- Sadia Rahmanনবাগত
- Posts : 5
স্বর্ণমুদ্রা : 1385
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-26
শুভ বিবাহ
Wed May 26, 2021 2:26 am
- সমস্যা বলুন।
- ম্যাডাম, আমার বউ প্রচুর লজ্জাবতী। আজ অব্দি আমি তার মুখটাই দেখতে পারলাম না।
- যেমন?
- বাসর রাতে তার ঘোমটা তুলতেই আমার পাক্কা একঘণ্টা লেগেছে। তারপর যখন ফাইনালি ঘোমটাটা তুললাম, তখন দেখলাম তার চোখে সানগ্লাস আর মুখে মাস্ক লাগানো। অবস্থাটা বুঝেন একবার।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এনা সরকার কৌতুকী হাসি হাসলো;
- লজ্জা তো তাহলে আপনার বুঝা যাচ্ছে। ঘোমটা তুলতেই একঘণ্টা!
- আরে না ম্যাডাম। ভুল বুঝছেন আপনি। যতবার ঘোমটার দিকে হাত বাড়াই, ততবার সে হাঁচি দেয়। এমন করতে করতেই তো সময় পার হয়ে গেল।
- অফ টপিক; কোভিড টেস্ট করিয়েছিলেন তো?
- তা আর বলতে। সাথে সাথে আমার মাথাটা তার নাকের কাছে নেয়ার পর কর্কশ কণ্ঠে সে বলেছে "ছিঃ কি বিশ্রী গন্ধ, দূরে সরে বসেন"। আমার মাথার স্কাল্প প্রচুর ঘামে। গন্ধও তীব্র। সুতরাং মাস্কের ভেতর থেকেও ঠিকঠাক গন্ধ পেয়েছে মানে নিশ্চিত থাকা যায়।
- কিন্তু এখন তো কোভিডের উপসর্গ পাল্টেছে।
৩২বছর বয়সী ক্লায়েন্ট শফিকুল ইসলাম স্মিত হেসে প্রতিউত্তর করে;
- জ্বী জানি৷ শুধু এই একটা উপসর্গই তার নিজস্বতা ধরে রেখেছে।
এনা মাথা দুলিয়ে সহমত প্রকাশ করে প্রসঙ্গে ফিরে আসে;
- যাই হোক, বিয়ে করেছেন কতদিন হলো?
- প্রায় একমাস।
- আপনাদের কি লাভ ম্যারেজ?
- না ম্যাডাম। বউয়ের মুখটাই এখনো দেখতে পারলাম না। আদর-যত্ন তো পরের কথা। লাভ আর হলো কই! দিনগুলো সব লোকসানের উপর দিয়েই পার হচ্ছে।
- আমি জানতে চাচ্ছি আপনাদের কি সম্পর্কের বিয়ে নাকি পারিবারিকভাবে?
- ম্যাডাম, এ উত্তরটা দেয়া কি আবশ্যক?
- কেন? কোনো সমস্যা?
- না মানে, বিষয়টা কিঞ্চিৎ ব্যক্তিগত।
- দেখুন শফিক সাহেব, কাউন্সেলিং এর ক্ষেত্রে আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো জানা জরুরী৷ নয়তো সঠিক পরামর্শ দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া আমরা ক্লায়েন্টের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো সবসময় গোপন রাখি। এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
শফিক কপাল চুলকে বলে;
- কিছু মনে না করলে আমি কি আপনার এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ডটা জানতে পারি?
- অবশ্যই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইকোলজিতে বি.এস.সি কমপ্লিট করার পর ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে এম.এস.সি এবং এম.ফিল ডিগ্রি নিয়েছি।
- এক গ্লাস পানি হবে?
শফিকুল ইসলামের কথা বলার ধরন থেকে শুরু করে পানি খাওয়ার ধরন পর্যন্ত সবকিছু এনা সরকারের কাছে ঘোলাটে মনে হচ্ছে। কিন্তু সে যে পেশায় আছে, এ পেশায় ক্লায়েন্টের চিন্তাচেতনা ও আচরণ পর্যবেক্ষণের সময় ব্যক্তিগত অনুভূতি সরিয়ে রেখে যৌক্তিকভাবে তার মানসিক অবস্থার মূল্যায়ন করতে হয়। তাই এনা তার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে কাজে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে।
শফিক দু'হাত কচলাতে কচলাতে বলে;
- আমি তার রহস্য ভেদ করতে পারি না। সে আমার চেনা না হলেও খুব একটা অচেনা নয় বলে মনে হয়৷ এ আবার কেমন অনুভূতি!
এনা টেবিলের উপর হাত রেখে হালকা ঝুঁকে বসে;
- আপনার স্ত্রী'র বয়স কেমন?
- ২৫+ ।
- আর আপনার সাথে তার আচার-আচরণ?
- অদ্ভূত, মুখে বলে বুঝানো সম্ভব নয়।
- আপনার স্ত্রী'র পরিবারের মধ্যে এমন কেউ আছেন যার দাম্পত্য জীবনের প্রথমদিককার আচার-আচরণ আপনার স্ত্রী'র সাথে মিলে যায়?
- থাকতে পারে। কেন বলুন তো?
- এমন হয়ে থাকলে জেনেটিক কাউন্সেলিং এর দরকার পড়বে। বিয়ের আগে তার সাথে আপনার কখনো কথা হয়নি?
- না। সরাসরি বিয়ে। তাও আবার হুট করে, এক ঝড়-বৃষ্টির রাতে।
- কি করছেন আপনি? আপনার প্রফেশন সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
শফিক স্থির কণ্ঠে উত্তর দেয়;
- আবুল খায়ের গ্রুপে মার্কেটিং অফিসার পদে কাজ করছি।
- আচ্ছা। আপনার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে কিছু বলুন।
- তার আগে আমি আমার এক বন্ধুর সমস্যা আপনার সাথে শেয়ার করতে চাই।
- নিশ্চয়ই। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, ৫০ মিনিট শেষ হতে আর বেশি সময় বাকি নেই।
- এরকম ধরাবাঁধা সময় রাখা কি খুব জরুরী?
এনা মিষ্টি করে হাসলো;
- ধরাবাঁধা সময় হলেও আমরা আমাদের কাজে কোনো ফাঁক রাখি না। প্রথমদিনের সেশনে সবারই এমন মনে হয়। তারপর অবশ্য ঠিক হয়ে যায়। আমার সাথে সহজ হতে যে সময়টুকু আজ আপনার লেগেছে, পরবর্তী সেশনে কিন্তু এ সময়টা বেঁচে যাবে।
- আপনার বুঝানোর ক্ষমতা চমৎকার।
- প্রফেশনাল ইস্যুতে এ ব্যাপারটা বেশ কাজে লাগে। আপনার বন্ধুর সমস্যাটা বলুন এবার৷
- বলছি।
কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে শফিক বলতে শুরু করে;
- তার একজনের সাথে বিয়ের কথাবার্তা চলছে দেড় মাস ধরে। মেয়েটার সাথে আমার বন্ধু দেখা করতে চাচ্ছে, কথা বলতে চাচ্ছে কিন্তু মেয়েটা তার প্রফেশনাল লাইফের ব্যস্ততার কারণে তাকে সময় দিতে পারছে না। ফোনেও তাদের কখনো কথা হয়নি৷ এদিকে সময়ও চলে যাচ্ছে। মেয়েটার ছবি দেখে আমার বন্ধুর খুব পছন্দ হয়ে গেছে বিধায় সে পিছিয়েও আসতে পারছে না। এ অবস্থায় আমার বন্ধুর করণীয় কি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন।
এনা কপালে আঁচড়ে পড়া চুলগুলো গোছানো হাতে সরিয়ে নেয়;
- মেয়েটা যদি একেবারেই সময় দিতে না পারে তাহলে আপনার বন্ধুকে বলুন সরাসরি তার কাজের জায়গায় চলে যেতে৷
শফিক ঠোঁট কামড়ে মিনমিন করে কিছু একটা বলে। এনা জিজ্ঞেস করে;
- কিছু বললেন?
- কই না তো।
- শুনুন শফিক সাহেব, প্রাথমিকভাবে বুঝা যাচ্ছে আপনার আর আপনার স্ত্রী'র মধ্যে এখনো কোনোরূপ বোঝাপড়া তৈরী হয়নি। তাকে আরো সময় দেয়া দরকার আপনার। আর এ সমস্যাগুলোর সমাধান শুধুমাত্র আপনার সাথে কথা বলে বের করা সম্ভব নয়। নেক্সট সেশনে আপনি আপনার স্ত্রীকে সাথে করে নিয়ে আসবেন।
- ঠিক আছে, যদি ঘুম না ভেঙে যায় তাহলে নিয়ে আসবো।
- স্যরি?
- মানে গত একমাস ধরে তার সাথে তো সবসময় আমার স্বপ্নেই দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছে। আপনার কাছে তাকে নিয়ে আসার আগেই যদি আমার ঘুম ভেঙে যায় তাহলে আর কি করে সম্ভব!
এনার হাস্যোজ্জ্বল মুখখানায় আচমকা বিরক্তি ভেসে উঠে;
- এটা কি ধরনের ফাজলামো?
চেম্বারের খোলা জানালার পাশে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এনা সরকার। তার সম্পূর্ণ মনোযোগ এখন বাইরের ব্যস্ত রাস্তাটায়। খানিকটা দূরে দু'পা নামিয়ে চেয়ারে বসে আছে শফিকুল ইসলাম৷ চেয়ারটা এনার দিকে ঘুরানো। খানিকবাদে এনা শফিকের দিকে তাকালো;
- কাজটা আপনি ঠিক করেননি। আসার আগে আমাকে একবার জানানো উচিৎ ছিল আপনার। এটা আমার কাজের জায়গা৷
শফিক বেশ সাবলীলভাবে এর প্রতিউত্তর করলো;
- অথচ একটু আগেই আপনি আমার বন্ধুকে সাজেশন দিলেন...
- সেটা অন্য ব্যাপার।
- উঁহুম, ব্যাপার একই। শুধু দৃষ্টিভঙ্গী আলাদা।
- মায়ের সাথে আজ সকালেও আপনার সাথে দেখা করা নিয়ে একদফা হয়ে গেছে৷ প্রায় প্রতিদিনই হয়। আসলে আমি আরেকটু সময় নিতে চাচ্ছিলাম।
- তা নিন, সমস্যা নেই। কিন্তু একটাবার দেখা করতে কি সমস্যা হচ্ছিলো?
- প্রয়োজন মনে করছিলাম না হয়তো।
- গুরুত্বের অভাব তাহলে। আচ্ছা আমার নামটা কি বড্ড সেকেলে?
- হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
- না মানে, সেকেলে বলেই মনে হয় প্রথমে আমার নাম শুনে আপনি চিনতে পারেননি বা কিছু আন্দাজ করতে পারেননি।
- প্রতিদিন কত ক্লায়েন্ট ডিল করতে হয়। নামের মিল থাকতেই পারে। ক'জনকে সন্দেহ করবো! তাছাড়া বাবা তো কতজনকেই রেফার করেন আমার কাছে৷ তাই কিছু অস্বাভাবিক লাগেনি।
একটু থেমে এনা আবার বললো;
- আমার কাছে আপনার কোনো ছবি দেয়া হয়নি। শুধু বায়োডাটা দেয়া হয়েছিলো। সেটাও ঠিকমতো পড়েছিলাম কিনা মনে পড়ে না।
- কাইন্ডলি আপনি একবার মুখে মাস্ক পরবেন? সাথে সানগ্লাস থাকলে সেটাও৷
- হোয়াট?
- প্লিজ? আই ইনসিস্ট।
এনা আর দ্বিমত করার সুযোগ পেল না। মাস্ক আর সানগ্লাস পরার সাথে সাথে শফিক সাহেব বলে উঠলো;
- একদম মিলে গেছে৷ স্বপ্নে ঘোমটা তুলে আমি ঠিক এই মুখটাই দেখেছিলাম৷ এবং সেদিন ঝড়-বৃষ্টির রাত ছিল, স্পষ্ট মনে আছে আমার। আর কণ্ঠের মিল তো প্রথমেই পেয়ে গেছি।
এনা কিছু না বলে হতভম্ব দৃষ্টি নিয়ে শফিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইলো।
- বাই দ্যা ওয়ে, আপনার ফ্যামিলিতে অতিমাত্রার লাজুক স্বভাবের কেউ নেই তো? থাকলে দেখা যাবে ভবিষ্যতে কোনো এক সময় আজকের দিনটা সত্যি হয়ে আমার জীবনে আবার ফিরে আসবে।
একথা শুনে ফিক করে হেসে দিল এনা।
সে হাসির দিকে তাকিয়ে থেকে শফিক বললো;
- আমি বোধ হয় আপনার চোখের কাজলে ফেঁসে গেছি। আগামী ইদের সেমাইটা আমি আপনার হাতে খেতে চাই৷ সম্ভব?
এনা তৎক্ষনাৎ কোনো উত্তর দিল না।
তা দেখে শফিক জানতে চাইলো;
- আমার আউটলুক কি খুব বেশি এভারেজ? ব্লু টি-শার্টে কিন্তু আমাকে বেশ লাগে৷ হাইটও ঠিকঠাক। চুলে আরেকবার ব্যাকব্রাশ করে নিলে পাত্তা না দিয়ে থাকতে পারবেন না ম্যাডাম। আর লোকে বলে, আমার মধ্যে নাকি একটা ব্যাপার আছে। সে ব্যাপারটা যদি আপনার চোখে পড়ে থাকে তবে আমি শতভাগ আশাবাদী৷
শফিক একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তারপর;
- এমনিতেই আপনার অনেক মূল্যবান সময় নিয়ে নিয়েছি আজ। এর বেশি সময় নিয়ে ফেললে পরেরবার হয়তো আর সুযোগই পাব না। আসছি, আমি আপনার উত্তরের অপেক্ষায় না থাকলেও আপনি আমার প্রশ্নের অপেক্ষায় ঠিকই থাকবেন।
শফিক চেম্বার থেকে বের হয়ে যাবার পরপরই এনা ধাম করে চেয়ারে বসে পড়লো৷ এই কিছুক্ষণে শফিক তার সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে গেছে৷ সে তার দেরিতে বিয়ে করার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারছে না৷ শফিকের সরল স্বীকারোক্তি, চটপটে স্বভাব, মুচকি হাসি, কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে বাঁকা চাহনি এসব কিছু এনাকে প্রতি মূহুর্তে দূর্বল করে দিচ্ছে। কিন্তু এনার পরিকল্পনা যে অন্যরকম ছিল। সবেমাত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে শুরু করেছে। কত ব্যস্ত শিডিউল চলছে তার। আরো কতকিছু গুছানো বাকি, কত কত কোর্স আর ডিগ্রি নেয়া বাকি। সেসব না করেই সে বিয়ের পিঁড়িতে বসে যাবে! আচ্ছা, যাবার আগে তো অন্তত আরেকবার শফিক বিয়ের ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করতে পারতো। করেনি কেন! আরে কি আশ্চর্য! সে দেখি সত্যি সত্যিই শফিকের প্রশ্নের অপেক্ষা করতে শুরু করে দিয়েছে! তাড়াতাড়ি করে মোবাইল হাতে নিয়ে এনা তার মায়ের নাম্বারে কল দিল;
- হ্যালো মা।
- বল, আজও কি ফিরতে দেরি হবে?
- না। একটা অন্য কথা বলার ছিল।
- কি কথা?
এনা চোখ বন্ধ করে গড়গড় করে বলে দিল;
- নেক্সট মান্থ থেকে আমার নতুন কোর্স দুটো নিয়ে আমি অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়বো৷ বিয়ে-শাদিসহ অন্য যা যা কাজ আছে, সব এ মাসেই সেরে ফেলার ব্যবস্থা করো৷ তারপর যদি আর সময় দিতে না পারি, আমার দোষ দিও না কিন্তু।
মায়ের সাথে কথা শেষ করে এনা দু'ঠোঁট ফাঁক করে লম্বা একটা শ্বাস নিলো৷ কেমন আচমকা সবকিছু ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু এমন তো কথা ছিল না। বিয়ের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হুটহাট ঘন্টাখানেকের মধ্যে এনা নিয়ে ফেলবে, এটা তার ধারণার বাইরে ছিল এতদিন। তার বাবা ঠিকই বলেন, জীবনটা সবসময় নিজের হিসেবের মধ্যে চলে না। কখনো কখনো ছকের বাইরে গিয়ে নতুন হিসেবের খাতা খুলে বসতে হয়।
করিডোর পার হতে হতে শফিক তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাফায়েতকে কল করলো। গাজীপুরে রাফায়েতের বিলাসবহুল আকর্ষণীয় একটা রিসোর্ট আছে। ওপাশ থেকে রাফায়েত কল রিসিভ করতেই শফিক তাকে জানালো;
- তোর রিসোর্টে আমার হানিমুনের বুকিংটা নিয়ে রাখ তো। আচ্ছা শোন, ফোনে কথা বলে হবে না। তুই আজ আমার বাসায় চলে আয়। একসাথে বসে পুরো বিষয়টা ঠিক করতে হবে৷
(সমাপ্ত)
লিখা- Nusrat Khan Ani
- ম্যাডাম, আমার বউ প্রচুর লজ্জাবতী। আজ অব্দি আমি তার মুখটাই দেখতে পারলাম না।
- যেমন?
- বাসর রাতে তার ঘোমটা তুলতেই আমার পাক্কা একঘণ্টা লেগেছে। তারপর যখন ফাইনালি ঘোমটাটা তুললাম, তখন দেখলাম তার চোখে সানগ্লাস আর মুখে মাস্ক লাগানো। অবস্থাটা বুঝেন একবার।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট এনা সরকার কৌতুকী হাসি হাসলো;
- লজ্জা তো তাহলে আপনার বুঝা যাচ্ছে। ঘোমটা তুলতেই একঘণ্টা!
- আরে না ম্যাডাম। ভুল বুঝছেন আপনি। যতবার ঘোমটার দিকে হাত বাড়াই, ততবার সে হাঁচি দেয়। এমন করতে করতেই তো সময় পার হয়ে গেল।
- অফ টপিক; কোভিড টেস্ট করিয়েছিলেন তো?
- তা আর বলতে। সাথে সাথে আমার মাথাটা তার নাকের কাছে নেয়ার পর কর্কশ কণ্ঠে সে বলেছে "ছিঃ কি বিশ্রী গন্ধ, দূরে সরে বসেন"। আমার মাথার স্কাল্প প্রচুর ঘামে। গন্ধও তীব্র। সুতরাং মাস্কের ভেতর থেকেও ঠিকঠাক গন্ধ পেয়েছে মানে নিশ্চিত থাকা যায়।
- কিন্তু এখন তো কোভিডের উপসর্গ পাল্টেছে।
৩২বছর বয়সী ক্লায়েন্ট শফিকুল ইসলাম স্মিত হেসে প্রতিউত্তর করে;
- জ্বী জানি৷ শুধু এই একটা উপসর্গই তার নিজস্বতা ধরে রেখেছে।
এনা মাথা দুলিয়ে সহমত প্রকাশ করে প্রসঙ্গে ফিরে আসে;
- যাই হোক, বিয়ে করেছেন কতদিন হলো?
- প্রায় একমাস।
- আপনাদের কি লাভ ম্যারেজ?
- না ম্যাডাম। বউয়ের মুখটাই এখনো দেখতে পারলাম না। আদর-যত্ন তো পরের কথা। লাভ আর হলো কই! দিনগুলো সব লোকসানের উপর দিয়েই পার হচ্ছে।
- আমি জানতে চাচ্ছি আপনাদের কি সম্পর্কের বিয়ে নাকি পারিবারিকভাবে?
- ম্যাডাম, এ উত্তরটা দেয়া কি আবশ্যক?
- কেন? কোনো সমস্যা?
- না মানে, বিষয়টা কিঞ্চিৎ ব্যক্তিগত।
- দেখুন শফিক সাহেব, কাউন্সেলিং এর ক্ষেত্রে আনুষাঙ্গিক বিষয়গুলো জানা জরুরী৷ নয়তো সঠিক পরামর্শ দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তাছাড়া আমরা ক্লায়েন্টের ব্যক্তিগত বিষয়গুলো সবসময় গোপন রাখি। এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন।
শফিক কপাল চুলকে বলে;
- কিছু মনে না করলে আমি কি আপনার এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ডটা জানতে পারি?
- অবশ্যই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইকোলজিতে বি.এস.সি কমপ্লিট করার পর ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে এম.এস.সি এবং এম.ফিল ডিগ্রি নিয়েছি।
- এক গ্লাস পানি হবে?
শফিকুল ইসলামের কথা বলার ধরন থেকে শুরু করে পানি খাওয়ার ধরন পর্যন্ত সবকিছু এনা সরকারের কাছে ঘোলাটে মনে হচ্ছে। কিন্তু সে যে পেশায় আছে, এ পেশায় ক্লায়েন্টের চিন্তাচেতনা ও আচরণ পর্যবেক্ষণের সময় ব্যক্তিগত অনুভূতি সরিয়ে রেখে যৌক্তিকভাবে তার মানসিক অবস্থার মূল্যায়ন করতে হয়। তাই এনা তার ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে কাজে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে।
শফিক দু'হাত কচলাতে কচলাতে বলে;
- আমি তার রহস্য ভেদ করতে পারি না। সে আমার চেনা না হলেও খুব একটা অচেনা নয় বলে মনে হয়৷ এ আবার কেমন অনুভূতি!
এনা টেবিলের উপর হাত রেখে হালকা ঝুঁকে বসে;
- আপনার স্ত্রী'র বয়স কেমন?
- ২৫+ ।
- আর আপনার সাথে তার আচার-আচরণ?
- অদ্ভূত, মুখে বলে বুঝানো সম্ভব নয়।
- আপনার স্ত্রী'র পরিবারের মধ্যে এমন কেউ আছেন যার দাম্পত্য জীবনের প্রথমদিককার আচার-আচরণ আপনার স্ত্রী'র সাথে মিলে যায়?
- থাকতে পারে। কেন বলুন তো?
- এমন হয়ে থাকলে জেনেটিক কাউন্সেলিং এর দরকার পড়বে। বিয়ের আগে তার সাথে আপনার কখনো কথা হয়নি?
- না। সরাসরি বিয়ে। তাও আবার হুট করে, এক ঝড়-বৃষ্টির রাতে।
- কি করছেন আপনি? আপনার প্রফেশন সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি।
শফিক স্থির কণ্ঠে উত্তর দেয়;
- আবুল খায়ের গ্রুপে মার্কেটিং অফিসার পদে কাজ করছি।
- আচ্ছা। আপনার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড সম্পর্কে কিছু বলুন।
- তার আগে আমি আমার এক বন্ধুর সমস্যা আপনার সাথে শেয়ার করতে চাই।
- নিশ্চয়ই। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, ৫০ মিনিট শেষ হতে আর বেশি সময় বাকি নেই।
- এরকম ধরাবাঁধা সময় রাখা কি খুব জরুরী?
এনা মিষ্টি করে হাসলো;
- ধরাবাঁধা সময় হলেও আমরা আমাদের কাজে কোনো ফাঁক রাখি না। প্রথমদিনের সেশনে সবারই এমন মনে হয়। তারপর অবশ্য ঠিক হয়ে যায়। আমার সাথে সহজ হতে যে সময়টুকু আজ আপনার লেগেছে, পরবর্তী সেশনে কিন্তু এ সময়টা বেঁচে যাবে।
- আপনার বুঝানোর ক্ষমতা চমৎকার।
- প্রফেশনাল ইস্যুতে এ ব্যাপারটা বেশ কাজে লাগে। আপনার বন্ধুর সমস্যাটা বলুন এবার৷
- বলছি।
কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে শফিক বলতে শুরু করে;
- তার একজনের সাথে বিয়ের কথাবার্তা চলছে দেড় মাস ধরে। মেয়েটার সাথে আমার বন্ধু দেখা করতে চাচ্ছে, কথা বলতে চাচ্ছে কিন্তু মেয়েটা তার প্রফেশনাল লাইফের ব্যস্ততার কারণে তাকে সময় দিতে পারছে না। ফোনেও তাদের কখনো কথা হয়নি৷ এদিকে সময়ও চলে যাচ্ছে। মেয়েটার ছবি দেখে আমার বন্ধুর খুব পছন্দ হয়ে গেছে বিধায় সে পিছিয়েও আসতে পারছে না। এ অবস্থায় আমার বন্ধুর করণীয় কি হতে পারে বলে আপনি মনে করেন।
এনা কপালে আঁচড়ে পড়া চুলগুলো গোছানো হাতে সরিয়ে নেয়;
- মেয়েটা যদি একেবারেই সময় দিতে না পারে তাহলে আপনার বন্ধুকে বলুন সরাসরি তার কাজের জায়গায় চলে যেতে৷
শফিক ঠোঁট কামড়ে মিনমিন করে কিছু একটা বলে। এনা জিজ্ঞেস করে;
- কিছু বললেন?
- কই না তো।
- শুনুন শফিক সাহেব, প্রাথমিকভাবে বুঝা যাচ্ছে আপনার আর আপনার স্ত্রী'র মধ্যে এখনো কোনোরূপ বোঝাপড়া তৈরী হয়নি। তাকে আরো সময় দেয়া দরকার আপনার। আর এ সমস্যাগুলোর সমাধান শুধুমাত্র আপনার সাথে কথা বলে বের করা সম্ভব নয়। নেক্সট সেশনে আপনি আপনার স্ত্রীকে সাথে করে নিয়ে আসবেন।
- ঠিক আছে, যদি ঘুম না ভেঙে যায় তাহলে নিয়ে আসবো।
- স্যরি?
- মানে গত একমাস ধরে তার সাথে তো সবসময় আমার স্বপ্নেই দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছে। আপনার কাছে তাকে নিয়ে আসার আগেই যদি আমার ঘুম ভেঙে যায় তাহলে আর কি করে সম্ভব!
এনার হাস্যোজ্জ্বল মুখখানায় আচমকা বিরক্তি ভেসে উঠে;
- এটা কি ধরনের ফাজলামো?
চেম্বারের খোলা জানালার পাশে বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এনা সরকার। তার সম্পূর্ণ মনোযোগ এখন বাইরের ব্যস্ত রাস্তাটায়। খানিকটা দূরে দু'পা নামিয়ে চেয়ারে বসে আছে শফিকুল ইসলাম৷ চেয়ারটা এনার দিকে ঘুরানো। খানিকবাদে এনা শফিকের দিকে তাকালো;
- কাজটা আপনি ঠিক করেননি। আসার আগে আমাকে একবার জানানো উচিৎ ছিল আপনার। এটা আমার কাজের জায়গা৷
শফিক বেশ সাবলীলভাবে এর প্রতিউত্তর করলো;
- অথচ একটু আগেই আপনি আমার বন্ধুকে সাজেশন দিলেন...
- সেটা অন্য ব্যাপার।
- উঁহুম, ব্যাপার একই। শুধু দৃষ্টিভঙ্গী আলাদা।
- মায়ের সাথে আজ সকালেও আপনার সাথে দেখা করা নিয়ে একদফা হয়ে গেছে৷ প্রায় প্রতিদিনই হয়। আসলে আমি আরেকটু সময় নিতে চাচ্ছিলাম।
- তা নিন, সমস্যা নেই। কিন্তু একটাবার দেখা করতে কি সমস্যা হচ্ছিলো?
- প্রয়োজন মনে করছিলাম না হয়তো।
- গুরুত্বের অভাব তাহলে। আচ্ছা আমার নামটা কি বড্ড সেকেলে?
- হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
- না মানে, সেকেলে বলেই মনে হয় প্রথমে আমার নাম শুনে আপনি চিনতে পারেননি বা কিছু আন্দাজ করতে পারেননি।
- প্রতিদিন কত ক্লায়েন্ট ডিল করতে হয়। নামের মিল থাকতেই পারে। ক'জনকে সন্দেহ করবো! তাছাড়া বাবা তো কতজনকেই রেফার করেন আমার কাছে৷ তাই কিছু অস্বাভাবিক লাগেনি।
একটু থেমে এনা আবার বললো;
- আমার কাছে আপনার কোনো ছবি দেয়া হয়নি। শুধু বায়োডাটা দেয়া হয়েছিলো। সেটাও ঠিকমতো পড়েছিলাম কিনা মনে পড়ে না।
- কাইন্ডলি আপনি একবার মুখে মাস্ক পরবেন? সাথে সানগ্লাস থাকলে সেটাও৷
- হোয়াট?
- প্লিজ? আই ইনসিস্ট।
এনা আর দ্বিমত করার সুযোগ পেল না। মাস্ক আর সানগ্লাস পরার সাথে সাথে শফিক সাহেব বলে উঠলো;
- একদম মিলে গেছে৷ স্বপ্নে ঘোমটা তুলে আমি ঠিক এই মুখটাই দেখেছিলাম৷ এবং সেদিন ঝড়-বৃষ্টির রাত ছিল, স্পষ্ট মনে আছে আমার। আর কণ্ঠের মিল তো প্রথমেই পেয়ে গেছি।
এনা কিছু না বলে হতভম্ব দৃষ্টি নিয়ে শফিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইলো।
- বাই দ্যা ওয়ে, আপনার ফ্যামিলিতে অতিমাত্রার লাজুক স্বভাবের কেউ নেই তো? থাকলে দেখা যাবে ভবিষ্যতে কোনো এক সময় আজকের দিনটা সত্যি হয়ে আমার জীবনে আবার ফিরে আসবে।
একথা শুনে ফিক করে হেসে দিল এনা।
সে হাসির দিকে তাকিয়ে থেকে শফিক বললো;
- আমি বোধ হয় আপনার চোখের কাজলে ফেঁসে গেছি। আগামী ইদের সেমাইটা আমি আপনার হাতে খেতে চাই৷ সম্ভব?
এনা তৎক্ষনাৎ কোনো উত্তর দিল না।
তা দেখে শফিক জানতে চাইলো;
- আমার আউটলুক কি খুব বেশি এভারেজ? ব্লু টি-শার্টে কিন্তু আমাকে বেশ লাগে৷ হাইটও ঠিকঠাক। চুলে আরেকবার ব্যাকব্রাশ করে নিলে পাত্তা না দিয়ে থাকতে পারবেন না ম্যাডাম। আর লোকে বলে, আমার মধ্যে নাকি একটা ব্যাপার আছে। সে ব্যাপারটা যদি আপনার চোখে পড়ে থাকে তবে আমি শতভাগ আশাবাদী৷
শফিক একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে তারপর;
- এমনিতেই আপনার অনেক মূল্যবান সময় নিয়ে নিয়েছি আজ। এর বেশি সময় নিয়ে ফেললে পরেরবার হয়তো আর সুযোগই পাব না। আসছি, আমি আপনার উত্তরের অপেক্ষায় না থাকলেও আপনি আমার প্রশ্নের অপেক্ষায় ঠিকই থাকবেন।
শফিক চেম্বার থেকে বের হয়ে যাবার পরপরই এনা ধাম করে চেয়ারে বসে পড়লো৷ এই কিছুক্ষণে শফিক তার সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে গেছে৷ সে তার দেরিতে বিয়ে করার সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারছে না৷ শফিকের সরল স্বীকারোক্তি, চটপটে স্বভাব, মুচকি হাসি, কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে বাঁকা চাহনি এসব কিছু এনাকে প্রতি মূহুর্তে দূর্বল করে দিচ্ছে। কিন্তু এনার পরিকল্পনা যে অন্যরকম ছিল। সবেমাত্র ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে শুরু করেছে। কত ব্যস্ত শিডিউল চলছে তার। আরো কতকিছু গুছানো বাকি, কত কত কোর্স আর ডিগ্রি নেয়া বাকি। সেসব না করেই সে বিয়ের পিঁড়িতে বসে যাবে! আচ্ছা, যাবার আগে তো অন্তত আরেকবার শফিক বিয়ের ব্যাপারে তাকে জিজ্ঞেস করতে পারতো। করেনি কেন! আরে কি আশ্চর্য! সে দেখি সত্যি সত্যিই শফিকের প্রশ্নের অপেক্ষা করতে শুরু করে দিয়েছে! তাড়াতাড়ি করে মোবাইল হাতে নিয়ে এনা তার মায়ের নাম্বারে কল দিল;
- হ্যালো মা।
- বল, আজও কি ফিরতে দেরি হবে?
- না। একটা অন্য কথা বলার ছিল।
- কি কথা?
এনা চোখ বন্ধ করে গড়গড় করে বলে দিল;
- নেক্সট মান্থ থেকে আমার নতুন কোর্স দুটো নিয়ে আমি অনেক ব্যস্ত হয়ে পড়বো৷ বিয়ে-শাদিসহ অন্য যা যা কাজ আছে, সব এ মাসেই সেরে ফেলার ব্যবস্থা করো৷ তারপর যদি আর সময় দিতে না পারি, আমার দোষ দিও না কিন্তু।
মায়ের সাথে কথা শেষ করে এনা দু'ঠোঁট ফাঁক করে লম্বা একটা শ্বাস নিলো৷ কেমন আচমকা সবকিছু ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু এমন তো কথা ছিল না। বিয়ের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হুটহাট ঘন্টাখানেকের মধ্যে এনা নিয়ে ফেলবে, এটা তার ধারণার বাইরে ছিল এতদিন। তার বাবা ঠিকই বলেন, জীবনটা সবসময় নিজের হিসেবের মধ্যে চলে না। কখনো কখনো ছকের বাইরে গিয়ে নতুন হিসেবের খাতা খুলে বসতে হয়।
করিডোর পার হতে হতে শফিক তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাফায়েতকে কল করলো। গাজীপুরে রাফায়েতের বিলাসবহুল আকর্ষণীয় একটা রিসোর্ট আছে। ওপাশ থেকে রাফায়েত কল রিসিভ করতেই শফিক তাকে জানালো;
- তোর রিসোর্টে আমার হানিমুনের বুকিংটা নিয়ে রাখ তো। আচ্ছা শোন, ফোনে কথা বলে হবে না। তুই আজ আমার বাসায় চলে আয়। একসাথে বসে পুরো বিষয়টা ঠিক করতে হবে৷
(সমাপ্ত)
লিখা- Nusrat Khan Ani
Sahin, Santo, Shuvo, Hasibul hasan, Mahmud, Akash, Mahim and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum