সাদা কাগজ
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Go down
avatar
Onu kotha
শুকতারা
শুকতারা
Posts : 56
স্বর্ণমুদ্রা : 1338
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-26

সে আমি এবং বৃষ্টি Empty সে আমি এবং বৃষ্টি

Wed May 26, 2021 2:44 am
মশারী টাঙানো শেষে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি ঠিক তখনই মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম তুলি কল দিয়েছে।
কল ধরতেই তুলি জিজ্ঞেস করলো,
- কি করছো,মিহু?
- আমি খুব জরুরী কাজে ব্যস্ত আছি,তুলি।কাজটা শেষ করেই তোমাকে কল দিচ্ছি।

- আচ্ছা।কতক্ষণ লাগবে তোমার?
- বলতে পারছি না।ভাগ্য ভালো থাকলে কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে আর ভাগ্য খারাপ থাকলে সারারাতও লেগে যেতে পারে।
- ঠিক আছে, আমি অপেক্ষায় থাকবো।কাজটা শেষ করেই আমাকে কল দিও।

তুলির কল কেটে দিয়ে আমি আবার কাজে হাত লাগানো শুরু করলাম।
কাজ বলতে কয়েকটা মশা মশারী টাঙানোর সময় ভিতরে ঢুকে গেছে।সেগুলোকে খুঁজে খুঁজে তাড়ানোর চেষ্টা করছি।কিছুক্ষণ পর পর হাততালির শব্দ শুনে পাশের রুম থেকে আপু এসে বলল,
- কি হয়েছে?
এত রাতে কীসের শব্দ হচ্ছে তোর রুমে?

- আপু,বেশ কয়েকটা মশা মশারীর ভিতরে ঢুকে গেছে।এগুলোকে তাড়ানোর চেষ্টা করছি।
- তাড়ানোর কি দরকার?
মেরে ফেললেই তো হয়।

- না, মশা হত্যা করতে আমার খুব কষ্ট লাগে।

আপু ধমক দিয়ে বলল,
- শরীরের রক্ত খেয়ে নিবে, ওদের কামড়ে মারাত্মক রোগ ছড়িয়ে পরবে দেহে আর আমরা ওদের মারতে পারবো না।

- মারামারি সব সমস্যার সমাধান না আপু। শুধু শুধু ওদের হত্যা করা ঠিক না।আমাদের যেমন প্রিয় খাবার আছে তেমনি মশারও প্রিয় খাবার হচ্ছে রক্ত।আর তাদেরকে দুনিয়াতে পাঠানোই হয়েছে রক্ত চোষার জন্য।

আমার যুক্তি শুনে আপু বলল,
- তাহলে ওদের তাড়ানোর কি দরকার?
রক্ত খেতে দে।

- এতক্ষণ খেতে দিয়েছিলাম আপু।অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো না।এখন মশারী টাঙিয়েছি মানে হচ্ছে ওদের রক্ত চোষার সময় শেষ।এগুলো তো ওদের বুঝতে হবে।কয়েকটা অভদ্র মশা এখনও রক্ত চোষার জন্য ভিতরে ঢুকে পরেছে।অবশ্য মশাকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই, এটা আমাদের জাতিগত সমস্যা।যার যত বেশি আছে সে তত বেশি চায়।

আমার কথা শুনে আপু বিছানায় উঠে আমাকে নামিয়ে দিয়ে আবার নতুন করে মশারী টাঙিয়ে দিয়ে বলল,
- এবার দেখ ভিতরে মশা আছে কি না।

আমি এক মিনিট মশারীর চারপাশ ভালোভাবে লক্ষ্য করে বললাম,
- না, একটা মশাও নেই আপু।
-তাহলে এবার ঘুমা।

আপু রুম থেকে চলে যাওয়ার পর তুলিকে কল দিলাম।
ফোন ধরতেই তুলিকে বললাম,
- ঘুমিয়ে পরেছিলে?
- না, তোমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম।অনেক দিন দেখা সাক্ষাৎ হয় না। শেষ কবে দেখা হয়েছিলো মনে আছে তোমার?
- এইতো প্রায় একমাস হয়ে গেছে বোধহয়।

আমার মুখে এই কথা শুনে তুলি জোর গলায় বলল,
- আজকে রাত বারোটার পর সাইত্রিশ দিন চলে যাবে।চলো কালকে দেখা করি।
- কালকে দেখা করতে পারবো কি না এখন বলতে পারছি না।সকাল দশটার পর তোমাকে জানাচ্ছি।

- ঠিক আছে। এতক্ষণ কি এমন কাজে ব্যস্ত ছিলে যে আমার কল কেটে দিয়েছিলে?

- আর বলোনা কয়েকটা মশা খুব বিরক্ত করছিলো।এগুলোকে তাড়ানোর কাজে ব্যস্ত ছিলাম।

রাগী মেজাজে তুলি বলল,
- আমার সাথে কথা বলার থেকে মশা তাড়ানো তোমার কাছে বেশি জরুরী?
থাকো তুমি তোমার মশা নিয়ে কালকে বের হতে হবে না।

আর কোনো কথা না বলে তুলি কলটা কেটে দিলো।বুঝতে পারলাম খুব কষ্ট পেয়েছে সে।

রাগ ভাঙানোর জন্য তুলিকে মেসেজে বললাম,
-তুমি আর কতক্ষণ আমার সাথে কথা বলতে? বেশি হলে পনেরো-বিশ মিনিট।কিন্তু মশা গুলো তো সারারাত বিরক্ত করতো।এগুলোকে না তাড়িয়ে তোমার সাথে দুইমিনিট কথা বলেও তো শান্তি পেতাম না।আমাদের ভবিষ্যতের কথাবার্তার কথা চিন্তা করেই আগে মশা তাড়াচ্ছিলাম।

তুলির জবাবের আশায় থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম বুঝতে পারিনি।
যখন ঘুম ভাঙলো তখন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল আট'টা বাজে।
নয়টার সময় প্রতিদিন টিউশনি থাকে।তাই নাস্তা করে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
আজকে টিউশনির মাস শেষ হবে।যদি আজকে পেমেন্ট পেয়ে যাই তাহলে তুলিকে নিয়ে বের হওয়ার চিন্তাভাবনা আছে।খালিহাতে তুলির কাছে যেতে খুব লজ্জা লাগে। যদি কোনো আবদার করে বসে আর আমি তা রাখতে না পারি এই ভয়েই খালি হাতে তার সামনে যাই না।যদিও টঙের দোকানে মফিজ ভাইয়ের চা আর বিল্লাল মামার ফুচকা ছাড়া বড় ধরনের কোনো অবদার তুলি আমার কাছে করে না।

আজ টিউশনির টাকা পেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে তুলিকে ফোন দিতেই তুলি বলল,
- আজকে বের হবো না।
আমি বললাম,
- কেন?
এখনও কি অভিমান করে বসে আছো?

- না, শরীর ভালো লাগছে না।
- কি হয়েছে?
- তেমন কিছু না।শরীর দুর্বল লাগছে।
- ঠিক আছে।বের হতে হবে না তাহলে। আমি তোমার বাসায় আসছি।
- বাসায় আসতে হবে না।কথা দিচ্ছি কালকে বের হবো।
- আমি তোমাকে না আংকেলকে দেখার জন্য তোমাদের বাসায় আসতেছি।তোমার সাথে তো কালকে দেখা হবেই।

তুলির বাসায় ঢুকে দেখলাম আংকেল সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছেন।বাসা একদম অগোছালো।তুলিদের বাসা সব সময় সুন্দর ভাবে গোছালো থাকে।আজকে অগোছালো দেখে খুব অবাক হলাম।

আমাকে দেখে আংকেল বলল,
- এতদিন পর আমাদের কথা মনে পরলো, মিহু।ভালো আছো?
- জি,আংকেল।আপনাদের অবস্থা কেমন?

- আমি তো বেশ ভালোই আছি।কিন্তু তুলিটা কিছুদিন যাবৎ অসুস্থ।তাই বাসাটাও এলো-মেলো।

- কি হয়েছে তুলির, আংকেল?
- প্রায় এক সপ্তাহ ধরে জ্বর। এখন আবার সর্দি লেগে গেছে।

আংকেলের কথাবার্তা শুনে আমি রীতিমতো আকাশ থেকে পরলাম।কালকে রাতেও তো তুলির সাথে কথা হলো।কণ্ঠ শুনে তো কিছুই বুঝতে পারলাম না।এই মেয়ে এক সপ্তাহ ধরে অসুস্থ আমাকে বুঝতেই দেয়নি।অথচ কিছুদিন আগে যখন আমি অসুস্থ ছিলাম তখন আমার গলার কণ্ঠ শুনেই সে বুঝে গিয়েছিল আমি অসুস্থ।

- ডাক্তার দেখিয়েছিলেন, আংকেল?
- না, যেতে বলেছিলাম।আমার কথা তো শুনে না।গতকাল রাতেও তো একশো চার ডিগ্রী জ্বর ছিল।

- এখন কি করছে সে?
- একটু আগে তো আমার জন্য চা বানিয়ে ফ্লাক্সে রেখে গেলো।রুমে ঢুকার সময় আমার কানের কাছে জোরে বলে গেলো, সে এখন ঘুমাবে তাকে যেন কেউ বিরক্ত না করে।

কথাটা যে আমাকে উদ্দেশ্য করে তুলি আংকেলকে বলেছে সেটা বুঝতে আর বাকি রইলো না।কারন তুলি তো জানতোই আমি এখন তাদের বাসায় আসবো।

পত্রিকার দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে আংকেল আমাকে বললেন,
- বুঝলে মিহু পত্রিকার সব পাতাজুড়ে শুধু আর্তনাদের খবর।পত্রিকা পড়তে এখন আর ভালো লাগে না।
কিছুক্ষণ আংকেল আমাকে পত্রিকার বিশেষ শিরোনামগুলো শুনালেন।

এরপর সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমি আংকেলকে বললাম,
- আজ তাহলে উঠি আংকেল।তুলির শরীরের অবস্থা বেশি খারাপ হলে আমাকে জানাবেন।

- কিছু না মুখে দিয়েই চলে যাবে না কি?
টেবিলে দেখো তুলি চা গরম করে রেখে গেছে কিছুক্ষণ আগে।সেখান থেকে দুই কাপ চা নিয়ে আসো দুজনের জন্য।

দুইটা কাপের মধ্যে চা ঢেলে এক কাপ চা আংকেলের হাতে দিয়ে সোফায় বসে পরলাম।
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মনটা শান্ত হয়ে গেলো।তুলির হাতের চা মুখে দিয়ে যে কেউ বলে দিতে পারবে তুলি একজন রুচিশীল মহিলা।
কিন্তু আংকেল চায়ে একবার চুমুক দিয়ে মুখ সরিয়ে বললেন,
- শরীরের সাথে সাথে মেয়েটার মাথাও একদম নষ্ট হয়ে গেছে।ভুলেই গেছে চায়ে এত চিনি তো আমি কখনও খাই না।

আংকেলের কাছে চা ভালো না লাগলেও আমার কাছে বেশ ভালো লেগেছে।চা পান করে আমি বাসা থেকে বিদায় নিলাম।

রাত নয়টার দিকে আংকেলকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
- এখন তুলি কেমন আছে, আংকেল?
- আগের মতোই তো দেখলাম।আমাকে তো বললো কালকে সকালে ডাক্তারের কাছে যাবে।
- ও, আপনি নিয়ে যাবেন?
- না, সে একাই যেতে পারবে বললো।

আংকেলের সাথে কথা বলার পর তুলিকে ফোন দিয়ে বললাম,
- কেমন আছো তুলি?
- ভালো।কালকে সকালে মফিজ ভাইয়ের টঙের দোকানে চা খেতে ইচ্ছে করছে খুব।

- ঠিক আছে।কখন আসবে?
- ঠিক দশ-টায়।দেরি করো না।
- আচ্ছা। ঠিক দশ-টায় থাকবো আমি।

তুলির সাথে কথা বলে মনের অজান্তে কিছুক্ষণ মুচকি হাসলাম।আংকেল বললো কালকে সকালে তুলি ডাক্তারের কাছে যাবে আর তুলি বললো আমার সাথে দেখা করবে।
তারমানে কি আমিই তুলির ডাক্তার?

কালকে রাতে যে মেয়ে একশো চার ডিগ্রী জ্বর নিয়ে আমার সাথে কথা বলেছে সেই মেয়ে অবশ্যই আমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।তুলির ভালোবাসার অনুভূতিগুলোর কাছে আমি বরাবরই ব্যর্থ।

পরদিন সকাল ঠিক দশ-টায় আমি ডাক্তারের মতো ভাব নিয়ে টঙের দোকান্ব বসে আছি।আকাশের অবস্থা খুব খারাপ।যেকোনো সময় তীব্র বেগে বৃষ্টি শুরু হওয়ার সম্ভাবনা আছে।মাথায় প্ল্যান করে রেখেছি তুলি আসার পর তার হাতটা শক্ত করে ধরে ধমকের সুরে বলবো,
"তোমার শরীরে তো অনেক জ্বর।এরপর কিছুক্ষণ বকাবকি করবো।তারপরে অন্য আলোচনায় ফিরবো।"

সাড়ে দশটার দিকে দূর থেকে দেখলাম তুলি হেঁটে আসছে।দূর থেকে তুলিকে দেখে বেশ মায়া লাগছে।এই কয়েক দিনে তুলি অনেক শুকিয়ে গেছে।

কাছে এসে বসার পর তুলিকে জিজ্ঞেস করলাম,
- এত দেরি করলে যে?
তুলি আমার কথার তেমন গুরুত্ব না দিয়ে বলল,
- এত দেরি কোথায় ত্রিশ মিনিটই তো।আটত্রিশ দিন অপেক্ষা করতে পারলে ত্রিশ মিনিট আর কি!

তুলির কথাবার্তা শুনে ধমধমকি করতে ইচ্ছে করছে না।তবুও তার হাতটা শক্ত করে ধরে দেখলাম গায়ে অনেক জ্বর।

এরপর আহ্লাদের স্বরে বললাম,
- তোমার শরীরে তো অনেক জ্বর।
তুলি মাথা নিচু করে বলল,
- তেমন কিছু না, কালকে রাত থেকে শরীরের তাপমাত্রা একটু বেশি।
আমি তুলির দিকে তাকিয়ে ভাবছি,
মিথ্যা কথা বলার সময় মেয়েদেরকে অদ্ভুত লাগে।চোখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যা কথা বলতে পারে না ওরা।

মফিজ ভাই এসে বলল,
- চা দিমু ভাইজান?
আমি বললাম,
- হুম, তুলির জন্য আদা-লেবু আর আমার জন্য চিনি বেশি দিয়ে চা দিও।
আমার কথা শুনে তুলি বলল,
- আমি আদা-লেবু চা খাই না।
- আজকের জন্য যেতে খেতে হবে।

আমার কথা মতো মফিজ ভাই দুই কাপ চা নিয়ে আসলো।

আমি তুলির দিকে তাকিয়ে বললাম,
- আমার একটা প্রশ্নের সঠিক জবাব দিবে তুলি?
- বলো।
- আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জবাব দিতে হবে কিন্তু।
- ঠিক আছে বলো।
- তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো কেন?
আমার প্রতি তোমার অনুভূতি গুলো দেখলে আমার নিজেরই লজ্জা লাগে।

আমার চোখের দিকে তাকিয়ে তুলি বলল,
- আমি নিজেও জানি না।যদি বুঝতে পারি কেন এত আকর্ষণ তখন যদি আগ্রহ কমে যায় সেজন্য জানতেও চাই না।তবে তোমার কিছু আচরণ আমার খুব ভালো লাগে।

- আমি কি ধরনের আচরণ করি?

তুলি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
- এই কালকের কথাই ধরো।যখন তুমি বললে বাসায় আসবে আমি তোমার জন্য অসুস্থ শরীর নিয়ে চা বানালাম।বাবা তো চায়ে চিনি খায় না কিন্তু চায়ে চিনি বেশি দিয়েছিলাম তোমার কথা চিন্তা করে।ভেবেছিলাম তুমি হয়তো যাওয়ার সময় আমার দরজায় টোকা দিয়ে এক নজর দেখে যাবে।আমি হালকা সাজগোজ করে রুমে বসেছিলাম কিন্তু তুমি বাবার সাথেই দেখা করেই চলে গেলে।তোমার এই বোকার মতো আচরণ গুলো আমার খুব ভালো লাগে।

- আংকেল তো বলেছিলো তুমি ঘুমাতে যাবে বলেছিলে তখন?

- এর আগের দিন তুমি আমাকে মশার থেকে ছোট চোখে দেখেছিলে।তাই রাগ করে বলেছিলাম যেন কেউ রুমে না আসে। আমার আগের কি কোনো দাম নেই?

- অবশ্যই আছে।

- এবার তুমি আমার সম্পর্কে কিছু বলো।
- আমি তোমাকে নিয়ে অদ্ভুত স্বপ্ন দেখি।ঐ দিন দেখলাম তোমাকে নিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ সাঁতার কেটে পার হচ্ছি।কিন্তু আমার এই স্বপ্ন গুলো বাস্তবে সম্ভব না।
- সম্ভব নয় কেন?
চলো একদিন ব্রহ্মপুত্র সাঁতার কেটে পার হই।

- কিন্তু আমি তো সাঁতারই জানি না।স্বপ্ন দেখতে তো আর সাঁতার জানা লাগে না।
-তোমার স্বপ্ন গুলো তোমার মতোই অদ্ভুত।

তুলির সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ তীব্র বেগে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।
আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম,
- বৃষ্টি পরছে তুলি।চলো গাছের কাছে গিয়ে দাঁড়াই। তোমার শরীরে তো অনেক জ্বর।বৃষ্টিতে ভিজলে শরীরের অবস্থা তো আরো খারাপ হয়ে যাবে।
- তুমি যাও, আমি চা'টা শেষ করে আসছি।
- ঠিক আছে তাড়াতাড়ি শেষ করো।দুজন একসাথেই যাবো।
তুলির চা যখন একদম শেষের দিকে তখন দেখলাম বৃষ্টির দিকে কাপটা ধরলো সাথে সাথেই কাপটা বৃষ্টির পানি দিয়ে পূর্ণ হয়ে গেলো।এভাবে আরো দুই-তিনবার চায়ের কাপ পূর্ণ করলো।বুঝতে পারলাম আজকে বৃষ্টি না থামা পর্যন্ত তুলির চা শেষ হবে না।আমি একটু দূরে গাছের নিচে গিয়ে তুলির পাগলামী উপভোগ করছি।এমন সময় দশ-বারো বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে হাতে পাঁচ-ছয়টা ফুল নিয়ে আমার কাছে এসে বলল,
- ফুল কিনবেন ভাইজান?
- দাম কত?
- দশ টাকা কইরা।

- এখন আর ফুল দিয়ে মেয়েদের মন গলানো যায় নারে।দশ টাকার ফুল দিয়ে মেয়েদের মুখে হাসি ফুটানোর দিন চলে গেছে।এখন আর এই ধরনের বোকা মেয়ে দুনিয়াতে নেই।

-ফুলের সাথে বোকামির কি সম্পর্ক ভাইজান?
- ইংরেজি 'ফুল' বাংলায় এর মানে হচ্ছে বোকা।ফুল দিলে যেই মেয়েরা গলে যায় ওরা-ই হচ্ছে সত্যিকার অর্থে বোকা।

তারপর এই মেয়েকে বললাম,
- ওই যে দূরে একটা মেয়ে বসে চায়ের কাপে বৃষ্টির পানি খাচ্ছে তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করতো সে ফুল নিবে কিনা?
আমার কথা শুনে মেয়েটি তুলির কাছে গেলো।কিছুক্ষণ পর দেখলাম তুলি মেয়েটিকে নিয়ে আমার কাছে আসছে।
কাছে এসে তুলি আমাকে বলল,
- এই মেয়ের সব গুলো ফুল আমাকে কিনে দাও তো।

তুলির কথা শুনে আমি হেসে ফেললাম।
হাসতে হাসতে বললাম,
- আমি তো তোমাকে চালাক মেয়ে ভাবতাম।
- এখন কি ভাবো?
- এখন তো মনে হচ্ছে তুমি মহা বোকা।

আমার কথা শুনে বাচ্চা মেয়েটিও খিলখিলিয়ে হাসছে।
আমাদের সাথে তাল মিলিয়ে তুলিও হাসছে।তুলির হাসিটা সবচেয়ে বেশি সুন্দর কারণ সে কোনো কিছু না বুঝেই বোকার মতো হাসছে।

(সমাপ্ত)

খাদেমুল আলম মিঠুন

Sahin, Santo, Shuvo, Hasibul hasan, Nasim, Mr kiddo, Akash and লেখাটি পছন্দ করেছে

Back to top
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum