- Md Mehedi Hasanনবাগত
- Posts : 1
স্বর্ণমুদ্রা : 1307
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-08
Age : 24
Location : Kazirbagh Lane, Hazaribagh, Dhaka-1209
দ্বীনি স্ত্রী
Wed Jun 09, 2021 3:33 pm
দ্বীনি স্ত্রী
-----------------------------------------------------
রাহাত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশোনা করছে।
তমা নামে একটি মেয়েকে সে ভালোবাসে। তমা হচ্ছে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে স্মাট ও সুদর্শন মেয়ে।
রাহাতের সাথে তমার সম্পর্ক অনার্স ১ম বর্ষ থেকে। রাহাত, তমাকে প্রথম প্রপোজ করেছিল। তমা ও রাহাতের প্রপোজে রাজি হয়েছিল।
........কিছু দিন যাবত তমার কিছু আচরণে রাহাত কষ্ট পাচ্ছিল। তমার স্বাধীন প্রিয় মনোভাব রাহাতের একদমই পছন্দ হচ্ছিল না। তমার ভার্সিটির আজে-বাজে ছেলেদের সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গল্প করা রাহাতের একদম পছন্দ হচ্ছিল না।
তমা: কি অবস্থা কেমন আছো?
রাহাত: তোমাকে না বলেছি এসব আজে-বাজে ছেলেদের সাথে ঘুরবে না।
তমা: আরে.... ওরা আমার বন্ধু!
রাহাত: কিসের বন্ধু!!! তোমার মেয়ে ফ্রেন্ড নেই তাদের সাথে গল্প করো এসব ছেলে কেন।
তমা: এরকম ভাবে কথা বলছো কেন। না আমি তাদের সাথেই ঘুরবো, গল্প করবো। আমাকে ভালোবাসার সময় মনে ছিল না, আমি স্বাধীন প্রিয় মানুষ। এখন এগুলো কেন বলছো! আরে তোমার ভাগ্য আমার মত মেয়ে তোমাকে ভালোবাসে। যত্তসব!!
রাহাত: তমা এভাবে কেন বলেছো।
তমা: বলবো না তো কি। আমাকে ভালোবাসার কোন যোগ্যতায় নাই তোমার। তোমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চাই না।
Let's Break up!
রাহাত: কাঁদো কাঁদো সুরে....তমা !!!
তমা: Good Bye
এই বলে তমা চলে গেল। এক পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাহাত আর চোখ দিয়ে জল বেয়ে বেয়ে পড়ছে।
রাহাত বাসায় চলে আসলো। প্রচুর কষ্ট হচ্ছে তার পাশাপাশি অনেক ক্ষোভ ও হচ্ছে,
রাহাত: এই আমি কাকে ভালবাসলাম, যে কিনা আমাকে একটু সম্মান ও করে না। আল্লাহ্ আমাকে তুমি ক্ষমা কর। অনেক হয়েছে পাপ আর না এবার নিজেকে পরিশুদ্ধ করবো। আর এই সব হারাম রিলেশনে জড়াবো না। সময় হয়েছে পরিবর্তন হওয়ার। দ্বীনের পথে পা বাড়ানোর......
রাহাত নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করলো। প্রতিদিন ফজর নামাজের পর কুরআন তিলাওয়াত করতো আর আল্লাহ্ সুবহানা তা'য়ালার কাছে বেশি বেশি দোয়া করতো। এখন তার জীবনে দুইটি ইচ্ছে:
"হালাল চাকরির ব্যবস্থা ও নেককার স্ত্রী"। আর নেককার স্ত্রী পেতে হলে তো তাকে চরিত্রবান হতে হবে। কারণ পবিত্র কুরআনে বলা আছে ,
"চরিত্রহীনা নারী চরিত্রহীন পুরুষের জন্য, আর চরিত্রহীন পুরুষ চরিত্রহীনা নারীর জন্য। সৎ চরিত্রবতী নারী সৎ চরিত্রবান পুরুষের জন্য, আর সৎ চরিত্রবান পুরুষ সৎ চরিত্রবতী নারীর জন্য। (আল কুরআন)
এই জন্য সে চাকরির পড়াশোনা ও শুরু করল। পাশাপাশি তাবলীগ জামাতে ও জুড়ে গেল। দাড়ি ও বড় রেখেছে। তার এই পরিবর্তন দেখে মা-বাবা ও অনেক খুশি হলেন।
৩ বছর পর.....
রাহাত আলহামদুলিল্লাহ একটি সরকারি কলেজের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করে।
চাকরি ব্যবস্থা হয়েছে এখন রাহাতের বিয়ের কথা চলছে........
রাহাতের মা বললেন: আচ্ছা রাহাত তোর কেমন মেয়ে পছন্দ?
রাহাত: মা আমি যাকে বিয়ে করবো সে অবশ্যই নেককার, দ্বীনি ও পর্দাশীল হতে হবে। যাকে দেখলে আল্লাহ্ কে স্মরণ হয়।
রাহাতের মা তার ছেলের চেহারা তাকিয়ে মলিন দৃষ্টিতে কথা গুলো শুনছিলেন।
আচ্ছা আমি আর তোর বাবা দেখছি এরকম মেয়ে তোর পছন্দ অনুযায়ী পাই কিনা।
২ দিন পর......
রাহাতের মা: রাহাত শুন, একটি মেয়ে আমরা পেয়েছি সে দ্বীনি এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কালাম পড়ে ও পর্দা ও করে। নাম নূরী জান্নাত। কিন্তু একটা সমস্যা আছে।
রাহাত: কি মা... সে কোনো ছবি দিবে না। আমাদের কে যেতে বলেছে। তাদের বাড়ি গেলে তুই একমাত্র তাকে দেখতে পারবি। আর অন্য কেউ না।
রাহাতের মেয়েটির নামটি অনেক পছন্দ হওয়ার পাশাপাশি তার এই শর্ত ও রাহাতের মনে ব্যপক কৌতুহুল সৃষ্টি করেছে।
রাহাত: আচ্ছা কবে যেতে হবে।
রাহাতের বাবা বলল: কাল চল, আমি তাদের বলে দিচ্ছি।
রাহাত: আচ্ছা, বাবা।
পরের দিন রাহাত ও তার বাবা-মা নূরী জান্নাতের বাসায় গেলেন।
রাহাত নূরীর বাবাকে সালাম দিলেন,
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
নূরীর বাবা: জি, বাবা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
রাহাত: জি, আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি।
ভাই বসেন , সবাই বসেন।
নূরীর বাবা বললেন, ভাই, আমার মেয়েটাকে অনেক আদর যত্ন করে বড় করেছি। ওর আবদার ইচ্ছা গুলো পূরণ করার চেষ্টা করেছি। কতটুকু পেরেছি জানি না, আল্লাহ্ ভালো জানেন। তো ভাই রাহাত তো আপনার একমাত্র ছেলে।
রাহাতের বাবা: জি ভাই রাহাত আমার একমাত্র ছেলে।
নূরীর বাবা বললেন, আপনার ছেলের মেয়ে পছন্দ হওয়ার শর্ত গুলো, আমার ভালো লেগেছে। আজকাল আধুনিক যুগের ছেলেদের এমন মন মানসিকতা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
কিছুক্ষণ পর নূরীর মা, নূরীকে নিয়ে আসলো। নূরী সবাইকে সালাম দিলেন।
আসসালামু আলাইকুম । তারপর বাবা পাশে বসে পড়লেন।
একদম আপাদমস্তক তার পর্দা করা। রাহাত দেখে সত্যি খুব ভালো লাগছে। এমন মেয়েকে তো সে তার জীবনে চাই।
নূরীর বাবা বললেন, ওদেরকে একটু কথা বলার সুযোগ করে দিতে হবে। নূরী আর রাহাত তোমরা ছাদে চলে যাও।
নূরী ও রাহাত সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠল।
রাহাত: আসসালামু আলাইকুম। আপনি কেমন আছেন ?
নূরী: জি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন ?
রাহাত: জি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
নূরী: আপনি তো টিচার তাই না।
রাহাত: জি।
নূরী: কোন বিষয় পড়ান।
রাহাত: জি, ব্যবস্থাপনা।
নূরী: ওহ, আচ্ছা।
রাহাত: আপনি কি পড়াশোনা করছেন।
নূরী: জি অনার্স ফাস্ট ইয়ার পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। আর পড়াশোনা এগোয় নি। এখন কিছু বাচ্চাদের আরবি পড়ায়।
রাহাত: মাশা আল্লাহ, খুব ভালো। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করি যদি কিছু মনে না করেন?
নূরী: হুম, বলেন।
রাহাত: আচ্ছা, আপনার কি আগে কোনো সম্পর্ক ছিল?
নূরী: না, হারাম রিলেশনে আমি নিজেকে জড়াতে চাই নি কখনই। কেন, আপনার ছিল?
রাহাত: একটু ইতস্ততঃ হয়ে, জি ছিল একজনের সাথে । তারপর রাহাত পুরো কাহিনীটা নূরীকে বললো।
নূরী: হুম, আজকাল আধুনিক মেয়েরা এমনই।
রাহাত: তবে তাকে ধন্যবাদ দিতে চাই কারণ সে আমার সাথে ব্রেক-আপ না করলে আজকে আমার এই পরিবর্তনটা হতো না।
নূরী: হুম, ঠিক বলছেন। আপনার শর্তগুলো আমাকে কিছুটা আশ্চর্য করছে কারণ আধুনিক যুগের ছেলেরা আবার অন্যরকম মেয়ে চাই পর্দাশীল খুব কমই খোঁজে।
রাহাত: তাহলে আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে।
নূরী: জি হয়েছে। তবে আমার একটা শর্ত আছে?
রাহাত: জি, কি শর্ত?
নূরী: আপনি আমাকে বিয়ে করবেন তবে আমার মুখ এখন দেখতে পারবেন না।
রাহাত: কেন? দেখে বিয়ে করা তো উচিত?
নূরী: হুম, দেখে বিয়ে করা তো উচিত। তবে আমাকে বিয়ে করতে চাইলে না দেখে করতে হবে। বিয়ে হওয়ার পরে দেখতে পারবেন।এর আগেও দুইজন আমাকে দেখতে আসছিল তাদের কেউ এই শর্ত দিয়েছিলাম তারা রাজি ছিল না।
রাহাত একটু নার্ভাস হয়ে পড়লো, কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো, আচ্ছা ঠিকাছে।
নূরী: আচ্ছা, তাহলে নিচে চলুন।
রাহাত: জি, চলুন।
রাহাত মনে মনে চিন্তা করলো আল্লাহ্ গো..... ভুল করলাম না তো।
রাহাতের বাবা রাহাতকে কানে কানে ফিস ফিস করে বললো, কি রে মেয়ে পছন্দ হয়েছে। রাহাত বললো, জি হয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ আমার ছেলের আপনার মেয়েকে পছন্দ।
নূরী মা তোমার পছন্দ হয়েছে।
নূরী: জি, হয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ।
রাহাত: আমার কিছু শর্ত আছে।
নূরীর বাবা: কি, বাবা। বলো।
রাহাত: জি,
আমার পরিবারের কোন দাবি নেই।
বিয়েটা খুব ছোট পরিসরে হবে।
আপনার আর আমার পরিবারে আত্মীয়-স্বজনদের শুধুমাত্র আমন্ত্রণ জানানো হবে।
উনাকে(নূরীকে দিকে লক্ষ্য করে) কোনো নন-মাহরাম দেখতে পারবে না। কোনো পুরুষ মানুষ ও দেখতে পারবে না।
আর আপনাদের খরচের অর্ধেক অংশ আমি বহন করবো।
নূরীর বাবা : রাহাত বরকে কিছু দিতে হয়, বাবা।
রাহাত: না, আঙ্কেল। যদি আপনি মনে করেন যে আমি বিয়ের পর খোঁটা দিতে পারি সে বাবার বাড়ি থেকে কি নিয়ে আসছো তাহলে আমার মনে হয় এরকম ছেলের কাছে বিয়ে না দেওয়াই উচিত। আর আঙ্কেল, কিছু দিতেই যদি হয় তাহলে কিছু গরিব-দুঃখীদের একবেলা পেটপুরে খাওয়াবেন। তারা মন ভরে দোয়া করে দিবেন।
আর আঙ্কেল, আরেকটা বিষয় আমার মোহরানা আমি ১ লাখের বেশি দিতে পারবো না। এটাই আপাতত আমার নিজের জমানো টাকা।
নূরী শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে কথা গুলো শুনছিলো। অবশ্যই একটু অবাক ও হয়েছে ভেবেছিলো কোন কিছুর দাবি করতে পারে রাহাত কিন্তু না এতো একেবারে ভিন্ন এক মানুষ। এটা ভাবতে ভাবতে শান্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
নূরীর বাবা: আচ্ছা বাবা, আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে তোমাদেরকে জানিয়ে দিবো।
রাহাত: আচ্ছা। আসসালামু আলাইকুম। ভালো থাকবেন। তাহলে আঙ্কেল আমরা তাহলে আজ উঠি।
নূরীর বাবা: আচ্ছা বাবা, সাবধানে যাও।
ভাই(রাহাতের বাবা) ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
রাহাতের পরিবার চলে গেলো।
দুই দিন পর.......
রাহাতের মা: রাহাত, এই রাহাত।
রাহাত: জি, মা।
রাহাতের মা: আরে... শুনেছিস। নূরীর পরিবার রাজি হয়েছে।
রাহাত: সত্যি....মা।
রাহাতের মা: হুম।
রাহাত: যাক... আলহামদুলিল্লাহ। অবশেষে এই স্বপ্নটাও সত্যি হচ্ছে একজন দ্বীনি স্ত্রী পাওয়া।
খুব সুন্দরভাবে নূরী ও রাহাতের বিয়ে সম্পন্ন হলো।
বাসর রাতে.........
নূরী খাটের উপর বসে আছে একদম সম্পূর্ণ পর্দা করে।
রাহাত রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। রাহাত একটু নার্ভাস।
নূরীর পাশে বসতে নূরী সালাম দিলো,
আসসালামু আলাইকুম।
রাহাত: ওয়ালাইকুমস সালাম। এরপরে কি বলবে তা ভাবতে লাগলো.....
নূরী: কি হলো, কিছু বলেন না কেন।
রাহাত: আচ্ছা আমরা এখন তো স্বামী-স্ত্রী তো আপনি থেকে তুমি বলা যায় না।
নূরী: আচ্ছা । তুমি বলবো।
রাহাত: আচ্ছা আমি একটু ফ্রেস হয়ে আসি আপনি.... সরি তুমি বসো।
নূরী: আচ্ছা।
৫ মিনিট পর রাহাত বের হলো।
রাহাত: আচ্ছা বিয়ে তো হয়ে গেল। এখনও তোমাকে আমি দেখতে পারি নাই। এখন একটু মুখটা দেখান...
নূরী: জি তোমাকে অপেক্ষা করিয়েছে । এই বলে নিজের হিজাবটা খুলে ফেললো।
রাহাত: নূরীর দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেল। এই আমি কি দেখতেছি। এত সুন্দর একটা মেয়ে কিভাবে হয় যেন তার মুখ থেকে মুক্তা ঝরছে।
নূরী: কি, পছন্দ হয়েছে।
রাহাত: মুচকি হাসি দিয়ে.... একটু লজ্জা পেয়ে বললো হুম আলবাত হয়েছে।
নূরী ও কিছুটা লজ্জা পেল।
রাহাত: ওহ আচ্ছা একটা কথা তো ভুলেই গেলাম। এই নেন ১ লাখ টাকার চেক। এটা আপনার মোহরানার টাকা। এটা আপনার সম্মানি আর আমার তরফ থেকে উপহার। আর একটা উপহার আছে। এই বলে নূরীকে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিলো। এতে আপনার জন্য একটা মিষ্টি রংয়ের খিমার, হাত ও পা মোজা আছে। আর একটা জায়নামাজ, তসবি ও আতর রয়েছে।
নূরী কান্না বিজড়িত কন্ঠে, আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক খুশি।
রাহাত: ওমা আমার নূরী পাখিটা দেখি কান্না করতেছে।
এই বলে রাহাত নূরীকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
নূরী বলল: তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না তো।
রাহাত: না কোথাও যাবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
নূরী রাহাতের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলল, মৃত্যুর কথা বলো না।
রাহাত: আচ্ছা বলবো না।
তোমার সব স্মৃতি ছেড়ে আমার কাছে চলে আসছো। বাবা-মা কে মনে পড়ছে না।
নূরী: হুম। অনেক মনে পড়তেছে বাবা-মা কে, আমার প্রিয় রুম টাকে আমার বাসার ছাদটাকে আর ছাদের দোলনাটাকে।
রাহাত: হুম একজন নারীর এটা অনেক বড় একটা স্যাক্রিফাইস নিজের স্মৃতি গুলো আর বাবা-মাকে ছেড়ে আসা।তাহলে একটা কাজ করি আমি ঘর জামাই হয়ে যায়! কি বলো?
নূরী এ কথা শুনে হাসতে লাগলো।
রাহাত নূরীর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
পরের দিন সকাল ১১.০০ টায় রাহাত নূরীর বাবাকে ফোন দিলো।
রাহাত: হ্যালো; আসসালামু আলাইকুম। বাবা কেমন আছেন?
নূরীর বাবা: ওয়ালাইকুমস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। বাবা। তোমরা কেমন আছো?
রাহাত: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। বাবা সকাল ১১ টা বেজে এখনো ফোন দিলেন না। মেয়েকে ভুলে গেলেন।
নূরীর বাবা: না, বাবা। আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম। একটু পরেই ফোন দিতাম।
রাহাত: আচ্ছা নূরীর সাথে কথা বলেন
এই, নূরী,ধরো তোমার বাবা।
নূরী: আব্বু, আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
নূরীর বাবা: ওয়ালাইকুমস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো, মা। কেমন আছিস, কি করিস, নাস্তা করেছিস, মা?
নূরী: জি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। নাস্তা করে এখন একটু আমার কাপড়গুলো ঠিক করে গুছিয়ে নিচ্ছে।
আব্বু, আপনি নাস্তা করছেন; আম্মু নাস্তা করছে, নেহাল কি করে আর আপনার সকালের ঔষধগুলো খাইছেন? আমি কিন্তু নাই এখন মনে করে দেওয়ার জন্য!
নূরীর বাবা: হুমম, আমরা সবাই নাস্তা করছি, নেহাল স্যারের বাসায় পড়তে গেছে।
নূরী: আব্বু, তোমাদের অনেক মনে পড়েছে এ বলে কেঁদে দিলো, নূরী?
রাহাত দূর থেকে একদৃষ্টিতে তার নূরী পাখিটার দিকে তাকিয়ে আছে....
রাহাত: কিহ...কথা হয়েছে।
নূরী: হ্যাঁ, হয়েছে।
রাহাত: তো কান্না করছো কেন?
নূরী: মনে পড়তেছে অনেক; তাই।
আচ্ছা চল কালকে ঘুরে আসি তোমার বাসায়; তবে তাদেরকে জানানো যাবে না। এটা সারপ্রাইজ। আমরা এখান থেকে সব বাজার করে নিয়ে যাবো। তারপর ওখানে গিয়ে রান্না করে, জমপেশ খাওয়া দাওয়া করবো।
নূরী: না, ফোন দিয়ে জানিয়ে দি।
রাহাত: না, তাদেরকে এখন ব্যস্ত করার প্রয়োজন নেই। এমনেও অনেক খাটা-খাটুনি গিয়েছে।
নূরী: আচ্ছা, ঠিক আছে। একটা কথা বলবো...
রাহাত: একটা না দশটা বলো...
নূরী: তুমি অনেক ভালো....
রাহাত: জাজাকাল্লাহু খায়রন। এত তাড়াতাড়ি বলো না এখনও যে অনেকটা পথ যাওয়া বাকি আমাদের.....
পরেরদিন সকাল বেলায় নূরী আর রাহাত বাজার করে নূরীদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো......
কলিং বেল বাজালো নূরী।
নূরীর মা: কে?
মা আমি নূরী।
গেট খুলতেই নূরী আর রাহাত দু'জনে সালাম দিলো।
নূরীর মা: কিরে....তুই আসবি তো ফোন দিবি না....
রাহাত: মা, আমি মানা করেছি সারপ্রাইজ দিবো বলে, এখন আপনাদের ব্যস্ত হতে হবে না, বাজার করে এনেছি; মজা করে রান্না করেন আজ সবাই মিলে একসাথে বসে খাবো।
আচ্ছা নূরী শুনো, যোহর নামাজের সময়টা হয়ে গেছে আমি নামাজটা পড়ে আসি
কেমন...
নূরী: আচ্ছা।
রাহাত নামাজের জন্য মসজিদে দিকে রওনা দিলো....
দুপর বেলায় সবাই একসাথে খেতে বসলো।
২ দিন থেকে নূরী আর রাহাত চলে গেলো।
আজ থেকে রাহাতের কলেজ যেতে হবে। তার ১০ দিনের ছুটি শেষ হয়েছে।
নূরী: এই, উঠো, ফজরের আজান হয়েছে ,উঠো।
নূরীর রাহাতের বালিশ সরিয়ে নূরীর কোলের উপর রাহাতের মাথা রাখলো।
রাহাত ও নূরীর কোমর ধরে তার কোলে শুয়ে আছে।
নূরী: এই যে, উঠো।
রাহাত: আর ১ মিনিট, অপেক্ষা কর।
নূরী: আমি অপেক্ষা করলে ও ইমাম সাহেব কিন্তু নামাজে দাড়িয়ে যাবে। না উঠলে কিন্তু পানি থেরাপি দিবো! আর ৩৫ মিনিট জামাত দাঁড়াতে।
রাহাত: আচ্ছা, উঠছি।
নূরী: যাও, গোসল টা করে মসজিদে যাও। আমি নামাজটা পড়ে নাস্তা রেডি করতেছি। আজকে তোমার কলেজে ও যেতে হবে।
রাহাত গোসল করে মসজিদে গেল। আর এদিকে নূরী নাস্তা রেডি করছে।
ফজর নামাজ শেষ করে বাসায় ফিরে আসলো রাহাত।
রাহাত নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে নূরীকে ডাকলে, নূরী পাখি, এই নূরী পাখি.......
এই মা আছে না, নূরী পাখি ডাকতেছো যে মা শুনে হাসতেছে। এই নেও তোমার দুপুরের খাবার।
রাহাত: হুম তুমি তো নূরী পাখি, যে আমার মনের আকাশে উড়ো। আমার দ্বীনি স্ত্রী।
এই বলে নূরীর কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। আচ্ছা থাকো...
নূরী: আমাকে ফোন দিয়ো পৌঁছে গেলে।
রাহাত: আচ্ছা।
রাহাত চলে গেলে আর নূরীর মনটা বিষন্ন হয়ে পড়লো।
দুপরে রাহাত নূরীকে ফোন দিলো;
রাহাত: আসসালামু আলাইকুম।কি করেন, নূরী পাখি।
নূরী: ওয়ালাইকুমস সালাম।এই তো নামাজটা পড়া শেষ করলাম। তুমি খেয়েছো.....
রাহাত: হুম নামাজটা পড়ে এখন খাচ্ছি আর তোমাকে ফোন দিলাম..... আচ্ছা খেয়ে নাও আমার আবার ২ টা ক্লাস নিতে হবে।
নূরী: আচ্ছা।
বিকালে বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়ে রাহাত মাগরিবের নামাজটা পড়তে গেলো....
নামাজ পড়ে রাহাতের কিছু বন্ধুদের সাথে দেখা করলো।
আদনান( রাহতের বন্ধু): কিরে.. বন্ধু কি খবর। কাজ-কর্ম কেমন চলো।
রাহাত: এতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোর ব্যবসার কি অবস্থা।
আদনান: হমম.. ভালোই। তো দোস্ত বিয়ে তো করলি কিন্তু ভাবিকে দেখলাম না এক নজরেও
রাহাত: ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত দেখে পারবি না। আর দোস্ত স্ত্রী কোন দেখানোর জিনিস না.... স্ত্রী হচ্ছে ঝিনুকে থাকা মুক্তার মতো যাকে আগলে রাখা উচিত।
আদনান: বুজছি তুই বউ পাগল।
রাহাত: হুম, জাজাকাল্লাহু খায়রন।
রাহাতের অনেক রাগ উঠছিলো কিন্তু রাহাত নিজেকে সংযত করে বাসার দিকে চলে গেল....
পিছন থেকে আদনান, অদিত আর সাদাত ডাক দিলো কিন্তু রাহাত তাতে সাড়া দিল না।
বাসা এসে সোজা রুমে চলে গেল রাহাত। নূরী বিষয়টা খেয়াল করলো।
নূরী: কি হয়েছে তোমার।
রাহাত: কিছু না।
নূরী: আরে বল না কি হয়েছে
রাহাত: ধমকের সুরে আরে... কিছু না যাও তো!
নূরী চুপচাপ চলে গেল বারান্দায়।
রাহাতের মনে মনে ভাবছে, এভাবে ধমক দেওয়া ঠিক হয় নি। আরে ওদের কথা শুনে আমি ওর সাথে কেন এভাবে ব্যবহার করবো।আমি বউ পাগল ওকে ভালো। আমি চাই আমার স্ত্রী আমার উপর সন্তুষ্ট থাকুক। এতে আল্লাহ্ সুবহানা তা'য়ালা ও আমার উপর সন্তুষ্ট থাকবে।
এদিকে নূরী বারান্দায় চোখে জল ফেলছে। রাহাত নূরীর কাছে গিয়ে চোখের জল মুছে দিয়ে বললো।
আই এম সরি, প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আর কখনোই এভাবে কথা বলবো না।
আসলে কিছুক্ষণ আগে আমার কিছু বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছিল তার মধ্যে একজন আমাকে বউ পাগল বললো তার জন্য একটু মাথা গরম হয়েছে। সরি..... আমার বউকে আমি অনেক ভালোবাসি এতে লোকে বউ পাগল বললে আমার কিছু যায় আসে না।
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নূরী পাখি।
নূরী: আমি ও তোমাকে ভালোবাসি। এই বলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো।
নূরী বললো, চলো আমরা বাচ্চার প্লানিং করি।
রাহাত বললো, ও আচ্ছা তাহলে দরজাটা লাগিয়ে আসি।
নূরী: কেন?
রাহাত: ওমা বাচ্চা নিবো তো দরজা বন্ধ করবো না।
নূরী এ কথা শুনে অনেক লজ্জা পেলো।
নূরী বলল: আমাদের ছেলে হলে নুরাত রাখবো আর মেয়ে হলে নুহা রাখবো। তোমার আর আমার নাম মিলে।
রাহাত: বাহ! সুন্দর নাম। এগুলোর অর্থ কি জানো।
নূরী: হুমম। নুরাত অর্থ আলো আর নুহা অর্থ হলো বুদ্ধিমতী।
রাহাত: মাশা আল্লাহ। খুব সুন্দর অর্থ।
নূরীর বললো, আচ্ছা তুমি বসো। আমি তোমার জন্য চা আর নাস্তা নিয়ে আসি।
চা খেতে খেতে রাহাত নূরীকে বললো,
নূরী একটা জিনিস তোমাকে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি। তুমি আমাকে বিয়ের আগে নিজের মুখ দেখাতে চাও নি কেন?
নূরী: আসলে আমি দেখতে চাইছিলাম তোমার কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ পর্দাশীল নাকি সৌন্দর্য। কারণ "সব পর্দাশীল নারীরা সুন্দর হয় না; আবার সব সুন্দর নারীরা পর্দাশীল হয় না"
রাহাত: তাহলে আমার ভাগ্য ভালো আমি দুইটাই পেয়েছি।
এই বলে নূরী আর রাহাত দুজনে হাসতে লাগলো........
কাল তো শুক্রবার। আমার কলেজ ও বন্ধ। চিন্তা করতেছি কাল দুপরে খাওয়া দাওয়া করে ঘুরতে বের হবো। তুমি কি বলো....
নূরী: কোথায় যাবা ঘুরতে।
রাহাত: আমাদের ভার্সিটির পাশে একটা লেক আছে সেখানে কফি শপ ও আছে। লেকের পরিবেশটাও ও সুন্দর। তুমি আমার দেওয়া মিষ্টি রংয়ের খিমারটা পড়বে কেমন।
নূরী: আচ্ছা ঠিক আছে।
পরের দিন....
রাহাত বলল, নূরী পাখি কি করো
নূরী: এইতো রান্না করতেছি।
রাহাত: আচ্ছা তোমাকে একটু হেল্প করি। অন্য সময় হেল্প করতে পারি না।
নূরী: লাগবে না, যাও রেস্ট নাও।
রাহাত: সমস্যা নাই। আচ্ছা আমি তো রান্না কিংবা কাটা-কুটা তেমন করতে পারি না তবে থালা-বাসনটা মেজে দি।
নূরী: কি বলো।
যাও তো...
রাহাত: আমাকে ভাগিয়ে দিচ্ছে ! তুমি রান্না কর আর আমি থালা বাসনগুলো মেজে দিই।
নূরী তো বুঝতে পেরেছি রাহাত শুনবে না।
................
দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে রাহাত আর নূরী রেডি হচ্ছে।
রাহাত: মিষ্টি রংয়ের খিমারটাই তোমাকে একদম হুরপরী হুরপরী লাগছে। এইজন্য দুই লাইনের কবিতা,
"তুমি নূরী, আমি রাহাত
থাকবো একসাথে জান্নাত"
নূরী: ইনশাআল্লাহ।
এরপর দু'জনে বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সায় উঠলো।
কিছুক্ষণ পর কেউ একজন রাহাতকে রিক্সার পিছন থেকে ডাক দিলো!
রাহাত, এই রাহাত!
রাহাত রিক্সার পিছনে ঘুরে দেখে শফিক।
মামা, একটু থামেন তো, রাহাত বললো।
রাহাত:শফিক তুই! কি খবর? কত দিন দেখা হয় না বন্ধু।
শফিক: এই তো দোস্ত ভালো। তো তুই নাকি বিয়ে করেছিস আমাকে জানালি না।
রাহাত: আসলেই একটু ব্যস্ত ছিলাম।
শফিক: তোকে ফেসবুকে ও পাই না আবার নম্বরটাও বন্ধ।
রাহাত: আসলে ফেসবুকে তেমন একটা একটিভ থাকি না এখন আর নম্বর চেঞ্জ করেছি আগেরটা বাদ।
রিক্সার পাশে থাকি নূরী সব শুনছিল......
শফিক: ওহ; দোস্ত তুই তমার ব্যপারে কিছু জানিস।
রাহাত: কেন কি হয়েছে।
শফিক: আরে আমাদের ভার্সিটি পাশের লেকে ওর লাশ পাওয়া গেছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ও যাদের ঘুরতে রবিন, সামাদ আর সিফাত এই তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আর কয়েকজন জড়িত আছে।
কথাগুলো শুনে আঁতকে উঠলো রাহাত।
রাহাত: কি বলিস। কবে হয়েছে এত কিছু।
শফিক: প্রায় ১ মাস। এখন এই মামলা তেমন সুরাহা হয় নি। আর বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা অবস্থা তুই জানিস। আচ্ছা থাক।
মামা, যান, রাহাত বললো।
নূরী ও রীতিমত হতবাক।
রাহাত: জানো, ওকে কতবার আমি মানা করেছে এসব ছেলের সাথে না মিশতে আমার কথা শুনে নি। খুব খারাপ লাগতেছে। দোয়া করি আল্লাহ্ সুবহানা তা'য়ালা যেন ওকে মাফ করে দে। আর দোষীরা যেন কঠিন শাস্তি পাই।
নূরী রাহাতকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর লেকের কাছে পৌঁছে রিক্সা থেকে নামলো রাহাত আর নূরী।
দুজন ঘোরাঘুরি করে আসরের নামাজের আগে রাহাত আর নূরী বাসায় পৌঁছালো।
কিছু দিন পর......
হঠাৎ একদিন রাহাতের বাসায় পুলিশ আসলো....
আপনি মি. রাহাত?
রাহাত:জি
আমরা তমার বিষয়ে কথা বলতে এসেছে। আপনি নিশ্চয়ই তমার ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত।
রাহাত: জি,আচ্ছা। ভিতরে আসুন ।
জি বলুন।
আমরা যতদূর শুনেছি আপনার সাথে তমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
রাহাত: জি, ছিল।
কত বছরের সম্পর্ক ছিল।
রাহাত: তিন বছরের অনার্স ফাস্ট ইয়ারে থাকাকালীন ওর সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পর আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়
আপনাদের সম্পর্ক বিচ্ছেদের কারণ?
রাহাত: ও কিছু আজে-বাজে ছেলেদের সাথে ঘোরাঘুরি যেটা আমার একেবারে পছন্দ ছিল না। আমি ওকে অনেক বার মানাও করেছি কিন্তু ও শুনেনি ঠিক এ কারণে ওই আমার সাথে সম্পর্কের বিচ্ছেদ করে।
আপনি কি ওই ছেলেগুলোকে চিনেন।
রাহাত: না, তেমন একটা না শুধু নাম শুনেছি কয়েকজনের।
আচ্ছা, ধন্যবাদ। মি.রাহাত।
রাহাত: আচ্ছা।
এদিকে নূরী তো ভয়ে অস্থির আর বার বার আল্লাহ'র কাছে দোয়া করেছিল।
রাহাত বলল, এই নূরী কি হয়েছে তোমার।
নূরী: কিছু না! একটু ভয় পাচ্ছিলাম তাই দোয়া-দরুদ পড়তেছিলাম।
ভয় পেয়ে না সমস্যা নাই। কিছু হবে না।
এভাবে দেখতে দেখতে অনেকটা মাস কেটে গেল।
এরপরে অবশ্য পুলিশ আর আসে নি। এখনও মামলা টা তেমন কোনো সুরাহা হয় নি।
হঠাৎ একদিন নূরী বমি করা শুরু করলো। নূরী প্রেগন্যান্সি কিট ব্যবহার করে দেখে পজিটিভ।
পজেটিভ! কি পরিমাণ যে আনন্দিত।
আচ্ছা বিষয়টা মা আর বাবাকে জানিয়ে আসি।
মায়ের কানে কানে নূরী বললো।
মা বললো, সত্যি আমি দাদি হতে চলছি। ওগো শুনো তুমি দাদা হতে চলেছো।
সত্যি! যাক আলহামদুলিল্লাহ।
আচ্ছা তাহলে রাহাতকে বিষয়টা জানানো দরকার।
মা, এখন না। ও এখন কাজে ব্যস্ত। ও আসুক তারপর জানাবো।
আচ্ছা, মা।
বিকালে বাড়ি ফিরলো, রাহাত।
রাহাত বললো, আজ যে গরম পড়েছে তার উপর একটা ক্লাসরুমে ফ্যান ছিলো নষ্ট। যাচ্ছে-তাই অবস্থা।
নূরী বলল, শুনো আমরা দুই থেকে তিনে হচ্ছি। কি বলো এগুলো। দুই থেকে তিনে হচ্ছি, কিহহ দুই থেকে তিন!
দুই থেকে তিন!দুই থেকে তিন!। সত্যি।
নূরী: জি, ।
আমি বাবা হতে চলেছি। আলহামদুলিল্লাহ। আজকে আমি অনেক খুশি।
মা, বাবা শুনেছেন আমি বাবা হতে চলেছি।
নূরী শুধু এই অদ্ভুত মানুষটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুগ্ধ হচ্ছিল।
আর মনে মনে ভাবছিল আল্লাহ্ সুবহানা তা'য়ালা কাছে হাজারো শুকরিয়া এরকম একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে।
রাহাত বলল, এখন থেকে তাহলে অনেক সাবধান হতে হবে আমার নূরী পাখি ও বাবুর জন্য।
বাবু তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো বাবা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
রাহাত বলল, আচ্ছা কালকে তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। আরেকটি বার পরীক্ষা করানো প্রয়োজনে।
নূরী: আচ্ছা।
পরেরদিন ডাক্তার ল্যাবেটরিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলে।
Congratulations! Mr. Rahat.
আপনি বাবা হতে চলছেন।
জি। আলহামদুলিল্লাহ।
এরপরে ডাক্তার কিছু ঔষধ আর বিভিন্ন পরামর্শ দিলো রাহাতকে।
............
রাহাত এখন থেকে নূরীর প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখছে। একটা কাজের মানুষ ও ঠিক করে দিছে।
রাহাত: এই নূরী পাখি। এই লোকমাটা নাও।
নূরী: আমার খাইতে ভালো লাগতেছে না। আরে, বাবুর জন্য খেতে হবে না। আমি আচার খাবো।
রাহাত: খাও এই লোকমাটা। আচার আমি অনলাইন থেকে অর্ডার দিবো আমার পরিচিত একজন আছে। তারা ভালো আচার বানায়। দোকানের আচার একদম ভালো না।
নূরী: ওকে। জাজাকাল্লাহু খায়রন অনেক যত্নে নিতেছো।
রাহাত: তো নিবো না। আমার বউ তো দশটা নাকি আমার একটা মাত্র বউ।
আমার নূরী পাখি।
এভাবে চলতে থাকে নূরী আর রাহাতের সুখময় জীবন।
..................
রাহাত: শুনো ইদের তো আর মাত্র ৭ দিন বাকি। কিছু তো কেনাকাটা করতে হবে। তোমার এ অবস্থায় শপিং যাওয়া সম্ভব না। তাই তুমি অনলাইন অর্ডার করবে যা কিনবা ঠিক আছে। আর আমি বাবা-মা আর আমার জন্য কিছু কেনাকাটা করি আনি।
নূরী: ওকে।
ইদের দিন.....
নূরী বাবা-মা আর ছোট ভাই নেহাল আসে রাহাতের বাসায়। দিনটি খুব আনন্দ কাটিয়ে দেই রাহাত নূরী।
..............
৪ মাস পর......
হঠাৎ করে নূরীর ব্যথা আরম্ভ হয়। সে রাহাতকে ডাকতে যায় অমনে পা পিছলে সিড়ি থেকে পড়ে যায়।
রাহাত তাড়াতাড়ি করে নূরীকে অ্যামবুলেন্স করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল নূরীর।
রাহাত প্রচন্ড আতঙ্কগ্রস্ত। নূরীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়।
১ ঘন্টা পর.....
ডাক্তার বের হয়ে আসলেন,
রাহাত: ডক্টর কি হয়েছে!
সিড়ি থেকে পড়ে যাওয়াতে উনি তলপেটে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। খুব খারাপ অবস্থা। অবস্থা খুব একটা ভালো না। আমরা আপাতত রক্তক্ষরণটা বন্ধ করেছি। আর ব্যথা কমানোর ইনজেকশন দিয়েছি। কিছুক্ষণ পর আমরা অপারেশন করবো।
তার আগে আমাদের একটা মিটিং করতে হবে এই অপারেশনের ব্যাপারে।
মা আর বাচ্চা যেকোনো একজনকে বাঁচানো সম্ভব!
মাকে বাঁচালে আপনার বাচ্চা মারা যাবে আবার বাচ্চাকে বাঁচালে আপনার স্ত্রী মারা যাব। আল্লাহ'কে ডাকুন।
তবে আমরা দুইজনকে বাঁচানো চেষ্টা করবো।
রাহাত: স্তব্ধ। কি বলেন ডক্টর।
আপনার স্ত্রী আপনাকে ডাকছে।
রাহাত ও.টির ভিতরে গেলো....
রাহাত: কান্নাবিজড়িত কন্ঠে, নূরী!!!
নূরী: হুম আমি জানি। আমি মারা যায় সমস্যা নাই আমার বাচ্চা টা যাতে ঠিক থাকে। তোমার না একটা বাচ্চা লাগতো। কত আমাকে বলতে কবে বাবা হবো। আমার এই বাচ্চার জন্য কত কষ্ট করছো।
রাহাত: না আমার দুইজনকে চাই।
নূরী: সমস্যা নাই। তোমার সাথে আমার জান্নাতে দেখা হবে।
রাহাত: না এগুলো বলেনা।
নূরী: তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি। ওয়াদা কর আমার সন্তানকে একজন দ্বীনদার মুমিন বানাবে। তাকে অবশ্যই দ্বীনি শিক্ষা দিবে।
রাহাত: হুম। ইনশাআল্লাহ।
নূরী: আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে।
রাহাত, নূরীকে জড়িয়ে ধরল তোমার কিছু না হবে না নূরী পাখি। এ বলে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো রাহাত নূরী ও কান্না করতে লাগলো।
...........
কিছুক্ষণ পর অপারেশন শুরু হলো।
রাহাত মসজিদে নামাজ পড়ে দোয়া করতে লাগলো।
আল্লাহ! আমার স্ত্রী আর সন্তান দুইজন যেন ঠিক থাকে।
কিছুক্ষণ পর রাহাতের মা ফোন দিলো: কান্না বিজড়িত কন্ঠে, বাবা নূরী আর নেই......
রাহাত কথাটা শুনে আর ঠিক রাখতে পারলে দৌড় দিলো হাসপাতালের দিকে; যেয়ে দেখে নূরী ঘুমিয়ে আছে। মাথায় সাদা কাপড় দিয়ে।
রাহাত আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না।
তার পাশে তার বাচ্চা কান্না করতেছে।
রাহাত, নূরী! এই নূরী পাখি উঠো না। তুমি আমাকে একা রেখে চলে গেলে। কেন চলে গেল। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচবো।
ডক্টর বললো, আপনার স্ত্রী বারবার বাচ্চাটাকে বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করছে। আমরা কি করতে পারি বলেন।
রাহাত বাচ্চাকে কোলে নিলো, একবারে নূরীর মতো হয়েছে।
..........................................................
বাবা, ও বাবা। তুমি যাবে না।
হঠাৎ করে রাহাতের হুশ ফিরলো। এতক্ষণ সে বিষয়গুলো ভাবতেছিল, চোখের এককোণে জল জমে গিয়েছে।
বাবা তুমি কি কান্না করেছো।
রাহাত: না,বাবা।
রাহাত আর বিয়ে করে নি ওই যে নূরী বলে গেছে একসাথে জান্নাতে থাকবো। নূরীর জায়গা অন্য কাউকে বসাতে পারবে না সে।
চল, নুরাত মাকে দেখে আসি।
রাহাত নূরীর কবর যিয়ারত করতে ছেলে নুরাতকে নিয়ে যাচ্ছে।
নূরীর কবরে কাছে পৌঁছে রাহাত কুরআন তেলাওয়াত করতে লাগলো। তারপর দোয়া করলো।
বাবা, তুমি সূরা ফাতিহা পড়ো। ছোট ছেলে সবে মাত্র কিছু সূরা শিখেছে।
রাহাত বলতে লাগলো,
নূরী দেখো তোমার ছেলে নুরাত একেবারে তোমার মত। তোমার পছন্দ করা নাম রেখেছি। চিন্তা করো না আমি এখন ঠিক সময়ে ফজরের নামাজে উঠি। আর কেউ ডেকে না, কেউ হাত ও বুলিয়ে দেই না।
এ বলে চোখের জল ছেড়ে দিলো রাহাত।
হঠাৎ করে রাহাত দেখলো আকাশে একটা পাখি নূরীর কবর বরাবর উঠতেছে।
রাহাত বললো, হয়তো এইটাই আমার নূরী পাখি, যে আমার মনের আকাশে উড়ে; আমার দ্বীনি স্ত্রী।
-----------------------------------------------------
(সমাপ্ত)
জাজাকাল্লাহু খায়রন
-----------------------------------------------------
রাহাত একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ৩য় বর্ষে পড়াশোনা করছে।
তমা নামে একটি মেয়েকে সে ভালোবাসে। তমা হচ্ছে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে স্মাট ও সুদর্শন মেয়ে।
রাহাতের সাথে তমার সম্পর্ক অনার্স ১ম বর্ষ থেকে। রাহাত, তমাকে প্রথম প্রপোজ করেছিল। তমা ও রাহাতের প্রপোজে রাজি হয়েছিল।
........কিছু দিন যাবত তমার কিছু আচরণে রাহাত কষ্ট পাচ্ছিল। তমার স্বাধীন প্রিয় মনোভাব রাহাতের একদমই পছন্দ হচ্ছিল না। তমার ভার্সিটির আজে-বাজে ছেলেদের সাথে দাড়িয়ে দাড়িয়ে গল্প করা রাহাতের একদম পছন্দ হচ্ছিল না।
তমা: কি অবস্থা কেমন আছো?
রাহাত: তোমাকে না বলেছি এসব আজে-বাজে ছেলেদের সাথে ঘুরবে না।
তমা: আরে.... ওরা আমার বন্ধু!
রাহাত: কিসের বন্ধু!!! তোমার মেয়ে ফ্রেন্ড নেই তাদের সাথে গল্প করো এসব ছেলে কেন।
তমা: এরকম ভাবে কথা বলছো কেন। না আমি তাদের সাথেই ঘুরবো, গল্প করবো। আমাকে ভালোবাসার সময় মনে ছিল না, আমি স্বাধীন প্রিয় মানুষ। এখন এগুলো কেন বলছো! আরে তোমার ভাগ্য আমার মত মেয়ে তোমাকে ভালোবাসে। যত্তসব!!
রাহাত: তমা এভাবে কেন বলেছো।
তমা: বলবো না তো কি। আমাকে ভালোবাসার কোন যোগ্যতায় নাই তোমার। তোমার সাথে কোন সম্পর্ক রাখতে চাই না।
Let's Break up!
রাহাত: কাঁদো কাঁদো সুরে....তমা !!!
তমা: Good Bye
এই বলে তমা চলে গেল। এক পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাহাত আর চোখ দিয়ে জল বেয়ে বেয়ে পড়ছে।
রাহাত বাসায় চলে আসলো। প্রচুর কষ্ট হচ্ছে তার পাশাপাশি অনেক ক্ষোভ ও হচ্ছে,
রাহাত: এই আমি কাকে ভালবাসলাম, যে কিনা আমাকে একটু সম্মান ও করে না। আল্লাহ্ আমাকে তুমি ক্ষমা কর। অনেক হয়েছে পাপ আর না এবার নিজেকে পরিশুদ্ধ করবো। আর এই সব হারাম রিলেশনে জড়াবো না। সময় হয়েছে পরিবর্তন হওয়ার। দ্বীনের পথে পা বাড়ানোর......
রাহাত নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করলো। প্রতিদিন ফজর নামাজের পর কুরআন তিলাওয়াত করতো আর আল্লাহ্ সুবহানা তা'য়ালার কাছে বেশি বেশি দোয়া করতো। এখন তার জীবনে দুইটি ইচ্ছে:
"হালাল চাকরির ব্যবস্থা ও নেককার স্ত্রী"। আর নেককার স্ত্রী পেতে হলে তো তাকে চরিত্রবান হতে হবে। কারণ পবিত্র কুরআনে বলা আছে ,
"চরিত্রহীনা নারী চরিত্রহীন পুরুষের জন্য, আর চরিত্রহীন পুরুষ চরিত্রহীনা নারীর জন্য। সৎ চরিত্রবতী নারী সৎ চরিত্রবান পুরুষের জন্য, আর সৎ চরিত্রবান পুরুষ সৎ চরিত্রবতী নারীর জন্য। (আল কুরআন)
এই জন্য সে চাকরির পড়াশোনা ও শুরু করল। পাশাপাশি তাবলীগ জামাতে ও জুড়ে গেল। দাড়ি ও বড় রেখেছে। তার এই পরিবর্তন দেখে মা-বাবা ও অনেক খুশি হলেন।
৩ বছর পর.....
রাহাত আলহামদুলিল্লাহ একটি সরকারি কলেজের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করে।
চাকরি ব্যবস্থা হয়েছে এখন রাহাতের বিয়ের কথা চলছে........
রাহাতের মা বললেন: আচ্ছা রাহাত তোর কেমন মেয়ে পছন্দ?
রাহাত: মা আমি যাকে বিয়ে করবো সে অবশ্যই নেককার, দ্বীনি ও পর্দাশীল হতে হবে। যাকে দেখলে আল্লাহ্ কে স্মরণ হয়।
রাহাতের মা তার ছেলের চেহারা তাকিয়ে মলিন দৃষ্টিতে কথা গুলো শুনছিলেন।
আচ্ছা আমি আর তোর বাবা দেখছি এরকম মেয়ে তোর পছন্দ অনুযায়ী পাই কিনা।
২ দিন পর......
রাহাতের মা: রাহাত শুন, একটি মেয়ে আমরা পেয়েছি সে দ্বীনি এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ কালাম পড়ে ও পর্দা ও করে। নাম নূরী জান্নাত। কিন্তু একটা সমস্যা আছে।
রাহাত: কি মা... সে কোনো ছবি দিবে না। আমাদের কে যেতে বলেছে। তাদের বাড়ি গেলে তুই একমাত্র তাকে দেখতে পারবি। আর অন্য কেউ না।
রাহাতের মেয়েটির নামটি অনেক পছন্দ হওয়ার পাশাপাশি তার এই শর্ত ও রাহাতের মনে ব্যপক কৌতুহুল সৃষ্টি করেছে।
রাহাত: আচ্ছা কবে যেতে হবে।
রাহাতের বাবা বলল: কাল চল, আমি তাদের বলে দিচ্ছি।
রাহাত: আচ্ছা, বাবা।
পরের দিন রাহাত ও তার বাবা-মা নূরী জান্নাতের বাসায় গেলেন।
রাহাত নূরীর বাবাকে সালাম দিলেন,
আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
নূরীর বাবা: জি, বাবা আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
রাহাত: জি, আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি।
ভাই বসেন , সবাই বসেন।
নূরীর বাবা বললেন, ভাই, আমার মেয়েটাকে অনেক আদর যত্ন করে বড় করেছি। ওর আবদার ইচ্ছা গুলো পূরণ করার চেষ্টা করেছি। কতটুকু পেরেছি জানি না, আল্লাহ্ ভালো জানেন। তো ভাই রাহাত তো আপনার একমাত্র ছেলে।
রাহাতের বাবা: জি ভাই রাহাত আমার একমাত্র ছেলে।
নূরীর বাবা বললেন, আপনার ছেলের মেয়ে পছন্দ হওয়ার শর্ত গুলো, আমার ভালো লেগেছে। আজকাল আধুনিক যুগের ছেলেদের এমন মন মানসিকতা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
কিছুক্ষণ পর নূরীর মা, নূরীকে নিয়ে আসলো। নূরী সবাইকে সালাম দিলেন।
আসসালামু আলাইকুম । তারপর বাবা পাশে বসে পড়লেন।
একদম আপাদমস্তক তার পর্দা করা। রাহাত দেখে সত্যি খুব ভালো লাগছে। এমন মেয়েকে তো সে তার জীবনে চাই।
নূরীর বাবা বললেন, ওদেরকে একটু কথা বলার সুযোগ করে দিতে হবে। নূরী আর রাহাত তোমরা ছাদে চলে যাও।
নূরী ও রাহাত সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠল।
রাহাত: আসসালামু আলাইকুম। আপনি কেমন আছেন ?
নূরী: জি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন ?
রাহাত: জি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো।
নূরী: আপনি তো টিচার তাই না।
রাহাত: জি।
নূরী: কোন বিষয় পড়ান।
রাহাত: জি, ব্যবস্থাপনা।
নূরী: ওহ, আচ্ছা।
রাহাত: আপনি কি পড়াশোনা করছেন।
নূরী: জি অনার্স ফাস্ট ইয়ার পর্যন্ত পড়াশোনা করেছি। আর পড়াশোনা এগোয় নি। এখন কিছু বাচ্চাদের আরবি পড়ায়।
রাহাত: মাশা আল্লাহ, খুব ভালো। আচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস করি যদি কিছু মনে না করেন?
নূরী: হুম, বলেন।
রাহাত: আচ্ছা, আপনার কি আগে কোনো সম্পর্ক ছিল?
নূরী: না, হারাম রিলেশনে আমি নিজেকে জড়াতে চাই নি কখনই। কেন, আপনার ছিল?
রাহাত: একটু ইতস্ততঃ হয়ে, জি ছিল একজনের সাথে । তারপর রাহাত পুরো কাহিনীটা নূরীকে বললো।
নূরী: হুম, আজকাল আধুনিক মেয়েরা এমনই।
রাহাত: তবে তাকে ধন্যবাদ দিতে চাই কারণ সে আমার সাথে ব্রেক-আপ না করলে আজকে আমার এই পরিবর্তনটা হতো না।
নূরী: হুম, ঠিক বলছেন। আপনার শর্তগুলো আমাকে কিছুটা আশ্চর্য করছে কারণ আধুনিক যুগের ছেলেরা আবার অন্যরকম মেয়ে চাই পর্দাশীল খুব কমই খোঁজে।
রাহাত: তাহলে আমাকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে।
নূরী: জি হয়েছে। তবে আমার একটা শর্ত আছে?
রাহাত: জি, কি শর্ত?
নূরী: আপনি আমাকে বিয়ে করবেন তবে আমার মুখ এখন দেখতে পারবেন না।
রাহাত: কেন? দেখে বিয়ে করা তো উচিত?
নূরী: হুম, দেখে বিয়ে করা তো উচিত। তবে আমাকে বিয়ে করতে চাইলে না দেখে করতে হবে। বিয়ে হওয়ার পরে দেখতে পারবেন।এর আগেও দুইজন আমাকে দেখতে আসছিল তাদের কেউ এই শর্ত দিয়েছিলাম তারা রাজি ছিল না।
রাহাত একটু নার্ভাস হয়ে পড়লো, কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো, আচ্ছা ঠিকাছে।
নূরী: আচ্ছা, তাহলে নিচে চলুন।
রাহাত: জি, চলুন।
রাহাত মনে মনে চিন্তা করলো আল্লাহ্ গো..... ভুল করলাম না তো।
রাহাতের বাবা রাহাতকে কানে কানে ফিস ফিস করে বললো, কি রে মেয়ে পছন্দ হয়েছে। রাহাত বললো, জি হয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ আমার ছেলের আপনার মেয়েকে পছন্দ।
নূরী মা তোমার পছন্দ হয়েছে।
নূরী: জি, হয়েছে।
আলহামদুলিল্লাহ।
রাহাত: আমার কিছু শর্ত আছে।
নূরীর বাবা: কি, বাবা। বলো।
রাহাত: জি,
আমার পরিবারের কোন দাবি নেই।
বিয়েটা খুব ছোট পরিসরে হবে।
আপনার আর আমার পরিবারে আত্মীয়-স্বজনদের শুধুমাত্র আমন্ত্রণ জানানো হবে।
উনাকে(নূরীকে দিকে লক্ষ্য করে) কোনো নন-মাহরাম দেখতে পারবে না। কোনো পুরুষ মানুষ ও দেখতে পারবে না।
আর আপনাদের খরচের অর্ধেক অংশ আমি বহন করবো।
নূরীর বাবা : রাহাত বরকে কিছু দিতে হয়, বাবা।
রাহাত: না, আঙ্কেল। যদি আপনি মনে করেন যে আমি বিয়ের পর খোঁটা দিতে পারি সে বাবার বাড়ি থেকে কি নিয়ে আসছো তাহলে আমার মনে হয় এরকম ছেলের কাছে বিয়ে না দেওয়াই উচিত। আর আঙ্কেল, কিছু দিতেই যদি হয় তাহলে কিছু গরিব-দুঃখীদের একবেলা পেটপুরে খাওয়াবেন। তারা মন ভরে দোয়া করে দিবেন।
আর আঙ্কেল, আরেকটা বিষয় আমার মোহরানা আমি ১ লাখের বেশি দিতে পারবো না। এটাই আপাতত আমার নিজের জমানো টাকা।
নূরী শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে কথা গুলো শুনছিলো। অবশ্যই একটু অবাক ও হয়েছে ভেবেছিলো কোন কিছুর দাবি করতে পারে রাহাত কিন্তু না এতো একেবারে ভিন্ন এক মানুষ। এটা ভাবতে ভাবতে শান্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
নূরীর বাবা: আচ্ছা বাবা, আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিয়ে তোমাদেরকে জানিয়ে দিবো।
রাহাত: আচ্ছা। আসসালামু আলাইকুম। ভালো থাকবেন। তাহলে আঙ্কেল আমরা তাহলে আজ উঠি।
নূরীর বাবা: আচ্ছা বাবা, সাবধানে যাও।
ভাই(রাহাতের বাবা) ভালো থাকবেন। আসসালামু আলাইকুম।
রাহাতের পরিবার চলে গেলো।
দুই দিন পর.......
রাহাতের মা: রাহাত, এই রাহাত।
রাহাত: জি, মা।
রাহাতের মা: আরে... শুনেছিস। নূরীর পরিবার রাজি হয়েছে।
রাহাত: সত্যি....মা।
রাহাতের মা: হুম।
রাহাত: যাক... আলহামদুলিল্লাহ। অবশেষে এই স্বপ্নটাও সত্যি হচ্ছে একজন দ্বীনি স্ত্রী পাওয়া।
খুব সুন্দরভাবে নূরী ও রাহাতের বিয়ে সম্পন্ন হলো।
বাসর রাতে.........
নূরী খাটের উপর বসে আছে একদম সম্পূর্ণ পর্দা করে।
রাহাত রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো। রাহাত একটু নার্ভাস।
নূরীর পাশে বসতে নূরী সালাম দিলো,
আসসালামু আলাইকুম।
রাহাত: ওয়ালাইকুমস সালাম। এরপরে কি বলবে তা ভাবতে লাগলো.....
নূরী: কি হলো, কিছু বলেন না কেন।
রাহাত: আচ্ছা আমরা এখন তো স্বামী-স্ত্রী তো আপনি থেকে তুমি বলা যায় না।
নূরী: আচ্ছা । তুমি বলবো।
রাহাত: আচ্ছা আমি একটু ফ্রেস হয়ে আসি আপনি.... সরি তুমি বসো।
নূরী: আচ্ছা।
৫ মিনিট পর রাহাত বের হলো।
রাহাত: আচ্ছা বিয়ে তো হয়ে গেল। এখনও তোমাকে আমি দেখতে পারি নাই। এখন একটু মুখটা দেখান...
নূরী: জি তোমাকে অপেক্ষা করিয়েছে । এই বলে নিজের হিজাবটা খুলে ফেললো।
রাহাত: নূরীর দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেল। এই আমি কি দেখতেছি। এত সুন্দর একটা মেয়ে কিভাবে হয় যেন তার মুখ থেকে মুক্তা ঝরছে।
নূরী: কি, পছন্দ হয়েছে।
রাহাত: মুচকি হাসি দিয়ে.... একটু লজ্জা পেয়ে বললো হুম আলবাত হয়েছে।
নূরী ও কিছুটা লজ্জা পেল।
রাহাত: ওহ আচ্ছা একটা কথা তো ভুলেই গেলাম। এই নেন ১ লাখ টাকার চেক। এটা আপনার মোহরানার টাকা। এটা আপনার সম্মানি আর আমার তরফ থেকে উপহার। আর একটা উপহার আছে। এই বলে নূরীকে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিলো। এতে আপনার জন্য একটা মিষ্টি রংয়ের খিমার, হাত ও পা মোজা আছে। আর একটা জায়নামাজ, তসবি ও আতর রয়েছে।
নূরী কান্না বিজড়িত কন্ঠে, আলহামদুলিল্লাহ আমি অনেক খুশি।
রাহাত: ওমা আমার নূরী পাখিটা দেখি কান্না করতেছে।
এই বলে রাহাত নূরীকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
নূরী বলল: তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না তো।
রাহাত: না কোথাও যাবে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
নূরী রাহাতের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলল, মৃত্যুর কথা বলো না।
রাহাত: আচ্ছা বলবো না।
তোমার সব স্মৃতি ছেড়ে আমার কাছে চলে আসছো। বাবা-মা কে মনে পড়ছে না।
নূরী: হুম। অনেক মনে পড়তেছে বাবা-মা কে, আমার প্রিয় রুম টাকে আমার বাসার ছাদটাকে আর ছাদের দোলনাটাকে।
রাহাত: হুম একজন নারীর এটা অনেক বড় একটা স্যাক্রিফাইস নিজের স্মৃতি গুলো আর বাবা-মাকে ছেড়ে আসা।তাহলে একটা কাজ করি আমি ঘর জামাই হয়ে যায়! কি বলো?
নূরী এ কথা শুনে হাসতে লাগলো।
রাহাত নূরীর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
পরের দিন সকাল ১১.০০ টায় রাহাত নূরীর বাবাকে ফোন দিলো।
রাহাত: হ্যালো; আসসালামু আলাইকুম। বাবা কেমন আছেন?
নূরীর বাবা: ওয়ালাইকুমস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো। বাবা। তোমরা কেমন আছো?
রাহাত: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। বাবা সকাল ১১ টা বেজে এখনো ফোন দিলেন না। মেয়েকে ভুলে গেলেন।
নূরীর বাবা: না, বাবা। আসলে একটু ব্যস্ত ছিলাম। একটু পরেই ফোন দিতাম।
রাহাত: আচ্ছা নূরীর সাথে কথা বলেন
এই, নূরী,ধরো তোমার বাবা।
নূরী: আব্বু, আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?
নূরীর বাবা: ওয়ালাইকুমস সালাম। আলহামদুলিল্লাহ, ভালো, মা। কেমন আছিস, কি করিস, নাস্তা করেছিস, মা?
নূরী: জি, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। নাস্তা করে এখন একটু আমার কাপড়গুলো ঠিক করে গুছিয়ে নিচ্ছে।
আব্বু, আপনি নাস্তা করছেন; আম্মু নাস্তা করছে, নেহাল কি করে আর আপনার সকালের ঔষধগুলো খাইছেন? আমি কিন্তু নাই এখন মনে করে দেওয়ার জন্য!
নূরীর বাবা: হুমম, আমরা সবাই নাস্তা করছি, নেহাল স্যারের বাসায় পড়তে গেছে।
নূরী: আব্বু, তোমাদের অনেক মনে পড়েছে এ বলে কেঁদে দিলো, নূরী?
রাহাত দূর থেকে একদৃষ্টিতে তার নূরী পাখিটার দিকে তাকিয়ে আছে....
রাহাত: কিহ...কথা হয়েছে।
নূরী: হ্যাঁ, হয়েছে।
রাহাত: তো কান্না করছো কেন?
নূরী: মনে পড়তেছে অনেক; তাই।
আচ্ছা চল কালকে ঘুরে আসি তোমার বাসায়; তবে তাদেরকে জানানো যাবে না। এটা সারপ্রাইজ। আমরা এখান থেকে সব বাজার করে নিয়ে যাবো। তারপর ওখানে গিয়ে রান্না করে, জমপেশ খাওয়া দাওয়া করবো।
নূরী: না, ফোন দিয়ে জানিয়ে দি।
রাহাত: না, তাদেরকে এখন ব্যস্ত করার প্রয়োজন নেই। এমনেও অনেক খাটা-খাটুনি গিয়েছে।
নূরী: আচ্ছা, ঠিক আছে। একটা কথা বলবো...
রাহাত: একটা না দশটা বলো...
নূরী: তুমি অনেক ভালো....
রাহাত: জাজাকাল্লাহু খায়রন। এত তাড়াতাড়ি বলো না এখনও যে অনেকটা পথ যাওয়া বাকি আমাদের.....
পরেরদিন সকাল বেলায় নূরী আর রাহাত বাজার করে নূরীদের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো......
কলিং বেল বাজালো নূরী।
নূরীর মা: কে?
মা আমি নূরী।
গেট খুলতেই নূরী আর রাহাত দু'জনে সালাম দিলো।
নূরীর মা: কিরে....তুই আসবি তো ফোন দিবি না....
রাহাত: মা, আমি মানা করেছি সারপ্রাইজ দিবো বলে, এখন আপনাদের ব্যস্ত হতে হবে না, বাজার করে এনেছি; মজা করে রান্না করেন আজ সবাই মিলে একসাথে বসে খাবো।
আচ্ছা নূরী শুনো, যোহর নামাজের সময়টা হয়ে গেছে আমি নামাজটা পড়ে আসি
কেমন...
নূরী: আচ্ছা।
রাহাত নামাজের জন্য মসজিদে দিকে রওনা দিলো....
দুপর বেলায় সবাই একসাথে খেতে বসলো।
২ দিন থেকে নূরী আর রাহাত চলে গেলো।
আজ থেকে রাহাতের কলেজ যেতে হবে। তার ১০ দিনের ছুটি শেষ হয়েছে।
নূরী: এই, উঠো, ফজরের আজান হয়েছে ,উঠো।
নূরীর রাহাতের বালিশ সরিয়ে নূরীর কোলের উপর রাহাতের মাথা রাখলো।
রাহাত ও নূরীর কোমর ধরে তার কোলে শুয়ে আছে।
নূরী: এই যে, উঠো।
রাহাত: আর ১ মিনিট, অপেক্ষা কর।
নূরী: আমি অপেক্ষা করলে ও ইমাম সাহেব কিন্তু নামাজে দাড়িয়ে যাবে। না উঠলে কিন্তু পানি থেরাপি দিবো! আর ৩৫ মিনিট জামাত দাঁড়াতে।
রাহাত: আচ্ছা, উঠছি।
নূরী: যাও, গোসল টা করে মসজিদে যাও। আমি নামাজটা পড়ে নাস্তা রেডি করতেছি। আজকে তোমার কলেজে ও যেতে হবে।
রাহাত গোসল করে মসজিদে গেল। আর এদিকে নূরী নাস্তা রেডি করছে।
ফজর নামাজ শেষ করে বাসায় ফিরে আসলো রাহাত।
রাহাত নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে নূরীকে ডাকলে, নূরী পাখি, এই নূরী পাখি.......
এই মা আছে না, নূরী পাখি ডাকতেছো যে মা শুনে হাসতেছে। এই নেও তোমার দুপুরের খাবার।
রাহাত: হুম তুমি তো নূরী পাখি, যে আমার মনের আকাশে উড়ো। আমার দ্বীনি স্ত্রী।
এই বলে নূরীর কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিলো। আচ্ছা থাকো...
নূরী: আমাকে ফোন দিয়ো পৌঁছে গেলে।
রাহাত: আচ্ছা।
রাহাত চলে গেলে আর নূরীর মনটা বিষন্ন হয়ে পড়লো।
দুপরে রাহাত নূরীকে ফোন দিলো;
রাহাত: আসসালামু আলাইকুম।কি করেন, নূরী পাখি।
নূরী: ওয়ালাইকুমস সালাম।এই তো নামাজটা পড়া শেষ করলাম। তুমি খেয়েছো.....
রাহাত: হুম নামাজটা পড়ে এখন খাচ্ছি আর তোমাকে ফোন দিলাম..... আচ্ছা খেয়ে নাও আমার আবার ২ টা ক্লাস নিতে হবে।
নূরী: আচ্ছা।
বিকালে বাসায় ফিরে ফ্রেস হয়ে রাহাত মাগরিবের নামাজটা পড়তে গেলো....
নামাজ পড়ে রাহাতের কিছু বন্ধুদের সাথে দেখা করলো।
আদনান( রাহতের বন্ধু): কিরে.. বন্ধু কি খবর। কাজ-কর্ম কেমন চলো।
রাহাত: এতো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। তোর ব্যবসার কি অবস্থা।
আদনান: হমম.. ভালোই। তো দোস্ত বিয়ে তো করলি কিন্তু ভাবিকে দেখলাম না এক নজরেও
রাহাত: ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত দেখে পারবি না। আর দোস্ত স্ত্রী কোন দেখানোর জিনিস না.... স্ত্রী হচ্ছে ঝিনুকে থাকা মুক্তার মতো যাকে আগলে রাখা উচিত।
আদনান: বুজছি তুই বউ পাগল।
রাহাত: হুম, জাজাকাল্লাহু খায়রন।
রাহাতের অনেক রাগ উঠছিলো কিন্তু রাহাত নিজেকে সংযত করে বাসার দিকে চলে গেল....
পিছন থেকে আদনান, অদিত আর সাদাত ডাক দিলো কিন্তু রাহাত তাতে সাড়া দিল না।
বাসা এসে সোজা রুমে চলে গেল রাহাত। নূরী বিষয়টা খেয়াল করলো।
নূরী: কি হয়েছে তোমার।
রাহাত: কিছু না।
নূরী: আরে বল না কি হয়েছে
রাহাত: ধমকের সুরে আরে... কিছু না যাও তো!
নূরী চুপচাপ চলে গেল বারান্দায়।
রাহাতের মনে মনে ভাবছে, এভাবে ধমক দেওয়া ঠিক হয় নি। আরে ওদের কথা শুনে আমি ওর সাথে কেন এভাবে ব্যবহার করবো।আমি বউ পাগল ওকে ভালো। আমি চাই আমার স্ত্রী আমার উপর সন্তুষ্ট থাকুক। এতে আল্লাহ্ সুবহানা তা'য়ালা ও আমার উপর সন্তুষ্ট থাকবে।
এদিকে নূরী বারান্দায় চোখে জল ফেলছে। রাহাত নূরীর কাছে গিয়ে চোখের জল মুছে দিয়ে বললো।
আই এম সরি, প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আর কখনোই এভাবে কথা বলবো না।
আসলে কিছুক্ষণ আগে আমার কিছু বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছিল তার মধ্যে একজন আমাকে বউ পাগল বললো তার জন্য একটু মাথা গরম হয়েছে। সরি..... আমার বউকে আমি অনেক ভালোবাসি এতে লোকে বউ পাগল বললে আমার কিছু যায় আসে না।
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি নূরী পাখি।
নূরী: আমি ও তোমাকে ভালোবাসি। এই বলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো।
নূরী বললো, চলো আমরা বাচ্চার প্লানিং করি।
রাহাত বললো, ও আচ্ছা তাহলে দরজাটা লাগিয়ে আসি।
নূরী: কেন?
রাহাত: ওমা বাচ্চা নিবো তো দরজা বন্ধ করবো না।
নূরী এ কথা শুনে অনেক লজ্জা পেলো।
নূরী বলল: আমাদের ছেলে হলে নুরাত রাখবো আর মেয়ে হলে নুহা রাখবো। তোমার আর আমার নাম মিলে।
রাহাত: বাহ! সুন্দর নাম। এগুলোর অর্থ কি জানো।
নূরী: হুমম। নুরাত অর্থ আলো আর নুহা অর্থ হলো বুদ্ধিমতী।
রাহাত: মাশা আল্লাহ। খুব সুন্দর অর্থ।
নূরীর বললো, আচ্ছা তুমি বসো। আমি তোমার জন্য চা আর নাস্তা নিয়ে আসি।
চা খেতে খেতে রাহাত নূরীকে বললো,
নূরী একটা জিনিস তোমাকে জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি। তুমি আমাকে বিয়ের আগে নিজের মুখ দেখাতে চাও নি কেন?
নূরী: আসলে আমি দেখতে চাইছিলাম তোমার কাছে কোনটা গুরুত্বপূর্ণ পর্দাশীল নাকি সৌন্দর্য। কারণ "সব পর্দাশীল নারীরা সুন্দর হয় না; আবার সব সুন্দর নারীরা পর্দাশীল হয় না"
রাহাত: তাহলে আমার ভাগ্য ভালো আমি দুইটাই পেয়েছি।
এই বলে নূরী আর রাহাত দুজনে হাসতে লাগলো........
কাল তো শুক্রবার। আমার কলেজ ও বন্ধ। চিন্তা করতেছি কাল দুপরে খাওয়া দাওয়া করে ঘুরতে বের হবো। তুমি কি বলো....
নূরী: কোথায় যাবা ঘুরতে।
রাহাত: আমাদের ভার্সিটির পাশে একটা লেক আছে সেখানে কফি শপ ও আছে। লেকের পরিবেশটাও ও সুন্দর। তুমি আমার দেওয়া মিষ্টি রংয়ের খিমারটা পড়বে কেমন।
নূরী: আচ্ছা ঠিক আছে।
পরের দিন....
রাহাত বলল, নূরী পাখি কি করো
নূরী: এইতো রান্না করতেছি।
রাহাত: আচ্ছা তোমাকে একটু হেল্প করি। অন্য সময় হেল্প করতে পারি না।
নূরী: লাগবে না, যাও রেস্ট নাও।
রাহাত: সমস্যা নাই। আচ্ছা আমি তো রান্না কিংবা কাটা-কুটা তেমন করতে পারি না তবে থালা-বাসনটা মেজে দি।
নূরী: কি বলো।
যাও তো...
রাহাত: আমাকে ভাগিয়ে দিচ্ছে ! তুমি রান্না কর আর আমি থালা বাসনগুলো মেজে দিই।
নূরী তো বুঝতে পেরেছি রাহাত শুনবে না।
................
দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে রাহাত আর নূরী রেডি হচ্ছে।
রাহাত: মিষ্টি রংয়ের খিমারটাই তোমাকে একদম হুরপরী হুরপরী লাগছে। এইজন্য দুই লাইনের কবিতা,
"তুমি নূরী, আমি রাহাত
থাকবো একসাথে জান্নাত"
নূরী: ইনশাআল্লাহ।
এরপর দু'জনে বাসা থেকে বের হয়ে রিক্সায় উঠলো।
কিছুক্ষণ পর কেউ একজন রাহাতকে রিক্সার পিছন থেকে ডাক দিলো!
রাহাত, এই রাহাত!
রাহাত রিক্সার পিছনে ঘুরে দেখে শফিক।
মামা, একটু থামেন তো, রাহাত বললো।
রাহাত:শফিক তুই! কি খবর? কত দিন দেখা হয় না বন্ধু।
শফিক: এই তো দোস্ত ভালো। তো তুই নাকি বিয়ে করেছিস আমাকে জানালি না।
রাহাত: আসলেই একটু ব্যস্ত ছিলাম।
শফিক: তোকে ফেসবুকে ও পাই না আবার নম্বরটাও বন্ধ।
রাহাত: আসলে ফেসবুকে তেমন একটা একটিভ থাকি না এখন আর নম্বর চেঞ্জ করেছি আগেরটা বাদ।
রিক্সার পাশে থাকি নূরী সব শুনছিল......
শফিক: ওহ; দোস্ত তুই তমার ব্যপারে কিছু জানিস।
রাহাত: কেন কি হয়েছে।
শফিক: আরে আমাদের ভার্সিটি পাশের লেকে ওর লাশ পাওয়া গেছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। ও যাদের ঘুরতে রবিন, সামাদ আর সিফাত এই তিনজনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আর কয়েকজন জড়িত আছে।
কথাগুলো শুনে আঁতকে উঠলো রাহাত।
রাহাত: কি বলিস। কবে হয়েছে এত কিছু।
শফিক: প্রায় ১ মাস। এখন এই মামলা তেমন সুরাহা হয় নি। আর বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা অবস্থা তুই জানিস। আচ্ছা থাক।
মামা, যান, রাহাত বললো।
নূরী ও রীতিমত হতবাক।
রাহাত: জানো, ওকে কতবার আমি মানা করেছে এসব ছেলের সাথে না মিশতে আমার কথা শুনে নি। খুব খারাপ লাগতেছে। দোয়া করি আল্লাহ্ সুবহানা তা'য়ালা যেন ওকে মাফ করে দে। আর দোষীরা যেন কঠিন শাস্তি পাই।
নূরী রাহাতকে সান্ত্বনা দিতে লাগলো।
কিছুক্ষণ পর লেকের কাছে পৌঁছে রিক্সা থেকে নামলো রাহাত আর নূরী।
দুজন ঘোরাঘুরি করে আসরের নামাজের আগে রাহাত আর নূরী বাসায় পৌঁছালো।
কিছু দিন পর......
হঠাৎ একদিন রাহাতের বাসায় পুলিশ আসলো....
আপনি মি. রাহাত?
রাহাত:জি
আমরা তমার বিষয়ে কথা বলতে এসেছে। আপনি নিশ্চয়ই তমার ঘটনাটি সম্পর্কে অবগত।
রাহাত: জি,আচ্ছা। ভিতরে আসুন ।
জি বলুন।
আমরা যতদূর শুনেছি আপনার সাথে তমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
রাহাত: জি, ছিল।
কত বছরের সম্পর্ক ছিল।
রাহাত: তিন বছরের অনার্স ফাস্ট ইয়ারে থাকাকালীন ওর সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পর আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়
আপনাদের সম্পর্ক বিচ্ছেদের কারণ?
রাহাত: ও কিছু আজে-বাজে ছেলেদের সাথে ঘোরাঘুরি যেটা আমার একেবারে পছন্দ ছিল না। আমি ওকে অনেক বার মানাও করেছি কিন্তু ও শুনেনি ঠিক এ কারণে ওই আমার সাথে সম্পর্কের বিচ্ছেদ করে।
আপনি কি ওই ছেলেগুলোকে চিনেন।
রাহাত: না, তেমন একটা না শুধু নাম শুনেছি কয়েকজনের।
আচ্ছা, ধন্যবাদ। মি.রাহাত।
রাহাত: আচ্ছা।
এদিকে নূরী তো ভয়ে অস্থির আর বার বার আল্লাহ'র কাছে দোয়া করেছিল।
রাহাত বলল, এই নূরী কি হয়েছে তোমার।
নূরী: কিছু না! একটু ভয় পাচ্ছিলাম তাই দোয়া-দরুদ পড়তেছিলাম।
ভয় পেয়ে না সমস্যা নাই। কিছু হবে না।
এভাবে দেখতে দেখতে অনেকটা মাস কেটে গেল।
এরপরে অবশ্য পুলিশ আর আসে নি। এখনও মামলা টা তেমন কোনো সুরাহা হয় নি।
হঠাৎ একদিন নূরী বমি করা শুরু করলো। নূরী প্রেগন্যান্সি কিট ব্যবহার করে দেখে পজিটিভ।
পজেটিভ! কি পরিমাণ যে আনন্দিত।
আচ্ছা বিষয়টা মা আর বাবাকে জানিয়ে আসি।
মায়ের কানে কানে নূরী বললো।
মা বললো, সত্যি আমি দাদি হতে চলছি। ওগো শুনো তুমি দাদা হতে চলেছো।
সত্যি! যাক আলহামদুলিল্লাহ।
আচ্ছা তাহলে রাহাতকে বিষয়টা জানানো দরকার।
মা, এখন না। ও এখন কাজে ব্যস্ত। ও আসুক তারপর জানাবো।
আচ্ছা, মা।
বিকালে বাড়ি ফিরলো, রাহাত।
রাহাত বললো, আজ যে গরম পড়েছে তার উপর একটা ক্লাসরুমে ফ্যান ছিলো নষ্ট। যাচ্ছে-তাই অবস্থা।
নূরী বলল, শুনো আমরা দুই থেকে তিনে হচ্ছি। কি বলো এগুলো। দুই থেকে তিনে হচ্ছি, কিহহ দুই থেকে তিন!
দুই থেকে তিন!দুই থেকে তিন!। সত্যি।
নূরী: জি, ।
আমি বাবা হতে চলেছি। আলহামদুলিল্লাহ। আজকে আমি অনেক খুশি।
মা, বাবা শুনেছেন আমি বাবা হতে চলেছি।
নূরী শুধু এই অদ্ভুত মানুষটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে মুগ্ধ হচ্ছিল।
আর মনে মনে ভাবছিল আল্লাহ্ সুবহানা তা'য়ালা কাছে হাজারো শুকরিয়া এরকম একজনকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়ে।
রাহাত বলল, এখন থেকে তাহলে অনেক সাবধান হতে হবে আমার নূরী পাখি ও বাবুর জন্য।
বাবু তুমি তাড়াতাড়ি চলে আসো বাবা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
রাহাত বলল, আচ্ছা কালকে তোমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো। আরেকটি বার পরীক্ষা করানো প্রয়োজনে।
নূরী: আচ্ছা।
পরেরদিন ডাক্তার ল্যাবেটরিতে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বলে।
Congratulations! Mr. Rahat.
আপনি বাবা হতে চলছেন।
জি। আলহামদুলিল্লাহ।
এরপরে ডাক্তার কিছু ঔষধ আর বিভিন্ন পরামর্শ দিলো রাহাতকে।
............
রাহাত এখন থেকে নূরীর প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখছে। একটা কাজের মানুষ ও ঠিক করে দিছে।
রাহাত: এই নূরী পাখি। এই লোকমাটা নাও।
নূরী: আমার খাইতে ভালো লাগতেছে না। আরে, বাবুর জন্য খেতে হবে না। আমি আচার খাবো।
রাহাত: খাও এই লোকমাটা। আচার আমি অনলাইন থেকে অর্ডার দিবো আমার পরিচিত একজন আছে। তারা ভালো আচার বানায়। দোকানের আচার একদম ভালো না।
নূরী: ওকে। জাজাকাল্লাহু খায়রন অনেক যত্নে নিতেছো।
রাহাত: তো নিবো না। আমার বউ তো দশটা নাকি আমার একটা মাত্র বউ।
আমার নূরী পাখি।
এভাবে চলতে থাকে নূরী আর রাহাতের সুখময় জীবন।
..................
রাহাত: শুনো ইদের তো আর মাত্র ৭ দিন বাকি। কিছু তো কেনাকাটা করতে হবে। তোমার এ অবস্থায় শপিং যাওয়া সম্ভব না। তাই তুমি অনলাইন অর্ডার করবে যা কিনবা ঠিক আছে। আর আমি বাবা-মা আর আমার জন্য কিছু কেনাকাটা করি আনি।
নূরী: ওকে।
ইদের দিন.....
নূরী বাবা-মা আর ছোট ভাই নেহাল আসে রাহাতের বাসায়। দিনটি খুব আনন্দ কাটিয়ে দেই রাহাত নূরী।
..............
৪ মাস পর......
হঠাৎ করে নূরীর ব্যথা আরম্ভ হয়। সে রাহাতকে ডাকতে যায় অমনে পা পিছলে সিড়ি থেকে পড়ে যায়।
রাহাত তাড়াতাড়ি করে নূরীকে অ্যামবুলেন্স করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল নূরীর।
রাহাত প্রচন্ড আতঙ্কগ্রস্ত। নূরীকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়।
১ ঘন্টা পর.....
ডাক্তার বের হয়ে আসলেন,
রাহাত: ডক্টর কি হয়েছে!
সিড়ি থেকে পড়ে যাওয়াতে উনি তলপেটে মারাত্মক আঘাত পেয়েছে। খুব খারাপ অবস্থা। অবস্থা খুব একটা ভালো না। আমরা আপাতত রক্তক্ষরণটা বন্ধ করেছি। আর ব্যথা কমানোর ইনজেকশন দিয়েছি। কিছুক্ষণ পর আমরা অপারেশন করবো।
তার আগে আমাদের একটা মিটিং করতে হবে এই অপারেশনের ব্যাপারে।
মা আর বাচ্চা যেকোনো একজনকে বাঁচানো সম্ভব!
মাকে বাঁচালে আপনার বাচ্চা মারা যাবে আবার বাচ্চাকে বাঁচালে আপনার স্ত্রী মারা যাব। আল্লাহ'কে ডাকুন।
তবে আমরা দুইজনকে বাঁচানো চেষ্টা করবো।
রাহাত: স্তব্ধ। কি বলেন ডক্টর।
আপনার স্ত্রী আপনাকে ডাকছে।
রাহাত ও.টির ভিতরে গেলো....
রাহাত: কান্নাবিজড়িত কন্ঠে, নূরী!!!
নূরী: হুম আমি জানি। আমি মারা যায় সমস্যা নাই আমার বাচ্চা টা যাতে ঠিক থাকে। তোমার না একটা বাচ্চা লাগতো। কত আমাকে বলতে কবে বাবা হবো। আমার এই বাচ্চার জন্য কত কষ্ট করছো।
রাহাত: না আমার দুইজনকে চাই।
নূরী: সমস্যা নাই। তোমার সাথে আমার জান্নাতে দেখা হবে।
রাহাত: না এগুলো বলেনা।
নূরী: তোমাকে আমি অনেক ভালোবাসি। ওয়াদা কর আমার সন্তানকে একজন দ্বীনদার মুমিন বানাবে। তাকে অবশ্যই দ্বীনি শিক্ষা দিবে।
রাহাত: হুম। ইনশাআল্লাহ।
নূরী: আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবে।
রাহাত, নূরীকে জড়িয়ে ধরল তোমার কিছু না হবে না নূরী পাখি। এ বলে জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো রাহাত নূরী ও কান্না করতে লাগলো।
...........
কিছুক্ষণ পর অপারেশন শুরু হলো।
রাহাত মসজিদে নামাজ পড়ে দোয়া করতে লাগলো।
আল্লাহ! আমার স্ত্রী আর সন্তান দুইজন যেন ঠিক থাকে।
কিছুক্ষণ পর রাহাতের মা ফোন দিলো: কান্না বিজড়িত কন্ঠে, বাবা নূরী আর নেই......
রাহাত কথাটা শুনে আর ঠিক রাখতে পারলে দৌড় দিলো হাসপাতালের দিকে; যেয়ে দেখে নূরী ঘুমিয়ে আছে। মাথায় সাদা কাপড় দিয়ে।
রাহাত আর নিজেকে সামলে রাখতে পারলো না।
তার পাশে তার বাচ্চা কান্না করতেছে।
রাহাত, নূরী! এই নূরী পাখি উঠো না। তুমি আমাকে একা রেখে চলে গেলে। কেন চলে গেল। এখন আমি কি নিয়ে বাঁচবো।
ডক্টর বললো, আপনার স্ত্রী বারবার বাচ্চাটাকে বাঁচানোর জন্য অনুরোধ করছে। আমরা কি করতে পারি বলেন।
রাহাত বাচ্চাকে কোলে নিলো, একবারে নূরীর মতো হয়েছে।
..........................................................
বাবা, ও বাবা। তুমি যাবে না।
হঠাৎ করে রাহাতের হুশ ফিরলো। এতক্ষণ সে বিষয়গুলো ভাবতেছিল, চোখের এককোণে জল জমে গিয়েছে।
বাবা তুমি কি কান্না করেছো।
রাহাত: না,বাবা।
রাহাত আর বিয়ে করে নি ওই যে নূরী বলে গেছে একসাথে জান্নাতে থাকবো। নূরীর জায়গা অন্য কাউকে বসাতে পারবে না সে।
চল, নুরাত মাকে দেখে আসি।
রাহাত নূরীর কবর যিয়ারত করতে ছেলে নুরাতকে নিয়ে যাচ্ছে।
নূরীর কবরে কাছে পৌঁছে রাহাত কুরআন তেলাওয়াত করতে লাগলো। তারপর দোয়া করলো।
বাবা, তুমি সূরা ফাতিহা পড়ো। ছোট ছেলে সবে মাত্র কিছু সূরা শিখেছে।
রাহাত বলতে লাগলো,
নূরী দেখো তোমার ছেলে নুরাত একেবারে তোমার মত। তোমার পছন্দ করা নাম রেখেছি। চিন্তা করো না আমি এখন ঠিক সময়ে ফজরের নামাজে উঠি। আর কেউ ডেকে না, কেউ হাত ও বুলিয়ে দেই না।
এ বলে চোখের জল ছেড়ে দিলো রাহাত।
হঠাৎ করে রাহাত দেখলো আকাশে একটা পাখি নূরীর কবর বরাবর উঠতেছে।
রাহাত বললো, হয়তো এইটাই আমার নূরী পাখি, যে আমার মনের আকাশে উড়ে; আমার দ্বীনি স্ত্রী।
-----------------------------------------------------
(সমাপ্ত)
জাজাকাল্লাহু খায়রন
Nowrin talukdar, Nera akter, Fahad islam, Israyeel hossen, Za mahmud, Nafisa akter, Pk monish and লেখাটি পছন্দ করেছে
Riaz পছন্দ করেনি
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum