সাদা কাগজ
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Go down
avatar
Ahmed rubel
নবাগত
নবাগত
Posts : 2
স্বর্ণমুদ্রা : 1168
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-05

মাতৃত্ব Empty মাতৃত্ব

Sat Jun 05, 2021 9:48 pm
এখন থেকে খুব সাবধানে চলাচল করতে হবে। আপনি কিন্তু মা হতে চলেছেন।

ডক্টর ফারজানা নিশাতের এরকম অপ্রত্যাশিত এবং অবাস্তব কথায় আঞ্জুমান আরা মিলি ভয়ংকর ক্ষিপ্ত হন।
- ফাজলামো করেন আমার সাথে? বুঝতে পারছেন আপনি কি বলছেন?
- কেনো, না বোঝার কি হলো? হতভম্ব নিশাত। আপনি আসলেই....
- আবার মিথ্যা বলেন! আমি আপনার মায়ের বয়সী হবো।আমার সাথে রসিকতা করতে আপনার লজ্জা করছে না?
- দেখুন আপনি....
- আপনি আর একটা কথা বলবেন না প্লিজ। আমি বন্ধ্যা। আজীবনের বন্ধ্যা। মেনেই তো নিয়েছি এই সত্য। কেনো পুরোনো ক্ষতে আবার নতুন করে আঁচড় কাটছেন।আমার এই তেপ্পান্ন বছর বয়সে নতুন করে আর কষ্ট সইবার ক্ষমতা নাই গো মা। আমাকে এইবার রেহাই দ্যান।বলেই ঝরঝর করে কেঁদে ফেলেন মিলি।

ডক্টর নিশাত কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যান রোগীর এমন কান্না দেখে। এরকম ইমোশনাল সিচুয়েশনে তার কি করনীয় তা বুঝে উঠতে খানিকটা সময় নেন।তারপর উঠে গিয়ে মিলির পিঠে সহানুভূতির হাত বুলিয়ে কোমল কন্ঠে বলেন - আমি সত্যিই দুঃখিত। আপনার সাথে কেউ আসেন নি?
- বাইরে আমার স্বামী বসে আছেন।
- ঠিক আছে, আপনাকে যা চেক করার তা হয়ে গেছে। আপনি বরং বাইরে অপেক্ষা করুন। আমি আপনার স্বামীর কাছে প্রেসক্রিপশন বুঝিয়ে দিচ্ছি কেমন!

চেম্বারে নেভাল অফিসার মিনহাজুল আবেদীন ডক্টর নিশাতের মুখোমুখি।
- কি হয়েছে ডক্টর? আমার ওয়াইফের কি মারাত্মক কোনো সমস্যা? ও এভাবে ফুঁপিয়ে কাঁদছে কেনো?
- আপনার স্ত্রী মা হতে চলেছেন।
অপ্রত্যাশিত এমন সুসংবাদে মিনহাজ ধাতস্থ হতে কিছুটা সময় নেন।
- সত্যি বলছেন ডক্টর? আমরাতো এতদিন জেনে এসেছি ওর পেটে টিউমার!
- আমি যা বলছি একদম সঠিক। বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই । কিন্তু আপনারা এত অবাক ই বা হচ্ছেন কেনো বুঝতে পারছিনা। তেপ্পান্ন বছর বয়সে গর্ভধারণের রেকর্ড তো একেবারে নতুন না।

- না মানে, এতগুলো বছর পর এমন আকস্মিক ঘটনায় আমরা দু'জনেই অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছি। বিয়ের পর থেকে বহু চেষ্টা তদবির তো করা হলো। দেশে বিদেশে অনেক ডাক্তার দেখিয়েও কোনো সুফল পাইনি।সর্বশেষ ভারতের চিকিৎসা শেষে যখন খালি হাতে ফিরলাম, তখন আমরা সম্পূর্ণ নিশ্চিত হয়ে যাই যে বাকি জীবন আমাদের নিঃসন্তান কাটাতে হবে। আমার স্ত্রী কখনো মা হতে পারবেন না।এরপর আমরা একটি কন্যাশিশু দত্তক নিই। আমাদের মেয়ে এখন বিবিএ পড়ছে।

- ওহ রিয়েলি স্যরি, খুবই প্যাথেটিক।কিন্তু উনিতো এখন সত্যিই মা হচ্ছেন। ওনাকে ভীষণ সতর্ক থাকতে হবে। এই স্টেজে এসে গর্ভধারন আপনার স্ত্রীর নিজের জীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে।
- বুঝতেই তো পারছেন ডক্টর, দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর আচমকা এমন সংবাদ ও সহজে বিশ্বাস করতে পারছেনা। বাচ্চা জন্ম না দিতে পারার গ্লানি যেমন তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে তেমনি নানান জনের কটু কথায় জর্জরিত সে।আপনি প্লিজ কিছু মনে করবেন না।

ডাক্তারের চেম্বার থেকে ফিরে মিনহাজ মিলিকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেন। জানালার পর্দাটা সরিয়ে ঘরের ভেতর আলো বাতাস প্রবেশের পথ করে দেন।মিলি পেছন ফিরে শুয়ে মুখটা আড়াল করে রাখে। ক্ষনে ক্ষনে তার শরীরটা কেঁপে উঠছে। মিলি কিছুক্ষণ এভাবে কাঁদবে সেটা ভালোই বোঝে মিনহাজ। কাঁদুক... কেঁদে বুকটা হালকা করুক। মিনহাজ রান্নাঘরের দিকে পা বাড়ায়। আজ আর মিলিকে কোনো কাজ করতে দেবেনা সে।

বিকেলে অল্প কিছু সময়ের জন্য বেরিয়েছিলো মিনহাজ। দুহাত ভরে নানান পদের মিষ্টি আর কয়েকটি বেলি ফুলের মালা নিয়ে ঘরে ফেরে সে।সেগুলো দেখে আবার রেগে যান মিলি।
- কি ব্যাপার। এত মিষ্টি কেনো এই অসময়ে? তুমিও কি ঐ পাগল ডাক্তারের মতো....
- আরে না না, দুর! মেয়েটা মিষ্টি খেতে বায়না করলো যে। কই রে মা পিউলি....
মিছেমিছি হাঁক দেন মিনহাজ। মিলিকে কিছুতেই উত্তেজিত করা চলবে না।

সন্ধ্যায় আজ আর মিলির হাতের মাসালা চা খাওয়া হলো না।কোনো এক অজানা কারনে মিলি আজ সারাদিন মনমরা।সে কি বিশ্বাস করছে নাকি পুরোপুরি অবিশ্বাস করছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। হয়তো পুরনো কষ্টের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেছে ওর।মিলি আলো নিভিয়ে ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছে। পাশে কাত হয়ে শুয়ে মিনহাজ মিলির চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন। বাইরে আকাশে হঠাৎ হঠাৎ বিজলি চমকাচ্ছে। বিজলির আলোয় মিনহাজ প্রিয়তমা স্ত্রীর মুখটা ক্ষণিকের জন্য দেখতে পান। কি নিস্পাপ সারল্যে ভরা চোখ দুটোয় অশ্রু ফোঁটা চিকচিক করছে।অপার্থিব মুগ্ধতায় কিছুক্ষণ চেয়েছে থাকেন তিনি। পরম মমতায় স্ত্রীকে বুকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে খুব । কিন্তু মিলি আবার উত্তেজিত হয়ে যায় কিনা ভেবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি।

আজ থেকে চল্লিশ বছর আগের কথা। বিয়ের দুবছর যেতে না যেতেই মিনহাজের মা, বোনেরা অস্থির হয়ে যায় একটা বাচ্চার জন্য। অনেক চিকিৎসার পরে যখন তারা জানতে পারলো মিলি সন্তান জন্মদানে অপারগ তখন শুরু হলো তার উপর মানসিক নির্যাতন। অপয়া, অলক্ষুনে, মায়াবী কত কত বিশেষনে ডাকা হতো তাকে।মিলি মুখ বুজে সব সহ্য করতো আর নিরবে চোখের জল ফেলতো। খুব অল্প বয়সে বউ হয়ে এসে আর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি তিনি।এ কারনে অশিক্ষিত, মুর্খ খেতাব ও জিতে নেয় শাশুড়ি ননদের কাছ থেকে। মিনহাজের মা বহু চেষ্টা করেছে তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করানোর জন্য। কিন্তু মিনহাজ এ ব্যাপারে কড়াকড়ি ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন - উপরওয়ালা যদি তার ভাগ্যে সন্তান লিখে রাখেন তবে সে মিলির গর্ভেই জন্মাবে। অন্য কিছু চিন্তা করা তার পক্ষে সম্ভব না। যদি এই বিষয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করে তবে তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন"।একমাত্র ছেলে সন্তানের এমন হুমকির পর মা আর তাকে ঘাটাননি।তবে মিলির প্রতি অশ্রাব্য বাক্যবান অব্যাহত রেখেছেন আমৃত্যু। মায়ের মৃত্যুর পর মিনহাজ মিলি দম্পতি পিউলিকে দত্তক নেন। এবং সমস্ত সম্পত্তি মেয়েকে লিখে দেন। আজ মা বেঁচে থাকলে কতটা খুশি হতেন ভেবে মিনহাজের বুক ভার হয়।

পেটে টিউমার বড় হচ্ছে এই বিশ্বাস নিয়েই মিলি কাটিয়ে দেন গর্ভকালীন বাকিটা সময়।নির্দিষ্ট সময়ে অস্ত্রপচারের মাধ্যমে মিলি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।সেন্স ফেরার পর শিশুটিকে যখন মিলির বুকে দেওয়া হয়, তখন কি যে এক অভাবনীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, সেটা ওখানে যারা উপস্থিত ছিলেন তারা ছাড়া কেউ কল্পনা করতে পারবেন না।মিলি একবার হাসেন,একবার কাঁদেন। আর একে একে সবাইকে জিজ্ঞেস করেন- এইটা কি সত্য? এ আমার সন্তান? আমার? আমি কি স্বপ্নের ঘোরে নাকি জেগে? তোমরা কেউ আমারে বলবা... এ আমার সন্তান? মিনহাজুল আবেদীন অঝোর ধারায় কাঁদছেন। আবেগে জাপটে ধরেন স্ত্রী আর সদ্য ভূমিষ্ট সাত রাজার ধন পুত্রকে।

মিনহাজ আর মিলির সন্তান মাহতামিম। এখন সে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ছে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর মিনহাজের স্থাবর অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তি পিউলির থেকে ফেরত নিয়ে ছেলের নামে করে দেন। তবে বোন হিসেবে প্রাপ্য অংশ তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।

বহুবছরের অপেক্ষা, কষ্ট, গ্লানি ভুলে মিনহাজ মিলি দম্পতি আজ সুখের সাগরে ভাসছেন। দু'দিন পর মাহতামিমের জন্মদিন। প্রতি বছরের মতো এবার ও নিজেদের তত্বাবধানে পরিচালিত এতিমখানার বাচ্চাদের নিয়ে বিশাল ভোজের আয়োজন করেছেন মিলি।পিউলি স্বামী সন্তানদের নিয়ে আগামীকাল চলে আসবে বলে কথা দিয়েছে। এতবড় আয়োজন, মিলির যেনো দম ফেলার ফুরসৎ নেই। খুব ছোটাছুটি করতে হচ্ছে তাকে। বয়সটা যেন হঠাৎ করে অনেক কমে গেছে মনে হচ্ছে। কারনে অকারণে শুধুই হাসছেন তিনি।মিনহাজ দূর থেকে দেখেন সত্তুর ছুঁই ছুঁই এক প্রৌঢ়া মায়ের আনন্দ, চঞ্চলতা, ব্যাস্ততা।আর মনে মনে বলেন - হে দয়াময়, আমার প্রিয়তমা স্ত্রীর এই খুশি যেন চির অমলিন হয়।কারো নজর না লাগে"।।

আরাফ সুলতান ।

Hasibul hasan santo, Abul basar, Sk sagor, Sk imran, Rasel islam, Saiful Osman, Sumaiya akter and লেখাটি পছন্দ করেছে

Back to top
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum