সাদা কাগজ
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Go down
Mahfuz
Mahfuz
নবাগত
নবাগত
Posts : 5
স্বর্ণমুদ্রা : 1439
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-30
Age : 31

তৃপ্ত ভালবাসায় Empty তৃপ্ত ভালবাসায়

Wed Jun 09, 2021 11:18 am
তৃপ্ত ভালবাসায়
এমএম রহমান

আমি কখনো বাবা হতে পারবো না। এ কথা আমি আর ডাক্তার ছাড়া আর কেউ জানে না। এমন কি আমার জীবন সাথীও না। কারণ আমি তাকে বলি নি। সে শুনলে কষ্ট পাবে। আর আমি তাকে কখনো কষ্ট দিতে চায় না। তাই তার কাছে আমার এই সত্য লুকানো।

ভালবেসে বিয়ে করেছিলাম অর্পিতাকে। চার বছর ধরে ভার্সিটিতে প্রেম করে অবশেষে ২০১৪তে দুই জনে পরিবারের অমতে বিবাহ করি। তখন আমরা দুজনই মার্স্টাসে। কি করবো কোন কুল কিনারা না পেয়ে ১০হাজার টাকার সেলারিতে একটা এনজিওতে জব শুরু করি।

ভালই চলছিল আমাদের সংসার। আমরা দুইজন মিলে সিদ্ধান্ত নিয় যে, আগামি দুবছর আমরা কোন বাচ্চা কাচ্চা নিবো না। কারণ আমরা চেয়েছি দুইজনেই প্রতিষ্ঠিত হতে। তাই দুজনের পড়া ও সংসার খরচ, বাসা ভাড়া সব দিতে গিয়ে রীতিমত আমাকে খুব বেশি হিমশিম খেতে হচ্ছে।অর্পিতাকে বিসিএস পরীক্ষার জন্য কোচিং সেন্টারে ভর্তি করাই। আর আমি জব করি। রাতে ওপড়ে আমি তার পাশে বসে থাকি। এভাবে কেটে গেলে দুটি বছর।

আজ অর্পিতা একজন শিক্ষা ক্যাডার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দেশের সুনামধন্য একটা ভার্সিটির লেকচারার।আমিও একটা কোম্পানির ম্যানেজার হিসেবে কর্মরর্ত। টাকা পয়সার আজ আর আমাদের অভাব নেই। তবুও আমাদের মনে আজ শুণ্যতা বিরাজ করে। শুধু মাত্র ছোট্ট একটা সন্তানের জন্য।শুধু মাত্র একবার বাবা, আর মা এ দুটি শব্দ শুনার জন্য আমাদের দুজনের অন্তর ।ক্যারিয়ারের পিছনে ছুটে আর এ ক্যারিয়ার গড়তে গিয়ে আজ আমরা নিঃসন্তান।

অনেক চেষ্টা করেছি দুজনে ওষুধ,কবিরাজ,দাওয়া কোনটিই বাদ দিয় না। কাজের বেলায় কিছুই হলো না। শেষে দুইজনই একসাথে ডাক্তারের সরার্পণ হলাম। ডাক্তার দুইজনকে পরীক্ষা দিল। অর্পিতার প্রজেটিভ আসলেও আমার নেগেটিভ এসেছে।

আমি ওকে সে দিন আর কিছুই বলতে পারি নি। শুধু বলেছি ডাক্তার রিপোর্ট দিতে দেরি হবে। সে দিন থেকে আমিও কেমন যেন বিষন্ন হয়ে গেছি। ঠিকমত খেতে পারি না,রাতে ঘুমাতে পারি না। নিজেকে খুব বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে। অর্পিতা মা হওয়ার ইচ্ছে টা অপূর্ণ থেকে যাবে। আমি কিছুই ভাবতে পারছি না।

এভাবে কেটে গেলে আরো কয়েক মাস। আমি আমার অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। আর অর্পিতা তার ভার্সিটি নিয়ে।

একদিন রাতে হঠাৎ অর্পিতা আমাকে বলে,চল না আমরা একটা বাচ্চা দত্তক নিই। আমি বিভন্ন এতিম খানা ও হাসপাতালগুলোতে কথা বলেছি। এভাবে না কি অনেক বাচ্চা পাওয়া যায়। অনেকে আসস্থ্য করেছে দিবে। টাকা নিয়ে বলছি কাউকে ভাবতে হবেনা। কিন্তু ওসময়ে আমরা কোন বাচ্ছা দত্তক পাই নি। তাই নিজেদের ভিতর হতাশা আর বাড়তে লাগলো।

আমি বুঝতে পারছি অর্পিতার মা হওয়ার কত ভাসনা। শুধু মাত্র আমার কারণে আজ সে মা হতে পারছে না।নিজেকে খুব বেশি অপরাধী মনে হচ্ছে।

একদিন আমি ওকে বলি,তুমি অন্য কাউকে বিয়ে করে পেলো। আমি তোমাকে ছেড়ে দিবো।সে বলে তোমার কি মাথা ঠিক আছে? পাগলের পলাপ বলেতেছো কেন? তখন আমি বলি, আসলে তোমাকে একটা কথা বলা হয় নি ! আমি কখনো বাবা হতে পারবো না!

আমি জানি তুমি কখন বাবা হতে পারবে না। আমি ডাক্তারের সাথে আমাদের দুজনের রির্পোটের ব্যাপারে কথা বলছি, তখন ডাক্তার আমাকে তোমার কথা বলেছে। এতে মন খারাপের কি আছে। তোমার ভালবাসায় আমার সব।

তবু আমি তোমাকে কখন মাতৃত্বের স্বাদ দিতে পারবো না। এর চেয়ে হতভাগ্য আর কি হতে পারে বল?
তুমি এমন করে বলছো কেন?
আমি তোমাকে ভালবেসে বিয়ে করেছি। হয়তো আমাদের ভালবাসার ফসল পৃথিবীর মুখ দেখবে না। কিন্তু তাই বলে তোমার প্রতি আমার ভালবাসা কমে যাবে? এটা তুমি ভাবো কি করে। আমারা একে অপরের প্রতি এ ভালবাসা কখনো কমবে না।
সন্তানের চাহিদা হয়তো আমাদের পুরণ হবে না,তবুও আমাদের ভালবাসা চিরকাল অটুট থাকবে।

এ ভাবে ভালবেসে আমাদের দিন কাটছে। কিছু পূর্ণতা, আর কিছু শুন্যতা এ নিয়ে আমাদের জীবন সংসার।
হঠাৎ একদিন আমার বউ অর্পিতা আমাকে একটা সুসংবাদ দিল,সে মা হচ্ছে আর আমি বাবা। সে দিন আমার খুশি আর ধরে কে। আমি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়ে যা দেখলাম, তা দেখার জন্য আমি কখনো প্রস্তুত ছিলাম না।

অর্পিতা পুরো ঘরে আলোকসজ্জায় সাজিয়ে আলোকিত করে রেখেছে আর সামনে বড় একটা কেকে লেখা শুভ বিবাহ বার্ষিকি আমার সন্তানের আব্বু। হুম আজ আমাদের বিবাহ বার্ষিকি ছিল, অথচ আমি সব ভুলে গিয়েছি। কিন্তু অর্পিতা আজ সত্যি আমাকে সারপ্রাইজ দিয়েছে। আর আল্লাহ চাইলে কি না পারে? আজ আমাদের জীবনে আসছে পূর্ণতা। আজ আমরা সত্যি পূর্ণতা পেযেছি, আর এজন্য আমরা দুজনে আল্লাহর কাছে লাখ শুকরিয়া আদায় করেছি।

এই খবরে পুরো এলাকায় গরু কোরবানী করে সমাজের যত অবহেলিত, দিনমুজুর, খেতে খাওয়া, অভুক্ত পথ শিশু সহ সকলকে দুদিন ধরে মেজবানি করেছি। আর সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতদিন আমাদের সন্তান এ পৃথিবীতে ভুমিষ্ট না হয় তত দিন পর্যন্ত একশ পরিবারের ভরণ পোষণের দায়িত্ব নিলাম।

আর এভাবে আমাদের জীবনে কেটে গেল একটি বছর! এ একটি বছর খুব সর্তকতার সাথে আমি অর্পতির সম্পূর্ণ খেয়াল রেখেছি। তাকে কোন কাজ করতে দিয়নি। ভার্সিটি থেকে সে ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি গ্রহণ করে। আর আমি দুই মাসের ছুটি নিয় কোম্পানি থেকে। আজ আমার কন্যা সন্তানের জনক জননী। আজ আমরা পরিপূর্ণ। এভাবে আমাদের দুজনের প্রতি বিশ্বাস আর ভালবাসা আমাদের পূর্ণতা নিয়ে এসেছে। আজ আমাদের পৃথিবীতে আমাদের কন্যা নতুন ভাবে আমাদের ভালবাসা পূর্ণতা দিয়েছে। আর এভাবে আমাদের পরিবারে আজ আমাদের দুজনের বাবা-মা সহ খুব হাসি খুশি, আর আনন্দের মাঝে আমাদের সে দুজনের ছোট্ট সংসার আজ সবাই এসে পূর্ণতা দিয়েছে।

শমির সাদিক, Nowrin talukdar, Nera akter, Fahad islam, Israyeel hossen, Za mahmud, Debasis sorkar and লেখাটি পছন্দ করেছে

Back to top
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum