- Onu kothaশুকতারা
- Posts : 56
স্বর্ণমুদ্রা : 1526
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-26
আত্মদহন
Wed May 26, 2021 2:40 am
(গল্প)
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
"ফকিন্নির জাত ! মেয়েকে আমার ছেলের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছেন! আপনার মেয়ে আমার বাসার কাজের লোকেরও উপযুক্ত নয়!"
'"আর কুত্তার বাচ্চা তোকে বড় করেছি এসব দেখার জন্য, এই মেয়ে বিয়ের জন্য! তোর মতো কুলাঙ্গারকে আমি পেটে ধরেছি, আমার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে তোর কারণে! "
"আমরা লেলিয়ে দিইনি! আপনার ছেলেই আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে!" অন্য একজন মহিলার কন্ঠ।
অফিস থেকে ফিরে বাসার সিঁড়িতে পা দিয়ে আমার ফ্ল্যাটে যাওয়া অব্দি দু'তলায় দুই মহিলার এমন চেঁচামেচি শুনে বুঝলাম অবস্থা গুরুতর! ভাষার খিস্তি শুনে ভদ্রমহিলা বলার কোন অবকাশ নেই! আমি যতদূর জানি এই ফ্ল্যাটের ভাড়াটে মতিন সাহেবের মেয়ের বিয়ে হয়েছে মাসতিনেক আগে। অনুমান করলাম মেয়ের বিয়ে সংক্রান্ত ঝামেলা নিয়েই এই লাগামছাড়া বাতচিত!
আমি দু'তলা অতিক্রম করতে করতেই দরজা খুলে স্থূলকায় প্রৌঢ়া একজন মহিলা বের হয়ে জিজ্ঞাস করলেন বাবা, এই ফ্ল্যাটের মালিক কে? একটু উনার সাথে দেখা করতে চাই। আমি জানি ফ্ল্যাটের মালিক ডা. মোস্তফা সাহেব থাকেন বিদেশে! মহিলা খুবই উত্তেজিত, তার ঘর্মাক্ত চেহারা দেখে মনে হল এখনি মাথা ঘুরে পড়ে অসুস্থ হয়ে যাবেন। বললাম, আন্টি আপনি আমার বাসায় আসুন, উনি আমার সাথে আসলেন।
বসার ঘরে বসতে দিয়ে ঠাণ্ডা পানি ও হালকা নাস্তা দিলাম আর জিজ্ঞাস করলাম যদি কিছু মনে না করেন তবে আমাকে বলতে পারেন কি সমস্যা হয়েছে আন্টি ? একই বিল্ডিংয়ে থাকি বলে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য আমি ইচ্ছা করেই জানতে চাইলাম।
উনি বলতে শুরু করলেন, "আমার ছেলে কয়েকমাস ধরে বাসায় অনিয়মিত! প্রায় রাতেই বাসায় থাকে না! জিজ্ঞাস করলে বলে বন্ধুর বাসায় থাকে ! সত্যি কথা কি বলবো বাবা আমার ছেলে একটু চাল্লু টাইপের! এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল বছর তিনেক আগে, দেয়নি! পড়াশুনাও আর করে না! কেউ কেউ বলছিল বিয়ে করেছে, মিরপুরে শ্বশুরের বাসায় থাকে ! ছেলের বিয়ের কথা শুনে আমার আর ওর বাবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে! ঘটনার সত্যতা যাচাই ও খোঁজ নেয়ার জন্য ছেলের পিছনে লোক লাগিয়ে তার গতিবিধি জেনে তাকে এই বাসায় হাতেনাতে ধরেছি এখন! ছেলেকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না আমরা!
কিছুক্ষণ পর মহিলা কিছুটা শান্ত হয়, বুঝতে পারলাম উনি সহজে বিদায় হবেন না! আমিও চাইছিলাম উনি একটু বিশ্রাম নিন! হাজার হোক মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত একজন মা তো! উনি বললেন এই ছেলেকে ত্যাজ্যপুত্র করবেন! আমি বললাম, ত্যাজ্যপুত্র করার কোন আইন এখন নেই। কথা প্রসঙ্গে জানলাম উনার স্বামী সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসে চাকুরী এবং সেই সাথে ব্যবসা করেন, ছেলেও মাঝে মাঝে সাহায্য করে। টাকা পয়সার অভাব নেই। ঢাকায় কয়েক জায়গায় বাড়ি আছে, থাকেন মোহাম্মদপুরে নিজস্ব বাসায় । আরেকটি ছেলে আছে এইচএসসি ১ম বর্ষে পড়ে। বড় ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে বড় ঘরে বিয়ে করানোর ইচ্ছা ছিল! কিন্তুু ছেলে সব আশায় জল ঢেলে দিয়েছে!
আমি বললাম, আন্টি আপনার ছেলে যেহেতু পড়াশুনা বেশীদূর করেনি আর ভালো কিছু করেও না উপরন্তুু নিজের পছন্দেই বিয়ে করেছে তাহলে তাদেরকে মেনে নিয়ে একসাথে থাকুন, ছেলেকে ব্যবসা-বাণিজ্য কিছু একটা ধরিয়ে দিন, আপনারও তো বয়স হয়েছে, সঙ্গীসাথী প্রয়োজন! বিষয়টা সহজভাবে দেখলে মনে হয় সবাই ভালো থাকবেন! তাছাড়া মেয়েটি তো অনার্স করছে একটি কলেজে, দেখতেও খারাপ না । আমি যতদূর জানি, মেয়ের বাবা একটি পত্রিকা অফিসে একাউন্টসে চাকুরী করে। ছেলে যদি এই বিয়েতে সুখী হয় তাতে আপনাদের সমস্যা কোথায়? সম্পদ একটু কম থাকা তো দোষের কিছু নয়!
আমি কয়েকবার ছেলেটিকে দেখেছি, একটু রাফ এন্ড টাফ লেগেছে আমার কাছে! তারপরও মনে হল যেহেতু জেনেশুনেই সে বিয়ে করেছে সেক্ষেত্রে তার বাবা-মায়ের উচিৎ তাকে একটা সুযোগ দেয়া! স্নেহমমতা দিয়ে ছেলে আর তার স্ত্রীকে সংসার করার সুযোগ দেয়া। এতে করে ছেলের মাঝে স্থিরতা ও দায়িত্ববোধ জন্মানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।
কিন্তুু আন্টির মতিগতি দেখে বুঝা গেল বিদ্যা-শিক্ষার দৌড়ে পিছিয়ে থাকলেও ধন -সম্পদের গরীমা তার প্রবল! তিনি কোনভাবেই মধ্যবিত্ত, ভাড়া বাসায় থাকা পরিবারের মেয়েকে বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিতে ইচ্ছুক নয়! যেভাবেই হোক ছেলের বউকে ডিভোর্স করাতেই হবে! না হলে ছেলেকে বাড়িতে উঠতে দিবেন না এবং সম্পদ থেকে বঞ্চিত করবেন!
আমি উনার কথায় অবাক হলাম ভেবে, এই ডিভোর্সে উনার কি লাভ হবে! বরং ছেলের মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতি হতে পারে। ছেলেকে সঠিক শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে স্পষ্টতই উনার ঘাটতি ছিল! টাকাপয়সা ও সম্পদের প্রাচুর্য্যে ভালো থাকার অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছেন উনি! সবকিছুই মূল্যায়ন করেন বিত্তের ভিত্তিতে! ভেবেছেন ছেলেকে ধনী লোকের মেয়ে বিয়ে করালেই উনি ও তার ছেলে ভালো থাকবেন! আর বেশী কিছু বলার রুচি পাইনি আমি। অবশেষে আমার আতিথেয়তার প্রশংসা করে মোবাইল নম্বর নিয়ে বিদায় নিলেন।
মাসখানেক পর আন্টির ফোন, শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর দুঃখভারাক্রান্ত কন্ঠে বললেন বাবা, ছেলেকে তো ফেরাতে পারছি না!
ইনিয়ে বিনিয়ে আন্টি যা বুঝানোর চেষ্টা করলেন তার সারমর্ম হচ্ছে তিনি কোনভাবেই ছেলের সাথে মেয়েটির ডিভোর্স করাতে পারছেন না! বিরামহীন দহনে দগ্ধ তিনি! আমিও ভাবি আর মনেমনে বলি "ছেলে তুই তোর মতোই থাক্! মায়ের কাছে একটু দেরীতে ফিরলেও বোধ হয় চলবে!"
মোঃ নাসির উদ্দিন
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
"ফকিন্নির জাত ! মেয়েকে আমার ছেলের পিছনে লেলিয়ে দিয়েছেন! আপনার মেয়ে আমার বাসার কাজের লোকেরও উপযুক্ত নয়!"
'"আর কুত্তার বাচ্চা তোকে বড় করেছি এসব দেখার জন্য, এই মেয়ে বিয়ের জন্য! তোর মতো কুলাঙ্গারকে আমি পেটে ধরেছি, আমার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে তোর কারণে! "
"আমরা লেলিয়ে দিইনি! আপনার ছেলেই আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে!" অন্য একজন মহিলার কন্ঠ।
অফিস থেকে ফিরে বাসার সিঁড়িতে পা দিয়ে আমার ফ্ল্যাটে যাওয়া অব্দি দু'তলায় দুই মহিলার এমন চেঁচামেচি শুনে বুঝলাম অবস্থা গুরুতর! ভাষার খিস্তি শুনে ভদ্রমহিলা বলার কোন অবকাশ নেই! আমি যতদূর জানি এই ফ্ল্যাটের ভাড়াটে মতিন সাহেবের মেয়ের বিয়ে হয়েছে মাসতিনেক আগে। অনুমান করলাম মেয়ের বিয়ে সংক্রান্ত ঝামেলা নিয়েই এই লাগামছাড়া বাতচিত!
আমি দু'তলা অতিক্রম করতে করতেই দরজা খুলে স্থূলকায় প্রৌঢ়া একজন মহিলা বের হয়ে জিজ্ঞাস করলেন বাবা, এই ফ্ল্যাটের মালিক কে? একটু উনার সাথে দেখা করতে চাই। আমি জানি ফ্ল্যাটের মালিক ডা. মোস্তফা সাহেব থাকেন বিদেশে! মহিলা খুবই উত্তেজিত, তার ঘর্মাক্ত চেহারা দেখে মনে হল এখনি মাথা ঘুরে পড়ে অসুস্থ হয়ে যাবেন। বললাম, আন্টি আপনি আমার বাসায় আসুন, উনি আমার সাথে আসলেন।
বসার ঘরে বসতে দিয়ে ঠাণ্ডা পানি ও হালকা নাস্তা দিলাম আর জিজ্ঞাস করলাম যদি কিছু মনে না করেন তবে আমাকে বলতে পারেন কি সমস্যা হয়েছে আন্টি ? একই বিল্ডিংয়ে থাকি বলে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য আমি ইচ্ছা করেই জানতে চাইলাম।
উনি বলতে শুরু করলেন, "আমার ছেলে কয়েকমাস ধরে বাসায় অনিয়মিত! প্রায় রাতেই বাসায় থাকে না! জিজ্ঞাস করলে বলে বন্ধুর বাসায় থাকে ! সত্যি কথা কি বলবো বাবা আমার ছেলে একটু চাল্লু টাইপের! এইচএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা ছিল বছর তিনেক আগে, দেয়নি! পড়াশুনাও আর করে না! কেউ কেউ বলছিল বিয়ে করেছে, মিরপুরে শ্বশুরের বাসায় থাকে ! ছেলের বিয়ের কথা শুনে আমার আর ওর বাবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে! ঘটনার সত্যতা যাচাই ও খোঁজ নেয়ার জন্য ছেলের পিছনে লোক লাগিয়ে তার গতিবিধি জেনে তাকে এই বাসায় হাতেনাতে ধরেছি এখন! ছেলেকে কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না আমরা!
কিছুক্ষণ পর মহিলা কিছুটা শান্ত হয়, বুঝতে পারলাম উনি সহজে বিদায় হবেন না! আমিও চাইছিলাম উনি একটু বিশ্রাম নিন! হাজার হোক মানসিক আঘাতপ্রাপ্ত একজন মা তো! উনি বললেন এই ছেলেকে ত্যাজ্যপুত্র করবেন! আমি বললাম, ত্যাজ্যপুত্র করার কোন আইন এখন নেই। কথা প্রসঙ্গে জানলাম উনার স্বামী সাব-রেজিষ্ট্রী অফিসে চাকুরী এবং সেই সাথে ব্যবসা করেন, ছেলেও মাঝে মাঝে সাহায্য করে। টাকা পয়সার অভাব নেই। ঢাকায় কয়েক জায়গায় বাড়ি আছে, থাকেন মোহাম্মদপুরে নিজস্ব বাসায় । আরেকটি ছেলে আছে এইচএসসি ১ম বর্ষে পড়ে। বড় ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়ে প্রতিষ্ঠিত করে বড় ঘরে বিয়ে করানোর ইচ্ছা ছিল! কিন্তুু ছেলে সব আশায় জল ঢেলে দিয়েছে!
আমি বললাম, আন্টি আপনার ছেলে যেহেতু পড়াশুনা বেশীদূর করেনি আর ভালো কিছু করেও না উপরন্তুু নিজের পছন্দেই বিয়ে করেছে তাহলে তাদেরকে মেনে নিয়ে একসাথে থাকুন, ছেলেকে ব্যবসা-বাণিজ্য কিছু একটা ধরিয়ে দিন, আপনারও তো বয়স হয়েছে, সঙ্গীসাথী প্রয়োজন! বিষয়টা সহজভাবে দেখলে মনে হয় সবাই ভালো থাকবেন! তাছাড়া মেয়েটি তো অনার্স করছে একটি কলেজে, দেখতেও খারাপ না । আমি যতদূর জানি, মেয়ের বাবা একটি পত্রিকা অফিসে একাউন্টসে চাকুরী করে। ছেলে যদি এই বিয়েতে সুখী হয় তাতে আপনাদের সমস্যা কোথায়? সম্পদ একটু কম থাকা তো দোষের কিছু নয়!
আমি কয়েকবার ছেলেটিকে দেখেছি, একটু রাফ এন্ড টাফ লেগেছে আমার কাছে! তারপরও মনে হল যেহেতু জেনেশুনেই সে বিয়ে করেছে সেক্ষেত্রে তার বাবা-মায়ের উচিৎ তাকে একটা সুযোগ দেয়া! স্নেহমমতা দিয়ে ছেলে আর তার স্ত্রীকে সংসার করার সুযোগ দেয়া। এতে করে ছেলের মাঝে স্থিরতা ও দায়িত্ববোধ জন্মানোর সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে।
কিন্তুু আন্টির মতিগতি দেখে বুঝা গেল বিদ্যা-শিক্ষার দৌড়ে পিছিয়ে থাকলেও ধন -সম্পদের গরীমা তার প্রবল! তিনি কোনভাবেই মধ্যবিত্ত, ভাড়া বাসায় থাকা পরিবারের মেয়েকে বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিতে ইচ্ছুক নয়! যেভাবেই হোক ছেলের বউকে ডিভোর্স করাতেই হবে! না হলে ছেলেকে বাড়িতে উঠতে দিবেন না এবং সম্পদ থেকে বঞ্চিত করবেন!
আমি উনার কথায় অবাক হলাম ভেবে, এই ডিভোর্সে উনার কি লাভ হবে! বরং ছেলের মনস্তাত্ত্বিক ক্ষতি হতে পারে। ছেলেকে সঠিক শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে স্পষ্টতই উনার ঘাটতি ছিল! টাকাপয়সা ও সম্পদের প্রাচুর্য্যে ভালো থাকার অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছেন উনি! সবকিছুই মূল্যায়ন করেন বিত্তের ভিত্তিতে! ভেবেছেন ছেলেকে ধনী লোকের মেয়ে বিয়ে করালেই উনি ও তার ছেলে ভালো থাকবেন! আর বেশী কিছু বলার রুচি পাইনি আমি। অবশেষে আমার আতিথেয়তার প্রশংসা করে মোবাইল নম্বর নিয়ে বিদায় নিলেন।
মাসখানেক পর আন্টির ফোন, শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর দুঃখভারাক্রান্ত কন্ঠে বললেন বাবা, ছেলেকে তো ফেরাতে পারছি না!
ইনিয়ে বিনিয়ে আন্টি যা বুঝানোর চেষ্টা করলেন তার সারমর্ম হচ্ছে তিনি কোনভাবেই ছেলের সাথে মেয়েটির ডিভোর্স করাতে পারছেন না! বিরামহীন দহনে দগ্ধ তিনি! আমিও ভাবি আর মনেমনে বলি "ছেলে তুই তোর মতোই থাক্! মায়ের কাছে একটু দেরীতে ফিরলেও বোধ হয় চলবে!"
মোঃ নাসির উদ্দিন
Sahin, Santo, Shuvo, Hasibul hasan, Mr kiddo, Mahmud, Akash and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum