- Tothapiধুমকেতু
- Posts : 13
স্বর্ণমুদ্রা : 1334
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-26
নিয়তি
Wed May 26, 2021 2:49 am
"একটু সাহায্য করবেন? এই ঠিকানাটা আমার খুব দরকার,"
বলেই হ্যাংলা পাতলা লোকটা আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আমি যাচ্ছিলাম মায়ের ওষুধ কিনতে। গতরাত থেকে মায়ের শরীর ভীষণ খারাপ। প্রতি এক পক্ষ পর পর মাকে একটা বিশেষ ইঞ্জেকশন দিতে হয়। এর হেরফের হলেই বাঁধে বিপত্তি। শরীর জানান দেয় সে ভালো নেই। এইবারের ইঞ্জেকশন দিতে অনিবার্য কারণে বা আরো খোলাসা করে বললে আমার ভুলবশত কেনা হয় নি। গতরাতে মায়ের শরীর খারাপ দেখে আমার টনক নড়লো। তাইতো সকাল হতেই ছুটলাম ইঞ্জেকশন কিনতে। হাতে একদম সময় নেই এর মধ্যে আবার এই লোক এসে বকবক শুরু করল।
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম
—অন্য কাউকে বলুন আমার খুব তাড়া আছে"
—দয়া করুন দুই ঘন্টা থেকে চরকির মতো ঘুরছি। কেউই কিছু বলতে পারেছে না। ঠিকানা খুঁজে পাওয়া তো দূর আমি কোন পথ দিয়ে এসেছি এখন সেটাও বুঝতে পারছি না।
বলেই সে ঠিকানা লেখা চিরকুটটা বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। আমি অনিচ্ছা স্বত্তেও চিরকুটটা হাতে নিলাম। লেখাটা দিকে তাকাতেই আমার চক্ষু কপালে। কি লেখা এতে! কি ভাষা এটা? এমন অদ্ভুত সব অক্ষর আমি জীবনে দেখি নি। আমি গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম
—আপনি সুস্থ তো? নাকি মাথায় কোন গন্ডগোল আছে? এসব কি লিখে এনে মানুষজনকে দেখাচ্ছেন। পড়তে না পারলে বলবে কি করে ঠিকানাটা কোথায়? মশকারা করার জায়গা পান না!
লোকটা চোখ বড় বড় করে বলল
— বলছেনটা কি আপনি? আপনি পড়তে পারছেন না এখানে কি লিখা? আপনি কি মূর্খ!
একে তো দেরি করিয়ে দিলো এর উপর ব্যাটা বলে আমি নাকি মূর্খ! মেজাজটাই বিগড়ে গেল। বিগড়ানোর ব্যাপারে আমার মেজাজ আবার দক্ষ। গলার স্বর খানিক বাড়িয়ে বললাম
—না পারছি না। আপনার এই ঐশ্বরিক লেখা পড়ার মতো জ্ঞান আমার নেই। আমাকে ক্ষমা করবেন।
লোকটা নিশ্চয়ই প্রমোদ গুনলো। তাই এবার হাত জোর করে নরম গলায় বলে
—ভাই চটবেন না প্লিজ।এই সাহায্যটা করুন। এই ঠিকানায় না যেতে পারলে আমার আর চাকরি থাকবে না। না খেতে পেরে মারাই যাবো। এই বার আর কেউ বাঁচাতে পারবে না আমায়।
এই কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লো। এমন দৃশ্য দেখে মায়া না হয়ে পারে? আমিও সেই ফাঁদে পড়লাম। বললাম
—আচ্ছা আমি না হয় পড়তে পারছি না। আপনি পড়ুন লেখাটা। আমি বলে দিচ্ছি ঠিকানাটা এই এলাকায় কিনা
—হ্যাঁ সেই ভালো, সেই ভালো, বলে সে চিরকুটের ঠিকানাটা বলল।
ঠিকানা শুনে আমি স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এই অদ্ভুত লোকটা যে ঠিকানার কথা বলল সেটা আমার বাসার ঠিকানা।যেখানে আমি, মা আর আমার ছোট বোন রুনু থাকি। কি কাজ তার আমার বাসায়? আবার বলছে আমার বাসায় যেতে না পারলে তার চাকরি চলে যাবে! আনমনেই জিজ্ঞেস করলাম
-এই ঠিকানায় আপনি কার কাছে এসেছেন? কি দরকার?
-একটা কাজ ছিল,নাহার বেগমের কাছে। আপনি চেনেন এই ঠিকানা?
নাহার বেগম আমার মা। কিন্তু আমার মুমূর্ষু মায়ের কাছে উনার কি কাজ থাকতে পারে?এই লোকের চেহারা আমি বাপের জন্মে দেখেছি বলে তো মনে হয় না। আমি একটু ভেবে বললাম-
-হ্যাঁ চিনি ঠিকানাটা। তবে কি দরকার তা না বললে বলা যাবে না।
লোকটা এক ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
-আপনাকে বলবো কেন? যার সাথে দরকার তাকেই বলবো।
- আচ্ছা তবে আমি চললাম। দেখুন, এতোক্ষণ ঘুরলেন কিন্তু কেউ আপনাকে সাহায্য করতে পারল না। আর এদিকটায় এখন আমি ছাড়া তেমন কাউকে দেখছি না যে আপনাকে সাহায্য করবে। আপনি বেকার সময় নষ্ট করছেন। কারণটা বলে দিন। আমিও ঠিকানা কোথায় বলে দিচ্ছি। আমার হাতে একদম সময় নেই।
লোকটা ঘড়ি দেখলো।তারপর হড়বড় করে বলল,
-সময় তো আমার কাছেও নেই। আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে এই ঠিকানায় না যেতে পারলে বিরাট গন্ডগোল হয়ে যাবে, পুরো সিস্টেমটা ভেঙ্গে পড়বে।
আমি লোকটার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না। কিসের সিস্টেম, কিসের গন্ডগোল।
আমি কৌতুহলী হয়ে উঠলাম।
- আপনার হাতেও সময় নেই আমার হাতেও সময় নেই। তাই ভণিতা না করে খোলাসা করে বলুন কি দরকার। আমি নাহার বেগমের কাছের লোক। আমাকে নিশ্চিন্তে বলতে পারেন।
আমার কথা তার কানে গিয়েছে বলে মনে হয় না। সে ঘড়ি দেখছে আর বিড়বিড় করে বলছে
-আর তিন মিনিট। তিন মিনিট পরেই তার অন্তর্ধান নিশ্চিত করতে হবে। নাহলে গন্ডগোল সব গন্ডগোল। তার ছেলেকেই বা খুঁজে পাবো কি করে। তাকে আটকাতেই হবে। ইঞ্জেকশন দেওয়া যাবে না। যাবে না। আমার চাকরি বাঁচাতেই হবে।
আমার বুক ধক করে উঠল। যা শুনলাম তা কি ঠিক শুনলাম? কার অন্তর্ধানের কথা বলছে? আমাকেই বা ইঞ্জেকশন কেনা থেকে আটকাবে কেন। আর কিছু ভাবতে পারলান না।তার আগেই রুনুর ফোন এলো।
-হ্যালো ভাইয়া, কই তুই, মায়ের অবস্থা ভালো না। শ্বাস নিতে পারছে না। তাড়াতাড়ি আয়, আমার খুব ভয় করছে।
আমার সারা শরীরে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। লোকটা আনমনে গুনছে আর পাঁচ সেকেন্ড, আর চার সেকেন্ড....
আমার এই চার সেকেন্ডের মধ্যেই দশ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে মন চাইছে। মাকে আমি হারাতে পারবো না। আমি কেমন করে ভুলে গেলাম এই মাসের ইঞ্জেকশন কেনার কথা! সব আমার দোষ। মায়ের কিছু হয়ে গেলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।
আমার পা চলছে না। কিন্তু আমাকে পারতেই হবে। সমস্ত শক্তি দিয়ে পা বাড়ালাম। চকিতে একবার লোকটার দিকে তাকালাম। সে এখনো বিড়বিড় করে সময় গুনছে।
আমি প্রাণপণে দৌড়াচ্ছি। দশ মিনিটের পথ দৌড়ে আসলাম সাড়ে ছয় মিনিটে। তবে লাভ হলো না। মা আর এই পৃথিবীতে নেই। রুনু আর আমাকে অনাথ করে দিয়ে মা বিদায় জানিয়েছে পৃথিবীকে।
প্রকৃতি তার সিস্টেমের হেরফের করে নি। এই সিস্টেম ঠিক রাখতে প্রকৃতি আমায় ভুলিয়ে দিল ইঞ্জেকশন কেনার কথা, ঐ অর্ধপাগল লোকটা বকবক করে দেরি করিয়ে দিল, আর মা চলে গেল। সব যেন আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। যেন এমনটা না হলে সব গন্ডগোল হয়ে যেত। আমরা সবাই এই প্রকৃতির হাতের পুতুল। যেমন চালাবে তেমন চলবে।
কিন্তু ঐ লোকটা? কে ছিল সে? প্রকৃতির সিস্টেম বজায় রাখতে তার এতো কিসের দায়। প্রকৃতি কি তাকে এই সিস্টেমের রক্ষক নিয়োগ করেছে? তার পেশা কি? কোথায় কাজ করে সে?
************************
"এই যে খুকি তোমার বাবা আজ আসতে পারবে না। বলেছে তোমাকে বলে দিতে আজকে যাতে তুমি স্কুল ভ্যানে করে চলে যাও", কথাটা বলে হ্যাংলা পাতলা লোকটা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে বাচ্চাটির দিকে।
"আচ্ছা", বলে খুকিটি বেণি দোলাতে দোলাতে স্কুল ভ্যানে উঠে পড়লো।
কিছুক্ষণ পরেই সংবাদ শিরোনামে দেখালো আজকে দুপুর বারোটার দিকে স্কুল ভ্যানের সাথে গাড়ির সংঘর্ষে ৭ জন নিহত হয়েছে।
স্কুল ভ্যানে খুকির নিথর দেহটি শূন্যে চেয়ে আছে। আর গাড়িতে তার বাবা। বাবা যাচ্ছিল হন্তদন্ত হয়ে খুকিকে স্কুল থেকে আনতে। আজ বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটা নিশ্চয় একা একা দাঁড়িয়ে আছে। ভাবতে ভাবতে খুকির বাবা কখন যে স্কুল ভ্যানের সামনে এসে পড়েছে সেই খেয়াল নেই। তারপর সবটা প্রকৃতির নিয়ম।
আচ্ছা মারা যাওয়ার মুহূর্তে খুকি কি সেই লোকটাকে দেখতে পেয়েছে? হ্যাঁ তো। লোকটা ঘড়িতে সময় মিলিয়ে নিচ্ছিল। এক সেকেন্ডও হেরফের হয়নি। প্রকৃতির সিস্টেমটার ব্যালেন্স বজায় ছিল।
খুকি যদি আজকে লোকটার কথা শুনে স্কুল ভ্যানে না যেত তবে কি বিপত্তিটাই না হতো। সে প্রকৃতির সিস্টেমকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে বেঁচে থাকতো। তা হবে কেন? নিয়তি বলে তো একটা বস্তু থাকে, নাকি?
——তানযীলা তারাইয়্যান——
বলেই হ্যাংলা পাতলা লোকটা আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। আমি যাচ্ছিলাম মায়ের ওষুধ কিনতে। গতরাত থেকে মায়ের শরীর ভীষণ খারাপ। প্রতি এক পক্ষ পর পর মাকে একটা বিশেষ ইঞ্জেকশন দিতে হয়। এর হেরফের হলেই বাঁধে বিপত্তি। শরীর জানান দেয় সে ভালো নেই। এইবারের ইঞ্জেকশন দিতে অনিবার্য কারণে বা আরো খোলাসা করে বললে আমার ভুলবশত কেনা হয় নি। গতরাতে মায়ের শরীর খারাপ দেখে আমার টনক নড়লো। তাইতো সকাল হতেই ছুটলাম ইঞ্জেকশন কিনতে। হাতে একদম সময় নেই এর মধ্যে আবার এই লোক এসে বকবক শুরু করল।
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম
—অন্য কাউকে বলুন আমার খুব তাড়া আছে"
—দয়া করুন দুই ঘন্টা থেকে চরকির মতো ঘুরছি। কেউই কিছু বলতে পারেছে না। ঠিকানা খুঁজে পাওয়া তো দূর আমি কোন পথ দিয়ে এসেছি এখন সেটাও বুঝতে পারছি না।
বলেই সে ঠিকানা লেখা চিরকুটটা বাড়িয়ে দিল আমার দিকে। আমি অনিচ্ছা স্বত্তেও চিরকুটটা হাতে নিলাম। লেখাটা দিকে তাকাতেই আমার চক্ষু কপালে। কি লেখা এতে! কি ভাষা এটা? এমন অদ্ভুত সব অক্ষর আমি জীবনে দেখি নি। আমি গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম
—আপনি সুস্থ তো? নাকি মাথায় কোন গন্ডগোল আছে? এসব কি লিখে এনে মানুষজনকে দেখাচ্ছেন। পড়তে না পারলে বলবে কি করে ঠিকানাটা কোথায়? মশকারা করার জায়গা পান না!
লোকটা চোখ বড় বড় করে বলল
— বলছেনটা কি আপনি? আপনি পড়তে পারছেন না এখানে কি লিখা? আপনি কি মূর্খ!
একে তো দেরি করিয়ে দিলো এর উপর ব্যাটা বলে আমি নাকি মূর্খ! মেজাজটাই বিগড়ে গেল। বিগড়ানোর ব্যাপারে আমার মেজাজ আবার দক্ষ। গলার স্বর খানিক বাড়িয়ে বললাম
—না পারছি না। আপনার এই ঐশ্বরিক লেখা পড়ার মতো জ্ঞান আমার নেই। আমাকে ক্ষমা করবেন।
লোকটা নিশ্চয়ই প্রমোদ গুনলো। তাই এবার হাত জোর করে নরম গলায় বলে
—ভাই চটবেন না প্লিজ।এই সাহায্যটা করুন। এই ঠিকানায় না যেতে পারলে আমার আর চাকরি থাকবে না। না খেতে পেরে মারাই যাবো। এই বার আর কেউ বাঁচাতে পারবে না আমায়।
এই কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লো। এমন দৃশ্য দেখে মায়া না হয়ে পারে? আমিও সেই ফাঁদে পড়লাম। বললাম
—আচ্ছা আমি না হয় পড়তে পারছি না। আপনি পড়ুন লেখাটা। আমি বলে দিচ্ছি ঠিকানাটা এই এলাকায় কিনা
—হ্যাঁ সেই ভালো, সেই ভালো, বলে সে চিরকুটের ঠিকানাটা বলল।
ঠিকানা শুনে আমি স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এই অদ্ভুত লোকটা যে ঠিকানার কথা বলল সেটা আমার বাসার ঠিকানা।যেখানে আমি, মা আর আমার ছোট বোন রুনু থাকি। কি কাজ তার আমার বাসায়? আবার বলছে আমার বাসায় যেতে না পারলে তার চাকরি চলে যাবে! আনমনেই জিজ্ঞেস করলাম
-এই ঠিকানায় আপনি কার কাছে এসেছেন? কি দরকার?
-একটা কাজ ছিল,নাহার বেগমের কাছে। আপনি চেনেন এই ঠিকানা?
নাহার বেগম আমার মা। কিন্তু আমার মুমূর্ষু মায়ের কাছে উনার কি কাজ থাকতে পারে?এই লোকের চেহারা আমি বাপের জন্মে দেখেছি বলে তো মনে হয় না। আমি একটু ভেবে বললাম-
-হ্যাঁ চিনি ঠিকানাটা। তবে কি দরকার তা না বললে বলা যাবে না।
লোকটা এক ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
-আপনাকে বলবো কেন? যার সাথে দরকার তাকেই বলবো।
- আচ্ছা তবে আমি চললাম। দেখুন, এতোক্ষণ ঘুরলেন কিন্তু কেউ আপনাকে সাহায্য করতে পারল না। আর এদিকটায় এখন আমি ছাড়া তেমন কাউকে দেখছি না যে আপনাকে সাহায্য করবে। আপনি বেকার সময় নষ্ট করছেন। কারণটা বলে দিন। আমিও ঠিকানা কোথায় বলে দিচ্ছি। আমার হাতে একদম সময় নেই।
লোকটা ঘড়ি দেখলো।তারপর হড়বড় করে বলল,
-সময় তো আমার কাছেও নেই। আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে এই ঠিকানায় না যেতে পারলে বিরাট গন্ডগোল হয়ে যাবে, পুরো সিস্টেমটা ভেঙ্গে পড়বে।
আমি লোকটার কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না। কিসের সিস্টেম, কিসের গন্ডগোল।
আমি কৌতুহলী হয়ে উঠলাম।
- আপনার হাতেও সময় নেই আমার হাতেও সময় নেই। তাই ভণিতা না করে খোলাসা করে বলুন কি দরকার। আমি নাহার বেগমের কাছের লোক। আমাকে নিশ্চিন্তে বলতে পারেন।
আমার কথা তার কানে গিয়েছে বলে মনে হয় না। সে ঘড়ি দেখছে আর বিড়বিড় করে বলছে
-আর তিন মিনিট। তিন মিনিট পরেই তার অন্তর্ধান নিশ্চিত করতে হবে। নাহলে গন্ডগোল সব গন্ডগোল। তার ছেলেকেই বা খুঁজে পাবো কি করে। তাকে আটকাতেই হবে। ইঞ্জেকশন দেওয়া যাবে না। যাবে না। আমার চাকরি বাঁচাতেই হবে।
আমার বুক ধক করে উঠল। যা শুনলাম তা কি ঠিক শুনলাম? কার অন্তর্ধানের কথা বলছে? আমাকেই বা ইঞ্জেকশন কেনা থেকে আটকাবে কেন। আর কিছু ভাবতে পারলান না।তার আগেই রুনুর ফোন এলো।
-হ্যালো ভাইয়া, কই তুই, মায়ের অবস্থা ভালো না। শ্বাস নিতে পারছে না। তাড়াতাড়ি আয়, আমার খুব ভয় করছে।
আমার সারা শরীরে একটা শীতল স্রোত বয়ে গেল। লোকটা আনমনে গুনছে আর পাঁচ সেকেন্ড, আর চার সেকেন্ড....
আমার এই চার সেকেন্ডের মধ্যেই দশ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে মন চাইছে। মাকে আমি হারাতে পারবো না। আমি কেমন করে ভুলে গেলাম এই মাসের ইঞ্জেকশন কেনার কথা! সব আমার দোষ। মায়ের কিছু হয়ে গেলে নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।
আমার পা চলছে না। কিন্তু আমাকে পারতেই হবে। সমস্ত শক্তি দিয়ে পা বাড়ালাম। চকিতে একবার লোকটার দিকে তাকালাম। সে এখনো বিড়বিড় করে সময় গুনছে।
আমি প্রাণপণে দৌড়াচ্ছি। দশ মিনিটের পথ দৌড়ে আসলাম সাড়ে ছয় মিনিটে। তবে লাভ হলো না। মা আর এই পৃথিবীতে নেই। রুনু আর আমাকে অনাথ করে দিয়ে মা বিদায় জানিয়েছে পৃথিবীকে।
প্রকৃতি তার সিস্টেমের হেরফের করে নি। এই সিস্টেম ঠিক রাখতে প্রকৃতি আমায় ভুলিয়ে দিল ইঞ্জেকশন কেনার কথা, ঐ অর্ধপাগল লোকটা বকবক করে দেরি করিয়ে দিল, আর মা চলে গেল। সব যেন আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। যেন এমনটা না হলে সব গন্ডগোল হয়ে যেত। আমরা সবাই এই প্রকৃতির হাতের পুতুল। যেমন চালাবে তেমন চলবে।
কিন্তু ঐ লোকটা? কে ছিল সে? প্রকৃতির সিস্টেম বজায় রাখতে তার এতো কিসের দায়। প্রকৃতি কি তাকে এই সিস্টেমের রক্ষক নিয়োগ করেছে? তার পেশা কি? কোথায় কাজ করে সে?
************************
"এই যে খুকি তোমার বাবা আজ আসতে পারবে না। বলেছে তোমাকে বলে দিতে আজকে যাতে তুমি স্কুল ভ্যানে করে চলে যাও", কথাটা বলে হ্যাংলা পাতলা লোকটা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে বাচ্চাটির দিকে।
"আচ্ছা", বলে খুকিটি বেণি দোলাতে দোলাতে স্কুল ভ্যানে উঠে পড়লো।
কিছুক্ষণ পরেই সংবাদ শিরোনামে দেখালো আজকে দুপুর বারোটার দিকে স্কুল ভ্যানের সাথে গাড়ির সংঘর্ষে ৭ জন নিহত হয়েছে।
স্কুল ভ্যানে খুকির নিথর দেহটি শূন্যে চেয়ে আছে। আর গাড়িতে তার বাবা। বাবা যাচ্ছিল হন্তদন্ত হয়ে খুকিকে স্কুল থেকে আনতে। আজ বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল। মেয়েটা নিশ্চয় একা একা দাঁড়িয়ে আছে। ভাবতে ভাবতে খুকির বাবা কখন যে স্কুল ভ্যানের সামনে এসে পড়েছে সেই খেয়াল নেই। তারপর সবটা প্রকৃতির নিয়ম।
আচ্ছা মারা যাওয়ার মুহূর্তে খুকি কি সেই লোকটাকে দেখতে পেয়েছে? হ্যাঁ তো। লোকটা ঘড়িতে সময় মিলিয়ে নিচ্ছিল। এক সেকেন্ডও হেরফের হয়নি। প্রকৃতির সিস্টেমটার ব্যালেন্স বজায় ছিল।
খুকি যদি আজকে লোকটার কথা শুনে স্কুল ভ্যানে না যেত তবে কি বিপত্তিটাই না হতো। সে প্রকৃতির সিস্টেমকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে বেঁচে থাকতো। তা হবে কেন? নিয়তি বলে তো একটা বস্তু থাকে, নাকি?
——তানযীলা তারাইয়্যান——
Tothapi, Sahin, Santo, Shuvo, Hasibul hasan, Nasim, Mr kiddo and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum
|
|