- Humiনবাগত
- Posts : 7
স্বর্ণমুদ্রা : 1324
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-29
সাইকেল
Wed Jun 09, 2021 4:09 pm
সাইকেল
লেখিকা: মোনালী
ঘটনাটি ঘটেছিল আমার আর আমার এক বন্ধু রতনের সাথে। আজ থেকে পয়ত্রিশ বছর পূর্বে। তখন আমার বয়স ছিল দশ কিংবা এগারো। সেই সময় আমার সব বন্ধুরা সাইকেল কিনেছিলেন। বন্ধুদের নতুন সাইকেল দেখে আমার ও খুব শখ জেগেছিল সাইকেল কেনার,তাই আমি বাবাকে বলেছিলাম একটা সাইকেল কিনে দিতে। বাবা বলেছিলেন সাইকেল কিনে দিবেন না।সেই কথা শুনে খাওয়া দাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছিলাম।পুরো দুইদিন না খেয়ে থাকার জন্য অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। মা,দাদী চাচি কোন ভাবেই আমার মুখে খাবার তুলতে পারেনি। দুইদিন দাদুভাই বাবাকে টাকা দিয়ে বললেন আগে আমার সাইকেল তারপর অন্য কিছু,এই নিয়ে আর কোন কথা শুনতে চাই না। একঘন্টার মধ্যে সাইকেল এনে আমার সামনের হাজির করার পর আমি ভাত খেয়েছিলাম। সাইকেল কেনার পর থেকেই প্রতি সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে সাইকেল চালানো শিখতে লাগলাম। ধীরে ধীরে চাচা সাইকেল চালানোতে বেশ দক্ষ হলেও গ্রামের বাহিরে যাওয়া হয়নি কখনো আর মা সব সময় বলতেন আমাদের এলাকা থেকে শহরের যেতে হতো যেই রাস্তা দিয়ে সেই রাস্তার ধারে একটা পরিত্যাক্ত শ্মশান ছিল ।সেই শ্মশানে অনেকেই নাকি অনেক কিছু দেখেছে। সন্ধ্যার পর ঐ রাস্তা কেউ ব্যাবহার করত না। ঐ রাস্তার ধারের কাছেও যেন না যাই। ইচ্ছে স্বত্বেও কখন যেতাম না। কিন্তু একদিনের এক দূর্ঘটনায় আমার জীবন পুরো এলোমেলো করে দেয়। এরপর থেকে আমি আর সাইকেল ছুঁয়ে ও দেখিনি। আমার বন্ধু রতনের মা কোন কাজে এক জরুরি কাজে ওর নানা বাড়িতে যাবার দরকার ছিল। তো যাবার আগে আমার বাড়িতে গিয়ে আমার মা কে বললেন যেন আমি আজ রতনের সাথে থাকি। আমি সাইকেল নিয়ে রতনের বাড়ি চলে গেলাম। আমি যাবার পর রতনের মা বেরিয়ে পড়লেন। আমি আর রতন সাইকেল চালানো, গাছে ওঠা, ডাঙ্গুলী খেলা এই করতে রাত দশটা বেজে যায়। দশটার দিকে রাতের খাবার শেষ করে শুতে যাব ঠিক সেই সময় রতন বললো যে চল আজ রাতে আমি আর তুই মিলে ঐ পরিত্যাক্ত শ্মশানে যাই দেখি আমাদের কিছু হয় কি না? যেই বলা সেই কাজ আমি আর রতন সাইকেল নিয়ে শ্মশানের দিকে রওনা হলাম সারা রাস্তা গল্প করতে করতে কখন শ্মশানের সামনে চলে এলাম তা বুঝতেও পারিনি । চারিদিকে শুনশান নীরবতা যেন একটা পাতা পড়লেও তার শব্দ পাওয়া যাবে না। হঠাৎ আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগতে লাগলো যেন মনে হচ্ছিল অনেক বড় বিপদ হবে। আমি রতনকে বললামন এখানে থাকার দরকার নেই রতন বলল কেন? আমি বললাম যে আমার ভীষণ ভয় করছে। রতন বলল তুই কি ছোট না কি যে তোর ভয় করবে? আমরা এতটাও বড় কিন্তু হইনি এটা ভুলে যাস না। রতন আমার কথা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললো চল ভেতরে যাই,আমি বললাম আমি যাব না আর তুই ও যাস না। রতন কোন কথাই না শুনে ভেতরে গেলেন।আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে ওর ফিরে আসার অপেক্ষায় রইলাম। মিনিট পাঁচেক পরই রতন বন্ধু বেরিয়ে এলেন আর বললেন চল এখন বাড়ি যাই। ফেরার সময় রতন আমার সাথে একটা কথাও বললেনি । বাড়ি ফেরার পর রতন শুধু বললো চল শুয়ে পড়ি। পরদিন সকালে রতনের মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। ঘুম ভাঙ্গতেই ওর মা জিজ্ঞেস করল রাতে দরজা খুলে ঘুমিয়ে ছিলাম কেন? আমি বললাম কোথায় না তো। মনে হয় রতনের ঘুম ভেঙ্গে গেছে তাই পুকুর পাড়ে গেছে। আমি বললাম আমি তাহলে আসি, রতনের মা বললেন খাবার খেয়ে তারপর যাও আমি বললাম আজ না আবার একদিন আসব তখন। এই বলে আমি সাইকেল নিয়ে রওনা দিলাম। ঘন্টা দুয়েক পর জানতে পারলাম রতন কে না কি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি আর মা রতনের বাড়ি গেলাম।দেখি রতনের মা কাঁদছে আসেপাশের বাড়ির সব মহিলারা চলে এসেছে। দশ/ বারোজন মিলে রতন কে খুঁজতে বেরিয়েছে। সারা গ্রাম তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর ও রতনের দেখা নেই। সন্ধ্যার দিকে সবাই ফিরে গেলে আমি আর মা রয়ে গেলাম। পরদিন সকালে রতনের বাবা কাজ থেকে ফিরে এলেন। সবটা শুনে তিনি থানায় গেলেন সাথে আমিও গেলাম। থানায় যাবার পর পুলিশ কে সব টা খুলে বললাম । আমি রতনের বাবা আর তিনজন পুলিশ মিলে পরিত্যক্ত শ্মশানে গেলাম। শ্মশানের ভেতরে যাবার পর দেখলাম পুরো শ্মশান ফাঁকা কোথাও কেউ নেই। আবার থানায় ফিরে এলাম আমরা, পুলিশ কেসটা লিখে নিলেন।ঐ দিনের পর থেকে রতন আর বাড়ি ফেরে নি কখনো। বেশ কিছুদিন পর এক রাতে রতনকে স্বপ্নে দেখি ও আমাকে বলে তুই আমাকে কথা দে আর কখনো সাইকেল ধরবি না আমি স্বপ্নের মধ্যে ওকে কথা দেই। এরপর থেকে আমি আর কখনো সাইকেল ছুঁয়েও দেখি নাই।
লেখিকা: মোনালী
ঘটনাটি ঘটেছিল আমার আর আমার এক বন্ধু রতনের সাথে। আজ থেকে পয়ত্রিশ বছর পূর্বে। তখন আমার বয়স ছিল দশ কিংবা এগারো। সেই সময় আমার সব বন্ধুরা সাইকেল কিনেছিলেন। বন্ধুদের নতুন সাইকেল দেখে আমার ও খুব শখ জেগেছিল সাইকেল কেনার,তাই আমি বাবাকে বলেছিলাম একটা সাইকেল কিনে দিতে। বাবা বলেছিলেন সাইকেল কিনে দিবেন না।সেই কথা শুনে খাওয়া দাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছিলাম।পুরো দুইদিন না খেয়ে থাকার জন্য অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। মা,দাদী চাচি কোন ভাবেই আমার মুখে খাবার তুলতে পারেনি। দুইদিন দাদুভাই বাবাকে টাকা দিয়ে বললেন আগে আমার সাইকেল তারপর অন্য কিছু,এই নিয়ে আর কোন কথা শুনতে চাই না। একঘন্টার মধ্যে সাইকেল এনে আমার সামনের হাজির করার পর আমি ভাত খেয়েছিলাম। সাইকেল কেনার পর থেকেই প্রতি সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে সাইকেল চালানো শিখতে লাগলাম। ধীরে ধীরে চাচা সাইকেল চালানোতে বেশ দক্ষ হলেও গ্রামের বাহিরে যাওয়া হয়নি কখনো আর মা সব সময় বলতেন আমাদের এলাকা থেকে শহরের যেতে হতো যেই রাস্তা দিয়ে সেই রাস্তার ধারে একটা পরিত্যাক্ত শ্মশান ছিল ।সেই শ্মশানে অনেকেই নাকি অনেক কিছু দেখেছে। সন্ধ্যার পর ঐ রাস্তা কেউ ব্যাবহার করত না। ঐ রাস্তার ধারের কাছেও যেন না যাই। ইচ্ছে স্বত্বেও কখন যেতাম না। কিন্তু একদিনের এক দূর্ঘটনায় আমার জীবন পুরো এলোমেলো করে দেয়। এরপর থেকে আমি আর সাইকেল ছুঁয়ে ও দেখিনি। আমার বন্ধু রতনের মা কোন কাজে এক জরুরি কাজে ওর নানা বাড়িতে যাবার দরকার ছিল। তো যাবার আগে আমার বাড়িতে গিয়ে আমার মা কে বললেন যেন আমি আজ রতনের সাথে থাকি। আমি সাইকেল নিয়ে রতনের বাড়ি চলে গেলাম। আমি যাবার পর রতনের মা বেরিয়ে পড়লেন। আমি আর রতন সাইকেল চালানো, গাছে ওঠা, ডাঙ্গুলী খেলা এই করতে রাত দশটা বেজে যায়। দশটার দিকে রাতের খাবার শেষ করে শুতে যাব ঠিক সেই সময় রতন বললো যে চল আজ রাতে আমি আর তুই মিলে ঐ পরিত্যাক্ত শ্মশানে যাই দেখি আমাদের কিছু হয় কি না? যেই বলা সেই কাজ আমি আর রতন সাইকেল নিয়ে শ্মশানের দিকে রওনা হলাম সারা রাস্তা গল্প করতে করতে কখন শ্মশানের সামনে চলে এলাম তা বুঝতেও পারিনি । চারিদিকে শুনশান নীরবতা যেন একটা পাতা পড়লেও তার শব্দ পাওয়া যাবে না। হঠাৎ আমার কেমন যেন অস্বস্তি লাগতে লাগলো যেন মনে হচ্ছিল অনেক বড় বিপদ হবে। আমি রতনকে বললামন এখানে থাকার দরকার নেই রতন বলল কেন? আমি বললাম যে আমার ভীষণ ভয় করছে। রতন বলল তুই কি ছোট না কি যে তোর ভয় করবে? আমরা এতটাও বড় কিন্তু হইনি এটা ভুলে যাস না। রতন আমার কথা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বললো চল ভেতরে যাই,আমি বললাম আমি যাব না আর তুই ও যাস না। রতন কোন কথাই না শুনে ভেতরে গেলেন।আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে ওর ফিরে আসার অপেক্ষায় রইলাম। মিনিট পাঁচেক পরই রতন বন্ধু বেরিয়ে এলেন আর বললেন চল এখন বাড়ি যাই। ফেরার সময় রতন আমার সাথে একটা কথাও বললেনি । বাড়ি ফেরার পর রতন শুধু বললো চল শুয়ে পড়ি। পরদিন সকালে রতনের মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। ঘুম ভাঙ্গতেই ওর মা জিজ্ঞেস করল রাতে দরজা খুলে ঘুমিয়ে ছিলাম কেন? আমি বললাম কোথায় না তো। মনে হয় রতনের ঘুম ভেঙ্গে গেছে তাই পুকুর পাড়ে গেছে। আমি বললাম আমি তাহলে আসি, রতনের মা বললেন খাবার খেয়ে তারপর যাও আমি বললাম আজ না আবার একদিন আসব তখন। এই বলে আমি সাইকেল নিয়ে রওনা দিলাম। ঘন্টা দুয়েক পর জানতে পারলাম রতন কে না কি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি আর মা রতনের বাড়ি গেলাম।দেখি রতনের মা কাঁদছে আসেপাশের বাড়ির সব মহিলারা চলে এসেছে। দশ/ বারোজন মিলে রতন কে খুঁজতে বেরিয়েছে। সারা গ্রাম তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর ও রতনের দেখা নেই। সন্ধ্যার দিকে সবাই ফিরে গেলে আমি আর মা রয়ে গেলাম। পরদিন সকালে রতনের বাবা কাজ থেকে ফিরে এলেন। সবটা শুনে তিনি থানায় গেলেন সাথে আমিও গেলাম। থানায় যাবার পর পুলিশ কে সব টা খুলে বললাম । আমি রতনের বাবা আর তিনজন পুলিশ মিলে পরিত্যক্ত শ্মশানে গেলাম। শ্মশানের ভেতরে যাবার পর দেখলাম পুরো শ্মশান ফাঁকা কোথাও কেউ নেই। আবার থানায় ফিরে এলাম আমরা, পুলিশ কেসটা লিখে নিলেন।ঐ দিনের পর থেকে রতন আর বাড়ি ফেরে নি কখনো। বেশ কিছুদিন পর এক রাতে রতনকে স্বপ্নে দেখি ও আমাকে বলে তুই আমাকে কথা দে আর কখনো সাইকেল ধরবি না আমি স্বপ্নের মধ্যে ওকে কথা দেই। এরপর থেকে আমি আর কখনো সাইকেল ছুঁয়েও দেখি নাই।
Nowrin talukdar, Nera akter, Fahad islam, Israyeel hossen, Za mahmud, RabbY khan, Debasis sorkar and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
|
|