- Sk imranনবাগত
- Posts : 2
স্বর্ণমুদ্রা : 1325
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-05
ফ্রিদ্গিয়ার
Sun Jun 06, 2021 12:13 am
নিরিনের আলো জেজোনের কেন্দ্রীয় ভবনটিতে যখন খুব তীব্রভাবে প্রজ্জলন দিতে শুরু করেছে তখন একটি তীব্র সাইরেন সমগ্র জেজোনবাসীদের জন্য সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দিতে শুরু করে কিন্তু ততক্ষণে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ভবনের সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোল; নেটওয়ার্ক হতে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে কোনো একটি অদ্ভুত উপায়ে কিংবা উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মনুষ্যজাতি তাদের সিস্টেম হ্যাকিং করে এই গ্রহে কিছু সময়ের জন্য প্রবেশ করে চলে যায়। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও একটি বিষয়টিতে জেজোনের কেন্দ্রীয় মহল অবাক তা হলো- এতো উন্নত সিকিউরিটি থাকা সত্ত্বেও সিস্টেম হ্যাক হওয়ার ব্যাপারটি নিয়ে। আর তার চেয়েও পুরো জেজোনবাসী বড়ই আশ্চর্য হয়ে যায় কারণ এতো উন্নত সিস্টেম হ্যাক করে পৃথিবীর মানুষেরা এই গ্রহে প্রবেশ করে ঠিকই কিন্তু গ্রহের কিংবা তাদের কোন প্রাণীরই ক্ষতি করেনি। বিষয়টি অবাক করার মতো হলেও এটি নিয়ে কারোর কিছু করার না থাকায় ধীরে-ধীরে বিষয়টিকে সবাই স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে থাকে। কিন্তু জেজোনবাসী তখনো জানে না তাদের জন্য একটি ভয়ঙ্কর দুঃসময় আসতে চলেছে।
জেজোনবাসীর জন্য ভয়াবহ একটি দুঃসময় অতিবাহিত হয়ে চলেছে। পৃথিবী থেকে প্রায় পঁচিশ আলোকবর্ষ দূরের এই গ্রহটিতে কিছু মানুষ বেআইনিভাবে প্রবেশ করে গ্রহটির সমগ্র প্রাণীদের ধ্বংস করার জন্য একটি ভয়াবহ ভাইরাস রেখে যায়। ইতিমধ্যে ভাইরাসটির প্রকোপে প্রায় অর্ধেক গ্রহবাসী নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। ভাইরাসটির বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার জন্য কোনো প্রক্রিয়া আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি বিধায় পর্যাপ্ত গ্রহবাসীর অভাবে ধীরে ধীরে অতি উন্নয়নশীল এই গ্রহটির ভারসাম্য বিলীন হতে থাকে। অবশিষ্টরা অনেক কষ্টে বেঁচে আছে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি গ্রহের ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে সবাই কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়ে, আস্তে আস্তে তারাও হার মেনে নেয় মৃত্যুর কাছে। একসময় ভাইরাসটি পুরো গ্রহের প্রাণীদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়। প্রাণের অস্তিত্ব থাকায় মানুষ বসবাস যোগ্য এই গ্রহটি বেছে নিলেও একসময় গ্রহটির ভারসাম্য পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়।
বিশ বছর আগে (বর্তমান)
এক
আবির তার অনুভূতির মাধ্যমে নিজেকে আবিষ্কার করে একটি হিমশীতল ঘরের ভিতর। নিজ শক্তিতে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও পারলো না; কারণ তার কোনো শরীর নেই । অবশ্য তার মস্তিষ্কের সাথে যেসব অদৃশ্য সেন্সর যুক্ত আছে, সেগুলোর মাধ্যমে সবকিছু উপলব্ধি করতে পারে বলে আসলে ততক্ষণেও আবির বুঝে উঠেনি যে সে এখন কেবলই মস্তিষ্ক ছাড়া আর কিছুই না। সেন্সরগুলোর মাধ্যমে সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে, যে ঘরটিতে অবস্থান করছে তা পুরোটা কাঁচ সদৃশ জিখিল দিয়ে আবৃত। জিখিল হয়ে নিরিনের মৃদু আলো ঢুকে পড়ায় ঘরটি একটু পর পর উজ্জল হয়ে আবার ইস্পিত অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে। ইস্পিত আলোয় উজ্জল হয়ে আবার অন্ধকারে ছেয়ে যাওয়ার ব্যাপারটির সাথে আবির আগে অভ্যস্ত নয়, তাই কোথায় আছে সেটা বোঝার জন্য সে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে আবিষ্কার করে তার মস্তিষ্কের পিছনে একটি তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে। আবির সব কিছু মনে করার চেষ্টা করতে থাকে এবং মনে হতে হতে আরও কিছুক্ষণ সময় লেগে যায়।
তার মনে হতে থাকে, ফিউশনাটর মেসেঞ্জারে- ত্রিমাত্রিক ভাবে অজানা এক ছায়াশরীরির সাথে কথোপকথনে ব্যস্ত ছিলো। নিউরাল নেটওয়ার্কে ছায়া-শরীরির সম্পর্কে কোনো তথ্য না পেয়ে সে যখন বুঝতে পারে যে এটি ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী, তখন একটি চাপা উদ্বেগ আবিরের মাঝে কাজ করে এবং তার এই চাপা উদ্বেগের বিষয়টি ছায়াশরীরি বুঝে যায়, তখন হঠাৎ করে ছায়াশরীরিটি ফিউশনাটর-মেসেঞ্জার থেকে বাহির হয়। এরপর কি ঘটেছিল তা আবিরের জানা নেই।
দুই
আবির শুনতে পারছে তাকে কেউ ডাকছে! দূর থেকে মনে হলেও আসলে শব্দটি আবিরের মস্তিষ্কের ভেতর হতে আসছে।
“আমাদের গ্রহে তোমাকে স্বাগতম। তুমি চেষ্টা করলেও দেখতে পারবে না কিংবা নড়াচড়া করতে পারবে না। তোমার শরীরের পুরো অবয়ব আমরা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি, শুধুমাত্র মস্তিষ্ক ছাড়া। তুমি কেবলমাত্র উপলব্ধি করতে পারবে।”
আবির তার উপলব্ধকর সত্তা দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে, সে বুঝতে পারে তাকে ছায়াশরীরী ডাকছে। কিন্তু ছায়াশরীরি গ্রহের কথা কেন বলছে?
আবির ভাবতে থাকে পৃথিবীতে অবস্থানকালীন সময়ে যখন ছায়াশরীরি তার কাছে আসে এর পূর্ব স্মৃতি নিয়ে, তার উদ্বেগ ছিলো ভিনগ্রহবাসী কোনো প্রাণীকে নিয়ে ল্যাবে একটি রিসার্চ করা এবং সেই রিসার্চের মাধ্যমে সে চেয়েছিল একটি কৃত্রিম এবং অতিদ্রুত মারণশীল কোনো ভাইরাস আবিষ্কার করা যার মাধ্যমে সহজে যে কোন ভিনগ্রহের-প্রাণীদের মেরে ফেলা সম্ভব হয় মুহুর্তের মাঝে। আর এটি সম্ভব হলে মানুষ পেয়ে যাবে পুরো মহাবিশ্বের আধিপত্য এবং প্রযুক্তির দিক থেকে তখন হবে আরো উন্নয়নশীল।
“উদগ্রীব হয়ো না! তুমি কোনো ঘোরের মাঝে নেই। তুমি সত্যিই অন্য একটা গ্রহে আছো এবং আমরা তোমাকে ভিনগ্রহের-প্রাণীদের অবয়বে এখানে এনেছি।”
এক প্রকার হ্যলুসিলেশনের মতো বেখাপ্পা বনে যায় আবির। সে ভাবছে, ভিনগ্রহের প্রাণীরা এই রকম অবয়বহীন, অস্তিত্বহীন, অঙ্গহীন টিলার মতো দেখতে! যদি আগে জানতো তাহলে সে কখনোই এই রিসার্চ নিয়ে ব্যস্ত হতো না। এই অবয়বহীন প্রাণীদের ধ্বংস করতে হলে কোনো প্রকার উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না, বরং শুধু নিট্রাল-মিটারে নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করেই এদের ধ্বংস করা খুব সহজ।
“তোমার ধারণা ভুল! ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে কল্পনা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। আমাদের ভিনগ্রহের প্রাণীদের খালি চোখে দেখা তোমাদের মতো মানুষের লক্ষ-কোটি নিউরনের ভাবনার বাহিরে। আমরা প্রকৃতির নিয়ম মাফিক এতটাই উজ্জ্বল যে আমাদের দেখতে পেলে তোমাদের মতো মানুষ চোখে দেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।” কথাটি বলে একরকম বিদঘুটে ভাবে হাসতে থাকে ছায়াশরীরি যে হাসির সাথে আবির কখনো অভ্যস্ত নয়।
হাসির রোষানল যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে বোঝা যায় এক প্রকার পৈশাচিক আনন্দ পায় ছায়াশরীরি। এমন পৈশাচিক হাসি যদি আবির তার স্বচক্ষে দেখতে পেতো তাহলে সে দেখতো একটি কদাচার কুৎসিত মুখ যা দেখতে প্রচন্ড ঘৃণিত। আবির তার অনুভুতির মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করে ছায়াশরীরির মুখায়বের প্রকৃতি। একটু আগে সে তার নিজস্ব দেহায়বের ভিত্তিতে ভিনগ্রহের প্রাণীদের অতিকায় ক্ষুদ্র কিছু ভেবেছিল। কিন্তু যখন ছায়াশরীরির কাছে জানতে পারে মূল বিষয় তখন আবারো ধাক্কা খায় এই ভেবে যে, সে যা কল্পনায় ভাবছে সব কিছু সেই ছায়াশরীরি জানতে পারছে।
এবার ছায়াশরীরি দৃঢ় কন্ঠে বলে, “ আমি কোন ছায়াশরীরি নই। আমার নাম এনিরন। আমার সাথে যারা আছে তারা আমার সহযোগী এবং তারাও আমার মতো অর্থাৎ বলতে গেলে আমাদের গ্রহের প্রতিটি প্রানীর গঠন একইরকম তবে প্রত্যেকের কোড আলাদা।” কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে, “আমরা তোমার মস্তিষ্কের সাথে ইনভিজিবল-সেন্সর যুক্ত করেছি বলে তোমার চিন্তা-ভাবনাগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।”
এনিরনের কথা শুনে আবির বুঝতে পারে কিছু একটি বিপত্তি ঘটেছে যা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। তাই একপ্রকার শঙ্কিত কণ্ঠে আবির তার অনুভূতি প্রবণ সেন্সরের মাধ্যমে বলে, “আমাকে পুনরায় আমার দেহাবয়ব ফিরিয়ে দেয়া হোক, সে সাথে আমি জানতে চাই আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসা হয়েছে?”
এবারেও আবিরের কথা শুনে এনিরন বিদঘুটে ভাবে হাসতে থাকে। তবে এবারে আবির তার অনুভূতির মাধ্যমে একটু লক্ষ্য করে দেখে, আসলে কেবল এনিরন একা হাসছে না তার সাথে থাকা সকল সহকর্মীবৃন্দ একইভাবে হেসে যাচ্ছে।
এনিরন তীব্রভাবে বলে, “তোমাকে কোনো দেহাবয়বে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না বরং আমরা খুব নিষ্ঠুর যন্ত্রণায় আঘাত করবো এবং ধ্বংস করে দেবো তোমার মস্তিষ্ক।” এরই মধ্যে একটি উচ্চমাত্রার ভয়ংকর তীব্র শক লাগে আবিরের মস্তিষ্কে।
খুব অসহায় বোধ করে আবির। সে জানে এই নরপিশাচদের হাতে তার ভয়ংকর মৃত্যু অবধারিত। এ থেকে পালাবার কোনো পথ নেই। মৃত্যুকে সে খুব কাছে দেখতে পায় অনুভূতি-সেন্সরের মাধ্যমে। আবির মনে করতে থাকে তার পৃথিবীর অতিবাহিত জীবনের কথা। ভাবতে থাকে তার ইমপ্লিকেশন কলোনির কথা।
আবিরের ভাবনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে এনিরন বলে, “আমরা নরপিশাচ নই! নরপিশাচ তুমি এবং তোমার মতো মানুষ যারা কেবল শুধু ধ্বংস ছাড়া কিছুই বোঝে না, যুদ্ধ ছাড়া অন্য কিছু ভাবে না, টিকে থাকার জন্য তোমরা তোমাদের নিজ জাতিগোষ্ঠীর সাথে পর্যন্ত ধ্বংসলীলা করতে একটুও দ্বিধাবোধ করো না। তুমি যেমন মনে করো তোমার বেঁচে থাকার অধিকার আছে তেমনি আমরাও মনে করি আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে।” কিছুক্ষণ থেমে আবারো বলতে থাকে, “আর সেই অধিকারের জন্য তোমরা যেমন বেআইনি কাজ করতে দ্বিধা করো না, তেমনি আমরাও করি না। আর তাই আমরা বেআইনিভাবে পৃথিবী থেকে তোমাকে নিয়ে আসি আমাদের গ্রহে।”
আবির বেঁচে থাকার জন্য শেষবারের মতো বিনয়ের সাথে এনিরনকে প্রশ্ন করে, “আশা করি বর্তমান নিউরাল নেটওয়ার্কে বিনা কারণে কাউকে মেরে ফেলার আইন নেই এবং এই সম্পর্কে তোমরা অবগত। এখনো তোমাদের সাথে খারাপ কিছু হয় নি, তোমরা বেঁচে আছো; তাহলে কেন আমাকে অকারণে মেরে ফেলবে?”
“তুমি মনে হয় মনুষ্যদের দেওয়া এই আইন সম্পর্কে জেনে থাকবে- কাউকে হত্যা করার জন্য কেউ পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে থাকে আর যদি তা আইনগত ভাবে ধরা পড়ে তাহলে তাকে যথাযোগ্যভাবে অনেক হিসেব প্রদান করতে হয়। কিন্তু তোমার জন্য আমরা সবাই নিঃশেষের পথে, তাই আমরা তোমাকে ধ্বংস করে দিতে চাই” শেষ বাক্যটি একটু দৃঢ়কন্ঠে বলে এনিরন।
এনিরনের কথাটি শুনে আবির বুঝতে পারে না। কিন্তু আবির তার অনুভূতির মাধ্যমে বুঝতে পারে এনিরন খুব আহত এবং অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে কথাটি বলেছে। তাই সে জানতে চায়, “আমি কিভাবে তোমাদের ক্ষতির জন্য দায়ী?”
তার আবিষ্কৃত ভাইরাসের প্রসঙ্গ বলতে থাকে এনিরন, এবং ভবিষ্যতে তাদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া গ্রহটির কথা। কথাগুলো শেষ হলে আবির তার অনুভূতির মাধ্যমে বুঝতে পারে ভিনগ্রহের এই প্রাণীগুলো কতটা অসহায়। কিন্তু আবিরের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে তাকে একটি যন্ত্রণার মুহূর্ত উপহার দেয় এনিরন। আবিরের মনে হতে থাকে, পৃথিবীর সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক মুহূর্তগুলোও এই যন্ত্রণার চেয়ে আরামদায়ক। এক প্রকার নারকীয় আনন্দ খেলে যায় এনিরনের মাঝে; আবির কে নরপিশাচ-র মতো মেরে ফেলাতে। ভয়ানক এই যন্ত্রণার মুহূর্তে মাঝে এনিরন এবং তার সহকর্মীবৃন্দগণ দেখতে থাকে আবিরের মস্তিষ্কের সাথে ইনকানেক্টেড-সেন্সরগুলো ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠে পিশাচ যন্ত্রণার আঁচটুকু বুঝিয়ে দিচ্ছে। আবিরের মুখ আর কথা বলার ক্ষমতা থাকলে তার চিৎকার প্রতিধ্বনিত হতো এই বদ্ধ জিখিলের ঘরটির মধ্যে। আবির তার মস্তিষ্কের মধ্যেই “না…” বলে নিঃশব্দ চিৎকার করতে থাকে, এনিরনের পৈশাচিক হাসির মাত্রা বেড়ে যেতে থাকে, সেই সাথে যন্ত্রণার মাত্রাও বাড়তে থাকে আবিরের মস্তিষ্কে।
তিন
আবির ভাবতে থাকে-ফ্রিদ্গিয়ারে কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে। তা না হলে সে কেন এমন বিভীষিকাময় ভবিষ্যত দেখবে ফ্রিদ্গিয়ারে? অত্যাধুনিকতার যুগে এই প্রযুক্তি ‘ফ্রিদ্গিয়ার’ পঁচিশ শতাব্দীর প্রযুক্তির চেয়ে অনেকটা এগিয়ে বলে অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তির দ্বারা কোনো ভুল কিছু আশা করা বলতে গেলে অনেকটাই হাস্যরসাত্মক ব্যাপারের মতো। কিন্তু তারপরেও আবিরের মনে হতে থাকে ফ্রিদ্গিয়ারে কোথাও যেন সমস্যা হয়েছে।
ফ্রিদ্গিয়ার এমন একটি আবিষ্কার যা বর্তমান মানুষের জন্য আশীর্বাদ এবং অতীতের মানুষদের জন্য হিংসা করার মত একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। মানুষ তার মনের ইচ্ছা নিয়ে ফ্রিদ্গিয়ারে প্রবেশ করে, এর ভিতরে অবস্থান করে শয়ন করার পর যখন মস্তিষ্ক ও দেহের অনুভূতির সাথে এর কমান্ডিং সিস্টেমের মাধ্যমে ইনকানেক্টেড সেন্সর মস্তিষ্কের সাথে সংযুক্ত হয় তখন থেকে শুরু হয় মনের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আবেগ-অনুভূতির বিশ্লেষণ পর্ব। বিশ্লেষণ শুরু হলে এটা মানুষকে চতুর্মাত্রিক দুনিয়ায় নিয়ে যায়, শুরু হয় স্বপ্ন ও বাস্তবতার কাল্পনিক দুনিয়ায় পদার্পণ; যেন মনে হয় সত্যি বাস্তবে হারিয়ে যাওয়া। জীবনের আঙ্গিক এবং আসন্ন বাস্তবতাকে নিয়ে যখন কল্পনার বিভোরে মানুষ ফ্রিদ্গিয়ারে হারিয়ে যায় তখন কল্পনার রাজ্যে নিজেকে রাজা বলে মনে হয় এখানে। তার জন্যই এটি শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে বর্তমান সব প্রযুক্তির মধ্য হতে। কারণ, বর্তমান অতি উন্নয়শীল এই যুগে মানুষ স্বাচ্ছন্দে কোনো মস্তিষ্ক উত্তেজক পানীয় ছাড়াই কল্পনার রাজ্যে থেকে অবাধে সত্যিকার অর্থে বিচরণ করতে পারে।
তাই ফ্রিদ্গিয়ারে ভুল কোন ভাবেই আবির মেনে নিতে পারছে না, আবার তার কাছে এটি ভুল বলে ধারণা হলেও একটি চাপা ভয় তার ভিতরে তখনো কাজ করতে থাকে। আবির জানে সে যেই বিভোরে হারিয়ে গিয়েছিল তা ফ্রিদ্গিয়ারে অবস্থিত সময়-পরিক্রমায় আসন্ন ভবিষ্যৎ কে নির্দেশ করছে কিন্তু কখন কোন সময় ফ্রিদ্গিয়ারে হওয়া এমনটি ঘটবে তার সাথে তা জানা নেই। আবার এই ঘটনা তার জন্য একপ্রকার অভিশাপ স্বরূপ । যেহেতু এমন ভয়ংকর ঘটনা সত্যিকার অর্থেই তার জীবনে ঘটবে তাই নিজের ভয়ঙ্কর ঘটনা পর্যবেক্ষন করে সে ভাবতে থাকে, তার ভাইরাস আবিষ্কার বিষয়টি নষ্ট করে দিতে হবে। তাহলে হয়তো আসন্ন বিভীষিকার রূপ রেখা থাকবে না এবং সেখানে হয়তো কোন স্মৃতি-বিস্মৃতি থাকবেনা অথবা দেখা যাবে সবকিছু ঠিক থাকলে শেষ সুযোগ হিসেবে পৃথিবীতে ফিরে এসে নিজেকে নতুন ভাবে তৈরি করে নিবে এবং নতুন ভাবে জীবনের পথ চলা শুরু করবে।
ফ্রিদ্গিয়ারে বেশিক্ষণ থাকা শরীর এবং স্বাস্থের জন্য অনেকটা ক্ষতিকর। মাত্র কিছুক্ষণের জন্য এই অসাধারণ প্রযুক্তি মানুষকে কোন প্রকার উত্তেজক পানীয় ছাড়াই অনেক বিনোদন প্রদান করে থাকে ঠিকই কিন্তু সবকিছুর যেমন ভালো দিক আছে তেমনি অতি উন্নয়নশীল এই প্রযুক্তিরও খারাপ দিক রয়েছে। ভাল দিকটি যেমন নির্ভর করে কোন বস্তুর গুণগত মানের উপর তেমনি খারাপ দিকটিও নির্ভর করে সেই বস্তুর গুণগত মানের বিপরীত বিষয়টির উপর। আবির তাই ফ্রিদ্গিয়ার থেকে বের হয়ে বিষণ্ণ মনে তার বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকে। সন্ধ্যের আঁধার প্রায় হবে হবে এমন অবস্থা, বিষয়টি আবির খুব মনোযোগের সহিত খেয়াল করলো কিনা তা ঠিক বোঝা গেল না! সে শুধু ভাবতে থাকে তার বিভীষিকাময় ভবিষ্যত স্বপ্নের ঘটনাটি। অনেক চেষ্টা করেও সে জোর করে তার মাথা থেকে ব্যাপারটি কোনভাবেই সরিয়ে দিতে পারছে না।
সাথে থাকা জেটবাইকটার কথা প্রায় ভুলেই যায় আবির। কাজের সুবিধার্থে ন্যানো টেকনোলজির মাধ্যমে এটি পকেটে পরিবহন যোগ্য যার মাধ্যমে খুব দ্রুত এবং প্রায় সেকেন্ডের মধ্যেই কয়েকশো মিটার অতিক্রম করা যায়। এমন একটি দ্রুতগামী-যান থাকা সত্ত্বেও সে হেঁটে যেতে থাকে, এরই মধ্যে জোনাকিদের আলো-আঁধারী ব্যাপারটি শুরু হয়ে যায় কিন্তু আবির খুব অল্প ভাবে জোনাকিদের বিষয়টি খেয়াল করে। তার বাসার উদ্দেশ্যে যেতে থাকা পথটির প্রায় শেষ প্রান্তে একটি বড় এবং খোলা মাঠ অতিক্রম করে যেতে হয়। যখন সে খোলা মাঠে প্রবেশ করলো তখন হঠাৎ খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করতে থাকে- তারা ভরা রাত, জোনাকিদের মিটমিটি আলো তার সাথে পূর্ণিমার অবলীলা যেন আপামর অপরূপা পুরো প্রকৃতি জুড়ে বিরাজ করছে। আবিরের অবচেতন মন হঠাৎ করে বলে উঠে, প্রকৃতির এহেনরূপ গত বিশ যুগে বেঁচে থেকেও সে এমনটা কখনো পায়নি, তাহলে কি আজকের প্রকৃতির এমন রূপ তার জন্য কিছু বিশেষ মুহূর্ত নাকি এর অন্তরালে কিছু লুকিয়ে আছে রহস্যের অন্য বেড়াজাল?
প্রকৃতির এই রহস্যের বেড়াজাল ছেদ করার জন্য আবির যখন গভীর চিন্তায় পড়তে থাকে তখন সে সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারে একটি বিশেষ মুহূর্ত হয়তো তার জন্য আসতে চলেছে কিন্তু কী সেই মুহূর্ত তা সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারে না। আস্তে আস্তে যখন মাঠের অন্যপাশে তার বাসার বেলকনির নীল রঙের লম্বা রেলিংগুলো দেখা যেতে শুরু করে তখন হঠাৎ দূর আকাশে একটি ক্ষিণ শব্দ শুনে উপরে তাকায় আবির। এবং দেখতে পায় দূর হতে একটি অস্পষ্ট আলো ক্রমান্বয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। প্রথমে একে গুরুত্ব না দিলেও তার থেকে যখন প্রায় কাছে আলোটি স্পষ্টতর হতে থাকে তখন বুঝতে দেরি হয় না যে আসলে এটি একটি ফ্লাইং-সসার এবং এটি তার দিকেই এগিয়ে আসছে। আবির সবকিছু বুঝতে পেরে দৌড় দিতে চাইলে সে নিজেকে আবিষ্কার করে তার দুটো-পা কোনোভাবে সামনের দিকে সঞ্চালনের শক্তি পায় না। প্রায় কয়েক মুহূর্ত এভাবে অতিক্রমের পর সে দেখতে পায় একগুচ্ছ আলো তার মাথার উপর এসে পরে এবং এরই সাথে শূন্যে ভাসতে শুরু করে। আলো বরাবর সসারটির ফটকের কাছাকাছি আসতেই আবির জোরে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে, “আমাকে ছেড়ে দাও, আমার আবিষ্কারকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবো, আমাকে ছেড়ে দাও।”
চার
ব্লিপ-ব্লিপ শব্দে প্রচন্ড জোরে ফিউশনাটর-মেসেঞ্জারে শব্দ হতে থাকে। আবির শব্দের তীব্রতায় ঘুম থেকে জেগে উঠে। সে দেখতে পায় ছায়াশরীরিটি তার সিগন্যাল-সিস্টেমে ফ্রিকোয়ন্সি মাত্রা বাড়িয়ে তাকে সিগন্যাল দিয়ে যাচ্ছে আর তাই শব্দের তীব্রতায় আবিরের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
ছায়াশরীরিটি আবিরের এমন অবস্থা দেখে তাকে বলে, “আমি অনেকক্ষণ থেকে তোমাকে সিগন্যাল দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তুমি ঘুমের মধ্যে কী সব হিজিবিজি কথা বলেই যাচ্ছো। আর এখন এত জোরে আমাকে ছেড়ে দাও বলে চিৎকার করলে যে আমি নিজেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই বাধ্য হয়ে আমার এখান থেকে ফ্রিকোয়েন্সি বাড়িয়েছি। এজন্য তৃতীয় মাত্রার অপরাধ করে ফেলেছি।”
একপ্রকার বিস্ময় নিয়ে আবির তাকিয়ে থাকে ছায়াশরীরিটির দিকে। সে তখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারে না যে সে এখনো বেঁচে আছে। বিস্ময় নিয়ে ছায়াশরীরিকে বলে, “এনিরন! তুমি? আমি কি সত্যি বেঁচে আছি?”
এবারে ছায়াশরীরি অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে, “কে এনিরন? আর এসব তুমি কি বলছ?”
আবির আবারো ধাক্কা খাওয়ার মতো বনে যায়। এক মুহূর্তের জন্য সে কিছুই বুঝতে পারে না, তাই আবারো বলে, “তুমি এনিরন। আমাকে হত্যা করার জন্য এসেছ। আমার ভুল হয়েছে, আমাকে মেরো না প্লিজ!”
“আমি তোমার এরিন, আবির! তুমি এখন নোভা-অভিযানে আছ বলে মেসেঞ্জারে আমাদের কথা হয়। আমাকে আদর করে নাম দিয়েছ ছায়াশরীরি, কারণ আমাকে নাকি ছায়া-মূর্তির মত লাগে মেসেঞ্জারে। আর এখন আমি এনিরন হয়ে গেলাম?” ছায়াশরীরি অভিমানের সুরে বলতে থাকে।
এবারেও আবির বুঝতে না পেরে কিছুক্ষণ ভাবতে থাকে এবং তখন তার সবকিছু মনে পড়তে শুরু করে। তার মনে পরে কেপলার-২২বির উদ্দেশ্যে নোভায় করে পৃথিবী থেকে বিদায় হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পেরিয়েছে। এরই মাঝে পৃথিবীতে কত বছর অতিবাহিত হয়েছে তা জানা নেই। সবকিছু মনে পড়ার পর আবির খেয়াল করে তার এরিনের চোখের কোণে ইতোমধ্যে কিছুটা অশ্রু এসে জমা হয়েছে। আবির বুঝতে পারে মেয়েটা অনেক অভিমান করেছে তার উপর, একটু উল্টো-পাল্টা কিছু হলেই কান্না শুরু করে দেয় মেয়েটি।
“এরিন! আমি দুঃখিত, বুঝতে পারিনি। আমি খুব দুঃখিত তার জন্য।” কথাটি বলা শেষে আবির দেখতে পায় চোখের কোণে হাত দিয়ে জল মুছতে থাকে এরিন, কি সুন্দর ভাবে কাজটি করলো সে। এটি দেখে আবিরের ভিতর একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতে থাকে।
“তুমি আবার কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছো, তাই না?” এরিন অনেকটা নিশ্চিত ভাবে কথাটি বলে।
“হ্যাঁ। তুমি ঠিক ধরেছ।”
“আমাকে বলবে তোমার দুঃস্বপ্নের কথাটি?” কথাটিতে অভিযোগের সুর রয়েছে যা আবির স্পষ্ট বুঝতে পারল। আবির জানে এখন সেই দুঃস্বপ্নের বর্ণনা তাকে দিতেই হবে।
আবির বলতে থাকে তার দুঃস্বপ্নের কথা। কিভাবে একটি গ্রহের জিখিল নামক কাঁচের মতো ঘরে তাকে আঁটকে রাখা হয়, সেখানে তার দেহের কোন অবয়ব নেই, এরিন-এনিরন হয়ে কিভাবে তার মস্তিষ্ককে নরকের মতো পৈশাচিক যন্ত্রণা দিতে থাকে, এনিরন থেকে জানতে পারে তার একটি ভয়াবহ ভাইরাস আবিষ্কারের জন্য তাদের গ্রহটি কিভাবে ভবিষ্যতে ধ্বংস হয়ে যায়! তাই এই আবিষ্কারকে ধ্বংস করার জন্য তাকে মেরে ফেলতে চায় যাতে করে ভবিষ্যতে তাদের গ্রহটির অস্তিত্ব টিকে থাকে এবং পরক্ষণে হঠাৎ সে নিজেকে আবিষ্কার করে ফ্রিদ্গিয়ার নামক একটি উন্নত প্রযুক্তি-তে, সেই যন্ত্রে তার বিভিষীকাময় ভবিষ্যতের স্বপ্নটির কথা বলে, শেষবারের মতো বাঁচতে চায় বলে তার আবিষ্কারের কিছু নমুনা এবং পুরো বিষয়টি ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে যায় কিন্তু সে পারেনা তার আগেই কিভাবে দূরের আকাশ থেকে একটি ফ্লাইং-সসার আসে।
আবিরের কথাগুলো শুনে একমুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় এরিন। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রেখে সে বলে, “এমন উদ্ভট স্বপ্ন ছাড়া তুমি আর কোনো স্বপ্ন দেখতে পারো না?” কিছুটা থেমে আবার অভিমানের সুরে বলে, “তুমি নিশ্চই আমার সম্পর্কে এমন ভাবো, তাই তোমার স্বপ্নে আমি এমন রুপে এসেছি।” এর পর আবার তার চোখে জল জমতে শুরু করে।
আবির কী করবে কিছুই বুঝতে পারে না। এরিনের মুখের দিকে তাকালেই তার ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। তাই সে না পেরে বলতে থাকে, “আমি তোমার সম্পর্কে এমন কিছুই কল্পনা করিনি। তোমাকে নিয়ে এমন স্বপ্ন দেখবো তা আমি ভাবতেও পারিনি।” আবির কিভাবে গুছিয়ে কথাগুলো বলবে তা বুঝতে পারে না, তাই একমুহূর্ত ভেবে সে অনুগ্রহের সুরে এবারে বলে, “আমাকে ক্ষমা করো! আমি এখনো বেঁচে আছি, এই জন্য আমাকে ক্ষমা করো।”
এবারে কাজ হয়েছে। আবির দেখে তার প্রেয়সী চোখের জল মুছতে থাকে ঠিক আগের ভঙ্গিতে আর তাতে করে তার মায়া আরও বেড়ে যায়। মেয়েটিকে যতই দেখে ততই আবির নতুনভাবে তাঁর সৌন্দর্য খুঁজে পায়। আবিরের কথায় কাজ হয়েছে, তাই এরিন এবারে বলতে থাকে, “তোমার হিমঘরে যাওয়ার সময় হয়েছে। আশা করি আবার তোমাকে অনেক দিন পর দেখতে পারবো।”
এরিনের কথাটি শুনে আবির হিমঘরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। সবকিছু শেষে এরিনের কাছে বিদায় নিয়ে সিগন্যাল বন্ধ করে দেয়। সিগন্যাল বন্ধ করার আগ পর্যন্ত আবির এরিনের চোখের কোণে কিঞ্চিত জল দেখতে পায়।
আবিরকে শেষ বিদায় দিয়ে এরিন ভাবতে থাকে, আবিরের দেখা স্বপ্নটি আসলে কোন দুঃস্বপ্ন নয়। এরিন সত্যি আবিরের স্বপ্নে দেখা এনিরন। সে সত্যিকারার্থে একজন ভিনগ্রহের প্রাণী কিন্তু এই সম্পর্কে আবির জানে না। এরিন তাকে জানাতেও চায় না। একটি মানুষ কেবল মাত্র বেঁচে থাকার জন্য যেভাবে শেষ পর্যন্ত নিজেকে পরিবর্তন করে নতুনভাবে বাঁচতে চেয়েছে তা এনিরন এবং তার সহকারীবৃন্দদের বিমোহিত করেছে। তাই তারা আবিরকে বেঁচে থাকার শেষ অধিকারটুকু দিয়ে দেয়, সে সাথে আবিরের পরিবর্তনের ব্যাপারটি এনিরনের কাছে অনেক ভালো লাগে। ভালো লাগা ব্যাপারটি অদ্ভুত এক বিষয়, এজন্য এনিরন আবিরের সাথে সারাজীবন থাকতে চায় এভাবে। তাই সেদিন ফ্লাইং-সসারে করে এনিরন এবং আবির আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে কিন্তু আবিরের মস্তিষ্কে থাকা এইসকল স্মৃতি মুছে ফেলে এনিরন। তাই আবির এখনো জানে না তার এরিন একজন ভিনগ্রহের প্রাণী এবং তার স্বপ্নে দেখা ঘটনাটি সত্যি।
আবিরের স্মৃতি মুছে গেলেও তার অবচেতন মন বিষয়টি ধরে রেখেছে বলেই হয়তো ভবিষ্যতে আবার কোন একদিন এই স্বপ্ন দেখবে আবির, আবার হয়তো তাদের দুজনের মাঝে এমন অভিমান শুরু হবে, আবার হয়তো এভাবেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
সমাপ্ত
মো. হাসানুল হক বান্না
জেজোনবাসীর জন্য ভয়াবহ একটি দুঃসময় অতিবাহিত হয়ে চলেছে। পৃথিবী থেকে প্রায় পঁচিশ আলোকবর্ষ দূরের এই গ্রহটিতে কিছু মানুষ বেআইনিভাবে প্রবেশ করে গ্রহটির সমগ্র প্রাণীদের ধ্বংস করার জন্য একটি ভয়াবহ ভাইরাস রেখে যায়। ইতিমধ্যে ভাইরাসটির প্রকোপে প্রায় অর্ধেক গ্রহবাসী নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। ভাইরাসটির বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার জন্য কোনো প্রক্রিয়া আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি বিধায় পর্যাপ্ত গ্রহবাসীর অভাবে ধীরে ধীরে অতি উন্নয়নশীল এই গ্রহটির ভারসাম্য বিলীন হতে থাকে। অবশিষ্টরা অনেক কষ্টে বেঁচে আছে। নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার পাশাপাশি গ্রহের ভারসাম্য বজায় রাখার ব্যাপারে সবাই কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়ে, আস্তে আস্তে তারাও হার মেনে নেয় মৃত্যুর কাছে। একসময় ভাইরাসটি পুরো গ্রহের প্রাণীদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়। প্রাণের অস্তিত্ব থাকায় মানুষ বসবাস যোগ্য এই গ্রহটি বেছে নিলেও একসময় গ্রহটির ভারসাম্য পুরোপুরি বিলীন হয়ে যায়।
বিশ বছর আগে (বর্তমান)
এক
আবির তার অনুভূতির মাধ্যমে নিজেকে আবিষ্কার করে একটি হিমশীতল ঘরের ভিতর। নিজ শক্তিতে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও পারলো না; কারণ তার কোনো শরীর নেই । অবশ্য তার মস্তিষ্কের সাথে যেসব অদৃশ্য সেন্সর যুক্ত আছে, সেগুলোর মাধ্যমে সবকিছু উপলব্ধি করতে পারে বলে আসলে ততক্ষণেও আবির বুঝে উঠেনি যে সে এখন কেবলই মস্তিষ্ক ছাড়া আর কিছুই না। সেন্সরগুলোর মাধ্যমে সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে, যে ঘরটিতে অবস্থান করছে তা পুরোটা কাঁচ সদৃশ জিখিল দিয়ে আবৃত। জিখিল হয়ে নিরিনের মৃদু আলো ঢুকে পড়ায় ঘরটি একটু পর পর উজ্জল হয়ে আবার ইস্পিত অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে। ইস্পিত আলোয় উজ্জল হয়ে আবার অন্ধকারে ছেয়ে যাওয়ার ব্যাপারটির সাথে আবির আগে অভ্যস্ত নয়, তাই কোথায় আছে সেটা বোঝার জন্য সে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে আবিষ্কার করে তার মস্তিষ্কের পিছনে একটি তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছে। আবির সব কিছু মনে করার চেষ্টা করতে থাকে এবং মনে হতে হতে আরও কিছুক্ষণ সময় লেগে যায়।
তার মনে হতে থাকে, ফিউশনাটর মেসেঞ্জারে- ত্রিমাত্রিক ভাবে অজানা এক ছায়াশরীরির সাথে কথোপকথনে ব্যস্ত ছিলো। নিউরাল নেটওয়ার্কে ছায়া-শরীরির সম্পর্কে কোনো তথ্য না পেয়ে সে যখন বুঝতে পারে যে এটি ভিনগ্রহের কোনো প্রাণী, তখন একটি চাপা উদ্বেগ আবিরের মাঝে কাজ করে এবং তার এই চাপা উদ্বেগের বিষয়টি ছায়াশরীরি বুঝে যায়, তখন হঠাৎ করে ছায়াশরীরিটি ফিউশনাটর-মেসেঞ্জার থেকে বাহির হয়। এরপর কি ঘটেছিল তা আবিরের জানা নেই।
দুই
আবির শুনতে পারছে তাকে কেউ ডাকছে! দূর থেকে মনে হলেও আসলে শব্দটি আবিরের মস্তিষ্কের ভেতর হতে আসছে।
“আমাদের গ্রহে তোমাকে স্বাগতম। তুমি চেষ্টা করলেও দেখতে পারবে না কিংবা নড়াচড়া করতে পারবে না। তোমার শরীরের পুরো অবয়ব আমরা নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি, শুধুমাত্র মস্তিষ্ক ছাড়া। তুমি কেবলমাত্র উপলব্ধি করতে পারবে।”
আবির তার উপলব্ধকর সত্তা দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে, সে বুঝতে পারে তাকে ছায়াশরীরী ডাকছে। কিন্তু ছায়াশরীরি গ্রহের কথা কেন বলছে?
আবির ভাবতে থাকে পৃথিবীতে অবস্থানকালীন সময়ে যখন ছায়াশরীরি তার কাছে আসে এর পূর্ব স্মৃতি নিয়ে, তার উদ্বেগ ছিলো ভিনগ্রহবাসী কোনো প্রাণীকে নিয়ে ল্যাবে একটি রিসার্চ করা এবং সেই রিসার্চের মাধ্যমে সে চেয়েছিল একটি কৃত্রিম এবং অতিদ্রুত মারণশীল কোনো ভাইরাস আবিষ্কার করা যার মাধ্যমে সহজে যে কোন ভিনগ্রহের-প্রাণীদের মেরে ফেলা সম্ভব হয় মুহুর্তের মাঝে। আর এটি সম্ভব হলে মানুষ পেয়ে যাবে পুরো মহাবিশ্বের আধিপত্য এবং প্রযুক্তির দিক থেকে তখন হবে আরো উন্নয়নশীল।
“উদগ্রীব হয়ো না! তুমি কোনো ঘোরের মাঝে নেই। তুমি সত্যিই অন্য একটা গ্রহে আছো এবং আমরা তোমাকে ভিনগ্রহের-প্রাণীদের অবয়বে এখানে এনেছি।”
এক প্রকার হ্যলুসিলেশনের মতো বেখাপ্পা বনে যায় আবির। সে ভাবছে, ভিনগ্রহের প্রাণীরা এই রকম অবয়বহীন, অস্তিত্বহীন, অঙ্গহীন টিলার মতো দেখতে! যদি আগে জানতো তাহলে সে কখনোই এই রিসার্চ নিয়ে ব্যস্ত হতো না। এই অবয়বহীন প্রাণীদের ধ্বংস করতে হলে কোনো প্রকার উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন হবে না, বরং শুধু নিট্রাল-মিটারে নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করেই এদের ধ্বংস করা খুব সহজ।
“তোমার ধারণা ভুল! ভিনগ্রহের প্রাণীদের সম্পর্কে কল্পনা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে। আমাদের ভিনগ্রহের প্রাণীদের খালি চোখে দেখা তোমাদের মতো মানুষের লক্ষ-কোটি নিউরনের ভাবনার বাহিরে। আমরা প্রকৃতির নিয়ম মাফিক এতটাই উজ্জ্বল যে আমাদের দেখতে পেলে তোমাদের মতো মানুষ চোখে দেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবে।” কথাটি বলে একরকম বিদঘুটে ভাবে হাসতে থাকে ছায়াশরীরি যে হাসির সাথে আবির কখনো অভ্যস্ত নয়।
হাসির রোষানল যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে বোঝা যায় এক প্রকার পৈশাচিক আনন্দ পায় ছায়াশরীরি। এমন পৈশাচিক হাসি যদি আবির তার স্বচক্ষে দেখতে পেতো তাহলে সে দেখতো একটি কদাচার কুৎসিত মুখ যা দেখতে প্রচন্ড ঘৃণিত। আবির তার অনুভুতির মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করে ছায়াশরীরির মুখায়বের প্রকৃতি। একটু আগে সে তার নিজস্ব দেহায়বের ভিত্তিতে ভিনগ্রহের প্রাণীদের অতিকায় ক্ষুদ্র কিছু ভেবেছিল। কিন্তু যখন ছায়াশরীরির কাছে জানতে পারে মূল বিষয় তখন আবারো ধাক্কা খায় এই ভেবে যে, সে যা কল্পনায় ভাবছে সব কিছু সেই ছায়াশরীরি জানতে পারছে।
এবার ছায়াশরীরি দৃঢ় কন্ঠে বলে, “ আমি কোন ছায়াশরীরি নই। আমার নাম এনিরন। আমার সাথে যারা আছে তারা আমার সহযোগী এবং তারাও আমার মতো অর্থাৎ বলতে গেলে আমাদের গ্রহের প্রতিটি প্রানীর গঠন একইরকম তবে প্রত্যেকের কোড আলাদা।” কিছুক্ষণ থেমে আবার বলে, “আমরা তোমার মস্তিষ্কের সাথে ইনভিজিবল-সেন্সর যুক্ত করেছি বলে তোমার চিন্তা-ভাবনাগুলো আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।”
এনিরনের কথা শুনে আবির বুঝতে পারে কিছু একটি বিপত্তি ঘটেছে যা এখনো বুঝে উঠতে পারেনি। তাই একপ্রকার শঙ্কিত কণ্ঠে আবির তার অনুভূতি প্রবণ সেন্সরের মাধ্যমে বলে, “আমাকে পুনরায় আমার দেহাবয়ব ফিরিয়ে দেয়া হোক, সে সাথে আমি জানতে চাই আমাকে এখানে কেন নিয়ে আসা হয়েছে?”
এবারেও আবিরের কথা শুনে এনিরন বিদঘুটে ভাবে হাসতে থাকে। তবে এবারে আবির তার অনুভূতির মাধ্যমে একটু লক্ষ্য করে দেখে, আসলে কেবল এনিরন একা হাসছে না তার সাথে থাকা সকল সহকর্মীবৃন্দ একইভাবে হেসে যাচ্ছে।
এনিরন তীব্রভাবে বলে, “তোমাকে কোনো দেহাবয়বে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না বরং আমরা খুব নিষ্ঠুর যন্ত্রণায় আঘাত করবো এবং ধ্বংস করে দেবো তোমার মস্তিষ্ক।” এরই মধ্যে একটি উচ্চমাত্রার ভয়ংকর তীব্র শক লাগে আবিরের মস্তিষ্কে।
খুব অসহায় বোধ করে আবির। সে জানে এই নরপিশাচদের হাতে তার ভয়ংকর মৃত্যু অবধারিত। এ থেকে পালাবার কোনো পথ নেই। মৃত্যুকে সে খুব কাছে দেখতে পায় অনুভূতি-সেন্সরের মাধ্যমে। আবির মনে করতে থাকে তার পৃথিবীর অতিবাহিত জীবনের কথা। ভাবতে থাকে তার ইমপ্লিকেশন কলোনির কথা।
আবিরের ভাবনার ব্যাঘাত ঘটিয়ে এনিরন বলে, “আমরা নরপিশাচ নই! নরপিশাচ তুমি এবং তোমার মতো মানুষ যারা কেবল শুধু ধ্বংস ছাড়া কিছুই বোঝে না, যুদ্ধ ছাড়া অন্য কিছু ভাবে না, টিকে থাকার জন্য তোমরা তোমাদের নিজ জাতিগোষ্ঠীর সাথে পর্যন্ত ধ্বংসলীলা করতে একটুও দ্বিধাবোধ করো না। তুমি যেমন মনে করো তোমার বেঁচে থাকার অধিকার আছে তেমনি আমরাও মনে করি আমাদের বেঁচে থাকার অধিকার আছে।” কিছুক্ষণ থেমে আবারো বলতে থাকে, “আর সেই অধিকারের জন্য তোমরা যেমন বেআইনি কাজ করতে দ্বিধা করো না, তেমনি আমরাও করি না। আর তাই আমরা বেআইনিভাবে পৃথিবী থেকে তোমাকে নিয়ে আসি আমাদের গ্রহে।”
আবির বেঁচে থাকার জন্য শেষবারের মতো বিনয়ের সাথে এনিরনকে প্রশ্ন করে, “আশা করি বর্তমান নিউরাল নেটওয়ার্কে বিনা কারণে কাউকে মেরে ফেলার আইন নেই এবং এই সম্পর্কে তোমরা অবগত। এখনো তোমাদের সাথে খারাপ কিছু হয় নি, তোমরা বেঁচে আছো; তাহলে কেন আমাকে অকারণে মেরে ফেলবে?”
“তুমি মনে হয় মনুষ্যদের দেওয়া এই আইন সম্পর্কে জেনে থাকবে- কাউকে হত্যা করার জন্য কেউ পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে থাকে আর যদি তা আইনগত ভাবে ধরা পড়ে তাহলে তাকে যথাযোগ্যভাবে অনেক হিসেব প্রদান করতে হয়। কিন্তু তোমার জন্য আমরা সবাই নিঃশেষের পথে, তাই আমরা তোমাকে ধ্বংস করে দিতে চাই” শেষ বাক্যটি একটু দৃঢ়কন্ঠে বলে এনিরন।
এনিরনের কথাটি শুনে আবির বুঝতে পারে না। কিন্তু আবির তার অনুভূতির মাধ্যমে বুঝতে পারে এনিরন খুব আহত এবং অনেকটা ক্ষোভ নিয়ে কথাটি বলেছে। তাই সে জানতে চায়, “আমি কিভাবে তোমাদের ক্ষতির জন্য দায়ী?”
তার আবিষ্কৃত ভাইরাসের প্রসঙ্গ বলতে থাকে এনিরন, এবং ভবিষ্যতে তাদের নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া গ্রহটির কথা। কথাগুলো শেষ হলে আবির তার অনুভূতির মাধ্যমে বুঝতে পারে ভিনগ্রহের এই প্রাণীগুলো কতটা অসহায়। কিন্তু আবিরের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে তাকে একটি যন্ত্রণার মুহূর্ত উপহার দেয় এনিরন। আবিরের মনে হতে থাকে, পৃথিবীর সবচেয়ে যন্ত্রণাদায়ক মুহূর্তগুলোও এই যন্ত্রণার চেয়ে আরামদায়ক। এক প্রকার নারকীয় আনন্দ খেলে যায় এনিরনের মাঝে; আবির কে নরপিশাচ-র মতো মেরে ফেলাতে। ভয়ানক এই যন্ত্রণার মুহূর্তে মাঝে এনিরন এবং তার সহকর্মীবৃন্দগণ দেখতে থাকে আবিরের মস্তিষ্কের সাথে ইনকানেক্টেড-সেন্সরগুলো ক্ষণে ক্ষণে কেঁপে উঠে পিশাচ যন্ত্রণার আঁচটুকু বুঝিয়ে দিচ্ছে। আবিরের মুখ আর কথা বলার ক্ষমতা থাকলে তার চিৎকার প্রতিধ্বনিত হতো এই বদ্ধ জিখিলের ঘরটির মধ্যে। আবির তার মস্তিষ্কের মধ্যেই “না…” বলে নিঃশব্দ চিৎকার করতে থাকে, এনিরনের পৈশাচিক হাসির মাত্রা বেড়ে যেতে থাকে, সেই সাথে যন্ত্রণার মাত্রাও বাড়তে থাকে আবিরের মস্তিষ্কে।
তিন
আবির ভাবতে থাকে-ফ্রিদ্গিয়ারে কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে। তা না হলে সে কেন এমন বিভীষিকাময় ভবিষ্যত দেখবে ফ্রিদ্গিয়ারে? অত্যাধুনিকতার যুগে এই প্রযুক্তি ‘ফ্রিদ্গিয়ার’ পঁচিশ শতাব্দীর প্রযুক্তির চেয়ে অনেকটা এগিয়ে বলে অত্যাধুনিক এই প্রযুক্তির দ্বারা কোনো ভুল কিছু আশা করা বলতে গেলে অনেকটাই হাস্যরসাত্মক ব্যাপারের মতো। কিন্তু তারপরেও আবিরের মনে হতে থাকে ফ্রিদ্গিয়ারে কোথাও যেন সমস্যা হয়েছে।
ফ্রিদ্গিয়ার এমন একটি আবিষ্কার যা বর্তমান মানুষের জন্য আশীর্বাদ এবং অতীতের মানুষদের জন্য হিংসা করার মত একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। মানুষ তার মনের ইচ্ছা নিয়ে ফ্রিদ্গিয়ারে প্রবেশ করে, এর ভিতরে অবস্থান করে শয়ন করার পর যখন মস্তিষ্ক ও দেহের অনুভূতির সাথে এর কমান্ডিং সিস্টেমের মাধ্যমে ইনকানেক্টেড সেন্সর মস্তিষ্কের সাথে সংযুক্ত হয় তখন থেকে শুরু হয় মনের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, আবেগ-অনুভূতির বিশ্লেষণ পর্ব। বিশ্লেষণ শুরু হলে এটা মানুষকে চতুর্মাত্রিক দুনিয়ায় নিয়ে যায়, শুরু হয় স্বপ্ন ও বাস্তবতার কাল্পনিক দুনিয়ায় পদার্পণ; যেন মনে হয় সত্যি বাস্তবে হারিয়ে যাওয়া। জীবনের আঙ্গিক এবং আসন্ন বাস্তবতাকে নিয়ে যখন কল্পনার বিভোরে মানুষ ফ্রিদ্গিয়ারে হারিয়ে যায় তখন কল্পনার রাজ্যে নিজেকে রাজা বলে মনে হয় এখানে। তার জন্যই এটি শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করে বর্তমান সব প্রযুক্তির মধ্য হতে। কারণ, বর্তমান অতি উন্নয়শীল এই যুগে মানুষ স্বাচ্ছন্দে কোনো মস্তিষ্ক উত্তেজক পানীয় ছাড়াই কল্পনার রাজ্যে থেকে অবাধে সত্যিকার অর্থে বিচরণ করতে পারে।
তাই ফ্রিদ্গিয়ারে ভুল কোন ভাবেই আবির মেনে নিতে পারছে না, আবার তার কাছে এটি ভুল বলে ধারণা হলেও একটি চাপা ভয় তার ভিতরে তখনো কাজ করতে থাকে। আবির জানে সে যেই বিভোরে হারিয়ে গিয়েছিল তা ফ্রিদ্গিয়ারে অবস্থিত সময়-পরিক্রমায় আসন্ন ভবিষ্যৎ কে নির্দেশ করছে কিন্তু কখন কোন সময় ফ্রিদ্গিয়ারে হওয়া এমনটি ঘটবে তার সাথে তা জানা নেই। আবার এই ঘটনা তার জন্য একপ্রকার অভিশাপ স্বরূপ । যেহেতু এমন ভয়ংকর ঘটনা সত্যিকার অর্থেই তার জীবনে ঘটবে তাই নিজের ভয়ঙ্কর ঘটনা পর্যবেক্ষন করে সে ভাবতে থাকে, তার ভাইরাস আবিষ্কার বিষয়টি নষ্ট করে দিতে হবে। তাহলে হয়তো আসন্ন বিভীষিকার রূপ রেখা থাকবে না এবং সেখানে হয়তো কোন স্মৃতি-বিস্মৃতি থাকবেনা অথবা দেখা যাবে সবকিছু ঠিক থাকলে শেষ সুযোগ হিসেবে পৃথিবীতে ফিরে এসে নিজেকে নতুন ভাবে তৈরি করে নিবে এবং নতুন ভাবে জীবনের পথ চলা শুরু করবে।
ফ্রিদ্গিয়ারে বেশিক্ষণ থাকা শরীর এবং স্বাস্থের জন্য অনেকটা ক্ষতিকর। মাত্র কিছুক্ষণের জন্য এই অসাধারণ প্রযুক্তি মানুষকে কোন প্রকার উত্তেজক পানীয় ছাড়াই অনেক বিনোদন প্রদান করে থাকে ঠিকই কিন্তু সবকিছুর যেমন ভালো দিক আছে তেমনি অতি উন্নয়নশীল এই প্রযুক্তিরও খারাপ দিক রয়েছে। ভাল দিকটি যেমন নির্ভর করে কোন বস্তুর গুণগত মানের উপর তেমনি খারাপ দিকটিও নির্ভর করে সেই বস্তুর গুণগত মানের বিপরীত বিষয়টির উপর। আবির তাই ফ্রিদ্গিয়ার থেকে বের হয়ে বিষণ্ণ মনে তার বাসার উদ্দেশ্যে হাঁটতে থাকে। সন্ধ্যের আঁধার প্রায় হবে হবে এমন অবস্থা, বিষয়টি আবির খুব মনোযোগের সহিত খেয়াল করলো কিনা তা ঠিক বোঝা গেল না! সে শুধু ভাবতে থাকে তার বিভীষিকাময় ভবিষ্যত স্বপ্নের ঘটনাটি। অনেক চেষ্টা করেও সে জোর করে তার মাথা থেকে ব্যাপারটি কোনভাবেই সরিয়ে দিতে পারছে না।
সাথে থাকা জেটবাইকটার কথা প্রায় ভুলেই যায় আবির। কাজের সুবিধার্থে ন্যানো টেকনোলজির মাধ্যমে এটি পকেটে পরিবহন যোগ্য যার মাধ্যমে খুব দ্রুত এবং প্রায় সেকেন্ডের মধ্যেই কয়েকশো মিটার অতিক্রম করা যায়। এমন একটি দ্রুতগামী-যান থাকা সত্ত্বেও সে হেঁটে যেতে থাকে, এরই মধ্যে জোনাকিদের আলো-আঁধারী ব্যাপারটি শুরু হয়ে যায় কিন্তু আবির খুব অল্প ভাবে জোনাকিদের বিষয়টি খেয়াল করে। তার বাসার উদ্দেশ্যে যেতে থাকা পথটির প্রায় শেষ প্রান্তে একটি বড় এবং খোলা মাঠ অতিক্রম করে যেতে হয়। যখন সে খোলা মাঠে প্রবেশ করলো তখন হঠাৎ খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করতে থাকে- তারা ভরা রাত, জোনাকিদের মিটমিটি আলো তার সাথে পূর্ণিমার অবলীলা যেন আপামর অপরূপা পুরো প্রকৃতি জুড়ে বিরাজ করছে। আবিরের অবচেতন মন হঠাৎ করে বলে উঠে, প্রকৃতির এহেনরূপ গত বিশ যুগে বেঁচে থেকেও সে এমনটা কখনো পায়নি, তাহলে কি আজকের প্রকৃতির এমন রূপ তার জন্য কিছু বিশেষ মুহূর্ত নাকি এর অন্তরালে কিছু লুকিয়ে আছে রহস্যের অন্য বেড়াজাল?
প্রকৃতির এই রহস্যের বেড়াজাল ছেদ করার জন্য আবির যখন গভীর চিন্তায় পড়তে থাকে তখন সে সত্যিকার অর্থে বুঝতে পারে একটি বিশেষ মুহূর্ত হয়তো তার জন্য আসতে চলেছে কিন্তু কী সেই মুহূর্ত তা সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারে না। আস্তে আস্তে যখন মাঠের অন্যপাশে তার বাসার বেলকনির নীল রঙের লম্বা রেলিংগুলো দেখা যেতে শুরু করে তখন হঠাৎ দূর আকাশে একটি ক্ষিণ শব্দ শুনে উপরে তাকায় আবির। এবং দেখতে পায় দূর হতে একটি অস্পষ্ট আলো ক্রমান্বয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। প্রথমে একে গুরুত্ব না দিলেও তার থেকে যখন প্রায় কাছে আলোটি স্পষ্টতর হতে থাকে তখন বুঝতে দেরি হয় না যে আসলে এটি একটি ফ্লাইং-সসার এবং এটি তার দিকেই এগিয়ে আসছে। আবির সবকিছু বুঝতে পেরে দৌড় দিতে চাইলে সে নিজেকে আবিষ্কার করে তার দুটো-পা কোনোভাবে সামনের দিকে সঞ্চালনের শক্তি পায় না। প্রায় কয়েক মুহূর্ত এভাবে অতিক্রমের পর সে দেখতে পায় একগুচ্ছ আলো তার মাথার উপর এসে পরে এবং এরই সাথে শূন্যে ভাসতে শুরু করে। আলো বরাবর সসারটির ফটকের কাছাকাছি আসতেই আবির জোরে চিৎকার দিয়ে বলতে থাকে, “আমাকে ছেড়ে দাও, আমার আবিষ্কারকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবো, আমাকে ছেড়ে দাও।”
চার
ব্লিপ-ব্লিপ শব্দে প্রচন্ড জোরে ফিউশনাটর-মেসেঞ্জারে শব্দ হতে থাকে। আবির শব্দের তীব্রতায় ঘুম থেকে জেগে উঠে। সে দেখতে পায় ছায়াশরীরিটি তার সিগন্যাল-সিস্টেমে ফ্রিকোয়ন্সি মাত্রা বাড়িয়ে তাকে সিগন্যাল দিয়ে যাচ্ছে আর তাই শব্দের তীব্রতায় আবিরের ঘুম ভেঙ্গে যায়।
ছায়াশরীরিটি আবিরের এমন অবস্থা দেখে তাকে বলে, “আমি অনেকক্ষণ থেকে তোমাকে সিগন্যাল দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তুমি ঘুমের মধ্যে কী সব হিজিবিজি কথা বলেই যাচ্ছো। আর এখন এত জোরে আমাকে ছেড়ে দাও বলে চিৎকার করলে যে আমি নিজেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তাই বাধ্য হয়ে আমার এখান থেকে ফ্রিকোয়েন্সি বাড়িয়েছি। এজন্য তৃতীয় মাত্রার অপরাধ করে ফেলেছি।”
একপ্রকার বিস্ময় নিয়ে আবির তাকিয়ে থাকে ছায়াশরীরিটির দিকে। সে তখনো বিশ্বাস করে উঠতে পারে না যে সে এখনো বেঁচে আছে। বিস্ময় নিয়ে ছায়াশরীরিকে বলে, “এনিরন! তুমি? আমি কি সত্যি বেঁচে আছি?”
এবারে ছায়াশরীরি অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে, “কে এনিরন? আর এসব তুমি কি বলছ?”
আবির আবারো ধাক্কা খাওয়ার মতো বনে যায়। এক মুহূর্তের জন্য সে কিছুই বুঝতে পারে না, তাই আবারো বলে, “তুমি এনিরন। আমাকে হত্যা করার জন্য এসেছ। আমার ভুল হয়েছে, আমাকে মেরো না প্লিজ!”
“আমি তোমার এরিন, আবির! তুমি এখন নোভা-অভিযানে আছ বলে মেসেঞ্জারে আমাদের কথা হয়। আমাকে আদর করে নাম দিয়েছ ছায়াশরীরি, কারণ আমাকে নাকি ছায়া-মূর্তির মত লাগে মেসেঞ্জারে। আর এখন আমি এনিরন হয়ে গেলাম?” ছায়াশরীরি অভিমানের সুরে বলতে থাকে।
এবারেও আবির বুঝতে না পেরে কিছুক্ষণ ভাবতে থাকে এবং তখন তার সবকিছু মনে পড়তে শুরু করে। তার মনে পরে কেপলার-২২বির উদ্দেশ্যে নোভায় করে পৃথিবী থেকে বিদায় হওয়ার কয়েক সপ্তাহ পেরিয়েছে। এরই মাঝে পৃথিবীতে কত বছর অতিবাহিত হয়েছে তা জানা নেই। সবকিছু মনে পড়ার পর আবির খেয়াল করে তার এরিনের চোখের কোণে ইতোমধ্যে কিছুটা অশ্রু এসে জমা হয়েছে। আবির বুঝতে পারে মেয়েটা অনেক অভিমান করেছে তার উপর, একটু উল্টো-পাল্টা কিছু হলেই কান্না শুরু করে দেয় মেয়েটি।
“এরিন! আমি দুঃখিত, বুঝতে পারিনি। আমি খুব দুঃখিত তার জন্য।” কথাটি বলা শেষে আবির দেখতে পায় চোখের কোণে হাত দিয়ে জল মুছতে থাকে এরিন, কি সুন্দর ভাবে কাজটি করলো সে। এটি দেখে আবিরের ভিতর একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতে থাকে।
“তুমি আবার কোনো দুঃস্বপ্ন দেখেছো, তাই না?” এরিন অনেকটা নিশ্চিত ভাবে কথাটি বলে।
“হ্যাঁ। তুমি ঠিক ধরেছ।”
“আমাকে বলবে তোমার দুঃস্বপ্নের কথাটি?” কথাটিতে অভিযোগের সুর রয়েছে যা আবির স্পষ্ট বুঝতে পারল। আবির জানে এখন সেই দুঃস্বপ্নের বর্ণনা তাকে দিতেই হবে।
আবির বলতে থাকে তার দুঃস্বপ্নের কথা। কিভাবে একটি গ্রহের জিখিল নামক কাঁচের মতো ঘরে তাকে আঁটকে রাখা হয়, সেখানে তার দেহের কোন অবয়ব নেই, এরিন-এনিরন হয়ে কিভাবে তার মস্তিষ্ককে নরকের মতো পৈশাচিক যন্ত্রণা দিতে থাকে, এনিরন থেকে জানতে পারে তার একটি ভয়াবহ ভাইরাস আবিষ্কারের জন্য তাদের গ্রহটি কিভাবে ভবিষ্যতে ধ্বংস হয়ে যায়! তাই এই আবিষ্কারকে ধ্বংস করার জন্য তাকে মেরে ফেলতে চায় যাতে করে ভবিষ্যতে তাদের গ্রহটির অস্তিত্ব টিকে থাকে এবং পরক্ষণে হঠাৎ সে নিজেকে আবিষ্কার করে ফ্রিদ্গিয়ার নামক একটি উন্নত প্রযুক্তি-তে, সেই যন্ত্রে তার বিভিষীকাময় ভবিষ্যতের স্বপ্নটির কথা বলে, শেষবারের মতো বাঁচতে চায় বলে তার আবিষ্কারের কিছু নমুনা এবং পুরো বিষয়টি ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে যায় কিন্তু সে পারেনা তার আগেই কিভাবে দূরের আকাশ থেকে একটি ফ্লাইং-সসার আসে।
আবিরের কথাগুলো শুনে একমুহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় এরিন। কিন্তু নিজেকে স্বাভাবিক রেখে সে বলে, “এমন উদ্ভট স্বপ্ন ছাড়া তুমি আর কোনো স্বপ্ন দেখতে পারো না?” কিছুটা থেমে আবার অভিমানের সুরে বলে, “তুমি নিশ্চই আমার সম্পর্কে এমন ভাবো, তাই তোমার স্বপ্নে আমি এমন রুপে এসেছি।” এর পর আবার তার চোখে জল জমতে শুরু করে।
আবির কী করবে কিছুই বুঝতে পারে না। এরিনের মুখের দিকে তাকালেই তার ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠে। তাই সে না পেরে বলতে থাকে, “আমি তোমার সম্পর্কে এমন কিছুই কল্পনা করিনি। তোমাকে নিয়ে এমন স্বপ্ন দেখবো তা আমি ভাবতেও পারিনি।” আবির কিভাবে গুছিয়ে কথাগুলো বলবে তা বুঝতে পারে না, তাই একমুহূর্ত ভেবে সে অনুগ্রহের সুরে এবারে বলে, “আমাকে ক্ষমা করো! আমি এখনো বেঁচে আছি, এই জন্য আমাকে ক্ষমা করো।”
এবারে কাজ হয়েছে। আবির দেখে তার প্রেয়সী চোখের জল মুছতে থাকে ঠিক আগের ভঙ্গিতে আর তাতে করে তার মায়া আরও বেড়ে যায়। মেয়েটিকে যতই দেখে ততই আবির নতুনভাবে তাঁর সৌন্দর্য খুঁজে পায়। আবিরের কথায় কাজ হয়েছে, তাই এরিন এবারে বলতে থাকে, “তোমার হিমঘরে যাওয়ার সময় হয়েছে। আশা করি আবার তোমাকে অনেক দিন পর দেখতে পারবো।”
এরিনের কথাটি শুনে আবির হিমঘরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। সবকিছু শেষে এরিনের কাছে বিদায় নিয়ে সিগন্যাল বন্ধ করে দেয়। সিগন্যাল বন্ধ করার আগ পর্যন্ত আবির এরিনের চোখের কোণে কিঞ্চিত জল দেখতে পায়।
আবিরকে শেষ বিদায় দিয়ে এরিন ভাবতে থাকে, আবিরের দেখা স্বপ্নটি আসলে কোন দুঃস্বপ্ন নয়। এরিন সত্যি আবিরের স্বপ্নে দেখা এনিরন। সে সত্যিকারার্থে একজন ভিনগ্রহের প্রাণী কিন্তু এই সম্পর্কে আবির জানে না। এরিন তাকে জানাতেও চায় না। একটি মানুষ কেবল মাত্র বেঁচে থাকার জন্য যেভাবে শেষ পর্যন্ত নিজেকে পরিবর্তন করে নতুনভাবে বাঁচতে চেয়েছে তা এনিরন এবং তার সহকারীবৃন্দদের বিমোহিত করেছে। তাই তারা আবিরকে বেঁচে থাকার শেষ অধিকারটুকু দিয়ে দেয়, সে সাথে আবিরের পরিবর্তনের ব্যাপারটি এনিরনের কাছে অনেক ভালো লাগে। ভালো লাগা ব্যাপারটি অদ্ভুত এক বিষয়, এজন্য এনিরন আবিরের সাথে সারাজীবন থাকতে চায় এভাবে। তাই সেদিন ফ্লাইং-সসারে করে এনিরন এবং আবির আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে কিন্তু আবিরের মস্তিষ্কে থাকা এইসকল স্মৃতি মুছে ফেলে এনিরন। তাই আবির এখনো জানে না তার এরিন একজন ভিনগ্রহের প্রাণী এবং তার স্বপ্নে দেখা ঘটনাটি সত্যি।
আবিরের স্মৃতি মুছে গেলেও তার অবচেতন মন বিষয়টি ধরে রেখেছে বলেই হয়তো ভবিষ্যতে আবার কোন একদিন এই স্বপ্ন দেখবে আবির, আবার হয়তো তাদের দুজনের মাঝে এমন অভিমান শুরু হবে, আবার হয়তো এভাবেই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
সমাপ্ত
মো. হাসানুল হক বান্না
Rasel islam, Tanusri roi, Badol hasan, Mr faruk, Sumaiya akter, Rokeya hoq, Asha islam and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum