- Tothapiধুমকেতু
- Posts : 13
স্বর্ণমুদ্রা : 1522
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-26
পিশাচ বউ
Fri Jun 04, 2021 1:48 am
১ম পর্ব
.
আমি এখন আমার ঘরের বিছানায় শুয়ে আছি। আমার শরীরের সবগুলো অংশই এখন অচল। আমি চাইলেই নড়তে পারি না। শুধুমাত্র আমার চোখ গুলো আর মস্তিষ্ক এখনো বেঁচে রয়েছে। আমার পাশেই আমার স্ত্রী জুলেখা বসে আছে। সে আজ নতুন একটা লাশ নিয়ে ঘরে ঢুকেছে।লাশটা একটা ৬-৭ বছরের বাচ্চা মেয়ের। মেয়েটার গলা দিয়ে এখনো রক্ত পড়ছে। বুঝলাম হয়তো কোন বাচ্চা মেয়েকে সবে মাত্র ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করে খুন করেছে জুলেখা। আমার সামনেই মেয়েটাকে নিয়ে বসলো সে। একটু পর পর জুলেখা বিকট শয়তানী হাসির শব্দ করে হাসছিলো ।জুলেখা একটা ছুরি এনে বাচ্চা মেয়েটাকে নিয়ে বসলো। এরপর ছুরি দিয়ে মেয়েটার গলা থেকে মাথাটা আলাদা করলো। এরপর মাথাটা নিয়ে আমাদের ঘরের ফ্রিজে রাখলো। ফ্রিজে এই নিয়ে ১৩ টা বাচ্চা মেয়ের মাথা রয়েছে। এরপর জুলেখা আবার লাশের কাছে ফিরে এলো। এরপর লাশের গলায় জিহ্বা ঢুকিয়ে বাচ্চারা যেভাবে পাইপ দিয়ে জুস খায় সেভাবে মেয়েটার পুরো শরীর থেকে রক্ত চুসে চুসে খেয়ে মেয়েটার শরীর রক্তশুন্য করে দিলো। এরপর জুলেখা মেয়েটার শরীর থেকে একেকটা অংশ আলাদা করতে লাগলো এবং বন্য পশুদের মতো সেখুলো ছিড়ে ছিড়ে খেতে লাগলো। জুলেখা মেয়েটার শরীর ছুড়ি দিয়ে গলা থেকে মাঝ বরাবর দুই ভাগ করে ফেললো।
তারপর মেয়েটার বুকের বামপাশ ছিদ্র করে হার্টটা বের করে তৃপ্তি সহকারে খেতে লাগলো। একের পর এক করে মেয়েটার পুরো শরীর খেয়ে ফেললো সে।
.
আমি চোখ বড় বড় করে অনেক ঘৃণার সাথে তার এই নোংরামো দেখছিলাম। আমার চিৎকার করে বলতে মন চাচ্ছে "থামায় এসব জুলেখা! আর এতো নিষ্ঠুর হয়ো না মানুষের প্রতি।" তবে আমার কন্ঠ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছিলো না। আমি এই দৃশ্য দেখতে চাই না ভেবে চোখটাও বন্ধ করতে পারছি না কারণ আমি আমার চোখ বন্ধ করতেও অপারক। একটু পর জুলেখা আমার কানের কাছে এসে বললো।
-১৩ টা বাচ্চার মাথার জোগাড় হয়ে গেছে। আর মাত্র ৮ টা মাথা লাগবে। এতোদিন একটু কষ্ট করে বেঁচে নাও। কথা দিচ্ছি এরপর আমিই তোমায় মৃত্যুর দুয়ারে পৌছে দিয়ে আসবো। হাহাহা।
.
আমি তার কথা শুনতে পাচ্ছিলাম তবে এর কোন উত্তর দেওয়ার সক্ষমতা আমার নেই। এইরকম একটা পিশাচ বউ এর সাথে বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছাই নেই আমার। আমি মনে মনে শুধু বিধাতার কাছে মৃত্যুই কামনা করি। এর বেশি আর কিছুই না।
.
তবে আমি কোন পিশাচ মেয়েকে বিয়ে করিনি। আমার সাথে এই ঘটনার শুরু আজ থেকে ৬ মাস আগে।
.
আমি সবেমাত্র আমার লেখাপড়া শেষ করি। তারপরেই একটা নতুন কম্পানীতে চাকরীও পেয়ে যাই। সেলারীও বেশ ভালো ছিলো। আমি আমার বাবা-মায়ের একমাত্র
ছেলে ছিলাম তাই তারা আমার বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যায়। আমি বাধ্য হয়েই বাবা-মায়ের চাপে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাই।
.
জুলেখা খাতুন নামে একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। আমাদের দুজনেরই একে অপরকে খুব পছন্দ হয়। সবকিছু ঠিকই চলছিলো। তবে বিয়ের আগে হঠাৎ একদিন জুলেখা তার পরিবার আর আমার কাছে বায়না ধরে যে সে নাকি তার ভার্সিটি থেকে শিক্ষা সফরে সুন্দর বনের পাশেই একটা জঙ্গলে যাবে। সেখানে তারা ৩ দিনের জন্য থাকবে। জুলেখা এমন ভাবে আমাকে অনুরোদ করেছিলো যে আমি আর তাকে না করতে পারিনী। তবে তখন কে জানতো যে তাকে জঙ্গলে ঘুরতে জাওয়ার অনুমতি দেওয়াটাই আমার কাল হয়ে দাড়াবে।
.
ঐখানে থাকার সময় রোজই জুলেখার সাথে আমার কথা হতো। তবে ৩য় দিন কল করে তার নাম্বার বন্ধ পাই। এরপর জানতে পারি যে সেইখানে নাকি জুলেখাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা কথাটা শুনে বেশ অবাক হয়ে ছুটে যাই তাকে খুজতে। টানা ৭ দিন জঙ্গলে পুলিশ সহ আমরা খোজাখোজির পর জঙ্গলের অনেক ভেতরের একটা গাছের নিচে অজ্ঞান অবস্হায় আমরা জুলেখাকে খুজে পাই। জুলেখার কাছে জানতে চাই যে জুলেখা কিভাবে জঙ্গলের এতো ভেতরে চলে আসে। জুলেখা বললো সে নাকি কিছুই জানে না। কখন ৭ দিন কেটে গেছে এটাও সে বুঝেনি।এরপর থেকে একেবারে
বদলে যায় জুলেখা। বেশ অদ্ভুত ব্যবহার করতে থাকে সে। আমার সাথেও আগের মতো কথা বলেনা সে।
.
তবে এরপর আমাদের বিয়ে হয়ে যায়। তবে জুলেখা আর স্বাভাবিক ভাবে আমাদের সাথে কথা বলে না। তার বাবা-মা এর কাছেও জুলেখা অপরিচিত মনে হয়। আমি কিছুই বুঝছিলাম না তবে সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করি।
.
আমার আর জুলেখার বিয়ের দিন হঠাৎ করে শুনি আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা একটা ৮ বছরের মেয়েকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা সবাই পুরো বাড়ি, পুরো এলাকা খুজে মেয়েটাকে পাইনি। তবে আমাদের বিয়েটা ভালোমতই হয়ে যায়।
.
এরপর আমাদের বিয়ের রাতে আমরা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ি। তবে মাঝরাতে কারো একজনের হাড় চিবানোর শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আমার। ঘুম থেকে উঠে দেখি জুলেখা আমার পাশে নেই। আর শব্দটা ঘরের ওয়াশরুম থেকেই আসছিলো। আমি ঘরের খাটের নিচ থেকে একটা রক্তের দাগ দেখতে পাই যেটা ওয়াশরুম পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। রক্তের দাগ দেখে এমন মনে হচ্ছে যে কোন একটা মৃত বস্তুকে টেনে ওয়াশরুম পর্যন্ত নিয়ে জাওয়া হয়েছে। আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই। ভয়ে ভয়ে ওয়াসরুমের দিকে যাচ্ছিলাম আর ডাকছিলাম:
- "জুলেখা" তুমি কোথায়! তুমি কি ওয়াসরুমে? আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এসব করছো! তাই না!"
.
তবে ওয়াশরুমের ভেতর থেকে কোন উত্তর আসেনি।
শুধু হাড় কামরে খাওয়ার শব্দ আসছিলো। আমি ওয়াশরুমের ভেতর তাকিয়ে যাহ দেখলাম। তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। জুলেখা একটা বাচ্চা মেয়ের শরীর ছিড়ে ছিড়ে চিবিয়ে খাচ্ছিলো। আমি মেয়েটার মুখ দেখে চিনতে পারলাম আরে এইটাতো সেই মেয়ে যে আজ আমাদের বাড়ি থেকে হারিয়ে গিয়েছিলো। এই দৃশ্য দেখে ভয়েতো আমার পুরো শরীর অবস হয়ে আসছিলো। আমি জুলেখাকে প্রশ্ন করি:
-জুলেখা? তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? এইগুলো কি করছো! এইভাবে একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে কিভাবে হত্যা করে খেতে পারে? তুমি কি পশু হয়ে গেছো? আমি এখনই আমার বাড়ির সবাইকে ডাকছি।
.
এই বলেই যেই আমি আমার বাবা-মাকে ডাকতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার গলা থেকে শব্দ বের হওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। আমি আর সামনের দিকে হাটতে পারছিলাম না। আমার পুরো শরীর অবস হয়ে গেলো। জুলেখা আমাকে উচুঁ করে বিছানায় শুইয়ে দিলো। আর কানে কানে আমাকে বললো:
-সবেতো মাত্র একটা খুন করেছি আরো পুরো পৃথিবীকে হত্যা করা বাকি। আমি একের পর এক হত্যা করবো আর তার সাক্ষী থাকবে তুমি। আর তুমি এখন থেকে প্যারালাইসড। যাহ দেখবে আর শুনবে তা আর কাউকে বলতে পারবে না। হাহাহা।
.
এরপরে সবাই ভাবে আমি প্যারালাইসড হয়ে গেছি। এরপরে একে একে আরো মানুষকে হত্যা করতে থাকে সে
।
আমার চোখের সামনে জুলেখা আমার বাবা-মা দুজনকেই হত্যা করে ছিড়ে খায় তাদের দেহ। এরপর তার নিজের বাবা-মাকেও এনে খুন করে নিজের ক্ষুধা মেটাও সে। আমি সবকিছু দেখতে পারছিলাম তবে কোন কিছু বলার শক্তি ছিলো না আমার।
.
এরপর হঠাৎ একদিন একের পর এক বাচ্চা মেয়েদের এনে আমার সামনেই তাদেরকে ছিড়ে ছিড়ে খায় জুলেখা।
.
আজ সে ১৩ নাম্বার বাচ্চাটাকে হত্যা করলো। আরো ৭ জনকে হত্যা করতে পারলে নাকি জুলেখা অমরত্ব লাভ করবে।
.
আমি বুঝতে পারছিলাম যে জুলেখার শরীরে কোন পিশাচের আত্মা প্রবেশ করেছে। হয়তো সেই জঙ্গল থেকেই জুলেখার সাথে এমন কিছু হয়েছে। ঐ ৭ দিন যে নিখোজ ছিলো জুলেখা তখনই ওর সাথে কিছু হয়েছিলো। তবে কি হয়েছিলো! এর উত্তর আমাকে জানতেই হবে। কিন্তু এই পিশাচ বউ আর প্যারালাইসড শরীর নিয়ে কিভাবে এর রহস্য ভেদ করবো?!
.
তবে হঠাৎ একটা দারুন বুদ্ধি এলো আমার মাথায়।
.
. . . . . . চলবে . . . . .
.
আমি এখন আমার ঘরের বিছানায় শুয়ে আছি। আমার শরীরের সবগুলো অংশই এখন অচল। আমি চাইলেই নড়তে পারি না। শুধুমাত্র আমার চোখ গুলো আর মস্তিষ্ক এখনো বেঁচে রয়েছে। আমার পাশেই আমার স্ত্রী জুলেখা বসে আছে। সে আজ নতুন একটা লাশ নিয়ে ঘরে ঢুকেছে।লাশটা একটা ৬-৭ বছরের বাচ্চা মেয়ের। মেয়েটার গলা দিয়ে এখনো রক্ত পড়ছে। বুঝলাম হয়তো কোন বাচ্চা মেয়েকে সবে মাত্র ছুরি দিয়ে গলায় আঘাত করে খুন করেছে জুলেখা। আমার সামনেই মেয়েটাকে নিয়ে বসলো সে। একটু পর পর জুলেখা বিকট শয়তানী হাসির শব্দ করে হাসছিলো ।জুলেখা একটা ছুরি এনে বাচ্চা মেয়েটাকে নিয়ে বসলো। এরপর ছুরি দিয়ে মেয়েটার গলা থেকে মাথাটা আলাদা করলো। এরপর মাথাটা নিয়ে আমাদের ঘরের ফ্রিজে রাখলো। ফ্রিজে এই নিয়ে ১৩ টা বাচ্চা মেয়ের মাথা রয়েছে। এরপর জুলেখা আবার লাশের কাছে ফিরে এলো। এরপর লাশের গলায় জিহ্বা ঢুকিয়ে বাচ্চারা যেভাবে পাইপ দিয়ে জুস খায় সেভাবে মেয়েটার পুরো শরীর থেকে রক্ত চুসে চুসে খেয়ে মেয়েটার শরীর রক্তশুন্য করে দিলো। এরপর জুলেখা মেয়েটার শরীর থেকে একেকটা অংশ আলাদা করতে লাগলো এবং বন্য পশুদের মতো সেখুলো ছিড়ে ছিড়ে খেতে লাগলো। জুলেখা মেয়েটার শরীর ছুড়ি দিয়ে গলা থেকে মাঝ বরাবর দুই ভাগ করে ফেললো।
তারপর মেয়েটার বুকের বামপাশ ছিদ্র করে হার্টটা বের করে তৃপ্তি সহকারে খেতে লাগলো। একের পর এক করে মেয়েটার পুরো শরীর খেয়ে ফেললো সে।
.
আমি চোখ বড় বড় করে অনেক ঘৃণার সাথে তার এই নোংরামো দেখছিলাম। আমার চিৎকার করে বলতে মন চাচ্ছে "থামায় এসব জুলেখা! আর এতো নিষ্ঠুর হয়ো না মানুষের প্রতি।" তবে আমার কন্ঠ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছিলো না। আমি এই দৃশ্য দেখতে চাই না ভেবে চোখটাও বন্ধ করতে পারছি না কারণ আমি আমার চোখ বন্ধ করতেও অপারক। একটু পর জুলেখা আমার কানের কাছে এসে বললো।
-১৩ টা বাচ্চার মাথার জোগাড় হয়ে গেছে। আর মাত্র ৮ টা মাথা লাগবে। এতোদিন একটু কষ্ট করে বেঁচে নাও। কথা দিচ্ছি এরপর আমিই তোমায় মৃত্যুর দুয়ারে পৌছে দিয়ে আসবো। হাহাহা।
.
আমি তার কথা শুনতে পাচ্ছিলাম তবে এর কোন উত্তর দেওয়ার সক্ষমতা আমার নেই। এইরকম একটা পিশাচ বউ এর সাথে বেঁচে থাকার কোন ইচ্ছাই নেই আমার। আমি মনে মনে শুধু বিধাতার কাছে মৃত্যুই কামনা করি। এর বেশি আর কিছুই না।
.
তবে আমি কোন পিশাচ মেয়েকে বিয়ে করিনি। আমার সাথে এই ঘটনার শুরু আজ থেকে ৬ মাস আগে।
.
আমি সবেমাত্র আমার লেখাপড়া শেষ করি। তারপরেই একটা নতুন কম্পানীতে চাকরীও পেয়ে যাই। সেলারীও বেশ ভালো ছিলো। আমি আমার বাবা-মায়ের একমাত্র
ছেলে ছিলাম তাই তারা আমার বিয়ের জন্য পাগল হয়ে যায়। আমি বাধ্য হয়েই বাবা-মায়ের চাপে বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যাই।
.
জুলেখা খাতুন নামে একটা মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। আমাদের দুজনেরই একে অপরকে খুব পছন্দ হয়। সবকিছু ঠিকই চলছিলো। তবে বিয়ের আগে হঠাৎ একদিন জুলেখা তার পরিবার আর আমার কাছে বায়না ধরে যে সে নাকি তার ভার্সিটি থেকে শিক্ষা সফরে সুন্দর বনের পাশেই একটা জঙ্গলে যাবে। সেখানে তারা ৩ দিনের জন্য থাকবে। জুলেখা এমন ভাবে আমাকে অনুরোদ করেছিলো যে আমি আর তাকে না করতে পারিনী। তবে তখন কে জানতো যে তাকে জঙ্গলে ঘুরতে জাওয়ার অনুমতি দেওয়াটাই আমার কাল হয়ে দাড়াবে।
.
ঐখানে থাকার সময় রোজই জুলেখার সাথে আমার কথা হতো। তবে ৩য় দিন কল করে তার নাম্বার বন্ধ পাই। এরপর জানতে পারি যে সেইখানে নাকি জুলেখাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা কথাটা শুনে বেশ অবাক হয়ে ছুটে যাই তাকে খুজতে। টানা ৭ দিন জঙ্গলে পুলিশ সহ আমরা খোজাখোজির পর জঙ্গলের অনেক ভেতরের একটা গাছের নিচে অজ্ঞান অবস্হায় আমরা জুলেখাকে খুজে পাই। জুলেখার কাছে জানতে চাই যে জুলেখা কিভাবে জঙ্গলের এতো ভেতরে চলে আসে। জুলেখা বললো সে নাকি কিছুই জানে না। কখন ৭ দিন কেটে গেছে এটাও সে বুঝেনি।এরপর থেকে একেবারে
বদলে যায় জুলেখা। বেশ অদ্ভুত ব্যবহার করতে থাকে সে। আমার সাথেও আগের মতো কথা বলেনা সে।
.
তবে এরপর আমাদের বিয়ে হয়ে যায়। তবে জুলেখা আর স্বাভাবিক ভাবে আমাদের সাথে কথা বলে না। তার বাবা-মা এর কাছেও জুলেখা অপরিচিত মনে হয়। আমি কিছুই বুঝছিলাম না তবে সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করি।
.
আমার আর জুলেখার বিয়ের দিন হঠাৎ করে শুনি আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসা একটা ৮ বছরের মেয়েকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা সবাই পুরো বাড়ি, পুরো এলাকা খুজে মেয়েটাকে পাইনি। তবে আমাদের বিয়েটা ভালোমতই হয়ে যায়।
.
এরপর আমাদের বিয়ের রাতে আমরা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়ি। তবে মাঝরাতে কারো একজনের হাড় চিবানোর শব্দে ঘুম ভেঙে যায় আমার। ঘুম থেকে উঠে দেখি জুলেখা আমার পাশে নেই। আর শব্দটা ঘরের ওয়াশরুম থেকেই আসছিলো। আমি ঘরের খাটের নিচ থেকে একটা রক্তের দাগ দেখতে পাই যেটা ওয়াশরুম পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। রক্তের দাগ দেখে এমন মনে হচ্ছে যে কোন একটা মৃত বস্তুকে টেনে ওয়াশরুম পর্যন্ত নিয়ে জাওয়া হয়েছে। আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই। ভয়ে ভয়ে ওয়াসরুমের দিকে যাচ্ছিলাম আর ডাকছিলাম:
- "জুলেখা" তুমি কোথায়! তুমি কি ওয়াসরুমে? আমাকে ভয় দেখানোর জন্য এসব করছো! তাই না!"
.
তবে ওয়াশরুমের ভেতর থেকে কোন উত্তর আসেনি।
শুধু হাড় কামরে খাওয়ার শব্দ আসছিলো। আমি ওয়াশরুমের ভেতর তাকিয়ে যাহ দেখলাম। তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। জুলেখা একটা বাচ্চা মেয়ের শরীর ছিড়ে ছিড়ে চিবিয়ে খাচ্ছিলো। আমি মেয়েটার মুখ দেখে চিনতে পারলাম আরে এইটাতো সেই মেয়ে যে আজ আমাদের বাড়ি থেকে হারিয়ে গিয়েছিলো। এই দৃশ্য দেখে ভয়েতো আমার পুরো শরীর অবস হয়ে আসছিলো। আমি জুলেখাকে প্রশ্ন করি:
-জুলেখা? তুমি কি পাগল হয়ে গেছো? এইগুলো কি করছো! এইভাবে একটা মানুষ আরেকটা মানুষকে কিভাবে হত্যা করে খেতে পারে? তুমি কি পশু হয়ে গেছো? আমি এখনই আমার বাড়ির সবাইকে ডাকছি।
.
এই বলেই যেই আমি আমার বাবা-মাকে ডাকতে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমার গলা থেকে শব্দ বের হওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। আমি আর সামনের দিকে হাটতে পারছিলাম না। আমার পুরো শরীর অবস হয়ে গেলো। জুলেখা আমাকে উচুঁ করে বিছানায় শুইয়ে দিলো। আর কানে কানে আমাকে বললো:
-সবেতো মাত্র একটা খুন করেছি আরো পুরো পৃথিবীকে হত্যা করা বাকি। আমি একের পর এক হত্যা করবো আর তার সাক্ষী থাকবে তুমি। আর তুমি এখন থেকে প্যারালাইসড। যাহ দেখবে আর শুনবে তা আর কাউকে বলতে পারবে না। হাহাহা।
.
এরপরে সবাই ভাবে আমি প্যারালাইসড হয়ে গেছি। এরপরে একে একে আরো মানুষকে হত্যা করতে থাকে সে
।
আমার চোখের সামনে জুলেখা আমার বাবা-মা দুজনকেই হত্যা করে ছিড়ে খায় তাদের দেহ। এরপর তার নিজের বাবা-মাকেও এনে খুন করে নিজের ক্ষুধা মেটাও সে। আমি সবকিছু দেখতে পারছিলাম তবে কোন কিছু বলার শক্তি ছিলো না আমার।
.
এরপর হঠাৎ একদিন একের পর এক বাচ্চা মেয়েদের এনে আমার সামনেই তাদেরকে ছিড়ে ছিড়ে খায় জুলেখা।
.
আজ সে ১৩ নাম্বার বাচ্চাটাকে হত্যা করলো। আরো ৭ জনকে হত্যা করতে পারলে নাকি জুলেখা অমরত্ব লাভ করবে।
.
আমি বুঝতে পারছিলাম যে জুলেখার শরীরে কোন পিশাচের আত্মা প্রবেশ করেছে। হয়তো সেই জঙ্গল থেকেই জুলেখার সাথে এমন কিছু হয়েছে। ঐ ৭ দিন যে নিখোজ ছিলো জুলেখা তখনই ওর সাথে কিছু হয়েছিলো। তবে কি হয়েছিলো! এর উত্তর আমাকে জানতেই হবে। কিন্তু এই পিশাচ বউ আর প্যারালাইসড শরীর নিয়ে কিভাবে এর রহস্য ভেদ করবো?!
.
তবে হঠাৎ একটা দারুন বুদ্ধি এলো আমার মাথায়।
.
. . . . . . চলবে . . . . .
Abid faraje, Ayrin kaTun, Masum, Sk nadim, Sume akter, Sofikul alom, Nera akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Tothapiধুমকেতু
- Posts : 13
স্বর্ণমুদ্রা : 1522
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-26
Re: পিশাচ বউ
Fri Jun 04, 2021 1:49 am
২য় পর্ব
.
তবে হঠাৎ একটা দারুন বুদ্ধি এলো আমার মাথায়।
.
আমি এই কয়েক মাস প্যারালাইসড অবস্হায় জুলেখার সাথে থেকে একটা জিনিস বুঝতে পেরেছিলাম যে তার অমরত্বের পেছনে হয়তো কোন ভাবে আমাকে দরকার। না হলে সে তার নিজের বাবা-মা কে হত্যা করলো, আমার বাবা-মা কে হত্যা করলো। কিন্তু আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে কেনো। তার মানে আমি যাই করি না কেনো অমরত্ব লাভের আগে পর্যন্ত সে আমাকে কিছুতেই মারবে না। তবে তার অমরত্ব লাভের আগে যদি আমি এই প্যারালাইসড জীবন থেকে মুক্তি না পাই তাহলে সে অমরত্ব পেলে অনেক খারাপ কিছু হতে পারে। আরো প্রান যাবে হাজারো নিষ্পাপ মানুষের। আর আমাকে এই প্যারালাইসড জীবন থেকে একমাত্র মুক্তি দিতে পারে জুলেখাই। কিন্তু সে আমাকে কেনো মুক্তি দিবে! বুঝলাম সে যেমন আমাদের সাথে ছলনা করেছিলো আমাকেও তার সাথে ছলনার আশ্রই নিতে হবে। তবে এর আগেতো আমাকে জুলেখার সাথে কথা বলতে হবে। কিন্তু আমার মুখ দিয়েতো কোন শব্দই বের হয় না।
.
অবশ্য আমি একটা জিনিস লক্ষ করতাম জুলেখা যখন আমার পাশে বসে থাকতো তখন আমি মনে মনে কি চিন্তা করছি তা না বুঝলেও আমি তাকে কি বলার চেষ্টা করছি তার উত্তর সে আমার কানের কাছে এসে দিতো। আমি বুঝতাম না আমি শব্দ করা ছাড়াও ও কিভাবে আমি কি বলতে চাই
এটা বুঝে। আমার যখন খুব ক্ষুধা পেতো তখন তাকে কিছু না বললেও আমার জন্য সে খাবার নিয়ে আসতো। আমি কথা বলতে না পারলেও আমার সব অনুভূতিগুলো তার জানা ছিলো। বুঝলাম এইভাবেই কথা বলে ছলনার ছলে জুলেখাকে বোকা বানাতে হবে। ভালো মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিজের ভালো গুণ গুলো প্রদর্শন করতে হয় আর খারাপ মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে তার খারাপ গুণ গুলোকেই নিজের আয়ত্তে এনে তার সামনে প্রদর্শন করতে হয়। তাই জুলেখার সাথে বন্ধুত্ব করতে আমাকেও তার পছন্দমত পিশাচিয় ব্যবহার করতে হবে।
.
পরেরদিন:
জুলেখা আজ আবার নতুন একটা বাচ্চা মেয়ের লাশ নিয়ে ঘরে এসেছে। কিছুক্ষন পর নিজের ব্যাগ থেকে আরো একটা লাশ বের করলো। লাশটা দেখে মনে হয় একটা ৩-৪ মাসের দুধের শিশুর লাশ। আমি দেখে বেশ কষ্ট পাই। এই নবজাতকের কি দোষ ছিলো যে এটাকে জুলেখা তার ক্ষুধা নিবারণে ব্যবহার করবে! একটু পর রোজকার মতো ছুরি দিয়ে লাশ দু'টোর মাথা শরীর থেকে আলাদা করে বন্য পশুদের মতো ছিড়ে ছিড়ে তাদের মাংস খাচ্ছিলো জুলেখা। আমার এই দৃশ্য দেখে বেশ কষ্ট আর মায়া লাগছিলো। তবে আজ আমাকে ভালোর দলে না খারাপের দলে নাম লেখাতে হবে। তাই দয়ামায়া দেখিয়ে লাভ নেই। জুলেখা তাদের দেহ খেতে খেতে আমার দিকে তাকিয়ে বলছিলো:
.
-আহ! বাচ্চা ছেলেমেয়েদের রক্তে আর মাংসে এতো স্বাদ। আমারতো মনে হয় পুরো পৃথিবীর সব বাচ্চাদের যদি একেবারে খেতে পারতাম। আহ কি তৃপ্তিটাই না পেতাম।রোজ ১ টা বা ২ টা বাচ্চা ছেলে-মেয়েকে খুজে পেতেও কতো কষ্ট হয় আমার। ভিখারী সেজে কতো কষ্ট করে মানুষকে বোকা বানিয়ে আনতে হয় তাদেরকে।
.
আমি তাকে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি:
-তুমিতো বোকা! আমি তোমার জায়গায় থাকলে দিনে ৮-১০ টা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের খুন করতে পারতাম। আর রক্তের সাগর করে দিতে পারতাম এই ঘরটাকে।
.
এইটা বলতে চেয়েছিলাম জুলেখাকে তবে মুখ দিয়ে কোন শব্দ না বের হলেও জুলেখা অবাক হয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। বুঝলাম সে আমার কথাটা শুনতে পেরেছে। সে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে জানতে চাইলো:
-- ৮-১০ টা বাচ্চা? রক্তের সাগর ? কিভাবে করতে! উপায় বলে দাও আমায়?
.
এরপর আমি চুপ হয়ে থাকি। আমি যাহ চাইছিলাম তাই হলো। জুলেখা উত্তেজিত হয়ে পড়লো কিভাবে এতোগুলো বাচ্চাকে ঘরে আনা যায় এটা জানার জন্য। এরপর বাধ্য হয়ে সে আমার মুখে হাত রেখে আমার কথা বলার শক্তি ফিরিয়ে দেয়। তবে তখনো মুখ বাদে আমার পুরো শরীর অবস। জুলেখা যখন অধিক আগ্রহে আমার কাছে এর উত্তরটা জানতে চায় তখন আমি ছলনার মাধ্যমে তাকে উত্তর দেই:
-আছে জুলেখা আছে । আমার কাছে এমন কৌশল জানা আছে যে আমি তোমাকে রক্তের সাগরে বসিয়ে রাখতে পারি। তোমার সামনে বলি দিতে পারি হাজারটা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের।
-কিন্তু তুমিতো সাধারণ মানুষ! আর আমাকে ঘৃণা করো। আমি তোমার বাবা-মা কেও হত্যা করেছি। তাই তুমি কেনো আমাকে সাহায্য করবে?
-বিশ্বাস করো এই কয়েক মাস তোমার পাশে থেকে তোমার এই মানুষ হত্যা আর ছিড়ে খাওয়ার দৃশ্য দেখে আমারো কেমন যেনো রক্ত নেশা লেগে গেছে। আমারো ইচ্ছা হয় মানুষগুলোকে এনে তোমার সামনে ছিড়ে দেই তাদের।
-তুমি আমার জন্য এসব করতে পারো না!!!
-পারি জুলেখা। তুমি আমার স্ত্রী। এই পৃথিবীতে আমার আপন তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমাকে একটু বিশ্বাস করো!
-আমি মানুষকে বিশ্বাস করি না।
-ঠিক আছে তাহলে আবার আমার মুখ অবস করে দাও। শুইয়ে রাখো আমাকে এই বিছানায়। আবার ভিখারী সেজে ঘুরে ঘুরে জোগাড় করো একটা করে বাচ্চাকে। আমার বুদ্ধির কি দরকার তোমার!
.
এই বলেই আমি চুপ করে যাই। এরপর জুলেখা বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। আমি জানতাম যে তার মাথায় একটাই কথা ঘুরছে ৮-১০ টা বাচ্চার তাজা শরীর আর তাজা রক্ত। জুলেখার আমাকে বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না। তাই বাধ্য হয়েই আমাকে অবস বা প্যারালাইসড থেকে মুক্ত করে দেয় জুলেখা।
তবে আমাকে বলে দেয় সে:
-তোমাকে আমি মুক্ত করলাম যাতে করে তুমি আমার জন্য বাচ্চা ছেলেমেয়েকে ধরে আনতে পারো তাই। কিন্তু কোন ভাবে যদি দেখি তুমি বিশ্বাসঘাতকতা করেছো তাহলে আবার তোমাকে আগের জীবনে ফিরিয়ে আনবো। না পারবে বাঁচতে না পারবে মরতে।
.
আমি বুঝলাম আমাকে আগে জুলেখার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। এর জন্য আমাকে তার জন্য একটা বাচ্চা শিকার করে আনতে হবে। আমি জুলেখার অনুমতি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম বাচ্চা শিকারের উদ্দেশ্যে।
কেউ যাতে আমাকে চিনতে না পারে তাই মুখ এবং পুরো শরীর একটা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে নেই।
.
আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাহিরের রাস্তায় এসে দাড়ালাম বাচ্চার খোজে। আমি বুঝেছিলাম যে জুলেখা আমার উপর নজর রাখছে। আমি যদি এখন জুলেখাকে না বলে রহস্য বের করতে জঙ্গলে যাই আর সে যদি কোন ভাবে বুঝতে পারে যে আমি তার সাথে ছলনা করছি তাহলে সে আবার আমাকে প্যারালাইসড করে দিবে। তারপর আমি আর জুলেখার এই পিশাচ হয়ে ওঠার রহস্য জানতে পারবো না। আর সে পিশাচে অমরত্ব লাভ করবে। তাই জুলেখাকে খুশী করতে হলে আমাকেও হতে হবে পিশাচ। শিকার করতে হবে একটা নিষ্পাপ প্রান। আমি এই রহস্যের সমাপ্তির জন্য যেকোন কিছু করতে পারি।
.
আমি অনেক্ষন রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলাম একটা বাচ্চাকে খুজে পাওয়ার জন্য তবে কোথাও খুজে পেলাম না। এরপর হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলেকে হেটে আসতে দেখলাম।
বাচ্চাটাকে দেখে মনে হচ্ছিলো টোকাই। রাস্তার বোতল কুড়াতে কুড়াতে আমার দিকে আসছিলো। তবে তাতে আমার কি আমারতো জুলেখার জন্য একটা রক্ত মাংসের বাচ্চা লাগবে শুধু। আমি ছেলেটাকে বললাম:
-চল আজকে আমার বাড়িতে। তোর জন্য অনেক ভালো খাবার আর খেলনা রাখা আছে।
.
ছেলেটা প্রথমে আমার সাথে যেতে না চাইলেও অনেকটা জোড় করেই তাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলাম।
.
ছেলেটা বেশ ভয় পেয়ে ছিলো। তবে ছেলেটাকে দেখে জুলেখার চোখে মুখে শুধু হাসি আর আনন্দই দেখতে পারছিলাম।
.
ছেলেটা জুলেখার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। আমি পাশ থেকে ছুরিটা এনে সোজা ছেলেটার গলায় চালিয়ে দিলাম। ছেলেটা কিছু বুঝে উঠার আগেই ছেলেটার গলা কেটে পুরো ঘরে রক্ত ছিটিয়ে পড়লো ঘরের ভেতরে। জুলেখা রক্ত দেখে পাগলের মতো রক্ত খেতে লাগলো। এরপর জুলেখার থেকে ভয়ংকর ভাবে ছেলেটার শরীরকে কেটে কেটে জুলেখার হাতে দিচ্ছিলাম আমি আর জুলেখা তৃপ্তি সহকারে তা ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছিলো। এরপর বাচ্চাটার বুকের বাম পাশ ছিদ্র করে নিজের হাতে হার্টটা তুলে বের করে জুলেখার হাতে দিলাম।
.
জুলেখা আমার পিশাচী কার্যকলাপ দেখে অবাক হয়ে যায়। সে ভাবতেও পারেনি যে আমি এতোটা দ্রুত ওর মতো হয়ে যেতে পারবো। এরপর আমাকে বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোন উপায় রইলো না জুলেখার।
.
জুলেখাকে আমি বললাম:-
.
-জুলেখা? এইবারতো আমাকে বিশ্বাস হলো? আমাকে আরো ২৪ ঘন্টা সময় দাও। আমি বাচ্চাদের বন্যা বইয়ে দিবো এখানে।
-ঠিক আছে। যাও। আমার রক্ত চাই, মাংস চাই আরো অনেক বাচ্চা চাই। যাও দ্রুত নিয়ে আসো তাদের।
.
এরপর আবার আমি বাড়ির বাহিরে চলে আসলাম। বুঝলাম এখন আর জুলেখা আমাকে সন্দেহ করবে না। আমাকে সেই জঙ্গলে যেয়ে রহস্যের সমাধান করতে হবে। তবে আমার কাছে মাত্র ২৪ ঘন্টা সময় আছে তারপর জুলেখা আবার রক্ত পিপাসু হয়ে যাবে আর আমাকে খুজতে থাকবে।
.
কিন্তু জঙ্গলে জাওয়ার আগে আমাকে আগে ঋষি মহারাজের কাছে যেতে হবে। শুনেছি তিনি নাকি পিশাচ স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করেন।
.
আমি ঋষি মহারাজের কাছে যাই এবং তাকে সব কথা খুলে বলি। সে আমার কথা শুনে আৎকে অবাক হয়ে দাড়িয়ে যায়। আর বলে:
.
-এ তুমি কি করেছো? কাকে বিয়ে করেছো? তুমি যাকে বিয়ে করেছিলে তার শরীরটা জুলেখার। তবে তার আত্মাটা পিশাচের। জুলেখার শরীরে পিশাচ দেবী এরেনরিয়া এর আত্মা রয়েছে।
-মানে কি!! কে এই পিশাচ দেবী এরেনরিয়া?
.
.
. . . . . চলবে . . . . .
.
তবে হঠাৎ একটা দারুন বুদ্ধি এলো আমার মাথায়।
.
আমি এই কয়েক মাস প্যারালাইসড অবস্হায় জুলেখার সাথে থেকে একটা জিনিস বুঝতে পেরেছিলাম যে তার অমরত্বের পেছনে হয়তো কোন ভাবে আমাকে দরকার। না হলে সে তার নিজের বাবা-মা কে হত্যা করলো, আমার বাবা-মা কে হত্যা করলো। কিন্তু আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে কেনো। তার মানে আমি যাই করি না কেনো অমরত্ব লাভের আগে পর্যন্ত সে আমাকে কিছুতেই মারবে না। তবে তার অমরত্ব লাভের আগে যদি আমি এই প্যারালাইসড জীবন থেকে মুক্তি না পাই তাহলে সে অমরত্ব পেলে অনেক খারাপ কিছু হতে পারে। আরো প্রান যাবে হাজারো নিষ্পাপ মানুষের। আর আমাকে এই প্যারালাইসড জীবন থেকে একমাত্র মুক্তি দিতে পারে জুলেখাই। কিন্তু সে আমাকে কেনো মুক্তি দিবে! বুঝলাম সে যেমন আমাদের সাথে ছলনা করেছিলো আমাকেও তার সাথে ছলনার আশ্রই নিতে হবে। তবে এর আগেতো আমাকে জুলেখার সাথে কথা বলতে হবে। কিন্তু আমার মুখ দিয়েতো কোন শব্দই বের হয় না।
.
অবশ্য আমি একটা জিনিস লক্ষ করতাম জুলেখা যখন আমার পাশে বসে থাকতো তখন আমি মনে মনে কি চিন্তা করছি তা না বুঝলেও আমি তাকে কি বলার চেষ্টা করছি তার উত্তর সে আমার কানের কাছে এসে দিতো। আমি বুঝতাম না আমি শব্দ করা ছাড়াও ও কিভাবে আমি কি বলতে চাই
এটা বুঝে। আমার যখন খুব ক্ষুধা পেতো তখন তাকে কিছু না বললেও আমার জন্য সে খাবার নিয়ে আসতো। আমি কথা বলতে না পারলেও আমার সব অনুভূতিগুলো তার জানা ছিলো। বুঝলাম এইভাবেই কথা বলে ছলনার ছলে জুলেখাকে বোকা বানাতে হবে। ভালো মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিজের ভালো গুণ গুলো প্রদর্শন করতে হয় আর খারাপ মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করতে তার খারাপ গুণ গুলোকেই নিজের আয়ত্তে এনে তার সামনে প্রদর্শন করতে হয়। তাই জুলেখার সাথে বন্ধুত্ব করতে আমাকেও তার পছন্দমত পিশাচিয় ব্যবহার করতে হবে।
.
পরেরদিন:
জুলেখা আজ আবার নতুন একটা বাচ্চা মেয়ের লাশ নিয়ে ঘরে এসেছে। কিছুক্ষন পর নিজের ব্যাগ থেকে আরো একটা লাশ বের করলো। লাশটা দেখে মনে হয় একটা ৩-৪ মাসের দুধের শিশুর লাশ। আমি দেখে বেশ কষ্ট পাই। এই নবজাতকের কি দোষ ছিলো যে এটাকে জুলেখা তার ক্ষুধা নিবারণে ব্যবহার করবে! একটু পর রোজকার মতো ছুরি দিয়ে লাশ দু'টোর মাথা শরীর থেকে আলাদা করে বন্য পশুদের মতো ছিড়ে ছিড়ে তাদের মাংস খাচ্ছিলো জুলেখা। আমার এই দৃশ্য দেখে বেশ কষ্ট আর মায়া লাগছিলো। তবে আজ আমাকে ভালোর দলে না খারাপের দলে নাম লেখাতে হবে। তাই দয়ামায়া দেখিয়ে লাভ নেই। জুলেখা তাদের দেহ খেতে খেতে আমার দিকে তাকিয়ে বলছিলো:
.
-আহ! বাচ্চা ছেলেমেয়েদের রক্তে আর মাংসে এতো স্বাদ। আমারতো মনে হয় পুরো পৃথিবীর সব বাচ্চাদের যদি একেবারে খেতে পারতাম। আহ কি তৃপ্তিটাই না পেতাম।রোজ ১ টা বা ২ টা বাচ্চা ছেলে-মেয়েকে খুজে পেতেও কতো কষ্ট হয় আমার। ভিখারী সেজে কতো কষ্ট করে মানুষকে বোকা বানিয়ে আনতে হয় তাদেরকে।
.
আমি তাকে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি:
-তুমিতো বোকা! আমি তোমার জায়গায় থাকলে দিনে ৮-১০ টা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের খুন করতে পারতাম। আর রক্তের সাগর করে দিতে পারতাম এই ঘরটাকে।
.
এইটা বলতে চেয়েছিলাম জুলেখাকে তবে মুখ দিয়ে কোন শব্দ না বের হলেও জুলেখা অবাক হয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো। বুঝলাম সে আমার কথাটা শুনতে পেরেছে। সে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে জানতে চাইলো:
-- ৮-১০ টা বাচ্চা? রক্তের সাগর ? কিভাবে করতে! উপায় বলে দাও আমায়?
.
এরপর আমি চুপ হয়ে থাকি। আমি যাহ চাইছিলাম তাই হলো। জুলেখা উত্তেজিত হয়ে পড়লো কিভাবে এতোগুলো বাচ্চাকে ঘরে আনা যায় এটা জানার জন্য। এরপর বাধ্য হয়ে সে আমার মুখে হাত রেখে আমার কথা বলার শক্তি ফিরিয়ে দেয়। তবে তখনো মুখ বাদে আমার পুরো শরীর অবস। জুলেখা যখন অধিক আগ্রহে আমার কাছে এর উত্তরটা জানতে চায় তখন আমি ছলনার মাধ্যমে তাকে উত্তর দেই:
-আছে জুলেখা আছে । আমার কাছে এমন কৌশল জানা আছে যে আমি তোমাকে রক্তের সাগরে বসিয়ে রাখতে পারি। তোমার সামনে বলি দিতে পারি হাজারটা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের।
-কিন্তু তুমিতো সাধারণ মানুষ! আর আমাকে ঘৃণা করো। আমি তোমার বাবা-মা কেও হত্যা করেছি। তাই তুমি কেনো আমাকে সাহায্য করবে?
-বিশ্বাস করো এই কয়েক মাস তোমার পাশে থেকে তোমার এই মানুষ হত্যা আর ছিড়ে খাওয়ার দৃশ্য দেখে আমারো কেমন যেনো রক্ত নেশা লেগে গেছে। আমারো ইচ্ছা হয় মানুষগুলোকে এনে তোমার সামনে ছিড়ে দেই তাদের।
-তুমি আমার জন্য এসব করতে পারো না!!!
-পারি জুলেখা। তুমি আমার স্ত্রী। এই পৃথিবীতে আমার আপন তুমি ছাড়া আর কেউ নেই। আমাকে একটু বিশ্বাস করো!
-আমি মানুষকে বিশ্বাস করি না।
-ঠিক আছে তাহলে আবার আমার মুখ অবস করে দাও। শুইয়ে রাখো আমাকে এই বিছানায়। আবার ভিখারী সেজে ঘুরে ঘুরে জোগাড় করো একটা করে বাচ্চাকে। আমার বুদ্ধির কি দরকার তোমার!
.
এই বলেই আমি চুপ করে যাই। এরপর জুলেখা বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। আমি জানতাম যে তার মাথায় একটাই কথা ঘুরছে ৮-১০ টা বাচ্চার তাজা শরীর আর তাজা রক্ত। জুলেখার আমাকে বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না। তাই বাধ্য হয়েই আমাকে অবস বা প্যারালাইসড থেকে মুক্ত করে দেয় জুলেখা।
তবে আমাকে বলে দেয় সে:
-তোমাকে আমি মুক্ত করলাম যাতে করে তুমি আমার জন্য বাচ্চা ছেলেমেয়েকে ধরে আনতে পারো তাই। কিন্তু কোন ভাবে যদি দেখি তুমি বিশ্বাসঘাতকতা করেছো তাহলে আবার তোমাকে আগের জীবনে ফিরিয়ে আনবো। না পারবে বাঁচতে না পারবে মরতে।
.
আমি বুঝলাম আমাকে আগে জুলেখার বিশ্বাস অর্জন করতে হবে। এর জন্য আমাকে তার জন্য একটা বাচ্চা শিকার করে আনতে হবে। আমি জুলেখার অনুমতি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম বাচ্চা শিকারের উদ্দেশ্যে।
কেউ যাতে আমাকে চিনতে না পারে তাই মুখ এবং পুরো শরীর একটা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে নেই।
.
আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে বাহিরের রাস্তায় এসে দাড়ালাম বাচ্চার খোজে। আমি বুঝেছিলাম যে জুলেখা আমার উপর নজর রাখছে। আমি যদি এখন জুলেখাকে না বলে রহস্য বের করতে জঙ্গলে যাই আর সে যদি কোন ভাবে বুঝতে পারে যে আমি তার সাথে ছলনা করছি তাহলে সে আবার আমাকে প্যারালাইসড করে দিবে। তারপর আমি আর জুলেখার এই পিশাচ হয়ে ওঠার রহস্য জানতে পারবো না। আর সে পিশাচে অমরত্ব লাভ করবে। তাই জুলেখাকে খুশী করতে হলে আমাকেও হতে হবে পিশাচ। শিকার করতে হবে একটা নিষ্পাপ প্রান। আমি এই রহস্যের সমাপ্তির জন্য যেকোন কিছু করতে পারি।
.
আমি অনেক্ষন রাস্তায় দাড়িয়ে ছিলাম একটা বাচ্চাকে খুজে পাওয়ার জন্য তবে কোথাও খুজে পেলাম না। এরপর হঠাৎ একটা বাচ্চা ছেলেকে হেটে আসতে দেখলাম।
বাচ্চাটাকে দেখে মনে হচ্ছিলো টোকাই। রাস্তার বোতল কুড়াতে কুড়াতে আমার দিকে আসছিলো। তবে তাতে আমার কি আমারতো জুলেখার জন্য একটা রক্ত মাংসের বাচ্চা লাগবে শুধু। আমি ছেলেটাকে বললাম:
-চল আজকে আমার বাড়িতে। তোর জন্য অনেক ভালো খাবার আর খেলনা রাখা আছে।
.
ছেলেটা প্রথমে আমার সাথে যেতে না চাইলেও অনেকটা জোড় করেই তাকে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলাম।
.
ছেলেটা বেশ ভয় পেয়ে ছিলো। তবে ছেলেটাকে দেখে জুলেখার চোখে মুখে শুধু হাসি আর আনন্দই দেখতে পারছিলাম।
.
ছেলেটা জুলেখার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। আমি পাশ থেকে ছুরিটা এনে সোজা ছেলেটার গলায় চালিয়ে দিলাম। ছেলেটা কিছু বুঝে উঠার আগেই ছেলেটার গলা কেটে পুরো ঘরে রক্ত ছিটিয়ে পড়লো ঘরের ভেতরে। জুলেখা রক্ত দেখে পাগলের মতো রক্ত খেতে লাগলো। এরপর জুলেখার থেকে ভয়ংকর ভাবে ছেলেটার শরীরকে কেটে কেটে জুলেখার হাতে দিচ্ছিলাম আমি আর জুলেখা তৃপ্তি সহকারে তা ছিড়ে ছিড়ে খাচ্ছিলো। এরপর বাচ্চাটার বুকের বাম পাশ ছিদ্র করে নিজের হাতে হার্টটা তুলে বের করে জুলেখার হাতে দিলাম।
.
জুলেখা আমার পিশাচী কার্যকলাপ দেখে অবাক হয়ে যায়। সে ভাবতেও পারেনি যে আমি এতোটা দ্রুত ওর মতো হয়ে যেতে পারবো। এরপর আমাকে বিশ্বাস করা ছাড়া আর কোন উপায় রইলো না জুলেখার।
.
জুলেখাকে আমি বললাম:-
.
-জুলেখা? এইবারতো আমাকে বিশ্বাস হলো? আমাকে আরো ২৪ ঘন্টা সময় দাও। আমি বাচ্চাদের বন্যা বইয়ে দিবো এখানে।
-ঠিক আছে। যাও। আমার রক্ত চাই, মাংস চাই আরো অনেক বাচ্চা চাই। যাও দ্রুত নিয়ে আসো তাদের।
.
এরপর আবার আমি বাড়ির বাহিরে চলে আসলাম। বুঝলাম এখন আর জুলেখা আমাকে সন্দেহ করবে না। আমাকে সেই জঙ্গলে যেয়ে রহস্যের সমাধান করতে হবে। তবে আমার কাছে মাত্র ২৪ ঘন্টা সময় আছে তারপর জুলেখা আবার রক্ত পিপাসু হয়ে যাবে আর আমাকে খুজতে থাকবে।
.
কিন্তু জঙ্গলে জাওয়ার আগে আমাকে আগে ঋষি মহারাজের কাছে যেতে হবে। শুনেছি তিনি নাকি পিশাচ স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা করেন।
.
আমি ঋষি মহারাজের কাছে যাই এবং তাকে সব কথা খুলে বলি। সে আমার কথা শুনে আৎকে অবাক হয়ে দাড়িয়ে যায়। আর বলে:
.
-এ তুমি কি করেছো? কাকে বিয়ে করেছো? তুমি যাকে বিয়ে করেছিলে তার শরীরটা জুলেখার। তবে তার আত্মাটা পিশাচের। জুলেখার শরীরে পিশাচ দেবী এরেনরিয়া এর আত্মা রয়েছে।
-মানে কি!! কে এই পিশাচ দেবী এরেনরিয়া?
.
.
. . . . . চলবে . . . . .
Abid faraje, Ayrin kaTun, Masum, Sk nadim, Sume akter, Sofikul alom, Nera akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Tothapiধুমকেতু
- Posts : 13
স্বর্ণমুদ্রা : 1522
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-26
Re: পিশাচ বউ
Fri Jun 04, 2021 1:50 am
৩য় পর্ব
.
-জুলেখার শরীরে পিশাচ দেবী এরেনরিয়া এর আত্মা রয়েছে।
-মানে কি!! কে এই পিশাচ দেবী এরেনরিয়া?
.
.
আমি বেশ অবাক হয়ে যাই। কে এই পিশাচ দেবী এরেনরিয়া আর তিনিই কেনোই বা জুলেখার শরীরে প্রবেশ করলেন। এরপর ঋষি মহারাজ আমাকে সব কথা খুলে বললেন:
.
-তুমি আমাকে যে জঙ্গলের কথা বললে সে জঙ্গল আজ থেকে কয়েকশো বছর আগেও পিশাচদের সাধনার জায়গা ছিলো। সেখানকার রাণী ছিলেন পিশাচ দেবী এরেনরিয়া। তার কথাতেই সেখানে পিশাচীয় কার্যকলাপ চলতো। সেইখানকার পিশাচের আশে পাশের এলাকা থেকে মানুষদের বোকা বানিয়ে ছলনার মাধ্যমে জঙ্গলে নিয়ে আসতো। তারপর সেই মানুষকে দুই ভাগ করে পিশাচেরা তাদের দেবী এরেনরিয়াকে শরীরের অর্ধেক অংশ উৎসর্গ করতো এবং বাকি অর্ধেক অংশ তারা নিজেরা ছিড়ে খেতো। সেই জঙ্গল তখনকার সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গল ছিলো। পিশাচদের রাজত্ব ভালোই চলছিলো তবে হঠাৎ একদিন এক সাধু ঋষি সেই জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেটে আসার সময় বুঝতে পারেন যে জঙ্গলের ভেতর পিশাচ রাজ্য রয়েছে এবং এখানে অনেক অপকর্ম হয়। তারপর সেই সাধু তার অলৌকিক শক্তির সাহায্যে যুদ্ধ করে জঙ্গলের সকল পিশাচদের হত্যা করে ফেলে এবং ধ্বংস করে দেয় পিশাচ সম্রাজ্যকে। তবে দেবী এরেনরিয়া কোনভাবে সেখান থেকে পালিয়ে বেঁচে যায়। তবে সে হারিয়ে ফেলে তার পিশাচ দেহ। এরপর থেকে দেহহীন তার আত্মা জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় এবং কোন কুমারী মেয়েকে পেলে তার শরীরে তার আত্মা প্রবেশ করে এবং হত্যা করতে থাকে একের পর এক নিষ্পাপ প্রান। হয়তো পিশাচ দেবী পুনরায় তার রাজত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য এখনো বেঁচে আছে। তবে সামনেই আসছে ৪৩ তম আমাবস্যা।
এই ৪৩ তম আমাবস্যা প্রতি ৪৩ বছর পরে পরে আসে। এই আমাবস্যায় যদি এরেনরিয়া ২১ টা বাচ্চার মাথা দিয়ে একটা পুজা করতে পারে তাহলে সে আবার তার আগের দেহ ফিরে পাবে।এরেনরিয়া হয়ে যাবে চিরো অমর। সে আবার ফিরে পাবে তার রাজত্ব।
.
আমি ঋষির কথা শুনে এতটুকু বুঝতে পেরেছিলাম যে জুলেখা কেনো এতোদিন বাচ্চাদের হত্যা করে তাদের মাথা ফ্রিজে জমা করছিলো। তারমানে আমি যে মেয়েটাকে বিয়ে করেছিলাম সে জুলেখা ছিলো না। ছিলো পিশাচ দেবী এরেনরিয়া। এতোদিন পর্যন্ত আমার সাথে যে ঘরে ছিলো আমার পরিবারকে হত্যা করেছে সে তাহলে জুলেখা না। সে একটা পিশাচ, এরেনরিয়া। জুলেখা যখন জঙ্গলে যায় তখনই হয়তো জুলেখাকে কেউ বোকা বানিয়ে জঙ্গলের ভেতর নিয়ে যায়। এবং এরপর পিশাচ দেবী এরেনরিয়া জুলেখার শরীরে প্রবেশ করে। তবে জুলেখার শরীরে যদি পিশাচের আত্মা প্রবেশ করে থাকে তাহলে জুলেখার আত্মা এখন কোথায়? জুলেখাকে কোথায় বন্ধী করে রেখেছে এরেনরিয়া! তাই আমি ঋষিকে প্রশ্ন করি:
- তাহলে আমার যে মেয়েটার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো সে মেয়েটা অর্থাৎ জুলেখা এখন কোথায়?
-হয়তো ঐ জঙ্গলেই তাকে বন্ধী করে রেখে দিয়েছে এরেনরিয়া।
-জুলেখাকে জঙ্গল থেকে মুক্ত করার কি কোন উপায় নেই আর!
-এই সব প্রশ্নের উত্তর ঐ জঙ্গলে
ভেতরে আছে। এর উত্তর আমার জানা নেই। জঙ্গলের অনেক ভেতরে সেই পিশাচের রাজ্য। হয়তো সেখানেই তুমি জুলেখাকে পাবে। তবে সেই জঙ্গলের পিশাচ সম্রাজ্যে কোন সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারে না। যেই প্রবেশ করে সে সাথে সাথেই আগুনে জ্বলে মারা যায়।
-তাহলে কি এই এরেনরিয়াকে ধ্বংস করা আর জুলেখার আত্মাকে ফিরিয়ে আনার আর কোন উপায় নেই?
-আমার জানা নেই । তবে জঙ্গলের ভেতরেই এই রহস্যের সমাধান রয়েছে। তবে আমি তোমাকে এ ব্যাপারে কোন সাহায্য করতে পারবো না।
-আচ্ছা যে সাধু আজ থেকে অনেক বছর আগে পিশাচ রাজ্য ধ্বংস করছিলো সে সাধু এখন কোথায় থাকে? সে নিশ্চই এর উপায় জানে?
- সেই সাধুর খবর কারো জানা নেই। পিশাচ রাজ্য ধ্বংস করার এক সপ্তাহ পর থেকে তাকে আর খুজে পাওয়া যায় না। অনেকে বলে তাকে নাকি পিশাচ দেবী এরেনরিয়া বস করে ধরে নিয়ে গেছে বা হত্যা করে ফেলেছে। যাতে এরেনরিয়ার অমরত্বের পেছনে আর কেউ বাধাঁ হতে না পারে। তবে তুমি এখন এখান থেকে চলে যাও। পিশাচী এরেনরিয়া যদি জানতে পারে যে তুমি আমার কাছে এসেছো তাহলে আমাকেও হত্যা করে ফেলবে।
.
এরপর আমি ঋষি মহারাজের কাছ থেকে চলে আসি। আমি ভেবেছিলাম তিনি আমাকে সাহায্য করবেন কোনভাবে। তবে উল্টা তিনি আরো আমাকে ভয় পাইয়ে দিলো।
.
এখন আমি আরো চিন্তায় পড়ে যাই। জঙ্গলের পিশাচ রাজ্যে নাকি সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারবে না। তাহলে আমি কিভাবে জুলেখার আত্মাকে উদ্ধার করবো। তাহলে কি আমি আবার বাড়িতে ফিরে যাবো! নাহ! বাড়িতে ফিরে গেলে আবার জুলেখার শরীরে থাকা এরেনরিয়ার আত্মার নোংরামো দেখতে হবে। একের পর এক নিষ্পাপ মানুষের হত্যা দেখতে হবে। তার চেয়ে ভালো আমি সেই জঙ্গলের পিশাচ রাজ্যেই যাই। যা হওয়ার হবে। আমার মৃত্যু ঘটলে ঘটবে। এখন আর আমার জীবন আমার কাছে প্রিয় না।
.
এরপর জঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। আমার কাছে বেশি সময়ও নেই। অনেক কষ্টে সেই জঙ্গলের কাছে পৌছালাম। এরপর হাটতে লাগলাম আপন মনে জঙ্গলের ভেতরে। আমি যত গভীরে যাচ্ছিলাম জঙ্গলটা ততো বেশি ভয়ংকর হয়ে যাচ্ছিলো। এর আগেও জুলেখাকে খুজতে জঙ্গলের ভেতরে এসেছিলাম তবে তখন দিন ছিলো আর আমার সাথে পুলিশো ছিলো। তবে আজ আমি পুরো একা আর গভীর রাতে এখানে এসেছি। মনের ভেতরে ভয় ক্রমস বেড়েই যাচ্ছিলো।
.
অবশেষে এসে পৌছালাম সেই পিশাচ রাজ্যের সামনে। তবে ভয় পাচ্ছিলাম এর ভেতরে ঢুকতে। কারণ ঋষি বলেছিলো সাধারণ মানুষ এ রাজ্যে প্রবেশ করলে নাকি আগুনে পুরে মারা যায়। তবে আমাকে তো প্রবেশ করতেই হবে। অনেক ভয়ে ভয়ে পিশাচ রাজ্যে প্রবেশ করলাম।
তবে এর ভেতরে প্রবেশ করে বেশ অবাক হয়ে যাই। কই আমিতো এখনো আগুনে জ্বলে মারা যাইনি। তবে ঋষি যে বলেছিলো সাধারণ মানুষ এ রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে রাজ্যটা দেখতে অনেক ভয়ংকর। চারিদিক থেকে কেমন যেনো ভয়ংকর শব্দ আসছিলো। অনেকের কান্না এবং ভয় মিশ্রিত মৃত্যু চিৎকারের শব্দও কানে ভেসে আসছিলো আমার। তবে এই পিশাচ রাজ্যটা অনেক বড়। এখানে আমি জুলেখাকে খুজে পাবো কিভাবে। আর একজন মানুষ যখন পিশাচ রাজ্যে প্রবেশ করেছে তখনতো এইখানের পিশাচরাও হয়তো কোন সংকেত পেয়েছে। তাদের এতোক্ষনে এখানে চলে আসার কথা। তবে আমি ভয় পাবো না তাদের।
আজ আমাকে সবকিছুর মোকাবেলা করতে হবে।
.
আমি পিশাচ রাজ্যের কিছুটা স্বীমা পার করে জাওয়ার পর হঠাৎ চারিদিক থেকে ভয়ংকর দেখতে কিছু প্রানী আমাকে ঘীরে ধরে। প্রানী গুলো অনেকটাই মানুষের মতো দেখতে। বুঝলাম এগুলো হয়তো পিশাচ। আমি ভেবেছিলাম তারা আমাকে মেরে ফেলবে। তবে তারা তাদের নাক দিয়ে আমার শরীর শুকে আর আমাকে মারে না। এরপর তারা চলে যায়। আমি অবাক হয়ে যাই। আমার শরীরে কি এমন আছে যে পিশাচ সম্রাজ্যে ঢুকার পর আগুনে জ্বলে মারা গেলাম না, এই পিশাচেরাও আমার শরীর শুকে আর আমাকে হত্যা করলো না।
আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
.
এরপর আমি একটা রাজ প্রাসাদ দেখতে পাই বুঝলাম যে এর ভেতরেই হয়তো কোন রহস্য রয়েছে
।
.
এরপর আমি প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশ করি। প্রাসাদের বাহিরে থেকে দেখতে যতটা সুন্দর লেগেছিলো ভেতরে এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভয়ংকর। আমি প্রাসাদে ঢুকার একটু পরেই আমাকে অবাক করে দিয়ে একটা পিশাচ আমার পেছন থেকে এসে আমাকে বলে:
-আসুন জাহাপনা। আপনার জন্যই এতো প্রহর অপেক্ষায় ছিলাম।
.
আমি বেশ অবাক হয়ে যাই। এই পিশাচ আমার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করছে কেনো। এরপর পিশাচটা আমাকে একটা চেয়ারে বসালো। সাথে সাথেই আরো কিছু পিশাচ এসে জোড় করে একট দড়ি দিয়ে আমাকে চেয়ারের সাথে শক্ত করে বেঁধে নিলো। আমি আর নড়তে পারছিলাম নাহ। আমি শুধু পিশাচদের প্রশ্ন করছিলাম:
.
-কে তোমরা? আমাকে কেনো হত্যা না করে আমার সাথে এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছো? আর আমাকে বেধেঁ রাখার ইবা কারণ কী?
.
তবে তারা কোন উত্তর দিলো না। আমাকে একা চেয়ারে বেঁধে রেখে চলে গেলো তারা সবাই।
.
আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। চুপচাপ চেয়ারে বসে ছিলাম। হঠাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার সামনে চলে এলো জুলেখা। জুলেখা তো বাড়িতে ছিলো। ও এখানে আসলো কিভাবে। আমি অবাক হয়ে তাকে বলি যে:
.
-জুলেখা? তুমি এখানে কিভাবে আসলে?
-আমি জুলেখা না। আমি পিশাচ দেবী এরেনরিয়া। হাহাহা। নিজেকে অনেক চালাক ভাবিস তাই না?
-মানে কি?
-আমি এরেনরিয়া। তুই কি ভেবেছিলি বাচ্চা শিকার করার কথা বলে আমাকে বোকা বানিয়ে জঙ্গলে চলে আসবি জুলেখাকে বাঁচাতে। হাহাহা। তোকে বাচ্চা শিকারে পাঠানোটাও আমারই প্লান ছিলো। আমি জানতাম যে তুই মিথ্যা বলে এই জঙ্গলেই আসবি। তোকে এই জঙ্গলে আনা দরকার ছিলো তবে প্যারালাইসড তোকে নিয়ে আসা অনেক কঠিন হতো। সবাই আমাকে সন্দেহ করতো।তাই তোকে তোর প্লান দিয়েই তোকে এখানে নিয়ে আসলাম। তুই আসোলেই একটা বোকা। তুই এইটা একবারো ভাবলি না যে তুই মনে মনে যে প্রশ্ন করিস সেটাই আমি বুঝতে পারি , তোর অনুভূতিগুলো বুঝতে পারি আর তোর প্লান যেটা তোর মনে চলে এটা বুঝতে পারবো না।৪৩ তম আমাবস্যা পর্যন্ত তোকে এখানেই রেখে দিবো। আর আমার অমরত্বের পর তোকে চিরো মুক্তি মৃত্যু দিবো।
হাহাহাহা।
.
এই বলেই পিশাচ এরেনরিয়া চলে গেলো। আমি বুঝলাম জুলেখার শরীরে থাকা এরেনরিয়ার আত্মা আমার ছলনাকে চাল বানিয়ে আমাকেই বোকা বানিয়ে আবার এখানে নিয়ে এসেছে। আমার আর কিছু করার নেই। তবে জুলেখার আত্মা এখন কোথায় আছে।
ও থাকলে হয়তো আমাকে কিছু সাহায্য করতে পারতো।
.
হঠাৎ ঘরের এক কোনা থেকে জুলেখার মতো একটা কন্ঠ শুনতে পেলাম। সে আমায় ডাকছে:
.
-এই যে শুনছো? খাচার দিকে তাকাও আমি এখানে।
.
.
. . . . . চলবে . . . .
.
-জুলেখার শরীরে পিশাচ দেবী এরেনরিয়া এর আত্মা রয়েছে।
-মানে কি!! কে এই পিশাচ দেবী এরেনরিয়া?
.
.
আমি বেশ অবাক হয়ে যাই। কে এই পিশাচ দেবী এরেনরিয়া আর তিনিই কেনোই বা জুলেখার শরীরে প্রবেশ করলেন। এরপর ঋষি মহারাজ আমাকে সব কথা খুলে বললেন:
.
-তুমি আমাকে যে জঙ্গলের কথা বললে সে জঙ্গল আজ থেকে কয়েকশো বছর আগেও পিশাচদের সাধনার জায়গা ছিলো। সেখানকার রাণী ছিলেন পিশাচ দেবী এরেনরিয়া। তার কথাতেই সেখানে পিশাচীয় কার্যকলাপ চলতো। সেইখানকার পিশাচের আশে পাশের এলাকা থেকে মানুষদের বোকা বানিয়ে ছলনার মাধ্যমে জঙ্গলে নিয়ে আসতো। তারপর সেই মানুষকে দুই ভাগ করে পিশাচেরা তাদের দেবী এরেনরিয়াকে শরীরের অর্ধেক অংশ উৎসর্গ করতো এবং বাকি অর্ধেক অংশ তারা নিজেরা ছিড়ে খেতো। সেই জঙ্গল তখনকার সবচেয়ে ভয়ংকর জঙ্গল ছিলো। পিশাচদের রাজত্ব ভালোই চলছিলো তবে হঠাৎ একদিন এক সাধু ঋষি সেই জঙ্গলের ভেতর দিয়ে হেটে আসার সময় বুঝতে পারেন যে জঙ্গলের ভেতর পিশাচ রাজ্য রয়েছে এবং এখানে অনেক অপকর্ম হয়। তারপর সেই সাধু তার অলৌকিক শক্তির সাহায্যে যুদ্ধ করে জঙ্গলের সকল পিশাচদের হত্যা করে ফেলে এবং ধ্বংস করে দেয় পিশাচ সম্রাজ্যকে। তবে দেবী এরেনরিয়া কোনভাবে সেখান থেকে পালিয়ে বেঁচে যায়। তবে সে হারিয়ে ফেলে তার পিশাচ দেহ। এরপর থেকে দেহহীন তার আত্মা জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় এবং কোন কুমারী মেয়েকে পেলে তার শরীরে তার আত্মা প্রবেশ করে এবং হত্যা করতে থাকে একের পর এক নিষ্পাপ প্রান। হয়তো পিশাচ দেবী পুনরায় তার রাজত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য এখনো বেঁচে আছে। তবে সামনেই আসছে ৪৩ তম আমাবস্যা।
এই ৪৩ তম আমাবস্যা প্রতি ৪৩ বছর পরে পরে আসে। এই আমাবস্যায় যদি এরেনরিয়া ২১ টা বাচ্চার মাথা দিয়ে একটা পুজা করতে পারে তাহলে সে আবার তার আগের দেহ ফিরে পাবে।এরেনরিয়া হয়ে যাবে চিরো অমর। সে আবার ফিরে পাবে তার রাজত্ব।
.
আমি ঋষির কথা শুনে এতটুকু বুঝতে পেরেছিলাম যে জুলেখা কেনো এতোদিন বাচ্চাদের হত্যা করে তাদের মাথা ফ্রিজে জমা করছিলো। তারমানে আমি যে মেয়েটাকে বিয়ে করেছিলাম সে জুলেখা ছিলো না। ছিলো পিশাচ দেবী এরেনরিয়া। এতোদিন পর্যন্ত আমার সাথে যে ঘরে ছিলো আমার পরিবারকে হত্যা করেছে সে তাহলে জুলেখা না। সে একটা পিশাচ, এরেনরিয়া। জুলেখা যখন জঙ্গলে যায় তখনই হয়তো জুলেখাকে কেউ বোকা বানিয়ে জঙ্গলের ভেতর নিয়ে যায়। এবং এরপর পিশাচ দেবী এরেনরিয়া জুলেখার শরীরে প্রবেশ করে। তবে জুলেখার শরীরে যদি পিশাচের আত্মা প্রবেশ করে থাকে তাহলে জুলেখার আত্মা এখন কোথায়? জুলেখাকে কোথায় বন্ধী করে রেখেছে এরেনরিয়া! তাই আমি ঋষিকে প্রশ্ন করি:
- তাহলে আমার যে মেয়েটার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো সে মেয়েটা অর্থাৎ জুলেখা এখন কোথায়?
-হয়তো ঐ জঙ্গলেই তাকে বন্ধী করে রেখে দিয়েছে এরেনরিয়া।
-জুলেখাকে জঙ্গল থেকে মুক্ত করার কি কোন উপায় নেই আর!
-এই সব প্রশ্নের উত্তর ঐ জঙ্গলে
ভেতরে আছে। এর উত্তর আমার জানা নেই। জঙ্গলের অনেক ভেতরে সেই পিশাচের রাজ্য। হয়তো সেখানেই তুমি জুলেখাকে পাবে। তবে সেই জঙ্গলের পিশাচ সম্রাজ্যে কোন সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারে না। যেই প্রবেশ করে সে সাথে সাথেই আগুনে জ্বলে মারা যায়।
-তাহলে কি এই এরেনরিয়াকে ধ্বংস করা আর জুলেখার আত্মাকে ফিরিয়ে আনার আর কোন উপায় নেই?
-আমার জানা নেই । তবে জঙ্গলের ভেতরেই এই রহস্যের সমাধান রয়েছে। তবে আমি তোমাকে এ ব্যাপারে কোন সাহায্য করতে পারবো না।
-আচ্ছা যে সাধু আজ থেকে অনেক বছর আগে পিশাচ রাজ্য ধ্বংস করছিলো সে সাধু এখন কোথায় থাকে? সে নিশ্চই এর উপায় জানে?
- সেই সাধুর খবর কারো জানা নেই। পিশাচ রাজ্য ধ্বংস করার এক সপ্তাহ পর থেকে তাকে আর খুজে পাওয়া যায় না। অনেকে বলে তাকে নাকি পিশাচ দেবী এরেনরিয়া বস করে ধরে নিয়ে গেছে বা হত্যা করে ফেলেছে। যাতে এরেনরিয়ার অমরত্বের পেছনে আর কেউ বাধাঁ হতে না পারে। তবে তুমি এখন এখান থেকে চলে যাও। পিশাচী এরেনরিয়া যদি জানতে পারে যে তুমি আমার কাছে এসেছো তাহলে আমাকেও হত্যা করে ফেলবে।
.
এরপর আমি ঋষি মহারাজের কাছ থেকে চলে আসি। আমি ভেবেছিলাম তিনি আমাকে সাহায্য করবেন কোনভাবে। তবে উল্টা তিনি আরো আমাকে ভয় পাইয়ে দিলো।
.
এখন আমি আরো চিন্তায় পড়ে যাই। জঙ্গলের পিশাচ রাজ্যে নাকি সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে পারবে না। তাহলে আমি কিভাবে জুলেখার আত্মাকে উদ্ধার করবো। তাহলে কি আমি আবার বাড়িতে ফিরে যাবো! নাহ! বাড়িতে ফিরে গেলে আবার জুলেখার শরীরে থাকা এরেনরিয়ার আত্মার নোংরামো দেখতে হবে। একের পর এক নিষ্পাপ মানুষের হত্যা দেখতে হবে। তার চেয়ে ভালো আমি সেই জঙ্গলের পিশাচ রাজ্যেই যাই। যা হওয়ার হবে। আমার মৃত্যু ঘটলে ঘটবে। এখন আর আমার জীবন আমার কাছে প্রিয় না।
.
এরপর জঙ্গলের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। আমার কাছে বেশি সময়ও নেই। অনেক কষ্টে সেই জঙ্গলের কাছে পৌছালাম। এরপর হাটতে লাগলাম আপন মনে জঙ্গলের ভেতরে। আমি যত গভীরে যাচ্ছিলাম জঙ্গলটা ততো বেশি ভয়ংকর হয়ে যাচ্ছিলো। এর আগেও জুলেখাকে খুজতে জঙ্গলের ভেতরে এসেছিলাম তবে তখন দিন ছিলো আর আমার সাথে পুলিশো ছিলো। তবে আজ আমি পুরো একা আর গভীর রাতে এখানে এসেছি। মনের ভেতরে ভয় ক্রমস বেড়েই যাচ্ছিলো।
.
অবশেষে এসে পৌছালাম সেই পিশাচ রাজ্যের সামনে। তবে ভয় পাচ্ছিলাম এর ভেতরে ঢুকতে। কারণ ঋষি বলেছিলো সাধারণ মানুষ এ রাজ্যে প্রবেশ করলে নাকি আগুনে পুরে মারা যায়। তবে আমাকে তো প্রবেশ করতেই হবে। অনেক ভয়ে ভয়ে পিশাচ রাজ্যে প্রবেশ করলাম।
তবে এর ভেতরে প্রবেশ করে বেশ অবাক হয়ে যাই। কই আমিতো এখনো আগুনে জ্বলে মারা যাইনি। তবে ঋষি যে বলেছিলো সাধারণ মানুষ এ রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না। তবে রাজ্যটা দেখতে অনেক ভয়ংকর। চারিদিক থেকে কেমন যেনো ভয়ংকর শব্দ আসছিলো। অনেকের কান্না এবং ভয় মিশ্রিত মৃত্যু চিৎকারের শব্দও কানে ভেসে আসছিলো আমার। তবে এই পিশাচ রাজ্যটা অনেক বড়। এখানে আমি জুলেখাকে খুজে পাবো কিভাবে। আর একজন মানুষ যখন পিশাচ রাজ্যে প্রবেশ করেছে তখনতো এইখানের পিশাচরাও হয়তো কোন সংকেত পেয়েছে। তাদের এতোক্ষনে এখানে চলে আসার কথা। তবে আমি ভয় পাবো না তাদের।
আজ আমাকে সবকিছুর মোকাবেলা করতে হবে।
.
আমি পিশাচ রাজ্যের কিছুটা স্বীমা পার করে জাওয়ার পর হঠাৎ চারিদিক থেকে ভয়ংকর দেখতে কিছু প্রানী আমাকে ঘীরে ধরে। প্রানী গুলো অনেকটাই মানুষের মতো দেখতে। বুঝলাম এগুলো হয়তো পিশাচ। আমি ভেবেছিলাম তারা আমাকে মেরে ফেলবে। তবে তারা তাদের নাক দিয়ে আমার শরীর শুকে আর আমাকে মারে না। এরপর তারা চলে যায়। আমি অবাক হয়ে যাই। আমার শরীরে কি এমন আছে যে পিশাচ সম্রাজ্যে ঢুকার পর আগুনে জ্বলে মারা গেলাম না, এই পিশাচেরাও আমার শরীর শুকে আর আমাকে হত্যা করলো না।
আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
.
এরপর আমি একটা রাজ প্রাসাদ দেখতে পাই বুঝলাম যে এর ভেতরেই হয়তো কোন রহস্য রয়েছে
।
.
এরপর আমি প্রাসাদের ভেতরে প্রবেশ করি। প্রাসাদের বাহিরে থেকে দেখতে যতটা সুন্দর লেগেছিলো ভেতরে এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ভয়ংকর। আমি প্রাসাদে ঢুকার একটু পরেই আমাকে অবাক করে দিয়ে একটা পিশাচ আমার পেছন থেকে এসে আমাকে বলে:
-আসুন জাহাপনা। আপনার জন্যই এতো প্রহর অপেক্ষায় ছিলাম।
.
আমি বেশ অবাক হয়ে যাই। এই পিশাচ আমার সাথে এতো ভালো ব্যবহার করছে কেনো। এরপর পিশাচটা আমাকে একটা চেয়ারে বসালো। সাথে সাথেই আরো কিছু পিশাচ এসে জোড় করে একট দড়ি দিয়ে আমাকে চেয়ারের সাথে শক্ত করে বেঁধে নিলো। আমি আর নড়তে পারছিলাম নাহ। আমি শুধু পিশাচদের প্রশ্ন করছিলাম:
.
-কে তোমরা? আমাকে কেনো হত্যা না করে আমার সাথে এমন অদ্ভুত ব্যবহার করছো? আর আমাকে বেধেঁ রাখার ইবা কারণ কী?
.
তবে তারা কোন উত্তর দিলো না। আমাকে একা চেয়ারে বেঁধে রেখে চলে গেলো তারা সবাই।
.
আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। চুপচাপ চেয়ারে বসে ছিলাম। হঠাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে আমার সামনে চলে এলো জুলেখা। জুলেখা তো বাড়িতে ছিলো। ও এখানে আসলো কিভাবে। আমি অবাক হয়ে তাকে বলি যে:
.
-জুলেখা? তুমি এখানে কিভাবে আসলে?
-আমি জুলেখা না। আমি পিশাচ দেবী এরেনরিয়া। হাহাহা। নিজেকে অনেক চালাক ভাবিস তাই না?
-মানে কি?
-আমি এরেনরিয়া। তুই কি ভেবেছিলি বাচ্চা শিকার করার কথা বলে আমাকে বোকা বানিয়ে জঙ্গলে চলে আসবি জুলেখাকে বাঁচাতে। হাহাহা। তোকে বাচ্চা শিকারে পাঠানোটাও আমারই প্লান ছিলো। আমি জানতাম যে তুই মিথ্যা বলে এই জঙ্গলেই আসবি। তোকে এই জঙ্গলে আনা দরকার ছিলো তবে প্যারালাইসড তোকে নিয়ে আসা অনেক কঠিন হতো। সবাই আমাকে সন্দেহ করতো।তাই তোকে তোর প্লান দিয়েই তোকে এখানে নিয়ে আসলাম। তুই আসোলেই একটা বোকা। তুই এইটা একবারো ভাবলি না যে তুই মনে মনে যে প্রশ্ন করিস সেটাই আমি বুঝতে পারি , তোর অনুভূতিগুলো বুঝতে পারি আর তোর প্লান যেটা তোর মনে চলে এটা বুঝতে পারবো না।৪৩ তম আমাবস্যা পর্যন্ত তোকে এখানেই রেখে দিবো। আর আমার অমরত্বের পর তোকে চিরো মুক্তি মৃত্যু দিবো।
হাহাহাহা।
.
এই বলেই পিশাচ এরেনরিয়া চলে গেলো। আমি বুঝলাম জুলেখার শরীরে থাকা এরেনরিয়ার আত্মা আমার ছলনাকে চাল বানিয়ে আমাকেই বোকা বানিয়ে আবার এখানে নিয়ে এসেছে। আমার আর কিছু করার নেই। তবে জুলেখার আত্মা এখন কোথায় আছে।
ও থাকলে হয়তো আমাকে কিছু সাহায্য করতে পারতো।
.
হঠাৎ ঘরের এক কোনা থেকে জুলেখার মতো একটা কন্ঠ শুনতে পেলাম। সে আমায় ডাকছে:
.
-এই যে শুনছো? খাচার দিকে তাকাও আমি এখানে।
.
.
. . . . . চলবে . . . .
Abid faraje, Ayrin kaTun, Masum, Sk nadim, Sume akter, Sofikul alom, Nera akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Tothapiধুমকেতু
- Posts : 13
স্বর্ণমুদ্রা : 1522
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-26
Re: পিশাচ বউ
Fri Jun 04, 2021 1:51 am
শেষ পর্ব
.
-এইযে শুনছো? খাচার দিকে তাকাও আমি এইদিকে!
.
আমি অবাক হয়ে খুজতে থাকি জুলেখার মতো কন্ঠ আবার কোথা থেকে আসছে। তাহলে কি জুলেখার আত্মা আমার আশেপাশেই রয়েছে! আমি ঘরের এক কোনে দেখলাম একটা খাচার ভেতর টিয়া পাখি রাখা আছে। সেই আমাকে ডাকছে। আমি অবাক হয়ে টিয়া পাখিটাকে প্রশ্ন করি:
.
-কে তুমি? তোমার কন্ঠ জুলেখার মতো কেনো?
-আমিই তোমার জুলেখা।
-মানে? তুমি পাখি হলে কিভাবে?
-আমি যখন কয়েক মাস আগে জঙ্গলে বেড়াতে আসি তখন ৩য় দিন রাতে কারো কান্নার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে বাহিরে গিয়ে দেখি একজন বৃদ্ধা মহিলা কান্না করছে। আমি তার কাছে কান্নার কারন জানতে চাইলে সে বলে, তার নাতনিকে নাকি সেদিন সন্ধ্যা থেকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মনে হয় যে এই জঙ্গলের ভেতরেই তার নাতনি রয়েছে। তাই আমাকে অনুরোধ করে জঙ্গলের আরেকটু ভেতরে যেতে তার নাতনিকে খুজতে। আমাকে অনেক অনুরোধ করার পর কাউকে না বলেই বৃদ্ধার সাথে জঙ্গলের ভেতরে চলে আসি তার নাতনিকে খুজতে। বৃদ্ধা আমাকে এই প্রাসাদ পর্যন্ত নিয়ে আসেন। তারপর অদ্ভুত ভাবে হাসতে থাকে এবং ভয়ংকর রুপ ধারন করেন। আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই। তারপর তিনি বলেন তার নাম নাকি এরেনরিয়া আর তিনি একজন পিশাচ। এরপর আমি এখান থেকে পালানোর অনেক চেষ্টা করি তবে পেছন থেকে এরেনরিয়া আর তার পিশাচ দল আমাকে ধরে ফেলে।
এরপর তারা আমার শরীর থেকে আমার আত্মাটাকে বের করে ফেলে এবং এই টিয়ার শরীরে আমার আত্মার প্রবেশ করায়। তারপর আমার শরীরে পিশাচ দেবী এরেনরিয়ার আত্মা প্রবেশ করে এবং আমাকে এই খাঁচাতে বন্ধী করে চলে যায়। সে না জানি আমার শরীরের সাহায্যে কতো নিষ্পাপ প্রানকে হত্যা করেছে আর করবে। সে এইসবই করছে অমর হওয়ার জন্য। আগামীকালই ৪৩ তম আমাবস্যা। কালকেই ২১ টা বাচ্চার মাথা দিয়ে পূজা করে অমরত্ব লাভ করবে পিশাচ দেবী এরেনরিয়া আবার ফিরে পাবে তার দেহ। এরপর রাজত্ব করবে পুরো পৃথিবী।
.
আমি অবাক হয়ে জুলেখার কথা শুনছিলাম। বুঝতে পারলাম সব কিছু। জুলেখাও আমার মতোই বিপদে রয়েছে। হয়তো কাল অমরত্ব লাভের পর এরেনরিয়া আমাকে আর জুলেখাকেও হত্যা করে ফেলবে। জুলেখাকেও আমি সব কথা খুলে বলি। বিয়ে থেকে এই পর্যন্ত আমার সাথে ঘটে জাওয়া প্রত্যেকটা কথা বলি। জুলেখা তার বাবা আর মায়ের মৃত্যুর কথা শুনে অনেক কান্না করে। জুলেখাতো আমার চেয়ে আরো বেশি খারাপ একটা জীবন কাটাচ্ছে। একটা বন্ধী পাখির জীবন কতোটা কষ্টের তা জুলেখাই ভালো জানে। আমি জুলেখাকে প্রশ্ন করি:
-আচ্ছা! এর চেয়ে মুক্তি পাওয়ার কি কোন উপায়ই নেই? এরেনরিয়াকে হত্যা করার কোন একটাতো উপায় আছেই। তাই না?
-যার জন্ম আছে তার মৃত্যু আছে।
আর যেটা সৃষ্টি হয়েছে সেটা অবশ্যই ধ্বংস হবে। কোন একটা উপায়তো অবশ্যই আছে এরেনরিয়াকে হত্যা করার। তবে আমাদের জানার বাহিরে।
.
আমরা বেশ চিন্তায় পড়ে যাই। আর আমরা এতটুকু নিশ্চিত হয়ে যাই যে আমাদের বাঁচার আর কোন উপায় নেই। কাল এরেনরিয়া অমরত্ব লাভ করবে আর আমরা মৃত্যু লাভ করবো।
.
আমরা দুজনেই ঘরের ভেতর চুপচাপ বসে ছিলাম হঠাৎ একটা বৃদ্ধ সাধুর মতো লোক প্রবেশ করলো আমাদের ঘরে। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো কোন পিশাচ সাধুর বেশে আমাদের বোকা বানাতে এখানে এসেছে। কিন্তু এরপর সাধুর কথা শুনে বুঝলাম ইনি আসলেই সাধু। সাধু আমাকে বললো:
.
-এরেনরিয়াকে অমর হতে দিয়ো না। সে অমর হলে ধ্বংস করে দিবে এই সুন্দর পৃথিবীকে। আরো প্রাণ যাবে অনেক।
-কিন্তু তাকে ধ্বংস করার উপায়তো আমার জানা নেই। আপনি জানলে দয়া করে আমাকে বলুন। ( আমি )
- এর উত্তরটা আমার জানা আছে তবে আমি তোমাকে বলতে পারবো না। কারণ এরেনরিয়ার মৃত্যুর রহস্য যেই বলবে তার মৃত্যু অনিবার্য। তার গলা দিয়ে রক্ত বের হয়ে সাথে সাথে সে মারা যাবে। আমিই একমাত্র তার মৃত্যুর রহস্য জানি। তাই আমি মারা যেতে চাই না। তবে তোমাকে ইশারায় বুঝাতে পারবো। যতটা বুঝতে পারো তুমি। এরেনরিয়ার মৃত্যু রহস্য তোমারই জানা রয়েছে। তার মৃত্যু রহস্যের সমাধান তোমার ভেতরেই রয়েছে। একমাত্র তুমিই পারো এরেনরিয়াকে হত্যা করতে।
তোমার শরীরের ভেতরেই তার মৃত্যু রহস্য লুকিয়ে রয়েছে।
-মানে কি? এতো হেয়ালি করছেন কেনো? আপনি সরাসরি আমাকে এরেনরিয়ার মৃত্যু রহস্য বলে দিন। আপনি এখনো নিজের মৃত্যুর কথা ভাবছেন? আপনি আমাকে এরেনরিয়ার মৃত্যু রহস্য না বললে কাল যখন সে অমরত্ব লাভ করবে তখন পুরো পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিবে। একবার অন্তত তাদের কথা ভাবুন। নিষ্পাপ প্রানগুলোর কথা ভাবুন। আর সে অমর হওয়ার পর তার মৃত্যুর রহস্য জেনে কি লাভ হবে।
-হুম। এতোগুলো মানুষের ভালো থাকার জন্য আর পিশাচ দেবী এরেনরিয়াকে হত্যা করার জন্য যদি আমার প্রান যায় তাও আমার ভয় নেই। তাহলে শুনো এরেনরিয়াকে হত্যা করার জন্য তোমাকে নিজেই. . . . . . . . ।
সেই সাধু যখন এই কথাটুকু বলেছে তখনই হঠাৎ কোথা থেকে এরেনরিয়া এসে সাধু কিছু বুঝতে পারার আগেই তার গলায় ধারালো নক চালিয়ে দেয়। সাধুর গলা আর মাথা আলাদা হয়ে যায়। রক্তে ভেসে যায় আমাদের ঘর। আমি কষ্টে চিৎকার দিয়ে উঠি।
-নাহ! এটা কিছুতেই হতে পারেনা। এরেনরিয়ার মৃত্যুর রহস্যের এতো কাছে এসেও যদি জানতে ব্যর্থ হই তাহলে যে এতো কষ্ট এতো ত্যাগ সব বৃথা যাবে। আমার আর এরেনরিয়ার মৃত্যু রহস্য জানা হলো না। জুলেখাও আতকে উঠে কাঁদতে থাকে। এরেনরিয়া আমার কাছে এসে হাসতে হাসতে বলে:
-কিরে? আমার মৃত্যুর রহস্য জানার এতোই ইচ্ছা তোর? এই একজনই জানতো আমার মৃত্যুর রহস্য। তাকেও আমি মেরে দিলাম। এখন আর আমার অমরত্বের পথে কোন বাধা নেই। এই সাধুই আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে আমার পিশাচ সমাজ্রকে ধ্বংস করেছিলো। এতোদিন শুধু তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম আমার হারানো শরীর ফিরে পাওয়ার আর অমরত্ব পাওয়ার উপায় জানার জন্য। এখন আমার জানা হয়ে গেছে সব তাই আর এই সাধুর পৃথিবীতে কোন কাজ নেই। হাহাহা। কালকের জন্য প্রস্তুত হো কারন কাল আমার অমরত্ব লাভের দিন।
.
এই বলেই এরেনরিয়া চলে গেলো। আমি বুঝলাম এই সেই সাধু যে এরেনরিয়ার রাজ্যকে ধ্বংস করেছে যার কথা আমাকে ঋষি মহারাজ বলেছিলেন। আমার মাথায় কিছুই আসছিলো না। কিভাবে আটকাবো এরেনরিয়ার অমরত্ব। এরেনরিয়াকে হত্যার রহস্য টাই বা কি!
.
.
পরের দিন:
.
আজ আমার আর জুলেখার জীবনের সবচেয়ে অপ্রিয় দিন। কারণ আজ হয়তো আর কিছুক্ষন পরেই আমাদেরকে হত্যা করবে এরেনরিয়া। তবে আজ এরেনরিয়ার আনন্দের দিন কারন আজ সে অমরত্ব লাভ করবে।
.
আমাকে আর খাচার ভেতর টিয়া পাখির বেশে থাকা জুলেখাকে নিয়ে কিছু পিশাচেরা প্রাসাদের বাহিরে নিয়ে আসলো। তারা আমাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো তবে আজ আর আমার হাত পা বেধে রাখেনি তারা। এর একটু পর এরেনরিয়া আসলো সাথে একুশটা বাচ্চার মাথা। পাশেই এক জায়গায় পিশাচরা গভীর গর্ত করে
সেই গর্ত পুরাটাতে আগুন ধরালো। বুঝলাম এখানেই এরেনরিয়া অমরত্বের পুজা হবে। এরেনরিয়া আমার কাছে এসে বলল:
-হাত পা বেধে রাখিনী তার মানে এটা না যে যা খুশী তাই করতে পারবে। কোন চালাকী করলে এই মাথাগুলোর আগে তোর জুলেখাকে আগে আগুনে পুড়াবো। আমার পুজা শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত চুপচাপ এখানে বসে থাক।
.
এই বলেই এরেনরিয়া চলে গেলো পুজার ঐখানে। আমি চেয়ারে বসে ছিলাম আর আমার থেকে কিছুটা দুরে খাচায় জুলেখা। আমার ইচ্ছা হচ্ছিলো জুলাখাকে নিয়ে দৌড়ে এখান থেকে পালিয়ে যাই। তবে এতোগুলো পিশাচের মধ্যে আমি নিরুপায়। এরেনরিয়া পুজা শুরু করে দিয়েছিলো। একের পর একটা মাথা আগুনের গর্তে ছুরে মারছিলো। ২১ টা মাথা আগুনে পুড়ানো হলেই চিরো অমর হয়ে যাবে পিশাচ দেবী এরেনরিয়া। আমি মন খারাপ করে চুপচাপ চেয়ারে বসে ছিলাম। হঠাৎ জুলেখা আস্তে করে আমাকে ডেকে বললো:
.
-কি হলো চুপচাপ এখানে বসে আছো কেনো? কিছুতো ভাবো? হয়তো তুমি চাইলেই এরেনরিয়াকে মারতে পারো ।সেই সাধু কি বলেছিলো মনে নেই? তোমার মধ্যেই রয়েছে এরেনরিয়াকে হত্যা করার রহস্য।
.
আমি এখনো সাধুর এই কথা বলার পেছনের কারন বুঝতে পারছিলাম না। আমি ভাবছিলাম আমার ভেতরে কিভাবে এই রহস্যের সমাধান রয়েছে।
আমি কিভাবে হত্যা করতে পারবো এরেনরিয়াকে! এরই মধ্যে এরেনরিয়া ১৪ টা মাথা আগুনে পুরিয়ে ফেলেছে। আর মাত্র ৭ টা মাথা পুরালেই সে অমরত্ব লাভ করবে।
.
হঠাৎ আমার মাথার মধ্যে একটা চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো। এরেনরিয়া আমার চোখের সামনে এতোগুলো মানুষকে মারলো তবে আমাকে কেনো মারলো না? বরং আমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যও অনেক চেষ্টা করতো সে। আমার অনুভূতি, আমার মনে বা মস্তিষ্কে কি চিন্তা ঘুরে তা এরেনরিয়া কিভাবে বুঝে? এই পিশাচ রাজ্যেতো সাধারণ মানুষ প্রবেশ করলে তারা জ্বলেপুড়ে মারা যায় তাহলে আমার কিছু হলো না কেনো? পিশাচেরা আমাকে শুকে না মেরে চলে গেলো কেনো? এরেনরিয়ার অমরত্বের পেছনে আমাকে দরকার কেনো ? সাধু কেনো বললো আমার শরীরেই এরেনরিয়ার মৃত্যুর রহস্য রয়েছে?
.
আমার যেনো মনে হচ্ছিলো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমার জানা আছে। হ্যাঁ এবার আমার কাছে সব কিছু পরিষ্কার হতে লাগলো। হয়তো পিশাচ দেবী এরেনরিয়া এর প্রান আমার শরীরেই রয়েছে। আমার মৃত্যুতেই সে ধ্বংস হবে। ধ্বংস হবে তার পিশাচ সম্রাজ্য। আমি যে চেয়ারে বসে ছিলাম তার পাশেই একটা ধারালো ছুরি রাখা আছে। আমি বুঝলাম এখন আমার কি করা উচিত।
,
আমাকে আজ নিজেকেই নিজেকে বলি দিতে হবে। আত্মত্যাগের মাধ্যমেই ধ্বংস হবে এরেনরিয়া।
আমি ছুরিটা হাতে নিয়েই এরেনরিয়ার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আর মাত্র ৩ টি মাথা আগুনে পুড়ানো বাকি ছিলো তখন। জুলেখা অবাক হয়ে আমাকে থামতে বললো। এরেনরিয়া আমার হাতে ছুরি দেখে হাসতে হাসতে বললো:
-কিরে তোর মাথায় একটুও বুদ্ধি হয়নি এখনো? আবার ছুরি নিয়ে এসেছিস আমাকে হত্যা করতে। বোকা তুই। উন্মাদ তুই।
.
এরেনরিয়ার কথা শুনে আমি আর কোন উত্তর দিলাম না। ছুরিটা সোজা এনে আমার গলায় ধরলাম।
.
যাহ ভেবেছিলাম তাই। এরেনরিয়া আতকে উঠে চিৎকার করে বলে:
-নাহ ! এটা তুমি কি করছো! তুমি পাগল হয়ে গেছো? তুমি এমন করতে পারো না। আমার অমরত্ব পেতে এখন শুধু কিছু মুহূর্ত বাকি। পাগলামো করো না। আমি অমর হলে তোমাকে পৃথিবীর রাজা করে দিবো। আর যাই হোক তুমি আমার স্বামী আর আমি তোমার স্ত্রী।
.
আমি এবার নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে আমার শরীরেই এরেনরিয়ার প্রান রয়েছে। আমি আর সময় নষ্ট না করে সব কিছু ভুলে নিজের গলায় চালিয়ে দিলাম ছুরিটা। আমার গলাকেটে রক্ত পড়তে লাগলো। আর এরেনরিয়া সহ সমস্ত পিশাচের মৃত্যু চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম আমি। জুলেখাও সাথে সাথে পাখি থেকে তার আগের রুপে ফিরে এলো। সে কাঁদতে কাঁদতে বললো:
-এটা তুমি কি করলে?
.
আমি তাকে বলতে চাচ্ছিলাম:
-এছাড়া আর কোন উপায় যে ছিলো না জুলেখা।
তবে আমার গলা দিয়ে কোন শব্দই বের হচ্ছিলো না। আমি বুঝতে পেরেছিলাম এখনি আমার মৃত্যু ঘটবে। তবে আজ আমার যেনো মৃত্যুতেও সুখ কারন ধ্বংস করতে পেরেছি পিশাচ দেবী এরেনরিয়াও তার সম্রাজ্যকে। তবে খারাপ লাগছিলো আমার আর জুলেখার বাবা-মা সহ নিষ্পাপ সকল প্রানের জন্য যারা এরেনরিয়ার জন্য মারা গেছে। আমার চোখ লেগে আসলো। বুজলাম এখন মারা যাচ্ছি।
.
চোখ খুলে অদ্ভুত ভাবে নিজকে আবিষ্কার করলাম নিজের ঘরের বিছানায়। ঘর থেকে বেরিয়ে বাহিরে আসতেই দেখলাম আমার বাবা আর মা আমার বিয়ের পাঞ্জাবী পছন্দ করছেন। আমি কিছুটা অবাক হলাম। এরপর বুঝতে পারলাম যে পিশাচ দেবী এরেনরিয়ার মৃত্যুর সাথে সাথে মুছে গেছে তার সব চিহ্ন। তার জন্য নষ্ট হওয়া সকল জীবন আবার ফিরে পেয়েছে তাদের প্রান। আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তার মানে জুলেখাও তার পরিবার এখন আবার স্বাভাবিক হয়ে গেছে। হঠাৎ মোবাইলে জুলেখার কল। আমি খুশি হয়েই তার সাথে কথা বললাম:
-হ্যালো. জুলেখা। বলো?
-জানো? আমাদের ভার্সিটি থেকে ৩ দিনের জন্য সুন্দরবনের পাশের একটা জঙ্গলে নিয়ে যাবে। আমিও সেখানে যেতে চাই। প্লিজ প্লিজ না করো না।
-না করবো না মানে? আবার পিকনিকে যেতে চাও? তুমি যদি বিয়ের আগে আর সেদিকে জাওয়া কথা ভাবো তাহলে আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ।
.
এই বলেই কলটা কেটে দিলাম।
আমি পাগল নাকি যে আবার জুলেখাকে সেই জঙ্গলে পাঠাবো! জুলেখা হয়তো স্বাভাবিক জীবনে এসে সব ভুলে গেছে তবে আমার ঐ জীবনের প্রত্যেকটা ঘটনা মনে আছে। তবে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। শান্তিতে একটা নিঃশ্বাস নিলাম। আমরা এখন পিশাচ দেবী এরেনরিয়া থেকে মুক্ত। আবার স্বাভাবিক ভাবে কাটতে লাগলো আমার দিন।
.
.
৪৩ বছর পর:
.
আজ একটা ফ্লাটে নতুন দম্পতি উঠেছে। তারা রাতে একসাথে ঘুমিয়ে পড়লো। হঠাৎ মাঝরাতে নব বরের ঘুম ভেঙে গেলো কারো হাড় চিবিয়ে খাওয়ার শব্দে। ঘুম থেকে উঠে দেখে তার স্ত্রী বিছানায় নেই আর হাড় কামড়ে খাওয়ার শব্দটা ওয়াশরুমের দিক থেকে আসছে।
.
.
* * * সমাপ্ত * * *
.
-এইযে শুনছো? খাচার দিকে তাকাও আমি এইদিকে!
.
আমি অবাক হয়ে খুজতে থাকি জুলেখার মতো কন্ঠ আবার কোথা থেকে আসছে। তাহলে কি জুলেখার আত্মা আমার আশেপাশেই রয়েছে! আমি ঘরের এক কোনে দেখলাম একটা খাচার ভেতর টিয়া পাখি রাখা আছে। সেই আমাকে ডাকছে। আমি অবাক হয়ে টিয়া পাখিটাকে প্রশ্ন করি:
.
-কে তুমি? তোমার কন্ঠ জুলেখার মতো কেনো?
-আমিই তোমার জুলেখা।
-মানে? তুমি পাখি হলে কিভাবে?
-আমি যখন কয়েক মাস আগে জঙ্গলে বেড়াতে আসি তখন ৩য় দিন রাতে কারো কান্নার শব্দে আমার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম থেকে উঠে বাহিরে গিয়ে দেখি একজন বৃদ্ধা মহিলা কান্না করছে। আমি তার কাছে কান্নার কারন জানতে চাইলে সে বলে, তার নাতনিকে নাকি সেদিন সন্ধ্যা থেকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। তার মনে হয় যে এই জঙ্গলের ভেতরেই তার নাতনি রয়েছে। তাই আমাকে অনুরোধ করে জঙ্গলের আরেকটু ভেতরে যেতে তার নাতনিকে খুজতে। আমাকে অনেক অনুরোধ করার পর কাউকে না বলেই বৃদ্ধার সাথে জঙ্গলের ভেতরে চলে আসি তার নাতনিকে খুজতে। বৃদ্ধা আমাকে এই প্রাসাদ পর্যন্ত নিয়ে আসেন। তারপর অদ্ভুত ভাবে হাসতে থাকে এবং ভয়ংকর রুপ ধারন করেন। আমি বেশ ভয় পেয়ে যাই। তারপর তিনি বলেন তার নাম নাকি এরেনরিয়া আর তিনি একজন পিশাচ। এরপর আমি এখান থেকে পালানোর অনেক চেষ্টা করি তবে পেছন থেকে এরেনরিয়া আর তার পিশাচ দল আমাকে ধরে ফেলে।
এরপর তারা আমার শরীর থেকে আমার আত্মাটাকে বের করে ফেলে এবং এই টিয়ার শরীরে আমার আত্মার প্রবেশ করায়। তারপর আমার শরীরে পিশাচ দেবী এরেনরিয়ার আত্মা প্রবেশ করে এবং আমাকে এই খাঁচাতে বন্ধী করে চলে যায়। সে না জানি আমার শরীরের সাহায্যে কতো নিষ্পাপ প্রানকে হত্যা করেছে আর করবে। সে এইসবই করছে অমর হওয়ার জন্য। আগামীকালই ৪৩ তম আমাবস্যা। কালকেই ২১ টা বাচ্চার মাথা দিয়ে পূজা করে অমরত্ব লাভ করবে পিশাচ দেবী এরেনরিয়া আবার ফিরে পাবে তার দেহ। এরপর রাজত্ব করবে পুরো পৃথিবী।
.
আমি অবাক হয়ে জুলেখার কথা শুনছিলাম। বুঝতে পারলাম সব কিছু। জুলেখাও আমার মতোই বিপদে রয়েছে। হয়তো কাল অমরত্ব লাভের পর এরেনরিয়া আমাকে আর জুলেখাকেও হত্যা করে ফেলবে। জুলেখাকেও আমি সব কথা খুলে বলি। বিয়ে থেকে এই পর্যন্ত আমার সাথে ঘটে জাওয়া প্রত্যেকটা কথা বলি। জুলেখা তার বাবা আর মায়ের মৃত্যুর কথা শুনে অনেক কান্না করে। জুলেখাতো আমার চেয়ে আরো বেশি খারাপ একটা জীবন কাটাচ্ছে। একটা বন্ধী পাখির জীবন কতোটা কষ্টের তা জুলেখাই ভালো জানে। আমি জুলেখাকে প্রশ্ন করি:
-আচ্ছা! এর চেয়ে মুক্তি পাওয়ার কি কোন উপায়ই নেই? এরেনরিয়াকে হত্যা করার কোন একটাতো উপায় আছেই। তাই না?
-যার জন্ম আছে তার মৃত্যু আছে।
আর যেটা সৃষ্টি হয়েছে সেটা অবশ্যই ধ্বংস হবে। কোন একটা উপায়তো অবশ্যই আছে এরেনরিয়াকে হত্যা করার। তবে আমাদের জানার বাহিরে।
.
আমরা বেশ চিন্তায় পড়ে যাই। আর আমরা এতটুকু নিশ্চিত হয়ে যাই যে আমাদের বাঁচার আর কোন উপায় নেই। কাল এরেনরিয়া অমরত্ব লাভ করবে আর আমরা মৃত্যু লাভ করবো।
.
আমরা দুজনেই ঘরের ভেতর চুপচাপ বসে ছিলাম হঠাৎ একটা বৃদ্ধ সাধুর মতো লোক প্রবেশ করলো আমাদের ঘরে। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো কোন পিশাচ সাধুর বেশে আমাদের বোকা বানাতে এখানে এসেছে। কিন্তু এরপর সাধুর কথা শুনে বুঝলাম ইনি আসলেই সাধু। সাধু আমাকে বললো:
.
-এরেনরিয়াকে অমর হতে দিয়ো না। সে অমর হলে ধ্বংস করে দিবে এই সুন্দর পৃথিবীকে। আরো প্রাণ যাবে অনেক।
-কিন্তু তাকে ধ্বংস করার উপায়তো আমার জানা নেই। আপনি জানলে দয়া করে আমাকে বলুন। ( আমি )
- এর উত্তরটা আমার জানা আছে তবে আমি তোমাকে বলতে পারবো না। কারণ এরেনরিয়ার মৃত্যুর রহস্য যেই বলবে তার মৃত্যু অনিবার্য। তার গলা দিয়ে রক্ত বের হয়ে সাথে সাথে সে মারা যাবে। আমিই একমাত্র তার মৃত্যুর রহস্য জানি। তাই আমি মারা যেতে চাই না। তবে তোমাকে ইশারায় বুঝাতে পারবো। যতটা বুঝতে পারো তুমি। এরেনরিয়ার মৃত্যু রহস্য তোমারই জানা রয়েছে। তার মৃত্যু রহস্যের সমাধান তোমার ভেতরেই রয়েছে। একমাত্র তুমিই পারো এরেনরিয়াকে হত্যা করতে।
তোমার শরীরের ভেতরেই তার মৃত্যু রহস্য লুকিয়ে রয়েছে।
-মানে কি? এতো হেয়ালি করছেন কেনো? আপনি সরাসরি আমাকে এরেনরিয়ার মৃত্যু রহস্য বলে দিন। আপনি এখনো নিজের মৃত্যুর কথা ভাবছেন? আপনি আমাকে এরেনরিয়ার মৃত্যু রহস্য না বললে কাল যখন সে অমরত্ব লাভ করবে তখন পুরো পৃথিবীকে ধ্বংস করে দিবে। একবার অন্তত তাদের কথা ভাবুন। নিষ্পাপ প্রানগুলোর কথা ভাবুন। আর সে অমর হওয়ার পর তার মৃত্যুর রহস্য জেনে কি লাভ হবে।
-হুম। এতোগুলো মানুষের ভালো থাকার জন্য আর পিশাচ দেবী এরেনরিয়াকে হত্যা করার জন্য যদি আমার প্রান যায় তাও আমার ভয় নেই। তাহলে শুনো এরেনরিয়াকে হত্যা করার জন্য তোমাকে নিজেই. . . . . . . . ।
সেই সাধু যখন এই কথাটুকু বলেছে তখনই হঠাৎ কোথা থেকে এরেনরিয়া এসে সাধু কিছু বুঝতে পারার আগেই তার গলায় ধারালো নক চালিয়ে দেয়। সাধুর গলা আর মাথা আলাদা হয়ে যায়। রক্তে ভেসে যায় আমাদের ঘর। আমি কষ্টে চিৎকার দিয়ে উঠি।
-নাহ! এটা কিছুতেই হতে পারেনা। এরেনরিয়ার মৃত্যুর রহস্যের এতো কাছে এসেও যদি জানতে ব্যর্থ হই তাহলে যে এতো কষ্ট এতো ত্যাগ সব বৃথা যাবে। আমার আর এরেনরিয়ার মৃত্যু রহস্য জানা হলো না। জুলেখাও আতকে উঠে কাঁদতে থাকে। এরেনরিয়া আমার কাছে এসে হাসতে হাসতে বলে:
-কিরে? আমার মৃত্যুর রহস্য জানার এতোই ইচ্ছা তোর? এই একজনই জানতো আমার মৃত্যুর রহস্য। তাকেও আমি মেরে দিলাম। এখন আর আমার অমরত্বের পথে কোন বাধা নেই। এই সাধুই আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে আমার পিশাচ সমাজ্রকে ধ্বংস করেছিলো। এতোদিন শুধু তাকে বাঁচিয়ে রেখেছিলাম আমার হারানো শরীর ফিরে পাওয়ার আর অমরত্ব পাওয়ার উপায় জানার জন্য। এখন আমার জানা হয়ে গেছে সব তাই আর এই সাধুর পৃথিবীতে কোন কাজ নেই। হাহাহা। কালকের জন্য প্রস্তুত হো কারন কাল আমার অমরত্ব লাভের দিন।
.
এই বলেই এরেনরিয়া চলে গেলো। আমি বুঝলাম এই সেই সাধু যে এরেনরিয়ার রাজ্যকে ধ্বংস করেছে যার কথা আমাকে ঋষি মহারাজ বলেছিলেন। আমার মাথায় কিছুই আসছিলো না। কিভাবে আটকাবো এরেনরিয়ার অমরত্ব। এরেনরিয়াকে হত্যার রহস্য টাই বা কি!
.
.
পরের দিন:
.
আজ আমার আর জুলেখার জীবনের সবচেয়ে অপ্রিয় দিন। কারণ আজ হয়তো আর কিছুক্ষন পরেই আমাদেরকে হত্যা করবে এরেনরিয়া। তবে আজ এরেনরিয়ার আনন্দের দিন কারন আজ সে অমরত্ব লাভ করবে।
.
আমাকে আর খাচার ভেতর টিয়া পাখির বেশে থাকা জুলেখাকে নিয়ে কিছু পিশাচেরা প্রাসাদের বাহিরে নিয়ে আসলো। তারা আমাকে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো তবে আজ আর আমার হাত পা বেধে রাখেনি তারা। এর একটু পর এরেনরিয়া আসলো সাথে একুশটা বাচ্চার মাথা। পাশেই এক জায়গায় পিশাচরা গভীর গর্ত করে
সেই গর্ত পুরাটাতে আগুন ধরালো। বুঝলাম এখানেই এরেনরিয়া অমরত্বের পুজা হবে। এরেনরিয়া আমার কাছে এসে বলল:
-হাত পা বেধে রাখিনী তার মানে এটা না যে যা খুশী তাই করতে পারবে। কোন চালাকী করলে এই মাথাগুলোর আগে তোর জুলেখাকে আগে আগুনে পুড়াবো। আমার পুজা শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত চুপচাপ এখানে বসে থাক।
.
এই বলেই এরেনরিয়া চলে গেলো পুজার ঐখানে। আমি চেয়ারে বসে ছিলাম আর আমার থেকে কিছুটা দুরে খাচায় জুলেখা। আমার ইচ্ছা হচ্ছিলো জুলাখাকে নিয়ে দৌড়ে এখান থেকে পালিয়ে যাই। তবে এতোগুলো পিশাচের মধ্যে আমি নিরুপায়। এরেনরিয়া পুজা শুরু করে দিয়েছিলো। একের পর একটা মাথা আগুনের গর্তে ছুরে মারছিলো। ২১ টা মাথা আগুনে পুড়ানো হলেই চিরো অমর হয়ে যাবে পিশাচ দেবী এরেনরিয়া। আমি মন খারাপ করে চুপচাপ চেয়ারে বসে ছিলাম। হঠাৎ জুলেখা আস্তে করে আমাকে ডেকে বললো:
.
-কি হলো চুপচাপ এখানে বসে আছো কেনো? কিছুতো ভাবো? হয়তো তুমি চাইলেই এরেনরিয়াকে মারতে পারো ।সেই সাধু কি বলেছিলো মনে নেই? তোমার মধ্যেই রয়েছে এরেনরিয়াকে হত্যা করার রহস্য।
.
আমি এখনো সাধুর এই কথা বলার পেছনের কারন বুঝতে পারছিলাম না। আমি ভাবছিলাম আমার ভেতরে কিভাবে এই রহস্যের সমাধান রয়েছে।
আমি কিভাবে হত্যা করতে পারবো এরেনরিয়াকে! এরই মধ্যে এরেনরিয়া ১৪ টা মাথা আগুনে পুরিয়ে ফেলেছে। আর মাত্র ৭ টা মাথা পুরালেই সে অমরত্ব লাভ করবে।
.
হঠাৎ আমার মাথার মধ্যে একটা চিন্তা ঘুরপাক খেতে লাগলো। এরেনরিয়া আমার চোখের সামনে এতোগুলো মানুষকে মারলো তবে আমাকে কেনো মারলো না? বরং আমাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যও অনেক চেষ্টা করতো সে। আমার অনুভূতি, আমার মনে বা মস্তিষ্কে কি চিন্তা ঘুরে তা এরেনরিয়া কিভাবে বুঝে? এই পিশাচ রাজ্যেতো সাধারণ মানুষ প্রবেশ করলে তারা জ্বলেপুড়ে মারা যায় তাহলে আমার কিছু হলো না কেনো? পিশাচেরা আমাকে শুকে না মেরে চলে গেলো কেনো? এরেনরিয়ার অমরত্বের পেছনে আমাকে দরকার কেনো ? সাধু কেনো বললো আমার শরীরেই এরেনরিয়ার মৃত্যুর রহস্য রয়েছে?
.
আমার যেনো মনে হচ্ছিলো এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমার জানা আছে। হ্যাঁ এবার আমার কাছে সব কিছু পরিষ্কার হতে লাগলো। হয়তো পিশাচ দেবী এরেনরিয়া এর প্রান আমার শরীরেই রয়েছে। আমার মৃত্যুতেই সে ধ্বংস হবে। ধ্বংস হবে তার পিশাচ সম্রাজ্য। আমি যে চেয়ারে বসে ছিলাম তার পাশেই একটা ধারালো ছুরি রাখা আছে। আমি বুঝলাম এখন আমার কি করা উচিত।
,
আমাকে আজ নিজেকেই নিজেকে বলি দিতে হবে। আত্মত্যাগের মাধ্যমেই ধ্বংস হবে এরেনরিয়া।
আমি ছুরিটা হাতে নিয়েই এরেনরিয়ার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আর মাত্র ৩ টি মাথা আগুনে পুড়ানো বাকি ছিলো তখন। জুলেখা অবাক হয়ে আমাকে থামতে বললো। এরেনরিয়া আমার হাতে ছুরি দেখে হাসতে হাসতে বললো:
-কিরে তোর মাথায় একটুও বুদ্ধি হয়নি এখনো? আবার ছুরি নিয়ে এসেছিস আমাকে হত্যা করতে। বোকা তুই। উন্মাদ তুই।
.
এরেনরিয়ার কথা শুনে আমি আর কোন উত্তর দিলাম না। ছুরিটা সোজা এনে আমার গলায় ধরলাম।
.
যাহ ভেবেছিলাম তাই। এরেনরিয়া আতকে উঠে চিৎকার করে বলে:
-নাহ ! এটা তুমি কি করছো! তুমি পাগল হয়ে গেছো? তুমি এমন করতে পারো না। আমার অমরত্ব পেতে এখন শুধু কিছু মুহূর্ত বাকি। পাগলামো করো না। আমি অমর হলে তোমাকে পৃথিবীর রাজা করে দিবো। আর যাই হোক তুমি আমার স্বামী আর আমি তোমার স্ত্রী।
.
আমি এবার নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে আমার শরীরেই এরেনরিয়ার প্রান রয়েছে। আমি আর সময় নষ্ট না করে সব কিছু ভুলে নিজের গলায় চালিয়ে দিলাম ছুরিটা। আমার গলাকেটে রক্ত পড়তে লাগলো। আর এরেনরিয়া সহ সমস্ত পিশাচের মৃত্যু চিৎকার শুনতে পাচ্ছিলাম আমি। জুলেখাও সাথে সাথে পাখি থেকে তার আগের রুপে ফিরে এলো। সে কাঁদতে কাঁদতে বললো:
-এটা তুমি কি করলে?
.
আমি তাকে বলতে চাচ্ছিলাম:
-এছাড়া আর কোন উপায় যে ছিলো না জুলেখা।
তবে আমার গলা দিয়ে কোন শব্দই বের হচ্ছিলো না। আমি বুঝতে পেরেছিলাম এখনি আমার মৃত্যু ঘটবে। তবে আজ আমার যেনো মৃত্যুতেও সুখ কারন ধ্বংস করতে পেরেছি পিশাচ দেবী এরেনরিয়াও তার সম্রাজ্যকে। তবে খারাপ লাগছিলো আমার আর জুলেখার বাবা-মা সহ নিষ্পাপ সকল প্রানের জন্য যারা এরেনরিয়ার জন্য মারা গেছে। আমার চোখ লেগে আসলো। বুজলাম এখন মারা যাচ্ছি।
.
চোখ খুলে অদ্ভুত ভাবে নিজকে আবিষ্কার করলাম নিজের ঘরের বিছানায়। ঘর থেকে বেরিয়ে বাহিরে আসতেই দেখলাম আমার বাবা আর মা আমার বিয়ের পাঞ্জাবী পছন্দ করছেন। আমি কিছুটা অবাক হলাম। এরপর বুঝতে পারলাম যে পিশাচ দেবী এরেনরিয়ার মৃত্যুর সাথে সাথে মুছে গেছে তার সব চিহ্ন। তার জন্য নষ্ট হওয়া সকল জীবন আবার ফিরে পেয়েছে তাদের প্রান। আবার সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেছে। তার মানে জুলেখাও তার পরিবার এখন আবার স্বাভাবিক হয়ে গেছে। হঠাৎ মোবাইলে জুলেখার কল। আমি খুশি হয়েই তার সাথে কথা বললাম:
-হ্যালো. জুলেখা। বলো?
-জানো? আমাদের ভার্সিটি থেকে ৩ দিনের জন্য সুন্দরবনের পাশের একটা জঙ্গলে নিয়ে যাবে। আমিও সেখানে যেতে চাই। প্লিজ প্লিজ না করো না।
-না করবো না মানে? আবার পিকনিকে যেতে চাও? তুমি যদি বিয়ের আগে আর সেদিকে জাওয়া কথা ভাবো তাহলে আমাদের সম্পর্ক এখানেই শেষ।
.
এই বলেই কলটা কেটে দিলাম।
আমি পাগল নাকি যে আবার জুলেখাকে সেই জঙ্গলে পাঠাবো! জুলেখা হয়তো স্বাভাবিক জীবনে এসে সব ভুলে গেছে তবে আমার ঐ জীবনের প্রত্যেকটা ঘটনা মনে আছে। তবে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরে অনেক ভালো লাগছে। শান্তিতে একটা নিঃশ্বাস নিলাম। আমরা এখন পিশাচ দেবী এরেনরিয়া থেকে মুক্ত। আবার স্বাভাবিক ভাবে কাটতে লাগলো আমার দিন।
.
.
৪৩ বছর পর:
.
আজ একটা ফ্লাটে নতুন দম্পতি উঠেছে। তারা রাতে একসাথে ঘুমিয়ে পড়লো। হঠাৎ মাঝরাতে নব বরের ঘুম ভেঙে গেলো কারো হাড় চিবিয়ে খাওয়ার শব্দে। ঘুম থেকে উঠে দেখে তার স্ত্রী বিছানায় নেই আর হাড় কামড়ে খাওয়ার শব্দটা ওয়াশরুমের দিক থেকে আসছে।
.
.
* * * সমাপ্ত * * *
Abid faraje, Ayrin kaTun, Masum, Sk nadim, Sume akter, Sofikul alom, Nera akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum