সাদা কাগজ
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Go down
avatar
Ornabi
নবাগত
নবাগত
Posts : 1
স্বর্ণমুদ্রা : 1114
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-29

ভয় - অর্ণবি  Empty ভয় - অর্ণবি

Sat May 29, 2021 2:00 pm

_ “ অভি ! কি হয়েছে? ওই ভাবে বসে আছো কেনো ? ঘুমাও নি ?” ঘুম জড়ানো স্বরে কথাগুলো বলতে বলতে বিছানার ওপর উঠে বসলো পর্না।
_ “ দেখছি..” অভির দৃষ্টি খানিক বিহ্বল।
_ “ কি দেখছো” ? অন্ধকার বেডরুমটার চারপাশে একবার চোখবুলিয়ে প্রশ্ন করে পর্ণা।
_ “ তোমাকে দেখছি। কি নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিলে.. ছোট্ট ছোট্ট নিশ্বাস পড়ছিল.. প্রাণভরে দেখছিলাম তোমাকে । কি জানি আর কতদিন দেখতে পারবো! হয়তো কালকেই .. মরবার সময় ভীষণ কষ্ট হয় জানো.. দমবন্ধ হয়ে আসে.. হাঁ করে নিশ্বাস নিতে হয়.. খুব কষ্ট হয়”। অভীক কণ্ঠে বিষন্নতা।
_ “ কিচ্ছু হবে না তোমার.. এসো, আমার কাছে এসো” গুটি শুটি মেরে পর্নার বুকের কাছে সরে এলো অভীক।
_ “ আমার ভীষণ ভয় করছে পর্না.. ওই লোকটার কথাগুলো যদি সত্যি হয়!”
_ “ ওরা সব বাজে কথা বলে, ওসব মনে এনো না। এখন চোখটা বন্ধ করতো.. এই যে আমি তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি”। কম্বলটা অভীকের বুক অবধি টেনে, নিচু সুরে গান করতে করতে অভির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে পর্না। অভির বিনিদ্র দুই চোখ তখন সিলিংয়ের দিকে নিবদ্ধ।

_ “ টেস্টের রিপোর্টগুলো ঠিক আছে মোটা মুটি.. প্রেসারটা হাই সামান্য.. স্ট্রেস নেওয়া যাবেনা.. ফাস্টিংটা টেস্ট করেনি,.. কাল ফাস্টিংয়ের সুগার লেভেলটা একশো কুড়ি ছিল..” সকাল থেকে অভীকের এই অযাচিত ব্যস্ততা, চুপচাপ দেখতে দেখতে বাড়ির সব কাজ একা হাতে সামলাচ্ছিল পর্না। একটা কথাও বলেনি। বার দুই তিথির ঘরে গিয়ে, তিথিকে স্কুলের জন্য তৈরী করে, নিজে অফিসের জন্য তৈরি হয়ে বেরোতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে অভীক বলে উঠলো,
_ “ একি ! কোথায় যাচ্ছো?”
_ “ আমি তিথিকে স্কুলে ছেড়ে অফিসে যাচ্ছি.. তুমি ওকে পিকআপ করে নিও..প্লিজ.. আজ কিন্তু ওর ড্রইং ক্লাস আছে ..” তিথির ব্যাগে লঞ্চবক্স প্যাক করতে করতে উত্তর দিল পর্না।
_ “ ইম্পসিবল, আমাকে একা রেখে কোথাও যাবে না , আ..মি একা থাকতে পারবো না..একা থাকলেই আমার ভীষণ ভয় করে.. যদি কিছু হয়ে যায়, যদি মরে যাই, কেউ তো থাকবে না তখন!..” ঘরের চারদিকে চোখ বুলিয়ে ভয়ার্ত কন্ঠে বলে ওঠে অভীক। কঠিন কিছু বলতে গিয়েও নিজেকে সামলে নিলো পর্না। ও জানে ওকে এই মুহূর্তে শান্ত থাকতে হবে। এগিয়ে গিয়ে অভীকের কাঁধে হাত রাখলো পর্না।
_ “ কামডাউন.. কিছু হবে না। ব্রেকফাস্ট করে, মেডিসিন নিয়ে রেস্ট নাও.. ভালো লাগবে”।
_ “ মাত্র কয়েক দিনের তো ব্যাপার পর্না। না গেলেই নয়”? অভীকের কণ্ঠে মিনতির সুর।
_ “ না গেলেই নয়.. তিথির এক্সাম নেক্সট মন্থে.. তুমি আজ এক মাস হলো উইদাউট পে লিভে.. এদিকে বাড়ির ই. এম. আই, গাড়ির ই. এম. আই.. তিথির স্কুল ফি, টিউশন ফি, কোনোটাই তো থেমে নেই। অলরেডি দশ দিন ছুটি করেছি শুধু তোমার অনুরোধ রাখতে.. আর পারছি না। আজ যেতেই হবে। একটু থাকো.. আমি ফিরে আসবো। আর তুমি একা কোথায়? এইতো জুডো আছে তো”। অভীকের গা ঘেঁষে দাড়ালো এক ল্যাব্রাডার। অভীকের পায়ের কাছে মুখ ঘষছে আহ্লাদে। অভীকের মুখ জুড়ে গাঢ় অন্ধকার তখন।

_ “ কতদিন ধরে এরকম চলছে?”
_ “ লাস্ট মন্থ থেকে” একটু থেমে, লম্বা শ্বাস ছেড়ে পর্না বলে,
“এবার অনেকটা বাড়াবাড়ি করছে, প্রথম দিকে গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করে অফিসে যাতায়াত করছিলো, তারপর বললো রাস্তায় বেরোলে যদি অ্যাক্সিডেন্ট হয়, বাড়ি থেকেই কাজ করি, আমি ভাবলাম বেশ, তাই করুক। তারপর বললো, কাজের খুব চাপ স্ট্রেস বেড়ে যাচ্ছে প্রেসার হাই স্ট্রোক হয়ে যাবে , বুঝিয়ে কাজ হলো না, অফিস থেকে ছুটি নিলো, সারাক্ষণ প্যানিক করেছে, দরজা জানলা খুলতে দিচ্ছে না, বাইরে বেরোতে দিচ্ছে না, কাজের লোকটাকে অবধি ঢুকতে দিচ্ছে না”।
গালে হাত দিয়ে , এতক্ষন পর্নার কথা গুলো মন দিয়ে শুনছিলেন সাইকোলজিস্ট ডক্টর সোম। সমস্ত শুনে বললেন,
_ “ থানাটো ফোবিয়া আবার ট্রিগার করেছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। হঠাৎ এতো বছর বাদে! আমি ভাবছি কি এমন ঘটনা ঘটলো?”
_ “ দোষটা আমারই ছিল। আমাদের বাড়ির উল্টোদিকের রাস্তায় কদিন ধরেই জটা জুটো ধরি, এক কাপালিক গোত্রের লোক কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখছিলাম। কপালে সিঁদুরের টিপ, পরনে লাল পোশাক । ঘাড় তুলে আমাদের দোতলার দিকে তাকিয়ে থাকতো। সারা দিন। এমনকি রাতের বেলাতেও। ব্যাপারটা অস্বস্তিকর। অভীককে বলাতে, ও কথা বলতে গেলো লোকটার সাথে। কিছুক্ষন বাদে ফিরে এলো, দেখলাম ওর মুখটা কালো হয়েগেছে। ঘামছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম , কি হয়েছে? এমন করছ কেন? ও বললো আজ কত তারিখ, আমি বললাম, আজ সেকেন্ড ফেব্রুয়ারি কেন? আরো ঘামতে লাগলো.. ঘামতে ঘামতে বললো, ওই .. লোকটা বলেছে , এই মাসের মধ্যে আমার মৃত্যু..নিশ্চিত। আমি ওকে অনেক বোঝালাম,.. কোনও কাজ হলোনা । সব কিছু আবার আগের মত শুরু করেছে”। কথা শেষ করে ছোট্ট শ্বাস ছাড়ে পর্না।
_ “ হুম , এখন বুঝলাম”। চোখ থেকে চশমা নামাতে নামতে বললেন, ডক্টর সোম।
_ “ ওর একমাত্র অবলম্বন, মা কে যখন কুড়ি বছর বয়সে চোখের সামনে যন্ত্রণায় ছট্ফট্ করতে করতে মারা যেতে দেখে তখন থেকেই মৃত্যু ওর মনের ওপর প্রভাব ফেলেছিল। বছর চারেক আগে , ওর ভাইয়ের অ্যাকসিডেন্ট.. অ্যাম্বুলেন্সে ওর কোলের ওপর মাথা রেখে শেষ বরের মত নিশ্বাস নিয়েছিল। তারপর থেকেই তো ফোবিয়াটা। দু বছর কোনো সমস্যা ছিল না, আপনার ট্রিটমেন্টেরেও কোনো প্রয়োজন হয় নি। কিন্তু আবার ও ওরকম হয়ে যাচ্ছে। আমি জানি না এবার ওকে ফিরিয়ে আনতে পারবো কিনা”। ভেঙে পড়েছে পর্না।
_ “ ধৈর্য্য ধরো.. তোমাকেই তো এই ক্রাইসিস থেকে ওকে বের করে আনতে হবে.. আগের বার পেরেছিলে, এবারও পারবে। কি জানতো, মৃত্যু ভয় হলো মারাত্মক। একবার মনের ভিতর ঢুকলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল”।

গাড়ি থেকে নেমে একবার উল্টোদিকের ফুটপাথ টা দেখে নিলো পর্না। আর কেউ দাঁড়িয়ে নেই সেখানে। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতে অবাক হয়েগেলো, বাড়ি অন্ধকার। বুকের ভিতর ধক করে ওঠে পর্ণার।
_ “ অভি..অভি” নাম ধরে ডাকতে ডাকতে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠে হতবাক হয়েযায় পর্ণা । চাপ চাপ রক্ত পড়েআছে দরজার কাছে। গোঙানির শব্দ আসছে পাশের ঘর থেকে। ঘরের মুখে জুডো পরে আছে মুখ থুবড়ে.. রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীর। দেহে তখনও প্রাণ আছে প্রাণীটার। কাছেই পড়ে আছে ধারালো ছুরি, খাটের ওপর গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে অভীক। ঠক ঠক করে কাঁপছে। রাগে জ্বলতে জ্বলতে অভিকের দিকে ছুটে যায় পর্ণা ।
_ “ কি করেছ তুমি? তুমি কি পুরোই পাগল হয়েগেছ? তোমার স্থান এখানে না অ্যাসাইল্যামে হাওয়া উচিৎ”।
_ “ এই. এই দ্যাখো.. আমার হাতে ও দাঁত বসিয়ে দিয়েছে.. তুমি জানো না কুকুরে কামড়ালে কি হয়? খুব মারাত্মক রোগ হয়, জলাতঙ্ক!” বিস্ফারিত চোখে কথা গুলো বলতে বলতে, অভীক টলতে টলতে এগিয়ে আসতে থাকে পর্ণার দিকে। কয়েক ঘন্টায় একি চেহারা হয়েছে ওর! চুল গুলো উস্কখুস্ক, চোখের তলায় কে যেন আলকাতরা লেপে দিয়েছে। পর্ণা এগিয়ে যায় অভীককে শান্ত করবার জন্যে।
_ “ তার জন্যে তুমি এই ভাবে..”
কিন্তু ততক্ষণে অভীক হাতের সামনে থাকা ছুরিটা উঠিয়ে নিয়েছে ,
_ “ আর এই মৃত্যুভয় নিয়ে বেঁচে থাকতে পারছি না আমি .. আর পারছি না এর থেকে বরং শেষ করে দি নিজেকে” ছুটে গিয়ে পর্ণা ধরে ফেলে অভীককে। অভীক জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে পর্ণার কোলে।

রান্না ঘর থেকে আরেকবার ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো পর্ণা । মেয়ে আর বাবা খুনসুটিতে মেতেছে। মনে মনে একটা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ল। এ দশ দিন যা গেল। হসপিটালে ডক্টর সোমের আন্ডারে সেশন গুলো সত্যি কাজে দিয়েছে। জুডোর গায়ে ওষুধ লাগাতে লাগাতে ওই দিনের কথা মনে করে আবারও শিউরে উঠলো পর্ণা ।
_ “ কি ভাবছো বলতো? কখন থেকে কফি চাইছি.. আরে আর কিছু হবে না। কাল তো আঠাশে ফেব্রুয়ারি ছিল,মাস শেষ। আমার কিচ্ছু হয় নি.. ফাঁড়া কেটে গেছে.. ওই সব বাবা টাবা সব বুজরুকি বুঝলে, আমিই ওসব সিরিয়াসলি নিয়ে কি সব বাজে কান্ড। যাই হোক, আমার গরম লাগছে এই এত্ত হুড়োহুড়ি করে না তিথিটা.. আমি ঘরে গেলাম বুঝলে, ফ্যান চালাচ্ছি, তিথি যেন না আসে .. ওর যা ঠান্ডা লাগার ধাত” জুডোর গায়ে হাত বুলিয়ে অভীক একটা গানের সুর ভাঁজতে ভাঁজতে ভিতরে চলে গেল। কি একটা বলতে যাচ্ছিল পর্ণা, চুপ করে গেল। আজ যে ঊনত্রিশে ফেব্রুয়ারি। হাতের কাছে ফোন বা ল্যাপটপ না থাকার জন্য অভীক হয়ত খেয়াল করেনি আজকের তারিখ। ঘড়ির দিকে তাকায় পর্না, রাত নটা, আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারলেই তো। নিজের অজান্তেই পর্ণার চোখ চলে যায় জানলার বাইরে উল্টোদিকের ফুটপাথে। সেই.. সেই কাপালিকটা আবার দাঁড়িয়ে আছে, তাকিয়ে আছে এই দিকে। এক অজানা ভয়ে বুকের ভিতর তোলপাড় করে ওঠে পর্নার। ঠিক তখনই বেড রুম থেকে ভেসে আসে এক প্রবল শব্দ। তার সাথে অভীকের যন্ত্রণাময় চিৎকার “ আ.. আ.. আ”। পর্না, পাগলের মত ছুটে যায় বেডরুমের দিকে, সিলিং ফ্যানটা কি ভাবে যেন খুলে এসে পড়েছে অভীকের মাথার ওপর.. পড়ে আছে অভীক , প্রাণহীন চোখ দুটো স্থির। থ্যাটল্যানো মাথার একপাশে থেকে রক্ত গড়িয়ে আসছে।
_ “ অভী.. ভী.. ক. ক”। নিরুপায় পর্ণা, জানলার দিকে ছুটে যায় সাহায্যের জন্যে। আর তখনই স্পষ্ট দেখলো পর্ণা, কাপালিক ওর হাতে ধরা মাটির পাত্রে কি একটা ভরলো, তারপর, পর্নার দিকে তাকিয়ে এক অর্থপূর্ণ হাসি হেসে মিলিয়ে গেল কোথায়।

Khondkar, Shuvo, Nasim, Mr.twist, Mr kiddo, Mahmud, Akash and লেখাটি পছন্দ করেছে

Back to top
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum