সাদা কাগজ
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Go down
avatar
আবু সালেহ
নবাগত
নবাগত
Posts : 4
স্বর্ণমুদ্রা : 1162
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-03

তারা যদি ফিরে আসে সবে Empty তারা যদি ফিরে আসে সবে

Sat Jun 12, 2021 5:43 pm

.
বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে একজন নারীর সেক্স হরমোন গুলো নষ্ট হতে থাকে। ৩০বছর বয়সের পর থেকে একজন নারীর গর্ভধারণের ক্ষমতা কমতে থাকে এবং ৪০ বছরের পর এটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। কিন্তু হাসপাতালে একজন ৫২ বছর বয়সের মহিলার চেকাপের পর যখন দেখলেন তিনি প্রেগন্যান্ট, তখন হাসপাতালের সকল ডাক্তারের বিস্ময়ের সীমা রইল না। মহিলাটি এবং তার পরিবার এর চেয়ে বেশি বিস্মীত হলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে নানান সময় নানান আশ্চর্য ঘটনা ঘটে। কিন্তু এটাকে ডাক্তারেরা সেই পর্যায়েও ফেলতে পারছেন না। কারণ মহিলাটির স্বামী আজ থেকে ৬ বছর আগেই মারা গিয়েছেন। মহিলাটি তার এক ছেলে, ছেলের বউ আর দুই নাতিন নিয়ে ঢাকা শহরেরই একটি অভিজাত এলাকায় বসবাস করেন। মহিলাটির একমাত্র সন্তান রিফাত। ডাক্তারের কাছে তার মা সম্পর্কে এমন অদ্ভুত কথা শুনে পুরোই স্তব্ধ হয়ে গেল। তব্ধা ভাব কাঁটতে বেশ কিছুটা সময় লাগল তার। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে তিনি ডাক্তার সানজিদাকে বললেন, এইটা আপনি কী বলছেন? আপনি কী বুঝে-শুনে বলছেন সবকিছু? সানজিদা মলীন মুখে বলল, আপনার অবস্থা আমরা বুঝতে পারছি। এই রিপোর্ট হাসপাতালের বাকি ডাক্তারদের দেখানোর পর তারাও বিস্মীত হয়েছে। একজন ৫০ উর্ধ্ব নারীর গর্ভে ভ্রূণ মানে ভয়াবহ ব্যাপার। রোগির বেঁচে থাকাটা মুশকিল হয়ে যাবে। আপাতত এই বিষয়ে আপনার মাকে কিছু বলবেন না।
.
মুর্তির মতো বসে রইলেন রিফাত। খবরটা খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল পুরো হাসপাতালে। ডাক্তার সানজিদা যাকে কথাটা বলতে নিষেধ করেছেন তার কানেও কথাটা পৌঁছল। রিফাতের মা আসমা বেগম নিজের সম্পর্কে এই অদ্ভুত কথাটা শুনে পুরোই হতভম্ব হয়ে গেলেন। বেশ অনেক দিন ধরে তার শরীরটা বেশ খারাপ যাচ্ছিল। মাথা ঘোরা, বমি, শরীর দুর্বলতা সহ নানান উপক্রম। তিনি পেসারের রোগী। তাই এইটা নিয়ে অতটা বেশি ভাবলেন না। কিন্তু তিনি পেটে আরও সমস্যার সম্মুখীন হলেন। তারপর রিফাতকে বললেন এসব। সে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলেন চেকাপের জন্য। আর তারপরেই এই ঘটনা। আসমা বেগম একজন শিক্ষিতা মহিলা। তিনি এই অদ্ভুত কথাটা শুনে বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেন। এটা কিছুতেই সম্ভব নয়। নিশ্চই ডাক্তারের কোনো ভুল হয়েছে। তিনি চুপচাপ রিফাতকে নিয়ে বাড়ি চলে এলেন।
.
রিফাতের স্ত্রী রিণা কৌতুহলী হয়ে রিফাতের কাছে আসমা বেগমের কী সমস্যা হয়েছে জানতে চাইলেন। রিফাত একটু অপ্রস্তুতভাবে বললেন, তেমন কিছুই না। পেসারের সমস্যা। পেটে সামান্য ব্যামো। ঠিক হয়ে যাবে।
.
দুপুরে আসমা বেগম কিছুই খাননি। সেই ডাক্তারখানা থেকে আসার পর থেকে চুপটি মেরে তার ঘরে বসে আছেন। রিণা কয়েকবার তার ঘরে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি তার সাথে কথা বলার কোনো আগ্রহ দেখালেন না। রিণা বেশ চিন্তীত হয়ে পড়ে। রিফাতও আসার পর থেকে তেমন কথা বলছে না। সে অনুমান করতে পারে নিশ্চই বড় কোনো ব্যধি হয়েছে আসমা বেগমের। তাই তাকে কিছু বলছে না। এটা মনে হতেই ভেতর থেকে আসমা বেগমের জন্য বুকটা কেমন যেন করে উঠল রিনার।
.
রিফাতের বড় মেয়ের বয়স ৬ বছর, আর ছোট মেয়ের ৩। তাদের একজনের নাম মুক্তা আরেকজনের মীম। তাদের অভ্যাস রোজ সন্ধ্যার পরেই ঘুমিয়ে পড়া। অভ্যাস মতো আজও তারা সন্ধ্যার পর পরই ঘুমিয়ে গেছে। রাতে অন্যদিনের মতো আসমা বেগম, রিণা, রিফাত খেতে বসে। অন্যদিন যেই টুকটাক কথা হয় তাদের ভেতরে আজ তার কিছুই হলো না। খাবার শেষে আসমা বেগম তার ঘরে চলে গেলেন। রিফাত তার ঘরে। রিণাও খাবার ঢেকে, থালা-বাসন মেজে ঘুমাণোর প্রস্তুতি নেয়।
.
আসমা বেগমের সহজে ঘুম আসে না। ডাক্তার তাকে কাল আবার যেতে বলেছেন। কাল আবারও আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে বিষয়টা আসলে কী সেটা নিশ্চিত হবেন তারা। তার আজকে সারাটা দিন যেন ঘোরের মধ্যে কাঁটলো। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লেন তিনি।
.
মধ্যরাতে হঠাৎ মুখের ওপর কারও গরম নিঃশ্বাস পড়ছে বুঝতে পেরে আঁতকে চোখ খুলেন আসমা বেগম। চোখ খুলে কয়েক মুহুর্ত পুরোই পাথরের মূর্তির মতো হয়ে গেলেন। তার মুখের ওপর ঝুঁকে রয়েছে একটা অপরিচিত মুখ। বাইরে থেকে আসা জ্যাৎস্নায় আলোয় সেই মুখটার চেহারা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না। শুধু জ্বলজ্বল করে জ্বলছে তার ভয়ংকর চোখ জোড়া। মানবীর চোখ বাদে পুরো মুখটা ওড়না দিয়ে ঢাকা। শরীরটাও একটা চাদর দিয়ে ঢাকা। ঘুম থেকে উঠে এই জ্বলজ্বল ভয়ংকর লাল চোখ জোড়ার সাথে চোখাচোখি হওয়ায় ভয়ে কুঁকড়ে গেলেন আসমা বেগম। তার শরীর জমে বরফ হয়ে গেছে। তিনি কয়েক মুহুর্ত শরীর নাড়াতে পারলেন না। মুখ দিয়ে কোনো শব্দও বের হলো না। পরক্ষণেই কেউ যেন এই ঘরে জ্যাৎস্নার প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিল। বাইরের আলো আর ঘরে আসছে না। ঘুটঘুটে অন্ধকার পুরো ঘর। শুধু জ্বলজ্বল করে তার দিকে তাকিয়ে আছে লাল চোখজোড়া। অনেক চেষ্টার পর তার মুখ দিয়ে একটা গোঙানীর শব্দ বেরিয়ে এল। তিনি সাথে সাথেই জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন, কে? কে তুমি? ঠিক তখনি চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেল। এবার পুরো ঘরে অন্ধকারে আর কিছুই দেখা যাচ্ছে। পরমুহুর্তেই ঘরের আলো জ্বলে উঠল। মায়ের চেঁচানোর শব্দে রিফাত ছুটে এসেছে। এসেই উদ্বিগ্ন হয়ে আসমা বেগমকে প্রশ্ন করলেন, কী হয়েছে মা ? কে এসেছে? আসমা বেগম এবার হুস ফিরে পেলেন। শীতল গলায় বললেন, কেউ না! কেউ না! বোধহয় বাজে স্বপ্ন দেখেছি। রিণা আমাকে এক গ্লাস পানি দাওতো। ততক্ষণে রিণাও ছুটে রিফাতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। সে ড্রেসিং টেবিলের ওপরে রাখা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে আসমা বেগমের দিকে এগিয়ে দিলেন। আসমা বেগম এক নিঃশ্বাসে পানি শেষ করলেন। তারপর তাদের আলো নিভিয়ে চলে যেতে বলেন। রিণা তার সাথে থাকতে চাইলে তিনি বলেন, থাকতে হবে না। একাই থাকতে পারবেন তিনি। তারা আলো নিভিয়ে চলে গেল। আসমা বেগম আবার বালিশে মাথা লাগালেন। তার হঠাৎ মনে হলো তিনি একটা বড় ভুল করে ফেলেছেন। ভয়ে তার মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে। রিণা বরং এখানে তার সাথে থেকে গেলেই ভালো হতো। অন্তত আলোটা নেভাতে বলা উচিত হয়নি তার। এখন তার এতটাই ভয় করছে যে বিছানা থেকে নিচে নামার সাহসও তিনি পাচ্ছেন না। তিনি ভয়ে কাথামুড়ি দিয়ে সিলিং এর দিকে পিঠ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইলেন। এতটা ভয় তিনি তার পুরো জীবনে পাননি। কাঁথার নিচে যাওয়াতেও তার ভয় কমল না। তার মনে হচ্ছে তার বিছানার উপর এখনও কেউ মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। খাটের নিচ থেকে কখনও গোঙানোর কখনো মেয়েলি কণ্ঠের চাঁপা হাসি, কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। ভয়ে একদম শুকিয়ে গেলেন আসমা বেগম। এইসব তার মনের ভুল, অবচেতন মনের কল্পনা ভাবতেও তার ভয় কমছে না। অনেক কষ্টে ঘুম এল তার চোখে এবার। তখনকার জ্যাৎস্নার মতো এতক্ষণ ধরে তার ঘুমও যেন অদৃশ্য কেউ এতক্ষণ আঁটকে রেখেছিল।
.
.
সকাল ৭টার দিকে ঘুম ভাঙে রিণার। তার পাশে রিফাত এবং তার দুই কণ্যা ঘুমে। রিণা ফ্রেশ হয়ে, ঘর ঝাড়ু দিয়ে সকালের নাস্তা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঠিক ৮টা বাজে পত্রিকার ছেলেটি এসে পত্রিকা দিয়ে গেল। পত্রিকা পড়ার অভ্যাস রিণার নেই। পত্রিকা নিয়ে টি টেবিলে রাখতে গিয়ে পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠাতেই একটা মহিলার ছবিতে চোখ আঁটকে গেল রিণার। তার শাশুড়ি আসমা বেগমের ছবি। বড় করে শিরোনাম দেওয়া," ৫২ বছর বয়সের বৃদ্ধার রহস্যজনক গর্ভধারণ।" এইটা পড়ার সাথে সাথে রিণার মনে হলো তার পায়ের নিচের মাটি সড়ে গেছে। সে শুন্যে ভাসছে। ধপাস করে মেঝেতে বসে পড়ল। প্রথম পেজে কয়েক লাইন লেখা। বাকিটা ৯ পৃষ্ঠার ১ম কলামে। রিণা টানা পুরোটা পড়ল। অদ্ভুত সব তথ্য লেখা এতে আসমা বেগম সম্পর্কে। রিণা দ্রুত রিফাতকে ডেকে তুলে পত্রিকাটা দেখালো। সেও হতভম্ব হয়ে গেল। এই ধরণের একটা পরিস্থিতীর জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। এবার উল্টো রাগ উঠতে লাগল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপর, যারা এই খবরটা এত দ্রুত ছড়িয়েছে।
.
সকাল যখন ১১টা তখন ভয়ংকর একটা সময় পাড় করছে আসমা বেগমের পুরো পরিবার। পত্রিকার খবরটা পড়ে আশেপাশের অনেক প্রতিবেশী তাদের খোঁজ নিতে এলো, নানান আত্মীয়স্বজন একের পর এক কল দিতে শুরু করল। এতটা লজ্জা রিফাত এর আগে কোনোদিন পায়নি। লজ্জা-ক্ষোভে তার মরে যেতে ইচ্ছা করছে। আসমা বেগম এইদিকে চুপ করে তার বিছানায় মাথা নিচু করে বসে আছেন। তার মাথায় এখনো কিছুই ঢুকছে না। সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে কল করে সেই ডাক্তারকে পাওয়া গেল যিনি আসমা বেগমের চেকাপ করেছিলেন। তিনি নিজেও খবরের কাগজ পড়ে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলেন। খবরের কাগজে যা লেখা হয়েছে তার ২০ ভাগ সত্য। বাকিটা পাঠকদের আকর্ষিত করার জন্য মনগড়া কাহিনী। এই খবরটা এত দ্রুত তারা পেল কী করে তা জানেন না তারাও। তবে এইসব হাসপাতাল গুলোতে নাকি পত্রিকার লোকদের কিছু সিক্রেট দালাল থাকে। তারা এখানে ওখানে কাজ করার পাশাপাশি বিচিত্র কোনো কিছু জানতে পারলে তা পত্রিকার রিপোর্টারদের কাছে বিক্রি করেন। এটা মূলত নার্স, আয়া টাইপের লোকেরা করে। তারা যদি ধরতে পারে কে এই কাজটা করেছে তাহলে কঠিণ পদক্ষেপ নিবেন এই বিষয়ে জানান রিফাতকে। এবং যে করেই হোক আজ আবার হাসপাতালে যেতে বলেন আসমা বেগমকে নিয়ে। ঘটনাটা বেশ জটিল।
.
.
আসমা বেগম প্রথমে রাজি না হলেও পরে রিফাতের কথায় বাধ্য হলেন যেতে। হাসপাতালে আবার চেকাপ করা হলো। সেই একই ফল। ১.৫ মাস বয়সের একটা ভ্রুণ তার গর্ভে। একজন ডাক্তার বললেন, এটা ভ্রুণের জায়গায় অন্যকিছুও হতে পারে। হয়তো মানব আকৃতির টিউমার। যত দ্রুত সম্ভব অপারেশনটা করে ফেলা উচিত। আসমা বেগম কিছুই বললেন না ডাক্তারকে। রিফাতকে শুধু ইশারা করে একবার বের হতে বললেন। রিফাত ডাক্তারকে বলল, আচ্ছা, এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে কাল আমরা আবার আসব।
.
.
রিফাত বাড়িতে চলে আসে। আসমা বেগম যখন বাড়িতে ঢুকছিলেন তখন আশেপাশের বাড়ির প্রতিবেশীরা বেশ কৌতুহলী হয়ে তার দিকে চেয়ে রইল। লজ্জায় তিনি মাথা নিচু করে বাড়িতে ঢুকলেন। বাকিটা সময় বাড়ির কেউ কারও সাথে তেমন কোনো কথা বলল না।
.
.
রাত ১১টার দিকে বিষণ্ন মন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন আসমা বেগম। মাঝরাতে হঠাৎ কারও খিলখিল মিষ্টি হাসির শব্দে ঘুম ভাঙে তার। তিনি আলো জ্বালিয়েই ঘুমিয়েছিলেন কিন্তু এখন আলো বন্ধ। বিছানায় তার পাশেই একটা অপরুপ রুপবতী মেয়ে বসে রয়েছে । এতরুপবতী মেয়ে আসমা বেগম তার পুরো জীবনে আরেকটাও দেখেননি। পাতলা ঠোঁট, উচু নাক, অপরুপ মুখের গঠন। সারা শরীর ঠিকরে সাদা আলো বের হচ্ছে। আসমা বেগমের বিছানায় এতরাত্রে একটা অচেনা অদ্ভুত মেয়ে এইভাবে বসে আছে। তার বিস্মীত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি মুগ্ধ দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে চেয়ে রইলেন।
আসমা বেগম কৌতুহলী কণ্ঠে মেয়েটাকে প্রশ্ন করলেন, কে তুমি মা? কোথায় থাকো? মুহুর্তেই মেয়েটার মুখ মলীন হয়ে গেল। মেয়েটা এমন ভাব করল যেন আসমা বেগমের তাকে চেনা উচিত ছিল। সে অনেকটা অভিমানী কণ্ঠেই উত্তর দিলো, আপনি আমাকে চিনবেন না! কিন্তু আপনি এই অপারেশন করাবেন না? বাচ্চাটাকে পৃথিবীতে আনবেন! এবার আসমা বেগমের মুখ ফেকাসে হয়ে গেল। তিনি বললেন, তুমি কে? মেয়েটা শান্ত গলায় উত্তর দিল, আপনার গর্ভে যে আছে আমিই সে। . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
.
.
. . . . . চলবে . . . . .

Sagor mondol, Sheikh anika, Abdul rokon, Preonte catarge, Choyon khan, Muniya nur, RejWan Ahmed and লেখাটি পছন্দ করেছে

avatar
সাদা কাগজ
Admin
Posts : 5
স্বর্ণমুদ্রা : -138
মর্যাদা : 0
Join date : 2021-05-19
http://shadakagoj.com

তারা যদি ফিরে আসে সবে Empty Re: তারা যদি ফিরে আসে সবে

Sun Jun 13, 2021 7:29 pm
২য় এবং শেষ পর্ব
.
রাত ১১টার দিকে বিষণ্ন মন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন আসমা বেগম। মাঝরাতে হঠাৎ কারও খিলখিল মিষ্টি হাসির শব্দে ঘুম ভাঙে তার। তিনি আলো জ্বালিয়েই ঘুমিয়েছিলেন কিন্তু এখন আলো বন্ধ। বিছানায় তার পাশেই একটা অপরুপ রুপবতী মেয়ে বসে রয়েছে । এতরুপবতী মেয়ে আসমা বেগম তার পুরো জীবনে আরেকটাও দেখেননি। পাতলা ঠোঁট, উচু নাক, অপরুপ মুখের গঠন। সারা শরীর ঠিকরে সাদা আলো বের হচ্ছে। আসমা বেগমের বিছানায় এতরাত্রে একটা অচেনা অদ্ভুত মেয়ে এইভাবে বসে আছে। তার বিস্মীত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি মুগ্ধ দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে চেয়ে রইলেন।
আসমা বেগম কৌতুহলী কণ্ঠে মেয়েটাকে প্রশ্ন করলেন, কে তুমি মা? কোথায় থাকো? মুহুর্তেই মেয়েটার মুখ মলীন হয়ে গেল। মেয়েটা এমন ভাব করল যেন আসমা বেগমের তাকে চেনা উচিত ছিল। সে অনেকটা অভিমানী কণ্ঠেই উত্তর দিলো, আপনি আমাকে চিনবেন না! কিন্তু আপনি এই অপারেশন করাবেন না? বাচ্চাটাকে পৃথিবীতে আনবেন! এবার আসমা বেগমের মুখ ফেকাসে হয়ে গেল। তিনি বললেন, তুমি কে? মেয়েটা শান্ত গলায় উত্তর দিল, আপনার গর্ভে যে আছে আমিই সে।
.
আসমা বেগম কথাটা শুনে পুরোই বিস্মীত হয়ে গেলেন। কথার অর্থ কিছুই বুঝতে পারলেন না। তিনি বিস্ময়ভরা চোখে মেয়েটার মুখের দিকে চেয়ে রইলেন। মেয়েটা এবার বলল, আমি কিন্তু আপনার পরিচিত। আপনি আমাকে খুব ভালো করেই চেনেন। মনে করে বলুন দেখি? আসমা বেগম তখনও নীরব। মেয়েটা এবার একটু হেসে বলল, আমি আপনার মেয়ে হই। আসমা বেগম এবার বললেন, আমারতো কোনো মেয়ে নেই! আমার একটাই সন্তান। সে আমার ছেলে। তুমি আমার কেউ না! মেয়েটার চোখ এখন জলে ছলছল করছে। বিষাদমাখা চেহারা। কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, হ্যাঁ, নেই। কিন্তু থাকতে পারতো একটা মেয়ে। আমার মতোই দেখতে। হয়তো তার বয়স হতো ৩০। সে আপনার ছেলের মতোই আপনাকে মা বলে ডাকতো। তুমি করে বলতো। তারও ছেলে মেয়ে হতো একটা সংসার থাকতো। কত সুন্দর একটা জীবন হতে পারতো আপনার সেই মেয়েটার?
মেয়েটার এসব অদ্ভুত কথার আগা-মাথা কিছুই বুঝতে পারলেন না আসমা বেগম। তিনি শুধু কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে মেয়েটাকে বললেন, কে, কে তুমি?
.
আর তখনি ঘরের আলো জ্বলে উঠল। রিফাত উদ্বিগ্ন কণ্ঠে আসমা বেগমকে প্রশ্ন করলেন, কার সঙ্গে কথা বলছ মা? আসমা বেগম চারপাশে তাকিয়ে দেখলেন ঘরে রিফাত ছাড়া আর কেউ নেই। তিনি একটু থতমত খেয়ে গেলেন। রিফাতের কাছে পানি চাইলেন। রিফাত তাকে পানি দিল। এরপর তিনি বললেন, এমনি এমনি। নিজের সঙ্গেই সঙ্গেই কথা বলছিলাম। তুই যা ঘুমা। রিফাত করুণ সুরে বলল, তুমি চিন্তা করো না মা! সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমিতো আছি! আসমা বেগম একটু মুঁচকি হাসলেন। রিফাত চলে গেল। ঘরে আলো জ্বলছে। বিছানায় গা লাগিয়ে আসমা বেগম চোখ বন্ধ করে ফেললেন। গভীর চিন্তার জগতে প্রবেশ করতে হলো এইভাবেই যেন চোখ বন্ধ করতে হয়। কত সুন্দর চলছিল তার জীবনটা! হঠাৎই সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। একটু আগে সেই মেয়েটা কী অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলছিল তাকে। মেয়েটার এই অদ্ভুত কয়েকটি উচ্চারিণ বাক্যে আসমা বেগমের অতীতের অনেক স্মৃতি জেগে উঠতে চাইছে এখন। আসমা বেগম সেগুলোকে জাগাতে চাইছেন না। তবে যাদের জাগার কথা তারাতো জাগবেই। তার আজ একটা ওমন মেয়ে থাকতে পারতো। আসলেই কী পারতো? আচ্ছা "ও" কী ছেলে ছিল নাকি মেয়ে? হঠাৎ আসমা বেগম অতীতে হারিয়ে যান। বছর ত্রিশেক আগের ঘটনা এটি। তখন তিনি অনার্স ৩য় বর্ষের ছাত্রী। ২ বছরের প্রেম চলছিল তাদের। তিনি বেশ আধুনিক মেয়ে ছিলেন। যার সঙ্গে যার প্রেম ছিল সেও এই প্রকৃতির। তাদের প্রেম মন ছুয়ে শরীর পর্যন্ত ছুয়ে গিয়েছিল। মাঝে-সাঝেই তার প্রেমিকের সঙ্গে রাত কাঁটাতেন। তখন হোস্টেল জীবন তার। স্বাধীন জীবন। এক সময় তিনি বুঝতে পারেন তিনি অন্তঃসত্তা। তার প্রেমিককে তখন তিনি বিয়ের কথা বলেন। সে বলে এখনও তার লেখাপড়াই শেষ হয়নি। এত দ্রুত বিয়ে করা বা সন্তান আনা তাদের উচিত হবে না। গর্ভপাত করে ফেলাই ভালো। আসমা বেগমও তখন রাজি হয়ে যান। ভ্রুণের বয়স যখন দেড় মাস তখনতা গর্ভপাত করা হয়। সেই প্রেমের সম্পর্কটা আরও দেড় বছর পর বিয়েতে গড়ায়। তাদের বিয়ের এক বছর পরেই রিফাতের জন্ম। আসমা বেগম ভাবেন সেদিন যদি গর্ভপাত না করিয়ে বাচ্চাটাকে পৃথিবীতে আনার সিদ্ধান্ত নিতেন তিনি! রিফাতের বাবাকে বুঝিয়ে বিয়েতে রাজি করাতেন। সমাজের কথা চিন্তা না করতেন। সে যদি বড় হতো তাহলে আজ তার বয়স ৩০ এর কাছাকাছি হতো। সে মেয়ে বা ছেলে যাই হোক আজ তারও রিফাতের মতো একটা সংসার থাকতো। তিনি শুধু শুধু একটা প্রাণকে ধ্বংস করেছেন। পৃথিবীর আলো বাতাসের অধিকার যার সবার মতোই। কিন্তু এতবছর পর এসব তিনি ভাবছেন কেন! এই মেয়েটা বা তার গর্ভের এই অদ্ভুত সমস্যার সাথে ঐটার কী সম্পর্ক! এই মেয়েটাতো তরুণী একটা মেয়ে। এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। যখন চোখ খুলেন তখন অনেক বেলা।
.
.
রিফাতের দুঃশ্চিন্তা সারাদিনেও কমলো না। তার মনে হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব অপারেশনটা করে ফেলা উচিত। কিন্তু আসমা বেগমের অদ্ভুত আচরণে সে বেশ অবাক। রোজ রাতেই চেঁচিয়ে উঠছে নাহলে একা একাই কথা বলে যাচ্ছেন। আজ সকালে আসমা বেগম একসাথে নাস্তা করলেন। পরে চুপ মেরে ঘরে বসে রইলেন। রিফাত তার ঘরে গিয়ে অপারেশনের প্রসঙ্গটা তুলতেই তিনি বেশ রেগে গেলেন। ধমক দিয়ে রিফাতকে ঘর থেকে বের হতে বললেন। আসমা বেগমকে এমন অদ্ভুত আচরণ করতে রিফাত কখনই দেখেননি। অবশ্য না দেখারই কথা। এই রোগতো আর আগে কখনো হয়নি তার।
.
.
রাত ১০টা। আসমা বেগম সারাদিন শুয়ে বসেই কাঁটিয়ে দিয়েছেন। তিনি রাতের জন্যই যেন সারাটা দিন ছটফট করছিলেন। কোনো এক অজানা কারণে তার মনে হচ্ছে আজ রাতেও গতরাতের মেয়েটা এখানে আসবে। একটা অজানা, অচেনা মেয়ের জন্য তার মনে হঠাৎ এত মায়া উতলে উঠল কেন এটা তিনি নিজেও জানেন না। আলো নিভিয়ে নানান অদ্ভুত কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলেন তিনি। ঘুম চলেও এল।
.
.
মধ্যরাতে আবার মুখের ওপর কারও গরম নিঃশ্বাস পড়ছে বুঝতে পেরে শিউরে উঠে আসমা বেগম চোখ খুললেন। সেই ভয়ংকর আগুনের মতো জ্বলজ্বল লাল চোখজোড়া তার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে রয়েছে। জ্যাৎস্নার আলোয়, বাকি মুখটা যে একটা ওড়না দিয়ে ঢাকা তা বোঝা যাচ্ছে। আর কিছুই না। আসমা বেগম অনেকটা সাহস সঞ্চয় করে মানবীর মুখটা দেখার জন্য ওড়না ধরে টান দিলেন। ওড়না খুলে খেলো। হঠাৎ করে জ্যাৎস্নার আলোও যেন বেশ বেড়ে গেল। তিনি সেই আলোয় স্পষ্ট মেয়েটার মুখ দেখলেন। মুখটা দেখে পুরোই আঁতকে উঠলেন। এমন কুৎসিত আর বিভৎস দেখতে যে কোনো মানুষ হতে পারে তা তার ধারণার বাইরে ছিল। পুরো মুখের জায়গায় জায়গায় মাংস খসে গেছে, কিছু জায়গায় শুকিয়ে যাওয়া রক্তের কালো দাগ। চেহারার এই অবস্থা হওয়ার পরেও তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারলেন গত রাতে যে অপরুপ রুপবতী মেয়েটি তার বিছানায় বসে ছিল সেই মেয়েটি আর এই মেয়েটি একজনই। আসমা বেগম চেনা লোকের মতো উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, তোমার এই অবস্থা হলো কী করে? সেই গতরাতের মেয়েটির কণ্ঠেই মেয়েটিও পাল্টা প্রশ্ন করল, আপনি আমায় চিনতে পেরেছেন? আসমা বেগম মাথা নেড়ে উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, চিনেছি। তুমিইতো গতরাতে এখানে এসেছিলে। মেয়েটা তার ভয়ংকর চেহারায় আরও কঠিন ভাব ফুটিয়ে তুলে বলল, এই চেনা না! আপনার সাথে আমার অন্য একটা সম্পর্ক রয়েছে। আসমা বেগম কিছুই না বুঝে কৌতুহলী চোখে মেয়েটার দিকে চেয়ে রইলেন। মেয়েটা এবার কঠিন কণ্ঠে বলল, আমি আপনার মেয়ে। বলেছিলাম না গতকাল? আজ থেকে ৩০বছর আগে যার গর্ভপাত করিয়েছিলেন আপনি। আমিই সে। কথাটা শুনে আসমা বেগম রীতিমত চমকে উঠলেন। মুখ থেকে অস্ফুট শব্দ বের হয়ে এল। বিড়বিড় করে বললেন, না, এটা হতে পারে না! মেয়েটা তেজি কণ্ঠে বলল, এটাই হয়েছে এবং সবার সাথে হবে! আসমা বেগম ভয়ার্থ কণ্ঠে বললেন, তুমি কী চাও? মেয়েটা বলল, আমার অধিকার চাই! জবাবদিহীতা চাই! এই পৃথিবীর আনন্দ থেকে গর্ভপাত করে আমাকে বঞ্চিত কেন করা হলো তা জানতে চাই? আমাকে বিনা দোষে কেন হত্যা করা হলো তা জানতে চাই? আর এই ভ্রূণ হত্যার জন্য দুনিয়ার মানুষ এখনও কেন কোনো শাস্তির ব্যবস্থা করেনি তা জানতে চাই! আপনারা যদি আমাকে পৃথিবীতে নাই আনবেন তাহলে আগে থেকে কেন এর জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করলেন না? একটা প্রাণ আপনাদের কাছে এতটা তুচ্ছ?
.
কথাগুলো শুনে আসমা বেগম পুরোই থতমত খেয়ে গেলেন। তিনি কী বলবেন বা কী উত্তর দেওয়া উচিত তার মাথায় আসছে না। তিনি আবারো বললেন, তুমি আমার কাছে কী চাও? আমাকে কী করতে বলো? এর কোনো উত্তর আমার কাছে নেই। এটা আমার একটা ভুল ছিল। মেয়েটা কঠিন কণ্ঠে বলল, ভুল! একটা প্রাণ ধ্বংস করেছেন। এটা ভুল না, মহাপাপ! আপনি এতে সমস্ত নবাগত প্রাণের অপমান করেছেন। একটা প্রাণ যখন সৃষ্টি হওয়ার পর বিকশিত হওয়ার আগে মানুষের ইচ্ছায় ধ্বংস হয়ে যায় তখন প্রাণের দুনিয়ায় সে অপমানিত এবং লজ্জিত হয়। এর শাস্তি দুনিয়ায় নেই। উল্টো এটাকে আপনারা বৈধতা দিচ্ছেন। আমরা সকলে তাই ফিরে আসছি এবং আসব। যত মানুষ গর্ভপাত করেছে সকলকেই এই শাস্তি পেতে হবে শেষ বয়সে। আসমা বেগম কিছুক্ষণ কোনো কথাই বলতে পারলেন না। তারপর আমতা আমতা করে বললেন, কী শাস্তি দিবে তোমরা? মেয়েটার মুখে একটা বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠল। সে বলল, আপনারা আমাদের যে শাস্তি দিয়েছেন ঠিক একই শাস্তি আমরাও আপনাদের দিব। লজ্জা এবং অপমান হলো এই শাস্তি। আপনারা যৌবণে যেটাকে আনন্দের উৎস বানিয়েছিলেন, গর্ভধারণ ক্ষমতা নিয়ে গর্ব করে একটা প্রাণকে ধ্বংস করে অপমান করেছেন, সেই গর্ভধারণের মাধ্যমেই আপনাদের অপমানিত, লজ্জিত করা হবে। শেষ বয়সে যখন আপনারা প্রতিষ্ঠিত হবেন, গর্ভ ধারণের ক্ষমতা হারাবেন, প্রয়োজনীয়তা হারাবেন ঠিক সেই সময়ে আমরা ভ্রুণ আকারে আপনাদের গর্ভে পুনরায় প্রবেশ করব। যেই গর্ভধারণের ক্ষমতার অহংকারে আপনারা একদিন একটি প্রাণকে তুচ্ছ মনে করে ধ্বংস করেছিলেন সেই ক্ষমতাই আপনাদের অভিশাপ হবে। শেষ বয়সে গর্ভধারণের কারণে সমাজে আপনাদের লজ্জিত , অপমানিত হতে হবে। এটাই আপনাদের যৌবণের পাপের শাস্তি। আমরা সবে ফিরে আসব আবার।
.
.
মেয়েটার এইসব কথায় একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছিলেন আসমা বেগম। হঠাৎ টের পেলেন ঘরের দরজা কেউ জোরে জোরে ধাক্কাচ্ছে। তিনিতো দরজা খোলা রেখেই ঘুমিয়েছিলেন। তিনি বিছানা থেকে নেমে ঘরের আলো জ্বালালেন। মেয়েটা কই? তিনি ছাড়া ঘরে আর কেউ নেই! দরজা খুলতেই দেখলেন রিফাত আর রিণা চোখ-মুখে ভয় আর বিস্ময় মেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দরজা খুলতেই রিফাত বলল, কী হয়েছিল তোমার? কার সাথে কথা বলছিলে আর অদ্ভুত অদ্ভুত শব্দ করছিলে? কতক্ষণ ধরে দরজা ধাক্কাচ্ছি! আসমা বেগম তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাদের অবাক করে দিয়ে তাদের মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে দেন। ঘরের আলো বন্ধ করে বিছানায় বসে শব্দ করে কাঁদতে শুরু করেন। মেয়েটার কঠিন কঠিন কথা শোনার পর আসমা বেগমের মন পাপবোধ, লজ্জা, অপমানে ছেয়ে গেল। মেয়েটার জন্য তার মন এতটা খারাপ লাগছে! তিনি ভাবছেন, ইস! তিনি যদি অতীতে ফিরে যেতে পারতেন। মেয়েটাকে বাঁচাতেন।
.
.
সারারাত আর কেউ ঘুমোতে পারলো না। রিফাত চিন্তায় প্রায় পাগল হয়ে গেল। আসমা বেগম ভাবলেন তার পাপটা ভয়ংকর পাপ হয়েছে। তিনি এত বড় একটা পাপ লুকিয়ে ঠিক কাজ করেননি। অন্তত তার ছেলের কাছে এখন এগুলো বলা উচিত। সকাল হতেই রিফাতকে ডেকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন আসমা বেগম। রাতে ঘটা অদ্ভুত ঘটনার কথাও খুলে বললেন। রিফাত পুরো ঘটনা শুনে পুরোই হতভম্ব হয়ে গেল। গর্ভপাত পৃথিবীর মানুষের জন্য সাধারণ ঘটনা। এটাকে সে স্বাভাবিক ভাবেই নিল। কিন্তু গর্ভপাতের ৩০বছর পর সেই ভ্রুণের ফিরে আসা অস্বাভাবিক ঘটনা! এটাই তাকে ভাবাচ্ছে! মা, এসব কী বলছেন? তার মানসিক অবস্থাতো তাহলে ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে। তিনি কী পাগল হয়ে গেলেন? নাহলে এমন অদ্ভুত কথা কেউ বলতে পারে? এইসব কিছু বুঝতে রিফাতের অনেক দেরি হয়ে গেছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। আগে মায়ের অপারেশন টা বেশি জরুরি। রিফাত আসমা বেগমকে অপারেশনের কথা বলতেই তিনি রাগে গজগজ করতে লাগলেন। চেঁচিয়ে রিফাতকে ঘর থেকে বেরোতে বললেন।
.
রিফাত বুঝতে পারলো ভয়ংকর কিছু ঘটে গেছে আসমা বেগমের মনের ভেতরে। যা করার তা দ্রুতই করতে হবে। সে ডাক্তার সানজিদার সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে গেল। সানজিদাকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলল। সানজিদাও বেশ অবাক হলো ঘটনাটা শুনে। বিশেষ করে সেই অদ্ভুত মেয়েটার কথা শুনে। সানজিদা বলল, ওহ মাই গড! আপনার মা তো ভয়ংকর রকম মানসিক রোগে আক্রান্ত। যদিও আমি সাইক্রিয়াট্রিক না। তবুও অনুমান করে পুরো ঘটনাটার বাখ্যা বলতে পারি ।
আপনার মা আধুনিকা হলেও নরম মনের মানুষ। তাই গর্ভপাতের কারণে তার মনে সব সময়েই হয়তো একটা পাপবোধ কাজ করতো। আর তিনি এটা কাউকে বলতেও পারতেন না। বিষয়টা এতদিনে প্রকোট আকার ধারণ করেনি। কিন্তু কয়েকদিন আগে যেই জানতে পেরেছেন তিনি প্রেগন্যান্ট। তার গর্ভে এই বয়সে সন্তান এসেছে। তারপর থেকে তার সেই অতীতের কথাগুলো মনে পড়ে। তার মনে পাপবোধ জমা হয়। যেহেতু পূর্ব থেকে এই ধরণের একটা পরিস্থিতির জন্য তিনি মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না। তাই তার সবকিছু তালগোল পাকিয়ে গেছে। মাথা হয়ে গেছে এলোমেলো। অতীত , বর্তমান, মানসিক চাপ সব মিলিয়ে তিনি এখন পাগল প্রায়। তিনি নিজেই হয়তো এখন মনে করেন তার পাপের শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের এখানে যেহেতু এর শাস্তি নেই তাই তার অবচেতন মন কল্পনায় একটা মেয়েকে সৃষ্টি করেছে। যে ৩০বছর আগে মারা গেছে এবং এখন ফিরে এসেছে। এবং তিনি নিজের মনের ক্ষোভ নিজের ওপরে এইভাবে প্রকাশ করছেন। এটা একটা ভয়ংকর মানসিক রোগ বলে মনে হচ্ছে। আপনার মায়ের জন্য ভয়ংকর বিপদ অপেক্ষা করছে। আমার মনে হয় তাকে নিয়ে আপনার ভালো সাইক্রিয়াট্রিস্ট এর সঙ্গে কথা বলা উচিত। তার আগে তার অপারেশন করাটা জরুরী।
.
রিফাত বলল, তার মা কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। সানজিদা একটু নিচু স্বরে বলল, তাহলে আমাদের তাকে রাজি করাতে হবে। কালকেই অপারেশনটা করতে হবে। যে করেই হোক।
.
.
সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়ে আসে। আসমা বেগম সারাদিনে কিছুই খাননি। রিফাত তাকে বাড়বাড় অপারেশন করানোর কথা বলছে। একবার রেগে ঠাস করে রিফাতের গালে চড়ও দিলেন তিনি। কত বড় সাহস ছেলের! কত সহজে একটা প্রাণকে ধ্বংস করার কথা বলে সে! সে কী জানে একটা প্রাণ সৃষ্টি করতে সৃষ্টি কতটা বেকুল হয়ে থাকে? তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই প্রাণটাকে তিনি পৃথিবীতে আনবেন। পুর্বের পাপের কিছুটাতো প্রায়েশ্চিত্ব হবে! এই কথাটা কিছুতেই রিফাত বুঝতে চাইছে না। ঘরের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করেই শুয়ে পড়লেন তিনি। রিফাত আর রিণা কয়েকবার করে ডাকলেও তিনি কোনো সাড়া শব্দ করলেন না। একটা সময় চোখ বুজে এল তার। মাঝরাতে খিলখিল হাসির শব্দে আবার ঘুম ভাঙল । তার বিছানায় বসে আছে অপরুপ রুপবতী সেই মেয়েটি। যার শরীর ঠিকরে বের হচ্ছে সাদা আলো। আসমা বেগমকে চোখ খুলতে দেখেই মেয়েটা বলে উঠল,মা, তোমার প্রতি আমি বেজায় খুশি! তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছ এইতো অনেক। তোমাকে অনেক কঠিন কঠিন কথা বলেছি। তোমাকে ক্ষমা করা হলো।
তোমাকে আর এই পৃথিবীর গ্লানি,লজ্জা, অপমান সহ্য করতে হবে না। খুব শিঘ্রই তুমি সবকিছু থেকে মুক্তি পাবে। এই দেখও আমিও তোমার ছেলের মতো তোমাকে তুমি করে বলছি। হিহিহি!
.
আসমা বেগম মুগ্ধ হয়ে এই মিষ্টি কণ্ঠের সুর শুনলেন। আর ভাবলেন আহ! এই মেয়েটা যদি তার হতো, এই পৃথিবীতে তার আর কিসের অভাব থাকতো ? আসমা বেগম মিষ্টি হেসে মেয়েটাকে বললেন, আমি তোমাকে পৃথিবীতে আনতে চাই। আমি অপারেশন করাবো না। কথাটা শুনে মেয়েটা জোরে হেসে উঠল বলল, তোমাকে এত লজ্জা, অপমান সহ্য করতে হবে না! আমি তোমার মেয়ে না? তোমার কষ্টে আমি কষ্ট পাই। আমি তোমার সঙ্গে থাকতে চাই। এই পৃথিবীটা অনেক কষ্টের জায়গা। এখানে আমাদের থাকা কঠিন হবে। আমি তোমার স্নেহ, ভালোবাসা চাই। তাই তোমাকে আমার সাথে করে নিয়ে যেতে এসেছি।
.
কথাটা শুনেই আসমা বেগমের মুখ ফেকাসে হয়ে গেল, গলা শুকিয়ে এলো। মেয়েটা আবার বলল, আগামীকাল তোমার অপারেশন করা হবে। তখন ভ্রুণটা বের করা হবে ঠিকই। কিন্তু তুমি মারা যাবে। তারপর আমরা এক পৃথিবীর। মা-মেয়েকে আর কেউ আলাদা করতে পারবে না। তোমার পাপেরও অবসান ঘটবে। হঠাৎই প্রচণ্ড আলোতে ধাঁধিয়ে উঠল আসমা বেগমের পুরো চোখ। চোখ খুলে দেখলেন মেয়েটা শুন্যে মিশে গেছে। আসমা বেগমের চোখ লেগে এল তখনই। ঘুম ভাঙল সকালে। ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলতেই দেখলেন রিফাত দাঁড়িয়ে রয়েছে। আসমা বেগমের গতরাত মেয়েটার বলা কথা মনে হতেই তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন, না না! কিছুতেই আমি অপারেশন করাবো না! আমি ওকে পৃথিবী আনবোই। তুই চলে যা! রিফাত আশ্চর্জ জনক ঠাণ্ডা কণ্ঠে বলল, তোমার অপারেশন করাতে হবে না মা। তুমি আমাদের সাথে স্বাভাবিক ভাবে থাকো, এই অনেক। গতদিন থেকে তুমি কিছুই খাওনি। এই জুসটা খেয়ে নাও। নাহলে অসুস্থ হয়ে পড়বে। আসমা বেগম রিফাতের কথায় আস্বস্ত হলেন। হাত-মুখ ধুয়ে বিছানায় বসেই পুরো জুসটা শেষ করলেন। পরক্ষণেই বুঝতে পারলেন তার সঙ্গে ছলনা হয়েছে। কঠিন ছলনা! তার চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে। তিনি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলেন মুহূর্তেই। তিনি জানেন না তিনি এখন পৃথিবীর কাছে একটা পাগল ছাড়া আর কিছুই না। আর একটা পাগলের কথার মূল্য নেই কারও কাছে। রিফাত তাই ডাক্তার সানজিদার পরামর্শে জুসের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে তাকে ঘুম পারালেন। এছাড়া আর উপায়তো নেই! ঐতো এম্বুলেন্সের শব্দ শোনা যাচ্ছে। রিফাত জানে এখন অপারেশন করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কিছু নেই। আসমা বেগমকে এম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হলো।
.
.
ডাক্তার ইয়াসিন, ডাক্তার রিমন এবং ডাক্তার জয় ৩ জন সিনিয়র ডাক্তার মিলে মহিলাটির অপারেশন করছেন। অদ্ভুত রোগ মহিলার। ৫২ বছর বয়সে কোনোরোকম পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়াই নাকি তিনি প্রেগন্যান্ট ! হয়তো ধর্ষণ ঘটিত কোনো ব্যাপার। তাই পরিবার চেপে যাচ্ছে! মহিলাটি নাকি আবার পাগল! এসব নিয়ে ডাক্তারদের মাথা ব্যথা নেই! গর্ভপাত করানো হলো। একটা দেড় মাসের ভ্রূণ ডাক্তার ইয়াসিনের হাতে। ডাক্তার জয় হঠাৎ উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন, ওহ মাই গড! মহিলাটি মারা গেছেন! এই অপারেশনে তো তার মরার কথা না! আমরাতো কিছু ভুল করি নি। ডাক্তার ইয়াসীন ভ্রূণটার দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলতে লাগলেন, তারা যদি ফিরে আসে সবে, তোমরা কী করবে তবে? কথাটা বলেই তিনি চমকে উঠলেন। এমন একটা অর্থহীন কথা হঠাৎ তিনি কেন বললেন নিজেও বুঝতে পারছেন না!
.
.
☠☠☠সমাপ্ত ☠☠☠

Saima siddiki, Muniya nur, RejWan Ahmed, Tapos ghos, Tawhid sikdar, Masum khan, Mahmud hasan and লেখাটি পছন্দ করেছে

Back to top
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum