সাদা কাগজ
Would you like to react to this message? Create an account in a few clicks or log in to continue.

Go down
avatar
সাদিক হামিদ
নবাগত
নবাগত
Posts : 2
স্বর্ণমুদ্রা : 1335
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-27

স্বৃতিচারণ- মাতাল হাওয়া  Empty স্বৃতিচারণ- মাতাল হাওয়া

Thu May 27, 2021 12:28 am
ছাত্রলীগের নেতাগোছের একজন রাত দশটায় আমার ঘরে উপস্থিত। কথাবার্তা, হাভভাব খুবই উগ্র।

- হুমায়ূন আপনার নাম?

- জি।

- ছাত্র ইউনিয়ন করেন?

- জি-না।

- তাহলে কী করেন?

- পড়াশোনা করি।

- হাত দেখে টাকা নেন?

- হাত দেখি, তবে টাকা নেই না।

- আমার হাত দেখে দিন।

- রাত দশটার পর আমি হাত দেখি না।

- কেন?

আমি বললাম, হাত দেখায় আমার যে গুরু তাঁর নাম বেনহাম। উনি রাতে হাত দেখা নিষেধ করে গেছেন।

- বেনোম কোন দেশের?

- জার্মানির।

- উনি আপনার গুরু হলেন কীভাবে?

- তাঁর বই পড়ে হাত দেখা শিখেছি। কাজেই তিনি আমার গুরু।

- আপনি মানুষকে হিপনোটাইজ করতে পারেন বলে শুনেছি। এটা কি সত্যি?

- সত্যি।

- আমাকে হিপনোটাইজ করুন। যদি করতে না পারেন আপনার খবর আছে।

আমি মহাবিপদে পড়লাম। হিপনোটাইজের আমি কিছুই জানি না। একজন ম্যাজিশিয়ানকে স্টেজে হিপনোটাইজ করতে দেখেছি। পুরোটাই আমার কাছে ভাওতাবাজি মনে হয়েছে। ম্যাজিশিয়ান দর্শকদের ভেতর থেকে একজনকে চেয়ারে বসালেন। তার চোখের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ হাত দিয়ে পাস দিলেন। তারপর বললেন, এখন হাজার চেষ্টা করলেও আপনি আর চেয়ার থেকে উঠতে পারবেন না। ভদ্রলোক অনেক চেষ্টা করলেন, চেয়ার থেকে উঠতে পারলেন না। দর্শকদের মধ্যে হাসির ফোয়ারা। আমি নিশ্চিত, যাকে মঞ্চে ডাকা হয়েছে তিনি ম্যাজিশিয়ানের নিজের লোক। হিপনোটাইজ হবার ভান করেছে। ম্যাজিকের ভাষায় এদের বলে ‘কনফিডারেট’।

ছাত্রলীগের পাণ্ডা আমার সামনে চেয়ারে বসা। তার চোখমুখ চোয়াল সবই শক্ত। সে খড়খড়ে গলায় বলল, কই শুরু করেন।

আমি বাধ্য হয়ে স্টেজে দেখা ম্যাজিশিয়ান যা যা করেছিলেন তা করতে শুরু করলাম। একপর্যায়ে বললাম, এখন আপনি চেয়ারের সঙ্গে আটকে গেছেন। হাজার চেষ্টা করলেও চেয়ার থেকে উঠতে পারবেন না।

জগতে অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে, আরেকটি ঘটল। ছাত্রলীগের পাণ্ডা চেয়ার থেকে উঠতে পারে না। সে হতভম্ব। তার সঙ্গের সাঙ্গপাঙ্গরা হতভম্ব। সবচেয়ে হতভম্ব আমি নিজে।

- যথেষ্ট হয়েছে, এখন ঠিক করে দিন।

আমি বললাম, এখন আমি দু’বার হাততালি দিব। হাততালির শব্দ শোনার পর উঠতে পারবেন।

দু’বার হাততালি দিলাম, তারপরেও কিছু হলো না। আমি ভয়ে অস্থির হয়ে পড়লাম। কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না। বিপদ এইদিক দিয়ে আসবে তা কখনো ভাবিনি।

শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো, তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হবে। তার শরীর চেয়ারে বসা অবস্থায় বেঁকে লোহার মতো শক্ত হয়ে গেছে। সেই অবস্থাতেই চ্যাংদোলা করে তাকে পাঁচতলা থেকে নামানো হলো। আমাকে অপরাধী হিসেবে সঙ্গে যেতে হলো। মহসিন হলের গেটে বিরাট জটলা–এক স্যার বেঁকে গেছে।

ডাক্তাররা বললেন, যে-কোনো কারণেই হোক শরীরের কিছু কিছু মাসল শক্ত হয়ে গেছে। তারা মাসল রিলাক্স করার ইনজেকশন দিলেন। আমি একমনে দোয়া ইউনুস পড়তে লাগলাম।

--------- হুমায়ন আহমেদ

Sahin, Santo, Shuvo, Hasibul hasan, Nasim, Mr.twist, Mr kiddo and লেখাটি পছন্দ করেছে

Back to top
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum