- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
মাই ফ্রেন্ড আই এম নট লিভিং ইউ দিস টাইম। মোস্তফাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলল জ্যাক।
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের একটি বিছানায় অবচেতন অবস্থায় পড়ে আছে মোস্তফা। তার শ্বাসনালীতে একটি নল দিয়ে কৃত্রিম যন্ত্রের সাথে সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস চালানো হচ্ছে। বুকে কয়েকটি ইসিজি লিড বসানো রয়েছে। মাথার উপরে ডান দিকে মনিটরে তার ভাইটাল সাইন গুলির অবস্থা দেখা যাচ্ছে। মোস্তফা এখন আশঙ্কামুক্ত কিন্তু তার শরীরকে আরো খানিকটা সময় লড়াই করে যেতে হবে।
মোস্তফার বেডেটির ঠিক পাশের বেডেই শুয়ে রয়েছে মিকা। তার জ্ঞান ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে। জ্যাক মিকার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো, বলল, মোস্তফা আমাকে সেটির সম্পর্কে কিছুই বলেনি।
জ্যাকের কথাটি শুনে মিকা দুই কনুইতে ভর করে পিঠটা বিছানার একটু উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তারপর একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ও খুব চুপচাপ ধরনের মানুষ। পুরো জীবন একা একাই লড়াই করে এসেছে। সহজে কারো কাছে মনের কথাটি খুলে বলে না। নিঃসঙ্গ, একাকী এক নির্ভীক সৈনিক সে।
জ্যাক মাথা নিচু করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। মোস্তফাকে এভাবে একা রেখে যাওয়ার জন্য তার ভেতরে এক ধরনের অপরাধ বোধ কাজ করে।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে মিকাকে জিজ্ঞেস করে, সেটি আসলে কি ধরনের প্রাণী ছিল?
কথাটি শুনে মুহূর্তেই মিকার চেহারাটি ফ্যাকাসে হয়ে আসে। চেহারা জুড়ে এক ধরনের আতঙ্কের ছাপ ফুটে ওঠে, যেন সেই বিভীষিকাময় জন্তুটির কথা কল্পনাতেও আনতে চায়না সে।
জ্যাক মিকার চেহারার দিকে তাকিয়ে একটু নিচু স্বরে বলে, আই এম সরি।
মোস্তফার দিকে তাকিয়ে মিকার চোখদুটি ছল ছল করে ওঠে। এক দন্ড চুপ থেকে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, জ্যাক, আমি জানিনা কি ছিল সেটা! আমি জীবনে কখনো এরকম কিছু দেখিনি। জ্যাক স্থির দৃষ্টিতে মিকার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে, কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করে।
মিকা আবার বলতে শুরু করে, লম্বায় অন্তত ৮ কি ৯ ফুট হবে। অনেকটা মানুষের অবয়ব। দুই পায়ে দাড়িয়ে চলাচল করে। হাত দুটি ডাইনোসরদের মতো দুর্বল নয় বরং মানুষের মতো শক্তিশালী, ধাড়ালো নখরযুক্ত আঙুলগুলি মুষ্টিবদ্ধ করার সামর্থ রাখে। সামনের দিকে তাকিয়ে চোখদুটি বড় বড় করে বলতে থাকে মিকা। যেন কোন ভৌতিক কাহিনীর বর্ণনা করে চলছে। পেছনে একটি বড় লেজও রয়েছে সেটির। আর চেহারাটি দেখতে অনেকটা গিরগিটির মতো। কিন্তু কোথায় যেন মানুষের ছাপ লুকিয়ে রয়েছে। মুখভর্তি অসংখ্য ধারালো দাঁত। আর চোখ দুটি ...। কথাটি শেষ করতে পারলো না মিকা। চোখদুটি বন্ধ করে ফেলল সে।
চোখের এক কোনা দিয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। মিকা আর কিছুই বলতে পারল না তারপর। তার বুক থেকে এক ধরনের চাপা কান্না বেড়িয়ে এল।
জ্যাক তখনও তার কথাগুলি ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছিল না। এই ধরনের কোন সরীসৃপ জাতীয় প্রাণীর বর্ণনা সে আগে কখনো শুনেনি।
এটা কি করে সম্ভব! প্রকৃতি ও যন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে জ্যাক। বনে জঙ্গলে ডাইনোসর নামক এই সরীসৃপদের সাথে পিঠাপিঠি করে বড় হয়েছে সে।
জ্যাকের কাছে মনে হল, প্রচন্ড রকম শারীরিক ধকলে মিকা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সে এখনো পুরোপুরি ভারসাম্য ফিরে পায়নি। নিজের অজান্তেই কল্পনার সাথে মিলিয়ে ফেলেছে জন্তুটিকে।
একটি হিংস্র ক্ষ্যাপা ডাইনোসরের চেয়ে বেশি কিছু নয় সেটি। ডাইনোসরদের আক্রমণ গ্রামে বেড়েই চলেছে। হয়তো কোনভাবে তাদের একটি শহরের ভেতরে ঢুকে পড়েছে।
জন্তুটি আমাদের পিছু ছাড়বার নয়! বিড়বিড় করে বলে চলে মিকা। সেটি আবার ফিরে আসবে! ঘাড় ঘুরিয়ে মোস্তফার দিকে তাকিয়ে থাকে সে। চোখে মুখে নিরাপত্তাহীনতার ছাপ।
জ্যাকের কাছে মনে হয়, মিকাকে একটু সময় দেওয়া উচিত, বিশ্রাম নেয়ার জন্য। আর কথা না বাড়িয়ে সে মোস্তফার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। মোস্তফা চোখ দুটি বুজে আছে। চোখের পাতার নিচে মণিদুটি অনবরত ছোটাছুটি করে চলছে। হয়তো তার অবচেতন বন্ধুটি কোন একটি দুঃস্বপ্ন দেখছে!
গভর্নর শর্ণহোস্টের অফিসে একটি জরুরী বৈঠকে নিজের শহরের অ্যাম্বাসেডর হিসেবে যোগ দিতে এসেছে হেনা। শর্ণহোস্ট একটি চেয়ারে বসে, একহাতে একটি কফির মগে চুমুক দিচ্ছিল। তার একপাশে অন্য একজন অল্পবয়সী মহিলা গভর্নর বসে ছিলেন। আর দরজার এদিকটার চেয়ারে অন্য একজন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ গভর্নর বসে রয়েছেন।
ঘরটিতে ঢুকতেই সবার চোখগুলি হেনার তার দিকে ফিরে তাকিয়। হেনা লক্ষ করে শর্ণহোস্টের চেহারায় এক ধরনের বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠেছে।
সেটিকে লুকানোর কোন রকম চেষ্টা না করে শর্ণহোস্ট হেনার দিকে তাকিয়ে তাকে অভিবাদন জানালো।
হেনা একবার মাথাটি নিচু করে তারপর একটি চেয়ার টেনে বসে পড়ল।
এবার শর্ণহোস্ট সবার উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করল, মানুষ ও ডাইনোসর সেই আদিম যুগ থেকেই কখনো একসাথে বসবাস করেনি। লক্ষ বছর আগে এই প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পরে মানবজাতির সৃষ্টি হয়েছে। সেটি না হলে মানুষ হয়তো বা পৃথিবীতেই পা রাখতে পারতো না।
একটু থেমে একটা কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করল শর্ণহোস্ট, তারপর আবার বলতে শুরু করল, এই যুগে এই সরীসৃপগুলি যেভাবে চারিপাশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, ঘরবাড়ি ধ্বংস করে চলছে, মানুষের উপর আঘাত হানছে, এতে করে আমরা যদি এই প্রজাতিটি পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণরূপে বিলীন করে না দিতে পারি, তবে একসময় আমাদের এই অবশিষ্ট জনগোষ্ঠীও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। শর্ণহোস্ট মোটামুটি ছোটখাটো একটি বক্তৃতা দিয়ে ফেলল।
হেনা একটু প্রতিবাদী ভঙ্গিতে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, কোন প্রাণী বিলুপ্ত করে মানুষ পৃথিবীতে টিকে থাকেনি। মানুষ এত বছর টিকে আছে সেটির জন্য কোন প্রাণীর বিলুপ্ত হতেও হয়নি। যদি আজ মানবসভ্যতা বিলুপ্তির সন্নিকটে চলে আসে, তবে সেটার জন্য মানুষ নিজেরাই দায়ী। তাই অন্য কোন প্রাণীকে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত করার চেষ্টা করে মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। কথাগুলি বলতে বলতে হেনা একটু কেঁপে কেঁপে উঠছিল। কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়েছে সে। একটু থেমে আবার বলতে শুরু করল সে, তারচেয়ে বরং আমাদের উচিত এই ধরনের হিংস্রতা বর্জন করে মিলেমিশে একসাথে থাকার অভ্যাস গড়ে তোলা। যেটি আমার বন্ধু জ্যাক দীর্ঘদিন ধরে করে আসার চেষ্টা করছে।
জ্যাকের নামটি শুনেই যেন শর্ণহোস্টের অস্থিরতা কিছুটা বেড়ে গেল। কিছু একটা বলতে চাইল কিন্তু হেনা অকপটে কথা চালিয়ে গেল,
বৃহত্তম যুদ্ধের মূল কারণ ছিল মানুষ মানুষে হিংসা বিদ্বেষ। এগুলি যদি এখনও আমাদের ভেতর থেকে ঝেড়ে ফেলা না যায়, তবে ভবিষ্যতে আবারও এমন একটি পারমাণবিক যুদ্ধ হবে না সেটির কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই আমার শহরের কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আমি প্রস্তাবের বিরোধিতা জানাই।
হেনার মতামতের সাথে একমত পোষণ করল অল্প বয়সী মহিলা গভর্নরটি, মাথা নেড়ে বলল, মানব সভ্যতা যথেষ্ট ধ্বংসযজ্ঞ দেখেছে। আমাদের আর কোন ধ্বংশজজ্ঞের দিকে এগিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। তাই এই সংকট সমাধানে আমার মনে হয় বিকল্প পথগুলি ভাবা উচিত। কথাগুলি শুনে দাঁতে দাঁত চেপে কিড়মিড় করছিল শর্ণহোস্ট।
সবশেষে কৃষ্ণাঙ্গ গভর্নরটি তার মতামত জানালো, কিছুদিন যাবৎ ডাইনোসরেরা এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি করেছে। এতে করে কিছু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ভবিষ্যতে এটি যদি চলতেই থাকে, তবে এই এলাকা থেকে সেগুলিকে সরিয়ে ফেলতে হবে অথবা মানুষকে সরে যেতে হবে। তাই আমাদের উচিত এই বিষয়টি আরো ভালো করে খতিয়ে দেখা। যদি গ্রামে গ্রামে পশুগুলির এরূপ আক্রমণের প্রকোপ বেড়েই চলে, তবে বৃহত্তর স্বার্থে কিছুসংখ্যক পশু হত্যা করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
এবার যেন শর্ণহোস্ট এর চেহারাটি চকচক করে উঠলো। মনে মনে খুশি হয়ে গেল সে। চেহারা এক ধরনের হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। তিনজন গভর্নরের দুজন ভোট দিলেই যে প্রস্তাবটি পাস হয়ে যাবে তার।
আর একবার ডাইনোসর ধ্বংস করা শুরু হয়ে গেলে, কূটনৈতিক চাল চেলে সেগুলিকে বিলুপ্তির দিকে নিয়ে যেতে পারবে শর্ণহোস্ট।
হেনার চেহারায় একটু চিন্তার ছাপ ফুটে উঠল। মনে মনে ভাবল এই অঞ্চল জুড়ে জ্যাক মানুষ এবং ডাইনোসরদের বসবাসের একটি সুষম পরিবেশ তৈরি করতে সমর্থ হয়েছে। অনেক বছর ধরেই মানুষকে বিরক্ত করেনি প্রানীগুলি। মানুষ ও ডাইনোসর পাশাপাশি সহ অবস্থান করেছে। এইবারই প্রথম সেগুলি মানুষের এলাকায় ব্যাপক আকারে হামলা করতে শুরু করেছে। যা কারো পক্ষেই ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রানিগুলি মানুষ হত্যা করতে শুরু করেছে। নিশ্চয়ই এটির পেছনে গুরুতর কেউ জড়িয়ে আছে। কোন ষড়যন্ত্র রয়েছে। হেনা শহরের উচ্চপদস্থ কয়েকজনকে সন্দেহ করছে। তার মধ্যে শর্ণহোস্ট এর নাম সবার প্রথম সারিতে রয়েছে।
তাদের কথার মাঝেই হঠাৎ করে ক্যাপ্টেন নক কক্ষে প্রবেশ করল, শর্ণহোস্ট এর উদ্দেশ্যে বলল, ম্যাম, গ্রামে যাওয়ার জন্য নিচে আপনার গাড়ি প্রস্তুত।
শর্ণহোস্ট এক ধরনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে নকের দিকে তাকালো। তার চেহারায় এক ধরনের বিরক্তি ও কাঠিন্যের ছাপ স্পষ্ট। কোন রকম কথা না বাড়িয়ে শর্ণহোস্ট তাকে ইশারায় যেতে বলল।
তারপর বাকি সবার দিকে তাকিয়ে বলল, মাফ করবেন, ভাইসব। আমাকে এখন উঠতে হচ্ছে।
চেয়ার থেকে উঠে হেনার দিকে তাকিয়ে এক ধরনের বিদ্রুপের ভঙ্গিতে বলল, দেখা হবে! তারপর কক্ষটি প্রস্থান করল শর্ণহোস্ট।
হেনা তার ঘড়ির দিকে একবার তাকালো, তারপর বাকিদের উদ্দেশ্যে বলল, এক্সকিউজ মি, আজকের মত আমি কি উঠতে পারি?
বাকিরা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল।
কক্ষ থেকে বেরিয়েই একবার ডানে-বামে তাকালো হেনা। শর্ণহোস্ট কোন দিকে গিয়েছে, সেটি লক্ষ্য করার চেষ্টা করলো। এখন যথেষ্ট রাত হয়েছে। এই রাতে কি কারনে সে গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছে, হেনাকে সেটি খুঁজে বের করতে হবে। এবার সন্দেহের গন্ধটি আরো বেশি ঝাঁঝালোভাবে অনুভব করতে পারল হেনা।
ইতিমধ্যে স্থুল দৈহিক গড়নের বয়স্কা শর্ণহোস্ট লিফটের দিকে পা বাড়িয়েছে। হেনা দ্রুত সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে যেতে শুরু করে। গ্যারেজে এসে চুপ করে তার পুরোনো জিপটি নিয়ে বিল্ডিং এর বেরিয়ে পড়ে। তারপর ঠিক কাউন্সিল বিল্ডিং এর বিপরীতে একটু অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় তার গাড়িটি পার্ক করে রাখে। বিল্ডিং এর মূল ফটকের সামনে তিনটি গাড়ি রয়েছে। তার একটি শর্ণহোস্ট এর, বাকি দুটি তার প্রহরীদের গাড়ি।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তড়িঘড়ি করে ক্যাপ্টেন নকসহ শর্ণহোস্ট নিচে নেমে আসে। তাদের গাড়িগুলি চলতে শুরু করলেই হেনা তার জিপটি স্টার্ট দেয়। তারপর নিঃশব্দে তাদেরকে অনুসরণ করতে শুরু করে।
জ্যাক ধীর পায়ে হসপিটালের সিঁড়ি ঘর বেয়ে ছাদের উপর উঠে আসে। মোস্তফা আর মিকার উপর আক্রমণের ঘটনাটি ঘটেছে, বেশ কয়েক ঘন্টা হয়ে গেছে। হয়তো এখন রাত আনুমানিক তিনটে কি চারটে বাজে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সকাল হয়ে যাবে। বৃষ্টি থেমে গেছে অনেকক্ষণ।
ছাদের উত্তর পাশটায় হেঁটে যায় জ্যাক। সেদিকে হাসপাতালের মুল ফটক রয়েছে। নিচে এখনো দমকল কর্মীরা কাজ করছে। ফটকের বাইরে দু-একটি পুলিশের গাড়ি দাড়িয়ে রয়েছে।
এবার ঘুরে বিল্ডিং এর পেছনদিকটায় এগিয়ে গেল জ্যাক। সেই দিকটায় একজোড়া স্টিলের শক্ত পাইপ রয়েছে। যেগুলি মাটি থেকে উপরে উঠে এসেছে। ভালো করে তাকাতেই জ্যাক লক্ষ্য করলো পাইপদুটির একটির কোনা ভেঙে গেছে। জায়গায় জায়গায় দেবে গেছে। জ্যাক নিচু হয়ে বসে সেটিকে একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করল। টর্চ জ্বেলে মাথাটা একটু সামনে বাড়িয়ে নিচের দিকে তাকাল।
একটু দূরেই একটি রড পুরোপুরি বেঁকে মাটিতে পড়ে আছে। সম্ভবত এটি দিয়েই মিকা জন্তুটির এর উপর হামলা করার চেষ্টা করে। কোন ডাইনোসর হয়তো এই রডটি বাকিয়ে দিতে পারে কিন্ত এই প্রানীগুলির পক্ষে পাইপ বেয়ে উপরে উঠে আসা পুরোপুরি অসম্ভব। তবে হ্যাঁ একটি র্যাপ্টর সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসতে পারে। র্যাপ্টর অনন্ত তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন। মানুষ এর পক্ষে তা চিন্তা করাও সম্ভব নয়।
সিঁড়ি বেয়ে নিচে মোস্তফার কেবিন ঘরের এবার দিকে পা বাড়ায় জ্যাক। আলো নেই পুরো করিডোর জুড়ে। এখানে সেখানে এটা ওটা পড়ে রয়েছে। করিডোরের ফুলদানিগুলি ভেঙে চৌচির। অক্সিজেন সিলিন্ডারটি গ্লাস ভেঙে কেউ একজন বের করে ফেলে রেখেছে। উপরে কিছু কিছু জায়গায় লাইটগুলি ভাঙ্গা। সেগুলি জলনিভু করছে।
মোস্তফার কেবিনটির সামনে আসতেই দেখতে পায় সেটির দরজা ভেঙে চৌচির। পুলিশের স্টিকার লাগানো রয়েছে দরজার মুখে।
খুব সাবধানে নিচু হয়ে ভেতরে প্রবেশ করে জ্যাক। মোস্তফার বিছানাটি একদিকে উল্টে পড়ে আছে। হাসপাতালে ইসিজি মেশিন ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ গুলি মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। কেউ পুরো ঘরটিতে তাণ্ডব চালিয়েছে। লন্ডভন্ড করে ফেলে রেখে গেছে।
সাবধানে জানালার দিকে এগিয়ে যায় জ্যাক। জানালাটি দেখে তার মনে হয়, বাইরে থেকে ভেঙে কেউ ভেতরে প্রবেশ করেছে। জানালা থেকে মাথাটি বাইরে বাড়াতেই সেই পাইপ দুটি তার চোখে বাধে। মিকার বর্ণনার সাথে অনেক কিছুই যেন মিলে মিলে যাচ্ছে।
কিন্তু জ্যাক অতিপ্রাকৃত কোন কিছু বিশ্বাস করে না। সে একটি ব্যপারে নিশ্চিত, এখানে যা কিছুই ঘটুক না কেন তার পেছনে রেপটরদের হাত রয়েছে। কিন্তু তারা কিভাবে এরকম ক্ষমতা অর্জন করল বা কাকতালীয়ভাবে কেনই বা সবকিছু মিলে যাচ্ছিল তার ব্যাখ্যা জ্যাকের কাছে নেই। (চলবে)
RabbY khan, Debasis sorkar, Nishad jaman, Sk rahul ali, Parvez ali, Babul jalaluddin, Biplob islam and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যাওয়ার সময় হঠাৎ কিছু একটাতে পা পিছলে গেল জ্যাকের। পড়তে পড়তে কোনরকমে সিড়ির হাতল ধরে নিজেকে সামলে নিল সে। তারপর সিড়ির মেঝের দিকে তাকালো। আলো ফেলতেই এক ধরনের তরলের কয়েক ফোটা চোখে পড়ল তার।
মেঝেতে বসে সেটি পরীক্ষা করার চেষ্টা করল জ্যাক। এক ধরনের রক্তিম তরল পড়ে আছে সেখানে। তবে এটিকে ঠিক রক্ত বলা যাবে না। এক ধরনের জৈবিক তরল। দেখতে খুবই অদ্ভুত ধরনের সেটি।
হাত দিয়ে তরলটির কয়েক ফোটা আঙ্গুলে তুলে একটু নাকের কাছে নিয়ে যেতেই এক ধরনের তামাটে গন্ধ পেল সে। লালা জাতীয় কিছু হলে আঁশটে গন্ধ বের হয়ে আসতো।
টর্চ জালিয়ে সিঁড়ির নিচের ধাপগুলি দেখার চেষ্টা করল জ্যাক। আরো কয়েকটি ধাপ নিচে একই ধরনের তরলের কয়েক ফোটা দেখতে পেল এবার।
এক ধাপ দুই ধাপ করে নেমে আসতে আসতে জ্যাক প্রায় নিচতলায় চলে এসেছে। এখান থেকে ডানে বামে করিডোর ধরে বাইরে বের হবার দুটি পথ রয়েছে। আর সিড়িটি নিচে বেসমেন্টের সাথে গিয়ে মিলেছে।
জ্যাক কিছুটা সামনে ঝুকে নিচের সিঁড়িতে আলো ফেলল। তার কাছে মনে হল সেই পিচ্ছিল পদার্থটি সেদিকটায় রয়েছে। সিড়ির দু-একটা ধাপে সেরকম কিছু একটা চকচক করে উঠল।
বেজমেন্টের সিঁড়ি ধরে আলো জ্বেলে ধীরে ধীরে কয়েকধাপ নিচে নেমে এল জ্যাক। তরলটির সামনে এসে নিচু হয়ে বসে হাতের আঙ্গুলগুলি দিয়ে স্পর্শ করে বোঝার চেষ্টা করল। সেই একই ধরনের পদার্থ।
বেজমেন্টে কোন ধরনের আলো নেই চারদিকটা নিকষ কালো অন্ধকারে ঢাকা।
জ্যাক তার বুটের ভেতরে রাখা মিনি পিস্তলটি হাতে তুলে নিল। তারপর খুব সাবধানে একহাতে টর্চের আলো ফেলে অন্য হাতে পিস্তল তাক করে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে যেতে থাকল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বেজমেন্টের পার্কিং গ্যারাজে এসে পৌছায় সে। চারিদিকটায় আলো ফেলতেই বুঝতে পারলো জায়গাটি বেশ বড়। তার পায়ের খট খট শব্দ দেয়াল গুলিতে প্রতিধ্বনি হয়ে কানে এসে বারি খাচ্ছে।
একটু দূরে দূরে বড় বড় থাম রয়েছে স্থানটি জুড়ে। গ্যারেজটা অনেকটাই খালি, পরিত্যক্ত। এখন আর ঠিক গ্যারেজ বলা যাবে না সেটিকে বরং এক ধরনের গোডাউনে পরিণত হয়েছে।
উপরের সিলিংগুলিতে ধুলোর আস্তরণ পড়েছে। মাকড়সার জালে ভরে গেছে চারপাশ। বাম দিক দিয়ে রয়েছে একটি বের হবার পথ। কিছুটা দূরে এক কোনায় কতগুলি পুরনো গাড়ি ফেলে রাখা হয়েছে। সেগুলোর উপর ধুলোর আস্তরণ। জ্যাক ধীর পায়ে সেদিকটায় এগিয়ে যায়।
বৃহত্তম যুদ্ধের পর মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ায়, অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতো হাসপাতালগুলিতেও আগের মতো লোক সমাগম নেই। শহরের মানুষের সাথে সাথে গাড়ির সংখ্যাও কমে যাওয়ায়, এসব প্রতিষ্ঠানের গ্যারেজগুলি অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে।
সমুদ্র শহরের অন্যান্য পরিত্যক্ত দালানগুলির মতই এই হাসপাতালটিরও বিভিন্ন স্থান তাই পরিত্যক্ত৷
গাড়িগুলির সামনে এগোতেই জ্যাক দেখতে পায়, পুরনো কয়েকটি ক্যাডিলাক পড়ে রয়েছে এখানটায়। ভাঙাচোরা জং ধরা গাড়িগুলির দেহাবশেষ দেখলেই সেটির উপর যুদ্ধের আলামত পাওয়া যায়। এগুলিকে এখন আর ঠিক গাড়ি বলা চলে না বরং ভাঙ্গা ধাতুর এক ধরনের স্তুপ। এদিকটায় তরলটির অস্তিত্ব নেই।
এক হাতে টর্চটি সামনের দিকে ধরে, অন্য হাতের মুষ্টিবদ্ধ পিস্তলটি এবার সেই হাতের উপরে রাখে জ্যাক। তারপর এক পা এক পা করে গ্যারেজের অন্য দিকটায় এগিয়ে যায় সে।
তার নিজের কাছেও এখন কিছু একটা গড়মিল লাগছে। এই ধরনের পদার্থ সে আগে কখনো দেখেনি। এটি ল্যাবে নিয়ে পরীক্ষা করার প্রয়োজন আছে।
শর্ণহোস্ট এর গাড়িগুলি দ্রুতবেগে এগিয়ে চলছে শহরের ভেতর দিয়ে। গাড়িগুলি এক ধরনের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন শক্তিশালী ইঞ্জিনের জিপ। ঠিক সাধারণ গাড়ির মতো নয়।
হেনা সেগুলির পিছু নিয়ে চলছে। সেগুলির গতির কাছে তাকে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। সমুদ্র শহরে গাড়ির সংখ্যা খুবই কম। মূলত বৃহত্তম যুদ্ধের পরে পুরো পৃথিবীজুড়েই মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রাস্তাঘাট অনেকটাই ফাঁকা হয়ে পরেছে। মাঝেমধ্যে দুই-একটা গাড়ি বিপরীত দিক থেকে ক্রস করে চলে যাচ্ছে। তাই শর্ণহোস্টকে নিখুঁতভাবে অনুসরণ করে চলাটাও একটু বিপদজনক। খুব কাছাকাছি তার পেছনে চলে গেলে তাদের পক্ষে টের পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
যদি তারা বুঝে উঠতে পারে কোন একটি গাড়ি দীর্ঘ সময় ধরে তাদের পিছু করছে, তাদের গাড়ির পেছনে রয়েছে, তবে বেশ কয়েকটি সমস্যা হতে পারে। প্রথমত যদি কোন অসৎ উদ্দেশ্যে গ্রামের দিকে শর্ণহোস্ট এর যাত্রা হয় তবে, সেটি বাতিল হতে পারে। অথবা যদি সেটি না হয় তবে নিরাপত্তার জন্য তারা হেনার গাড়িটিকে আটকও করতে পারে।
তাই খুব সাবধানে শর্ণহোস্টকে অনুসরণ করতে হবে তাকে। এমনভাবে পিছু নেয়া যাবে না, যাতে করে তাদের কোন ধরনের সন্দেহের উদ্রেক ঘটে। আবার বেশি ধীরগতিতে অনুসরণ করতে গিয়ে গাড়িগুলি হারিয়ে ফেলাও চলবেনা।
যদিও শর্ণহোস্ট এর গাড়িগুলির তুলনায় হেনার গাড়িটির ইঞ্জিন খানিকটা দুর্বল। তাই তার গাড়িটি এমনিতেই খানিকটা পেছনে পড়ে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে শহরের শেষ মাথায় বন্দরে চলে এসেছে গাড়িগুলি। তাদের জন্য অপেক্ষারত একটি বিশাল আকৃতির ফেরীতে ধীরে ধীরে উঠে পড়ল গাড়ি তিনটি। হেনা তার গাড়ির গতি কমিয়ে নিয়ে আসলো। ফেরি থেকে একটু দূরে তার গাড়িটি থামিয়ে হেডলাইট নিভিয়ে দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো। ফেরিতে আরো কয়েকটি গাড়ি উঠার পর ধীরে ধীরে হেনা তার গাড়িটিকে ফেরিতে তুলল।
একটু আগে একটা খট করে শব্দ পেয়েছে জ্যাক। সাথে সাথেই সে নিজেকে একটি থামের আড়ালে নিয়ে যায়। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে থাকে। একটু পরে মাথাটি বের করে চারপাশটা দেখে। তারপর অন্য একটি থামের পেছনে গিয়ে সটকে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পরে সে বুঝতে পারল বেজমেন্টের একটি কোনার দিকে চলে এসেছে সে।
অনেকগুলি হাসপাতালের বেড ফেলে রাখা হয়েছে সেখান। কোনটি জং ধরে কালচে হয়ে গেছে।
বেড গুলির নিচে টর্চের আলো ফেলতেই কয়েকটি ইঁদুর শব্দ করে দৌড়ে বেরিয়ে গেল।
একটূ দুরে স্তূপাকারে অনেকগুলি কাটুন রাখা আছে। সেই তরলটির কোন চিহ্ন এখন আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই দিকে কিছুদুর এসে সেটি হারিয়ে গেছে। জ্যাক ধীরে ধীরে এক পা দুই পা করে কাটুনের স্তুপগুলির দিকে এগিয়ে যায়। কাটুনগুলির একটিতে পা দিয়ে আস্তে লাথি দেয়। ভেতরে কিছু একটা রয়েছে। যন্ত্রপাতি হবে। অনেকগুলি বড় বড় কাটুন এদিকে সেদিক পড়ে আছে। কোন যন্ত্রপাতি আনা নেয়ার কাজে সেগুলি ব্যবহার করা হয় হয়তো। তবে বেশিরভাগ কাটুন খালি পড়ে রয়েছে।
একটি কাটুনে হাতের কনুই দিয়ে হালকা আঘাত করতেই চার-পাশটা ধুলোয় ভরে গেল।
একটা হাচির উদ্রেক হলো জ্যাকের। মাথা উঁচু করে উপরের দিকে চোখ যেতেই একটি ব্যালকনি দেখতে পেল সে। এই গ্যারেজে বেশ কয়েকটি ব্যালকনি রয়েছে যেগুলি উপরে মাটির সাথে গিয়ে মিশেছে।
ভালো করে লক্ষ্য করে জ্যাক দেখল, ব্যালকনিটির জানালাটি ভেঙে ফেলা হয়েছে বা কেউ একজন ভেঙে দুমড়ে মুচড়ে ফেলেছে!
ফেরি থেকে নেমে গ্রামের পথে রওনা করেছে শর্ণহোস্টের গাড়ি। হেনা তার গাড়িটির পিছু নিয়ে চলছে।
ইতিমধ্যে গাড়িগুলি মরুভূমির রাস্তায় চলে এসেছে। রাস্তাটির দুপাশ জুড়ে ধু ধু করা মরুভূমির বিশাল অঞ্চল। দূরে কিছু বড় বড় পর্বত শ্রেণী। সেগুলো ঘিরে রয়েছে কিছু বৃক্ষরাজি। এই অঞ্চলে অনেক ব্যাকিওসরাস নামক বিশালকায় তৃণভোজী ডাইনোসরদের দেখা মেলে। জ্যাক এসব এলাকায় বিচরণ করে বড় হয়েছে।
কোন একটি কারণে হেনার মাথায় বারবার জ্যাকের কথা ঘুরে ঘুরে চলে আসছে।
নাহ! একটু মাথা ঝাঁকায় সে, তাকে এখন এই অভিযানের দিকে মনোযোগী হতে হবে। তার এখনো জানা নেই, সামনে কি ঘটতে চলেছে। হতে পারে কিছুই ঘটতে যাচ্ছে না, আবার এমনও হতে পারে এমন কিছুর সাক্ষী হতে হল তাকে, যেটি কল্পনায়ও তার মাথায় আসেনি।
জ্যাকের কথা ভাবতে ভাবতেই হটাত ফোন বেজে উঠল গাড়ির সামনের স্পিকারে। জ্যাক ফোন দিয়েছে।
হেই হেনা! ফোনটি রিসিভ করতেই কিছুটা উত্তেজিত শোনালো জ্যাকের কন্ঠ। আমি একটি নমুনা সংগ্রহ করেছি। আমাদের সেটি পরীক্ষা করতে হবে।
কিসের নমুনা? কিছুটা অবাক হয়ে হেনা জানতে চাইল।
সেটা জানার জন্যই তোমাকে প্রয়োজন। তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে জ্যাক জিজ্ঞেস করল, তুমি এখন কোথায়?
মরুভূমির মধ্য দিয়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছিল হেনার গাড়ি। গাড়ির কাচের উপর সজোরে দমকা বাতাস আছড়ে পড়ছিল। ফোনের ওপাশ থেকে জ্যাক কোন কথা বলল না। সম্ভবত কিছু একটা আঁচ করতে পেরে আবার জিজ্ঞেস করল, হেনা তুমি এখন কোথায়?
হেনা একটু ইতস্তত করলো। কিছুক্ষণ কোন উত্তর দিল না, তারপর মুখ ফুটে বলল, আমি এখন গ্রামের পথে!
কথটি শুনেই জ্যাকের মুখ থেকে এক ধরনের অস্ফুট শব্দ বেরিয়ে এলো। যেন তার আচ করা কিছু একটা সত্যি হলো।
তারপর কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলল, আমাকে না জানিয়ে ...
হঠাৎ করেই ফোনের সংযুক্তি কেটে গেল।
জ্যাক এর কন্ঠে এক ধরনের দুশ্চিন্তা, অনিশ্চয়তার ছাপ ছিল। হেনা বিষয়টি লক্ষ্য করতে পেরেছে। কিন্তু সেটি কি তার জন্য ছিল, নাকি অন্য কোন কারণে, তা তার বোধগম্য হলো না।
বাইরে তাকিয়েই দেখতে পেল, মরুভূমির অনেকটা গভীরে ঢুকে পড়েছে সে এবার।
শর্ণহোস্ট এর গাড়িগুলি বেশ কিছুটা এগিয়ে গেছে, সাপের ন্যায় আঁকাবাঁকা পথ ধরে। হেনার গাড়িটি থেকে অনেকটা দূরে গাড়িগুলির হেডলাইট দেখা যাচ্ছে।
হঠাৎ করেই হেনার মনে হলো সামনের গাড়িগুলির গতি কিছুটা কমে এসেছে। হেনা নিজের গাড়ির গতি কমিয়ে আনলো। এভাবে কিছুক্ষণ চলার পরে তার কাছে মনে হল, গাড়ি তিনটি রাস্তার একটি পাশে এবার দাড়িয়ে পড়েছে।
কিছুটা অবাক হল হেনা। ধু ধু মরুভূমির ভেতরে হঠাৎ করে এরকম একটা জায়গায় গাড়িগুলি থেমে যাবে, সেটা সে আশা করেনি।
কিছুদুর সামনে এগিয়ে হেনা নিজের গাড়িটিও থামিয়ে ফেলল। তারপর গাড়ির হেডলাইটগুলি বন্ধ করে চুপচাপ বসে রইল। তার কাছে একটু খটকা লেগেছে। হতে পারে শর্ণহোস্ট তার ব্যাপারে কোন কিছু টের পেয়ে গেছে।
হয়তোবা তারা পেছনের লুকিং গ্লাস দিয়ে লম্বা সময় ধরে তার গাড়িটি পেছনে দেখেছে।
পরক্ষণেই হেনা ভাবল, যদি সে গাড়িটি থামিয়ে এখানে বসে থাকে আর যদি তারা এ ধরনের কোন সন্দেহ করে থাকে, তবে তা আরো বেশি প্রবল হয়ে উঠতে পারে। অগত্যা হেনা গাড়িটি স্টার্ট দিল। তারপর সেটির গতি বাড়িয়ে সামনে এগিয়ে চলল।
জ্যাকের চেহারায় এক ধরনের চিন্তার ছাপ। সে ভেবে পাচ্ছে না, এই রাতে হেনা একাকী গ্রামের পথে রওনা করতে পারে, তাও তাকে না জানিয়ে!
এই গ্রামের পথঘাট ভালোমতো চেনে না হেনা। জ্যাককে সাথে না নিয়ে একা যাওয়ার সাহস করলো কি করে সে?
তাছাড়া মোস্তফার এই অবস্থায় তাকে রেখে হেনাকে সাহায্য করতে যাওয়াও তার পক্ষে সম্ভবপর হবে না।
যদি হেনা কোন ধরনের বিপদে পড়ে যায়! নিজের অজান্তেই জ্যাকের ভেতরটা কেমন যেন মোচড় দিয়ে উঠলো।
একে একে সবাই দলছুট হয়ে পরছে। মোস্তফা প্রথমে সেটি শুরু করেছে। তারপর মেস তার কোন কথা না শুনেই, কসাইকে খুজতে বেরিয়ে পরেছে।
মেস একটু গোয়ার ধরনের। তাছাড়া সে মোস্তফার ভালো বন্ধু, তাই সে জ্যাকের কথা অমান্য করতে পারে। কিন্তু হেনা?
সেও তাকে না জানিয়ে বের হয়ে পড়লো! জ্যাক কি তবে এই দলটির সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারছে না! সবাই তার উপর ঠিক ভরসা করতে পারছে না! তবে কি সে এই পুরো গল্পের পার্শ্বনায়ক হতে চলেছে!
জ্যাক আরো কয়েকবার হেনাকে ফোনে পাবার চেষ্টা করল। কিন্তু পুরো নেটওয়ার্ক জুড়ে এরর দেখাচ্ছিলো। হেনাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। সে হয়তো নেটওয়ার্কের বাইরে চলে গেছে।
হেনা একজন বিজ্ঞানী, এম্বাসেডর, প্রফেসর আর জ্যাক সেখানে একজন সনাতন ধর্মালম্বী সাধারণ মেকানিক, যার জীবন কেটেছে গ্রামে জঙ্গলে বনে বাদারে। হতেই পারে হেনা তার কথাগুলিকে কম গুরুত্ব দিচ্ছে, বাকি সবার মত তার নির্দেশনার বাইরে গিয়ে কাজ করছে। তবে এই হতাশার চেয়ে জ্যাকের মাথায় এখন হেনার নিরাপত্তা নিয়ে ভাবনাটি বেশি জেঁকে বসেছে। (চলবে)
RabbY khan, Debasis sorkar, Sikdar rahat, Sk rahul ali, Jannat islam, Akash islam, Apon arnob and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
উঁচু নিচু লতা-গুল্মগুলি সাফ করতে করতে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে মেস। বড় বড় আকাশচুম্বি বৃক্ষরাজি রয়েছে এই অঞ্চলটায়। সেগুলি বেয়ে বেয়ে পাতা লতা উপরের দিকে উঠে গেছে।
মাঝেমাঝে বিষাক্ত সাপের হিস হিস শব্দ শোনা যায় এখানটায়। যদিও র্যাপ্টরগুলি থেকে সেগুলির শব্দের ধরন ভিন্ন। মেস চিনতে পারে সেটি।
তাছাড়া এই জঙ্গলে তারা মেসকে আক্রমণ করতে আসবে না। কারণ তারা জানে এই এলাকায় অংসখ্য উঁচু-নিচু গাছগাছালি রয়েছে। মেস আত্মরক্ষায় যেকোনো মুহূর্তে গাছে চড়তে জানে।
তাই যতক্ষণ এই জঙ্গলের ভেতরে আছে সে, নিজেকে কিছুটা নিরাপদ ভাবছে, অন্তত রেপটরগুলির কাছ থেকে।
থলে থেকে কম্পাসটি বের করে আরেকবার দেখে নিল মেস। কম্পাসের কাটাটি সঠিক দিক নির্দেশ করছে। উত্তরের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে সে।
এবার কিছুটা বিশ্রাম নিতে হবে তাকে। ছোট্ট একটি লাফ দিয়ে একটি গাছের ডালের উপর চড়ে বসে মেস। তারপর ঘড়িটির দিকে একবার তাকিয়ে কিছুক্ষণের জন্য চোখ দুটি বুজে নেয়।
হেনা তার গাড়িটির গতি বাড়িয়ে চলছে। একটু দূরেই শর্ণহোস্টের গাড়িগুলি রাস্তার এক ধারে থামানো রয়েছে। ড্যাশ বোর্ডে গাড়িটির গতি এখন ১২০ কিমি দেখাচ্ছে। হেডলাইটের আলোয় সামনের বালুময় পথটুকু পরিস্কার দেখা যাচ্ছে। গাড়িগুলি থেকে এখনো কেউ নেমে বের হয়ে আসেনি। সেগুলির হেড লাইট বন্ধ। পার্কিং লাইট জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে।
শর্ণহোস্ট এর গাড়িটি মাঝখানে রয়েছে। পেছনে একটি ছাদ খোলা জিপ।
হেনা জানালা দিয়ে একবার বাইরে তাকালো। দুই পাশে ধুধু করা মরুভূমি। গাড়ির জানালা দিয়ে জোরে দমকা হাওয়া মাঝে মাঝেই হেনার চুলগুলি উড়িয়ে দিচ্ছিল। আকাশের বিশাল থালার ন্যায় চাদটি ইতিমধ্যে চারপাশটা আলোকিত করে তুলেছে।
হেনা মাথার চুলগুলি বেঁধে নিল। দরজায় বোতামে চাপ দিয়ে গাড়ির কাচটি তুলে দিল।
কিছুক্ষণের মধ্যেই হেনার গাড়িটি তীরের বেগে শর্ণহোস্ট এর গাড়িগুলির পাশ কাটিয়ে সামনে চলে গেল। হেনা ডানে-বামে তাকাইনি। যথাসম্ভব স্থির থাকার চেষ্টা করেছে। গাড়ির গতি বাড়িয়ে রাখার চেষ্টা করেছে। যাতে করে শর্ণহোস্ট এর লোকজন তাকে চিনে ফেলতে না পারে।
তাছাড়া ধ্বংসস্তূপের এই নগরীতে হেনার মতো একই ধরনের জিপ অসংখ্য রয়েছে। তাই সেগুলি থেকে এটিকে চিনে বের করে ফেলাটা তাদের পক্ষে কঠিন কাজ হবে। তবে জ্যাকের ক্যাডিলাক গাড়ি হলে বিষয়টি অন্যরকম হতো। সেজন্যই হেনা এই শহরে কোন ক্যাডিলাক নিয়ে বের হয় না। তবে হ্যাঁ আজকের পর থেকে এই গাড়িটিও কাউন্সিলে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না।
এই সবকিছুই হেনার অনুমান। এমনও হতে পারে শর্ণহোস্ট কিছুই লক্ষ্য করেনি, আবার এমনটিও হতে পারে তারা ইতিমধ্যেই সব কিছু জেনে গেছে।
তবে হেনা যেরকম কিছু একটা আশঙ্কা করছিল সেরকম কিছুই ঘটেনি। গাড়িগুলি আগের মতোই পেছনে থেমে রয়েছে। কেউ গাড়ি থেকে বের হয়ে আসেনি। তার গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করেনি কিংবা পিছুও নেয়নি।
বেশ কিছুটা পথ চলে আসার পর হেনা গাড়ি থেকে মাথা বাড়িয়ে লক্ষ্য করল শর্ণহোস্ট এর গাড়িগুলি স্থির আগের স্থানটিতে দাঁড়িয়ে, সেগুলির হেডলাইটগুলি বন্ধ। চাঁদের আলোয় এবার কিছুটা আবছা হয়ে আসছিল পেছনের গাড়িগুলি।
একটু সামনেই একটি মোড় রয়েছে। মোড় থেকে ডানে-বামে দুটি পথ। এইখানটায় হেনাকে থামতে হবে। আন্দাজে সে কোন এক দিকে তার গাড়ি নিয়ে যেতে পারবে না। তাকে শর্ণহোস্ট এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে। অন্যথায় সে গাড়িগুলিকে হারিয়ে ফেলতে পারে।
সড়ক থেকে একটু দূরে একটা উচু টিলা দেখতে পেল না হেনা। গাড়ির গিয়ার দুই নম্বরে নামিয়ে কিছুটা গতি কমিয়ে আনলো সে। তারপর ধীরে ধীরে রাস্তা থেকে খানিকটা নিচে এবড়ো থেবড়ো পথে নামিয়ে আনল গাড়িটি। টিলাটির আড়ালে নিয়ে গেল।
সবশেষে গাড়িটির স্টার্ট বন্ধ করে চুপচাপ অপেক্ষা করতে লাগল।
দেখা যাক শর্ণহোস্ট এর গাড়ি এই দিকটায় আসে কিনা। নাকি তারা যাত্রা বাতিল করে শহরে ফেরত চলে যায়। হেনা এখানে কিছুটা সময় অপেক্ষা করবে।
হঠাৎ কিছু একটার শব্দে ঘোর ভেঙে গেল মেসের। ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখতে পেল, প্রায় এক ঘন্টা কেটে গেছে। আর দেরি করা যাবে না। কসাইয়ের ডেরায় যথাসম্ভব অন্ধকারের মধ্যেই হামলা পৌঁছাতে চায় সে।
চটপট ডালটি থেকে নেমে পড়ল মেস। কিছুটা পথ হেঁটে যাবার পর বুঝতে পারল, এই অঞ্চলটি প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। সামনেই বিশাল তৃণভূমি।
এই তৃণভূমিটি পার হলেই কসাইয়ের আস্তানা। কিন্তু খোলা ময়দানটি এখন তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। যে করেই হোক এই অঞ্চলটি থেকে তাকে বেঁচে বের হতে হবে।
কিছুটা দূরেই তিন শিংওয়ালা একটি তৃণভোজী ডাইনোসর দেখতে পেল সে। আপন মনে লতাপাতা খেয়ে যাচ্ছে। মেস তাকে কোন রকম বিরক্ত করতে যাচ্ছে না।
উপরে খোলা আকাশে চাঁদটি আগের জায়গাটিতে নেই। অনেকটা একদিকে কাত হয়ে পড়েছে। ভোর হতে খুব বেশি দেরী নেই। কসাইয়ের আস্তানা থেকেও আর বেশি দূরে নেই মেস।
এখন পর্যন্ত র্যাপ্টরগুলির কোনো খোঁজখবর নেই। সেটি তার জন্য খুব ভালো খবর।
হতে পারে সেগুলির চরম একটি শিক্ষা হয়েছে। বুদ্ধিমান হলে মেসের দিকে সেগুলির আর পা না বাড়ানোই উচিত।
কিন্তু যদি প্রতিশোধের নেশায় ধরে বসে তাদের অথবা নেতাটি রগচটা হয়ে থাকে, তবে সদলবলে ফেরতও আসতে পারে।
তবে এই সময়টুকু তাদের ফেরত আসার জন্য খুবই বাজে সময়। মেস একটি খোলা চারণভূমিতে রয়েছে। তাদের সাথে দৌড়ে মেসের জন্য পেরে ওঠা খুবই মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে।
আবার এমনটিও হতে পারে র্যাপ্টরগুলি এই সময়টুকুর জন্যই মেসকে ঘিরে চারপাশে অপেক্ষা করে গেছে।
তবে দলনেতার হাবভাব দেখে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি, আসলে কোন উদ্দেশ্যে তারা পালিয়েছে।
জ্যাক হলে হয়তো ব্যাপারটি সাথে সাথেই ধরে ফেলতো। যদিও মুখের অঙ্গভঙ্গি দেখে মেস এটুকু বুঝতে পেরেছে, সাহায্যের জন্য চারপাশে এক ধরনের হাক ছাড়তে ছাড়তে পালিয়ে গেছে সেগুলি।
ছোটবেলার সেই ঘটনার পর থেকে সাড়াজীবন সরীসৃপ এড়িয়ে চলেছে মেস। তাই এদের ভাষা পড়তে, বুঝতে তার কিছুটা বেগ পেতে হয়।
হেনা টিলাটির পেছনে অপেক্ষা করছিল বেশ কিছুক্ষণ। হঠাৎ কিছুটা দূরে কয়েকটি দ্রুতগতির বাইকের হেডলাইট চোখে পড়ল তার। এদিকেই এগিয়ে আসছে সেগুলি।
আরো কিছুটা সামনে আসতেই হেনা বিস্মিত দৃষ্টিতে লক্ষ করল বাইকগুলি এই অঞ্চলের দখলদারদের!
ধুলো উড়িয়ে দ্রুতগতির গাড়িগুলি তার টিলাটির ঠিক বিপরীতে এসে সজোরে শব্দ করে ব্রেক কষলো।
তারপর সামনের বাইকটি থেকে ধুপ করে হোমরা চোমরা একজন মাটিতে লাফিয়ে পড়লো। এদিক ওদিক তাকিয়ে টিলাটির দিকে উজ্জ্বল আলো ফেলে বলল, তুমি যেই হও, বাইরে বেরিয়ে আসো।
হেনা দ্রুত তার মাথাটি নিচে নামিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করল ।
এদের কাছে কোনোভাবেই ধরা পড়া যাবে না। এরা দখলদার বাহিনী! ছিনতাই, হত্যা, রাহাজানি, ধর্ষণ সবকিছু করে বেড়ায় পুরো এলাকা জুড়ে।
হেনা দ্রুত তার জিপটি স্টার্ট দিল। সজোরে প্যাডেলটি চাপতেই পেছনের চাকাগুলি দ্রুত ঘুরতে ঘুরতে ধুলো উড়িয়ে গাড়িটি এক লাফে টিলা থেকে বেরিয়ে রাস্তায় উঠে পরল।
হেনার সামনেই সেই মোড়টি। সে জানে না কোন দিকটায় রয়েছে বহির্গমনের পথ। আজ জ্যাক থাকলে এই বিপদে পড়তে হতো না তাকে।
হেনার ডানপাশের রাস্তাটি সরু, অগত্যা বামপাশের রাস্তাটির দিকেই দ্রুত গাড়িটি ঘুরিয়ে ফেলল সে।
পেছনে দখলদার বাহিনীর সবাই একে একে বাইকে চড়ে বসল। ধুলো উড়িয়ে দ্রুতগতির বাইকগুলি হেনার গাড়ির পিছু নিল।
লোকগুলি আবোল তাবোল বকতে বকতে হকিস্টিক দিয়ে একে অপরের সাথে লাঠিপেটা করছিল আর উৎসবের মতো হইহুল্লোড় করছিল।
যেন তারা জানতে পেরেছে গাড়িটির ভেতর একটি মেয়ে রয়েছে! (চলবে)
RabbY khan, Debasis sorkar, Nishad jaman, Parvez ali, Akram ali, Said ahmed, Babul jalaluddin and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
দূরে উঁচু ঘাসগুলি ঘিরে কিছু একটা দেখতে পেল মেস। কিছু একটার নড়াচড়া যেন। প্রথমে ভাবল কোন তৃণভোজী ডাইনোসর। খুব বেশি পাত্তা দিল না। উত্তরের দিকে দ্রুত পা চালালো।
হঠাৎ অন্য পাশটায় একই ধরনের কিছু একটার দ্রুত নরণ-চরণ চোখে পড়ল তার। যেন কেউ দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াচ্ছে। তৃণভোজীরা খুব ধীর স্থির প্রকৃতির। তারা এত দ্রুত ছুটাছুটি করতে পারে না। কিছু একটা গণ্ডগোল রয়েছে।
এবার একদম চুপ করে দাড়িয়ে পড়ল মেস। তারপর আস্তে আস্তে হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পরলো।
'নো মুভমেন্ট' মনে মনে নিজেকে বলল। মেসের ছোট ছোট চোখের মনিদুটি ধীরে ধীরে একবার ডান পাশে চলে গেলো। তারপর আবার ঘুরে বাম দিকে ফিরল। মাথাটা তার এক চুলও নড়ল না।
অদূরে মাঠের কিনারা ধরে উচু উচু ঘাসগুলি ঘিরে কিছু একটা রয়েছে। সেগুলি ধীরে ধীরে মেসকে চারপাশ দিয়ে ঘিরে এগিয়ে আসছে। উঁচু ঘাসগুলির নড়াচড়া চাঁদের আলোয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।
খুব পরিকল্পনামাফিক চারদিক থেকে কিছু একটার দল তাকে ঘিরতে শুরু করেছে। মেসের মোটা মাথায় এবার আস্তে আস্তে সবকিছুই ঢুকলো। এগুলি আর কিছুই না। রেপটর! অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে তার বুঝতে।
মেস দ্বিতীয় কোন চিন্তা না করে খুব দ্রুত তিন শিংওয়ালা তৃণভোজী ডাইনোসরটির দিকে কুঁজো হয়ে নিজেকে এগিয়ে যেতে লাগল।
দখলদারদের দলটি হেনার গাড়িটিকে প্রায় ধরে ফেলেছে। হেনা মাঝেমধ্যেই তার গাড়ির পিছনের ট্রাংকটিতে সজোরে হকিস্টিকের আঘাতের শব্দ পাচ্ছে।
দুটি বাইক তার গাড়ির দুই পাশ দিয়ে খুব কাছে চলে এসেছে। তাদের একটি পেছন থেকে তার গাড়িতে একটি রড দিয়ে অনবরত আঘাত করে চলছে।
ইতিমধ্যে অপর পাশ থেকে অন্যটি হকিস্টিকের আঘাতে তার গাড়ির টেইল লাইটটি ভেঙ্গে ফেলেছে। মাথা কিছুটা বের করে বাইরে তাকানোর চেষ্টা করে হেনা। একটি উস্কোখুস্কো চুল দাড়ি ভর্তি কুৎসিত লোক তার দিকে তাকিয়ে আধো জীভ নাড়াচ্ছে। দৃশ্যটি দেখে হেনার গা রি রি করে উঠলো। অজান্তেই তার পা সজোরে গাড়ির প্যাডেলে চাপ দিল। গাড়ির গতি আরো বেড়ে গেল।
সামনে আরেকটি বড় বাক রয়েছে। ঠিক তার হাতের ডানে। হেনার জানা নেই, আসলে সে কোন দিকে যাচ্ছে! এই মরুভূমি সম্পর্কে তার কোন ধারণাই নেই। সে কি আদৌ এই মরুভূমি থেকে বের হতে পারবে, নাকি শেষ পর্যন্ত ধরা পরবে এই দখলদারদের হাতে।
বাকের কাছাকাছি আসতেই হেনা তার গাড়ির গতি কোনরকম না কমিয়েই হুইলটি ডান দিকে সজোড়ে ঘোরাতে থাকে। তাতে করে তার গাড়ির পেছনের চাকা খানিকটা বা পাশে সরে গিয়ে প্রায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যাবার উপক্রম হয়। বামদিকের চাকাগুলি মাটি থেকে কিছুটা উপরে উঠে যায়। যদিও শেষ মুহূর্তে গাড়িটিকে কোনরকমে নিয়ন্ত্রণ করে রাস্তার মাঝে নিয়ে আসে পারে হেনা। তবে একটু আগেই সে একটি বড় ভুল করে বসে ছিল প্রায়।
এভাবে তীব্র গতিতে বাক কাটা তার মোটেও উচিত হয়নি। তাতে করে সে তার গাড়ির পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারতো। ভাগ্য সহায় ছিল, তাই এ যাত্রা রক্ষা পেয়ে গেছে। তবে কিছুটা ঝুকি নেয়ার কারণে সে দুষ্টু লোকগুলির কাছ থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে। যদিও সেটি খুব বেশি সময়ের জন্য নয়।
মেস গুটি গুটি পায়ে তিন শিংওয়ালা চারপেয়ে ডাইনোসরটির কিছুটা কাছাকাছি চলে এসেছে। মেসের উপস্থিতি টের পেয়ে তৃণভোজী প্রাণীটি একটু যেন অস্থির হয়ে উঠল। মেস জানে ওকে বেশি রাগিয়ে দিলে গন্ডারের মত তেড়ে-ফুঁড়ে তার দিকে ছুটে আসবে। কিন্তু এখন ওর কাছাকাছি থাকাটাই সব থেকে বুদ্ধিমানের কাজ। ওর থেকে বেশি ভয়ঙ্কর শত্রু যে বাইরে অপেক্ষায়।
এই তৃণভোজীটির কাছাকাছি এসে মেসকে হামলা করার সাহস পাবে না র্যাপ্টরগুলি। ওরা জানে এই প্রাণীটি তৃণভোজী হলেও যথেষ্ট শক্তিশালী। তাদের চেয়ে আকারে অনেক গুণ বড়। আর এই মুহূর্তে ওর গা ঘেসে থাকা মেসকে হামলা করলে তৃণভোজীটি সেটিকে এক ধরনের ব্যক্তিগত হামলা হিসেবে ধরে নিতে পারে। আর একবার সেরকম কিছু ঘটে গেলে, র্যাপ্টরদের জন্য সেটা এক ধরনের আত্মহুতির শামিল।
এই প্রাণীটির গায়ে রয়েছে বর্মের মতো আস্তরণ, যেটি ভেদ করে কামড় বসানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। মাথায় রয়েছে তিনটে বড় বড় শিং। মাঝখানে রয়েছে সবচেয়ে বড়টি, যেটির এক গুতোয় এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যেতে পারে একটি র্যাপ্টর। এগুলি ছাড়াও একটি বর্ম ঘেরা শক্তিশালী লেজও আছে। মেস যতক্ষণ এটির সাথে আছে নিরাপদে আছে।
কিন্তু মেস যেমনটি ভেবেছিল রেপটরগুলি হয়তো তেমনটি ভাবেনি। তারা এবার নিজেদেরকে দৃশ্যমান করতে শুরু করলো। একে একে ঘাস গুলির আড়াল থেকে বাইরে বেরিয়ে আসতে শুরু করল। তাদের উপস্থিতি চারপেয়েটিকে প্রকাশ্যে জানিয়ে দিল। মুখ দিয়ে এক ধরনের অদ্ভুত বিকট শব্দ করতে লাগল।
মেস জানে এটা খুব একটা ভালো লক্ষণ নয়। এর অর্থ হলো, হয় এই দোপেয়েটিকে আমাদের হালে ছেড়ে দাও, নয়তো তুমি নিজেও আমাদের আক্রমণের শিকার হও।
আদাজল খেয়ে লাগা র্যাপটরগুলি তাদের এলাকায় মেসের দাম্ভিকতা, স্পর্ধা মেনে নিতে পারেনি। যেন এটি তাদের আত্ম-অহমিকায় লেগেছে খুব। তারা কোনভাবেই তাকে জ্যান্ত বের হতে দেবে না।
তৃণভোজীটি ইতিমধ্যে ঘাস খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। মাথা তুলে র্যাপটরগুলির স্থির দৃষ্টিতে দিকে তাকিয়ে আছে। যেন তাদের আচরণ বোঝার চেষ্টা করছে।
কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পরে এবার যেন একটু অস্থির হয়ে পড়ে সেটি। অন্য পাশ থেকে একটি র্যাপ্টর তার দিকে এগিয়ে আসতে গেলে অনেকটা গুতো দেয়ার ভঙ্গিতে শিং দিয়ে তেড়ে যায় সেটির দিকে। সাথে সাথে দোপেয়ে হিংস্র জন্তুটি লাফ দিয়ে একপাশে সরে যায়।
র্যাপ্টরগুলি এখনো তাকে বুঝিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে চলছে। তোমার সাথে আমাদের কোন হিসাব নিকাশ নেই।
তৃণভোজীটি কিছু বুঝতে পারল কিনা বোঝা গেল না। কিন্তু সে মেসকেও তার কাছে ঘেষতে দিচ্ছে না।
মেসের কাছে হঠাৎ করে মনে হল, যেন সে একটি হরিণ ছানা, আশ্রয় নিয়েছে একটি বড় মহিষ এর পাশে। আর তাদেরকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে একদল হায়েনা। খিক খিক করে হেসে চলছে সেগুলি।
হঠাৎ করেই তৃণভোজীটি তার বর্মযুক্ত লেজটি উপরে তুলে ফেলে। তার পরপরই সেটি সজোরে সামনে বাড়িয়ে দেয়। মেস কোনরকমে মাথায় হাত দিয়ে লাফিয়ে মাটিতে পড়ে যায়। তার মাথার উপর দিয়ে শাই করে একটা শব্দ হয়।
পরক্ষনেই একটি র্যাপ্টর ছিটকে গিয়ে খানিকটা দূরে পড়ে যায়। লেজটি সেটির গায়ে আঘাত হানে।
মেস কোন রকমে টাল সামলে পিঠ থেকে তার চাপাতি বের করে। এবার তৃণভোজীটিও যেন হিংস্র হয়ে উঠছে। রেপ্টরগুলি সেটির চারপাশ ঘিরে ধরেছে। এখন তাদের লড়াই শুধু মেসের একার সাথে নয় বরং তাদের দুজনের সাথে।
কিছুক্ষণ ধরে দুই সরীসৃপ প্রজাতির মধ্যে তর্জন-গর্জন চলে। যদিও তৃণভোজীটি গরুর মত এক ধরনের হাক ছাড়া হিংস্র কোন শব্দ তৈরি করতে পারে না কিন্তু এক ধরনের মেজাজ সে ঠিকই দেখাতে পারে।
তারপর হঠাৎ করেই তৃণভোজীটি একটি নির্দিষ্ট দিক লক্ষ্য করে ছুটতে শুরু করে। যেন সে লড়াই করতে ইচ্ছুক নয়, নিজে থেকেই হার মেনে নিয়েছে।
তার এই হঠাৎ ছুটে চলায় খেই হারিয়ে ফেলে মেস। বড় বড় পদক্ষেপে চারপেয়েটি দ্রুতই সামনে এগিয়ে যেতে থাকে। মুহূর্তেই এবার গোটা পরিস্থিতি যেন মেসের বিপক্ষে চলে যায়। যদি কোনভাবে মেস পেছনে পড়ে যায়, তাহলে নির্ঘাত তাকে মারা পড়তে হবে এই হায়েনাগুলির হাতে। (চলবে)
RabbY khan, Debasis sorkar, Sikdar rahat, Sk rahul ali, Akash islam, Apon arnob, Parvez ali and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
দৌড়ে চলছে মেস। এক হাতে চাপাতি, অন্যহাতে কম্পাস। একটু পরপর সেটিতে চোখ দিয়ে দিক ঠিক রাখার চেষ্টা করছে।
মানচিত্র অনুযায়ী সামনে একটি জলাশয় থাকার কথা। কোনভাবে নিজেকে সেই পর্যন্ত বাঁচিয়ে নিয়ে যেতে হবে তাকে। নিজের বিশাল পেশীবহুল শরীরটিকে টেনে-হিঁচড়ে আর সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াটাও যে তার কাছে এখন চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে।
তৃণভোজীটি ইতিমধ্যেই লেজ গুটিয়ে পলায়ন করেছে। বুঝতে পেরেছে এই হায়নাগুলির সাথে তার লড়াইয়ের প্রয়োজন নেই। তবে সে মেসকে কিছুটা সময় ও সুযোগ বের করে দিয়ে গেছে।
আর কিছুটা পথ! আর কিছুটা পথ! তারপরই একটি জলাশয়! মেস নিজেকে আপন মনে বোঝাতে থাকে।
এতোটুকু পথ পেরিয়ে হাল ছেড়ে দিলে যে তীরে এসে তরী ডুবে যাবে!
ক্ষিপ্র গতির সরীসৃপগুলি মেসের অনেকটাই কাছাকাছি চলে এসেছে এবার। তাকে প্রায় দুই দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। এখন তার দুই পাশে অনেকটা সমান্তরালে দৌড়াচ্ছে আর একটু একটু করে তার দিকে সরে আসছে।
এদিকে সেও দৌড়াতে দৌড়াতে প্রায় হাঁপিয়ে উঠেছে। যদিও তৃণভূমির প্রায় শেষ সিমানায় চলে এসেছে, অদূরেই জলাশয়ের জলের উপর থালার মতো চাদটির প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছে।
জলাশয়ের কিনারায় আসতেই কোন কিছু না ভেবে নিজের গতি না থামিয়ে হাত পা ছুড়ে শুন্যে লাফিয়ে পড়ে মেস। তার পরপরই জলাশয়ের নোংরা পানির উপর ধপাস করে একটি শব্দ হয়। মাথা নিচের দিকে করে হাত দুটি সামনে বাড়িয়ে উপুড় হয়ে পানিতে পড়ে সে।তারপর সাথে সাথেই তলিয়ে যেতে থাকে জলাশয়ের গভীরে।
ক্ষিপ্রগতির সরীসৃপগুলি কিনারার শেষ মাথায় এসে কোনরকমে নিজেদের থামাতে সমর্থ হয়। যদিও কয়েকটি এর মধ্যেই গতি সামাল দিতে না পেরে পানিতে আছড়ে পড়ে।
অন্যগুলি খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে পানির কম্পনের দিকে তাকিয়ে থাকে আর অস্থিরভাবে তাদের সরু মাথাগুলি এদিক-সেদিক নাড়িয়ে যেতে থাকে।
কয়েক মুহূর্ত পর মেসের মাথাটি পানির নিচ থেকে উপরে ভেসে ওঠে। মুখ থেকে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে হাত দিয়ে মুখের উপর থেকে লতাপাতা জড়ানো জল সরিয়ে উপরের কিনারার দিকে তাকায়।
র্যাপ্টরগুলি খাদের কিনারায় চলে এসেছে। নিচে মাথা বাড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে মেসের কাকভেজা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
এবার তাদের দলনেতাটিকে দেখতে পেল মেস। খাদের কিনারায়, ঠায় দাঁড়িয়ে। যেন তার পুরনো শত্রুটিকে দেখছে মন ভরে আর দাঁতে দাঁত কিড়মিড় করছে।
মেসের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে, হঠাৎই আকাশের দিকে মাথা উঁচু করে এক ধরনের হাক ছাড়ল সেটি। যেন যুদ্ধের ময়দানে পর মুহুর্তের আক্রমনের ঘোষণা সেটি।
ঠিক তার পরক্ষনেই এক এক করে সরীসৃপগুলি জলাশয়ের নোংরা জলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে শুরু করে।
অবস্থা বেগতিক বুঝে তড়িঘড়ি করে তীরের দিকে সাঁতরাতে শুরু করে মেস। তার মুখ থেকে অদ্ভুদ ধরনের একটি আর্তনাদ বেরিয়ে আসে, এবার খুবই হতাশাগ্রস্থ সে। এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় একরকম ক্লান্ত।
তাছাড়া এই খাদ পার হলেই কসাইয়ের ডেরা। এভাবে হাঁপিয়ে ওঠা মেস কসাই বাহিনীর যে একটি চুলও ছিড়তে পারবে না!
কোনরকমে সাতরে জলাশয়ের কিনারায় এসে কিছুক্ষণ কাদামাটির উপর উপুড় হয়ে পড়ে থাকে মেস। জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নেয়। তারপর ঘুরে পেছনে তাকায়। অগভীর জলাশয়ে সরীসৃপগুলি পানির উপরে মাথা ভাসিয়ে সাঁতর কাটতে কাটতে তার দিকে এগিয়ে আসছে।
কোনরকমে উঠে পড়িমড়ি করে কাদার উপর দিয়ে এগিয়ে চলার চেষ্টা করে সে। তার পা দুটি কাদার ভেতর হাঁটু অবধি দেবে যাচ্ছিল। উপরে কিছুটা শক্ত মাটি আঁকড়ে ধরে কষ্টেসৃষ্টে খাদের কিনারায় উঠে আসে সে।
তারপর আর পেছনের দিকে তাকানোর সময় হয় না তার। ছোট ছোট পায়ে সোজা সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। পেছনে সরীসৃপগুলি একে একে পানি থেকে উঠে আসছে।
বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে আসার পর উঁচু-নিচু গাছগাছালির আশেপাশে ছোট ছোট টাঙ্গানো তাবু দেখতে পায় মেস।
তাহলে বনদস্যুদের এলাকায় ঢুকে পড়েছে সে। দ্রুত নিজেকে একটি গাছের আড়ালে নিয়ে গিয়ে হাটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে। তারপর থলে থেকে তার মানচিত্রটি বের করে, আলো ফেলতেই বুঝতে পারে ঠিক জায়গায়ই চলে এসেছে সে।
এটিই সম্ভবত কসাইয়ের ডেরা। পেছনে রেপটরগুলির সপাত সপাত পায়ের শব্দ শোনা যায়। পানি থেকে উঠে তাকে খুজে বেড়াচ্ছে।
হঠাৎ করেই একটি বুদ্ধি খেলে মেসের মাথায়। সে আশেপাশে মাটি থেকে বেশ কিছুটা উঁচু ডালবিশিষ্ট কোন একটি গাছ খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।
তারপর দ্রুত পায়ে একটি গাছ বেয়ে উপরে উঠে পড়ে। উঁচু একটি ডালে বসে চুপচাপ অপেক্ষা করতে থাকে। গাছগাছালির ফাঁকফোকর দিয়ে চাঁদের আলোয় নিচে এলাকাটি পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল।
শো টাইম! মনে মনে ভাবে মেস। মিনমিনে চোখদুটি আরো ছোট হয়ে আসে, এক চিলতে হাসির রেখা ফুটে ওঠে গালে।
মুখে হিস হিস শব্দ করে নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করতে করতে র্যাপ্টরগুলি ইতিমধ্যেই এ অঞ্চলে চলে এসেছে। মেসকে চারিপাশটায় খুঁজে বেড়াচ্ছে। গাছের উপরে বসা অনড় মেস চুপচাপ নিচে তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করছে।
এদিকে তাবুগুলির ভেতরে এক ধরনের শোরগোল পড়ে গেছে। দু একটা তাবুতে কেউ কেউ আলো জ্বালিয়েছে। টর্চের আলো জ্বেলে কেউ আবার বাইরে বেরিয়ে এসেছে।
চাঁদের আলোয় দেখে বোঝা যাচ্ছিল এই লোকগুলি বনদস্যু। তাদের গায়ে ভারী চামড়ার আলখেল্লা, কাঁধে ঝোলানো রাইফেল। মুখভর্তি উস্কোখুস্কো দাড়ি। বেশির ভাগেরই ঘাড় অবধি লম্বা চুল।
হঠাৎ এরকম অতর্কিত হামলায় ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে দস্যুগুলি। মুহূর্তেই তাদের ভেতর এক ধরনের শোরগোল পড়ে যায়। এদিক সেদিক ছুটাছুটি শুরু করে। ক্ষনে ক্ষনে গুলি ছোড়ার শব্দ ভেসে আসতে থাকে মেসের কানে।
এদিকে ক্ষিপ্র গতির সরীসৃপগুলিও কারো কারো দেহ কামড়ে টেনে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। এ যেন হঠাৎ করেই মহিষের পালে সিংহের আক্রমণ!
এই হুলুস্তুলের মধ্যে হঠাৎ করে দূরে একটি তাঁবু থেকে বিশালকায় কেউ একজন ধীরে পায়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। ন্যাড়া মাথার অবয়বটির হাতে দুটি বিশাল আকৃতির চাপাতি। শরীরে এক ধরনের চামড়ার পোশাক হাটু অবধি গিয়ে ঠেকেছে। অবয়বটিকে মানুষ নয়, ছোটখাটো একটি দানব বলা চলে।
চাপাতি হাতে কয়েক পা সামনে এগিয়ে আসতেই দানবটির মুখে তাচ্ছিল্যভরা এক ধরনের হাসির রেখা ফুটে ওঠে। এটি আর কেউই নয়, মেসের বহু বছরের আরাধ্য বুচার!
দুটো সরীসৃপ ক্ষিপ্র গতিতে তার দিকে এগিয়ে গেলে, দুই হাতে ধরে থাকা চাপাতি দুটি দুই পাশে চালিয়ে মুহূর্তেই ধর থেকে কল্লা নামিয়ে ফেলে সেগুলির। গলা কাটা মুরগীর মত মাটিতে পড়ে লাফাতে থাকে রেপটর দুটির বিচ্ছিন্ন দেহ।
দৃশ্যটি দেখে মেসের বুকের ভেতরটা যেন ধক করে ওঠে। এত পেশীবহুল শরীরেরও এক কোপে মস্তক বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি সে এই প্রাণীগুলির। সে জানে এটি বড়ই কঠিন কাজ। একটু আগেই সে এদের বিরুদ্ধে লড়ে এসেছে! (চলবে)
RabbY khan, Debasis sorkar, Jannat islam, Apon arnob, Said ahmed, Inamul haq, Biplob islam and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
নিচে দুই পেয়ে সরীসৃপগুলি ক্ষিপ্রগতিতে বনদস্যুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। ফাঁকে ফাঁকে তাদের মধ্যে গোলাগুলি চলছে।
এদিকে কসাই প্রচন্ড গতিতে তার তাণ্ডবলীলা চালিয়ে যাচ্ছে। একটার পর একটা সরীসৃপ কতল করে চলছে।
উপরে বসে মেস তার সুযোগের অপেক্ষা করছে। একেই বলে এক ঢিলে দুই পাখি। ইতিমধ্যে দুই দলই একে অপরের উপর পাল্টাপাল্টি আক্রমণে প্রায় পর্যদুস্ত।
কে বলে মেসের মাথায় ঘিলু নেই, মাথা মোটা!
মারামারি-কাটাকাটিতে ব্যস্ত কসাই তার গাছটি থেকে কিছুটা দূরে নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধ্যে ভোরের আলো ফুটে উঠতে শুরু করেছে। গাছগাছালির ফাঁকফোকর দিয়ে এক চিলতে আলো এসে চারিপাশটায় পড়ছে।
হঠাৎই নিচে একটি সরীসৃপ ক্ষিপ্রগতিতে কসাইয়ের দিকে এগিয়ে গেলে সেটির বুকে লক্ষ্য করে হাতের চাপাতিটি চালিয়ে দেয় সে। তারপর সেটির গলা চেপে ধরে শূন্যে তুলে দূরে আছড়ে ফেলে। এই সরিসৃপগুলি যেন তার হাতের ময়লা। কোনরকম পাত্তা না দিয়েই এগুলিকে সে উপর্যপুরি হত্যা করে চলছে।
এদিকে তার হতচ্ছাড়া দস্যুবাহিনী ইতিমধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। বেশিরভাগই র্যাপ্টরদের হাতে নিহত হয়েছে। কিছু কিছু আহত হয়ে মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছে। এদের কেবল যেন মার খাওয়ার জন্যই জন্ম হয়েছে। পুরো ধ্বংসলীলার বেশিরভাগটিই কসাই একা হাতে করেছে।
হঠাৎ করেই কি একটা মনে করে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনের দিকে তাকায় কসাই। মাটি থেকে কিছুটা উপরে একটি গাছের ডালে প্রথমবারের মতো মেসকে দেখতে পায় সে।
পর মুহুর্তেই চোখ দুটি তার বিস্ময়ে কোটর ছাড়া হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। হঠাৎ ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় দুজনই যেন স্তম্ভিত হয়ে পড়ে।
তাদের এই চোখাচোখি যেন কিছুক্ষনের জন্য সময়কে থামিয়ে দেয়। যেন চারপাশটা নীরব নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে।
মেসই প্রথম এই নীরবতা ভঙ্গ করে। রিকের কথা চিন্তা করে তার ভেতরটা যেন রাগে-ক্ষোভে ফুঁসে ওঠে।
মুখ দিয়ে 'ইয়ায়ায়া' বলে চিৎকার করে কসাইয়ের দিকে তার দুই পা তাক করে ঝাপিয়ে পড়ে।
মেসের শক্তিশালী পায়ে সজোরে লাথি বসে যায় কসাইয়ের গোলাকার চোয়ালে। কোনরকমে মাটিতে পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয় সে কিন্তু হাত থেকে একটি চাপাতি খসে পড়ে।
দ্রুত চাপাতিটি হাতে তুলে দূরে নিক্ষেপ করে মেস। তারপর পিঠ থেকে নিজের চাপাতিটি বের করে দুই হাতে শক্ত করে চেপে ধরে। কসাইয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে কটমট করে বলে, আমার ভাই কোথায়?
এই প্রশ্নটি শোনার জন্যই যেন মুখিয়ে ছিল কসাই। দাত মুখ খিচে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে বিশ্রী একটা হাসি দেয় সে। তারপর বলে, খুব শীঘ্রই জানতে পারবি, মোটা মাথা! তোকেও আমি একই জায়গায় পাঠাবো!
কথাটি শুনে যেন পিত্তি জ্বলে ওঠে মেসের। ইচ্ছে করে কসাইয়ের ধড় থেকে এই মুহুর্তেই কল্লাটি নামিয়ে ফেলতে।
কিন্তু তার পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নেয় সে। একই ভুল আবার করতে যাচ্ছে না তো। এই বার তাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।
মেস জানে তাকে জিততে হবে বুদ্ধির জোরে, বল প্রয়োগে নয়। এই অভিযানে অন্তত এতোটুকু শিখতে পেরেছে সে। তাছাড়া কসাইয়ের সাথে শুধু মাত্র বল প্রয়োগে পেরে উঠবে না সে।
যদিও এই মেস সেই আগের মেসটা নেই। তার ভেতরে অনেক ধরনের পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু কসাই সেটি জানে না। আর এটিরই সুযোগ নিতে যাচ্ছে সে।
এবার মুখে কিছু না বলে হঠাৎ করেই হাতে ধরে থাকা চাপাতিটি কিছুটা দূরে ছুড়ে ফেলে মেস। তারপর তার শান্ত চাহুনি দিয়ে কসাইয়ের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকে। যেন বলে, আয় খালি হাতে লড়াই করে দেখ, সাহস থাকলে!
কসাই যেন তার চোখের ভাষাটি বুঝতে পারে। তার মুখে এক ধরনের হাসির রেখা ফুটে ওঠে। মেসের এই পরিবর্তিত রূপটি সে যেন উপভোগ করছে!
এক হাতে ধরে থাকা চাপাতিটি এবার ছেড়ে দেয় কসাই। হাত থেকে খসে মাটির উপর আছড়ে পড়ে সেটি।
পরমুহূর্তেই তীব্রবেগে পা চালায় মেস। পড়িমরি করে কসাইয়ের দিকে দৌড়ে যেতে থাকে। নিজের অজান্তেই তার মুখ দিয়ে একটি শব্দ বেরিয়ে আসে। ইয়ায়ায়া...
অদূরে উঁচু-নিচু পর্বতশ্রেণীর ওপাশ থেকে সূর্যের আলোক রশ্মি হ্যানার মুখে এসে পড়তে শুরু করেছে। রাত শেষে ভোরের আলো এখন ধীরে ধীরে চারিদিকে ফুটে উঠছে। দখলদার দস্যুগুলি কিন্তু এখনো হেনার পিছু ছাড়েনি।
একটু আগেই কেউ একজন একটি হকিস্টিক ছুড়ে তার গাড়ির পেছনের কাচ ভেঙ্গে চুর-চুর করে দিয়েছে। হকিস্টিকটির অর্ধেক টুকরো কাচ ভেঙে গাড়ির ভেতরে এসে পড়েছে।
হ্যানা কিছু একটা ভেবে গাড়ির কাচ খুলে এক নজর পেছনে দেখার চেষ্টা করে। হঠাৎ করেই সে যা দেখতে পায় তাতে আতকে উঠে দ্রুত গাড়ির ভেতরে মাথা ঢুকিয়ে নেয়। দখলদারদের একটি বাইকের পেছনের অংশে বসে দাঁড়িয়ে পড়েছে। তার হাতে একটি ধনুকে ভর করে ধাড়ালো তীর ঠিক হ্যানার গাড়ি বরাবর তাক করে রেখেছে।
দৃশ্যটি দেখে তড়িত্গতিতে গাড়ির হুইলটি ডানে-বামে ঘুরিয়ে সাপের মতো এঁকেবেঁকে চলার চেষ্টা করে হ্যানা। কিন্তু তার চেষ্টাটি এবার ব্যর্থ হয়। তীরটি তার গাড়ির কোনো একটি টায়ারের উপর এসে আঘাত করে। পরের মুহূর্তেই গাড়িটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। রাস্তার এ কিনারা ও কিনারা করে হঠাৎ একটি পাথরে বেঁধে পুরো গাড়িটি উল্টে পড়ে।
এদিকে কসাইয়ের সাথে তীব্র হাতাহাতি লড়াই চলছে মেসের।
লড়াইয়ের এক পর্যায়ে কসাই মেসের টুটি চেপে ধরে। তারপর তীরের বেগে তাকে ছুড়ে ফেলে দেয়। মেসের দেহটি একটি গাছের সাথে গিয়ে সজোরে বারি খেয়ে মাটিতে আছড়ে পরে।
কোনরকমে টাল সামলে মাথা তুলে উপরে তাকাতেই সে দেখতে পায়, কসাই দ্রুত পায়ে দৌড়ে হঠাৎ করেই শুন্যে লাফিয়ে উঠেছে। তার বিশাল পশ্চাৎদেশটি নিয়ে মেসের শরীরের উপর এখুনি আছড়ে পড়তে যাচ্ছে।
এক মুহূর্ত দেরি না করে তড়িৎ বেগে একপাশে গড়িয়ে সটকে পড়ে মেস। কসাইয়ের বিশাল দেহটি মাটির উপর ধপাস করে আছড়ে পড়ে। আর এক মুহূর্ত দেরি করলেই সেটির নিচে পড়ে পিষ্ট হয়ে যেতো মেস। তার বুকের হাড়গোড় ভেঙে পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি মুখে বেরিয়ে আসত।
কসাইয়ের এরকম আক্রমণে কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে পড়ে মেস। ছোট ছোট পায়ে কিছু একটার পেছনে দ্রুত আশ্রয় খুঁজতে থাকে সে। হাতাহাতি লড়াইয়ে ইতিমধ্যেই হাঁপিয়ে উঠেছে সে। কিছুটা সময় প্রয়োজন তার।
একটি গাছের উপর হাত রেখে বুক ফুলিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলতে থাকে মেস। ঠিক সেই মুহূর্তেই তার থেকে কিছুটা দূরে কসাইয়ের ওপাশ থেকে একটি গাছের আড়ালে সেই দলনেতা সরীসৃপটিকে দেখতে পায় সে।
আড়াল থেকে ঘাড়টি কিঞ্চিত বাঁকিয়ে কাজল কালো চোখে এক দৃষ্টিতে তারই দিকে তাকিয়ে আছে। এই দৃষ্টি যেন ভুলবার নয়। আপন মনে মাথা নেড়ে নিজের চরম এই দুর্ভাগ্যের জন্য মনে মনে আফসোস করতে থাকে মেস।
এরকম আহত অবস্থায় তাকে দেখতে পেয়ে সরীসৃপটি যেন খুশি হয়ে উঠেছে। যেন এরকম একটি সুযোগের জন্যই এতোটা সময় অপেক্ষা করেছে সে।
এদিকে কসাই মাটি থেকে তার বিশাল দেহটি নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। ইতিমধেই সরীসৃপটি মেসকে লক্ষ্য করে দৌড় দিতে শুরু করেছে। মেস কোনভাবে নিজেকে কসাইয়ের পেছনে আড়াল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সরীসৃপটি মেসকে লক্ষ্য করে দৌড়োতে গিয়ে আচমকাই কসাইয়ের সামনে এসে পড়ে যায়। পর মুহূর্তেই পা পিছলে নিজেকে সামলে নেয় সেটি। কসাইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে থমকে যায়।
সরীসৃপটিকে দেখে কসাই যেন একটুও বিচলিত হয় না বরং এক দৃষ্টিতে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে সেটির দিকে। যেন কোন ধরনের কীটপতঙ্গ দেখতে পেয়েছে সে।
সরীসৃপটি তার চোখের ভাষাটি যেন এবার বুঝতে পারে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মুখ দিয়ে গরগর করে এক ধরনের শব্দ করে। এ যেন কসাইয়ের দিকে তার ছুঁড়ে দেয়া এক ধরনের চ্যালেঞ্জ।
কসাইয়ের হাতে কোন চাপাতি নেই। কিছুটা দূরেই একটি চাপাতি পড়ে থাকলেও কসাই সেটির দিকে ভ্রুক্ষেপ করে না। এরকম একটি জন্তু যেন তার কাছে নস্যি। কত কত হিংস্র ডাইনোসর সে কুপিয়ে হত্যা করেছে। টুকরো টুকরো করে মাংস রান্না করে খেয়েছে। আর এতো সামান্য কাজল কালো চোখের এক রেপটর।
র্যাপ্টরটি তার দিকে দৌড়ে ছুটে আসতেই, অনেকটা ছেলেখেলার ভঙ্গিতে সেটির টুটি চেপে ধরার চেষ্টা করে কসাই!
কিন্তু ওই যে বললাম চেষ্টা করে, তার অর্থ এই বার কসাই সেটির টুটিটি চেপে ধরতে পারেনি। বরং পুরোপুরি ব্যর্থ হয়।
এই র্যাপ্টরটি ছুটে আসার সময় তীরের বেগে তার মাথাটি কাটিয়ে নিয়ে কসাইয়ের বাহুর উপর তার তীক্ষ্ণ দাঁতের কামড় বসিয়ে দিয়েছে। হতে পারে সে তার সতীর্থদের কাছ থেকে কসাইয়ের এই কৌশলের একটি শিক্ষা ইতিমধ্যে নিয়ে নিয়েছে।
তীব্র ব্যথায় আর্তচিৎকার করে ওঠা কসাই টাল সামলাতে না পেরে বিশাল দেহটি নিয়ে মুহূর্তেই মাটিতে আছড়ে পড়ে। তারপরই নাটকীয়ভাবে মোড় নেয় পুরো পরিস্থিতি।
র্যাপ্টরটি তার শরীরের উপর চড়ে বসে। তার ঘাড়, মুখ লক্ষ্য করে উপর্যপুরি কামড়াতে শুরু করে।
কসাই সেটির ধাড়ালো দাতের আক্রমণ কোনভাবেই ঠেকাতে না পেরে, অবশেষে তার মাথা থেকে একটু দূরে পড়ে থাকা চাপাতিটির দিকে হাত বাড়ায়।
একপর্যায়ে সেটি হাতের নাগালে পেলে কোনরকমে সামনে চালিয়ে দেয় সে।
র্যাপ্টরটি সেটি বুঝতে পেরে প্রায় সাথে সাথেই এক লাফ দিয়ে আঘাতটি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। কিন্তু কসাইয়ের সুচারু হাত সেটির কল্লা আলাদা করতে না পারলেও, দেহ থেকে একটি বাহু বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। মুহূর্তেই আর্তনাদের মতো এক ধরনের শব্দ করে লাফিয়ে তার কাছ থেকে দূরে সরে যায় জন্তুটি।
যদিও ততক্ষণে যা ঘটার ঘটে গেছে। কসাই মারাত্মকভাবে আহত হয়ে পড়েছে। তার ঘাড় থেকে ফিনকি দিয়ে গলগল করে রক্ত ঝরে পরছে।
অবস্থা বুঝতে পেরে তার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে দলনেতা জন্তুটি। আহত অবস্থায় এক ধরনের অস্ফূট শব্দ করতে করতে কাটা বাহুটি নিয়ে দ্রুত জঙ্গলের দিকে দৌড়াতে শুরু করে। আপাতত তার প্রতিশোধ নেয়া হয়ে গেছে। কসাই একাই তার অনেক স্বজাতিকে হত্যা করেছে।
আসলে সব মানুষের সক্ষমতা যেমন একই রকম নয়, প্রাণীদের ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারগুলি তার ব্যাতিক্রম নয়। এই বিষয়টি যেন বেমালুম ভুলে গিয়েছিল কসাই। অন্য সবগুলির মত এই র্যাপ্টরটিকেও অবমূল্যায়ন করেছে সে। যদিও এই দলনেতাটিকে কখনোই সেভাবে বিচার করেনি মেস।
শেষমেষ কাটা শামুকে পা কাটল ভয়ঙ্কর বনদস্যু কসাইয়ের। বড় বড় দৈত্যদানো ডাইনোসর বদ করে আজ তাদের থেকে হাজারগুন দুর্বল একটির বুদ্ধির কাছে হার মানতে হলো তাকে।
যে ডাইনোসরদের সে সারাজীবন কুপিয়ে মেরেছে, ছিন্নভিন্ন করে ছেলেখেলা করেছে। রান্না করে স্যুপ বানিয়ে খেয়েছে। আজ তাদের হাতেই প্রানটা গেল তার। একেই বলে নিয়তি, কর্মফল।
আসলে কসাই কখনোই মেসের শিকার ছিল না। নিয়তিই এই জন্তুগুলির জন্য তাকে নির্ধারণ করে রেখেছিল। নয়তো সেই সুদুর পশ্চিম থেকে এগুলি কেনই বা মেসের পিছু নেবে আর এভাবে কসাই ডেয়ায় হামলা চালাবে।
এবার যেন পরিবেশ পুরোপুরি শান্ত হয়ে এসেছে। যেন এক যুদ্ধের অবসান ঘটেছে। ইতিমধ্যে ভোরের আলোয় চারপাশটা আলোকিত হয়ে উঠেছে।
মেস এক পা খুড়িয়ে খুড়িয়ে কোন রকমে কসাইয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। কসাইয়ের গলা দিয়ে এখনো গলগল করে রক্ত বেড়িয়ে যাচ্ছে। কসাইয়ের হাত পা ছুড়াছুড়ি কমে গেছে। আস্তে আস্তে তার শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে।
শেষবারের মতো মেসের দিকে একবার তাকিয়ে তাচ্ছিল্যভরা একটি হাসি দেয় কসাই। তারপর শেষ নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে, রিক বেঁচে আছে। তবে যেভাবে বেঁচে আছে, তার থেকে মরে যাওয়া শ্রেয়।
কথাটি বলেই মাথাটি একপাশে ঢুলে পড়ে তার। নিস্তেজ, নিথর কসাইয়ের বিশাল দেহটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
নিচে হাটুগেড়ে বসে কয়েকবার তার কাধটি ধরে ঝাঁকি দেয় মেস। কিন্তু কোন রকম উত্তর আসে না তার নিষ্প্রাণ দেহটি থেকে।
ছিন্নভিন্ন তাবুগুলি থেকে কিছুটা দূরে একটি ভাঙা ছাদ খোলা গাড়ি পড়ে রয়েছে। মেস সেটির কাছে এগিয়ে যায়। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার চেষ্টা করে। কিছুক্ষণ চেষ্টার পরে গাড়িটি স্টার্ট নিতেই জঙ্গলের পথ ধরে সামনে এগিয়ে চলে সে।
কসাইয়ের কথাটি তার কানে ঘুরপাক খাচ্ছে। তার ভাই বেচে আছে! কিন্তু তার সাথে এমন কি ঘটেছে যেটি চিন্তা করে মৃত্যুর আগেও কসাই এক ধরনের প্রশান্তি নিয়ে মরেছে! প্রতিশোধের প্রশান্তি! (চলবে)
RabbY khan, Debasis sorkar, Nishad jaman, Sikdar rahat, Sk rahul ali, Jannat islam, Akash islam and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
শর্ণহোস্ট মৃত্যুর মরুভূমিতে দখলদার বাহিনীর নেতা হ্যামারের সাথে দেখা করতে এসেছে। তার পেছনে দুজন প্রহরী নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রয়েছে।
একটি উঁচু আসনে পিঠ হেলিয়ে পা তুলে আয়েশ করে বসে ছিল বিশালদেহী হ্যামার টেরহুন। শর্ণহোস্টকে দেখে কোনরকম পাত্তা না দেয়ার ভঙ্গিতে বলল, আমাকে দেয়া কথা তুমি রাখনি। তুমি এখনো আমার সব পাওনা মিটিয়ে দাওনি।
শর্ণহোস্ট তার দিকে কটমটে দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, তুমি আরো কিছু আশা করছো আমার কাছ থেকে? তোমার স্পর্ধা দেখে আমি হতবাক হচ্ছি। রেগে গিয়ে যেন কেপে উঠল সে। তারপর বলল, তোমার ভাই ভাইস হতচ্ছাড়া জ্যাককে সবকিছু বলে দিয়েছে!
উহু। মাথা নাড়ল হ্যামার। সব কিছু বলেনি। আমার নাম বলেছে। তোমার নাম গোপন রেখেছে।
তবে অ্যাম্বাসেডর হ্যানা আমার পেছু নিল কেন?
হ্যামার কোন জবাব দিল না। চুপ করে রইল।
শর্ণহোস্ট এর ওয়াকি টকিটি হঠাৎ বেজে উঠল। সেটি মুখের সামনে নিয়ে বলল, আমি তার কোন ক্ষতি চাই না। তবে যে কোন মূল্যেই হোক তার মুখ থেকে কথা বের করো।
বলেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে ওয়াকি টকিটি প্রহরীর হাতে দিয়ে দিল।
হ্যামার কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, জ্যাক আমার ডেড়ায় হামলা চালাবে। এটা হবে তার জন্য চরম ভুল। আমি চাই সে আমার ফাদে পা দিক। ধরে নাও এক ঢিলে দুই পাখি মারা হয়ে গেছে তোমার।
শর্ণহোস্ট এই কথার কোন জবাব দিল না। পেছন ঘুরে গাড়ির দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করল।
হ্যামার উঠে দাড়াল, পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলল, আমার পাওনা?
আগে সবকিছু শেষ করো। তোমার পাওনা তুমি পেয়ে যাবে। শর্ণহোস্ট এর ঠান্ডা জবাব।
পেছনে দাড়িয়ে হাত মুষ্টি করে দাতে দাত চিবোতে থাকে হ্যামার।
শর্ণহোস্ট গাড়িতে চড়ে বসলে তার একজন প্রহরী তার দিকে ফিরে বলে, ম্যাম, আজ সকালে ডাইনোসরদের হাতে বুচার নিহত হয়েছে।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে শর্ণহোস্ট। তারপর বলে, বুচার কার কাছে ডাইনোসরগুলি পাচার করত, সেটি খুঁজে বের করো।
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে বন্দী অবস্থায় আবিষ্কার করল হ্যানা। হাত দুটি তার বড় একটি থামের সাথে আটকানো কাঠের তক্তার দুই পাশে মেলে বাধা। পা দুটি নিচে থামের সাথে শক্ত করে দড়ি দিয়ে আঁটা।
সামনে অনেকগুলো উস্কোখুস্কো চুল দাড়ি ভর্তি কুৎসিত লোক দাড়িয়ে হ্যানার দিকে তাকিয়ে আছে আর অদ্ভুত সব অঙ্গভঙ্গি করে বেড়াচ্ছে। কেউ দুই বাহু ভাজ করে পাখির ডানায় কল্পনায় উড়ার চেষ্টা করছে। কেউ আবার মাথার উপর মদের বোতল রেখে কোমর দুলাচ্ছে।
হ্যানা হটাৎই তাদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে প্রশ্ন ছোড়ে, তোমরা কারা? আমাকে কেন ধরে এনেছো?
কেউ যেন তার সুশ্রী মুখে এরকম কর্কশ একটি চিৎকার আশাই করেনি। প্রায় সাথে সাথেই কয়েক মুহুর্তের জন্য থমকে যায় সবাই। উস্কোখুস্কো চুল দাড়ির লোকগুলি কিছুক্ষণ কোন কথা বলে না। শুধু ঘাড় মুখ বাঁকিয়ে হ্যানাকে উপর নিচ পর্যবেক্ষন করতে থাকে।
হটাত তাদের একটি শরীর পাকাতে পাকাতে হ্যানার সামনে চলে আসে। প্রথমে তাকে একটু শুকে, তারপর জিভ নাড়তে নাড়তে তার দিকে মুখ বাড়িয়ে দেয়। হঠাৎই পেছন থেকে কেউ একজন ধমকের সুরে চেচিয়ে ওঠে।
দস্যুটি আতকে উঠে এক লাফে পেছনে সরে আসে। কণ্ঠটি তার চেনা।
ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখতে পায় তাদের বস হগ স্থির দাঁড়িয়ে আছে। পায়ে তার পশমের হলদে বুট। পড়নে কালো লেদারের প্যান্ট, গায়ে বর্মযুক্ত লেদারের জ্যাকেট। মাথার উস্কোখুস্কো সোনালী চুলগুলি ঘাড় অবধি লম্বা। মুখ ভর্তি আধা ছাটা ছোট ছোট দাড়ি।
হগ ধীর পায়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। সবাই দ্রুত সরে গিয়ে তার জন্য পথ তৈরি করে দেয়। হ্যানা তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে হগকে আপাদমস্তক লক্ষ করে। বুঝতে পারে এটি এই বাইক দস্যুদের দলনেতা।
হগ হ্যানার ঠিক পাশে গিয়ে গা ঘেঁষে দাড়ায়। তারপর সামনে তাকিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বলে, এই সুস্বাদু আপেলটি খাবার জন্য নয়!
মুহূর্তেই ভিড়ের ভেতর এক ধরনের শোরগোল শুরু হয়ে যায়। সবার চেহারায় যেন হঠাৎই নিরাশার রেখা ফুটে ওঠে। মুখ দিয়ে হায় হায় ধ্বনি বেরোতে লাগে। মাথায় বোতল নিয়ে নাচতে থাকা দস্যুটির নাচ বন্ধ হয়ে যায়।
হগ সেদিকে পাত্তা দেয় না। হ্যানার চেহারাটি খুব উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে পরীক্ষা করতে থাকে। তার ক্ষুরধার চাহনি, কোমড় অবধি লম্বা কালো, কোমল চুল, খাড়া নাক, উজ্জ্বল ঠোট দেখে আপন-মনে নিজের নিচের ঠোটটি কামড়ে ধরে। তারপর হাতের আঙুলগুলি একবার হ্যানার চুলের ফাঁক গলিয়ে চালিয়ে দেয়। আপন মনে বিড়বিড় করে বলে, বাহ কি নরম, মোলায়েম চুল।
হ্যানা এক ঝটকায় তার মুখটি সরিয়ে নেয়। হগ যেন এমনটা আশা করেনি। এক মুহুর্তের জন্য থমকে যায় সে। চেহারায় এক ধরনের কাঠিন্য ফুটে ওঠে।
তারপর হ্যানার কাধে নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে অনেকটা ফিসফিস করে মুখ বাকিয়ে জিজ্ঞেস করে, এই রাতে এই মৃত্যুর মরুভূমিতে কি করছিলে তুমি?
হ্যানা তার কোন কথার জবাব দেয় না। দাঁতে দাঁত চেপে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। এবার তার উঁচু বক্ষের দিকে চোখ যায় হগের। তারপর পকেট থেকে ছোট্ট একটি ধারালো ছোড়া বের করে সেই দিকে তাক করে বলে, আমি তোমার অনেক ক্ষতি করে দিতে পারি। তোমাকে হত্যাও করতে পারি। কিন্তু আদর করে জিজ্ঞেস করছি, এত রাতে মৃত্যুর মরুভূমিতে তুমি কি করছিলে?
এবারও কোন জবাব আসে না। হগ তার লিকলিকে জিভ বের করে হ্যানার থুতনি থেকে গাল অবধি একটু চেটে দেয়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মুখ থেকে একগাল থুতু হগের দিকে ছুঁড়ে দেয় হ্যানা।
হগ যেন একটু খুশি হয়ে ওঠে। থুতুটি নিজের সমগ্র গালে মাখাতে মাখাতে বলে, এইতো আমার উত্তর আসতে শুরু করেছে!
হাসপাতালে পৌঁছে প্রথমেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের দিকে পা বাড়ায় মেস। ইতিমধ্যে মোস্তফার জ্ঞান ফিরেছে। তার সাথে কথা বলার জন্য মুখিয়ে আছে সে। মোস্তফাকে দেখেই চোখদুটি ছল ছল করে ওঠে তার। কি অবস্থা হয়েছে তার বন্ধুটির! (চলবে)
Debasis sorkar, Apon arnob, Inamul haq, Biplob islam, Tasmiya islam tisha, Arman molla, Md ahad and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
হাসপাতালে পৌঁছে প্রথমেই নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের দিকে পা বাড়ায় মেস। ইতিমধ্যে মোস্তফার জ্ঞান ফিরেছে। তার সাথে কথা বলার জন্য মুখিয়ে আছে সে।
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে একটি বিছানায় শুয়ে আছে মোস্তফা। তার একটি হাত ব্যান্ডেজ করা, কাধের সাথে ঝুলে আছে।
শ্বাসনালী থেকে নল খুলে নেয়া হয়েছে, যদিও এখনও তার কিছুটা শ্বাসকষ্ট রয়ে গেছে।
অক্সিজেনের পরিমাণ ৯১ থেকে ৯২ শতাংশ দেখাচ্ছে। বিছানাটি সেজন্য পেছন থেকে একটু উঁচু করা। সামনে মনিটরে পালস ও অক্সিজেনের মাত্রা দেখা যাচ্ছে।
মেসকে দেখে তার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল মোস্তফা। শুকনো একটা হাসি দিল। তার চোখ দুটি কোটরাগত। মুখটি ফ্যাকাশে। চামড়া রুক্ষ।
মেসের চোখদুটি একটু ছল ছল করে উঠছিল। যদিও সেটি ধরা যায়নি। চোখ টিপে টিপে কোনভাবে কাটিয়ে উঠেছে সে।
কয়েক পা সামনে এগিয়ে মোস্তফাকে ছোট্ট করে একটি হাগ দেয় সে। তারপর বলে, অনেকগুলি ভুল হয়ে গেছে। প্রথমত, তোমাকে একা গোয়েন্দাগিরি করতে দিয়েছি। দ্বিতীয়ত, এখানে একা রেখে চলে গিয়েছি।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেস। তারপর আবার বলে, আর কোন ভুল করতে চাই না। তুমি সুস্থ হবার আগ পর্যন্ত আমি এখানেই থাকবো।
কথাটি বলে ডান পাশে বিছানার দিকে মাথা ঘুরিয়ে তাকায় সে। পাশের বিছানাটিতেই শুয়ে আছে মিকা। চোখ দুটি বন্ধ। ঘুমিয়ে আছে সে। মোস্তফার দিকে এবার ফিরে তাকায় মেস। মুচকি একটা অপ্রস্তুত হাসি দেয় সে।
কিছুক্ষণ দুজনের মধ্যে কোন কথা হয় না। একপর্যায়ে মোস্তফার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে সে, কি ছিল ওটা?
মোস্তফা জানালা দিয়ে অন্যমনস্কভাবে বাইরে তাকিয়ে আছে। মেসের কথাটি সে শুনতে পেয়েছে কিন্তু কোন উত্তর করেনি।
হঠাৎ করেই পেছনে জ্যাক এসে হাজির।
মেস আমার কিছু জরুরী কথা ছিল তোমার সাথে। বলল সে।
মেস মোস্তফার দিকে ফিরে তাকায়। মোস্তফা মাথা নেড়ে সম্মতি দিলে উঠে কক্ষটির বাইরে চলে আসে সে।
জ্যাকের চেহারায় একটু চিন্তার ছাপ। কিছুটা যেন নার্ভাস সে। নিজের ফোনটি হাতে নিয়ে বারবার কিছু একটা দেখার চেষ্টা করেছে। এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।
হঠাৎই একটু হন্তদন্ত করে বলে ওঠে, গতকাল রাতে গ্রামের পথে রওনা করেছিল হ্যানা।
হ্যানা নামটি শুনেই বুকটা যেন ধক করে ওঠে মেসের। চোখদুটি ছোট হয়ে আসে। মনোযোগ বেড়ে যায়।
জ্যাক বলতে থাকে, আমি তার সাথে সর্বশেষ মৃত্যুর মরুভূমিতে যোগাযোগ করতে পেরেছি। তারপর থেকে কোন ধরনের সংযোগ পাওয়া যায়নি। অনেকবার চেষ্টার পরেও।
মেসের চেহারায় একটু চিন্তার বলিরেখা ফুটে উঠল। কপালে ভাজ ফেলে বলল, এখন কোথায় সে?
আমি ঠিক জানি না। উত্তর দিল জ্যাক। তবে আমার মৃত্যুর মরুভূমিতে যাওয়া উচিত, তাকে খুঁজতে।
মেস অন্যমনস্ক ভাবে মাথা নাড়ে। আমি মোস্তফাকে রেখে যেতে পারছিলাম না। জ্যাক বলতে থাকে। তুমি আসাতে আমি তার খোঁজে বের হতে পারছি।
মেস এখনো কোন কথা বলে না। আরো একবার অন্যমনস্কভাবে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
একটু পরে বলে, ঠিক আছে তুমি যাও। তুমি ছাড়া ওই অঞ্চল কেউ ভালোভাবে চেনে না। আমি মোস্তফার দেখাশোনা করছি।
জ্যাক মেসের কাঁধে হাত রাখে। তারপর একবার সম্মতি সূচক মাথা নাড়ে। মেস হ্যান্ডশেকের ভঙ্গিতে একটা হাত বাড়িয়ে দিলে, জ্যাক তাকে টেনে বুকে জড়িয়ে নেয়। মেস তার পিঠে দুটো চাপড় দিয়ে বলে, গুড লাক জ্যাক।
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের বিশ্রাম কক্ষে এসে বসে মেস। মোস্তফা ও মিকা দুজনই বিশ্রাম করছে। কফির মগটি টেবিলে রেখে উপুড় হয়ে ধপাস করে বিছানার উপর পড়ে সে।
সামনে রাখা টিভিটি কন্ট্রোলার দিয়ে অন করতেই, শর্ণহোস্টের বোরিং একটি ভাষন পর্দায় ভেসে উঠল। 'ডাইনোসর বাড়ি বাড়ি হামলা করছে। মানুষ হত্যা করছে ... '
আবোল-তাবোল। জিব বের করে একটা ভেংচি কাটে মেস। চোখদুটি বুজে আসছে তার।
গত কয়েক দিনের ধকলে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল খেয়াল নেই হঠাৎ একটি শব্দে ঘুম ভাঙলো তার।
চোখ কচলে বিছানার পাশে রাখা অ্যালার্ম ঘড়ির দিকে তাকালো সে। রাত প্রায় দুইটা বাজে। টিভিটা এখনো মাথার উপরে চলছে। শর্ণহোস্টের পুরোনো রেকর্ড করা ভাষণ এখনো বেজে চলছে। বিরক্তির ভঙ্গিতে রিমোট কন্ট্রোলটি হাতে নেয় সে। টিভিটি বন্ধ করে কোনরকমে টেনেটুনে নিজেকে তুলে কক্ষের বাতিটি বন্ধ করে।
বিছানায় ফিরতে যাবে ঠিক তখনই দরজার বাইরে খট করে একটা শব্দ শুনতে পায়। একটু দাঁড়িয়ে পড়ে মেস। দরজার ঠিক গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ম্যাজিক হোল দিয়ে বাইরে তাকানোর চেষ্টা করে।
করিডোরে একটি বাতি টিমটিম করে জ্বলছে। হঠাৎই তার কাছে মনে হল কিছু একটার ছায়া করিডরের পথ ধরে চড়ে বেড়াচ্ছে। ভালো করে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারল ছায়াটি তার কক্ষ থেকে ডান দিকে চলে গেছে।
মেস ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না, কি সেটা? ছায়াটির ধরন দেখে বোঝা গেল ছোটখাটো কিছু একটা হবে। কারো কোন পালা কুকুর বিড়াল কিনা। কিন্তু এই রাতে হাসপাতালে কুকুর ছেড়ে বসে থাকবে কে?
কিছু একটা ভেবে কক্ষের দরজা সামান্য খুললো সে। অল্প ফাঁক দিয়ে মাথা গলিয়ে বাইরের দিকে তাকালো। করিডোরের ডান পাশটায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র রয়েছে। মোস্তফা আছে সেখানে। যতক্ষণ সে বাসায় না ফিরছে কোন কিছু হালকা ভাবে নেয়া ঠিক হবে না।
অগত্যা রুমের দরজাটা খুলে খুব সাবধানে ঘর থেকে বেরিয়ে পরলো মেস। সাথে নিল একটি টর্চ ও তার প্রিয় ছোড়াটি। সেটি বুটের ভেতর লুকিয়ে ছোট ছোট পদক্ষেপে করিডর ধরে সামনে এগোতে লাগলো।
কিছুটা পথ এগুনোর পর হাতের ডানে মোড় নিতেই আবার ছায়াটাকে দেখতে পেল সে। এবার বোঝা গেল খুব বেশি একটা বড় নয় সেটি। ছোটখাটো কোন একটি প্রাণী। লিকলিকে পায়ে ভর করে চলে গেছে ওপাশটায়। আবছা আলোয় সেটির ছায়াটি ওপাশের দেয়ালে এসে পড়েছে। উঁচু নিচু ছায়াটি দেখে বোঝার কায়দা নেই, ঠিক কী হতে পারে জন্তুটা। তবে সেটি খুব দ্রুত গতিতে চলাচল করছে।
হাতের ডানে কিছুটা পথ এগোতেই একটি রিসেপসন টেবিল দেখা গেল।
জিনিসটি সেটির পেছনে গিয়ে ঘাপটি মেরেছে। সম্ভবত মেসের উপস্থিতি টের পেয়েছে।
হঠাৎই টেবিলের ওপাশ থেকে এক ধরনের তীক্ষ্ণ জান্তব শব্দ বেরিয়ে এলো। এটি যেন শোনার জন্য প্রস্তুত ছিল না মেস। প্রাণীটি ছোট কিন্তু শব্দটি শুনে মনে হচ্ছে সেটি হিংস্র হতে পারে।
হাতের টর্চটি জ্বালিয়ে এক পা দুপা করে বসে বসে টেবিলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে সে।
টেবিলটির ঠিক পেছনেই ডেস্কগুলির আড়ালে আশ্রয় নিয়েছে জন্তুটি। সেটির পায়ের এক ধরনের খটমট শব্দ মেসের কানে এসে বাজছে।
টেবিলটির কাছাকাছি যেতেই ধীরে ধীরে টেবিলের ওপাশে মাথা বাড়িয়ে টর্চের আলো ফেলার চেষ্টা করে মেস। কিছু একটা দেখার চেষ্টা করে।
অন্ধকারে টেবিলের কোনায় কি যেন একটা ঘাপটি মেরে বসে আছে। খটমট শব্দ করছে। মনে হচ্ছে সেটির পা গুলি নড়েচড়ে উঠছে। ভালো করে আলো ফেলার চেষ্টা করতেই, সেটি কোন কারণে হটাৎই তার মুখ লক্ষ্য করে তড়িৎ গতিতে লাফিয়ে ওঠে।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই সেটি মেসের মুখের চারপাশে লম্বা লিকলিকে পা গুলি বাড়িয়ে দেয়। অনেকটা তার মাথাটি ঘিরে চারপাশ থেকে আকড়ে ধরে। অতর্কিত এই হামলায় মাটিতে উল্টে পড়ে তার হাত থেকে টর্চটি খসে যায়। জন্তুটি অনেকটা অক্টোপাসের মত তার মাথাটি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে এবার। কোন ভাবে এক হাত দিয়ে সেটিকে ছাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মেস।
জন্তুটি প্রচন্ড রকম শক্তিশালী। মেসের পেশীবহুল দেহও সেটিকে পুরোপুরি আটকে রাখতে পারছে না। দ্রুত অন্য হাতটি তার বুটের দিকে বাড়ায় সে। সাথে আনা ছোড়াটি হাতরাতে থাকে।
মেসের জায়গায় অন্য কেউ হলে এতক্ষনে হয়তো তাকে কাবু করে ফেলতো জন্তুটি। মেস কোনভাবেই ভেবে পাচ্ছে না এতোটুকু ছোট্ট একটি প্রাণী এতটা শক্তিশালী কি করে হয়! অক্টোপাসের মত দেখতে এই প্রাণীটি আর যাই হোক কোনো স্বাভাবিক প্রাণী নয়। এরকম কোন কিছু বনে জঙ্গলে কখনো দেখেনি আগে সে।
এবার প্রায় তার গলা পেচিয়ে ধরেছে সেটি। মেসের মুখ থেকে এক ধরনের গরগর শব্দ বেরোচ্ছে। তার শ্বাস যেন আটকে আসছে। খুব দ্রুত তাকে কিছু একটা করতে হবে।
এবার ছোড়াটি হাতের নাগালে পেল সে। কোনভাবে সেটি বের করে মাথার পাশ কাটিয়ে সেটির গায়ে আঘাত করার চেষ্টা করল। রিসিপশন ঘরের অল্প আলোতে সবকিছু পরিষ্কার দেখতে পারছে না।
জিনিসটি এবার তার মাথার চারপাশটায় আরো খানিকটা জড়িয়ে ফেলেছে। যেন তার মাথাটা গিলে খেতে উপরে বসেছে। প্রচন্ড শক্তিশালী এই ছোট্ট প্রাণীটিকে দেখে যারপরনাই অবাক মেস।
এখনো সে সবকিছু বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না। এটি যে তাকে হারিয়ে দিতে বসেছে!
ছোড়াটি দিয়ে কয়েকবার চেষ্টার পর শেষমেষ একটি আঘাত লাগাতে সক্ষম হয় মেস। জন্তুটি সঙ্গে সঙ্গে এক ধরনের জান্তব চিৎকার করে দূরে গিয়ে লাফিয়ে পড়ে।
দ্রুত মাটি থেকে উঠে দাড়ায় মেস। নিজেকে সামলে নিয়ে ছোড়াটি শক্ত করে সেটির দিকে তাক করে ধরে।
জন্তুটি কেমন যেন ছটফট করতে থাকে। তারপর মাকড়সার মতো লিকলিকে পা বাড়িয়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের দিকে ছুটে যায়।
কোন রকমে উঠে টেবিলের তলা থেকে টর্চটা হাতড়ে নিয়ে দৌড়ে কেন্দ্রের দিকে ছুটে চলে মেস। ভেতরে ঢুকেই টিমটিমে আলোয় সেটিকে হারিয়ে ফেলে।
হয়তো বড় বড় লোহার বিছানাগুলির নিচে কোথায় লুকিয়ে পড়েছে। টর্চটি দিয়ে আলো জ্বেলে একটি একটি করে বিছানার পর্দা সরিয়ে সেটিকে খুঁজতে থাকে সে। সবগুলি বেডে রোগি নেই। কিছু কিছু বেডে রয়েছে। তার এই উদ্ভট আচরণে রোগিরা যারপরনাই বিরক্ত।
এই রাতে হঠাৎ করে কাউকে এরকম একটি সংবেদনশীল কক্ষে ঢুকে পড়তে দেখে ছুটে এই কক্ষের নার্সটি তার দিকে এগিয়ে আসে।
এক্সকিউজ মি, আমি কি কোন ভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি? নার্সটি মেসকে উদ্দেশ্য করে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করে।
ইতিমধ্যে কয়েকজন রোগী জেগে উঠেছে। তাদের দেখে আবোল তাবোল বকছে। মেস তার খোজাখুজি চালিয়ে যেতে থাকে।
এক্সকিউজ মি, আপনি কি খুঁজছেন? নার্সটি আবার মেসকে উদ্দেশ্য করে চাপা গলায় জিজ্ঞেস করে।
অন্যমনস্ক মেস কোন উত্তর না দিয়ে দৌড়ে মোস্তফার কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়।
শব্দ শুনে মোস্তফা জেগে উঠেছে। এত রাতে মেসকে দেখে বিস্মিত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে।
মেস দ্রুত মিকার বিছানার চারপাশের পর্দাটি হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। অল্প আলোতে তার মাথাটি ভালো করে পরীক্ষা করে। তারপর আবার অস্থিরভাবে আশেপাশে কিছু একটা খুঁজতে থাকে।
কি ব্যাপার, মটু? মোস্তফার ঘুমে জড়ানো শান্ত কন্ঠ।
শশশ। আমি কিছু একটা দেখেছি। অস্থিরভাবে চারপাশে তাকাতে তাকাতে জবাব দেয় মেস।
মোস্তফা তার কথাটি তেমন গুরুতরভাবে নিতে পাড়ছে না। হয়তোবা প্রচুর দুর্বলতা থেকে ঘটছে এমনটা।
নার্সটি ইতিমধ্যে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তাকে প্রায় কাধে হাত দিয়ে ঠেলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অনুগ্রহ করে আসুন আমার সাথে। বলল মেয়েটি।
ঠিক তখনি কয়েকটা বিছানা পরে একটি পর্দার আড়াল থেকে কেউ একজন আর্তনাদ করে উঠল। (চলবে)
Debasis sorkar, Sk rahul ali, Jannat islam, Akash islam, Parvez ali, Nishan ahmed, Akram ali and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
ওপাশের একটি বিছানা থেকে কেউ একজন চিৎকার করে উঠেছে।
নার্সটি মেসকে কাটিয়ে দ্রুত পায়ে সেদিকে ছুটে চলল। মোস্তফা ও মিকা দুজনেই হকচকিয়ে উঠেছে। মেস তাদেরকে বিছানায় থাকার ইঙ্গিত করে নার্সটির পেছন পেছন ওপাশটায় ছুটে চলল।
পর্দার ওপাশে কিছু একটা দেখে মুখে হাত দিয়ে চিৎকার করতে করতে দৌড়ে বেরিয়ে গেল নার্সটি। সেখানে গিয়ে যা দেখতে পেল মেস, তাতে রীতিমত ভয়ে আতঙ্কে তার মুখ থেকে এক ধরনের আর্তনাদ বেরিয়ে আসল। এরকম জিনিস নিজে কখনো আগে দেখেনি। তার খুঁজতে থাকা সেই মাকড়সার মতো জন্তুটি একটি দুর্বল বয়স্ক রোগীর মুখের উপর চেপে বসেছে। মানুষটির পুরো মাথাটি চারপাশ দিয়ে পেচিয়ে ধরেছে। লম্বা লম্বা লিকলিকে পা-গুলী ঘাড় অবধি নেমে এসেছে। পুরো মুখ মন্ডলটি প্রায় আবৃত করে ফেলেছে। ইতিমধ্যে রোগীটির দেহটি নিথর হয়ে পড়েছে। মনিটরে আঁকাবাকা ইসিজি রেখাটি সমতলে চলে এসেছে।
তারপর যা দেখতে পেল মেস, তাতে যেন পিলে চমকে উঠল তার। ভাষায় প্রকাশ করতে পারবে না বিষয়টি। নিজের অজান্তেই মুখ দিয়ে একটি অস্ফুট শব্দ বেড়িয়ে পড়ল।
পাথরের মতো নিথর মৃত দেহটি হঠাৎই কাঁপতে শুরু করছে। দেখে মনে হচ্ছে দেহটিতে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার ঘটছে। জন্তুটি তার মাথার সাথে ধীরে ধীরে মিশে যাচ্ছে। সেটির কুৎসিত চেহারাটি লোকটির মুখমন্ডল ঢেকে নতুন একটি চেহারার আবরণ তৈরি করছে। ঘাড় বেয়ে লতা পাতার মতো ধীরে ধীরে বুকে পিঠে ছড়িয়ে পড়ছে।
এবার হঠাৎই কাঁপতে কাঁপতে দেহটি এক ঝটকায় বিছানায় উঠে বসল।
ধীরে ধীরে মানব আকৃতি থেকে পরিবর্তিত হয়ে উদ্ভট, কুৎসিত কিছু একটায় রূপান্তরিত হয়ে চলল।
আর এক মুহূর্ত এখানে দাড়িয়ে থাকাটা নিরাপদ মনে হয়নি মেসের কাছে। দ্রুত সেখান থেকে পা চালিয়ে ওপাশে মোস্তফা ও মিকার কাছে ছুটে গেল সে।
কি হয়েছে? মোস্তফার চেহারায় আতঙ্কের ছাপ। সে কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছে।
মেস কোন জবাব দিল না। নার্সিং স্টেশন থেকে দ্রুত পায়ে একটি হুইল চেয়ার নিয়ে এলো। তারপর মিকার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি পায়ে হেঁটে যেতে পারবে?
মিকা ভয়ার্ত চেহারায় দ্রুত উপর-নিচ মাথা নাড়লো। ইতিমধ্যে নিজের গায়ে লাগানো সব যন্ত্রপাতি টেনে খুলে ফেলেছে মোস্তফা। মেস তাকে ধরে টেনেটুনে বিছানা থেকে নামিয়ে হুইলচেয়ারটিতে বসালো।
এদিকে মিকা বিছানা থেকে নেমে উঠে দাঁড়িয়েছে। মাথায় হাত দিয়ে সামনের রেলিংটি ধরে রেখেছে।
তুমি ঠিক আছো? তার দিকে গলা বাড়িয়ে চাপা কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল মেস। উত্তরে শুধু মাথা নাড়লো মিকা।
মোস্তফাকে সহ হুইলচেয়ারটি দ্রুত ঘুরিয়ে তার দিকে নিয়ে গেল। তার হাতে সেটার হ্যন্ডেলদুটি ধরিয়ে দিয়ে বলল, এই দিকটায় একটি লিফট আছে।
তুমি? মেসের দিকে ঘুরে মিকা নিচু গলায় জিজ্ঞেস করল।
একটা কাজ আছে। বলেই নার্সিং স্টেশনের দিকে পা বাড়ালো মেস।
-তবে আপনারা যেটি ভাবছেন সেরকম কিছু করতে যাচ্ছে না মেস-
দ্রুত নার্সিং স্টেশন থেকে একটি হুইল চেয়ার হাতে নিল মেস। দুটো বেড পরে একটি বিছানায় আরেকটি বয়স্ক বুড়ি মহিলা রয়েছে। তার কাছে এগিয়ে গিয়ে টেনে ধরে চেয়ারে বসানোর চেষ্টা করল।
এই হতচ্ছাড়া, আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিশ? বুড়ি খুনখুনে গলায় চেচিয়ে ওঠল। মেস তার পকেট থেকে একটি সাদা টেপ বের করল। দাত দিয়ে একটা অংশ ছিড়ে বুড়ির মুখে লাগিয়ে দিল। মনে মনে ভাবল তুমি শুরু থেকেই বেশি বকবক করছ।
এই কেন্দ্রে আর কোনো রোগী নেই। বুড়িকে হুইলচেয়ারে করে নিয়ে দৌড়ে লিফটের দিকে এগিয়ে যায় সে। দেখতে পায় লিফটের ভেতর থেকে মাথা বাড়িয়ে উঁকি দিয়ে আছে মিকা। ভেতরে হুইলচেয়ারে মোস্তফা।
এদিকে পুরো আইসিইউ রুমে প্রলয় কান্ড শুরু হয়ে গেছে। কেউ একজন বিছানাগুলি সব উলটপালট করে ফেলছে। পর্দাগুলি টেনেটুনে ছিড়ে ফেলছে। কিছু একটা ছুড়ে ফেলে ভেতরের কাচগুলি ভেঙ্গে ফেলেছে। আর ক্ষনে ক্ষনে এক ধরনের জান্তব চিৎকার করে উঠছে। যেন কেউ যন্ত্রণায় আর্তনাদ করছে।
লিফটটি বেজমেন্টে নেমে আসতেই মেস বুড়িসহ হুইলচেয়ারটি নিয়ে তার গাড়িটির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।
পেছন পেছন মোস্তফাকে নিয়ে তাকে অনুসরণ করে মিকা।
দুজনে মিলে মোস্তফা ও বুড়ি মহিলাটিকে কোন রকমে পেছনের সিটে বসিয়ে সিট বেল্ট বেধে দেয়।
মিকা সামনে এসে বসলে গাড়িটি স্টার্ট মেস। কয়েক মুহূর্তে বেসমেন্ট থেকে লাফিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে গাড়িটি।
ছুটে চলে অন্ধকারে প্রধান সড়ক ধরে।
হাসপাতাল থেকে বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে আসার পর এবার মোস্তফা মুখ খোলে, আমার মনে হয় তোমার বিষয়টি জানা উচিত মেস।
কি ছিল ওটা? মোস্তফাকে সরাসরি প্রশ্ন করে সে।
কোনো মানুষ নয়! শান্ত কন্ঠে বলতে থাকে মোস্তফা, আবার শুধু সরীসৃপও নয়। মানুষ ও সরীসৃপের এক ধরনের অতিপ্রাকৃতিক মিশ্রণ। বলেই ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে।
মেস কোন উত্তর করে না।
তুমি অবাক হওনি? মোস্তফার সাথে সম্মতিসুচক মাথা নাড়তে নাড়তে বলে মিকা। মেস শুধু ডানে বামে মাথা নাড়ে।
বুড়ি মহিলাটি ততক্ষণে চোখ বড় বড় করে মোস্তফার দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকাতে শুরু করেছে। মোস্তফা তার মুখের টেপটি এক টানে খুলে দিলে, চিৎকার করে বুড়ি বলে ওঠে, হতচ্ছাড়ার দল! কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস আমাকে তোরা?
মোস্তফা পুনরায় টেপটি তার মুখে আটকে দেয়।
হঠাৎ করেই মিকা চোখদুটি বন্ধ করে তার কপালে হাত দেয়।
ব্যপারটি দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পেছন থেকে মোস্তফা তাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি ঠিক আছো?
উত্তরে হ্যাঁ বলে মাথা নাড়ে মিকা।
একটু বিরতি নিয়ে মোস্তফা আবার বলতে শুরু করে, সম্ভবত সমুদ্র শহরে কেউ একজন অবৈধ কোন গবেষণা কাজে লিপ্ত। যে মানুষ ও সরীসৃপের মধ্যকার একটি হাইব্রিড প্রাণী তৈরি করেছে।
এবার মেস মাথা নাড়ে। বলে, একটি নয়।
তুমি কী আরও দেখেছ? মিকা তার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।
আইসিইউ ঘরে যেটা ছিল, সেটা কি একই রকম অন্য কিছু? মোস্তফা জিজ্ঞেস করে।
মেস মাথা নাড়ে। তারপর বলে, উহু। একই রকম নয়। বরং তার চেয়েও ভয়ংকর কিছু।
মিকা ভ্রু কুচকে ওঠে। তার চোখেমুখে অবিশ্বাসের ছাপ।
তবে কেউ বড় পরিসরে এই অবৈধ গবেষণা কাজে লিপ্ত রয়েছে। আরো খারাপ কিছু ঘটে যাওয়ার আগেই সমুদ্র শহরের প্রশাসনকে আমাদের এটি জানাতে হবে। রেয়ার মিররে মেসের চোখের দিকে তাকিয়ে কড়া ভাষায় কথাটি বলে মোস্তফা।
শর্ণহোস্টের কাছে যেতে হবে। আপন মনে বিড়বিড় করে মেস।
কিন্তু তারা তো কেউ প্রমাণ ছাড়া আমাদের কথা বিশ্বাস করবে না। মিকা বলে।
এবার পেছন থেকে এক মনে মাথা নেড়ে চলে মোস্তফা। তার চোখে মুখে প্রচন্ড হতাশার ছাপ। কিছু একটা হয়েছে।
মোস্তফা? তার উদ্দেশ্য বলে ওঠে মেস। কি হয়েছে?
আমরা একটি স্যাম্পল ফেলে রেখে এসেছি। মাথা নাড়তে নাড়তে উত্তর দেয় সে। জ্যাক সেটির গা থেকে নিঃসৃত এক ধরনের তরল সংগ্রহ করেছিল।
মেস ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে, স্যাম্পলটি কোথায়?
আইসিইউর রেষ্টরুমে ফ্রিজারে রাখা। শান্ত গলায় জবাব দেয় মোস্তফা।
মাই গড! মেস যেন এই কথাটি বিশ্বাস করতে পারছে না।
পরমুহূর্তেই ব্রেক কষে গাড়িটি রাস্তার এক পাশে দাড় করায় সে। পেছনে মোস্তফার দিকে তাকিয়ে বলে, আমাদের ফেরত যেতে হবে।
আর কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারুক না পারুক, মেস পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পারছে। আজকে যে জিনিসটা সে প্রদক্ষিণ করেছে, তারপরে আর এক মুহূর্তও তাদের দেরী করা উচিত হবে না। যত দ্রুত সম্ভব প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো প্রয়োজন। নয়তো অনেক বেশি দেরি হয়ে যাবে। পুরো শহর জুড়ে এই ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়বে।
এবার দ্রুত গতিতে গাড়িটি ঘুরিয়ে উল্টো পথে চালনা শুরু করে মেস। হাসপাতালের কাছাকাছি এসে দূটো দালানের মাঝে ঢুকিয়ে স্টার্ট বন্ধ করে। তারপর ডানে বসা মিকার দিকে তাকিয়ে বলে, যদি আমি বিশ মিনিটের বেশি দেরি করি, তবে তুমি আর কিছু না ভেবে ওদের নিয়ে নিরাপদ কোথাও চলে যাবে।
মিকা কোন উত্তর করে না। বিস্ফোরিত চোখে মেসের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আমরা কোথাও যাচ্ছি না। কঠিন গলায় পেছন থেকে উত্তর দেয় মোস্তফা।
মিকা, আমাকে কথা দাও। যদি কোন বিপদ দেখতে পাও কিংবা আমি কিছু সময়ের মধ্যে ফেরত না আসি, তুমি ওদেরকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাবে।
মিকা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। মেস পেছনের দিকে না তাকিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে বেরিয়ে পড়ে।
কিছুক্ষণের মধ্যে অন্ধকারে কোথাও হারিয়ে যায় সে। কয়েক মুহুর্ত পর হঠাৎ হাসপাতালের ভেতর থেকে এক ধরনের ভয়ঙ্কর গর্জনের আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। (চলবে)
Debasis sorkar, Nishad jaman, Sikdar rahat, Sk rahul ali, Apon arnob, Akram ali, Md faruk molla and লেখাটি পছন্দ করেছে
- M A Nayeemশুকতারা
- Posts : 68
স্বর্ণমুদ্রা : 1470
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-22
Re: মোস্তফার অসমাপ্ত অভিযান
অনেকক্ষণ তো হয়ে গেল, এখনো এলো না মেস। মোস্তফাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো মিকা। মোস্তফা কোন উত্তর দিল না।
একটু পরে তার পাশে বসে থাকা বৃদ্ধা মহিলাটি হঠাৎই বড় বড় শ্বাস নিতে শুরু করল। দেখে মনে হচ্ছিল তার কোন একটা অসুবিধা হচ্ছে। মোস্তফা তার মুখের টেপটি এক টানে খুলে দিল।খুনখুনে গলায় কাশি দিতে শুরু করলো মহিলাটি এবার।
আপনি ঠিক আছেন? পেছনে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো মিকা। মহিলাটি কোনো জবাব দিতে পারল না। কিন্তু তার কাশি থামল না। এক নাগাড়ে কেশেই যাচ্ছিল আর জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছিল।
এবার দ্রুত গাড়ির দরজা খুলে পেছনে চলে আসলো মিকা। তার পালস চেক করলো। গাড়ির ভেতরের লাইটটি জ্বালিয়ে আংগুলের ডগা পরীক্ষা করে দেখল। তারপর মোস্তফার দিকে তাকিয়ে বলল, তার অবস্থা বেশি ভালো নয়। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
এক দৃষ্টিতে অন্যমনস্কভাবে মহিলাটির দিকে এতক্ষণ তাকিয়ে ছিল মোস্তফা। লক্ষ্য করছিল মহিলাটির শ্বাস প্রশ্বাস ঘন হয়ে আসছে।
আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই! মোস্তফাকে উদ্দেশ্য করে আরেকবার বলল মিকা।
এবার তার দিকে চোখ তুলে তাকাল মোস্তফা। তার অনিশ্চিত চোখের চাহনিতে ধীরে ধীরে ফুটে উঠল এক ধরনের প্রতিজ্ঞা, চেহারায় তৈরি হল কাঠিন্য।
কয়েক মুহুর্ত কেউ কোন কথা বলল না। শুধু এক দৃষ্টি নিয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে রইল। তার পরপরই চোখ ফিরিয়ে নিল মোস্তফা।
মিকা যেন তার চোখের ভাষাটি পড়ে ফেলেছে।
আনমনেই নিজের মাথাটি ডানে বামে নাড়তে থাকল সে।
আমার হুইলচেয়ারটি বের করে দাও। শীতল গলায় কথাটি বলে উঠল মোস্তফা। তার কথাটি শোনার জন্য যেন প্রস্তুত হয়েই ছিল মিকা।
ইতিমধ্যে ওপাশের দরজা খুলে ফেলেছে মোস্তফা। নিজেকে টেনে শরীরের প্রায় অর্ধেকটা গাড়ির বাইরে বের করে নিয়ে গেছে।
এবার গাড়ি থেকে একটি পা বের করে দরজার উপর হেলান দিয়ে দাড়িয়ে পড়ল। দেখেই বোঝা যাচ্ছে এখনো শারীরিকভাবে প্রচন্ড দুর্বল সে।
এক দৌড়ে তার দিকে এগিয়ে গেল মিকা। তার একটি হাত নিজের কাধের উপর রাখতে রাখতে বলল, এই অবস্থায় আমি কোনভাবেই তোমাকে যেতে দিতে পারি না!
আমাকে যেতে হবে। তাছাড়া তুমি দেরী করলে এর প্রাণ বাচাতে পারবে না। বৃদ্ধার দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল মোস্তফা।
ঘাড় ঘুরিয়ে একবার বৃদ্ধাকে দেখলো মিকা। বৃদ্ধাটি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে মোস্তফার চোখের দিকে এক পলক তাকাল সে কিন্তু কিছু বলতে পারল না।
মোস্তফাকে ছোটবেলা থেকেই চেনে সে। প্রচন্ড সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ একটি মানুষ। যেটা বলে, সেটাই সে করে।
পেছনে গিয়ে ঝট করে গাড়ির ট্রাংক খুলে ফেলল মিকা। যেন কিছু একটা নিয়ে চরম বিরক্ত সে। তারপর হুইলচেয়ারটি বের করে মোস্তফার কাছে নিয়ে গেল।
কোনরকমে দরজার হতলে ভর সেটিতে বসল মোস্তফা। তারপর হাত দিয়ে ঠেলে গাড়ির দরজাটি বন্ধ করে দিল।
আর কোন কথা বলল না মিকা। এমন কি তার দিকে একবার তকালোও না। গাড়ির ভেতরে মাথা গলিয়ে বৃদ্ধার সিটবেল্টটি বেধে দিল। তারপর বড় বড় পদক্ষেপে গাড়ির সামনে চলে গেল। শব্দ করে গাড়ির দরজা বন্ধ করে গাড়িটি স্টার্ট দিল। গাড়ির জানালা দিয়ে শেষবার বাইরে তাকালো। তবুও কিছুই যেন মুখ ফুটে বলল না।
তার চোখ দুটি কি ছল ছল করে উঠে ছিল?
মোস্তফা বুঝতে পারল না।
কিংবা বোঝার চেষ্টা করল না।
এবার গাড়ির হেডলাইটটি জ্বলে উঠল। গাড়িটি ধীরে ধীরে গলি থেকে বেরিয়ে প্রধান সড়কে উঠে পড়ল।
করিডোর ধরে একটু নিচু হয়ে ছোট ছোট পদক্ষেপে সামনের দিকে এগিয়ে চলল মেস। উপরে বাতিগুলি জল নিভু করছে। নীচে কোথাও এক জায়গা থেকে এক ধরনের জান্তব চিৎকার ভেসে আসছে। এই চিৎকারটি আগেও শুনেছে সে। সেই রুপান্তরিত প্রাণীটি!
মনে হচ্ছে আশে পাশে কোথাও নেই সেটি। কিন্তু তারপরেও সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার চেষ্টা করছে মেস। হতে পারে অক্টোপাসের মতো পরজীবিগুলি আরো থেকে থাকতে পারে।
মিকার সামনে তো তার বুকে বল চলে এসেছিল। বুক ফুলে উঠেছিল। একাই স্যম্পলটি আনতে বেরিয়ে পরেছে। কিন্তু এখন তার সাহসের বেলুন যেন ধীরে ধীরে চুপসে আসছে।
র্যাপ্টরদের উপর ছোটবেলার সেই ভয় কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন করে এক বিভীষিকা তাকে পেয়ে বসেছে।
এ যেন এক দুঃস্বপ্ন! পরজীবীটি পুরো মানুষটিকে এক নরখাদক রাক্ষসে রূপান্তরিত করে ফেলছে! এই ভয় যেন কল্পনারও অতীত। দুঃস্বপ্ন ছাড়িয়ে যাওয়া। এর হাতে ধরা পড়লে তাকেও যে এক রাক্ষসে পরিণত হতে হবে। ভাবতেই যেন গা-টি শিঁউরে উঠলো তার।
কয়েকটি ঘর পার হবার পর নিজের কক্ষটির সামনে এসে দাড়াল সে। কান পেতে দরজার ওপাশে কিছু একটা শোনার চেষ্টা করল। তারপর আস্তে দরজার নবটি ঘুরিয়ে অল্প ফাক করে কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করল। ভেতরে মাথা গলিয়ে টর্চের আলো ফেলল।
ঘরটি খালি। অস্বাভাবিক কোন কিছু চোখে পড়ল না।
এবার তড়িঘড়ি করে ভেতরে ঢুকে পড়ল মেস। তারপর বসে স্টিলের খাটটির নিচে আলো ফেলে আরেকবার দেখে নিল।
দরজার তালাটি বন্ধ করে একটু দুরে দেয়ালের এক পাশে রাখা ফ্রিজারটির দিকে এগিয়ে গেল।
ফ্রিজারের ভেতরে দরজার তাকে কয়েকটি হুইস্কির বোতল রাখা আছে। একটু মাথা নিচু করতেই দেখতে পেল উপরের তাকে একটি প্লাস্টিকের বাক্সে সযত্নে কিছু একটা রেখে দেয়া।
বাক্সটি বের করে লকটি খুলতেই একটি টেস্ট টিউব আবিস্কার করল সে। ভেতরে রয়েছে এক ধরনের লালচে সেরাম। এটিই সম্ভবত হিংস্র প্রাণীটি থেকে নিঃসৃত হওয়া সেই রস।
বক্সটি সযত্নে তার থলের ভেতরে ঢুকিয়ে কক্ষটি থেকে দ্রুত পায়ে বের হয়ে পড়ল মেস। তারপর ছুটে চলল করিডরের পেছনের দিকটায় অবস্থিত বড় লিফটটির দিকে।
লিফটের দরজার মাথায় ছোট্ট লাল স্ক্রিনে সেটির অবস্থান এখন বেজমেন্ট দেখাচ্ছে। বোতামে চাপ দিতেই কট করে একটি শব্দ করে উপরে উঠে আসা শুরু করল সেটি।
এক, দুই ... একটি একটি করে তলা উপরে উঠে আসছে।
নীচ থেকে এক ধরনের খটর মটর শব্দ পাওয়া গেল এবার। শব্দটি সম্ভবত লিফটঘরটির ভেতর থেকে আসছে। লিফট উঠানামার লম্বা ফাঁপা প্যাসেজটিতে সেটি এক ধরনের প্রতিধ্বনি তৈরি করছে।
হঠাৎই লিফট ঘরের ভেতর থেকে আসা একটি জান্তব গর্জনে স্তম্ভিত হয়ে পড়ল মেস। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছিল না। কিছু একটা লিফটে করে উপরে উঠে আসছে!
এক মুহুর্ত দেরী না করে লিফটের বোতামগুলি সমানে চাপতে থাকল সে। কিন্তু সেটি ইতিমধ্যে কমান্ডটি নিয়ে নিয়েছে। লিফটটি থামবার নয়!
বড় একটি ভুল করে বসেছে মেস। নিজের অজান্তেই রাক্ষসটিকে উপরে নিয়ে এসেছে!
হাসপাতালের সিড়িঘরের দিকে দ্রুত পা বাড়াল সে। লম্বা করিডোর ধরে দৌড়ে এগিয়ে চলল সেদিকে।
লিফটটি খানিকটা পেছনে ফেলে এসেছে। হঠাৎই টিং করে একটি শব্দ শোনা গেল পেছন থেকে। উপরে উঠে এসেছে লিফটটি। পেছনে এক পলক তাকাতেই দেখতে পেল লিফটের দরজার সামনে মেঝেতে ধীরে ধীরে একটি আলোর রেখা ফুটে উঠছে। সেটির দরজাটি খুলে যাচ্ছে।
ঠিক পরমুহূর্তেই ভয়ঙ্কর কিছু একটা করিডোরের মেঝেতে আছড়ে পড়েছে। সেটির জান্তব চিৎকারে পুরো করিডোরের চারপাশটা গমগম করে উঠছে। ইতিমধ্যে মেস করিডরের ঠিক মাথায় চলে এসেছে। পেছনের দিকে তাকানোর আর সাহস হয়নি তার।
সিড়ির হাতল ধরে দ্রুত পদক্ষেপে ধাপগুলো অতিক্রম করে নিচের দিকে নেমে চলা শুরু করেছে।
কয়েক তলা নেমে আসতেই হঠাৎ উপরের দিকে চোখ গেল তার। ভয়ঙ্কর দানবীয় গর্জনটি সিড়িঘর পর্যন্ত চলে এসেছে। রাক্ষসটি তাকে খুঁজে নিয়েছে। পিছু নিয়েছে।
এবার উপরের সিঁড়ির রেলিং ধরে নিচে মাথা বাড়িয়ে দিয়েছে। সেটির কুৎসিত বিভীষিকাময় মূর্তিটি দেখে যেন গায়ের রোম খাড়া হয়ে গেল মেস এর। এ যেন এক সত্তিকারের কোন এক দুঃস্বপ্ন। এই দুঃস্বপ্নের শেষ নেই।
পা দুটি যেন আর চলছে না। মাটির সাথে আটকে আটকে যাচ্ছে। শরীর নিস্তেজ হয়ে আসছে। এবার যেন নিজের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে মেস।
সিড়ি বেয়ে নিচতলায় নেমে আসতেই ডান পথে বের হতে যাবে, ঠিক সেই সময় সিলিং এর অল্প আলোয় করিডোর ধরে শেষ মাথায় কাচের দরজার ওপাশে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে দেখতে পেল। আট কি নয় ফুট মতো লম্বা, সরীসৃপের মতো সামনে বাড়ানো মুখটি ভর্তি অসংখ্য ধারালো দাঁতের সারি। পেছনে লেজটি অনবরত নড়ে চলছে।
তাকে দেখেই গিরগিটির মতো লেজটি সামনের দরজাটিতে সজোরে একটি আঘাত হানলো। আর সাথে সাথেই পুরো কাচের দরজাটি ভেঙে চৌচির হয়ে পড়ল। মেস মাথাটি বাড়িয়ে উপরে সিঁড়ির দিকে তাকালো। ভয়ঙ্কর সেই প্রাণীটি অনেকটা গড়িয়ে গড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছে তখন।
কোন কিছু না ভেবে বেজমেন্টের দিকে পা বাড়াল এবার। নিচে নেমে আসতেই তার বাম পাশে গাড়ি বের হবার পথটি দেখতে পেল। কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলে কিছু ভাঙ্গা গাড়ি পড়ে আছে দেখল। সেগুলির কাছে গিয়ে দরজাগুলি টেনে পরীক্ষা করল। মাথাটি ভেতরে বাড়িয়ে ড্যাশবোর্ড এ তাকালো। গাড়িগুলি মৃত। পুরো বেইজমেন্ট জুড়ে আর একটি ভালো গাড়ি নেই, যেটি করে সে পালাতে পারে। এটি আসলে কোন গ্যারাজ নয়, একটি গোডাউন!
এদিকে খামের পেছনে অল্প আলোয় দূরে ঢালু পথ ধরে একটি ছায়া ধীরে ধীরে নিচে নেমে আসছে। এটি আর কেউই নয়, সেই লেজওয়ালা দানবটি!
অনবরত লেজ নাড়তে নাড়তে এই দিকেই এগিয়ে আসছে। তাহলে এবার তার বের হবার সব পথ বন্ধ!
গ্যারাজের অন্য পাশটায় অনেকগুলি বাক্স যন্ত্রপাতি স্তুপ করে রাখা। অগত্যা সে দিকে এগিয়ে চলল মেস। কিছুটা এগোতেই বুঝতে পারল এটি একটি ডেড এন্ড ছাড়া আর কিছুই নয়।
এবার যেন তার হার্টবিট বেড়ে গেল বহুগুনে। বুক ফেটে হৃৎপিণ্ডটি বাইরে বেরিয়ে আসার উপক্রম হল। তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল।
যখন তার সব আশার আলো নিভে গেছে মনে হলো, চারিদিক অন্ধকার ঠেকলো, ঠিক তখনই বাক্সের স্তুপগুলির উপরে ভাঙ্গা একটি ভেন্টিলেটরের দিকে তার চোখ পড়ল। কেউ যেন সেটি গলিয়ে হাত বাড়িয়ে ইশারা করে ডাকছে তাকে।
এটিই জ্যাকের আবিষ্কৃত সেই ভাঙ্গা ভেন্টিলেটর, যেটি উপরে রাস্তায় সমতলে গিয়ে মিশেছে। কাছাকাছি যেতেই বুঝতে পারল হাতটি আর কারো নয়।
মোস্তফার!
মাটির উপর উপুড় হয়ে শুয়ে ভেন্টিলেটর গলিয়ে তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। হাত থেকে একটি দড়ি নিচে ঝুলে পড়েছে!
(চলবে)
Debasis sorkar, Nishad jaman, Sikdar rahat, Sk rahul ali, Jannat islam, Akash islam, Apon arnob and লেখাটি পছন্দ করেছে