- Soisobনবাগত
- Posts : 7
স্বর্ণমুদ্রা : 1421
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-02
রাক্ষসের গ্রহে জামিল
Sat Jun 05, 2021 11:53 pm
রাক্ষসের গ্রহে বিশাল এক পর্বত শ্রেণীর খাড়িতে ল্যাণ্ড করেছে মহকাশযান পঙ্খিরাজ-১৯৭১ যানটা বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী ড.জামিলের। গ্রহটা যে রাক্ষসদের তা তিনি আগে জানতেন না। তাঁর লক্ষ্য ছিলো টাফা গ্রহ। সেখানে পিঁপড়ে মানবদের দেশে আটকা পড়েছেন আরেক বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী প্রফেসর শঙ্কু। কিন্তু রাক্ষসের গ্রহকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ পঙ্খিরাজ-১৯৭১-এ গোলেযোগ দেখা দেয়। তাই জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়েছেন।
গ্রহটা জামিলের বেশ পছন্দ হয়েছে। দেখতে আমাদের পৃথিবীর মতোই। তবে লোকালয়ের চেয়ে বন-জঙ্গলই বেশি। দূর থেকে দুরবিণ দিয়ে কারুকার্যমণ্ডিত প্রাসাদগুলো দেখে ভেবেছিলেন, হয়তো সভ্য মানুষের বাস আছে এ গ্রহে।
হ্যাঁ, মানুষ আছে, তাদের বুদ্ধিও আছে। তবে তারা আমাদের মতো সভ্য নয়, আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের মতো জংলি মানুষ। গভীর জঙ্গলেই জন্তু জানোয়ারের মতো তাদের বাস। শহর আর গ্রামের ওই বিশাল বিশাল প্রাসাদগুলোতে বাস করে কেবল রাক্ষসেরা। মানুষই তাদের প্রিয় খাদ্য।
পঙ্খিরাজ-১৯৭১-এর যান্ত্রিক ত্রুটি সারাতে জামিলকে হাত লাগানোর দরকার পড়বে না। রোবট বিদ্যাপতিই সব করবে। তবে সে জানিয়েছে, সবকিছু ঠিকঠাক হতে ৭২ ঘন্টা সময় লেগে যেতে পারে। এই সময়টাতে জামিল কী করবেন?
‘গ্রহটা একটু ঘুরেফিরে দেখতে পারলে মন্দ হতো না,’ ভাবলেন জামিল।
প্রফেসর শঙ্কুর ফর্মূলায় তৈরি এনাইহিলিন গানটা হাতে নিয়ে খাড়ি থেকে সমতল ভূমির দিকে নেমে এলেন তিনি। পরনে তাঁর রোবটের মতো নভোচারী পোশাক। পিঠে একটা ট্রাভেল ব্যাগ। নানা রকম বেজ্ঞানিক জিনিসে ভরপুর সেটা।
প্রফেসর শঙ্কুর সেই বিখ্যাত এনাইহিলিন গানের কথা জানা আছে তো? সেই পিস্তল তাক করে কোনো জীবিত অথবা মৃত প্রাণীর দিকে গুলি ছুঁড়লে মুহতের্র মধ্যেই প্রাণীটা একেবারে ভ্যানিশ হয়ে যায়!
গহীন জঙ্গলের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কিম্ভূতাকার একদল রাক্ষসের মুখোমুখি হলেন তিনি। দেখতে গরিলাদের মতো। কিন্তু সাইজে পাঁচটা গরিলার সমান একেকটা। মাথায় দুটি করে বাঁকানো শিং আর ফলার মতো ধারালো লম্বা লম্বা দুটি করে দাঁত বেরিয়ে আছে গালের দু’পাশ থেকে।
জামিল তাদের কাছাকাছি আসতেই রাক্ষসদের দলনেতা হুংকার দিয়ে উঠল, ‘হাও মাও খাও, মানুষের গন্ধ পাও! আজব তো তোর চেহারা! রাক্ষসের দেশে কোত্থেকে এসে জুটেছিস?’
জামিল তো বুঝে গেছেন ব্যাপারটা, তাই তিনি চালাকি খাটিয়ে বললেন, ‘হাও মাও খাও, রাক্ষসের গন্ধ পাও! আমি ভোক্ষসের দেশ থেকে এসেছি। রাক্ষস ধরে ধরে খাই। হঠাৎ আমাদের দেশে রাক্ষসের আকাল পড়েছে তো, তাই ভাবলাম, যাই ওদেশ থেকে ঘুরে আসি, যদি ওখানে তাগড়া তাগড়া রাক্ষস মেলে। এসে দেখি, এ বাব্বা, এই টুকু টুকু রাক্ষস! তোদের সবকটাকে সাবাড় করে আমার একার ক্ষুধাই মিটবে না। মা-বাবার জন্য বাড়িতে কী নিয়ে যাব?’
জামিলের কথা শুনে রাক্ষসের সর্দার তো রেগে আগুন! বজ্রকণ্ঠে হুংকার ছেড়ে বলল, ‘ব্যাটা! তোর সাহস তো কম নয়, লিলিপুট শরীর নিয়ে কিনা আমাদের বলিস ‘এই টুকু টুকু’! দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা--’ বলে আশেপাশের গাছপালা, ঝোপজঙ্গল থামের মতো মোটা দুটি হাত দিয়ে মুঁচড়িয়ে পাটকাঠির মতো চুরমার করতে লাগল। তার দেখাদেখি অন্য রাক্ষসেরাও শুরু করল তাণ্ডব। তাদের তাণ্ডবে জঙ্গলে ঝড় বয়ে গেল কিছুক্ষণ। তার পর ক্লান্ত হয়ে থামল রাক্ষসেরা। সর্দার জামিলের দিকে ফিরে ফোঁস ফোঁস করে বলল, ‘এবার বুঝেছিস তো ব্যাটা আমরা কত ভয়ংকর!’
‘এর চেয়ে ভোক্ষসরা বেশি ভয়ংকর!’ একটুও ভয় না পেয়ে বললেন জামিল।
‘তবে রে...’ বলে সর্দারের বিশাল দুটি হাত এগিয়ে আসছিল জামিলের গলা লক্ষ্য করে। তিনি আর দেরি করলেন না। এনাইহিলিন গানটা রাক্ষসটার দিকে তাক করে ট্রিগার চেপে দিলেন। মুহূর্তের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল রাক্ষস সর্দার। তাই দেখে অন্য রাক্ষসগুলো পড়িমরি করে ছুটে পালালো। জামিল এগিয়ে চললেন শহরের দিকে।
শহরে যখন পৌঁছালেন, তখন রাত নেমে এসেছে। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। শহরে ঢুকেই জামিল বুঝতে পারলেন, জঙ্গলের ঘটনা ফুঁলে-ফেঁপে দেশময় রাস্ট্র হয়ে গেছে। এক বাড়ির কাঁনাচ দিয়ে যাওয়ার সময় জামিলের কানে এলো-- এক মা তার ছেলেকে ঘুম পাড়াচ্ছে এই বলে-- ‘এদেশে ইয়াবড় এক ভোক্ষস এসেছে। রাক্ষস ধরে ধরে খায়! ভোক্ষসটার দাঁতগুলো নাকি এতা বড় যে এই শহরের এ মাথায় রাখলে ওমাথায় গিয়েও ফুরোবে না!’
জামিল মনে মনে হাসতে হাসতে রাজ-প্রাসাদের দিকে এগোলেন। ‘এখন রাজাকে এমন শিক্ষা দিতে হবে, যাতে ভভিষ্যতে রাক্ষসেরা আর কখোনো মানুষ ধরে না খায়।’ ভাবলেন জামিল।
জামিল দেখলেন ভোক্ষসের ভয়টা রাজ-প্রাসাদেও বেশ প্রভাব ফেলেছে। প্রাসাদের সব আলো নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। মূল ফটকটা একেবারে আটোসাঁটো করে লাগানো। পিঁপড়ে পর্যন্ত ঢোকার রাস্তা নেই। প্রহরীরাও কেউ বাইরে দাঁড়াতে সাহস করেনি। ভেতরে বসে পাহারা দিচ্ছে।
জামিল প্রাসাদের ফটকে কড়া নাড়লেন। ভেতর থেকে প্রহরী ভয় পাওয়া গলায় বলল ‘কে-রে?’
‘আমি, তোর যম! রাজাকে ডেকে দে ব্যাটা।’ এপাশ থেকে উত্তর গেল।
রাজা তো প্রথমে ভয়ে আসতেই চায়নি, জামিল তার দলবল ডেকে এনে প্রাসাদ উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিলে অবশেষে মন্ত্রী-সান্ত্রী, পাইক পেয়াদাসহ হাজির হলো। কিন্তু দরজা খুলতে রাজি হলো না। ভয়ের কারণে হুংকার দেয়ার চেষ্টা করেও পারল না রাক্ষসরাজ। তবু চেষ্টাচরিত করে বলল, ‘হাও মাও খাও, কে তুই? কোথা থেকে এসছিস?’
‘হাও মাও খাও, আমি ভোক্ষসের দেশ থেকে এসেছি,’ জামিল বললেন।
‘খাস কি তুই? পান করিস কী?’
‘খাই রাক্ষস, পান করি অমৃত?’
‘দেখা তোর অমৃত।’
ফটকে নজরদারী-ছিদ্রটা খুলে গেল। জামিল ব্যাগের ভেতর থেকে নাইট্রিক এসিডের বোতলটা বের করে ছিদ্র দিয়ে ঢুকিয়ে দিলেন।
বোতলটা শুঁকে রাজামশাই বলল, ‘গন্ধটা তো দারুণ! স্বাদটাও হয়তো অমৃত। খেয়ে দেখো তো মন্ত্রীবর।’
মন্ত্রী ঢকঢক করে গিলে ফেলল সেই তীব্র এসিড। মুহূর্তের মধ্যেই জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে মরে গেল সে।
তা দেখে রাজা বলল, ‘বুঝলাম তোমরা পান করো রাজকীয় রস। এবার তোমার লেজটা দেখাও, বুঝব তোমার আকার কেমন?’
জামিল ফটকের ছিদ্র দিয়ে এক ইঞ্চি মোটা একটা তামার তারের একপ্রান্ত ঝুলিয়ে দিলেন।
‘তোমাদের লেজ এত চিকন?’ ওপাশ থেকে রাজা বলল।
‘কামড়ে দেখো না?’ জামিল বললেন।
কিন্তু পালোয়ান মতো একটা রাক্ষস শত কামড়ে-কুমড়েও তারটা ছিঁড়তে পারল না।
‘মানছি তোমাদের লেজ অতি শক্ত, এবার দাঁতের শক্তি দেখাও। আমি একটা লেজ দিচ্ছি।’
লেজ দিতে কেউ রাজি হচ্ছিল না, অবশেষে রাজার কড়া হুকুমে সিপাহসালার তার লেজটা ছিদ্র দিয়ে বের করে দিল। অমনি জামিল ধারালো চাকু দিয়ে পোঁচ মেরে লেজটা কেটে তাতে একটু লবণ মাখিয়ে দিলেন। সিপাহসালার কাটা লেজে নুনের ছিঁটার যন্ত্রণায় গগণবিদারী একটা চিৎকার দিয়ে বাদরের মতো প্রাসাদের ভেতরে লাফলাফি করতে লাগল।
জামিল বললেন, ‘বুঝেছ রাজামশাই আমি কী জিনিস, তোমাদের সবকটাকে এখন আস্ত আস্ত চিঁবিয়ে খাব!’
রাজা আগেই ভড়কে গেছে, ‘চিঁবিয়ে খাব’ কথাটা শুনে হাউ মাউ করে বলল, ‘দয়া করুন হুজুর, মাফ করে দিন। আপনি যা চান তাই দেব, শুধু আমাদের প্রাণ ভিক্ষা দিন।’
জামিল বললেন, ‘দিতে পারি এক শর্তে, যদি তোমারা আর কোনোদিন মানুষ না খাও, যদি মানুষের আলাদা করে শহর গড়তে দাও, তবেই...’
‘তাই হবে হুজুর। এখন থেকে আমার বুনো ষাঢ়-হাতি মেরে খাব আর মানুষের জন্য দেশের পশ্চিম অংশটা একেবারে ছেড়ে দিলাম।’
‘দেখো কিন্তু, তোমাদের রাজ্যে আমার গুপ্তচর আছে। আর একবার যদি মানুষ খেয়েছ...’
‘আর বলতে হবে না হুজুর, আর ....’
রাক্ষসরাজ হুজুর হুজুর করেই যাচ্ছিল, জামিল নিঃশব্দে সেখান থেকে মহাকাশযানের দিকে পা বাড়ালেন।
*গ্রামীণ লোককাহিনীর সায়েন্সফিকশনীয় রূপ
আবদুল গাফফার রনি
গ্রহটা জামিলের বেশ পছন্দ হয়েছে। দেখতে আমাদের পৃথিবীর মতোই। তবে লোকালয়ের চেয়ে বন-জঙ্গলই বেশি। দূর থেকে দুরবিণ দিয়ে কারুকার্যমণ্ডিত প্রাসাদগুলো দেখে ভেবেছিলেন, হয়তো সভ্য মানুষের বাস আছে এ গ্রহে।
হ্যাঁ, মানুষ আছে, তাদের বুদ্ধিও আছে। তবে তারা আমাদের মতো সভ্য নয়, আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের মতো জংলি মানুষ। গভীর জঙ্গলেই জন্তু জানোয়ারের মতো তাদের বাস। শহর আর গ্রামের ওই বিশাল বিশাল প্রাসাদগুলোতে বাস করে কেবল রাক্ষসেরা। মানুষই তাদের প্রিয় খাদ্য।
পঙ্খিরাজ-১৯৭১-এর যান্ত্রিক ত্রুটি সারাতে জামিলকে হাত লাগানোর দরকার পড়বে না। রোবট বিদ্যাপতিই সব করবে। তবে সে জানিয়েছে, সবকিছু ঠিকঠাক হতে ৭২ ঘন্টা সময় লেগে যেতে পারে। এই সময়টাতে জামিল কী করবেন?
‘গ্রহটা একটু ঘুরেফিরে দেখতে পারলে মন্দ হতো না,’ ভাবলেন জামিল।
প্রফেসর শঙ্কুর ফর্মূলায় তৈরি এনাইহিলিন গানটা হাতে নিয়ে খাড়ি থেকে সমতল ভূমির দিকে নেমে এলেন তিনি। পরনে তাঁর রোবটের মতো নভোচারী পোশাক। পিঠে একটা ট্রাভেল ব্যাগ। নানা রকম বেজ্ঞানিক জিনিসে ভরপুর সেটা।
প্রফেসর শঙ্কুর সেই বিখ্যাত এনাইহিলিন গানের কথা জানা আছে তো? সেই পিস্তল তাক করে কোনো জীবিত অথবা মৃত প্রাণীর দিকে গুলি ছুঁড়লে মুহতের্র মধ্যেই প্রাণীটা একেবারে ভ্যানিশ হয়ে যায়!
গহীন জঙ্গলের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কিম্ভূতাকার একদল রাক্ষসের মুখোমুখি হলেন তিনি। দেখতে গরিলাদের মতো। কিন্তু সাইজে পাঁচটা গরিলার সমান একেকটা। মাথায় দুটি করে বাঁকানো শিং আর ফলার মতো ধারালো লম্বা লম্বা দুটি করে দাঁত বেরিয়ে আছে গালের দু’পাশ থেকে।
জামিল তাদের কাছাকাছি আসতেই রাক্ষসদের দলনেতা হুংকার দিয়ে উঠল, ‘হাও মাও খাও, মানুষের গন্ধ পাও! আজব তো তোর চেহারা! রাক্ষসের দেশে কোত্থেকে এসে জুটেছিস?’
জামিল তো বুঝে গেছেন ব্যাপারটা, তাই তিনি চালাকি খাটিয়ে বললেন, ‘হাও মাও খাও, রাক্ষসের গন্ধ পাও! আমি ভোক্ষসের দেশ থেকে এসেছি। রাক্ষস ধরে ধরে খাই। হঠাৎ আমাদের দেশে রাক্ষসের আকাল পড়েছে তো, তাই ভাবলাম, যাই ওদেশ থেকে ঘুরে আসি, যদি ওখানে তাগড়া তাগড়া রাক্ষস মেলে। এসে দেখি, এ বাব্বা, এই টুকু টুকু রাক্ষস! তোদের সবকটাকে সাবাড় করে আমার একার ক্ষুধাই মিটবে না। মা-বাবার জন্য বাড়িতে কী নিয়ে যাব?’
জামিলের কথা শুনে রাক্ষসের সর্দার তো রেগে আগুন! বজ্রকণ্ঠে হুংকার ছেড়ে বলল, ‘ব্যাটা! তোর সাহস তো কম নয়, লিলিপুট শরীর নিয়ে কিনা আমাদের বলিস ‘এই টুকু টুকু’! দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা--’ বলে আশেপাশের গাছপালা, ঝোপজঙ্গল থামের মতো মোটা দুটি হাত দিয়ে মুঁচড়িয়ে পাটকাঠির মতো চুরমার করতে লাগল। তার দেখাদেখি অন্য রাক্ষসেরাও শুরু করল তাণ্ডব। তাদের তাণ্ডবে জঙ্গলে ঝড় বয়ে গেল কিছুক্ষণ। তার পর ক্লান্ত হয়ে থামল রাক্ষসেরা। সর্দার জামিলের দিকে ফিরে ফোঁস ফোঁস করে বলল, ‘এবার বুঝেছিস তো ব্যাটা আমরা কত ভয়ংকর!’
‘এর চেয়ে ভোক্ষসরা বেশি ভয়ংকর!’ একটুও ভয় না পেয়ে বললেন জামিল।
‘তবে রে...’ বলে সর্দারের বিশাল দুটি হাত এগিয়ে আসছিল জামিলের গলা লক্ষ্য করে। তিনি আর দেরি করলেন না। এনাইহিলিন গানটা রাক্ষসটার দিকে তাক করে ট্রিগার চেপে দিলেন। মুহূর্তের মধ্যেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল রাক্ষস সর্দার। তাই দেখে অন্য রাক্ষসগুলো পড়িমরি করে ছুটে পালালো। জামিল এগিয়ে চললেন শহরের দিকে।
শহরে যখন পৌঁছালেন, তখন রাত নেমে এসেছে। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। শহরে ঢুকেই জামিল বুঝতে পারলেন, জঙ্গলের ঘটনা ফুঁলে-ফেঁপে দেশময় রাস্ট্র হয়ে গেছে। এক বাড়ির কাঁনাচ দিয়ে যাওয়ার সময় জামিলের কানে এলো-- এক মা তার ছেলেকে ঘুম পাড়াচ্ছে এই বলে-- ‘এদেশে ইয়াবড় এক ভোক্ষস এসেছে। রাক্ষস ধরে ধরে খায়! ভোক্ষসটার দাঁতগুলো নাকি এতা বড় যে এই শহরের এ মাথায় রাখলে ওমাথায় গিয়েও ফুরোবে না!’
জামিল মনে মনে হাসতে হাসতে রাজ-প্রাসাদের দিকে এগোলেন। ‘এখন রাজাকে এমন শিক্ষা দিতে হবে, যাতে ভভিষ্যতে রাক্ষসেরা আর কখোনো মানুষ ধরে না খায়।’ ভাবলেন জামিল।
জামিল দেখলেন ভোক্ষসের ভয়টা রাজ-প্রাসাদেও বেশ প্রভাব ফেলেছে। প্রাসাদের সব আলো নিভিয়ে ফেলা হয়েছে। মূল ফটকটা একেবারে আটোসাঁটো করে লাগানো। পিঁপড়ে পর্যন্ত ঢোকার রাস্তা নেই। প্রহরীরাও কেউ বাইরে দাঁড়াতে সাহস করেনি। ভেতরে বসে পাহারা দিচ্ছে।
জামিল প্রাসাদের ফটকে কড়া নাড়লেন। ভেতর থেকে প্রহরী ভয় পাওয়া গলায় বলল ‘কে-রে?’
‘আমি, তোর যম! রাজাকে ডেকে দে ব্যাটা।’ এপাশ থেকে উত্তর গেল।
রাজা তো প্রথমে ভয়ে আসতেই চায়নি, জামিল তার দলবল ডেকে এনে প্রাসাদ উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিলে অবশেষে মন্ত্রী-সান্ত্রী, পাইক পেয়াদাসহ হাজির হলো। কিন্তু দরজা খুলতে রাজি হলো না। ভয়ের কারণে হুংকার দেয়ার চেষ্টা করেও পারল না রাক্ষসরাজ। তবু চেষ্টাচরিত করে বলল, ‘হাও মাও খাও, কে তুই? কোথা থেকে এসছিস?’
‘হাও মাও খাও, আমি ভোক্ষসের দেশ থেকে এসেছি,’ জামিল বললেন।
‘খাস কি তুই? পান করিস কী?’
‘খাই রাক্ষস, পান করি অমৃত?’
‘দেখা তোর অমৃত।’
ফটকে নজরদারী-ছিদ্রটা খুলে গেল। জামিল ব্যাগের ভেতর থেকে নাইট্রিক এসিডের বোতলটা বের করে ছিদ্র দিয়ে ঢুকিয়ে দিলেন।
বোতলটা শুঁকে রাজামশাই বলল, ‘গন্ধটা তো দারুণ! স্বাদটাও হয়তো অমৃত। খেয়ে দেখো তো মন্ত্রীবর।’
মন্ত্রী ঢকঢক করে গিলে ফেলল সেই তীব্র এসিড। মুহূর্তের মধ্যেই জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে মরে গেল সে।
তা দেখে রাজা বলল, ‘বুঝলাম তোমরা পান করো রাজকীয় রস। এবার তোমার লেজটা দেখাও, বুঝব তোমার আকার কেমন?’
জামিল ফটকের ছিদ্র দিয়ে এক ইঞ্চি মোটা একটা তামার তারের একপ্রান্ত ঝুলিয়ে দিলেন।
‘তোমাদের লেজ এত চিকন?’ ওপাশ থেকে রাজা বলল।
‘কামড়ে দেখো না?’ জামিল বললেন।
কিন্তু পালোয়ান মতো একটা রাক্ষস শত কামড়ে-কুমড়েও তারটা ছিঁড়তে পারল না।
‘মানছি তোমাদের লেজ অতি শক্ত, এবার দাঁতের শক্তি দেখাও। আমি একটা লেজ দিচ্ছি।’
লেজ দিতে কেউ রাজি হচ্ছিল না, অবশেষে রাজার কড়া হুকুমে সিপাহসালার তার লেজটা ছিদ্র দিয়ে বের করে দিল। অমনি জামিল ধারালো চাকু দিয়ে পোঁচ মেরে লেজটা কেটে তাতে একটু লবণ মাখিয়ে দিলেন। সিপাহসালার কাটা লেজে নুনের ছিঁটার যন্ত্রণায় গগণবিদারী একটা চিৎকার দিয়ে বাদরের মতো প্রাসাদের ভেতরে লাফলাফি করতে লাগল।
জামিল বললেন, ‘বুঝেছ রাজামশাই আমি কী জিনিস, তোমাদের সবকটাকে এখন আস্ত আস্ত চিঁবিয়ে খাব!’
রাজা আগেই ভড়কে গেছে, ‘চিঁবিয়ে খাব’ কথাটা শুনে হাউ মাউ করে বলল, ‘দয়া করুন হুজুর, মাফ করে দিন। আপনি যা চান তাই দেব, শুধু আমাদের প্রাণ ভিক্ষা দিন।’
জামিল বললেন, ‘দিতে পারি এক শর্তে, যদি তোমারা আর কোনোদিন মানুষ না খাও, যদি মানুষের আলাদা করে শহর গড়তে দাও, তবেই...’
‘তাই হবে হুজুর। এখন থেকে আমার বুনো ষাঢ়-হাতি মেরে খাব আর মানুষের জন্য দেশের পশ্চিম অংশটা একেবারে ছেড়ে দিলাম।’
‘দেখো কিন্তু, তোমাদের রাজ্যে আমার গুপ্তচর আছে। আর একবার যদি মানুষ খেয়েছ...’
‘আর বলতে হবে না হুজুর, আর ....’
রাক্ষসরাজ হুজুর হুজুর করেই যাচ্ছিল, জামিল নিঃশব্দে সেখান থেকে মহাকাশযানের দিকে পা বাড়ালেন।
*গ্রামীণ লোককাহিনীর সায়েন্সফিকশনীয় রূপ
আবদুল গাফফার রনি
Rasel islam, Raihan khan, Badol hasan, Mr faruk, Rokeya hoq, Asha islam, Rohan Ahmed and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum