সাদা কাগজ
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Go down
avatar
Tonu islam
নবাগত
নবাগত
Posts : 2
স্বর্ণমুদ্রা : 1182
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-08-31

অভিশপ্ত বাড়ি Empty অভিশপ্ত বাড়ি

Mon Sep 13, 2021 11:51 pm
🖋️গল্প_অভিশপ্ত বাড়ি
🖋️পর্ব_১_ও__২

- আমার কিন্তু সত্যি সত্যি ভয় হচ্ছেরে (সিয়াম)
- মনে যখন এত ভয় আমাদের সাথে এসেছিস কেন? (রাব্বি)
- তখন ত আর বোঝি নি রাত ১টায় একটা ভুতূরে বাড়ির সামনে এরকম একটা পরিস্থিতি ফেইস করতে হবে। (সিয়াম)
- চুপ, একদম চুপ। আমি মেয়ে হয়েও এতটা ভয় পাচ্ছি না, আর তুই? ভিতূর ডিম কোথাকার। (সুমাইয়া)
- তুই ত মেয়ে না, তুই ত একটা পেত্নি। তুই ভয় পাবি কেন? (সিয়াম)
- পেত্নি হলেও ভালো, তোর মত ভিতূর ডিম না। (সুমাইয়া)
- এই তোরা এবার চুপ করবি? (রাইয়ান)
- প্রথমেই বলেছিলাম সিয়ামকে আমাদের সঙ্গে না আনতে। ওর সব কিছুতেই ভয়। (সুমাইয়া)
- সামনে কালো কিছু একটা দেখা যাচ্ছে। তোমরা কি দেখতে পাচ্ছ?.(রাইয়ান)
- কি হতে পারে এটা? ঠিক পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। (রাব্বি)
- আমাদের কি গেইটের ভিতরে যাওয়া ঠিক হবে? (সিয়াম)
- ঠিক না হলেও যাতে হবে। যে করেই হোক, বাড়িটার রহস্য উদ্ধার করতেই হবে আমাদের। (সুমাইয়া)
- দেখ, যা কিছুই করি না কেন আমরা ভেবে চিন্তে করতে হবে। এর আগেও এখানে একটা টিম এসে কেউ ফিরে যেতে পারে নি। (রাইয়ান)
বলতে বলতে সামনের ওই কালো জিনিসটা চোখের সামনে থেকে উধাও হয়ে গেল। সবাই অবাক প্রায়। এত দ্রুত কিছু একটা চোখের সামনে থেকে সরে যাওয়া, সত্যি অবিশ্বাস্য।
দৃশ্যটা দেখে সিয়াম একটু বেশিই ঘাবড়ে যায়।
- চলো সবাই, বাড়িটাতে প্রবেশ করা যাক। হয়ত ভিতরে আরো অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে। (রাব্বি)
বাড়ির ভিতরে যাওয়ার জন্য সামনে পা বাড়ায় ৪জনের এই টিম।
তারা ৪জন শহরের একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ফাইনাল ইয়ার এর ছাত্র- ছাত্রী। রাইয়ান কে টিম লিডার করে রাব্বি, সুমাইয়া আর সিয়াম প্রায় ৫০ বছর আগের পরিত্যক্ত একটি পুরাতন বাড়ির আসল রহস্য উদঘাটন করার লক্ষ্যে তারা বেঁচে নিয়েছে এই অমাবস্যার অন্ধকারে আচ্ছন্ন রাত্রিটা।
বাড়িটার অবস্থান শহর থেকে খানিকটা দূরে 'রায়েরপুর' নামক গ্রামে। আকৃতিতে গ্রামটা খুব একটা বড় না। গ্রামের ঠিক উত্তর পার্শে দৈত্যের মত হা করে দাড়িয়ে আছে বাড়িটা। বাড়ির পিছনের ঝোপঝাড়গুলো যেন ছোটখাটো একটা জঙ্গল। ডান দিকে একটা দিঘি আর বাম দিকে খোলা মাঠ। সন্ধে হওয়ার আগেই বাড়ির সামনের পথটা হয়ে যায় জনশূন্য। যেন এখানে মানবের কোন অস্তিত্বই নেই। এমনকি দিন দুপুরেও জনমানবের তেমন একটা আনাগোনা দেখা যায় না এই পথে।
গ্রামের মানুষের ভিতরে কেন এই ভয়? কেন মানুষ সন্ধার আগেই ছেড়ে দেয় এই পথ? প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতে কিছু দিন আগে ৪জনের এই টিম এসেছিল গ্রামের কিছু প্রবীণ মুরব্বিদের কাছে। কিন্তু পরিষ্কার কোন উত্তর পায় নি তারা প্রবীণদের কাছ থেকে। কারন তাদের মনে ওই বাড়িটার ভয় ছিল। তারা শুধু এতটুকুই বলেছিলেন, এটি একটি "অভিশপ্ত বাড়ি"।এ পর্যন্ত বাড়িটিতে ১টি, ২টি না, মাথাকাটা এমন অনেকগুলা লাশ দেখা যায় প্রায়ই। আর তা এ গ্রামেরই কারো না কারো লাশ। তবে কারো সাহস হয় নি লাশে হাত দেয়ার। রায়েরপুর গ্রামের কেউ কোনোদিন ভুল করেও এই বাড়িটির প্রবেশ করা দূরে থাক, এর পাশ দিয়ে খুব একটা প্রয়োজন না হলে যায় না। তাই লাশগুলা পড়ে থাকে ওখানেই। আর লাশ পঁচা বাজে গন্ধটা লেগেই থাকে বাড়িটিতে। গ্রামের মানুষেরা বড্ড পায় এই বাড়িটাকে।
গ্রামের মুরব্বিদের কাছ থেকে এতটুকুই জানতে পারে ৪জনের এই টিম। তারা আরেকটি বিষয়ও সতর্ক করে দেন এই টিমকে, অনেক আগে ঠিক এভাবে ৫জনের একটা টিম এসেছিল বাড়িটার রহস্য উদ্ধারে, কিন্তু কেউ ফিরে যেতে পারে নি।

বাড়ির ভিতরে ডুকতেই একটি বড় পাথরে হুচট খায় সিয়াম। টর্চের আলো ফেলতেই চিৎকার করে উঠে সিয়াম। যেটাকে সে পাথর ভেবেছিল, সেটা আসলে একটা মানুষের দেহ বিহীন মাথা। শরীর শিহরে উঠে সিয়ামের। সবাই অবাকপ্রায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মাথাটার দিকে।

এ কি মাথাটা ত নড়তেছে, বলে উঠে সুমাইয়া।
কথায় সম্মতি জানায় রাব্বি আর সিয়ামও।
কিন্তু রাইয়ান কথাটি মানতে নারাজ।
একটি দেহবিহীন মাথা নড়বে কি করে।
টর্চের আলো ফেলার আগেই তৎক্ষণাৎ পাশের
ঝোপ থেকে কে যেন খুব দ্রুত সরে যায়। রাব্বি
দৌড়ে গেলেও ততক্ষনে ঝোপের আড়ালে থাকা
অস্তিত্বটা উধাও হয়ে যায় নিমিষেই। এই
পরিস্থিতিতে রাইয়ানের মুখে মুচকি হাসিটা
অবাক করে দলের অন্যান্য সদস্যদের। তবে বসে থাকে নি ভিতূ সিয়াম, তাৎক্ষণিক হাসির কারন জানতে চায় রাইয়ানের কাছে। রাইয়ান নীরব থেকে ধীর পায়ে হেটে যায় খানিক দূরে পরে থাকা মাথাটার কাছে। ঘাবড়ে যায় সবাই। কিন্তু রাইয়ান থামেনি। মাথাটার পাশে হাত দিয়ে কি যেন দেখে, তারপর থাকায় ওই ঝোপের আড়ালে, যেখান থেকে একটা অস্তিত্ব সরে গেছ একটু আগেই। উঠে দাড়ায় রাইয়ান। মুখে সেই মুচকি হাসিটা এখনও বিরাজমান। এমনিতেই সবার মনে ভয়, সাথে রাইয়ানের হাসির রহস্য আর এহেন আচরণে একটু বেশিই ঘাবড়ে যায় সবাই। সিয়াম এবার রাগত স্বরে বলে উঠে, কি হচ্ছে এসব। কথা শেষ করার আগেই সিয়ামকে থামিয়ে দেয় রাইয়ান। বলব, সব কিছুই বলব।
তবে এখন না। আমাদের আরো সামনে এগুতে হবে। চলো সবাই, শান্ত ভাবেই কথাগুলো বলে রাইয়ান।

রাব্বি আর সুমাইয়া রাইয়ানের সম্পর্কে ভালো করেই জানে। তাদের ভার্সিটির সব থেকে টেলেন্টেড ছাত্র রাইয়ান। তার যেমন মেধা তেমনি সাহসও আছে বটে। রাইয়ানের উপর তাদের যথেষ্ট আস্তা আর বিশ্বাস আছে। কারন তারা জানে, রাইয়ান হয়ত কিছু একটা রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছে। তাই তারা নীরবে অনুসরন করছে রাইয়ানকে। কিন্তু সমস্যা করছে সিয়াম। তার মনের ভয় তাকে আরো পিছিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু ভয় নিয়েও এগুতে হচ্ছে দলের সাথে। ফিরে যাওয়ার কোন উপায় নেই সিয়ামের। কারন ভার্সিটির সবাই তাকে ভিতূ
বলেই জানে। আর সে ভার্সিটিতে অনেক সাহস
দেখিয়ে এ কাজে এসেছে একমাত্র তার ভিতূ ডাকটা মুছার জন্য। আর এখন যদি সে ফিরে যায়, তাহলে তার সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে যাবে।

এক সাথে এগিয়ে চলে রাইয়ান, রাব্বি, সুমাইয়া
আর সিয়াম। রাইয়ানের ইশারায় দলটি সরাসরি বাড়িটির সম্মুখে না গিয়ে চলে যায় ডান দিকের দিঘির পার্শে। জেনে রাখা ভালো যে, বাড়িটি ছিল ৩তলার। দিঘির পাশে যেতেই হাতের ইশারায় সবাইকে থামিয়ে দেয় রাইয়ান। দিঘির পাড়ে কিসের একটা শব্দ শুনা যাচ্ছে, ফিস ফিস করে বলে উঠে রাইয়ান। তাতে সম্মতি জানায় দলের অন্যান্য সদস্যরাও। টর্চের আলো
ফেলার আগে শব্দটার কেন্দ্রস্থল বোঝার জন্য সবাইকে হুশিয়ার করে দেয় রাইয়ান। শব্দটা দিঘির উত্তর-পূর্ব দিক থেকেই আসছে বলে মনে হচ্ছে, ফিস ফিস করে বলে উঠে সুমাইয়া।

([Only admins are allowed to see this link]্ব_২)

কেউ কিছু বলার আগেই সিয়াম টর্চ মারে ঠিক যে যায়গাটা থেকে শব্দটা আসছে, সেখানে। টর্চের আলো পরতেই সেখান থেকে দৌড়ে যায় একটি শিয়াল। বাকি সবাই স্বাভাবিক ভাবে নিলেও রাইয়ানের চোখ এড়াতে পারে নি ওই গর্তটা। যেখান থেকে শিয়াল পালিয়ে গেছে।
গর্তটা সম্পর্কে সবাইকে অবগত করে সেখানে যাওয়ার জন্য বলে রাইয়ান। তখন খানিকটা ভয় পেয়ে যায় সুমাইয়া আর রাব্বিও, সিয়াম ত বটে। টর্চের আলো ফেলে দলটি এগুতে থাকে দিঘির উত্তর- পূর্ব দিকটায়। তারা যত এগুচ্ছে লাশ পঁচা বাজে গন্ধটা আরো প্রখর হচ্ছে তাদের নাকে।

বলতে ভুলেই গেছিলাম যে তাদের প্রত্যেকের সাথে রিভালবার, কোমরে বাধা ছুড়ি, গ্যাস লাইট, পিটে ঝোলানো ব্যাগ, পরনে নিরাপত্তা পোষাক ছিল। ডান হাতে রিভালবার আর বাম হাতে টর্চ মেরে গর্তটার ঠিক পাশে এসে হতভম্ব হয়ে পরে সবাই। গর্তে বেশ কয়েকটা পঁচা লাশ পরে আছে। আর ওই শিয়ালটা লাশগুলোর পঁচা মাংশ খাবলে খাচ্ছে। ওই গর্তটার পাশ থেকে সরে আসার জন্য রাইয়ান সবাইকে বলে,
কারন এই দুর্গন্ধে সেখানে দাড়িয়ে থাকা অসম্ভব প্রায়। সবাই সরে আসে পূর্বের যায়গায়।

রাইয়ান ব্যাগ থেকে একটা ম্যাপ বের করে।
ম্যাপটা এই বাড়িরই। প্রবীণদের কাছ থেকে বাড়ির সম্পর্কে জানার পর একটা ম্যাপ তৈরী করেছিল তারা। ম্যাপ বের করে সবাই মিলে বসে একটু আলোচনা করে, তারপর উঠে দাড়ায়। এবার রাইয়ান বলে, আমাদের আর এখানে দেরী করা ঠিক হবে না। ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতে হবে। সবাই প্রস্তুতি নাও। তবে খুব একটা প্রয়োজন ছাড়া কেউ রিভালবারের গুলি খরচ করবে না। সবাই সম্মতি দেয় রাইয়ানের কথায়।

এবার তারা এসে দাড়ায় ৩তলার এই বাড়িটির টিক সামনের গেইটে। গেইটে বড় একটা তালা ঝুলে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তালাটা এখানে অনেকদিন যাবৎ ঝুলে আছে। তালাটা ভাঙ্গতে হবে, বলে উঠে সুমাইয়া। সম্মতি জানায় রাইয়ান আর সিয়ামও। কিন্তু রাব্বি উপরের
দিকে তাকিয়ে কি যেন দেখার চেষ্টা করছে।
৩য় তলার দিকে খুব প্রখর দৃষ্টিতে প্রায় ১মিনিট
এভাবেই তাকিয়ে থাকে রাব্বি। কেউ কিছু বলার আগেই রাব্বি বলে উঠে, এই দেখ, ৩য় তলার রুমটা থেকে একটা আলোর ঝলকানি এসে ওই বড় গাছটায় পরছে। তখন রাইয়ান হয়ে পরে একটু অন্যমনষ্ক। মনে মনে কি যেন ভাবে, তারপর তাকায় ডান দিকে। খানিক দূরে ৩তলার উপর থেকে একটা পাইপ নেমে এসেছে একদম নিচে। রাইয়ান তালাটা দ্রুত ভাঙ্গার জন্য বলে সবাইকে। ততক্ষনে সুমাইয়া বড় একটা পাথর নিয়ে আসে তালাটা ভাঙ্গার জন্য।
পুরোনো তালা থাকার ফলে খুব একটা কষ্ট পোহাত হয়নি তাদের। পাথর দিয়ে ২-৩ আগাত করতেই তালাটা ভেঙ্গে যায়।

রাইয়ান সবাইকে শতর্ক করে দেয় ভিতরে ডুকে যেন কেউ চিৎকার না করে। সিয়াম কারন জানতে চাইলে কোন উত্তর দেয় না রাইয়ান। কারন সে জানে, সিয়ামকে বোঝাতে গেলে এখন তাকেই চিৎকার করতে হবে। ভিতরে ডুকেই দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় সবার
মাকড়সার জালে জড়িয়ে আছে বাড়ির ১ম তলাটি। যেন মাকড়সার দখলে চলে গেছে বাড়ির নিচ তলা। দীর্ঘ দিন মানবের অনুপস্থিতির সাক্ষি হয়ে আছে বাড়িটি ধোলা-বালি জমে সবকিছু যেন অস্তিত্বহীন হয়ে পরে আছে শত দিনের অবহেলায়। বাড়ির ভিতরের জিনিসপত্র ভালো করে ঘুরে দেখতেছে রাইয়ান, রাব্বি, সুমাইয়া আর সিয়াম। হটাৎ সুমাইয়া চিৎকার করতে যেয়েও থমকে যায়। হাতের ইশারায় খানিক দূরে কি যেন দেখাচ্ছে সে। টর্চের আলোয় ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। রুমের ভিতরের লাইট জালানোর জন্য বলে রাইয়ান। রাব্বি সাথে সাথে লাইটগুলো জালিয়ে দেয়। হাসি পায় রাইয়ানের। একটি সাপ প্যাচ দিয়ে বসে আছে ঘরের এক কোণায়। সাপের নড়াচড়ায় ভয় পেয়ে গিয়েছিল সুমাইয়া। সিয়াম রিভালবার তাক করে গুলি করার জন্য। থামিয়ে দেয় রাইয়ান। সিয়ামকে উদ্দেশ্য করে রাইয়ান বলে, সাপটাকে মারার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা যে কাজে এসেছি সেটা সম্পন্ন করতে হবে। সবাই ২য় তলায় চলো।

সিয়ামের নির্দেশে ২য় তলায় উঠার জন্য সিড়ির দিকে এগুতে থাকে সবাই। হটাৎ একটি বাদুড় উড়ে যায় তাদের মাথার উপর দিয়ে। ভয় পেয়ে যায় রাইয়ান সহ বাকি সবাই। ২য় তলায় পা রাখার আগেই হাতের ইশারায় রাইয়ান থামিয়ে দেয় সবাইকে। বাকি সবাই ভয় পেয়ে যায় রাইয়ান সবাইকে দেখিয়ে দেয় সুক্ষ্ম সুতোটা। যাতে পা রাখলেই বেজে উঠবে একটা ঘন্টা ধ্বনি। সবাই খুব শতর্কতার সাথে এড়িয়ে যায় সুতোটা। এই সুতোটার মানে কি? জ্বীন কিংবা ভুতেরা ত এভাবে সুতো বেধে রাখবে না, বলে উঠে সুমাইয়া। কথায় সম্মতি জানায় রাব্বি আর সিয়ামও। কিন্তু রাইয়ানের কান তখন উপর ৩য় তলা থেকে আসা গানের দিকে। সবার মনোযোগ সেদিকে তাক করায় রাইয়ান। গানের মৃদু স্বর ভেসে আসছে উপর তলা থেকে। সবারই ভিতরে একটা ভয় কাজ করছে। এরকম একটা বন্ধ বাড়িতে গান বাজবে কি করে? সিয়াম ত বলেই বসে, ভুতেরাও কি তাহলে গান শুনে? হাস্যকর হলেও কথায় সম্মতি জানায় সুমাইয়াও। রাব্বি তখন নিশ্চুপ।
শুধু রাইয়ান একটু অন্যমনস্ক। সে চিন্তা করে সেই কাটা মাথা থেকে এ পর্যন্ত। সবার কাছে অদ্ভত লাগলেও আসল রহস্যটা বোঝতে পেরেছে রাইয়ান। আবারো মুখে মুচকি হাসি ফোটে উঠে রাইয়ানের। উপরে যাওয়া কি ঠিক হবে, ভিতু স্বরে বলে উঠে সিয়াম। অবশ্যই যাব। এতদূর এসে যদি ফিরে যাই তাহলে এর চেয়ে ব্যর্থতা আর কি হতে পারে, বলে উঠে রাব্বি।
তাতে সম্মতি জানায় সুমাইয়াও। সিয়াম কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক তখন রাইয়ান তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, শুরু থেকে এ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে, সব কিছুর রহস্য এবং এর পিছনে কি আছে তা আমার ধারনা থেকে বাস্তবে এসেছে। এখন সবাই মনোযোগ দিয়ে আমার কথা শুন। কারন পরের প্রতিটা পদক্ষেপ হবে মরনের দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে যাওয়ার সামিল। সবার মনের ভয় তিব্র থেকে তিব্রতর হয়ে উঠে রাইয়ানের কথায়। রাইয়ান আবার বলতে শুরু করে, এখন আমি যা বলব তা হয়ত তোমাদের আন্দাজের বাইরে। এত না ঘুরিয়ে বলে দে কি হয়েছে, বিরক্তির স্বরে বলে উঠে সিয়াম। রাইয়ান তখন বলতে শুরু করে সেই দেহবিহীন মাথা নড়ার রহস্য।

🖋️চলবে
🖋️ খালেদ আহমেদ
avatar
Tonu islam
নবাগত
নবাগত
Posts : 2
স্বর্ণমুদ্রা : 1182
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-08-31

অভিশপ্ত বাড়ি Empty Re: অভিশপ্ত বাড়ি

Thu Sep 16, 2021 9:35 pm

মাথাটি তখন নড়ছিল না, নাড়ানো হচ্ছিল। সবাই কেমন জানি থমকে যায় রাইয়ানের কথায়। রাব্বি জিজ্ঞেস করল? কিন্তু কে নাড়ালো মাথাটা? আসে- পাশে ত কাউকেই দেখলাম না, রাব্বির কথা শেষ হতে না হতেই সিয়াম বলে উঠল, তাহলে কি ভুত মাথা নাড়িয়েছিল? নাহ, ভুত না, মাথাটি নাড়িয়েছিল একজন জলজ্যান্ত মানুষ, বলে উঠে রাইয়ান। আবার বলতে শুরু করে রাইয়ান, তোমরা হয়ত খুব একটা খেয়াল করে দেখ নি সেই সুতোটা, যা দিয়ে ঝোপের আড়াল থেকে কেউ একজন মাথাটা নাড়াচ্ছিল। তোমাদের মনে আছে?
টর্চের আলো পরার আগেই কেউ একজন ঝোপের আড়াল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। আর এখানে এই সুতোটা। যাতে স্পর্শ করলেই ঘন্টা ধ্বনি বেজে উঠবে। আর সেটা যারাই করে না কেন, তারা নিশ্চই একটা অপরাধ চক্র। যাদের কুকর্মের আস্তানা হল উপর থেকে আলোর ঝলকানি আসা এই বাড়িটির ৩য় তলা। কোন জ্বীন ভুত নেই এই বাড়িটিতে। রাইয়ানের কথায় থমকে যায় সবাই। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য এই ঘটনাগুলো মানতেই হবে তাদেরকে।

তারা ৩য় তলায় উঠা নামা করে কি করে? তাছাড়া নিচ তলার দরজায় ত তালা ঝোলানো ছিল। আর ঘরটা দেখেই বোঝা যায় এখানে মানুষের কোন অস্তিত্ব নেই। তাহলে তারা এখানে কি করে যাওয়া আসা করে? প্রশ্নটা করে সুমাইয়া। তখন রাইয়ান স্মরণ করিয়ে দেই সেই পাইপটার কথা, যেটা উপর তলা থেকে নেমে এসেছে একদম নিচে। আর এটাই তাদের যাতায়াতের রাস্তা। অবাক হয়ে যায় সিয়াম, রাব্বি সহ সুমাইয়াও। সব কিছু যেন তাদের ধারনা থেকে অনেকটা দূরে। তাহলে ওই লাশগুলা? আর আগের গোয়েন্দা টিমটা?
তাদেরকে কে বা কারা হত্যা করল? রাইয়ানকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে রাব্বি।
অপরাধ চক্র, এক কথা উত্তর দেয় রাইয়ান।
অপরাধ চক্র? কেন? আবার প্রশ্ন করে রাব্বি। কারন তাদের এই গোপন আস্তানাটার খবর পেয়ে গিয়েছিল তারা। আর এই আস্তানার সন্ধানে এসে তাদের মরতে হয়েছে অকালে। গা শিহরে উঠে সবার। যে বাড়িটা সবার কাছে ভুতের ভয়ে অভিশপ্ত বাড়ি নামে পরিচিত, সে বাড়িটা নাকি অপরাধ চক্রের আস্তানা। কথাটা বিশ্বাসই হচ্ছে না যেন কারো। রাইয়ান তখন বলতে শুরু করে, এখন খুব সতর্কতার সাথে উপরের তলায় যেতে হবে। যাতে কেউ টের না পায়। যদিও আগে আমরা কয়েকজনের নজরে পড়েছি। কিন্তু এখন যথেষ্ট সতর্কতার সাথে এগুতে হবে। গানের সুরটা এখন আর শুনা যাচ্ছে না, বলে উঠে সুমাইয়া। হ্যা তাইত। গানটা হটাৎ বন্ধ করল কে? সুমাইয়ার কথায় সম্মতি জানিয়ে বলল রাব্বি।

ঠিক তখনই বাইরে অনেক জোরে কিসের একটা শব্দ হল। শব্দটা সবার কানেই পৌছে। রাইয়ান দৌড়ে যায় জানালার পাশে। নিচে থাকাতেই একটু অবাক হয় সে। সবাইকে উদ্দেশ্য করে রাইয়ান বলে, উপরে উঠার আরেকটা রাস্তা আছে। সবাই তখন জানালার পাশে যায়। রাইয়ান আবার বলে উঠে, হ্যা ওই মইটা, যেটা দিয়ে খুব সহজেই উপরে উঠা যায়। আর মইটা উপর থেকে পরে যাওয়ায় শব্দটা হয়েছিল। কিন্তু ওই পাইপটা? রাইয়ানকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে সুমাইয়া। পাইপটা ব্যবহার করা হয় উপর থেকে দ্রুত নামার জন্য। যাইহোক, এখন আমরা উপর তলায় উঠব। সবাই ডান হাতে রিভালবার আর বাম হাতে টর্চ সতর্কের সাথে রাখ। কারন ৩য় তলায় এখন ওই চক্রটা অবস্থান করছে। আর ওখানে গেলেই আমরা নিশ্চিত একটা বিপদের সম্মুখিন হব। ঠিক তখনি উপর তলা থেকে ভেসে আসে একটা শিশুর কান্নার আওয়াজ।
রাইয়ান পেন্টের পকেট থেকে মোবাইল বের করে একটু সাইডে গিয়ে কাকে যেন ফোন করল। তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, চলো উপরের তলায়। ধীর পায়ে সিড়ি বেয়ে উঠতে থাকে রাইয়ান, রাব্বি, সুমাইয়া আর সিয়াম। রাইয়ান সবার আগে। টার্গেট সিড়ির ডান দিকের রুম। কারন ওই রুমটাই অপকর্মের আস্তানা। রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা। হাতের ইশারায় সবাইকে থামিয়ে দিয়ে প্রস্তুত হওয়ার জন্য বলে রাইয়ান। কারন পরের প্রতিটা পদ্দক্ষেপ হবে বিপদজনক।
- কিন্তু আমরা ভিতরে ডুকব কি করে? প্রশ্ন করে রাব্বি।
- এই দরজাটা আমাদের যে করেই হোক ভাঙ্গতে হবে। ভিতরে ডুকার আর কোন রাস্তা নেই, বলে উঠে রাইয়ান।
- কিন্তু দরজাটা ভাঙ্গব কি করে? রাইয়ানকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে সুমাইয়া।
- হুম, সেটাই ভাবার বিষয়, একটু অন্যমনষ্ক হয়ে কথাটা বলে রাইয়ান।
সুমাইয়ার একটা বিশেষ গুন আছে, বাচ্চাদের মত করে কান্না করতে পারে। এটা তার প্রতিভা বলতে পারেন। ক্লাসে প্রায়ই সে এটা সবাইকে শুনাত। রাইয়ানের মাথায় ব্যাপারটা তাতক্ষনিক খেলে যায়। রাইয়ান সুমাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বাচ্চাদের মত কান্না করতে বলে। সবাই অবাক হয়ে যায়। এরকম একটা পরিস্থিতিতে মজা করা মানায়? সিয়াম ত বলেই বসল, এটা ফাজলামি করার সময় না কি?
- মোঠেও না, আমি যেটা করতে বলছি তাড়াতাড়ি কর সুমাইয়া।
রাব্বি, সিয়াম, আর সুমাইয়া একজন আরেকজনের দিকে অবাকপ্রায় দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। ১ম বারের মত রাব্বি আর সুমাইয়াও রাইয়ানের কথায় একমত হতে পারল না।
- রাইয়ান এটা মজা করার সময় না, বলে উঠে রাব্বি।
- হ্যা, আমি জানি এটা মজা করার সময় না। আর এটাই একমাত্র পদ্ধতি এই দরজাটা খোলার। তাই বলছি, কথা না বাড়িয়ে সুমাইয়ার প্রতিভাটা এখানে একবার কাজে লাগা। তারপর দেখো কি হয়। কথায় মত না থাকলেও রাইয়ানের উপর যথেষ্ট আস্তা আছে রাব্বি আর সুমাইয়ার। তাই দেরী না করে দরজার একপাশে সুমাইয়া আর উপর পাশে সিয়াম, ঠিক সামনে রাইয়ান আর রাব্বি পজিশন নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সুমাইয়া বাচ্চাদের কণ্ঠে কান্না শুরু করবে। ক্লাসে মজার ছলে অনেক কেঁদেছে, কিন্তু আজই ১ম কোন বিভ্রতকর পরিস্থিতিতে কান্নাটা প্রয়োগ করছে। রাইয়ান, রাব্বি, সুমাইয়া আর সিয়াম স্পট শুনতে পাচ্ছে বাচ্চার কান্না শুনে রুমের ভিতর থেকে কেউ একজন বলে উঠল, কি রে ফরিদ দরজার ওপাশে গেল কি করে?
- কি জানি বস, খোলে দেখব কোনটা? বলে উঠে ফরিদ।
- হ্যা দেখত। আজ এটাকে দিয়েই কাজ শেষ করব।
এদিকে প্রস্তুতি নিয়ে দাড়িয়ে আছে রাইয়ান, রাব্বি, সুমাইয়া আর সিয়াম। এতক্ষনের তারা বোঝতে পারে বাচ্চাদের মত কান্না করার প্রতিক্রিয়া। সবাই মনে মনে প্রশংসা করতে থাকে রাইয়ানের।
ফরিদ দরজা খুলতেই রাইয়ান তাতক্ষনিক লোকটার মুখ চেপে ধরে মাথায় রিভালবার ঠেকে লোকটাকে উদ্দেশ্য করে ধীর কণ্ঠে বলে, একটা আওয়াজ করেছিস ত মরেছিস। লোকটা প্রথমে একটু জোর করলেও পরে আর সাহস পায় নি। এদিকে যে লোকটা ভিতর থেকে ফরিদকে পাঠিয়েছিল সে জোর গলায় চেঁচাচ্ছ, কিরে এতক্ষন লাগে না কি? তাড়াতাড়ি নিয়ে আয়। সব রেডি। অপর দিক থেকে ফরিদের কোন উত্তর না পেয়ে খানিকটা ঘাবড়ে যায় ওই লোকটা। তাই নিজেই হাতে রিভালবার নিয়ে ধীর পায়ে এগুতে থাকে দরজার দিকে। ততক্ষনে ফরিদের মুখ আর হাত পা বেধে ফেলেছে রাইয়ান, রাব্বি, সুমাইয়া আর সিয়াম। লোকটা ফরিদকে ডাকতে ডাকতে এগুচ্ছে। কিন্তু ফরিদের কোন সাড়াশব্দ নেই। লোকটা দরজার পাশে এসেই থমকে যায়। রিভালবার তাক করে লোকটা বলে উঠে, এই কারা তোমরা? এখানে কি করছ? লোকটার কথা শেষ হওয়ার আগেই তার সামনে চার চারটে রিভালবার উঠে আসে। ঘাবড়ে যায় লোকটা। ভয়ে আর সামনে এগুতে পারে নি। এক পা এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু রাইয়ান, রাব্বি, সুমাইয়া আর সিয়াম ঠিক আগের যায়গায়ই দাড়িয়ে আছে। তারা এখনো রুমে প্রবেশ করে নি।
ঠিক তখনই বাইরে হুইসেলের আওয়াজ শুনা যাচ্ছে। লোকটা দৌড়ে পালিয়ে যেতে চায়। মই বেয়ে নিচে নামতেই পুলিশ এসে ঝাপটে ধরে ফেলে লোকটাকে। হ্যা, রাইয়ান আগে পুলিশকেই ফোন করছিল। যাই হোক, সময়মত আসায় ভালোই হল।
ততক্ষনে রুমে প্রবেশ করে থমকে যায় রাইয়ান, রাব্বি, সুমাইয়া আর সিয়াম। সাথে আছেন ইন্সপেক্টর মির্জা সাহেব। সবাই হতবম্ভ। কি দেখছে তারা এসব। ঘরের এক কোণায় গ্রিল এর ভিতরে বেশ কয়েকটা শিশু ততক্ষনে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে। কারোই বোঝতে বাকি রইল না যে, এই অপরাধ চক্রটা শিশু পাচারকারী।
ইন্সপেক্টর মির্জা সাহেব ফরিদ আর ওই লোকটাকে গাড়িতে তোলার জন্য নির্দেশ দেন। তারপর ওই গ্রিল খোলে দেন যেখানে বাচ্চাদের আটকে রাখা হয়েছিল। বাচ্চাদের সান্তনা দিতে গিয়ে রাইয়ান বলে, তোমাদের ভয় নেই। আমরা ওই দুষ্টু লোকগুলোকে বন্দি করেছি।

ইন্সপেক্টর মির্জা সাহেব নিজ দায়িত্বে বাচ্চাদের তাদের প্রত্যেকের বাড়িতে পৌঁছে দিবেন বলে অঙ্গীকার করেন।
খালেদ আহমেদ
সমাপ্ত
Back to top
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum