- Shushantoনবাগত
- Posts : 2
স্বর্ণমুদ্রা : 1149
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-24
গল্পঃ চাঁদ রাত
Mon May 24, 2021 7:41 pm
মার্কেটে প্রচুর ভিড়! এত বেশি ভিড় যে দুই দোকানের মাঝখানের জায়গাটা দিয়ে হাঁটতে হয় না। দাঁড়ালে মানুষের ঠ্যালাঠেলিতেই অনেকদূর চলে আসা যায়। মুনিয়া এতদিন কিভাবে শপিং করতো সেটা ভেবেই আমার মাথা চক্কর দিচ্ছে। অবশ্য চাঁদরাত জন্য অতিরিক্ত ভিড় হতে পারে।
ভিড় থেকে কোনরকমে বেরিয়ে আমি শাড়ির দোকানে ঢুকলাম। দোকানের কর্মচারী সবাই ব্যস্ত! প্রত্যেকে একসাথে দুই থেকে তিনজন করে কাস্টমার হ্যান্ডেল করছে। আমি ফাঁকা দিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম ‘ভাই মনিপুরী শাড়ি আছে?’
লোকটা আমাকে পাত্তা দিল না। সম্ভবত সাথে কোন মেয়ে লোক না থাকার তার বিশ্বাস হয়নি যে আমি আসলেই শাড়ি কিনতে এসেছি। আমি আগের থেকে গলা আরেকটু বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম ‘মনিপুরী শাড়ি নাই না?’ এতে কাজ হলো। এতগুলো কাস্টমারের সামনে অমুক শাড়ি নাই বলে চিৎকার করাতে কয়েকজনই মাথা তুলে তাকালো। ক্যাশে বসে থাকা ভদ্রলোক আমাকে বসিয়ে নিজেই শাড়ি দেখানো শুরু করলেন।
‘কি কালার দেখবেন? ভাবীর লাইগা? নাকি বয়স্কা কেউ?’
‘জারুল রঙ আছে?’
মুনিয়ার একটা জারুল রঙের মনিপুরী কেনার ইচ্ছে অনেকদিনের। গত ঈদে কিনতে চেয়েছিল। খরচে কুলায়নি। অবশ্য কোনোবারই কুলায় না। কিছু টাকা হাতে দেবার সাথে সাথে সবার জন্য কেনাকাটার ঝামেলাটাও আমি মুনিয়ার হাতে দিয়ে দেই। ও হিসেব করে ঘুরে ঘুরে সবার জন্য কেনে। আম্মা, আব্বা, আমার দুই বোন, ছোট ভাইটা, টুসি, আমি। তারপর হাতে টাকা থাকলে নিজের জন্য কিছু একটা। ততক্ষণে মার্কেটে ঘুরে পা দুটো প্রায় অবশ। নিজের জন্য একটু ঘোরার একটু পছন্দ করে কিনবার শক্তি সামর্থ্য সবটাই শেষের পথে। হাতের কাছে পাওয়া ঐ কিছু একটা নিয়েই ফিরতে হয়। আমার আবার সেদিকে ঠিকই খেয়াল আছে, সবার জন্য কিনলো, ওর নিজের জন্যেও কিনেছে কিনা জিজ্ঞেস করি, না কিনলে বকাবকিও করি। তাই কেনে হয়তো!
আমাকে কয়েকবার বলেছিল একসাথে যেতে। সময় কোথায়? ঈদের আগে আগে অফিসে প্রচুর ব্যস্ততা! চাঁদ রাতের ইফতারটাও অফিসে সারতে হয়। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ন’টা দশটা। আজও অফিস থেকে বেড়িয়েছি আটটার পরে। মুনিয়া ফোন করেছিলো, বলেছিলো চিনি আনতে, যা চিনি আছে তাতে কম হয়ে যাবে। আসলে বলতে চেয়েছিলো তাড়াতাড়ি ফিরতে কিংবা চাঁদ রাতেও তুমি ঘরে নেই ভালো লাগছে না - এরকম কিছু! মেয়েরা বিয়ের পর খুব চাপা হয়ে যায় বোধহয়। যা বলতে চায় ঠিক সেটাই বলতে পারে না।
জারুল আর সাদার মিশেলে একটা মনিপুরী শাড়ি কিনে আমি দোকান থেকে বেরিয়ে আসলাম। মুনিয়াকে খুব মানাবে। ওর জন্য কিছু কেনা হয় না কতদিন! এবার ঈদের খরচের কিছু টাকা নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলাম। বাকিটা মুনিয়াকে দিয়ে বলেছি ‘এবার একটু চিপেচিপে খরচ করো, হাতে টাকা পয়সা তেমন নেই।‘ কাউকে বলে দিতে হবে না, আমি জানি, চিপেচিপে খরচ করলেও শেষে নিজের জন্য কিছু না কিনেই বাড়ি ফিরেছে মুনিয়া।
হিজাবের দোকানে এসে আমি বিশাল কনফিউশন খেয়ে গেলাম! কি রং কিনবো? সাদা? নাকি জারুল? মুনিয়াকে একটা ফোন করবো? না না! সাদা তো আছে মুনিয়ার, ঐ যে সেদিন জামাল ভাইয়ের বাসায় দাওয়াতে যাবার সময় পড়েছিল। হ্যাঁ! তাহলে জারুল রঙেরটাই!
একটা হিজাব কিনতে আমার আধঘণ্টার উপরে লেগে গেল। উফ! কী একটা অবস্থা! ঘেমে গেছি একদম, ক্লান্তও লাগছে। কিন্তু বিরক্ত লাগছে না। নিজের স্ত্রীর জন্য কতদিন পর কিছু কিনছি। নাকি …নাকি এই প্রথম?
কাচের চুড়ি কিনতে এসে পড়লাম আরেক বিপদে। চুড়িওয়ালা জারুল রং চেনে না। শাড়িটা বের করে দেখানোর পর বলল, ‘ও হেইডা তো লাবেন্ডার কালার ভাইজান’
ল্যাভেন্ডার বোধহয় জারুলের স্মার্ট ভার্সন! রং মিললো ঠিকই কিন্তু চুড়ির মাপ? মুনিয়ার জন্য চুড়ি কিনেছি কোনোদিন? মনে পড়ে না। এখন? চুড়ি কিনিনি, কিন্তু হাত তো ধরেছি, কয়েকবার? অনেকবার? মুনিয়া রাস্তা পার হতে ভয় পেতো, আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল গলিয়ে দেবার বদলে আমি ওর কব্জি মুঠোবন্দি করে রাস্তা পার হতাম। রাস্তায় বাবারা যেমন করে সন্তানদের হাত ধরে অতিরিক্ত সাবধান হয়। এখন অবশ্য মুনিয়া রাস্তা পার হতে পারে, হাত ধরার ছুতো পাওয়া যায় না। এখন মুনিয়া সবই পারে, স্মার্টফোনে কবিতা লিখতে লিখতে কখন বাজারের লিস্ট করা শিখে গেছে, রাত জেগে নেটফ্লিক্সে পড়ে থেকে সকাল দশটার আগে যার ঘুম ভাঙতো না, সে এখন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য নাশতা বানায়, টুসির পাতলা খিচুড়ি রেডি করে, ওকে খাওয়ায়। পৃথিবীতে সম্ভবত মেয়েরাই সবথেকে বেশি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। সৃষ্টিকর্তা পুরুষকে এই ক্ষমতা দেননি।
চুড়ি কিনে রিক্সায় উঠবার আগে ফুলের দোকান দেখলাম। মুনিয়ার জন্য কি দুটো ফুল কিনবো? মেয়েটা ফুল ভীষণ ভালোবাসে। আগে আমাকে বলতো ফুল আনতে, আমি ভুলে যেতাম, সময় হতো না বলে কাটিয়ে দিতাম। এখন ফুল আনবার বদলে সেখানে থাকে -
ডাল নেই,
মরিচ এনো,
সালাদের টমেটো ফুরিয়ে গেছে নয়তো
চাপাতা না আনলে কাল সকালে চা না খেয়ে অফিস যেতে হবে… এইসব।
আগে মুনিয়া এইসব বলতো না। অফিস থেকে ফিরবার সময় নিজেই কিনে আনতো। বিয়ের আগেই চাকরী হয়েছিল ওর। মার্কেটিং স্পেশালিস্ট পোস্ট, স্যালারি আমার কাছাকাছি। টুসি হবার পর যখন আমরা জানতে পারলাম ওর এট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট আছে, তখনও মুনিয়া ছুটিতে। বয়সের সাথে ভালো হয়ে যেতে পারে বলে ডাক্তার অভয় দিলেও মুনিয়া ভয়েই থাকলো। চাকরী ছেড়ে দিয়ে দিনরাত এক করে টুসির কাছে পড়ে থাকলো। পরে মুনিয়ার ভয়টাই সত্যি হলো অবশ্য! বয়সের সাথে ফুটোটা মিলিয়ে গেল না। কার্ডিয়াক ক্যাথেরাইজেশন করতে হলো। তারপর মুনিয়া আর ক্যারিয়ারের দিকে নজর দেয়নি। সংসারটাই করেছে মন দিয়ে। আমি কিছুটা জোর করলে হয়তো ভাবতো নিজের কথা? করিনি তো!
ফুলের দোকানেও কনফিউশন! কি ফুল কিনবো? সাদা গোলাপ? অর্কিড? গন্ধরাজ স্টিক ? না না মুনিয়ার হলুদ গোলাপ পছন্দ।
‘হলুদ গোলাপ আছে?’
‘না। সাদা লন। হলুদের মতনই। কয়টা দিতাম?’
‘না না হলুদই লাগবে। নাই?’
‘পাশের দোকানে যান। থাকনের কথা’
একটা জারুল মনিপুরী শাড়ি, হিজাব, ‘লাবেন্ডার’ চুড়ি, আর প্রায় নেতিয়ে পড়া পাঁচটা সাদা অথচ হলুদ গোলাপ নিয়ে আমি বাড়ি ফিরছি। ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ হতে চাইছে, তবুও আনন্দে আমি ঘুমুতে পারছি না।
আমি বাসের জানালা দিয়ে মাথা বের করে দিলাম। বাতাস আর বালু একসাথে আমার ক্লান্ত অবসন্ন মুখে আঘাত করছে, ঘুম কেটে যাচ্ছে। অদ্ভুতভাবে খেয়াল করলাম আমি মুনিয়াকে মিস করছি। প্রচন্ডভাবে মিস করছি। আমার মেয়ের আম্মু, আমার মুনিয়া, যার সাথে আর আধঘণ্টা পরেই আমার দেখা হবে তাকেই আমার কী ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে মুনিয়াকে না দেখলে আমি মরে যাবো।
মুনিয়া? আমি যে তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি, তোমাকে কী আমি কখনো বলেছি সে কথা?
~শেষ~
নওশীন তাসনিম
ভিড় থেকে কোনরকমে বেরিয়ে আমি শাড়ির দোকানে ঢুকলাম। দোকানের কর্মচারী সবাই ব্যস্ত! প্রত্যেকে একসাথে দুই থেকে তিনজন করে কাস্টমার হ্যান্ডেল করছে। আমি ফাঁকা দিয়ে একজনকে জিজ্ঞেস করলাম ‘ভাই মনিপুরী শাড়ি আছে?’
লোকটা আমাকে পাত্তা দিল না। সম্ভবত সাথে কোন মেয়ে লোক না থাকার তার বিশ্বাস হয়নি যে আমি আসলেই শাড়ি কিনতে এসেছি। আমি আগের থেকে গলা আরেকটু বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম ‘মনিপুরী শাড়ি নাই না?’ এতে কাজ হলো। এতগুলো কাস্টমারের সামনে অমুক শাড়ি নাই বলে চিৎকার করাতে কয়েকজনই মাথা তুলে তাকালো। ক্যাশে বসে থাকা ভদ্রলোক আমাকে বসিয়ে নিজেই শাড়ি দেখানো শুরু করলেন।
‘কি কালার দেখবেন? ভাবীর লাইগা? নাকি বয়স্কা কেউ?’
‘জারুল রঙ আছে?’
মুনিয়ার একটা জারুল রঙের মনিপুরী কেনার ইচ্ছে অনেকদিনের। গত ঈদে কিনতে চেয়েছিল। খরচে কুলায়নি। অবশ্য কোনোবারই কুলায় না। কিছু টাকা হাতে দেবার সাথে সাথে সবার জন্য কেনাকাটার ঝামেলাটাও আমি মুনিয়ার হাতে দিয়ে দেই। ও হিসেব করে ঘুরে ঘুরে সবার জন্য কেনে। আম্মা, আব্বা, আমার দুই বোন, ছোট ভাইটা, টুসি, আমি। তারপর হাতে টাকা থাকলে নিজের জন্য কিছু একটা। ততক্ষণে মার্কেটে ঘুরে পা দুটো প্রায় অবশ। নিজের জন্য একটু ঘোরার একটু পছন্দ করে কিনবার শক্তি সামর্থ্য সবটাই শেষের পথে। হাতের কাছে পাওয়া ঐ কিছু একটা নিয়েই ফিরতে হয়। আমার আবার সেদিকে ঠিকই খেয়াল আছে, সবার জন্য কিনলো, ওর নিজের জন্যেও কিনেছে কিনা জিজ্ঞেস করি, না কিনলে বকাবকিও করি। তাই কেনে হয়তো!
আমাকে কয়েকবার বলেছিল একসাথে যেতে। সময় কোথায়? ঈদের আগে আগে অফিসে প্রচুর ব্যস্ততা! চাঁদ রাতের ইফতারটাও অফিসে সারতে হয়। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ন’টা দশটা। আজও অফিস থেকে বেড়িয়েছি আটটার পরে। মুনিয়া ফোন করেছিলো, বলেছিলো চিনি আনতে, যা চিনি আছে তাতে কম হয়ে যাবে। আসলে বলতে চেয়েছিলো তাড়াতাড়ি ফিরতে কিংবা চাঁদ রাতেও তুমি ঘরে নেই ভালো লাগছে না - এরকম কিছু! মেয়েরা বিয়ের পর খুব চাপা হয়ে যায় বোধহয়। যা বলতে চায় ঠিক সেটাই বলতে পারে না।
জারুল আর সাদার মিশেলে একটা মনিপুরী শাড়ি কিনে আমি দোকান থেকে বেরিয়ে আসলাম। মুনিয়াকে খুব মানাবে। ওর জন্য কিছু কেনা হয় না কতদিন! এবার ঈদের খরচের কিছু টাকা নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলাম। বাকিটা মুনিয়াকে দিয়ে বলেছি ‘এবার একটু চিপেচিপে খরচ করো, হাতে টাকা পয়সা তেমন নেই।‘ কাউকে বলে দিতে হবে না, আমি জানি, চিপেচিপে খরচ করলেও শেষে নিজের জন্য কিছু না কিনেই বাড়ি ফিরেছে মুনিয়া।
হিজাবের দোকানে এসে আমি বিশাল কনফিউশন খেয়ে গেলাম! কি রং কিনবো? সাদা? নাকি জারুল? মুনিয়াকে একটা ফোন করবো? না না! সাদা তো আছে মুনিয়ার, ঐ যে সেদিন জামাল ভাইয়ের বাসায় দাওয়াতে যাবার সময় পড়েছিল। হ্যাঁ! তাহলে জারুল রঙেরটাই!
একটা হিজাব কিনতে আমার আধঘণ্টার উপরে লেগে গেল। উফ! কী একটা অবস্থা! ঘেমে গেছি একদম, ক্লান্তও লাগছে। কিন্তু বিরক্ত লাগছে না। নিজের স্ত্রীর জন্য কতদিন পর কিছু কিনছি। নাকি …নাকি এই প্রথম?
কাচের চুড়ি কিনতে এসে পড়লাম আরেক বিপদে। চুড়িওয়ালা জারুল রং চেনে না। শাড়িটা বের করে দেখানোর পর বলল, ‘ও হেইডা তো লাবেন্ডার কালার ভাইজান’
ল্যাভেন্ডার বোধহয় জারুলের স্মার্ট ভার্সন! রং মিললো ঠিকই কিন্তু চুড়ির মাপ? মুনিয়ার জন্য চুড়ি কিনেছি কোনোদিন? মনে পড়ে না। এখন? চুড়ি কিনিনি, কিন্তু হাত তো ধরেছি, কয়েকবার? অনেকবার? মুনিয়া রাস্তা পার হতে ভয় পেতো, আঙ্গুলের ফাঁকে আঙ্গুল গলিয়ে দেবার বদলে আমি ওর কব্জি মুঠোবন্দি করে রাস্তা পার হতাম। রাস্তায় বাবারা যেমন করে সন্তানদের হাত ধরে অতিরিক্ত সাবধান হয়। এখন অবশ্য মুনিয়া রাস্তা পার হতে পারে, হাত ধরার ছুতো পাওয়া যায় না। এখন মুনিয়া সবই পারে, স্মার্টফোনে কবিতা লিখতে লিখতে কখন বাজারের লিস্ট করা শিখে গেছে, রাত জেগে নেটফ্লিক্সে পড়ে থেকে সকাল দশটার আগে যার ঘুম ভাঙতো না, সে এখন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে সবার জন্য নাশতা বানায়, টুসির পাতলা খিচুড়ি রেডি করে, ওকে খাওয়ায়। পৃথিবীতে সম্ভবত মেয়েরাই সবথেকে বেশি পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে। সৃষ্টিকর্তা পুরুষকে এই ক্ষমতা দেননি।
চুড়ি কিনে রিক্সায় উঠবার আগে ফুলের দোকান দেখলাম। মুনিয়ার জন্য কি দুটো ফুল কিনবো? মেয়েটা ফুল ভীষণ ভালোবাসে। আগে আমাকে বলতো ফুল আনতে, আমি ভুলে যেতাম, সময় হতো না বলে কাটিয়ে দিতাম। এখন ফুল আনবার বদলে সেখানে থাকে -
ডাল নেই,
মরিচ এনো,
সালাদের টমেটো ফুরিয়ে গেছে নয়তো
চাপাতা না আনলে কাল সকালে চা না খেয়ে অফিস যেতে হবে… এইসব।
আগে মুনিয়া এইসব বলতো না। অফিস থেকে ফিরবার সময় নিজেই কিনে আনতো। বিয়ের আগেই চাকরী হয়েছিল ওর। মার্কেটিং স্পেশালিস্ট পোস্ট, স্যালারি আমার কাছাকাছি। টুসি হবার পর যখন আমরা জানতে পারলাম ওর এট্রিয়াল সেপ্টাল ডিফেক্ট আছে, তখনও মুনিয়া ছুটিতে। বয়সের সাথে ভালো হয়ে যেতে পারে বলে ডাক্তার অভয় দিলেও মুনিয়া ভয়েই থাকলো। চাকরী ছেড়ে দিয়ে দিনরাত এক করে টুসির কাছে পড়ে থাকলো। পরে মুনিয়ার ভয়টাই সত্যি হলো অবশ্য! বয়সের সাথে ফুটোটা মিলিয়ে গেল না। কার্ডিয়াক ক্যাথেরাইজেশন করতে হলো। তারপর মুনিয়া আর ক্যারিয়ারের দিকে নজর দেয়নি। সংসারটাই করেছে মন দিয়ে। আমি কিছুটা জোর করলে হয়তো ভাবতো নিজের কথা? করিনি তো!
ফুলের দোকানেও কনফিউশন! কি ফুল কিনবো? সাদা গোলাপ? অর্কিড? গন্ধরাজ স্টিক ? না না মুনিয়ার হলুদ গোলাপ পছন্দ।
‘হলুদ গোলাপ আছে?’
‘না। সাদা লন। হলুদের মতনই। কয়টা দিতাম?’
‘না না হলুদই লাগবে। নাই?’
‘পাশের দোকানে যান। থাকনের কথা’
একটা জারুল মনিপুরী শাড়ি, হিজাব, ‘লাবেন্ডার’ চুড়ি, আর প্রায় নেতিয়ে পড়া পাঁচটা সাদা অথচ হলুদ গোলাপ নিয়ে আমি বাড়ি ফিরছি। ক্লান্তিতে চোখ বন্ধ হতে চাইছে, তবুও আনন্দে আমি ঘুমুতে পারছি না।
আমি বাসের জানালা দিয়ে মাথা বের করে দিলাম। বাতাস আর বালু একসাথে আমার ক্লান্ত অবসন্ন মুখে আঘাত করছে, ঘুম কেটে যাচ্ছে। অদ্ভুতভাবে খেয়াল করলাম আমি মুনিয়াকে মিস করছি। প্রচন্ডভাবে মিস করছি। আমার মেয়ের আম্মু, আমার মুনিয়া, যার সাথে আর আধঘণ্টা পরেই আমার দেখা হবে তাকেই আমার কী ভীষণ দেখতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে মুনিয়াকে না দেখলে আমি মরে যাবো।
মুনিয়া? আমি যে তোমাকে প্রচন্ড ভালোবাসি, তোমাকে কী আমি কখনো বলেছি সে কথা?
~শেষ~
নওশীন তাসনিম
Sahin, Santo, Shuvo, Hasibul hasan, Akash, Sanjana Ferdouse, Parvez ali and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
|
|