- Sonchitaধুমকেতু
- Posts : 15
স্বর্ণমুদ্রা : 1125
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-06
আত্মা যখন বউ
পর্ব--১
বাসর রাতে রুমে ঢুকতেই দেখলাম ফুল দিয়ে সাজানো বিছানায় আমার সদ্য বিয়ে করা বউ মাথায় ঘোমটা দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে।চেহারা দেখা যাচ্ছে না ঘোমটা থাকার ফলে।
আমার মনে তো তখন লাড্ডু ফুটছে। মনে লাড্ডু ফুটবেই বা না কেন? সেই ন্যাংটাকাল থেকেই আমার বিয়ে করার শখ। আজ সেই শখ পুরন হলো। এবার আমি ভেতরে ঢুকে একটা শুকনা কাশি দিলাম। বউ আমার নড়ে- চড়ে উঠল।আমি বিছানার কাছে গিয়ে বাচ্ছাদের জনপ্রিয় একটা কবিতা বলতে থাকি,
আতা গাছে তোতা পাখি
ডালিম গাছে মউ
এতো ডাকি তবু কেন
কয় না কথা বউ??
বউ আমার ফিক করে হেসে দিল।আহা, হাসির আওয়াজটা কি মধুর!! কানে ঝাম- ঝাম করে বেজে গেল। এবার বউ তার ঘোমটা সরালো।
ঘোমটা সরানোর পর বউয়ের চেহারা দেখতেই আমার চোখ কপালে৷ ভয়ে আমার হার্টবিট এখনি মিস হবার উপক্রম৷ এটা কাকে দেখছি আমি!! আমার সামনে একটা লাশ!! তাও বসে আছে। লাশ বিছানায় বসে থাকা নিয়ে আমার কোন প্যারা নাই। বাট লাশের গায়ে লাল জামদানি, গলায়, হাতে জুয়েলারি!
আমি ইমান। ইমান শিকদার৷ রমনার থানার ওসি ছিলাম।এখন আর নেই। সাসপেন্ড করা হয়েছে আমাকে। সামনে লাল শাড়ি পড়া মেয়েটার লাশ আমি নিজে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছিলাম। সেই লাশ এখানে কি করে?
আমি যদি এখন রুম থেকে বের হয়ে গলা ফাটিয়ে চিল্লিয়ে সবাইকে বলি, আমার রুমে বসে থাকা মেয়েটা একটা লাশ অর্থাৎ আত্মা তাহলে কেউ বিশ্বাস করবে না। উল্টো মা এসে আমাকে ঝাটা পেটা করলেও করতে পারেন। কারন, কারন একটাই আমি গাঞ্জা খোর। জ্বি ঠিক শুনেছেন আমি গাঞ্জা খাই। পড়শু নাকি গাঞ্জা খেয়ে বলছিলাম আমি বিলগেটস । আমার মাইক্রোসফট কোম্পানি কই?? এর আগে একবার নাকি পাড়ার মতি চাচার দোকানের সামনে দাড়িয়ে গাঞ্জা খেয়ে বলেছিলাম আমি নাকি শাহ রুখ খান।আমার মান্নাত কই??. তখন থেকে এলাকায় আমার নাম গরীবের শাহ রুখ খান। আমার আরো একটা প্রচলিত নাম আছে তা হলো গাঞ্জাখোর ওসি। যাইহোক বর্তমানে ফিরে আসি। আমার আত্মা বউ এখন ধীরে ধীরে বিছানা ছেড়ে উঠলো এবং আমার কাছে এগুতে লাগল৷ গ্রীষ্মের রাত৷ তার উপর কেমন ভ্যাপসা গরম৷ চারপাশ কেমন চুপচাপ। ভয়ে আমার বাথরুম লেগে গেল৷ বউ আরো সামনে আসছে। ভয়ে আমার প্রান যায় যায় অবস্থা। ভয়ে আমি আয়তুল কুরসি পড়তে লাগলাম। পড়ে আত্মাটার গায়ে ফুক দিলাম৷ কিন্তু বিধি বাম।আত্মাটার কিছুই হলো না।আমি টিভি-সিনেমায় দেখেছি ভুতের গায়ে দোয়া-দুরুত পড়ে ফুক দিলে ভুত কে- কু শব্দ করে উল্টা পথে পালায়। তাহলে আমার বেলায় বিপরীত ঘটল কেন?? তবে মেবি আত্মাটা মুসলিম আত্মা। এবার মেয়েটা আমাকে খুব মিস্ট স্বরে সালাম দিল, আসসালামু আলাইকুম।
আমি তো হা হয়ে গেলাম। কি সুন্দর করে সালাম দিল আত্মাটা। মানুষই তো এতো সুন্দর করে সালাম দিতে জানে না। স্লামোলাইকুম বলে।
অথচ আত্মাটা একদম শুদ্ধ করে সালাম দিল। ভুতের মুখে রাম রাম এই প্রবাদকে খানিকটা চেঞ্জ করে ভাবলাম, ভুতের মুখে আল্লাহ আল্লাহ। তাহলে আত্মাটা মুসলিম। আত্মাটার ভয়েস শুনেই আমি ক্রাশ খেলাম। এবার আত্মাটাকে ভাল করে দেখলাম। মাশাল্লাহ, এতো সুন্দর দেখতে।কিন্তু লাভ নাই। ও তো ভুতনি। আমি ইমান ভুত,প্রেত্ম,আত্মা ভয় পাইনা।আমার ভয় অন্য জায়গায়৷ আত্মাটা যদি তার ডায়মন্ডের বেসলেট ফেরত চায়?? তাইলেই তো ধরেন আমি শ্যাস। সেদিন লাশটার হাত থেকে আমি বেসলেটটা খুলে তারপরে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাই৷ ভাবছিলাম, মরা লাশের আবার বেসলেটের কি দরকার৷ বেসলেটটা নিয়েই সঙ্গে সঙ্গে বেঁচে নাগাদ ত্রিশ হাজার ইনকাম করেছিলাম। সেই টাকায় একটা রেদমি ফোন কিনেছি। আরো কিছু টাকা অবশিষ্ট ছিল৷ সেগুলাও খরচ করা শেষ। তবে পাঁচশ টাকা বাকি ছিল।সেই টাকায় গাঞ্জা কিনে আজকে খেয়ে- দেয়ে রুমে ঢুকেছি। এখন কি এই ভুতনি আমার কাছ থেকে টাকা ফেরত চাবে?? নাকি পিত্তথলি থেকে গাঞ্জা বের করে বেসলেটটার টাকা উসুল করবে আমার কাছ থেকে। না, না,গাঞ্জা তো তরল পদার্থ তাইলে এটা কিডনিতে যাবে মূত্র তৈরি করতে। আত্মাটা যদি আমার কিডনি টানে বের করে তাইলে আমি ইমান এখুনি মরে যাব।
বউ আমার মিস্টি গলায় বললো, সালামের জবাব দিতে হয়। জানো না??
এহ....এখন দেখি আদব-কায়দাও ভুতের কাছ থেকে শিখতে হবে। যাইহোক, আমি গলা খাকিয়ে রাগীস্বরে বললাম, কে তুমি???
আমি জানি তুমি কোন সাধারণ মানুষ না। তুমি একটা আত্মা। সহজ বাংলায় যাকে ভুত বলে।
ভুতটা কিছুটা চমকে গেল এবং মুখটা ভার করে বিছানায় বসে ছোট্ট করে জবাব দিল, হু। আমি মানুষ নই।
একথা শুনা মাত্র স্টার জলসার সিরিয়ালের ব্রাকগ্রাউন্ডে যে ধুম- টানাটানানায়ান..... সুর বাজে সেই সুর আমার কানে বাজতে লাগলো। কি শুনলাম এ আমি!! সেই সময় ভয়ের সাথে পাল্লা দিয়ে আমার বাথরুমের প্রেসারটাও বেড়েই চললো। তাই এক মুহূর্ত দেরি না করে ছুট দিলাম বাথরুমে৷ আত্মাটা বোধহয় অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। থাকলে থাকুক। আমার কি?? আর ও তো আত্মা, ওর তো আর ন্যাচারস কল নেই।
চলবে।
নূরে আরদি
Ahmed Chanchal, Rasel islam, Raihan khan, Badol hasan, Mr faruk, Saiful Osman, Sumaiya akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Sonchitaধুমকেতু
- Posts : 15
স্বর্ণমুদ্রা : 1125
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-06
Re: আত্মা যখন বউ
পর্ব ২
আমি বাথরুমই বসে আছি আধঘন্টা ধরে। আসলে আমি যতই সাহস দেখাই না কেন ভিতরে ভিতরে আমি ভয়ের চটে কাঁপছি। কাঁপারই কথা বাইরে একটা লাল জামদানি পড়া আত্মা আমার জন্য অপেক্ষা করছে৷ কি ভয়ংকর ব্যাপার-স্যাপার৷ আমি দোয়া-দুরুত যা মনে আছে সব একবার করে পরে নিয়েছি, এরই মাঝে ভুতনিটা বাথরুমের গেট ধাক্কিয়ে বলে, তুমি বের হচ্ছ না কেন??
এহ....কি সুন্দর আবদার। আমি গলা গম্ভীর করে বলি, তাতে তোমার কি, ওহে ভুতনি।
--- দেখুন বের হন৷
আমি ভয়ে ভয়ে বের হলাম। আত্মাটা বাথরুমের দরজার সামনেই দাড়ানো ছিল। আমাকে দেখেই একটা হাসি দিল। আমি ভয়ে ঢোক গিললাম।
--- এতোক্ষণ লাগে বুঝি বাথরুম করতে??
আমি বললাম, হ্যা, মানুষ সম্প্রদায়ের বর্জ্য ত্যাগ করতে সময় বেশি লাগে।
এ কথা শুনে সে হি হি করে হেসে দিল। আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম।
সে হাসতে হাসতে বলল, ও তাই! আমিও মানুষ এইটুকু বলে বেচারি আত্মাটা মুখ গোমড়া করে বলে, আই মিন ছিলাম।
আমি তো জাস্ট স্পিচলেস হয়ে গেলাম। আত্মাটারাও দেখি আজ-কাল ইংলিশ টিংলিশ মারে।
আত্মাটা গোমড়া মুখ নিয়েই বলল, আমি তো এখনো বুঝতেই পারছি না যে আমি মৃত৷ নিজেকে জীবিতই লাগছে। শুধু আগের তুলনায় বেশ হালকা হয়ে গেছি।
আমি নড়ে-চড়ে দাঁড়িয়ে বললাম, তারমানে আগে তুমি মানুষ ছিলে?
হুমম।পড়শু দুপুর পর্যন্ত মানুষ ছিলাম। পড়শু রাত থেকে আত্মা হয়ে গেছি৷
আমার কেন যেন ভয় লাগছেনা। যদিও বা আমি ইমান এইসব ভুত, প্রেত, আত্মাকে কখনোই ভয় পাইনি। আজকেও লাগছে না। আত্মাটার চেহারায় কেমন যেন মায়াবী ভাব আছে। এইসব মায়াবী ভুত কারো ক্ষতি করতে পারেনা। গত পড়শুর কথা শুনতেই আমার সাসপেন্ড হওয়ার কথা মনে পরে গেল। আমাকে সাসপেন্ড কালকে করা হয়েছে। কালকেই আমরা ঢাকা থেকে নারায়নগঞ্জ, আমার নানুবাসায় চলে আসি। আর আজকেই মা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন।
যাক গে সে সব কথা, আমি আত্মাটাকে বললাম,নাম কি তোমার??
--- প্রেমা।
আমি আরো একবার শক খেলাম। আত্মাদের নামও এতো স্টাইলিস হয়! আমি তো ধরেই নিয়েছিলাম, আত্মাটার নাম সকিনা, কমলাবানু, কুলসুম, কুসুম টাইপের নাম হবে। যদিও বা কুলসুল নামটা আমার ব্যক্তিগত ভাবে খুব পছন্দের একটা নাম। তবে প্রেমা নামটা আমার খুব ভাল লাগলো। তারপর পুলিশি ভঙ্গিতে বললাম, মারা কিভাবে গিয়েছো??
--- সুসাইড করছি। ( নাক টানতে টানতে বলল)
উফ, এ তো দেখি ভ্যাসকান্দুরে আত্মা। কিছু বলতে না বলতেই ভ্যা ভ্যা শুরু করে দেয়। আজব।
--নিজ ইচ্ছায় মরে এখন কেন আমার গলায় ঝুলে পড়েছো?? শুনি???
আত্মাটা খানকটা কেপে উঠলো৷ আসলে পুলিশি স্টাইলে কথা বলার একটা নিয়ম হলো--কথা শেষে একটা জোরে ধমক দেওয়া। আত্মাটা শেষের ধমক শুনে ভয় পেল৷ আমি বেশ খুশি হলাম।যেখানে মানুষ ভুত ভয় পায়, সেখানে একটা অতি মাত্রায় সুন্দরী ভুত আমাকে ভয় পাচ্ছে৷ এটা একমাত্র আমি ইমান পুলিশ জন্য পসিবল হয়েছে।
--- গলায় কোথায় ঝুলে পড়েছি?? বিছানায়ই তো বসে আছি।
এখন আমার মনে হচ্ছে আত্মাটা অনেক গাধীও বটে। আসলে, সুন্দরীরা বোকা হয় --- এটা মহাবিশ্বের জাগতিক নিয়ম। তবে এ নিয়ম বুঝি ভুত সম্প্রদায়েও ফলে!!
আমার ভাবনার সুতা ছিড়লো আত্মাটার কথায়, এই যে, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। এখন কি করব??
আমি এবার সাত আসমান থেকে পড়লাম। ভুতেরও ঘুম পায়?? এরাও কি নাক ডাকে? ভাব্বার বিষয় তো।
-- কি হলো কি ভাবছেন??
আমি আবার নিজেকে সকল পরিস্থিতিতে সামলে নিতে পারি। এই ধরেন একটা তেলাপোকা এসে যদি বলে, ইমান ভাই, আমি পাউরুটি খাব৷ আমি ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে পাউরুটি কিনে আনতে পারব। যেন তেলাপোকার পাউরুটি খাওয়া খুব নরমাল একটা ব্যাপার। এমনকি মিস্টার তেলাপোকার কাছ থেকে আমি পাউরুটির দামও চাইতে পারি। সো, ভুতের ঘুমানো নিয়ে আমি ইমানের কোন মাথাব্যাথা নেই তাই গলা খাকিয়ে বললাম, ঘুমে ধরলে শুয়ে পড়ো।
-- এই মোটা শাড়ি পরে কিভাবে ঘুমাব??
-- সেটা আমি কেমনে জানব??
-- কিছু একটা কর, প্লিজ। ( আহ্লাদি সুরে বলল)
আমি আবার কারো রিকুয়েষ্ট ফেলতে পারি না।সেখানে সুন্দরী মেয়ে হলে তো কোন কথাই নাই। উফ! স্যরি সুন্দরী আত্মা। তাই একটা শাড়ি এনে দিলাম।।শাড়িটা রুমেই ছিল। মা এনে রেখেছেন তার ভুতনি বউয়ের জন্য। প্রেমা বাথরুমে গেল।
আমি ভাবতে লাগলাম, মা কি জানে তার পুত্রবধূ একজন সম্মানিত আত্মা?? জানে বোধহয়৷ কেননা, কলেজের প্রিন্সিপাল হওয়ার সাথে সাথে আমার মা জনাবার আরো একটা পরিচয় আছে। তা হলো- তান্ত্রিক। জি, তান্ত্রিক।
তান্ত্রিক হলো ভুত গবেষক বা ভুত বিজ্ঞানি৷ এরা ভুত সম্পর্কে সব জানে। ভুতের শব্দ শুনেই বলে দিতে পারে ভুতের জেন্ডার কি। কিভাবে তাড়াতে হবে সব মুখস্ত তাদের। এরা আবার ভুতকে ডেকে আনতে পারে৷ যদিও বা আমার মা প্লানচেট করে কোনদিন ভুত-আত্মা ডেকে আনা তো দূর একটা গাছের পাতাও নড়াতে সক্ষম হননি৷ তবে রবার্ট ব্রুসের মত চেষ্টা চালিয়ে যান৷ মায়ের মতে ঢাকা শহরের ইট- সিমেন্টের দালানে ভুতরা থাকতে পছন্দ করেনা।আত্মারা তাহলে বেশ প্রকৃতি প্রেমি হয় দেখছি। যাইহোক, আমি আমার বালিশ নিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লাম। কেননা একটা আত্মার সাথে এক বিছানায় থাকার মতো দুঃসাহস আমি দেখাতে চাচ্ছি না আপাতত।
প্রেমা বাথরুম থেকে বের হল৷ ওকে দেখে আমি থ হয়ে গেলাম। গোলাপি শাড়িতে আমেজিং লাগছে প্রেমাকে। চুলগুলা ভেজা৷ তারমানে গোসল করেছে৷ হাস্যকর! আত্মারাও গোসল করে বুঝি!!!!!
.
.
চলবে।
Ahmed Chanchal, Rasel islam, Raihan khan, Badol hasan, Saiful Osman, Sumaiya akter, Rokeya hoq and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Sonchitaধুমকেতু
- Posts : 15
স্বর্ণমুদ্রা : 1125
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-06
Re: আত্মা যখন বউ
পর্ব ৩
আমি মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলাম৷ প্রেমা যদি কোন মানুষ হতো তাহলে নিশ্চিত আমার ওর সাথে প্রনয় হয়ে যেত৷ কিন্তু আফসোস! শুধুই এক বালতি আফসোস।
প্রেমা তার চুল মুছতে ব্যস্ত। আমাকে খেয়াল করেনি। আমি জট জলদি চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর ভান ধরলাম৷ মনে মনে কালকের চিন্তা করছি৷ কালকে কি কোন ওঝা, ফকির, পীড় বাবা ডেকে আনবো?? নাকি মাকে বলল প্রেতটাকে তাড়ানোর কথা। বাই দ্যা ওয়ে, প্রেমা কি অনেক শক্তিশালী আত্না? কি জানি?
প্রেমা এতোক্ষণ বারান্দায় ছিল। রুমে ঢুকে সোফার সামনে এসে আমাকে ডাকতে লাগলো,
-- ইমান, এখানে কেন ঘুমাচ্ছো?
আমি কোন রিপ্লে দিলাম না৷ শুয়ে থেকে ঘুমের ভান ধরলাম। সে আরো বার কয়েকবার ডাকলো আমাকে৷ আমার কোন সাড়া না পেয়ে সে বিরবির করে বলল, ঘুমিয়ে গেছে মেবি৷ ঘুম ভাঙ্গানো ঠিক হবেনা।
আহারে, কতো সফট হার্টেট আত্মা প্রেমা। ওর মতো যদি সব আত্মাদের মনটা নরম হতো তাইলে ভালই হত৷ কিন্তু বাকি আত্নারা তো ঘাড় মটকানোর ফন্দি আটে। আমার নিন্দ্রা ভাব চলে আসলো।
প্রায় মাঝ রাতে কেও আমাকে ইমান ইমান করে ডাকতে লাগলো৷ আমি ধড়ফরিয়ে উঠে বসলাম।সোফাটা বেশি বড় না তাই ধাম করে পড়ে গেলাম। মেঝেতে কোমড় গিয়ে ঠেকলো৷ আহ..... কি ব্যাথা লাগলো।
--- এই রে, পড়ে গেলা? ( নরম সুরে)
আমি উপরে তাকাতেই প্রেমাকে দেখতে পেলাম৷ রাতে ঘুমানোর আগে প্রেমা লাইট অফ করে দিয়েছিল। তাই রুমটা অন্ধকার হয়ে আছে৷ পরিবেশটার মাঝেও ভয়-ভয় ভাব আছে৷ শাড়ি পরিহিতা এক আত্মা রাত-বিরাতে আমাকে ডাকছে।ও কি আমাকে মেরে আমার রক্ত- হাড্ডি খাবে?? কোথায় যেন পড়েছি সাপ আর ভুতে কোনদিন বিশ্বাস করতে নেই৷ এরা সুযোগ বুঝে কোপ মারে।মেয়ে জাতিও এদের বংশধর মেবি৷ যাইহোক আমি মুখে গভীরতা এনে বললাম, কি চাই?
প্রেমা কাদো কাদো করে বলল, আমার ভয় লাগে।
আমি অবাক না হয়ে পারলাম না।বলে কি আত্মাটা? আত্মার আবার কিসের ভয়?
আমি আবারো জিজ্ঞেস করলাম, ভয় লাগে??
সে ভীষন জোড়ে মাথা ঝাকালো যার অর্থ তার খুব ভয় লাগছে।
আমি বললাম, তোমার আবার কিসের ভয়??
-- দেখ, চারপাশে কেমন পীন পীনা নিরবতা। তার উপর কেমন অদ্ভুত সব আওয়াজ আসছে। ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করতে পারছিনা।তুমিও বেডে আসো। আমার খুব ভয় লাগছে৷ প্লিস, আসো না।
লও ঠ্যালা৷ ভুত নাকি ভয় পায়? এমন আজব পাব্লিক আগে কখনো দেখিনি ভাই৷ হ্যা, মানলাম আশ-পাশ থেকে কুকুর, শিয়ালের কান্নার আওয়াজ আসে, আসলে বাড়ির চারপাশটা খুবই সুনসান৷ তাজ বলে ভয় পাবে?
আমি কিছু বললো তার আগে ও আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল বিছানার দিকে। আমি এতোক্ষনে ওর মধ্যেকার পার্থক্য বুঝলাম। ওর হাতটা ভীষন ঠান্ডা৷ সাধারণ মানুষের মতো না৷ বেশ শীতল৷ আমাকে একটা আত্না টাচ করতে পারছে। ব্যাপারটা দারুন তো। যাইহোক আমি শুয়ে পড়লাম। প্রেমাও শুয়ে পড়ল। শুয়ার পর আমার মনে হলো ও তো সুসাইড করছে। কিন্তু কেন?? কারন কি? প্রেম- ট্রেমের চক্কর না তো আবার৷ জিজ্ঞেস করতে হবে। তাই আমি গলা খাকিয়ে বলি, তুমি সুসাইড কেন করছো?
-- কি বললা?
-- ঢং কম মারো৷ সত্য কথা বল৷ সুসাইড কেন করছো?
প্রেমা আমতা আমতা করে বলে, আসলে.....
আমি দ্রুত শোয়া থেকে উঠে বলি, কি প্রেম করতা?? ছেলে ছুড়ে মারছে?
-- আরে, না.....
আমি চোখ সরু করে বলি,তাইলে কি?? হু???
প্রেমা মুখটা ভার করে বলে,আমি ফেল করছি।বাবা খুব বকা দিসিলো৷
বলে ভ্যা করে কেদে দিল।এতো তো দেখি মহামুশকিল।কথায় কথায় কাদলে চলে নাকি??
প্রেমা ফেল করেছে। তার মানে ও একটা ফেলটুস। আমি ইমান শেষ পর্যন্ত একটা ফেলটুসকে বিয়ে করলাম৷ হায় হায়৷ ও কোন পরিক্ষায় ফেল মারলো৷
আমি গলার স্বর ভারী করে বললাম, কিসে ফেল করছো?
প্রেমা নাক টানতে টানতে বলে, এইচ এস সি তে।
ওহো, তিন-চারদিন আগে রেজাল্ট দিসে তো এইচ এস সির৷ পাশের বাসার বল্টু এ প্লাসের মিষ্টি খাওয়ালো৷ আমি আবারো বললাম, কয় সাবজেক্টে ডাব্বা মারছো?
সে আমার দিকে কেমন করে তাকিয়ে বলল, একটাতেই জাস্ট৷
--- ফিজিক্স??
উহু.....এ্যাকাউন্টিং।
আমি মনে মনে ভাবলাম, মেয়ে কর্মাসের ছিল৷
এ জন্যই এতো সুন্দর। কর্মাসে পড়া মেয়েরা পরীর মতো সুন্দরী হয়৷ আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম না। খুব ঘুম পাচ্ছে৷ আমি খুব করে চাচ্ছি এটা যেন একটা সুস্বপ্ন হয়৷ ঘুম থেকে উঠলেই যেন সব মিলিয়ে যায়৷ আমি যেন আবার থানায় যেতে পারি৷ এইসব কিছু যেন একটা স্বপ্ন হয়৷
ঘুম থেকে উঠেই আশে- পাশে তাকালাম। নাহ, কেউ নেই। শুধু বিছানাতে না বরং রুমেই কেউ নাই৷ তার মানে সব স্বপ্ন ছিল৷ মনটা খুশিতে নেচে উঠলো৷ পরমুহূর্তেই মনটা বিষিয়ে গেল৷ কারন রুমটা আমার নিজের রুম না৷ নারায়ণগঞ্জের সেই ফালতু রুমে শুয়ে আছি৷ তার মানে কিছুই স্বপ্ন না।ভুতনিটা কই গেল? পালিয়ে গেল নাকি৷ আমি দ্রুত উঠে বাথরুমে ফ্রেশ হতে গেলাম৷ বের হয়ে দেখলাম টেবিলে চা রাখা। মনটা ভাল হয়ে গেল৷ সকালে চা খেতে আমার খুব ভাল লাগে। কিন্তু মা জননী কোনদিন আমার জন্য সকালে চা বানায় না। চা বানাতে বললে বলে, হয় নিজে বানাও নাহলে বিয়ে করে বউ এনে বউকে দিয়ে চা বানাবা।আচ্ছা, আপনারাই বলেন সামান্য চা বানানোর জন্য বউয়ের কি দরকার???
আমি চায়ে চুমুক দিলাম। বেশ হয়েছে খেতে৷ চা খেয়ে রুম থেকে বের হলাম। রুম থেকে বের হয়ে যা দেখলাম তা দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না ভাই ও বোনেরা। আই ওয়াস জাস্ট স্পিচলেস এগেইন৷
.
.
Ahmed Chanchal, Rasel islam, Raihan khan, Badol hasan, Mr faruk, Saiful Osman, Sumaiya akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Sonchitaধুমকেতু
- Posts : 15
স্বর্ণমুদ্রা : 1125
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-06
Re: আত্মা যখন বউ
পর্ব ৪
আমি রুমের বাইরে গিয়ে দেখলাম, প্রেমা আর আমার মা জননী ডাইনিং টেবিলে বসে খোশ গল্পের আসর জমিয়েছে৷ প্রেমার পড়নে কালকে রাতের গোলাপি শাড়িটাই গায়ে জড়ানো৷ আমার বোন ইসু তাদের পাশে বসা৷ তবে ও মুখ গোমড়া করে রেখেছে৷ কি ব্যাপার, আমার আদরের ছোট বোনের মন কেন খারাপ?
আমি তাদের কাছে গিয়ে মাকে সেখান থেকে সরিয়ে আনলাম।
মা বেশ বিরক্ত হয়ে বললো, জনাবের এখন উঠার সময় হলো? প্রেমা তোর জন্য ব্রেকফাস্ট না করে বসে আছে৷ আর তুই বারোটার সময় উঠিস। বেয়াদব ছেলে৷
আমি মনে মনে ভাবলাম, বারোটা বাজে এখন? এতো বেলা হয়ে গেছে৷ টের কেন পেলাম না আমি৷ আর মা প্রেমার নামও জানে।
আমি গলার স্বর নামিয়ে বলি, মা জানো, প্রেমা কোন মানুষ না।ও একটা........
আমি কিছু বলব তার আগেই মা বলল, জানি আমি। প্রেমা একটা আত্না৷
আমি কাদো কাদো হয়ে বললাম, সব জানার পরও আমাকে একটা আত্নার সাথে বিয়ে দিতে তোমার বিবেক কাঁপলো না৷ এতো নিষ্ঠুর তুমি? পারলে আমার সাথে এমন করতে? আমি এখন একটা আত্মার সাথে সংসার করবো?
মা কঠিন গলায় বলল, ঢং কম করো ইমান। আজকে প্রেমার যা অবস্থা তার জন্য একমাত্র তুমি দায়ী। তাই শাস্তিস্বরুপ আমি তোমার কাঁধে ওর দায়িত্ব দিলাম। তোমার মতো এমন একটা বেকুপ যে এতো সুন্দরী বউ পেয়েছো এটা তোমার জন্য সাত রাজার ধন৷ তাছাড়া, প্রেমার দিকে একবার তাকাও, কি মায়া- মায়া চেহারা ওর৷ দেখলেই আদর করতে মন চায়। কি মিস্টি মেয়েটা।
-- আম্মাজান, কারেকশন, কি মিস্টি আত্মা হবে। ভুল কেন বলো।
-- ওই একই কথা। জলদি খেতে আসো। প্রেমার খিদা পেয়েছে। ও খাবে। তুমিও আসো৷
আমি আবারো হতবাক হলাম, আত্মাটা এখন আমাদের মতো খাবে? আমাদের মতো ভাত খাবে? চিকেন ফ্রাই খাবে? ইন্টারেস্টিং তো।
মা তাহলে জানে প্রেমা একটা আত্মা৷ তবুও চুপ আছে। মায়ের তো এতোক্ষনে প্রেমাকে নিয়ে রিসার্চ শুরু করা উচিত ছিল৷ ওহো, বলতে ভুলে গেছি, আমাদের ঢাকার বাসায় মা একটা ছোট রুমে, আসলে রুম বললে ভুল হবে, একটা ছোট শ্রেণিকক্ষে ভুত বিষয়ে পাঠদান করতেন৷ তার দশ- বারো জন শিক্ষার্থীও ছিল৷ সপ্তাহে দুইদিন পড়াতেন। বেতন মাত্র পাঁচশ নিত। মায়ের মতে, দেশের বড় বড় ভার্সিটিতে ভুত বিষয়ে অনার্স- মাস্টার্স করার ব্যবস্থা করা উচিত সরকারের ৷ মা তো ভুত বিষয়ক সাবজেক্টটার একটা নামও দিয়েছে তা হলো - ভুতোলজি। এই সাবজেক্টের উপর পড়া ছাত্রদের বলা হবে ভুতোলজিস্ট৷
তাদের নামের আগে যুক্ত হবে "VU"। যেমন-- যদি আকরাম নামক কোন একজন ব্যক্তি ভুতোলজিতে পিএইচডি করে তবে তাকে ডাকা হবে, VU.Akram.
আমি টেবিলে গিয়ে দেখি প্রেমা পরোটা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছে। সাথে আবার সবজি, ডিমও খাচ্ছে৷
আমি বেশ জোড়েই বললাম, আত্মা হয়ে পরোটা খেতে তোমার লজ্জা করছে না?
প্রেমা এ কথা শুনে আবার কেঁদে দিল। মা ওর কাদার শব্দ শুনে আমার কাছে এসে আমাকে ঝাড়ি মেরে বলল, আত্না হইছে বলে কি ও খাবে না? আর্শ্চয। মেয়েটার মনে কস্ট দিলা তুমি, তাই তোমার আজকে নাস্তা নাই৷ -- বলে মা খাবার- দাবার নিয়ে গেল৷
আমি আহাম্মকের মতো দাড়িয়ে রইলাম, আমি বুঝে পেলাম না মা কি আমার নিজের মা, না নাকি আমাকে কুড়িয়ে এনেছে? আমার সাথে এতো নির্দয়তা আর একটা অত্মার জন্য তার মনে মায়ার সাগর বয়ে যাচ্ছে। তবে আমার মা বেশ মায়াবতী। এর কারন হলো-- সে এতোই মায়াবতী যে দোকান থেকে কিছু কিনে আনলে প্যাকেটটা পর্যন্ত না ফেলে বেশ যত্ন করে খাটের তোষকের নিচে রেখে দেয়৷ আহা, আমার মায়ের কতো কোমল হৃদয়!!!
আমি না খেয়েই আমার বোনের কাছে গেলাম, আমার বোনের নাম ইসানি। আমরা ওকে আদর করে ইসু বলে ডাকি৷ আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম। ও দেখি মন খারাপ করে বসে আছে।
-- কি রে ইসু,তোর মন কেন খারাপ??
-- আর বলো না ভাইয়া, তোমরা সবাই ভাবিজানকে দেখতে পাচ্ছো, শুধু আমিই পাচ্ছি না।-- বলে মুখটা কালো করল।
আমি চমকে উঠে বললাম, কি বললি?? তুই প্রেমাকে দেখতে পাস না??
-- উহু,পাইনা তো দেখতে ভাইয়া। ( মন খারাপ করে বলে ইসু)
-- সেকি! মা জানে যে তুই ওকে দেখতে পাসনা?
সে মাথা ঝাকালো যার অর্থ হ্যা মা জানে৷ ইসু আমাকে বললো, তবে, ভাইয়া আমি ওর ভয়েস শুনতে পাই৷ মা বলেছে, ভাবি নাকি খুব সুন্দরী।
এ কেমন কথা! প্রেমা আত্না বলে ওকে ইসু দেখতে পায় না। যা খুবই ভালো কথা৷ মা জননী তান্ত্রিক বলে দেখতে পান। কিন্তু মাঝখান দিয়ে আমি ইমান কেন ওকে দেখতে পাচ্ছি? শুধু দেখতেই পাইনা ছুইতেও পারি। কেন?
আমি ইসুকে বললাম, ভুতটা বাসায় কখন এসেছিল রে??
-- পড়শুদিন৷
-- এসে কি এমন বললো যে মা আমাকে ওর সাথে বিয়ে দিল??
ইসু বেশ আগ্রহ নিয়ে বলতে লাগলো। মেয়েটার কথা বলার বেরাম আছে। একবার শুরু হলে রেডিওর মতো লাগামহীন চলতে থাকে। রেডিও তাও থামে কিন্তু ইসুর থামার নাম-গন্ধ থাকে না।তাই আমি ওর সাথে বেশি কথা বলি না।
ইসু বলতে লাগলো, ভাবি আমাদের গেটের সামনে বসে কাদছিল। মা গেট খুলেই বুঝতে পারে যে একটা অশরীরী আত্মা কাদছে। তাও মা ভাবিকে বাসায় ঢুকায়৷ তারপর, মা প্রেমা ভাবিকে জিজ্ঞেস করে এখানে কেন এসেছে সে?
ভাবি উত্তরে কি বলে জানো ভাইয়া??
আমি বেশ উৎসাহের সাথে বলি, কি বলে??
ভাবি বলে, তুমি নাকি ওনাকে ডিচ করেছো৷ ভাবি ফেল করছে বলে তুমি ব্রেকআপ করছো ওনার সাথে। তাই উনি কস্টে সুসাইড করছে৷ এখন আর মুক্তি পাচ্ছে না। ভাইয়া, সত্যি তুমি প্রেমার মতো সুন্দরী মেয়ের সাথে রিলেশনে ছিলা?? আমার তো মনে হয়না।
আমি ইসুর আর কোন কথা শুনলাম না। শুধু এটাই ভাবছি,যে আত্মাকে আমি গাধী ভাবলাম সে তো একটা চাটুবাজ। আমার নামে মিথ্যা মামলা দিল। মাও বিশ্বাস করে নিল। আসলে, সুন্দরী মেয়েদের কথা মানুষ দ্রুত বিশ্বাস করে নেয়।
আমি রাস্তায় বের হলাম। হাঁটবো কিছুক্ষন। আমি আমার সাসপেন্ড করার দিনের কথা ভাবতে লাগলাম তখনি একটা ফোন আসলো।
.
.
চলবে৷
.
Ahmed Chanchal, Rasel islam, Raihan khan, Badol hasan, Saiful Osman, Sumaiya akter, Rokeya hoq and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Sonchitaধুমকেতু
- Posts : 15
স্বর্ণমুদ্রা : 1125
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-06
Re: আত্মা যখন বউ
পর্ব ৫
ফোন পকেট থেকে বের করে দেখলাম রামপাল কল দিচ্ছে৷ রামপাল হচ্ছে রমনা থানার একজন সিনিয়র কন্সটেবেল। আমি যেইদিন থানায় ফাস্ট জয়েনিং করি সেদিনটা হতে রামপাল আমার সাথেই থেকেছে৷ বেশ বিশ্বস্ত লোক৷ আমার খুব বড় ভক্তও বলা চলে। রামপাল হিন্দু৷ সাসপেন্ড হওয়ার দিনও রামপাল আমার সঙ্গে ছিল৷ আমি যখন রিজাইন লেটারে সিগনেচার করি তখন আমার চেয়ে রামপাল বেশি কস্ট পেয়েছিল৷ যাইহোক, আমি রিসিভ করলাম।
ওপাশ থেকে রামপাল বলে উঠে, স্যার, ভালো আছেন??
-- হ্যা, রামপাল ভালই আছি। তুমি কেমন আছো?
-- আর ভালো স্যার,আপনার কথা খুব ইয়াদ আসে।
-- নতুন স্যার কেমন??
-- এখনো জয়েন্ট করেনি। পড়শু থেকে আসছে নাকি শুনলাম।
-- ও, ঠিক ভাবে কর্ম করবা, বুঝলা।
--- জ্বি স্যার,জ্বি।
-- আচ্ছা, শুনো, আমার সাসপেন্ড হওয়ার আগে যে একটা মেয়ের লাশ আসলো না??
-- স্যার দুইটা আসছিল,কোনটার কথা কন??
-- যেই মেয়ের ডায়মন্ডের বেসলেট ছিল।
-- হ্যা, স্যার, মনে পড়ছে কার কথা বলতেছেন৷ ক্যান স্যার কি হইছে??
মনে মনে ভাবি, রামপাল বলো কি হয় নি?? ওই লাশ এখন আমার বাসায় বসে আছে। তাও আমার বউ হয়ে। মুখে বললাম, ওই মেয়ে মানে লাশটা এখন কই??
-- ময়নাতদন্তে পাঠাইছি তো স্যার, আপনার সামনেই।
-- রিপোর্ট আসছে??
-- তা তো জানি না, স্যার।
-- একটু খোজ নিয়ে আমাকে ইনফর্ম করবে৷ ডিপার্টমেন্টে যেন কেউ না জানে এসব।
-- আচ্ছা, স্যার।ভালো থাকবেন।রাখি তাহলে।
-- হু।
আমি একটা খাবার হোটেলের সামনে এসে দাঁড়ালাম। সকালে কিছু খাই নি।খিদা লাগছে। তাই এখান থেকে খেয়ে নিব৷ ভিতরে ঢুকে তিনটা পরোটা আর ডাল অডার দিলাম। একটু নাকি সময় লাগবে৷ আটা শেষ হয়ে গেছে।কিনে এনে বানাবে। আমার তো আর সময়ের হিসেব নেই, তাই বসে রইলাম। ওরা নিজে থেকেই এক কাপ চা দিয়ে গেল। আমি অডার করি নি৷ ভাবছি, চায়ের বিল কি নিবে নাকি গেটিস দিবে??
চায়ে চুমুক দিলাম। গরম গরম চা টা খেতে ভালোই হয়েছে।আমি ওয়েটারকে ডেকে আরোও এক কাপ চা অডার দিলাম। চা খেতে খেতে সাসপেন্ড হওয়ার আগের দিনের কথা ভাবতে লাগলাম,
সেদিন ছিল ২৪শে মে। সন্ধ্যা নাগাদ বাসায় ফিরি। বাসায় এসেই ঘুমিয়ে পড়ি বেশ ক্লান্ত ছিলাম।প্রায় রাত বারোটার দিকে ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায়৷ ঘুম থেকে উঠে ফোন রিসিভ করতেই বড় স্যার ইর্মাজেন্সি একটা কেস হ্যান্ডেল করতে বলে। পুলিশ স্টেশন থেকে নাকি একটা চোর লক আপ ভেঙ্গে পালিয়ে গেছে। সেই চোরের লোকেশন ট্র্যাকিং করে জানা গেছে, সে এখন আজিমপুর কবরস্থানের আশে- পাশে আছে। আমি দ্রুত ফ্রেশ হয়ে রামপাল ও আরো দুজন কন্সটেবেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি কবরস্থানের উদ্দেশ্যে। প্রায় এক ঘন্টার মধ্যে পৌছে গেলাম আমরা। লোকেশন ট্র্যাকারে বারবার সো করছিল,কবরস্থানের মিডেল পয়েন্ট৷ তাই বাধ্য হয়ে কবরস্থানের ভিতরে ঢুকতে হলো৷ রামপাল বেশ ভয় পাচ্ছিল৷ আমি ইমানও ভয় পাচ্ছিলাম।আসলে রাতের বেলা কবরস্থানে কার না ভয় লাগবে??
আমরা একসাথে হেটে হেটে কবরস্থান রাউন্ড দিচ্ছিলাম।খুব নিরবে এগুচ্ছিলাম,যেন চোর ধরতে পারি৷ হঠাৎ একটা আওয়াজ হয়৷ রামপাল তো ভয়ে শেষ৷ কাঁপতে কাঁপতে বলল,স্যার, চলেন চলে যায়।ভুত- টুত আসলে আর বেঁচে ফিরব না।
-- ওহো, রামপাল, আমি ইমান এসব ভুতে ভয় পাই না।বরং ভুতেরা আমাকে ভয় পায়, বুঝলা-- বেশ ভাব নিয়ে কথা বলি৷
রামপাল অবাক হয়ে বলে, আপনি ভুত ভয় পান না,তা ঠিক আছে।কিন্তু ভুত কেন আপনাকে ভয় পাবে স্যার??
আমি বিরক্তি নিয়ে বলি, আমি ইমান বীরবল পুরুষ তাই।
রামপাল আরো হতভম্ব হয়ে বলে, বীরবল পুরুষ মানে কি, স্যার??
-- বীর পুরুষের গুরুকে বীরবল পুরুষ বলে৷
রামপাল তখনি আমাকে স্যালুট করে ফেলে একবার৷
-- ওহো,রামপাল, এসব কিছুই না, জানো আমি একটা পরীর সাথে রিলেশনে ছিলাম৷ ছয় মাস পর আমি ইমান নিজেই ব্রেকআপ করি৷।
রামপাল হা হয়ে যায় আমার কথা শুনে। বেচারা অনেক বোকা স্বভাবের৷ আমার কথা বিলিভ করছে৷ আমি আবারো বলি, দেখি তোমরা তিনজন ওদিকটায় চেক করো, আমি কবরস্থানের শেষ প্রান্তটা টহল দিয়ে আসি।
একজন কন্সটেবল বলে উঠে, স্যার একা যাবেন??
আমি কিছু বলবো তার আগেই রামপাল বলে উঠে , স্যার হলো বীরবল পুরুষ। ওনার আবার কিসের ভয়? উনি জ্বীনের সাথে প্রেমও করছে৷
আমার মেজাজ চটে গেল। জ্বীনের সাথে কেন প্রেম করব?? আমি খানিকটা ধমক দিয়ে বলি, রামপাল, জ্বীনের সাথে না পরীর সাথে রিলেশন ছিল। I broke up the relation.
--- কেন স্যার??
-- বোরিং লাগতেছিল তাই।এসব কথা বাদ।যাও তোমরা। আমি ওদিকে যাচ্ছি৷
যেমন কথা তেমন কাজ। আমি আবার খুব সাহসী৷ সামনে আগালাম। কোথাও কেউ নেই৷ একদম শেষ প্রান্তে পৌছে গেলাম।এদিকটায় কোন বেরিগেড নাই৷ তাই কবরস্থানের বাইরে বের হয়ে গেলাম। একটু দূরে একটা বিশাল ডোবা বা পুকুর জাতীয় কিছু৷ আমি আর এগুলাম না।
পেছন ফিরে যেই না ব্যাক করব তখনি কান্নার শব্দ পেলাম। হুট করে শব্দটা হওয়ার কারনে বেশ ভয় পেলাম। টর্চ লাইট অন করে পুকুরটার দিকে যেতে লাগলাম।খানিকটা এগিয়ে পুকুরের দিকে টর্চ লাইটটা ধরলাম,লাইট ধরতেই পুকুর পাড়ের সামনে একটা ছায়া দেখতে পেলাম৷ একটা নারীমূর্তিকে দেখলাম।হয়তো এই মেয়েটার কান্নার আওয়াজ পাচ্ছিলাম। আমি সামনে আগালাম। মেয়েটার সামনে গিয়ে দাড়াতেই মেয়েটা কিভাবে যেন টের পেল এবং ভয় পেয়ে নড়ে উঠতে গিয়েই কাদার সাথে স্লিপ খেয়েপুকুরে পড়তে ধরলেই আমি তড়িৎগতিতে তার কোমড় জড়িয়ে ধরে তাকে উদ্ধার করি৷ মেয়েটা স্বাভাবিক হতেই আমিঝাড়ি মেরে বলি, এতো রাতে এখানে কি???
মেয়েটা কিছু না বলে চুপ করে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে।
রাত তখন তিনটা হবে চারপাশ প্রচুর অন্ধকার নিজের অস্তিত্ব নিজেই দেখতে পাবে না এমন অন্ধকার৷ আমি মেয়েটার মুখে টর্চ মারবো তখনি দেখি টর্চের ব্যাটারি শেষ। জ্বলেনা।যার ফলে, চেহারা দেখতে পারলাম না।
আমি মেয়েটাকে ধমকিয়ে বলি, এতো রাতে তো ভালো ঘরের মেয়েরা বের হয়না।তুমি কেন এখানে?? কি করতে বের হইছো, অসভ্য মেয়ে৷ যাও চোখের সামন থেকে৷
তখনি ফোন আসে, চোর ধরা পড়েছে। আমিও চলে আসলাম। মেয়েটার আর খোঁজ করিনি।
কি যে হলো মেয়েটার পরে আমি জানি না।
চলবে৷
Ahmed Chanchal, Rasel islam, Raihan khan, Badol hasan, Saiful Osman, Sumaiya akter, Rokeya hoq and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Sonchitaধুমকেতু
- Posts : 15
স্বর্ণমুদ্রা : 1125
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-06
Re: আত্মা যখন বউ
টেবিলে পরোটা আর ডাল চলে আসলো। আমি খেয়ে নিলাম। চায়ের মতো এদের পরোটা আর ডালটাও বেশ সুস্বাদু। পরোটাটা একদম গরম ছিল৷ উপরে বোধহয় ঘি ঢেলে দিয়েছে দুই-এক চামচ৷ মুখে পুড়তেই ঘির স্বাদ পাচ্ছিলাম৷ খেয়ে-দেয়ে বিল দিলাম। আশ্চর্য, এরা প্রথমের দেওয়া চায়ের দাম রাখেনি৷ বলল, ঐ চা অপেক্ষা করার জন্য ফ্রিতে দিয়েছে৷
আমি প্রায় বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরলাম।মাঝখানে এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। বাসায় ফিরে দেখি সব স্বাভাবিক মা আর ইসু বসে বসে স্টার প্লাস এ "ইয়ে রিসতা কেয়া কেহলাতা হ্যা" দেখছে৷ মায়ের খুব ফেভারিট সিরিয়াল এটা।এক দিন ও মিস দেয়না। এখন মেবি রিপিট টেলিকাস্ট চলছে।
আমি চোখ বুলিয়ে আশে-পাশে তাকালাম।প্রেমাকে দেখতে পেলাম না।
-- যাকে খুজছো সে এখন তোমার রুমে অবস্থানরত৷ ( মা বেশ গম্ভীর গলায় কথাটা বলল)
আমি কিছু না বলে, রুমে গেলাম৷ রুমে গিয়ে দেখি প্রেমা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে সাজ-গোজ করছে৷ প্রেমার পড়নে সালোয়ার কামিজ৷ এই সালোয়ার কামিজ আমিই ইসুকে অনলাইন থেকে কিনে দিয়েছিলাম৷ এই ড্রেসটা ইসু প্রেমাকে দিয়ে দিল!!
আমি প্রেমার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আয়নার ভিতর দিয়ে ও আমাকে দেখতে পেয়ে মুচকি হাসলো। আমিও বিনিময়ে একটা শুকনো হাসি দিলাম৷ হাসলে মেয়েটাকে খুব সুন্দর লাগে তো। প্রেমা ড্রেসিং টেবিল থেকে লিপস্টিক নিয়ে ঠোঁটে লাগাতে লাগলো। আমি মুগ্ধ হয়ে তাকালাম৷ মনের মধ্যে এক ধরনের শিহরন খেলে গেল৷ আমি তাকিয়েই রইলাম।
প্রেমা আরো কিছুক্ষন সেজে আমার দিকে ফিরে বলে, আমাকে কেমন লাগছে? সুন্দর না??
-- হুম, অনেক সুন্দর৷ কিন্তু এভাবে সাজার কি ছিল??
-- আজকে আমার বিয়ের ফাস্ট ডে, তাই একটু সাজলাম। আর শুনো,আমাকে কিছু ব্যান্ডের ড্রেস কিনে এনে দাও। শাড়িতে আই এ্যাম নট এ্যাট অল কম্ফোর্টেবেল৷ একটু সুন্দর দেখে আনবা৷ এন্ড ব্যান্ডের দোকান থেকে আনবা। আমি ব্যান্ডের ড্রেস ছাড়া পড়ি না।
-- বিয়ের আগে আমার খোজ নিয়েছিলে??
প্রেমা ভ্রু কুচকে বলে, মানে??
-- মানে হলো আমি বেকার। বেকার মানে হলো যার কোন কাজ নাই।
-- কিহ!!
-- হুম। তবে একদা রমনা থানার ওসি ছিলাম।
কথাটা মন খারাপ করে বললাম।
প্রেমা আমাকে দেখে নরম গলায় বলে,এখন আর ওসি নেই কেন??.
-- সাসপেন্ড করছে।
প্রেমা চোখ বড় বড় করে বলে, কিভাবে??
আমি বেডে এসে বসে বলি, অনেক লম্বা কাহিনি। তাও শুনবা??
প্রেমা মাথা ঝাকালো যার অথ সে শুনতে ইচ্ছুক।
আমি বলা শুরু করলাম, সাসপেন্ড হওয়ার আগের রাতে আমাকে একটা ইর্মাজেন্সি কেসের জন্য পাঠানো হয়৷ মূলত একটা চোর ধরতে।আমরা চোর ধরতে সক্ষম ও হই৷ চোর ধরা পড়ার পর আমি লক্ষ্য করি এটা সেই কার্লপিট না যাকে ধরতে এসেছিলাম। যাকে ধরার কথা ছিল সেটা একটা ছ্যাচকা চোর মাত্র৷ কিন্তু যাকে ভুল বশত ধরেছি,সে অনেক বড় মাপের ক্রিমিনাল৷ নারী পাচারের ওস্তাদ যাকে বলে আরকি৷ এর আগেও এই ক্রিমিনালকে ধরেছিলাম আমি নিজে।কিন্তু জেল থেকে কিভাবে যেন ছাড়া পেয়ে যায়।ডিপার্টমেন্টেও এতো বড় ঘটনা নিয়ে কোন কথা হয় না।হবে কেমনে এই ক্রিমিনালের সাথে অনেক বড় মাপের লোক যুক্ত আছে। তাই বারবার ছাড়া পেয়ে যাবে। আজকেও যদি এরে জেলে পাঠাই, কালকে জেল থেকে বের হবে। তাই আমি ওই ক্রিমিনালকে ওইখানেই সুট করে চলে আসি। সত্য তো আর গোপন থাকে না।পরেরদিনই ডিপার্টমেন্টের সবাই জানতে পারে যে আমি ওই ক্রিমিনালকে সুট করছি৷ তার পর আরকি সাসপেন্ড করলো। এতে আমার কোন আফসোস নাই। অন্তত একটা আসামিকে তো শেষ করতে পারছি৷ এতেই আমি অনেক হ্যাপি৷
প্রেমা কিছু বলল না।উঠে চলে গেল। যাক ভালোই হলো,আমি কিছুক্ষণ একা থাকতে চাই। যতোই আমি গাঞ্জা খাই না কেন দেশের প্রতি আমার নিষ্ঠার অভাব ছিলনা। দেশের প্রতি আমার ভালোবাসা নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন উঠাতে পারবে না।আমি আমার দায়িত্ব সম্পর্কেও অনেক তৎপর ছিলাম। কোন রকম অন্যায় কিংবা অবহেলা করি নি৷ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
কিছুক্ষন একা থাকার পর ভাবলাম, আত্মাটা কই গেল। আজকে মনে মনে একটা ওঝা ডাকতে চাচ্ছি৷ ও তো আর আজীবন আমাদের সাথে থাকতে পারেনা।মুক্তি দিতে হবে ওকে।প্রেমা বেশ ভাল মনের আত্মা। ওকে একটা জামাও কিনে দিব।তাও ব্যান্ডের।
আমি সারা বাসা খুজেও ওকে পেলাম না। তাই ছাদে গেলাম৷ আমার ধারনা ঠিক ছিল।প্রেমা ছাদেই দাড়িয়ে আছে৷ আমি গিয়ে বলি, মিস. আত্মা, আপনি এখানে কি করছেন একা একা??
নিজ সম্প্রদায়ের সাথে কনট্রাক করার চেষ্টা করছো??
প্রেমা কাদো কাদো হয়ে বলে, আমাকে আত্মা বলে ডাকবা না৷ প্রেমা বলে ডাকবা।
-- আচ্ছা।
-- জানো, আমি ভুত খুব ভয় পাইতাম৷ ভুতের ভয়ে রাতে বাথরুম পর্যন্ত যেতাম না।ভুতের মুভিও দেখি নাই৷
আমি হো হো করে হেসে দিলাম এবং বললাম, এখন নিজেই ভুতনি৷
প্রেমা মন খারাপ করে বলে, বললাম না, আমাকে ভুত- আত্মা বলে ডাকবা না।
-- ওহ, স্যরি ভুলে গেছি।আচ্ছা, তুমি মুক্তি চাও না,? এভাবে তো আর সারাজীবন থাকা যাবে না।
-- চাই তো, কিন্তু কিভাবে? আর আমার কেন যেন মনেই হয় না আমি মারা গেছি৷।
আমি মনে মনে ভাবি, ভারি আজব, মারা যাওয়ারও কোন অনুভূতি আছে?? মাকে জিজ্ঞেস করতে হবে। তার আগে মায়ের সাথে আমার কথা আছে।অনেক জরুরি কথা৷
আমি নিচে নেমে আসলাম৷ মাগরিবের আযান পড়ে গেছে বেশ খানিকক্ষণ আগেই। মা এসময় স্টাডি করতে বসে যান৷ প্রতি বৃহঃস্পতিবার করে মা এশার নামাযের পর থেকে যিকির করতে বসেন। একদম ফযরের পর নামায পড়ে থামেন। আমি মায়ের রুমে গেলাম।মা আমাকে দেখে তার চোখ থেকে চশমা খুলে বলে, বসো, তোমার সাথে কথা আছে৷
আমি ভদ্র ছেলের মতো মায়ের পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ি।
-- আমার মনে হয় প্রেমা মারা যায় নি।
-- কি বললা?? ( আসমান থেকে পড়লাম আমি মায়ের কথা শুনে)
-- হ্যা, ও জীবিত আছে। (গভীর গলায়)
-- কিন্তু ও তো আত্মা৷ আত্মা আবার জীবিত কেমনে থাকে?
মা বইটা বন্ধ করে বলে, কিছু কিছু আত্মা মৃত্যুর আগেই শরীর থেকে বের হয়ে পড়ে। এদের অর্ধ আত্মা বলে।এরা না মানুষ, না আত্মা।বলতে গেলে মাঝা-মাঝি পযায়ে পড়ে৷ এদের কোন ভৌতিক শক্তি থাকে না, আবার সম্পূর্ণ মানুষও নয় এরা৷
আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবতে লাগলাম, তাহলে, আমার বউ অর্ধ আত্মা????
চলবে ।
Ahmed Chanchal, Rasel islam, Raihan khan, Badol hasan, Mr faruk, Saiful Osman, Sumaiya akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Sonchitaধুমকেতু
- Posts : 15
স্বর্ণমুদ্রা : 1125
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-06
Re: আত্মা যখন বউ
পর্ব ৭
কিন্তু অর্ধ আত্না জিনিসটা আবার কি? অর্ধেক মানুষ আর অর্ধেক আত্মা?? কি জানি? মাকে জিজ্ঞেস করতে হয় তো৷ আমি আবারো মাকে বললাম, অর্ধ আত্মা ব্যাপারটা বুঝলাম না।একটু ঝেড়ে কাশো।
মা মুখটা আরো গভীর করে, এবং পুনরায় বইটা খুলে ১৯৫ পৃষ্ঠা বের করে দেখে দেখে রিডিং পড়তে লাগে, অর্ধ আত্মা বলতে বুঝায় যে, শরীর থেকে আত্মা বের হয়ে গেছে কিন্তু দেহতে প্রান আছে অর্থাৎ শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। কিন্তু জ্ঞানহীন ভাবে দেহটা নিথর হয়ে থাকে৷ আর আত্না অসহায় হয়ে চারপাশে ঘুরে বেড়ায়।
আমি অবাক হয়ে গেলাম, প্রেমা বার কয়েক বলেছে যে, তার মনে হয় না মারা গেছে৷ তাহলে কি ওর দেহে প্রান আছে? হার্টবিট চলছে ওর?? কিন্তু মষ্তিষ্ক অচল। মানে কোমায় আছে? কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব। ওর লাশ আমি নিজে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠালাম। এতোক্ষনে তো ফরেনসিক ডাক্তাররা ওর শরীরের কয়েকশ টুকরো করে ফেলেছে।বেঁচে থাকার তো প্রশ্নই আসেনা কোন ত্রুমে৷ আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম, আর কিছু জানো না, অর্ধ আত্মা সম্পর্কে??
-- উহু, আমি অর্ধ আত্মা সম্পর্কে কখনো রিসার্চ করিনি। সবসময় পরিপূর্ণ আত্মা নিয়েই গবেষণা করেছি।যাইহোক একটা বই অডার দিব। সেখানে লেখা থাকতে পারে।তুমি অর্ডার দিয়ে দাও তো, ইমান।
আমি ফোন বের করে বই অর্ডার দেওয়ার আ্যাপ নামালাম৷ মা বইটার নাম বলল, বইয়ের নাম শুনে তো আমি রীতিমতো শক৷ "নে ভুত তাড়া" বইয়ের নাম।আর লেখনিতে চাঁদপুরের ওঝা বাবা মো. ফকরুদ্দিন বাক্সোখন্ডকার৷
আমি নিরাশ হলাম৷ এই বইয়ে আদৌ কিছু পাওয়া যাবে??
মাকে বললাম, এটা তো ভুত তাড়ানোর বই।
-- এখানেই একটা লেসনে লেখা আছে।
-- ও৷
রুমে ফিরে গেলাম। প্রেমা বসে আছে বিছানায়। আমাকে দেখে কিঞ্চিৎ হেসে উঠলো। আমি ওর পাশে বসে বলি, কেন আত্মহত্যা করতে গেলা? বাবা- মায়ের কথা একবারো ভাবলে না??
প্রেমা মুখটা ভার করে বলে, আমার মা নেই৷
-- আই আম স্যরি।
-- হু, জানো আমার মায়ের দেয়া একটা বেসলেট ছিল।সবসময় আমি সেটা পড়ে থাকতাম।আমার মায়ের লাস্ট মেমরি।কিন্তু সেটা খুজে পাচ্ছি না।
আমি মনে মনে বলি, খুজে কেমনে পাবা।ওই বেসলেট তো এখন ঢাকায়৷ আর তুমি নারায়ণগঞ্জ৷ খোজ পাবা কেমনে??
-- কোথায় যে বেসলেটটা হারিয়ে গেল৷ আমার মায়ের লাস্ট স্মৃতি। ( কাদো কাদো হয়ে বলে প্রেমা)
আমি ওকে সান্ত্বনা দিয়ে বলি, এখন আর ওটার কি প্রয়োজন, বল?? তুমি ও মৃত, উনিও মৃত।
প্রেমা আমার দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকালো।
আমি আমতা আমতা করে বলি, না মানে তুমি মুক্তি পেলে শাশুড়ী মায়ের সাথেই তো থাকবা।একসাথে থাকলে তো স্মৃতির কোন দরকার নাই।
প্রেমা চুপ করে কি যেন ভাবতে লাগলো।
আমি ওকে জিজ্ঞেস করি, তুমি আমার বাসার সামনে কিভাবে আসলে??
প্রেমা আমার দিকে তাকিয়ে বলে, আমি বাসের নিচে ঝাপিয়ে পড়ে সুসাইড করি। এরপর আর কিছু মনে নাই। যখন চোখ খুলি দেখি আমাকে একটা কেমন অন্ধকার রুমে রাখা হয়েছে৷ কিছুক্ষণ পর কয়েকটা ডাক্তার এসে আমার পেটে সিজার দিয়ে কিছু একটা করে ব্যাথায় আমি অনেক জোড়ে নড়ে উঠি। তার পর হুট করে বডি থেকে বের হয়ে যাই।ওই সময় আমি এতো ভয় পাইছিলাম।আমার সামনে আমার দেহ আর আমি শুন্যে ভাসছি৷ ভয়ে আমি চোখ বন্ধ করে কান্না করে দেই। এর পর চোখ খুলে দেখি তোমাদের বাসার সিঁড়ির সামনে দাড়ানো। আমি অনেক মানুষকে যাতায়াত করতে দেখলাম।তাদের ডাক ও দিয়েছিলাম, কিন্তু কেউ আমাকে দেখতে পারছিল না। আমাকে ভেদ করে হেটে যাচ্ছিল। আমি অনেক ভয় পেয়ে যাই। উপায় না পেয়ে আবার সিঁড়িতে বসেই কাদতে থাকি৷ অনেকক্ষণ পর তোমার মা গেট খুলে আমাকে ডাকে। আমি খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই যে কেউ একজন আমাকে দেখতে পায়৷ বাসায় ঢুকেই তোমার ছবি দেখতে পাই৷ তোমাকে আমি এর আগেও দেখেছি৷
আমি অবাক হয়ে বলি, আমাকে দেখেছো?? কবে? আমি তো তোমাকে চিনি না।
-- যেদিন সুসাইড করলাম, তার কিছুক্ষন আগে আমি মায়ের কবরের কাছে গিয়েছিলাম।মেয়েরা নাকি কবরস্থানে ঢুকে না তাই আমি দূর থেকেই দাড়িয়ে ছিলাম। তখনি তুমি কোথা থেকে এসে আমাকে এতো জোড়ে জোড়ে ধমক দিলা।আমি এক সময় ভেবেছিলাম যে আত্মহত্যা করব না।কিন্তু তোমার ধমক গুলি শুনে আমার কস্ট শত গুন বেড়ে যায়। আর আমি বাসের নিচে ঝাপিয়ে পড়ি। তোমার ছবি দেখে মাকে আমি মিথ্যা বলি,যে আমাদের ব্রেকআপের জন্য আমি সুসাইড করছি। মা জানে আমি আত্মা, তাও আমাকে ন্যায় দেওয়ার জন্য তোমার সাথে বিয়ে দিল। কি ভালো মহিলা।
আমি মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। আমার একটা ভুলের জন্য প্রেমা সুসাইড করলো? আসলে জিহ্বার ধার তলোয়ারের চেয়েও তীক্ষ্ম। আমার ওকে খারাপ ভাবে মিন করে কথা গুলা বলা উচিৎ হয়নি। আমার ওকে সাথে নিয়ে গিয়ে বাসায় পৌছে দেওয়া দরকার ছিল।নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া আমার কর্তব্য৷ আর আমি ওর খোঁজ না করেই চলে এলাম। এখন নিজের উপর নিজেরই লজ্জা লাগছে। একদম ঠিক হইছে আমাকে সাসপেন্ড করে, আমার মতো কেয়ারলেস অফিসার ডিপার্টমেন্টে কোন দরকার নাই। আমার এখন নিজেকেই প্রেমার হত্যাকারী মনে হচ্ছে। যে করেই হোক, ওকে আমি মুক্তি দিয়ে শান্তি দিব।এখন থেকে ওর দায়িত্ব আমার।এজন্যই হয়তো সৃষ্টিকতা ওকে আমার কাছে পাঠিয়েছে।
-- কি ভাবছো??
আমি মুচকি হেসে বলি, কিছু না।যাও নাস্তা করো। আমি খেয়ে এসেছি।
-- আচ্ছা, বলে প্রেমা চলে গেল
আমি রামপালকে আবারো ফোন দিয়ে প্রেমার ফরেনসিক রিপোর্ট আমাকে দেওয়ার জন্য তাগদা দিলাম। রামপাল আজকে খুজতে যেতে পারেনি৷ আগামি সাতদিনেও পারবে না।এদিকে বইটা আসতে আরো পাঁচ-ছয় দিন লাগবে। তাহলে এখন হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায়ও নাই৷ প্রেমাকে সত্যিই কেউ দেখতে পায়না। আমি আর মা ছাড়া। এখন আমার কাছে প্রেমাকে দেখতে পাওয়ার ব্যাপারটা ক্লিয়ার হলো। মারা যাওয়ার আগে শেষবারের মতো ও আমাকে দেখেছিল৷ তাই আত্মাটাও আমার ঠিকানায় চলে এলো ।
হঠাৎ গেট খুলে প্রেমা ঢুকলো। হাতে খাবারের ট্রে। বেশ কিছু আইটেম। নুডুলস, মিষ্টি দুই ধরনের দুইটা এক প্লেটে, আপেল, আঙুর, নিমকি, আর সাথে এক কাপ চা।
ট্রেটা আমার সামনে রেখে দিল। আমি চা নিয়ে খেতে লাগলাম। চায়ে চুমুক দিতেই বুঝে গেলাম এই চা আর সকালের চায়ের স্বাদ এক৷
-- তুমি বানিয়েছো চা??
প্রেমা হালকা হেসে হু বলল।
আমি ভাবছি, মেয়েটার কথায় কথায় কাদার সাথে হাসারও স্বভাব আছে।
আমি বললাম, চা বেশ ভালো বানিয়েছো।
-- থ্যাক্সস।
প্রেমা গিয়ে সোফায় বসলো। আমি বিছানায় বসে বসে আপেলের পিস চাবাচ্ছি।
প্রেমা খুব নরম সুরে বললো, শোনো৷, আমার না একটা ফোন লাগবে।
আমি আপেল খাওয়া বাদ দিয়ে ওর দিকে তাকালাম।
-- না মানে, অনেক বোর হচ্ছিলাম৷ ফোন থাকলে তাও ফোন চালাতে পারতাম।
আমি ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম
প্রেমা বলেই যাচ্ছে, আসলে আমি ফোন ছাড়া থাকতে পারি না। আমি তো আমার ফোনকে এক মুহূর্তের জন্য আমার থেকে আলাদা করতাম না।
আমি মনে মনে বলি, এই জন্য মেয়ে এ্যাকাউন্টিং এ ডাব্বা মারছে। সারাদিন ফোন চালায় কি আর এ প্লাস পাওয়া যায়??
প্রেমা আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালো।
আমার ওর জন্য মায়া হলো। বললাম, ফোন দিয়ে কি করবে?? কার সাথে কথা বলবে শুনি??
-- ফোনে কথা কেন বলতে যাব? ফেসবুক, ইন্সট্রাগ্রাম, ইউটিউব, টিকটক চালাবো৷
বুঝলাম, বউ আমার অর্ধ আত্মার সাথে ডিজিটালও বটে।তার মানে, ও ডিজিটাল অর্ধ আত্মা।
আমি আমার পকেট থেকে আমার নতুন কেনা ফোনটা ওকে দিলাম। ও ফোন নিয়ে উল্টে-পাল্টে দেখলো।
-- তুমি এই ফোনটা রাখো। আমি কালকে নতুন ফোন কিনে আনবো তোমার জন্য।
প্রেমার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গেল৷ ও অনেক খুশি হয়ে বলে, আইফোন আনলে ভালো হয়। আমি সবসময় আইফোনই চালাতাম।
আমার একটা ছোট-খাটো হার্ট এ্যাটাক হয়ে গেল। আমি ইমান নিজেই কোন দিন আইফোন কেনার সাহস পাইনি৷ সবসময় এ্যান্ড্রেড চালাইছি। তবুও আমি ঠিক করলাম, প্রেমার জন্য একটা আইফোন আর দুইটা ব্যান্ডের ড্রেস কিনে আনব।কালকে দোকানে যাব।
এখন আমি বারান্দায় গেলাম। কিছুক্ষন পায়চারি করে রুমে যাব এমনই একটা পরিকল্পনা আমার৷ প্রেমার আচার-আচরণ থেকে বোঝ যায় ও বেশ বড়লোক বাবার আদরের মেয়ে। ওর বাবা কি ওর খোজ করছে না?? কোথাও কি মেয়ে হারানোর জিডি করেনি??
রাতে ডিনার করে আমি ছাদে গেলাম। বাসায় ভালো লাগে না।ইশ, কি জোস লাইফ ছিল আমার। পুলিশ স্টেশনে গেলেই সবাই সালাম, সেলুট দিত। কতো সম্মান ছিল আমার। আর এখন! আহ.....কস্ট, অনেক কস্ট। শেষ-মেশ আমি এখন বেকার। এমন সময় প্রেমা ছাদে এসে আমাকে ফোনটা দিল। আমি ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম, আমার বসের ফোন। যিনি আমাকে সাসপেন্ড করেছে৷ আমি কানে দিয়ে হ্যালো বললাম।
ওপাশ থেকে বলে উঠে, ইমান, দেয়ার ইস আ গুড নিউস ফর ইউ৷
-- কি, স্যার??
-- ইউ আর জাস্ট সাসপেন্ড ফর আ মান্থ৷ এক মাস পর তুমি আবার জয়েন্ট করতে পারবে।
আমি অনেক বেশি খুশি হয়ে বলি, সত্যি?
-- হুম, এই এক মাস তুমি ভেকেশনের মতো কাটাও। ইনজয়। আর পারলে বিয়ে করে ফেল। বউ নিয়ে ঘুরে বেড়াও। দেন, ফ্রেশ মাইন্ড নিয়ে জয়েন্ট কর।
আমি মনে মনে ভাবলাম, আমার তো স্যার বিয়ে হয়ে গেছে। শুধু মেয়ের পরিবর্তনে একটা আত্মা সর্যি অর্ধ আত্মার সাথে৷
স্যারের সাথে কথা বলা শেষ হতেই প্রেমা বলে, কি বললো, স্যার??
-- আমি এক মাস পর আবার জয়েন্ট করতে পারব।
- ওয়াও। দ্যাটস সো গ্রেট৷ আই আম ভেরি হ্যাপি ফর ইউ৷
আমার ভালো লাগলো যে প্রেমা আমার জন্য খুশি হলো।
-- চলো, এই খুশিতে একটা সেলফি তুলি।
আমি মুচকি হেসে বলি, অবশ্যই৷
প্রেমা নিজে সেলফি তুললো৷ বেশ কয়েকটা সেলফি তুলে প্রেমা গ্যালারি অন করলো। এবং সাথে সাথেই ওর মুখটা কালো হয়ে গেল৷ কারন ছবিতে ওর কোন অস্তিত্ব নেই। কেবল আমাকেই দেখা যাচ্ছে। প্রেমার জায়গাটা ফাকা।
আমি ওকে আবারো সান্ত্বনা দিয়ে বলি, আসলে আত্মাদের তো যন্ত্র ডিটেক করতে পারে না। প্রযুক্তির এই ক্ষমতা নেই তাই তোমাকে ক্যামেরা ধরতে পারেনি৷ মন খারাপ করো না।চল নিচে যাই।
-- হুমম।
আমারা নিচে গেলাম। তখনি আমাকে মা ডাকলেন।আমি মায়ের রুমে গেলাম৷
আমি ঢুকতেই মা বললেন, তুমি কি আজীবন বেকার থাকবে নাকি কাজ- কাম ও করবে? এখানে একটা জব খুজতে পারছো না??
-- জি, খোজার চেষ্টা করব৷
আমি মাকে আর স্যারের বলা কথাটা বললাম না।বলতে ইচ্ছে করছে না।
আমি আবার বাইরে বের হলাম। রাস্তায় পাশে একটা ব্রেঞ্চ আছে। গিয়ে বসলাম। আমি কিভাবে প্রেমা মুক্তি দিব সেটার কথাই ভাবছি। যদি "নে ভুত তাড়া" বইয়ে অর্ধ আত্মা নিয়ে সম্পূর্ণ ধারনা না থাকে???
চলবে৷
Ahmed Chanchal, Rasel islam, Raihan khan, Badol hasan, Mr faruk, Saiful Osman, Sumaiya akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Sonchitaধুমকেতু
- Posts : 15
স্বর্ণমুদ্রা : 1125
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-06
Re: আত্মা যখন বউ
পর্ব ৮
আমি পরদিন সকাল-সকাল মার্কেটের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়লাম।অনেক ঘুরে তিনটা রেডিমেড সালোয়ার কামিজ কিনলাম প্রেমার জন্য৷ রামপালকে ঢাকা থেকে আইফোন কিনে আনতে বলছি৷ রামপাল তার এক ভাগ্নাকে দিয়ে আইফোন নারায়ণগঞ্জ পাঠালো৷ দুপুরের পর আমি শপিং ব্যাগ হাতে নিয়ে বাসায় ঢুকলাম।
ফ্রেশ হয়ে গোসল করে প্রেমাকে ডাকলাম। ও আসছেই আইফোনের প্যাকেট ওকে দিলাম। ও ফোন পেয়ে অনেক খুশি হলো৷ ওর খুশি হওয়া দেখে আমার ও খুব ভালো লাগলো। প্রেমা খুশি হয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরল।ওর শরীর অসম্ভব ঠান্ডা৷ আমার কেমন যেন লাগলো। ফিলিংস কে তোয়াক্কা না করে আবার রুমের বাইরে গেলাম।
এভাবে দেখতে দেখতে পনের দিন কেটে গেল৷ প্রেমা আমদের সাথেই আছে।প্রতিদিন সকালে ও আমার জন্য চা বানায়৷ বিকেলে ও অনেক মজার মজার নাস্তা বানায় খাওয়ায় আমাদের৷ এমন এমন নাম নাস্তা গুলার যে আগে কখনো শুনিনি। যেমন- গতকাল প্রেমা আফগানি অমলেট বানিয়ে খাওয়ালো।কি টেস্টি ছিল, বাট এই প্রথম নাম শুনলাম।এর আগের দিন ডালগোনা কফি। এছাড়াও কুকিজ, ব্রাউনি, মোমো, পাস্তা, ফিস স্যান্ডুইচ বানিয়েছে।মানতে হবে প্রেমার রান্নার হাত খুব ভাল। আমরা চারজন বিকেলে নাস্তা করে ছাদে লুডু খেলি৷ রাতে আমি আর প্রেমা প্রতিদিন একটা করে মুভি দেখি। প্রেমা হরর মুভি পছন্দ করে না।আমি হিন্দি মুভি পছন্দ করি না।তাই হলিউড মুভি দেখি৷ তবে কয়েকটি তেলেগু মুভিও দেখেছি৷ আমি এক প্রকার ভুলতেই বসেছি যে প্রেমা কোন মানুষ না। সব স্বাভাবিকই লাগতে লাগলো৷ বরং প্রেমা এসে বাসার পরিবেশ দেখার মতো হয়েছে৷ যেখানে আমি আগে সপ্তাহে একদিন মায়ের সাথে ঠিকভাবে কথা ও বলতাম না এখন প্রতিদিনই আমরা গল্প করি৷ ইসুর সাথে আগে থেকেই আমার বন্ডিং ভাল, এখন আরো মজবুত হয়েছে৷ প্রেমার কারনেই আমরা জানতে পেরেছি ইসুর বয়ফ্রেন্ড আছে৷
আমার আর অডার করা বইটার কথা মনে নেই বললেই চলে। একদিন মা ডেকে বলেছিল, বইটা কবে আসবে৷ আমি উত্তরে বলি, চলে আসবে।
ব্যাস,এই পর্যন্তই, আর কোন খোজ নেই নি৷
ওদিকে, রামপাল, সারা ডিপার্টমেন্টের ফরেনসিক রিপোর্ট খুজেও প্রেমার রিপোর্ট পায়নি৷ কাল বা পড়শু রামপাল মেইন অফিস যাবে৷ এখানে প্রতিটি ফরেনসিক রিপোর্ট এর এক কপি জমা থাকে৷ আমি আর রামপালকে বেশি তাগদা দেইনি। কেননা এখন কেন যেন আর প্রেমাকে মুক্তি দিয়ে হারাতে মন চায় না। মনে হয় ওকে নিজের সাথেই রাখি। আমি জানি না, এই চাওয়াটা ঠিক নাকি ভুল। তবে এ খবর প্রেমা জানে না।ও তো ভাবে, আমি ওকে মুক্তি দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি৷
এভাবে আরো দুইদিন কেটে গেল। আমরা ছাদে লুডু খেলছিলাম।হঠাৎ কলিংবেল বেজে উঠলো৷ প্রেমা উঠতে গেলে মা বাঁধা দিয়ে আমাকে পাঠালো। আমিও বাধ্য হয়ে নিচে গেলাম৷। গেট খুলতেই ডেলিভারি ম্যান বইটা বের করে দিল। আমি বইটা হাতে নিলাম।বিল পরিশোধ করে ঘরে এলাম। বইটা ড্রয়ারে ঢুকিয়ে আবার ছাদে গেলাম।মা জিজ্ঞেস করলো, কে এসেছিল??
-- কেউ না, মা।গেট খুলে কাউকে পেলাম না।হয়তো ভুলে দিসে নাহলে বাচ্চা গুলা দুষ্টুমি করে নক করছে৷
মা আর কিছু বললেন না।আমিও চুপ হয়ে গেলাম।বইটা পড়তে চাচ্ছি না।যেভাবে চলছে সেভাবেই সব আগাক৷ বাড়তি কিছু করতে চাচ্ছি না।।
রাতে আমি আর প্রেমা আরেকটা মুভি দেখলাম। পরদিন আমি আবার ঐ হোটেলে গেলাম৷ এখন অবশ্য প্রতিদিন সকালে প্রেমার হাতের চা খাই। তবুও আজ এই হোটেলে এলাম।
রামপালকে ফোন দিলাম।
রামপাল ফোন রিসিভ করে বলে, স্যার, একটা ঘটনা আছে।
আমি উৎসাহের সাথে বলি, কি??
-- যেই মেয়ের খোজ করছিলেন না, রিপোর্ট চাচ্ছিলেন।ওনার তো কোন ময়নাতদন্ততই হয়নি৷
-- সেকি, কেন?? ওর লাশ কই তাহলে??
-- আরে স্যার, অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে৷ এমন ঘটনা আমি আমার ত্রিশ বছরের চাকরি জীবনে দেখি নি।
-- রামপাল যা বলবে পরিষ্কার ভাবে বল।
-- ঐ মেয়ে মারা যায়নি স্যার। ময়নাতদন্ত করার সময় মেয়ে নাকি নড়ে উঠছে৷ পরে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল পাঠায়। এখম একটা নাসিং হোমের আছে মেয়েটা। অবস্থা বেশি ভালো না। অফিসের সবাই এ ব্যাপারটা গোপন রাখছে৷ আমি অনেক কস্টে খোজ পাইছি৷
-- তার মানে মেয়েটা জীবিত??
-- হ্যা, স্যার।
-- এখন কোথায়??
--মোহাম্মদপুরের একটা নাসিং হোমে।
-- রামপাল আমি কালকেই ঢাকা আসছি। তার পর আমি নিজে যাব মেয়েটার কাছে।
-- ঠিক আছে,স্যার।
-- এখন রাখছি।
আমি রুমে আসলাম। দেখি প্রেমা ঘুমাচ্ছে৷ ও এই সময় প্রায় ঘুমায়।
ড্রয়ার থেকে বইটা বের করে অর্ধ আত্মা নিয়ে পড়তে বসে গেলাম।অর্ধ আত্মা নিয়ে মাত্র পাঁচ পেজ লেখা। এরকম ঘটনা খুব কম ঘটে। অনলি ওয়ান পাসেন্ট মানুষের সঙ্গে এমনটা ঘটে যেতে পারে৷ প্রচন্ড আঘাত পেলে বডি থেকে আত্মা বের হয়ে এলেও শরীরে জান থেকে যায়। তবে, শরীর অচল হয়ে থাকে৷ ততোক্ষন পযন্ত অচলই থাকবে যতোক্ষন পর্যন্ত দেহের ভিতর আত্মাটা প্রবেশ করবে না।তার মানে, আমি যদি প্রেমাকে ওর শরীরের কাছে না নিয়ে যাই তবে ও আজীবন এমনই থাকবে??
কি জানি?? বইটাতে তো এটাই লেখা। আমি বইটা ছাদে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলি। যেন কেউ এই বইয়ের খোজ না পায়৷ কালকে আমি ঢাকায় যাব। আসলেই কি ওই নাসিং হোমে প্রেমা শুয়ে আছে??? ওর কি অবস্থা ওখানে?? প্রেমা একই সময় দুই জায়গায় অবস্থান করছে।কিন্তু বিজ্ঞান বলে, একটা ব্যাক্তি একই সময় দুই জায়গায় অবস্থান করতে পারবে না।কারন মানুষ ত্রিমাত্রিক জীব৷ কিন্তু আত্মারা কি ত্রিমাত্রিক নয়, বরং এমন ও হতে পারে এরা চতুর্থ কিংবা পঞ্চ মাত্রিক। হয়তো বা আত্মাদের দৈঘ, প্রস্থ,উচ্চতা বাদেও আরো কিছু মাত্রা আছে। কে জানে??
তবে আমি মন থেকে চাচ্ছি না প্রেমা চলে যাক। তাছাড়া আগে নিজের চোখে ঢাকায় গিয়ে প্রেমার বডি দেখতে হবে৷ আমি আবার রুম থেকে বের হলাম। মন অশান্ত হয়ে আছে৷ আমি নিজেকে যতোই সামলে নেই না কেন সেটা কোন ব্যাপার না।কিন্তু বিজ্ঞান! সেটা তো ভুল হতে পারেই না।বিজ্ঞানের ভাষায় আত্মার কোন অস্তিত্ব নেই৷ তবে প্রেমা কি আমার হ্যালুয়েশন৷ যদি হ্যালুয়েশন হতো তবে শুধু আমিই ওকে দেখতে পেতাম। মা দেখতে পেত না।আর সবসময় বিজ্ঞান জয়ী হবে এমন কোন কথা নেই। প্রকৃতি চাইলে সব সম্ভব। সব মানে সব কিছুই৷ প্রকৃতি কোন কিছুই না বুঝে করে না।এতে নিশ্চয়ই কোন কল্যাণ আছে।
রাতে ডিনার করে আমি আর প্রেমা মুভি দেখতে বসলাম।মুভিটা খুবই অদ্ভুত। নাগ রাজ্য থেকে নাগের রাজা পৃথিবীতে এসে একটা মেয়েকে প্রেমের জালে ফাসিয়ে বিয়ে করে। এক বছরের মাথায় তাদের কোল জুড়ে একটা সন্তান আসে।
এবং নাগটা বাচ্চাটাকে নিয়ে চলে যায়। মুভি এখানেই শেষ। কিন্তু আমার প্রশ্ন অন্যখানে৷ মানুষ মানে মেয়েটা হলো কডাটা পর্বের প্রানি। আর সাপ ও কডাটা পর্বের প্রানি হলেও সরীসৃপ।শ্রেনি সরোপ্সিডা। মানুষ ও সাপ উভয় আ্যমেলিয়া রাজ্যর প্রানি। কিন্তু এদের মধ্যে দুইটা মিল থাকলেও বাকি পাঁচ জায়গায় অমিল সাদৃশ্য। যেমন, ,শ্রেনি, বর্গ, গোত্র, গণ, প্রজাতি সব ভিন্ন। মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম হোমো স্যাপিয়েন্স। আর সাপের বৈজ্ঞানিক নাম সারপেন্টস।
সাপটার শুক্রাণু সমুহ কি মেয়েটার ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হতে পেরেছে? তারপর দুইটা গ্যামেট থেকে জাইগোট সৃষ্টি হয়েছে।অতঃপর ব্লাস্টোসিস্ট তৈরি হয়েছে? সাপ কি বাচ্চা প্রসব করে নাকি ডিম পাড়ে??
জানা নেই আমার৷ আমি ইমান বায়োলজিতে আবার উইক ছিলাম। একবার একশ তে চল্লিশও পাইছি।
যাইহোক, আমি নিজে একটা আত্মার সাথে এক বেডে ঘুমাই। সেখানে মানুষ আর সাপের মিলিত বাচ্চাকে না মানার কোন কারন দেখছি না।
পরদিন আমি বেশ সকালে উঠলাম। রেডি হয়ে নিলাম। তখনি প্রেমাও জেগে উঠলো। আমাকে এভাবে রেডি হতে দেখে বলে, কই যাও?
-- ঢাকায় যাচ্ছি৷
প্রেমা বিছানা ছেড়ে উঠে বলে, হঠাৎ ঢাকায় কেন যাচ্ছো?
-- একটা কাজে যাচ্ছি। সন্ধ্যার আগেই চলে আসব।
বলে বেড়িয়ে এলাম। বেশ টেনশন লাগছে৷ নার্ভাসও লাগছে।কেন এমন লাগছে জানি না।
প্রায় তিন ঘন্টা পর পৌছালাম।আমাকে নিতে রামপাল এসেছে। বাস থেকে নেমেই উবার কল করলাম। মোহাম্মদপুর যাব।
গাড়িতে আমি রামপালকে জিজ্ঞেস করি, তুমি সিওর তো মেয়েটা প্রেমা??
-- স্যার,প্রেমা কে?
আমি বললাম,ওই মেয়েটার নাম। মেয়েটা বেঁচে আছে,এটা সত্য তো??
-- জ্বি, স্যার৷ খাটি সত্য৷
আমরা সেই নাসিং হোমে পৌছে গেলাম। বেশি বড় না হোমটা। কয়েকটা কেবিন মাত্র। এর মধ্যে তিন নাম্বার কেবিনে প্রেমাকে রাখা হয়েছে। আমি আগালাম রুমের দিকে। সত্যি প্রেমার মতো একটা মেয়ে বেডে শুয়ে আছে।অজ্ঞান।মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে। ঠোঁট ফেটে গেছে।চোখের নিচটা ডেবে গেছে৷ কেমন প্রানহীন হয়ে আছে দেহটা।দেখতেই বুক কেপে উঠলো। আমি অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। রামপাল বেশ স্বাভাবিকই আছে। রামপাল তো আর জানে না আসল ঘটনা কি। আমি কেবল জানি কিসের সাক্ষি আমি৷ প্রকৃতির অদ্ভুত খেলার একমাত্র সাক্ষি বুঝি আমি!
প্রকৃতি কেন এই খেলাটা খেলছে??
রামপাল রুম থেকে বের হলো। আমি প্রেমার হাত ধরলাম। হার্ট বিট চলছে। ও কি সুস্থ হবে না আর কোন দিন????
আমি রামপাল কে নিয়ে শুরু করলাম একটা কাজ,সেটা হলো প্রেমাকে এই নাসিং হোম থেকে সড়িয়ে ভালো হাসপাতালে শিফট করা৷ অনেক ঝামেলা হলো৷ প্রেমাকে কিছুতেই রিলিস দিবেনা৷ পরে কিছু টাকা গুজে দিয়ে বের করে আনলাম। একটা ভালো হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে রামপালকে ওর ফ্যামিলি সম্পর্কে খোজ নিতে বললাম।তারপর একটা রেস্টুরেন্ট থেকে পিজ্জা খেয়ে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম।
চলবে।
Ahmed Chanchal, Rasel islam, Raihan khan, Badol hasan, Mr faruk, Saiful Osman, Sumaiya akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Sonchitaধুমকেতু
- Posts : 15
স্বর্ণমুদ্রা : 1125
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-06
Re: আত্মা যখন বউ
পর্ব ৯
বাসায় গিয়ে দেখলাম প্রেমা গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে।আমাকে ঢুকতে দেখে বলে, তোমার না সন্ধ্যায় আসার কথা? এতো দেরি হলো কেন?
-- কাজে আটকা গিয়েছিলাম৷ তাই লেট হয়ে গেল৷
প্রেমা আমাকে খাবার সার্ভ করে দিল। আমি ওর দিকে তাকালাম, কতো সুন্দর লাগছে ওকে। অথচ হাসপাতালে শুয়ে থাকা ওই মেয়েটার চেহারা কতোটা বিধ্বস্ত।
আমি খেয়ে উঠে পড়লাম। রুমে ঢুকে প্রেমাকে বললাম, তোমার বাবা কোথায় এখন??
প্রেমা মন খারাপ করে বলে,জানিনা। বাবা আমাকে একটুও ভালোবাসে না।ফেল করছি জন্য বলছে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে।শুধু তাই না,বলছিল, রিক্সাওয়ালার সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে।আমার জন্য নাকি তার মান-মর্যাদা, সম্মান সব শেষ। আমি আর কোনদিন ঐ বাসায় যাবনা।মরে গেলেও না।
তারপর প্রেমা জিব্হা কেটে বলে, মানে..... আর কখনোও যেতে চাইনা। থাকুক বাবা, বাবার মতো৷
বুঝলাম, প্রেমা ওর বাবার প্রতি অনেক রাগ করেছে। আসলে অভিভাবকদের ও দোষ আছে। মানলাম সন্তান রেজাল্ট খারাপ করেছে।কেউ তো আর ইচ্ছে করে পরীক্ষায় ফেল করেনা।শাসন যদি করতেই চায় পরীক্ষার আগে করলেই পারে,পরে শাসন করে কোন লাভ নাই।
এই একটা ভুলের জন্য প্রতি বোর্ড পরীক্ষার পর অনেক ছাত্র-ছাত্রী আত্মহত্যা করে।
আমি আর কিছু বললাম না। রামপাল প্রেমার বাবার খোজ পেয়েই যাবে। শুধু শুধু প্রেমার কাছ থেকে জানতে মন চাচ্ছেনা। শুয়ে পড়লাম। অনেক ক্লান্ত লাগছে।
তিন দিন পর রামপালের ফোন এলো। সে প্রেমার বাবার খোজ পেয়েছে।আমি আবারো রওনা হলাম ঢাকায়। রামপালকে নিয়ে প্রেমাদের বাসার গেলাম।প্রেমাদের বাসায় পৌছাতেই আমার চোখ কপালে। এটা বাসা নাকি প্রাসাদ। এতো বড় বাসা! ডুপ্লেস। চারপাশ চিকচিক করছে।দারোয়ান ভিতরে ঢুকতে দিল।। ভিতরে ঢুকে দেখলাম, বাসার সামনে বাগান। বসার জন্য বেঞ্চ।আবার চেয়ার-টেবিল এমনকি ফ্লোরাও আছে। আমাদের কে একটা রুমে বসতে দিল। এটা মেইন হাউসের থেকে একটু দূরে৷ মেইন হাউসে ঢোকার সৌভাগ্য হলোনা।
দু কাপ চা আর বিস্কুট দিয়ে গেছে। রামপালের কাছ থেকে শুনলাম প্রেমার বাবা একজন ইন্ড্রাস্ট্রিয়ালিস্ট। দেশে-বিদেশে গামেন্টস এর ব্যবসা। রামপালের মতে ওনার টাকার পাহাড় আছে।
এক ঘন্টা পর উনার আসার সময় হলো। উনাকে দেখে বেশ গম্ভীর ও রাগী মনে হলো। তবে চেহারায় উদাসিনতা ফুটে উঠছে।
-- কে তোমরা??
-- স্যার, আমি ইমান।
-- তো?
এবার আমি খানিকটা লজ্জা পেলাম।আসলেই আগে নাম বলা উচিৎ হয়নি৷ গুনী ব্যক্তিদেরকে আগে নাম বলতে হয়না।
আমি আবারো বললাম, জি, আমি রমনা থানার ওসি,মানে এক্স ওসি৷।।
উনি আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলে, আমি সাধারণত ওসিদের সাথে কোন ডিল করি না, তুমি তো এক্স। কি কাজ?? দ্রুত বল, আমার সময় নেই। ব্যস্ত অনেক।
বড়লোকরা সর্বদা ব্যস্তই থাকে। এদের হাতে কখনোই সময় থাকে না।এই তথ্য আমার জানা।
-- আপনার মেয়ের নাম কি প্রেমা??
উনি বেশ বড় ধরনের চমক খেলেন এবং আমার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকালেন৷
-- আপনার মেয়ের নাম কি প্রেমা?
উনি এবারো চুপ থাকলেন। উনাকে চুপ থাকতে দেখে আমি ধরেই নিলাম যে আমরা ভুল মানুষের কাছে এসেছি। আমি রামপালের দিকে তাকালাম।রামপাল বললো, ইনফরমেশন অনুযায়ী তো ইনিই ওই মেয়ের পিতা হওয়ার কথা। ভুলও হতে পারে।
আমি বললাম, আম আম সো সর্যি, স্যার। আমরা ভুল জায়গায় এসে পড়েছি। আপনার মুল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
-- তুমি কি সেই ছেলে যে আমার মেয়েকে পালিয়ে নিয়ে গিয়েছিলে??
আমার মাথায় বাজ পড়লো।আমি ইমান কেন প্রেমাকে নিয়ে পালাতে যাব? ওকে তো আত্মা হওয়ার পর থেকে চিনি।
-- জি না। আমি আপনার মেয়ের রক্ষক। মানে সেভিয়ার।
উনি ভ্রু কুচকে বলে, মানে?
-- প্রেমা বাসের তলে পড়ে সুসাইড করে৷ আমরা ওকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভতি করাই ।
এ কথা শুনে উনি ধাম করে বসে পড়ে৷
আমি ওনাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলি, মিস্টার.বড়লোক, নিজেকে সামলান।
উনি আমার দিকে কঠিন চোখে তাকালো এবং বললো, আমার মেয়ে কোথায়? নিয়ে চলো আমাকে।
অতঃপর আমরা প্রেমার বাবার দামি-নামি গাড়িতে করে হাসপাতালে গেলাম৷
উনি হাসপাতালের সামনে নেমে আমাকে বলল, এররকম একটা অন্ডাররেটেড হসপিটালে আমার মেয়ে কেন রেখেছো?
আমি হালকা হেসে দেই৷
উনি কাকে যেন ফোন দিয়ে সিংগাপুর থেকে ডাক্তার আনতে বললেন৷
আমরা প্রেমার কেবিনে গেলাম৷ উনি প্রেমার পাশে বসে বাচ্চাদের মতো কেদে দিলেন।।
এতোক্ষন ওনাকে খুব রাগী লাগলেও এখন মনে হচ্ছে উনার মনটা বোধহয় খুব কোমল৷
প্রেমাকে রাতারাতি অন্য একটা হাসপাতালে শিফট করা হলো। কালকে নাকি সিংগাপুর থেকে ডাক্তার আসবে। আমি আর রামপাল ও প্রেমার বাবার সাথে হাসপাতালে গেলাম৷ প্রেমার বাবা এখনো প্রেমার হাতটা ধরে কেদেই চলছে।
এবং বলছে, মা, তোমাকে আর কোন দিন বকা দিব না।আবার কলেজে ভর্তি করে দিব। এ্যকাউন্টিং এর জন্য চারটা টিচার রাখবো৷ উঠ, মা।তুমি ছাড়া আমার আর কে বা আছে।
আমার অনেক খারাপ লাগছে ওনাকে দেখে।একটা মানুষকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তার মা-বাবা। প্রেমার বাবার নাম আজিজুল রহমান৷
আজিজুল সাহেব নাকি আজকে রাতে এখানে প্রেমার সাথে থাকবে৷
আমি আবারো নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে চলে গেলাম। তবে রওনা দেওয়ার আগে আরেকটা কাজ করে নিলাম।
চলবে৷
Ahmed Chanchal, Rasel islam, Raihan khan, Badol hasan, Mr faruk, Saiful Osman, Sumaiya akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Sonchitaধুমকেতু
- Posts : 15
স্বর্ণমুদ্রা : 1125
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-06
Re: আত্মা যখন বউ
পর্ব ১০
আমি আর প্রেমা পাশাপাশি বসে আছি রিকশায়। রিকশা তার আপন গতিতে ছুটছে৷ হালকা বাতাসও বয়ে যাচ্ছে৷ আমি চালাকি করে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে রেখেছি। প্রেমার সাথে কথা বললে যেন মানুষ আমাকে পাগল না ভেবে, ভাবে ফোনে কথা বলছি৷ সবচেয়ে ঝামেলা পোহাতে হয়েছে বাসে। আমি দুইটা বাসের টিকিট কেটেছি৷ প্রেমা জানালার পাশে বসেছে। ব্যাস, মানুষ-জন খালি আমার পাশের ফাকা সিটে নজর দিচ্ছিলো। আমি কন্ট্রাক্টরকে কড়া গলায় বলে দিয়েছিলাম, আমি দুইটা সিটের দাম দিসি, আমার পাশে যেন কেউ না বসে। আশপাশ থেকে মানুষ-জন বলতে ছিল, বাংলার শেষ নবাব আইছে৷
আমি কথাগুলা কানে দেইনি৷ প্রেমা আমাকে অনেক বার জিজ্ঞেস করে, আমরা ঢাকা কেন এসেছি।
আমি কোন জবাব দেইনি৷ রিকশায় আমি ওকে জিজ্ঞেস করি,প্রেমা, যেদিন তুমি বাসা ছেড়ে চলে যাও, সেদিন কি কোন ছেলে তোমার সাথে ছিল??
-- না তো, আমি একাই ছিলাম।
-- একটু ভালো করে মনে করে দেখো, কারো সাথে দেখা হইছিল কি? রাস্তায়??
প্রেমা কিছু একটা ভেবে বলে, হ্যা, বাসার একটু সামনে ঝন্টুর সাথে দেখ হয়েছিল৷
আমি নড়ে চড়ে বসে বলি, ঝন্টু কে??
-- আমার ক্লাসমেট৷ জানো ওর সাথে দেখা হওয়ার সময় ও কি বলছিল??
আমি আগ্রহ নিয়ে বলি, কি??
-- ও নাকি এ প্লাস পায়নি৷ এজন্য ওর মরে যেতে মন চাচ্ছে৷ ও ফোর পয়েন্ট পাইছে৷ কতো ভালো রেজাল্ট, তাও ঢং দেখায়৷
আমি বুঝলাম এই ঝনটুকে আমার শ্বশুড় প্রেমার প্রেমিক মনে করেছে। কিন্তু তার এমন ধারণা কেন আসলো মাথায়?
রিকশাওয়ালাটা বারবার পেছন ফিরে আমাকে দেখছে। অনেকক্ষন ধরে একটা কুকুর আমাদের রিকশার পেছন পেছন তাড়া করছে। আর সমানে চিল্লিয়ে চলছে।
আমি পকেট থেকে প্রেমার মায়ের দেওয়া বেসলেটটা বের করলাম।কালকে বহু কস্টে এটা দোকান থেকে ফেরত আনছি। ভাগিস দোকানদার বেসলেটটা বেচে দেয়নি৷
প্রেমা বেসলেটটা দেখে বেশ খানিকটা অবাক হয়ে আমাকে প্রশ্ন করলো, কোথায় পেয়েছো এটা?
আমি ওর হাতে বেসলেটটা পড়িয়ে দিয়ে বলি, পাইছি এক জায়গায়। সবকিছু জানতে নেই৷
আমার কেমন যেন লেগে উঠলো। আমি বুঝতে পারলাম যে, আমি প্রেমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।
কিন্ত..... এমন ভালোবাসার কি মানে? যেখানে প্রেমা নর্মাল লাইফ লিড করতে পারবে না? কেউ ওকে দেখতে পাবে না।ছুতে পারবেনা।
তাই ওকে হাসপাতালে আনার সিদ্ধান্ত নিলাম। কালকে সারা রাত আমার ঘুম হয়নি৷এই এক চিন্তায় আমি বিভোর ছিলাম৷ কি করব বুঝতে পারছিলাম না। মন চাচ্ছে না প্রেমাকে মুক্তি দেই, কিন্তু বিবেক বলছে এটা ঘোর অপরাধ।
সকালে রামপাল ফোন দিল।কালকে নাকি সেও আজিজুর রহমানের সাথে থেকেছে হাসপাতালে। রামপালের কাছ থেকে জানতে পারলাম, আজিজুল রহমান নাকি কালকে সারারাত নামাজ পড়েছে৷
রামপাল ও সকাল সকাল মন্দির যাচ্ছে।প্রেমার সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করতে৷ তার নাকি প্রেমার উপর মায়া লেগে গেছে।
তখন আমি উপলব্ধি করলাম, আমার ভালোবাসটা মাত্র পনেরো-বিশ দিনের। কিন্তু প্রেমার বাবার ওর জন্য ভালোবাসা তো প্রেমার জম্মের পর থেকেই৷ আর একজন পিতাকে কষ্ট দেওয়া মানে সৃষ্টিকতাকে অসন্তুষ্ট করার সমতুল্য। আমি ইমান কখনো আল্লাহর অসন্তুষ্টি চাইনা। তাছাড়া একজন বাবাকে এভাবে কাঁদানো অনেক বড় অপরাধ। যদি এই অপরাধের বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হতো, তবে অবশ্যই কোন বাবা-মাকে কষ্ট দেওয়ার শান্তিরস্বরুপ আমি ফাসিকে নির্ধারন করতাম।এটা একটা জটিল অপরাধ৷ পৃথিবীর কাউকে কষ্টে রেখে আর যাই করা যাক না কেন সুখে থাকা যাবে না।
প্রেমা বেসলেট টা দেখছে আর আমাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে। আমি প্রেমাকে জড়িয়ে ধরলাম৷ তারপর ছেড়ে দিয়ে অন্য দিকে তাকালাম।
কিছুক্ষন পর রিকশা হাসপাতালের সামনে এসে থামলো৷ আমি রিকশাওয়ালাকে বিশ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করতে বললাম।
প্রেমা অবাক হয়ে বলে, মাত্র বিশ মিনিটের জন্য এতো কষ্ট করে আসলাম।
আমি মুচকি হাসলাম। ওকে কিছু জানাইনি৷
কেবিনের সামনে গিয়ে প্রেমা হা হয়ে গেল।কেবিনে ওর বাবা ছিল আর রামপাল।
আমি প্রেমাকে বললাম, এটা তোমার দেহ। তুমি হাতটা ধরো এবং হাত ধরে চোখ বন্ধ করো।
প্রেমা আমার দিকে চেয়ে রইলো। ওই চাওনিতে কিছু একটা ছিল যার কারনে আমার চোখে মুহূর্তের মধ্যে অশ্রু চলে এলো।
প্রেমাকে আশস্ত দিলাম আমি। প্রেমা গিয়ে হাতটা ধরলো। ও আমার দিকে তাকিয়েই চোখ বন্ধ করলো। আমি মন মনে বললাম, তোমার আগামী দিন গুলো যেন শুভ হয়।
আমি হাসপাতাল থেকে বের হলাম। রিকশাওলাটা বির্মূষ মুখে দাড়িয়ে আছে। মুখে বিরক্তির ছাপ। আর হবেই বা না কেন। বিশ মিনিটের কথা বলে দেড় ঘন্টা পর হাজির হলাম। ভাড়াও দিয়ে যাইনি। তাই বেচারা চলেও যেতে পারেনি৷
প্রেমা ওর শরীরে হাত রাখার পর প্রায় ছয় মিনিট পর অদৃশ্য হয়ে যায়৷ কোথায় হারিয়ে গেল মনে হচ্ছিল। তারপর হুট করে ওর শরীর কাপতে লাগলো। ডাক্তার ডাকা হলো। সিংগাপুরের ডাক্তাররা এসে দেখতে লাগলো। দেড় ঘন্টা পর প্রেমার জ্ঞান ফিরলো৷ ওর জ্ঞান ফেরা দেখে আজিজুল সাহেব হাউমাউ করে কাদতে লাগল৷ আমি বুঝতে পারলাম, প্রেমা কান্দুরে স্বভাবটা তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছে।প্রেমা আমার দিকে তাকালো। কিন্তু কিছু বললো না।আমি কিছু না বলে চলে এলাম। রামপাল আমার সাথে বের হলো। সে নাকি আবার মন্দিরে যাবে।যাওয়ার আগে বলে গেল, আজিজুর সাহেবের মতো ভালো মানুষ নাকি সে তার এই জীবনে দেখে নি৷
আমাকে আসতে দেখে রিকশাওয়ালা বললো, এখন আসার সময় হলো আপনার?
--আরে, ভাই, হাসপাতালের মামলা বুঝেনই তো
বলে রিকশায় বসে পড়লাম।
রিকশাওয়ালা বিরক্ত মুখে বলে, আর ভাড়া যাব না।নামেন। মেঘে আন্ধার নামছে।
-- আরে, চলেন।যতো ভাড়া চান ততোই দিব।
উনি বিরক্তি নিয়েই রিকশা চালানো শুরু করলো।
আমি জানি, খুব ভালো করেই জানি প্রেমার আমার কথা বা আমার স্মৃতি কোনটাই মনে থাকবেনা ৷ বইটার শেষ পেজে এমনটাই লেখা ছিল। অর্ধ আত্না যদি নিজের দেহে প্রবেশ করে তবে এই আত্মা হয়ে কাটানো অসাধারণ জিবনের কথা ভুলে যাবে।
আমি অনেক আগে একটা তেলেগু মুভি দেখেছিলাম, সেখানে নায়ক এমনি একটা আত্মাকে তার শরীরে প্রবেশ করায়। ফলে মেয়েটা পুনরায় জীবিত হয়।মেয়েটা প্রথমে ছেলেটাকে চিনে না।কিন্তু পরে ঠিকই ছেলেটাকে মেয়েটা চিনতে পারে। নায়কটা ছিল রাম পাথানি আর নায়িকা ছিল তামান্না।
আর আমি মোটেও রাম পাথানির মতো ফিল্ম স্টার না, বরং সামান্য এক ওসি৷ তাই প্রেমাও আমাকে চিনবে না।কারন ও তামান্না না। আর এটা কোন মুভি না।
তবে আমি চেষ্টা করব, প্রেমা সুস্থ হলে ওকে পটানোর৷ আমার মনে হয় ও পটে যাবে৷ আর না পটলেও সমস্যা নাই৷ আমি বারবার চেষ্টা করে যাব৷ কথায় আছে না, একবার না পারিলে দেখ শতবার। প্রেমার সাথে অবশ্যই আমি প্রেম করার চেষ্টা করবো,সার্থক না হলে শত চেষ্টা করব। মোট কথা পটিয়েই ছাড়ব৷
আমি দেখলাম, হালকা বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে৷ রিকশার হুট উঠিয়ে দিয়ে বলি, একটা পলিথিন দেন৷
রিকশা থামিয়ে লোকটা বিরক্ত মুখেই পলিথিন বের করে দিল। আমি বুঝতে পারছি না, লোকটার মুখ কি এমনই নাকি সবসময় এমন করেই রাখে।
আমি মনে মনে ভাবি, প্রেমা যেন সামনের বার পরীক্ষায় এ্যাকাউন্টিং এ একশ তে নব্বই পায়৷ আমিন।
( সমাপ্ত)
নূরে আরদি
Ahmed Chanchal, Rasel islam, Raihan khan, Badol hasan, Mr faruk, Saiful Osman, Sumaiya akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
|
|