- Tonushri D.নবাগত
- Posts : 2
স্বর্ণমুদ্রা : 1362
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-29
বাবার হাসি
Sat Jun 05, 2021 7:29 pm
"আচ্ছা দোলন কোন রকমে থাকা খাওয়া যায় অল্প খরচের মাঝে এমন কোন বৃদ্বাশ্রমের নাম জানিস? আমার সঞ্চয় খুবই অল্প তো তাই আরকি সস্তা ধরনের বৃদ্বাশ্রম হলে অনেক উপকার হয়। আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি আর অনেক আগের দিনের মানুষ তাই তোদের মত এত অগ্রগামী নই তাই জিজ্ঞেস করা আরকি। পেলে আমাকে একটু জানাইস কেমন?"
ঠিক ৪.৫ বছর আগে বাবাকে খুব চিন্তিত দেখেছিলাম। তবে সেই চিন্তার কোন লেশ বড় ভাইয়ার সামনে তুলে ধরেনি। খুব সন্তর্পনে বদ্দার (বড়দাদা) মাথায় হাত বুলিয়ে চাকুরীর জন্য পরীক্ষার হলে ঢুকিয়ে দিয়ে এসেছিল বাবা। গেটটা পেরিয়ে বদ্দা চোখের আড়াল হতেই আমাকে জড়িয়ে ভেউ ভেউ করে কেদে উঠেছিল একদম বাচ্চা শিশুদের মত। সেদিনই বাবাকে প্রথম কাদতে দেখেছিলাম। বড় ছেলে পরীক্ষা দিচ্ছে। হয়তো পরীক্ষাটা খাতা কলমে দিচ্ছে বদ্দা তবে আসল পরীক্ষাটা দিচ্ছে হলের বাহিরে বসে বাবা নামক মানুষটা। তাইতো নিজের আবেগটা কোনভাবেই আড়াল করে রাখতে পারেনি।
সেই বাবাকেই ৪.৫ বছর পরে আজ দেখতে পারছি বিষন্ন নয়নে বারান্দার গ্রিল ধরে রাস্তা দিয়ে মানুষের আনাগোনা নিস্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে। নাহ এবার আর চোখে কান্না নেই। বাবাদের সবসময় কান্না করতে হয়না। বাবারা সবসময় কান্না করলে বোবা কান্না নামক শব্দটাই যে দুনিয়া থেকে উঠে যাবে। আজ বাবাকে দেখছি অসহায়ের প্রতিচ্ছবি রুপে। বদ্দার সেই চাকুরিটা হয়ে গেছে। মাস শেষে লাখ দেড়েকের মত বেতন পাচ্ছে। আর সেই পরীক্ষা হলের পিছনের বেঞ্চে বসা নারী আজ বদ্দার বউ। বাবাকে আজ বদ্দার বড্ড পুরাতন আর ঝামেলা মনে হচ্ছে। একসাথে থাকতে কেমন জানি লাগে বদ্দার। তাই আলাদা থাকতে চায়। যেদিন বাবাকে কথাগুলো ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে শুরু করেছিল সেদিন বাবা নিজ থেকেই বুঝ গিয়েছিল বদ্দার মনের কথা। বাবাও হাসিমুখে বদ্দার কথা মেনে নিয়েছিল। অথচ বদ্দার বিয়ের আগের দিন রাতের বেলা বাবা চুপিচুপি আমার রুমে এসে বদ্দার ছেলেমেয়েদের নাম ও ঠিক করে গিয়েছিল। সেদিন হাসি আজ ও আমার চোখের সামনে ভেসে আসে। ইচ্ছে ছিলো নাতী পুতীদের সাথে নিয়ে সারাদিন কাটাবেন। বুকের মাঝে আগলিয়ে রাখবেন ছোট্ট কলিজাদের। বিয়ের পর সারাদিন এইসব কথা শুনতে শুনতে মেজাজ বিগড়ে যেত। একদিন তো বলেই বসলাম যে আমাকে এইসব কথা আর বলতে না। সেদিন ও বাবা রাগ করেনি বা কষ্টও পায়নি। খালি হেসেছিল আর বলেছিল তুই যেদিন দাদ/নানা হবি সেদিন বুঝবি কেমন লাগে। আর আজ বাবা নিজের ইচ্ছা তে বদ্দার নামে তার সম্পত্তি লিখে দিচ্ছে। না রাগ করে নয়। ছেলেটার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে যাতে এই সম্পত্তি দিয়ে কিছু করে খেতে পারে।
আজকাল আমাদের বাকি দুই ভাইয়ের দিকে আজকাল অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। কিন্তু নিজের দায়িত্ব থেকে মানুষটাকে একটুও পিছু হটতে দেখিনি। নিজের পরিশ্রম দিয়ে আমদেরও একি রকম যত্ন করছেন। কেবল মাঝে মাঝে অসহায়ত্বের চাপ দেখতে পাই। মেঝো ভাইয়াও প্রতিষ্টিত হলো। ভাইয়াকে বিয়ে করিয়ে দিবার পর পরই পাল্টাতে থাকেন বড় ভাইয়ার মত। লোকটাকে সহ্য হয়না। মুখে মুখে খুব তর্ক করতে দেখি মেঝো ভাইয়াকে। বাবা হেরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন। হয়তো মা বেচে থাকলে মানুষটা নিজের কষ্ট গুলি শেয়ার করতে পারতো। অথচ এই মেঝদাকেই দেখেছি বাবার হয়ে বড় ভাইয়ার বিপক্ষে গিয়ে গলার স্বর উচু করে ঝগড়া করতে।
এইতো সেদিন বাবা নিজ ইচ্ছায় মেঝদাকে তার বউ নিয়ে আলাদা থাকার কথা বলে ঘর থেকে বের হলো। মেঝদা যদিও চায়নি আলাদা থাকার কথা। কিন্তু বাবা বুঝতে পেরেছিল যে মেঝদার বউটা এই বুড়ো মানুষ টাকে ঘাড়ে ফেলে রাখতে চাচ্ছে না। কতটা অসহায় হলে বাবারা নিজেদের সন্তানকে আলাদা থাকার কথা নিজ ইচ্ছায় বলে আসতে পারে তা আমার জানা নেই। থাকার কথাও না। কেননা আমি যে বাবা নই। আমি বাবার ছেলে মাত্র।
আজকাল বাবা আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতেও তাকাতে পারছে না। আমাকে আজ বাবার অনেক বড় অচেনা প্রানী মনে হয়। বাবা ধরেই নিয়েছেন যে আমিও বাবার সাথে থাকব না। ঘরপোড়া গরু সিদুরে মেঘ দেখলেও ডরাবে সেটাই স্বাভাবিক। মেঝদার চলে যাবার কিছুদিনের মাথায় আমি একটা ভালো চাকুরি পেলাম। বাবাকে খবরটা দিলাম সাথে সাথেই। জানি বাবা অনেক খুশি হয়েছিল তবে সেটা শুকনো হাসির সাথে গ্রহন করেছিল। বাবা ধরেই নিয়েছেন এইবার আমার পালা বাবাকে আলাদা রাখার। সেদিন খাবার টেবিলে বাবা আমাকে খামারের মাঝে জিজ্ঞেস করলেন...
- দোলন! একটা ভালো চাকুরি তে পেয়ে গেলি। এখন তো সংসারি হতে হয়। তোর পছন্দের কোন মেয়ে আছে নাকি দেখাদেখি শুরু করবো?
সেদিন বাবাকে মাথা নিচু করে প্রিয়ন্তির কথা বলে দিয়েছিলাম। বাবা আমার কথা শুনে চুপচাপ বসেছিল। এর আগেও দুইভাই একই কথা বাবাকে বলেছিল। বাবার সামনে থেকে উঠে যাবার সময় বাবা হাতের ইশারায় আমাকে বসতে বলল। হয়তো বাবার গলাটা ধরে এসেছিল। আমাকে বসিয়ে বাবা কথাগুলো বলেছিল।
“আচ্ছা দোলন কোন রকমে থাকা খাওয়া যায় অল্প খরচের মাঝে এমন কোন বৃদ্বাশ্রমের নাম জানিস? আমার সঞ্চয় খুবই অল্প তো তাই আরকি সস্তা ধরনের বৃদ্বাশ্রম হলে অনেক উপকার হয়। আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি আর অনেক আগের দিনের মানুষ তাই তোদের মত এত অগ্রগামী নই তাই জজ্ঞেস করা আরকি। পেলে আমাকে একটু জানাইস কেমন?”
কথাগুলো বলে বাবা উঠে যেতেই বাবার হাতটা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিয়েছিলাম। আর ভেউ ভেউ করে বাবাকে খালি বললাম যে বাবা তোমাকে কতটা ভালবাসি। ঠিক ৪.৫ বছর পরে বাবাকে কাদতে দেখলাম। কিন্তু ভারী চশমার ফাকে সেই কান্না লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে আমাকে একটা থাপ্পর দিয়েছিল আজেবাজে কথা না বলার জন্য। থাপ্পরটা মনে হয় অসহায়ত্বের ছিলো না। ছিলো ভালবাসা মিশ্রিত নির্ভরতার।
আজকাল প্রিয়ন্তিকে আমার পাশে খুবই কম পাই। বাবা মেয়ে মিলে সারাদিন গুটুর গুটুর করে কিসব কথা বলে নিজেও বুঝিনা। ও হ্যা প্রিয়ন্তি হলো আমার স্ত্রী। আর নিজের মেয়ের চেহারা তো ভুলেই গিয়েছি। মনে থাকার কথাও না। কিভাবে থাকবে? সারাদিন দাদু দাদু করতে করতেই পাগল।
আজকাল বাবার হাসিমুখ দেখতে কেমন যেন অজানা ভালো লাগা কাজ করে। বাবাকে যতই বলি বাবা তোমার বাজার করতে হবে না। ততই বাবা আমাকে ধমকে দিয়ে বলে “বেশি বড় হয়ে গেছিস তাইনা? এখন পর্যন্ত ইলিশ আর রুই মাছ চিনিস না আবার গ্রাম এবং কেজির হিসাব জানিস না আবার আমাকে বলিস বাজার না করতে। আমাদের কি পচা জিনিষ খাইয়ে মারতে চাস নাকি?” একই সাথে প্রিয়ন্তি আর আমার মেয়ে কোরাসের সহিত সুর মিলায়। ঝারি খেয়ে যখন ভিজা বিলাইয়ের মত নিজের রুমে চলে আসি তখন শুনি বাবা, মেয়ে আর আমার বউয়ের দম ফাটানো হাসির শব্দ। আমিও হাসি তাদের হাসির শব্দে। আর হাসতে হাসতে মনে মনে বলি “বেচে থাক এমন হাসি শহস্র বছর সকল বাবাদের মাঝে”
Jedny Hasan Semanto
ঠিক ৪.৫ বছর আগে বাবাকে খুব চিন্তিত দেখেছিলাম। তবে সেই চিন্তার কোন লেশ বড় ভাইয়ার সামনে তুলে ধরেনি। খুব সন্তর্পনে বদ্দার (বড়দাদা) মাথায় হাত বুলিয়ে চাকুরীর জন্য পরীক্ষার হলে ঢুকিয়ে দিয়ে এসেছিল বাবা। গেটটা পেরিয়ে বদ্দা চোখের আড়াল হতেই আমাকে জড়িয়ে ভেউ ভেউ করে কেদে উঠেছিল একদম বাচ্চা শিশুদের মত। সেদিনই বাবাকে প্রথম কাদতে দেখেছিলাম। বড় ছেলে পরীক্ষা দিচ্ছে। হয়তো পরীক্ষাটা খাতা কলমে দিচ্ছে বদ্দা তবে আসল পরীক্ষাটা দিচ্ছে হলের বাহিরে বসে বাবা নামক মানুষটা। তাইতো নিজের আবেগটা কোনভাবেই আড়াল করে রাখতে পারেনি।
সেই বাবাকেই ৪.৫ বছর পরে আজ দেখতে পারছি বিষন্ন নয়নে বারান্দার গ্রিল ধরে রাস্তা দিয়ে মানুষের আনাগোনা নিস্পলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে। নাহ এবার আর চোখে কান্না নেই। বাবাদের সবসময় কান্না করতে হয়না। বাবারা সবসময় কান্না করলে বোবা কান্না নামক শব্দটাই যে দুনিয়া থেকে উঠে যাবে। আজ বাবাকে দেখছি অসহায়ের প্রতিচ্ছবি রুপে। বদ্দার সেই চাকুরিটা হয়ে গেছে। মাস শেষে লাখ দেড়েকের মত বেতন পাচ্ছে। আর সেই পরীক্ষা হলের পিছনের বেঞ্চে বসা নারী আজ বদ্দার বউ। বাবাকে আজ বদ্দার বড্ড পুরাতন আর ঝামেলা মনে হচ্ছে। একসাথে থাকতে কেমন জানি লাগে বদ্দার। তাই আলাদা থাকতে চায়। যেদিন বাবাকে কথাগুলো ইনিয়ে বিনিয়ে বলতে শুরু করেছিল সেদিন বাবা নিজ থেকেই বুঝ গিয়েছিল বদ্দার মনের কথা। বাবাও হাসিমুখে বদ্দার কথা মেনে নিয়েছিল। অথচ বদ্দার বিয়ের আগের দিন রাতের বেলা বাবা চুপিচুপি আমার রুমে এসে বদ্দার ছেলেমেয়েদের নাম ও ঠিক করে গিয়েছিল। সেদিন হাসি আজ ও আমার চোখের সামনে ভেসে আসে। ইচ্ছে ছিলো নাতী পুতীদের সাথে নিয়ে সারাদিন কাটাবেন। বুকের মাঝে আগলিয়ে রাখবেন ছোট্ট কলিজাদের। বিয়ের পর সারাদিন এইসব কথা শুনতে শুনতে মেজাজ বিগড়ে যেত। একদিন তো বলেই বসলাম যে আমাকে এইসব কথা আর বলতে না। সেদিন ও বাবা রাগ করেনি বা কষ্টও পায়নি। খালি হেসেছিল আর বলেছিল তুই যেদিন দাদ/নানা হবি সেদিন বুঝবি কেমন লাগে। আর আজ বাবা নিজের ইচ্ছা তে বদ্দার নামে তার সম্পত্তি লিখে দিচ্ছে। না রাগ করে নয়। ছেলেটার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে যাতে এই সম্পত্তি দিয়ে কিছু করে খেতে পারে।
আজকাল আমাদের বাকি দুই ভাইয়ের দিকে আজকাল অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়। কিন্তু নিজের দায়িত্ব থেকে মানুষটাকে একটুও পিছু হটতে দেখিনি। নিজের পরিশ্রম দিয়ে আমদেরও একি রকম যত্ন করছেন। কেবল মাঝে মাঝে অসহায়ত্বের চাপ দেখতে পাই। মেঝো ভাইয়াও প্রতিষ্টিত হলো। ভাইয়াকে বিয়ে করিয়ে দিবার পর পরই পাল্টাতে থাকেন বড় ভাইয়ার মত। লোকটাকে সহ্য হয়না। মুখে মুখে খুব তর্ক করতে দেখি মেঝো ভাইয়াকে। বাবা হেরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন। হয়তো মা বেচে থাকলে মানুষটা নিজের কষ্ট গুলি শেয়ার করতে পারতো। অথচ এই মেঝদাকেই দেখেছি বাবার হয়ে বড় ভাইয়ার বিপক্ষে গিয়ে গলার স্বর উচু করে ঝগড়া করতে।
এইতো সেদিন বাবা নিজ ইচ্ছায় মেঝদাকে তার বউ নিয়ে আলাদা থাকার কথা বলে ঘর থেকে বের হলো। মেঝদা যদিও চায়নি আলাদা থাকার কথা। কিন্তু বাবা বুঝতে পেরেছিল যে মেঝদার বউটা এই বুড়ো মানুষ টাকে ঘাড়ে ফেলে রাখতে চাচ্ছে না। কতটা অসহায় হলে বাবারা নিজেদের সন্তানকে আলাদা থাকার কথা নিজ ইচ্ছায় বলে আসতে পারে তা আমার জানা নেই। থাকার কথাও না। কেননা আমি যে বাবা নই। আমি বাবার ছেলে মাত্র।
আজকাল বাবা আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতেও তাকাতে পারছে না। আমাকে আজ বাবার অনেক বড় অচেনা প্রানী মনে হয়। বাবা ধরেই নিয়েছেন যে আমিও বাবার সাথে থাকব না। ঘরপোড়া গরু সিদুরে মেঘ দেখলেও ডরাবে সেটাই স্বাভাবিক। মেঝদার চলে যাবার কিছুদিনের মাথায় আমি একটা ভালো চাকুরি পেলাম। বাবাকে খবরটা দিলাম সাথে সাথেই। জানি বাবা অনেক খুশি হয়েছিল তবে সেটা শুকনো হাসির সাথে গ্রহন করেছিল। বাবা ধরেই নিয়েছেন এইবার আমার পালা বাবাকে আলাদা রাখার। সেদিন খাবার টেবিলে বাবা আমাকে খামারের মাঝে জিজ্ঞেস করলেন...
- দোলন! একটা ভালো চাকুরি তে পেয়ে গেলি। এখন তো সংসারি হতে হয়। তোর পছন্দের কোন মেয়ে আছে নাকি দেখাদেখি শুরু করবো?
সেদিন বাবাকে মাথা নিচু করে প্রিয়ন্তির কথা বলে দিয়েছিলাম। বাবা আমার কথা শুনে চুপচাপ বসেছিল। এর আগেও দুইভাই একই কথা বাবাকে বলেছিল। বাবার সামনে থেকে উঠে যাবার সময় বাবা হাতের ইশারায় আমাকে বসতে বলল। হয়তো বাবার গলাটা ধরে এসেছিল। আমাকে বসিয়ে বাবা কথাগুলো বলেছিল।
“আচ্ছা দোলন কোন রকমে থাকা খাওয়া যায় অল্প খরচের মাঝে এমন কোন বৃদ্বাশ্রমের নাম জানিস? আমার সঞ্চয় খুবই অল্প তো তাই আরকি সস্তা ধরনের বৃদ্বাশ্রম হলে অনেক উপকার হয়। আমি তো বুড়ো হয়ে গেছি আর অনেক আগের দিনের মানুষ তাই তোদের মত এত অগ্রগামী নই তাই জজ্ঞেস করা আরকি। পেলে আমাকে একটু জানাইস কেমন?”
কথাগুলো বলে বাবা উঠে যেতেই বাবার হাতটা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেদে দিয়েছিলাম। আর ভেউ ভেউ করে বাবাকে খালি বললাম যে বাবা তোমাকে কতটা ভালবাসি। ঠিক ৪.৫ বছর পরে বাবাকে কাদতে দেখলাম। কিন্তু ভারী চশমার ফাকে সেই কান্না লুকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে আমাকে একটা থাপ্পর দিয়েছিল আজেবাজে কথা না বলার জন্য। থাপ্পরটা মনে হয় অসহায়ত্বের ছিলো না। ছিলো ভালবাসা মিশ্রিত নির্ভরতার।
আজকাল প্রিয়ন্তিকে আমার পাশে খুবই কম পাই। বাবা মেয়ে মিলে সারাদিন গুটুর গুটুর করে কিসব কথা বলে নিজেও বুঝিনা। ও হ্যা প্রিয়ন্তি হলো আমার স্ত্রী। আর নিজের মেয়ের চেহারা তো ভুলেই গিয়েছি। মনে থাকার কথাও না। কিভাবে থাকবে? সারাদিন দাদু দাদু করতে করতেই পাগল।
আজকাল বাবার হাসিমুখ দেখতে কেমন যেন অজানা ভালো লাগা কাজ করে। বাবাকে যতই বলি বাবা তোমার বাজার করতে হবে না। ততই বাবা আমাকে ধমকে দিয়ে বলে “বেশি বড় হয়ে গেছিস তাইনা? এখন পর্যন্ত ইলিশ আর রুই মাছ চিনিস না আবার গ্রাম এবং কেজির হিসাব জানিস না আবার আমাকে বলিস বাজার না করতে। আমাদের কি পচা জিনিষ খাইয়ে মারতে চাস নাকি?” একই সাথে প্রিয়ন্তি আর আমার মেয়ে কোরাসের সহিত সুর মিলায়। ঝারি খেয়ে যখন ভিজা বিলাইয়ের মত নিজের রুমে চলে আসি তখন শুনি বাবা, মেয়ে আর আমার বউয়ের দম ফাটানো হাসির শব্দ। আমিও হাসি তাদের হাসির শব্দে। আর হাসতে হাসতে মনে মনে বলি “বেচে থাক এমন হাসি শহস্র বছর সকল বাবাদের মাঝে”
Jedny Hasan Semanto
Hasibul hasan santo, Abul basar, Santa akter, Sk imran, Raihan khan, Tanusri roi, Badol hasan and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum