- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
টিভিতে খবর পাট হচ্ছে। পর্দার নিচে বড় বড় শিরোনাম ভেসে উঠছে। লম্বা সাদা রঙের একটি নরম সোফায় গা এলিয়ে বসে টিভি দেখছে মোস্তফা।
টিভিতে এক ভদ্রমহিলা শিরোনাম পড়ছিলেন, আজকে পুনরায় মানুষের গ্রামে ডাইনোসরদের আক্রমণ।
ঢুলু ঢুলু চোখে টিভির দিকে তাকিয়ে থাকা মোস্তফা খবরটি শুনে একটু নড়েচড়ে বসলো। ভ্রু কুঁচকে নিচের শিরোনামের দিকে তাকালো। আবারো ডাইনোসরদের নিয়ে খবর। প্রানীগুলি মানুষের গ্রামে হানা দিয়েছে। ইদানিং প্রায়শই এই ধরনের খবর টিভির পর্দায় ভেসে উঠছে। কোন এক অজানা কারণে অস্থির হয়ে উঠেছে প্রাণীগুলি।
সালটা ২৫১৩। গত কয়েকশো বছরে পৃথিবীর অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। ডাইনোসরেরা পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। মানুষ তাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হয়েছে। তারা এখন পৃথিবীর জঙ্গল দাপিয়ে বেড়ায়।
এই নিরীহ ডাইনোসররা খুব কমই মানুষকে বিরক্ত করে। আর লোকালয়ে হামলা তো খুবই বিরল একটি ব্যাপার।
মোস্তফা লক্ষ্য করেছে ইদানীংকালে তারা বারবারই খবরের শিরোনামে পরিণত হচ্ছে।
মোস্তফার কাছে পুরো ব্যাপারটি একটু ভজঘট লাগলো। সে তার সোফার পাশের টেবিলে রাখা উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি সম্পন্ন ফোনটি হাতে তুলল। সেটির স্পিকারে একটি আদেশ করলো, ''কল জ্যাক।" মুহূর্তেই তার বন্ধু জ্যাক এর কাছে একটি ফোন চলে গেল।
জ্যাক একজন মেকানিক এবং খুবই একরোখা ধরনের একজন প্রকৃতি প্রেমিক। জ্যাক নিশ্চয়ই এই ব্যাপারগুলো সম্পর্কে খোঁজখবর রাখছে।
হ্যালো বন্ধু কেমন আছো? ও প্রান্ত থেকে জ্যাকের শান্ত কন্ঠ ভেসে এলো।
আমি ভালো আছি কিন্তু তুমি কি খুব একটা ভালো আছো, বন্ধু? মোস্তফা জিজ্ঞেস করল।
মোস্তফার গলার সুরে কিছু একটা ধরতে পারল জ্যাক। বলল, বন্ধু না আমি ভালো নেই। জঙ্গলের প্রাণীরা জঙ্গলে না থাকলে প্রকৃতি অশান্ত হয়ে পড়ে। আর তুমি তো জানো আমি প্রকৃতিকে অনেক ভালোবাসি। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হলে আমার মাথায় রক্ত চড়ে বসে। জ্যাক বলল।
মোস্তফা কোন উত্তর দিল না।
তুমি এক কাজ করো তোমার পরিচিত সেই মটু পালোয়ানকে সাথে নিয়ে আজ সন্ধ্যায় আমার গ্যারেজে চলে আসো। জ্যাক বলে চলল। আমি প্রফেসর হ্যানাকেও আসতে বলেছি। দেখি এই বিষয়ে আমরা কিছু করতে পারি কিনা।
মোস্তফা সম্মতি জানিয়ে ফোনটা রেখে দিল। তারপর ফোনের স্পিকারে আবার একটি আদেশ করলো, "কল মটু।"
মটুর আসল নাম মেস ওব্রাদোভিক। ওকে এলাকায় সবাই ভদ্র দানব নামেই চেনে। এমনিতে শান্তশিষ্ট ধরনের হলেও রাগিয়ে দিলে সে লেজবিশিষ্ট এবং লেজের আগায় অবশিষ্ট। এইতো গত সপ্তাহে সে এক দোকানির বুকের খাঁচার হাড় গুড়িয়ে দিয়েছিল। দোকানির অপরাধ ছিল, সে শস্য মাপে কম দিয়েছিল।
এলাকায় মেস একটি রহস্যময় চরিত্র। অনেকদিন শহরের বাইরে ছিল সে। কোথায় ছিল কিসে ব্যস্ত ছিল এই ব্যাপারে এলাকার কেউই কিছু জানে না।
জ্যাকের গ্যারেজ।
ডাইনোসরেরা খুবই শান্ত প্রাণী। জুরাসিক যুগের জংলি ডাইনোসরদের সাথে আধুনিক ডাইনোসরদের এখানে সবচেয়ে বড় পার্থক্য। প্রফেসর হ্যানা বলে চলছিল। সেখানে এই প্রাণীগুলি প্রতিনিয়ত গ্রামের মানুষদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে, ব্যাপারটা আমার কাছে মোটেও স্বাভাবিক লাগছে না। হ্যানা জ্যাকের উদ্দেশ্যে কথাটি বলল।
জ্যাকের কপালে চিন্তার রেখা। সে কিছু একটা নিয়ে গভীরে ভাবছিল। আমার ধারণা কুখ্যাত কালোবাজারিরা কিছু একটা গন্ডগোল করে বেড়াচ্ছে। এবার জ্যাক সবাইকে উদ্দেশ্যে করে বলল, এই চোরা শিকারিরা অনেকদিন ধরেই জঙ্গলের অনেক প্রাণী হত্যা করে চলছে। আর সরকার এদের কিছুই করতে পারছে না।
আমার ধারণা নীরবে-নিভৃতে এই চোরা শিকারিরা নিরীহ ডাইনোসরদের স্বীকার করে চলছে। মোস্তফা কথাটি যোগ করল।
আমারও তাই মনে হয়। মোস্তফার সাথে কথাটিতে সায় দিল জ্যাক।
কিছু বুঝুক আর না-ই বুঝুক মেস তার মোটা ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, চলো ওদের একহাত দেখে নেই।
তুমি ব্যাপারটা যেরকম ভাবছো সেরকম নয়। মটুকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করল জ্যাক। এই চোরা শিকারিদের হাত অনেক লম্বা আর অনেকদিন ধরেই তারা এই ব্যবসার সাথে জড়িত। এদের গভীরে বড় ধরনের শেকর রয়েছে। এদেরকে ধরতে হলে ওদের শেকরে যেতে হবে।
জ্যাকের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে মেস বলল আমি তো সেটাই বললাম। চলো এদের শেকড় উপড়ে ফেলি। বলেই এক হাতের মুষ্টি দিয়ে অন্য হাতের তালুতে সজোরে একটা আঘাত করলো মেস আর তার অজান্তেই মুখ দিয়ে ইয়ায়ায়া... বলে একটা অদ্ভুত বিকট শব্দ বের হয়ে এল। এরকম সিরিয়াস একটি মুহূর্তে এ ধরনের ছেলেমানুষি আচরণ নিয়ে মেস কিন্তু একটুও লজ্জিত নয় বরং সে গর্বিত দৃষ্টিতে প্রফেসর হ্যানার দিকে তাকিয়ে।
জ্যাক মোস্তফার দিকে নিরাশ ভঙ্গীতে একবার তাকালো। মোস্তফা নিচের ঠোঁট উল্টাল।
হেনা একটা কাশি দিল। এবার মোস্তফা ও জ্যাক ওর দিকে ফিরে তাকালো। হেনার চেহারা দেখে মনে হল সে গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা ব্যক্ত করতে যাচ্ছে।
এই কালোবাজারিদের মূল শেকড় রয়েছে সমুদ্র শহরে। হ্যানা বলল। সেখান থেকে তারা পুরো অবৈধ শিকার কার্য পরিচালনা করে। হ্যানার চেহারায় এক ধরনের বিচক্ষণতার ছাপ।
তবে ঠিক আছে আমরা সবাই সমুদ্র শহরের উদ্দেশ্যে রওনা করছি। কথাটি বলে জ্যাক মোস্তফার কাঁধে হাত রাখে। মোস্তফা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ভঙ্গিতে তার পরিচিত হলদে ক্যাপটি মাথায় পড়ল। বলল, আমরা তবে এই প্রকৃতি বিরোধীদের একটা দফারফা করে ছাড়বো।
এবার হ্যানার দিকে তাকালো জ্যাক। জ্যাকের চেহারায় কাঠিন্য, চোখেমুখে প্রতিজ্ঞা।
হ্যানা জ্যাকের চোখের দিকে তাকিয়ে একটু লাজুক হেসে বলল, আই এম ইন।
জ্যাক মুখ ফিরিয়ে নিতেই হ্যানা সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে জ্যাকের সুদর্শন চোয়ালের দিকে তাকালো, ভাবলো আজ সে সেইভ করেনি আর তাকে এই ভঙ্গিতেই আরও বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।
যদিও এই বিষয়ে কিছুই খেয়াল করেনি জ্যাক। অত্যন্ত সুদর্শনা হ্যানা একজন জিনিয়াস সায়েন্টিস্ট ব্যতীত এখন পর্যন্ত জ্যাক এর কাছে আর বেশি কিছু নয়।
মেস পুনরায় সম্মতি জানাতে গিয়ে এক হাতের মুষ্টি অন্য হাতের তালুতে সজোরে আঘাত করতে যাবে বলে মুখ হা করেছে, ইয়া... মোস্তফা তাৎক্ষণিক ওর মুখ চেপে ধরে বলল, মেস যাচ্ছে।
(চলবে)
Abid faraje, Ayrin kaTun, Masum, Tasmia haq, Sofikul alom, Liton vhos, Nowrin talukdar and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
এক মাস আগের ঘটনা,
মেকানিক জ্যাক মরুভূমি দিয়ে তার শখের ক্যাডিলাক গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিল। ২৫১৩ সাল। পৃথিবীতে বৃহত্তম যুদ্ধের পর পুরো পৃথিবী যেন পরিণত হয়েছে একখণ্ড মরুভূমিতে। দূর দূরান্তে আগনিয়গিরি দেখা যাচ্ছিল। জ্যাক তার ক্যাডিলাক এর গতি ১৫০ পার করলো। ঠিক এমন সময় তার গাড়ির একটি চাকা পাংচার হয়ে গেল। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুরো গাড়িটি নিয়ে উল্টে পড়ল জ্যাক। মাটিতে ছিটকে পড়ে বুকের পাজরে খানিকটা আঘাত পায় সে। কোন রকমে নিজেকে টেনেহিঁচড়ে একটি টিলার আড়ালে আশ্রয় নেয়।
ঠিক ওই সময় সিটি কাউন্সিলের একটি গাড়ি সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল। জ্যাকের বিধ্বস্ত গাড়িটি দেখে তারা মাঝরাস্তায় থেমে পড়ে। জিপ ধরনের গাড়িটির পেছনের দরজা খুলে একটি মেয়ে দৌড়ে জ্যাকের কাছে আসে।
আপনি কি ঠিক আছেন? আপনার কোথাও আঘাত লাগেনি তো? মেয়েটি তাকে জিজ্ঞেস করে।
জ্যাক কোনরকমে উঠে দাঁড়ায়। মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে, আমি ঠিক আছি।
মেয়েটি তার সামনে চলে আসে, তার দুই বাহুতে হাত রেখে জিজ্ঞেস করে আপনি সত্যিই ঠিক আছেন তো?
এবার জ্যাক মাথা তুলে তার দিকে তাকায়। বলে, মনে হচ্ছে পুরোপুরি ঠিক নেই।
মেয়েটি গাড়ির ড্রাইভারকে তাদের কাছে আসতে বলে। দুজনে মিলে জ্যাককে কোনরকমে গাড়ির পেছনে বসায়। জ্যাকের পেশীবহুল দেহ গাড়িতে টেনে তুলতে তাদের বেশ বেগ পেতে হয়। জ্যাক মেয়েটির নরম হাতের স্পর্শ অনুভব করে। তার জন্য মেয়েটির মহানুভবতা তাকে কিছুটা মুগ্ধ করে।
এরপর গাড়িটি একটি হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা করে। গাড়িতে মেয়েটি নিজের পরিচয় দেয়। বলে, আমি হেনা ড্যান্ডি। সিটি কাউন্সিলের একজন ডিপ্লোম্যাট।
জ্যাক নিচু গলায় উত্তর দেয়, নাইস টু মিট ইউ। মেয়েটির জ্যাকের কাছে তার পরিচয় জানতে চায়। আমি জ্যাক টেনরিক, প্রাচীন ধর্মের একজন অনুসারী। জবাব দেয় সে।
ও আপনি তাহলে যন্ত্র এবং প্রকৃতির ব্যালেন্স রক্ষায় বিশ্বাসী প্রকৃতিপ্রেমী। মেয়েটি বিস্ময়ের সঙ্গে বলে। তার চোখে মুখে মুগ্ধতা।
জ্যাক কোন উত্তর দেয় না।
আমি শুধু একজন ডিপ্লোম্যাট নই আমি একজন বিজ্ঞানীও। প্রাণোচ্ছল মেয়েটি বলতে থাকে।
এবার জ্যাক নিচু গলায় বলে ওঠে, ওহ আমি তো বিজ্ঞানীদের ঘৃণা করি।
হাসপাতাল থেকে ফিরে জ্যাক হেনাকে বিদায় জানায়। আমার বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। জ্যাক বলে।
আপনার সাথে আমার ভবিষ্যতে প্রয়োজন হতে পারে। আমি যোগাযোগ করলে কিছু মনে করবেন না। হ্যানা জানায়।
অবশ্যই না। জ্যাক প্রত্যুত্তরে বলে।
হেনা বিদায় নিতে যাবে ঠিক সেই সময়ে জ্যাকের পেছনে একটি ছোট আকারের হিংস্র ডাইনোসর দেখতে পায় সে। হেনা সভয়ে কিছুটা পিছিয়ে পড়ে। আতঙ্কে তার মুখ দিয়ে এক ধরনের আর্তনাদ বের হয়।
জ্যাক পেছনে তাকাতেই দেখতে পায় তার পোষা ডাইনোসর হার্নেস, তার পেছনে দাঁড়িয়ে।
জ্যাক মৃদু হেসে হেনার দিকে তাকিয়ে আশ্বস্ত করে বলে, আরে এটা আমার পোষা ডাইনোসর হারনেস। ওর মা ছোটবেলায় মারা গিয়েছিল। আমি ওকে এনে পেলে পুষে বড় করেছি।
জ্যাকের কথায় হেনার ভয় কিছুটা কেটে যায়। সে জ্যাককে জানায়, আচ্ছা তাহলে আমি বিদায় নেই।
জ্যাক হেনার দিকে তাকিয়ে একটা মৃদু হাসি দেয়, বলে, আমার গ্যারেজটা ঘুরে দেখে যাও।
জ্যাকের হঠাৎ এই আমন্ত্রণ সাবলীল ভাবে গ্রহণ করে হেনা। বলে তুমি দেখাতে চাইলে আমি অবশ্যই দেখবো। তার ভেতরে এক ধরনের চঞ্চলতা লক্ষ্য করা যায়।
জ্যাকের গ্যারেজের ভেতরে ঢুকে হেনা যারপরনাই অবাক হয়। বলে, এটা কি কোন গ্যারেজ নাকি একটা আস্ত দূর্গ।
গ্যারেজের ভেতরে দুই সারি ধরে শুধু গাড়ি সাজানো রয়েছে। বিস্ময়ে হতবাক হেনার দিকে তাকিয়ে জ্যাক বলে, এগুলি আমার নিজস্ব সংগ্রহ। আমি এগুলিকে ডাকি ক্যাডিলাক।
উপরের সিঁড়ি বেয়ে কৃষ্ণবর্ণের একজন সুদর্শন লোক নিচে নেমে আসে। লোকটির মাথায় একটি ক্যাপ। গাঁয়ের সবুজ শার্ট, পরনে হলদে প্যান্ট। একটু আজবই স্টাইল তার। তাকে দেখে মনে হল হেনার।
জ্যাক তার দিকে হাত ইশারা করে বলল, বন্ধু এদিকে এসো। তোমার সাথে একজনকে পরিচয় করিয়ে দিই। জ্যাক হেনার দিকে তাকিয়ে বলে, আমার বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা।
প্রতিত্তরে হেনা হ্যান্ডসেকের জন্য নিজের হাত বাড়িয়ে দিল। বলল, আমি হেনা ড্যান্ডি।
ওদের আলোচনার মাঝে ওই অঞ্চলের একটি লোক হঠাত জ্যাকের গ্যারেজে এসে হাজির হয়। লোকটাকে দেখে বেশ উত্তেজিত মনে হল।
সে জ্যাকের দিকে ফিরে রাগান্বিত স্বরে বলে, আমরা এই এলাকায় যখন বসতি গড়েছিলাম, তুমি বলেছিলে এই প্রাণীগুলো আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না।
কিন্তু আজ সকালে একটি হিংস্র টাইরানো ডাইনোসর আমাদের বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে।
জ্যাক লোকটির দিকে তাকিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলে, আমি এখুনি দেখছি ব্যাপারটা।
ডাইনোসরদের এরূপ আচরণ খুবই বিরল। জ্যাক তাৎক্ষণিক গ্যারেজ থেকে একটি ক্যাডিলাক নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়। মোস্তফা জানায় আমিও তোমার সঙ্গে আসছি।
হেনা এতক্ষণ চুপ করে ছিল। এবার জানালো, আমিও আসতে চাই জ্যাক। ওর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকালো জ্যাক।
হেনা একটু মুচকি হাসল, বলল, আমাকে এই অঞ্চলে একটা গবেষণায় পাঠানো হয়েছে। তাই আমার জন্যেও বিষয়টি দেখে আসাটা জরুরি।
জ্যাক কোন উত্তর করল না। ইশারায় তাকে পেছনের সিটে বসতে বলল মোস্তফা। জ্যাকের সম্মতি অসম্মতির বিষয়ে তার ভালো জ্ঞান আছে। হেনা খুশিমনে গাড়ির পেছনে গিয়ে বসলো।
জ্যাক গ্যারেজ থেকে বেরিয়ে সোজা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
গ্রামে পৌছতেই জ্যাক এর আরো কয়েকজন অনুসারী তার কাছে এসে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করল। হেনা লোকগুলির কাছে বিষয়টির বিস্তারিত জানতে চাইল।
জ্যাক তার গাড়ির ট্রাংক থেকে একটি ট্রাংকুলাইজার বন্দুক ও একটি বাইনোকুলার সাথে নিল। মোস্তফাকে হেনার সাথে থাকতে বলল। ডাইনোসরের সাথে জ্যাকের এক ধরনের সখ্যতা রয়েছে। তাছাড়া জ্যাকের সাথে অন্য কেউ জঙ্গলে গেলে প্রাণীটি বিরক্ত হতে পারে।
জ্যাক ডাইনোসরের বড় বড় পায়ের পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করে জঙ্গলের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।
কিছুদুর যাওয়ার পর একটি বড় গাছের মগডালে উঠে পরল। ডালে বসে বসে হিংস্র প্রাণীটির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। বেশ কিছুক্ষণ পর তার হিংস্র টাইরানোটির সাথে সাক্ষাৎ হলো।
জ্যাক তার ট্রাংকুলাইজার বন্দুকের দূরবীন দিয়ে ডাইনোসরের ঘাড়ে নিশানা করল। ঠিক তখনই দেখতে পেল, সেটির ঘাড়ে একটি কৃত্রিম যন্ত্র বসানো রয়েছে। যন্ত্রটি বাহ্যিকভাবে সেটির দেহে স্থাপন করা হয়েছে।
বিষয়টি জ্যাককে একটু ভাবিয়ে তুলল। তবে নিশ্চয়ই কেউ একজন প্রকৃতির বিরুদ্ধে এই ডাইনোসরটিকে ব্যবহার করছে। যন্ত্রটি একটি হাই ফ্রিকোয়েন্সি ডিভাইস, যেটির তীক্ষ্ণ শব্দে এই প্রাণীটি অস্থির হয়ে উঠেছে।
জ্যাক এবার তার বন্দুকের দূরবীন দিয়ে চারিদিকে লক্ষ্য করলো। হঠাৎ একটি পাহাড়ের চূড়ায় কেউ একজনকে দেখতে পেল। জ্যাক থলে থেকে বাইনোকুলারটি বের করে জুম করতেই তার কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল। একটি লোক হাতে রিমোট কন্ট্রোল নিয়ে কিছু একটা পরিচালনা করছে। সে সম্ভবত এই ডাইনোসরটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
দ্রুত গতিতে গাছটি থেকে নেমে পরল জ্যাক। ধীরে ধীরে সন্তর্পনে চূড়ার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কয়েকটা বড় বড় গাছ পেরিয়ে কিছুদূর এগিয়ে একটি বড় গাছের উপর উঠে পরল এবার। তার ট্রাংকুলাইজার বন্দুকটি লোকটির দিকে তাক করে তাকে তার নিশানা বানাল। লক্ষ স্পষ্ট হতেই ট্রিগারে চাপ দিল। ট্রাঙ্কুলাইজার বন্দুকের গুলিটি সরাসরি লোকটির ঘাড়ে গিয়ে বিধলো।
লোকটি প্রথমে কিছু একটা বুঝতে পারল, তার ঘাড়ে হাত দিল। তারপর কিছুক্ষণেই টালমাটাল হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরল। জ্যাক গাছ থেকে নেমে ছোট্ট চূড়ার উদ্দেশ্যে দৌড়াতে শুরু করলো।
লোকটির কাছাকাছি এসে সর্বপ্রথম যেটি দেখতে পেল একটি রিমোট কন্ট্রোল মাটিতে পড়ে আছে। কন্ট্রোলটি হাতে নিল জ্যাক। সেটিতে হাই ফ্রিকোয়েন্সি সাউন্ড তৈরি করার একটি ট্রিগার রয়েছে। মানুষ এই শব্দ শুনতে না পেলেও একটি প্রানীকে এ ধরনের শব্দ অস্থির করে তুলতে পারে। আর এজন্যই এই প্রাণীটি মানুষদের ঘর বাড়িতে হানা দিয়েছে। জ্যাক কন্ট্রোলার চেপে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি শব্দটি বন্ধ করে দিল।
লোকটিকে গাড়িতে তুলে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
গ্রামে পৌঁছে গ্রামবাসীকে সবকিছু বুঝিয়ে বলল আর লোকটিকে ওদের কাছে হস্তান্তর করল।
তারপর মোস্তফা ও হেনাকে নিয়ে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গ্যারেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
গাড়িতে করে যাওয়ার পথে জ্যাক মোস্তফাকে উদ্দেশ্য করে বলল, আজকের মত এই সমস্যার সমাধান তো করা গেল কিন্তু ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা আবারো ঘটতে পারে। কথাটি বলে হেনার দিকে তাকালো, বলল, তুমি একটু এ বিষয়ে খোঁজখবর নিও। কালোবাজারিরা এর সাথে জড়িত থাকতে পারে।
আপাতদৃষ্টিতে এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। মোস্তফা সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল, তবে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা ঘটলে অবশ্যই সেটা খতিয়ে দেখতে হবে।
এই ঘটনার এক মাস পর ডাইনোসরদের উৎপাত বহুগুণে বেড়ে গেল। জ্যাকের একার পক্ষে সেটি সুরাহা করা আর সম্ভবপর মনে হচ্ছিল না। হেনার সাথে কথা বলে জানতে পারল, এই ঘটনার সাথে চোরাশিকারিরা জড়িত এবং সমুদ্র শহর থেকে কোন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি এদেরকে নিয়ন্ত্রণ করছে। সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে জ্যাক তার বন্ধু ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা, প্রফেসর হেনা এবং এক শক্তিশালী পালয়ান মেস এর সমন্বয়ে একটি দল গঠন করে। তারপর সে সমুদ্র শহরের উদ্দেশ্যে রওনা করে। (চলবে)
Abid faraje, Ayrin kaTun, Masum, Tasmia haq, Sume akter, Liton vhos, Nowrin talukdar and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
সমুদ্র শহরের সুউচ্চ একটি ভবনের শীর্ষ তলায় জ্যাক তার অভিযানের সঙ্গীদের নিয়ে একটি ক্ষণস্থায়ী ডেড়া স্থাপন করল। আপাতত এটি তাদের অস্থায়ী ঘাঁটি। রহস্য সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তারা এখানেই থাকবে।
হেনা একটি মানচিত্র হাতে নিয়ে হেঁটে সভাকক্ষের একটি চেয়ারে বসল। জ্যাক তার পাশের একটি চেয়ারে বসে ছিল।
আমি মোস্তফাকে ডেকে নিয়ে আসছি। কথাটি বলে জ্যাক পাশের রুমে মোস্তফাকে ডাকতে গেল।
মোস্তফার কক্ষের দরজায় টোকা দিতেই চোখ কচলাতে কচলাতে ভেতর থেকে দরজা খুললো, বলল, কি ব্যাপার জ্যাক?
আমার সাথে একটু সভাকক্ষে আসতে পারবে? জ্যাক জিজ্ঞেস করল।
মোস্তফা পেছন ফিরে বিছানার দিকে তাকালো। মেস বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমাচ্ছে। ঘরঘর করে নাক ডাকছে আর মুখ দিয়ে লালা ঝরছে।
মোস্তফা এবার ঘাড় ঘুরিয়ে জ্যাক এর দিকে তাকালো বলল এই দানবটাকে লাগবে?
জ্যাক না সূচক মাথা নাড়লো। ওকে না ডাকলেও হবে।
মোস্তফা খুব আস্তে দরজাটি ভীরে কক্ষ থেকে বের হয়ে গেল।
হেনা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা দেখাবে। জ্যাক জানাল।
সভাকক্ষের ঠিক মাঝখানে একটি গোলটেবিল রয়েছে। সেটিকে ঘিরে রয়েছে চারটি চেয়ার। সভাকক্ষে আসবাবপত্র বলতে সামনে একটি টিভি স্ক্রীন। তার পাশে একটি সাধারণ সোফা, রয়েছে দেয়ালের ঝুলন্ত একটি টেলিফোন।
হেনা মানচিত্রের একটি স্থানে হাতের তর্জনী রেখে বলল, শহর থেকে বাইরে উত্তরাঞ্চলে একটি বড় জলাশয় রয়েছে। সেই জলাশয় ঘিরে রাখা জঙ্গলে প্রাচীন আমল থেকে অসংখ্য ডাইনোসর বসবাস করে আসছে। বেশ কিছুদিন যাবত সেই অঞ্চল থেকে এই ডাইনোসর গুলো গায়েব হয়ে যেতে শুরু করেছে। কেউ বা কারা সেগুলি শিকার করে টুকরো টুকরো করে ফেলে রাখছে কিংবা অন্য কোন স্থানে সরবরাহ করছে। আমি একজন সন্দেহভাজন শনাক্ত করেছি। তার নাম বুচার। হেনা তার কথা শেষ করতে পারল না।
কেউ একজন পেছন থেকে বলে উঠলো, ওকে সবাই কসাই নামে ডাকে।
কথাটি শুনে তাৎক্ষনাৎ শব্দটির উৎসের খোঁজে পেছন ফিরে তাকাল সবাই। মেস দাঁড়িয়ে আছে পেছনে। হাত দিয়ে চোখ কচলাচ্ছে।
তুমি ঘুম থেকে কখন উঠেছ? মোস্তফা ওকে উদ্দেশ্য করে বলল।
তোমরা আর ঘুমোতে দিলে কোথায়?
তো তুমি বুচার কে চেন? হেনা জিজ্ঞেস করল।
কিহ! কোন বুচার? কার কথা বলছো? মেস যেন একটু অবাক হল।
জ্যাক মোস্তফার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার বন্ধুর ঘুমের ঘোরে কথা বলার অভ্যাস নেই তো?
মোস্তফা জ্যাকের কথার কোন উত্তর দিতে পারল না।
মেসকে উদ্দেশ্য করে বলল, এই যে তুমি এইমাত্র যাকে কসাই বলে সম্বোধন করলে।
মেস একটা হাই তুলল। অলস ভঙ্গিতে বলল, আমার আরো একটু ঘুমানো প্রয়োজন।
বলেই পেছন ঘুরে তার কক্ষে ঢুকে ধড়াম করে দরজা লাগিয়ে দিল। সবাই পুনরায় মানচিত্রের দিকে মুখ ঘোরাতেই, ধড়াম করে দ্বিতীয় একটি শব্দ হল।
মোস্তফা মাথা নাড়তে নাড়তে সরল স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলল, মেস বিছানায় পড়েছে।
সমুদ্র শহরের গভর্নর শর্ণহোস্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে তার সাথে আরো দুইজন গভর্নর এবং শহরের মেয়র যুক্ত হয়েছেন। সমুদ্র শহরের সর্বোচ্চ ভবনের একটি বিশেষ নিরাপত্তা কক্ষে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে। তাদের সামনে টিভির পর্দায় ডাইনোসরদের দানবীয় ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের একটি রেকর্ড ভিডিও চলছিল।
পর্দার দিকে তাকিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে শর্ণহোস্ট বলল, ভাইসব দেখতেই পাচ্ছেন এই ডাইনোসরেরা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। তারা লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। মানুষের উপর হামলা করছে। ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে। একটু থেমে আবার বলতে শুরু করল সে। এই গ্রামের নেতা জ্যাক কখনোই মানুষ এবং এই প্রাণী গুলির মধ্যে ভারসাম্য আনতে পারেনি। মানুষ এবং ডাইনোসর কখনোই এক স্থানে বসবাস করতে পারে না। এই সনাতন ধর্মালম্বী তার ধর্মের অনুসারীদের নিয়ে ডাইনোসরদের সাথে বসতি গড়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমার প্রস্তাবনা এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখার পর আমাদের সবাইকে অবশ্যই একটি সিদ্ধান্তে আসা উচিত। এই গ্রামটি ভেঙে এখানে নতুন করে একটি শহর গড়ে তোলা উচিত। সেক্ষেত্রে ডাইনোসর গুলোকে এখান থেকে সরিয়ে ফেলার ব্যবস্থা করা উচিত। এছাড়া আমাদের হাতে আর কোনো পথ অবশিষ্ট নেই।
মধ্যবয়স্কা ভারী চেহারার শর্ণহোস্ট সবার উদ্দেশ্যে বলে চললো, এবার আপনারাই সিদ্ধান্ত নিন। আরও বেশি মানুষের জীবন এই ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন নাকি এই প্রাণীগুলিকে সরিয়ে এখানে নতুন করে বসতি করবেন। স্থূল আকৃতির ক্ষমতাধর এই মহিলাটি তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন। তার কাছে জ্যাকের সরল জীবন নীতি সনাতন ধর্ম অনুসরণ এক ধরনের অস্বস্তিকর ব্যাপার। আর তাই সে এই অস্বস্তি, বিচ্যুতি কাটিয়ে উঠতে বাকি সব রাজনীতিবিদদের নিয়ে একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানোর চেষ্টা করছে। অন্যান্য গভর্নর ও শহরের মেয়র তার কথাটি গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনল।
শর্ণহোস্ট এর চেহারায় এবার যেন একটু হাসির রেখা ফুটে উঠলো। এই প্রভাবশালী ব্যক্তি বর্গকে রাজি করাতে পারলে শহর তৈরীর সব পথ খুলে যাবে। সাথে জ্যাক ও তার উদ্ভট অনুসারীদের এই তল্লাট ছাড়া করতে পারবে।
বৈঠকের শেষ হবার ঘন্টাখানেক পর সবাইকে বিদায় দিয়ে টিভির পর্দায় কারো সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে শর্ণহোস্ট। টিভির স্পিকারে কিছুক্ষণ পর একটি ভারী কন্ঠ শোনা গেল। যদিও পর্দায় কারো চেহারা দেখা গেল না। পর্দাটি সম্পূর্ণ অন্ধকার ছিল।
অচেনা কন্ঠের মালিক বলল, আমার গবেষণার জন্য বহুসংখ্যক ডাইনোসর প্রয়োজন হবে। তুমি কি সেটার বন্দোবস্ত করতে পেরেছ?
তুমি তোমার গবেষণা চালিয়ে যাও, ডক্টর। আমি তোমার চাহিদা পূরণে সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছি। উত্তর দিল শর্ণহোস্ট।
অনেক রাত হয়েছে। মেস বসার কক্ষে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে এক হাতে রিমোট অন্য হাতে পপকর্ন নিয়ে টিভি দেখায় মশগুল। হেনা ঘুমোনোর পাতলা পোশাক পরিহিত অবস্থায় তার কক্ষ থেকে বের হয়ে ফ্রিজের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। মেস তৎক্ষণাৎ একটি মূর্তি বনে গিয়ে আড়চোখে একদৃষ্টিতে হেনার দিকে তাকাল।
ছিপছিপে গড়নের সুদর্শনা হেনাকে রাতের পোশাকে আরো বেশি অপরূপ লাগছে। সে ভাবে। হেনা ফ্রিজ খুলে ভেতর থেকে আঙ্গুরের শরবত এর একটি বোতল বের করে টেবিলের উপর রাখে। একটি চেয়ার টেনে সেটাতে বসে মেঝের দিকে মুখ ঘোরাতেই দেখতে পায় গভীর মনোযোগে টিভি দেখছে মেস। তা দেখে হেনার মনে হল যেন এইমাত্র গ্রাম থেকে কেউ উঠে এসেছে, যে তার পুরো জীবনে কোনদিন টিভি দেখেনি। যদিও কথাটা খানিকটা সত্য।
মেসকে দেখে কে ভাববে একটু আগেও সে একদৃষ্টিতে হেনার দিকে তাকিয়ে ছিল। সেটা হেনা কেন স্বয়ং লেখকেরও বোঝার কায়দা নেই।
হেনা একটি গ্লাসে আঙ্গুরের শরবত ঢালতে ঢালতে মেসের উদ্দেশ্যে বলল, তুমি এখনো ঘুমাওনি?
মেস যেন প্রথমে তার কথাটি শুনতে পাইনি এমন একটি ভনিতা করল। একটু পরে হেনার দিকে তাকিয়ে বলল, তুমি কি আমাকে কিছু বলেছ?
হুম, এই কক্ষে কি আর কেউ আছে? হেনা বাঁকা স্বরে বলল।
মেস একটু কপট অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে উত্তর দিল, আমি তো কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে উঠলাম। তাই না।
হেনা কথাটি শুনে আপন মনে মাথা ঝাকালো। তারপর অন্য মনস্ক হয়ে বললো, সবাই কি তোমাকে মোটু বলে ডাকে?
সবাই ডাকে না। কেউ কেউ আদর করে ডাকে। বলল মেস।
ও আচ্ছা। হেনা এবার একটু মজার ছলে বলল, তাহলে আমিও কি এই নামে ডাকতে পারি?
এবার মেস কোন ভনিতা করল না। জ্যাকের রুমের দরজার দিকে তার চোখ চলে গেল। কেউ যেনো দরজা ভিরে দাঁড়িয়ে আছে।
মেস হেনার উদ্দেশ্যে সরাসরি উত্তর দিল, তুমি মেস বলে ডেকো।
হেনা একটু অবাক হল। সম্ভবত একটু অপমানিতও বোধ করল। ভাবল এই লোকটি আসলে একটু উদ্ভট প্রকৃতির। কথা বার্তার কোন আগামাথা নেই।
হেনা কিছুটা নিরাশ ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালো। হাতে শরবত এর পাত্রটি নিয়ে তার কক্ষে চলে গেল। আর ধড়াম করে শব্দ করে দরজাটি লাগিয়ে দিলো।
হেনা কক্ষে ঢুকে যেতেই, নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এল জ্যাক। এমন একটা ভান করে ফ্রিজের দিকে হেঁটে চলল, যেন এখানে কেউ বসে আছে বিষয়টি সে খেয়ালই করেনি। ভেতর থেকে একটা হুইস্কির বোতল নিয়ে শিস দিতে দিতে তার নিজের কক্ষে ঢুকে গেল। মেস শুধু তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে জ্যাকের দিকে তাকিয়ে রইল। (চলবে)
Abid faraje, Ayrin kaTun, Masum, Tasmia haq, Sume akter, Liton vhos, Nowrin talukdar and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে গেল মোস্তফার। পাশের টেবিলে রাখা এলার্ম ঘড়িতে চোখ বোলালো। রাত দুইটা বাজে প্রায়। ঘাড় ঘুরিয়ে একবার পাশে দেখলো। মেস বিছানায় নেই। সম্ভবত এখনো টিভি নিয়ে ব্যস্ত।
চোখ কচলাতে কচলাতে বিছানায় উঠে বসল মোস্তফা। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই হঠাৎ কিছু একটা তার নজরে এলো। অদূরে একটি উঁচু দালানের চূড়ায় কিছু একটা রয়েছে। বস্তুটির নড়াচড়া মোস্তফার চোখে ধরা পরল। উঠে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো সে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে নিশ্চিত হলো সত্যিই কিছু একটা রয়েছে সেখানে।
দালানটির ছাদ থেকে একটি মিনার আকৃতির স্থাপনা রয়েছে। প্রাণীটি এবার সেই মিনারে বেয়ে উপরে উঠে গেল। ব্যাপারটি দেখে মোস্তফা একটু বিস্মিত হয়ে পড়ল। প্রথমে তো তার মনে হয়েছিল এটি কোন উড়ুক্কু ডাইনোসর। কিন্তু ভালো করে লক্ষ্য করতেই তার ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত হল।
এটি অনেকটা মানবাকৃতির। লম্বা লম্বা হাত পা রয়েছে। দুই পায়ের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে মনে হল উৎসুক দৃষ্টিতে বারবার আশপাশটা দেখছে। মোস্তফা দ্রুত তার ডেস্কের ড্রয়ার থেকে বাইনোকুলারটি বের করল। বাইনোকুলারের নাইট ভিশন চালু করতেই, যা দেখতে পেল তা রীতিমতো চমকে ওঠার মতো।
প্রাণীটি কোন মানুষ নয়, কিন্তু মানুষের মতো হাত-পায়ের সাথে একটি বড় লেজও রয়েছে। চেহারাটি দূর থেকে স্পষ্ট বোঝা না গেলেও এটুকু বোঝা যাচ্ছে অসংখ্য দাঁতের সমাহারে কুৎসিত ভয়ঙ্কর একটি জন্তু।
এটি কোন স্বাভাবিক সাধারণ প্রাকৃতিক প্রাণী নয়। মানুষ আর পশুর এক ধরনের বীভৎস মিশ্রন। তবে কি এটি কোন অবৈধ ল্যাবরেটরির ফসল।
মোস্তফা আর একমূহূর্ত দেরী করল না। দ্রুত বিছানা ছেড়ে উঠে পরল। যদি এটি সেরকম কিছু হয় তবে জ্যাকের সমস্যার সাথেও এটি জড়িত।
মোস্তফা শোবার পোশাক পরিবর্তন করে একটি থলেতে তার বাইনোকুলার এবং ডার্ট গানটি পুড়ে নিল। কক্ষ থেকে বেরিয়ে পরার আগে জানালা দিয়ে জন্তুটিকে আরেকবার দেখে নিল। আগের জায়গাতেই বসে আছে সেটি।
বসার কক্ষে সোফায় গা এলিয়ে শুয়ে আছে মেস। অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে সে। তার সামনে টিভিটি অনবরত চলছিল। মোস্তফা মেঝে থেকে কন্ট্রোলারটি তুলে টিভি সেটটি বন্ধ করে দিল। যাওয়ার সময় মেসের পায়ে জড়িয়ে থাকা কম্বলটি দিয়ে তার বুক অবধি মূরে দিল।
মূল দরজার দিকে পা বাড়াতেই পেছন থেকে মেস বলে উঠলো, এই রাত্রিতে কোথাও যাচ্ছ তুমি?
মোস্তফা প্রতিউত্তরে বলল, কেন? তুমি যাবে?
তুমি কখনো কাউকে নিয়ে তো গোয়েন্দাগিরি করো না। মেস উত্তর দিল। তাছাড়া আমি বেরিয়ে গেলে এদের দেখাশোনা কে করবে। জ্যাক ও হেনার দিকে ইঙ্গিত করল মেস।
ওরা কোন ছোট বাচ্চা নয়। একটু রাগান্বিত স্বরে বলল মোস্তফা।
সেটাই তো সমস্যা। নির্বিকারে কথাটি বলল মেস।
মোস্তফা আর কথা না বাড়িয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ল। লিফটে উঠে গ্রাউন্ড ফ্লোর এর বোতামটিতে চাপ দিল।
একটি জিপ ধরনের গাড়িটি কিছুক্ষণের মধ্যে গ্যারেজ থেকে বের হয়ে গেল।
কিছুদুর এগোতেই জিনিসটাকে ফের দেখতে পেল সে। থলে থেকে বাইনোকুলারটি বের করে নাইট ভিশন চালু করল। জন্তুটি এখন আগের জায়গাতে নেই। কয়েকটি দালান পরে কিছুটা নিচু একটি দালানে উপর অবস্থান করছে।
মোস্তফা ধীর গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। একটু পরপর বাইনোকুলার দিয়ে গাড়ি থামিয়ে সেটির দিকে নজর রাখছে। প্রাণীটি এক বিল্ডিং থেকে আরেক বিল্ডিং এ লাফিয়ে লাফিয়ে চলে বেড়াচ্ছে।
রাস্তায় খুব একটা গাড়ি নেই। মাঝে মধ্যে দু একটা ট্রাম এদিক সেদিক দিয়ে চলে যাচ্ছে। মোস্তফা প্রাণীটির পিছু নিয়েছে। বেশ কিছুটা পথ যাওয়ার পরে সে গাড়ির গতি আরো কমিয়ে আনে। তার কাছে মনে হয় বেশী কাছাকাছি চলে গেলে সে প্রাণীটির নজরে পড়ে যেতে পারে। সে তার গাড়ির হেডলাইটগুলি বন্ধ করে দেয়। অল্প আলোর পারকিং লাইট গুলো জ্বালিয়ে দেয়। তারপর ধীর গতিতে গাড়িটি সামনে এগিয়ে নিয়ে চলে।
কিছুদূর যাওয়ার পর সে সিদ্ধান্ত নেয় গাড়িটি এবার থামানোর উচিত। কেন যেন তার কাছে প্রাণীটির গতিবিধি সন্দেহজনক লাগে। সম্ভবত সেটি মোস্তফাকে লক্ষ্য করেছে। একটি বন্ধ সুপারশপের পাশে সে তার গাড়িটি পার্ক করে। গাড়ির সর্বশেষ পার্কিং লাইটটিও নিভিয়ে দেয়। তারপর চুপচাপ করে কিছুক্ষণ বসে থাকে। তার কাছে এখনো একটি বিষয় পরিষ্কার নয়, এই প্রাণীটির সাথে কি ডাইনোসরগুলির অস্বাভাবিক মৃত্যুর কোন যোগসূত্র রয়েছে। তবে মোস্তফা একটি বিষয়ে নিশ্চিত। এটা যা কিছুই হোক না কেন এটির বিষয়ে তাকে আরো জানতে হবে।
সে আবার বাইনোকুলারটা তার চোখে বসায়। প্রাণীটিকে খোঁজার চেষ্টা করে। প্রাণীটি আগের জায়গাতে নেই। মোস্তফার মনে হয় প্রাণীটিকে সে এবার হারিয়ে ফেলেছে। দ্রুত গাড়িটি স্টার্ট দিয়ে হেড লাইট জ্বালাতেই দেখে কয়েকটি দালান পরে একটি দোতলা রেস্টুরেন্ট ছাদের উপর বসে আছে জন্তুটি।
মোস্তফা খুব দ্রুতই তার গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দেয়। হেড লাইটগুলিও বন্ধ করে। কিন্তু তার কাছে মনে হয় খুব সম্ভবত সে একটু দেরি করে ফেলেছে। লম্বা লম্বা হাত পায়ের প্রাণীটি দোতলা বিল্ডিং এর ছাদের উপরে এবার উঠে দাঁড়ায়। এই কাছ থেকে দেখে তার কাছে মনে হয় এই প্রাণীটি মানুষের চেয়েও কয়েক গুণ বড়।
প্রাণীটি কয়েক মুহুর্ত স্থির ভাবে সেখানে দাঁড়িয়ে রয়। সম্ভবত সে মোস্তফার গাড়িটি দেখতে পেরেছে। কিছুটা ভীত মোস্তফা বাইনোকুলারটি নিয়ে আবার সেটিকে দেখার চেষ্টা করে। উদ্ভট ভয়ঙ্কর সেই প্রাণীটির মুখভর্তি অসংখ্য দাত। চেহারাটা অনেকটা শুকরের মতো কিন্তু ঠিক শুকর নয়। নাকটা বসানো, কান দুটো অস্বাভাবিক রকমের খাড়া। মুখের চামড়া এবড়ো থেবড়ো। তবে কোথায় যেন মানুষের চেহারার ছাপ রয়েছে। দেখে মনে হয় মানুষ আর শুকরের মিশেলে অদ্ভুত এক প্রাণী। হঠাৎ করেই প্রাণীটি এক লাফ দিয়ে দোতলার ছাদ থেকে রাস্তায় নেমে পড়ে।
মোস্তফা তার গাড়ির সবগুলো বাতি আরেকবার পরীক্ষা করে। বাতিগুলি নিভানোই আছে। দ্রুত সে গাড়ির দরজা গুলি ভেতর থেকে লক করে দেয়। থলে থেকে তার ডার্ট গানটি বের করে। মনে মনে আফসোস করে, এত দুর্বল একটি অস্ত্র সাথে নিয়ে এসেছে সে।
পকেট থেকে ফোনটা বের করে দ্রুত মেসকে একটা কল দেয়। বেশ কিছুক্ষণ ফোন বাজার পরেও মেস কলটি রিসিভ করে না।
মোস্তফা গাড়ির ড্যাশবোর্ডে ফোনটি রেখে সামনের রাস্তায় তাকায়। জন্তুটি নেই। হঠাৎ করেই আবার উধাও হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ গাড়ির ভেতর বসে থাকল সে। ভাবলো প্রাণীটিকে এবার হয়তো হারিয়ে ফেলেছে।
হঠাৎ করেই তার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। সে বাইরে কিছু একটার পায়ের শব্দ পায়। মাথা ঘুরিয়ে জানালা দিয়ে তাকাতেই, প্রথমবারের মতো জন্তুটিকে এত কাছ থেকে দেখতে পায় মোস্তফা। লম্বা লম্বা পদক্ষেপে গাড়ির চারপাশে হেঁটে বেড়াচ্ছিল সেটি। চেহারাটি ঠিকমতো দেখা যাচ্ছিল না। জন্তুটি বেশ উঁচু। সেটি এমনভাবে গাড়িটিকে দেখছিল আর চারপাশ দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছিল, মোস্তফার মনে হল যেন টহল দিচ্ছে। মোস্তফা এবার তার ডার্ট গানটি হাতে তুলে নেয়।
ঠিক সেই সময় হঠাৎ তার ফোনটি শব্দ করে বেজে ওঠে। মেস কল দিয়েছে বড্ড অসময়ে। মোস্তফা কোন রকমে সেটি বন্ধ করতেই প্রাণীটি তার গাড়ির কাচের উপর সজোরে একটি আঘাত হানে। মোস্তফা এক মুহূর্ত দেরি না করে গাড়িটি স্টার্ট দেয়। এক্সিলারেটরে পা দিতেই গাড়িটি লাফ দিয়ে সামনে এগিয়ে যায়। সুযোগ বুঝে মোস্তফা সজোরে গাড়িটি চালনা শুরু করে।
সামনের রিয়ার মিররে প্রাণীটির দিকে লক্ষ্য রাখে। সেটি তার গাড়িকে ধাওয়া করে পেছনে পেছনে আসছে। মোস্তফা গাড়ির গতি আরো বাড়িয়ে দেয়। প্রাণপণে সেটিকে পেছনে ফেলার চেষ্টা করে।
বেশ খানিকটা পথ এগিয়ে যাবার পর, রেয়ার মিরর দিয়ে পেছনে তাকায় সে। জন্তুটিকে এখন সেখানে দেখা যাচ্ছে না। একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে যাবে, ঠিক তখনই তার মাথায় কিছু একটা আসে। সে তড়িঘড়ি করে বাইনোকুলারটি হাতে নেয়। দ্রুত উপরে দালানের ভেতর কিছু একটা খুঁজতে থাকে। মুহূর্তেই জন্তুটিকে পেয়ে যায় সে। এত সহজে সেটি তার পিছু ছাড়ার নয়। কয়েকটি দালান পেছনে একটি উচু থামের উপর থেকে থেকে ঝুলে আছে সেটি। তাকিয়ে আছে তারই গাড়ির দিকে।
(চলবে)
Abid faraje, Ayrin kaTun, Masum, Tasmia haq, Liton vhos, Nowrin talukdar, Nera akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
তীরের বেগে লাফিয়ে একটি দালানের ধ্বংসস্তূপের উপর এসে দাঁড়ায় জন্তুটি। মোস্তফা তার গাড়ির গিয়ার বাড়িয়ে দেয়। গাড়ির গতি ইতিমধ্যে ১০০ ছুই ছুই। এই প্রাণীটি যথেষ্ট ক্ষিপ্র গতি সম্পন্ন।
এটি কি তবে কোন ধরনের এলিয়েন প্রজাতি? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করল মোস্তফা।
গাড়ির গতি এখন ১৫০ কিলোমিটার দেখাচ্ছে।
সামনে একটি মোড়। বামের রাস্তাটি সরু। ডান দিকে মোড় নিল মোস্তফার গাড়ি।
ডান দিকের রাস্তায় ঢুকতেই বুঝতে পারল, সম্ভবত ভুল করে ফেলেছে সে। কিছুদূর আগাতেই একটি দিকচিহ্ন বিশিষ্ট পাথুরে সাইনবোর্ড পেছনে ফেলে গেল তার গাড়ি। অস্পষ্ট অক্ষরে সেটিতে লিখা ছিল, সামনে বন্দর।
এটি শহর থেকে বেরিয়ে যাবার পথ। বন্দরে গিয়ে শেষ হয়েছে। রাস্তাটির দুপাশে রয়েছে উঁচু-নিচু বৃক্ষ রাজি। সেগুলোর বেশিরভাগই মৃত। কিছু কিছু গাছে প্রাণ আছে। ডালপালা শাখা-প্রশাখা মেলেছে। পাতা ধরেছে।
অনেক দূর পথ এগিয়ে আসার পর মোস্তফা এবার তার গাড়ির গতি কমিয়ে আনে। জন্তুটি কি এখনো তার পেছনেই রয়ে গেছে? সেটি কিছুটা বোঝার চেষ্টা করে।
গাড়িটি রাস্তার এক পাশে দাঁড় করায়। কিছুক্ষণ গাড়ির ভেতর অপেক্ষা করে। তারপর বাইনোকুলার ও ডার্ট গানটি হাতে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। বাইনোকুলার চোখে চাপিয়ে পেছনের পথটি পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করে। বাইনোকুলারের জুম বাড়িয়ে কমিয়ে আশপাশটা দেখতে থাকে সে। নাইট ভিশন মোডে সব কিছুই পরিষ্কার ফক ফকা দেখাচ্ছিলো।
উঁচু-নিচু গাছগুলি বাতাসের সাথে সাথে দুলে দুলে উঠছে। মোস্তফার মাথায় একটি চিন্তাই শুধু ঘুরপাক খাচ্ছে। এটি কোনো স্বাভাবিক প্রাণী নয়।
মোস্তফা দীর্ঘ সময় ধরে সমুদ্র শহরের আশেপাশের গ্রাম অঞ্চল জঙ্গল চষে বেরিয়েছে। এরকম কোন কিছুই তার চোখে পড়েনি। আর পৃথিবীর এই বুড়ো বয়সেও এই ধরনের কোন কিছু কেউ দেখেছে বলেও তার জানা নেই।
হতে পারে এটা কোন এলিয়েন প্রজাতি অথবা এও হতে পারে কোন ধরনের জৈবিক মারণাস্ত্র। যেটি কোন দুষ্ট মস্তিষ্ক অবৈধ উপায়ে তৈরি করেছে, যেটি অত্যন্ত ক্ষিপ্রগতির আর প্রচন্ড শারীরিক শক্তির অধিকারী।
আকার আকৃতিতেও মানুষের চেয়ে কয়েক গুণ বড়।
মোস্তফা নিজেও যথেষ্ট সামর্থ্যবান। দু'চারটা গুন্ডাকে একাই ঘায়েল করার সামর্থ্য রাখে সে। কিন্তু এই প্রাণীটির আকার আর গতির কাছে তার সামর্থ্য নস্যি।
তবে কি এটি কে কোন ভাবে ল্যাবে ডিজাইন করা হয়েছে। জেনেটিক কোড পরিবর্তন করা হয়েছে। এর ভাল উত্তর অবশ্য মোস্তফার জানা নেই। কেবল হেনাই দিতে পারবে এর উত্তর।
কিন্তু তার জন্য মোস্তফার সেটির কিছু নমুনা সংগ্রহের প্রয়োজন হতে পারে। প্রাণীটির রক্ত কিংবা অন্য কোন ধরনের শারীরিক টিস্যু।
কিন্তু সেটা এই মুহুর্তে পুরোপুরি অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে তার কাছে।
হঠাৎ অদূরেই কিছু পাখপাখালির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে পেল মোস্তফা। প্রথমে ভাবল ভোরের কোন অস্থির পাখির ডাকাডাকি। পরক্ষণে ঘড়িতে তাকাতেই বুঝতে পারল এখনো ভোরের বাকি।
একটু পরে আবারও সেই পাখির কিচিরমিচির। মোস্তফার কাছে সেটা অনেকটা অস্থির আর্তনাদের মতো মনে হলো। এবার যেন গাছ-পালাগুলি ক্ষণে ক্ষণে নড়েচড়ে উঠলো। মোস্তফা তার হাতের বাইনোকুলারটি ফের চোখে নিল। তার থেকে কয়েক কয়েকশো ফিট দূরে উপরে গাছগুলির শাখা-প্রশাখা নড়েচড়ে উঠছে।
মোস্তফার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ সেগুলির দিকে তাকিয়ে রইল।
'অসম্ভব!' অস্ফুট স্বরে তার মুখ থেকে শব্দটি বের হলো।
মোস্তফা নিজেও জানেনা কতটা বড় বিপদ সে আজ তার জন্য ডেকে এনেছে।
আর এক মুহূর্ত এখানে দেরি করা তার কাছে সমীচীন মনে হলো না। সে দ্রুত পায়ে গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করল। গাড়ি স্টার্ট দেয়ার চেষ্টা করলো।
কোন এক আশ্চর্য কারণে তার গাড়িটি স্টার্ট নিল না। মোস্তফা আবারও চেষ্টা করলো। হঠাৎ করেই গাড়িটি তার কথা শুনছে না। তবু সে তার চেষ্টা চালিয়ে গেল।
ঠিক পরক্ষনেই দানবীয় কিছু একটা সজোরে তার গাড়ির ছাদের উপর আছড়ে পড়ল। ছাদটি দুমড়ে-মুচড়ে মোস্তফার মাথার সাথে সজোরে ধাক্কা খেলো। কয়েক মুহূর্তের জন্য মোস্তফা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।
রীতিমত ছেলে খেলায় মেতে উঠেছে এখন প্রাণীটি গাড়িটি নিয়ে। জানালা গুলি ভেঙে গুড়িয়ে চৌচির। গাড়িটির একটি দরজায় হটাত হ্যাঁচকা টান দিয়ে গাড়ি থেকে আলাদা করে সেটি দূরে ছুঁড়ে ফেলে পশুটি।
মোস্তফা প্রানপনে তার গাড়িটি স্টার্ট দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যায়। এত কিছুর মধ্যেই হঠাৎ করে তার গাড়িটিও স্টার্ট নিয়ে নেয়। সে দ্রুত অ্যাক্সিলারেটর এর উপর তার পা বসিয়ে দেয়।
কিন্তু কিছুতেই গাড়িটিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছে না সে। গাড়িটির দরজার ভাঙ্গা অংশটিতে দুই হাত দিয়ে ধরে, জন্তুটি পুরো গাড়িটি টেনে রেখেছে।
মোস্তফা গাড়ির গিয়ার কমিয়ে আনে। প্রথম গিয়ারে দিতেই যেন গাড়িটি এবার একটু বেশি শক্তি পায়। ওই অবস্থাতেই গাড়িটি জন্তুটিকেসহ টেনেহিঁচড়ে অল্প অল্প করে সামনে এগিয়ে যায়।
এই জন্তুটি প্রচন্ড শক্তিশালী। নাছোড়বান্দা। কোনভাবেই সে গাড়িটি ছাড়তে নারাজ। এ যেন তার আর মোস্তফার মধ্যে এক প্রাণপণ লড়াই।
মোস্তফাও থামার পাত্র নয়। সে জানে এই যাত্রায় ব্যর্থ হলে তাকে ধরে ফেলবে জন্তুটি। ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।
এবার সেটির মুখ থেকে যেন এক ধরনের গোংগানীর মত শব্দ বের হতে শুরু করে। মোস্তফা নিজেই নিজেকে বোঝায়, তুমি পারবে। চালিয়ে যাও। জন্তুটি হাঁপিয়ে উঠছে।
মোস্তফা একহাত দিয়ে গাড়ির হুইলটি ধরে অন্য হাতে তার একমাত্র সম্বল ডারট গানটি হাতে নিয়ে সেটির বাট দিয়ে জন্তুটির ধারালো নখর যুক্ত হাতের উপর সজোরে আঘাত হানে। উপর্যুপরি কয়েকটি আঘাতের পরে কিছুটা যেন কাজ হয়। জন্তুটির একটি হাত গাড়িটি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। মোস্তফা সুযোগ বুঝে সজোরে গাড়ির এক্সিলারেটর চাপ দিতেই অন্য হাতটি তার গাড়িটি আর আটকে রাখতে পারে না।
গাড়িটি এক লাফ দিয়ে প্রচন্ড গতিতে রাস্তার ওপাশের কিনারায় চলে যায়। হঠাৎ করে পাওয়া তীব্রগতিতে গাড়িটি কিছুটা নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে। মোস্তফা দ্রুতই গাড়ির হুইল বিপরীত দিকে ঘুরাতে শুরু করে। তাতে কিছুটা কাজ হয়। রাস্তার একদম কিনারা থেকে সে গাড়িটি ঘুরিয়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়।
পেছনে জন্তুটি যেন মাটি কামড়ে বসে গাড়িটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছিল আর অপেক্ষা করছিল সেটি কখন উল্টে পরবে। অবশেষে মোস্তফা তাকে নিরাশ করে গাড়িটিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।
গাড়িটি রাস্তার মাঝখানে নিয়ে আসতেই দ্রুত গতি বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করে সে। তারপর রিয়ার মিরর দিয়ে জন্তুটিকে খেয়াল করে। সেটি পেছনে রাস্তায় বসে স্থির তার গাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে।
একরকম ধস্তাধস্তিতে কখন যে ভোরের আলো ফুটে উঠতে শুরু করেছে খেয়ালই করেনি মোস্তফা। কোন এক অজ্ঞাত কারণে জন্তুটি এবার আর তার পিছু নিল না। যদিও গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। ড্যাশবোর্ডে সেটির গতি কোনরকমে ১০০ কিমি দেখাচ্ছে।
সারারাত এই ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়াতে কাউকে না কাউকে যে হার মেনে নিতেই হতো, তবে এই মুহূর্তে সেটি মোস্তফা নয়। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির কাছে হার মানতে হলো অপরজনকে।
যখনই মোস্তফা একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে যাবে ঠিক তখনই অপর দিক থেকে একটি সামুদ্রিক মালবাহী কাভার্ড ভ্যান এর সাথে তার গাড়িটি মুখোমুখি ধাক্কা খায়। উল্টে গিয়ে একটি গাছের সাথে সজোরে বাড়ি খায় সেটি। নিজেকে গাড়ির সিট বেল্ট এর সাথে উল্টোদিকে ঝুলন্ত অবস্থায় আবিস্কার করে মোস্তফা। তার মাথার ক্যাপটি হারিয়ে গেছে ইতিমধ্যে। মাথা থেকে টপ টপ করে রক্ত ঝরছে। মোস্তফার চোখ দুটি এবার বন্ধ হয়ে আসে। দেহটি ধীরে ধীরে অসাড় হয়ে পড়ে। সে যে আর কিছুই ভাবতে পারছে না। (চলবে)
Abid faraje, Ayrin kaTun, Masum, Sume akter, Liton vhos, Nowrin talukdar, Nera akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
হসপিটালের বিছানায় শুয়ে আছে মোস্তফা। বিছানার মাথার দিকটা একটু উঁচু করে রাখা। এক হাতে স্যালাইন চলছিল। মাথা ব্যান্ডেজ করা। বাম হাতের কনুই অবধি ব্যান্ডেজে মোড়ানো হাতটি কাধ থেকে এক ধরনের সাদা দড়ির সাহায্যে ঝুলে আছে।
ইতিমধ্যে জ্ঞান ফিরে এসেছে মোস্তফার।
হাতে একটি সাদা কাপে এক চুমুক দিয়ে কাপটি পাশের ডেস্কের উপর রাখল মোস্তফা। সবাই তাকে ঘিরেই দাঁড়িয়েছিল। মোস্তফা আরষ্ঠ ভাব কাটিয়ে তাদের দিকে ফিরে তাকাতেই, মেস বলে ওঠে, পরেরবার আমাকে সঙ্গে না নিয়ে কোনরকম গোয়েন্দাগিরি নয়!
মোস্তফা একটু মুচকি হাসে।
হাসলে চলবে না। মেস কড়া ভাষায় উত্তর দেয়।
জ্যাকের চেহারায় তখনো এক ধরনের কাঠিন্য। সে মোস্তফার দিকে তাকিয়ে বলে, তুমি ওই রাতে বন্দরের পথে কেন গিয়েছিলে? তাও সম্পূর্ণ একা? তুমিতো জানো সেই দিককার রাস্তা-ঘাট ভালো নয়।
মোস্তফা জ্যাকের কথারও কোন জবাব দেয় না। জুসের কাপটি হাতে নিয়ে আরেকবার চুমুক দেয়। যদিও আঙ্গুরের জুস খুবই মিষ্ট কিন্তু এই মুহূর্তে সেটি মোস্তফার কাছে বিস্বাদ লাগছে।
এবার হেনার দিকে ঘুরে তাকায় মোস্তফা। হেনা যদি কিছু বলতে চায়।
আমি তোমাকে সবচেয়ে বেশি ম্যাচিওর ভেবেছিলাম। হেনা কিছুটা হতাশ ভঙ্গিতে বলে। কিন্তু তুমি আমাকে পুরোপুরি নিরাশ করেছ। মধ্যরাতে কাউকে না জানিয়ে এভাবে সমুদ্র শহর ভ্রমণের ইচ্ছা এক ধরনের ছেলেমানুষি ছাড়া আর কিছু নয়।
এবারেও কোনরকম উত্তর দেয়না মোস্তফা। শুধু একটু মুচকি হাসে। তার জন্য সবার যত্ন, ভালোবাসা তাকে কিছুটা মুগ্ধ করে।
এর মধ্যেই একজন নার্স কেবিনের দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে। মোস্তফা সাথে সাথে একটি নড়েচড়ে ওঠে। যেন একটু চনমনে বোধ করে। সবার সাথে নার্সটিকে পরিচয় করিয়ে দিয়। ও হচ্ছে মিকা সুমাইয়া। আমার পুরনো বন্ধু।
বেশ খানিকটা লম্বা, ছিপছিপে গড়ন আর চাপা গায়ের রং এর মেয়েটি সব মিলিয়ে দেখতে খুব চমৎকার আর আকর্ষণীয়।
সবাইকে উদ্দেশ্য করে, 'হাই' বলে জ্যাকের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয় মিকা। হেনা ব্যাপারটি খেয়াল করে। জ্যাক হাত বাড়িয়ে মিকার সাথে হ্যান্ডশেক করে, নিজের পরিচয় দেয়। একে একে বাকি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
অন্যদিকে মেসের মিনমিনে চোখের সেই পুরনো সমস্যাটি দেখা দেয়। একদিকে ঘাড় স্থির রেখে তার ছোট ছোট চোখ দুটি বেঁকে যায়। আড় চোখে মেয়েটির দিকে নিস্পলক তাকিয়ে থাকে। আর হঠাৎ করেই যেন তার বুকটা আরও কিছুটা ফুলে ওঠে। নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসে।
মিকা থাকলে আমি আর কোন চিন্তা করছি না। সে আমার জন্য অনেক করেছে। মোস্তফা মিকার প্রশংসা করে বললো।
মোটেও তা নয়। লাজুক ভঙ্গিতে উত্তর দেয় মিকা। হেনা তখনো মেয়েটিকে আপাদমস্তক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে লক্ষ্য করে চলছে।
আচ্ছা। আমরা এখন তবে আসি। হঠাৎ করেই জ্যাক প্রসঙ্গ পাল্টায়। তুমি বিশ্রাম করো। মোস্তফাকে উদ্দেশ্য করে বলে। তারপর মিকার দিকে তাকায়, বলে তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমার বন্ধুর খেয়াল রাখার জন্য। তোমাদের সময়টা ভালো কাটুক।
হেনা কোন রকম কথা বলে না। এমনকি বিদায় না জানিয়েই চুপচাপ কেবিন থেকে বেরিয়ে পড়ে।
আমি মোস্তফার সাথে থেকে যাই! মেস যেন যেতে ইচ্ছুক নয়। অনেকটা বাচ্চারা খেলনার দোকানে গিয়ে যেরকম আবদার করে, তার আবদারটি খানিকটা সেরকমই শোনালো।
মেস তোমার না থাকলেও চলবে। জ্যাক মেসকে কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করে। তাছাড়া আমাদের অভিযানে তোমাকে প্রয়োজন।
অগত্যা অনেকটা নিজের অনিচ্ছাতেই মেস নিজেকে টেনেটুনে কেবিন থেকে বের করে নিয়ে আসে। বের হবার সময় মিকার দিকে তাকিয়ে একটু শুকনো হাসি দেয়।
গভর্নর শর্নহোস্ট তার ডানহাত ক্যাপ্টেন নককে ডেকে পাঠায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে দরজার সামনে এসে হাজির হয়। গভর্নরকে অভিবাদন জানিয়ে কক্ষের ভেতরে প্রবেশ করে।
ক্যাপটেন নক গভর্নর এর প্রতি ভীষণ অনুগত। শর্নহোস্ট তার টেবিলের ওপর রাখা টিভির পর্দায় চোখ রেখে বলে, আমি দখলদার হ্যামারের সাথে দেখা করতে চাই। তুমি শিগগিরই সেটার বন্দোবস্ত করো।
জি, অবশ্যই ম্যাডাম। প্রায় সাথে সাথেই মাথা ঝাঁকিয়ে উত্তর দেয় ক্যাপ্টেন নক।
হেমার টেরহুন হল দখলদার বাহিনীর এক নেতা। সমুদ্র শহরের বাইরে সে একচেটিয়াভাবে তার রাজত্ব কায়েম করেছে। সমুদ্র শহর ঘিরে আশেপাশের গ্রামে, জঙ্গলে সব ধরনের অরাজকতার সাথে হ্যামার জড়িত। যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলায় তার নামটি সবার আগে উচ্চারিত হয়। শর্নহোস্ট নিকেও হ্যামারকে তার বিভিন্ন কুকর্মে ব্যবহার করে থাকে।
জ্যাক হেনা ও মেসকে সঙ্গে নিয়ে কুখ্যাত ইস্ট-কোস্ট ভবনটির সামনে এসে পৌঁছায়। ক্যাডিলাক থেকে নেমে সরাসরি ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে।
কিছুটা পথ এগোতেই লোহার কেচি গেটের তৈরি একটি লিফট নিচে নেমে আসে। সবাই লিফটের ভেতর প্রবেশ করলে তৃতীয় তলার বোতাম চাপে জ্যাক।
এই ভবনেই ভাইস টেরহুনের মুল ডেড়া। ভাইস বিচ্ছিন্ন দখলদারদের একজন। যারা গ্রামে লুটপাট করে বেড়ায়, অবৈধভাবে পশু হত্যা করে।
গ্রামের সব ধরনের অরাজকতার সাথে তার এবং তার ভাই হ্যামার নাম উঠে আসে।
জ্যাক জানে এভাবে তার ডেড়ায় চলে আসাটা এক অর্থে নিজেকে সাপের গর্তের মধ্যে ফেলে দেয়ার মতো।
মেকানিক তুমি কি মনে করে আমার আস্তানায় এসেছো? এক ধরনের তাচ্ছিল্যভরা কন্ঠে ভাইস কথাটি জিজ্ঞেস করে।
আর তার পরেই তার নির্লজ্জ চোখজোড়া হেনার শরীরের উপর ভর করে। তাকে আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করে, ভাবে, মাস্ত কার্ভি মেয়েটা। তারপর নিজের অজান্তেই এক ধরনের উদ্ভট অঙ্গভঙ্গি করে। মেস দূর থেকে পুরো ব্যাপারটি খেয়াল করে।
মোটা ফোমের গদিওয়ালা সোফায় বসে থাকা ভাইসের পিছনে দাঁড়িয়ে আছে তার দুই সাঙ্গ-পাঙ্গ। কিছুটা অস্থির সাঙ্গোপাঙ্গ যেন একটি আদেশের অপেক্ষায় রয়েছে।
আমি এখানে কোন ধরনের গন্ডগোল করতে আসিনি। জ্যাক উত্তর দেয়। লক্ষ করে তাদের পিছনে ভাইসের আরও দুটি চেলা ইতিমধ্যে এসে দাঁড়িয়েছে। শক্ত সমর্থ চেহারার চেলা দুটির চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ। যেন বিনা আমন্ত্রণে জ্যাকের এখানে চলে আসাটা তাদের একদমই পছন্দ হয়নি।
ভাইস চোখের ইশারায় ওদেরকে শান্ত থাকতে বলে।
জ্যাক আবার বলতে শুরু করে, গ্রামে অনবরত ডাইনোসরেরা আক্রমণ চালাচ্ছে। ঘরবাড়ি ধ্বংস করছে। মানুষ হতাহতের ঘটনাও ঘটেছে। একটু থেমে আবার বলে, অনেক ডাইনোসর হারিয়ে যাচ্ছে। মারা পড়ছে। কেউ বা কারা তাদের সরিয়ে নিচ্ছে। পাচার করছে। কথাগুলি বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে জ্যাক।
এতক্ষন চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে জ্যাকের কথাগুলি শুনে চলছিল ভাইস। এবার একটু অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে অনেকটা দায়সারা ভাবে বলে, আমার এই বিষয়টি সম্পর্কে কোন ধারণা নেই।
কথাটি বলার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পেছন থেকে মেস চেচিয়ে ওঠে, বলে, মিথ্যে বলছে ও। নাটক করছে। ও জানে সবকিছুই।
মেসের কথা শেষ না হতেই তাদের পেছনে প্রহরী দুটি বেশ নড়েচড়ে ওঠে। অনেকটা তাকে ঘিরে ধরে দাঁড়ায়। শুধুমাত্র একটা নির্দেশের অপেক্ষায় এখন।
মেস ওদের দিকে মুখ ঘুরিয়ে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে, মেস নামের অর্থ জানো? প্রহরী দুটি কোন উত্তর দেয় না। মেস আবার বলে, মেস শব্দের অর্থ ঝামেলা। আমি ঝামেলা ছাড়া এখান থেকে নড়ছি না। প্রহরী দুটি না পারে ওকে প্রায় আক্রমণ করে বসে।
ভাইস হাতের ইশারায় ওদের থামতে বলে।
তারপর জ্যাককে উদ্দেশ্য করে বলে, তুমি এখন যেতে পারো। আমার মনে হয় তোমার প্রশ্নের উত্তর এখানে নেই।
জ্যাক তার কোন কথার উত্তর দেয় না। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়াতে থাকে। সম্ভবত মেসকে এক ধরনের ইঙ্গিত প্রেরণ করে।
তার পরক্ষনেই মেস পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ভাইসের একটি চেলার কলার টেনে ধরে, মাটি থেকে সেটিকে শূন্য তুলে ভাইসের দিকে সজোরে ছুড়ে মারে। মেসের অতর্কিত এই হামলায় হতবম্ভ ভাইস কিছু করে ওঠার আগেই চেলাটিকে নিয়ে সোফাসহ পেছনে উল্টে পড়ে। হেনা অন্যটিকে তার শক্তিশালী, পুরু, লম্বা পা দিয়ে মুখ বরাবর সজোরে একটি লাথি মারে। সঙ্গে সঙ্গে সেটি পেছনের দরজার উপরে গিয়ে আছড়ে পড়ে।
ভাইসের চেয়ারের দুপাশে দাঁড়িয়ে থাকা সাঙ্গ-পাঙ্গ এবার জ্যাকের উপর চড়াও হয়। সাঙ্গ হঠাৎ করেই একটি চাপাতি নিয়ে জ্যাকের উপর কোপ বসানোর চেষ্টা করে। জ্যাক নিচু হয়ে তার দুই পা দিয়ে সজোরে সেটির পায়ে আঘাত করে। চেলাটি ভারসাম্য রাখতে না পেরে সামনে একটি ভাঙ্গা কাচের বোতলের ওপর মুখ থুবরে পড়ে। সাথে সাথে তার চেহারাটি কেটে ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
অন্য চেলাটি সামনে আসতেই জ্যাক তার কাধ দিয়ে ঠেলে সেটিকে দেয়ালের সাথে সজোরে আছরে দেয়। তারপর সেটির মুখের উপর উপর্যুপরি কয়েকটি ঘুষিতে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে।
ইতিমধ্যে কোনরকমে একদিকে সোফাটি ঠেলে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ভাইস। মেস ততক্ষণে ওর সামনে গিয়ে নিচু হয়ে ওর কলার ধরে, বলে আমি তোমাকে উঠতে সাহায্য করছি। তারপর দুই হাতে কলার চেপে অনেকটা শুন্যে তুলে ফেলে বিশালদেহী ভাইসকে।
মেসের থেকেও প্রায় দেড়গুণ বড় বিশালদেহী ভাইসকে (একে আমরা প্রথম বস নামে চিনি) এত সহজে শূন্যে তুলে ফেলতে দেখে, হেনা যেন একটু অবাকই হয়। মনে মনে মেসের শক্তির প্রশংসা করে।
মেস দাঁতে দাঁত চেপে, মুখ শক্ত করে বলে, আমার একটি ঘুশি তোমার নাক চিরতরে বসিয়ে দিতে পারে। মেস তার বিশাল থাবা মুষ্টি করে ভাইসের মুখের উপর আঘাত বসানোর প্রস্তুতি নেয়।
ভাইস মাথা নাড়তে নাড়তে উত্তর দেয়, আমি যা জানি বলছি। আমাকে ছাড়ো। জ্যাক মেসের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করে। মেস ভাইসের কলার ছেড়ে দেয়।
এবার ভাইস অকপটে সব বলতে থাকে, ডাইনোসরদের উত্ত্যক্ত করার সাথে আমার ভাই হ্যামার জড়িত। সে সমুদ্র শহরের কোন এক উচ্চপদস্থ ব্যক্তির নির্দেশে এগুলি করছে। সেগুলির গায়ে এক ধরনের যন্ত্র বসিয়ে দিয়েছে। কথাটি বলে দ্রুত কয়েকটা নিশ্বাস নেয় ভাইস।
আর উত্তরের ঘটনাটি? সেখানে অসংখ্য ডায়নোসর হত্যা করা হচ্ছে? পাচার করা হচ্ছে? এবার হেনা জানতে চায় বিষয়টি।
আমি সে ব্যাপারেতে তেমন কিছু জানি না। মেস আবার তার চওড়া হাত মুষ্টি করে। সেদিকে তাকাতেই কিছুটা তোতলাতে তোতলাতে ভাইস বলে, তবে.. তবে বুচার নামে একজন এই ধরনের কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে পারে।
মেস সাথে সাথে তার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে, সেই কসাই, আমি যাকে চিনি। বলেই তার বিশাল মুষ্টিমেয় হাত দিয়ে ভাইসের চেহারার উপর ঘুষি দেওয়ার জন্য চড়াও হয়।
ভাইস হাতজোড় করে বলতে থাকে, আমার চেহারাটি নষ্ট করো না। মেস হেনার দিকে তাকিয়ে ভাইসের সেই অশোভন মুখভঙ্গির কথা চিন্তা করে। হেনা যেন ব্যাপারটা বুঝে এক ধরনের হ্যা সূচক মাথা নাড়ে। পরক্ষনেই ভাইসের চেহারার উপর ধরাম করে আধ-মণে একটি ঘুষি বসিয়ে দেয় মেস। মুহুর্তেই ভাইসের চেহারা বয়ে গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসতে লাগে। (চলবে)
Abid faraje, Ayrin kaTun, Masum, Tasmia haq, Sume akter, Liton vhos, Nowrin talukdar and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
কিছুটা তন্দ্রাচ্ছন্ন মোস্তফা হঠাৎ করেই জানালায় খট করে একটি শব্দ পায়। সামনের দেয়ালে ঝুলে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে রাত বারোটার বেশি বেজে গেছে। সারাদিন শুয়ে থেকে তার চোখ থেকে ঘুম অনেকটাই কেটে গেছে। যেটুকু ঝিমুনি ভাব আছে সেটার কারণ শিরায় দেয়া ঘুমের ওষুধ।
মোস্তফা ক্লান্তিতে মাথাটা বালিশে এলিয়ে দেয়। নিজের বাম হাতের দিকে লক্ষ করে। হাতটি কনুই অবধি ব্যান্ডেজে মোড়ানো। তার আর রহস্য সমাধান করতে যাওয়া হলো না। হাতটির দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে। তার বন্ধুদের এখন একাই এই রহস্যের সমাধান করতে হবে।
হঠাৎ করে জানালার কাচের উপর খট করে আবার একটি শব্দ হয়। মোস্তফা ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকায়। বাইরে প্রচণ্ড দমকা হাওয়া বইছে। ভারী বাতাসের ধাক্কায় জানালাটি একটু পরপর কেঁপে উঠছে।
কোন অদ্ভুত কারণে তার কাছে মনে হয় জানালাটি কেঁপে ওঠার কারণ শুধুমাত্র বাইরে বয়ে যাওয়া বাতাস নয়। মোস্তফা গায়ের কম্বলটি এক পাশে সরিয়ে বুকে বসানো ইসিজির লিড গুলি টেনে খুলে ফেলে।
তারপর ধীরে ধীরে বিছানা থেকে উঠার চেষ্টা করে। খাটের রেলিংয়ের উপর ডান হাতে ভর করে কোনরকমে উঠে দাঁড়ায়। সাথে সাথেই তাঁর মনে হয় মাথাটা যেন একবারের জন্য ঘুরে উঠল। মোস্তফা চোখ দুটি বন্ধ করে ফেলল। কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থাকার পর, মনে হলো এবার কিছুটা স্বাভাবিক লাগছে। যদিও তার শরীরের দুর্বলতা কাটেনি। পা-দুটি তখনো বড্ড অসাড় লাগছিল। মনে হচ্ছিল জোর করে টেনে টুনে তাকে হেঁটে যেতে হচ্ছে।
জানালা নিয়ে মোস্তফা ভেতরে সেদিনের পর থেকে এক ধরনের ভয় কাজ করে। তাই জানালা শব্দটি তাকে কিছুটা ভাবিয়ে তুলেছে। কিছুটা ভয়ে ভয়েই জানালাটির এক পাশে গিয়ে দাঁড়ায় মোস্তফা। তারপর দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বাইরে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করে। বাইরে তখনো দমকা হাওয়া বয়ে চলছে। মনে হচ্ছিল খুব শীঘ্রই বৃষ্টি হবে।
হঠাৎ টের পেল দমকা হাওয়া ছাড়াও বাইরে অন্য কোন একটি শব্দ অনবরত হয়ে চলছে। যেন শব্দটি কেউ হসপিটালের দালানের দেয়াল ঘিরে করে চলছে।
মোস্তফা জানালা দিয়ে বাইরে উঁকি দেয়ার চেষ্টা করল। আশেপাশের বিল্ডিং গুলিতে তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নজরে এল না। নিচে রাস্তায় দু-একটি গাড়ি হসপিটালের সামনে পার্ক করা রয়েছে। রাস্তাটি জনমানব শুন্য। শুধু একটি স্ট্রীট লাইট নিভু নিভু করে জ্বলছিল।
অদ্ভুত শব্দটি তখনও শুনতে পাচ্ছিল মোস্তফা। এবার সে জানালার কপাটটি আস্তে টেনে কিছুটা খুলে ফেলে। জানালার ফাঁক গলিয়ে মাথা বের করে বাইরে তাকায়। তার ডান পাশের দেয়াল ঘিরে একটু দুরে উপরের দিকে উঠতে থাকা একটি পাইপের উপর এবার কিছু একটা নজরে এল মোস্তফার। একটি ছায়া। পাইপটি আকড়ে ধরে উপরে উঠে আসার চেষ্টা করছে। সবিস্ময়ে কয়েক পা পেছনে সরে আসে মোস্তফা। অন্ধকারে ছায়াটির নড়াচড়া, গতিবিধি তার কাছে খুবই পরিচিত লাগে। কোন একটি কিছুর সাথে এই গতিবিধি পুরোপুরি মিলে যায়। বুকের ভেতরটা হঠাৎই ধক করে ওঠে। এটি সেই আদাজল খেয়ে তার পেছনে লেগে থাকা জন্তুটি!
অসার পা দুটি দ্রুত চালানোর চেষ্টা করে মোস্তফা। জানালা থেকে দ্রুত সরে আসে। বিছানার পাশে ডেস্কের ওপরে থাকা ইন্টারকমটিতে চাপ দেয়।
তারপর কোনরকমে উঠে ঘরের ভেতরে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করে। বালিশের পাশে থাকা মোবাইল ফোনটি দ্রুত পকেটে পুরে নেয়।
বিছানার পাশে থাকা ডেস্কের ড্রয়ারগুলি একে একে টেনে খুলতে থাকে। এরমধ্যে দরজা খুলে তড়িৎ গতিতে কেবিনের ভেতর প্রবেশ করে মিকা সুমাইয়া।
একি! অস্ফুট স্বরে চিৎকার করে ওঠে সে। তুমি বিছানা ছেড়ে উঠে পড়েছ!
মোস্তফা তৎক্ষণাৎ তার ডান হাতের তর্জনীটি ঠোঁটের উপর রেখে মিকাকে চুপ থাকার নির্দেশ দেয়। মিকা দৌড়ে মোস্তফা কাছে চলে আসে। পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করে। তার বুকে পিঠে হাত বুলিয়ে সবকিছু ঠিক আছে কিনা বোঝার চেষ্টা করে।
মোস্তফা মাথা নেড়ে তাকে আশ্বস্ত করে। তারপর ফিসফিসিয়ে বলে, আমাকে এখন থেকে বের হতে হবে। এক্ষুনি!
মিকা বিস্মিত হয়ে উত্তর দেয়, তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?
মোস্তফা তার কথার কোন জবাব দেয় না। দরজার দিকে অনেকটা জোর করেই নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। মিকা তখনও পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারেনি। দ্রুত মোস্তফার দিকে এগিয়ে যায় সে। তার বাহুতে হাত রেখে ধরে ধরে তাকে কেবিনের বাইরে করিডোরে নিয়ে আসে।
করিডর ধরে কিছুটা পথ এগোতেই, কেবিনের ভেতরে বিকট এক শব্দ হয়। কেউ যেন কেবিনের জানালাটি ভেঙে চৌচির করে ফেলেছে।
বিস্ময় হতভম্ব মিকা পেছনে তাকিয়ে থমকে যায়। মোস্তফা তার হাতটি চেপে ধরে, চেচিয়ে বলে, আমাকে দ্রুত এখান থেকে বের করে নিয়ে চলো।
মিকার চেহারায় তখনো স্পষ্ট আতঙ্কের ছাপ। সৎবিৎ ফিরে পেতে তার কিছুটা সময় লাগে। তারপর কাঁপা কাঁপা গলায় জানতে চায়, এসব কি ঘটছে!
মোস্তফা কোন উত্তর দেয় না। শুধু বলে, আমার ডার্ট গানটি কোথায় মিকা?
প্রথমে কিছু বুঝতে উঠতে পারে না মিকা। পরক্ষনেই মোস্তফাকে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যেতে বলে, সেটি আছে নিচতলায়।
তুমি এখনি সেটি নিয়ে আসো।
তোমাকে এইভাবে রেখে? অবাক হয়ে উত্তর দেয় মিকা।
আমাকে নিয়ে কোন চিন্তা করো না। যত দ্রুত সম্ভব তুমি গানটি নিয়ে আসো। আমি ছাদের দিকে যাচ্ছি।
মিকা কিছু একটা বলতে চায়। মোস্তফা দ্রুত লিফটের বোতাম চাপতে থাকে। লিফটটি খুলে গেলে মিকাকে ভেতরে যাওয়ার ইঙ্গিত করে, তারপর সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায় সে।
কেবিনের ভেতর ইতিমধ্যে সবকিছু লন্ডভন্ড করে চলছে কেউ। কাউকে তন্নতন্ন করে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
সিঁড়ি দিয়ে কয়েকটি ধাপ উপরে উঠতেই পেছন থেকে সজোরে কেবিনের দরজা ভেঙে ফেলার শব্দ কানে আসে মোস্তফার। জন্তুটি আদাজল খেয়ে তার পিছু নিয়েছে। দুজনের যেকোনো এক জনকে এই খেলায় হার মানতেই হবে। তা না হলে এই ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া চলতেই থাকবে। মোস্তফা হাঁটু গেড়ে কোনরকমে সিড়ির হাতল ধরে ধরে ছাদে ওঠার চেষ্টা করে।
এদিকে মিকা সিঁড়ি বেয়ে দৌড়ে নিচে নেমে আসে। রিসেপশন কক্ষে কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করতে থাকে।
ইতিমধ্যে রিসিপশনিস্ট চেয়ার ছেড়ে কোথায় চলে গেছে। হসপিটালের ভেতরে কিছুটা হইচইও শুরু হয়ে গেছে।
মিকা দ্রুত ড্রয়ার খুজে একটি চাবি নেয়। চাবিটি দিয়ে মোস্তফার কেবিনেটটি খোলার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ চেষ্টার পরে বুঝতে পারে, চাবিটি সঠিক নয়। সে আবার রিসেপশন টেবিল সামনে চলে আসে। একটির পর একটি ড্রয়ার খুলে চাবিটি খুঁজতে থাকে।
এরই মধ্যে পুরো হসপিটালিটি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যে একটা লাইট জ্বলে উঠছে, পরক্ষণেই নিভে যাচ্ছে। অনেকগুলি চাবি হাতরে অবশেষে মোস্তফার কেবিনেটের চাবিটি খুঁজে পায় মিকা। কেবিনেটের দিকে পা বাড়াবে ঠিক সেই মুহূর্তেই লক্ষ্য করে, সিঁড়ি দিয়ে কেউ একজন নীচে নেমে আসছে। ইতিমধ্যে উপরের ফ্লোর গুলিতে মানুষের হইচই ছোটাছুটি বেড়ে গেছে।
মিকা তড়িৎ গতিতে রিসেপশন টেবিলের ড্রয়ার গুলির মাঝখানে থাকা ফাঁকা জায়গাটিতে হাত-পা গুটিয়ে বসে পড়ে। উপরে বাতিটি কিছুক্ষণ পরপর জ্বলনিভু করছিল। হঠাৎ সেই আলোয় সিডির ওপাশে কিছু একটার ছায়া দেখতে পায় মিকা। বাতিটি জ্বলে উঠতেই ছায়াটি তার কাছে দৃশ্যমান হয়। প্রতি মুহূর্তে বাতিটির জলানিভুতে তার কাছে মনে হতে থাকে ছায়াটি অল্প অল্প করে এই দিকে এগিয়ে আসছে। ছায়াটির আকৃতি মিকার কাছে খুব একটা স্বাভাবিক ঠেকে না।
প্রথমে সে মনে করেছিল, হাসপাতালের ভেতরে কোন র্যাপ্টর ঢুকে পড়েছে। র্যাপ্টর হলো এক ধরনের হিংস্র ছোটখাটো আকৃতির ডাইনোসর। যেগুলি মানুষ থেকে কয়েক গুণ বড়। অন্য ডাইনোসর থেকে অনেক বেশি তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন। কিন্তু পরক্ষনেই ভাবে সমুদ্র শহরে ডাইনোসর নেই। আর হঠাৎ করে এই সরীসৃপ হসপিটালে ঢুকে পড়ার কথাও নয়।
হঠাৎ তার ভাবনায় ছেদ পড়ল। সিঁড়ি ঘর থেকে এক ধরনের ঘরঘর শব্দ পেল, যেন কোন ধরনের হিংস্র প্রাণী রয়েছে সেখানে।
এবার সে একরকম নিশ্চিত এটি আর যা-ই হোক কোনো মানুষ নয়। ইতিমধ্যে পুরো ঘরখানা অন্ধকার হয়ে গেছে। রিসিপশনের টেবিলের উপরে থাকা কাচের ওপাশে কিছু একটা ঘন নিঃশ্বাস ফেলছে।
জন্তুটি আশেপাশে কিছু একটা খুঁজে বেড়াচ্ছে। সেটির ভারী পায়ের পদক্ষেপ মিকার কানে আসছে।
হঠাৎ করেই রিসেপশন রুমের চেয়ারগুলির দেয়ালের উপর আছড়ে পড়ার শব্দ পায় মিকা। কেউ যেন তীব্র ক্ষোভে দেয়ালের উপর সজোরে ছুড়ে মারছে সেগুলি।
এবার যেন মিকা কিছুটা বিস্মিত হয়ে পড়ে। ডাইনোসর জাতীয় প্রাণী কখনোই সেগুলি দেয়ালে ছুড়ে মারতে পারবে না। মিকা স্পষ্ট খেয়াল করে কেউ যেন হাত দিয়ে উঠিয়ে চেয়ার গুলি দেয়ালের সাথে আছরে ফেলছে। তবে কী এটি কোন মানুষের কাজ!
কিন্তু তা কি করে সম্ভব হয় সে যা দেখেছে, বুঝতে পেরেছে তাতে এটিকে কোন ভাবে মানুষ হিসেবেও ভাবা যাচ্ছে না।
মিকা সভয়ে নিজের দুই কানে হাত চাপা দেয়। চোখ দুটি বন্ধ করে ডেস্কের ফাঁকা জায়গায় চুপচাপ লুকিয়ে থাকে। আর প্রার্থনা করে কখন শেষ হবে এই তাণ্ডব লীলা।
অল্প কিছুক্ষণ পর যেন কিছুটা যেন শান্ত হয়ে এলো পরিবেশ। জন্তুটি কোন এক দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সম্ভবত পুরুষ ওয়ার্ড এর দিকে।
সেটির ভারি পায়ের পদক্ষেপের শব্দ কিছুটা কমে আসতেই, মিকা দৌড়ে মোস্তফার কেবিনেটটি খোলার চেষ্টা করে।
সেটি খুলতেই একটি ডার্ট গান ও রক্তমাখা একটি বাইনোকুলার উদ্ধার করে সে। তারপর কাধে ডার্ট গানটি ঝুলিয়ে হাতে বাইনোকুলারটি নিয়ে সিঁড়ির দিকে পা বাড়ায়। চারিদিকে নজর দিতে দিতে এক পা দু'পা করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।
অবশেষে সে যখন ছাদে পৌঁছায় ততক্ষণে অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে ছাদ পিচ্ছিল হয়ে পড়েছে।
মিকা মোস্তফার উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলে, আমি বন্দুকটি নিয়ে এসেছি। (চলবে)
গল্পটি কেমন লাগছে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন। তাতে করে আমি আরো বেশি করে লিখার উৎসাহ পাবো।
Abid faraje, Ayrin kaTun, Masum, Tasmia haq, Sume akter, Liton vhos, Nowrin talukdar and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
ডার্ট গানটি কাধে নিয়ে তড়িঘড়ি করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এল মিকা। আকাশে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ চমকে উঠছে। চারিপাশে অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে সবকিছু দেখতে ঝাপসা লাগছে।
কাঁধে ঝোলানো গানটি নিয়ে নিচু হয়ে সামনের সিঁড়ি ঘরের দিকে দৌড়ে এগিয়ে গেল সে। তারপর ফিসফিস করে ডাকলো, মোস্তফা! কোন উত্তর এলো না। এবার একটু গলা ছেড়ে ডাক দিল সে, মোস্তফা! তাও কোন রকম সাড়া এলো না। এদিক ওদিক তাকালো মিকা। নিকষ কালো অন্ধকার আর বৃষ্টির কারণে সবকিছুই ঝাপসা দেখাচ্ছিলো। হটাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠলে চিমনির ওপাশে দু'পা ছেড়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে মোস্তফাকে নিথর অবস্থায় আবিস্কার করে মিকা। নিচু হয়ে দ্রুতগতিতে সেদিকে পা বাড়ায় সে।
মোস্তফার সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। মাথা নিচু করে নিশ্চুপ বসে আছে মোস্তফা। মিকা তার থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটি উপরে তুলতে চেষ্টা করে। শরীরটি যেন তার একরকম নিথর, নিস্তেজ।
মিকা তার গালে সজোরে কয়েকটা থাপ্পর দেয়। নাম ধরে ডাকে। ডান হাতটি টেনে তার বুকে গুঁজে চিৎকার করতে থাকে, মোস্তফা তোমাকে উঠতে হবে, এখন হেরে গেলে চলবে না।
খুবই ধীরলয়ে কোনরকমে মাথা তুলে মিকার দিকে তাকায় মোস্তফা। বলে, আমার গানটি নিয়ে এসেছো?
দ্রুত হ্যা সূচক মাথা নাড়ে মিকা। তার মুখে এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে উঠেছে।
এদিকে নিচ থেকে প্রলয়ংকারী বিকট শব্দ ভেসে আসতে থাকে। মানুষের চিৎকার চেচামেচি শোনা যায়। যেন সবাই চতুর্দিকে ছোটাছুটি করছে। মোস্তফা তার ডান হাতে বন্দুকটি ধরে সেটির শক্ত কাঠের বাটে ভর উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। মিকা তার দুই হাত ধরে তাকে টেনে দাড় করায়।
তারপর ধীরে ধীরে তারা ছাদের এক কোনায় যেখান থেকে হসপিটালটির মূল প্রবেশদার শুরু হয়েছে, সেই দিকটায় গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে।
অপেক্ষা করতে থাকে জন্তুটিকে কখন নাগালে পাওয়া যাবে।
মিকা মোস্তফার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তার শারীরিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করে। মোস্তফা একটু পরপর তার চোখ দুটি বুজে ফেলছিল। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল প্রচন্ড ক্লান্তিতে নতজানু সে।
ভাঙা হাতটি তাকে শারীরিকভাবে আরো বেশি দুর্বল করে দিয়েছে। কিন্তু মানসিকভাবে সে এখনো আগের মানুষটিই রয়ে গেছে।
মোস্তফার এই দিক গুলি মুগ্ধ করে মিকাকে। তার সাহসিকতা শৌর্য-বীর্য, হেরে না যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা, যেকোনো মেয়েকে তার প্রতি মমতা বোধ জাগিয়ে তুলতে বাধ্য করে, বাধ্য করে প্রেমে পড়তে।
তবে এই মুহূর্তে তার মিকার সাহায্য বড়ই প্রয়োজন। তার সাহায্য ছাড়া মোস্তফা যে অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়বে।
মিকা এই অবস্থায় তার সাথে থাকতে পেরে, তাকে সাহায্য করতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে করে।
সে না থাকলে আজ কী যে হতো, ভেবেই পাচ্ছেনা মিকা।
মোস্তফা এবার যেন একটু সৎবিৎ ফিরে পেল। মিকার কাছে তার বাইনোকুলারটি চাইলো। সেটি চোখে লাগিয়ে নাইট ভিশন চালু করে চারিদিকটা দেখার চেষ্টা করল।
হঠাৎ রাস্তার নিচে হসপিটালের মূল ফটকের দিকে এক ধরনের চিত্কার-চেঁচামেচির শব্দ পাওয়া গেল। জন্তুটি সম্ভবত সেই দিকটায় এগিয়ে গেছে।
মোস্তফা চোখে বাইনোকুলারটি লাগিয়ে জুম করল। ফটকের সামনে সাদা গাউন পড়া একটা মানুষ অস্থিরভাবে চারিদিক দৌড়ে বেড়াচ্ছে।
লোকটি একটি বড় থামের পেছনে গিয়ে গুটিসুটি মেরে বসে পড়ে।
অন্য পাশে আরেকটি মহিলা সম্ভবত এই হসপিটালে কোন নার্স দৌড়ে একটি ঝোপের ভেতর আশ্রয় নেয়।
এবার মোস্তফা নিজেকে একটু প্রস্তুত করে। কিছু একটা আন্দাজ করতে পারে। সম্ভবত এই দিকে এগিয়ে আসতে যাচ্ছে দানবটি। মোস্তফা তার বাইনোকুলারটি মিকার হাতে দিয়ে পুনরায় গানটি ডান হাতে শক্ত করে তুলে ধরে।
গানটির সামনের অংশ তার ব্যান্ডেজ করা হাতের উপর রেখে দূরবীনে চোখ বসায়। চারিদিকটা পর্যবেক্ষন করতে থাকে।
তার ধারনাই সঠিক। কিছুক্ষণের মধ্যেই জন্তুটি বিকট শব্দে হসপিটালের দরজা ভেঙে বাইরে বেরিয়ে আসে। মুখে ভয়ঙ্কর গর্জন করতে করতে ফটকের আশেপাশে কিছু একটা খুঁজে বেড়ায়।
হঠাৎ করেই সেই গাউন পরা লোকটি সেটির নজরে আসে। বড় বড় পদক্ষেপে লোকটির সামনে এগিয়ে গিয়ে কলার ধরে তাকে উপরে তুলে ফেলে।
লোকটি গলা ছেড়ে চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু তাকে সাহায্য করার মত আশেপাশে কেউ যে নেই। তবে হ্যাঁ উপরে একজন রয়েছে।
মোস্তফা গানটির দূরবীন চোখে লাগিয়ে দানবটির ঘাড় বরাবর নিশানা করার চেষ্টা করে। প্রচন্ড বৃষ্টিতে সেটি তার জন্য খুব দুরুহ হয়ে দাঁড়ায়।
কিন্তু গ্রামে জঙ্গলে বেড়ে ওঠা শিকারি মোস্তফার হাতটি যে বেশ দক্ষ সেটির প্রমাণ পাওয়া যায়, যখন সে তার ডার্ট গানটি দিয়ে প্রথম গুলিটি ছোড়ে।
হ্যাঁ গুলিটি সেটির ঘাড়ে বসাতে পারেনি সে কিন্তু সেটির পায়ে গিয়ে ঠিকই বেধেছে। গুলিটিতে কাজ হলো কিনা তৎক্ষণাৎ সেটা বোঝা গেল না।
তবে জন্তুটি সাথে সাথেই তড়িত বেগে ঘাড় ঘুরিয়ে উপরে মোস্তফা ও মিকাকে লক্ষ্য করে।
তারপর এমনভাবে তার দিকে তাকিয়ে থাকে, যেন এই মাত্র সে তার আরাধ্য লক্ষ্য বস্তু খুঁজে পেয়েছে।
হিংস্র ভয়ঙ্কর সেই চাহনি দেখে সভয়ে আঁতকে ওঠে মিকা। তার মুখ দিয়ে এক ধরনের অস্ফুট আর্তনাদ বেরিয়ে আসে।
সরীসৃপের মতো জন্তুটির মুখখানা এক ধরনের গিরগিটির মতো। নাকের জায়গায় দুটি বড় ফুটো যেন সেগুলি একটু পর পর ফুলে ফুলে উঠছে, রাগে ক্ষোভে যেন ফুঁসছে দানবটি।
গাউন পরা লোকটিকে এবার এক দিকে ছুড়ে মারল দানবটি। লোকটি চিৎকার করে একটি বড় কাঁচের জানালার উপর গিয়ে আছড়ে পড়লো।
এবার জন্তুটি লেজ নাড়তে নাড়তে দ্রুত পায়ে দালানের অন্য এক পাশে এগিয়ে যাতে থাকে। মোস্তফা ও মিকা সেটিকে অনুসরণ করে ছাদের অন্য পাশটায় এগিয়ে চলে। নিচে তাকিয়ে জন্তুটিকে দেখার চেষ্টা করে। কোনভাবেই এখন সেটিকে হারিয়ে ফেলা চলবে না।
ভাবতে ভাবতেই জন্তুটিকে হারিয়েও ফেলে তারা। এখন যে এই পাশটায় আর দেখাই যাচ্ছে না সেটিকে। এখানে একটি অর্ধ ভাঙ্গা দালানের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। নিচে ইট-সুরকি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিছুটা দূরে কয়েকটা ঝোপঝাড় ছড়িয়ে রয়েছে।
মোস্তফা গানের দূরবীনটি চোখে লাগিয়ে চারপাশে দেখার চেষ্টা করে। এখনো সে জন্তুটিকে দেখতে পায়নি। তার পাশেই মিকা তার চতুর্দিকে বাইনোকুলার দিয়ে সেটিকে খুজে বের চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।
জন্তুটি এই দিকটায় আসেনি। মিকার উদ্দেশ্য দ্রুত কথাটি বলে, আঙুল তুলে সিড়িঘরের এক পাশে দিক নির্দেশ করল সে।
গানটির বাঁটে ভর করে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো। তাকে দুই হাত ধরে উঠিয়ে দাঁড় করালো মিকা। তারপর সে যেদিকে যেতে চাইছে তাকে ধরে ধরে সেই দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে মিকা।
ছাদের অন্য পাশটায় এক জোড়া মোটা লোহার পাইপ রয়েছে। যেগুলি মাটি থেকে ছাদের মেঝে পর্যন্ত উঠে এসেছে। মোস্তফা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সেই দিকে তাকায়। তার ধারণা জন্তুটি এই দিকেই গেছে। বাইরে থেকে ছাদের উপর উঠে আসার এই একটি পথই রয়েছে যে।
জন্তুটি এতক্ষণে অজ্ঞান হয়ে গেলে সেটা হবে তাদের জন্য পরম সৌভাগ্য। কিন্তু মোস্তফা জানে সৌভাগ্য তার কাছে এত সহজে ধরা দেয় না। তার কঠিন জীবনে খুব কম সংখ্যকই সে সৌভাগ্যের দেখা পেয়েছে।
মিকা মোস্তফাকে ধরে ধরে ছাদের ওই দিকটায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তারা কিনারার কাছাকাছি চলে এসেছে। ঠিক সেই সময় লোহার পাইপ জোড়ার উপর একটি ধারালো নখড় যুক্ত পিচ্ছিল হাত দেখতে পায় মিকা। তৎক্ষণাৎ তার মুখ থেকে একটি আর্তচিৎকার বেরিয়ে আসে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই পাইপগুলির আড়াল থেকে জন্তুটির পুরো দেহটি ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হয়।
এক লাফে জন্তুটি ছাদের মাঝখানটায় এসে দাঁড়ায়।
মিকা একটা আর্তচিৎকার করে মাটিতে পড়ে যায়। মোস্তফা তারদিকে ঘুরে কোনরকমে তাকে উঠানোর চেষ্টা করে।
মোস্তফা এখনো অনিশ্চিত গুলিটি কি সত্যিই সে জন্তুটির পায়ে লাগাতে পেরেছে। অবাক হয়ে লক্ষ করে এখনো জন্তুটির মধ্যে কোন রকমের দুর্বলতার চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না।
মিকা কোনরকমে উঠে আশেপাশে তাকায়। একটু দূরে একটি মোটা পাইপের টুকরো দেখতে পায় সে। দ্রুত পায়ে সেদিকে এগিয়ে সেটি তুলে নেয়। তারপর এসে মোস্তফার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ায়। দুই হাতে শক্ত করে ধরে থাকা সামান্য এই অস্ত্রটি যেন তার সাহস দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। তার চোখে মুখে এক ধরনের কাঠিন্য, চোখদুটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মোস্তফাকে একা লড়তে হবে না।
দাঁতে দাঁত চেপে জন্তুটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে মোস্তফা। কিন্তু শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল মোস্তফা কিছুটা নিচু হয়ে হাটুর উপর বসে পড়ে। সেটিকে আরেকবার শুট করার উদ্দেশ্যে গানটি এক হাতে তুলে নেয়।
জন্তুটি যেন এটুকু দুর্বল হয়ে পড়েনি। তার দিকে বড় বড় পদক্ষেপে নিয়ে এগিয়ে আসতে থাকে।
এরই মধ্যে মিকা লোহার পাইপ দিয়ে সেটিকে আঘাত করতে এগিয়ে যায়। কিন্তু জন্তুটি তাকে এক হাতে সজোরে একটি আঘাত করে। সেটির আঘাতে ছিটকে গিয়ে একটি সিঁড়ির উপর আছড়ে পড়ে মিকা। সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারায় সে।
মোস্তফা চিৎকার করে ওঠে, জন্তুটি তার দিকে ফিরতেই সে তার তাক করা বন্দুকটি দিয়ে দ্বিতীয় নিশানাটি করে। এবার গুলিটি সরাসরি দানবটির বুকে গিয়ে বেঁধে।
তারপরেও সবকিছু তুচ্ছ করে সেটি মোস্তফার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। মোস্তফা যেন কোনোভাবেই এই দানবটির গতি কমাতে পারছে না।
এবার সেটি একরকম মোস্তফার শরীর ঘেঁষে এসে দাঁড়ায়। মোস্তফার গলার টুটি চেপে তাকে এক হাত দিয়ে শূন্যে তুলে ফেলে। ইতিমধ্যে প্রচন্ড রকম দুর্বল মোস্তফার প্রাণবায়ু যেন বের হয়ে যাবার উপক্রম হয়।
মোস্তফা তবু্ও তার ডান হাতে ধরা বন্দুকের বাটটি দিয়ে সেটির মাথায় চোখেমুখে সজোরে আঘাত করে তার শেষ চেষ্টা চালিয়ে যায়।
এরমধ্যে একটি আঘাত সেটির চোখের উপর সজোরে পরতেই জন্তুটি মোস্তফাকে এক মুহুর্তের জন্য ছেড়ে দিয়ে, দুই হাত দিয়ে চোখ দুটি হাতড়াতে শুরু করে।
অঝোর বৃষ্টির মধ্যে এবার সবকিছু একটু ঝাপসা হয়ে আসতে থাকে মোস্তফার কাছে। সম্ভবত সে জ্ঞান হারাতে যাচ্ছে। মোস্তফা চিৎকার করে মিকাকে ডাকার চেষ্টা করে। সিঁড়ির উপর নিথর পড়ে থাকা মিকার দেহটি থেকে কোনোরকম সাড়া আসে না।
ঝাপসা চোখে মোস্তফা দানবটির দিকে তখনো এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। তার কাছে মনে হয় এবার যেন সেটি নিজেও মাটিতে হাটু গেড়ে বসে পড়েছে।
কোন একটি কারণে সেটি কিছুটা দুর্বল হয়ে পরেছে।
তাহলে মোস্তফার করা গুলিটির বিষ কাজে আসতে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে মোস্তফা নিজেও মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। ভাঙ্গা হাত নিয়ে এক দিকে কাত হয়ে জন্তুটির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
জন্তুটি প্রাণপণে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মোস্তফার দিকে তাকিয়ে সেটির দেহ টেনে হিঁচড়ে এগিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। মোস্তফা পকেট থেকে তার শেষ সম্বল মোবাইল ফোনটি বের করে। কোনরকমে বোতাম চেপে জ্যাককে একটা কল করার চেষ্টা করে।
এরপর যেন আর কিছুই সে ভেবে উঠতে পারছে না। তার চোখ দুটি বন্ধ হয়ে আসছে। পুরো শরীর অসার হয়ে আসছে।
শেষবারের মতো চোখের পাতা জোড়া বন্ধ করার সময় মোস্তফা দানবটির দিকে স্থির তাকিয়ে ছিল। সেটি তখনও টেনেহেঁচড়ে তার দিকে এগিয়ে আসার চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছিল। এ যেন এক ধরনের অদম্য প্রতিযোগিতা, আমৃত্যু এই লইড়ায়ে টিকে থাকার প্রতিযোগিতা। (চলবে)
Abid faraje, Ayrin kaTun, Tasmia haq, Liton vhos, Nowrin talukdar, Nera akter, Israyeel hossen and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
উত্তরের গহীন জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে মেস। এই জঙ্গলের জলাভূমির ধারে কসাইয়ের আস্তানা। মেসের সাথে রয়েছে একটি ধারালো চাপাতি। এটি শুধু কসাইয়ের জন্য নিয়ে আসা নয়। বরং জঙ্গলের হিংস্র র্যাপ্টর গুলিকে সামলানোর অস্ত্র। তবে হ্যাঁ কসাইকে সুযোগ পেলে টুকরো টুকরো করে ছাড়বে সে।
উফ! এবার আপন মনে মাথা নাড়ে একবার মেস। কসাইকে টুকরো করার আগে, তার কাছ থেকে তথ্য যে নিতে হবে। ডাইনোসর গুলিকে কোথায় পাচার করছে সে। জ্যাক বার বার বলে দিয়েছে।
মেস গিয়ে যাচ্ছে জঙ্গলের গহীনে। তার মধ্য দিয়ে মাঝে মাঝে উঁচু-নিচু বেড়ে ওঠা জঙ্গলের আগাছা গুলিকে ধারালো চাপাতি দিয়ে সাফ করছে।
ইতিমধ্যে অন্ধকারের চাদর চারিদিক মুড়ি দিয়েছে। মেস গুন্ডা পান্ডা মেরে তুলোধোনা করে দিতে পারে বটে। তবে একটি দুর্বলতাও রয়েছে।
আর তা হলো অন্ধকার। অন্ধকারের ভীষণ ভয় রয়েছে তার। অবশ্য সেটির পিছনে ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া একটি দুর্ঘটনা জড়িত। যখনই দুর্ঘটনাটির কথা মনে পড়ে ভাবতেই গা শিউরে ওঠে তার।
যদিও সেদিন বেঁচে যায় সে আর তার ভাই রিক। তারপর থেকে শুধু সে নিজে নয় তার ভাই রিকও অন্ধকারকে ভীষণ ভয় পেতে শুরু করে।
পৃথিবীতে যখন ভয়ানক দুর্যোগ শুরু হয়, অভাবে, ক্ষুদায় দেশে দেশে যুদ্ধ বেধে যায়, শুরু হয় মানুষে মানুষে হানাহানি কাটাকাটি ধ্বংসযজ্ঞ। একসময় বেধে যায় পারমাণবিক যুদ্ধ। বৃহত্তম সেই যুদ্ধের পর ধ্বংস হয়ে পড়ে পৃথিবীর বড় বড় শহর, বন্দর, সভ্যতা। বেঁচে যায় অল্প সংখ্যক কিছু লোক।
পুনরায় গড়ে তোলার চেষ্টা করে মানব সভ্যতা। নতুন শহর। এই সভ্যতা গড়ে তুলতে তাদের লড়াই করতে হয় পৃথিবীর পুরনো এক প্রজাতির সাথে। ডাইনোসর! ডাইনোসরেরা মানুষের পাশাপাশি দাপিয়ে বেড়াতে শুরু করে।
গড়ে ওঠে নতুন সভ্যতা যেখানে মানুষ ডাইনোসর পাশাপাশি সহাবস্থান করে।
জ্যাক টেনরেক সনাতন ধর্মাবলম্বী এক নেতা যে মানুষ ও ডাইনোসরের মধ্যে সহাবস্থানকে পারস্পরিক বিরোধ এর পরিবর্তে ভারসাম্যে পরিণত করেছে।
মেস ও তার ভাইয়ের সাথে সেই দুর্ঘটনাটি ঘটে বৃহত্তম যুদ্ধের পরে, যখন তার বাবা তাদের পরিবার নিয়ে অন্য এক শহরে পাড়ি জমায়। পথিমধ্যে তাদের একটি জঙ্গল অতিক্রম করতে হয়। আধার রাত্রিতে সেদিন একদল র্যাপ্টর তাদের পুরো পরিবারকে আক্রমণ করে। র্যাপ্টর হলো এক ধরনের হিংস্র তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন ডায়নোসর।
আকারে মানুষের কয়েকগুণ বড় কিন্তু প্রচন্ড ক্ষিপ্র গতি সম্পন্ন। গভীর ঘন জঙ্গল ছাড়া এদের খুব একটা দেখা মেলে না।
সেই রাতে তারা যখন তাঁবু টানিয়ে ক্ষণস্থায়ী একটি ক্যাম্প করেছিল, তার বাবা কিছু কাঠ পত্বর জোগাড় করে আগুন জ্বালিয়ে তাদের নিরাপদ রাখছিল, ভোরের আলো ফোটার আগেই একটা সময় কাঠগুলি ফুরিয়ে গেলে অন্ধকারে ঢাকা পড়ে যায় চারিদিক। তখন তার বাবা একটি মশাল নিয়ে জঙ্গলের ভেতরে কাঠ খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে। কিন্তু সেই তার যাওয়া, সে আর কোনোদিন ফেরত আসেনি।
অন্ধকারে তার মা তখন দুই ভাইকে নিয়ে গভীর জঙ্গল দিয়ে ছুটে চলে। একপর্যায়ে তাদের দুজনকে কোনরকমে একটি গাছের ডালে তুলে দিয়ে একরকম প্রায় আত্মহুতি দেয় র্যাপ্টরদের হাতে।
সেদিন সারারাত অন্ধকারে তার ভাইয়ের সাথে সেই গাছটির মগডালে বসেছিল আর নিচে তার মায়ের লাশ ছিন্নভিন্ন হতে দেখছিল।
সেই ভয়াবহ নিকষ কালো রাতের কথা কোনদিন ভুলতে পারবে না মেস।
দুই ভাই গাছের ডালে সারারাত পার করার পর ভোরের দিকে রেপটর গুলি তাদের ছেড়ে চলে যায়। তারা নিচে নেমে আসলে একদল দখলদার তাদের উদ্ধার করে।
সেই থেকে অন্ধকারে ভীষণ ভয় মেসের আর তার সাথে র্যাপ্টরদের। ডাইনোসরের আর কোন প্রজাতি তার ভয়ের কারণ না হলেও এটিকে ভীষণ ভয় পায় মেস।
এখন তো মনে হচ্ছে এক ধরনের হুজুগে পড়ে বের হয়ে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনতে চলছে মেস।
এরকম এক হুজুগে সিদ্ধান্তের জন্য তার ভাইকে একদিন হারাতে হয় মেসের। সেদিনও দুই ভাই কিছু না ভেবে কেবল জেদের বশেই একরকম বেরিয়ে পড়েছিল। রিকের বান্ধবীকে কসাইয়ের কিছু লোকজন তার আগের রাতে তুলে নিয়ে গিয়েছিল।
কোনরকম ব্যাকআপ ছাড়াই শুধুমাত্র পেশী শক্তির জোরে মেস ও রিক আঘাত হেনেছিল কসাইয়ের ডেরায়। আর তার ফলাফল হয়েছিল ভয়াবহ। কোন ভাবে পালিয়ে বেঁচে যেতে পেরেছিল মেস কিন্তু কসাই তার ভাইকে আটকে ফেলেছিল।
তারপর থেকে শত চেষ্টা করেও তার ভাইয়ের খোঁজ পায়নি সে।
যদিও পরবর্তীতে কসাইয়ের কিছু চেলার উপর আক্রমণ চালিয়ে মেস জানতে পেরেছিল, তার ভাইকে সেদিন মেরেও ফেলা হয়নি। কসাই তবে তাকে নিয়ে কি করেছে, তা এখনো অজানা সবার কাছে।
তারপর থেকে মেস ওকে খুঁজে বেড়ালেও, তার হদিস সে আর কোনদিন পাইনি। যদিও সে জানত উত্তরের জঙ্গলে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে কসাই আর তার পুরনো অবৈধ কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এত সুবিশাল এলাকায় তার একার পক্ষে খুজে বের করা সম্ভব হচ্ছিল না কসাইকে।
অবশেষে তাকে সেই সুযোগ করে দিল ভাইস। তার কাছ থেকে কসাইয়ের সুনির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে অবগত হয় মেস।
জঙ্গলের অগভীর জলাভূমির শেষ কিনারায় কসাইয়ের মূল ডেড়া।
উপরের আকাশে থালার মতো চাঁদ উঠেছে আজ। চাঁদের ঝকঝকে আলোয় আজ অবশ্য সেই রাতের মতো ভয়াবহতা নেই। আশেপাশের অনেক কিছুই দেখা যাচ্ছে চাঁদের আলোয়। মেস জানে কসাই তার আগমনের ব্যাপারে অবশ্যই অবগত। তবে সে কোনদিন চিন্তাও করতে পারবে না রাতের গভীর অন্ধকারে এই জঙ্গলের পথ ধরে মেস তার ডেড়ায় হানা দেবে। কসাই মেস ও তার ভাইয়ের ইতিহাস খুব ভালো করেই জানে।
আর কসাইয়ের এই ভুল ধারণাটি ম্যাসের জন্য সবচেয়ে বড় অ্যাডভান্টেজ। সে অন্ধকারে অসময়ে, কসাইয়ের ডেড়ায় অতর্কিত হামলায় তাকে কাবু করতে চায়।
চাঁদের আলোয় পথ ছুটতে ছুটতে জঙ্গলের অনেকটা গভীরে চলে এসেছে মেস। ঠিক তখনই হঠাৎ তার চারপাশে শুকনো পাতার এক ধরনের মর্মর শব্দ শুনতে পায়। মেসের কানদুটি সজাগ হয়ে ওঠে। তড়িত্গতিতে ঘাড় ঘুরিয়ে সে চারপাশটা দেখার চেষ্টা করে।
তার মনে হয় কিছু একটা এইমাত্র বিদ্যুৎবেগে ঝোঁপের ভেতর দিয়ে চলে গেছে। হঠাৎ তার পেছনে একই ধরনের আরেকটি শব্দ পায়। কিছু একটা রয়েছে তার পেছনে। সম্ভবত তার চারিপাশটায়। আর সেটি একটি নয় একাধিক।
Abid faraje, Ayrin kaTun, Masum, Tasmia haq, Liton vhos, Nowrin talukdar, Nera akter and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
দৌড়ে জঙ্গলের গহীনে এগিয়ে চলছে মেস। ছুটতে ছুটতে কখন যে গভীর জঙ্গলে ঢুকে পড়েছে জানা নেই তার। জঙ্গলের এদিকটায় চাঁদের আলো পড়ে না। আশপাশটা তাই ঘুটঘুটে অন্ধকার।
এদিককার ঝোপঝাড় অনেক বেশি উঁচু আর এতই ঘন যে চাপাতি দিয়ে কেটে কেটে মেসের পক্ষে এগিয়ে যাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেস দ্রুত থলে থেকে সঙ্গে নিয়ে আসা টর্চটি বের উঁচু করে আশপাশটা দেখার চেষ্টা করে। কম্পাসটা বের করে আরেকবার দিকটি দেখে নিয়, ইতিমধ্যে পথ হারিয়ে ফেলেছে কিনা!
আশেপাশটায় কিছু একটা রয়েছে সেটা জানে সে। হঠাৎ করেই পেছন থেকে এক ধরনের হিস হিস শব্দ কানে আসতে লাগে মেসের। টর্চ দিয়ে সেদিকে কিছু একটা দেখার চেষ্টা করে।
আলো পড়ার সাথে সাথেই কিছু একটা যেন মাথা নিচু করে তীরের বেগে সরে গেল।
এবার শব্দটি তার ডান দিক থেকে আসতে শুরু করেছে। ঝোপের ভিতর দিয়ে কিছু একটা এদিক সেদিক দৌড়ে চলছে। শেষবারের মতো শব্দের উৎসের দিকে আলো ফেলতেই মেস যা দেখতে পেল তাতে তার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠলো।
সম্ভবত একটা রেপটর এইমাত্র সেই দিক দিয়ে দৌড়ে ছুটে গেছে। মেস সেটির লেজটি দেখতে পেয়েছে। তাহলে রেপটরগুলি তাকে খুঁজে নিয়েছে! মেসকে দ্রুত এই ঝোপ থেকে বের হতে হবে। কোন একটি উচু গাছের সন্ধান করতে হবে।
সাধারণত র্যাপ্টরগুলি জঙ্গলের পশ্চিম দিকে অবস্থান করে। তাই পুরো পথটুকু সে জঙ্গলের পূর্ব দিক দিয়ে আসার চেষ্টা করেছে। তার ধারণা ছিল পূর্ব দিক দিয়ে উত্তরে যাত্রা অনেক বেশি নিরাপদ।
র্যাপ্টরদের মূল ঘাঁটি জঙ্গলের পশ্চিম পাশটায়। অনেকটা জলাধার ঘেঁষে।
কিন্তু সম্ভবত মেস কোথাও কোন একটা গন্ডগোল করে ফেলেছে। হতে পারে সে ছুটতে ছুটতে কিছুটা পশ্চিম দিকে চলে এসেছে। আবার এটিও হতে পারে, কোন ছন্নছাড়া র্যাপ্টর দলের চোখে পড়ে গেছে সে।
মেস ঝোপ থেকে একটু দূরে একটি উঁচু গাছ দেখতে পেল। তাকে সেটিই ধরতে হবে। এটিই এখন তার একমাত্র বাঁচার পথ।
কোন কিছু না ভেবে সেই দিকে দৌড়াতে থাকলো।
আশেপাশের হিসহিস শব্দগুলি এখন যেন আরও বেড়ে গিয়েছে। র্যাপ্টরগুলি তাকে অনেকটা ঘিরে ফেলেছে। তারা নিজেদের মধ্যে শব্দ করে ইশারা-ইঙ্গিতে তথ্য আদান প্রদান করছে। আগে হয়তোবা দু-একটি ছিল, এখন মনে হচ্ছে আরো কয়েকটি যোগ হয়েছে।
মেস মনে মনে তার পরিবারের কথা স্মরণ করলো। তার চোখের সামনে তার মায়ের ছিন্নভিন্ন দেহটি ভেসে উঠতে লাগল। শত চেষ্টা করেও সে যেন স্মৃতিগুলি এই মুহূর্তে মাথা থেকে বের করতে পারছে না।
মেস প্রাণপণে গাছটির দিকে ছুটে চলছে। দৌড়াতে দৌড়াতে হঠাৎ করেই কখন যেন সে তার চাপাতিটি খুইয়ে ফেলেছে। মনে পরতেই হঠাৎ একটু থেমে যায় সে। কিন্তু ততক্ষনে যে অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে। পেছনে ঘুরতেই র্যাপ্টরগুলিকে দেখতে পায় মেস। তাকে থামতে দেখেই র্যাপ্টরগুলি হঠাৎ থমকে যায়। মেস কিছুটা ভড়কে গিয়ে আবার পিছনে ঘুরে ছুটতে শুরু করে। খানিকটা দ্বিধান্বিত র্যাপ্টরগুলি এবার আবার মেসের দিকে মুখ করে দৌড়াতে শুরু করে।
ইতিমধ্যে মেস গাছটির অনেকটা কাছাকাছি চলে এসেছে। এক লাফে কিছুটা উপরে উঠে গাছটির কাণ্ডটি পেচিয়ে ধরেছে।
তার বিশাল শরীর টেনে গাছটির উপরে তুলে নিয়ে যাওয়া বেশ কষ্টকর। মেস দ্রুত গাছটির একপাশ দিয়ে বেড়ে ওঠা ডালটির দিকে হাত বাড়ায়। ডালটি হাতের নাগালে আসতেই অন্য হাত দিয়ে ডালটি ধরে ঝুলে পড়ে। তারপর তার পা দুটি উপরে উঠিয়ে নেয়। দুই হাত-পা দিয়ে ডালটিকে জড়িয়ে ধরে।
তারপর ডাল থেকে ঝুলতে থাকা মেস নিচের দিকে তাকায়। ততক্ষণে একটি রেপটর লাফ দিয়ে তাকে কামড়ে ধরার চেষ্টা করে বসেছে। মেস সভয়ে তার নিতম্বটি আর একটু উপরে উঠিয়ে ফেলে।
এই ডালটি তার জন্য পুরোপুরি নিরাপদ নয়। এখনো র্যাপ্টরগুলি যেকোনো সময় তাকে ধরে ফেলতে পারে। একটু আগেই তার নিতম্বে তাদের একটি কামড় বসিয়ে দিচ্ছিল প্রায়। মেস দ্রুত নিজেকে ডালটির উপরে উঠিয়ে নেয়। তারপর গাছটি ধরে ধরে ডালের উপর উঠে দাঁড়ায়।
কিছুটা উপরে ডানে আরও একটি মোটা ডাল রয়েছে। সেটিতে চড়তে পারলে কিছুটা বিপদ মুক্ত হতে পারবে সে। এবার গাছের প্রকাণ্ড কাণ্ডটি জড়িয়ে ধরে আস্তে আস্তে নিজের দেহকে তার ডান দিকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে মেস। একটি পা ডালটির উপর রেখে অন্য পাটি দিয়ে গাছটি পেচিয়ে ধরার চেষ্টা করে। এবার কিছুটা হেলে গিয়ে অন্য হাতে ডানপাশে উপরের ডালটির দিকে হাত বাড়ায়। এক পর্যায়ে গিয়ে সে ডালটি হাতের মুঠিতে ধরতে পারে।
নিচে র্যাপ্টরগুলি তার ব্যর্থতার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে আর অস্থিরভাবে পায়চারি করতে থাকে।
এবার আগের ডালটি থেকে একটা ছোট লাফ দিয়ে অন্য হাতে বড় ডালটি ধরে ফেলে তারপর দুপা ছেড়ে ঝুলে পড়ে।
সেটি দেখে একটি র্যাপ্টর লাফিয়ে তাকে ধরার বৃথা আরেকটি চেষ্টা করে। মেস এখন তাদের নাগাল থেকে যথেষ্ট বাইরে।
এত বিশালদেহী হবার কারণে তার জন্য এভাবে গাছে চড়াটা বেশ কষ্টকর। কিন্তু লম্ফঝম্প, চিন আপ, বেঞ্চ প্রেসে ওস্তাদ মেসের শরীর যে যথেষ্ট ফ্লেক্সিবল, তার প্রমাণ পাওয়া গেল আজ।
শেষ পর্যন্ত সে গাছের মগ ডালটিতে উঠতে সমর্থ হয়েছে।
নিচে ইতিমধ্যে জন্তুগুলি অস্থিরভাবে চারিদিক পায়চারি করছে।
মগডালে উঠতেই গাছের কান্ডে পিঠ হেলিয়ে দিয়ে পা দুটো হাঁটু ভাঁজ করে কিছুক্ষণ বসে থাকে মেস।
মনে মনে ভাবতে থাকে কোনভাবেই ভোরের আগে নিচে নামতে যাচ্ছে না সে। পকেট থেকে ফের কম্পাসটা বের করে। দিক দেখার চেষ্টা করে। টর্চের আলো দিয়ে মানচিত্র পরীক্ষা করে।
নিচে র্যাপ্টরগুলির হিস হিস শব্দ শুনতে পায়। সেগুলি তখনও মাটি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।
মানচিত্রটি লক্ষ করে বুঝতে পারে, সে কোনভাবে ভুল করে জঙ্গলের পূর্ব পাশ থেকে পশ্চিমের দিকে চলে এসেছে। আর সেটির কারণেই আজ তাকে রেপটরগুলির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
মেস আজ তার ভাই রিককে খুব মিস করছে। রিক কখনো এই ধরনের ভুল করতো না। রিক থাকলে আজ সঠিক পথেই যেতে পারত সে। যেকোনো লক্ষে পৌছাতে, কারো পেছু নিতে রিক ছিল সিদ্ধহস্ত। সে কখনো তার লক্ষ্যবস্তু থেকে হারিয়ে যেত না, লক্ষ্যবস্তু হারিয়েও ফেলত না। কোন এক অদ্ভুত কারণে মেসের মাথায় এই ব্যাপারগুলি কখনোই ঢোকে না। সে সবসময়ই এইসব ব্যাপারে ভুলভাল করে বসে।
মেস পকেট থেকে তার মোবাইল ফোনটি বের করে। এই মুহূর্তে মোবাইলে কোন নেটওয়ার্ক নেই। এটি স্বাভাবিক। বৃহত্তম যুদ্ধের পরে পৃথিবী আগের মত নেই। ব্যবসা বাণিজ্য ধ্বংস হয়ে গেছে।
যে কোম্পানিটি বেতার তরঙ্গ নিয়ে ব্যবসা করে, তাদের বিস্তৃতি কমে এসেছে। শহর ছাড়া অন্য কোথাও নেটওয়ার্ক পাওয়া এখন অসম্ভব ব্যাপার।
মেস বেশ কিছুক্ষণ গাছের মগডালে বসে রয়। অপেক্ষা করে কখন রেপটরগুলি তাকে ছেড়ে এই স্থানটি ত্যাগ করবে।
বেশ খানিকটা সময় কেটে গেছে। কখন যে তার চোখ কিছুটা বুঝে এসেছিল খেয়াল নেই। হঠাৎ লক্ষ করে নিচে জন্তুগুলির কোন সাড়াশব্দ নেই।
সে আশপাশটা একবার দেখে নেয়। জন্তুগুলি সম্ভবত এলাকাটি ছেড়ে চলে গেছে। এখন আর সেগুলিকে দেখা যাচ্ছে না। একবার টর্চ দিয়ে চারপাশটা দেখে। কান খাড়া করে শোনে।
তারপরই হটাত মেসের কাছে মনে হয়, এবার নিচে নেমে যাওয়া সম্ভব। রাক্ষসগুলি আশেপাশে নেই।
তবুও আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে মেস। পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েই সে ডাল থেকে নামবে। এরপর আরো কিছুটা সময় কেটে গেল। কোনোরকম সাড়াশব্দ না পেয়ে মেস ধীরে ধীরে গাছটই থেকে নিচে নেমে আসে।
মাটিতে নেমে আসতেই মেস লক্ষ্য করলো তার হৃদস্পন্দন আবার বেড়ে গেছে। এত বছর পর সে যে আজ র্যাপ্টরদের মুখোমুখি হয়েছে।
ছোটবেলা কাটিয়ে ওঠার পর কোনদিন সে র্যাপ্টর দেখেনি। সেগুলি যেই এলাকায় বিচরণ করে, তার কাছাকাছিও যায়নি।
আসলে সে সবচেয়ে বড় ভুলটি করে ফেলেছে একা কসাইকে ধরতে এসে। জ্যাক শতবার মানা করা সত্ত্বেও মেস তাদের কথা উপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়েছে। তার হারিয়ে যাওয়া ভাইয়ের ক্ষত, তাকে খুজে না পাওয়ার বেদনা, এতোটা বছর তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খেয়েছে। তার ভেতরে এক ধরনের প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখন তার গোয়ার্তুমির জন্য সে নিজেই নিজের কাছে লজ্জিত বোধ করছে।
হঠাৎ ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল তার। সেদিন সারারাত তারা ঘুমোতে পারেনি। যদিও র্যাপ্টরগুলি একটা সময় হাল ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল। কিন্তু ভোরের আলো ফোটার আগে তার কিংবা রিক কেউই গাছ থেকে নামার সাহস করেনি।
মেস এবার আশপাশটা একবার ভালো করে দেখে নিল। এখানটায় চাদের আলো রয়েছে। চারপাশটা মোটামুটি দেখা যাচ্ছে। মেস মাথা নিচু করে কিছুটা কুঁজো হয়ে ঝোপগুলির দিকে যাওয়া শুরু করল। চাপাতিটি তাকে খুঁজে বের করতে হবে।
ঠিক তখনই হঠাৎ তার কাছে মনে হয়, চারপাশে আবার কিছু একটার শব্দ হচ্ছে। প্রথমে মেস সেটিকে খুব একটা পাত্তা না দেয়ার চেষ্টা করে। মনে মনে ভাবে র্যাপ্টরগুলি তো তাকে ছেড়ে চলে গেছে।
ভাবতে ভাবতেই চারপাশে সেই পুরনো হিস হিস শব্দ শুনতে পায় মেস। র্যাপ্টরগুলি ফিরে এসেছে। আসলে সেগুলি তাকে ছেড়েই যায়নি কখনো।
আশেপাশে ছিল। শুধুমাত্র তাকে ছেড়ে যাওয়ার এক ধরনের ভান করেছে। তাকে ফাঁদে ফেলেছে। বোকা বানিয়েছে।
চাপাতিটি খুজে বের করতেই হবে এবার মেসকে। এটি ছাড়া তার বাঁচার সব রাস্তা বন্ধ। আর কিছুই ভাবতে পারছিল না মেস। তার চিন্তাশক্তি যেন লোপ পেতে শুরু করেছে।
কিন্তু চাপাতি খোজা থামিয়ে দেয়নি মেস। তন্ন তন্ন করে সেটির খোঁজ চালিয়ে যায় সে।
আজ তাকে এখান থেকে পালাতে হবে। কসাইয়ের চিন্তা ছেড়ে দিতে হবে। প্রাণ নিয়ে বের হতে পারলে আবার কসাইকে ঠিকই খুঁজে বের করতে পারবে সে। ছুটতে ছুটতে হঠাৎ করেই কিছু একটার সাথে বাড়ি খেয়ে মাটিতে সজোরে আছড়ে পড়ে মেস। আর তারপরই তার থেকে কিছুটা দূরে চাপাতিটি দেখতে পায়।
কোনরকমে উঠে দৌড়ে চাপাতি হাতে তুলে নেয় মেস।
তারপর আবার দৌড়াতে শুরু করে মেস। একটু দূরে একটি টিলা দেখতে পায়। কোনরকমে সেটির কাছাকাছি পৌঁছাতে হবে তাকে। টিলাটির উপরে উঠতে পারলে র্যাপ্টরগুলির কাছ থেকে কিছুটা রক্ষা পেতে পারে সে।
মেস দ্রুত পদক্ষেপে টিলাটির দিকে এগিয়ে যায়। তারপর পিঠের পেছনে চাপাতি রেখে টিলাটির উচু বাড়ানো অংশটি ধরে ঝুলে পড়ে। তারপর সেটির গায়ে পাড়া দিয়ে উপরে উঠার চেষ্টা করতে থাকে।
র্যাপ্টরগুলি ইতিমধ্যে আবার তার পিছু ধাওয়া করেছে। যেন খাবার না নিয়ে বাড়ি যাবে না তারা আজ। কিছুক্ষন চেষ্টার পর অবশেষে টিলাটির উপর উঠতে পারে মেস।
সেটির উপরে উঠে নিজেকে কিছুটা নিরাপদ ভাবতে শুরু করে সে। ঠিক তখনই, অন্য পাশ দিয়ে একটি র্যাপ্টর লাফিয়ে টিলাটির উপরে উঠে পড়ে।
এবার মেসের কাছে মনে হয় তাকেও এই ডাইনোসরদের হাতেই প্রাণ হারাতে হবে। ঠিক তার বাবা মায়ের মতো। তার পুরো পরিবারের প্রাণ কেড়ে নেয়া এই র্যাপ্টরগুলি আজ তাকেও শেষ করতে যাচ্ছে।
হঠাৎ করেই র্যাপ্টরটি এক লাফ দিয়ে তার উপর ঝাপিয়ে পড়ার চেষ্টা করে। মেস চিৎপটাং হয়ে টিলার উপর পড়ে যায়। র্যাপ্টরটি তার বুকের উপরে উঠে পড়ে। চাপাতিটি হাত থেকে পড়ে যেতে যেতে মেস শক্ত হাতে সেটিকে আবার ধরে ফেলে। জন্তুটি ধারালো দাঁত দিয়ে মেসের মাথায় কামড় বসাতে যায়। মাথাটি সরিয়ে নিয়ে কোনরকমে সে যাত্রা প্রাণ বাঁচায় মেস।
এবার জন্তুটি তার ধারালো নখড় বসিয়ে দেয় মেসের বুকের উপর। মাংস ভেদ করে নগরগুলি ভেতরে ঢুকে যায়। মেসের গলা থেকে আর্তনাদের শব্দ বেরিয়ে আসে। তার চোখ থেকে এক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে। জন্তুটির অন্য পা-টি মেসের একটি হাত সজোরে ধরে রেখেছে।
সারি সারি ধারালো দাঁতে মুখভর্তি জন্তুটি দ্বিতীয় কামড় বসাতে গেলে, নিজের অজান্তেই মেস তার ডানহাতটা চালিয়ে দেয়। সেটিতে ধরে থাকা চাপাতিটি প্রচন্ড জোরে জন্তুটির ঘাড়ে আঘাত হানে।
আর সাথে সাথেই এক ধরনের গঙ্গানির মত শব্দ করে ওঠে জন্তুটি।
মেস এতক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিল। চোখ খুলতেই দেখতে পায় তার আঘাতে পায় পর্যদুস্ত জন্তুটি। মেস নিজের অজান্তেই এটিকে অনেকটা ঘায়েল করে ফেলেছে। দ্বিতীয় আঘাতটি করতেই জন্তুটি আর টাল সামাল দিতে না পেরে টিলাটি থেকে নিচে পড়ে যায়।
মেস বুকের ভেতর এক ধরনের সাহস অনুভব করে। মাটি থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। হঠাৎ করেই বুঝতে পারে সে আর আগের সেই ছোট বাচ্চাটি নেই। অনেক বড় হয়ে গেছে, যেটির জন্য তার মা প্রাণ দিয়ে গিয়েছিল। আজ সে র্যাপ্টরগুলিকে হারানোর মতো ক্ষমতা অর্জন করেছে। শুধুমাত্র ছোটবেলার সেই ভয়, আতঙ্ক এতক্ষণ তাকে দুর্বল করে রেখেছিল। আজকে বাঁচতে হলে সারা জীবন কুরে কুরে খাওয়া এই ভয় তাকে জয় করতে হবে। লড়াই করতে হবে।
মেস র্যাপ্টরগুলির দিকে তাকিয়ে ফুঁসতে থাকে। চিৎকার করে বলে, আয়! আজ তোদের আমি দেখে নেব!
এই প্রথম জন্তুগুলি মেসের কাছ থেকে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ অনুভব করে। প্রাণীগুলির মধ্যে সর্দার গোছের একটি অন্য একটি র্যাপ্টরের দিকে ইশারা করে। সেটি মাটিতে পড়ে থাকা তাদের সঙ্গীটিকে দেখতে যায়। সেটির ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই জন্তুটির প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেল।
সরদার গোছেরটি সেটির পাশে থাকা অন্য র্যাপ্টরটিকে আরেকটি ইশারা করে। ইশারাটি করতেই সেটি দৌড়ে ছুটে যায় মেসের দিকে। তারপরে একলাফে টিলাটির উপর উঠে পড়ে। মেসের কাছে মনে হয় এটি আগেরটির চেয়ে শক্তিশালী। কিন্তু এই মেস যে কিছুক্ষণ আগের সেই দুর্বল মানসিক শক্তিহীন মেস নয়! এখন যে সে নতুন এক মেস। আগের থেকেও কয়েকগুণ বেশি শক্তিশালী।
র্যাপ্টরটি লাফিয়ে উঠতেই এক মুহুর্ত দেরি না করে সেটির ঘাড়ে চাপাতি দিয়ে এক কোপ বসিয়ে দেয় মেস। সঙ্গে সঙ্গে পা পিছলে উল্টে পড়ে যায় সেটি। মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়তেই গল গল করে রক্তে আশপাশটা ভিজে যায়।
এবার মেস রাগে ক্ষোভে কাঁপতে থাকে। ফুঁসতে ফুঁসতে বলে, আয় আর কে আসবি!
নিচে দাঁড়িয়ে থাকা সরদার গোছের র্যাপ্টরটি এবার শেষ সঙ্গীটিকে একটি ইশারা দেয়। তার পরপরই পেছনে ফিরে ছুটতে শুরু করে সর্দারটি। বাকি সঙ্গীটি তাকে অনুসরণ করে।
মেস তখনো রাগে ক্ষোভে থরথর করে কাঁপছিল। সে টিলা থেকে লাফিয়ে মাটিতে নেমে পড়ে। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে, বলতে থাকে, কই পালাচ্ছিস! তোদের সাথে আমার হিসাব নিকাশ এখনো বাকি!
জন্তুগুলি দ্রুত পায়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই জঙ্গলের ভেতর হারিয়ে যায়।
মেস মাটিতে হাটুগেড়ে বসে পড়ে।
চিৎকার করে বলতে থাকে, মা আমি আজ বদলা নিতে পেরেছি। ভয় জয় করতে পেরেছি। আমি সেদিন সেটা পারিনি। আমার মধ্যে সেই সামর্থ্য ছিল না। আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো বলতে বলতে চোখ ছল ছল করে ওঠে তার। কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে মাটিতে পরে।
কিছুক্ষণ পর নিজেকে সামলে নেয় মেস। কম্পাসটি থলে থেকে বের করে তার যাত্রাপথ নিশ্চিত করে। তারপর উত্তরের দিকে আবার হেঁটে চলতে শুরু করে।
হঠাৎ মেসের চোখে সরদারের সেই ইঙ্গিতটি ভেসে ওঠে। সেটির অর্থ শুধুমাত্র পালিয়ে যাওয়াই নয় বরং আরও সাহায্য নিয়ে আসা।
র্যাপ্টরদের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হলো তারা কখনো হার মানে না। যদি তারা পালিয়ে যায়, তবে সেটি তারা ফেরত আসার জন্যই করে।
মেস একবার তাদের ফাঁদে পা দিয়েছে। আর সেটি করতে চায় না সে। কারণ যদি ওরা আবার ফেরত চলে আসে, তবে ওদের সাথে যে আর পেরে ওঠা সম্ভবপর হবে না। (চলবে)
Abid faraje, Ayrin kaTun, Masum, Tasmia haq, Sume akter, Liton vhos, Nowrin talukdar and লেখাটি পছন্দ করেছে