজ আকাশ ভাঙ্গার স্বরে খোলাসা হলো সব।
কি আশ্চর্য আমাদের সমাজ ব্যবস্থা! কোথায় যেন এখনো সেই পুরনো অনিয়ম চিরধরা ক্ষত।ভিতরে ভিতরে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে থাকে কন্যা দায়ের বিবর্ণমুখ,মেঘ না চাইতে জলের মতো- ছেলে পাওয়ার অসুখ।
সচেতনতার আড়ালে কত অশিক্ষার ভুক্তভোগী আলেয়ার সংসার। কে খুঁজে দেখবে কি পাপ- নিস্পাপ দুটো শিশুর মাথায়।
নীরবে অন্ধ ঘুণপোকায় কাটা এমন অজস্র সংসার।এদের কারো বাবা এক সংসার ফেলে,ঋতু বদলের মতোই অজুহাতে বদলায়।এক বন্দর ছাড়েতো নগরায়নের অন্যত্র ফেলে নোঙর,আবার পাতে নতুন সংসার।শুধুই কি পুরুষেরাই এইসব করে।তাহলে শহরের আনাচকানাচে চাক্ষুষ সামাজিকতার ভিড়ে,এসব রহিম,করিম মিয়ার দ্বিতীয় তৃতীয় বউরাও ধোঁয়া তুলসি পাতা না।
যাচাই-বাছাই ছাড়া ওদের ও চাই শুধু সংসার।উনারাও বিপাকের মাথায় কম যান না।
কুকুর বিড়ালের মত সন্তান জন্মিয়ে ছেড়ে যায় রাস্তায়।ভুল আর ভুলে ভরা কোলাহলে,হুটহাট এরা ভেঙে দেয় অন্য রমনীর স্বপ্ন।
এভাবেই সারাদেশে ফাঁদ পাতা সংসারে ছড়িয়ে দেয় অজস্র ছিন্নমুল শিশু।প্রথম আদরের নামগুলো সমাজের সাথে তাল মিলিয়েই রাখে।ওরা হয় - জোসনা পূর্ণিমা রতন মানিক। থাকেনা শুধু অন্ন বস্ত্র আশ্রয়ের মৌলিক চাহিদার নিশ্চিত অধিকার।
শহর থেকে গ্রাম,বন্দর বন্দরে এরা কখনো আমাদের বিজ্ঞাপনের 'পথশিশু'! শিল্পীর অনবদ্য প্রতিবাদ- 'টোকাই'!!
লোকসান হয় না আমাদের,তাই আসল দোষগুলো খুঁজিনা।এগিয়ে যায় আমাদের সমাজ উন্নয়নের অধিকারের মিটিং,মিছিল।খোঁজা হয়না প্রজন্ম বাড়ানোর এ এক অদ্ভুত 'কালচার'! ল্যাপ্টালেপ্টি করে জড়িয়ে থাকে আমাদের সাথে।
নিয়ম থাকলেও,থাকেনা শুধু অবাধে জন্ম নেয়া এইসব অবহেলিত শিশুর 'বার্থ সার্টিফিকেট',জন্মের সাথে খোঁজা হয়না কারা এদের অভিভাবক।
ক্রমশ
আহমেদ চঞ্চল
পর্ব-২
হাসপাতাল থেকেই মেয়ে হয়েছে শুনবার পর সেই নিরুদ্দেশ,নিজের রিকশা ভ্যান সহ পালিয়েছে করিম মিয়া।জোসনা'র বয়স দুইয়ের কাছাকাছি।সন্তানের মুখটা দেখবার প্রয়োজন মনে করে নাই।সংসার,গ্রাম সবকিছু ছেড়েছুড়ে কোথায় হারিয়ে গেছে বাপ,কেউ তার খবর রাখেনি।
অকারণে বাবা পলাতক হলেও অভাগী আলেয়া দুই সন্তান লয়ে পালাবে কোথায়!
সেই শুরুর এক সপ্তাহেই,দুই সন্তান সহ গলাধাক্কা দিয়ে বিদায় করে নিশ্চিন্ত হয়েছে শ্বশুর-শ্বাশুরী।
তাদের একটাই কথা,
: নিজের বাড়িতে গিয়া সোয়ামী রে খুইজা ল,আমাগো কিচ্ছু করবার নাই।
কোলেপিঠে দুই সন্তানের বোঝা লয়ে ফিরে আসে একমাত্র ভরসার আধামরা মায়ের ঘরে।মেঠোপথের ধারে দুই শতক খালি জায়গায় একটা ছাপরা ঘরের বৃদ্ধা মা ছাড়া ইহজগতে আশ্রয় দিবার মত কেউ নেই ওদের।
এঘর-ওঘর করে দশগ্রামের সবার কাছে ব্যাপারটা জানাজানি হলেও,অমন সোয়ামী না হারামি কে খুঁজে আনবার দায় থাকেনা এ সমাজের কাছে।উন্নত দেশের মতই এমন অঘোষিত বিচ্ছিন্ন বিচ্ছেদ সমাজের টুকরো খবর,এখন সস্তা কথা।
স্বামী হারা আলেয়ার তবুও মন পোড়ায় বারবার,
: আমার স্বামীডার কিছু হয় না-ই তো..আবার।
বারবার শ্বশুর বাড়িতে খুঁজতে গিয়ে অযথা লাঞ্ছিত হয়,তাদের কিন্তু ছেলে হারানোর ভয় নাই।কি অবাক নিশ্চিন্ত সবাই,বউ যেন ঘরে না উঠতে পারে এটাতেই বেশি সোচ্চার।
মোবাইল জামানা,আলেয়ার কারণ বুঝতে অসুবিধা হয় না,তবুও অকারণ মায়া- ভয় জুড়ে থাকে মনে।স্বামী'র নিশ্চিত খবরটা কেউই দিতে পারে না,না কি দেয়না।এটাও তো অনিশ্চিত।
সেদিনও জেনেশুনে আরেকবার লাঞ্ছিত হতে গিয়েছিলো শ্বশুর বাড়ি।উত্তর পাড়া দিয়ে দুপুররোদে আঁচলে মুখ লুকিয়ে কেঁদে বাড়ি ফিরছিলো আলেয়া।খালের মোচড়ে দৌড়ে ছুটে এলো জেলেপাড়ার গোবিন্দ,ওর স্বামীর বন্ধু।
: বৌদি, ও- বৌদি খাড়াও,খাড়াও...
থমকে দাড়ায় আলেয়া।অমন দু একটা পরিচিত মুখই এখন আলেয়ার ভরসা।
: কি দাদা,খবর পাইলেন।
: হ,পাইছি - তয়....
হ্যা,আলেয়াদের জন্য এমনি নিষ্ঠুরতার নীরব গল্প লিখতে হয়!শুনতে হয় মেরুদণ্ড ভাঙ্গার অসম গল্প।বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটে তাদের মাথায়।
ঢাকা শহরের কোন এক অজানা রাস্তায় দেখা হয়েছিলো রূপ বদলানো রিকশা চালক করিম মিয়ার সাথে। একদমে আউরিয়ে যায় গোবিন্দ।
: কইলো,শহরের কোন এক বস্তিতে থাকে,আবার বিয়া করছে।বউ গারমেনসে চাকরি করে,হুনলাম বৌ না কি পোয়াতি।শহরের বড় হাসপাতালে আগাম জানায়ে দিছে- পোলার বাপ অইবো।অয়তো মহাখুশি,তোমাগোর কথা কানেও নিলো না।
: এত্ত তাড়াতাড়ি,এই গুলা ক্যামনে সম্ভব! হাউমাউ করে কেঁদে ওঠা আলেয়ার বিলাপের কন্ঠ,সবুজ বিলের তরতাজা বাতাসে উড়ে গিয়ে হারিয়ে যায়।মূখের শান্তনায় আর কি হয়।
অপরাধির মতোই ভেজামনে বিদায় নেয় গোবিন্দ।
ভরদুপুরের নিরিবিলি পথের ধারে গাছের ছায়ায় অনেকক্ষণ বসে থাকে একটা অসহায় পাখি।
তার বুকের ভিতরে ডানা ঝাপ্টায়,খাবারের অভাবে ম্যারম্যারে রোগা,পটলা শরীরের দুই সন্তান- অজস্র কিচিরমিচির।বাবা পাখি তো ফুর্তিতে উড়বার আকাশে হারিয়ে গেছে, কি হবে এখন!
দুই পা আর চলতে চাইছে না আলেয়ার।মনে মনে এমন কিছুরই আঁচ করেছিলো আলেয়া।আজ আকাশ ভাঙ্গার স্বরে খোলাসা হলো সব।
কি আশ্চর্য আমাদের সমাজ ব্যবস্থা! কোথায় যেন এখনো সেই পুরনো অনিয়ম চিরধরা ক্ষত।ভিতরে ভিতরে আষ্টে পিষ্টে জড়িয়ে থাকে কন্যা দায়ের বিবর্ণমুখ,মেঘ না চাইতে জলের মতো- ছেলে পাওয়ার অসুখ।
সচেতনতার আড়ালে কত অশিক্ষার ভুক্তভোগী আলেয়ার সংসার। কে খুঁজে দেখবে কি পাপ- নিস্পাপ দুটো শিশুর মাথায়।
নীরবে অন্ধ ঘুণপোকায় কাটা এমন অজস্র সংসার।এদের কারো বাবা এক সংসার ফেলে,ঋতু বদলের মতোই অজুহাতে বদলায়।এক বন্দর ছাড়েতো নগরায়নের অন্যত্র ফেলে নোঙর,আবার পাতে নতুন সংসার।শুধুই কি পুরুষেরাই এইসব করে।তাহলে শহরের আনাচকানাচে চাক্ষুষ সামাজিকতার ভিড়ে,এসব রহিম,করিম মিয়ার দ্বিতীয় তৃতীয় বউরাও ধোঁয়া তুলসি পাতা না।
যাচাই-বাছাই ছাড়া ওদের ও চাই শুধু সংসার।উনারাও বিপাকের মাথায় কম যান না।
কুকুর বিড়ালের মত সন্তান জন্মিয়ে ছেড়ে যায় রাস্তায়।ভুল আর ভুলে ভরা কোলাহলে,হুটহাট এরা ভেঙে দেয় অন্য রমনীর স্বপ্ন।
এভাবেই সারাদেশে ফাঁদ পাতা সংসারে ছড়িয়ে দেয় অজস্র ছিন্নমুল শিশু।প্রথম আদরের নামগুলো সমাজের সাথে তাল মিলিয়েই রাখে।ওরা হয় - জোসনা পূর্ণিমা রতন মানিক। থাকেনা শুধু অন্ন বস্ত্র আশ্রয়ের মৌলিক চাহিদার নিশ্চিত অধিকার।
শহর থেকে গ্রাম,বন্দর বন্দরে এরা কখনো আমাদের বিজ্ঞাপনের 'পথশিশু'! শিল্পীর অনবদ্য প্রতিবাদ- 'টোকাই'!!
লোকসান হয় না আমাদের,তাই আসল দোষগুলো খুঁজিনা।এগিয়ে যায় আমাদের সমাজ উন্নয়নের অধিকারের মিটিং,মিছিল।খোঁজা হয়না প্রজন্ম বাড়ানোর এ এক অদ্ভুত 'কালচার'! ল্যাপ্টালেপ্টি করে জড়িয়ে থাকে আমাদের সাথে।
নিয়ম থাকলেও,থাকেনা শুধু অবাধে জন্ম নেয়া এইসব অবহেলিত শিশুর 'বার্থ সার্টিফিকেট',জন্মের সাথে খোঁজা হয়না কারা এদের অভিভাবক।
ক্রমশ
আহমেদ চঞ্চল
Ahmed Chanchal, Rasel islam, Sonchita, Rayhan50, Tanusri roi, Badol hasan, Mr faruk and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Ahmed Chanchalধুমকেতু
- Posts : 11
স্বর্ণমুদ্রা : 1293
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-01
Age : 56
Location : Savar,Dhaka,Bangladesh
Re: টাকার গাছ
Mon Jun 07, 2021 8:14 am
টাকার গাছ
পর্ব- ৩
বয়সের দশ পেরিয়েছে অথবা পেরোয়নি,এই আমাদের পূর্ণিমা।পড়াশোনার বই ফেলে কোলে তুলে নিয়েছে ছোটো বোন জোসনা'র দায়ভার।কিচ্ছু করার নেই মা' আলেয়ার।দু-চোখ ভরা তার সরষে ফুলের হলুদ সংসার।সন্তান মানুষ করার আগে খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখাটাই এখন প্রথম জরুরি কাজ।
উপায়হীন উপাত্তে থেমে গেছে মনোযোগী মেধাবী পূর্ণিমার চতুর্থ শ্রেণি!আনন্দমূখর স্কুল!
দুঃখী দের কপালে দূঃখ বাসা বাঁধে নিপুণ হাতে।খেয়ে না খেয়ে পিছিয়েই থাকো,সমুখে আরও অন্ধকার!
একটা কোলের শিশু থেকে অন্যজন ষাটোর্ধ বৃদ্ধা,তিন প্রজন্মের নারী নক্ষত্রের সংসার।
বুড়িমা' র জীবনটাও শেষ!এ্যাজমা-হাপাঁনী আর শাসকষ্টে নেতিয়ে পরেছে তেলচিটে কাঁথার বিছানায়।কুঁচকে যাওয়া মাংসের নীচে লুকিয়ে রাখা কংকাল- শ্বাস বেরোয় তো বেরোয় না করে তার মরনের দিন গোনা।একজোড়া নীল মায়াবী চোখের অবশ শরীরে তবুও 'এ্যাই-ওই' করে করে নাতনিদের কত্ত রকমে সামলে নেয়।
পূর্নিমার তো অতশত বুঝ আসবার কথা না।ওর যে এখন,
"ইচ্ছে ডানায় কেবল ওড়াউড়ি।"
সুযোগ পায়তো- নানির কোলের কাছে হামাগুড়ি দেয়া জোসনাকে বসিয়ে রেখে 'দে- ছুট....
: নানি,জোসনারে দেইখো আমি অহনি আইতাছি।
উড়ে যায় নরম প্রজাপতি বিল-ঝিল,বনেবাদাড়ে।
তিন কন্যার সংসারের কর্তা আলেয়ার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবার সময় নাই।
চার-চারজন মানুষের ভরন পোষণ,খড়কুটো যোগানের একমাত্র সম্বলতো আলেয়া,শুধুই আলেয়া।
মা সুস্থ অবস্থায় এবাড়ি-ওবাড়ি ফুটফরমাশ খেঁটে,ধানের মরশুমে ক্ষেতে পরে থাকা ধান কুড়ানির যোগান আসতো।এখন উল্টে গেছে সময়,বদলে গেছে ভাগ্যের খেলা।
গ্রামের সুখে থাকা ময় মুরুব্বিদের করুণার বৃথা আর্তনাদ।
:আলো'রে তর পোড়াকপালে সুখ সয় না!
অভাগী মা'র জন্য প্রতি সপ্তাহে সরকারি হাসপাতালের ওষুধের ধরনা থেকে চার মুখের খাবার যোগাড় সবই করতে হয়,সে খবরে কারো হদিস নাই।জানিনা,
: আলেয়া একা এইসব কিভাবে পারে!?
বাল্য বেলায় পিতৃহারা সন্তানের হতদরিদ্র মায়ের পাশে দাড়িয়েছিলো গ্রামের মোড়ল-মাদবর নামের মূর্খ কর্তা ব্যক্তিগণ।
: "বাল্যবিয়ে"....!!
তারপর,আজ যা দেখছেন-গল্পকে হার মানিয়ে এইযে আলেয়ার ঝলমলে সংসার!
সমাজের ইদানীং কর্তাব্যক্তিদের চোখে এইসব দেখবার বাধাধরা ঠ্যাকাঠেকি নেই।
এখন সময় ভোটাধিকারের সম্মানে 'সেলফিত্রাণ'!
ইউপি থেকে সংসদ,সময়মতো ক'দিন ওড়াও কড়কড়ে নোট,ভোট শেষ হয়ে গেলে নিজেদের আখের গোছানোর জোট বাঁধো।বন্যা,ঝড়,জলোচ্ছ্বাস আর দূর্যোগের দিনে দুই কেজি চাল ডালে ভরা নিষিদ্ধ পলিথিনে সেলফি টেস্ট মোটামুটি ভালোই চলে।ডিজিটাল ডিজিটাল ধাক্কায় আড়ালে ঢাকা পরে যায় আলেয়াদের বেসরকারি সংসার।
এই যে পড়লেন,এমনই সুখের নিয়মে।কেন পড়লেন?
এরাই আমাদের অজস্র অন্ধকারে অস্তিত্বহীন 'আলেয়া'।
এত্তো আলোর ভীড়ে রাত্রির নিস্তব্ধতায় এইসব সংসারগুলো সত্যিকারের রসায়নে ভরা।
আইল ভাঙ্গা ক্ষেতের পরে ক্ষেত পেরিয়ে...! আরে না এরাই আমাদের নরম অনুভূতির মাটিতে মাটিতেই হঠাৎ জ্বলজ্বল করে জ্বলে ওঠা অদ্ভুতুরে সংসারি আলেয়া-
"The lite of Universe"
(ক্রমশ)
আহমেদ চঞ্চল
পর্ব- ৩
বয়সের দশ পেরিয়েছে অথবা পেরোয়নি,এই আমাদের পূর্ণিমা।পড়াশোনার বই ফেলে কোলে তুলে নিয়েছে ছোটো বোন জোসনা'র দায়ভার।কিচ্ছু করার নেই মা' আলেয়ার।দু-চোখ ভরা তার সরষে ফুলের হলুদ সংসার।সন্তান মানুষ করার আগে খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রাখাটাই এখন প্রথম জরুরি কাজ।
উপায়হীন উপাত্তে থেমে গেছে মনোযোগী মেধাবী পূর্ণিমার চতুর্থ শ্রেণি!আনন্দমূখর স্কুল!
দুঃখী দের কপালে দূঃখ বাসা বাঁধে নিপুণ হাতে।খেয়ে না খেয়ে পিছিয়েই থাকো,সমুখে আরও অন্ধকার!
একটা কোলের শিশু থেকে অন্যজন ষাটোর্ধ বৃদ্ধা,তিন প্রজন্মের নারী নক্ষত্রের সংসার।
বুড়িমা' র জীবনটাও শেষ!এ্যাজমা-হাপাঁনী আর শাসকষ্টে নেতিয়ে পরেছে তেলচিটে কাঁথার বিছানায়।কুঁচকে যাওয়া মাংসের নীচে লুকিয়ে রাখা কংকাল- শ্বাস বেরোয় তো বেরোয় না করে তার মরনের দিন গোনা।একজোড়া নীল মায়াবী চোখের অবশ শরীরে তবুও 'এ্যাই-ওই' করে করে নাতনিদের কত্ত রকমে সামলে নেয়।
পূর্নিমার তো অতশত বুঝ আসবার কথা না।ওর যে এখন,
"ইচ্ছে ডানায় কেবল ওড়াউড়ি।"
সুযোগ পায়তো- নানির কোলের কাছে হামাগুড়ি দেয়া জোসনাকে বসিয়ে রেখে 'দে- ছুট....
: নানি,জোসনারে দেইখো আমি অহনি আইতাছি।
উড়ে যায় নরম প্রজাপতি বিল-ঝিল,বনেবাদাড়ে।
তিন কন্যার সংসারের কর্তা আলেয়ার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবার সময় নাই।
চার-চারজন মানুষের ভরন পোষণ,খড়কুটো যোগানের একমাত্র সম্বলতো আলেয়া,শুধুই আলেয়া।
মা সুস্থ অবস্থায় এবাড়ি-ওবাড়ি ফুটফরমাশ খেঁটে,ধানের মরশুমে ক্ষেতে পরে থাকা ধান কুড়ানির যোগান আসতো।এখন উল্টে গেছে সময়,বদলে গেছে ভাগ্যের খেলা।
গ্রামের সুখে থাকা ময় মুরুব্বিদের করুণার বৃথা আর্তনাদ।
:আলো'রে তর পোড়াকপালে সুখ সয় না!
অভাগী মা'র জন্য প্রতি সপ্তাহে সরকারি হাসপাতালের ওষুধের ধরনা থেকে চার মুখের খাবার যোগাড় সবই করতে হয়,সে খবরে কারো হদিস নাই।জানিনা,
: আলেয়া একা এইসব কিভাবে পারে!?
বাল্য বেলায় পিতৃহারা সন্তানের হতদরিদ্র মায়ের পাশে দাড়িয়েছিলো গ্রামের মোড়ল-মাদবর নামের মূর্খ কর্তা ব্যক্তিগণ।
: "বাল্যবিয়ে"....!!
তারপর,আজ যা দেখছেন-গল্পকে হার মানিয়ে এইযে আলেয়ার ঝলমলে সংসার!
সমাজের ইদানীং কর্তাব্যক্তিদের চোখে এইসব দেখবার বাধাধরা ঠ্যাকাঠেকি নেই।
এখন সময় ভোটাধিকারের সম্মানে 'সেলফিত্রাণ'!
ইউপি থেকে সংসদ,সময়মতো ক'দিন ওড়াও কড়কড়ে নোট,ভোট শেষ হয়ে গেলে নিজেদের আখের গোছানোর জোট বাঁধো।বন্যা,ঝড়,জলোচ্ছ্বাস আর দূর্যোগের দিনে দুই কেজি চাল ডালে ভরা নিষিদ্ধ পলিথিনে সেলফি টেস্ট মোটামুটি ভালোই চলে।ডিজিটাল ডিজিটাল ধাক্কায় আড়ালে ঢাকা পরে যায় আলেয়াদের বেসরকারি সংসার।
এই যে পড়লেন,এমনই সুখের নিয়মে।কেন পড়লেন?
এরাই আমাদের অজস্র অন্ধকারে অস্তিত্বহীন 'আলেয়া'।
এত্তো আলোর ভীড়ে রাত্রির নিস্তব্ধতায় এইসব সংসারগুলো সত্যিকারের রসায়নে ভরা।
আইল ভাঙ্গা ক্ষেতের পরে ক্ষেত পেরিয়ে...! আরে না এরাই আমাদের নরম অনুভূতির মাটিতে মাটিতেই হঠাৎ জ্বলজ্বল করে জ্বলে ওঠা অদ্ভুতুরে সংসারি আলেয়া-
"The lite of Universe"
(ক্রমশ)
আহমেদ চঞ্চল
Ahmed Chanchal, Sumaiya akter, Rokeya hoq, Sumon khan, Rohan Ahmed, শমির সাদিক, Soneya akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Ahmed Chanchalধুমকেতু
- Posts : 11
স্বর্ণমুদ্রা : 1293
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-01
Age : 56
Location : Savar,Dhaka,Bangladesh
টাকার গাছ
Wed Jun 09, 2021 8:00 pm
টাকার গাছ
পর্ব- ৪
ফজরের আজানের ধ্বনি কানে যাওয়ার সাথে সকালের পাখিদের নিয়মিত কিচিরমিচির কোলাহলে বিছানা ছাড়ে আলেয়া।দুই সন্তান আর বিছানায় আশ্রিত কঙ্কাল সার দেহে মিটিমিটি জেগে থাকা মা' কে নিয়ে একাই টেনে চলছে এ যাবত সংসার।কুলুর বলদ যেন।
তবুও কথায় আছেনা,
" যার কেউ থাকে না,তার আল্লাহ থাকে।"
আসলেই খাঁটি কথা,আমাদের সংসারি দিনমানের নানা ব্যস্ততায় স্রষ্টার উছিল্লিয় পরম হাতটার কথা স্মরণে রাখিনা,বিভ্রান্তি আর সুযোগের অন্বেষণে মনে থাকে না অনেক কিছু।
ভ্যানওয়ালা না শহুরে রিক্সাওয়ালা করিম মিয়ার প্রয়োজন পরেনি।চুলোয় যাক 'করিম কাহিনি'....
"রাস্তার সস্তা করিম মিয়ার নিষ্ঠুর প্রস্তুতকৃত ইতিবৃত্তটাই আসল কথা।"
পূর্নিমা আর জোসনার স্বপ্ন দেখা আলেয়ার পাশে এসে দাড়িয়েছিলো,মহিলা বিষয়ক NGO।তারা মামলার গতিপথে সুরাহা খুজেছিলো,অজ্ঞাত কারণেই আলেয়া সে পথে যেতে 'নারাজ'।
আমাদের সমাজে এরকম ভিতু মহিলারা চশমখোর- লাফাঙ্গা কুপুরুষ গুলো কে মুফ্ত' ছেড়ে দেয়। এও এক না বলা প্রেম।
আহ্!তবুও তারা স্বামীর দরদ ভুলে না।
হাল ছাড়েনি,'সমাজ উন্নয়ন সমিতি'।আলেয়াকে বাঁচতে শেখার অন্য উপায় দিয়েছে তারা।
বিনা সুদে জসিমউদদীনের বিখ্যাত 'ভেন্না পাতার ছানি' র মত ডেরা ঘরটাকে বদলে,একটা সুন্দর দোচালা ঘর বানিয়ে দিয়েছে।ঘর দিয়েছে তো বটে,ওরাতো আর দিল্লির বাদশাহ নাসিরুদ্দিন না।
এভাবে শত ঘর সাজিয়ে দিতে গেলে দেউলিয়া হতে হবে যে।তবুও ওদের প্রজেক্টটা সত্যি প্রশংসার দাবিদার।
নিজেদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে সেলাই প্রশিক্ষণ,হাঁস-মুরগীর খামার,মৎস্য চাষ সহ এরকম বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করিয়ে একদিকে অসহায় নারীদেরকে পূণঃজাগরণে সহয়তা করে,পাশাপাশি কাজ করিয়ে সহজ মাসিক কিস্তিতে দূস্হকে সহযোগিতার টাকাটার শোধ নেয়।
বড় সুবিধা টা হচ্ছে 'মাল্টিপারপাস' খ্যাত সাইনবোর্ড ধারি 'সুদখোর' না এরা।
একটা সুযোগেই স্বপ্ন দেখার পথ পেয়েছে আলেয়া।আর দু-তিনটা মাসেই ঘর বানানোর কিস্তিটা শোধ হবে আলেয়ার।তারপর রাস্তার ধারে একটা জামা কাপড় সেলাই- বিক্রি করার দোকান প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আলেয়াকে আলোর ভুবন দেখায়।
নিজের কাছে হারতে রাজি না আলেয়া।
ঐ-যে শুরু তে লিখেছি,আজানের ধ্বনি আর পাখিদের কিচিরমিচিরে জেগে ওঠা আলেয়া,শুরু হয়ে যায় হাড্ডিতে সয়ে যাওয়া হাড়ভাংগা
খাটুনি।
মা আর সন্তানদের জন্য ভাতের ভিতরে গরম আলু সেদ্ধ রেখে,পাশের নুরু মেম্বার চাচার বাড়ির সকালের ফুটফরমাশ খেটে দু'কড়ি পায়,বাড়তি কিছু খাবার দাবার,জামা কাপড় দিয়ে সহযোগিতাও করেন 'মেম্বার'গিন্নী।
ও বাড়ির সকালের কাজটা সেরে একবেলা ফুরসত পায়না আলেয়া।কোনমতে বাড়ির পাশের ডোবাতে এক ডুব দিয়ে একনলা আলু ভর্তা ভাত গিলবার সুযোগ টা পায়।তারপর দে ছুট... সোজা মহিলা সমিতির অফিসে।আলেয়া এখন মেয়েদের স্যালোয়ার,কামিজ,ব্লাউজ,পেটিকোট মোটামুটি নিজেই কাটিং সহ সব কাজই পারে।সমিতির চেয়ারম্যান দিনা ম্যাম ওর কষ্ট, ধৈর্য্য আর সৎসাহসে যথেষ্ট খুশি।
ম্যাম,নিজে থেকেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন ঘরের টাকার শেষ তিন কিস্তি শোধ হলে।সেলাই মেশিন সহ দোকান করবার ব্যবস্থা করে দিবেন।
সামনেই তো খুশির দিন।
কিন্তু না,এক ঘরে আলেয়া,জোসনা,পূর্নিমা সব আলো থাকলেও এমন কষ্টের সংসারে কিছুটা অন্ধকার তো থাকেই।সমাজের চোখে তা ধরা দিয়েও দেয়না।কোলের জোস্নার মায়ের ভুমিকা আর বিছানায় পরে থাকা নানী সহ সংসার গোছাতে গিয়ে দশ বছরের কিশোরী পূর্নিমার পূর্ণতা থমকে গেছে। সরকারি স্কুলে বই খাতার সাথে উপবৃত্তির টাকা পাবার সুযোগ থাকতেও বন্ধ হয়ে গেছে পূর্ণিমার পড়ালেখা।
কারণ একটাই স্কুলের বই খাতা ফেলে সংসারের জোয়ালটা কাঁধে লয়ে কোলে তুলে নিয়েছে ছোট্টো বোন জোসনার দায়ভার।
এ ছাড়া যে,অসহায় মা আলেয়ার বিকল্প কোন রাস্তা নাই।
সংসার টিকিয়ে রাখতে হলে আপাতত পূর্ণিমাকে শিক্ষা বঞ্চিত রাখাই সবচেয়ে সহজ পথ।
তবুও আলেয়া আর কটা দিন পরের স্বপ্ন দ্যাখে।
সারাদিনের ব্যস্ততায় সন্ধ্যার নিভে যাওয়া গোধূলির শেষে,
মাটিতে মাদুর পাতিয়া,হ্যারিকেনের মৃদু আলোয় পূর্নিমার ইচ্ছে পূরণের তাজা কন্ঠের শব্দ শোনে,স্বপ্ন বুনে।নতুন করে জেগে উঠতে চায় যেন পাঠ্য বইয়ের পুরনো পাতা,
:যাচ্ছ কোথা?
চাংড়িপোতা
কিসের জন্য?
নেমন্তন্ন।
বিয়ের বুঝি?
না,বাবুজি।
কিসের তবে?
ভজন হবে।
শুধুই ভজন?
প্রসাদ ভোজন।
কেমন প্রসাদ?
যা খেতে সাধ।
কি খেতে চাও?
ছানার পোলাও........
তারপর কখন যেন থেমে যায় একটা আগ্রহী কন্ঠ।পাটিতে গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পরে।নেতিয়ে পরা কত্ত আদরের পূর্নিমা।হ্যারিকেনের সলতের আলো কমিয়ে মা হয়ে তীব্র কষ্টের চোখে তাকিয়ে দ্যাখে জুবুথুবু ঘুমিয়ে পরা সন্তানের ক্যালসিয়াম,প্রোটিনের অভাব জনিত ম্যারম্যারে শরীর।
রাতের মায়াবী অন্ধকারে দু-চোখ গড়িয়ে কত রাত অবধি কত্ত লোনাজল ঝরে,তা আর এই পৃথিবীর কেউ দ্যাখেনা,কেউ - না।
আহমেদ চঞ্চল
(ক্রমশ)
পর্ব- ৪
ফজরের আজানের ধ্বনি কানে যাওয়ার সাথে সকালের পাখিদের নিয়মিত কিচিরমিচির কোলাহলে বিছানা ছাড়ে আলেয়া।দুই সন্তান আর বিছানায় আশ্রিত কঙ্কাল সার দেহে মিটিমিটি জেগে থাকা মা' কে নিয়ে একাই টেনে চলছে এ যাবত সংসার।কুলুর বলদ যেন।
তবুও কথায় আছেনা,
" যার কেউ থাকে না,তার আল্লাহ থাকে।"
আসলেই খাঁটি কথা,আমাদের সংসারি দিনমানের নানা ব্যস্ততায় স্রষ্টার উছিল্লিয় পরম হাতটার কথা স্মরণে রাখিনা,বিভ্রান্তি আর সুযোগের অন্বেষণে মনে থাকে না অনেক কিছু।
ভ্যানওয়ালা না শহুরে রিক্সাওয়ালা করিম মিয়ার প্রয়োজন পরেনি।চুলোয় যাক 'করিম কাহিনি'....
"রাস্তার সস্তা করিম মিয়ার নিষ্ঠুর প্রস্তুতকৃত ইতিবৃত্তটাই আসল কথা।"
পূর্নিমা আর জোসনার স্বপ্ন দেখা আলেয়ার পাশে এসে দাড়িয়েছিলো,মহিলা বিষয়ক NGO।তারা মামলার গতিপথে সুরাহা খুজেছিলো,অজ্ঞাত কারণেই আলেয়া সে পথে যেতে 'নারাজ'।
আমাদের সমাজে এরকম ভিতু মহিলারা চশমখোর- লাফাঙ্গা কুপুরুষ গুলো কে মুফ্ত' ছেড়ে দেয়। এও এক না বলা প্রেম।
আহ্!তবুও তারা স্বামীর দরদ ভুলে না।
হাল ছাড়েনি,'সমাজ উন্নয়ন সমিতি'।আলেয়াকে বাঁচতে শেখার অন্য উপায় দিয়েছে তারা।
বিনা সুদে জসিমউদদীনের বিখ্যাত 'ভেন্না পাতার ছানি' র মত ডেরা ঘরটাকে বদলে,একটা সুন্দর দোচালা ঘর বানিয়ে দিয়েছে।ঘর দিয়েছে তো বটে,ওরাতো আর দিল্লির বাদশাহ নাসিরুদ্দিন না।
এভাবে শত ঘর সাজিয়ে দিতে গেলে দেউলিয়া হতে হবে যে।তবুও ওদের প্রজেক্টটা সত্যি প্রশংসার দাবিদার।
নিজেদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে সেলাই প্রশিক্ষণ,হাঁস-মুরগীর খামার,মৎস্য চাষ সহ এরকম বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করিয়ে একদিকে অসহায় নারীদেরকে পূণঃজাগরণে সহয়তা করে,পাশাপাশি কাজ করিয়ে সহজ মাসিক কিস্তিতে দূস্হকে সহযোগিতার টাকাটার শোধ নেয়।
বড় সুবিধা টা হচ্ছে 'মাল্টিপারপাস' খ্যাত সাইনবোর্ড ধারি 'সুদখোর' না এরা।
একটা সুযোগেই স্বপ্ন দেখার পথ পেয়েছে আলেয়া।আর দু-তিনটা মাসেই ঘর বানানোর কিস্তিটা শোধ হবে আলেয়ার।তারপর রাস্তার ধারে একটা জামা কাপড় সেলাই- বিক্রি করার দোকান প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন আলেয়াকে আলোর ভুবন দেখায়।
নিজের কাছে হারতে রাজি না আলেয়া।
ঐ-যে শুরু তে লিখেছি,আজানের ধ্বনি আর পাখিদের কিচিরমিচিরে জেগে ওঠা আলেয়া,শুরু হয়ে যায় হাড্ডিতে সয়ে যাওয়া হাড়ভাংগা
খাটুনি।
মা আর সন্তানদের জন্য ভাতের ভিতরে গরম আলু সেদ্ধ রেখে,পাশের নুরু মেম্বার চাচার বাড়ির সকালের ফুটফরমাশ খেটে দু'কড়ি পায়,বাড়তি কিছু খাবার দাবার,জামা কাপড় দিয়ে সহযোগিতাও করেন 'মেম্বার'গিন্নী।
ও বাড়ির সকালের কাজটা সেরে একবেলা ফুরসত পায়না আলেয়া।কোনমতে বাড়ির পাশের ডোবাতে এক ডুব দিয়ে একনলা আলু ভর্তা ভাত গিলবার সুযোগ টা পায়।তারপর দে ছুট... সোজা মহিলা সমিতির অফিসে।আলেয়া এখন মেয়েদের স্যালোয়ার,কামিজ,ব্লাউজ,পেটিকোট মোটামুটি নিজেই কাটিং সহ সব কাজই পারে।সমিতির চেয়ারম্যান দিনা ম্যাম ওর কষ্ট, ধৈর্য্য আর সৎসাহসে যথেষ্ট খুশি।
ম্যাম,নিজে থেকেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন ঘরের টাকার শেষ তিন কিস্তি শোধ হলে।সেলাই মেশিন সহ দোকান করবার ব্যবস্থা করে দিবেন।
সামনেই তো খুশির দিন।
কিন্তু না,এক ঘরে আলেয়া,জোসনা,পূর্নিমা সব আলো থাকলেও এমন কষ্টের সংসারে কিছুটা অন্ধকার তো থাকেই।সমাজের চোখে তা ধরা দিয়েও দেয়না।কোলের জোস্নার মায়ের ভুমিকা আর বিছানায় পরে থাকা নানী সহ সংসার গোছাতে গিয়ে দশ বছরের কিশোরী পূর্নিমার পূর্ণতা থমকে গেছে। সরকারি স্কুলে বই খাতার সাথে উপবৃত্তির টাকা পাবার সুযোগ থাকতেও বন্ধ হয়ে গেছে পূর্ণিমার পড়ালেখা।
কারণ একটাই স্কুলের বই খাতা ফেলে সংসারের জোয়ালটা কাঁধে লয়ে কোলে তুলে নিয়েছে ছোট্টো বোন জোসনার দায়ভার।
এ ছাড়া যে,অসহায় মা আলেয়ার বিকল্প কোন রাস্তা নাই।
সংসার টিকিয়ে রাখতে হলে আপাতত পূর্ণিমাকে শিক্ষা বঞ্চিত রাখাই সবচেয়ে সহজ পথ।
তবুও আলেয়া আর কটা দিন পরের স্বপ্ন দ্যাখে।
সারাদিনের ব্যস্ততায় সন্ধ্যার নিভে যাওয়া গোধূলির শেষে,
মাটিতে মাদুর পাতিয়া,হ্যারিকেনের মৃদু আলোয় পূর্নিমার ইচ্ছে পূরণের তাজা কন্ঠের শব্দ শোনে,স্বপ্ন বুনে।নতুন করে জেগে উঠতে চায় যেন পাঠ্য বইয়ের পুরনো পাতা,
:যাচ্ছ কোথা?
চাংড়িপোতা
কিসের জন্য?
নেমন্তন্ন।
বিয়ের বুঝি?
না,বাবুজি।
কিসের তবে?
ভজন হবে।
শুধুই ভজন?
প্রসাদ ভোজন।
কেমন প্রসাদ?
যা খেতে সাধ।
কি খেতে চাও?
ছানার পোলাও........
তারপর কখন যেন থেমে যায় একটা আগ্রহী কন্ঠ।পাটিতে গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পরে।নেতিয়ে পরা কত্ত আদরের পূর্নিমা।হ্যারিকেনের সলতের আলো কমিয়ে মা হয়ে তীব্র কষ্টের চোখে তাকিয়ে দ্যাখে জুবুথুবু ঘুমিয়ে পরা সন্তানের ক্যালসিয়াম,প্রোটিনের অভাব জনিত ম্যারম্যারে শরীর।
রাতের মায়াবী অন্ধকারে দু-চোখ গড়িয়ে কত রাত অবধি কত্ত লোনাজল ঝরে,তা আর এই পৃথিবীর কেউ দ্যাখেনা,কেউ - না।
আহমেদ চঞ্চল
(ক্রমশ)
Za mahmud, Rifat khan, Rose akter, Abdul rokon, Preonte catarge, Choyon khan, Muniya nur and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Ahmed Chanchalধুমকেতু
- Posts : 11
স্বর্ণমুদ্রা : 1293
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-01
Age : 56
Location : Savar,Dhaka,Bangladesh
Re: টাকার গাছ
Fri Jun 11, 2021 11:03 pm
টাকর গাছ
পর্ব-৫
পূর্ণিমার ছেঁড়া ওড়নাতে পেচিয়ে গেছে কৈশোরের দস্যিপনা।পেট-পিঠের সংসার বাঁচাতে মা আলেয়ার সারাদিন বাহিরে থাকা।বাড়ির পাশের মেম্বার চাচার বাড়িতে একবেলা থালাবাসন মাঁজা,কাপড় চোপড় ধুয়ে দু'কড়ির সাথে কিছু এঁটো পান্তা জোটে,তারপর বাকি সময়ের সন্ধ্যে অব্ধি কাটে স্বপ্ন পূরণের এনজিও' র অফিসে।
বিছানায় অবশ হয়ে পরে থাকা নানির সাথে হামাগুড়ি দেয়া ছোটো বোন জোসনা'রে লয়ে দিনের সংসারি জোয়াল কাঁধে তুলে কষ্টের মালা গাঁথে স্বপ্ন কিশোরী।
: সামনের জানুয়ারিতে আবার ইশকুলে যাবে পূর্ণিমা।হেডম্যাম' নিজেই বাড়ি এসে বলে দিয়ে গেছেন,
"ওর রেজাল্ট ভালো ছিলো তাই পঞ্চম শ্রেণিতেই ভর্তি নিবে।"
শুনেছিলাম সুখ দুঃখ নাকি পাশাপাশি থাকে,স্রস্টা বুঝি নিজে হাতে বদলে দিবেন নীরব দুস্থদের কাহিনী। কি অবাক কান্ড,একহাত একপা অবশ হয়ে যাওয়া বৃদ্ধাও এখন বিছানায় উঠে বসে।পিচ্চি জোসনাও কাঁদেনা আগের মতো।আর চারটে ঋণের কিস্তি শোধের পর মা' পাবে সেলাই মেশিন সহ দোকান ঘর।
অজানা খুশির ছোঁয়ায় নেচে ওঠে দূরন্ত কিশোরীর মন।
ছেলেদের তুলনায় ছোটো বেলা থেকেই সংসার বুঝার জ্ঞান,স্রস্টা সম্ভবত ইচ্ছে করেই মেয়েদের বেশি করে দিয়ে দেন।তা না হলে পৃথিবীর পুরুষেরা কিছুতেই সংসার টিকিয়ে রাখতে পারতো না।এই ছোট্ট পূর্ণিমার স্থানে একটা ছেলে পূর্ণ' কে বসিয়ে দিলেই আলেয়ার সংসার ভিক্ষার থালা নিয়ে নিশ্চিত পথে পথে ঘুরতে হতো। তবুও জানিনা কেন বা কিসের মোহে- আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে একটা অন্ধ ঘুণপোকায় কাটে।
কালু মিয়া,লালু-সালু ফকির,অসভ্য ভন্ডদের বাদ দিলাম।অন্তরে ছেলে মেয়ের বৈষম্য চেপে অনেক ভদ্র পরিবারও সাধ্যের বাইরে পুত্র সন্তানের লোভ পুষে রাখে।এখনো আমাদের ভদ্র সামাজিকতার খোলসে মেয়েরা বাবার সম্পত্তি চাইতে গেলে বাপ ভাইয়ের কাছে লাঞ্ছিত হয়,নিশ্চুপে ঠকে।ধিক্কার পায় স্বামীর কাছে "তোমারতো কিসসু নাই।" হ্যা,এটাই আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থা।যার করুণ দায়ভার হয়তো নিতান্ত অবলা এই কিশোরী পূর্ণিমার স্বচ্ছ পথেরও আগামী বাঁধা।
গ্রামের কিশোর কিশোরী বিল-ঝিল বনবাদাড়ে ছাগল ছানা কোলে নিয়ে না দৌড়ুলে সঠিক বেড়ে ওঠে না।সহপাঠী,সঙ্গী, আত্মীয় ভাইবোনের সাহচর্যে প্রকৃতির মতোই ওদের মনের দুয়ার খোলে,বড় হয়।গ্রামের এমন লেখাপড়া না জানা বাবা মায়ের সন্তানেরা এভাবেই উন্মুক্ত খোলা হাওয়ার আদর সমাদরে কিবা অনাদরেও আলোর পথে আসে। সম্মানিত উচ্চ শিক্ষিত ডাক্তার,ইঞ্জিনীয়ার,নেতা-মন্ত্রী হওয়ার হাজারো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যাবে।
তবুও বদমাশ,কুলাঙ্গার আর লোভী পাপীদের রসদে প্রস্তুতকৃত গল্পে কত সম্ভাবনাময় জীবন পাতা আটকে থাকে।অকালে ঝরে পরে কচি পাতা,সবুজ পাতা,টাটকা সতেজতা।আমরা তা খুঁজে দেখিনা।নিজের চৌদ্দআনা ঠিক আছে তো বাকি দু'আনা নজরদারি।পরের দূঃখ দুর্দশা আর দুঃসংবাদ এড়িয়ে চলাইতো ভালো।মাদবর,নেতা-মন্ত্রীরা সমাজ দেখবেন,আমরাতো কেবলই চারটে ডালভাতে মোটামুটি চালিয়ে নেয়া সাধারণ লোক !
আশ্টেপিষ্টে অভাব,ক্ষুধা আর মেধা বিলুপ্তির পথে পথে -আড়ালে কত-শত মা,পরিবার,আলেয়া,জোছনা,পূর্ণিমা ভেসে যায় যাক।কষ্টেশিষ্টে নিদেনপক্ষের আঁকুতি ভরে আবারও তৈরি হবে দুঃখময়ী নীরব প্রতিমূর্তি।জানবে সংসার মানেই হতাশার অন্ধকারে বাঁচতে চাওয়া।
ছোট্ট বালিকা।একটা অদ্ভুত অদৃশ্য শক্তি পূর্ণিমাকে হাতছানি দেয়।ও আনমনে স্বপ্নদ্যাখে,ওরা বড়লোক হবে,ও লেখাপড়া করে অনেক বড় হবে।মা' র তখন কোন কষ্টই থাকবে না।খেয়ালি মনে কখন যেন
নানির কোলে জোসনা' কে বসিয়া দিতে পারলেই রাজকন্যা'র দে ছুট....
মায়ের একপাটি হারিয়ে যাওয়া রূপোর নুপুরের অন্যটা খালি পায়ে জড়িয়ে,নানিকে রিমঝিম শব্দ শোনায় দুপলক।
তারপর.......
: ও নানি জোসনারে এট্টু দেইখো,আমি সুমির কাছে গেলাম।
বন্ধু ছাড়া জীবন চলা আসলেই দায়।শৈশব,কৈশোর,যৌবন কি বার্ধক্য- বন্ধু হলো জীবনের আশ্চর্য জাদুকরী বিষয়।সুমি ওর একমাত্র সহপাঠী যাকে কাছে পায়।ওর বাড়ির কাছাকাছি হওয়াতে একমাত্র ওইতো খেলার সাথী। সুমির বাবার রড সিমেন্টের দোকান আছে গঞ্জের বাজারে।ওদের টাকা পয়সার অভাব নাই,সুমির কাছে গেলেই
বিস্কুট,পিঠা,পেয়ারা অনেক কিছু খাওয়ায়।আসলে তো খাবার লোভে ছুটে না।সুমির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ,সহপাঠী পূর্ণিমার স্কুল পাঠই বন্ধ।কাছে টানায় ভাটা পরেনি।ভর দুপুরের রোদ কি বা পড়ন্ত বিকেল,সুযোগ পাওয়া হলেই - দুই প্রজাপতির খোলা আকাশে উড়াল দিয়ে সন্ধ্যা নামানোর আড্ডা।
বেশি দূরে যাওয়া হয়না।
দু'জন মিলে ছুটে যায় উকিল বাড়ির আমবাগানে।
নামটা আমবাগান হলেও কতবেল,সুপারি, পেয়ারা,কামরাঙা কত্তো কি ফল ফুল হরেক রকমের গাছগাছালিতে ভরা।উকিল সাহেব হাইস্কুলের কাছে নতুন বাড়ি বানিয়ে সেখানে চলে গেছেন।এখানে থাকবার কেউ নাই। পরিত্যক্ত বাড়িটা এখন পাখপাখালির রাজ্য,সাথে সুমি আর পূর্ণিমার তো স্বর্গরাজ্য।
বরাবরের মতোই সেদিনও শেষ বিকেলে,দুজনের বাগানে ছুটোছুটির ক্লান্তি শেষে ঘাসের উপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছে।হঠাৎ কি যেন মনে পরে গেলো সুমির,
: পুন্যি একটা সুখবর আছে।
: কি রে সুমি..
: না, না বলবো না।
: তাহলে বলতে চাইলো কেন?
: আচ্ছা।শোন তাহলে বলছি,
এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখলো।নির্জনে কোথাও কেউ নেই,তবুও সতর্কতা।কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে শুরু করলো।
:শোন্,তুই ইচ্ছা করলে কয়দিনেই বড়লোক হোয়া যাবি,তোদের অনেক টাকা হবে!
পাশাপাশি বসেছিলো দু'জন।একলাফে পূর্ণিমা উঠে মুখোমুখি বসলো,
: ক্যামনে ক দেহি....!!
দারুণ মনোযোগ দিয়ে ছাত্র-শিক্ষকের পড়াশোনা বুঝতেই
মসজিদের মাইকে মাগরিবের আজানের শুরু হলো।পূর্ণিমাতো মহাখুশি।
:চল অহন বাড়ি যাই, কাইল সকালেই আমি সব কিছু নিয়া আমু।তুই কিন্তু সক্কালে উঠবি।
: ঠিক আছে,আমি রেডি থাকুম।
গোধূলির আলোমাখা সন্ধ্যায় কে জানে দুই বন্ধুর কিইবা এমন সন্ধিতে ফিরে গেলো যে যার বাড়ি।
ক্রমশ
আহমেদ চঞ্চল
পর্ব-৫
পূর্ণিমার ছেঁড়া ওড়নাতে পেচিয়ে গেছে কৈশোরের দস্যিপনা।পেট-পিঠের সংসার বাঁচাতে মা আলেয়ার সারাদিন বাহিরে থাকা।বাড়ির পাশের মেম্বার চাচার বাড়িতে একবেলা থালাবাসন মাঁজা,কাপড় চোপড় ধুয়ে দু'কড়ির সাথে কিছু এঁটো পান্তা জোটে,তারপর বাকি সময়ের সন্ধ্যে অব্ধি কাটে স্বপ্ন পূরণের এনজিও' র অফিসে।
বিছানায় অবশ হয়ে পরে থাকা নানির সাথে হামাগুড়ি দেয়া ছোটো বোন জোসনা'রে লয়ে দিনের সংসারি জোয়াল কাঁধে তুলে কষ্টের মালা গাঁথে স্বপ্ন কিশোরী।
: সামনের জানুয়ারিতে আবার ইশকুলে যাবে পূর্ণিমা।হেডম্যাম' নিজেই বাড়ি এসে বলে দিয়ে গেছেন,
"ওর রেজাল্ট ভালো ছিলো তাই পঞ্চম শ্রেণিতেই ভর্তি নিবে।"
শুনেছিলাম সুখ দুঃখ নাকি পাশাপাশি থাকে,স্রস্টা বুঝি নিজে হাতে বদলে দিবেন নীরব দুস্থদের কাহিনী। কি অবাক কান্ড,একহাত একপা অবশ হয়ে যাওয়া বৃদ্ধাও এখন বিছানায় উঠে বসে।পিচ্চি জোসনাও কাঁদেনা আগের মতো।আর চারটে ঋণের কিস্তি শোধের পর মা' পাবে সেলাই মেশিন সহ দোকান ঘর।
অজানা খুশির ছোঁয়ায় নেচে ওঠে দূরন্ত কিশোরীর মন।
ছেলেদের তুলনায় ছোটো বেলা থেকেই সংসার বুঝার জ্ঞান,স্রস্টা সম্ভবত ইচ্ছে করেই মেয়েদের বেশি করে দিয়ে দেন।তা না হলে পৃথিবীর পুরুষেরা কিছুতেই সংসার টিকিয়ে রাখতে পারতো না।এই ছোট্ট পূর্ণিমার স্থানে একটা ছেলে পূর্ণ' কে বসিয়ে দিলেই আলেয়ার সংসার ভিক্ষার থালা নিয়ে নিশ্চিত পথে পথে ঘুরতে হতো। তবুও জানিনা কেন বা কিসের মোহে- আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে একটা অন্ধ ঘুণপোকায় কাটে।
কালু মিয়া,লালু-সালু ফকির,অসভ্য ভন্ডদের বাদ দিলাম।অন্তরে ছেলে মেয়ের বৈষম্য চেপে অনেক ভদ্র পরিবারও সাধ্যের বাইরে পুত্র সন্তানের লোভ পুষে রাখে।এখনো আমাদের ভদ্র সামাজিকতার খোলসে মেয়েরা বাবার সম্পত্তি চাইতে গেলে বাপ ভাইয়ের কাছে লাঞ্ছিত হয়,নিশ্চুপে ঠকে।ধিক্কার পায় স্বামীর কাছে "তোমারতো কিসসু নাই।" হ্যা,এটাই আমাদের পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থা।যার করুণ দায়ভার হয়তো নিতান্ত অবলা এই কিশোরী পূর্ণিমার স্বচ্ছ পথেরও আগামী বাঁধা।
গ্রামের কিশোর কিশোরী বিল-ঝিল বনবাদাড়ে ছাগল ছানা কোলে নিয়ে না দৌড়ুলে সঠিক বেড়ে ওঠে না।সহপাঠী,সঙ্গী, আত্মীয় ভাইবোনের সাহচর্যে প্রকৃতির মতোই ওদের মনের দুয়ার খোলে,বড় হয়।গ্রামের এমন লেখাপড়া না জানা বাবা মায়ের সন্তানেরা এভাবেই উন্মুক্ত খোলা হাওয়ার আদর সমাদরে কিবা অনাদরেও আলোর পথে আসে। সম্মানিত উচ্চ শিক্ষিত ডাক্তার,ইঞ্জিনীয়ার,নেতা-মন্ত্রী হওয়ার হাজারো প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যাবে।
তবুও বদমাশ,কুলাঙ্গার আর লোভী পাপীদের রসদে প্রস্তুতকৃত গল্পে কত সম্ভাবনাময় জীবন পাতা আটকে থাকে।অকালে ঝরে পরে কচি পাতা,সবুজ পাতা,টাটকা সতেজতা।আমরা তা খুঁজে দেখিনা।নিজের চৌদ্দআনা ঠিক আছে তো বাকি দু'আনা নজরদারি।পরের দূঃখ দুর্দশা আর দুঃসংবাদ এড়িয়ে চলাইতো ভালো।মাদবর,নেতা-মন্ত্রীরা সমাজ দেখবেন,আমরাতো কেবলই চারটে ডালভাতে মোটামুটি চালিয়ে নেয়া সাধারণ লোক !
আশ্টেপিষ্টে অভাব,ক্ষুধা আর মেধা বিলুপ্তির পথে পথে -আড়ালে কত-শত মা,পরিবার,আলেয়া,জোছনা,পূর্ণিমা ভেসে যায় যাক।কষ্টেশিষ্টে নিদেনপক্ষের আঁকুতি ভরে আবারও তৈরি হবে দুঃখময়ী নীরব প্রতিমূর্তি।জানবে সংসার মানেই হতাশার অন্ধকারে বাঁচতে চাওয়া।
ছোট্ট বালিকা।একটা অদ্ভুত অদৃশ্য শক্তি পূর্ণিমাকে হাতছানি দেয়।ও আনমনে স্বপ্নদ্যাখে,ওরা বড়লোক হবে,ও লেখাপড়া করে অনেক বড় হবে।মা' র তখন কোন কষ্টই থাকবে না।খেয়ালি মনে কখন যেন
নানির কোলে জোসনা' কে বসিয়া দিতে পারলেই রাজকন্যা'র দে ছুট....
মায়ের একপাটি হারিয়ে যাওয়া রূপোর নুপুরের অন্যটা খালি পায়ে জড়িয়ে,নানিকে রিমঝিম শব্দ শোনায় দুপলক।
তারপর.......
: ও নানি জোসনারে এট্টু দেইখো,আমি সুমির কাছে গেলাম।
বন্ধু ছাড়া জীবন চলা আসলেই দায়।শৈশব,কৈশোর,যৌবন কি বার্ধক্য- বন্ধু হলো জীবনের আশ্চর্য জাদুকরী বিষয়।সুমি ওর একমাত্র সহপাঠী যাকে কাছে পায়।ওর বাড়ির কাছাকাছি হওয়াতে একমাত্র ওইতো খেলার সাথী। সুমির বাবার রড সিমেন্টের দোকান আছে গঞ্জের বাজারে।ওদের টাকা পয়সার অভাব নাই,সুমির কাছে গেলেই
বিস্কুট,পিঠা,পেয়ারা অনেক কিছু খাওয়ায়।আসলে তো খাবার লোভে ছুটে না।সুমির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ,সহপাঠী পূর্ণিমার স্কুল পাঠই বন্ধ।কাছে টানায় ভাটা পরেনি।ভর দুপুরের রোদ কি বা পড়ন্ত বিকেল,সুযোগ পাওয়া হলেই - দুই প্রজাপতির খোলা আকাশে উড়াল দিয়ে সন্ধ্যা নামানোর আড্ডা।
বেশি দূরে যাওয়া হয়না।
দু'জন মিলে ছুটে যায় উকিল বাড়ির আমবাগানে।
নামটা আমবাগান হলেও কতবেল,সুপারি, পেয়ারা,কামরাঙা কত্তো কি ফল ফুল হরেক রকমের গাছগাছালিতে ভরা।উকিল সাহেব হাইস্কুলের কাছে নতুন বাড়ি বানিয়ে সেখানে চলে গেছেন।এখানে থাকবার কেউ নাই। পরিত্যক্ত বাড়িটা এখন পাখপাখালির রাজ্য,সাথে সুমি আর পূর্ণিমার তো স্বর্গরাজ্য।
বরাবরের মতোই সেদিনও শেষ বিকেলে,দুজনের বাগানে ছুটোছুটির ক্লান্তি শেষে ঘাসের উপর বসে বিশ্রাম নিচ্ছে।হঠাৎ কি যেন মনে পরে গেলো সুমির,
: পুন্যি একটা সুখবর আছে।
: কি রে সুমি..
: না, না বলবো না।
: তাহলে বলতে চাইলো কেন?
: আচ্ছা।শোন তাহলে বলছি,
এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখলো।নির্জনে কোথাও কেউ নেই,তবুও সতর্কতা।কানের কাছে ফিসফিস করে বলতে শুরু করলো।
:শোন্,তুই ইচ্ছা করলে কয়দিনেই বড়লোক হোয়া যাবি,তোদের অনেক টাকা হবে!
পাশাপাশি বসেছিলো দু'জন।একলাফে পূর্ণিমা উঠে মুখোমুখি বসলো,
: ক্যামনে ক দেহি....!!
দারুণ মনোযোগ দিয়ে ছাত্র-শিক্ষকের পড়াশোনা বুঝতেই
মসজিদের মাইকে মাগরিবের আজানের শুরু হলো।পূর্ণিমাতো মহাখুশি।
:চল অহন বাড়ি যাই, কাইল সকালেই আমি সব কিছু নিয়া আমু।তুই কিন্তু সক্কালে উঠবি।
: ঠিক আছে,আমি রেডি থাকুম।
গোধূলির আলোমাখা সন্ধ্যায় কে জানে দুই বন্ধুর কিইবা এমন সন্ধিতে ফিরে গেলো যে যার বাড়ি।
ক্রমশ
আহমেদ চঞ্চল
Onu kotha, Rifat khan, Rose akter, Sagor mondol, Abdul rokon, Preonte catarge, Choyon khan and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
|
|