- Rayhan1নবাগত
- Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1414
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-22
একটি ডায়রির আত্মকাহিনী
Sat May 22, 2021 11:06 pm
পর্ব ১
যেদিন আমার ছাত্রী তাঁর বান্ধবীদের সামনেই আমার গালে থাপ্পড় মেরে বলেছিলো,
"আপনার মাঝে কি লজ্জা নামক জিনিসটা বিন্দু পরিমাণও নেই? আমি এতো করে বলার পরেও কেনো আপনি আমার সাথে রিকশায় আসেন? আমার সাথে আসলে আপনার রিকশা ভাড়াটা বেঁচে যায় সেজন্য কি প্রতিদিন আমার সাথে রিকশায় করে আসেন? যদি তাই হয় তাহলে আপনার প্রতি দিনের রিকশা ভাড়ার টাকাটা আমি দিয়ে দিবো,তবুও আপনি আমার সাথে রিকশায় করে আসতে পারবেন না। আপনার পাশে বসে আসতে আমার খুব খারাপ লাগে। আপনি আমার শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখলেও আমার পাশে বসার কোনো যোগ্যতা রাখেন না। একটু ভালো ছাত্র হলেই শিক্ষক হওয়া যায় কিন্তু আমার মতো মেয়ের পাশে বসতে হলে অন্য রকম এক যোগ্যতা লাগে যেটা আপনার মাঝে নেই। আপনার যদি বিন্দু পরিমাণ আত্মসম্মানবোধ থাকে তাহলে নেক্সট টাইম আমার সাথে রিকশা করে আসবেন না। আপনাকে সবার সামনে থাপ্পড় মারলাম কেনো জানেন? আপনার যোগ্যতা কতোটুকু সেটা বুঝিয়ে দিলাম। আপনি আমার বাবা মায়ের খুব প্রিয় হলেও আমার কাছে আপনি খুব বিরক্তিকর একজন মানুষ।"
কথাগুলো শোনার পর সেখানে একমিনিটও দেরি করার মতো সাহস হয়নি। আমি চলে আসি। কারণ আমার দিকে আমার ছাত্রীর বান্ধবীরা খুব অবহেলার চোখে তাকিয়ে ছিলো। আমি তাদের চোখের দিকে তাকাতে পারি না। লজ্জায়,ঘৃণায়, অপমানে সেখান থেকে চলে আসি। নিজের অজান্তেই ভিতরটাতে অসহ্য খারাপ লাগা অনুভব করতে থাকি।
নুসরাতকে পড়াচ্ছি প্রায় ছয় মাস হলো। নুসরাতের বাবা মা আমাকে অনেক আদর করে। বলতে গেলে নিজের ছেলের মতোই দেখে। সেজন্যই হয়তো বা অনার্সে পড়ুয়া একটা ছেলের কাছে এমন সুন্দরী যুবতী কলেজে পড়ুয়া একটা মেয়েকে প্রাইভেট পড়ায়। আমাকে অনেক বিশ্বাসও করে তারা। নুসরাতকে আমি সকালে পড়াতে যাই। আমার পড়ানোর কিছুক্ষণ পরেই নুসরাত কলেজে চলে যায়। তাঁর মা চায় আমি যেনো তাকে কলেজে পৌছে দিয়ে বাসায় চলে যাই। তাঁর মায়ের অনুরোধটা রাখার জন্যই পড়ানো শেষে আমি প্রতিদিন তাঁর সাথে রিকশায় করে তাঁর কলেজ পর্যন্ত আসি। তাঁর সাথে তাঁর পাশে বসে এক রিকশায় আসি এটা আমার ছাত্রী মেনে নিতো পারতো না। এটা নিয়ে আমার ছাত্রী নুসরাত মাঝে মাঝেই আমাকে অনেক কথা শোনাতো। কিন্তু আমি এড়িয়ে যেতাম। এমনও অনেক দিন গিয়েছে যেদিন অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত আসার পর আমাকে রিকশা থেকে নামিয়ে দিয়েছে। আমি অনেকবার তাঁর মায়ের কাছে কথাগুলো বলতে চেয়েছি কিন্তু বলিনি। কারণ আমি জানি এসব ওর মা জানতে পারলে অনেক কষ্ট পাবে। আমি কোনোদিন চাইনি আমার ছাত্রীর বাবা মা কখনো জানুক তাদের মেয়েটা এমন অহংকারী বেয়াদব।
তবে আজ যে আমার ছাত্রী সবার সামনে আমাকে এভাবে লজ্জিত করবে কখনো ভাবিনি। হয়তো আমার প্রতি সে অনেক বিরক্ত তাই এমন করেছে। সে না চাওয়ার পরেও শুধুমাত্র তাঁর মায়ের কথাতে তাঁর সাথে রিকশায় করে আসি। বিরক্ত হওয়ারই কথা। আর নুসরাত ঠিকই বলেছে। আমি কখনোই তাঁর পাশে বসার যোগ্যতা রাখি না। আমি সব দিক দিয়েই তাঁর থেকে অনেকটা পিছিয়ে। কথাবার্তা,চলাফেরা, চেহারা,স্মার্টনেস সবকিছুতেই আমি তাঁর থেকে পিছিয়ে। সেজন্যই হয়তো বা সে আমার পাশে বসতে চায় না। এতো অপমান সহ্য করে আসলে কোনো মেয়েকে পড়ানো যায় না। আত্মসম্মানবোধ বলে একটা কথা আছে। এতোদিন বুঝতাম না কিন্তু আজ আমার ছাত্রী বুঝিয়ে দিয়েছে প্রতিটি মানুষের আত্মসম্মানবোধ থাকা উচিত। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের আত্মসম্মানটা ধরে রাখা উচিত। তাই নিজের আত্মসম্মানবোধটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হলেও নুসরাতকে আর পড়াবো না বলে ঠিক করলাম।
বিকেলে শুয়ে শুয়ে আমার ছাত্রী নুসরাতের কথা ভাবছিলাম। আমি জানি আমি যদি তাঁর বাবা মায়ের কাছে আজকের ঘটনাটা বলি তাহলে তারা নুসরাতকে অনেক কথা শোনাবে,বকা দিবে। কিন্তু এছাড়া কোনো উপায়ও নেই আমার। নুসরাত আজ আমার সাথে যে ব্যবহারটা করেছে এর পরে তাকে আর পড়ানোর কোনো কারণ নেই। সেও হয়তো চায় আমি যেনো তাকে না পড়াই। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম কাল সকালে গিয়ে নুসরাতের বাবা মাকে সব খুলে বলবো। বলবো আমি আর আপনাদের মেয়েকে পড়াতে পারবো না। আপনাদের মেয়ে অনেক অহংকারী। আপনাদের ব্যবহার খুব ভালো হলেও আপনাদের মেয়েটা বেয়াদব হয়েছে। সে মানুষকে মানুষ করে না। আমি জানি না এই কথাগুলো ঠিক এভাবেই কাল নুসরাতের বাবা মাকে আমি বলতে পারবো কিনা। তবে আমাকে বলতে হবেই। কারণ যেখানে নিজের ছাত্রীটাই সম্মান করে না,স্যারের গালে থাপ্পড় মারতে পারে। সেই ছাত্রীকে পড়িয়ে শিক্ষক নামটাকে অপবিত্র করতে চাই না।
"বাইশ বছর ধরে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াচ্ছি,আর কতো? এবার কিছু করতে বলো। এভাবে তো চলে না। আমরা কিছু বললে সেটাও শুনবে না। আমার কথামতো যদি আমার ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করতো তাহলে পায়ের ওপর পা তুলে খেতে পারতো। সেটাতেও নাকি ওর সমস্যা। একটা চাকরি করতে বলো,আর ওকে বুঝাও আমার ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করলে বাকি জীবনটা বিলাসিতায় কাটাতে পারবে।"
পাশের রুম থেকে কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পেলাম। আমাকে নিয়ে মা কথাগুলো বলছে বাবার কাছে। দশ বছর বয়সে আমি জানতে পারি আমার আপন বলতে পৃথিবীতে কেউ নেই। বাবা মায়ের কোনো সন্তান ছিলো না বলে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কোনো মদ্য পান করা বাবার কাছ থেকে আমাকে কিনে এনেছিলো। কিন্তু দশ বছর পর যখন তাদের নিজের সন্তান হলো তখন থেকেই আমার প্রতি তাদের ভালোবাসাটা কমতে থাকলো,সেটা আজও বাড়েনি। মা চায় আমি যেনো তাঁর ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করি। আসলে সবাই টাকার পাগল। মা আমাকে বিয়ে করাতে চায় টাকার জন্য। আমি যদি মাসের মাস তাদের হাতে টাকা দিতে পারি তাহলে হয়তো আগের ভালোবাসাটা ফিরে পাবো। তাই একটা চাকরি আমার খুব দরকার। কিন্তু অনার্স শেষ না হলে কোনো চাকরি করতে পারবো না সেটা আমার বাবা মা বুঝতে চায় না।
দীর্ঘ বাইশ বছর ধরে বসে বসে খাচ্ছি এটা মনে হতেই নুসরাতের টিউশনিটা বাদ দিবো না বলে ঠিক করলাম। কারণ এখান থেকে আমি প্রতি মাসে তিন হাজার টাকার মতো পাই। এই টাকাটা যখন মায়ের হাতে দেই তখন মা অনেক খুশি হয়। অন্তত কয়েকটা দিন আমাকে নিজের ছেলের মতো দেখে। ভেবেছিলাম নিজের আত্মসম্মানবোধটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হলেও নুসরাতকে আর পড়াবো না। কিন্তু যেখানে নিজের বেঁচে থাকাটা জরুরী সেখানে আত্মসম্মানবোধ দিয়ে কি করবো আমি? অভাবের কাছে এসব আত্মসম্মানবোধ,লজ্জা,অপমান খুব তুচ্ছ বিষয়। কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা চাইলেও নিজের ব্যক্তিত্বটাকে ধরে রাখতে পারে না,পরিস্থিতি তাদেরকে সেই সুযোগটা দেয় না।
আগের দিনের মতো স্বাভাবিকভাবেই আমি নুসরাতকে পড়াতে গেলাম। কালকের ঘটনাটা না চাইতেও ভোলার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। আমি যাওয়ার পর দেখলাম নুসরাত আর তাঁর বাবা মা বসে আছেন। আমাকে দেখে নুসরাতের মা প্রথম যে কথাটা বলল,সেটা হলো।
"আমরা তোমাকে এতো বিশ্বাস করতাম,নিজের ছেলের মতো ভালোবাসতাম আর তুমি কিনা আমাদের মেয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিতে?"
আমি কিছু বুঝতে পারলাম না,বোকার মতো নুসরাতের মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আরও বোকা বনে গেলাম যখন নুসরাতের মা বলল,
"আমার মেয়েকে যাতে কেউ বিরক্ত না করে সেজন্য পড়ানোর পর তোমাকে ওর কলেজ পর্যন্ত ওর সাথে যেতে বলতাম। তোমার বাসাটাও ওই দিকে তাই তোমার অসুবিধা হবে না বলে এটা বলতাম। কিন্তু তুমি আমাদের বিশ্বাসটাকে ভেঙে চুুরমার করে দিলে? রিকশা করে যাওয়ার সময় তুমি আমার মেয়ের হাত ধরতে,তাঁর গায়ে হাত দিতে চাইতে। সুযোগ পেলেই আমার নিষ্পাপ মেয়েটার সাথে এই জঘন্য কাজটা করতে তুমি। আমার মেয়ে কখনো বলতে পারতো না তুমি তাঁর সাথে এমন করো। কিন্তু আজ আমার মেয়ে আমাকে সব বলেছে। আসলে দোষটা আমারই। তোমার মতো একজন ছেলেকে আমার মেয়ের পাশে বসার সুযোগ করে দিয়েছিলাম। আমি তো তোমাকে নিজের মেয়ের জন্য ঠিক করে রেখেছিলাম। তোমাকে এতোটাই ভালোবাসতাম যে নিজের মেয়েকে তোমার কাছে বিয়ে দিবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর তুমি কিনা এমন করলে? তোমাকে আর পড়াতে আসতে হবে না। তোমার এই মাসের বেতন। দশদিন পড়িয়েছো। তবে পুরো মাসের টাকাটাই দিলাম।"
নুসরাতের মা যখন কথাগুলো বলল আমি তখনও যেনো একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। কিন্তু ঘোর কেটে গেলেই বুঝতে পারলাম আমার হাত ধরে কেউ টানছে। চেয়ে দেখলাম দাড়োয়ান। আসার আগে যখন নুসরাতের দিকে চেয়ে দেখলাম তখনও সে আমার দিকে অনেক ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমার মনে হলো এই পৃথিবীতে আমিই একমাত্র মানুষ যে মানুষটাকে সবাই অপছন্দ করে। নিজের বাবা মা ভাই বোন সবাই। নুসরাতের মা আমাকে অনেক আদর করতো কিন্তু আজ সেটারও পরিসমাপ্তি হয়ে গেলো। আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ মনে হলো। যে মানুষটা মারা গেলেও চোখের পানি ফেলার মতো কেউ নেই।
চলবে.............
লেখাঃ আমিনুর রহমান
যেদিন আমার ছাত্রী তাঁর বান্ধবীদের সামনেই আমার গালে থাপ্পড় মেরে বলেছিলো,
"আপনার মাঝে কি লজ্জা নামক জিনিসটা বিন্দু পরিমাণও নেই? আমি এতো করে বলার পরেও কেনো আপনি আমার সাথে রিকশায় আসেন? আমার সাথে আসলে আপনার রিকশা ভাড়াটা বেঁচে যায় সেজন্য কি প্রতিদিন আমার সাথে রিকশায় করে আসেন? যদি তাই হয় তাহলে আপনার প্রতি দিনের রিকশা ভাড়ার টাকাটা আমি দিয়ে দিবো,তবুও আপনি আমার সাথে রিকশায় করে আসতে পারবেন না। আপনার পাশে বসে আসতে আমার খুব খারাপ লাগে। আপনি আমার শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা রাখলেও আমার পাশে বসার কোনো যোগ্যতা রাখেন না। একটু ভালো ছাত্র হলেই শিক্ষক হওয়া যায় কিন্তু আমার মতো মেয়ের পাশে বসতে হলে অন্য রকম এক যোগ্যতা লাগে যেটা আপনার মাঝে নেই। আপনার যদি বিন্দু পরিমাণ আত্মসম্মানবোধ থাকে তাহলে নেক্সট টাইম আমার সাথে রিকশা করে আসবেন না। আপনাকে সবার সামনে থাপ্পড় মারলাম কেনো জানেন? আপনার যোগ্যতা কতোটুকু সেটা বুঝিয়ে দিলাম। আপনি আমার বাবা মায়ের খুব প্রিয় হলেও আমার কাছে আপনি খুব বিরক্তিকর একজন মানুষ।"
কথাগুলো শোনার পর সেখানে একমিনিটও দেরি করার মতো সাহস হয়নি। আমি চলে আসি। কারণ আমার দিকে আমার ছাত্রীর বান্ধবীরা খুব অবহেলার চোখে তাকিয়ে ছিলো। আমি তাদের চোখের দিকে তাকাতে পারি না। লজ্জায়,ঘৃণায়, অপমানে সেখান থেকে চলে আসি। নিজের অজান্তেই ভিতরটাতে অসহ্য খারাপ লাগা অনুভব করতে থাকি।
নুসরাতকে পড়াচ্ছি প্রায় ছয় মাস হলো। নুসরাতের বাবা মা আমাকে অনেক আদর করে। বলতে গেলে নিজের ছেলের মতোই দেখে। সেজন্যই হয়তো বা অনার্সে পড়ুয়া একটা ছেলের কাছে এমন সুন্দরী যুবতী কলেজে পড়ুয়া একটা মেয়েকে প্রাইভেট পড়ায়। আমাকে অনেক বিশ্বাসও করে তারা। নুসরাতকে আমি সকালে পড়াতে যাই। আমার পড়ানোর কিছুক্ষণ পরেই নুসরাত কলেজে চলে যায়। তাঁর মা চায় আমি যেনো তাকে কলেজে পৌছে দিয়ে বাসায় চলে যাই। তাঁর মায়ের অনুরোধটা রাখার জন্যই পড়ানো শেষে আমি প্রতিদিন তাঁর সাথে রিকশায় করে তাঁর কলেজ পর্যন্ত আসি। তাঁর সাথে তাঁর পাশে বসে এক রিকশায় আসি এটা আমার ছাত্রী মেনে নিতো পারতো না। এটা নিয়ে আমার ছাত্রী নুসরাত মাঝে মাঝেই আমাকে অনেক কথা শোনাতো। কিন্তু আমি এড়িয়ে যেতাম। এমনও অনেক দিন গিয়েছে যেদিন অর্ধেক রাস্তা পর্যন্ত আসার পর আমাকে রিকশা থেকে নামিয়ে দিয়েছে। আমি অনেকবার তাঁর মায়ের কাছে কথাগুলো বলতে চেয়েছি কিন্তু বলিনি। কারণ আমি জানি এসব ওর মা জানতে পারলে অনেক কষ্ট পাবে। আমি কোনোদিন চাইনি আমার ছাত্রীর বাবা মা কখনো জানুক তাদের মেয়েটা এমন অহংকারী বেয়াদব।
তবে আজ যে আমার ছাত্রী সবার সামনে আমাকে এভাবে লজ্জিত করবে কখনো ভাবিনি। হয়তো আমার প্রতি সে অনেক বিরক্ত তাই এমন করেছে। সে না চাওয়ার পরেও শুধুমাত্র তাঁর মায়ের কথাতে তাঁর সাথে রিকশায় করে আসি। বিরক্ত হওয়ারই কথা। আর নুসরাত ঠিকই বলেছে। আমি কখনোই তাঁর পাশে বসার যোগ্যতা রাখি না। আমি সব দিক দিয়েই তাঁর থেকে অনেকটা পিছিয়ে। কথাবার্তা,চলাফেরা, চেহারা,স্মার্টনেস সবকিছুতেই আমি তাঁর থেকে পিছিয়ে। সেজন্যই হয়তো বা সে আমার পাশে বসতে চায় না। এতো অপমান সহ্য করে আসলে কোনো মেয়েকে পড়ানো যায় না। আত্মসম্মানবোধ বলে একটা কথা আছে। এতোদিন বুঝতাম না কিন্তু আজ আমার ছাত্রী বুঝিয়ে দিয়েছে প্রতিটি মানুষের আত্মসম্মানবোধ থাকা উচিত। যেকোনো পরিস্থিতিতে নিজের আত্মসম্মানটা ধরে রাখা উচিত। তাই নিজের আত্মসম্মানবোধটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হলেও নুসরাতকে আর পড়াবো না বলে ঠিক করলাম।
বিকেলে শুয়ে শুয়ে আমার ছাত্রী নুসরাতের কথা ভাবছিলাম। আমি জানি আমি যদি তাঁর বাবা মায়ের কাছে আজকের ঘটনাটা বলি তাহলে তারা নুসরাতকে অনেক কথা শোনাবে,বকা দিবে। কিন্তু এছাড়া কোনো উপায়ও নেই আমার। নুসরাত আজ আমার সাথে যে ব্যবহারটা করেছে এর পরে তাকে আর পড়ানোর কোনো কারণ নেই। সেও হয়তো চায় আমি যেনো তাকে না পড়াই। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম কাল সকালে গিয়ে নুসরাতের বাবা মাকে সব খুলে বলবো। বলবো আমি আর আপনাদের মেয়েকে পড়াতে পারবো না। আপনাদের মেয়ে অনেক অহংকারী। আপনাদের ব্যবহার খুব ভালো হলেও আপনাদের মেয়েটা বেয়াদব হয়েছে। সে মানুষকে মানুষ করে না। আমি জানি না এই কথাগুলো ঠিক এভাবেই কাল নুসরাতের বাবা মাকে আমি বলতে পারবো কিনা। তবে আমাকে বলতে হবেই। কারণ যেখানে নিজের ছাত্রীটাই সম্মান করে না,স্যারের গালে থাপ্পড় মারতে পারে। সেই ছাত্রীকে পড়িয়ে শিক্ষক নামটাকে অপবিত্র করতে চাই না।
"বাইশ বছর ধরে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াচ্ছি,আর কতো? এবার কিছু করতে বলো। এভাবে তো চলে না। আমরা কিছু বললে সেটাও শুনবে না। আমার কথামতো যদি আমার ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করতো তাহলে পায়ের ওপর পা তুলে খেতে পারতো। সেটাতেও নাকি ওর সমস্যা। একটা চাকরি করতে বলো,আর ওকে বুঝাও আমার ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করলে বাকি জীবনটা বিলাসিতায় কাটাতে পারবে।"
পাশের রুম থেকে কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পেলাম। আমাকে নিয়ে মা কথাগুলো বলছে বাবার কাছে। দশ বছর বয়সে আমি জানতে পারি আমার আপন বলতে পৃথিবীতে কেউ নেই। বাবা মায়ের কোনো সন্তান ছিলো না বলে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কোনো মদ্য পান করা বাবার কাছ থেকে আমাকে কিনে এনেছিলো। কিন্তু দশ বছর পর যখন তাদের নিজের সন্তান হলো তখন থেকেই আমার প্রতি তাদের ভালোবাসাটা কমতে থাকলো,সেটা আজও বাড়েনি। মা চায় আমি যেনো তাঁর ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করি। আসলে সবাই টাকার পাগল। মা আমাকে বিয়ে করাতে চায় টাকার জন্য। আমি যদি মাসের মাস তাদের হাতে টাকা দিতে পারি তাহলে হয়তো আগের ভালোবাসাটা ফিরে পাবো। তাই একটা চাকরি আমার খুব দরকার। কিন্তু অনার্স শেষ না হলে কোনো চাকরি করতে পারবো না সেটা আমার বাবা মা বুঝতে চায় না।
দীর্ঘ বাইশ বছর ধরে বসে বসে খাচ্ছি এটা মনে হতেই নুসরাতের টিউশনিটা বাদ দিবো না বলে ঠিক করলাম। কারণ এখান থেকে আমি প্রতি মাসে তিন হাজার টাকার মতো পাই। এই টাকাটা যখন মায়ের হাতে দেই তখন মা অনেক খুশি হয়। অন্তত কয়েকটা দিন আমাকে নিজের ছেলের মতো দেখে। ভেবেছিলাম নিজের আত্মসম্মানবোধটাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হলেও নুসরাতকে আর পড়াবো না। কিন্তু যেখানে নিজের বেঁচে থাকাটা জরুরী সেখানে আত্মসম্মানবোধ দিয়ে কি করবো আমি? অভাবের কাছে এসব আত্মসম্মানবোধ,লজ্জা,অপমান খুব তুচ্ছ বিষয়। কিছু কিছু মানুষ থাকে যারা চাইলেও নিজের ব্যক্তিত্বটাকে ধরে রাখতে পারে না,পরিস্থিতি তাদেরকে সেই সুযোগটা দেয় না।
আগের দিনের মতো স্বাভাবিকভাবেই আমি নুসরাতকে পড়াতে গেলাম। কালকের ঘটনাটা না চাইতেও ভোলার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। আমি যাওয়ার পর দেখলাম নুসরাত আর তাঁর বাবা মা বসে আছেন। আমাকে দেখে নুসরাতের মা প্রথম যে কথাটা বলল,সেটা হলো।
"আমরা তোমাকে এতো বিশ্বাস করতাম,নিজের ছেলের মতো ভালোবাসতাম আর তুমি কিনা আমাদের মেয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিতে?"
আমি কিছু বুঝতে পারলাম না,বোকার মতো নুসরাতের মায়ের দিকে তাকিয়ে রইলাম। আরও বোকা বনে গেলাম যখন নুসরাতের মা বলল,
"আমার মেয়েকে যাতে কেউ বিরক্ত না করে সেজন্য পড়ানোর পর তোমাকে ওর কলেজ পর্যন্ত ওর সাথে যেতে বলতাম। তোমার বাসাটাও ওই দিকে তাই তোমার অসুবিধা হবে না বলে এটা বলতাম। কিন্তু তুমি আমাদের বিশ্বাসটাকে ভেঙে চুুরমার করে দিলে? রিকশা করে যাওয়ার সময় তুমি আমার মেয়ের হাত ধরতে,তাঁর গায়ে হাত দিতে চাইতে। সুযোগ পেলেই আমার নিষ্পাপ মেয়েটার সাথে এই জঘন্য কাজটা করতে তুমি। আমার মেয়ে কখনো বলতে পারতো না তুমি তাঁর সাথে এমন করো। কিন্তু আজ আমার মেয়ে আমাকে সব বলেছে। আসলে দোষটা আমারই। তোমার মতো একজন ছেলেকে আমার মেয়ের পাশে বসার সুযোগ করে দিয়েছিলাম। আমি তো তোমাকে নিজের মেয়ের জন্য ঠিক করে রেখেছিলাম। তোমাকে এতোটাই ভালোবাসতাম যে নিজের মেয়েকে তোমার কাছে বিয়ে দিবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আর তুমি কিনা এমন করলে? তোমাকে আর পড়াতে আসতে হবে না। তোমার এই মাসের বেতন। দশদিন পড়িয়েছো। তবে পুরো মাসের টাকাটাই দিলাম।"
নুসরাতের মা যখন কথাগুলো বলল আমি তখনও যেনো একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। কিন্তু ঘোর কেটে গেলেই বুঝতে পারলাম আমার হাত ধরে কেউ টানছে। চেয়ে দেখলাম দাড়োয়ান। আসার আগে যখন নুসরাতের দিকে চেয়ে দেখলাম তখনও সে আমার দিকে অনেক ঘৃণা নিয়ে তাকিয়ে আছে। আমার মনে হলো এই পৃথিবীতে আমিই একমাত্র মানুষ যে মানুষটাকে সবাই অপছন্দ করে। নিজের বাবা মা ভাই বোন সবাই। নুসরাতের মা আমাকে অনেক আদর করতো কিন্তু আজ সেটারও পরিসমাপ্তি হয়ে গেলো। আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ মনে হলো। যে মানুষটা মারা গেলেও চোখের পানি ফেলার মতো কেউ নেই।
চলবে.............
লেখাঃ আমিনুর রহমান
Sahin, Santo, Shuvo, Hasibul hasan, Mahim, Abid islam, Akaram khan and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Rayhan1নবাগত
- Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1414
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-22
Re: একটি ডায়রির আত্মকাহিনী
Sat May 22, 2021 11:07 pm
পর্ব - ২
কোনো অপরাধ না করেও নুসরাতের মায়ের কাছে আমি একজন খারাপ মানুষ হিসেবে পরিচিত হলাম। আমি আমার সাফাই গাওয়ার সুযোগটাও পেলাম না। আমি শেষবারের মতো যখন নুসরাতের দিকে তাকিয়েছিলাম তখন সে আমার চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেনি। কারণ আমার চোখে সে নিজের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা দেখেছিলো। আমি চলে আসি। আমার ভাগ্যটাই আসলে খারাপ। একটা টিউশনি বেশিদিন করতে পারি না আমি। কিছুদিন পড়ানোর পর কোনো না কারণে টিউশনিটা বাদ হয়ে যাবে। অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটা টিউশনি চলে গিয়েছে। কারো বাবা সরকারি চাকরি করার সুবাদে ট্রান্সফার হয়ে গেছে,কেউ বা বাসা চেঞ্চ করেছে,সাথে সাথে প্রাইভেট টিচারও। তবে সবচেয়ে খারাপ লেগেছে নুসরাতের টিউশনিটা চলে যাওয়াতে। এর আগে কখনো এতো বাজে অবস্থার সম্মুখীন আমাকে হতে হয়নি। জানি না আবার একটা টিউশনি পেতে কতোদিন লাগবে।
ভার্সিটি জীবনে আমি দুই ধরণের স্টুডেন্ট দেখেছি। প্রথম স্টুডেন্ট গুলো সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায়। তারা তাদের বাবার টাকা দিয়ে ভার্সিটি লাইফটা এনজয় করে,থাকা খাওয়া নিয়ে তাদেরকে কোনো চিন্তা করতে হয় না। যখন যা দরকার চাইলেই পেয়ে যায়। তাদের ভার্সিটি জীবনটা হয় সুখময়। আবার এক ধরণের স্টুডেন্ট আছে যারা ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় নিজের খরচ নিজেই চালানোর চেষ্টা করে। কেউ কেউ বাঁধ্য হয় নিজের খরচ নিজে চালাতে। বাসা থেকে প্রতিমাসে খরচ দেওয়ার মতো টাকা হয়তো থাকে না তাদের পরিবারের। এসব ছাত্রের মাঝে আমিও একজন। যদিও আমাকে থাকা খাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হয় না তবুও পড়ালেখার টাকাটা বাসায় চাওয়ার সাহস পাই না আমি। বরং টিউশনি করে মায়ের হাতে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি।
কিছুদিনের ব্যবধানে আমি আর একটা টিউশনি খুঁজে পাই। তবে এবার আর কোনো মেয়ে না। ক্লাস সেভেনের একটা ছেলেকে পড়াতে হবে। মেয়ের কোনো যুবতী বোনও নেই তাই অপমান হবারও কোনো ভয় নেই। এভাবেই চলে যাচ্ছিলো আমার অগোছালো দিনগুলো। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন বাবা আর মা খুব বেশি সিরিয়াস হয়ে গেলেন আমার বিয়ে নিয়ে। আর বিয়ের কথা উঠলে প্রথম আমার মায়ের ভাইয়ের মেয়ের কথাটাই আসবে। সব বারের মতো এবারও আমি না বললাম। যার প্রতিক্রিয়াতে মা বাবা কেউ কিছু বলল না। আমি খুব অবাক হলাম তাদের এমন ব্যবহার দেখে। বাবা হয়তো কিছু না বলতে পারে কিন্তু মা তো ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। এর আগে যতো বারই আমি না বলেছি ততোবারই আমার মা নানারকম কথা শুনিয়েছে। আমি সবসময় এড়িয়ে গিয়েছি। কিন্তু তাঁর এমন চুপচাপ থাকাটা কেনো জানি আজ মেনে নিতে পারছি না। আমি না বলার পর তারা কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো আমার সামনে। তারপর আমার কাছ থেকে চলে গেলো। আমি অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আমার কথার শাস্তি পেলাম পরের দিন হতে। কথাটা বলার পর আমার বাবা মা আমার সাথে কথা বলা পুরোপুরি বন্ধ করে দিলো। আমার খুব খারাপ লাগলো যখন দেখলাম বাসার কেউ আমার সাথে কথা বলে না। আমার মনে হলো এই বাড়ি থেকে চলে যাই। এই বাড়ির কেউ আমাকে বুঝতে চায় না। সবাই শুধু নিজের দিকটাই দেখে। কেউ আমার কথাটা একবারও ভাবে না। কিন্তু যখন নিজেকে প্রশ্ন করলাম কোথায় যাবো আমি? আমার কি যাওয়ার মতো কোনো জায়গা আছে? যদি থাকতো তাহলে না হয় যেতে পারতাম। এই পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ থাকে যাদের যাওয়ার কোনো জায়গা থাকে না। শত অপমান সহ্য করে হলেও সেই মানুষগুলোকে এক জায়গায় বন্দী হয়ে থাকতে হয়। আমারও ঠিক এমন অবস্থা। যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। দেখতে দেখতে কয়েকটাদিন পাড় হয়ে গেলো কিন্তু আমার সাথে কেউ কথা বলে না। আমি কথা বললেও সবাই এড়িয়ে যায়। আমি বুঝতে পারলাম পৃথিবীতে এর থেকে বড় শাস্তি হয় না। আমাকে খাবারের জন্যও কেউ ডাকে না। একসময় বাবা মায়ের কটু কথাগুলোও শোনার ইচ্ছে হতে শুরু করলো তবুও যেনো তারা আমার সাথে কথা বলে।
প্রায় একমাস পর আমি এই একাকিত্বের অবহেলাটা আর নিতে পারলাম না। আমার মনে হলো আমার সাথে কেউ কথা না বললে আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো। তাই একদিন বাবা মায়ের হাত ধরে বললাম।
"তোমরা কি চাও বলো, আমি সেটাই করবো। তবুও তোমরা আমার সাথে এভাবে কথা না বলে থেকো না। আমার সহ্য হয় না তোমাদেরকে এরকম দেখতে। তোমাদের কথামতোই আমি বিয়ে করবো তবুও তোমরা আমার সাথে কথা বলো।"
তখন মা আমার সাথে প্রথম কথা বলল,
"আমরাও তোর ভালো চাই। আমার ভাইয়ের আর কোনো সন্তান নেই,একটা মেয়েই শুধু। বিয়ের পর সবকিছুই তোর হয়ে যাবে। সে তাঁর মেয়েকে অনেক ভালোবাসে। আমার ভাই চায় ভালো একটা ছেলের কাছে মেয়েটাকে বিয়ে দিতে। যতো টাকা লাগে সে দিতে রাজী। আমাকে তোর কথা বলেছিলো। আমি তো জানি তুই কেমন। আমি তোর ওপর কতো অন্যায় করেছি,অকারণে কতো রাগ দেখিয়েছি তবুও কোনোদিন তুই আমার সাথে মাথা উঁচু করে কথা বলিসনি। নিজের মায়ের থেকেও অনেক বেশি সম্মান দিয়েছিস। তুই এই বিয়েটা করলে সুখীই হবি।"
কথাগুলো বলেই মা চলে গেলো। বুঝতে পারলাম তাঁর ভাইকে ফোন করবে। ফোন করে বলবে তাঁর মেয়ের জন্য আর কোনো ছেলে দেখতে হবে না। কারণ আমি বিয়ের জন্য রাজী হয়ে গেছি। মা চলে যাওয়ার পর বাবাকে যখন বললাম,
"মেয়েটা অনেক কালো,না বাবা? বড় ধরণের কোনো সমস্যাও আছে হয়তো। না হলে তো আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য এতো পাগল হতো না। সুন্দর হলে তো ভালো ছেলের অভাব হতো না।"
তখন বাবা কোনো কথায় বলল না।
"শুধু বলল আমি অনেক আগে দেখেছিলাম,দেখতে ভালোই। একেবারে খারাপ না।"
বাবার কথা বলার জোর দেখেই বুঝলাম আমার কথাগুলো সত্য না হলেও হয়তো পুরোপুরি মিথ্যা নয়। তবুও আমার পরিবারের মানুষ গুলো সুখে থাকুক। আমার আপন বলতে কেউ নেই আবার যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে এই মানুষ গুলোই আছে। তারা খারাপ বাসে বলেই তো আমি খারাপ বাসতে পারি না। এতোদিন আমি তাদেরকে কখন আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করিনি। তারা দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে আমিও কাছে যাওয়ার চেষ্টা করিনি কখনো। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবীর সবকিছু জয় করা যায়। তাদের কাছে যেতে চাইলে তারাও তো আমাকে কাছে টেনে নিতে পারে। বিয়েটা করবো বলে মা অনেক খুশি হয়েছে। কিছু মানুষের আদর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছা বিসর্জন দেওয়াটা কোনো পাপ না।
রাতে মা যখন খুব খুশি মনে বলল,
"ওরা খুব তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলতে চায়।"
তখন আমি বললাম,
"অন্তত অনার্সটা শেষ হোক। তারপর না হয় বিয়ে নিয়ে ভাবা যাবে।"
আমার কথা শুনে মা বলল,
"আমার ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করলে তোর কোনো চাকরি বাকরি কিছু করতে হবে না আগেই তো বলেছি। তোর নাতি নাতনীদেরও কোনো অভাব হবে না। বিয়ের পরেই তোদেরকে নতুন ফ্লাট দিবে। এসব নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না। আর তাছাড়া বিয়ের পরেও তুই অনার্স শেষ করতে পারবি। এমন নাতো যে বিয়ের পরে তোকে কামাই করতে হবে। কাজেই বিয়েটা তাড়াতাড়ি হলেই ভালো।"
কথাগুলো বলেই মা আমার রুম থেকে চলে গেলো। বিয়ের জন্য এতো তাড়াহুড়ো কেনো করছে সেটা আমার অগোছালো মস্তিষ্কটা উপলব্ধি করতে পারলো না। এতোদিনে একটা জিনিস আমি বুঝেছি। সহজ সরল,আনস্মার্ট ভালো ছেলেদের কোনো সুন্দরী মেয়েরা পছন্দ না করলেও তাদের বাবা মারা ঠিকই পছন্দ করে। নিজের মেয়ের বিয়ের জন্য প্রতিটা বাবা মাই হয়তো সহজ সরল ভালো একজন ছেলে খুঁজে। যেমনটা নুসরাতের মা আমাকে অনেক পছন্দ করতো কিন্তু নুসরাতকে আমাকে দুচোখে দেখতে পারতো না। তাই হয়তো সেদিন তাঁর বাবা মার সামনে এতো বড় জঘন্য একটা মিথ্যা বলে আমাকে তাঁর মায়ের কাছে খারাপ বানিয়েছিল। যে মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে এই মেয়েটার বাবার চোখেও আমি অনেক ভালো একজন মানুষ। তাই হয়তো নিজের মেয়েকে আমার কাছে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। যদিও আমি জানি না মেয়েটা দেখতে সুন্দর নাকি অসুন্দর। তবে সুন্দর হওয়ার কোনো চান্স নাই। আর হলেও নিশ্চয় তাঁর বাবার মতো সে আমাকে পছন্দ করবে না। বিয়ের আগে পালিয়ে যাবে নিজের বয়ফ্রেন্ডের সাথে। কারণ ভার্সিটি পড়ুয়া সুন্দরী একটা মেয়ের বয়ফ্রেন্ড থাকাটা জাতীয় অধিকার।
আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে আমি জানি না। মা আমাকে মেয়েটার নাম্বার দিয়েছে ফোনে কথা বলার জন্য কিন্তু আমি এখনো ফোন দেইনি। ভেবে পাইনা একটা অপরিচিত মেয়েকে ফোন দিয়ে কি বলবো আমি। ফোন দিয়ে কি কোনো মেয়েকে জিগ্যেস করা যায়,আপনি দেখতে কেমন? কালো নাকি ফরসা,লম্বা নাকি খাটো। আপনার অতীত জীবনে কি কোনো দুর্ঘটনা ছিলো? এসব বলাটা কোনো স্বাভাবিক মানুষের কাজ না। কিন্তু আমি তো স্বাভাবিক মানুষ তাই এইসব অস্বাভাবিক কথা আমি বলতে পারবো না। আমি মেয়েটার সম্পর্কে কিছুই জানি না। অথচ এই মেয়েটার সাথে কিছুদিন পর আমার বিয়ে হবে। জানার মধ্যে শুধু মেয়েটার নাম জানি আর জানি মেয়েটা ভার্সিটিতে পড়ে। মনের ভিতর হাজারো প্রশ্ন নিয়ে মায়ের দেওয়া অপরিচিত নাম্বারটাতে ফোন দিলাম। দুইবার রিং বাজার পরেও কেউ ফোন ধরল না। মনে হলো ফোন না ধরাতেই ভালো হয়েছে ফোন ধরলে হয়তো কথা বলার মতো কোনো কিছু খুঁজে পেতাম না। ভাবলাম আর একবার ফোন দেই আবার মনে হলো যে মানুষটা প্রথম দুইবারে ফোন ধরেনি সে এবারও ধরবে না। শুধু শুধু কাউকে এতোবার ফোন দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তাঁর দরকার হলে সেই ফোন দিবেনি।
প্রায় দশ মিনিট পর ওই নাম্বার থেকে কল ব্যাক আসলো। আমি কিছুটা সময় নিয়ে কলটা ধরলাম। ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে মুগ্ধকর একটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো। আমার বাইশ বছরের জীবনে তেমন বিশেষ কোনো মেয়ের সাথে কথা বলা হয়নি। তবে কথা বলেছি অনেক মেয়ের সাথে। এই প্রথম কোনো মেয়ের কণ্ঠ শুনে এতোটা মুগ্ধতা পেলাম,এতোটা ভালো লাগা কাজ করলো। মেয়েটা যখন বলল,
"কে আপনি?"
তখনও আমার এপাশে পুরোপুরি নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।
মেয়েটা ওপাশ থেকে বলেই যাচ্ছে,
"কে আপনি? কথা বলছেন না কেনো? কি আশ্চর্য! ফোন ধরেও কথা বলছেন না।"
আমি বুঝতে পারলাম এপাশ থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে মেয়েটা প্রচণ্ড রাগ করছে।" তাই বাঁধ্য হয়ে প্রায় একমিনিট পর আমি কথা বললাম,
"আপনার কথাগুলো শুনতেই ভালো লাগছে। আমি কথা বললে তো আর আপনার এতো সুমধুর কোকিল কণ্ঠের কথাগুলো শুনতে পারবো না তাই কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলাম।"
তখন মেয়েটা বলল,
"আজিব,কে ভাই আপনি ফোন দিয়ে আবোলতাবোল বলছেন? আমি যে সুন্দর করে কথা বলি সেটা আমি জানি,আপনার পাম না দিলেও চলবে। এখন বলেন আপনি কে? কি জন্য ফোন দিয়েছেন? আর আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?"
আমি মেয়েটার কথা শুনে কিছুটা হকচকিয়ে গেলাম। আমি ভেবেছিলাম আমার নাম্বারও হয়তো মেয়েটার কাছে আছে যেমন তাঁর নাম্বার আমার কাছে আছে। কিন্তু এই মেয়েতো আমাকেই চেনেই না।
আমি বলার মতো কোনো কথা খুঁজে না পেয়ে বললাম।
"আপনার সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। মনে হচ্ছে বিয়েটা হয়েও যাবে। আপনার ফুফি আমাকে আপনার ফোন নাম্বার দিয়েছে কথা বলার জন্য। আর আপনি আমাকে চিনতেই পারছেন না?"
তখন ফোনের ওপাশের মেয়েটা বলল,
"ধুর! পুরান পাগলে ভাত পায় না নতুন পাগলের আমদানি। ফ্লাট করার জন্য ফোন দিয়েছেন সেটা বললেই হয়। এতো প্যাঁচানোর কি আছে? তবে অতি দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে এই মুহূর্তে আপনার সাথে ফ্লাট করার মতো সময় আমার কাছে নেই।"
কথাগুলো বলেই মেয়েটা ফোন রেখে দিলে। আমিও কাগজে লেখা নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলাম। রং নাম্বারে ফোন দিয়েছি নাকি রাইট নাম্বারেই দিয়েছি।
চলবে..............
কোনো অপরাধ না করেও নুসরাতের মায়ের কাছে আমি একজন খারাপ মানুষ হিসেবে পরিচিত হলাম। আমি আমার সাফাই গাওয়ার সুযোগটাও পেলাম না। আমি শেষবারের মতো যখন নুসরাতের দিকে তাকিয়েছিলাম তখন সে আমার চোখের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেনি। কারণ আমার চোখে সে নিজের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা দেখেছিলো। আমি চলে আসি। আমার ভাগ্যটাই আসলে খারাপ। একটা টিউশনি বেশিদিন করতে পারি না আমি। কিছুদিন পড়ানোর পর কোনো না কারণে টিউশনিটা বাদ হয়ে যাবে। অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচটা টিউশনি চলে গিয়েছে। কারো বাবা সরকারি চাকরি করার সুবাদে ট্রান্সফার হয়ে গেছে,কেউ বা বাসা চেঞ্চ করেছে,সাথে সাথে প্রাইভেট টিচারও। তবে সবচেয়ে খারাপ লেগেছে নুসরাতের টিউশনিটা চলে যাওয়াতে। এর আগে কখনো এতো বাজে অবস্থার সম্মুখীন আমাকে হতে হয়নি। জানি না আবার একটা টিউশনি পেতে কতোদিন লাগবে।
ভার্সিটি জীবনে আমি দুই ধরণের স্টুডেন্ট দেখেছি। প্রথম স্টুডেন্ট গুলো সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মায়। তারা তাদের বাবার টাকা দিয়ে ভার্সিটি লাইফটা এনজয় করে,থাকা খাওয়া নিয়ে তাদেরকে কোনো চিন্তা করতে হয় না। যখন যা দরকার চাইলেই পেয়ে যায়। তাদের ভার্সিটি জীবনটা হয় সুখময়। আবার এক ধরণের স্টুডেন্ট আছে যারা ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় নিজের খরচ নিজেই চালানোর চেষ্টা করে। কেউ কেউ বাঁধ্য হয় নিজের খরচ নিজে চালাতে। বাসা থেকে প্রতিমাসে খরচ দেওয়ার মতো টাকা হয়তো থাকে না তাদের পরিবারের। এসব ছাত্রের মাঝে আমিও একজন। যদিও আমাকে থাকা খাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হয় না তবুও পড়ালেখার টাকাটা বাসায় চাওয়ার সাহস পাই না আমি। বরং টিউশনি করে মায়ের হাতে কিছু দেওয়ার চেষ্টা করি।
কিছুদিনের ব্যবধানে আমি আর একটা টিউশনি খুঁজে পাই। তবে এবার আর কোনো মেয়ে না। ক্লাস সেভেনের একটা ছেলেকে পড়াতে হবে। মেয়ের কোনো যুবতী বোনও নেই তাই অপমান হবারও কোনো ভয় নেই। এভাবেই চলে যাচ্ছিলো আমার অগোছালো দিনগুলো। কিন্তু হঠাৎ করেই একদিন বাবা আর মা খুব বেশি সিরিয়াস হয়ে গেলেন আমার বিয়ে নিয়ে। আর বিয়ের কথা উঠলে প্রথম আমার মায়ের ভাইয়ের মেয়ের কথাটাই আসবে। সব বারের মতো এবারও আমি না বললাম। যার প্রতিক্রিয়াতে মা বাবা কেউ কিছু বলল না। আমি খুব অবাক হলাম তাদের এমন ব্যবহার দেখে। বাবা হয়তো কিছু না বলতে পারে কিন্তু মা তো ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়। এর আগে যতো বারই আমি না বলেছি ততোবারই আমার মা নানারকম কথা শুনিয়েছে। আমি সবসময় এড়িয়ে গিয়েছি। কিন্তু তাঁর এমন চুপচাপ থাকাটা কেনো জানি আজ মেনে নিতে পারছি না। আমি না বলার পর তারা কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো আমার সামনে। তারপর আমার কাছ থেকে চলে গেলো। আমি অবাক হয়ে দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আমার কথার শাস্তি পেলাম পরের দিন হতে। কথাটা বলার পর আমার বাবা মা আমার সাথে কথা বলা পুরোপুরি বন্ধ করে দিলো। আমার খুব খারাপ লাগলো যখন দেখলাম বাসার কেউ আমার সাথে কথা বলে না। আমার মনে হলো এই বাড়ি থেকে চলে যাই। এই বাড়ির কেউ আমাকে বুঝতে চায় না। সবাই শুধু নিজের দিকটাই দেখে। কেউ আমার কথাটা একবারও ভাবে না। কিন্তু যখন নিজেকে প্রশ্ন করলাম কোথায় যাবো আমি? আমার কি যাওয়ার মতো কোনো জায়গা আছে? যদি থাকতো তাহলে না হয় যেতে পারতাম। এই পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ থাকে যাদের যাওয়ার কোনো জায়গা থাকে না। শত অপমান সহ্য করে হলেও সেই মানুষগুলোকে এক জায়গায় বন্দী হয়ে থাকতে হয়। আমারও ঠিক এমন অবস্থা। যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। দেখতে দেখতে কয়েকটাদিন পাড় হয়ে গেলো কিন্তু আমার সাথে কেউ কথা বলে না। আমি কথা বললেও সবাই এড়িয়ে যায়। আমি বুঝতে পারলাম পৃথিবীতে এর থেকে বড় শাস্তি হয় না। আমাকে খাবারের জন্যও কেউ ডাকে না। একসময় বাবা মায়ের কটু কথাগুলোও শোনার ইচ্ছে হতে শুরু করলো তবুও যেনো তারা আমার সাথে কথা বলে।
প্রায় একমাস পর আমি এই একাকিত্বের অবহেলাটা আর নিতে পারলাম না। আমার মনে হলো আমার সাথে কেউ কথা না বললে আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো। তাই একদিন বাবা মায়ের হাত ধরে বললাম।
"তোমরা কি চাও বলো, আমি সেটাই করবো। তবুও তোমরা আমার সাথে এভাবে কথা না বলে থেকো না। আমার সহ্য হয় না তোমাদেরকে এরকম দেখতে। তোমাদের কথামতোই আমি বিয়ে করবো তবুও তোমরা আমার সাথে কথা বলো।"
তখন মা আমার সাথে প্রথম কথা বলল,
"আমরাও তোর ভালো চাই। আমার ভাইয়ের আর কোনো সন্তান নেই,একটা মেয়েই শুধু। বিয়ের পর সবকিছুই তোর হয়ে যাবে। সে তাঁর মেয়েকে অনেক ভালোবাসে। আমার ভাই চায় ভালো একটা ছেলের কাছে মেয়েটাকে বিয়ে দিতে। যতো টাকা লাগে সে দিতে রাজী। আমাকে তোর কথা বলেছিলো। আমি তো জানি তুই কেমন। আমি তোর ওপর কতো অন্যায় করেছি,অকারণে কতো রাগ দেখিয়েছি তবুও কোনোদিন তুই আমার সাথে মাথা উঁচু করে কথা বলিসনি। নিজের মায়ের থেকেও অনেক বেশি সম্মান দিয়েছিস। তুই এই বিয়েটা করলে সুখীই হবি।"
কথাগুলো বলেই মা চলে গেলো। বুঝতে পারলাম তাঁর ভাইকে ফোন করবে। ফোন করে বলবে তাঁর মেয়ের জন্য আর কোনো ছেলে দেখতে হবে না। কারণ আমি বিয়ের জন্য রাজী হয়ে গেছি। মা চলে যাওয়ার পর বাবাকে যখন বললাম,
"মেয়েটা অনেক কালো,না বাবা? বড় ধরণের কোনো সমস্যাও আছে হয়তো। না হলে তো আমার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য এতো পাগল হতো না। সুন্দর হলে তো ভালো ছেলের অভাব হতো না।"
তখন বাবা কোনো কথায় বলল না।
"শুধু বলল আমি অনেক আগে দেখেছিলাম,দেখতে ভালোই। একেবারে খারাপ না।"
বাবার কথা বলার জোর দেখেই বুঝলাম আমার কথাগুলো সত্য না হলেও হয়তো পুরোপুরি মিথ্যা নয়। তবুও আমার পরিবারের মানুষ গুলো সুখে থাকুক। আমার আপন বলতে কেউ নেই আবার যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে এই মানুষ গুলোই আছে। তারা খারাপ বাসে বলেই তো আমি খারাপ বাসতে পারি না। এতোদিন আমি তাদেরকে কখন আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করিনি। তারা দূরে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে আমিও কাছে যাওয়ার চেষ্টা করিনি কখনো। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে ভালোবাসা দিয়ে পৃথিবীর সবকিছু জয় করা যায়। তাদের কাছে যেতে চাইলে তারাও তো আমাকে কাছে টেনে নিতে পারে। বিয়েটা করবো বলে মা অনেক খুশি হয়েছে। কিছু মানুষের আদর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য নিজের ইচ্ছে অনিচ্ছা বিসর্জন দেওয়াটা কোনো পাপ না।
রাতে মা যখন খুব খুশি মনে বলল,
"ওরা খুব তাড়াতাড়ি বিয়েটা সেরে ফেলতে চায়।"
তখন আমি বললাম,
"অন্তত অনার্সটা শেষ হোক। তারপর না হয় বিয়ে নিয়ে ভাবা যাবে।"
আমার কথা শুনে মা বলল,
"আমার ভাইয়ের মেয়েকে বিয়ে করলে তোর কোনো চাকরি বাকরি কিছু করতে হবে না আগেই তো বলেছি। তোর নাতি নাতনীদেরও কোনো অভাব হবে না। বিয়ের পরেই তোদেরকে নতুন ফ্লাট দিবে। এসব নিয়ে তোকে চিন্তা করতে হবে না। আর তাছাড়া বিয়ের পরেও তুই অনার্স শেষ করতে পারবি। এমন নাতো যে বিয়ের পরে তোকে কামাই করতে হবে। কাজেই বিয়েটা তাড়াতাড়ি হলেই ভালো।"
কথাগুলো বলেই মা আমার রুম থেকে চলে গেলো। বিয়ের জন্য এতো তাড়াহুড়ো কেনো করছে সেটা আমার অগোছালো মস্তিষ্কটা উপলব্ধি করতে পারলো না। এতোদিনে একটা জিনিস আমি বুঝেছি। সহজ সরল,আনস্মার্ট ভালো ছেলেদের কোনো সুন্দরী মেয়েরা পছন্দ না করলেও তাদের বাবা মারা ঠিকই পছন্দ করে। নিজের মেয়ের বিয়ের জন্য প্রতিটা বাবা মাই হয়তো সহজ সরল ভালো একজন ছেলে খুঁজে। যেমনটা নুসরাতের মা আমাকে অনেক পছন্দ করতো কিন্তু নুসরাতকে আমাকে দুচোখে দেখতে পারতো না। তাই হয়তো সেদিন তাঁর বাবা মার সামনে এতো বড় জঘন্য একটা মিথ্যা বলে আমাকে তাঁর মায়ের কাছে খারাপ বানিয়েছিল। যে মেয়েটার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে এই মেয়েটার বাবার চোখেও আমি অনেক ভালো একজন মানুষ। তাই হয়তো নিজের মেয়েকে আমার কাছে বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। যদিও আমি জানি না মেয়েটা দেখতে সুন্দর নাকি অসুন্দর। তবে সুন্দর হওয়ার কোনো চান্স নাই। আর হলেও নিশ্চয় তাঁর বাবার মতো সে আমাকে পছন্দ করবে না। বিয়ের আগে পালিয়ে যাবে নিজের বয়ফ্রেন্ডের সাথে। কারণ ভার্সিটি পড়ুয়া সুন্দরী একটা মেয়ের বয়ফ্রেন্ড থাকাটা জাতীয় অধিকার।
আমার জন্য কি অপেক্ষা করছে আমি জানি না। মা আমাকে মেয়েটার নাম্বার দিয়েছে ফোনে কথা বলার জন্য কিন্তু আমি এখনো ফোন দেইনি। ভেবে পাইনা একটা অপরিচিত মেয়েকে ফোন দিয়ে কি বলবো আমি। ফোন দিয়ে কি কোনো মেয়েকে জিগ্যেস করা যায়,আপনি দেখতে কেমন? কালো নাকি ফরসা,লম্বা নাকি খাটো। আপনার অতীত জীবনে কি কোনো দুর্ঘটনা ছিলো? এসব বলাটা কোনো স্বাভাবিক মানুষের কাজ না। কিন্তু আমি তো স্বাভাবিক মানুষ তাই এইসব অস্বাভাবিক কথা আমি বলতে পারবো না। আমি মেয়েটার সম্পর্কে কিছুই জানি না। অথচ এই মেয়েটার সাথে কিছুদিন পর আমার বিয়ে হবে। জানার মধ্যে শুধু মেয়েটার নাম জানি আর জানি মেয়েটা ভার্সিটিতে পড়ে। মনের ভিতর হাজারো প্রশ্ন নিয়ে মায়ের দেওয়া অপরিচিত নাম্বারটাতে ফোন দিলাম। দুইবার রিং বাজার পরেও কেউ ফোন ধরল না। মনে হলো ফোন না ধরাতেই ভালো হয়েছে ফোন ধরলে হয়তো কথা বলার মতো কোনো কিছু খুঁজে পেতাম না। ভাবলাম আর একবার ফোন দেই আবার মনে হলো যে মানুষটা প্রথম দুইবারে ফোন ধরেনি সে এবারও ধরবে না। শুধু শুধু কাউকে এতোবার ফোন দেওয়ার কোনো মানে হয় না। তাঁর দরকার হলে সেই ফোন দিবেনি।
প্রায় দশ মিনিট পর ওই নাম্বার থেকে কল ব্যাক আসলো। আমি কিছুটা সময় নিয়ে কলটা ধরলাম। ফোনটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে মুগ্ধকর একটা কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো। আমার বাইশ বছরের জীবনে তেমন বিশেষ কোনো মেয়ের সাথে কথা বলা হয়নি। তবে কথা বলেছি অনেক মেয়ের সাথে। এই প্রথম কোনো মেয়ের কণ্ঠ শুনে এতোটা মুগ্ধতা পেলাম,এতোটা ভালো লাগা কাজ করলো। মেয়েটা যখন বলল,
"কে আপনি?"
তখনও আমার এপাশে পুরোপুরি নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।
মেয়েটা ওপাশ থেকে বলেই যাচ্ছে,
"কে আপনি? কথা বলছেন না কেনো? কি আশ্চর্য! ফোন ধরেও কথা বলছেন না।"
আমি বুঝতে পারলাম এপাশ থেকে কোনো আওয়াজ না পেয়ে মেয়েটা প্রচণ্ড রাগ করছে।" তাই বাঁধ্য হয়ে প্রায় একমিনিট পর আমি কথা বললাম,
"আপনার কথাগুলো শুনতেই ভালো লাগছে। আমি কথা বললে তো আর আপনার এতো সুমধুর কোকিল কণ্ঠের কথাগুলো শুনতে পারবো না তাই কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলাম।"
তখন মেয়েটা বলল,
"আজিব,কে ভাই আপনি ফোন দিয়ে আবোলতাবোল বলছেন? আমি যে সুন্দর করে কথা বলি সেটা আমি জানি,আপনার পাম না দিলেও চলবে। এখন বলেন আপনি কে? কি জন্য ফোন দিয়েছেন? আর আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?"
আমি মেয়েটার কথা শুনে কিছুটা হকচকিয়ে গেলাম। আমি ভেবেছিলাম আমার নাম্বারও হয়তো মেয়েটার কাছে আছে যেমন তাঁর নাম্বার আমার কাছে আছে। কিন্তু এই মেয়েতো আমাকেই চেনেই না।
আমি বলার মতো কোনো কথা খুঁজে না পেয়ে বললাম।
"আপনার সাথে আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে। মনে হচ্ছে বিয়েটা হয়েও যাবে। আপনার ফুফি আমাকে আপনার ফোন নাম্বার দিয়েছে কথা বলার জন্য। আর আপনি আমাকে চিনতেই পারছেন না?"
তখন ফোনের ওপাশের মেয়েটা বলল,
"ধুর! পুরান পাগলে ভাত পায় না নতুন পাগলের আমদানি। ফ্লাট করার জন্য ফোন দিয়েছেন সেটা বললেই হয়। এতো প্যাঁচানোর কি আছে? তবে অতি দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে এই মুহূর্তে আপনার সাথে ফ্লাট করার মতো সময় আমার কাছে নেই।"
কথাগুলো বলেই মেয়েটা ফোন রেখে দিলে। আমিও কাগজে লেখা নাম্বারটার দিকে তাকিয়ে ভালো করে দেখতে লাগলাম। রং নাম্বারে ফোন দিয়েছি নাকি রাইট নাম্বারেই দিয়েছি।
চলবে..............
Sahin, Santo, Shuvo, Hasibul hasan, Mahim, Jannat islam, Akram ali and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Rayhan1নবাগত
- Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1414
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-22
Re: একটি ডায়রির আত্মকাহিনী
Sat May 22, 2021 11:08 pm
৩|
নাম্বারটা চেক করতেই আমার চোখ একটা জায়গায় গিয়ে আটকে গেলো। আমি বুঝতে পারলাম বিশের জায়গায় একুশ বসিয়ে ডায়াল করেছি যার কারণেই ভুল নাম্বারে ফোন চলে গিয়েছিলো। আমি কিছুটা কনফিউজড হয়ে গেলাম। কোন নাম্বারে ফোন দিবো বুঝতে পারলাম না। রাইট নাম্বারে ফোন দিয়ে সেই মেয়েটার সাথে কথা বলবো যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। নাকি কিছুক্ষণ আগের সেই রং নাম্বারের মেয়েটাকে ফোন দিয়ে সরি বলবো। কেনো জানি আফসোস হচ্ছে,ভুল নাম্বারের মেয়েটাই যদি সঠিক হতো তাহলে কি এমন হতো? কিছু সময়ের ব্যবধানে রং নাম্বারের মেয়েটার কণ্ঠস্বরের মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম আমি,তাঁর মনোমুগ্ধকর কণ্ঠস্বরটা এখন কানের ভিতর অনবরত বেজে চলেছে,ভুলতে ইচ্ছে করছে না, কিন্তু ভুলতে হবে। যেসব মানুষ গুলো আমাদের জীবনে ক্ষনিকের জন্য আসে তাদের জন্য বুকের ভিতর এতোটা ভালো লাগা কাজ করে কি জন্য আমার জানা নেই। তবে যে মানুষ গুলো আমাদের জীবনে খুব সময়ের জন্য অতিথি হয়ে আসে কিংবা হঠাৎ করে ভুল করে ভুল সময়ে পরিচয় হয়ে যায় সেসব মানুষদের প্রতি ভালো লাগা কাজ করা উচিত না। এই ভালো লাগাটা শুধু আফসোসই দিবে এর বেশি কিছু না। কিন্তু তবুও নিজের অজান্তেই ভালো লেগে যায়। কারণ ভাগ্যের ওপর কারো হাত নেই। কখন কাকে ভালো লেগে যাবে আমরা কেউ বলতে পারবো না। আবার সেই ভালো লাগার মানুষ গুলোকে নিজের করে পাবো নাকি সেটাও জানি না।
যে মানুষটার সাথে আমার ভুল করে কথা হয়েছিলো তাকে আর সরি বলার জন্য ফোন দিলাম না। কিছুদিন পর যার সাথে আমার ভবিষ্যৎ জীবনটা জড়াতে যাচ্ছি তাকে ফোন দিলাম। নাম্বারটা এবার খুব ভালোভাবে চেক করে নিলাম ডায়াল করার আগে। কিছু সময় পরে কেউ একজন ফোনটা রিসিভ করলো। ফোনের ওপাশ থেকে খুব নিস্তব্ধ নিরীহ একটা মানুষের কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো। একটা মানুষ এতো শান্ত ভাবে কথা বলতে পারে এই মেয়েটাের সাথে কথা না বললে হয়তো বুঝতে পারতাম না। মেয়েটা আস্তে করে বলল,"আপনি কি আমিনুর রহমান?"
তখন আমি বললাম,
হ্যাঁ আমি আমিনুর রহমান। আপনি নিশ্চয় রাখি?
- হ্যাঁ আমি রাখি। বাবা আপনার কথা আমাকে বলেছিলো,আপনি আমাকে ফোন দিবেন।
- যাইহোক কেমন আছেন আপনি?
- জ্বি ভালো আছি।
- কেউ কেমন আছি জানতে চাইলে ভদ্রতার খাতিরে হলেও তাকে জিগ্যেস করতে হয় সে কেমন আছে।
আমার কথাটা শুনে মনে হলো মেয়েটা আকাশ থেকে মাটিতে পড়ল। তবুও সে খুব নরম স্বরে বলল,
"সরি। আসলে ভুলে গিয়েছিলাম। কেমন আছেন আপনি?"
আমি মেয়েটার কেমন আছি প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলাম না। উল্টা আমি তাকে জিগ্যেস করলাম,
আপনার কি কোনো কারণে মন খারাপ? যদি এমনটা হয় তাহলে আমাকে বলতে পারেন।
-না,তেমন কিছু না।
-আপনার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে আপনার মন ভালো নেই। আর সেটার কারণ যদি আমার ফোন দেওয়া হয বলতে পারেন।
-না,আপনি ফোন দেওয়াতে ভালোই হয়েছে। এতোদিন একা একা সময় যেতো না। খুব বোরিং লাগতো। এখন কথা বলার মতো একজনকে তো পেলাম।
-আমাকে দেখেছেন আপনি?
-হ্যাঁ,ফুপি দেখিয়েছিলো কিছুদিন আগে।
-কিন্তু আমি তো আপনাকে দেখিনি।
-না,দেখেই বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিলেন?
-অনেকটা সেরকমই।
-আপনি চাইলে আমাকে দেখতে পারেন। তবে আমি দেখতে আহামরি সুন্দরী না। খুব সাধারণ একটা মেয়ে।
মেয়েটার সাথে কথা বলে যা বুঝলাম এই মেয়েটা অন্য সবার থেকে আলাদা। কারো সাথে বিন্দু পরিমাণও মিল নেই। কারো সাথে মিশে না,কারো সাথে কথা বলে না। সবসময় একা একা থাকতেই হয়তো বেশি ভালোবাসে। কিছুদিন পর আমি মেয়েটার সাথে দেখা করলাম। উজ্জ্বল শ্যামলা রঙের একটা মেয়ে। দেখে অনেক নিষ্পাপ মনে হয়। মনে হয় এতো নিষ্পাপ কোনো মেয়ে এর আগে কখনো পৃথিবীতে জন্ম নেইনি পরেও কখনো নিবে না। মেয়েটাকে দেখলে মায়া লাগে। একটু না অনেক বেশি মায়া লাগে। আমি যেমনটা ভেবেছিলাম মেয়েটা তেমন না। খুব বেশি সুন্দর না হলেও একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো না। মেয়েটাকে আমি মাঝে মাঝেই ফোন করতাম। ভালো লাগার কিছু কথা বলতাম। মেয়েটা মুগ্ধ হয়ে শুনতো। আমারও ভালো লাগতো মেয়েটার সাথে কথা বলতে। কারণ এর আগে এরকম কোনো মানুষ আমার জীবনে ছিলো না যার সাথে সুখ দুঃখের একটু গল্প করা যায়,ভালে লাগা ভালোবাসার দুটো কথা বলা যায়। তাই হয়তো ভালো লাগাটা একটু বেশিই কাজ করতো। এর মাঝে রং নাম্বারের মেয়েটাকে একদিন ফোন দিয়ে সরি বলেছিলাম। বিপরীতে মেয়েটা কথা বাড়ায়নি আমার সাথে। ধন্যবাদ দিয়ে ফোনটা রেখে দিয়েছিলো।
হঠাৎ করেই একদিন রাখি মেয়েটাকে আমি অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করে বসলাম। প্রশ্নটা করে আমি নিজেই বোকা বনে গেলাম। আমি যখন তাকে বললাম,
"আচ্ছা আপনার কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে কিংবা অতীতে ছিলো? আসলে বিয়ের পরে দেখা যায় অনেক মেয়েই তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ রাখে,কথা বলে। যেটাকে পরোকিয়া বলে। এগুলো দাম্পত্য জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।"
আমার কথা শুনে মেয়েটা বলল,
"কোনো মেয়ে কি তাঁর হবু হাসবেন্ডকে তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকের কথা বলবে? বয়ফ্রেন্ড থাকলেও তো না বলবে। তবে আমার জীবনে বিশেষ কেউ নেই। থাকলে আপনাকে আমি বলতাম।"
আমি একবার বলতে চাইলাম,এখন নেই কিন্তু আগে কি কেউ ছিলো? কিন্তু কেনো জানি বলতে পারলাম না। কিছু কিছু কথা থাকে যেগুলো চাইলেই বলা যায় না। কোনো এক অদৃশ্য বাঁধার কারণে কথা গুলো মনের ভিতরেই থেকে যায়।
দেখতে দেখতে আমার বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসলো। এখন আর মা আমাকে আগের মতো বকে না,আগের মতো অকারণেই রাগ করে না আমার ওপর। আমার খুব ভালে লাগতো যখন দেখতাম আমার আপন মা না হয়েও আমাকে আপন মায়ের মতো আদর করতো। প্রথমে মনে হয়েছিলো এই বিয়েটাতে আমি কখনোই সুখী হতে পারবো না। কিন্তু এখন মনে হয় এই বিয়েটাই আমার জীবনের সমস্ত দুঃখের সমাপ্তি ঘটাবে। কালকে মা আমাকে নিজে মার্কেটে নিয়ে গিয়ে শপিং করে দিয়েছে। বিয়ের জন্য আমার যা দরকার তাঁর থেকেও তিনগুণ কাপড় কেনা হয়েছে। অথচ আগের সব যোগ করলেও হয়তো এতো টাকার শপিং করেছি বলে মনে হয় না।
মাঝে মাঝে রং নাম্বারের মেয়েটার সাথে আমার কথা হতো তবে খুব কম। মেয়েটা জানতো আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তবুও তাঁর সাথে আমার কথা হতো। একসময় বুঝতে পারলাম রং নাম্বারের এই মেয়েটার সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। ভুল করে যে ভুল মানুষটার সাথে পরিচয় হয়ে গিয়েছিলো সেই মানুষটাই এখন আমার খুব কাছের একজন বন্ধু। আমি তাকে আমার সব কথা বলতাম। আমার বিয়ের কথা বলতাম,রাখির কথা বলতাম। আমার আর রাখির মাঝে যা কথা হতো আমি সেসব কথা অপরিচিত মেয়েটাকে বলতাম। অপরিচিত বলছি এই কারণে এই মেয়েটা সম্পর্কে এখনো আমি কিছুই জানি না। কিন্তু কি আশ্চর্য! কেউ কারো সম্পর্কে না জেনেও আমরা ভালো বন্ধু। আমার সব কথায় মেয়েটা খুব ভালো লাগা নিয়ে শুনতো আমি বুঝতে পারতাম।
রং নাম্বারের যে মেয়েটার সাথে আমার কথা হয় তাঁর নাম সাদিয়া। সরি বলার পর হঠাৎ করেই একদিন ফোন দিয়ে বলল সে আমার সাথে কথা বলতে চায়,তাঁর একাকিত্ব দূর করতে চায়। আমিও বোকার মতো কোনো কিছু না ভেবে তাঁর সাথে বেশ কিছু সময় ধরে কথা বললাম। কি জন্য বললাম,কি কথা বললাম কিছুই বুঝলাম না। তবে মেয়েটার সাথে কথা বলেছি এটা সত্য। একবারও ভাবিনি মেয়েটার একাকিত্ব দূর করার জন্য আমি কেনো তাঁর সাথে কথা বললাম। তাঁর কি কথা বলার আর কোনো মানুষ ছিলো না যে আমার সাথেই তাকে কথা বলতে হবে? সেদিন থেকেই রং নাম্বারে পরিচয় হওয়া সাদিয়া নামের কোকিল কণ্ঠের মেয়েটার সাথে আমার কথা হতে থাকে এবং একসময় খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে যায় আমাদের মাঝে। কোনো প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক না,বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
আমার আর রাখির যেদিন বিয়ে হলো সেদিন আমি সাদিয়াকে আসতে বলেছিলাম আমাদের বিয়েতে। সে রাজীও হয়েছিলো কিন্তু শেষে কেনো জানি আসলো না। কেনো আসলো না সেটাও আমি জানি না। তবে তাকে যখন বলেছিলাম আমার বিয়েতে কিন্তু আপনাকে আসতেই হবে। তখন সে বলেছিলো,
"আপনি এতো করে বলছেন,আমি কি না গিয়ে পারবো? অবশ্যই আমি যাবো আপনার বিয়েতে। এতো ভাগ্যবান মেয়েটাকে একবার দেখবো আমি,যে মেয়েটা আপনার মতো সাদা মনের একজন মানুষকে নিজের করে পেয়েছে। তাকে দেখার জন্য হলেও আমি যাবো আপনার বিয়েতে।"
আমি তখন হেসে দিয়ে বলেছিলাম,
"আপনি একটু বেশিই বলেছেন। আমি মানুষটা ওতো ভালো নয়,যতোটা আপনি ভাবেন। তবে খারাপও না। আর একজন মানুষ তাঁর আশেপাশের মানুষদের কখনো নিজের খারাপ রুপটা দেখায় না। সবচেয়ে ভালো মানুষটাকেই সবার সামনে প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা করে। সব মানুষের মাঝেই একজন খারাপ মানুষ বাস করে,আমার মাঝেও বাস করে।"
তখন মেয়েটা বলেছিলো,
"অন্য কারোটা বলতে পারি না তবে আপনার ভিতরটাতে খারাপ মানুষ বাস করে না।"
তখন খুব ভালো লেগেছিলো এটা ভেবে যে,কেউ একজন আছে যে আমাকে অনেক বিশ্বাস করে।
আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো,যে মানুষটার আসার কথা ছিলো সে মানুষটা আসলো না। বিয়ের দিন সারাদিনই প্রচণ্ড বৃষ্টি হলো। এতো বৃষ্টি হলো যে রাস্তাঘাট সব অচল হয়ে গেলো। যখন অনেক রাতেও বৃষ্টি কমলো না তখন এক প্রকার বাঁধ্য হয়েই রাখিদের বাড়িতে আমাদের জন্য বাসর সাজানোর ব্যবস্থা করা হলো। আমাদের বাসর ঘরটা আট-দশটা বাসর ঘরের মতো ছিলো না। কারণ বাসর ঘর সাজানো হয়েছিলো আমাদের বাড়িতে। কিন্তু বাসর করতে হচ্ছে রাখিদের বাড়িতে। বাসর ঘরে গিয়ে দেখলাম রাখি নিচে বিছানা পাতছে। আমিও কিছু বললাম না। ভাবলাম প্রথম রাতে হয়তো প্রতিটা মেয়েই একটু ভয় পায়,সময় নিতে চায়। তাই আমি এটা নিয়ে কিছু বললাম না। শুধু একবার বললাম আপনি চাইলে ওপরে ঘুমাতে পারেন আমি নিচে শুতে পারবো। তখন রাখি বলল,
"না,আমি নিচেই ঠিক আছি। আপনি বরং ওপরে ঘুমান।"
নিজের বাসর রাতে আলাদা বিছানায় শুয়ে আছি। অথচ বাসর রাতে নাকি স্বামী স্ত্রী খুব গভীরভাবে মিলিত হয়,আদর ভালোবাসা বিনিময় করে। এগুলো আগে হতো। এখনকার ছেলে মেয়েরা বাসর করতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। আজকাল বাসর রাতে ছেলে মেয়ে আলাদা ঘুমানো একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। আমরাও আজকে তাঁর অংশীদার হলাম। রাখি নিচে শুয়ে অাছে,আমি ওপরে। বাতিটাও নিভানো হয়ে গেছে। আমার মস্তিষ্কে শুধু একটা জিনিসই ঘুরপাক খাচ্ছে এখন। আমরা দুজন বিয়ের আগে এতো কথা বলেও আপনি থেকে তুমিতে আসতে পারিনি,বাসর ঘরে এক বিছানায় ঘুমাতে পারলাম না। আমরা দুজন তো অনেক ভালো লাগা ভালোবাসার কথাও বলেছি। তাহলে এমন একটা রাতে আমাদের মাঝে আজ এতো দূরত্ব কেনো? এই দূরত্বের কারণ কি? আমি প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজি কিন্তু পাই না। হাজারো প্রশ্নের চাপে মস্তিষ্ককের নিউরন গুলো এলোমেলো হয়ে ঘুরতে থাকে। একসময় আমার অগোছালো মস্তিষ্ক নিয়ে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে যাই।
ঘুম ভাঙল সকাল আটটায়। নিচের দিকে তাকাতেই আমার ভিতরটাতে অসহ্য একটা কাঁপুনি অনুভব করলাম। আমার শরীরের প্রতিটি শিরা উপশিরায় ভয়ের চোটে রক্ত জমতে লাগলো। আমার সামনে পড়ে থাকা লাশটার দিকে তাকিয়ে বিশ্বাস হচ্ছিলো না এটা বাস্তব,মনে হচ্ছিলো এটা একটা কল্পনা। কিন্তু না,এটা কোনো স্বপ্ন নয়,এটা বাস্তব। কারণ বাহির থেকে সবাই দরজা খোলার জন্য তাড়া করছে। রাখির রক্তে কংক্রিটের তৈরি মেঝেটা লাল হয়ে আছে। তাঁর বাম হাতের রগটা কাটা। আমার খুব ভয় হতে লাগলো। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। দরজা খোলার পর সবাই যখন দেখবে রাখির রক্তাক্ত দেহটা ফ্লোরে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। তখন কি হবে? সবাই কি আমাকে খুনী ভাববে না? বাসর রাতে নিজের বউকে নিজেই খুন করেছে এমন কিছু হয়তো পত্রিকার পাতায় ছাপা হবে কাল। অদ্ভুত সব চিন্তা যখন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো ঠিক তখনই টেবিলের দিকে তাকাতেই একটা চিঠি চোখে পড়লো। কাছে গিয়ে চিঠিটা হাতে নিয়ে বুঝতে পারলাম এটা একটা সুইসাইড নোট। আমি বুঝতে পারলাম না আমার এখন কি করা উচিত। দরজাটা খোলা উচিত নাকি সুইসাইড নোট?
চলবে..............
নাম্বারটা চেক করতেই আমার চোখ একটা জায়গায় গিয়ে আটকে গেলো। আমি বুঝতে পারলাম বিশের জায়গায় একুশ বসিয়ে ডায়াল করেছি যার কারণেই ভুল নাম্বারে ফোন চলে গিয়েছিলো। আমি কিছুটা কনফিউজড হয়ে গেলাম। কোন নাম্বারে ফোন দিবো বুঝতে পারলাম না। রাইট নাম্বারে ফোন দিয়ে সেই মেয়েটার সাথে কথা বলবো যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে। নাকি কিছুক্ষণ আগের সেই রং নাম্বারের মেয়েটাকে ফোন দিয়ে সরি বলবো। কেনো জানি আফসোস হচ্ছে,ভুল নাম্বারের মেয়েটাই যদি সঠিক হতো তাহলে কি এমন হতো? কিছু সময়ের ব্যবধানে রং নাম্বারের মেয়েটার কণ্ঠস্বরের মায়ায় পড়ে গিয়েছিলাম আমি,তাঁর মনোমুগ্ধকর কণ্ঠস্বরটা এখন কানের ভিতর অনবরত বেজে চলেছে,ভুলতে ইচ্ছে করছে না, কিন্তু ভুলতে হবে। যেসব মানুষ গুলো আমাদের জীবনে ক্ষনিকের জন্য আসে তাদের জন্য বুকের ভিতর এতোটা ভালো লাগা কাজ করে কি জন্য আমার জানা নেই। তবে যে মানুষ গুলো আমাদের জীবনে খুব সময়ের জন্য অতিথি হয়ে আসে কিংবা হঠাৎ করে ভুল করে ভুল সময়ে পরিচয় হয়ে যায় সেসব মানুষদের প্রতি ভালো লাগা কাজ করা উচিত না। এই ভালো লাগাটা শুধু আফসোসই দিবে এর বেশি কিছু না। কিন্তু তবুও নিজের অজান্তেই ভালো লেগে যায়। কারণ ভাগ্যের ওপর কারো হাত নেই। কখন কাকে ভালো লেগে যাবে আমরা কেউ বলতে পারবো না। আবার সেই ভালো লাগার মানুষ গুলোকে নিজের করে পাবো নাকি সেটাও জানি না।
যে মানুষটার সাথে আমার ভুল করে কথা হয়েছিলো তাকে আর সরি বলার জন্য ফোন দিলাম না। কিছুদিন পর যার সাথে আমার ভবিষ্যৎ জীবনটা জড়াতে যাচ্ছি তাকে ফোন দিলাম। নাম্বারটা এবার খুব ভালোভাবে চেক করে নিলাম ডায়াল করার আগে। কিছু সময় পরে কেউ একজন ফোনটা রিসিভ করলো। ফোনের ওপাশ থেকে খুব নিস্তব্ধ নিরীহ একটা মানুষের কণ্ঠস্বর ভেসে আসলো। একটা মানুষ এতো শান্ত ভাবে কথা বলতে পারে এই মেয়েটাের সাথে কথা না বললে হয়তো বুঝতে পারতাম না। মেয়েটা আস্তে করে বলল,"আপনি কি আমিনুর রহমান?"
তখন আমি বললাম,
হ্যাঁ আমি আমিনুর রহমান। আপনি নিশ্চয় রাখি?
- হ্যাঁ আমি রাখি। বাবা আপনার কথা আমাকে বলেছিলো,আপনি আমাকে ফোন দিবেন।
- যাইহোক কেমন আছেন আপনি?
- জ্বি ভালো আছি।
- কেউ কেমন আছি জানতে চাইলে ভদ্রতার খাতিরে হলেও তাকে জিগ্যেস করতে হয় সে কেমন আছে।
আমার কথাটা শুনে মনে হলো মেয়েটা আকাশ থেকে মাটিতে পড়ল। তবুও সে খুব নরম স্বরে বলল,
"সরি। আসলে ভুলে গিয়েছিলাম। কেমন আছেন আপনি?"
আমি মেয়েটার কেমন আছি প্রশ্নের কোনো উত্তর দিলাম না। উল্টা আমি তাকে জিগ্যেস করলাম,
আপনার কি কোনো কারণে মন খারাপ? যদি এমনটা হয় তাহলে আমাকে বলতে পারেন।
-না,তেমন কিছু না।
-আপনার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে আপনার মন ভালো নেই। আর সেটার কারণ যদি আমার ফোন দেওয়া হয বলতে পারেন।
-না,আপনি ফোন দেওয়াতে ভালোই হয়েছে। এতোদিন একা একা সময় যেতো না। খুব বোরিং লাগতো। এখন কথা বলার মতো একজনকে তো পেলাম।
-আমাকে দেখেছেন আপনি?
-হ্যাঁ,ফুপি দেখিয়েছিলো কিছুদিন আগে।
-কিন্তু আমি তো আপনাকে দেখিনি।
-না,দেখেই বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিলেন?
-অনেকটা সেরকমই।
-আপনি চাইলে আমাকে দেখতে পারেন। তবে আমি দেখতে আহামরি সুন্দরী না। খুব সাধারণ একটা মেয়ে।
মেয়েটার সাথে কথা বলে যা বুঝলাম এই মেয়েটা অন্য সবার থেকে আলাদা। কারো সাথে বিন্দু পরিমাণও মিল নেই। কারো সাথে মিশে না,কারো সাথে কথা বলে না। সবসময় একা একা থাকতেই হয়তো বেশি ভালোবাসে। কিছুদিন পর আমি মেয়েটার সাথে দেখা করলাম। উজ্জ্বল শ্যামলা রঙের একটা মেয়ে। দেখে অনেক নিষ্পাপ মনে হয়। মনে হয় এতো নিষ্পাপ কোনো মেয়ে এর আগে কখনো পৃথিবীতে জন্ম নেইনি পরেও কখনো নিবে না। মেয়েটাকে দেখলে মায়া লাগে। একটু না অনেক বেশি মায়া লাগে। আমি যেমনটা ভেবেছিলাম মেয়েটা তেমন না। খুব বেশি সুন্দর না হলেও একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো না। মেয়েটাকে আমি মাঝে মাঝেই ফোন করতাম। ভালো লাগার কিছু কথা বলতাম। মেয়েটা মুগ্ধ হয়ে শুনতো। আমারও ভালো লাগতো মেয়েটার সাথে কথা বলতে। কারণ এর আগে এরকম কোনো মানুষ আমার জীবনে ছিলো না যার সাথে সুখ দুঃখের একটু গল্প করা যায়,ভালে লাগা ভালোবাসার দুটো কথা বলা যায়। তাই হয়তো ভালো লাগাটা একটু বেশিই কাজ করতো। এর মাঝে রং নাম্বারের মেয়েটাকে একদিন ফোন দিয়ে সরি বলেছিলাম। বিপরীতে মেয়েটা কথা বাড়ায়নি আমার সাথে। ধন্যবাদ দিয়ে ফোনটা রেখে দিয়েছিলো।
হঠাৎ করেই একদিন রাখি মেয়েটাকে আমি অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করে বসলাম। প্রশ্নটা করে আমি নিজেই বোকা বনে গেলাম। আমি যখন তাকে বললাম,
"আচ্ছা আপনার কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে কিংবা অতীতে ছিলো? আসলে বিয়ের পরে দেখা যায় অনেক মেয়েই তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে যোগাযোগ রাখে,কথা বলে। যেটাকে পরোকিয়া বলে। এগুলো দাম্পত্য জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে।"
আমার কথা শুনে মেয়েটা বলল,
"কোনো মেয়ে কি তাঁর হবু হাসবেন্ডকে তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকের কথা বলবে? বয়ফ্রেন্ড থাকলেও তো না বলবে। তবে আমার জীবনে বিশেষ কেউ নেই। থাকলে আপনাকে আমি বলতাম।"
আমি একবার বলতে চাইলাম,এখন নেই কিন্তু আগে কি কেউ ছিলো? কিন্তু কেনো জানি বলতে পারলাম না। কিছু কিছু কথা থাকে যেগুলো চাইলেই বলা যায় না। কোনো এক অদৃশ্য বাঁধার কারণে কথা গুলো মনের ভিতরেই থেকে যায়।
দেখতে দেখতে আমার বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসলো। এখন আর মা আমাকে আগের মতো বকে না,আগের মতো অকারণেই রাগ করে না আমার ওপর। আমার খুব ভালে লাগতো যখন দেখতাম আমার আপন মা না হয়েও আমাকে আপন মায়ের মতো আদর করতো। প্রথমে মনে হয়েছিলো এই বিয়েটাতে আমি কখনোই সুখী হতে পারবো না। কিন্তু এখন মনে হয় এই বিয়েটাই আমার জীবনের সমস্ত দুঃখের সমাপ্তি ঘটাবে। কালকে মা আমাকে নিজে মার্কেটে নিয়ে গিয়ে শপিং করে দিয়েছে। বিয়ের জন্য আমার যা দরকার তাঁর থেকেও তিনগুণ কাপড় কেনা হয়েছে। অথচ আগের সব যোগ করলেও হয়তো এতো টাকার শপিং করেছি বলে মনে হয় না।
মাঝে মাঝে রং নাম্বারের মেয়েটার সাথে আমার কথা হতো তবে খুব কম। মেয়েটা জানতো আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তবুও তাঁর সাথে আমার কথা হতো। একসময় বুঝতে পারলাম রং নাম্বারের এই মেয়েটার সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। ভুল করে যে ভুল মানুষটার সাথে পরিচয় হয়ে গিয়েছিলো সেই মানুষটাই এখন আমার খুব কাছের একজন বন্ধু। আমি তাকে আমার সব কথা বলতাম। আমার বিয়ের কথা বলতাম,রাখির কথা বলতাম। আমার আর রাখির মাঝে যা কথা হতো আমি সেসব কথা অপরিচিত মেয়েটাকে বলতাম। অপরিচিত বলছি এই কারণে এই মেয়েটা সম্পর্কে এখনো আমি কিছুই জানি না। কিন্তু কি আশ্চর্য! কেউ কারো সম্পর্কে না জেনেও আমরা ভালো বন্ধু। আমার সব কথায় মেয়েটা খুব ভালো লাগা নিয়ে শুনতো আমি বুঝতে পারতাম।
রং নাম্বারের যে মেয়েটার সাথে আমার কথা হয় তাঁর নাম সাদিয়া। সরি বলার পর হঠাৎ করেই একদিন ফোন দিয়ে বলল সে আমার সাথে কথা বলতে চায়,তাঁর একাকিত্ব দূর করতে চায়। আমিও বোকার মতো কোনো কিছু না ভেবে তাঁর সাথে বেশ কিছু সময় ধরে কথা বললাম। কি জন্য বললাম,কি কথা বললাম কিছুই বুঝলাম না। তবে মেয়েটার সাথে কথা বলেছি এটা সত্য। একবারও ভাবিনি মেয়েটার একাকিত্ব দূর করার জন্য আমি কেনো তাঁর সাথে কথা বললাম। তাঁর কি কথা বলার আর কোনো মানুষ ছিলো না যে আমার সাথেই তাকে কথা বলতে হবে? সেদিন থেকেই রং নাম্বারে পরিচয় হওয়া সাদিয়া নামের কোকিল কণ্ঠের মেয়েটার সাথে আমার কথা হতে থাকে এবং একসময় খুব ভালো সম্পর্ক হয়ে যায় আমাদের মাঝে। কোনো প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক না,বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
আমার আর রাখির যেদিন বিয়ে হলো সেদিন আমি সাদিয়াকে আসতে বলেছিলাম আমাদের বিয়েতে। সে রাজীও হয়েছিলো কিন্তু শেষে কেনো জানি আসলো না। কেনো আসলো না সেটাও আমি জানি না। তবে তাকে যখন বলেছিলাম আমার বিয়েতে কিন্তু আপনাকে আসতেই হবে। তখন সে বলেছিলো,
"আপনি এতো করে বলছেন,আমি কি না গিয়ে পারবো? অবশ্যই আমি যাবো আপনার বিয়েতে। এতো ভাগ্যবান মেয়েটাকে একবার দেখবো আমি,যে মেয়েটা আপনার মতো সাদা মনের একজন মানুষকে নিজের করে পেয়েছে। তাকে দেখার জন্য হলেও আমি যাবো আপনার বিয়েতে।"
আমি তখন হেসে দিয়ে বলেছিলাম,
"আপনি একটু বেশিই বলেছেন। আমি মানুষটা ওতো ভালো নয়,যতোটা আপনি ভাবেন। তবে খারাপও না। আর একজন মানুষ তাঁর আশেপাশের মানুষদের কখনো নিজের খারাপ রুপটা দেখায় না। সবচেয়ে ভালো মানুষটাকেই সবার সামনে প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা করে। সব মানুষের মাঝেই একজন খারাপ মানুষ বাস করে,আমার মাঝেও বাস করে।"
তখন মেয়েটা বলেছিলো,
"অন্য কারোটা বলতে পারি না তবে আপনার ভিতরটাতে খারাপ মানুষ বাস করে না।"
তখন খুব ভালো লেগেছিলো এটা ভেবে যে,কেউ একজন আছে যে আমাকে অনেক বিশ্বাস করে।
আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো,যে মানুষটার আসার কথা ছিলো সে মানুষটা আসলো না। বিয়ের দিন সারাদিনই প্রচণ্ড বৃষ্টি হলো। এতো বৃষ্টি হলো যে রাস্তাঘাট সব অচল হয়ে গেলো। যখন অনেক রাতেও বৃষ্টি কমলো না তখন এক প্রকার বাঁধ্য হয়েই রাখিদের বাড়িতে আমাদের জন্য বাসর সাজানোর ব্যবস্থা করা হলো। আমাদের বাসর ঘরটা আট-দশটা বাসর ঘরের মতো ছিলো না। কারণ বাসর ঘর সাজানো হয়েছিলো আমাদের বাড়িতে। কিন্তু বাসর করতে হচ্ছে রাখিদের বাড়িতে। বাসর ঘরে গিয়ে দেখলাম রাখি নিচে বিছানা পাতছে। আমিও কিছু বললাম না। ভাবলাম প্রথম রাতে হয়তো প্রতিটা মেয়েই একটু ভয় পায়,সময় নিতে চায়। তাই আমি এটা নিয়ে কিছু বললাম না। শুধু একবার বললাম আপনি চাইলে ওপরে ঘুমাতে পারেন আমি নিচে শুতে পারবো। তখন রাখি বলল,
"না,আমি নিচেই ঠিক আছি। আপনি বরং ওপরে ঘুমান।"
নিজের বাসর রাতে আলাদা বিছানায় শুয়ে আছি। অথচ বাসর রাতে নাকি স্বামী স্ত্রী খুব গভীরভাবে মিলিত হয়,আদর ভালোবাসা বিনিময় করে। এগুলো আগে হতো। এখনকার ছেলে মেয়েরা বাসর করতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। আজকাল বাসর রাতে ছেলে মেয়ে আলাদা ঘুমানো একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। আমরাও আজকে তাঁর অংশীদার হলাম। রাখি নিচে শুয়ে অাছে,আমি ওপরে। বাতিটাও নিভানো হয়ে গেছে। আমার মস্তিষ্কে শুধু একটা জিনিসই ঘুরপাক খাচ্ছে এখন। আমরা দুজন বিয়ের আগে এতো কথা বলেও আপনি থেকে তুমিতে আসতে পারিনি,বাসর ঘরে এক বিছানায় ঘুমাতে পারলাম না। আমরা দুজন তো অনেক ভালো লাগা ভালোবাসার কথাও বলেছি। তাহলে এমন একটা রাতে আমাদের মাঝে আজ এতো দূরত্ব কেনো? এই দূরত্বের কারণ কি? আমি প্রশ্ন গুলোর উত্তর খুঁজি কিন্তু পাই না। হাজারো প্রশ্নের চাপে মস্তিষ্ককের নিউরন গুলো এলোমেলো হয়ে ঘুরতে থাকে। একসময় আমার অগোছালো মস্তিষ্ক নিয়ে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে যাই।
ঘুম ভাঙল সকাল আটটায়। নিচের দিকে তাকাতেই আমার ভিতরটাতে অসহ্য একটা কাঁপুনি অনুভব করলাম। আমার শরীরের প্রতিটি শিরা উপশিরায় ভয়ের চোটে রক্ত জমতে লাগলো। আমার সামনে পড়ে থাকা লাশটার দিকে তাকিয়ে বিশ্বাস হচ্ছিলো না এটা বাস্তব,মনে হচ্ছিলো এটা একটা কল্পনা। কিন্তু না,এটা কোনো স্বপ্ন নয়,এটা বাস্তব। কারণ বাহির থেকে সবাই দরজা খোলার জন্য তাড়া করছে। রাখির রক্তে কংক্রিটের তৈরি মেঝেটা লাল হয়ে আছে। তাঁর বাম হাতের রগটা কাটা। আমার খুব ভয় হতে লাগলো। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। দরজা খোলার পর সবাই যখন দেখবে রাখির রক্তাক্ত দেহটা ফ্লোরে চিৎ হয়ে পড়ে আছে। তখন কি হবে? সবাই কি আমাকে খুনী ভাববে না? বাসর রাতে নিজের বউকে নিজেই খুন করেছে এমন কিছু হয়তো পত্রিকার পাতায় ছাপা হবে কাল। অদ্ভুত সব চিন্তা যখন মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিলো ঠিক তখনই টেবিলের দিকে তাকাতেই একটা চিঠি চোখে পড়লো। কাছে গিয়ে চিঠিটা হাতে নিয়ে বুঝতে পারলাম এটা একটা সুইসাইড নোট। আমি বুঝতে পারলাম না আমার এখন কি করা উচিত। দরজাটা খোলা উচিত নাকি সুইসাইড নোট?
চলবে..............
Santo, Shuvo, Hasibul hasan, Mahim, Akram ali, Inamul haq, Abid islam and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Rayhan1নবাগত
- Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1414
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-22
Re: একটি ডায়রির আত্মকাহিনী
Sat May 22, 2021 11:09 pm
পর্ব-৪
আমার সামনে টেবিলের ওপরে পড়ে থাকা সুইসাইড নোটটার দিকে তাকিয়ে আছি। কেনো জানি খোলার মতো সাহস করে উঠতে পারছি না। ওইদিকে সবাই দরজাটা ভেঙে ফেলার জো করে ফেলেছে প্রায়। আমি সুইসাইড নোটটাতে হাত না লাগিয়ে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম। দরজা খোলার পর সবাই যখন ভিতরে ঢুকলো তখন সবাই আত্মকিত হয়ে গেলো। চিল্লাচিল্লি করতে লাগলো। একসময় বাড়ির সবাই চলে আসলো। রাখির বাবা তাঁর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। আমার মাও কাঁদছেন। মাকে দেখে আমি মায়ের কাছে চলে গেলাম। মাকে যখন বললাম,
"আমার সাথেই কেনো এমন হতে হবে? বাসর ঘরে কোনো স্বামী যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়ে তাঁর কেমন লাগে বলতে পারো? আমি তো তোমার পছন্দ করা মেয়েকে মন থেকেই বিয়ে করেছিলাম। ভালোও বেসেছিলাম তাহলে সে কেনো এমন করলো? বিয়ের আগে কতো ভালোবাসা দেখিয়েছে,কতো মুগ্ধতা উপহার দিয়েছে। আর সেই মেয়ে কিনা বাসর রাতে আত্মহত্যা করলো। এর পেছনে রহস্য কি আমাকে বলো? আমি জানতে চাই। একটা মেয়ের অতীত জীবনে কি এমন ছিলো যে মেয়েটা নিজের ফুলসজ্জার রাতে এভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে।"
আমার মা কোনো কথা বলে না। আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। আমার মায়ের কান্না থামে না। কাঁদতে কাঁদতে একসময় আমাকে বলে,
"আমরা তোর ওপর অন্যায় করেছি বাবা। রাখির জীবনে বড় একটা দুর্ঘটনা ছিলো। যেটার জন্য সে নিজেকে সবসময় দায়ী করতো। নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছিলো। আমি তোকে ব্যাপারটা জানাইনি। আমি ভেবেছিলাম বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বিয়ের রাতেই যে ও এমন করবে আমরা বুঝতে পারিনি। তবে মেয়েটার জীবনে অনেক কষ্ট ছিলো। দম বন্ধ হয়ে মরে যাওয়ার মতো কষ্ট। মেয়েটা তবুও বেঁচে ছিলো একটু সুখের আশায়,একটু ভালোবাসার আশায়। সুখ পেয়েওছিলো। ওর বাবা বলতো ও তোর সাথে কথা বলার সময় অনেক হাসি খুশি থাকতো। হঠাৎ করে কি এমন হলো যে ও আমাদের ছেড়ে চলে গেলো আমি জানি না।"
মায়ের কথা শুনে বুঝতে পারলাম মেয়েটা সবসময় ডিপ্রেশনে থাকতো,বাঁচতে চাইতো না। প্রথম যেদিন ফোন দিয়ে কথা বলেছিলাম সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম। মানুষ জন্মের পর থেকেই মনমরা হয়ে থাকে না। একজন মানুষের ডিপ্রেশনে থাকার হাজারটা কারণ থাকতে পারে। কিন্তু সেই হাজারটা কারণে মানুষ আত্মহত্যা করবে না। কোনো একটা কারণেই মানুষ আত্মহত্যা করে। আমি ভেবেছিলাম সবাই আমাকে সন্দেহ করবে। সবাই ভাববে আমিই আমার বউকে খুন করেছি। কিন্তু এমন কোনো কিছুই হলো না আমার সাথে। তাঁর মানে রাখি সম্পর্কে সবাই আগে থেকেই জানতো ব্যাপারটা। শুধু আমাকেই জানায়নি যদি শেষে আমি বিয়েতে না বলে দেই এই ভয়ে। রাখিতো আমাকে জানাতে পারতো। নিজেকে খুব বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে রাখিকে আমিই খুন করেছি। আমার কারণেই সে আত্মহত্যা করেছে। এক রুমে থেকেও একটা মানুষকে আত্মহত্যার হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি।
দোষটা আমারই। আমার মতো অপদার্থ একটা মানুষের জন্যই আরও একটা নিষ্পাপ প্রাণ ঝড়ে গেলো। এতোটা দিন একটা মানুষকে এতো ভালোবেসেও তাঁর সম্পর্কে আমি জানতে পারিনি। তাঁর সাথে কতো কথা বলেছি তাঁর হিসাব আমার কাছে নেই। কিন্তু কখনো তাঁর এভাবে মন খারাপ করে থাকার কারণটা জানতে চাইনি,বললেও হয়তো আমার অগোছালো মস্তিষ্কটা আঁচ করতে পারেনি। জীবনে প্রথমবারের মতো মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা আমার জন্য বৈধ হবে না,কারণ আমি একজন মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি। একটা মানুষের মৃত্যুতে যে তাঁর আপন মানুষদের জীবনে কতোটা প্রভাব ফেলে সেটা যদি আত্মহত্যা করা মানুষটা কখনো জানতে পারতো তাহলে আমার মন হয় না পৃথিবীর বুকে কোনো মানুষ আত্মহত্যা করার মতো এমন কিছু করতো। রাখির মৃত্যুতে অনেক মানুষের মন খারাপ হয়েছে,অনেক মানুষের ভিতরটা ব্যথিত হয়েছে। কিন্তু কেউ কখনো জানবে না তাঁর জন্য আমার ভিতরে কতোটা অসহায়ত্ব কাজ করে,কতোটা খারাপ লাগা কাজ করে। এখন আর মা আমার সাথে আগের মতো খারাপ ব্যবহার করে না। তিনি মনে করে আমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছেন। সবসময় অনুশোচনার অনলে দগ্ধ হয়। তাঁর ধারণা সে এমন একটা মেয়ের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়েছিলো যার আগের জীবনে একজন ভালোবাসার মানুষ ছিলো,একজন পুরুষ ছিলো। কিন্তু সে হয়তো জানে না,আমি তাকে কখনো বলতেও পারবো না,বুঝাতে পারবো না তাঁর পছন্দ করা মেয়েটাকে আমি কতোটা চাইতাম,কিভাবে চাইতাম। তবে এতোটুকু বলতে পারি তাকে আমি আমার জীবনে সবকিছু দিয়ে ভালোবেসেছিলাম। যে ভালোবাসার মাঝে কোনো ফাঁক ছিলো না। আমি তাঁর অতীত জীবন সম্পর্কে জানি না,কখনো জানতেও চাইনি। আমি তো তাঁর অতীত দেখে তাকে ভালোবাসিনি। ভালো না বেসে থাকতে পারিনি তাই ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু সে কেনো এভাবে চলে গেলো?
মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া রাখির চিঠিটা হাতে নিয়ে বসে আছি। প্রথম লাইনটা চোখের সামনে পড়ার পরেই বুকের ভিতরটাতে মোচড় দিয়ে উঠে,অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করি। কিন্তু কষ্ট হলেও এই চিঠিটা আমাকে পড়তে হবে।
প্রিয় আমিনুর রহমান,
ভালোবাসা নিবেন। এই চিঠিটা যখন আপনি পড়বেন তখন আমি আপনার থেকে লক্ষকোটি মাইল দূরে পাড়ি জমিয়েছি। আপনি হয়তো ভাবছেন লক্ষকোটি মাইল দু্রত্ব পাড় করে আমি আবার ফিরে আসবো। কিন্তু না,আমি এমন এক জায়গায় পাড়ি জমাতে যাচ্ছি যেখান থেকে কেউ কখনো ফিরে আসে না। আমিও আসবো না। কি অদ্ভুত মানুষ আমি না? মরে গিয়ে ভালোবাসা নিতে বলছি। মৃত মানুষ কি কাউকে ভালোবাসতে পারে? পারে না। যদি পারতো তাহলে মৃত্যুর পরে আমি আপনাকেই ভালোবাসতাম। আচ্ছা বলতে পারেন একজন মানুষের ভিতরে কতোটা কষ্ট জমা থাকলে,কতোটা অসহায়ত্বের স্বীকার হলে মানুষটা নিজের বাসর ঘরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে? জানেন না,কিন্তু আমি জানি। আমার জীবনটাকে বাহির থেকে যতো সুন্দর মনে হয় ভিতর থেকে ঠিক ততোটাই বেদনাদায়ক।
আপনি জানেন আপনি কতো ভালো মানুষ? কতোটা বিশুদ্ধ? যদি জানতেন তাহলে হয়তো নিজেই নিজের বিশুদ্ধ ভালোবাসাটা পেতে চাইতেন। আপনার সাথে যখন কথা বলতাম তখন খুব ভালো লাগতো। মনে হতো সবকিছু ভুলে গিয়ে আবার আমি নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারি আপনাকে নিয়ে। আপনার মনের বিশুদ্ধ ভালোবাসাটা খুব করে পেতে ইচ্ছে করতো। আমিও বুঝতে পারতাম আপনিও আমাকে খুশি করার জন্য মাঝে মাঝেই অদ্ভুদ কিছু করতেন। আমার মতো তুচ্ছ একজন মানুষকে খুশি করার জন্য কেউ একজন এতো মুগ্ধতা নিয়ে কিছু করে যখন এটা ভাবতাম তখন অনেক ভালো লাগতো। এতোটাই ভালো লাগতো যে প্রকাশ করার মতো কোনো ভাষা আমি খুঁজে পাইনি। আমার একসময় মনে হলো আমি আপনাকে ভালোবেসে সবকিছু উজার করে দিবো কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো। আমার কি এমন আছে যা আমি আপনাকে দিতে পারি? আপনাকে দেওয়ার মতো কিছুই তো আমার নেই। আপনি যা চাইবেন আমি সেটা দিতে পারবো না। কারণ আমি অনেক আগেই নিঃস্ব হয়ে গেছি। আপনাকে দেওয়ার মতো কিংবা বেঁচে থাকার মতো কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই আমার মাঝে। তবুও বেঁচে আছি। একটা মেয়ের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তাঁর ভার্জিনিটি। কিন্তু আমি তো সেটাই হারিয়ে ফেলেছি। খারাপ একজন মেয়ে আমি।
জানেন? আপনি যখন আমাকে ভালো থাকার কথা শোনাতেন,ভালোবাসার কথা শোনাতেন,মানুষ মানুষকে ভালোবেসে সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার কথা শোনাতেন। তখন আপনার সাথে বেঁচে থাকার লোভটা সামলাতে পারতাম না। আমার মনে হতো আমি আপনার স্পর্শ পেলে আগের মতোই বিশুদ্ধ হয়ে যাবো। আসলেই কি বিশুদ্ধ মানুষের ছোঁয়া পেলে বিশুদ্ধ হওয়া যায়? আমি অনেকবার আপনাকে আমার ধ্বংস হওয়ার কথা বলতে চেয়েছি। একটা মেয়ের তিলে তিলে বেঁচে থাকার কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু কখনো পারিনি। মনে হতো এসব জানলে আপনি আমাকে আর ভালোবাসতে চাইবেন না। আমি জানি আমি যদি আমার জঘন্য অতীতটা আপনাকে বলতাম তবুও আপনি আমাকে বিয়ে করতেন। কিন্তু তখন কি আগের মতো ভালোবাসতেন? বাসতেন না। কারণ পৃথিবীর কোনো ছেলেই এমন একটা মেয়েকে ভালোবেসে নিজের করে নিবে না যে মেয়েটা নিজের ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় দিনের পর দিন রাতের পর রাত শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতো।
এতো কিছুর পরেও আমি স্বার্থপরের মতো আপনাকে নিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলাম,সুখী হতে চেয়েছিলাম। সেটাও পারিনি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার অতীতকে আমি চিরদিনের জন্য কবর দিয়ে দিবো। আমি ভুলে যাবো আমার জীবনে কেউ একজন ছিলো যে আমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছিলো,আমার শরীরটাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছিলো। বিশ্বাস করেন আমি সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম শুধু আপনার সাথে থাকবো বলে। কিন্তু ঠিক তখনই আমার জীবনে আমার সেই জঘন্য অতীতটা নাড়া দিলো। যে আমার শরীরের প্রতি ইঞ্চি ইঞ্চি সম্পর্কে জানে সেই মানুষটা আবার আমার জীবনে আসলো। আমাকে ফোন করে বলল তাঁর সাথে দেখা করতে হবে,তাঁর সাথে রাত কাটাতে হবে। আমি কতোবার তাকে বলেছি তুমি আমার সাথে যা করেছো সব ভুলে গিয়েছি আমি। কোনো কিছুই মনে রাখিনি। আমি আবার একজন মানুষকে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে চাই। প্লিজ তুমি আমাকে মুক্তি দাও। এতোবছর পর আমাকে আর নরক যন্ত্রণা দিও না। কিন্তু সে আমার কথা শোনে না। আমাকে ফোনেই গালাগাল করতে থাকে। আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমি একটা নষ্টা মেয়ে। আমি কখনোই আপনার মতো বিশুদ্ধ একজন মানুষের বউ হওয়ার যোগ্যতা রাখি না। বিশ্বাস করেন ওই মানুষটা যখন আমাকে বলেছিলো,
"তুই একটা বেশ্যা হয়ে কিভাবে অন্য একজন মানুষের বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখিস? তুই কি ভুলে গেছিস তুই আমার সাথে কতোবার বিছানায় রাত কাটিয়েছিস? কম করে হলেও একশবার তুই আমার বিছানা গরম করেছিস। তোর শরীরের প্রতি মিলিমিটারের মাপ আমি জানি। আর সেই তুই কিনা কাউকে বিয়ে করবি।"
আমি যাকে পৃথিবীতে সবচাইতে বেশি ঘৃণা করি সেই মানুষটা যখন আমার ভিতরটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়ে কথাগুলো বলল তখন নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করবেন? এতো কিছুর পরেও আমি বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি।
আমি চিঠিটা শেষ করতে পারলাম না। আমি বুঝতে পারলাম আমার চোখেও জল আসা শুরু করেছে। আমি এমন একজন মানুষকে বাঁচাতে পারিনি যে মানুষটা এতোটা দুঃখ নিয়েও আমাকে ভালোবেসে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলো শুধুমাত্র আমার জন্য কিন্তু পারেনি।
ফোনের রিংটোনটা বেজে চলেছে। আমি দেখতে পাচ্ছি একটা অচেনা নাম্বার থেকে বারবার ফোন আসছে কিন্তু রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না। আমার মস্তিষ্কের নিউরন গুলোতে শুধু রাখির চিঠিটা ঘোরাঘুরি করছে। মনে করিয়ে দিচ্ছে চিঠির ভিতরের রক্তাক্ত প্রতিটা শব্দ। যে শব্দ গুলোই আমার খারাপ থাকার জন্য যথেষ্ট। বিরক্ত হয়েই ফোনটা রিসিভ করলাম।
ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়ের কণ্ঠ শুনতে পেলাম। কথা বলে বুঝলাম এটা সেই মেয়ে যাকে একসময় আমি পড়াতাম। এমনিতেই মনটা অনেক বেশি খারাপ তাই আর তাঁর সাথে কথা বলে মনটা খারাপ করতে ইচ্ছে হলো না। ফোনটা রেখে দিয়ে কিছু সময়ের জন্য ফোনটা বন্ধ করে রাখলাম।
চলবে............
আমার সামনে টেবিলের ওপরে পড়ে থাকা সুইসাইড নোটটার দিকে তাকিয়ে আছি। কেনো জানি খোলার মতো সাহস করে উঠতে পারছি না। ওইদিকে সবাই দরজাটা ভেঙে ফেলার জো করে ফেলেছে প্রায়। আমি সুইসাইড নোটটাতে হাত না লাগিয়ে কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলাম। দরজা খোলার পর সবাই যখন ভিতরে ঢুকলো তখন সবাই আত্মকিত হয়ে গেলো। চিল্লাচিল্লি করতে লাগলো। একসময় বাড়ির সবাই চলে আসলো। রাখির বাবা তাঁর মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। আমার মাও কাঁদছেন। মাকে দেখে আমি মায়ের কাছে চলে গেলাম। মাকে যখন বললাম,
"আমার সাথেই কেনো এমন হতে হবে? বাসর ঘরে কোনো স্বামী যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়ে তাঁর কেমন লাগে বলতে পারো? আমি তো তোমার পছন্দ করা মেয়েকে মন থেকেই বিয়ে করেছিলাম। ভালোও বেসেছিলাম তাহলে সে কেনো এমন করলো? বিয়ের আগে কতো ভালোবাসা দেখিয়েছে,কতো মুগ্ধতা উপহার দিয়েছে। আর সেই মেয়ে কিনা বাসর রাতে আত্মহত্যা করলো। এর পেছনে রহস্য কি আমাকে বলো? আমি জানতে চাই। একটা মেয়ের অতীত জীবনে কি এমন ছিলো যে মেয়েটা নিজের ফুলসজ্জার রাতে এভাবে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে।"
আমার মা কোনো কথা বলে না। আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। আমার মায়ের কান্না থামে না। কাঁদতে কাঁদতে একসময় আমাকে বলে,
"আমরা তোর ওপর অন্যায় করেছি বাবা। রাখির জীবনে বড় একটা দুর্ঘটনা ছিলো। যেটার জন্য সে নিজেকে সবসময় দায়ী করতো। নিজেকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছিলো। আমি তোকে ব্যাপারটা জানাইনি। আমি ভেবেছিলাম বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বিয়ের রাতেই যে ও এমন করবে আমরা বুঝতে পারিনি। তবে মেয়েটার জীবনে অনেক কষ্ট ছিলো। দম বন্ধ হয়ে মরে যাওয়ার মতো কষ্ট। মেয়েটা তবুও বেঁচে ছিলো একটু সুখের আশায়,একটু ভালোবাসার আশায়। সুখ পেয়েওছিলো। ওর বাবা বলতো ও তোর সাথে কথা বলার সময় অনেক হাসি খুশি থাকতো। হঠাৎ করে কি এমন হলো যে ও আমাদের ছেড়ে চলে গেলো আমি জানি না।"
মায়ের কথা শুনে বুঝতে পারলাম মেয়েটা সবসময় ডিপ্রেশনে থাকতো,বাঁচতে চাইতো না। প্রথম যেদিন ফোন দিয়ে কথা বলেছিলাম সেদিনই বুঝতে পেরেছিলাম। মানুষ জন্মের পর থেকেই মনমরা হয়ে থাকে না। একজন মানুষের ডিপ্রেশনে থাকার হাজারটা কারণ থাকতে পারে। কিন্তু সেই হাজারটা কারণে মানুষ আত্মহত্যা করবে না। কোনো একটা কারণেই মানুষ আত্মহত্যা করে। আমি ভেবেছিলাম সবাই আমাকে সন্দেহ করবে। সবাই ভাববে আমিই আমার বউকে খুন করেছি। কিন্তু এমন কোনো কিছুই হলো না আমার সাথে। তাঁর মানে রাখি সম্পর্কে সবাই আগে থেকেই জানতো ব্যাপারটা। শুধু আমাকেই জানায়নি যদি শেষে আমি বিয়েতে না বলে দেই এই ভয়ে। রাখিতো আমাকে জানাতে পারতো। নিজেকে খুব বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে রাখিকে আমিই খুন করেছি। আমার কারণেই সে আত্মহত্যা করেছে। এক রুমে থেকেও একটা মানুষকে আত্মহত্যার হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি।
দোষটা আমারই। আমার মতো অপদার্থ একটা মানুষের জন্যই আরও একটা নিষ্পাপ প্রাণ ঝড়ে গেলো। এতোটা দিন একটা মানুষকে এতো ভালোবেসেও তাঁর সম্পর্কে আমি জানতে পারিনি। তাঁর সাথে কতো কথা বলেছি তাঁর হিসাব আমার কাছে নেই। কিন্তু কখনো তাঁর এভাবে মন খারাপ করে থাকার কারণটা জানতে চাইনি,বললেও হয়তো আমার অগোছালো মস্তিষ্কটা আঁচ করতে পারেনি। জীবনে প্রথমবারের মতো মনে হচ্ছে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটা আমার জন্য বৈধ হবে না,কারণ আমি একজন মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি। একটা মানুষের মৃত্যুতে যে তাঁর আপন মানুষদের জীবনে কতোটা প্রভাব ফেলে সেটা যদি আত্মহত্যা করা মানুষটা কখনো জানতে পারতো তাহলে আমার মন হয় না পৃথিবীর বুকে কোনো মানুষ আত্মহত্যা করার মতো এমন কিছু করতো। রাখির মৃত্যুতে অনেক মানুষের মন খারাপ হয়েছে,অনেক মানুষের ভিতরটা ব্যথিত হয়েছে। কিন্তু কেউ কখনো জানবে না তাঁর জন্য আমার ভিতরে কতোটা অসহায়ত্ব কাজ করে,কতোটা খারাপ লাগা কাজ করে। এখন আর মা আমার সাথে আগের মতো খারাপ ব্যবহার করে না। তিনি মনে করে আমার সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছেন। সবসময় অনুশোচনার অনলে দগ্ধ হয়। তাঁর ধারণা সে এমন একটা মেয়ের সাথে আমাকে বিয়ে দিয়েছিলো যার আগের জীবনে একজন ভালোবাসার মানুষ ছিলো,একজন পুরুষ ছিলো। কিন্তু সে হয়তো জানে না,আমি তাকে কখনো বলতেও পারবো না,বুঝাতে পারবো না তাঁর পছন্দ করা মেয়েটাকে আমি কতোটা চাইতাম,কিভাবে চাইতাম। তবে এতোটুকু বলতে পারি তাকে আমি আমার জীবনে সবকিছু দিয়ে ভালোবেসেছিলাম। যে ভালোবাসার মাঝে কোনো ফাঁক ছিলো না। আমি তাঁর অতীত জীবন সম্পর্কে জানি না,কখনো জানতেও চাইনি। আমি তো তাঁর অতীত দেখে তাকে ভালোবাসিনি। ভালো না বেসে থাকতে পারিনি তাই ভালোবেসেছিলাম। কিন্তু সে কেনো এভাবে চলে গেলো?
মৃত্যুর আগে লিখে যাওয়া রাখির চিঠিটা হাতে নিয়ে বসে আছি। প্রথম লাইনটা চোখের সামনে পড়ার পরেই বুকের ভিতরটাতে মোচড় দিয়ে উঠে,অসহ্য যন্ত্রণা অনুভব করি। কিন্তু কষ্ট হলেও এই চিঠিটা আমাকে পড়তে হবে।
প্রিয় আমিনুর রহমান,
ভালোবাসা নিবেন। এই চিঠিটা যখন আপনি পড়বেন তখন আমি আপনার থেকে লক্ষকোটি মাইল দূরে পাড়ি জমিয়েছি। আপনি হয়তো ভাবছেন লক্ষকোটি মাইল দু্রত্ব পাড় করে আমি আবার ফিরে আসবো। কিন্তু না,আমি এমন এক জায়গায় পাড়ি জমাতে যাচ্ছি যেখান থেকে কেউ কখনো ফিরে আসে না। আমিও আসবো না। কি অদ্ভুত মানুষ আমি না? মরে গিয়ে ভালোবাসা নিতে বলছি। মৃত মানুষ কি কাউকে ভালোবাসতে পারে? পারে না। যদি পারতো তাহলে মৃত্যুর পরে আমি আপনাকেই ভালোবাসতাম। আচ্ছা বলতে পারেন একজন মানুষের ভিতরে কতোটা কষ্ট জমা থাকলে,কতোটা অসহায়ত্বের স্বীকার হলে মানুষটা নিজের বাসর ঘরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারে? জানেন না,কিন্তু আমি জানি। আমার জীবনটাকে বাহির থেকে যতো সুন্দর মনে হয় ভিতর থেকে ঠিক ততোটাই বেদনাদায়ক।
আপনি জানেন আপনি কতো ভালো মানুষ? কতোটা বিশুদ্ধ? যদি জানতেন তাহলে হয়তো নিজেই নিজের বিশুদ্ধ ভালোবাসাটা পেতে চাইতেন। আপনার সাথে যখন কথা বলতাম তখন খুব ভালো লাগতো। মনে হতো সবকিছু ভুলে গিয়ে আবার আমি নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারি আপনাকে নিয়ে। আপনার মনের বিশুদ্ধ ভালোবাসাটা খুব করে পেতে ইচ্ছে করতো। আমিও বুঝতে পারতাম আপনিও আমাকে খুশি করার জন্য মাঝে মাঝেই অদ্ভুদ কিছু করতেন। আমার মতো তুচ্ছ একজন মানুষকে খুশি করার জন্য কেউ একজন এতো মুগ্ধতা নিয়ে কিছু করে যখন এটা ভাবতাম তখন অনেক ভালো লাগতো। এতোটাই ভালো লাগতো যে প্রকাশ করার মতো কোনো ভাষা আমি খুঁজে পাইনি। আমার একসময় মনে হলো আমি আপনাকে ভালোবেসে সবকিছু উজার করে দিবো কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো। আমার কি এমন আছে যা আমি আপনাকে দিতে পারি? আপনাকে দেওয়ার মতো কিছুই তো আমার নেই। আপনি যা চাইবেন আমি সেটা দিতে পারবো না। কারণ আমি অনেক আগেই নিঃস্ব হয়ে গেছি। আপনাকে দেওয়ার মতো কিংবা বেঁচে থাকার মতো কোনো কিছু অবশিষ্ট নেই আমার মাঝে। তবুও বেঁচে আছি। একটা মেয়ের জীবনে সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো তাঁর ভার্জিনিটি। কিন্তু আমি তো সেটাই হারিয়ে ফেলেছি। খারাপ একজন মেয়ে আমি।
জানেন? আপনি যখন আমাকে ভালো থাকার কথা শোনাতেন,ভালোবাসার কথা শোনাতেন,মানুষ মানুষকে ভালোবেসে সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার কথা শোনাতেন। তখন আপনার সাথে বেঁচে থাকার লোভটা সামলাতে পারতাম না। আমার মনে হতো আমি আপনার স্পর্শ পেলে আগের মতোই বিশুদ্ধ হয়ে যাবো। আসলেই কি বিশুদ্ধ মানুষের ছোঁয়া পেলে বিশুদ্ধ হওয়া যায়? আমি অনেকবার আপনাকে আমার ধ্বংস হওয়ার কথা বলতে চেয়েছি। একটা মেয়ের তিলে তিলে বেঁচে থাকার কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু কখনো পারিনি। মনে হতো এসব জানলে আপনি আমাকে আর ভালোবাসতে চাইবেন না। আমি জানি আমি যদি আমার জঘন্য অতীতটা আপনাকে বলতাম তবুও আপনি আমাকে বিয়ে করতেন। কিন্তু তখন কি আগের মতো ভালোবাসতেন? বাসতেন না। কারণ পৃথিবীর কোনো ছেলেই এমন একটা মেয়েকে ভালোবেসে নিজের করে নিবে না যে মেয়েটা নিজের ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় দিনের পর দিন রাতের পর রাত শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতো।
এতো কিছুর পরেও আমি স্বার্থপরের মতো আপনাকে নিয়ে সংসার করতে চেয়েছিলাম,সুখী হতে চেয়েছিলাম। সেটাও পারিনি। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমার অতীতকে আমি চিরদিনের জন্য কবর দিয়ে দিবো। আমি ভুলে যাবো আমার জীবনে কেউ একজন ছিলো যে আমার জীবনটাকে নরক বানিয়ে দিয়েছিলো,আমার শরীরটাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছিলো। বিশ্বাস করেন আমি সবকিছু ভুলে গিয়েছিলাম শুধু আপনার সাথে থাকবো বলে। কিন্তু ঠিক তখনই আমার জীবনে আমার সেই জঘন্য অতীতটা নাড়া দিলো। যে আমার শরীরের প্রতি ইঞ্চি ইঞ্চি সম্পর্কে জানে সেই মানুষটা আবার আমার জীবনে আসলো। আমাকে ফোন করে বলল তাঁর সাথে দেখা করতে হবে,তাঁর সাথে রাত কাটাতে হবে। আমি কতোবার তাকে বলেছি তুমি আমার সাথে যা করেছো সব ভুলে গিয়েছি আমি। কোনো কিছুই মনে রাখিনি। আমি আবার একজন মানুষকে নিয়ে নতুন করে বাঁচতে চাই। প্লিজ তুমি আমাকে মুক্তি দাও। এতোবছর পর আমাকে আর নরক যন্ত্রণা দিও না। কিন্তু সে আমার কথা শোনে না। আমাকে ফোনেই গালাগাল করতে থাকে। আমাকে মনে করিয়ে দেয় আমি একটা নষ্টা মেয়ে। আমি কখনোই আপনার মতো বিশুদ্ধ একজন মানুষের বউ হওয়ার যোগ্যতা রাখি না। বিশ্বাস করেন ওই মানুষটা যখন আমাকে বলেছিলো,
"তুই একটা বেশ্যা হয়ে কিভাবে অন্য একজন মানুষের বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখিস? তুই কি ভুলে গেছিস তুই আমার সাথে কতোবার বিছানায় রাত কাটিয়েছিস? কম করে হলেও একশবার তুই আমার বিছানা গরম করেছিস। তোর শরীরের প্রতি মিলিমিটারের মাপ আমি জানি। আর সেই তুই কিনা কাউকে বিয়ে করবি।"
আমি যাকে পৃথিবীতে সবচাইতে বেশি ঘৃণা করি সেই মানুষটা যখন আমার ভিতরটাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়ে কথাগুলো বলল তখন নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো। কিন্তু আপনি বিশ্বাস করবেন? এতো কিছুর পরেও আমি বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারিনি।
আমি চিঠিটা শেষ করতে পারলাম না। আমি বুঝতে পারলাম আমার চোখেও জল আসা শুরু করেছে। আমি এমন একজন মানুষকে বাঁচাতে পারিনি যে মানুষটা এতোটা দুঃখ নিয়েও আমাকে ভালোবেসে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলো শুধুমাত্র আমার জন্য কিন্তু পারেনি।
ফোনের রিংটোনটা বেজে চলেছে। আমি দেখতে পাচ্ছি একটা অচেনা নাম্বার থেকে বারবার ফোন আসছে কিন্তু রিসিভ করতে ইচ্ছে করছে না। আমার মস্তিষ্কের নিউরন গুলোতে শুধু রাখির চিঠিটা ঘোরাঘুরি করছে। মনে করিয়ে দিচ্ছে চিঠির ভিতরের রক্তাক্ত প্রতিটা শব্দ। যে শব্দ গুলোই আমার খারাপ থাকার জন্য যথেষ্ট। বিরক্ত হয়েই ফোনটা রিসিভ করলাম।
ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে একটা মেয়ের কণ্ঠ শুনতে পেলাম। কথা বলে বুঝলাম এটা সেই মেয়ে যাকে একসময় আমি পড়াতাম। এমনিতেই মনটা অনেক বেশি খারাপ তাই আর তাঁর সাথে কথা বলে মনটা খারাপ করতে ইচ্ছে হলো না। ফোনটা রেখে দিয়ে কিছু সময়ের জন্য ফোনটা বন্ধ করে রাখলাম।
চলবে............
Sahin, Santo, Shuvo, Hasibul hasan, Mahim, Jannat islam, Tanzim ahmed and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Rayhan1নবাগত
- Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1414
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-22
Re: একটি ডায়রির আত্মকাহিনী
Sat May 22, 2021 11:11 pm
পর্ব-৫
জীবনে চলার পথে অনেক মানুষের সাথে দেখা হয়,কথা হয়,ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাদের মাঝে কিছু মানুষ থাকে যারা আমাদের ভিতরটাতে জায়গায় করে নেয়। কিছু মানুষের মৃত্যুতে প্রচন্ড রকমের খারাপ লাগা কাজ করে। মনে হয়,এই মানুষটাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকতে অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু তারপরেও আমরা মানুষরা বেঁচে থাকি। কারণ এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে ছাড়া মরে না,কষ্ট হলেও বেঁচে থাকে। আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর সবচাইতে বড় মিথ্যা কথা হলো,আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না,আমি তোমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবো না। কিন্তু ঠিকই সবাই বেঁচে থাকে,ভালো থাকে,আগে আর পরে। কেউ নিজেকে গুছিয়ে নিতে একটু সময় নেয়,কেউ বা নেয় না। কিন্তু আমি তো কোনোটাই পারছি না। আমি যখন রাখির লিখে রেখে যাওয়া চিঠিটা পড়ি তখন আমার ভিতরটা জ্বলে যায়। এরকম একটা চিঠি যদি সে না লিখে যেতো তাহলে হয়তো আমি এতোদিনে তাকে ভুলে গিয়ে নতুনভাবে নিজেকে নিয়ে এগিয়ে যেতাম। কিন্তু আমি পারিনি। তাঁর চিঠির প্রতিটা শব্দ আমাকে ভাবায়,আমাকে কাঁদায়।
চব্বিশ ঘন্টা পর মোবাইলটা খোলার পর পরই ফোনটা বেজে উঠলো। এমন হতে পারে কখনো ভাবিনি। তার মানে আমার ফোন বন্ধ থাকার পরেও কেউ একজন ফোন দিয়েছে প্রতিনিয়ত। আমি ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে অনুরোধের কণ্ঠে শুনতে পেলাম,
"স্যার,প্লিজ ফোনটা রাখবেন না,আমার কথাটা শোনার পর না হয় রেখে দিয়েন,প্লিজ স্যার।"
আমি কাল মেয়েটার কথা শোনার পরেই ফোনটা কেটে দিয়ে বন্ধ করে রেখেছিলাম। কারণ আমি কখনো চাইনি,যে মানুষটা আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত আমাকে অপমান করেছে,আমি স্মার্ট না বলে আমাকে তাঁর বান্ধবীদের সামনে খারাপ ভাবে রিপ্রেজেন্ট করেছে। তাঁর সাথে আবার নতুন করে কথা হোক এটা কখনো চাইতাম না আমি। আমি যদি কারো সাথে সরাসরি কোনোদিন কথা বলি তাহলে সে মানুষটা যদি দুইবছর পরেও আমাকে ফোন দেয় তাহলে আমি মানুষটাকে চিনতে পারি। আর এই মেয়েটাকে যেহেতু আমি অনেকদিন পড়িয়েছি তাই তাঁর কণ্ঠটা শুনে তাকে চিনতে এক সেকেন্ডও দেরি হয়নি। তাই চিনতে পারার পরপরই ফোনটা রেখে দিয়ে বন্ধ করে ফেলেছিলাম।
আমি কোনো কিছু বলার আগেই নুসরাত কথা বলল,
"স্যার,আমার মা অনেক অসুস্থ। তাঁর অপারেশন করতে হবে। অনেক খুঁজেও যখন কোথাও এ নেগেটিভ রক্ত পেলাম না তখন আপনাকে ফোন দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না আমার। আমি জানি আপনার সাথে আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি,এই অন্যায়টা ক্ষমা করার মতো না। কিন্তু আমার জন্য আমার মা মারা যাবে এটা আমি মেনে নিতে পারবো না। আপনার রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ। আমি আমার মায়ের জন্য এক ব্যাগ রক্ত আপনার কাছে ভিক্ষা চাই। আমার মা কিন্তু আপনাকে অনেক ভালোবাসতো। আমি আপনাকে দেখতে না পারলেও আমার আপনাকে নিজের ছেলের মতোই দেখতো সবসময়।"
"তোমাকে আমি ভিক্ষা দেবো কেনো? সব মানুষকে ভিক্ষা দিতে নেই। মানুষকে বাজে ভাবে অপমান করার সময় মনে থাকে না? আজ যে মানুষটাকে এভাবে সবার সামনে অপমান করছি,থাপ্পড় মারছি। ভবিষ্যতে কোনোদিন তো তাকে আমার দরকার হতেও পারে। দুনিয়াটা খুব ছোট। কখন কার সাথে দেখা হয়ে যায় এটা যেমন আমরা কেউ বলতে পারি না। তেমনি কখন কাকে আমাদের দরকার হবে,কখন কোন মানুষটা আমাদের উপকারে আসবে সেটাও আমরা জানি না। তাই আমাদের সবার উচিত কাউকে সম্মান দিতে না পারলেও তাকে অপমান না করা। কিন্তু তুমি তো সেটা করোনি। সুযোগ পেলেই আমাকে অপমান করেছো। শুধু অপমান না,খুব বাজে ভাবে অপমান করেছো। আমার মনে হয় আমার মতো একজন মানুষের রক্ত তোমার মায়ের শরীরে শোভা পায় না। তোমার মাকে রক্ত দিতে হলেও একটা যোগ্যতা প্রয়োজন যেই যোগ্যতাটা আমার নেই।"
"স্যাঁর, এভাবে বলবেন না। রক্তটা খুব প্রয়োজন। সাতদিনের ভিতরে অপারেশন না হলে খারাপ কিছু হতে পারে,এমনটা ডাক্তার বলেছে। আমি না হয় একটা খারাপ মেয়ে,মানুষকে সম্মান করতে জানি না,মানুষকে ভালোবাসতে পারি না। কিন্তু আপনি তো অনেক ভালো একজন মানুষ। সবকিছ বোঝেন,সবকিছু জানেন। অনেক আশা নিয়ে আমি আপনাকে ফোন করেছি। আপনাকে ফোনে না পেয়ে অনেক কেঁদেছি। আপনার ফোন বন্ধ থাকার পরেও আমি মিনিটে মিনিটে আপনাকে ফোন দিয়েছি। কারণ আমি জানি আপনি না করতে পারবেন না।"
"তুমি ভুল জেনেছো। আমি ভালো মানুষ এটা তোমাকে কে বলল?
"কেউ বলেনি,আমি জানি। আপনার কাছে অনেকটা দিন পড়েছি। আপনার সাথে মাঝে মাঝে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি,তবুও ভুলেও কখনো আপনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেননি। আমার মাকে আমার কথা বলেননি।"
"ভালো মানুষ বলেই কি ওইদিন এতো সুন্দর ভাবে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলে? একজন মানুষ সবসময় একরকম থাকে না। মানুষের দিন বদলায়,সাথে সাথে মানুষ গুলোও বদলায়। আমি কখনো ভালো মানুষ ছিলাম না। তোমাকে যখন পড়াতাম তখন আমার টাকার খুব দরকার ছিলো,তাই তোমার ওইসব গা জ্বলা কথা গুলো শোনার পরেও আমি তোমাকে পড়াতাম। এর মানে এই না যে আমি ভালো মানুষ ছিলাম। মাঝে মাঝে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে খারাপ কিংবা ভালো সাজার অভিনয় করতে হয়। আমিও আমার প্রয়োজনে তোমাদের কাছে ভালো সেজে ছিলাম। তুমি আমার কাছ থেকে কোনো হেল্প পাবে না। যে মানুষটা নিজেই ভালো নেই,সে কেনো অন্য কাউকে ভালো রাখতে যাবে? তাও আবার সেই মানুষকে যারা মানুষকে মানুষ মনে করে না,যাদের কাছে টাকা পয়সা,যোগ্যতায় সবকিছু। টাকা দিয়ে তুমি তোমার মায়ের জন্য রক্তের ব্যবস্থা করতে পারো। যদিও এ নেগেটিভ রক্ত খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে চেষ্টা করে দেখতে পারো। টাকা হলে নাকি বাঘের দুধও পাওয়া যায় সেখানে সামান্য এ নেগেটিভ রক্ত তো বা হাতের মোয়া।"
"আপনার যতো খুশি আমাকে কথা শোনান,আমার মায়ের অপারেশন এর জন্য এসব সহ্য করাটা আমার জন্য খুব সমস্যা হবে না। আপনি যতো পারেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিন আমার কষ্ট হলেও সহ্য করবো আমি। তবুও আমার মাকে রক্ত দিয়ে বাঁচান।"
"অনেক কথা বলেছি,আর না। আশা করি তুমি আর আমাকে ফোন করে বিরক্ত করবে না। খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি আমি তোমার মাকে আমার শরীর থেকে এক ফোটা রক্তও দিবো না।"
"আপনি কি চান আপনার কারণে একজন মানুষ মারা যাক? আমি জানি আপনি চাইবেন না। আমি আপনার অপেক্ষায় থাকবো"
আমি ফোনটা রেখে দেই। কেনো জানি এখন আর কারো জন্য মায়া লাগে না। নিজের ভালো থাকাটাই যেখানে বিধাতা কেড়ে নিয়েছে তখন অন্য কারো ভালো থাকাটা দেখতে ইচ্ছে হয় না।
খুব করে ইচ্ছে করছে একটু ভালো থাকতে কিন্তু পারছি না। রাখির কথা কোনো ভাবেই ভুলতে পারছি না আমি। সাদিয়া নামের একটা মেয়ের সাথে তো আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিলো। মেয়েটার সাথে কথা বললে ভালোই লাগতো আমার। রাখির পরে যদি কারো সাথে কথা বলে একটু ভালো কাজ করে থাকে তাহলে সেই মানুষটা সাদিয়াই। বিয়ের দিন তাঁর আসার কথা ছিলো কিন্তু সে আসেনি,বিয়ের পরেও সে ফোন দিয়ে শুভকামনা পর্যন্ত জানায়নি। তাকে নিজ থেকে ফোন দেওয়াটা কতোটুকু যুক্তিসংগত হবে জানি না। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার একটু ভালো থাকতে ইচ্ছে করছে,আর ভালো রাখার মতো যদি কেউ থেকে থাকে তো তাহলে রং নাম্বারের মেয়েটাই আছে। কিন্তু তাকে ফোন দিতে নিজের ভিতরে সংকোচবোধ কাজ করছে। আবার মনে হলো কে জানে সে হয়তো ফোন দিয়েছে,বরং আমিই ফোনটা বন্ধ করে রেখেছিলাম যার কারণে বুঝতে পারিনি।
ফোন দেওয়ার পর পরই ওপাশ থেকে কারো কণ্ঠে শুনতে পেলাম,
"বউ পেয়ে বন্ধুকে ভুল গেলেন? অবশ্য এমনই হওয়ার কথা। ছেলেরা বিয়ের পর বন্ধু বান্ধবী কাউকে মনে রাখে না। আপনিও তেমন।"
এমন কিছু শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। ফোন দিলাম মনটা ভালো করার জন্য কিন্তু এভাবে খারাপ হয়ে যাবে ভাবিনি। কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না, বাঁধ্য হয়েই চুপ থাকতে হলো। ওপাশ থেকে আবারও শুনতে পেলাম।
"হ্যালো,কথা বলছেন না কেনো?"
তখন আমি কথা বলার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলেছি। তাই তাকে বললাম।
"আপনি তো একটা বার খোঁজ নিতে পারতেন। বিয়ের পর সবাই নিজের বউকে ভুলে যায় এটা হয়তো সবার ক্ষেত্রেই সত্য। কিন্তু সবার কি আর সেই সৌভাগ্যটা হয়? সবাই কি আর বউকে সারাজীবনের জন্য ভালোবাসতে পারে?
তখন মেয়েটা কিছুটা অবাক হলো আমার কথা শুনে। মনে হলো সে আমার কথাগুলোর মানে বুঝতে পারেনি। তারপরেও সে কথা বলল।
"বউকে ভালোবাসার জন্য কি আবার ভাগ্য লাগে নাকি? সব মেয়েই তো চায় তাঁর হাসবেন্ড তাকে ভালোবাসুক,পৃথিবীর সব থেকে বেশি ভালোবাসুক। আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে মেয়েরা তাদের হাসবেন্ডের কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে চায় না। হাসবেন্ড রা তাদের বউকে জোর করে ভালোবাসে।"
আমি মেয়েটার কথা শুনে কিছুটা আশ্চর্য হলাম। বুঝতে পারলাম আমি মন ভালো করার জন্য ফোন দিলেও এই মেয়েটা আমার মন খারাপ করে দিচ্ছে। তাঁর কথা শুনে কেনো জানি খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে সে আমার সাথে মজা নিচ্ছে। তাই বাঁধ্য হয়ে তাকে বললাম।
"আমার সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে। ভাবলাম আপনার সাথে কথা বলে একটু মনটা ভালো করবো কিন্তু উল্টো আপনি মনটা খারাপ করে দিলেন।"
আমার কথাটা শেষ হওয়ার আগেই মেয়েটা বলে উঠলো।
"ওমা! কি বলেন আপনি? নতুন বিয়ে করা বউ রেখে এমন কথা কেউ বলে নাকি। বউয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে বুঝি? আপনার বউ কি জানে আমাকে ফোন দিয়েছেন? মেয়েরা কিন্তু এই বিষয় গুলোতে খুবই সিরিয়াস। তারা সবকিছুই ভাগাভাগি করতে পারে কিন্তু নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে কখনো কারো সাথে শেয়ার করতে চায় না।"
আমি মেয়েটাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বলে ফেললাম।
"আমার বউ বাসর ঘরে আত্মহত্যা করেছে। তাকে ভালোবেসে আদর করা তো দূরের কথা তাকে একটু ছুঁয়ে দেখারও সৌভাগ্য হয়নি আমার। সেজন্যই বলললাম,সবারই নিজের বউকে ভালোবাসার সৌভাগ্য হয় না। কেউ কেউ হয়তো ভালোবাসার সুযোগটাই পায় না।"
আমি বুঝতে পারলাম আমার কথাটা ফোনের ওপাশটাতে নীরবতার পাহাড় সৃষ্টি করেছে।
চলবে..................
জীবনে চলার পথে অনেক মানুষের সাথে দেখা হয়,কথা হয়,ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাদের মাঝে কিছু মানুষ থাকে যারা আমাদের ভিতরটাতে জায়গায় করে নেয়। কিছু মানুষের মৃত্যুতে প্রচন্ড রকমের খারাপ লাগা কাজ করে। মনে হয়,এই মানুষটাকে ছাড়া আমার বেঁচে থাকতে অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু তারপরেও আমরা মানুষরা বেঁচে থাকি। কারণ এই পৃথিবীতে কেউ কাউকে ছাড়া মরে না,কষ্ট হলেও বেঁচে থাকে। আমার কাছে মনে হয় পৃথিবীর সবচাইতে বড় মিথ্যা কথা হলো,আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না,আমি তোমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারবো না। কিন্তু ঠিকই সবাই বেঁচে থাকে,ভালো থাকে,আগে আর পরে। কেউ নিজেকে গুছিয়ে নিতে একটু সময় নেয়,কেউ বা নেয় না। কিন্তু আমি তো কোনোটাই পারছি না। আমি যখন রাখির লিখে রেখে যাওয়া চিঠিটা পড়ি তখন আমার ভিতরটা জ্বলে যায়। এরকম একটা চিঠি যদি সে না লিখে যেতো তাহলে হয়তো আমি এতোদিনে তাকে ভুলে গিয়ে নতুনভাবে নিজেকে নিয়ে এগিয়ে যেতাম। কিন্তু আমি পারিনি। তাঁর চিঠির প্রতিটা শব্দ আমাকে ভাবায়,আমাকে কাঁদায়।
চব্বিশ ঘন্টা পর মোবাইলটা খোলার পর পরই ফোনটা বেজে উঠলো। এমন হতে পারে কখনো ভাবিনি। তার মানে আমার ফোন বন্ধ থাকার পরেও কেউ একজন ফোন দিয়েছে প্রতিনিয়ত। আমি ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে অনুরোধের কণ্ঠে শুনতে পেলাম,
"স্যার,প্লিজ ফোনটা রাখবেন না,আমার কথাটা শোনার পর না হয় রেখে দিয়েন,প্লিজ স্যার।"
আমি কাল মেয়েটার কথা শোনার পরেই ফোনটা কেটে দিয়ে বন্ধ করে রেখেছিলাম। কারণ আমি কখনো চাইনি,যে মানুষটা আমার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রতিনিয়ত আমাকে অপমান করেছে,আমি স্মার্ট না বলে আমাকে তাঁর বান্ধবীদের সামনে খারাপ ভাবে রিপ্রেজেন্ট করেছে। তাঁর সাথে আবার নতুন করে কথা হোক এটা কখনো চাইতাম না আমি। আমি যদি কারো সাথে সরাসরি কোনোদিন কথা বলি তাহলে সে মানুষটা যদি দুইবছর পরেও আমাকে ফোন দেয় তাহলে আমি মানুষটাকে চিনতে পারি। আর এই মেয়েটাকে যেহেতু আমি অনেকদিন পড়িয়েছি তাই তাঁর কণ্ঠটা শুনে তাকে চিনতে এক সেকেন্ডও দেরি হয়নি। তাই চিনতে পারার পরপরই ফোনটা রেখে দিয়ে বন্ধ করে ফেলেছিলাম।
আমি কোনো কিছু বলার আগেই নুসরাত কথা বলল,
"স্যার,আমার মা অনেক অসুস্থ। তাঁর অপারেশন করতে হবে। অনেক খুঁজেও যখন কোথাও এ নেগেটিভ রক্ত পেলাম না তখন আপনাকে ফোন দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না আমার। আমি জানি আপনার সাথে আমি অনেক বড় অন্যায় করেছি,এই অন্যায়টা ক্ষমা করার মতো না। কিন্তু আমার জন্য আমার মা মারা যাবে এটা আমি মেনে নিতে পারবো না। আপনার রক্তের গ্রুপ এ নেগেটিভ। আমি আমার মায়ের জন্য এক ব্যাগ রক্ত আপনার কাছে ভিক্ষা চাই। আমার মা কিন্তু আপনাকে অনেক ভালোবাসতো। আমি আপনাকে দেখতে না পারলেও আমার আপনাকে নিজের ছেলের মতোই দেখতো সবসময়।"
"তোমাকে আমি ভিক্ষা দেবো কেনো? সব মানুষকে ভিক্ষা দিতে নেই। মানুষকে বাজে ভাবে অপমান করার সময় মনে থাকে না? আজ যে মানুষটাকে এভাবে সবার সামনে অপমান করছি,থাপ্পড় মারছি। ভবিষ্যতে কোনোদিন তো তাকে আমার দরকার হতেও পারে। দুনিয়াটা খুব ছোট। কখন কার সাথে দেখা হয়ে যায় এটা যেমন আমরা কেউ বলতে পারি না। তেমনি কখন কাকে আমাদের দরকার হবে,কখন কোন মানুষটা আমাদের উপকারে আসবে সেটাও আমরা জানি না। তাই আমাদের সবার উচিত কাউকে সম্মান দিতে না পারলেও তাকে অপমান না করা। কিন্তু তুমি তো সেটা করোনি। সুযোগ পেলেই আমাকে অপমান করেছো। শুধু অপমান না,খুব বাজে ভাবে অপমান করেছো। আমার মনে হয় আমার মতো একজন মানুষের রক্ত তোমার মায়ের শরীরে শোভা পায় না। তোমার মাকে রক্ত দিতে হলেও একটা যোগ্যতা প্রয়োজন যেই যোগ্যতাটা আমার নেই।"
"স্যাঁর, এভাবে বলবেন না। রক্তটা খুব প্রয়োজন। সাতদিনের ভিতরে অপারেশন না হলে খারাপ কিছু হতে পারে,এমনটা ডাক্তার বলেছে। আমি না হয় একটা খারাপ মেয়ে,মানুষকে সম্মান করতে জানি না,মানুষকে ভালোবাসতে পারি না। কিন্তু আপনি তো অনেক ভালো একজন মানুষ। সবকিছ বোঝেন,সবকিছু জানেন। অনেক আশা নিয়ে আমি আপনাকে ফোন করেছি। আপনাকে ফোনে না পেয়ে অনেক কেঁদেছি। আপনার ফোন বন্ধ থাকার পরেও আমি মিনিটে মিনিটে আপনাকে ফোন দিয়েছি। কারণ আমি জানি আপনি না করতে পারবেন না।"
"তুমি ভুল জেনেছো। আমি ভালো মানুষ এটা তোমাকে কে বলল?
"কেউ বলেনি,আমি জানি। আপনার কাছে অনেকটা দিন পড়েছি। আপনার সাথে মাঝে মাঝে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি,তবুও ভুলেও কখনো আপনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেননি। আমার মাকে আমার কথা বলেননি।"
"ভালো মানুষ বলেই কি ওইদিন এতো সুন্দর ভাবে বাসা থেকে বের করে দিয়েছিলে? একজন মানুষ সবসময় একরকম থাকে না। মানুষের দিন বদলায়,সাথে সাথে মানুষ গুলোও বদলায়। আমি কখনো ভালো মানুষ ছিলাম না। তোমাকে যখন পড়াতাম তখন আমার টাকার খুব দরকার ছিলো,তাই তোমার ওইসব গা জ্বলা কথা গুলো শোনার পরেও আমি তোমাকে পড়াতাম। এর মানে এই না যে আমি ভালো মানুষ ছিলাম। মাঝে মাঝে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে খারাপ কিংবা ভালো সাজার অভিনয় করতে হয়। আমিও আমার প্রয়োজনে তোমাদের কাছে ভালো সেজে ছিলাম। তুমি আমার কাছ থেকে কোনো হেল্প পাবে না। যে মানুষটা নিজেই ভালো নেই,সে কেনো অন্য কাউকে ভালো রাখতে যাবে? তাও আবার সেই মানুষকে যারা মানুষকে মানুষ মনে করে না,যাদের কাছে টাকা পয়সা,যোগ্যতায় সবকিছু। টাকা দিয়ে তুমি তোমার মায়ের জন্য রক্তের ব্যবস্থা করতে পারো। যদিও এ নেগেটিভ রক্ত খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে চেষ্টা করে দেখতে পারো। টাকা হলে নাকি বাঘের দুধও পাওয়া যায় সেখানে সামান্য এ নেগেটিভ রক্ত তো বা হাতের মোয়া।"
"আপনার যতো খুশি আমাকে কথা শোনান,আমার মায়ের অপারেশন এর জন্য এসব সহ্য করাটা আমার জন্য খুব সমস্যা হবে না। আপনি যতো পারেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিন আমার কষ্ট হলেও সহ্য করবো আমি। তবুও আমার মাকে রক্ত দিয়ে বাঁচান।"
"অনেক কথা বলেছি,আর না। আশা করি তুমি আর আমাকে ফোন করে বিরক্ত করবে না। খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি আমি তোমার মাকে আমার শরীর থেকে এক ফোটা রক্তও দিবো না।"
"আপনি কি চান আপনার কারণে একজন মানুষ মারা যাক? আমি জানি আপনি চাইবেন না। আমি আপনার অপেক্ষায় থাকবো"
আমি ফোনটা রেখে দেই। কেনো জানি এখন আর কারো জন্য মায়া লাগে না। নিজের ভালো থাকাটাই যেখানে বিধাতা কেড়ে নিয়েছে তখন অন্য কারো ভালো থাকাটা দেখতে ইচ্ছে হয় না।
খুব করে ইচ্ছে করছে একটু ভালো থাকতে কিন্তু পারছি না। রাখির কথা কোনো ভাবেই ভুলতে পারছি না আমি। সাদিয়া নামের একটা মেয়ের সাথে তো আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিলো। মেয়েটার সাথে কথা বললে ভালোই লাগতো আমার। রাখির পরে যদি কারো সাথে কথা বলে একটু ভালো কাজ করে থাকে তাহলে সেই মানুষটা সাদিয়াই। বিয়ের দিন তাঁর আসার কথা ছিলো কিন্তু সে আসেনি,বিয়ের পরেও সে ফোন দিয়ে শুভকামনা পর্যন্ত জানায়নি। তাকে নিজ থেকে ফোন দেওয়াটা কতোটুকু যুক্তিসংগত হবে জানি না। কিন্তু এই মুহূর্তে আমার একটু ভালো থাকতে ইচ্ছে করছে,আর ভালো রাখার মতো যদি কেউ থেকে থাকে তো তাহলে রং নাম্বারের মেয়েটাই আছে। কিন্তু তাকে ফোন দিতে নিজের ভিতরে সংকোচবোধ কাজ করছে। আবার মনে হলো কে জানে সে হয়তো ফোন দিয়েছে,বরং আমিই ফোনটা বন্ধ করে রেখেছিলাম যার কারণে বুঝতে পারিনি।
ফোন দেওয়ার পর পরই ওপাশ থেকে কারো কণ্ঠে শুনতে পেলাম,
"বউ পেয়ে বন্ধুকে ভুল গেলেন? অবশ্য এমনই হওয়ার কথা। ছেলেরা বিয়ের পর বন্ধু বান্ধবী কাউকে মনে রাখে না। আপনিও তেমন।"
এমন কিছু শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। ফোন দিলাম মনটা ভালো করার জন্য কিন্তু এভাবে খারাপ হয়ে যাবে ভাবিনি। কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না, বাঁধ্য হয়েই চুপ থাকতে হলো। ওপাশ থেকে আবারও শুনতে পেলাম।
"হ্যালো,কথা বলছেন না কেনো?"
তখন আমি কথা বলার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে ফেলেছি। তাই তাকে বললাম।
"আপনি তো একটা বার খোঁজ নিতে পারতেন। বিয়ের পর সবাই নিজের বউকে ভুলে যায় এটা হয়তো সবার ক্ষেত্রেই সত্য। কিন্তু সবার কি আর সেই সৌভাগ্যটা হয়? সবাই কি আর বউকে সারাজীবনের জন্য ভালোবাসতে পারে?
তখন মেয়েটা কিছুটা অবাক হলো আমার কথা শুনে। মনে হলো সে আমার কথাগুলোর মানে বুঝতে পারেনি। তারপরেও সে কথা বলল।
"বউকে ভালোবাসার জন্য কি আবার ভাগ্য লাগে নাকি? সব মেয়েই তো চায় তাঁর হাসবেন্ড তাকে ভালোবাসুক,পৃথিবীর সব থেকে বেশি ভালোবাসুক। আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে মেয়েরা তাদের হাসবেন্ডের কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে চায় না। হাসবেন্ড রা তাদের বউকে জোর করে ভালোবাসে।"
আমি মেয়েটার কথা শুনে কিছুটা আশ্চর্য হলাম। বুঝতে পারলাম আমি মন ভালো করার জন্য ফোন দিলেও এই মেয়েটা আমার মন খারাপ করে দিচ্ছে। তাঁর কথা শুনে কেনো জানি খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে সে আমার সাথে মজা নিচ্ছে। তাই বাঁধ্য হয়ে তাকে বললাম।
"আমার সময়টা খুব খারাপ যাচ্ছে। ভাবলাম আপনার সাথে কথা বলে একটু মনটা ভালো করবো কিন্তু উল্টো আপনি মনটা খারাপ করে দিলেন।"
আমার কথাটা শেষ হওয়ার আগেই মেয়েটা বলে উঠলো।
"ওমা! কি বলেন আপনি? নতুন বিয়ে করা বউ রেখে এমন কথা কেউ বলে নাকি। বউয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে বুঝি? আপনার বউ কি জানে আমাকে ফোন দিয়েছেন? মেয়েরা কিন্তু এই বিষয় গুলোতে খুবই সিরিয়াস। তারা সবকিছুই ভাগাভাগি করতে পারে কিন্তু নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে কখনো কারো সাথে শেয়ার করতে চায় না।"
আমি মেয়েটাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বলে ফেললাম।
"আমার বউ বাসর ঘরে আত্মহত্যা করেছে। তাকে ভালোবেসে আদর করা তো দূরের কথা তাকে একটু ছুঁয়ে দেখারও সৌভাগ্য হয়নি আমার। সেজন্যই বলললাম,সবারই নিজের বউকে ভালোবাসার সৌভাগ্য হয় না। কেউ কেউ হয়তো ভালোবাসার সুযোগটাই পায় না।"
আমি বুঝতে পারলাম আমার কথাটা ফোনের ওপাশটাতে নীরবতার পাহাড় সৃষ্টি করেছে।
চলবে..................
Sahin, Santo, Shuvo, Hasibul hasan, Mahim, Inamul haq, Arman molla and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Rayhan1নবাগত
- Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1414
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-22
Re: একটি ডায়রির আত্মকাহিনী
Sat May 22, 2021 11:13 pm
পর্ব-৬
দুইমিনিট পাড় হয়ে যাওয়ার পরেও ফোনের বিপরীত পাশ থেকে কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না। পুনরায় যখন ফোন দিলাম তখন আর ফোনটা কেউ রিসিভ করলো না। তারপরের বার আবার যখন ফোন দিলাম তখনও ফোনটা বন্ধ দেখালো। এমন কেনো হলো বুঝতে পারলাম না। সে কি ইচ্ছে করেই ফোনটা রেখে দিয়েছে নাকি আপনাআপনিই বন্ধ হয়ে গেছে আন্দাজ করতে পারলাম না। তবে তাঁর সাথে যে এই মুহূর্তে কথা বলতে পারবো না সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলাম। মনটা ভালো করতে চেয়ে খারাপ করে ফেললাম। এই মুহূর্তে ভালো থাকার ইচ্ছেটা মরে গেছে। খারাপ থাকাটাই আমার কাছে ভালো থাকা মনে হচ্ছে। রাখির চিঠিটার শেষটুকু এখনো পড়া হয়নি। মন খারাপ করার এর থেকে ভালো কোনো উপায় আছে বলে মনে হয় না। তাই মন খারাপ করার জন্য সেই সমুদ্রভরা একবুক কষ্ট আর হতাশা মেশানো চিঠিটা পড়তে লাগলাম।
আপনি হয়তো ভাবছেন আমি আপনাকে এতোদিন ধরে ধোঁকা দিয়ে এসেছি,আপনার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার নাটক করেছি। কিন্তু না আমি এমন করিনি। আমি খারাপ হলেও আমি আপনার জন্য পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ একজন মানুষ হয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম। শুধু আপনার জন্য বাঁচতে চেয়েছিলাম। বিশ্বাস করেন আর না করেন এই কথাটার মাঝে এক বিন্দুও মিথ্যা নেই। আমি যে ছেলেটাকে ভালোবাসতাম তাঁর সাথে আমার কিভাবে ফিজিক্যাল রিলেশন হয়ে গিয়েছিলো আমি বুঝতে পারিনি। সে যখন আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো তখন আমি আমার বিশুদ্ধতা রক্ষা করার কথা ভুলে গিয়েছিলাম,ভুলে গিয়েছিলাম মেয়েদের ইজ্জত একবার চলে গেলে সেটা আর ফিরে পাওয়া যায় না। আমি সেদিনের পর থেকে এই কাজটা থেকে সবসময় দূরে থাকতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি। আমার ভালোবাসার মানুষটাই আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করেছে। কখনো নিজের ইচ্ছায় সেক্সুয়াল চাহিদা মিটানোর জন্য তার সাথে এই কাজটা করেছি কখনো বা আমার প্রেমিকের আবদারটা রাখতে গিয়ে করতে হয়েছে। একসময় বুঝতে পারলাম এই নোংরামির পরিমাণটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমি তাকে বললাম চলো আমরা বিয়ে করি কিন্তু সে না করলো। তাঁর নাকি ফ্যামিলিতে সমস্যা,সে আমাকে বিয়ে করতে পারবে না। সেদিন আমি বুঝতে পারলাম এতো দিন ভালোবাসার নামে কেউ আমাকে ভোগ করেছে। কুকুরের মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে আমার দেহটা। সেদিনের পর থেকে আমার নোংরা ভালোবাসার মানুষটা আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। কারণ সে আমাকে বিয়ে করতে চাইতো না,শুধু আমাকে ভোগ করতে চাইতো। তারপর থেকে আমি খুব একা হয়ে গেলাম। মনে হলো আমার সবকিছু আমি একজনকে মানুষকে বিলিয়ে দিয়েছি। আমার কাছে কাউকে দেওয়ার মতো কোনো কিছু নেই। আমার ব্যাপারটা অনেকে জেনে গিয়েছিলো। যার কারণে বাবা অনেক চেষ্টা করেও আমার বিয়েটা দিতে পারেননি। ঠিক তখনই আমার জীবনে আপনার আগমন ঘটলো। আপনি আমাকে ভালো থাকতে শেখালেন,ভালোবাসতে শেখালেন,বেঁচে থাকার জন্য হাজারটা কারণ দেখালেন। একসময় আমার বাঁচতে ইচ্ছে হলো। আমার আপনাকে নিজের করে পাওয়ার লোভ হতে লাগলো। সব ভুলে আপনার সাথে নিজেকে জড়াতে লাগলাম আমি।
সবকিছুই ঠিক ছিলো। কিন্তু বিয়ের কিছুক্ষণ পরেই আমার প্রাক্তনের ফোন পেলাম। প্রাক্তন বলাটা ঠিক হবে কিনা জানি না। কারণ যে মানুষটা আমার দেহটাকে ভোগ করার জন্য আমার সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক করেছিলো। ভালোবাসার মানুষের সাথে কি এরকম করা যায়? আমার জানা নেই,তবে ভালোবাসার নাম নিয়ে সে আমার সাথে এমন কিছু করেছে। ফোন করে যখন বলল,আমাকে তাঁর কাছে যেতে হবে,তাঁর সাথে রাত থাকতে হবে। সে এতোদিন পর আমাকে এমন প্রস্তাব করে বসবে আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। তবে করেছে। আমি তাকে অনেক বুঝিয়েছি,কিন্তু সে আমার কথা শুনেনি। আমার সাথে তাঁর কিছু অন্তরঙ্গ ভিডিও ছিলো,যেগুলো সে আমার অজান্তেই তাঁর কাছে রেখে দিয়েছিলো। আমাকে হুমকি দিতে লাগলো,ভয় দেখালো। আমি যদি তাঁর কথা না শুনি তাহলে ভিডিও গুলো সে আপনাকে দেখাবে। আপনি একটা সত্য কথা বলবেন? ওই গুলো দেখার পর কি আমাকে মেনে নিতেন? নিতেন না। আপনি কেনো পৃথিবীর কোনো পুরুষই আমাকে মেনে নিতো না। তাই আমার মনে হলো আমার বেঁচে থাকার মতো কোনো পথ খোলা নেই। আমি চাইলে আপনাকে তাঁর পরিচয়টা দিয়ে যেতে পারতাম। যে মানুষটা আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী সে মানুষটাও শাস্তি পাক। কিন্তু আমি চাইনি আমার কারণে আপনি কোনো ঝামেলায় পড়েন। মৃত্যুর আগে একজন মানুষকে শুধু জানিয়েছি। সে হলো আমার মৃত্যুর কারণ যে। সে জানবে আমি মৃত্যুর পরেও তাকে ঘৃণা করবো,তাঁর কারণেই আমি বাঁচতে পারিনি। হয়তো সে আমার মৃত্যুর কারণে নিজেকে দোষ দিবে,অনুতপ্ত হবে কিংবা হবে না। তবে আমি তাকে সবার সামনে খারাপ ভাবে প্রকাশ করে যেতে পারি না। কারণ এসবের পেছনে আমারও যে ভুল আছে। আপনি হয়তো ভাবছেন,আমি কেনো আপনাকে এসব বলে গেলাম। আমি চাই আমার মৃত্যুর কারণটা কেউ একজন জানুক। কেউ একজন জানুক অপবিত্র একটা মেয়ে হয়েও একজন মানুষকে সম্পূর্ণ বিশুদ্ধতার সাথে ভালোবাসতে চেয়েছিলো,যে ভালোবাসার মাঝে কোনো ফাক ছিলো না,কোনো ছলনা ছিলো না। আমাকে ক্ষমা করবেন,আমার জীবনটা মিথ্যা হলেও আপনার প্রতি আমার ভালোবাসাটা মিথ্যে ছিলো না। ভালো থাকবেন।
মন খারাপের মাত্রাটা যে এতো বেশি হবে ভাবিনি। যে মানুষটা তাকে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দিলো সে মানুষটাকেই সে হাইড করে গেলো। হয়তো মেয়েটা চায়নি তাঁর মৃত্যুর পরে সবাই জানুক সে এমন ছিলো। আমার কার ওপর রাগ করা উচিত জানি না। তবে এই মুহূর্তে নিজের প্রতি অনেক রাগ হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার কপালটাই খারাপ। তাই হয়তো এমন হয়েছে। তবে এটা ভেবে ভালো লাগছে এর পরে আর কারো চিঠি পড়ে কাঁদতে হবে না,আর কারো চিঠি পড়ে খারাপ লাগা কাজ করবে না। দুঃখগুলো একেবারে পেলে কিছুদিনের জন্য কষ্টে পেতে হয়। তিলে তিলে কষ্ট পাওয়ার থেকে বোধয় একেবারে পাওয়াই ভালো।
দুইদিন পর আমার মনে হলো নুসরাতের মায়ের সাথে একবার দেখা করা উচিত। তাকে রক্ত দেওয়া উচিত। আমার কারণে আর একজন মানুষ মারা যাক এটা আমি কখনোই মেনে নিতে পারবো না। তাই আমি ঠিক করলাম নুসরাতের মাকে রক্ত দিবো। আমি নুসরাতকে না জানিয়েই তাঁর মাকে রক্ত দিলাম। আল্লাহর রহমতে তাঁর মা বেঁচেও গেলো। আগের মতে সুস্থ্য হয়ে গেলো।
লেখকরা কল্পনা করতে ভালোবাসেন। আমারও কল্পনা করতে খুব ভালো লাগছে। কিছুদিন পর নুসরাতের পরিবারের সবাই জানতে পারলো আমিই তাঁর মাকে বাঁচিয়েছি। নিজের শরীর থেকে যতুটকু রক্ত নেওয়া দরকার তাঁর থেকেও বেশি রক্ত দিয়েছি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। নুসরাতের বাবা মা আমার ওপর মুগ্ধ না হয়ে পারলেন না। সেদিনের জন্য ক্ষমা চাইলেন,নুসরাতও আমার কাছে ক্ষমা চাইলো দুঃখ,প্রকাশ করলো। নুসরাতের সাথে আমাকে বিয়ে দিলেন,নুসরাতও খুশি মনে আমাকে মেনে নিলেন। সবকিছুই যেনো সুখময় হয়ে উঠলো।
সাদিয়া মেয়েটাও সেদিনের জন্য সরি বলল। সেদিন সে ইচ্ছে করে ফোন বন্ধ করেনি। সে আমাকে সান্ত্বনা দিলো,আমার ভালো লাগার সঙ্গী হলো। আমি নুসরাতকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলাম।
কল্পনা আর বাস্তব এক না। কল্পনার মতো বাস্তব কখনো এতো সুন্দর হয় না। বাস্তবে নুসরাতরা কখনো আমিনুল দেরকে মনে রাখে না। বাস্তবে আমিনুল আর নুসরাতদের কখনো মিল হয় না। খারাপ সময়টাতে সঙ্গ দেওয়ার জন্য সাদিয়ারাও আর ফিরে আসে না। খারাপ সময়গুলোতে আমিনুলদের পাশে নুসরাত কিংবা সাদিয়া দেরকে পাশে পাওয়া যায় না।
সমাপ্ত।
দুইমিনিট পাড় হয়ে যাওয়ার পরেও ফোনের বিপরীত পাশ থেকে কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া গেলো না। পুনরায় যখন ফোন দিলাম তখন আর ফোনটা কেউ রিসিভ করলো না। তারপরের বার আবার যখন ফোন দিলাম তখনও ফোনটা বন্ধ দেখালো। এমন কেনো হলো বুঝতে পারলাম না। সে কি ইচ্ছে করেই ফোনটা রেখে দিয়েছে নাকি আপনাআপনিই বন্ধ হয়ে গেছে আন্দাজ করতে পারলাম না। তবে তাঁর সাথে যে এই মুহূর্তে কথা বলতে পারবো না সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারলাম। মনটা ভালো করতে চেয়ে খারাপ করে ফেললাম। এই মুহূর্তে ভালো থাকার ইচ্ছেটা মরে গেছে। খারাপ থাকাটাই আমার কাছে ভালো থাকা মনে হচ্ছে। রাখির চিঠিটার শেষটুকু এখনো পড়া হয়নি। মন খারাপ করার এর থেকে ভালো কোনো উপায় আছে বলে মনে হয় না। তাই মন খারাপ করার জন্য সেই সমুদ্রভরা একবুক কষ্ট আর হতাশা মেশানো চিঠিটা পড়তে লাগলাম।
আপনি হয়তো ভাবছেন আমি আপনাকে এতোদিন ধরে ধোঁকা দিয়ে এসেছি,আপনার সাথে মিথ্যা ভালোবাসার নাটক করেছি। কিন্তু না আমি এমন করিনি। আমি খারাপ হলেও আমি আপনার জন্য পরিপূর্ণ বিশুদ্ধ একজন মানুষ হয়ে বাঁচতে চেয়েছিলাম। শুধু আপনার জন্য বাঁচতে চেয়েছিলাম। বিশ্বাস করেন আর না করেন এই কথাটার মাঝে এক বিন্দুও মিথ্যা নেই। আমি যে ছেলেটাকে ভালোবাসতাম তাঁর সাথে আমার কিভাবে ফিজিক্যাল রিলেশন হয়ে গিয়েছিলো আমি বুঝতে পারিনি। সে যখন আমাকে জড়িয়ে ধরেছিলো তখন আমি আমার বিশুদ্ধতা রক্ষা করার কথা ভুলে গিয়েছিলাম,ভুলে গিয়েছিলাম মেয়েদের ইজ্জত একবার চলে গেলে সেটা আর ফিরে পাওয়া যায় না। আমি সেদিনের পর থেকে এই কাজটা থেকে সবসময় দূরে থাকতে চেয়েছি কিন্তু পারিনি। আমার ভালোবাসার মানুষটাই আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করেছে। কখনো নিজের ইচ্ছায় সেক্সুয়াল চাহিদা মিটানোর জন্য তার সাথে এই কাজটা করেছি কখনো বা আমার প্রেমিকের আবদারটা রাখতে গিয়ে করতে হয়েছে। একসময় বুঝতে পারলাম এই নোংরামির পরিমাণটা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমি তাকে বললাম চলো আমরা বিয়ে করি কিন্তু সে না করলো। তাঁর নাকি ফ্যামিলিতে সমস্যা,সে আমাকে বিয়ে করতে পারবে না। সেদিন আমি বুঝতে পারলাম এতো দিন ভালোবাসার নামে কেউ আমাকে ভোগ করেছে। কুকুরের মতো ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেয়েছে আমার দেহটা। সেদিনের পর থেকে আমার নোংরা ভালোবাসার মানুষটা আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। কারণ সে আমাকে বিয়ে করতে চাইতো না,শুধু আমাকে ভোগ করতে চাইতো। তারপর থেকে আমি খুব একা হয়ে গেলাম। মনে হলো আমার সবকিছু আমি একজনকে মানুষকে বিলিয়ে দিয়েছি। আমার কাছে কাউকে দেওয়ার মতো কোনো কিছু নেই। আমার ব্যাপারটা অনেকে জেনে গিয়েছিলো। যার কারণে বাবা অনেক চেষ্টা করেও আমার বিয়েটা দিতে পারেননি। ঠিক তখনই আমার জীবনে আপনার আগমন ঘটলো। আপনি আমাকে ভালো থাকতে শেখালেন,ভালোবাসতে শেখালেন,বেঁচে থাকার জন্য হাজারটা কারণ দেখালেন। একসময় আমার বাঁচতে ইচ্ছে হলো। আমার আপনাকে নিজের করে পাওয়ার লোভ হতে লাগলো। সব ভুলে আপনার সাথে নিজেকে জড়াতে লাগলাম আমি।
সবকিছুই ঠিক ছিলো। কিন্তু বিয়ের কিছুক্ষণ পরেই আমার প্রাক্তনের ফোন পেলাম। প্রাক্তন বলাটা ঠিক হবে কিনা জানি না। কারণ যে মানুষটা আমার দেহটাকে ভোগ করার জন্য আমার সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক করেছিলো। ভালোবাসার মানুষের সাথে কি এরকম করা যায়? আমার জানা নেই,তবে ভালোবাসার নাম নিয়ে সে আমার সাথে এমন কিছু করেছে। ফোন করে যখন বলল,আমাকে তাঁর কাছে যেতে হবে,তাঁর সাথে রাত থাকতে হবে। সে এতোদিন পর আমাকে এমন প্রস্তাব করে বসবে আমি কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। তবে করেছে। আমি তাকে অনেক বুঝিয়েছি,কিন্তু সে আমার কথা শুনেনি। আমার সাথে তাঁর কিছু অন্তরঙ্গ ভিডিও ছিলো,যেগুলো সে আমার অজান্তেই তাঁর কাছে রেখে দিয়েছিলো। আমাকে হুমকি দিতে লাগলো,ভয় দেখালো। আমি যদি তাঁর কথা না শুনি তাহলে ভিডিও গুলো সে আপনাকে দেখাবে। আপনি একটা সত্য কথা বলবেন? ওই গুলো দেখার পর কি আমাকে মেনে নিতেন? নিতেন না। আপনি কেনো পৃথিবীর কোনো পুরুষই আমাকে মেনে নিতো না। তাই আমার মনে হলো আমার বেঁচে থাকার মতো কোনো পথ খোলা নেই। আমি চাইলে আপনাকে তাঁর পরিচয়টা দিয়ে যেতে পারতাম। যে মানুষটা আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী সে মানুষটাও শাস্তি পাক। কিন্তু আমি চাইনি আমার কারণে আপনি কোনো ঝামেলায় পড়েন। মৃত্যুর আগে একজন মানুষকে শুধু জানিয়েছি। সে হলো আমার মৃত্যুর কারণ যে। সে জানবে আমি মৃত্যুর পরেও তাকে ঘৃণা করবো,তাঁর কারণেই আমি বাঁচতে পারিনি। হয়তো সে আমার মৃত্যুর কারণে নিজেকে দোষ দিবে,অনুতপ্ত হবে কিংবা হবে না। তবে আমি তাকে সবার সামনে খারাপ ভাবে প্রকাশ করে যেতে পারি না। কারণ এসবের পেছনে আমারও যে ভুল আছে। আপনি হয়তো ভাবছেন,আমি কেনো আপনাকে এসব বলে গেলাম। আমি চাই আমার মৃত্যুর কারণটা কেউ একজন জানুক। কেউ একজন জানুক অপবিত্র একটা মেয়ে হয়েও একজন মানুষকে সম্পূর্ণ বিশুদ্ধতার সাথে ভালোবাসতে চেয়েছিলো,যে ভালোবাসার মাঝে কোনো ফাক ছিলো না,কোনো ছলনা ছিলো না। আমাকে ক্ষমা করবেন,আমার জীবনটা মিথ্যা হলেও আপনার প্রতি আমার ভালোবাসাটা মিথ্যে ছিলো না। ভালো থাকবেন।
মন খারাপের মাত্রাটা যে এতো বেশি হবে ভাবিনি। যে মানুষটা তাকে মৃত্যুর দুয়ারে ঠেলে দিলো সে মানুষটাকেই সে হাইড করে গেলো। হয়তো মেয়েটা চায়নি তাঁর মৃত্যুর পরে সবাই জানুক সে এমন ছিলো। আমার কার ওপর রাগ করা উচিত জানি না। তবে এই মুহূর্তে নিজের প্রতি অনেক রাগ হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমার কপালটাই খারাপ। তাই হয়তো এমন হয়েছে। তবে এটা ভেবে ভালো লাগছে এর পরে আর কারো চিঠি পড়ে কাঁদতে হবে না,আর কারো চিঠি পড়ে খারাপ লাগা কাজ করবে না। দুঃখগুলো একেবারে পেলে কিছুদিনের জন্য কষ্টে পেতে হয়। তিলে তিলে কষ্ট পাওয়ার থেকে বোধয় একেবারে পাওয়াই ভালো।
দুইদিন পর আমার মনে হলো নুসরাতের মায়ের সাথে একবার দেখা করা উচিত। তাকে রক্ত দেওয়া উচিত। আমার কারণে আর একজন মানুষ মারা যাক এটা আমি কখনোই মেনে নিতে পারবো না। তাই আমি ঠিক করলাম নুসরাতের মাকে রক্ত দিবো। আমি নুসরাতকে না জানিয়েই তাঁর মাকে রক্ত দিলাম। আল্লাহর রহমতে তাঁর মা বেঁচেও গেলো। আগের মতে সুস্থ্য হয়ে গেলো।
লেখকরা কল্পনা করতে ভালোবাসেন। আমারও কল্পনা করতে খুব ভালো লাগছে। কিছুদিন পর নুসরাতের পরিবারের সবাই জানতে পারলো আমিই তাঁর মাকে বাঁচিয়েছি। নিজের শরীর থেকে যতুটকু রক্ত নেওয়া দরকার তাঁর থেকেও বেশি রক্ত দিয়েছি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। নুসরাতের বাবা মা আমার ওপর মুগ্ধ না হয়ে পারলেন না। সেদিনের জন্য ক্ষমা চাইলেন,নুসরাতও আমার কাছে ক্ষমা চাইলো দুঃখ,প্রকাশ করলো। নুসরাতের সাথে আমাকে বিয়ে দিলেন,নুসরাতও খুশি মনে আমাকে মেনে নিলেন। সবকিছুই যেনো সুখময় হয়ে উঠলো।
সাদিয়া মেয়েটাও সেদিনের জন্য সরি বলল। সেদিন সে ইচ্ছে করে ফোন বন্ধ করেনি। সে আমাকে সান্ত্বনা দিলো,আমার ভালো লাগার সঙ্গী হলো। আমি নুসরাতকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগলাম।
কল্পনা আর বাস্তব এক না। কল্পনার মতো বাস্তব কখনো এতো সুন্দর হয় না। বাস্তবে নুসরাতরা কখনো আমিনুল দেরকে মনে রাখে না। বাস্তবে আমিনুল আর নুসরাতদের কখনো মিল হয় না। খারাপ সময়টাতে সঙ্গ দেওয়ার জন্য সাদিয়ারাও আর ফিরে আসে না। খারাপ সময়গুলোতে আমিনুলদের পাশে নুসরাত কিংবা সাদিয়া দেরকে পাশে পাওয়া যায় না।
সমাপ্ত।
Sahin, Santo, Shuvo, Hasibul hasan, Mahim, Jannat islam, Akram ali and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum