- Mahfuzনবাগত
- Posts : 5
স্বর্ণমুদ্রা : 1439
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-30
Age : 31
অতৃপ্ত ভালাবাসার অপমৃত্যু
Thu Jun 24, 2021 6:21 pm
অতৃপ্ত ভালবাসার অপমৃত্যু
এম.এম. রহমান
দীর্ঘ পাঁচ বছরের সম্পর্কের আজ ইতি টানলাম। ভালবাসার সকল বাঁধন থেকে আজ অরিনলামকে মুক্তি দিলাম। একটা শব্দের মাধ্যমে দীর্ঘ পাঁচ বছরের সম্পকর্কে এ একটি শব্দ যথেষ্ট।শব্দটি খুব ছোট, তবুও এ শব্দটি একজনকে স্বর্গের সুখ দেয়, অন্য দিকে নরকের যন্ত্রণায় আরেকজন কে কষ্ট দেয়। সম্পর্ক গুলো এমনই, পাওয়া না পাওয়ার হিসাবে সম্পর্ক গুলো বেঁচে থাকে চিরকাল। শুধু সম্পর্কগড়ার মানুষগুলো আলাদা হয়ে যায়। আজ ওই একটি শব্দই তোমাকে চিরতরের জন্য আমার থেকে আলাদা করে দিয়েছে।
কবুল! আর কবুল! আর কবুল! এ তিনটি কবুল শব্দই আমাদের দুজনের সাজানো স্বপ্ন, আর সকল চাওয়া পাওয়ার অপমৃত্যু হলো।
হুম! আজ অরিনলামের বিয়ে! আর বিয়ে! কবুলের মাধ্যমে অরিনের ভালবাসার অপমৃত্যু হলো। এ অপমৃত্যুতে কেউ কাঁদবে না, কেউ আফসোস করবে না, কেউ শোকও প্রকাশ করবে না। এ অপমৃত্যুর কোন দাপনও হবে না।এ অপমৃত্যু খবর কেউ জানবে না, শুনবে না। শুধু যার অপমৃত্যু হয়েছে সে ছাড়া। এমন কি যার জন্য এ অতৃপ্ত ভালবাসার অপমৃত্যু হয়েছে সেও জানবে না, কেন এ মৃত্যু!
নিজের সুখের সমাজ্রের জন্য আমরা সবই করতে পারি। প্রয়োজনে অন্যকে নিজের পথ থেকে সরিয়ে দিতেও আমরা পিছপা হয় না। ঠিক অরিনলামও দীর্ঘ পাঁচ বছরের ভালবাসার সম্পর্কগুলো এক মুর্হুতে বদলে দিল।নিজের সাজানো ভালবাসাকে এক শব্দে বদলে দিল। একবারের জন্য তার ধারণা ছিল না, তার ভালবাসার মানুষটির কি হবে? শুধু মাত্র নিজের জন্য অন্য জনের ভালবাসার এ অপমৃত্যুর জন্য সে কখন নিজেকে দোষী ভাববে না।
এভাবে সত্যিকারের ভালবাসার হাজারও অপমৃত্যু হয় শুধু মাত্র, ভালবাসার মানুষটির সুখের জন্য, ভালবাসার মানুষটির পরিবারের মুখের হাসি ফুটানোর জন্য কতশত প্রেমিক-প্রেমিকা তাদের ভালবাসাকে কোরবানি দেয়। তা এদেশের হাজারও পিতা-মাতার অজানা। ভালাবাসার শুরুটা যতটা রোমাঞ্চাকর হয়, শেষটা ততটাই তিক্ততায় হয়। আর আজকাল এ ভালবাসাগুলোর অপমৃত্যু সংখ্যা ক্রমান্বয়ে উর্ধ্বগতির দিকে যাচ্ছে। কারো জানা নেই এর শেষ কোথায়।
আজকে তোমাকে আমার ভালো লেগেছে, তাই তোমার সাথে আমার সম্পর্ক জুড়িয়ে নিলে, িকন্তু যখন বিয়ে বা সংসার করার জন্যই আসে তখন আমাদের ভালবাসার মানুষগুলোর অজুহাতের কোন শেষ নেই। আর এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অজুহাত, আমার পরিবার তোমাকে মেনে নিবে না।
অরিনের ভালবাসার এ অপমৃত্যুর জন্য আজ হয়তো অরিন নিজেকে দোষারোপ করতে পারে। কেননা, অতি যত্ন গড়া ভালবাসার এমন করুন অপমৃত্যুর জন্য অরিনলাম যেমন দায়ী, ঠিক ততটাই দায়ী অরিনও। কারণ অরিনলাম যখন সম্পর্কের প্রস্তাব করে, তখন অরিন না করে দেয়। কিন্তু অরিনলামের এতো ভালবাসার কাছে অরিন নিজেকে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছে। খু্ব ভালবাসা আর স্বপ্নের মাধ্যমে চলতেছিল তাদের ভালাবাসর রোমাঞ্চ আর মিষ্টি প্রেমের কথা।
এভাবে ভালবাসার তিনবছর অতিবাহিত হয়! এ তিন বছরের অরিন অরিনলামের খুব কাছে চলে যায়, তাদের ভালবাসার এক রুপকথার গল্পে পরিণত হয়। কিন্তু বেশি দিন আর চলতে পারে নি। বিশ্বদরবারে তাদের ভালবাসা অপ্রকাশিত ভালবাসা প্রকাশিত হয়ে যায়। আর তখন আছে যত বিপত্তি।
অরিনলামের পরিবার জানতে পারে অরিন আর অরিনলামের ভালাবাসার কথা। কিন্তু তারা অরিনলাম কে কিছু না বলে, শাসিয়ে যায় অরিন কে! অরিনলামের বাবা অরিনকে মেরে ফেলার হুমকি দমকি দেয়, রাস্তায় বের হতে দেয় না, অন্যদিকে অরিনলামকে কলেজে আশা বন্ধ করে দেয়, ওর থেকে মোবাইল নিয়ে নেয়। পরিবারের কেউ ওর সাথে ঠিক মত কথা বলে না, ওরা অরিনলামকে মানসিক ভাবে আঘাত করতে শুরু করে।
অরিনলামের ভালবাসা ছিল তখন খুবই মজবুত আর শক্ত। তাই অনেক বিয়ের প্রস্তাব আসলেও সে বিয়েতে রাজি ছিল না। ছেলে পক্ষের মুখের ওপর সে বলে দিতে সে যদি বিয়ে করে তাহলে অরিনকেই করবে। এতে তার পরিবার আর বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। আর ফলশ্রুতিতে তার উপর চলে এবার শারীরিক নির্যাতন। যে ভাবা মার আদরের রাজকন্যা, যাকে আদরে আদরে এতটা বছর যত্ন করে বড় করেছে, সে বাবা-মা আজ শুধু মাত্র ভালবাসার অপরাধে তাকে রক্তাক্ত করে। ঘরে বন্দি করে রাখে।
পৃথিবীতে ভালবাসাটা বড় অপরাধ! কাউকে সত্যিকারের ভালবাসতে নেই। কারণ এ পৃথিবীতে কেউ একজনকে ভালবাসরে তোমাকে হারাতে হবে অনেকজনকে।
পৃথিবীতে ভালাবাসাটা বড় পাপী আর জঘন্য। না হলে, ভালবাসার মানুষগুলোকে তাদের সমাজ মেনে নিতে পারে না কেন? সমাজতো দুরের কথা তাদের পরিবারও তাদের মেনে নিতে পারে না? যে দুটি মানুষ একে অপরকে জেনে শুনে ভালাবাসার সম্পর্কে জড়ায়! তারা তো ভুল কিছু করে নি, যাকে সারা জীবন থাকতে হবে। তাকে আগে থেকে জানা শুনা কি ভালো না! তাহলে পরিবারগুলো কেন এ সিম্পল কথাটা মেনে নিতে পারে না। তারা যে ছেলে বা মেয়েকে তাদের সন্তানের বিয়ের জন্য ঠিক করে, সে মানুষটাকে কেন বিয়ে করতে হবে? যাকে না ওরা চিনে, না সন্তানেরা চিনে।তবুও পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে এভাবে হাজারও ভালাবাসার অপমৃত্যু হয়। যেমনি ভাবে অপমৃত্যু হয়েছে অরিন আর অরিনলামের ভালাবাসার।
অরিনলামের পরিবারের কাছে অরিনলাম নিজের ভালাবাসাকে কোরবানি করেছে। সে সম্পর্কে ইতি টেনে বাবা-মার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করেছে। হয়তো বাবা-মার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করে মিথ্যা সুখের অভিনয়ে নিজের বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিবে, না হয়ে সত্যিকারের সুখের নেশায় হয়তো অরিনের সকল ভালাবাসাকে মাটি চাপা দিয়ে নিজেকে গড়ে তুলবে নতুন এক অরিনলামকে।
আর অরিন হয়তো পরিবারের জন্য অন্য কোন মেয়েকে বিয়ে করে মিথ্যে বা সত্যি ভালাবাসার অভিনয় করে সংসার দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত হয়ে নিজের সত্যিকারের ভালাবাসাকে মাটি চাপা দিয়ে নতুন এক অরিনের জন্ম দিবে। আর এভাবে অতৃপ্ত ভালাবাসা অপমৃত্যুগুলো রোজ রোজ হবে। এমন ভালবাসার অপমৃত্যুর জন্য দায়ভার কেউ নিবে না, না পরিবার, না সমাজ, না ভালবাসার মানুষগুলো। এ ভালবাসার অপমৃত্যুর কোন ঘোষণা হবে না, কোন প্রচার হবে না, কোন দাপন হবে না, কেউ তিন/সাত/চল্লিশ দিনের শোক প্রকাশ করবে না। এভাবে ভালবাসার অপমৃত্যু যেন আর কখন না হয়।এ অপসংস্কৃতি দুর করে সত্যিকারের ভালবাসার সফলতা আসুক।
ভালবাসরেই একটা ছেলে বা মেয়ে কখন খারাপ হতে পারে না। পরিবারগুলোর এমন ধ্যান ধারনার পরিবর্তন আসুক। পরিবারগুলো সহায়তা ফিরে আসুক ভালবাসার পূর্ণতা, খোঁজ খবর নিয়ে দুটি মানুষের সত্যিকারের ভালাবাসার পূর্ণতা আসুক। আর পরিবারের জন্য আর কোন ভালবাসার এভাবে অপমৃত্যু না হোক। জয় হোক ভালাবাসর, হ্রাস হোক অপূর্ণ ও অতৃপ্ত ভালবাসার অপমৃত্যুর।
প্রকাশ কাল:২৪.০৬.২০২১, সময়: সকাল ১০.০০টা
Adriyan khan, Alauddin suvroto, Ayush sharif, Shanta akter, Abu aazaan, Md ashik, Jannatul fardos and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum