সাদা কাগজ
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Go down
avatar
peranhafish07
ধুমকেতু
ধুমকেতু
Posts : 10
স্বর্ণমুদ্রা : 1182
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-16
Age : 35
Location : Dhaka, Bangladesh

ঘুষখোর  Empty ঘুষখোর

Fri Jun 25, 2021 10:47 am
পর্ব-১

--সিমি, চায়ে চিনি কম, আরেকটু দাও।
--টেবিলের উপরেই তো রাখা আছে! এক চামচ ঢেলে নিতে পারো না!
শরীফ টেবিলের সামনেই চেয়ারে বসে ছিল। কাচের বৈয়মটা একদম সামনেই রাখা। বৈয়মের মুখ খুলে সাদা রঙের চিনি চায়ের কাপে মিশিয়ে নাড়িয়ে দিল সে। একটু অমনোযোগী বলে সামনে চিনির ডিব্বা থাকতেও বিষয়টা খেয়াল করেনি। শুধু অমনোযোগী-ই নয় শরীফ কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত-ও। এখন সকাল দশটা বাজে, এখন তার অফিসে রওয়ানা দেবার কথা ছিল, কিন্তু সে তা পারছে না। পুলিশ অফিসার জালালুদ্দিন আসবে বাসায়, তদন্ত করতে। তদন্তের কি আছে তা শরীফ বুঝতে পারছে না। এখন তদন্ত করে কি-ই বা পাওয়া যাবে! তবুও জালাল সাহেব আসবে। সেদিন লোকটা ফোনে বলেছিল, শরীফ সাহেব, আমি রবিবার সকাল সোয়া দশটায় আপনার বাসায় আসব। শরীফ বলেছিল, সোয়া দশটায় তো আমি অফিসে থাকব।
-- অফিসে থাকলে থাকবেন, সেটা আপনার ব্যাপার। আমার ব্যাপার হল আমি ঐ সময়েই আপনার বাসায় আসব।
এই কথা বলে জালাল সাহেব ফোন কেটে দিয়েছিল।
শরীফ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবে, পুলিশের চলন বলন কথাবার্তার মধ্যে একটা বিশেষ ভাব আছে। এরা যেন ধরা কে সরা জ্ঞান করে। শুধু এসআই জালাল-ই এমন নাকি সমস্ত পুলিশ-ই এমন সেটা বলতে পারবে না শরীফ। হাত ঘড়িতে দশটা দশ বাজে। লোকটার আসতে আর কতক্ষণ লাগবে তা কে জানে। চা খেতে খেতে সেদিনের ঘটনাটা মনে করতে চাইল সে। ওর বস অতিরিক্ত কর কমিশনার স্যারের মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষে দাওয়াত ছিল। দাওয়াত খাবার শেষে কয়েক গ্লাস বিদেশি পানি পেটে ঢেলে নেয় ওরা দুজন--ওর বউ সিমি আর ও। বিদেশি পানির ব্যবস্থা ছিল খুব গোপনীয়তার সাথে, পার্টিতে উপস্তিতি যে সে মানুষের সেটা জানার কথা নয়। কিন্তু শরীফ জেনে গেছে, কারণ সে যেমন তেমন লোক নয়, সে অতিরিক্ত কর কমিশনার সাহেবের পিএ। সে অত্যাধিক চালাক চতুর পর্যায়ের লোক। সেই রঙিন পানি গিলে বেশ খানিকটা বেসামাল কি হয়ে পরেছিল শরীফ। গভীর রাতে বাসায় ফিরে ফ্ল্যাট বাসার সামনে টল টলে পায়ে দাঁড়িয়ে ছিল বেশ কিছুক্ষণ। দীর্ঘ পাচ মিনিট ধরে কলিং বেল চাপার পর দশ বছরের কাজের মেয়েটা যখন দরজা খুলল তখন শরীফ আর শরীফের বউয়ের রাগের পারদ অনেক উঁচু পর্যায়ে উঠে গেছে। মেয়েটা ঘুমিয়ে পরেছিল, দরজা খোলার সময় চোখ ডলছিল। দরজা খোলার পর শরীফ তার উপর ডাকাতের মত হামলে পরল। চুলের গাছি ডান হাতে ধরতে ধরতে বলল, কুত্তার বাচ্চা! দরজা খুলতে এত্ত সময় লাগে? এই গালি সহ আরো কিছু কুৎসিত গালি মুখ থেকে ভীষণ বেগে নিসৃত করতে করতে বা হাতে গায়ের জোরে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুসি মারতে লাগলো। মেয়েটা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল। ছোট্ট শরীরে ভারী হাতের প্রহারে মেয়েটা অসহনীয় যন্ত্রণায় মুষড়ে পরেছিল। সেরাতে দরজা খোলার পর ঘরের মধ্যে না ঢুকে দরজায় দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে নিষ্ঠুরভাবে প্রহার করেছিল শরীফ। তার বউ সিমি কি বাধা দিয়েছিল? নাহ! সিমিও বোধ হয় এক দুটো থাপ্পড় দিয়ে থাকবে সাথে কটু বাক্য। এখন ভাল মনে পরছে না শরীফের। কাজের মেয়েটার পক্ষে যে মামলা করেছে সে আশ্চর্য ভাবে সিমির নামে কোন অভিযোগ দেয়নি। শরীফ মনে মনে বলে, ওর নামেই মামলাটা দেওয়া উচিত ছিল। ও একা কেন সাজা পাবে? সিমিও তো আমেনা অর্থাৎ কাজের মেয়েটার গায়ে কম হাত তোলেনি! বরং শরীফ-ই আমেনাকে তেমন মারধর করত না। সেদিন রাতে নেশার ঘরে ডোজটা একটু বেশি দিয়েছিল। পরে ভেবেছে, কাজটা ঠিক হয় নাই। সিমি মাঝখান থেকে বেঁচে গেল। এখন শরীফ চাইলে এস আই জালালকে সিমির অতীত অত্যাচারের রেকর্ড সম্পর্কে সম্পুর্ন জানাতে পারে। কিন্তু সেই সাহস শরীফের নেই। সিমি একটু ঝাঝালো ধরণের মেয়ে, সে সিমিকে ভীষণ ভয় খায়। নিজের কাছে অপ্রিয় কিছু ঘটলেই সে চিল্লা পাল্লা, গালিগালাজ করে আশপাশটা মাথায় তুলে ফেলে, এবং সেটা শুধু ঘরের মধ্যে নয়-- রেস্টুরেন্ট, দাওয়াত খেতে গিয়ে, আত্বীয় বাড়ি সকল জায়গায় সিমি এমন তারা ভদ্র ব্যাবহার করে। এছাড়া সিমির বাবা তদবির করে তাকে ভাল জায়গায় পোস্টিং করিয়ে দিয়েছে। এই জায়গা থেকে দুহাতে ইনকাম করে শরীফ। বলাই বাহুল্য এই ইনকামের টাকাটা সাদা নয়। এখন ঝোকের বসে সিমিকে ফাসাতে গেলে হিতে বড় ধরণের বৈপরীত্য আসবে, তাতে সন্দেহ নেই।
চা খেতে খেতে আবার ঘড় দেখে শরীফ। দশটা বিশ বেজে গেছে। চায়ের সর্বশেষ চুমুকটা ছিল একদম ঠান্ডা। ঠান্ডা চা শরবতের মতই লাগে শরীফের কাছে। তবুও সে সেটা অমনোযোগী ভাবে খেল। আজ ঠান্ডা গরম ব্যাপার না। জালাল সাহেব আসবে, কি না কি জিজ্ঞাসা করে বসে আর শরীফ কি উল্টাপাল্টা বলে বসে তার ঠিক নেই। এই বাড়িতে প্রচুর গোপনীয় ঘটনা ঘটে, যেগুলো পুলিশ জানলে কেলেঙ্কারির শেষ থাকবে না। শরীফ এখনই মনটাকে ট্রেনিং দিয়ে নিল--কি বলবে আর কি বলবে না। নিজেকে বলল, বাপ, আজ মুখ ফসকেও যেন কোন অপ্রিয় কথা বের করিস নে! ভাই আমার, আজ আমারে ডুবাস নে।
সময় যত বাড়ছে শরীফের উদ্বেগ তত বাড়ছে। প্রথম প্রথম ভেবেছিল, সামান্য এস আই, সে আবার আমার কি বালটাই ফেলবে! কিন্তু জালাল সাহেবের সাথে একবার কথা বলেই বুঝে ফেলেছে, এ সহজ পাত্র নয়।

পৌনে এগারোটায় এস আই জালালুদ্দিন আহমেদ উত্তরা ১০ নং সেক্টরের নির্ধারিত ঠিকানার বাড়িতে ঢুকে চার তলার ডান দিকের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে কলিং বেলের সুইচে হাত রাখল। একবার বেল বাজাতেই দরজা খুলে গেল। জালাল ভাবল, তাহলে দরজা খোলার জন্যে প্রস্তুত-ই ছিল, অর্থাৎ আমার প্রতীক্ষাতেই বেচারা অস্থির হয়ে আছে! কি আর করার! ফান্দে পরলে বগা তো কান্দবেই।
ফ্ল্যাটে ঢুকে একটা চেয়ার টেনে নিয়ে শরীফ মোক্তারের মুখোমুখি বসল জালাল। একটা নতুন বাসায় গিয়ে বসতে হলে অনুমতি নিতে হয়, সেটা জালাল জানে কিন্তু এখানে অনুমতি নেবার প্রয়োজন বোধ করল না। এর কারণ হল, এই লোক অপরাধী, অপরাধীর সামনে ভদ্রতা দেখানো পুলিশের শোভা পায় না। এছাড়া বাঙালি জাতি আক্ষরিক অর্থে ভদ্রতাকে দুর্বলতা জ্ঞান করে। ভদ্রতা দেখিয়ে নিজেকে দুর্বল প্রমাণের ইচ্ছা নেই জালালের। মুখোমুখি বসে জালাল বলল, কেমন আছেন, শরীফ সাহেব?
সাহেব কথাটা ব্যাঙ্গাত্মক স্বরে উচ্চারণ করল জালাল। একটা অফিসের পিএ কে সাহেব ডাকতে ওর বাধে।
শরীফ একটু কাঁপা গলায় বলল, আছি মোটামুটি।
উলটো প্রশ্নে জালাল কেমন আছে সেটা জিজ্ঞাসা প্রয়োজনীয়তা বা সাহস শরীফের হল না।
জালাল এবার সরাসরি প্রসঙ্গে চলে আসল। বলল, মেয়েটাকে এভাবে কেন মারলেন?
শরীফ চুপ করে রইল। সে যে ঐ রাতে মাতাল ছিল, সেটা পুলিশকে বলা ঠিক হবে না। তাহলে নতুন ঝামেলা তৈরি হবে। তাই সে চুপ করে রইল।
কিন্তু চুপ করে রইলে পুলিশ সেটা মানবে কেন? জালাল বলল, দেখুন, আমি ভদ্রভাবে আপনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি; আপনার বাসায় এসে গল্প করার মত করে। আমি কিন্তু চাইলে এখন আপনাকে এরেস্ট করে থানায় নিয়ে কোর্টে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করতে পারি৷ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আপনি সেটা আরামদায়ক বোধ করতেন না। তাই বলছি, যা জিজ্ঞাসা করি তার সাফ সাফ জবাব দিবেন। বলেন, কেন মারলেন মেয়েটাকে।
শরীফ ইতস্ততভাবে বলল, হঠাৎ করে হয়ে গেছে, রাগের মাথায়।
--এর আগে কখনো মারেন নি?
--জ্বি... না।-- কাপা কাপা গলায় বলল শরীফ।
--কিন্তু ডাক্তার তো বলল মেয়েটার পেটে, পিঠে ও হাতে শুকিয়ে যাওয়া পুরনো জখমের চিহ্ন রয়েছে। অর্থাৎ আপনি আগেও ওর গায়ে হাত তুলেছেন।
--না না। আমি ওর গায়ে আগে হাত তুলি নাই, এই প্রথমবার।
--তাহলে কে হাত তুলেছে?
শরীফ চুপ করে রইল। চুপ করে থেকে জালালের দিকে তাকাল। এক জোড়া ঠান্ডা চোখ তার দিকে চেয়ে আছে। সাপের মত শান্ত আর ঠান্ডা দুটো চোখ। সেই চোখের দিকে একটু তাকিয়ে থাকলে বুকের ভেতর ভয়ের বিস্ফোরণ হয়। এমনিতে জালাল দেখতে সুপুরুষ, চেহারার মধ্যে নায়ক নায়ক আকর্ষনীয় একটা ভাব আছে। নাক, কপাল, চোয়াল চোখা চোখা, চেহারার দিকে একবার চাইলে চোখ ফেরানো কঠিন, মেয়ে সম্প্রদায়ের জন্যে আরো বেশি কঠিন। কিন্তু ঘন কালো ভ্রুর নীচে এক জোড়া ঠান্ডা, শীতল চোখ দেখে শরীফের মত ঝানু ব্যক্তি কুকড়ে গুটিসুটি মেরে গেল।
জালাল ভারী কণ্ঠে ঝাঝ এনে বলল, এর আগে ওকে কে মেরেছে?
এবারো শরীফ চুপচাপ রইল।
জালাল বলল, শরীফ সাহেব, আমার চোখের দিকে তাকান।
শরীফ তার চোখের দিকে তাকালো। ঠান্ডা, ভারী দৃষ্টির দিকে চেয়ে আবারো শরীফের বুকের ভিতর ভয়ের কম্পন অনুভুত হল। অথচ এত ভয় পাবার কিছু নেই; শরীফের উপরে অনেক লম্বা হাত আছে।
জালাল আবারো বলল, আপনি কি জানেন, আমি চাইলে আপনাকে এই মুহুর্তে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যেতে পারি?
ভয় দেখিয়ে কাজ হল। শরীফ ভয়ে ভয়ে বলল, আমি তো আগে ওর গায়ে হাত দেইনি, কিন্তু..
--কিন্তু..
শরীফ দুশ্চিন্তাগ্রস্থ চোখে পাশের ঘরের দিকে তাকালো। ঐ ঘরে সিমি রয়েছে।
ব্যাপারটা জালাল বুঝল। সে বলল, আপনার স্ত্রীকে ডাকুন।
শরীফ সিমির নাম ধরে ডাকল। দুবার ডাকার পর ধীরে ধীরে ঐ ঘর থেকে সিমি বেরিয়ে আসল। শান্ত ও স্বাভাবিক চলার ভঙ্গী। হাটার ভঙ্গী ও চেহারায় কোন ভয়ের ছাপ নেই। ব্যাপারটা জালাল খেয়াল করল। মেয়েদের মন ভেঙে ফেলতে একটু সময় লাগে, তবে একবার ভাঙলেই হয়ে যায়। সিমি একটা চেয়ার টেনে নিয়ে শরীফের পাশে বসল, সরাসরি জালালের মুখোমুখি বসল না। এটা একটা কৌশল, ভাবল জালাল। জালাল তার স্বাভাবিক ভারী দৃষ্টি দিয়ে সিমির দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার হাজবেন্ড বলছে, আপনি নাকি নিয়মিত আমেনার গায়ে হাত তুলতেন? বেদম মাইর দিতেন!
কথাটা শুনে শরীফ আপাদমস্তক চমকে উঠল। সে এধরনের কিছু বলেনি। অবশ্য সেরকম ইংগিত সে দিয়েছে।
সিমি চোখ উলটে বলল, কি! শরীফ এই কথা বলেছে?
শরীফ সিমির দিকে তাকিয়ে না সূচক মাথা দোলালো। কিন্তু তাতে কাজ হল না। সিমি তার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন চোখ দিয়েই তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাই করে দেবে। সে চিৎকার করে বলল, তুমি এই কথা কেন বলেছ? ওরা আমার বিরুদ্ধে তো কোন অভিযোগ করেনি।
শরীফ বলল, আ.. আমি কিছু বলিনি।
-- তাইলে উনি জানল কি করে আমি আমেনাকে মারতাম?--গলার সমস্ত জোর একত্র করে চিৎকার করে বলল সিমি।
জালাল মুচকি হেসে গম্ভীর গলায় বলল, শুনুন, আমি চলে গেলে আপনাদের ঝগড়া ফ্যাসাদ শুরু করবেন।
সিমির দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি-ই যে প্রধান কালপ্রিট তা নিজের মুখে স্বীকার করেছেন। আপনার হাজবেন্ড কিছু বলেনি।
সিমি এই কথায় মাথা নীচু করে রইল। বুঝল, যা ভুল করার করে ফেলেছে।
জালাল এবার প্রসঙ্গ পালটে বলল, কি দিয়ে ওকে সেদিন মেরেছিলেন, শরীফ?--এবার আর 'সাহেব' শব্দটা উচ্চারণ করল না সে।
শরীফ চুপ করে থেকে বলল, হাত দিয়ে মেরেছি।
--মিথ্যা বলবেন না। আমেনার পিঠের হাড়ে চির ধরেছে।
--সত্যি বলছি, হাত দিয়ে মেরেছি।
--ডাক্তার বলেছে, আমেনাকে এমন জোড়ে আঘাত করা হয়েছে যে ওর পেটের ভেতরের অঙ্গ জখম হয়েছে, নাক মুখ দিয়ে প্রচুর রক্ত বের হয়েছে।--একটু মিথ্যা বলল জালাল। ডাক্তারি রিপোর্ট এখনো হাতে পায়নি সে। তবে এরকম হবার সম্ভাবনা রয়েছে; ডাক্তার এমনই ইংগিত করেছে।


Last edited by peranhafish07 on Tue Jun 29, 2021 7:28 pm; edited 1 time in total

Bayazid bostami, Sheikh shohid, Shanta akter, Abu aazaan, Sk shahnewaz, Md ashik, Humaira akter and লেখাটি পছন্দ করেছে

avatar
peranhafish07
ধুমকেতু
ধুমকেতু
Posts : 10
স্বর্ণমুদ্রা : 1182
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-16
Age : 35
Location : Dhaka, Bangladesh

ঘুষখোর  Empty ঘুষখোর 2

Tue Jun 29, 2021 4:18 pm
পর্ব-২

শরীফ কাতর কণ্ঠে বলল, আমি সত্যি বলছি,স্যার।
শরীফের চোখে একদম সম্পুর্ন আত্বসমর্পণ লক্ষ্য করে জালাল বুঝে নিল, সে সত্য কথাই বলছে। তবে হাত দিয়ে-ই এমন ভয়ঙ্কর ভাবে মেয়েটাকে মেরেছে অর্থাৎ ব্যাপারটা নিষ্ঠুরতার চরমে পৌছেছে। এবার জালাল সিমির দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি কি দিয়ে মারতেন?
সিমি ধীরে ধীরে বলল, তরকারি রান্না করার হাতা দিয়ে।
--বাহ! আপনি দেখছি একটু এডভান্স আছেন! হাত ব্যবহার করেন না! জিনিসটা নিয়ে আসুন।
সিমি উঠে রান্না ঘরে গিয়ে কাঠের তৈরি হাতাটি নিয়ে আসল। গ্রাম এলাকায় এই জিনিসটাকে খুন্তি বলে। জালাল সেটি নিজের হাতে নিয়ে বলল, এটা আমি জব্দ করলাম। আর আপনাদের সাথে বলা সব কথা আমি ভিডিও রেকর্ড করে নিয়েছি। পরে মুখ দিয়ে উল্টাপাল্টা কথা যেন না বের হয়।
ঠিক তখন জালালের মোবাইল ফোনটা বেজে উঠল।


জব্বার আলী আজকে অফিসে এসে বসেছেন দেড় ঘন্টার মত, অথচ কেউ তাকে চা দিয়ে যায়নি। চায়ের তৃষ্ণায় বুকটা হাসফাস করছে। বার বার বেল টিপলেন। অফিসের পিয়ন এসে চা দিল। জব্বার আলী ঠান্ডা মাথার মানুষ। সহজে রেগে যান না। পিয়ন মফিজকে বললেন, শরীফকে দেখেছিস? ব্যাটা আসেনি?
--না, স্যার। এহনো আসে নাই।
--তোকে না বলেছি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবি?
--সরি, ষ্যার।
জব্বার আলী তার 'ষ্যার' বলা শুনে মনে মনে হাসলেন। সামান্য শিক্ষিত মানুষ এই লোকটা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারে না। তার মুখে অদ্ভুত আঞ্চলিক ভাষা শুনে মজা পান তিনি। তাই রসিকতা করে মাঝে মাঝে শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে বলেন যাতে শুদ্ধ ভাষা বলার চেষ্টাতে লোকটা আরো অদ্ভুত আঞ্চলিক ভাষা বলে। তিনি এখন অবশ্য খুব একটা ইয়ার্কির মুডে নেই। অফিসের কাজের চাপ। পিয়ন লোকটাকে বললেন, শরীফকে একটা ফোন দে তো।
--ষ্যার ফোনে টাহা,,থুরি, টাকা নাই।
জব্বার আলী মুচকি হেসে বললেন, তুই যা, মফিজ।
মফিজ চলে গেল। জব্বার আলী নিজের ফোন থেকে শরীফকে কল দিলেন। কিছুক্ষণ রিং হতে ফোন ধরলো শরীফ। কাঁপা কাঁপা গলায় শরীফ বলল, হ্যালো, স্কামালিকুম স্যার।
তার গলা শুনেই জব্বার বুঝলেন কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। বললেন, কি ব্যাপার শরীফ, কোন সমস্যা?
--না,, না স্যার।
--আরে না না করছ কেন? বল কি সমস্যা।
--স্যার, বাসায় পুলিশ এসেছে। একটু ঝামেলা হয়েছে।
শরীফের নামে যে থানায় মামলা হয়েছে সেটা অতিরিক্ত কর কমিশনার জব্বার আলী জানতেন না। কৌতুহলী হয়ে বললেন, কি ঝামেলা?
--আমি এসে বলছি, স্যার।
--আচ্ছা। আসো।
জব্বার আলী একটু চিন্তিত হলেন। শরীফ লোকটা তার নামের মত শরীফ নয়। জব্বার আলীর বিশাল ইনকামের একটা বড় সহায়ক হাত হল এই শরীফ। ছলে বলে কৌশলে বড় বড় এমাউন্টের টাকার পার্টি যোগাড় করতে এর জুড়ি নেই। ও যদি কোনভাবে হাতছাড়া হয়ে যায় তো জব্বার আলীর বড় ধরণের সমস্যা হবে। নতুন কেউ আসলে আবার শিখিয়ে পরিয়ে নেওয়াটা চারটে খানিক কথা নয়। কিছুটা চিন্তিত তাকে হতেই হল।


সারারাত মোবাইল ডিউটি করেছে জালাল। মোবাইল ডিউটি মানে মোবাইল হাতে ডিউটি না। চলমান যানে করে থানা এলাকায় ঘুরে ঘুরে ডিউটি বলে এর নাম মোবাইল ডিউটি। মোটমাট রাতে ঘন্টা খানেকের মত ঘুম হয়েছে। সেই ঘুম আবার নির্জলা গভীর ঘুম নয়। গাড়িতে বসে ওয়ারলেস সেট কাঁধের ফিতায় গুজে রেখে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসেছিল। সারাটা সময় ওয়ারলেস সেটে ক্যার ক্যার শব্দ করতে থাকে। এই শব্দে ঘুমানো খুব-ই মুশকিলের কাজ। ভাসা ঘুম হয়েছে। একবার জাগা, আবার ঘুম। একে ঘুম বলা যায় না। পুলিশের জন্য এটুকু ঘুমই অনেক বড় অপরাধের ব্যাপার হয় যদি তাকে ওয়ারলেস-এ সিনিয়র অফিসার ডেকে বসে। আবার যদি ডিউটি এলাকায় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যায় তাহলে তো কোন কথাই নেই।
সকাল সাতটায় ঘুম ভেঙ্গে গেলে এদিক ওদিকে তাকিয়ে জায়গাটা কোথায় মনে করার চেষ্টা করল। জায়গাটা কোথায় বুঝতে পেরে আবার চোখটা বন্ধ করল। চোখ বন্ধ করলেও এবার ঘুম আসলো না। বিক্ষিপ্ত মন বিবিধ বিষয় নিয়ে চিন্তা শুরু করে দিল। এখন আর ঘুম আসবে না। থানা ব্যারাকে গিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে শরীরটা কচলে কচলে, দলাই মলাই করে গোসল সেরে নিয়ে দু ঘন্টা ঘুমাতে হবে। মাত্র দুঘন্টা ঘুমিয়ে উঠে যেতে হবে। এগারোটার দিকে আবার বের হতে হবে। থানায় জিডি বইয়ে নোট লিখে তদন্তের কাজে নারায়ণগঞ্জ যেতে হবে। কাজের মেয়ে নির্যাতন কেসের কেসটাতে ঐ মেয়ের মায়ের সাথে কথা বলতে হবে। হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে মেয়েটাও এখন নারায়ণগঞ্জ ওর মায়ের সাথে আছে। মা আর মেয়ের সাথে কথা বলাটা দরকার। ফোনে কথা বলা যায় কিন্তু ফোনে কথা বলে সবকিছু বোঝা যায় না।মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বললে তার ভিতরটা জানা সম্ভব হয়। জালাল মা মেয়েকে আসতে বললে তারা আসতে বাধ্য। কিন্তু সে অসুস্থ মেয়েটাকে কষ্ট দিতে নারাজ।
চায়ের তৃষ্ণা পেতে চোখ বন্ধ রেখেই ড্রাইভারকে বলল, কুতুব ভাই!
--জ্বি, স্যার।
--চা খাবেন নাকি?
--না স্যার, চা খাইলে রুমে গিয়া ঘুম আইবো না।
--আমি খাব, চায়ের দোকানের সামনে যান।
গাড়ি চায়ের দোকানের সামনে নিয়ে দাঁড় করালো কন্সট্যাবল কুতুবউদ্দিন। জালাল একটা লাল চায়ের অর্ডার দিল। ড্রাইভারকে রুটি আর কলা খেতে অনুরোধ করলে সে তা নিল। পকেট থেকে প্যাকেট বের করে একটা সিগারেট ধরালো জালাল। ও ব্যান্সন সিগারেট খায়।
দোকানদার চা দিয়ে গেলে কাপটা হাতে নিয়ে একটা চুমুক দিল জালাল। তারপর পাশ থেকে একটা রোগা-সোগা লোক এসে জালালকে বলল, স্যার, একটা কথা আছে।
জালাল ঘুরে তাকালো। লোকটাকে চেনা মনে হল না। তবে থানার এই বিটের অফিসার বলে মোটামুটি অনেকেই তাকে চেনে। বিট হচ্ছে থানা এলাকা কয়েকটা এলাকায় ভাগ করে দেওয়া। এক একটা ভাগকে এক একটা বিট বলে। এই লোকটা তাকে কোনভাবে চিনে থাকবে। জালাল বলল, কি বলবেন বলেন।
--স্যার, একটু সাইডে আসেন।
জালালের চেহারায় সামান্য বিরক্ত দেখা গেল। সারারাত জেগে থেকে এখন যে কোন ব্যাপারে কথাবার্তা বলতে বিরক্ত লাগার কথা। তবুও কি মনে করে কয়েক কদম এগিয়ে একটু সাইডে গেল।
লোকটা বলল, স্যার, আমি খুব বিপদে পরছি।
--কি বিপদ?
--পাঁচ বছর ধরে একটা কোম্পানীতে আমি ডিজাইনার হিসেবে চাকুরি করছি। কোম্পানিটা ভালোই চলে। গত তিন মাস ধরে আমাকে বেতন দেয় না আর একটা বিল নিজের পকেট থেকে শোধ করেছিলাম। সেই বিলের টাকাও দিচ্ছে না। সব মিলিয়ে দুই লাখের মত টাকা। এখন চাইলে ওরা আমাকে ভয় দেখায়, থানায় যাবার কথা উঠলে আমাকে মারার হুমকি দেয়।
জালাল বিরক্ত হয়ে বলল,আমাকে বলছেন কেন? আমি কি করতে পারি?
--স্যার, আমার মেয়েটা ভার্সিটিতে ভর্তি করেছি, ভর্তি ফি সমস্তটা দিতে পারিনি। স্যার, কিছু করেন।
--আমি কি করব? কোর্টে গিয়ে মামলা করেন। টাকা পয়সার ব্যাপারে পুলিশ কি করতে পারে?
--স্যার, আমি জানি ব্যাপারটা। কোর্টে গেলে দৌড়াদৌড়ি আর উকিল বাবদ আমার দেড় লাখ টাকা চলে যাবে। আর টাকাটা পাইতেও দেরি হবে। স্যার, একটা উপায় করেন। স্যার, আমার পরিবারের অবস্থা ভাল না; স্ত্রী খুব অসুস্থ। টাকাটা আমার খুবই দরকার।
--ভয় ভীতি যে দেখায় তার প্রমাণ রাখছেন?
--আছে স্যার, কল রেকর্ড আছে।
--আচ্ছা, থানায় গিয়ে জিডি করেন আগে।
--স্যার, থানায় ওদের পরিচিত লোক আছে। আমি গেলে যদি জেনে যায় তো আমার বিপদ হতে পারে।
--কোন বিপদ হবে না। যে কুত্তা বেশি ঘেউ ঘেউ করে সে কামড় দিতে ভয় পায়।
লোকটা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, স্যার, জিডি করতে গেলে কি আপনার কথা বলব?
--বলবেন। আমি বলে রাখব। প্রমাণপত্র সহ রাতে আমার সাথে দেখা করবেন।
--কিসের প্রমাণ?
--আপনি যে টাকা পান তার প্রমাণ। প্রমাণ নেই কোন? বিলের কথা বললেন যে!
--আছে, স্যার।
--আচ্ছা যান।
লোকটা গেল না। দোকানে গিয়ে চা আর পারুটি কলার বিল দিতে গেল। দোকানদারকে চোখের ইশারায় বিল নিতে নিষেধ করল জালাল। লোকটা অনেক সাধাসাধি করেও দোকানদারকে বিল দিতে পারল না। শেষ মেষ না পেরে জালাল কে এসে বলল, স্যার, বিলটা আমি দেই।
--আমার খাবারের বিল আপনি দিবেন কেন?
--এমনি!
--না। দিতে হবে না। আপনি যান। রাতে দেখা করবেন।
চেহারা দেখে বোঝা গেল লোকটা অখুশি হল। জালাল তার মুখের দিকে চেয়ে উদাস দৃষ্টিতে চায়ের কাপে চুমুক দিতে থাকল। এদেশের মানুষের একটা বিশ্বাস তাড়ানো যাচ্ছে না। পুলিশকে খাওয়াতে হবে, টাকা দিতে হবে, নইলে কাজ উদ্ধার হবে না।

আমেনা নামের ছোট মেয়ে আর তার মায়ের খোঁজে জালাল নারায়ণগঞ্জ এসেছে। ঘরটা একটা বস্তির মধ্যে। ঘরটা মাঝারি ধরনের, লাগোয়া একই ধরনের অনেক গুলো ঘর। এক জায়গায় ছ'টা টয়লেট আর তিনটা গোসলখানা। রূপগঞ্জ থানায় এমন জায়গার অভাব নেই। একসাথে বহু পরিবারের বাস। জালাল পুলিশ পোশাকে যায় নি। সাথে করে পিএসআই জিয়াকে নিয়ে এসেছে। জিয়াও সিভিল পোশাকে এসেছে। রেহেনা বেগম নাম জিজ্ঞাসা করাতে একটা বার বছরের বালক রেহেনা বেগমের অর্থাৎ আমেনাদের ঘর দেখিয়ে দিল। জালাল আর জিয়া ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল, প্লেইন টিনের দরজায় হাত দিয়ে গুতো দিল। ঝন ঝন শব্দ হলে একজন পয়ঁত্রিশ বছর বয়সী নারী দরজা খুলে দরজায় দাড়ালো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে জালাল আর জিয়ার দিকে চেয়ে রইল। জালালের রূপবান চেহারা দেখে মহিলা কিছুটা সহজ হল, কিন্তু কোন কথা বলল না। জালাল-ই প্রথম কথা বলল, আমি ঢাকা থেকে এসেছি, পুলিশের লোক। থানাতে আপনি একটা মামলা করেছেন। আমি সেই ব্যাপারে একটু কথা বলতে এসেছি।
মহিলা শুধু বলল, আইচ্ছা! আহেন। ভিতরে আহেন।
ভেতরে নিয়ে গিয়ে চৌকি দেখিয়ে বসতে বলল ওদের। ঘরে তেমন কোন আসবাব নেই।একটা চৌকি, একটা টেবিল, একটা প্লাস্টিকের জলচৌকি। টেবিলের উপর কিছু বাসন ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বিছানার এক পাশে কাথা মুরি দিয়ে একটা ছোট্ট মেয়ে শুয়ে আছে৷ জালাল আন্দাজ করল, এই বোধ হয় আমেনা। জালাল বিছানায় বসতে বসতে বলল, এই কি আপনার মেয়ে?
--হ।
--কয় ছেলেমেয়ে আপনার?
--দুই ছেলে, এক মেয়ে।
--ছেলেরা কি করে?
--বড়ডা বাসের হেলপার, ছোডডা স্কুলে পড়ে। বয়স কত ওদের?
--বড়ডার বয়স পনের হবে, আর ছোডডা বারোতে পরল।
--মেয়েকে কেন ঢাকায় কাজ করাতে পাঠালেন আপনি?
--কি করুম? এক পোলার ইনকামে তো সংসার চলে না। আমিও মাইনষের বাড়িত কাম করি তয় এ দিয়ে চলে না। মাইয়া পড়তে চাইছিল, কিন্তু আমি পারি নাই।
--পড়ানো উচিত ছিল!
--হ্যারা তো কইছিল আমার মাইয়ারে পড়া লেহা শিহাইবো।
--শেখায় নাই?
--না। ভরতি করে নাই।
--বেতন কত দিত।
--বেতন তো দিত না। তয় মাঝে মাঝে বেশ কিছু টাহা দিছে আমারে; বিশ হাজার করে দুই বার। তবে আমারে কইছিল শুধু খাওন দিবো, আর মাইয়াডারে পড়ালেহা করাই দিবো। চল্লিশ হাজার টিহা দিল দেইহা আমি আর আপত্তি করতে পারি নাই। খাইয়া তো বাচন লাগবো! তারপর না পড়ালেহা!
--তা কতদিন কাজ করল?
--তা আন্দাজ দশ মাসের মত অইব।
-- ও কি ঘুমায়? ডাকা যাবে?
রেহেনা মেয়েকে ডেকে তুলল। ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসল মেয়েটি। নিস্পাপ চেহারা। জগতের কালো রঙ এখনো এই মেয়ের অন্তরে লাগেনি। তার আগেই জগতের নিষ্ঠুরতম রঙ রাঙিয়ে দিয়ে গেল মেয়েটিকে। জালাল মায়া মায়া চোখে মেয়েটিকে দেখলো। স্নিগ্ধ চোখের দৃষ্টি, মিষ্টি চেহারার একটা মেয়ে। চেহারায় দারিদ্র‍্যের ছাপ আছে, কিন্তু একটা মায়াবী ভাবও অধিকতর স্পষ্ট। জালাল বলল, মা, কেমন আছ?

Israt zahan, Smi jewel, Md ayub ali, Md halim gazi, Bone amin, Ornesha muni, Sabbir rahaman and লেখাটি পছন্দ করেছে

avatar
peranhafish07
ধুমকেতু
ধুমকেতু
Posts : 10
স্বর্ণমুদ্রা : 1182
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-16
Age : 35
Location : Dhaka, Bangladesh

ঘুষখোর  Empty Re: ঘুষখোর

Mon Jul 05, 2021 10:49 pm
পর্ব-৩

চোখ মুছতে মুছতে উঠে বসে আমেনা বলল, ভাল আছি। আপনি ভাল আছেন, আঙ্কেল?
মেয়েটার রিন ঝিন ধরণের সুরেলা কণ্ঠের স্পষ্ট উচ্চারণে বাংলা শুনে অবাক হয়ে গেল জালাল। সে বলল, তুমি তো অনেক ভাল করে কথা বল,মা।
--ধন্যবাদ, আঙ্কেল।
--ধন্যবাদ, কেন?
--টিভিতে দেখেছি। কেউ প্রসংশা করলে তাকে ধন্যবাদ দিতে হয়।
-- ও আচ্ছা। তা মা তুমি ঢাকা থেকে কেন চলে এলে?
--ঢাকার মানুষ ভাল না।
--কেন? কেন? ঢাকার মানুষ ভাল না কেন?
--ওরা মারে।
--তোমাকে মেরেছে?
--অনেএএএক মেরেছে!
--কোথায় কোথায় মেরেছে?
--আমার পিঠে মেরে ব্যাথা করে দিয়েছে। পেটে, বুকে মেরেছে।
--ব্যাথা এখনো আছে?
--হ্যা, আমি একটু হাটলেই ব্যাথায় মাথা ঘুরায়৷
--মা, তোমাকে কি ওরা শুধুই মারত? আদর করেনি কখনো?
--আন্টি প্রায়ই মারত। আবার আমাকে মাঝে মাঝে বিছানায় নিয়ে জড়িয়ে ধরত, বুকে চাপ দিত। আমার কেমন দেন ঘেন্না ঘেন্না লাগতো!
--শুধু আন্টি? আর আঙ্কেল?
--আঙ্কেল কোনদিন ওভাবে আদর করেনি। শুধু একদিন মারছে, একদিনই। খুব মারছে।
জালাল আমেনার মা রেহেনার দিকে তাকিয়ে দেখল তার চোখ বড় বড় হয়ে আছে। চোখ বড় বড় হবারই কথা। একটা মেয়েকে নিয়মিত মারত আবার বিছানায় নিয়ে জড়িয়ে ধরে বুকে চাপ দিত, তাও আবার একজন মহিলা! এটা খুব ভাল লক্ষ্মণ নয়। জালাল এই ব্যাপারে কথা না বাড়িয়ে মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি এই মারের বিচার চাও, মা?
--বিচার চাই, আমার অনেক কষ্ট হইছে। --দুর্বল গলায় কথাটা বলে আমেনার মাথাটা নিচের দিকে কাত হয়ে গেল। বোঝা গেল সে খুব ক্লান্ত।
জালাল উঠে দাঁড়ালো। বাইরে বেরিয়ে এসে থামল। তার পেছন পেছন রেহেনা এসেছে। জালাল পেছনে না তাকিয়েই প্রশ্ন করল, আপনি কি চান?
জিয়া চমকে গেল। জালাল বুঝলো কি করে রেহেনা জালাল স্যারের পেছনে এসেছে। চমকে গেলেও সে মুখে কিছু বলল না। পরে স্যারকে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া যাবে।
রেহেনা জালালের প্রশ্নের উত্তরে বলল, স্যার, আমি মামলা করতে চাই নাই। মামলায় নাকি ম্যালা খরচা। আমি ট্যাহা কই পামু? আমার ছোট ভাইয়ের বউ জোর কইরা আমারে দিয়া মামলা করাইছে।
--ভাল করছে। এখন বলুন, আপনি কি চান?
--কি আবার চামু? আমার ট্যাহা না গেলেই অইল। বড়লোক মাইনষের লগে জেদাজেদি কইরা আমরা কি পারমু?
জিয়া খেয়াল করল জালালের কোনাকার চোঁয়াল শক্ত হয়ে গেল।
একদম ঠান্ডা কণ্ঠে জালাল রেহেনাকে জিজ্ঞাসা করল, আমেনার চিকিৎসার খরচ কে দিয়েছে?
--আমার বড় পোলায়।
--আচ্ছা। আমরা তাহলে আসি।
--স্যার, দেইহেন, আমরা যেন বিপদে না পরি।
জালাল এই প্রশ্নের উত্তর দিল না। গট গট ভঙ্গীতে বেরিয়ে এল জায়গা থেকে। পেছন পেছন এল পিএসআই জিয়া।
বাসে বসে দুজনই চুপচাপ, কোন কথা নেই৷ জিয়া শুধু বলল, স্যার, তখন মহিলা যে আপনার পিছু পিছু আসলো সেটা আপনি না তাকিয়ে বুঝলেন কি করে?
জালাল মুখে একটা রসহীন হাসি ফুটিয়ে বলল, তুমি তদন্তকারী কর্মকর্তা। এমন হবে তোমার ব্যাক্তিত্ব যাতে মানুষ তোমাকে অনুসরণ করতে বাধ্য হয়।
--জ্বি, স্যার।

--------
শরীফের অফিসে আসতে আজ দেরি হয়ে গেছে। স্যারের দুপুরের খাবার নিয়ে একবারে অফিসে ঢুকল। জব্বার আলী শরীফকে দেখে ভুত দেখার মত চমকে গেলেন। একদিনের ব্যাবধানে শরীফের চেহারা শুকিয়ে এমন কিসমিসের মত হয়ে যাবে সেটা কল্পনাও করা যায় না। হাত মুখ আগেই ধুয়ে এসেছেন। খাবার প্লেটে তুলে নিতে নিতে তিনি বললেন, কি হয়েছে তোমার?
মাথা নিচু করে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, স্যার, সেদিন আপনার বাড়িতে যে পার্টি হল...
--পার্টি হল?
--ওখান থেকে একটু পান করছিলাম।
--তো? এতেই পুলিশি ঝামেলায় জড়িয়ে গেলে?
--না, স্যার। রাতে মাতাল হয়ে বাসায় গিয়ে কাজের মেয়েটার গায়ে হাত তুলি, কয়েকটা চওড় থাপ্পড় দিয়ে ফেলি। মেয়েটার মা থানাতে আমার নামে মামলা দিয়েছে।
--হাত তুললে! বেশি গুরুতর জখম নাকি?
--তা প্রায়, মোটামুটি গুরুতর।
--আরে ব্যাপার না। আমি ঝামেলা মিটিয়ে দিচ্ছি। এসব কেইস ধোপে টেকে না।
খাওয়া শুরু করার আগে তিনি শরীফকে জিজ্ঞাসা করলেন, খেয়েছ দুপুরে?
--স্যার, আপনি খান। আমি একটু পর খাবো।
--আরে খেয়ে নাও। খেয়ে আসো। তোমার সমস্যার সমাধান করে দিচ্ছি।
শরীফ খেতে চলে গেল। এই অফিসে একটা রান্নার জায়গা আছে। একজন মহিলা নিয়মিত দুবেলা এসে রান্না করে দিয়ে যায়। সেখানেই অফিসের সবাই খায়। আর জব্বার আলীর খাবার পিয়ন বাসা থেকে নিয়ে আসে। আজকে শরীফ নিজে গিয়ে বাসা থেকে খাবার নিয়ে এসেছে।

-------
আব্দুল হামিদ লালবাগ জোনের পুলিশ উপ-কমিশনার। দুপুরে খেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন। মাত্র সিগারেট ধরিয়ে টান দিয়েছেন তখন দেখলেন, মোবাইল স্ক্রীনে আলো জ্বলে উঠল। এই সময় মোবাইল সাইলেন্ট মুডে রাখেন। তবে সাইলেন্ট থাকলেও দেখলেন কে ফোন করেছে। অতিরিক্ত কর কমিশনার, বন্ধু জব্বার আলীর ফোন। একবার ভাবলেন ফোন ধরে কথা বলবেন। আবার ভাবলেন, থাক, পরে কথা বলা যাবে। তিনি বহু আগে থেকে এই দোটানায় ভোগেন। তবে কি মনে করে ফোনটা ধরে বসলেন।
--হ্যালো, জব্বার।
--হ্যা,হামিদ। কেমন আছ, বন্ধু?
--আছি ভাল, তুমি কেমন আছ?
--আমিও আছি, যেমন থাকা যায়।
--আরে তা কেন? তোমরা কর বিভাগে সকাল বিকাল অফিস কর। তোমরা আবার খারাপ থাকবে কেন?
--আরে! এদেশে খুব ভাল আছে কে বলত?
--তা অবশ্য ঠিক। তা কি ব্যাপার বলত?
--কেন? ব্যাপার ছাড়া কি ফোন করা যাবে না, নাকি?
--তা না। আমরা পুলিশ! আমাদের কাছে কেউ ব্যাপার ছাড়া তেমন একটা ফোন টোন করে নাহ।
--হুম। আমিও অবশ্য একটু কাজেই তোমাকে বিরক্ত করছি।
--আরে না না! কি যে বলো। বিরক্ত আর কি। কাশো দেখি একটু ঝেড়ে।
--আর বলো না। আমার পিএ শরীফ আছেনা?
--হ্যা। চিনি তোমার পিএ কে। কি করছে সে?
--কাজের মেয়েকে মারছে। এখন পুলিশের ঝামেলা হয়ে গেছে।
--মামলা হয়েছে?
--হ্যা। হয়েছে।
--আচ্ছা। সমস্যা নেই। তুমি মামলার নাম্বার আর তদন্তকারী কর্মকর্তার নাম আমাকে মেসেজ করে পাঠাও, আমি উত্তরা ডিসির কাছে ফোন করে বলে দেব।
--ঠিক আছে, বন্ধু। দিচ্ছি।
--হ্যা। আর এদিকে আসো একদিন। আড্ডা দেওয়া যাবে।
--দেখি আসব এক শুক্তবারে।
--হুম। আমাদের কিন্তু শুক্রবার টুক্রবার নেই কোন, প্রতিদিন অফিস।
--তাহলে কবে আসব বল?
--আচ্ছা। সমস্যা নেই। যেদিন আসবে তার দুয়েকদিন আগে জানাইয়ো, তাহলেই হবে।
--আচ্ছা। ঠিক আছে। ভাল থেকো।
--ঠিক আছে। রাখলাম।
ফোন রেখে হামিদ উত্তরা ডিসির কাছে ফোন করল। সে এক ব্যাচ সিনিয়র, কিন্তু সম্পর্ক ভাল। তাকে বিষয়টা অবিহিত করল। আশ্বাস না পেলেও ব্যাপারটা সুরাহা করার চেষ্টা করবে উত্তরা ডিসি।

--------
রাত নটার দিকে। কামাল নামের লোকটা থানার সামনে এসে জালালকে ফোন দিলে জালাল আধা ঘন্টার মধ্যে বের হল। যাবার সময় একজন কন্সট্যাবল সাথে নিয়ে গেল।
কামাল হোসেন সকাল বেলা টাকার ব্যাপারে জালালের সাথে আলাপ করেছে। জালাল তাকে কোন কথা দেয়নি কিন্তু তার মন বলেছে লোকটার জন্যে কিছু করতে হবে। কোর্ট কাচারি করে টাকা পাবে কিন্তু তাতে খরচের ঝামেলা বেশি আবার সময়ও অনেক বেশি লাগে। বের হবার আগে অস্ত্রটা হাত ব্যাগে নিয়ে নিল।

চায়ে চিনি বেশি হলে সেটা শরবতের মত হয়ে যায়। তাই চিনি কম দিয়ে এক কাপ চায়ের অর্ডার করেছে কন্সট্যাবল খালেক। আয়েস করে চা খেয়ে একটা বিড়ি ধরাবে। চা আর সিগারেট একসাথে খেলে কেমন দেন একটা অস্বস্তি বোধ কাজ করে। খালেক চায়ে চুমুক দিতে দিতে জালাল আর কামাল নামের লোকটার মধ্যকার কথপোকথন শুনছে। জালালকে গত দুই বছর ধরে দেখছে। খালেকের কাছে জালালের চেয়ে খাঁটি লোক আর নেই। বহু এস আই-এর সাথে কাজ করেছে খালেক কিন্তু এতটা দমওয়ালা অফিসার আর কোথাও দেখেনি। চেহারা একদম নায়কের মত, দেখলেই কথা বলতে ইচ্ছা হয়। আবার যখন রাগ করে কথা বলে, কণ্ঠ শুনে ভয়ে ভিরমি খাওয়া লাগে৷
চায়ের দোকান থেকে একটু দূরে থেকে লোকটার সাথে আলাপ করছে কামাল। কামাল লোকটা জালালকে বলল, এখনই যাবেন?
জালাল বলল, গেলে কি সমস্যা?
--এখন ওর কাছে টাকা নেই।
--কেন?
--প্রতিদিন লাভের টাকা ব্যাংকে রেখে দেয়। খরচের টাকা অফিসে রাখে৷
চায়ে চুমুক দিতে দিতে জালাল বলে, তাহলে আপনি কাল ঠিক তিনটার সময় আসেন।
কামাল বলে, আচ্ছা, ঠিক আছে।
কথা না বাড়িয়ে খালেককে ডেকে থানায় ফিরে আসে জালাল।

------
শুয়ে শুয়ে সিগারেট খাওয়া ভাল না। সিগারেট এমনিতেই খারাপ জিনিস, শুয়ে শুয়ে খেলে সেটা ফুসফুসে আরো খারাপ প্রভাব ফেলে। জালাল সেটা জানে। তবুও প্রতিদিন রাতে শুয়ে শুয়ে একটা সিগারেট টানে। এই সিগারেটটা টানতে টানতে বহু ধরণের ভাবনা আসে মনে। আজ ভাবছে মানুষের রকমভেদের ব্যাপারটা। পৃথিবীতে মানুষ বহু প্রকারের হয়ে থাকে। চেহারা যেমন ভিন্ন ভিন্ন, প্রতিটা মানুষের মনের গঠনও তদরূপ ভিন্ন ভিন্ন। জালাল মানুষের ভিন্ন ভিন্ন রূপ দেখতে ভীষণ ভালোবাসে। অবাক হয়ে সে লক্ষ্য করে, প্রতিটা মানুষই তার আসল চেহারার উপর একটা আবরণ দিয়ে রাখে। ও যাদের নিয়ে কাজ করে, প্রথম সুযোগেই তাদের চরিত্রের উপরের আবরণটা খুলে ফেলে। আবরণ ছাড়া সেসব মানুষের চেহারা দেখতে পোশাক বিহীন মানব শরীরের মত দেখায়। আজ সিমি নামের যে মহিলাটার সাথে ওর পরিচয় হয়েছে সে একটা অদ্ভুত ধরণের মহিলা। কাজের মেয়েকে শারিরীক ভাবে নির্যাতন করে আবার সেই মেয়েকে বিছানায় নিয়ে গিয়ে জড়াজড়ি করে। কত অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য থাকে মানুষের! জালাল যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত তখন মাস্টার্সে ওদের একটা কোর্স ছিল। কোর্সটার নাম ছিল 'জেন্ডার স্টাডিজ'। এই কোর্স পড়ে প্রথমে ও জানতে পারে পৃথিবীতে শুধু তিনটা লিঙ্গই নয়, বরং দশ বা ততোধিক লিঙ্গের মানুষ থাকতে পারে। লেসবিয়ান সেই প্রকার গুলোর মধ্যে অন্যতম। লেসবিয়ান অর্থ মেয়ের সাথে মেয়ের সঙ্গম। সেটা অদ্ভুত হলেও বাস্তবে বহু সংখ্যায় রয়েছে। সিমি নামের এই মহিলা সম্ভবত লেসবিয়ান এবং স্যাডিস্ট ধরণের। সে মেয়ে মানুষকে কামনা করে এবং মেয়েদেরকে শারিরীক ভাবে নির্যাতন করে যৌন তৃপ্তি লাভ করে। যৌনতার চাহিদা বহুবিধ ধরনের হয়ে থাকে। কেউ কেউ অন্যকে অত্যাচার করে সুখ পায়, কেউ আর্তচিৎকার শুনে আনন্দ পায়। এই সকল আনন্দের উৎস একই--যৌনানুভুতি। এই মহিলার ব্যাপারে জালালের ধারণা সত্য নাও হতে পারে। তবে সত্য হবার সম্ভাবনা প্রবল। জালালের এখনকার কাজ এই সত্যটা জানা।
এই কেসটা খুব বেশি কঠিন কিছুই না। ডাক্তারি সার্টিফিকেট দিয়ে চার্জশিট দিলেই আসামীর সাজা হয়ে যাবে। ভিকটিমের জবানবন্দি সাথে যোগ করতে হতে পারে। কিন্তু জালাল এত সহজে তাদের সাজা দিতে চায় না, সে চায় আরো বেশি কিছু। মানুষের মনের কুৎসিত দিক খুড়ে খুড়ে বের করতে যত আনন্দ, অন্য কোন কাজে এতটা আনন্দ নেই। শরীফ নামের লোকটা খুব ফিচলে ধরণের। প্রচুর অবৈধ টাকার মালিক। সেই অবৈধ টাকার ভাগ কিছুটা অন্য কেউ পেয়ে গেলে তাতে সমস্যা হবার কথা নয়। সেই অন্য কেউটা পুলিশ হলেই বা সমস্যা কি? পুলিশ দেশের জন্যে কম পরিশ্রম করে না।
জালাল খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছে, শরীফ বউয়ের নামে প্রচুর সম্পত্তি কিনেছে। জালালের ধারণা সেটা বাধ্য হয়ে করেছে। কেন বাধ্য হয়েছে সেটা জানা দরকার। সেটা জানলেই অনেক প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে। এই ছোট কেস নিয়ে জালাল এত ভাবছে, এর কারণ হল, সে ছোট কেস থেকে বড় কাজ করবে। বড় কাজটা কি সেটা পরে জানা যাবে। জালালের চোখে ঘুম নামে। ঘুম ঘুম চোখে ঘোরের মধ্যে ভাবে ঘুম আর মৃত্যু কি আলাদা? মৃত্যু কি ঘুমের মতই শান্ত?
এত ব্যস্ততার মধ্যে মাঝে রাতে ঘুমোনোর আগে মৃত্যুর কথা মনে পরে। এছাড়া মৃত্যুর কথা ভাবার সময় কই?

Md ovi, Mahfuj hasan, Md najmul hosen, Md ruman molla, Aliya Chowdhury, Md akidul islam, Md khoka mia and লেখাটি পছন্দ করেছে

avatar
peranhafish07
ধুমকেতু
ধুমকেতু
Posts : 10
স্বর্ণমুদ্রা : 1182
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-16
Age : 35
Location : Dhaka, Bangladesh

ঘুষখোর  Empty Re: ঘুষখোর

Sat Jul 10, 2021 3:28 pm

পর্ব-৪
বিশাল বড় ফ্ল্যাটে সিমি আর শরীফ বাস করে। তাদের কোন ছেলে মেয়ে হয়নি। ছেলে মেয়ে হবার কোন সম্ভাবনাও নেই। একটা কাজের মেয়ে ছিল, সে এখন নেই, মার খেয়ে ভেগে গিয়েছে। মেয়েটা খুব শান্ত এবং ভদ্র ছিল। কাজে কর্মে সুক্ষ্ম না হলেও সব কাজ করতে জানতো। আমেনাকে দিয়ে শুধু কাজই করাতো না সিমি, মাঝে মাঝে তাকে দিয়ে শরীরটা টিপিয়ে নিত, মালিশ করিয়ে নিত। আর যখন তার শরীরে কামের জোয়ার আসত তখন আমেনাকে বিছানায় নিয়ে আনন্দের জোয়ারে ভাসতে চাইত। এতে আমেনার দম বন্ধ হবার মত কষ্ট হলেও তাতে পিছপা হত না সিমি। মাঝে মাঝেই বিনা কারণে মনের সুখে মেয়েটাকে পেটাতো। মেয়েটার কাঁদতে দেখলে বুকের মধ্যে সুক্ষ্ম এবং অদ্ভুত আনন্দ বোধ কাজ করত তার৷ এর বিনিময়ে সে আমেনাকে দামি দামি কাপড় আর খেলনা কিনে দিত। আমেনার মাকে ত্রিশ হাজার করে কয়েকবার টাকা পাঠিয়েছে। তবুও আমেনা চলে যেতে চাইত কিন্তু কোন না কোন উপায় খাটিয়ে তাকে রেখে দিত সে। কিন্তু শেষবার শরীফ মাতাল হয়ে মেয়েটাকে এমন বেধড়ক ভাবে মারল যে তাকে আর ফেরানো গেল না, উল্টো থানা পুলিশ হয়ে গেল। সিমি এখন ভাবে, ক্যাচালটা ভালভাবে মিটলে হয়! অবশ্য ক্যাচাল না মিটলেও সমস্যা কিছু না। শরীফ যদি ফেসে যায় তো সিমির কিছু যায় আসবে না। শরীফের প্রতি ওর কোন প্রেমের বা ভালোবাসার অনুভুতি নেই। মনের যে টান আছে তা উপেক্ষা করা সিমির কন্যে কঠিন কিছুই নয়। তাছাড়া শরীফের সব অবৈধ সম্পত্তি সিমির নামে। শরীফকে ছেড়ে দিলে সে বাকি জীবন বিন্দাস কাটিয়ে দিতে পারবে।
এখন আমেনা নেই কিন্তু সিমির অদ্ভুত আনন্দ চর্চা কিন্তু থেমে নেই। প্রায় প্রায় শরীফ ভাড়া করে একটা করে মেয়ে আনে। সে মেয়ে নিয়ে আসে নিজের জন্য নয়, স্ত্রীর জন্য। এ বাবদ অনেক বেশি টাকা খরচ করে সিমি। যে মেয়েকে ভাড়া করে আনে তাকে দিয়ে নিজের জৈবিক তাড়না-ই মেটায় না, মেয়েটাকে শারীরিক ভাবে আঘাত করে, কষ্ট দিয়ে মনের সুখ মেটায় সে।
এই ব্যাপার গুলো ঘৃণার সাথে দেখে শরীফ। এমনিতেই মামলা নিয়ে অতিষ্ঠ, তার উপর আবার ঘরে এই ফ্যাসাদ। খুব অশান্তিতে দিন কাটে শরীফের। কিন্তু কিছু করার নেই, সিমির কাছে সে বড় রকমের ধরা। এই আটকে থাকাটা এ জীবনে হয়ত যাবে না।

______
পরদিন জালালকে ডিউটি অফিসার এর দায়িত্ব দেওয়া হল। সকাল আটটা থেকে রাত
আটটা পর্যন্ত ডিউটি৷ দুই জন সার্ভিস ডেলিভারি অফিসারের মধ্যে একজন হল পিএসআই জিয়া৷ নতুন হলেও জিয়ার মধ্যে অফিসার সূলভ একটা ভাব আছে। কথাবার্তা বেশ স্মার্ট আর সাবলীল।
মোবাইল বেজে উঠতে জালাল ফোন হাতে নিয়ে দেখল ডিসি স্যারের ফোন। বলল,'হ্যালো, স্লামালিকুম স্যার।'
--ওলাইকুম সালাম। ডিউটি অফিসার আজ কে আছ?
--স্যার, আমি জালাল।
--এ মাসের তিন নং মামলাটা কার হাতে?
-- স্যার, একটু দেখে জানাচ্ছি।
--আচ্ছা। আমি লাইনে আছি।
জালাল মুন্সীকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে দেখল এটা ওর নিজের হাতের-ই মামলা। শরীফ নামের বদমাশ লোকটাকে নিয়ে যে সমস্যা, সেই মামলা। মামলা নাম্বারটা ওর মনে ছিলনা। ডিসি স্যার এই মামলার ব্যাপারে ফোন দিল কেন তা কে জানে! শরীফ লোকটা কর কমিশনার অফিসে চাকুরি করে। কাকে দিয়ে ফোন করিয়েছে তার ঠিক কি! এসব ভাবতে ভাবতে ফোনের লাইনে আসলো জালাল। বলল, স্যার, মামলাটা তো আমার নামেই আছে।
--কি বলো জালাল!
--নিজের হাতের মামলার নাম্বার ভুলে গেছ!
--স্যরি স্যার!
--স্যরি বললে হবে! তোমার মত অফিসারের কাছ থেকে এটা আশা করা যায় না।
জালাল এই কথার কি জবাব দেবে! পুলিশে জয়েন করার পর থেকেই এমন কথা হর হামেশা শুনে আসছে --তোমার মত চৌকস মানুষের কাছে এটা আশা করিনি, ওটা আশা করিনি, ইত্যাদি।
জালাল চুপ করে রইল। উপ-কমিশনার সাহেব এটা ভেবে দেখলেন না যে একজন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা কি পেরেশানি মাথায় নিয়ে ঘোরে! জিডি, অভিযোগ সাথে চার পাচটা মামলা থাকেই। ঘুমানোর কয়েক ঘন্টা বাদে দৌড়াদৌড়ি লেগেই থাকে! এত ঝামেলার ভেতর একটা মামলার নাম্বার মন থেকে হারিয়ে যেতেই পারে। তাছাড়া যে বিষয় কাগজে লেখা আছে, চাইলেই জেনে নেওয়া যায় সেটা মুখস্থ না রাখলেও চলে। জালাল শুধু বলল, 'স্যার, অনেক ব্যাপার নিয়ে বিজি থাকি তো!'
--বিজি তুমি একা থাকো? আর কেউ বিজি থাকে না?
--না স্যার, তা না।
--তা না, তা না করছ কেন?
--স্যরি স্যার।
'স্যরি স্যার' বলার আগ পর্যন্ত যে লোকটা থামবে না সেটা জালালের আগেই জানা। জালাল এই থানার সবচেয়ে নাম করা অফিসার-- ওর কাজে কর্মে ভুল ধরা মুশকিল। ডিসি স্যার সব এস আই কে চেনে না, জালাল কে চেনে। এই পর্যন্ত সব বড় মামলার সঠিক সুরাহা করেছে জালাল, ওর নামটা বেশি পরিচিত সবার কাছে। তবুও পান থেকে চুন খসার উপায় নেই। এদিক থেকে একটু ওদিক হলেই ঝারি খেতে খেতে জীবনটা পানসে হয়ে যায়।
ডিসি সাহেব বললেন, মামলাটার বিষয় কি বলোতো, জালাল।
--স্যার, শরীফ নামের একটা লোক বিবাদী। গৃহকর্মীর গায়ে হাত তুলছে।
--মার কেমন দিয়েছে?
--বেশ মেরেছে, স্যার।
--মেয়েটার বয়স কত?
--দশ এগারো হবে।
--বাসায় কে কে আছে?
--ওর মা আছে, ভাই আছে।
--গরীব না ধনী?
--স্যার, গরীব বলেই তো মানুষের বাড়িতে কাজে পাঠিয়েছিল।
-- কি সিদ্ধান্ত নিলে?
-- স্যার, লোকটার সাজা হওয়া উচিত।
--ছাড় দেওয়া যায় না?
-- স্যার, কয়েকটা পেপারে নিউজ হয়েছে, ফেসবুকে ভাইরাল। কি করব আপনিই বলে দেন।
--আচ্ছা। ব্যাপারটা কিছুদিন বাদে ফয়সালা করো, জনগনের মন থেকে এটা চলে যাক।
--আচ্ছা, স্যার। আমি আগেই রিপোর্ট দেব না।
--ঠিক আছে, জালাল। ভাল থেকো।
ফোন রেখে জালাল মনে মনে কয়েকটা খিস্তি দিল; কাকে দিল স্পষ্ট বোঝা গেল না। বাস্তবে উপরের কাউকে দিলে, আড়ালে কেউ শুনে ফেললে চাকরি নিয়ে টান পরত। সে ভাবল, শরীফ লোকটার হাত লম্বা। অনেক দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে ফেলেছে। কিন্তু সে জালালকে চেনে না। জালাল সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেনা মেয়েটাকে ন্যায়বিচার দেবেই। এটা যেভাবেই হোক, দিতেই হবে।

বিকেল বেলায় কামাল নামের লোকটা এল। জালালকে দেখে চমকে গেল সে। সে আশা করেনি, জালাল ডিউটি অফিসার হিসেবে থাকবে। মনে মনে আনন্দিত হল, তার কাজ আরো সহজ হয়ে গেল।
জালাল তাকে দেখে এমন ভাব করল যেন সে চেনেই না। 'আপনার জন্যে কি করতে পারি' ধরনের কথাবার্তা শুনে কামাল বলল, স্যার আমাকে চিনতে পেরেছেন?
কামাল বলল, চিনতে পারার বা না পারার কোন ব্যাপার না। আপনার সমস্যা বলুন।
কামাল তার সমস্যার কথা আবার তাকে বলল। জালাল লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে একটা ইঙ্গিত দিয়ে পাশের টেবিলে বসা জিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল, জিয়া, এই লোকটাকে একটা হুমকি সংক্রান্ত জিডি করে দাও। জিয়া বলল, স্যার, কোন অফিসারের নামে দেব?
--দাও, টিপুর নাম দাও।
টিপু আহসান জালালের ব্যাচমেট।
জিয়া জিডি লিখে দিলে কামাল সেটা নিয়ে চলে গেল। জালাল তাকে পরদিন বিকেলে আসতে বলে দিয়েছে। লোকটাকে বিরক্ত হতে নিষেধ করেছে। কাজ উদ্ধারের জন্যে অনেক ধৈর্য ধরতে হয়, চাইলেই হুট করে দুই লক্ষ টাকা আদায় করে দেওয়া যায় না।

______
উত্তরা জোনের উপ-কমিশনার আমজাদ হোসেনের মনে শান্তি নেই। পরিবার নিয়ে বহু চিন্তায় সবসময় অস্থির থাকেন। বেশিরভাগ দুশ্চিন্তা বউ নিয়ে। বউটা তার কথা শোনে না। আটত্রিশ বছর বয়সের মহিলা এখনো সপ্তাহে দুবার পার্লারে যায় মেকাপ করতে। সারা ঢাকা চষে বেড়ায়। বড় বড় পার্টি সেন্টারে পার্টিতে আনন্দ করে বেড়ায়। টাকার অভাব নেই৷ মহিলার বাপের ওঢেল টাকা আছে কিন্তু খরচ করে আমজাদ সাহেবের টাকা। টাকা ওড়ায় কাগজের মত করে। শুধু টাকা ওড়ায় তাই-ই না। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না; যা ইচ্ছা তাই করে; মানুষের সাথে ইচ্ছামতো বদ ব্যবহার করে, গালিগালাজ করে। মেয়েটাও হয়েছে মায়ের মত। মাত্র তের বছর বয়স। এই বয়সেই মায়ের সাথে পার্টিতে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। মা-মেয়েকে একটা বললে তার উল্টোটা করে। মায়ে-ঝিয়ে মিলে আমজাদের জীবনটা ত্যানা ত্যানা করে রেখে দিয়েছে। কবে যে মিডিয়াতে এসব কিসসার নিউজ হয়ে যায় তা কে জানে! সাংবাদিক গুলো পুলিশের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে। মান সম্মান ইজ্জৎ কোথায় কবে হাওয়ায় উড়ে যায় তার ঠিক নেই। বাপের কথা মত বিয়ে না করে ক্যারিয়ারের কথা ভেবে আমজাদ সাহেব এমপির মেয়েকে বিয়ে করেছিল। এখন হারে হারে টের পাচ্ছে এমপির মেয়েকে বিয়ে করার ঝালটা কেমন।
এই মুহুর্তে অবশ্য আমজাদ অন্য ব্যাপার নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছে। আমজাদের বন্ধু লালবাগ জোনের ডিসি একটা ব্যাপারে তাকে কল করেছিল। শরীফ নামের একটা লোককে আইনের ফাক গলে বের করে আনতে হবে। কাজটা আমজাদের জন্যে অতি মাত্রায় সহজ একটা কাজ। শুধু হাতটা একটু বাকা করলেই কাজটা হয়ে যাবে। তদন্তকারী কর্মকর্তার সাথে তার কথা হয়েছে। এসব আমজাদের বা হাতের খেল। কিন্তু যে মেয়েটার ব্যাপারে কেইস হয়েছে তার ফুফাত ভাই একটা সাংবাদিক। ঐ হালকা পাতলা ধরনের সাংবাদিক নামকাওয়াস্তে পত্রিকায় সংবাদ ছেপেছে, সেটা নিয়ে ফেসবুকে বেশ হই হুল্লোড় হয়েছে। বাঙালি জাতটা এমনই। একটা কিছু পেলেই হয়, কামড়াকামড়ি শুরু করে দেয়। সামান্য কাজের লোককে মেরেছে বলে দেশটা তোলপাড় করে ফেলছে। কদিন গেলে এমনিই সব শান্ত হয়ে যাবে।
আমজাদ সাহেবের বডিগার্ড খোকন বাইরে গেছে বেশ কিছু সময় হল। ওকে পাঠানো হয়েছে পোড়া মাংস আনতে। এত দেরি করছে কেন তা কে জানে। পোড়ানো মাংস দিয়ে বিয়ার খেতে ভীষণ মজা। সাথে ব্যান্সন সিগারেট থাকতে হবে। খোকনকে একটা কল দেওয়া যাক। প্রথমবার রিং হলে খোকন ফোন ধরল না। পরেরবার রিং হলে ধরল। বলল, হ্যালো স্যার।
--কিরে ব্যাটা! তুই কই? ফোন ধরিস না কেন?
--স্যার, পকেটে ছিল। প্রথমে বুঝি নাই৷
--জিনিস পাইছোস?
--জ্বি, স্যার।
--নিয়ে আয়, খিদে লাগছে।
--আসছি, স্যার।
আমজাদ ফোন রেখে দেয়। আজ রাতের খাবার বাসায় খাবে না সে, খাবে অফিসে। নিজের একান্ত ঘরে বিয়ারের সাথে পোড়া মাংসের স্বাদ নেবে। সাথে ব্যান্সন সিগারেট।

_____
পরদিন বিকেলে কামালকে নিয়ে জালাল কামালের প্রাক্তন অফিসে গেল। জালাল আর খালেক আটসাট মাস্ক পরে এসেছে। কামাল লোকটা অফিসের ভেতরে যায়নি। কন্সট্যাবল খালেক আর জালাল গিয়েছে সিভিল পোশাকে। প্রতিষ্ঠানের মালিক স্বয়ং এই প্রতিষ্ঠানটি চালায়। জালাল সরাসরি ভেতরে ঢুকে গেল। এটা মাঝারি ধরনের প্রতিষ্ঠান। গেটে কোন দারোয়ান নেই। ম্যানেজার ও যে, মালিক ও সে। অনুমতির তোয়াক্কা না করে ভেতরে ঢুকে গেল জালাল। জালালের কোমরে পিস্তল ঝুলছে। সাধারণত পুলিশ সিভিলে থাকলে, কোন দায়িত্বে থাকলে দরকারে কোমরে পিস্তল ঝুলিয়ে রাখে। যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত তারা সচরাচর পিস্তল দেখায় না, লুকিয়ে রাখে। ভয় দেখাবার সময় বের করে।
ম্যানেজার বা মালিক যাই হোক, লোকটা মাঝ বয়সী। একটা বড়সর ভুড়ি আছে। মুখে একতাল মাংস আছে, ট্যাপা মাছের মত ফুলকো চেহারা। জালাল ভেতরে ঢুকলে একটুও ঘাবড়ে গেল না সে। কিন্তু অস্ত্রটার দিকে চোখ যেতেই শরীরের মধ্যে একটু অস্বস্তি বোধ হতে লাগলো। সে বলল, কাকে চাই?
জালাল বলল, আপনি মোশাররফ?
--জ্বি! আপনি কে? কাকে চাই?
--এই এলাকায় থাকেন অথচ আমারে চিনেন না! --জালাল কথাটা বলল মাস্তানি ঢঙে৷
লোকটা বলল, কি চাই আপনার?
--কি চাই সেইডা পরে বুঝবেন। আপনার এক ছেলে দুই মাইয়া। বড় মাইয়া টেনে পড়ে। পোলা মাইলস্টোন স্কুলে সিক্সে পড়ে।
--হ্যা৷ পড়ে। তো?
--মাইয়া পোলা ভাল থাক, এইডা তো চান।
শেষের কথাতে লোকটা ভড়কে গেল। ভড়কে গেলেও চেহারায় প্রকাশ করল না। কপালের ঘাম টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে বলল, এসব বলে লাভ নেই। আমি পুলিশ ডাকব।

Onu kotha, Israt zahan, Md shakil, Sabid ahmed, Arohi mim, Nowshin nasrin, Ahmed mijan and লেখাটি পছন্দ করেছে

avatar
peranhafish07
ধুমকেতু
ধুমকেতু
Posts : 10
স্বর্ণমুদ্রা : 1182
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-16
Age : 35
Location : Dhaka, Bangladesh

ঘুষখোর  Empty Re: ঘুষখোর

Fri Jul 23, 2021 6:35 pm
পর্ব-৫

জালাল তার বরফ শীতল ঠান্ডা চোখ দিয়ে লোকটির চোখের দিকে চেয়ে বলল, আজকের পর বেঁচে থাকলে তো পুলিশের কাছে যাবেন!
--মা.. মানে!
লোকটা পুরোপুরি ভড়কে গেলে জালাল আসল কথা পেরে বসল। লোহা গরম হলেই আঘাত করতে হয়, তবেই না বাকা হয়। পকেটে হাত দিয়ে ডিজিটাল ভয়েস রেকর্ডার অন করে নিল। কিছু কথার রেকর্ড রাখা ভাল। তারপর জালাল বলল, কামালরে চিনেন?
--কোন কামাল?
--আপনার অফিসে কাম করত।
--হ্যা। চিনি।
--কত টাকা পায় আপনার কাছে?
--পায় কিছু?
--উল্টাপাল্টা করবেন না। কত পায় ক্লিয়ারলি বলেন।
--দুই লাখের মত।
--দেন না কেন?
--দিয়ে দেব। কিন্তু আপনি এসব জানেন কিভাবে?
বোতাম চেপে ভয়েস রেকর্ডার বন্ধ করে দিয়ে জালাল বলল, কামালরে আপনি চিনেন না! ও কার ভাই তা খোঁজ নিছিলেন?
--না। নেইনি।
--নিজের জীবন, পোলা মাইয়ার জীবনের প্রতি আপনার কোনই ভালোবাসা নেই!
--থা.. থাকবে না কেন?
--আছে? ভাল তো! তো টাকাটা দিয়ে দেন না কেন?
--আচ্ছা। দিয়ে দেব।
--দিয়ে দিবেন মানে কি? এখনই দিবেন!
--এখন পাব কই?
--ব্যাংক থেকে তুলে আনেন! যান! এখনো ব্যাংক খোলা আছে।
--আচ্ছা৷ কিন্তু কামাল কই?
--কামাল আছে। আপনি তো আর আমার কাছে টাকা দিবেন না। টাকা তুলে কামালরে ফোন দিবেন; সে এসে টাকা নিয়ে যাবে। যান, এখনই ব্যাংকে যান।
লোকটা উঠে পরল। জালাল ইশারায় খালেককে পিছে পিছে যেতে বলল। জালাল চিন্তা করল, লোকটা যদি ভালোই ভালোই টাকা তুলে নিয়ে আসে তো কাজটা হয়ে যাবে। ক্যাচাল করলে বা পুলিশে ফোন দিলে এই টাকা পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে।
মোশাররফ হোসেন কোন ঝুকি নিল না। একবার ভাবলো কোন বন্ধুকে ফোন দিক। পরে ভাবল, কামাল লোকটা তো টাকা পায়-ই, দিয়ে দিলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। সে ভেবেছিল, কামালকে দু'বছর ঘোরাবে। মানুষকে ঘোরাতে তার ভীষণ তৃপ্তি লাগে। একটা লোক টাকার জন্যে বারবার ফোন করবে, তাকে একটা তারিখ দেওয়া হবে। সেই তারিখে লোকটা আসবে। সেদিন মোশাররফ অফিসে থাকবে না, কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে একজন উপপত্নী সহযোগে ডিনারে যাবে। পাওনাদার লোকটা এসে ফিরে যাবে। লোকটা আবার আসবে, আবার তাকে কোন অযুহাত দেখিয়ে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বিদায় করে দেবে। এভাবে কয়েকজন লোককে সবসময় ঘোরায় মোশাররফ। এতে তার বিরক্ত তো লাগেই না! উপরন্তু অশেষ তৃপ্তি অনুভুত হয়! আজ কোন ভাবে ম্যানেজ করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। অস্ত্রধারী লোকটার চোখ দুইটা অত্যন্ত ঠান্ডা আর খুনে ধরণের; কি করতে কি করে বসে ঠিক নেই। ব্যাংকে গিয়ে টাকা তুলে নিল সে। একটা লোক তার সাথে সাথে ছিল। বুঝেছে এ অপর পক্ষের লোক। ইচ্ছা থাকলেও কাউকে ফোন করল না। শুধু শুধু ঝুঁকি নিয়ে লাভ নেই। পাওনা টাকা দিয়ে দিলেই ভাল। টাকা তুলে সঙ্গে থাকা মাস্তান লোকটাকে বলল, কামালকে ফোন দেই?
খালেক বলল, অফিসে গিয়ে দিবেন।
মোশাররফ অফিসের দিকে পা বাড়াল। বেশি দূরের পথ নয়, পাঁচ ছটা ভবন পরেই ব্যাংক। অফিসে ঢুকে দেখল কামাল তার অফিস কক্ষেই বসে আছে। নিজের চেয়ারে বসে কামালের দিকে এগিয়ে দিল টাকাটা। বলল, এই নিন আপনার দুই লক্ষ টাকা।
কামাল হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিল। টাকাটা গুনে নিয়ে ব্যাগে ভরে কামাল জালালকে বলে বাইরে চলে এল। জালাল মোশাররফ কে আর কোন কথা বলল না, চুপচাপ বাইরে চলে এল।
ওরা তিনজন একটা রেস্টুরেন্টে বসে নাস্তা করল। জালাল তাড়াহুড়ো করে খাবার খেল কারণ ওর আবার রাতেই ডিউটি। কামালকে বিদায় জানিয়ে ওরা চলে আসল। ফেরার পথে খালেক বলল, স্যার, আপনারে তো কিছুই তো দিল না।
--না দিলে আর কি করব, বল?
--কাজটা তো রিস্কের ছিল। জানাজানি হলে বহুত ক্যাচাল হত।
--হত না। আমি পার্টি দুটো একত্রে না নিয়ে কাজ করি না।
--ক্যাচাল না হোক, ঝুকি তো ছিলই।
--তা ছিল।
--কিছু তো দিত অন্তত।
--তুই তো জানিস, আমি চেয়ে নেই না।
--না চাইলেও। লোকটার তো বড় উপকার হল!
--হুম। উপকার করাই তো আমাদের কাজ।
--এভাবে উপকার করা তো আমাদের কাজ না,স্যার!
--তবুও করতে হয়। এই টাকার জন্যে লোকটা আরো কত হেনস্তা হত!
রাত নটার সময় জালাল যখন ডিউটি অফিসারের ঘরে বসে আছে তখন কামাল থানার বাইরে এসে তাকে ফোন দেয়। পাঁচ মিনিটের জন্যে বাইরে আসতে বলে। জালাল এক এএসআইকে কিছু সময়ের জন্যে বসিয়ে রেখে বাইরে যায়। কামালের সাথে দেখা হলে সে আড়ালে নিয়ে ওকে কিছু টাকা দেয়। জালাল সেটা পকেটে রেখে বলে, কাজ আছে, এখন যান।
জালালের রসকষহীন ভাব দেখে কামাল পকেট থেকে আরো কিছু টাকা বের করে দেয়। জালাল সেটা হাতে নিয়ে কামালের দিকে তাকিয়ে বলে, এটা আমাকে দিবেন না এটা আপনার মেয়ের জন্যে কিছু কিনে নিয়ে যাবেন। এই যেমন ধরেন, কাপড় বা ভাল বই।
--আপনি খুশি তো!
--আমি টাকা ছাড়াও খুশি থাকি৷
--আচ্ছা, স্যার। যাই। আপনি আমার অনেক বড় উপকার করলেন।
--এসব উপকার টুপকার কিছু না। নাটকীয়তা ভাল লাগে। আপনি যানগা। দরকার হইলে স্বরন কইরেন।
কামাল চলে গেল। জালাল থানার ওয়াশরুমে ঢুকে পকেট থেকে টাকা বের করে গুনে দেখল, বিশ হাজার টাকা আছে। সে নিজ মুখে চাইলে লোকটা হয়ত পঞ্চাশ হাজার দিত। কিন্তু জালালের অত টাকার দরকার নেই। যা দিয়েছে এই অনেক কিছু। ফোন করে খালেককে ডেকে দুই হাজার টাকা দিল। ওসি স্যারের ঘরে পাঠালো আট হাজার।

রাত সাড়ে ন'টার সময় জালাল ডিউটি অফিসের কক্ষে চেয়ারে বসে আছে। ভীষণ মশার উপদ্রব। একসাথে সাত আটটা মশা পায়ে কামড়াচ্ছে। একবার হাত দিয়ে থাবা দিলে তিনটা করে মরছে কিন্তু পরক্ষণেই আবার পাচটা ছটা বসে চুমুক বসাচ্ছে। সেন্ট্রিকে বলে মশার কয়েল জ্বালালো। তাতে খুব একটা কাজ হলো না। আজকাল মশার কয়েলগুলো কেমন যেন ম্যারম্যারে! মানব ফুসফুসের ক্ষতি সাধন করলেও মশার তেমন ক্ষতি করতে পারে না। মশারা দিব্যি গা এলিয়ে ধোয়ার ভেতর উড়ে উড়ে বেড়ায়! বেশ উপভোগ করে ধোয়ার গন্ধ!
খানিক বাদে একটা লোক এসে তার কক্ষে ঢুকলো। লোকটার চেহারা দেখে মনে মনে হাসলো জ্বালাল। লোকটার নাম মোশাররফ হোসেন, সে কামালের আগের বস। এ লোকের কাছ থেকেই আজ দুই লক্ষ টাকা উসুল করে নিয়েছে জালাল। লোকটা এসে দরজায় দাঁড়িয়ে বলল, স্যার, আসব?
--জ্বি আসেন।
--স্যার আমি একটা মামলা করতে চাই।
--কি বিষয়ে?
--আমার টাকা ছিনতাই হয়েছে।
--কে ছিনতাই করেছে।
-- চিনি না, স্যার৷
--তাহলে কার নামে মামলা করবেন?
--কামাল নামের একটা লোক আমার অফিসে এসেছিল। সে ছিনতাইকারীদের সাথে করে নিয়ে এসে টাকাটা নিয়ে যায়।
--কামাল কে?
--আমার অফিসে চাকরি করত।
--আপনার অফিসে চাকুরি করত আবার আপনার কাছ থেকেই ছিনতাই করেছে! তাও আবার লোক ভাড়া করে!
--জ্বি, স্যার।
--সত্য কথা বলেন। পুলিশের কাছে মিথ্যা বলতে নেই। সত্য না বললে ফেসে যাবেন।
--সত্য বলছি, স্যার।
--আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলেন।
মোশাররফ লোকটা জালালের চোখের দিকে মনোযোগ সহকারে তাকালো। এতক্ষণে পোশাকের কারণে জালালের দিকে তাকালেও মনোযোগ দেয় নাই। তাছাড়া দিনের বেলায় জালালের মুখে ফেস মাস্ক ছিল, এখন নেই। ওর দিকে তাকিয়েই লোকটা চমকে উঠলো। জালালের ঠান্ডা চোখ চিনতে দু'সেকেন্ডের বেশি দেরি হল না। এ চোখের দৃষ্টি অভ্রান্ত। চেহারায় উদ্বিগ্ন আর ভয়ের ছাপ ফুটে উঠল। আমতা আমতা করে বলল, স্যা...স্যার! আপনি!!
--জ্বি, আমি!
--মানে! মানে!!
-- এত মানে মানে করার কিছু নেই! পাওনাদারকে টাকা দিয়ে আবার মামলা করতে এসেছেন!
লোকটা এই কথার জবাব না দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। জালাল বলল, উঠছেন কেন? বসুন।
লোকটা বসল। জালাল সেন্ট্রিকে ডেকে দুকাপ চা দিতে বলল। তারপর লোকটার দিকে তাকিয়ে বলল, এধরনের ভন্ডামি করবেন না। মানুষের সাথে ধরিবাজি করে আবার পুলিশের কাছে সাহায্য চাইতে এসেছেন! লজ্জ্বা করেনা? কামাল আপনার নামে থানায় জিডি করেছে। জিডি করার পর-ই আমি আপনার ওখানে গিয়েছিলাম। চুপচাপ থাকেন গিয়ে। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি আরো লোক আপনার কাছে টাকা পায়, আপনি সময়মত না দিয়ে তাদের এদিন সেদিন আসতে বলে হেনস্থা করেন। যারা যারা টাকা পায় তাদের টাকা বুঝিয়ে দেন গে। মানুষ টাকার জন্যেই তো কাজ করে৷ এরকম ছ্যাচড়ামি আর করবেন না। এইবার অনেক ভাল ব্যবহার করেছি, এরপর কেউ অভিযোগ করলে এমন ভদ্র আচরণ করব না। বাসায় গিয়ে বউ বাচ্চার সামনে অপমান করব। কান ধরে টানাটানি করব, চওড় থাপ্পড় দেব। বুঝছেন?
--জ্বি.. জ্বি স্যার।
জ্বি জ্বি করতে করতে লোকটা উঠে দাড়াচ্ছিল। জালাল হাত
এর ইশারায় তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, আরে কই যাচ্ছেন? চা আনতে বলেছি, খেয়ে যাবেন। থানায় লোকজন এলে আমরা যথেষ্ট আপ্যায়নের চেষ্টা করি।

থানার পাশের চায়ের দোকানি চায়ে খুব চিনি দেয়৷ তার বিশ্বাস যত বেশি মিষ্টি তত বেশি স্বাদ। অতিরিক্ত মিষ্টিযুক্ত দুই কাপ চা ডিউটি অফিসারের রুমে পৌছে গেল। জালাল মোশাররফের দিকে তাকিয়ে বলল, নিন। চা নিন।
লোকটা হাতে চায়ের কাপ নিয়ে গরম চায়ে ফু দিয়ে একটা চুমুক দিল। অতিরিক্ত মিষ্টি চা তার কাছে মিষ্টি লাগলো না, লাগলো তেতো।
জালাল চায়ে চুমুক না দিয়ে জিডি বই নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরল। অত মিষ্টি চা ও খেতে পারেনা। চা শেষ করে লোকটা আর কথা না বলে চলে গেল।
এই কাজটা একটু ঝুকিপূর্ণ হয়ে গেল তবুও এসব কাজ করতে হয়। পুলিশের বেশিরভাগ কাজ-ই তো ঝুকিপূর্ণ।

জালাল মোবাইল ফোন বের করে একটা নাম্বারে ডায়াল করল। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করে বলল, স্যার, কেমন আছেন।
--ভাল আছি। তুই কেমন আছিস?
--আছি ভাল।
--একটা কাম আছে।
--কামের অপেক্ষাতেই তো আছি। হাতে টাকা পয়সা কিছু নেই।
--একটা বাসার উপর নজর রাখতে হবে।
--ঠিকানা পাঠায়ে দেন।
--আমি মেসেজ করে দিচ্ছি। শুধু নজর রাখলেই হবে না। সে বিল্ডিংটাতে নজর রাখতে হবে সেটা আটতলা ভবন। ৪/বি নং ফ্ল্যাটে কে আসছে বা যাচ্ছে তার খোঁজ জানাতে হবে। ঐ ফ্ল্যাটে কারা থাকে তাদের ছবি আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
--ঠিক আছে, স্যার।
--শোন, দরকারি তথ্য দিতে পারলে ভাল এমাউন্ট পাবি।
--আর অদরকারি তথ্য দিলে।
--যা পাস তাই-ই সই। আবার নাও পেতে পারিস।
--ঠিক আছে, স্যার।

Sk akitul, Arbaj khan, Hikmatullah khan, Md salim bapari, Jalsan khan, Ahmed ridoy akon, Feroz hassan and লেখাটি পছন্দ করেছে

avatar
peranhafish07
ধুমকেতু
ধুমকেতু
Posts : 10
স্বর্ণমুদ্রা : 1182
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-16
Age : 35
Location : Dhaka, Bangladesh

ঘুষখোর  Empty Re: ঘুষখোর

Tue Aug 10, 2021 7:15 pm
পর্ব-৬


স্ত্রীর মনরঞ্জনের শরীফ রাতে যে মেয়েটাকে আসার চুক্তি করেছিল, সে আসবে না। দালাল লোকটা অন্য একজন ব্যক্তিকে পাঠাচ্ছে। সিমি তাতে আপত্তি করেনি। পরিবর্তিত ব্যক্তিটি মেয়ে না, আবার তাকে পুরোপুরি পুরুষ-ও বলা চলে না। দেখতে কম বয়সী বালকের মত, বুকটা সামান্য স্ফীত। শুধু চোখ দুটো দেখে বোঝা যায়-- এর বয়স পরিপক্ব। প্রতিবার সিমির একটা মেয়ের দরকার হয় কিন্তু সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই ধরনের অর্ধ নারীর স্বাদ কেমন হয় সেটা জানা। নারী ও পুরুষের প্রতি সিমির আগ্রহ রয়েছে, মেয়েদের প্রতি আগ্রহটা বেশি। কিছু কিছু কম বয়সী পুরুষের প্রতি সিমির আকর্ষণ কাজ করলেও স্বামী শরীফের প্রতি সে কোন আকর্ষণ অনুভব করে না।
লোকটাকে ঠিকানা আর ফ্ল্যাট নং বলা আছে। কেউ সাথে না থাকলেও সে চিনে নিতে পারবে। এটাই ওদের কাজ, তাই ভুল হবার কথা নয়। বাসার কেয়ারটেকারকে সব বলা আছে। বিল্ডিং এর নীচে এসে নাম শরীফের নাম বললেই উপরে পাঠিয়ে দেবে। তাছাড়া ঐ বাসার কেয়ারটেকার কিছু কিছু বিষয় জানে। তাকে টাকা খাইয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছে শরীফ। শরীফ যা বলে সে চুপচাপ তাই করে। ব্যাপারটা শুধু গুটিকয়েক লোক জানে। শরীফ, সিমি আর কেয়ারটেকার। বাসার সিকিউরিটি গার্ড-ও এসব কিছু জানে না। যেদিন এই ধরনের ব্যাপার থাকে সেদিন আগে থেকেই কেয়ারটেকারকে বলে রাখে শরীফ। কেয়ারটেকার নিজে সিকিউরিটি ঘরের বাইরে বসে থেকে সব ব্যবস্থা করে। প্রতি সপ্তাহে সিমির জৈবিক চাহিদা মেটানোর জন্যে অন্তত দুবার ভাড়া করে লোক আনতে হয়। কোন কোন সপ্তাহে তিনবার। এখন শরীফের মাথার উপর দিয়ে একটু ঝামেলা যাচ্ছে। পুলিশি কেইস কম ঝামেলার না, কিন্তু তাই বলে সিমির জৈবিক তাড়না থেমে নেই, সেটা আকুলি বিকুলি করে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়।

ছেলেটা ঘরে ঢুকতেই শরীফের সাথে দেখা। শরীফের কাধে হাত রেখে মেয়েলী সুরে বলল, হাই, হ্যান্ডসাম।
শরীফ কাধ থেকে হাতটা সরিয়ে একটা নির্দিষ্ট কক্ষ দেখিয়ে বলল, এদিকে না, ওদিকে যাও।
ছেলেটা দুষ্টুমি হাসি দিয়ে, শরীফের খোচাখোচা দাড়িওয়ালা গাল টিপে দিয়ে সেদিকে পা বাড়ালো। দেখিয়ে দেওয়া ঘরের দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল। ঘরে ঢুকে স্বল্পবসনা এক নারীকে দেখে বুঝে নিল এই নারীই তার আজকের কাস্টমার।

_______
জালাল ফোন রিসিভ করতেই পরিচিত কণ্ঠে ভেসে আসলো, স্যার কেমন আছেন?
--ভাল। কোন খবর?
--স্যার, একবার জিজ্ঞাসও করেন না আমি কেমন আছি।
--ব্যস্ত আছি। তাই ভুলে গিছি। মনে কিছু নিস না।
--আরে স্যার! কি যে বলেন! আমি ফাজলামি করলাম। না জিজ্ঞাসা করলেও আপনি তো আমার খোঁজ খবর নেন-ই।
--আসল খবর বল।
--বেশি কিছু বের করতে পারিনি।
--তাইলে কল করছিস কেন? বললাম না ব্যস্ত আছি!
-- স্যার। খবর একটা আছে কিন্তু সেটা কামের কিনা তা বোঝা যাইতেছে না।
--বলে ফেল।
--সেদিন রাতে ঐ বাসায় একটা গাড়ি এসে ঢোকে। গাড়ি থেকে একটা 'ছাইয়া' বের হলে বাসার কেয়ারটেকার তাকে খাতির করে ভেতরে নিয়ে যায়। ঐ সময় সিকিউরিটি গার্ড ছিল না, মানে থাকলেও দেহি নাই।
--ছাইয়া মানে কি?
--আরে স্যার! ছাইয়া মানে বুঝলেন না! হিজড়া!
--আরে হিজড়া নিয়ে এত ব্যস্ত হবার কি আছে?
--স্যার, এই হিজড়া সেই হিজড়া নয়!
--তাইলে?
--আমি ঠিক জানিনা। তয় কি যেন একটা ব্যাপার আছে,স্যার!
--কি ব্যাপার!
--সঠিক বলতে পারিনা। একটু আলাদা কিসিমের। কম বয়সী আর দেখতে পরিপাটি।
--হুম। তাতে সন্দেহের কি আছে।
--সন্দেহের কিছু নেই। কিন্তু কেয়ারটেকারের চলাফেরায় কেমন যেন সতর্ক আর চোরা চোরা একটা ভাব।
--তাই নাকি?
--হ, স্যার।
--ব্যাপারটা চিন্তার মনে হচ্ছে।
--চিন্তার কিছু নেই। ব্যাপারটা কি আমি খোঁজ নিচ্ছি।
--নে। তো হিজড়া কোন ফ্ল্যাটে গেল সেটা বুঝতে পেরেছিস?
--না। সেটা বুঝিনি।
--ঐ বাসায় ফ্ল্যাট আছে ত্রিশটির মত। কোন ফ্ল্যাটে গেছে তার ঠিক নেই। তাছাড়া হিজড়া কেন শরীফের বাসায় যাবে? অন্য বাসাতেও যাইতে পারে।
--সেইডা কইতে পারব না, স্যার। তয় মনে হল ব্যাপারটা আপনারে জানানো দরকার, তাই জানাইলাম।
-- ভাল করছিস। তবে এই তথ্যে কাজ হবে না। নজর রাখ।
--জ্বি, স্যার।
--আর হ্যা। কেয়ারটেকারের ঠিকানাটা জানার চেষ্টা কর।
--এই তথ্যে কয় টাহা দিবেন, স্যার! হে হে হে!
--ব্যাটা যা বলি কর। তোর পাওনা তুই পাবি। আমি বেশি পাইলে তুইও বেশি পাবি। আবার আমি না পাইলেও তুই পাবি।
--তা তো জানিই, স্যার৷ একটু ফাইজলেমি করলাম।
--ফাজলেমি রাখ। ব্যস্ত আছি।
ফোন রেখে জালাল ভাবতে বসল, ঐ বাড়িতে হিজড়া কেন যাবে? তাও আবার গাড়ি করে! কোন বাসায় যাবে?
ঠান্ডা মাথায় ভাবতে বসলে বের করা অসম্ভব কিছু না, কিন্তু এখন সে সময় নেই। খানিক বাদে ডিউটিতে যেতে হবে। কেয়ারটেকার কে চাপ দিয়ে ধরলে বের করা যাবে। তবে তথ্যটা জানলেই ওর কাজ উদ্ধার হয়ে যাবে এমন কোন কথা নেই। হিজড়া অন্য বাসায় ভিন্ন কারনেও যেতে পারে। জালাল চাচ্ছে শরীফের কোন দুর্বলতা আছে কিনা। থাকলে সেটা সেটা ব্যবহার করতে হবে৷ আমেনা নামের মেয়েটির জন্যে কিছু করা দরকার। জালাল জানে, আইন শুধু শরীফকে একটু বিপদে ফেলতে পারবে। তবে টাকা খরচা করলে সেই বিপদের মাত্রাটাও ধীরে ধীরে কমে যাবে। তার থেকে বরং অন্য পদ্ধতি প্রয়োগ করে যদি আমেনা মেয়েটার জন্যে কিছু করা যায় তাহলে সেটা বেশি স্বস্তিদায়ক হবে। একারণে শরীফের বাড়িতে নজর রাখছে সে। কোন ধরনের ফাক ফোকর পেয়ে গেলে কাজ উদ্ধার করা সহজ হবে।
চা খেতে খেতে ওর সাথে ডিউটিরত কন্সট্যাবলের সাথে কথা বলছিল জালাল। ফোন বেজে উঠতে বের করে দেখল ওর ব্যাচমেট শফিক কল দিয়েছে। জালাল বলল, কিরে দোস, ভাল আছিস?
শফিক বলল, আছি ভাল। একটা খবর দেবার জন্যে কল করলাম।
--কি খবর, দোস্তো?
--তোদের ডিসির পোস্টিং হয়ে গেছে।
চমকে উঠে জালাল বলল, বলিস কিরে! কোথায়?
--এসবিতে।
-- নতুন কে আসবে জানিস?
--তা জানি না, অনেকে নাকি তদবির চালাচ্ছে।
--জানতে পারলে জানাস।
--আচ্ছা, দোস্ত৷
ওর এই বন্ধুটি হেডকোয়ার্টার এ পোস্টিং নিয়ে আছে৷ একই কোম্পানীতে ওরা ট্রেনিং করেছিল এবং জালালের পাশের বেডেই ছিল।
ডিসির বদলির সংবাদে জালাল খুব একটা খুশি হলোনা আবার দুঃখও পেল না। অবশ্য দুঃখ পাবার কথাও না। এই অফিসার কাজের যথেষ্ট ব্যাঘাত ঘটাতো। নতুন যিনি আসবেন তিনি কেমন হবেন তা আগে থেকে বলা যাচ্ছে না। আগে থেকে বলা যায়-ও না। তবে সবাই একই কিসিমের হয়--কিছুটা এদিক সেদিক!

------
সোর্স লোকটির নম্বরে কল করল জালাল। রিসিভ করতেই পরিচিত কণ্ঠস্বর বলল, স্যার, কেমন আছেন?
--ভাল। কোন খবর?
--তেমন কিছু না।
--কেয়ারটেকারের ঠিকানা পেয়েছিস?
--তা পেয়েছি।
--ব্যাটা! এইটাই তো বড় খবর।
--ঠিকানা দে।
--ঐ বাসাতেই থাকে। আটতলার উপর।
--ব্যাটাকে ঐ বাসাতে ধরা যাবে না। বাইরে থেকে ধরে ধাপকি দিলে কথা বের হবে।
--কিভাবে স্যার?
--কিভাবে আমি বুঝব সেটা। তুই নজর রাখ, ব্যাটা কখন কখন বাইরে যায়।
--আচ্ছা, ঠিকাছে স্যার।

______
জালাল আজ কিলো ডিউটি করছে। 'কিলো' শব্দটা হচ্ছে প্রতীকী। প্রতিটি থানা এলাকা কয়েকটা ভাগে ভাগ করা হয়, এক ভাগের নাম এক একটা দেওয়া হয়। যেমন কিলো, মাইক ইত্যাদি। সাথে একজন কন্সট্যাবল, একজন আনসার আর ড্রাইভার থাকে। কোন এলাকায় ডিউটি মানে হলো গাড়ি নিয়ে টহল দেওয়া, কোথাও কোন ঝামেলা হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা, অসামাজিক কর্মকাণ্ড হলে তা রোধ করা, মারামারি হলে তা থামিয়ে দিয়ে মীমাংসা করে দেওয়া, ৯৯৯ এ কল আসলে সেটার ঠিকানা নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌছে ব্যবস্থা নেওয়া। আর একটা কাজ হল, উক্ত এলাকায় ঘটে যাওয়া কোন গুরুত্বপূর্ণ অপরাধ সংঘটিত হলে, থানায় লিখিত অভিযোগ গেলে, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া৷
বারো ঘন্টা ডিউটির নয় ঘন্টা অতিক্রম হয়ে গেলেও আজ কোন অভিযোগ বা জিডি আসে নি। চা খেতে খেতে এই কথাটা ভাবছিল জালাল। সংগে সংগে ফোন বেজে উঠলো। পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে ডিউটি অফিসারের নাম্বার। ফোন ধরলে ওপাশ থেকে বলল, হ্যালো! জালাল, স্যার!
--জ্বি বলুন।
--একজন মহিলা অভিযোগ নিয়ে এসেছে।
--নাম্বার দিয়ে পাঠিয়ে দিন।
--আচ্ছা।
তারপর আধা ঘন্টা খানেক বাদে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন আসলো। জালাল রিসিভ করে বলল, হ্যালো।
যন্ত্রণা মিশ্রিত মিহি কণ্ঠে একজন মহিলা বলল, হ্যালো। জালাল সাহেব বলছেন।
--জ্বি, বলছি।
--আপনি কই আছেন এখন?
--আমি কোথায় আছি সেটার চেয়ে আপনি কে বলছেন সেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পরচয় দিন।
জালালের গমগমে গলার ঝাঝটা ফোনের অপর প্রান্তে থাকা মহিলা স্পষ্ট বুঝতে পারল।তাছাড়া জালালের কণ্ঠের স্পষ্টতা আর উচ্চরণের বাকে অতিরিক্ত আত্ববিশ্বাস মহিলা ফোন কানে রেখেই উপলব্ধি করল। এবার মেপে মেপে বলল, আমি তাসলিমা। আমার ফ্যামিলিতে একটু সমস্যা হয়েছে। তাই আমি থানায় গিয়েছিলাম।
--জ্বি, বলুন কি সমস্যা?
--আপনি কি আমার বাসায় আসবেন? নাকি ফোনেই বলব?
--ফোনে একটু টাচ দেন। বাসায় যাবার দরকার হলে এখনই রওয়ানা হব আমি।
জালালের ফোনে অটো রেকর্ডিং চালু রয়েছে।
মহিলা বলতে থাকলো, আসলে বিষয়টা হল, গত দুই মাস ধরে আমার হাজবেন্ড আমাকে নিয়মিত মারধর করছে।
--তার আগে মারেনি?
-- না। অবশ্য মাঝে মাঝেই খারাপ ব্যবহার করত।
--কি করে আপনার হাজবেন্ড?
--একটা বিদেশী সংস্থায় চাকুরি করে।
--নেশা করে?
--হ্যা! মাঝে মধ্যে ড্রিংক্স করে।
--যেদিন আপনাকে মারধর করে সেদিন কি নেশা করা অবস্থায় মারে?
--জ্বি? তাহলে এরপর যেদিন নেশা করে সেদিন আমাকে ডাকবেন।
--এখনই তো মদ খাচ্ছে, স্যার। আমি বারন করলে আমাকে চওড় থাপ্পড় দিয়ে বের করে ঘরের দরজা আটকে দিয়ে মদ খাচ্ছে।আমাকে খুব বেশি মারধর করেছে বলে আমি সোজা থানায় গিয়ে অভিযোগ দিয়ে এসেছি।
--ভাল করেছেন। আপনি কি জখম হয়েছেন?
--জ্বি। আমার ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হচ্ছে, ব্যাথায় কোমর বাকা হয়ে গেছে, আর কপালটা ফুলে গেছে।
--আচ্ছা। আমি আসছি। আপনার ঠিকানা বলুন।
ঠিকানাটা নিয়ে জালাল তখনই গাড়ি করে ঐ বাসার উদ্দেশে রওনা হয়ে গেল। পৌছুতে বেশি সময় লাগলো না। জ্যাম এরিয়ে সাকুল্যে বিশ মিনিটের মত সময় লাগলো। যে বিল্ডিং এ বাসা সেই বিল্ডিং এর সিকিউরিটি জালালকে দেখে লম্বা সালাম দিল একটা৷ জালাল উত্তর না দিয়ে লিফটের সামনে এসে দাঁড়ালো। সিকিউরিটির সাহস হলো না যে জিজ্ঞাসা করবে, কার কাছে এসেছেন, কি কাজে এসেছেন। অথচ তার উপর নির্দেশনা আছে, পৃথিবীর যেই হোক না কেন, বাসায় অনুমতি ছাড়া ঢুকতে দেওয়া চলবে না। যার কাছে দর্শনার্থী আসবে তার সাথে ল্যান্ড ফোনে কথা বলে নিশ্চিত হতে হবে, তারপরে তাকে ভেতরে ঢুকতে দেবে। এর আগেও পুলিশ এক দুই বার এই বাড়িতে এসেছে। তাদের সবাইকে ঢুকতে দেবার আগে সিকিউরিটি গার্ড জিজ্ঞাসা করেছে, পুলিশ কার কাছে এসেছে, কেন এসেছে। কিন্তু জালাল কে এমন প্রশ্ন করার সুযোগ এবং সাহস কোনটাই গার্ডের হল না। জালালের চলাফেরা আর ভাব ভংগীমায় এমন কিছু আছে যা আশ পাশের মানুষের মনে সমীহ জাগাতে বাধ্য৷ এছাড়া তার আকর্ষণীয় অথচ কঠিন চেহারাতে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। সিকিউরিটি গার্ড সালাম দিয়ে নিজেকে ধন্য মনে করল; প্রশ্ন করার সুযোগ সে পেল না।
জালাল সরাসরি প্রাপ্ত ঠিকানার ফ্ল্যাটে গিয়ে নক করল। ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যে দরজায় দেখা গেল অপরুপ সুন্দরী এক রমনীকে। ঠোঁটটা ফুলে উঠেছে, চেহারায় যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট। জালাল তাকে জিজ্ঞাসা করল, আপনি তাসলিমা আক্তার?
--জ্বি, ভেতরে আসুন।
--ধন্যবাদ।

Tania Sheikh, Md arif khan, Aysha Hossain, Sanvi rahman, Rajia afroj, Taiyeba Jahan, Mojahid shourov and লেখাটি পছন্দ করেছে

avatar
peranhafish07
ধুমকেতু
ধুমকেতু
Posts : 10
স্বর্ণমুদ্রা : 1182
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-16
Age : 35
Location : Dhaka, Bangladesh

ঘুষখোর  Empty Re: ঘুষখোর

Fri Sep 03, 2021 2:02 pm
পর্ব-৭

জালাল এবং তার সঙ্গীয় একজন কন্সট্যাবল ঘরের ভেতরে ঢুকে গেল। বাইরে একজন পাহারায় থাকল। জালাল ঘরে ঢুকে চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখলো। দামী আসবাব-- গদিয়াটা নরম সোফা, ওয়ালে বিরাট টিভি স্ক্রীন, বিশাল ডাইনিং টেবিল। গুনে দেখলো ফ্ল্যাটে মোট চারটি ঘরের দরজা দেখা যাচ্ছে আর বিশাল ড্রয়িং স্পেস। ড্রয়িং স্পেসে টিভি দেখার জায়গা এবং ডাইনিং টেবিল সাজানো। এই ফ্ল্যাটের মুল্য আশি লাখের কম না, মনে মনে হিসাব করল জালাল। আশ পাশ পরীক্ষা করা হয়ে গেলে জালাল বলল, আপনার হাজবেন্ড কোন ঘরে?
একটা বন্ধ দরজার দিকে ডান হাতের তর্জনী উঁচু করে নির্দেশ করল মহিলা। জালাল মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনার হাসবেন্ড যে আপনাকে তরকারি রান্না করার স্টিলের হাতা দিয়ে পিটিয়েছে সেটা জিডিতে উল্লেখ করেছেন?
মহিলা আমতা আমতা করে বলল, জ্বি না। জিডিতে উল্লেখ করিনি! কিন্তু তরকারি রান্নার হাতা দিয়ে পিটানোর ব্যাপারটা আপনি জানলেন কিভাবে?
এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে জালাল বলল, অভিযোগের কাগজটি আমার কাছে দিন।
জালাল বিষয়টা আন্দাজে বলেনি। তরকারি রান্না করার হাতাটি ডাইনিং টেবিলের উপর রাখা। এটা সচরাচর ডাইনিং টেবিলে রাখা হয় না,এটা থাকে রান্নাঘরে। এটা হয়ত এই মহিলার হাজবেন্ড মারধর করার সময় রান্না ঘর থেকে এনেছে। মারার পর সেটা ডাইনিং টেবিলের উপর-ই রেখে দিয়েছে। জালাল ডাইনিং টেবিলের উপর হাতাটি দেখে আত্ববিশ্বাসের সাথে মন্তব্য করেছে এবং সেটা মিলে গেছে। মহিলার কাছে ব্যাখ্যা দেবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করল না ও। মহিলা অভিযোগের কাগজটি বাড়িয়ে দিলে সেটা হাতে নিল জালাল। এক ঝলকে সেটাতে চোখ বুলিয়ে নিল সে। তারপর ঐ ঘরের সামনে গিয়ে দরজায় নক করল। দুবার নক করার পরও দরজা খুলল না লোকটা। জালাল তার শক্ত হাতে সজোরে ধুপ ধাপ কয়েকটা কিল মারল দরজায়। তাতে বেদম শব্দ হল। এর এক মিনিটের মধ্যে দরজা খুলল লোকটা৷ ফর্সা আর থলথলে চেহারার লোকটা জালালকে দেখে চমকে গেল। গায়ে একটা স্যান্ডো গেঞ্জি, তাতে পেটটা ফুলে আছে। কিছু মানুষের শরীর মোটা হলেও আটসাট হয় কিন্তু এই লোকের শরীর থলথলে; লদলদে চর্বি দিয়ে গা-টা ভর্তি। মদ খাবার ফলে শরীর এতটা চর্বি বহুল হয়ে গেছে। জালালের দিকে তাকিয়ে বলল,আ... আপনারা?
চোখ দুটো লাল টকটক করছে। শুধু মদ না, অন্য নেশা টেশা-ও করেছে বোধ হয়। তবে সেন্স ভাল আছে। সজাগ না থাকলে পুলিশের পোশাক দেখে চমকে যেত না। জালাল এটাই চাইছিল। মাতাল মানুষের সাথে ডিল করা কঠিন। লোকটা জালালকে দেখে অবাক হলেও খুব যে ভয় পেয়েছে তা নয়। নিজেকে একটু সামলে নিয়ে আবার বলল, আপনারা কি চান?
জালাল সরাসরি মূল প্রসঙ্গে চলে এল। বলল, আপনি কি আপনার স্ত্রীর গায়ে নিয়মিত হাত তোলেন?
লোকটা একটু সাহসী হয়ে জবাব দিল, আমার বউকে আমি মারব, তাতে আপনার কি?--কথাটা সাহস নিয়ে বললেও কণ্ঠের জোর একদম কমে এসেছে।
জালাল এবার মুখে কিছু বলল না। ডান হাতের তালু দিয়ে ঠাস করে গালে একটা চওড় কষিয়ে দিল। লোকটা চিৎ হয়ে পরে যেতে যেতে নিজেকে সামলে নিল। যন্ত্রণায় কুকড়ে গেছে চেহারাটা। সে ভয়ের চোখে জালালের দিকে তাকালো। তার অবাক চেহারায় ফুটে উঠেছে একটা মন্তব্য, এত জোড়ে চওড় কিভাবে মারা সম্ভব! সে আবার কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বলল, আপনি আমাকে চওড় মারলেন! আপনি জানেন আমি....
--ঠাস!!
--আ!
--ঠাস! ঠাস! ঠাস!!
পর পর চার পাঁচটা চওড় মেরে থামল জালাল। ওর হাতে ভীষণ জোর। একটা চওড়ের ওজন কমছে কম পাঁচ কেজি হবেই। লোকটা মার খেয়ে ভয়ে কুকড়ে গেছে। চোখ ফেটে জল বের হচ্ছে, কান্নায় চেহারা করুন হয়ে গেছে। তার চেহারার এখন 'মাফ চাই' মার্কা অবস্থা। জালাল বলল, শুয়োরের বাচ্চা, আর যদি কোনদিন বউয়ের গায়ে হাত তুলিস, এই বিল্ডিঙের সামনের রাস্তায় কবর খুড়ে তোকে জ্যান্ত পুতে ফেলব। বুঝছোস?
লোকটা কান্না করতে করতে বলল, আর মারব না, স্যার! আর মারব না!!
লোকটা প্রথমবারের মত জালালকে স্যার বলে ডাকলো। জালাল ফিরে তাকালো তাসলিমা আক্তারের দিকে। মহিলার মুখ হা হয়ে গেছে। সে নিরুপায় হয়ে পুলিশ ডেকেছে কিন্তু কল্পনাও করতে পারেনি একজন অফিসার এসে তার হাজবেন্ডকে এভাবে চওড় থাপ্পড় কষবে। মুখের হা বন্ধ করে কি যেন বলতে চাইল, কিন্তু জালাল তার আগেই বলল, আপনাকে আবার যদি মারধর করে তো আমার নাম্বারে কল দিবেন। যে নাম্বারে কল করেছিলেন ঐ নাম্বারটা সেভ করে রাখেন।
--আ.. আচ্ছা, স্যার। --মহিলা-ও প্রথমে জালাল সাহেব বলে সম্বোধন করেছিল, এখন 'স্যার' বলে ডাকলো।
জালাল আর দেরি করল না। ওখান থেকে বের হয়ে আসলো। গাড়িতে উঠতে উঠতে সঙ্গীয় কন্সট্যাবল বলল, স্যার, এমনে যে মারলেন, যদি ডিসি অফিসে কম্পলেন দেয়!
--দিবে নাহ!
--কেন?
-- সবারই মান সম্মান আছে। ডিসি স্যার যখন তাকে জিজ্ঞাসা করবে কেন মারছি, তখন তার জবাব কি দেবে? সে কি বলতে পারবে, আমি বউকে নিয়মিত মারি তাই পুলিশ বাসায় এসে আমাকে কেলিয়েছে!
--যদি অন্য কারণ দর্শায়!
--না। মিথ্যা বলবে না।
--কেন, স্যার?
--আমার চওড়ের কথা মনে পরে যাবে তখন!
--হা! হা! হা! হো! হো! হো!-- হাসতে হাসতে গাড়িতে উঠল ওরা।
এদিকে তাসলিমা বরের সেবা করতে শুরু করল। লোকটা তার সেবা গ্রহণ-ও করল। তার এখনো ভয়ের ঘোর কাটেনি। তাসলিমার কাছে সে অসহায় বোধ প্রকাশ করতে লাগলো। ব্যাটা সংশোধন হলেও হতে পারে।


______
নতুন ডিসি শরিফুল ইসলাম বিপিএম থানা পরিদর্শন করে গেলেন। জালাল অবাক হয়ে দেখল এই ডিসি সাহেবকে সে আগে যেন কোথাও দেখেছে। তবে কোথায় দেখেছে মনে করতে পারল না। ভাবনাটা ওখানেই থামিয়ে দিতে হল। হাতে প্রচুর কাজ-- কয়েকটা মামলার ব্যাপারে থানা এলাকায় যেতে হবে, সাক্ষীদের সাথে কথা বলতে হবে, থানায় বসে সিডিএমএসে ক্রমান্বয়ে লিখতে হবে। আবার ডিউটি মাফ নেই৷ হঠাৎ করে মুন্সী এসে জানাল, ডিসি স্যার আজ সন্ধ্যায় তাকে ডেকে পাঠিয়েছে। জালাল মুন্সীকে বলল, কেন ডেকেছে বলুন তো?
--তার আমি কি জানি!--পান খাওয়া লালচে ঠোঁট মেলে দিয়ে জবাব দিল লোকটা।
মুন্সী এর বেশি কিছু জানবে কেন? তাকে যা শোনাতে বলা হয় সে তাই শোনায়। আজ সন্ধ্যা ছটার সময় জালালকে সিভিল পোশাকে ডিসি অফিসে যেতে হবে।
যথা সময়ে জালাল ডিসি অফিসে উপস্থিত হল। স্যারের সহকারী ইংগিত করলে দরজায় নক করে বলল, আসতে পারি, স্যার?
শরিফুল সাহেব পত্রিকা থেকে মুখ তুলে বলল, আরে! জালাল! আসো! বসো! আমি তোমার অপেক্ষাই করছিলাম।
তার মুখে জালাল নিজের নাম আন্তরিকতার সাথে শুনে ভীষণ অবাক হল। তার উপর এসপি স্যার তার জন্যে অপেক্ষা করছিল আবার নিজের মুখে সেটা বলেও ফেললো! এটা প্রত্যাশার অতীত ব্যাপার। সে চেয়ারে বসতে বসতে বলল, স্যার, আপনি কি আমাকে আগে কখনো দেখেছেন?
--তুমি জাহাঙ্গীরনগরে পড়েছ না?
--জ্বি, স্যার।
--আমি তোমার হলের বড় ভাই। চার বছর আগে হলে বেড়াতে গিয়ে তোমার সাথে দেখা হয়েছিল। আমি যে রুমে থাকতাম, তুমিও সেই রুমেই থাকতে!
--ও হ্যা! স্যার, মনে পরছে।
--এত সহজে ভুলে গেলে চলবে!
--স্যরি স্যার।
--হুম। তা কেমন যাচ্ছে এখন দিনকাল?
--চলে যাচ্ছে, স্যার। জানেনই তো! পুলিশের দিন কেমন যায়৷
--তা তো জানি-ই রে ভাই। যাক, চা খাবে না কফি খাবে?
--চা খাব,স্যার।
শরিফুল বেল বাজিয়ে তার সহকারিকে ডেকে চায়ের অর্ডার দিলেন সাথে হালকা জল খাবার। তারপর সরাসরি মূল প্রসঙ্গে এসে বলল, আমার কাছে একটা ফোন এসেছিল। শরীফ নামের একটা লোকের মামলা আছে তোমার কাছে?
জালালের চোখে অবাক দৃষ্টি। ব্যাটা শরীফ নতুন ডিসি স্যারের কাছেও সুপারিশ পাঠিয়েছে! ব্যাটার দৌড় বহুদুর! সে বলল, জ্বি স্যার।
--ব্যাপার টা কি বলত।
--স্যার, ব্যাপার টা জঘন্য। স্বামী স্ত্রী দুজনেই একটা বাচ্চা মেয়েকে মারতো। কাজের মেয়ে। সর্বশেষ ভীষণ মেরেছিল, স্যার। মেরে ইন্টারনাল ইঞ্জুর করে দিয়েছে। মেয়েটির মা বাদী হয়ে মামলা করেছে।
--চার্জশীট হবে?
--তা তো হয়-ই, স্যার।
--যেহেতু আমার কাছে উপর থেকে একটা ফোন এসেছিল সেহেতু ব্যাপারটা আমাকে একটু দেখতে হবে। কিন্তু একটা ব্যাপার মনে রাখবা।
--কি স্যার?
--মানুষ যাতে ন্যায়বিচার পায় সেটার ব্যবস্থা করতে হবে।
--এখানে সম্ভব, স্যার।
--তবে তাই করো। আমি এখানে আসার আগেই এই কেসটার ব্যাপারে জেনেছিলাম। ফেসবুকে বেশ আলোড়ন তৈরি হয়েছিল।
--কিন্তু স্যার, উপর থেকে নাকি চাপ আসছে? আগের স্যার তো সেটাই বলেছিলেন!
--আগে কি হয়েছে ওটা বাদ। এখন আমি আছি, আমি যেভাবে বলব সেভাবেই হবে। আমার কাছেও উপর থেকেই ফোন এসেছে। এসব আমি দেখব। তুমি তোমার মত কাজ করো, জালাল।
--জ্বি আচ্ছা, স্যার।
আধা ঘন্টা বাদে জালাল মুখে একটা হাসি নিয়ে ঐ ঘর থেকে বের হল। হাসিটা এই কারনে নয় যে, বহুদিন পর একজন ভাল মনের মানুষের সাথে কাজ করার সুযোগ হল। এটা বড় কোন ব্যাপার-ই না। ভাল মন্দ মিলিয়েই পুলিশ বিভাগে কাজ করতে হয়। জালালের হাসির কারন হলো, শরীফ ব্যাটাকে একটা বড়সর একটা ঝাকি দিতে পারবে এবার।

_______
তুমি কি করতেছ, বলতো? আমেনা চলে গেল! বাসায় আর একটা কাজের মানুষ ঠিক করছ না কেন?--মুখে ঝাঝ তুলে শরীফকে বলল সিমি।
--কাজের লোক পাওয়া এত সোজা না!
--সোজা বাঁকা আমি কিছু বুঝি না। যত দ্রুত সম্ভব তুমি কাজের লোক যোগাড় করে আনো।
--দেখি চেষ্টা করে।
শরীফ এবার কাজের লোক ঠিক করতে চায় হিসাব করে। কম বয়সী মেয়ে বা ছেলে আনা ঠিক হবে না। কম বয়সী কাউকে আনলে সিমি তাকে নিজের লালসার শিকার বানাবে, ছোট খাটো শরীর কচ করে চিবিয়ে খেতে চাইবে। শরীফ যদি আবার একই ধরণের বিপদে পরে তবে পাশে কাউকে পাবে কিনা সন্দেহ। এই ঝামেলাটাই সহজে পার হবে কিনা এখনই বলা যাচ্ছে না। গতকাল ওর বস জব্বার আলী জানিয়েছেন, উত্তরার ডিসি বদলী হয়ে নতুন ডিসি এসেছে। যে নতুন এসেছে সে বসের জুনিয়র ব্যাচের ক্যাডার৷ জব্বার আলীর কথা নতুন এসপি শুনবে কিনা সেটা নিশ্চিত ভাবে এখনই বলা যাচ্ছে না। কথাটা জানার পর শরীফের মনের মধ্যে আবার এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করা শুরু হয়েছে। গতকাল থেকে আবার এস আই জালালের কঠিন চেহারাটা মনের মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে। এই লোকটা সহজ জিনিস না। অন্য কেউ হলে টাকা ঢাললেই সব ঠান্ডা হয়ে যেত। পুলিশকে টাকা দিয়ে মামলার ফল বদল করা কোন ব্যাপার-ই না। কত টাকায় বাঁকবে না পুলিশ? দুই লাখ, তিন লাখ, পাঁচ লাখ? বড় অংকের টাকা মেরে দিলে সব ঠান্ডা হয়ে যেত। কিন্তু জালালের চেহারা দেখে টাকা সাধা সাধি করতে সাহস-ই হয়নি শরীফের। তবুও শেষ চেষ্টা হিসেবে এটা করতে হবে।
শরীফ সিমিকে বলল, তোমার কাজের লোক আমি এনে দেব। তার আগে আমাকে কিছু টাকা দাও। টাকা দরকার।
--কিছু টাকা মানে কত টাকা?
--এই ধরো দশ লাখের মত।
--এত টাকা দিয়ে কি করবা?
টাকাটা শরীফের কামানো। অবৈধ পথে হলেও মেহনত করেই কামিয়েছে। অথচ চাইলে সিমি এমন ভাবে প্রশ্ন করে যেন মনে হয় সিমি টাকাটা বাপের বাড়ি থেকে এনেছে।
শরীফ শুধু বলল, আমেনার ব্যাপারটা এখনো সমাধান হয়নি। ওটা সমাধান করতে হবে।
--আমেনাকে মেরেছ তুমি, টাকা তুমি দাও গিয়ে৷
--এসব ভং চং কথা বলে লাভ নেই। ভেবনা জালাল সাহেব তোমাকে ছেড়ে কথা বলবে। তুমি যে মাঝে মধ্যে মেয়েটাকে মারধর করতে সেটা সে বুঝে গিয়েছিল। ধরা খেলে আমি একা ধরা খাবো না। মনে রেখ।
--কেস তো তোমার বিরুদ্ধে হয়েছে।
--কেস যার বিরুদ্ধেই হোক, প্রমাণ পেলে পুলিশ সব দোষীকে শাস্তির আওতায় আনতে পারে।
কথাটা সিমিকে একটু ভাবালো। টাকা নিয়ে সমস্যা নেই তার। শরীফ তার নামে প্রচুর টাকা জময়েছে। সে শরীফের কথাতে সম্মত হয়ে গেল। সিমি মেয়ে হিসেবে খোলামেলা এবং সাহসী হলেও থানা পুলিশের ঝামেলা তার কাছে অসহ্যের মত ব্যাপার।
শরীফ আজ লাউ দিয়ে শুটকি মাছ রান্না করেছে সাথে করলা ভাজি। খাবার বসে নাক সিটকালো সিমি। বলল, এই খাবার গেলা আমার পক্ষে সম্ভব না।
--আরে তোমারই তো শুটকি পছন্দ!
--শুটকি পছন্দ কিন্তু এই জঘন্য রান্না কে খাবে!
--নিজেই তো রান্না করতে পারো!
--কিহ! আমি করব রান্না!
--হুহ! রান্না করলে করবা না করলে এই খাবারই খেতে হবে!
এই কথাতে সিমি ফস করে রেগে গেল। বলল, কি! তুই কি বললি! আমাকে তুই ইচ্ছা মত চালাবি! আর আমি সেভাবে চলব?
Sponsored content

ঘুষখোর  Empty Re: ঘুষখোর

Back to top
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum