- Shahriar Shafiনবাগত
- Posts : 1
স্বর্ণমুদ্রা : 1300
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-01
পার্পল
Tue Jun 01, 2021 12:06 am
ঈষৎ বেগুনি আইরিশের জন্য তার নাম রাখা হয় পার্পল। আইরিশের রং স্বাভাবিকভাবে বেগুনি হয় না। তার চোখ দেখে অন্যদের একটু ভয় পাবার কথা; তবে অনন্য মুখশ্রীর জন্য সৃষ্ট মুগ্ধতার সামনে তা তুচ্ছ হয়ে যায়। তার সারা গায়ে কোনো লোম নেই; লোমকূপ আছে। কোনো সমস্যা হবে কী না জানার উদ্দেশ্যে ডাক্তার দেখানো হয়েছে। তারা কিছুই বুঝতে পারেনি। চুল আছে, জীবনানন্দের বনলতা সেনের মতো সুন্দর চুল। তবে ধরলে বোঝা যায়, অন্যদের মতো না। যেনো ভিন্ন পদার্থ দিয়ে তৈরি। একটু বেশিই শক্ত আর পুরু। চিরুনি দিয়ে আঁচড়ালে অন্য মেয়েদের কত চুল পড়ে, পার্পলের কখনো একটিও পড়েনি। বান্ধবীরা প্রায়ই জিজ্ঞাসা করে, কোন শ্যাম্পু ইউজ করিস? ওর আর উত্তর দিতে ইচ্ছে হয় না। ঋতুস্রাব হয় তিন মাসে একবার; কোনো ব্যথা হয় না। অন্যদের এই যন্ত্রণা দেখে ওর হিংসা হয়। অস্বাভাবিকতা - সে যতই সুন্দর হোক না কেনো, কারো কাম্য নয়।
মেয়ের এই অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে ফরিদা আলমের দুশ্চিন্তা হয় মাঝে মধ্যে। যদিও কখনো কোনো অসুখ-বিসুখ হয়নি। সিলেটের বাগানবাড়িতে ছুটি কাটানোর সময় শিউলী গাছটার নিচে মুক্তর মতো ফুটফুটে একটি নবজাতক শিশুকে আবিষ্কার করেন। বহু খোঁজাখুঁজি সত্ত্বেও তার বাবা-মায়ের কোনো খোঁজ মিললোনা। ফরিদা আলম আর জাকির সাহেবের একটা ছেলে ছিলো তখন। মেয়ের আশায় আরেকবার সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা চলছিলো তবে তা না করে ঐ শিশুটিকেই আপন করে নেন। দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে উঠলো। জাকির সাহেব থাকেন ইতালি, দেশে কালে-ভদ্রে আসা হয়। উনি পার্পলের বেড়ে ওঠা দেখেননি। ফরিদা আলম নিরীখ করে দেখেছেন। বিস্মিত হয়েছেন, চিন্তিত হয়েছেন। পার্পলের ভাই ওকে দেখতে পারেনা; মায়ের পেটের সন্তান না হয়েও তার চেয়ে বেশি আদর পাওয়ার জন্য হয়তোবা। ঐ পার্পলকে বলে দিয়েছিলো যে তাকে বাগানে কুড়িয়ে পাওয়া হয়েছে। নতুবা পার্পল জানতে পারতোনা। পৃথিবীতে কত রহস্য আছে: বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল, স্টোনহেঞ্জ, ডেভিলস ব্রীজ, রিচাট স্ট্রাকচার... এতোকিছু নিয়ে পার্পলের কোনো কৌতূহল নেই। কারণ তার কাছে মনে হয় সে নিজেই এক বিরাট রহস্য।
তেইশে পা দিলো পার্পল। ফরিদা আলম ঠিক করলেন মেয়েকে বিয়ে দিবেন। পার্পলের কোনো পছন্দ নেই। ছেলেমেয়ে সবার থেকেই দূরে দূরে থাকে। খুব প্রয়োজন ব্যতীত মা ছাড়া কারো সাথে কথাও বলেনা। বিয়ের ইচ্ছে না থাকলেও মা কে কিছু বলেনা। তার অন্ধবিশ্বাস মা যা করবে তা-ই তার জন্য ভালো।
পৌরাণিক অপ্সরীদের ন্যায় রূপ আর প্রখর মেধার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও অদ্ভুত শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে পার্পলকে দেখে মানুষ যতই মুগ্ধ হোক না কেনো বাড়ির বউ করতে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারছিলোনা। পছন্দসই ছেলে খুঁজতে ফরিদা আলমকে বেশ বেগ পেতে হয়। তবে শেষমেশ অনেক ভালো ঘরেই তার বিয়ে হয়।
সাদেকের বিশ্বাস পৃথিবীতে এক্সেপশন থাকতেই পারেই। রসায়ন তো এক্সেপশনে টইটুম্বুর! সে পার্পলের অদ্ভুত সব বৈশিষ্ট্যে ঘাবড়ায় না। দ্রুতই তার প্রেমে পড়ে যায়। সারাক্ষণ এটা ওটা নিয়ে ওর সাথে কথা বলতেই থাকে। পার্পলেরও সাদেককে ভালো লেগে যায়। সেও এখন নিঃসংকোচে কথা বলে সাদেকের সঙ্গে। মা এর পর দ্বিতীয় কোনো বন্ধু পেলো। সাদেক ওকে চোখে হারায়। বাড়াবাড়ি রকমের যত্ন নেয়। পার্পলের কখনো মাথাব্যথা করেনা। তবুও সাদেক শখ করে ওর মাথা টিপে দেয়। সপ্তায় তিনদিন নিজে রান্না করে, আর তিনদিন পার্পল করে। আর একদিন ঘুরতে যায়। হাতিরঝিলের সিড়িতে বসে পা ভেজাতে সবচেয়ে ভালো লাগে। পরস্পরের কাঁধে মাথা রেখে, আঙুলে আঙুল গুঁজে তারা ভুলে যায় পৃথিবীর সমস্ত জটিলতা। মৃদু বাজের ছন্দবদ্ধ কোনো ঝড়ো রাতে প্রথম পার্পলের ঠোঁটে সে ঠোঁট মেশায়। সাধারণ মানুষের মতো পার্পলের চামড়ার স্বাদ নোনতা নয়; মিষ্টি ধরনের। সাদেক খানিক বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে তার বেগুনি চোখ দুটির অপার রহস্যে।
হঠাৎই পার্পলকে এক বিষন্নতা গ্রাস করে। কথাবার্তা কমিয়ে দেয়। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেনা। সাদেক নিজের হাতে খাইয়ে দিলেও পুরোটা খায় না। ঘুমায় ও না, চোখের নিচে কালি পড়া উচিত; তবে পড়েনা বিধায় কেউ ধরতে পারেনা। সাদেকের বুকে মুখ লুকিয়ে কান্নার চেষ্টা করে। তবে অশ্রু নামেনা, চোখও ভেজেনা। সাদেক ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলেও পার্পল কিছু বলেনা। কথা বলা কমিয়ে দিতে দিতে বোবা হয়ে যাওয়ার উপক্রম। একদিন পার্পল নিজেই সাদেককে কাছে ডেকে আস্তে আস্তে বললো, আমার বাবা-মা আমাকে খুঁজে পেয়েছে। নিয়ে যাবে আমাকে; আমি আর বেশিদিন থাকবোনা। সাদেক কিছুই বুঝে উঠলোনা। ওর বায়োলজিকাল বাবা-মা ওর খোঁজ পেয়েছে কী না তা সে জানলো কোত্থেকে? আর খোঁজ পেয়ে থাকলেও নিয়ে যাওয়ার কী আছে? মানুষের কী বিয়ে হয় না নাকি! পার্পল একই কথা কদিন পরপরই বলছে। সাদেকের মনে হচ্ছে ওর কোনো মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে, সিজোফ্রেনিয়া জাতীয়। সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে গেলো। বাসায় কাওকে জানালোনা। সাদেকের বাবা-মা বিয়েতে পুরোপুরি রাজি ছিলোনা, সাদেকই সেধে বিয়ে করেছে। কিচ্ছু হবেনা এরূপ অভয় দিয়ে। তাই সাদেক তাদেরকে চিন্তায় ফেলতে চায় না।
সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়ে কোনো লাভ হলোনা। সাদেক নেট ঘেটে পার্পলের সমস্যা কী সেটা বোঝার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে কয়েকদিন যাবৎ। পার্পল একদিন আবদার করলো তার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর৷ সাদেক তাকে পরম যত্নে জড়িয়ে রাখলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে লক্ষ্য করলো আজ পার্পল ঘুমিয়ে পড়েছে। সাদেকের জরাগ্রস্ত মনটা একটু স্বস্তির ছোঁয়া পেলো। ঘুমিয়ে পড়লো তার পৃথিবীটাকে আঁকড়ে ধরে।
হঠাৎ কেমন শর্ট সার্কিট হওয়ার মতো শব্দে সাদেকের ঘুম ভাঙলো। চারিদিকে অন্ধকার, কম্পিউটারের কোড ভেসে বেড়াচ্ছে। সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিছু পুলিশের মতো পোশাক পরা মানুষ, তাদের সাথে দুজন মধ্যবয়সী পুরুষ ও মহিলা আর তাদের পাশে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পার্পল। পিছনে ক্ষুদ্রাকৃতির স্পেসশিপের মতো দেখতে কিছু একটা। সাদেক কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর জিজ্ঞেস করে তারা কারা। পার্পলকেও জিজ্ঞেস করে, এসব কী হচ্ছে! পার্পল কিছু বলেনা। পুরুষ লোকটি বললেন, "আমরা অদ্রিতার বাবা-মা। আপনাকে সব বলছি..."
কথা শেষ না হতে দিয়েই সাদেক বললো, "কে অদ্রিতা? ওর নাম তো পার্পল।"
"এখানে বোধহয় ওর নাম পার্পল। আমরা অদ্রিতা নাম রেখেছিলাম।"
"কোত্থেকে এসেছেন আপনারা? আর এসব কী হচ্ছে? কোথায় আছি আমি?"
"এটা একটা টেসারেক্ট।"
ইন্টারস্টেলার মুভিতে এই শব্দটা শুনেছিলো সাদেক। তবুও না বোঝার ভান করে বললো, "ক্লিয়ার করে বলুন। কী চান আপনারা?"
"বলছি। একটু ঠাণ্ডা মাথায় শুনুন। ভবিষ্যতে পৃথিবী মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ৪৫৭৮ সালের পর থেকে মানুষ স্থায়ীভাবে অন্যান্য গ্রহে, অন্যান্য গ্যালাক্সিতে বসতি স্থাপন শুরু করে। পৃথিবী তখন শুধু শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের কাজে ব্যবহৃত হয়। অন্য গ্যালাক্সির গ্রহের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে মানুষ বিভিন্ন কেমিক্যাল সাসপেনশানের শরণাপন্ন হয়। তাদের ফিজিক্যাল চ্যাঞ্জেস আসে। তখন আর মাতৃগর্ভে সন্তান জন্মদান হয় না। হসপিটালে বায়োলজিকাল বাবলে ফিটাস প্রিজার্ভ করে রাখা হয়। অদ্রিতার যেদিন জন্ম হওয়ার কথা সেদিন সেই হসপিটালের মেকানিক্যাল ম্যালফাংশন হয়। টাইম পোর্টালে গোলযোগ লেগে সব ফিটাস কন্টেইনিং বাবলগুলো অতীত-ভবিষ্যতের বিভিন্ন সময়ে গিয়ে ছিটকে পড়ে। বিরাট বড় ট্র্যাজেডি। টাইমোভার্সাল লাইফ ট্র্যাকিং টেকনলোজির মাধ্যমে জানা যায় প্রায় সব ফিটাসই ধ্বংস হয়ে গেছে। অলৌকিকভাবে কয়েকটি বেঁচে আছে। তার মধ্যে অদ্রিতা একজন। আমরা দুবছর ধরে ওর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। আমাদের গ্যালাক্সির টাইম ডায়ালেশনের কারণে পৃথিবীতে সেই সময়ে চব্বিশ বছর কেটেছে। অবশেষে আমরা ওকে খুঁজে পেয়েছি। গত কিছুদিন ধরে ওর ব্রেনে রেডিয়েশন পাঠানোর মাধ্যমে আমরা কমুনিকেট করেছি। এখন ওকে যেতে হবে।"
সাদেক রেগেমেগে বললো, "সব ভাঁওতাবাজি! আইনস্টাইনের সূত্রমতে ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব। অতীতে আসা সম্ভব না। এটা নিশ্চিত কোনো বাজে স্বপ্ন, এখনই আমার ঘুম ভাঙবে, আর এসব আপদ বিদেয় হবে।"
এবার পার্পলের মা বললেন, "আপনি মাথা গরম করবেননা। আইনস্টাইনের ঐ থিওরি নিয়ে পরবর্তীতে অনেক অনেক রিসার্চ হয়েছে। পাস্টেও যাওয়া পসিবল। তবে সময়ের তারতম্যভেদে একটা নির্দিষ্ট সময়ের বেশিক্ষণ পাস্টে থাকলে সেই ব্যক্তি বা বস্তুর অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে। বলতে পারেন গায়েব হয়ে যাবে। ক্যালকুলেশনমতে অদ্রিতার হাতে আর পনেরোদিন সময় আছে। তবে এর কমও হতে পারে। রিস্ক নেয়া যাবেনা।"
সাদেক হতভম্বের মতো পার্পলের দিকে তাকায়। "চুপ করে আছো কেনো? বলো এইসব মিথ্যা? ভুয়া! বলছোনা কেনো কিছু?"
পার্পলের মা বললেন, "আপনি একটু শান্ত হন। অদ্রিতার সাথে যদি একান্তই থাকতে চান তাহলে একটা উপায় হলো আমাদের সঙ্গে আপনাকে যেতে হবে। ঐ গ্যালাক্সির পরিবেশের সাথে আপনি হুট করে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন কী না সিউর বলতে পারছিনা; তবে মেডিসিনের মাধ্যমে সম্ভব হবে আশা করি। এখন ভেবে দেখুন। আমরা খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করবোনা।"
সাদেক সাথে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো কিন্তু আবার সরে এলো। পার্পলকে হারানোর চিন্তায় সে যেন ভুলেই গেছিলো তার একটা পরিবার আছে, বাবার হার্টের অসুখ, চিকিৎসা করাতে হবে। বাসায় না থাকলে মা কত দুশ্চিন্তাই না করে! বাইরে বেশিক্ষণ থাকলে অনবরত ফোন করে যায়। ছোট বোন বিথীটা সারাক্ষণ ভাইয়া ভাইয়া করে বেড়ায়। তাদেরকে ফেলে সে কী করে যাবে স্বার্থপরের মতো? দায়িত্ববোধ আর ভালবাসা নামক দুই গ্রহের সমান মানের বিপরীতমুখী মহাকর্ষীয় বলে সে সিদ্ধান্তহীন জড়বস্তু হয়ে পড়ে রইলো।
পার্পল সাদেকের পাশে এসে বসলো।
"তুমি তোমার পরিবারের সাথে থাকবে। আমার কথা ভেবোনা। আমি ভালোই থাকবো।"
সাদেক ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না আরম্ভ করলো। পার্পলও কাঁদছিলো কিন্তু তার অশ্রু বাষ্পীয় তাই দেখা যায় না। তবে কাঁপা কাঁপা গলায় কান্না টের পাওয়া যাচ্ছিলো। আর কী বলে বোঝানো যায় সাদেককে সে বুঝতে ব্যর্থ। পুলিশদের সাথে কথা বলে জেনেছে যে, ভবিষ্যত থেকে অতীতে পুলিশি কাজ ব্যতীত বার্তাপ্রদান নিষিদ্ধ এবং আয়নত দণ্ডনীয়। তবুও সাদেক কে বললো, "আমি চেষ্টা করবো তোমাকে কোনোভাবে মেসেজ করার। তবে কবে করবো, আদৌ করতে পারবো কি না তা জানিনা।"
সাদেকের অশ্রুভেজা মুখটা ধরে কপালে একটা চুমু খেয়ে সে স্পেসশিপের মতো জিনিসটার দিকে চলে যেতে থাকলো। আর পিছনে ফিরে তাকালোনা। সাদেক নাম ধরে চিৎকার করতে করতে পেছনে দৌঁড়াচ্ছিলো। হঠাৎ চারপাশের সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলো। সাদেক জ্ঞান হারিয়েছিলো কি না সেটা বুঝতে পারেনা। সে নিজেকে নিজের বিছানায় একা শুয়ে থাকা অবস্থায় পেলো। তার মনে হলো সে স্বপ্ন দেখেছে; সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজলো। কোথাও পার্পলকে পাওয়া গেলোনা। সাদেকের বাবা-মা এবং পার্পলের মা তার কথা বিশ্বাস করতে পারলোনা। তারা ধরে নিলেন যে মানসিক সমস্যার কারণে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। সাদেকেরও প্রথমে মনে হলো সেই হবে। সারাজীবন সাই ফাই মুভি দেখার কারণে আর পার্পলকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে দুটোর মিথস্ক্রিয়া হয়ে হয়তো এমন একটি স্বপ্ন সে দেখেছে। হয়তো পার্পল তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিলো বলেই সে পেয়েছে এমন একটা স্বাপ্নিক ইঙ্গিত। হয়তো পার্পল পৃথিবীতেই আছে! পুলিশকে খবর দেয়া হয়, নিউজপেপারে ছবি ছাপানো হয়। কিন্তু পার্পলের কোনো খোঁজ মেলেনা। সাদেকের এখন বিশ্বাস হয়েছে যে সে কোনো স্বপ্ন দেখেনি। বিথী কখনো যদি জিজ্ঞেস করে, ভাবী কোথায়? সাদেক বলে, "ও তো পরী ছিলো, পরীর দেশে ফিরে গেছে।"
সাদেকের চুল-দাড়ি পেকে যাচ্ছে। পার্পলের একটা মেসেজ পাওয়ার আশায় আছে সে আজও। হাতিরঝিলের ধারে এখনো আসে, বসে থাকে। তবে পা ভেজায় না জলে। এখানে বসে পার্পল কখনোবা স্বর্গীয় কণ্ঠে গান ধরতো,
"ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো
তোমার মনের মন্দিরে।"
ঝিলের মূক স্তব্ধতায় আজও সাদেক সে গান শুনতে পায়। (সমাপ্ত)
মেয়ের এই অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে ফরিদা আলমের দুশ্চিন্তা হয় মাঝে মধ্যে। যদিও কখনো কোনো অসুখ-বিসুখ হয়নি। সিলেটের বাগানবাড়িতে ছুটি কাটানোর সময় শিউলী গাছটার নিচে মুক্তর মতো ফুটফুটে একটি নবজাতক শিশুকে আবিষ্কার করেন। বহু খোঁজাখুঁজি সত্ত্বেও তার বাবা-মায়ের কোনো খোঁজ মিললোনা। ফরিদা আলম আর জাকির সাহেবের একটা ছেলে ছিলো তখন। মেয়ের আশায় আরেকবার সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা চলছিলো তবে তা না করে ঐ শিশুটিকেই আপন করে নেন। দেখতে দেখতে কত বড় হয়ে উঠলো। জাকির সাহেব থাকেন ইতালি, দেশে কালে-ভদ্রে আসা হয়। উনি পার্পলের বেড়ে ওঠা দেখেননি। ফরিদা আলম নিরীখ করে দেখেছেন। বিস্মিত হয়েছেন, চিন্তিত হয়েছেন। পার্পলের ভাই ওকে দেখতে পারেনা; মায়ের পেটের সন্তান না হয়েও তার চেয়ে বেশি আদর পাওয়ার জন্য হয়তোবা। ঐ পার্পলকে বলে দিয়েছিলো যে তাকে বাগানে কুড়িয়ে পাওয়া হয়েছে। নতুবা পার্পল জানতে পারতোনা। পৃথিবীতে কত রহস্য আছে: বারমুডা ট্রাইএঙ্গেল, স্টোনহেঞ্জ, ডেভিলস ব্রীজ, রিচাট স্ট্রাকচার... এতোকিছু নিয়ে পার্পলের কোনো কৌতূহল নেই। কারণ তার কাছে মনে হয় সে নিজেই এক বিরাট রহস্য।
তেইশে পা দিলো পার্পল। ফরিদা আলম ঠিক করলেন মেয়েকে বিয়ে দিবেন। পার্পলের কোনো পছন্দ নেই। ছেলেমেয়ে সবার থেকেই দূরে দূরে থাকে। খুব প্রয়োজন ব্যতীত মা ছাড়া কারো সাথে কথাও বলেনা। বিয়ের ইচ্ছে না থাকলেও মা কে কিছু বলেনা। তার অন্ধবিশ্বাস মা যা করবে তা-ই তার জন্য ভালো।
পৌরাণিক অপ্সরীদের ন্যায় রূপ আর প্রখর মেধার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও অদ্ভুত শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে পার্পলকে দেখে মানুষ যতই মুগ্ধ হোক না কেনো বাড়ির বউ করতে ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারছিলোনা। পছন্দসই ছেলে খুঁজতে ফরিদা আলমকে বেশ বেগ পেতে হয়। তবে শেষমেশ অনেক ভালো ঘরেই তার বিয়ে হয়।
সাদেকের বিশ্বাস পৃথিবীতে এক্সেপশন থাকতেই পারেই। রসায়ন তো এক্সেপশনে টইটুম্বুর! সে পার্পলের অদ্ভুত সব বৈশিষ্ট্যে ঘাবড়ায় না। দ্রুতই তার প্রেমে পড়ে যায়। সারাক্ষণ এটা ওটা নিয়ে ওর সাথে কথা বলতেই থাকে। পার্পলেরও সাদেককে ভালো লেগে যায়। সেও এখন নিঃসংকোচে কথা বলে সাদেকের সঙ্গে। মা এর পর দ্বিতীয় কোনো বন্ধু পেলো। সাদেক ওকে চোখে হারায়। বাড়াবাড়ি রকমের যত্ন নেয়। পার্পলের কখনো মাথাব্যথা করেনা। তবুও সাদেক শখ করে ওর মাথা টিপে দেয়। সপ্তায় তিনদিন নিজে রান্না করে, আর তিনদিন পার্পল করে। আর একদিন ঘুরতে যায়। হাতিরঝিলের সিড়িতে বসে পা ভেজাতে সবচেয়ে ভালো লাগে। পরস্পরের কাঁধে মাথা রেখে, আঙুলে আঙুল গুঁজে তারা ভুলে যায় পৃথিবীর সমস্ত জটিলতা। মৃদু বাজের ছন্দবদ্ধ কোনো ঝড়ো রাতে প্রথম পার্পলের ঠোঁটে সে ঠোঁট মেশায়। সাধারণ মানুষের মতো পার্পলের চামড়ার স্বাদ নোনতা নয়; মিষ্টি ধরনের। সাদেক খানিক বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে তার বেগুনি চোখ দুটির অপার রহস্যে।
হঠাৎই পার্পলকে এক বিষন্নতা গ্রাস করে। কথাবার্তা কমিয়ে দেয়। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেনা। সাদেক নিজের হাতে খাইয়ে দিলেও পুরোটা খায় না। ঘুমায় ও না, চোখের নিচে কালি পড়া উচিত; তবে পড়েনা বিধায় কেউ ধরতে পারেনা। সাদেকের বুকে মুখ লুকিয়ে কান্নার চেষ্টা করে। তবে অশ্রু নামেনা, চোখও ভেজেনা। সাদেক ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো। কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলেও পার্পল কিছু বলেনা। কথা বলা কমিয়ে দিতে দিতে বোবা হয়ে যাওয়ার উপক্রম। একদিন পার্পল নিজেই সাদেককে কাছে ডেকে আস্তে আস্তে বললো, আমার বাবা-মা আমাকে খুঁজে পেয়েছে। নিয়ে যাবে আমাকে; আমি আর বেশিদিন থাকবোনা। সাদেক কিছুই বুঝে উঠলোনা। ওর বায়োলজিকাল বাবা-মা ওর খোঁজ পেয়েছে কী না তা সে জানলো কোত্থেকে? আর খোঁজ পেয়ে থাকলেও নিয়ে যাওয়ার কী আছে? মানুষের কী বিয়ে হয় না নাকি! পার্পল একই কথা কদিন পরপরই বলছে। সাদেকের মনে হচ্ছে ওর কোনো মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে, সিজোফ্রেনিয়া জাতীয়। সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে গেলো। বাসায় কাওকে জানালোনা। সাদেকের বাবা-মা বিয়েতে পুরোপুরি রাজি ছিলোনা, সাদেকই সেধে বিয়ে করেছে। কিচ্ছু হবেনা এরূপ অভয় দিয়ে। তাই সাদেক তাদেরকে চিন্তায় ফেলতে চায় না।
সাইকিয়াট্রিস্ট দেখিয়ে কোনো লাভ হলোনা। সাদেক নেট ঘেটে পার্পলের সমস্যা কী সেটা বোঝার ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে কয়েকদিন যাবৎ। পার্পল একদিন আবদার করলো তার বুকে মাথা রেখে ঘুমানোর৷ সাদেক তাকে পরম যত্নে জড়িয়ে রাখলো। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে লক্ষ্য করলো আজ পার্পল ঘুমিয়ে পড়েছে। সাদেকের জরাগ্রস্ত মনটা একটু স্বস্তির ছোঁয়া পেলো। ঘুমিয়ে পড়লো তার পৃথিবীটাকে আঁকড়ে ধরে।
হঠাৎ কেমন শর্ট সার্কিট হওয়ার মতো শব্দে সাদেকের ঘুম ভাঙলো। চারিদিকে অন্ধকার, কম্পিউটারের কোড ভেসে বেড়াচ্ছে। সামনে দাঁড়িয়ে আছে কিছু পুলিশের মতো পোশাক পরা মানুষ, তাদের সাথে দুজন মধ্যবয়সী পুরুষ ও মহিলা আর তাদের পাশে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পার্পল। পিছনে ক্ষুদ্রাকৃতির স্পেসশিপের মতো দেখতে কিছু একটা। সাদেক কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মতো তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। তারপর জিজ্ঞেস করে তারা কারা। পার্পলকেও জিজ্ঞেস করে, এসব কী হচ্ছে! পার্পল কিছু বলেনা। পুরুষ লোকটি বললেন, "আমরা অদ্রিতার বাবা-মা। আপনাকে সব বলছি..."
কথা শেষ না হতে দিয়েই সাদেক বললো, "কে অদ্রিতা? ওর নাম তো পার্পল।"
"এখানে বোধহয় ওর নাম পার্পল। আমরা অদ্রিতা নাম রেখেছিলাম।"
"কোত্থেকে এসেছেন আপনারা? আর এসব কী হচ্ছে? কোথায় আছি আমি?"
"এটা একটা টেসারেক্ট।"
ইন্টারস্টেলার মুভিতে এই শব্দটা শুনেছিলো সাদেক। তবুও না বোঝার ভান করে বললো, "ক্লিয়ার করে বলুন। কী চান আপনারা?"
"বলছি। একটু ঠাণ্ডা মাথায় শুনুন। ভবিষ্যতে পৃথিবী মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। ৪৫৭৮ সালের পর থেকে মানুষ স্থায়ীভাবে অন্যান্য গ্রহে, অন্যান্য গ্যালাক্সিতে বসতি স্থাপন শুরু করে। পৃথিবী তখন শুধু শিল্প ও ব্যবসা বাণিজ্যের কাজে ব্যবহৃত হয়। অন্য গ্যালাক্সির গ্রহের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে মানুষ বিভিন্ন কেমিক্যাল সাসপেনশানের শরণাপন্ন হয়। তাদের ফিজিক্যাল চ্যাঞ্জেস আসে। তখন আর মাতৃগর্ভে সন্তান জন্মদান হয় না। হসপিটালে বায়োলজিকাল বাবলে ফিটাস প্রিজার্ভ করে রাখা হয়। অদ্রিতার যেদিন জন্ম হওয়ার কথা সেদিন সেই হসপিটালের মেকানিক্যাল ম্যালফাংশন হয়। টাইম পোর্টালে গোলযোগ লেগে সব ফিটাস কন্টেইনিং বাবলগুলো অতীত-ভবিষ্যতের বিভিন্ন সময়ে গিয়ে ছিটকে পড়ে। বিরাট বড় ট্র্যাজেডি। টাইমোভার্সাল লাইফ ট্র্যাকিং টেকনলোজির মাধ্যমে জানা যায় প্রায় সব ফিটাসই ধ্বংস হয়ে গেছে। অলৌকিকভাবে কয়েকটি বেঁচে আছে। তার মধ্যে অদ্রিতা একজন। আমরা দুবছর ধরে ওর কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। আমাদের গ্যালাক্সির টাইম ডায়ালেশনের কারণে পৃথিবীতে সেই সময়ে চব্বিশ বছর কেটেছে। অবশেষে আমরা ওকে খুঁজে পেয়েছি। গত কিছুদিন ধরে ওর ব্রেনে রেডিয়েশন পাঠানোর মাধ্যমে আমরা কমুনিকেট করেছি। এখন ওকে যেতে হবে।"
সাদেক রেগেমেগে বললো, "সব ভাঁওতাবাজি! আইনস্টাইনের সূত্রমতে ভবিষ্যতে যাওয়া সম্ভব। অতীতে আসা সম্ভব না। এটা নিশ্চিত কোনো বাজে স্বপ্ন, এখনই আমার ঘুম ভাঙবে, আর এসব আপদ বিদেয় হবে।"
এবার পার্পলের মা বললেন, "আপনি মাথা গরম করবেননা। আইনস্টাইনের ঐ থিওরি নিয়ে পরবর্তীতে অনেক অনেক রিসার্চ হয়েছে। পাস্টেও যাওয়া পসিবল। তবে সময়ের তারতম্যভেদে একটা নির্দিষ্ট সময়ের বেশিক্ষণ পাস্টে থাকলে সেই ব্যক্তি বা বস্তুর অস্তিত্ব হারিয়ে যাবে। বলতে পারেন গায়েব হয়ে যাবে। ক্যালকুলেশনমতে অদ্রিতার হাতে আর পনেরোদিন সময় আছে। তবে এর কমও হতে পারে। রিস্ক নেয়া যাবেনা।"
সাদেক হতভম্বের মতো পার্পলের দিকে তাকায়। "চুপ করে আছো কেনো? বলো এইসব মিথ্যা? ভুয়া! বলছোনা কেনো কিছু?"
পার্পলের মা বললেন, "আপনি একটু শান্ত হন। অদ্রিতার সাথে যদি একান্তই থাকতে চান তাহলে একটা উপায় হলো আমাদের সঙ্গে আপনাকে যেতে হবে। ঐ গ্যালাক্সির পরিবেশের সাথে আপনি হুট করে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন কী না সিউর বলতে পারছিনা; তবে মেডিসিনের মাধ্যমে সম্ভব হবে আশা করি। এখন ভেবে দেখুন। আমরা খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করবোনা।"
সাদেক সাথে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো কিন্তু আবার সরে এলো। পার্পলকে হারানোর চিন্তায় সে যেন ভুলেই গেছিলো তার একটা পরিবার আছে, বাবার হার্টের অসুখ, চিকিৎসা করাতে হবে। বাসায় না থাকলে মা কত দুশ্চিন্তাই না করে! বাইরে বেশিক্ষণ থাকলে অনবরত ফোন করে যায়। ছোট বোন বিথীটা সারাক্ষণ ভাইয়া ভাইয়া করে বেড়ায়। তাদেরকে ফেলে সে কী করে যাবে স্বার্থপরের মতো? দায়িত্ববোধ আর ভালবাসা নামক দুই গ্রহের সমান মানের বিপরীতমুখী মহাকর্ষীয় বলে সে সিদ্ধান্তহীন জড়বস্তু হয়ে পড়ে রইলো।
পার্পল সাদেকের পাশে এসে বসলো।
"তুমি তোমার পরিবারের সাথে থাকবে। আমার কথা ভেবোনা। আমি ভালোই থাকবো।"
সাদেক ওকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কান্না আরম্ভ করলো। পার্পলও কাঁদছিলো কিন্তু তার অশ্রু বাষ্পীয় তাই দেখা যায় না। তবে কাঁপা কাঁপা গলায় কান্না টের পাওয়া যাচ্ছিলো। আর কী বলে বোঝানো যায় সাদেককে সে বুঝতে ব্যর্থ। পুলিশদের সাথে কথা বলে জেনেছে যে, ভবিষ্যত থেকে অতীতে পুলিশি কাজ ব্যতীত বার্তাপ্রদান নিষিদ্ধ এবং আয়নত দণ্ডনীয়। তবুও সাদেক কে বললো, "আমি চেষ্টা করবো তোমাকে কোনোভাবে মেসেজ করার। তবে কবে করবো, আদৌ করতে পারবো কি না তা জানিনা।"
সাদেকের অশ্রুভেজা মুখটা ধরে কপালে একটা চুমু খেয়ে সে স্পেসশিপের মতো জিনিসটার দিকে চলে যেতে থাকলো। আর পিছনে ফিরে তাকালোনা। সাদেক নাম ধরে চিৎকার করতে করতে পেছনে দৌঁড়াচ্ছিলো। হঠাৎ চারপাশের সবকিছু বন্ধ হয়ে গেলো। সাদেক জ্ঞান হারিয়েছিলো কি না সেটা বুঝতে পারেনা। সে নিজেকে নিজের বিছানায় একা শুয়ে থাকা অবস্থায় পেলো। তার মনে হলো সে স্বপ্ন দেখেছে; সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজলো। কোথাও পার্পলকে পাওয়া গেলোনা। সাদেকের বাবা-মা এবং পার্পলের মা তার কথা বিশ্বাস করতে পারলোনা। তারা ধরে নিলেন যে মানসিক সমস্যার কারণে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। সাদেকেরও প্রথমে মনে হলো সেই হবে। সারাজীবন সাই ফাই মুভি দেখার কারণে আর পার্পলকে নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে দুটোর মিথস্ক্রিয়া হয়ে হয়তো এমন একটি স্বপ্ন সে দেখেছে। হয়তো পার্পল তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিলো বলেই সে পেয়েছে এমন একটা স্বাপ্নিক ইঙ্গিত। হয়তো পার্পল পৃথিবীতেই আছে! পুলিশকে খবর দেয়া হয়, নিউজপেপারে ছবি ছাপানো হয়। কিন্তু পার্পলের কোনো খোঁজ মেলেনা। সাদেকের এখন বিশ্বাস হয়েছে যে সে কোনো স্বপ্ন দেখেনি। বিথী কখনো যদি জিজ্ঞেস করে, ভাবী কোথায়? সাদেক বলে, "ও তো পরী ছিলো, পরীর দেশে ফিরে গেছে।"
সাদেকের চুল-দাড়ি পেকে যাচ্ছে। পার্পলের একটা মেসেজ পাওয়ার আশায় আছে সে আজও। হাতিরঝিলের ধারে এখনো আসে, বসে থাকে। তবে পা ভেজায় না জলে। এখানে বসে পার্পল কখনোবা স্বর্গীয় কণ্ঠে গান ধরতো,
"ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো
তোমার মনের মন্দিরে।"
ঝিলের মূক স্তব্ধতায় আজও সাদেক সে গান শুনতে পায়। (সমাপ্ত)
রকি, Polash, Jakir, Halal, Ratul, Alom, Sohel and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum