- indraniনবাগত
- Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1162
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-05
অনুতপ্ত
Sat Jun 05, 2021 9:21 pm
সূচনা পর্ব
ওয়াহেদ_মাহমুদ
কাজি সাহেব বারবার বলছেন বল মা কবুল, বল মা কবুল, বল মা কবুল। কিন্তু সুরাইয়া কবুল বলছে না। কোথায় যেন, হারিয়ে গিয়েছে সুরাইয়া। সুরাইয়া বাবা এসে মেয়ের গায়ে হাত দিতেই চমকে উঠে সুরাইয়া। এতোক্ষণে হুঁশ আসে সুরাইয়ার। কাজি সাহেব আবার বলে বল মা কবুল। কিন্তু সুরাইয়া কবুল বলে না। সরাসরি সবার সামনে বলে দেয় আমি কবুল বলব না। এই বিয়েতে আমি রাজি না।
কিন্তু সুরাইয়ার মতেই বিয়ে হচ্ছে। সুরাইয়া রাজি ছিল এই বিয়েতে। তাহলে এখন কেন এমন করছে?
সুরাইয়ার বাবা বলে বিয়ে কেন করবে না?
সুরাইয়া তখন বলে ওয়াহেদের(পাত্রের নাম) চরিত্র ভালো না সে জন্যই আমি তার সাথে বিয়ে করব না। এ কথা শুনে বিয়ে বাড়িতে হৈ হুল্লোড় শুরু হয়ে যায়। এমনিতেই আগে থেকে অনেকেই অনেক কথা বলছে। কেউ কেউ বলছে এই মেয়ের নিশ্চয় অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে। সেজন্যই এই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না।
আর যখনি বলেছে ওয়াহেদের চরিত্র ভালো না তখন ওয়াহেদের বাসার লোকজন বলে আপনার অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে তাই এমন বলছেন। আমাদের ছেলে কি এমন করছে যার জন্য বলছেন চরিত্র ভালো না। প্রমাণ দেখান পারলে।
সুরাইয়া তখন বলে আমি প্রমাণ দেখাতে পারবো না। এটা বলেই সুরাইয়া উঠে যায়। সুরাইয়ার বাবা পাত্র পক্ষের কাছে অনেক অপমানিত হয়। অনেকেই অনেক কথা শুনিয়ে চলে যায়। সুরাইয়ার বাবার মান সম্মান ক্ষুন্ন হয়ে যায় সবার সামনে। রুমে এসে সুরাইয়ার বাবা সুরাইয়া কে বলে তুই আমার মান সম্মান কিছু রাখলি না। বিয়ে যখন করবি না তখন আগেই বলতে পারতিস। আমার মান সম্মান এভাবে নষ্ট করার একদম দরকার ছিল না। বাবার কথায় কোনো উত্তর দেয় না সুরাইয়া। নিশ্চুপ হয়ে আছে।
রাতে ওয়াহেদ সুরাইয়ার কে মেসেজ দিয়ে বলে আপনি তো বিয়েতে রাজি ছিলেন কিন্তু এমনটা কেন করলেন? আগেই বলতে পারতেন বিয়ে করবেন না। আমার আর আপনার বাবা দু'জনের মান সম্মান নষ্ট করলেন। আপনি আমাকেও অপবাদ দিলেন আমার চরিত্র ভালো না। এর বিচার আল্লাহ আপনাকে করবে।
বিয়ের আগের দিন রাতে অপরিচিত এক নাম্বার থেকে সুরাইয়ার নাম্বারে এমএমএস আসে। সেখানে একটা মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ ছবি ছিল ওয়াহেদের। ছবিগুলো দেখে প্রথমে বুঝতে পারে না কি করবে সুরাইয়া। সুরাইয়া নিজে চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না। কাউকে কিছু বলতেও পারছে না এমন অবস্থায়। যে ছবি গুলো পাঠিয়েছে সে পরিচয় দিচ্ছে না।
সে সুরাইয়াকে বলে ওয়াহেদের এমন আরো অনেক সম্পর্ক আছে। সবার সাথে রিলেশন করে কিন্তু চিট করে তাদের কে ছেড়ে দেয়।
সুরাইয়া মনে মনে ভাবে। এমন ছেলের সাথে আমি বিয়ে করতে পারব না। এর থেকে ভালো হয় কোনদিন বিয়ে করব না। তাই আর কোনো উপায় এভাবে বিয়ে বন্ধ করে সুরাইয়া।
আজ রাতে আবার সেই নাম্বার থেকে মেসেজ আসে সুরাইয়া কাছে। মেসেজে বলে ওয়েল ডান সুরাইয়া। বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছেন অনেক ভালো করছেন। এসব ছেলেদের সাথে এমন করাই উচিত।
সুরাইয়া মেসেজ করে বলে আমি কি আপনার সাথে করে কথা বলতে পারি।
কিছুক্ষণ পরে অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে সুরাইয়ার ফোনে কল আসে। সুরাইয়া বুঝতে পেরেছে এটা নিশ্চিত সেই অপরিচিত লোক তাই কাঁপা কাঁপা হাতে সুরাইয়া ফোন টা রিসিভ করে বলে
হ্যালো কে বলছেন?
তারপর ফোনের ওপাশ থেকে একটা ছেলে কন্ঠ ভেসে আসে। সুরাইয়া ভেবেছিল কোনো মেয়ে হবে নিশ্চয়ই। কারণ এসব বিষয়ে একটা মেয়ে অন্য একটা মেয়ে কে সাহায্য করতে পারে।
সুরাইয়া তখন বলে আপনার নাম কি? কে বলছেন আপনি? আমাকে কিভাবে চিনেন? আমার নাম্বার কোথায় পেলেন। আর ওয়াহেদের বিষয়ে এতকিছু কিভাবে জানেন?
ফোনের ওপাশ থেকে একটু হাসি দিয়ে বলে। কুল! কুল! সব প্রশ্ন একসাথে করলে উত্তর কিভাবে দিব। এতো তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। সব বলছি আস্তে আস্তে। আমি পালিয়ে যাচ্ছি না।
আমার নাম হলো মাহমুদ আমার একজন ফ্রেন্ড সেও আপনার ফ্রেন্ড তার থেকে জানতে পেরেছি আপনার বিষয়ে আর ওয়াহেদের সাথে আপনার বিয়ে। আর ওয়াহেদের কু কর্মের কথা জানতে পারি,,,,,,,
ওয়াহেদের বিষয়ে শোনার আগেই সুরাইয়ার ফোনের চার্জ ফুরিয়ে যায়। ওয়াহেদের কু কর্মের কথা আর জানা হলো না সুরাইয়ার। রাগান্বিত হয়ে সুরাইয়া বলে ফোন বন্ধ হওয়ার আর সময় হলো না। এখনি সময় হলো। কাল রাত থেকে অনেক টেনশন আর আজকের বিয়া ভেঙে যাওয়া। এসব সমস্যা মধ্যে ফোনটা চার্জে দিতে ভুলে গিয়েছে সুরাইয়া। এতো সমস্যার মধ্যে ফোন চার্জ দিতে ভুলে যাওয়া সমস্যা বিষয়। সকাল থেকে খাওয়া দাওয়া করার কথাই ভুলে গিয়েছে সুরাইয়া।
তাড়াতাড়ি করে ফোন চার্জ দেয় সুরাইয়া। পাঁচ মিনিট পরে ফোন দেয় ওই নাম্বারে কিন্তু কল যায় না। সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। রাতে মোট ৫০ বার ফোন দিয়ে সুরাইয়া ওই নাম্বারে আসল সত্য টা জানার জন্য কিন্তু ফোন যায় না।
পরের দিন রাতে ঠিক সেই সময় আবার সুরাইয়ার ফোনে কল আসে কিন্তু এটা অন্য নাম্বার আগের নাম্বার না।
সুরাইয়া ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে হাই সুরাইয়া কেমন আছেন।
সুরাইয়ার বুঝতে বাকি রইল না এটা কালকের ছেলেটা। সুরাইয়া বলে কাল আপনার সাথে কথা বলতে বলতে ফোন বন্ধ হয়ে যাই চার্জ ছিল না। কিন্তু পরে অনেক কল দিয়েছিলাম আপার ফোন বন্ধ ছিল। আজ আবার অন্য নাম্বার দিয়ে ফোন দিয়েছেন।
মাহমুদ বলে। কাল আবার অন্য নাম্বার দিয়ে ফোন দিব। আমার কোনো নির্দিষ্ট নাম্বার নেই। দরকার হলে আমি আপনাকে ফোন দিবো।
সুরাইয়া বলে সবকিছু বাদ দিয়ে এবার বলেন ওয়াহেদের এসব বিষয় আপনি কিভাবে জানেন। যতটুকু জানেন সবটা আমাকে বলবেন। মিথ্যা বলবেন না।
মাহমুদ তখন বলেন এই কথাটা আপনি ওয়াহেদের থেকে জেনে নিবেন।
মাহমুদের সাথে কথা বলতে বলতে সুরাইয়ার শুনতে পাই বাহিরে হৈচৈ হচ্ছে। তাই মাহমুদের ফোন রেখে সুরাইয়া বাইরে গিয়ে দেখে পুলিশ এসেছে। কিন্তু পুলিশ কেন এসেছে? সুরাইয়ার ভাই বলে। ওয়াহেদের বাসা থেকে আমাদের নামে মামলা করেছে মান হানির। সুরাইয়ার মা রাগান্বিত হয়ে এসে সুরাইয়াকে বলে আজ তোর জন্য আমাদের মান সম্মান মাটির সাথে মিশে গেল তোর জন্যই ওয়াহেদের বাসা থেকে আমাদের নামে মামলা করেছে।
সুরাইয়া তখন বলে আমি যা বলেছি সব সত্যি বলেছি মা। ওয়াহেদের চরিত্র ভালো না। সুরাইয়ার মা সুরাইয়ার গালে থাপ্পর মেরে বলে তোর লজ্জা শরম কিছু নেই এখনও এ কথা বলছিস। সুরাইয়া রাগ করে রুমে চলে যায়।
রুমে এসে সুরাইয়া ওয়াহেদের নাম্বারে ফোন দিয়ে বলে আপনার সমস্যা কি? আমি বলেই দিয়েছি আপনার সাথে বিয়ে করব না। আপনার জন্য এটাই ভালো হয় যে, মামলা তুলে নেন না হলে অনেক সমস্যায় পড়ে যাবেন।
ওয়াহেদ তখন বলে আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন? আর মনে করছেন আপনার কথায় আমি ভয় পেয়ে মামলা তুলে নিব। তাহলে আপনার ধারণা ভুল।
সুরাইয়া তখন ওয়াহেদের হোয়াটসঅ্যাপে কয়টা ছবি সেন্ড করে। মাহমুদ সুরাইয়াকে যেই ছবি গুলো দিয়েছিল সেই ছবি গুলো। কয়েকটা মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ওয়াহেদের ছবি।
সুরাইয়ার পাঠানো ছবি গুলো দেখে চমকে উঠে ওয়াহেদ বুঝতেই পারছে না ছবিগুলো সুরাইয়া কিভাবে কোথায় পেয়েছে। ওয়াহেদ বুঝতে পারছে না কি করবে। তাই সুরাইয়ার কাছে ফোন করে ফোন দিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ওয়াহেদ বলে আপনি ছবি কোথায় পেয়েছেন। আর আপনাকে এই ছবি কে দিয়েছে।
সুরাইয়া বলে আমি ছবি যেখানে পাই আপনাকে কেন বলব? ভালো থাকবেন কালকে আদালতে দেখা হবে। তখন বুঝবেন কত ধানে কত চাউল।
ওয়াহেদ বলে প্লিজ এমন কিছু করবেন না। আমি আজকে গিয়ে আপনাদের উপর থেকে মামলা তুলে নিব। ১০২৬
আর কিছু না বলে। সুরাইয়া ফোন বন্ধ করে দেয়। ওয়াহেদ অনবরত ফোন করছে সুরাইয়ার কাছে কিন্তু ফোন যাচ্ছে না। সুরাইয়ার কাছে ফোন যাচ্ছে না তাই সুরাইয়ার বাবার কাছে ফোন দিয়ে বলে আপনাদের উপর মামলা করছিলাম মামলা তুলে নিচ্ছি। প্লিজ আপনার মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করেন একটু।
সুরাইয়ার বাবা এসে সব ঘটনা সুরাইয়াকে খুলে বলে। তারপর সুরাইয়া লজ্জা মুখ নিয়ে ছবিগুলো বাবাকে দেখাই। তারপর বুঝতে পারে এই বিষয় তাহলে। আর কেন সুরাইয়া কাল বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। সুরাইয়ার বাবা সুরাইয়াকে বলে। তুই তো বলিস আমার কাছে, তাহলে কেন এসব আমার কাছে থেকে লুকিয়ে রাখলি। অত্যন্ত আমাকে সব বলতে হতো।
সুরাইয়া তখন বলে সবকিছু হঠাৎ করে হয়েছে গিয়েছিল বাবা বুঝতে পারিনি।
বিকালে ওয়াহেদের বাবা আর ওয়াহেদ আসে সুরাইয়াদের বাসায়। এসে জোর করে যাতে কোনো ঝামেলা সৃষ্টি না করে। আমরা মামলা তুলে নিব। কিন্তু সুরাইয়া রাজি হয় না। শেষ প্রান্তে এসে ওয়াহেদের বাবা আমজাদ সাহেব বলে। আমি চাই টাকা পয়সা দিয়ে সমাধান করতে। কত টাকা নিবেন বলেন আপনি।
আমজাদ সাহেবের এই কথা শুনে সুরাইয়া বাবা বলে বেরিয়ে যান এই বাসা থেকে। আমরা মধ্যবিত্ত হতে পারি কিন্তু টাকা পয়সার লোভ আমাদের নেই।
আজ আদালতে ওয়াহেদ সাহেবের ছয় মাসের জেল আর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হয়। হাসিমুখে সুরাইয়া আর সুরাইয়ার বাবা আদালত থেকে বাসায় আসে। বিকালে বাসায় এসে দেখে সুরাইয়ার মা করছে। সুরাইয়া বলে কি হয়েছে কান্না কর কেন? তখন সুরাইয়ার মা বলে হাসিব স্কুল থেকে বাসায় ফেরেনি। স্কুলে নেই। কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। হাসিবের বন্ধুরাও বলতে পারছে না কোথায় গিয়েছে।
হঠাৎ অপরিচিত এক নাম্বার থেকে সুরাইয়ার কাছে কল আসে। আর বলে,,,,,,
চলবে,,,
ওয়াহেদ_মাহমুদ
কাজি সাহেব বারবার বলছেন বল মা কবুল, বল মা কবুল, বল মা কবুল। কিন্তু সুরাইয়া কবুল বলছে না। কোথায় যেন, হারিয়ে গিয়েছে সুরাইয়া। সুরাইয়া বাবা এসে মেয়ের গায়ে হাত দিতেই চমকে উঠে সুরাইয়া। এতোক্ষণে হুঁশ আসে সুরাইয়ার। কাজি সাহেব আবার বলে বল মা কবুল। কিন্তু সুরাইয়া কবুল বলে না। সরাসরি সবার সামনে বলে দেয় আমি কবুল বলব না। এই বিয়েতে আমি রাজি না।
কিন্তু সুরাইয়ার মতেই বিয়ে হচ্ছে। সুরাইয়া রাজি ছিল এই বিয়েতে। তাহলে এখন কেন এমন করছে?
সুরাইয়ার বাবা বলে বিয়ে কেন করবে না?
সুরাইয়া তখন বলে ওয়াহেদের(পাত্রের নাম) চরিত্র ভালো না সে জন্যই আমি তার সাথে বিয়ে করব না। এ কথা শুনে বিয়ে বাড়িতে হৈ হুল্লোড় শুরু হয়ে যায়। এমনিতেই আগে থেকে অনেকেই অনেক কথা বলছে। কেউ কেউ বলছে এই মেয়ের নিশ্চয় অন্য কারো সাথে সম্পর্ক আছে। সেজন্যই এই বিয়ে করতে রাজি হচ্ছে না।
আর যখনি বলেছে ওয়াহেদের চরিত্র ভালো না তখন ওয়াহেদের বাসার লোকজন বলে আপনার অন্য ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে তাই এমন বলছেন। আমাদের ছেলে কি এমন করছে যার জন্য বলছেন চরিত্র ভালো না। প্রমাণ দেখান পারলে।
সুরাইয়া তখন বলে আমি প্রমাণ দেখাতে পারবো না। এটা বলেই সুরাইয়া উঠে যায়। সুরাইয়ার বাবা পাত্র পক্ষের কাছে অনেক অপমানিত হয়। অনেকেই অনেক কথা শুনিয়ে চলে যায়। সুরাইয়ার বাবার মান সম্মান ক্ষুন্ন হয়ে যায় সবার সামনে। রুমে এসে সুরাইয়ার বাবা সুরাইয়া কে বলে তুই আমার মান সম্মান কিছু রাখলি না। বিয়ে যখন করবি না তখন আগেই বলতে পারতিস। আমার মান সম্মান এভাবে নষ্ট করার একদম দরকার ছিল না। বাবার কথায় কোনো উত্তর দেয় না সুরাইয়া। নিশ্চুপ হয়ে আছে।
রাতে ওয়াহেদ সুরাইয়ার কে মেসেজ দিয়ে বলে আপনি তো বিয়েতে রাজি ছিলেন কিন্তু এমনটা কেন করলেন? আগেই বলতে পারতেন বিয়ে করবেন না। আমার আর আপনার বাবা দু'জনের মান সম্মান নষ্ট করলেন। আপনি আমাকেও অপবাদ দিলেন আমার চরিত্র ভালো না। এর বিচার আল্লাহ আপনাকে করবে।
বিয়ের আগের দিন রাতে অপরিচিত এক নাম্বার থেকে সুরাইয়ার নাম্বারে এমএমএস আসে। সেখানে একটা মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ ছবি ছিল ওয়াহেদের। ছবিগুলো দেখে প্রথমে বুঝতে পারে না কি করবে সুরাইয়া। সুরাইয়া নিজে চোখে বিশ্বাস করতে পারছে না। কাউকে কিছু বলতেও পারছে না এমন অবস্থায়। যে ছবি গুলো পাঠিয়েছে সে পরিচয় দিচ্ছে না।
সে সুরাইয়াকে বলে ওয়াহেদের এমন আরো অনেক সম্পর্ক আছে। সবার সাথে রিলেশন করে কিন্তু চিট করে তাদের কে ছেড়ে দেয়।
সুরাইয়া মনে মনে ভাবে। এমন ছেলের সাথে আমি বিয়ে করতে পারব না। এর থেকে ভালো হয় কোনদিন বিয়ে করব না। তাই আর কোনো উপায় এভাবে বিয়ে বন্ধ করে সুরাইয়া।
আজ রাতে আবার সেই নাম্বার থেকে মেসেজ আসে সুরাইয়া কাছে। মেসেজে বলে ওয়েল ডান সুরাইয়া। বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছেন অনেক ভালো করছেন। এসব ছেলেদের সাথে এমন করাই উচিত।
সুরাইয়া মেসেজ করে বলে আমি কি আপনার সাথে করে কথা বলতে পারি।
কিছুক্ষণ পরে অপরিচিত একটা নাম্বার থেকে সুরাইয়ার ফোনে কল আসে। সুরাইয়া বুঝতে পেরেছে এটা নিশ্চিত সেই অপরিচিত লোক তাই কাঁপা কাঁপা হাতে সুরাইয়া ফোন টা রিসিভ করে বলে
হ্যালো কে বলছেন?
তারপর ফোনের ওপাশ থেকে একটা ছেলে কন্ঠ ভেসে আসে। সুরাইয়া ভেবেছিল কোনো মেয়ে হবে নিশ্চয়ই। কারণ এসব বিষয়ে একটা মেয়ে অন্য একটা মেয়ে কে সাহায্য করতে পারে।
সুরাইয়া তখন বলে আপনার নাম কি? কে বলছেন আপনি? আমাকে কিভাবে চিনেন? আমার নাম্বার কোথায় পেলেন। আর ওয়াহেদের বিষয়ে এতকিছু কিভাবে জানেন?
ফোনের ওপাশ থেকে একটু হাসি দিয়ে বলে। কুল! কুল! সব প্রশ্ন একসাথে করলে উত্তর কিভাবে দিব। এতো তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। সব বলছি আস্তে আস্তে। আমি পালিয়ে যাচ্ছি না।
আমার নাম হলো মাহমুদ আমার একজন ফ্রেন্ড সেও আপনার ফ্রেন্ড তার থেকে জানতে পেরেছি আপনার বিষয়ে আর ওয়াহেদের সাথে আপনার বিয়ে। আর ওয়াহেদের কু কর্মের কথা জানতে পারি,,,,,,,
ওয়াহেদের বিষয়ে শোনার আগেই সুরাইয়ার ফোনের চার্জ ফুরিয়ে যায়। ওয়াহেদের কু কর্মের কথা আর জানা হলো না সুরাইয়ার। রাগান্বিত হয়ে সুরাইয়া বলে ফোন বন্ধ হওয়ার আর সময় হলো না। এখনি সময় হলো। কাল রাত থেকে অনেক টেনশন আর আজকের বিয়া ভেঙে যাওয়া। এসব সমস্যা মধ্যে ফোনটা চার্জে দিতে ভুলে গিয়েছে সুরাইয়া। এতো সমস্যার মধ্যে ফোন চার্জ দিতে ভুলে যাওয়া সমস্যা বিষয়। সকাল থেকে খাওয়া দাওয়া করার কথাই ভুলে গিয়েছে সুরাইয়া।
তাড়াতাড়ি করে ফোন চার্জ দেয় সুরাইয়া। পাঁচ মিনিট পরে ফোন দেয় ওই নাম্বারে কিন্তু কল যায় না। সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। রাতে মোট ৫০ বার ফোন দিয়ে সুরাইয়া ওই নাম্বারে আসল সত্য টা জানার জন্য কিন্তু ফোন যায় না।
পরের দিন রাতে ঠিক সেই সময় আবার সুরাইয়ার ফোনে কল আসে কিন্তু এটা অন্য নাম্বার আগের নাম্বার না।
সুরাইয়া ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে হাই সুরাইয়া কেমন আছেন।
সুরাইয়ার বুঝতে বাকি রইল না এটা কালকের ছেলেটা। সুরাইয়া বলে কাল আপনার সাথে কথা বলতে বলতে ফোন বন্ধ হয়ে যাই চার্জ ছিল না। কিন্তু পরে অনেক কল দিয়েছিলাম আপার ফোন বন্ধ ছিল। আজ আবার অন্য নাম্বার দিয়ে ফোন দিয়েছেন।
মাহমুদ বলে। কাল আবার অন্য নাম্বার দিয়ে ফোন দিব। আমার কোনো নির্দিষ্ট নাম্বার নেই। দরকার হলে আমি আপনাকে ফোন দিবো।
সুরাইয়া বলে সবকিছু বাদ দিয়ে এবার বলেন ওয়াহেদের এসব বিষয় আপনি কিভাবে জানেন। যতটুকু জানেন সবটা আমাকে বলবেন। মিথ্যা বলবেন না।
মাহমুদ তখন বলেন এই কথাটা আপনি ওয়াহেদের থেকে জেনে নিবেন।
মাহমুদের সাথে কথা বলতে বলতে সুরাইয়ার শুনতে পাই বাহিরে হৈচৈ হচ্ছে। তাই মাহমুদের ফোন রেখে সুরাইয়া বাইরে গিয়ে দেখে পুলিশ এসেছে। কিন্তু পুলিশ কেন এসেছে? সুরাইয়ার ভাই বলে। ওয়াহেদের বাসা থেকে আমাদের নামে মামলা করেছে মান হানির। সুরাইয়ার মা রাগান্বিত হয়ে এসে সুরাইয়াকে বলে আজ তোর জন্য আমাদের মান সম্মান মাটির সাথে মিশে গেল তোর জন্যই ওয়াহেদের বাসা থেকে আমাদের নামে মামলা করেছে।
সুরাইয়া তখন বলে আমি যা বলেছি সব সত্যি বলেছি মা। ওয়াহেদের চরিত্র ভালো না। সুরাইয়ার মা সুরাইয়ার গালে থাপ্পর মেরে বলে তোর লজ্জা শরম কিছু নেই এখনও এ কথা বলছিস। সুরাইয়া রাগ করে রুমে চলে যায়।
রুমে এসে সুরাইয়া ওয়াহেদের নাম্বারে ফোন দিয়ে বলে আপনার সমস্যা কি? আমি বলেই দিয়েছি আপনার সাথে বিয়ে করব না। আপনার জন্য এটাই ভালো হয় যে, মামলা তুলে নেন না হলে অনেক সমস্যায় পড়ে যাবেন।
ওয়াহেদ তখন বলে আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন? আর মনে করছেন আপনার কথায় আমি ভয় পেয়ে মামলা তুলে নিব। তাহলে আপনার ধারণা ভুল।
সুরাইয়া তখন ওয়াহেদের হোয়াটসঅ্যাপে কয়টা ছবি সেন্ড করে। মাহমুদ সুরাইয়াকে যেই ছবি গুলো দিয়েছিল সেই ছবি গুলো। কয়েকটা মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ওয়াহেদের ছবি।
সুরাইয়ার পাঠানো ছবি গুলো দেখে চমকে উঠে ওয়াহেদ বুঝতেই পারছে না ছবিগুলো সুরাইয়া কিভাবে কোথায় পেয়েছে। ওয়াহেদ বুঝতে পারছে না কি করবে। তাই সুরাইয়ার কাছে ফোন করে ফোন দিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ওয়াহেদ বলে আপনি ছবি কোথায় পেয়েছেন। আর আপনাকে এই ছবি কে দিয়েছে।
সুরাইয়া বলে আমি ছবি যেখানে পাই আপনাকে কেন বলব? ভালো থাকবেন কালকে আদালতে দেখা হবে। তখন বুঝবেন কত ধানে কত চাউল।
ওয়াহেদ বলে প্লিজ এমন কিছু করবেন না। আমি আজকে গিয়ে আপনাদের উপর থেকে মামলা তুলে নিব। ১০২৬
আর কিছু না বলে। সুরাইয়া ফোন বন্ধ করে দেয়। ওয়াহেদ অনবরত ফোন করছে সুরাইয়ার কাছে কিন্তু ফোন যাচ্ছে না। সুরাইয়ার কাছে ফোন যাচ্ছে না তাই সুরাইয়ার বাবার কাছে ফোন দিয়ে বলে আপনাদের উপর মামলা করছিলাম মামলা তুলে নিচ্ছি। প্লিজ আপনার মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করেন একটু।
সুরাইয়ার বাবা এসে সব ঘটনা সুরাইয়াকে খুলে বলে। তারপর সুরাইয়া লজ্জা মুখ নিয়ে ছবিগুলো বাবাকে দেখাই। তারপর বুঝতে পারে এই বিষয় তাহলে। আর কেন সুরাইয়া কাল বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। সুরাইয়ার বাবা সুরাইয়াকে বলে। তুই তো বলিস আমার কাছে, তাহলে কেন এসব আমার কাছে থেকে লুকিয়ে রাখলি। অত্যন্ত আমাকে সব বলতে হতো।
সুরাইয়া তখন বলে সবকিছু হঠাৎ করে হয়েছে গিয়েছিল বাবা বুঝতে পারিনি।
বিকালে ওয়াহেদের বাবা আর ওয়াহেদ আসে সুরাইয়াদের বাসায়। এসে জোর করে যাতে কোনো ঝামেলা সৃষ্টি না করে। আমরা মামলা তুলে নিব। কিন্তু সুরাইয়া রাজি হয় না। শেষ প্রান্তে এসে ওয়াহেদের বাবা আমজাদ সাহেব বলে। আমি চাই টাকা পয়সা দিয়ে সমাধান করতে। কত টাকা নিবেন বলেন আপনি।
আমজাদ সাহেবের এই কথা শুনে সুরাইয়া বাবা বলে বেরিয়ে যান এই বাসা থেকে। আমরা মধ্যবিত্ত হতে পারি কিন্তু টাকা পয়সার লোভ আমাদের নেই।
আজ আদালতে ওয়াহেদ সাহেবের ছয় মাসের জেল আর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হয়। হাসিমুখে সুরাইয়া আর সুরাইয়ার বাবা আদালত থেকে বাসায় আসে। বিকালে বাসায় এসে দেখে সুরাইয়ার মা করছে। সুরাইয়া বলে কি হয়েছে কান্না কর কেন? তখন সুরাইয়ার মা বলে হাসিব স্কুল থেকে বাসায় ফেরেনি। স্কুলে নেই। কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। হাসিবের বন্ধুরাও বলতে পারছে না কোথায় গিয়েছে।
হঠাৎ অপরিচিত এক নাম্বার থেকে সুরাইয়ার কাছে কল আসে। আর বলে,,,,,,
চলবে,,,
Hasibul hasan santo, Abul basar, Sk sagor, Sk imran, Rasel islam, Saiful Osman, Rokeya hoq and লেখাটি পছন্দ করেছে
- indraniনবাগত
- Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1162
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-05
Re: অনুতপ্ত
Sat Jun 05, 2021 9:27 pm
শেষ খন্ড
ওয়াহেদ মাহমুদ
হাসিমুখে সুরাইয়া আর সুরাইয়ার বাবা আদালত থেকে বাসায় ফিরে আসে। বিকালে বাসায় এসে দেখে সুরাইয়ার মা কান্না করছে। সুরাইয়া বলে কি হয়েছে কান্না কর কেন?
তখন সুরাইয়ার মা বলে হাসিব স্কুল থেকে বাসায় ফেরেনি। স্কুলে নেই। কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। হাসিবের বন্ধুরাও বলতে পারছে না কোথায় গিয়েছে।
হঠাৎ অপরিচিত এক নাম্বার থেকে সুরাইয়ার কাছে কল আসে। কল ছিল ল্যান্ড নাম্বার থেকে। ভয়ে ভয়ে কল রিসিভ করে সুরাইয়া। কল রিসিভ করে সুরাইয়া বলে কে বলছেন?
ফোনের ওপাশ থেকে অট্ট হাসি দিয়ে বলে আমি কে বলছি আপনাকে জানতে হবে না। নিশ্চয়ই আপনি হাসিবের বড় বোন।
সুরাইয়া তখন কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে হ্যা আমি হাসিবের বড় বোন। হাসিব কোথায় আছে এখন। হাসিবের কাছে ফোন দেন আমি কথা বলব।
তখন ফোনের ওপাশ থেকে বলে। এখন আফসোস করে কোনো কাজ হবে না। অনেক করে বোঝানো হয়েছে আপনাদের, আমরা মামলা তুলে নিচ্ছি আপনারা আর কোন ঝামেলা করবেন না। কিন্তু আপনারা আমাদের কথা শুনলেন না।
সুরাইয়া তখন কান্না করে বলে প্লিজ আমার ভাই কে কিছু করবেন না। আমার ভাইয়ের কোনো দোষ নেই তো। যা করার সব আমি করেছি। প্লিজ আমার ভাই আমার পরিবার থেকে দূরে থাকুন। আর আমার ভাইকে ছেড়ে দিন। আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।
হ্যাঁ অবশ্যই আপনার ভাইকে ছেড়ে দিব কিন্তু তখন আর আপনাদের কিছু করার থাকবে না। আপনার ভাইকে অবশ্যই পেয়ে যাবেন। কিন্তু তখন আপনার ভাই আর বেঁচে থাকবে না। আপনার ভাইকে মৃত পাবেন। আর এর জন্য দায়ী আর কেউ না শুধু আপনি। সেদিন আমাদের কথা শুনলে আজ এমন হতো না। হাহাহা
সুরাইয়া তখন আর বুঝতে বাকি রইল না। এসব কাজ ওয়াহেদের বাবার ছাড়া আর কারোর না। সারাজীবনে সুরাইয়া পরিবার কারোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে নাই। কাউকে কষ্ট দিয় কথা বলে নাই। এমন কি কারোর সাথে কোনো শত্রুতা নেই।
সুরাইয়া আরো কান্না করতে করতে বলে। এখনি গিয়ে আমি মামলা তুলে নিব। আমি মিথ্যা বলব আদালতে ওয়াহেদের কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার। ওয়াহেদকে ফাঁসানোর জন্য আমি এসব করেছি।দরকার হয় আমি নিজে জেলে যাবো আর আপনার ছেলেকে জেল থেকে মুক্তি করব। তবুও প্লিজ আপনারা আমার ভাইকে ছেড়ে দিন। আমার ভাই নিষ্পাপ।
ওয়াহেদের বাবা হাসতে হাসতে বলে। আপনার কি মনে হয় আমি এভাবেই আমার ছেলেকে জেলের মধ্যে রেখে দিব। এই পৃথিবী টাকার জোরে চলে। আপনাদের বাসায় পৌঁছানোর আগেই আমার ছেলেকে জেল থেকে নিয়ে চলে আসছি। পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আর এসব টাকা আমাদের কাছে সামান্য বিষয়।
সুরাইয়া তখন বলে তাহলে আমাকে কি করতে হবে বলেন। আপনি যা চাইবেন তাই হবে।
আমজান সাহেব বলে। আপনাদের পরিবারের সবার জীবন চাই আমি। সবাই কে এ জীবন থেকে মুক্তি করে দিব। পারবেন না আপনাদের জীবন দিতে?
সুরাইয়ার বাবা সুরাইয়ার কাছে থেকে ফোনটা নিয়ে বলে। আপনি আমাদের কাছে থেকে যার জন্য এমন করছেন। আপনার ছেলে তার পাপের শাস্তি পেয়েছে। যেটা তার ভাগ্যে লেখা ছিল। আমার ছেলেকে ছেড়ে দিন না হলে আপনার অবস্থা আপনার ছেলের থেকেও খারাপ হবে।
আমজাদ সাহেব হাসতে হাসতে বলে। সত্যি আপনি মানুষটি খুব শক্তিশালী। আপনার মেয়ে থেকে আপনাকে কিছু শেখার দরকার। এই বিপদের সময় আপনার ছেলেকে আমার থেকে ভিক্ষা চাইবেন। কিন্তু সেটা না করে আপনি কি করছেন আমার সাথে উঁচু আওয়াজে কথা বলছেন। এটা ভুলে গিয়েছেন যে আপনার ছেলের জীবন আমার হাতে।
সুরাইয়ার বাবা আমার ছেলের জীবন একমাত্র আল্লাহর হাতে। আল্লাহ যেটা চাই সেটা হবে। তার মৃত্যু যদি এখন কপালে লেখা থাকে এখন হবে আর যদি তার মৃত্যু কপালে না লেখা থাকে তাহলে হবে না।
আমজাদ সাহেব তখন রেগে গিয়ে বলে। ওহ আচ্ছা তাহলে এখন গিয়ে আপনার ছেলের গলা কেটে ফেলি দেখি কে এসে ঠেকাই।
কল টা এতোক্ষণ লাউড স্পিকারে ছিল। সুরাইয়ার মা আর সুরাইয়া সব শুনছিল। সুরাইয়ার মা স্বামীর কাছে থেকে ফোন নিয়ে বলে। প্লিজ এমন কিছু করবেন না। আপনি যেটা বলবেন সেটা করব। আপনার কত টাকা লাগবে সেটা বলেন যা লাগবে তাই দিব। দরকার হয় আমাকে মেরে ফেলেন তবুও আমার ছেলেকে ছেড়ে দিন।
আমজাদ সাহেব তখন হেসে হেসে বলে এই পুরো বাড়ির মধ্যে আপনিই একমাত্র বুঝদার মানুষ। এতোক্ষণ ধরে সবাই চিল্লাচিল্লি না করলে কাজের কথা বললে সমাধান হয়ে যায় অনেক আগেই। আমজাদ সাহেব বলে আপনারা ওখানে কে কে আছেন?
সুরাইয়ার মা তখন বলে আমি আমার মেয়ে আর আমার স্বামী আছি।
এবার ফোনটা লাউড স্পিকারে দেন যাতে সবাই শুনতে পারে। সুরাইয়ার মা বলে এবার বলেন।
আমজাদ সাহেব বলেন আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আর মান সম্মান তো নষ্ট হয়েছে। আপনারা আমাকে দশ লক্ষ টাকা দিবেন। আর কোথায় কিভাবে যোগাযোগ করবেন আমি বলব সেটা। যদি কাউকে এই বিষয়ে বলেন বা পুলিশ কে জানান তাহলে আমি কি করব বুঝতেই পারছেন। আর আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই যেটা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করবেন হাহাহ। যদি আপনার ছেলেকে বাঁচাতে চান তাহলে আমার কথা মতো চলতে হবে।আর কাউকে কিছু বলা যাবে না আপনারা তিন জন ছাড়া কেউ জানবে না। আপনাদের কোনো ভুলে যদি আপনাদের ছেলের জীবন চলে যায় তাহলে সেটার জন্য আপনারা দায়ি আমি না। এটা বলেই ফোন কেটে দেয়।
বাসায় সবাই অনেক টেনশনে আছে । কি করবে বুঝছে পারছে না। সুরাইয়ার বাবা ওই সন্তানের সামনে মাথা নিচু করতে কিছুতে রাজি নয়। আল্লাহ যেটা করবে সেটা হবে। সুরাইয়ার মা আর সুরাইয়া অনেক চেষ্টার পর বুঝাতে রাজি হলো। আর আল্লাহ উপর ভরসা করে। সুরাইয়ার মা দুই রাকাত নামাজ পড়ে হাসিবের জন্য অনেক দোয়া করে।
দশ লক্ষ টাকা একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য অনেক কিছু। কিন্তু টাকা কিভাবে ম্যানেজ করবে। সুরাইয়ার মা শখের গহনা নিয়ে এসে স্বামীর হাতে দিয়ে বলে এগুলো বিক্রি করে দাও কিছু টাকা আসবে। সুরাইয়াও তার সব গহনা নিয়ে এসে বলে এগুলো বিক্রি করে দাও। আর অন্যের কাছে ধার করে, শখের জিনিস গুলো বিক্রি করে টাকা ম্যানেজ হয়।
আজকের রাত টা সুরাইয়ার পরিবারের জন্য অনেক কষ্টের। সুরাইয়া ইচ্ছা হচ্ছে মাহমুদের সাথে কথা বলতে তাহলে মাহমুদ কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারবে। কালকের নাম্বারে ফোন দেয় কিন্তু কল যায় না। মাহমুদ কাল বলেছিল এই সিম কাল আর থাকবে। নতুন সিম দিয়ে ফোন দিবে। কিন্তু এখনো ফোন দেয় না। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। সুরাইয়ার বুঝতে বাকি রইল না এটা মাহমুদ। আর এটাও ভয় হচ্ছে যদি আমজাদ সাহেব দিয়ে থাকে
সুরাইয়া ভয়ে ভয়ে কল রিসিভ করে। ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠে হাই সুরাইয়া।
এতোক্ষণে সুরাইয়া হাফ ছেড়ে বাঁচে। কেমন আছেন আপনি?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
ভালো না!
কেন কি হয়েছে?
সুরাইয়া সবকিছু খুলে বলে মাহমুদ কে। তার ভাইকে ওয়াহেদের বাবা আমজাদ সাহেব কিডন্যাপ করে দশ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছে।
ওয়াহেদ বলে চিন্তা করো না সুরাইয়া। আমি আছি আমি সাহায্য করবো। ঠিকানা বলেছে কোথায় যেতে হবে?
না বলে নাই। পরে ফোন দিয়ে জানাবে।
মাহমুদ বলে যদি ঠিকানা বলে আমাকে জানাবে এই নাম্বারে ফোন দিয়ে। কাল এই নাম্বার তোমার জন্য খোলা রাখব।
সুরাইয়া বলে কাউকে ঠিকানা জানাতে মানা করেছে যদি আমরা পুলিশ বা কাউকে জানিয়ে সাহায্য নিই তাহলে আমার ভাইকে মেরে ফেলবে।
মাহমুদ বলে চিন্তা করার দরকার নেই সুরাইয়া আমরা দুজন দুজনকে চিনি না কেউ সন্দেহ করবে না। আর তুমিও বুঝতে পারবে না আমি কোনটা। সুরাইয়া মাহমুদের কথায় রাজি হয়ে যায়।
সকালে একটা পার্সেল আসে সুরাইয়ার বাসায়। পার্সেল খুলে দেখে সুরাইয়ার মা অজ্ঞান হয়ে যায়। বাসায় হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। সুরাইয়া আর সুরাইয়ার বাবা দৌড়ে সুরাইয়ার মায়ের আসে। সুরাইয়া ভয়ে ভয়ে পার্সেল টা তুলে হাতে নেই। পার্সেল খুলে সুরাইয়া কিছুটা ভয় পেয়ে যাই।
পার্সেলে একটা কাটা আঙ্গুল ছিল। সুরাইয়ার বাবা এসেও পার্সেলটা হাতে নেই আর কাটা আঙ্গুল দেখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠেছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না এটা হাসিবের কাটা আঙ্গুল। সুরাইয়া বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। সুরাইয়া বাবাও কান্না শুরু করে দেয়।
সুরাইয়া আর সুরাইয়ার বাবা সুরাইয়ার মাকে ধরে খাটের উপর শুয়ে দেয়। তারপর বাথরুমে থেকে পানি নিয়ে এসে মুখে ছিটিয়ে দেই। কিছুক্ষণ পরে সুরাইয়ার মায়ের জ্ঞান ফিরে আসে। সুরাইয়ার মা করছে আর বলছে এটা কি হাসিবের আঙ্গুল ছিল?
সুরাইয়া নিজেকে শান্ত করে মাকে শান্তনা দেয় যে এটা হাসিবের আঙ্গুল না। ওরা আমাদের কে ভয় দেখানোর জন্য অন্য কারোর হাত কেটে আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। পার্সেলে কাটা আঙ্গুলে সাথে একটা কাগজ ছিল। কাগজে লেখা ছিল যে--
হাহাহা প্রতিবাদী পরিবারের আজ কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে মনে হচ্ছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই এটা হাসিবের হাত না। যদি হাসিব কে পেতে চান তাহলে কালোকঠির বড় বিল্ডিং এর পাশে চলে আসবেন। শুধুমাত্র একজন আসবেন। সেটা আর কেউ না সুরাইয়া আসবে। আর হ্যাঁ কোনো চালাকি না। আমি যেভাবে বলেছি ঠিক সে ভাবেই করবেন। আর যদি কোনো চালাকি করেন তাহলে হাসিব সহ পুরো পরিবারকে মেরে ফেলব। পুরো দশ লক্ষ টাকা নিয়ে আমার বলা জায়গায় চলে আসবেন।
চিঠিতে শুধু এটাই লেখা ছিল। আর কিছু না। সুরাইয়ার বাবা আর মা ভয় পেয়ে যায়।
সুরাইয়ার বাবা মা ভয় পেয়ে বলে আমরা তোকে যেতে দিব না সুরাইয়া। সুরাইয়া বাবা বলে দরকার হয় আমি যাবো একা কিন্তু তোকে যেতে দিব না। যদি তোর সাথে খারাপ কিছু করে ওরা তখন কি করবি। যদি ছেড়ে না দিয়ে তোকেও কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় তখন কি করবো।
সুরাইয়া তখন বলে না বাবা তুমি তো চিঠি দেখলে শুধু আমাকে যেতে বলছে তুমি যেও না। আর সাথে কি গেলে আমাদের মেরে ফেলবে। তোমার কোনো চিন্তা করো না। তোমারা দেখে নিও আমি হাসিবকে সাথে নিয়ে আসবো।
সুরাইয়া রুমে গিয়ে মাহমুদ কে ফোন দেয়। আজ আর মাহমুদ ফোন বন্ধ রাখেনি খোলা আছে। মাহমুদ কাল কথা দিয়েছিল আজ এই নাম্বার খোলা রাখবে সে তার কথা রেখেছে। এখন সুরাইয়া কে তার কথা রাখতে হবে। সুরাইয়া বলেছিল সব কথা মাহমুদ কে বলবে। প্রথম বার দেয় কিন্তু ফোন রিসিভ করে না। দ্বিতীয় বার ফোন দেয় কিন্তু ফোন রিসিভ করে না। এভাবে সুরাইয়া অনেক বার ফোন দেয় কিন্তু মাহমুদ রিসিভ করে না।সুরাইয়া বেশ ভেঙে পড়ে। এতোক্ষণ সুরাইয়ার বুকে বল ছিল যে মাহমুদ তার সাথে আছে কিন্তু মাহমুদ তো ফোন রিসিভ করে না।
বিকাল হয়ে যাচ্ছে এখন সুরাইয়া কে বাহির হতে হবে। ভাই হাসিবকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। ঠিক তখনি মাহমুদের নাম্বার থেকে কল আসে। আর সুরাইয়া কল রিসিভ করে।
হ্যালো সুরাইয়া কেন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
স্যরি তুমি ফোন দিয়েছিলে আমি তখন বাইরে ছিলাম আর ফোন নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমি তোমাকে ফোন দিতে বলেছিলাম কিন্তু আমি বাসায় ফোন রেখে চলে গিয়েছিলাম।
সুরাইয়া তখন সমস্যা নেই কোন। আমি একা সবকিছু সামলে নিতে পারবো। এতদিন পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মাহমুদ তখন বলে প্লিজ এমন করে বলবেন না। জানি আমার অনেক ভুল হয়েছে। প্লিজ এসব ভুল বাদ দিয়ে এখন আপনার ভাইকে বাঁচানোর চিন্তা করতে হবে।
সুরাইয়া বলে তার আর দরকার নেই। টাকা ম্যানেজ হয়েছে। আর আজ বিকালে যেতে বলছে একটা ঠিকানা দিয়েছে। শুধু আমাকে একা যেতে হবে। টাকা দিলেই আমার ভাইকে ছেড়ে দিবে। আর একটা পার্সেল পাঠিয়েছিল পার্সেলের ভিতর একটা আংগুল ছিল আরেকটা কাগজ ছিল।
মাহমুদ কিছুটা ভয় পেয়ে বলে আঙ্গুল টা কি হাসিবের ছিল? আর কাগজে কি লেখা ছিল প্লিজ বলেন।
সুরাইয়া তখন বলে না কাটা আঙ্গুল টা হাসিবের না শুধু ভয় দেখানোর জন্য এমন করেছে। আর কাগজে লেখা ছিল যে। হাহাহা প্রতিবাদী পরিবারের আজ কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে মনে হচ্ছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই এটা হাসিবের হাত না। যদি হাসিব কে পেতে চান তাহলে কালোকঠির বড় বিল্ডিং এর পাশে চলে আসবেন। শুধুমাত্র একজন আসবেন। সেটা আর কেউ না সুরাইয়া আসবে। আর হ্যাঁ কোনো চালাকি না। আমি যেভাবে বলেছি ঠিক সে ভাবেই করবেন। আর যদি কোনো চালাকি করেন তাহলে হাসিব সহ পুরো পরিবারকে মেরে ফেলব। পুরো দশ লক্ষ টাকা নিয়ে আমার বলা জায়গায় চলে আসবেন।
তারপর বিকালে সুরাইয়া সেই ঠিকানায় যাই। মাহমুদের আশার কথা ছিল। কিন্তু এখনো আসেনি। ওয়াহেদের বাবা হাসিব আর কয়েকটা গুন্ডা সাথে করে নিয়ে আসে। টাকা দেখে আমজাদ সাহেব হাসতে হাসতে বলে বাহ টাকার ঘ্রাণ অনেক সুন্দর তো। আর তুমি আর তোমার ভাই এখান থেকে যেতে পারবে না। এখানেই মরতে হবে।
কিন্তু আমজাদ সাহেবের খুশি বেশিক্ষণ থাকলো না। একটা পুলিশ ফোর্স এসে আমজাদ সাহেব কে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে। আর সবাইকে ধরে নিয়ে যায়। ওয়াহেদ আর ওয়াহেদের বাবাকে দশ বছরের জেল হয়।
একটা পুলিশ অফিসার সুরাইয়ার দিকে এগিয়ে আসে। সুরাইয়া তখন বলে আমি তো কোনো পুলিশ কে খবর দি নাই। আপনারা কিভাবে জানলেন। পুলিশ অফিসার তখন বলে আমিই মাহমুদ সাহেব।
ওয়াহেদ মাহমুদ
হাসিমুখে সুরাইয়া আর সুরাইয়ার বাবা আদালত থেকে বাসায় ফিরে আসে। বিকালে বাসায় এসে দেখে সুরাইয়ার মা কান্না করছে। সুরাইয়া বলে কি হয়েছে কান্না কর কেন?
তখন সুরাইয়ার মা বলে হাসিব স্কুল থেকে বাসায় ফেরেনি। স্কুলে নেই। কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না। হাসিবের বন্ধুরাও বলতে পারছে না কোথায় গিয়েছে।
হঠাৎ অপরিচিত এক নাম্বার থেকে সুরাইয়ার কাছে কল আসে। কল ছিল ল্যান্ড নাম্বার থেকে। ভয়ে ভয়ে কল রিসিভ করে সুরাইয়া। কল রিসিভ করে সুরাইয়া বলে কে বলছেন?
ফোনের ওপাশ থেকে অট্ট হাসি দিয়ে বলে আমি কে বলছি আপনাকে জানতে হবে না। নিশ্চয়ই আপনি হাসিবের বড় বোন।
সুরাইয়া তখন কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে হ্যা আমি হাসিবের বড় বোন। হাসিব কোথায় আছে এখন। হাসিবের কাছে ফোন দেন আমি কথা বলব।
তখন ফোনের ওপাশ থেকে বলে। এখন আফসোস করে কোনো কাজ হবে না। অনেক করে বোঝানো হয়েছে আপনাদের, আমরা মামলা তুলে নিচ্ছি আপনারা আর কোন ঝামেলা করবেন না। কিন্তু আপনারা আমাদের কথা শুনলেন না।
সুরাইয়া তখন কান্না করে বলে প্লিজ আমার ভাই কে কিছু করবেন না। আমার ভাইয়ের কোনো দোষ নেই তো। যা করার সব আমি করেছি। প্লিজ আমার ভাই আমার পরিবার থেকে দূরে থাকুন। আর আমার ভাইকে ছেড়ে দিন। আপনি যা বলবেন আমি তাই করব।
হ্যাঁ অবশ্যই আপনার ভাইকে ছেড়ে দিব কিন্তু তখন আর আপনাদের কিছু করার থাকবে না। আপনার ভাইকে অবশ্যই পেয়ে যাবেন। কিন্তু তখন আপনার ভাই আর বেঁচে থাকবে না। আপনার ভাইকে মৃত পাবেন। আর এর জন্য দায়ী আর কেউ না শুধু আপনি। সেদিন আমাদের কথা শুনলে আজ এমন হতো না। হাহাহা
সুরাইয়া তখন আর বুঝতে বাকি রইল না। এসব কাজ ওয়াহেদের বাবার ছাড়া আর কারোর না। সারাজীবনে সুরাইয়া পরিবার কারোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে নাই। কাউকে কষ্ট দিয় কথা বলে নাই। এমন কি কারোর সাথে কোনো শত্রুতা নেই।
সুরাইয়া আরো কান্না করতে করতে বলে। এখনি গিয়ে আমি মামলা তুলে নিব। আমি মিথ্যা বলব আদালতে ওয়াহেদের কোনো দোষ নেই। সব দোষ আমার। ওয়াহেদকে ফাঁসানোর জন্য আমি এসব করেছি।দরকার হয় আমি নিজে জেলে যাবো আর আপনার ছেলেকে জেল থেকে মুক্তি করব। তবুও প্লিজ আপনারা আমার ভাইকে ছেড়ে দিন। আমার ভাই নিষ্পাপ।
ওয়াহেদের বাবা হাসতে হাসতে বলে। আপনার কি মনে হয় আমি এভাবেই আমার ছেলেকে জেলের মধ্যে রেখে দিব। এই পৃথিবী টাকার জোরে চলে। আপনাদের বাসায় পৌঁছানোর আগেই আমার ছেলেকে জেল থেকে নিয়ে চলে আসছি। পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আর এসব টাকা আমাদের কাছে সামান্য বিষয়।
সুরাইয়া তখন বলে তাহলে আমাকে কি করতে হবে বলেন। আপনি যা চাইবেন তাই হবে।
আমজান সাহেব বলে। আপনাদের পরিবারের সবার জীবন চাই আমি। সবাই কে এ জীবন থেকে মুক্তি করে দিব। পারবেন না আপনাদের জীবন দিতে?
সুরাইয়ার বাবা সুরাইয়ার কাছে থেকে ফোনটা নিয়ে বলে। আপনি আমাদের কাছে থেকে যার জন্য এমন করছেন। আপনার ছেলে তার পাপের শাস্তি পেয়েছে। যেটা তার ভাগ্যে লেখা ছিল। আমার ছেলেকে ছেড়ে দিন না হলে আপনার অবস্থা আপনার ছেলের থেকেও খারাপ হবে।
আমজাদ সাহেব হাসতে হাসতে বলে। সত্যি আপনি মানুষটি খুব শক্তিশালী। আপনার মেয়ে থেকে আপনাকে কিছু শেখার দরকার। এই বিপদের সময় আপনার ছেলেকে আমার থেকে ভিক্ষা চাইবেন। কিন্তু সেটা না করে আপনি কি করছেন আমার সাথে উঁচু আওয়াজে কথা বলছেন। এটা ভুলে গিয়েছেন যে আপনার ছেলের জীবন আমার হাতে।
সুরাইয়ার বাবা আমার ছেলের জীবন একমাত্র আল্লাহর হাতে। আল্লাহ যেটা চাই সেটা হবে। তার মৃত্যু যদি এখন কপালে লেখা থাকে এখন হবে আর যদি তার মৃত্যু কপালে না লেখা থাকে তাহলে হবে না।
আমজাদ সাহেব তখন রেগে গিয়ে বলে। ওহ আচ্ছা তাহলে এখন গিয়ে আপনার ছেলের গলা কেটে ফেলি দেখি কে এসে ঠেকাই।
কল টা এতোক্ষণ লাউড স্পিকারে ছিল। সুরাইয়ার মা আর সুরাইয়া সব শুনছিল। সুরাইয়ার মা স্বামীর কাছে থেকে ফোন নিয়ে বলে। প্লিজ এমন কিছু করবেন না। আপনি যেটা বলবেন সেটা করব। আপনার কত টাকা লাগবে সেটা বলেন যা লাগবে তাই দিব। দরকার হয় আমাকে মেরে ফেলেন তবুও আমার ছেলেকে ছেড়ে দিন।
আমজাদ সাহেব তখন হেসে হেসে বলে এই পুরো বাড়ির মধ্যে আপনিই একমাত্র বুঝদার মানুষ। এতোক্ষণ ধরে সবাই চিল্লাচিল্লি না করলে কাজের কথা বললে সমাধান হয়ে যায় অনেক আগেই। আমজাদ সাহেব বলে আপনারা ওখানে কে কে আছেন?
সুরাইয়ার মা তখন বলে আমি আমার মেয়ে আর আমার স্বামী আছি।
এবার ফোনটা লাউড স্পিকারে দেন যাতে সবাই শুনতে পারে। সুরাইয়ার মা বলে এবার বলেন।
আমজাদ সাহেব বলেন আমার ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে পাঁচ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। আর মান সম্মান তো নষ্ট হয়েছে। আপনারা আমাকে দশ লক্ষ টাকা দিবেন। আর কোথায় কিভাবে যোগাযোগ করবেন আমি বলব সেটা। যদি কাউকে এই বিষয়ে বলেন বা পুলিশ কে জানান তাহলে আমি কি করব বুঝতেই পারছেন। আর আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই যেটা দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করবেন হাহাহ। যদি আপনার ছেলেকে বাঁচাতে চান তাহলে আমার কথা মতো চলতে হবে।আর কাউকে কিছু বলা যাবে না আপনারা তিন জন ছাড়া কেউ জানবে না। আপনাদের কোনো ভুলে যদি আপনাদের ছেলের জীবন চলে যায় তাহলে সেটার জন্য আপনারা দায়ি আমি না। এটা বলেই ফোন কেটে দেয়।
বাসায় সবাই অনেক টেনশনে আছে । কি করবে বুঝছে পারছে না। সুরাইয়ার বাবা ওই সন্তানের সামনে মাথা নিচু করতে কিছুতে রাজি নয়। আল্লাহ যেটা করবে সেটা হবে। সুরাইয়ার মা আর সুরাইয়া অনেক চেষ্টার পর বুঝাতে রাজি হলো। আর আল্লাহ উপর ভরসা করে। সুরাইয়ার মা দুই রাকাত নামাজ পড়ে হাসিবের জন্য অনেক দোয়া করে।
দশ লক্ষ টাকা একজন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য অনেক কিছু। কিন্তু টাকা কিভাবে ম্যানেজ করবে। সুরাইয়ার মা শখের গহনা নিয়ে এসে স্বামীর হাতে দিয়ে বলে এগুলো বিক্রি করে দাও কিছু টাকা আসবে। সুরাইয়াও তার সব গহনা নিয়ে এসে বলে এগুলো বিক্রি করে দাও। আর অন্যের কাছে ধার করে, শখের জিনিস গুলো বিক্রি করে টাকা ম্যানেজ হয়।
আজকের রাত টা সুরাইয়ার পরিবারের জন্য অনেক কষ্টের। সুরাইয়া ইচ্ছা হচ্ছে মাহমুদের সাথে কথা বলতে তাহলে মাহমুদ কিছুটা হলেও সাহায্য করতে পারবে। কালকের নাম্বারে ফোন দেয় কিন্তু কল যায় না। মাহমুদ কাল বলেছিল এই সিম কাল আর থাকবে। নতুন সিম দিয়ে ফোন দিবে। কিন্তু এখনো ফোন দেয় না। এসব কথা ভাবতে ভাবতেই একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে। সুরাইয়ার বুঝতে বাকি রইল না এটা মাহমুদ। আর এটাও ভয় হচ্ছে যদি আমজাদ সাহেব দিয়ে থাকে
সুরাইয়া ভয়ে ভয়ে কল রিসিভ করে। ফোনের ওপাশ থেকে বলে উঠে হাই সুরাইয়া।
এতোক্ষণে সুরাইয়া হাফ ছেড়ে বাঁচে। কেমন আছেন আপনি?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
ভালো না!
কেন কি হয়েছে?
সুরাইয়া সবকিছু খুলে বলে মাহমুদ কে। তার ভাইকে ওয়াহেদের বাবা আমজাদ সাহেব কিডন্যাপ করে দশ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ চেয়েছে।
ওয়াহেদ বলে চিন্তা করো না সুরাইয়া। আমি আছি আমি সাহায্য করবো। ঠিকানা বলেছে কোথায় যেতে হবে?
না বলে নাই। পরে ফোন দিয়ে জানাবে।
মাহমুদ বলে যদি ঠিকানা বলে আমাকে জানাবে এই নাম্বারে ফোন দিয়ে। কাল এই নাম্বার তোমার জন্য খোলা রাখব।
সুরাইয়া বলে কাউকে ঠিকানা জানাতে মানা করেছে যদি আমরা পুলিশ বা কাউকে জানিয়ে সাহায্য নিই তাহলে আমার ভাইকে মেরে ফেলবে।
মাহমুদ বলে চিন্তা করার দরকার নেই সুরাইয়া আমরা দুজন দুজনকে চিনি না কেউ সন্দেহ করবে না। আর তুমিও বুঝতে পারবে না আমি কোনটা। সুরাইয়া মাহমুদের কথায় রাজি হয়ে যায়।
সকালে একটা পার্সেল আসে সুরাইয়ার বাসায়। পার্সেল খুলে দেখে সুরাইয়ার মা অজ্ঞান হয়ে যায়। বাসায় হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। সুরাইয়া আর সুরাইয়ার বাবা দৌড়ে সুরাইয়ার মায়ের আসে। সুরাইয়া ভয়ে ভয়ে পার্সেল টা তুলে হাতে নেই। পার্সেল খুলে সুরাইয়া কিছুটা ভয় পেয়ে যাই।
পার্সেলে একটা কাটা আঙ্গুল ছিল। সুরাইয়ার বাবা এসেও পার্সেলটা হাতে নেই আর কাটা আঙ্গুল দেখে মুখে ভয়ের ছাপ ফুটে উঠেছে। বুঝতে আর বাকি রইলো না এটা হাসিবের কাটা আঙ্গুল। সুরাইয়া বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো। সুরাইয়া বাবাও কান্না শুরু করে দেয়।
সুরাইয়া আর সুরাইয়ার বাবা সুরাইয়ার মাকে ধরে খাটের উপর শুয়ে দেয়। তারপর বাথরুমে থেকে পানি নিয়ে এসে মুখে ছিটিয়ে দেই। কিছুক্ষণ পরে সুরাইয়ার মায়ের জ্ঞান ফিরে আসে। সুরাইয়ার মা করছে আর বলছে এটা কি হাসিবের আঙ্গুল ছিল?
সুরাইয়া নিজেকে শান্ত করে মাকে শান্তনা দেয় যে এটা হাসিবের আঙ্গুল না। ওরা আমাদের কে ভয় দেখানোর জন্য অন্য কারোর হাত কেটে আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। পার্সেলে কাটা আঙ্গুলে সাথে একটা কাগজ ছিল। কাগজে লেখা ছিল যে--
হাহাহা প্রতিবাদী পরিবারের আজ কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে মনে হচ্ছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই এটা হাসিবের হাত না। যদি হাসিব কে পেতে চান তাহলে কালোকঠির বড় বিল্ডিং এর পাশে চলে আসবেন। শুধুমাত্র একজন আসবেন। সেটা আর কেউ না সুরাইয়া আসবে। আর হ্যাঁ কোনো চালাকি না। আমি যেভাবে বলেছি ঠিক সে ভাবেই করবেন। আর যদি কোনো চালাকি করেন তাহলে হাসিব সহ পুরো পরিবারকে মেরে ফেলব। পুরো দশ লক্ষ টাকা নিয়ে আমার বলা জায়গায় চলে আসবেন।
চিঠিতে শুধু এটাই লেখা ছিল। আর কিছু না। সুরাইয়ার বাবা আর মা ভয় পেয়ে যায়।
সুরাইয়ার বাবা মা ভয় পেয়ে বলে আমরা তোকে যেতে দিব না সুরাইয়া। সুরাইয়া বাবা বলে দরকার হয় আমি যাবো একা কিন্তু তোকে যেতে দিব না। যদি তোর সাথে খারাপ কিছু করে ওরা তখন কি করবি। যদি ছেড়ে না দিয়ে তোকেও কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় তখন কি করবো।
সুরাইয়া তখন বলে না বাবা তুমি তো চিঠি দেখলে শুধু আমাকে যেতে বলছে তুমি যেও না। আর সাথে কি গেলে আমাদের মেরে ফেলবে। তোমার কোনো চিন্তা করো না। তোমারা দেখে নিও আমি হাসিবকে সাথে নিয়ে আসবো।
সুরাইয়া রুমে গিয়ে মাহমুদ কে ফোন দেয়। আজ আর মাহমুদ ফোন বন্ধ রাখেনি খোলা আছে। মাহমুদ কাল কথা দিয়েছিল আজ এই নাম্বার খোলা রাখবে সে তার কথা রেখেছে। এখন সুরাইয়া কে তার কথা রাখতে হবে। সুরাইয়া বলেছিল সব কথা মাহমুদ কে বলবে। প্রথম বার দেয় কিন্তু ফোন রিসিভ করে না। দ্বিতীয় বার ফোন দেয় কিন্তু ফোন রিসিভ করে না। এভাবে সুরাইয়া অনেক বার ফোন দেয় কিন্তু মাহমুদ রিসিভ করে না।সুরাইয়া বেশ ভেঙে পড়ে। এতোক্ষণ সুরাইয়ার বুকে বল ছিল যে মাহমুদ তার সাথে আছে কিন্তু মাহমুদ তো ফোন রিসিভ করে না।
বিকাল হয়ে যাচ্ছে এখন সুরাইয়া কে বাহির হতে হবে। ভাই হাসিবকে বাসায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে। ঠিক তখনি মাহমুদের নাম্বার থেকে কল আসে। আর সুরাইয়া কল রিসিভ করে।
হ্যালো সুরাইয়া কেন আছো?
আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
স্যরি তুমি ফোন দিয়েছিলে আমি তখন বাইরে ছিলাম আর ফোন নিয়ে যেতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমি তোমাকে ফোন দিতে বলেছিলাম কিন্তু আমি বাসায় ফোন রেখে চলে গিয়েছিলাম।
সুরাইয়া তখন সমস্যা নেই কোন। আমি একা সবকিছু সামলে নিতে পারবো। এতদিন পাশে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
মাহমুদ তখন বলে প্লিজ এমন করে বলবেন না। জানি আমার অনেক ভুল হয়েছে। প্লিজ এসব ভুল বাদ দিয়ে এখন আপনার ভাইকে বাঁচানোর চিন্তা করতে হবে।
সুরাইয়া বলে তার আর দরকার নেই। টাকা ম্যানেজ হয়েছে। আর আজ বিকালে যেতে বলছে একটা ঠিকানা দিয়েছে। শুধু আমাকে একা যেতে হবে। টাকা দিলেই আমার ভাইকে ছেড়ে দিবে। আর একটা পার্সেল পাঠিয়েছিল পার্সেলের ভিতর একটা আংগুল ছিল আরেকটা কাগজ ছিল।
মাহমুদ কিছুটা ভয় পেয়ে বলে আঙ্গুল টা কি হাসিবের ছিল? আর কাগজে কি লেখা ছিল প্লিজ বলেন।
সুরাইয়া তখন বলে না কাটা আঙ্গুল টা হাসিবের না শুধু ভয় দেখানোর জন্য এমন করেছে। আর কাগজে লেখা ছিল যে। হাহাহা প্রতিবাদী পরিবারের আজ কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে মনে হচ্ছে। চিন্তার কোনো কারণ নেই এটা হাসিবের হাত না। যদি হাসিব কে পেতে চান তাহলে কালোকঠির বড় বিল্ডিং এর পাশে চলে আসবেন। শুধুমাত্র একজন আসবেন। সেটা আর কেউ না সুরাইয়া আসবে। আর হ্যাঁ কোনো চালাকি না। আমি যেভাবে বলেছি ঠিক সে ভাবেই করবেন। আর যদি কোনো চালাকি করেন তাহলে হাসিব সহ পুরো পরিবারকে মেরে ফেলব। পুরো দশ লক্ষ টাকা নিয়ে আমার বলা জায়গায় চলে আসবেন।
তারপর বিকালে সুরাইয়া সেই ঠিকানায় যাই। মাহমুদের আশার কথা ছিল। কিন্তু এখনো আসেনি। ওয়াহেদের বাবা হাসিব আর কয়েকটা গুন্ডা সাথে করে নিয়ে আসে। টাকা দেখে আমজাদ সাহেব হাসতে হাসতে বলে বাহ টাকার ঘ্রাণ অনেক সুন্দর তো। আর তুমি আর তোমার ভাই এখান থেকে যেতে পারবে না। এখানেই মরতে হবে।
কিন্তু আমজাদ সাহেবের খুশি বেশিক্ষণ থাকলো না। একটা পুলিশ ফোর্স এসে আমজাদ সাহেব কে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে। আর সবাইকে ধরে নিয়ে যায়। ওয়াহেদ আর ওয়াহেদের বাবাকে দশ বছরের জেল হয়।
একটা পুলিশ অফিসার সুরাইয়ার দিকে এগিয়ে আসে। সুরাইয়া তখন বলে আমি তো কোনো পুলিশ কে খবর দি নাই। আপনারা কিভাবে জানলেন। পুলিশ অফিসার তখন বলে আমিই মাহমুদ সাহেব।
Hasibul hasan santo, Abul basar, Sk sagor, Sk imran, Rasel islam, Saiful Osman, Rokeya hoq and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
|
|