সাদা কাগজ
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Go down
Mahfuz
Mahfuz
নবাগত
নবাগত
Posts : 5
স্বর্ণমুদ্রা : 1439
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-30
Age : 31

কুঁড়িতে আশির বিয়ে  Empty কুঁড়িতে আশির বিয়ে

Sat Sep 25, 2021 6:05 pm
[Only admins are allowed to see this link]োটগল্প
কুঁড়িতে আশির বিয়ে
মো. মাহফুজুর রহমান

আক্কাস মিয়া গ্রামের মাতব্বর। প্রায় দশ বছর ধরে সে করিমপুর গ্রামে মাতব্বরী করছে। ধন সম্পদের তার কোন অভাব নেই। কিন্তু আল্লাহ তাকে কোন পুত্র সন্তান দেননি। একে একে পুত্র সন্তানের জন্য সে নয় বিয়ে করে। কোন বিবি তাকে পুত্র সন্তানের মুখ দেখাতে পারেনি। তাই সে পুত্র সন্তানের আশায় দশম বিবি ঘরে আনতে চায়।

মাতব্বরের স্বভাব চরিত্র ভালো নয়। জনগণের জন্য বাজেটকৃত গম, আটা, চাউল, ডাল সব সে বাজারে বিক্রি করে দিয়ে সে টাকা দিয়ে নিজের বাড়ি পাঁচতলা করে। কেউ সাহস করে তার বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে না। জনগণের ভোট কারচুপি, জনগণকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সে ক্ষমতা লাভ করে।

এই দিকে মাতব্বরের দশম বিবি ঘরে তোলার খবর গ্রাম থেকে গ্রামন্তরে পৌঁছে গেছে। চারদিকে সাড়া পড়ে গেছে আশি বছরের মাতব্বর আবারও বিয়ে করতে যাচ্ছে! তবে প্রতিবারই মাতব্বর বয়স্ক নারীদের বিয়ে করেছে। তাই এবার মাতব্বরের ইচ্ছে কুঁড়ি বছরের মেয়েকে সে বিয়ে করবে। চারদিকে লোক লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে কুঁড়ি বছরের মেয়ে খোঁজার জন্য। কিন্তু কোন মেয়ের বাবা তার মেয়েকে মাতব্বরের সাথে বিয়ে দিতে সম্মত হলেন না। এ দিকে মাতব্বর ঘোষণা দিয়েছেন যে, যে কোন মেয়ের সাথে তার বিয়ে হবে তার নামে তার পুরো সম্পত্তি লিখে দিবে। এতে করেও কোন মেয়ের পিতা রাজি হয়নি।

এই দিকে পাশের গ্রামের আক্কাস ঘটককে আনা হলো। সে কিছুতে রাজি হচ্ছে না মাতব্বরের জন্য মেয়ে খুঁজতে। ঘটককে জানের হুমকি দিয়ে রাজি করানো হয় মাতব্বর। ঘটক বহু ঘুরা ঘুরি করেও মাতব্বরের জন্য কোন কন্যার সন্ধান দিতে পারেনি। এই দিকে মাতব্বর বাজারে গেলে লোক তাকে নিয়ে নানা ধরণের কুটুক্তি করছে। কেউ বলছে মাতব্বর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে, কেউ বা বলছে মাতব্বরের আশি বছরের ভীমরুতি ধরছে। এই কথা জানা হয়ে যাওয়ায় মাতব্বর কিছু দিন বাজারে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

একদিন খুব সকালে মাতব্বর তার লাঠিয়ালদের নিয়ে বাজারে যাওয়ার সময় এক সুন্দরী, অপরূপ ললনাকে দেখতে পায়। মাতব্বর মেয়েটিকে পছন্দ করে বসে। লাঠিয়ালদের বলে, মেয়েটির বাবাকে খবর দেওয়ার জন্য।এ দিকে মেয়েটির বাবা মাতব্বরের কাছে বাড়ি বন্ধক রেখে টাকা নেয়। কিন্তু মেয়েটির বাবা বিয়ে দিতে কিছুতে রাজি হচ্ছে না। মাতব্বর এ দিকে মেয়েটির বাবাকে হুমকি দেয় যে মেয়েটিকে যদি বিয়ে না দেয়, তাহলে তাদেরকে বাড়ি থেকে বিতাড়িত করবে। মেয়েটিকে কোথাও বিয়ে দিতে পারবে না।

এই দিকে মেয়েটির কলেজে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গেল। মাতব্বরের লোকেরা মেয়েটিকে সবসময় চোখে চোখে রাখে। মেয়েটি কিছুতে আশি বছরের মাতব্বরের সাথে বিয়েতে রাজি না। অন্য দিকে মাতব্বর মেয়েটির বাবাবকে হুমকির ওপর রাখছে। উপায়ন্তর না দেখে মেয়েটির বাবা বিয়েতে সম্মত হয়। মুহুর্তে মধ্যে চারদিকে এই বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ে। দুর দুরান্ত থেকে লোকজন আসতে শুরু করে, মেয়েটি ও তার গরীব বাবার অসহায়ত্বের করুণ চিত্র দেখতে। কিন্তু কেউ বিন্দু পরিমাণও মাতব্বরের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায়নি।

এই দিকে যথা সময়ে সমাজে আলোড়ন সৃষ্টিকারী কুঁড়ি বছরের মেয়েটির সাথে আশি বছরের মাতব্বরের বিয়ে সম্পন্ন হয়। কিন্তু বিয়ের দিনে রাতে মেয়েটি মাতব্বরের বাড়িতে বিষ পানে আত্মহুতি দেয়। মেয়ের আত্মহুতির খবর পেয়ে মেয়েটির বাবা মাও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে একসাথে মারা যায়। এভাবে আমারেদ সমাজ থেকে হারিয়ে যায় অসহায় একটি পরিবার। মেয়েটির আত্মহুতির মাধ্যমে সমাজের চোখের পর্দা খুলে দেয়। সমাজের সবাই একতাবদ্ধ হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। উক্ত মামলায় পুলিশ মাতব্বরকে গ্রেফতার করে। কিন্তু এতে করেও কি আমাদের সমাজ থেকে এরূপ হীনমন্যতা দুর হবে? ফিরে কি আসবে ওঅসহায় পরিবার?
Back to top
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum