Page 2 of 2 • 1, 2
- Anikaধুমকেতু
- Posts : 20
স্বর্ণমুদ্রা : 1324
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-01
Re: নীরব ঘাতক
Fri Jun 04, 2021 9:46 pm
(পর্ব : এগারো)
টেবিলের ওপাশে কাঠের হাতলওয়ালা চেয়ারে বসে আছেন এক ভদ্রলোক। পরনে সাদা ফুলহাতা শার্ট। গলায় মাফলার। জাফর চেয়ার টেনে বসতেই তিনি চেবিল থেকে চারকোনা ফ্রেমের চশমা নিলেন।
'তো আপনার নাম জাফর?'
'জি।'
'আপনার সমস্যাটা কীরকম? শারীরিক না মানসিক?'
'জানি না। শুধু জানি, আমি ভালো নেই।'
'জাফর সাহেব, আপনি-আমি কেউই ভালো নেই। আপাতত ভালো না থাকার একটি কারণ আমাকে বলুন।'
'আমার মনে হয়, আমি খুব দ্রুত মারা যাব। কিছুদিনের মধ্যেই।'
'কেন এমনটা মনে হয়?'
'কারণ মৃত্যুকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি।'
ভদ্রলোক ভ্রু কুঁচকালেন, 'তাই নাকি! কীভাবে?'
'মাঝ রাতে আমি বিছানা ছেড়ে বেলকনিতে যাই। আমার মনে হয় কেউ আমাকে বেলকনি থেকে লাফিয়ে পড়তে বলছে। আমি লাফ দিতে গিয়ে ফিরে আসি।'
'ক'বার হয়েছে এমন?'
'দু'বার।'
'বাসায় কি আপনি একা থাকেন?'
'না। আমার স্ত্রী-কন্যাও থাকে।'
'আপনার স্ত্রী আপনাকে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে কখনো?'
'না। ওঁরা আলাদা ঘরে থাকে। আমি আলাদা ঘরে।'
'আপনার স্ত্রী আর আপনি আলাদা আলাদা ঘরে থাকেন?'
'জি।'
'তাহলে... ফিজিক্যাল রিলেশন...'
'না।'
'একদমই না?'
'জি।'
'তাহলে কন্যা সন্তান?'
'ওঁর বয়স পাঁচ বছর। তখন আমাদের সম্পর্ক ভালো ছিল।'
'এখন কি সম্পর্ক ভালো নেই?'
'না।'
'ভালো না থাকার কারণ? আপনার কি অন্য কারোর সাথে অ্যাফেয়ার...'
'না, নেই।'
'তাহলে?'
'আমার স্ত্রীর।'
'ওঃ। আপনাদের তবে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হয়েছিল?'
'জি না। লাভ ম্যারেজ।'
'পিতা-মাতার অমতে নিশ্চয়ই?'
'বিয়েটা আমার মা-বাবা করিয়েছিলেন। এবং আমার থেকে উনারা বেশি চেয়েছিলেন নিতুকে আমার স্ত্রী হিসেবে।'
'খটকা লাগছে মি. জাফর। আপনি বলছেন আপনার স্ত্রীর অ্যাফেয়ার আছে?'
'জি।'
'আলাদা আলাদা ঘরে আপনার ইচ্ছেতে থাকছেন না কি আপনার স্ত্রীর ইচ্ছেতে?'
'আমি তো ওঁকে ভালোবাসি। সে-ই আমাকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। তার ঘরে প্রবেশ আমার জন্য নিষিদ্ধ।'
'আপনার স্ত্রী কি ফিজিক্যালি অসুখী আপনার থেকে?'
জাফর লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, 'আপনি আমার বাবার বয়েসি। নাহলে এতক্ষণে গাল বরাবর চড় বসিয়ে দিতাম।'
'বাঃ! রাগ তো যথেষ্ট আছে আপনার। নিজের স্ত্রীকে কন্ট্রোল করতে পারছেন না কেন?'
'সবকিছু রাগ-অভিমান দিয়ে হয় না।'
'কী দিয়ে হয়? ভালোবাসা দিয়ে?'
জাফর কিছু বলল না৷ মাথা নিচু করে বসে রইল। ভদ্রলোক চশমা খুলে টেবিলে রাখলেন। হাত দিয়ে চোখ কচলালেন কিছুক্ষণ। তারপর মাথার পাকা চুল মুষ্টিবদ্ধ করলেন। তার মাথায় চুল খুব একটা নেই। যা আছে সব পাকা। তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। পিছনে হাত বেঁধে পায়চারি করলেন কিছুক্ষণ। তারপর আবার দুম করে চেয়ারে বসলেন। চশমা চোখে দিলেন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, 'আপনি কী চান?'
'কিছুই চাই না।'
'তাহলে এখানে কেন এসেছেন?'
'গল্প করার জন্য।'
'শুধু গল্প করার জন্য?'
'জি।'
'পরামর্শ লাগবে না?'
'লাগবে।'
'আপনার স্ত্রী মুক্তি চায়নি আপনার থেকে?'
'চেয়েছে বহুবার। আমি দেইনি।'
'ডিভোর্স হয়ে গেলে মেয়েটার কী হবে?'
'ওঁ বলেছে মুসকানকেও ওঁর সাথে নিয়ে যাবে।'
'কোথায় নিয়ে যাবে?'
'বাদলের বাসায়?'
'বাদল কে? উনার প্রেমিক?'
'জি।'
'উনি বাদলের বাসা চেনে?'
'চেনে কী, প্রায়ই যায় ওখানে।'
'কী বলেন! আপনি বাঁধা দেন না?'
'দিয়েছি। লাভ হয়নি।'
'ওঁদের সম্পর্কটা ক'দিনের?'
'তিন বছরের।'
'এমন কেউ কি আছে, যাকে আপনার স্ত্রী ভীষণ ঘৃণা করে?'
'জি, আছে।'
'কে সে?'
'আমি।'
'আন্দাজ করেছিলাম। এবার বলুন, আপনাকে ঘৃণা করার কারণ কী?'
'কোনো কারণ নেই।'
'বিনা বাতাসে গাছের পাতাও নড়ে না, মি. জাফর৷ নিশ্চয়ই একটা না একটা কারণ আছে। ভেবে বলুন।'
'আমি ভেবে বলেছি, নিতু আমাকে কারণ ছাড়াই ঘৃণা করে৷ বাদলের সাথে ওঁর পরিচয় হবার পর থেকেই ওঁ বদলাতে শুরু করে। ধীরে ধীরে আমার প্রতি ওঁর ভালোবাসা ঘৃণায় পরিণত হয়।'
'আপনি কখনোই আপনার স্ত্রীকে আঘাত দেননি? উনার গায়ে হাত তুলেননি? কটু কথা বলেননি?'
'দিয়েছি।'
'কবে?'
'দু'বছর আগে। যখন নিতু প্রথমবার বাদলের বাসায় গিয়েছিল এবং ফিজিক্যাল... ওঁর গালে চড় মেরেছিলাম। নষ্টা মেয়ে বলে গালিও দিয়েছিলাম।'
'তারপর?'
'তারপর থেকে নিতু কেমন যেন অন্যরকম হয়ে গেল। একদিন আমার থেকে ডিভোর্স চাইল৷'
'ডিভোর্স দিলে কত খরচ করতে হবে?'
'কাগজে কলমে দশ লাখ।'
'দিতে পারবেন না?'
'পঞ্চাশ লাখ দিতে পারব।'
'তাহলে দিচ্ছেন না কেন?'
'ওঁকে হারাতে চাই না।'
ভদ্রলোক উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, 'আপনি মোহের জগতে বাস করছেন মি. জাফর। আমার মনে হয়, আপনি বেলকনি থেকে লাফিয়ে পড়লেই ভালো হত। বুঝতে পেরেছেন, কী বলেছি?'
'না, বুঝিনি।'
'আজান শুনেছেন?'
'শুনেছি।'
'নামাজে যাচ্ছি। আপনি নামাজ পড়েন তো?'
'পড়ি।'
'গুড। পাঁচ ওয়াক্ত পড়বেন। এক ওয়াক্ত যেন মিস না হয়। পৃথিবীর সামান্য দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে পারি না আমরা। আখেরাতের কষ্ট কীভাবে সহ্য করব, বলুন? এই যে এত ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষ৷ সবাই মানসিক বিপর্যস্ত। এই সামান্য বিপর্যয় সহ্য হয় না। লোকজন আত্মহত্যা পর্যন্ত করে বসে। অথচ মৃত্যুর পরে মানসিক আজাবও দেওয়া হবে। সেটা ক'জন মনে রাখে?' বলে টুপি মাথায় দিতে দিতে বেরিয়ে গেলেন ভদ্রলোক।
নিতু জাফরকে তার অসুখের কথা কখনো বলে না। জাফর নিজে থেকে জিজ্ঞেস করলেও না। আজ বলেছে। জাফর ডোরবেল বাজাতেই নিতু দরজা খুলল। জাফর বলল, 'শুভ সন্ধ্যা।'
'শুভ তোমার জন্য হবে। আমার জন্য না।'
'এমা! কী হয়েছে তোমার?'
'মাথা ধরেছে। শরীরের হাড়গোড় সব কামড়ে খাচ্ছে কে যেন।'
'কী বলো! চা করে দেই?'
'দাও।'
জাফর চা নিয়ে এল। নিতুকে এক কাপ দিলো। এক কাপ চা হাতে নিয়ে সোফায় বসল৷
'জ্বর আছে শরীরে?'
'তুমি শুধু জ্বর-জ্বর করো কেন? জ্বর ব্যতীত আর কোনো অসুখ হয় না মানুষের?'
'তা হয়। আচ্ছা, একটা ঘটনা শুনবে?'
'ইচ্ছে করছে না।'
'শুনোই না। তুমি তো জানো, ইদানীং রাতে ঘুম হয় না৷ উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখি।'
'জানি, জানি।'
'একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কাছে বলেছিলাম এসব...'
নিতু ভ্রু কুঁচকে বলল, 'হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কাছে এসব বলেছো? হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক তোমাকে ঘুমের ওষুধ দেবে?'
'আরে শুনোই না কী বলেছে...'
'কী বলেছে?'
'বলেছে আমি নাকি বেলকনি থেকে ঝাঁপ দিলে ভালো হত।'
নিতু তাচ্ছিল্য করে বলল, 'তুমি দেবে বেলকনি থেকে ঝাঁপ! হা-হা-হা! তুমি যে কী পরিমাণ ভীতু, সেটা বলোনি ডাক্তারকে?'
জাফর ধীর গলায় বলল, 'যদি কখনো হারিয়ে যাই, মনে রাখবে না আমাকে? খুঁজতে বেরোবে না?'
চায়ের কাপ টেবিলে রেখে ধীর পায়ে শোবার ঘরে গেল নিতু। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এল। গম্ভীর ভাব নিয়ে সোফায় বসল। ধীর গলায় বলল, 'একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলব।'
'বলো।'
'আমি অসুস্থ জানো তো?'
'জানি।'
'অসুখটা সাধারণ না।'
'কী বলো! জ্বর বাড়েনি তো? ইদানীং মশারা যা বাড় বেড়েছে! দেখি দেখি।' বলে জাফর নিতুর কপালে হাত রাখতে যাচ্ছিল। নিতু জাফরকে দু'হাতে দূরে ঠেলে দিয়ে বলল, 'ছুঁবে না। দূরে যাও। দূরে।'
জাফর সরে বসল।
'কতবার বলেছি জ্বর সামান্য অসুক নয়। হেলা করো না। এবার বুঝেছো তো?'
'আমি মা হতে চলেছি, জাফর।'
মুহূর্তেই জাফরের মুখ চুপসে গেল। সে একবার নিতুর দিকে তাকাল। শুকনো হেসে লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ল।
'যত দ্রুত সম্ভব আমাকে ডিভোর্স দাও। আমি মুক্তি চাই।'
জাফর ধরা গলায় বলল, 'মেয়ে হলে আমার সাথে শুবে। ছেলে হলে তোমার সাথে।'
'জাফর, আমি চাই না বাদলের সন্তান তোমার পরিচয়ে বড় হোক।'
'এমন করে বলছো কেন? তোমার সন্তান মানে তো আমারও সন্তান। আমাদের সন্তান।'
'না, কখনোই না। যে আসতে চলেছে, সে তোমার কেউ না। তুমি তার কেউ নও।'
'নিতু!'
'বলো।'
'ডিভোর্স দিয়ে দিলে তুমি খুশি হবে তো?'
'খুব খুশি হব। খুব।'
'আর যদি না দেই?'
'দেবে না?'
জাফর মৃদু হেসে বলল, 'না।'
'তুমি দেবে, তোমার বাপ দেবে।'
'এ বাবা! বিয়ে করেছি আমি। ডিভোর্স দেবে আমার বাবা? বাবা কি কবর থেকে উঠে আসবে ডিভোর্স পাইয়ে দেবার জন্য? হি হি হি।'
'এ্যাই, হাসবে না। চুপ করো, চুপ। আমি উকিল সাহেবের সাথে কথা বলেছি। কাল উনি আসবেন বলেছেন।'
'তুমি সত্যিই ডিভোর্স চাও?'
'হ্যাঁ, চাই।'
'আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে?'
'পারব।'
'আমি কিন্তু আর কখনো তোমার সামনে আসব না।'
'এসো না। চলে যাও। শুধু যাবার আগে ডিভোর্সটা দিয়ে যাও।'
জাফর নিতুর হাতে আলতো করে হাত রাখতেই নিতু দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে শোবার ঘরে চলে গেল।
চলবে
~ মো. ইয়াছিন
টেবিলের ওপাশে কাঠের হাতলওয়ালা চেয়ারে বসে আছেন এক ভদ্রলোক। পরনে সাদা ফুলহাতা শার্ট। গলায় মাফলার। জাফর চেয়ার টেনে বসতেই তিনি চেবিল থেকে চারকোনা ফ্রেমের চশমা নিলেন।
'তো আপনার নাম জাফর?'
'জি।'
'আপনার সমস্যাটা কীরকম? শারীরিক না মানসিক?'
'জানি না। শুধু জানি, আমি ভালো নেই।'
'জাফর সাহেব, আপনি-আমি কেউই ভালো নেই। আপাতত ভালো না থাকার একটি কারণ আমাকে বলুন।'
'আমার মনে হয়, আমি খুব দ্রুত মারা যাব। কিছুদিনের মধ্যেই।'
'কেন এমনটা মনে হয়?'
'কারণ মৃত্যুকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি।'
ভদ্রলোক ভ্রু কুঁচকালেন, 'তাই নাকি! কীভাবে?'
'মাঝ রাতে আমি বিছানা ছেড়ে বেলকনিতে যাই। আমার মনে হয় কেউ আমাকে বেলকনি থেকে লাফিয়ে পড়তে বলছে। আমি লাফ দিতে গিয়ে ফিরে আসি।'
'ক'বার হয়েছে এমন?'
'দু'বার।'
'বাসায় কি আপনি একা থাকেন?'
'না। আমার স্ত্রী-কন্যাও থাকে।'
'আপনার স্ত্রী আপনাকে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে কখনো?'
'না। ওঁরা আলাদা ঘরে থাকে। আমি আলাদা ঘরে।'
'আপনার স্ত্রী আর আপনি আলাদা আলাদা ঘরে থাকেন?'
'জি।'
'তাহলে... ফিজিক্যাল রিলেশন...'
'না।'
'একদমই না?'
'জি।'
'তাহলে কন্যা সন্তান?'
'ওঁর বয়স পাঁচ বছর। তখন আমাদের সম্পর্ক ভালো ছিল।'
'এখন কি সম্পর্ক ভালো নেই?'
'না।'
'ভালো না থাকার কারণ? আপনার কি অন্য কারোর সাথে অ্যাফেয়ার...'
'না, নেই।'
'তাহলে?'
'আমার স্ত্রীর।'
'ওঃ। আপনাদের তবে অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হয়েছিল?'
'জি না। লাভ ম্যারেজ।'
'পিতা-মাতার অমতে নিশ্চয়ই?'
'বিয়েটা আমার মা-বাবা করিয়েছিলেন। এবং আমার থেকে উনারা বেশি চেয়েছিলেন নিতুকে আমার স্ত্রী হিসেবে।'
'খটকা লাগছে মি. জাফর। আপনি বলছেন আপনার স্ত্রীর অ্যাফেয়ার আছে?'
'জি।'
'আলাদা আলাদা ঘরে আপনার ইচ্ছেতে থাকছেন না কি আপনার স্ত্রীর ইচ্ছেতে?'
'আমি তো ওঁকে ভালোবাসি। সে-ই আমাকে কাছে ঘেঁষতে দেয় না। তার ঘরে প্রবেশ আমার জন্য নিষিদ্ধ।'
'আপনার স্ত্রী কি ফিজিক্যালি অসুখী আপনার থেকে?'
জাফর লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, 'আপনি আমার বাবার বয়েসি। নাহলে এতক্ষণে গাল বরাবর চড় বসিয়ে দিতাম।'
'বাঃ! রাগ তো যথেষ্ট আছে আপনার। নিজের স্ত্রীকে কন্ট্রোল করতে পারছেন না কেন?'
'সবকিছু রাগ-অভিমান দিয়ে হয় না।'
'কী দিয়ে হয়? ভালোবাসা দিয়ে?'
জাফর কিছু বলল না৷ মাথা নিচু করে বসে রইল। ভদ্রলোক চশমা খুলে টেবিলে রাখলেন। হাত দিয়ে চোখ কচলালেন কিছুক্ষণ। তারপর মাথার পাকা চুল মুষ্টিবদ্ধ করলেন। তার মাথায় চুল খুব একটা নেই। যা আছে সব পাকা। তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। পিছনে হাত বেঁধে পায়চারি করলেন কিছুক্ষণ। তারপর আবার দুম করে চেয়ারে বসলেন। চশমা চোখে দিলেন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, 'আপনি কী চান?'
'কিছুই চাই না।'
'তাহলে এখানে কেন এসেছেন?'
'গল্প করার জন্য।'
'শুধু গল্প করার জন্য?'
'জি।'
'পরামর্শ লাগবে না?'
'লাগবে।'
'আপনার স্ত্রী মুক্তি চায়নি আপনার থেকে?'
'চেয়েছে বহুবার। আমি দেইনি।'
'ডিভোর্স হয়ে গেলে মেয়েটার কী হবে?'
'ওঁ বলেছে মুসকানকেও ওঁর সাথে নিয়ে যাবে।'
'কোথায় নিয়ে যাবে?'
'বাদলের বাসায়?'
'বাদল কে? উনার প্রেমিক?'
'জি।'
'উনি বাদলের বাসা চেনে?'
'চেনে কী, প্রায়ই যায় ওখানে।'
'কী বলেন! আপনি বাঁধা দেন না?'
'দিয়েছি। লাভ হয়নি।'
'ওঁদের সম্পর্কটা ক'দিনের?'
'তিন বছরের।'
'এমন কেউ কি আছে, যাকে আপনার স্ত্রী ভীষণ ঘৃণা করে?'
'জি, আছে।'
'কে সে?'
'আমি।'
'আন্দাজ করেছিলাম। এবার বলুন, আপনাকে ঘৃণা করার কারণ কী?'
'কোনো কারণ নেই।'
'বিনা বাতাসে গাছের পাতাও নড়ে না, মি. জাফর৷ নিশ্চয়ই একটা না একটা কারণ আছে। ভেবে বলুন।'
'আমি ভেবে বলেছি, নিতু আমাকে কারণ ছাড়াই ঘৃণা করে৷ বাদলের সাথে ওঁর পরিচয় হবার পর থেকেই ওঁ বদলাতে শুরু করে। ধীরে ধীরে আমার প্রতি ওঁর ভালোবাসা ঘৃণায় পরিণত হয়।'
'আপনি কখনোই আপনার স্ত্রীকে আঘাত দেননি? উনার গায়ে হাত তুলেননি? কটু কথা বলেননি?'
'দিয়েছি।'
'কবে?'
'দু'বছর আগে। যখন নিতু প্রথমবার বাদলের বাসায় গিয়েছিল এবং ফিজিক্যাল... ওঁর গালে চড় মেরেছিলাম। নষ্টা মেয়ে বলে গালিও দিয়েছিলাম।'
'তারপর?'
'তারপর থেকে নিতু কেমন যেন অন্যরকম হয়ে গেল। একদিন আমার থেকে ডিভোর্স চাইল৷'
'ডিভোর্স দিলে কত খরচ করতে হবে?'
'কাগজে কলমে দশ লাখ।'
'দিতে পারবেন না?'
'পঞ্চাশ লাখ দিতে পারব।'
'তাহলে দিচ্ছেন না কেন?'
'ওঁকে হারাতে চাই না।'
ভদ্রলোক উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, 'আপনি মোহের জগতে বাস করছেন মি. জাফর। আমার মনে হয়, আপনি বেলকনি থেকে লাফিয়ে পড়লেই ভালো হত। বুঝতে পেরেছেন, কী বলেছি?'
'না, বুঝিনি।'
'আজান শুনেছেন?'
'শুনেছি।'
'নামাজে যাচ্ছি। আপনি নামাজ পড়েন তো?'
'পড়ি।'
'গুড। পাঁচ ওয়াক্ত পড়বেন। এক ওয়াক্ত যেন মিস না হয়। পৃথিবীর সামান্য দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে পারি না আমরা। আখেরাতের কষ্ট কীভাবে সহ্য করব, বলুন? এই যে এত ডিপ্রেশনে ভোগা মানুষ৷ সবাই মানসিক বিপর্যস্ত। এই সামান্য বিপর্যয় সহ্য হয় না। লোকজন আত্মহত্যা পর্যন্ত করে বসে। অথচ মৃত্যুর পরে মানসিক আজাবও দেওয়া হবে। সেটা ক'জন মনে রাখে?' বলে টুপি মাথায় দিতে দিতে বেরিয়ে গেলেন ভদ্রলোক।
নিতু জাফরকে তার অসুখের কথা কখনো বলে না। জাফর নিজে থেকে জিজ্ঞেস করলেও না। আজ বলেছে। জাফর ডোরবেল বাজাতেই নিতু দরজা খুলল। জাফর বলল, 'শুভ সন্ধ্যা।'
'শুভ তোমার জন্য হবে। আমার জন্য না।'
'এমা! কী হয়েছে তোমার?'
'মাথা ধরেছে। শরীরের হাড়গোড় সব কামড়ে খাচ্ছে কে যেন।'
'কী বলো! চা করে দেই?'
'দাও।'
জাফর চা নিয়ে এল। নিতুকে এক কাপ দিলো। এক কাপ চা হাতে নিয়ে সোফায় বসল৷
'জ্বর আছে শরীরে?'
'তুমি শুধু জ্বর-জ্বর করো কেন? জ্বর ব্যতীত আর কোনো অসুখ হয় না মানুষের?'
'তা হয়। আচ্ছা, একটা ঘটনা শুনবে?'
'ইচ্ছে করছে না।'
'শুনোই না। তুমি তো জানো, ইদানীং রাতে ঘুম হয় না৷ উল্টোপাল্টা স্বপ্ন দেখি।'
'জানি, জানি।'
'একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের কাছে বলেছিলাম এসব...'
নিতু ভ্রু কুঁচকে বলল, 'হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকের কাছে এসব বলেছো? হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক তোমাকে ঘুমের ওষুধ দেবে?'
'আরে শুনোই না কী বলেছে...'
'কী বলেছে?'
'বলেছে আমি নাকি বেলকনি থেকে ঝাঁপ দিলে ভালো হত।'
নিতু তাচ্ছিল্য করে বলল, 'তুমি দেবে বেলকনি থেকে ঝাঁপ! হা-হা-হা! তুমি যে কী পরিমাণ ভীতু, সেটা বলোনি ডাক্তারকে?'
জাফর ধীর গলায় বলল, 'যদি কখনো হারিয়ে যাই, মনে রাখবে না আমাকে? খুঁজতে বেরোবে না?'
চায়ের কাপ টেবিলে রেখে ধীর পায়ে শোবার ঘরে গেল নিতু। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এল। গম্ভীর ভাব নিয়ে সোফায় বসল। ধীর গলায় বলল, 'একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলব।'
'বলো।'
'আমি অসুস্থ জানো তো?'
'জানি।'
'অসুখটা সাধারণ না।'
'কী বলো! জ্বর বাড়েনি তো? ইদানীং মশারা যা বাড় বেড়েছে! দেখি দেখি।' বলে জাফর নিতুর কপালে হাত রাখতে যাচ্ছিল। নিতু জাফরকে দু'হাতে দূরে ঠেলে দিয়ে বলল, 'ছুঁবে না। দূরে যাও। দূরে।'
জাফর সরে বসল।
'কতবার বলেছি জ্বর সামান্য অসুক নয়। হেলা করো না। এবার বুঝেছো তো?'
'আমি মা হতে চলেছি, জাফর।'
মুহূর্তেই জাফরের মুখ চুপসে গেল। সে একবার নিতুর দিকে তাকাল। শুকনো হেসে লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ল।
'যত দ্রুত সম্ভব আমাকে ডিভোর্স দাও। আমি মুক্তি চাই।'
জাফর ধরা গলায় বলল, 'মেয়ে হলে আমার সাথে শুবে। ছেলে হলে তোমার সাথে।'
'জাফর, আমি চাই না বাদলের সন্তান তোমার পরিচয়ে বড় হোক।'
'এমন করে বলছো কেন? তোমার সন্তান মানে তো আমারও সন্তান। আমাদের সন্তান।'
'না, কখনোই না। যে আসতে চলেছে, সে তোমার কেউ না। তুমি তার কেউ নও।'
'নিতু!'
'বলো।'
'ডিভোর্স দিয়ে দিলে তুমি খুশি হবে তো?'
'খুব খুশি হব। খুব।'
'আর যদি না দেই?'
'দেবে না?'
জাফর মৃদু হেসে বলল, 'না।'
'তুমি দেবে, তোমার বাপ দেবে।'
'এ বাবা! বিয়ে করেছি আমি। ডিভোর্স দেবে আমার বাবা? বাবা কি কবর থেকে উঠে আসবে ডিভোর্স পাইয়ে দেবার জন্য? হি হি হি।'
'এ্যাই, হাসবে না। চুপ করো, চুপ। আমি উকিল সাহেবের সাথে কথা বলেছি। কাল উনি আসবেন বলেছেন।'
'তুমি সত্যিই ডিভোর্স চাও?'
'হ্যাঁ, চাই।'
'আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে?'
'পারব।'
'আমি কিন্তু আর কখনো তোমার সামনে আসব না।'
'এসো না। চলে যাও। শুধু যাবার আগে ডিভোর্সটা দিয়ে যাও।'
জাফর নিতুর হাতে আলতো করে হাত রাখতেই নিতু দ্রুত হাত সরিয়ে নিয়ে শোবার ঘরে চলে গেল।
চলবে
~ মো. ইয়াছিন
Pk monish, Parvez ali, Babul jalaluddin, Biplob islam, Ashes ratul, Akhi Khantun, Rasma akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Anikaধুমকেতু
- Posts : 20
স্বর্ণমুদ্রা : 1324
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-01
Re: নীরব ঘাতক
Fri Jun 04, 2021 9:47 pm
শেষ পর্ব
'নিতু!'
'বলো।'
'মনে আছে, বিয়ের দিন তোমার বাবা আমাকে কী বলেছিলেন?'
'কী?'
'বলেছিলেন, বাবা জাফর, আমার একটাই মেয়ে। নওরিন আকতার নাফিসা। আদর করে নিতু বলে ডাকি। মেয়েটা আমার ঘরের লক্ষী। আমার কলিজা। আমার সব। এই কলিজাটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। কথা দাও, মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আগলে রাখবে। কখনো কষ্ট দেবে না।'
'ওঃ।'
'জবাবে আমি কী বলেছিলাম, মনে আছে?'
'কী বলেছিলে?'
'বলেছিলাম, নিতুকে আমি মরার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আগলে রাখব। একটি দিনের জন্যও চোখের সামনে থেকে সরে যেতে দেব না। কষ্ট দেব না। কথা দিলাম।'
'একটু একটু মনে আছে।'
'এবার তুমিই বলো, তোমাকে আমি ডিভোর্স দেই কীভাবে?'
'যেভাবে অন্য সব স্বামী দেয়, সেভাবে দেবে।'
'কিন্তু আমি তো বলেছিলাম, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমাকে আগলে রাখব!'
'মরতে হলে মরো। আমার কিছু যায় আসে না।'
'একটা জ্যান্ত মানুষকে মরে যেতে বলছো?'
'বলছি।'
'কীভাবে মরব, বলো?'
'যেভাবে খুশি সেভাবে মরো।' বলে বেলকনিতে চলে গেল নিতু। চেয়ারে বসল। জাফর গেল তার পিছু পিছু।
'নিতু!'
'হুঁ।'
'তোমার হাতটা ছুঁই?'
'না, ছুঁবে না।'
'একবার, প্লিজ। আর কখনো ছুঁবো না।'
'আচ্ছা।'
জাফর হাঁটু ভাঁজ করে বেলকনির টাইলসে বসল। নিতুর হাতে হাত রেখে শান্ত গলায় বলল, 'নিতু!'
'কী?'
'তোমার পাশে বসি?'
'কী করছো, জাফর? এখন বললে হাত ছুঁবে এখন আবার পাশে বসবে, একটু পরে কি...'
'এই শেষবার। আর কখনো বলব না।'
'আচ্ছা, বসো।'
জাফর নিতুর পাশে বসল। নিতুর দু'হাত আলতো করে চেপে ধরল।
'নিতু?'
'আবার কী হলো!'
'চলো ছাদে যাই।'
'মাথা খারাপ? তোমার হয়েছে কী, বলো তো? আর একটি কথাও শুনব না।'
'বলছি তো, এই শেষবার। আর কখনো বলব না। প্লিজ এসো।'
জাফর নিতুর হাত ধরে ছাদে নিয়ে এল। স্টিলের রেলিং লাগানো ছাদ। চারদিকে বাহারি রঙের ফুলের টব। ছাদের বাতিটা নষ্ট হয়ে গেলে। চাঁদের আরোয় ঝাপসা অন্ধকারে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে জাফর ও নিতু।
'নিতু!'
'এত নিতু নিতু করছো কেন? আর একবারও ডাকবে না। যা বলার সরাসরি বলো।'
'মনে আছে বিয়ের রাতের কথা?'
'হুঁ।'
'তখন মহসিন সাহেবের দোতলা বাসায় থাকতাম৷ এক চিলতে বারান্দা তোমার পছন্দ হয়নি। তাই ছাদে চলে এলাম। রেলিং নেই। আমি বললাম, আর যেও না, পড়ে যাবে। তুমি মুচকি হেসে বললে, পড়ে গেলে তুমি কীসের জন্য?'
নিতু আকাশের দিকে চেয়ে থেকে বলল, 'মনে আছে।'
'সেদিনের রাতটা খুব সুন্দর ছিল। আকাশে জোছনার চাঁদ। ছাদে আবছা আলোর বাতির নিচে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে তুমি-আমি। সারাটা রাত কাটল এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে। শেষরাতে তুমি আমার কপালে চুমু এঁকে দিলে। এ-ই প্রথম স্পর্শ।'
নিতু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে একটু দূরে গেল। ছাদের এক কোণে গোলাপ ফুলের গাছ স্পর্শ করে বলল, 'সেদিন ছাদে এরকম একটা গাছ ছিল।'
জাফর বিস্মিত চোখে চেয়ে বলল, 'তোমার মনে আছে!'
'হুঁ।'
'শেষরাতে তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম সকালে সূর্য উঠা পর্যন্ত।'
'ঘুমাইনি। জেগে ছিলাম এবং বিছানায় বসে ছিলাম।'
'তাই?'
'হ্যাঁ।'
'আচ্ছা নিতু, তোমার জ্বর কমেছে?'
'আবার জ্বর! এ্যাই, তুমি শুধু জ্বর-জ্বর করো কেন?'
'এক রাতে মা'র জ্বর হলো। খুব বেশি না, নামমাত্র জ্বর। বাবা ওষুধ নিয়ে এলেন। মা খেলেন না। বললেন, অল্প একটু জ্বর। সেরে যাবে। জ্বর নিয়ে ঘুমালেন। পরদিন বাবা উঠলেন ঘুম থেকে। মা উঠলেন না।'
'জানি।'
'জেনেও হেলাফেলা করো কেন?'
'আমি অত সহজে মরব না।'
'তা ঠিক। তুমি অনেক বছর বাঁচবে। অল্প বয়সে মরব তো আমি।'
'ভুল। তুমি আরো দেড়িতে মরবে।'
'এ বাবা! কে বলল?'
'কেউ বলতে হবে না। আমি জানি, বোকারা বহুদিন বাঁচে। তুমি শুধু বোকা নও, বোকার চেয়েও বড় বোকা।'
জাফর চুপ করে গেল। এভাবে সামনাসামনি কেউ কাউকে বোকা বলে? গাধাকে গাধা বললেও সে পা দিয়ে লাথি মারে। জাফর তো মানুষ। অপমানবোধে তার গা ঘিনঘিন করতে লাগল। তবুও শান্ত গলায় বলল, 'এজন্যই তো আমার বাবা-মা তোমার মতো বুদ্ধিমতী একটা বউ আমাকে দিয়ে গেছেন। যাতে তুমি আমাকে সামলে নিতে পারো।'
'তুমি ওতোটাও বোকা নও, জাফর।'
জাফর মৃদু হাসল।
'এবার কি আমি যেতে পারি?'
'থাকো না আরো কিছুক্ষণ। প্লিজ।'
'এরপর কী বলবে? চুমু খেতে তো বলবে না?'
জাফর লজ্জা পেয়ে বলল, 'না, তা বলব না। তবে...'
'তবে কী?'
'তোমার ইচ্ছে করলে খেতে পারো।'
নিতু শব্দ করে হেসে উঠল। জাফর বোকার মতো তাকিয়ে থাকল।
'হাসছো যে?'
'এই জিনিসটা তুমি খুব ভালো পারো।'
'কী?'
'হুট করে মন ভালো করে দিতে।'
'এতক্ষণ মন খারাপ ছিল বুঝি?'
'হ্যাঁ।'
'যখনই মন খারাপ হবে, আমাকে বলবে। আমি মন ভালো করে দেব।'
'আর যদি না বলি?'
'তাহলেও দেব। কারণ তোমার মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারি।'
'একটা কথা বলবে, জাফর?'
'কী কথা?'
'তুমি কি আর কাউকে ভালোবাসো?'
'বাসি তো।'
'কাকে?'
'তোমাকে।'
নিতু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে গেল। শোবার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করল। এক গেলাস পানি খেল। তারপর মুসকানের পাশে শুয়ে পড়ল। ঘুম যখন ভাঙল, তখন ঘড়িতে একটা বেজে তেতাল্লিশ মিনিট। গলাটা শুকিয়ে গেছে। টেবিলে রাখা পানির গ্লাস খালি পড়ে আছে। নিতু ডায়নিং রুমের দিকে পা বাড়ল। এক গেলাস পানি খেল। ফিরে আসার সময় খেয়াল করল, জাফর নেই। বাথরুমে দেখল। সেখানেও নেই। নিতু তাচ্ছিল্য করে হাসল। মনে মনে ভাবল, শেষরাতে কাঁপতে কাঁপতে সোফায় শুয়ে পড়বে। কিন্তু শেষরাতে জাফর এল না। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিতু যখন দেখল জাফর নেই, তখন সে একটু অবাক হলো। ছাদে গেল। সেখানে পাথরচাপা দিয়ে একটি চিরকুট রাখা। সাদা চিরকুট। উল্টো করে দেখল নিতু। কোথাও কিছু লেখা নেই। শুধু কাগজের একপাশে কালো কালির ছোট্ট একটি বিন্দু আঁকা। এর মানে বুঝল না নিতু। বাদলকে ফোন করল। বাদল বলল, ফিরে আসবে রাতের মধ্যে। সন্ধ্যা কাটল রাত হতে হতে মাঝরাতে নিতু বাদলকে ফোন দিলো। বাদল বলল, কাল সকালে দেখা যাবে। সকাল হলো, নিতু জাফরের অফিসে ফোন করল। অফিস থেকে জানাল, জাফর গতদিন অফিসে যায়নি। থানায় জিডি করা হলো। পুলিশ খুঁজল। পত্রিকায় ছবি সহ নিখোঁজ সংবাদ ছাপা হলো।
'এরপর তোর বাবা আর ফিরে আসেনি।' বলে চশমা খুলে কাচের ছাদের টেবিলে রাখল নিতু। চোখ মুছে চশমা পরল।
মুসকান কৌতূহলী ভঙ্গিতে বলল, 'ক'বছর আগে বাবা নিখোঁজ হয়েছিল, মা?'
'প্রায় বারো বছর।'
'বাবা কখনো ফোন দেয়নি? একটা চিঠিও না?'
নিতু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, 'না।'
'জাহেদ তাহলে আমার আপন ভাই না?'
'কে বলেছে তোর আপন ভাই না? জাফরের ছেলে না হলেও আমার ছেলে। তোর আপন ভাই।'
'কিন্তু বাবার পরিচয়ে বড় করছো কেন? ওঁ তো বাদলের ছেলে।'
'তোর বাবার ইচ্ছে ছিল, ওঁকে তার পরিচয়ে বড় করি।'
'তুমি কি বাদলকে বিয়ে করেছিলে, মা?'
'না।'
'কেন? বাদলকে বিয়ে করার জন্যই তো বাবার কাছ থেকে ডিভোর্স চেয়েছিলে, তাই না?'
'চেয়েছিলাম হয়তো, কিন্তু তখন তো জানতাম না ওটা ভালোবাসা না। প্রকৃত ভালোবাসা তো তোর বাবার প্রতি ছিল।'
'তার মানে বাবা বোকা ছিল না। সত্যিকারের বোকা ছিলে তুমি?'
নিতু আসামীর মতো মাথা নিচু করে বসে রইল।
'বাবা কি আর ফিরে আসবে না?'
'আসবে, আসবে। আমার কী মনে হয়, জানিস?'
'কী?'
'আমার মনে হয়, আমার যেদিন মৃত্যু হবে, সেদিন তোর বাবা আসবে। হুট করে চলে আসবে মানুষটা। আমার লাশ পড়ে থাকতে দেখে দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলবে।'
'এমনওতো হতে পারে, বাবা মারা গেছে।'
'চুপ। এমন কথা বলিস না। আমি জানি মানুষটা বেঁচে আছে। মরে গেলে লাশটা অন্তত দেখতে পেতাম...'
স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে জাহেদ এল৷ ব্যাগ সোফার ছুঁড়ে ফেলে বলল, 'আজ একটা লোক আমাকে অনেকগুলো চকোলেট দিয়েছে, মা।'
'কে দিয়েছে?'
'চিনি না। লোকটা দেখতে কেমন যেন অদ্ভুত। শীতের মৌসুমে পাতলা ফতুয়া আর পাজামা পরেছে। আর সবচে' অদ্ভুত তার ব্যাগ। একটা কাপড়ের ঝোলাব্যাগ।'
নিতু চমকে উঠে বলল, 'লোকটা মুখে কি খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখে গোল ফ্রেমের চশমা?'
'গোল ফ্রেমের চশমা আছে, মা। তবে খোঁচা খোঁচা দাড়ি নেই। লোকটার মুখ ভর্তি লম্বা লম্বা দাঁড়ি। মাথার চুলও অনেক লম্বা লম্বা।'
'তোকে কিছু বলেনি?'
'বলেছে, মা।'
'কী বলেছে?'
'বলেছে, সে আমাকে চকোলেট দিয়েছে এটা যেন তোমাকে না বলি।'
নিতুর চোখ ছলছল করতে লাগল। গাল বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুজল গড়িয়ে পড়তে লাগল। এ অশ্রু আনন্দের না কষ্টের তা সে জানে না।
সমাপ্ত
~ মো. ইয়াছিন
'নিতু!'
'বলো।'
'মনে আছে, বিয়ের দিন তোমার বাবা আমাকে কী বলেছিলেন?'
'কী?'
'বলেছিলেন, বাবা জাফর, আমার একটাই মেয়ে। নওরিন আকতার নাফিসা। আদর করে নিতু বলে ডাকি। মেয়েটা আমার ঘরের লক্ষী। আমার কলিজা। আমার সব। এই কলিজাটাকে তোমার হাতে তুলে দিলাম। কথা দাও, মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আগলে রাখবে। কখনো কষ্ট দেবে না।'
'ওঃ।'
'জবাবে আমি কী বলেছিলাম, মনে আছে?'
'কী বলেছিলে?'
'বলেছিলাম, নিতুকে আমি মরার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত আগলে রাখব। একটি দিনের জন্যও চোখের সামনে থেকে সরে যেতে দেব না। কষ্ট দেব না। কথা দিলাম।'
'একটু একটু মনে আছে।'
'এবার তুমিই বলো, তোমাকে আমি ডিভোর্স দেই কীভাবে?'
'যেভাবে অন্য সব স্বামী দেয়, সেভাবে দেবে।'
'কিন্তু আমি তো বলেছিলাম, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমাকে আগলে রাখব!'
'মরতে হলে মরো। আমার কিছু যায় আসে না।'
'একটা জ্যান্ত মানুষকে মরে যেতে বলছো?'
'বলছি।'
'কীভাবে মরব, বলো?'
'যেভাবে খুশি সেভাবে মরো।' বলে বেলকনিতে চলে গেল নিতু। চেয়ারে বসল। জাফর গেল তার পিছু পিছু।
'নিতু!'
'হুঁ।'
'তোমার হাতটা ছুঁই?'
'না, ছুঁবে না।'
'একবার, প্লিজ। আর কখনো ছুঁবো না।'
'আচ্ছা।'
জাফর হাঁটু ভাঁজ করে বেলকনির টাইলসে বসল। নিতুর হাতে হাত রেখে শান্ত গলায় বলল, 'নিতু!'
'কী?'
'তোমার পাশে বসি?'
'কী করছো, জাফর? এখন বললে হাত ছুঁবে এখন আবার পাশে বসবে, একটু পরে কি...'
'এই শেষবার। আর কখনো বলব না।'
'আচ্ছা, বসো।'
জাফর নিতুর পাশে বসল। নিতুর দু'হাত আলতো করে চেপে ধরল।
'নিতু?'
'আবার কী হলো!'
'চলো ছাদে যাই।'
'মাথা খারাপ? তোমার হয়েছে কী, বলো তো? আর একটি কথাও শুনব না।'
'বলছি তো, এই শেষবার। আর কখনো বলব না। প্লিজ এসো।'
জাফর নিতুর হাত ধরে ছাদে নিয়ে এল। স্টিলের রেলিং লাগানো ছাদ। চারদিকে বাহারি রঙের ফুলের টব। ছাদের বাতিটা নষ্ট হয়ে গেলে। চাঁদের আরোয় ঝাপসা অন্ধকারে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে জাফর ও নিতু।
'নিতু!'
'এত নিতু নিতু করছো কেন? আর একবারও ডাকবে না। যা বলার সরাসরি বলো।'
'মনে আছে বিয়ের রাতের কথা?'
'হুঁ।'
'তখন মহসিন সাহেবের দোতলা বাসায় থাকতাম৷ এক চিলতে বারান্দা তোমার পছন্দ হয়নি। তাই ছাদে চলে এলাম। রেলিং নেই। আমি বললাম, আর যেও না, পড়ে যাবে। তুমি মুচকি হেসে বললে, পড়ে গেলে তুমি কীসের জন্য?'
নিতু আকাশের দিকে চেয়ে থেকে বলল, 'মনে আছে।'
'সেদিনের রাতটা খুব সুন্দর ছিল। আকাশে জোছনার চাঁদ। ছাদে আবছা আলোর বাতির নিচে হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে তুমি-আমি। সারাটা রাত কাটল এভাবে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে। শেষরাতে তুমি আমার কপালে চুমু এঁকে দিলে। এ-ই প্রথম স্পর্শ।'
নিতু হাত ছাড়িয়ে নিয়ে একটু দূরে গেল। ছাদের এক কোণে গোলাপ ফুলের গাছ স্পর্শ করে বলল, 'সেদিন ছাদে এরকম একটা গাছ ছিল।'
জাফর বিস্মিত চোখে চেয়ে বলল, 'তোমার মনে আছে!'
'হুঁ।'
'শেষরাতে তুমি ঘুমিয়ে পড়েছিলে। আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম সকালে সূর্য উঠা পর্যন্ত।'
'ঘুমাইনি। জেগে ছিলাম এবং বিছানায় বসে ছিলাম।'
'তাই?'
'হ্যাঁ।'
'আচ্ছা নিতু, তোমার জ্বর কমেছে?'
'আবার জ্বর! এ্যাই, তুমি শুধু জ্বর-জ্বর করো কেন?'
'এক রাতে মা'র জ্বর হলো। খুব বেশি না, নামমাত্র জ্বর। বাবা ওষুধ নিয়ে এলেন। মা খেলেন না। বললেন, অল্প একটু জ্বর। সেরে যাবে। জ্বর নিয়ে ঘুমালেন। পরদিন বাবা উঠলেন ঘুম থেকে। মা উঠলেন না।'
'জানি।'
'জেনেও হেলাফেলা করো কেন?'
'আমি অত সহজে মরব না।'
'তা ঠিক। তুমি অনেক বছর বাঁচবে। অল্প বয়সে মরব তো আমি।'
'ভুল। তুমি আরো দেড়িতে মরবে।'
'এ বাবা! কে বলল?'
'কেউ বলতে হবে না। আমি জানি, বোকারা বহুদিন বাঁচে। তুমি শুধু বোকা নও, বোকার চেয়েও বড় বোকা।'
জাফর চুপ করে গেল। এভাবে সামনাসামনি কেউ কাউকে বোকা বলে? গাধাকে গাধা বললেও সে পা দিয়ে লাথি মারে। জাফর তো মানুষ। অপমানবোধে তার গা ঘিনঘিন করতে লাগল। তবুও শান্ত গলায় বলল, 'এজন্যই তো আমার বাবা-মা তোমার মতো বুদ্ধিমতী একটা বউ আমাকে দিয়ে গেছেন। যাতে তুমি আমাকে সামলে নিতে পারো।'
'তুমি ওতোটাও বোকা নও, জাফর।'
জাফর মৃদু হাসল।
'এবার কি আমি যেতে পারি?'
'থাকো না আরো কিছুক্ষণ। প্লিজ।'
'এরপর কী বলবে? চুমু খেতে তো বলবে না?'
জাফর লজ্জা পেয়ে বলল, 'না, তা বলব না। তবে...'
'তবে কী?'
'তোমার ইচ্ছে করলে খেতে পারো।'
নিতু শব্দ করে হেসে উঠল। জাফর বোকার মতো তাকিয়ে থাকল।
'হাসছো যে?'
'এই জিনিসটা তুমি খুব ভালো পারো।'
'কী?'
'হুট করে মন ভালো করে দিতে।'
'এতক্ষণ মন খারাপ ছিল বুঝি?'
'হ্যাঁ।'
'যখনই মন খারাপ হবে, আমাকে বলবে। আমি মন ভালো করে দেব।'
'আর যদি না বলি?'
'তাহলেও দেব। কারণ তোমার মনের অবস্থা আমি বুঝতে পারি।'
'একটা কথা বলবে, জাফর?'
'কী কথা?'
'তুমি কি আর কাউকে ভালোবাসো?'
'বাসি তো।'
'কাকে?'
'তোমাকে।'
নিতু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চলে গেল। শোবার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করল। এক গেলাস পানি খেল। তারপর মুসকানের পাশে শুয়ে পড়ল। ঘুম যখন ভাঙল, তখন ঘড়িতে একটা বেজে তেতাল্লিশ মিনিট। গলাটা শুকিয়ে গেছে। টেবিলে রাখা পানির গ্লাস খালি পড়ে আছে। নিতু ডায়নিং রুমের দিকে পা বাড়ল। এক গেলাস পানি খেল। ফিরে আসার সময় খেয়াল করল, জাফর নেই। বাথরুমে দেখল। সেখানেও নেই। নিতু তাচ্ছিল্য করে হাসল। মনে মনে ভাবল, শেষরাতে কাঁপতে কাঁপতে সোফায় শুয়ে পড়বে। কিন্তু শেষরাতে জাফর এল না। সকালে ঘুম থেকে উঠে নিতু যখন দেখল জাফর নেই, তখন সে একটু অবাক হলো। ছাদে গেল। সেখানে পাথরচাপা দিয়ে একটি চিরকুট রাখা। সাদা চিরকুট। উল্টো করে দেখল নিতু। কোথাও কিছু লেখা নেই। শুধু কাগজের একপাশে কালো কালির ছোট্ট একটি বিন্দু আঁকা। এর মানে বুঝল না নিতু। বাদলকে ফোন করল। বাদল বলল, ফিরে আসবে রাতের মধ্যে। সন্ধ্যা কাটল রাত হতে হতে মাঝরাতে নিতু বাদলকে ফোন দিলো। বাদল বলল, কাল সকালে দেখা যাবে। সকাল হলো, নিতু জাফরের অফিসে ফোন করল। অফিস থেকে জানাল, জাফর গতদিন অফিসে যায়নি। থানায় জিডি করা হলো। পুলিশ খুঁজল। পত্রিকায় ছবি সহ নিখোঁজ সংবাদ ছাপা হলো।
'এরপর তোর বাবা আর ফিরে আসেনি।' বলে চশমা খুলে কাচের ছাদের টেবিলে রাখল নিতু। চোখ মুছে চশমা পরল।
মুসকান কৌতূহলী ভঙ্গিতে বলল, 'ক'বছর আগে বাবা নিখোঁজ হয়েছিল, মা?'
'প্রায় বারো বছর।'
'বাবা কখনো ফোন দেয়নি? একটা চিঠিও না?'
নিতু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, 'না।'
'জাহেদ তাহলে আমার আপন ভাই না?'
'কে বলেছে তোর আপন ভাই না? জাফরের ছেলে না হলেও আমার ছেলে। তোর আপন ভাই।'
'কিন্তু বাবার পরিচয়ে বড় করছো কেন? ওঁ তো বাদলের ছেলে।'
'তোর বাবার ইচ্ছে ছিল, ওঁকে তার পরিচয়ে বড় করি।'
'তুমি কি বাদলকে বিয়ে করেছিলে, মা?'
'না।'
'কেন? বাদলকে বিয়ে করার জন্যই তো বাবার কাছ থেকে ডিভোর্স চেয়েছিলে, তাই না?'
'চেয়েছিলাম হয়তো, কিন্তু তখন তো জানতাম না ওটা ভালোবাসা না। প্রকৃত ভালোবাসা তো তোর বাবার প্রতি ছিল।'
'তার মানে বাবা বোকা ছিল না। সত্যিকারের বোকা ছিলে তুমি?'
নিতু আসামীর মতো মাথা নিচু করে বসে রইল।
'বাবা কি আর ফিরে আসবে না?'
'আসবে, আসবে। আমার কী মনে হয়, জানিস?'
'কী?'
'আমার মনে হয়, আমার যেদিন মৃত্যু হবে, সেদিন তোর বাবা আসবে। হুট করে চলে আসবে মানুষটা। আমার লাশ পড়ে থাকতে দেখে দু'হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে ফেলবে।'
'এমনওতো হতে পারে, বাবা মারা গেছে।'
'চুপ। এমন কথা বলিস না। আমি জানি মানুষটা বেঁচে আছে। মরে গেলে লাশটা অন্তত দেখতে পেতাম...'
স্কুল ব্যাগ কাঁধে নিয়ে জাহেদ এল৷ ব্যাগ সোফার ছুঁড়ে ফেলে বলল, 'আজ একটা লোক আমাকে অনেকগুলো চকোলেট দিয়েছে, মা।'
'কে দিয়েছে?'
'চিনি না। লোকটা দেখতে কেমন যেন অদ্ভুত। শীতের মৌসুমে পাতলা ফতুয়া আর পাজামা পরেছে। আর সবচে' অদ্ভুত তার ব্যাগ। একটা কাপড়ের ঝোলাব্যাগ।'
নিতু চমকে উঠে বলল, 'লোকটা মুখে কি খোঁচা খোঁচা দাড়ি, চোখে গোল ফ্রেমের চশমা?'
'গোল ফ্রেমের চশমা আছে, মা। তবে খোঁচা খোঁচা দাড়ি নেই। লোকটার মুখ ভর্তি লম্বা লম্বা দাঁড়ি। মাথার চুলও অনেক লম্বা লম্বা।'
'তোকে কিছু বলেনি?'
'বলেছে, মা।'
'কী বলেছে?'
'বলেছে, সে আমাকে চকোলেট দিয়েছে এটা যেন তোমাকে না বলি।'
নিতুর চোখ ছলছল করতে লাগল। গাল বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুজল গড়িয়ে পড়তে লাগল। এ অশ্রু আনন্দের না কষ্টের তা সে জানে না।
সমাপ্ত
~ মো. ইয়াছিন
Pk monish, Akash islam, Parvez ali, Akram ali, Md faruk molla, Babul jalaluddin, Biplob islam and লেখাটি পছন্দ করেছে
Page 2 of 2 • 1, 2
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum