- Anikaধুমকেতু
- Posts : 20
স্বর্ণমুদ্রা : 1324
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-01
অচেনা তুমি
Fri Jun 04, 2021 9:56 pm
(পর্ব : এক)
কাল লীনার বাসররাত ছিল। ভোর হবার আগেই সে পালিয়ে এসেছে। এসেই দরজা বন্ধ করে অন্ধকার ঘরে বসে আছে। মাঝে মাঝে কাচের জিনিসপত্র ভাঙার শব্দ শুনা যাচ্ছে। কখনো জোরে চিৎকার দিচ্ছে সে।
লীনার মা আনোয়ারা বেগম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, 'একিরে মা, চলে এলি কেন? জামাই বেচারা কী ভাববে বল দেখি? মানুষটা এতক্ষণে বোধহয় তোকে খুঁজতে বেরিয়েছে...'
লীনা হুড়মুড় করে দরজা খুলল। বলল, 'সে মানুষ? জানোয়ার, জানোয়ার।'
লীনার বাবা আনোয়ার হোসেন ঘরে এলেন। তার পাশে বসে বললেন, 'আমাদের কথা মনে পড়ছিল বুঝি? ছুটে এসে ঠিক কাজটাই করেছিস। যখনই আমাদের কথা মনে পড়বে, চলে আসবি।'
লীনা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, 'আমি আর ওখানে যাব না, বাবা। আমি আর ওখানে যাব না।'
রুমা দরজা ঠেলে উঁকি দিয়ে বলল, 'দুলাভাই এসেছে। বসার ঘরে আছে। আমি বসতে বলেছি। বলেছে আপাকে নিয়ে যেতে এসেছে। মিষ্টিও এনেছে।'
লীনা চোখ বড় বড় করে বলল, 'জানোয়ারটা এখানেও এসে গেছে! যেতে বল ওকে। এক্ষুণি বেরিয়ে যেতে বল।'
আনোয়ারা বেগম শরবত হাতে নিয়ে বসার ঘরে প্রবেশ করলেন। আতিফ গড়গড় করে বলতে লাগল, 'সকাল থেকে লীনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাতে সে কেমন যেন অদ্ভুত আচরণ করছিল। আমি ভাবলাম নতুন বিয়ে হয়েছে তাই...'
আনোয়ারা বেগম শরবতের গেলাস এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, 'চিন্তা করো না, বাবা। আজ পর্যন্ত আমাদের ছেড়ে কোথাও থাকেনি। হুট করে বিয়েটা হয়ে গেল। মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে। পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে আপাতত লীনা আমাদের সাথে থাক। তোমার আবার অসু্বিধা হবে না তো?'
আতিফ ঢুকঢুক করে শরবত খেল। বলল, 'না না, আপত্তি থাকবে কেন! আমার মনে হয় ওঁর শরীরটা একটু খারাপ। যতদিন ইচ্ছে আপনাদের এখানে থাক। যখন মর্জি হবে, আমাকে ফোন দেবেন। আমি নিতে আসব। আজ আসি?'
'এখনি যাবে? খাওয়া-দাওয়া করে যাও।'
'বাসার মেহমানরা এখনও যাননি। উনাদের দেখাশোনা করতেওতো মানুষ দরকার। পরেরবার খেয়ে যাব।'
.
বিকেলে দরজা-জানালা বন্ধ করে বিছানায় পড়ে ছিল লীনা। মাথা ধরেছে। চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। রুমা দরজায় টুকা দিয়ে বলল, 'আপা তোর ফোন বাজছে।'
অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে গেল লীনা। ফোন কানের কাছে ধরে রাখতেই অচেনা আওয়াজ, 'আকাশ থেকে নেমে এসেছে পরী। সত্যিকারের পরী। ডানা নেই। কাচা হলুদের মতো গায়ের রং। স্বচ্ছ দিঘির জলের মতো টলটলে চোখ। গোলাপি ঠোঁটের উপর কালো এক বিন্দু তিল। একবার তাকালেই প্রেমে পড়ে যেতে ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয়... আচ্ছা কেমন আছো তুমি?'
লীনা কণ্ঠস্বর শুনে এতটা অবাক হলো, মুখ ফুটে কিছু বলতে পারল না। শুধু চুপচাপ ফোন কানের কাছে ধরে রাখল। কেন জানি তার এখন শুনতে ইচ্ছে করছে। মাথা ধরাটা হুট করে গায়েব হয়ে গেছে। শুনতে শুনতে সে জানালা খুলেছে। বাইরে থেকে এক পশলা বাতাস এসে লীনার সারা গায়ে ছড়িয়ে পড়ল। লীনা কি সত্যিই এত সুন্দর? যদি তাই হয়, লোকটা জানল কীভাবে এতকিছু? সে কি পূর্ব পরিচিত? লীনার এখন আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে করছে।
আরো একবার সেই কণ্ঠস্বর কানে বাজল, 'আচ্ছা, তোমার কোমড়ের কাটা দাগটা কীসের?'
লীনা চমকে উঠল৷ শাড়ির আঁচল সরিয়ে কোমরের কাটা দাগে হাত রাখল। ততক্ষণে তার বুকে উথাল পাথাল ঢেউ উঠেছে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে। লোকটির মুখের গরম তাপ যেন সরাসরি লীনার গাল স্পর্শ করছে। লীনা চোখ বন্ধ করে ফেলল।
রুমা লীনার গা ছুঁয়ে বলল, 'আপা, কার সাথে কথা বলছিস?'
.
মেহমানদের বিদায় দিতে দিতে রাত বারোটা বেজে গেছে। পুরো বাড়ি এখন খালি। মাছি উড়ে গেলেও শব্দ শুনা যাচ্ছে। আতিফ বাতি নিভিয়ে ঘুমাতে যাচ্ছিল তখনই ডোরবেল বাজল। অলসতা ঝেড়ে ফেলে সে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। দরজা খুলতেই দেখল, একটা লোক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে টলছে। আতিফ বলল, 'কে আপনি?'
লোকটি স্বভাবিক ভঙ্গিতে বলল, 'আমি তানিম হাসান। কবর খুঁড়ি।'
আতিফ লোকটিকে এক নজর চেয়ে দেখল। বলল, 'এত রাতে কেন এসেছেন? এখানে তো কেউ মরেনি।'
লোকটি মুচকি হেসে বলল, 'মরেনি তো কী হয়েছে? মরবে।'
আতিফ ভাবল লোকটা হয়তো পাগল। কিংবার নেশা-টেশা করেছে। তাই দরজা আটকাতে যাচ্ছিল তখনই লোকটা বলল, 'লীনাকে বিয়ে করেছেন শুনলাম। তাই এসেছি।'
আতিফ ভ্রু কুঁচকে বলল, 'লীনার সাথে আপনার কী সম্পর্ক?'
'আমি লীনার প্রথম স্বামী।'
আতিফ তাচ্ছিল্য করে হাসল, 'কবর খুঁড়েন আপনি। আপনার কাছে দেবে লীনার বিয়ে? দেশে কি পুরুষ মানুষের এতই অভাব?'
'কবর এখন খুঁড়ি। আগে খুঁড়তাম না। একসময় আমার সব ছিল। লীনাকে বিয়ে করার পর থেকে সব শেষ হয়ে যেতে লাগল। আজ আমি নিঃস্ব।'
'আপনি ভাবছেন আমি এসব মনগড়া কথা বিশ্বাস করব?'
'না করলেও কিছু করার নেই। তবে শুনে রাখুন, আমার ঘর থেকে বিয়ের পরদিন সে পালিয়েছিল। তৃতীয় দিন আমার মা মারা যান। শুনেছি আপনার ঘর থেকেও আজ পালিয়েছে?'
'কিন্তু আমার মা তো গত দু'বছর আগে মারা গেছেন।'
'ওঃ, তাহলে অন্য কোনো আপনজন হারাতে চলেছেন।'
'এত জোর দিয়ে কীভাবে বলতে পারেন?'
'বিশ্বাস হচ্ছে না তো? লীনার কোমড়ে একটা কাটা দাগ আছে। জিজ্ঞেস করবেন ওটা কীসের।'
বলে লোকটা চলে যেতে লাগল। আতিফ পিছন থেকে ডাকল, 'ওঁর কোমড়ের কাটা দাগ আপনি জানলেন কীভাবে! এইযে দাঁড়ান। দাঁড়ান বলছি। আপনি কীভাবে জানেন ওসব?'
(চলবে)
মো. ইয়াছিন
কাল লীনার বাসররাত ছিল। ভোর হবার আগেই সে পালিয়ে এসেছে। এসেই দরজা বন্ধ করে অন্ধকার ঘরে বসে আছে। মাঝে মাঝে কাচের জিনিসপত্র ভাঙার শব্দ শুনা যাচ্ছে। কখনো জোরে চিৎকার দিচ্ছে সে।
লীনার মা আনোয়ারা বেগম দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললেন, 'একিরে মা, চলে এলি কেন? জামাই বেচারা কী ভাববে বল দেখি? মানুষটা এতক্ষণে বোধহয় তোকে খুঁজতে বেরিয়েছে...'
লীনা হুড়মুড় করে দরজা খুলল। বলল, 'সে মানুষ? জানোয়ার, জানোয়ার।'
লীনার বাবা আনোয়ার হোসেন ঘরে এলেন। তার পাশে বসে বললেন, 'আমাদের কথা মনে পড়ছিল বুঝি? ছুটে এসে ঠিক কাজটাই করেছিস। যখনই আমাদের কথা মনে পড়বে, চলে আসবি।'
লীনা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলল, 'আমি আর ওখানে যাব না, বাবা। আমি আর ওখানে যাব না।'
রুমা দরজা ঠেলে উঁকি দিয়ে বলল, 'দুলাভাই এসেছে। বসার ঘরে আছে। আমি বসতে বলেছি। বলেছে আপাকে নিয়ে যেতে এসেছে। মিষ্টিও এনেছে।'
লীনা চোখ বড় বড় করে বলল, 'জানোয়ারটা এখানেও এসে গেছে! যেতে বল ওকে। এক্ষুণি বেরিয়ে যেতে বল।'
আনোয়ারা বেগম শরবত হাতে নিয়ে বসার ঘরে প্রবেশ করলেন। আতিফ গড়গড় করে বলতে লাগল, 'সকাল থেকে লীনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। রাতে সে কেমন যেন অদ্ভুত আচরণ করছিল। আমি ভাবলাম নতুন বিয়ে হয়েছে তাই...'
আনোয়ারা বেগম শরবতের গেলাস এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, 'চিন্তা করো না, বাবা। আজ পর্যন্ত আমাদের ছেড়ে কোথাও থাকেনি। হুট করে বিয়েটা হয়ে গেল। মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগবে। পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। তবে আপাতত লীনা আমাদের সাথে থাক। তোমার আবার অসু্বিধা হবে না তো?'
আতিফ ঢুকঢুক করে শরবত খেল। বলল, 'না না, আপত্তি থাকবে কেন! আমার মনে হয় ওঁর শরীরটা একটু খারাপ। যতদিন ইচ্ছে আপনাদের এখানে থাক। যখন মর্জি হবে, আমাকে ফোন দেবেন। আমি নিতে আসব। আজ আসি?'
'এখনি যাবে? খাওয়া-দাওয়া করে যাও।'
'বাসার মেহমানরা এখনও যাননি। উনাদের দেখাশোনা করতেওতো মানুষ দরকার। পরেরবার খেয়ে যাব।'
.
বিকেলে দরজা-জানালা বন্ধ করে বিছানায় পড়ে ছিল লীনা। মাথা ধরেছে। চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। রুমা দরজায় টুকা দিয়ে বলল, 'আপা তোর ফোন বাজছে।'
অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে গেল লীনা। ফোন কানের কাছে ধরে রাখতেই অচেনা আওয়াজ, 'আকাশ থেকে নেমে এসেছে পরী। সত্যিকারের পরী। ডানা নেই। কাচা হলুদের মতো গায়ের রং। স্বচ্ছ দিঘির জলের মতো টলটলে চোখ। গোলাপি ঠোঁটের উপর কালো এক বিন্দু তিল। একবার তাকালেই প্রেমে পড়ে যেতে ইচ্ছে হয়। ইচ্ছে হয়... আচ্ছা কেমন আছো তুমি?'
লীনা কণ্ঠস্বর শুনে এতটা অবাক হলো, মুখ ফুটে কিছু বলতে পারল না। শুধু চুপচাপ ফোন কানের কাছে ধরে রাখল। কেন জানি তার এখন শুনতে ইচ্ছে করছে। মাথা ধরাটা হুট করে গায়েব হয়ে গেছে। শুনতে শুনতে সে জানালা খুলেছে। বাইরে থেকে এক পশলা বাতাস এসে লীনার সারা গায়ে ছড়িয়ে পড়ল। লীনা কি সত্যিই এত সুন্দর? যদি তাই হয়, লোকটা জানল কীভাবে এতকিছু? সে কি পূর্ব পরিচিত? লীনার এখন আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে ইচ্ছে করছে।
আরো একবার সেই কণ্ঠস্বর কানে বাজল, 'আচ্ছা, তোমার কোমড়ের কাটা দাগটা কীসের?'
লীনা চমকে উঠল৷ শাড়ির আঁচল সরিয়ে কোমরের কাটা দাগে হাত রাখল। ততক্ষণে তার বুকে উথাল পাথাল ঢেউ উঠেছে। নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে। লোকটির মুখের গরম তাপ যেন সরাসরি লীনার গাল স্পর্শ করছে। লীনা চোখ বন্ধ করে ফেলল।
রুমা লীনার গা ছুঁয়ে বলল, 'আপা, কার সাথে কথা বলছিস?'
.
মেহমানদের বিদায় দিতে দিতে রাত বারোটা বেজে গেছে। পুরো বাড়ি এখন খালি। মাছি উড়ে গেলেও শব্দ শুনা যাচ্ছে। আতিফ বাতি নিভিয়ে ঘুমাতে যাচ্ছিল তখনই ডোরবেল বাজল। অলসতা ঝেড়ে ফেলে সে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। দরজা খুলতেই দেখল, একটা লোক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে টলছে। আতিফ বলল, 'কে আপনি?'
লোকটি স্বভাবিক ভঙ্গিতে বলল, 'আমি তানিম হাসান। কবর খুঁড়ি।'
আতিফ লোকটিকে এক নজর চেয়ে দেখল। বলল, 'এত রাতে কেন এসেছেন? এখানে তো কেউ মরেনি।'
লোকটি মুচকি হেসে বলল, 'মরেনি তো কী হয়েছে? মরবে।'
আতিফ ভাবল লোকটা হয়তো পাগল। কিংবার নেশা-টেশা করেছে। তাই দরজা আটকাতে যাচ্ছিল তখনই লোকটা বলল, 'লীনাকে বিয়ে করেছেন শুনলাম। তাই এসেছি।'
আতিফ ভ্রু কুঁচকে বলল, 'লীনার সাথে আপনার কী সম্পর্ক?'
'আমি লীনার প্রথম স্বামী।'
আতিফ তাচ্ছিল্য করে হাসল, 'কবর খুঁড়েন আপনি। আপনার কাছে দেবে লীনার বিয়ে? দেশে কি পুরুষ মানুষের এতই অভাব?'
'কবর এখন খুঁড়ি। আগে খুঁড়তাম না। একসময় আমার সব ছিল। লীনাকে বিয়ে করার পর থেকে সব শেষ হয়ে যেতে লাগল। আজ আমি নিঃস্ব।'
'আপনি ভাবছেন আমি এসব মনগড়া কথা বিশ্বাস করব?'
'না করলেও কিছু করার নেই। তবে শুনে রাখুন, আমার ঘর থেকে বিয়ের পরদিন সে পালিয়েছিল। তৃতীয় দিন আমার মা মারা যান। শুনেছি আপনার ঘর থেকেও আজ পালিয়েছে?'
'কিন্তু আমার মা তো গত দু'বছর আগে মারা গেছেন।'
'ওঃ, তাহলে অন্য কোনো আপনজন হারাতে চলেছেন।'
'এত জোর দিয়ে কীভাবে বলতে পারেন?'
'বিশ্বাস হচ্ছে না তো? লীনার কোমড়ে একটা কাটা দাগ আছে। জিজ্ঞেস করবেন ওটা কীসের।'
বলে লোকটা চলে যেতে লাগল। আতিফ পিছন থেকে ডাকল, 'ওঁর কোমড়ের কাটা দাগ আপনি জানলেন কীভাবে! এইযে দাঁড়ান। দাঁড়ান বলছি। আপনি কীভাবে জানেন ওসব?'
(চলবে)
মো. ইয়াছিন
Ayrin kaTun, Tasmia haq, Hasibul hasan santo, Abul basar, Santa akter, Israyeel hossen, Pk monish and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Anikaধুমকেতু
- Posts : 20
স্বর্ণমুদ্রা : 1324
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-01
Re: অচেনা তুমি
Fri Jun 04, 2021 9:57 pm
(পর্ব : দুই)
সবার জীবনে একবার প্রেম আসে। লীনার হয়তো আজ এসেছে। হয়তো এক্ষুণি...
লীনা বসে বসে ভাবছিল লোকটার কথা। এই প্রথমবার ফোনে কারোর কণ্ঠ এত ভালো লাগল তার। মনে হচ্ছিল লোকটা কবিতার লাইন গড়গড় করে পড়ে শোনাচ্ছে। আর লীনা মুগ্ধ নয়নে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। আচ্ছা, লোকটা কি কবি? নাহলে এত সুন্দর করে বর্ণনা দিলো কীভাবে! তার গায়ের রং, চোখ, ঠোঁট, কোমড়...
লজ্জা পেলে লীনার চোখের পাপড়ি দ্রুত লাফাতে থাকে। আজ লাফাচ্ছে। শত চেষ্টা করেও স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। লীনা ধীর পায়ে উঠে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মনে মনে ভাবল, যদি এখনি ঝপ করে বৃষ্টি নামত? এখন তো শীতকাল। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। রাস্তায় টিমটিমে আলো। যেদিকে চোখ যায় শুধু কুয়াশা আর কুয়াশা। তবু মনে হলো ল্যাম্পপোস্টের নিচে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।
ফোন বাজতেই লীনার বুক কেঁপে উঠল। সেই লোকটা নয়তো! রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে, 'এই শীতের সন্ধ্যায় আমার বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে ভিজতে ভিজতে জোছনা দেখি। সেই জোছনার আলো গায়ে মাখি সারা রাত। কিন্তু শীতকালে বৃষ্টি আসবে কীভাবে?'
লীনা বিস্মিত হলো। একি! লোকটা লীনার মনের কথা জানল কীভাবে! টেলিপ্যাথি নয় তো?
'একদিন মাঝরাতে নীরবে আসব। তুমি তখন চুপটি করে ঘুমিয়ে আছো। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। তবু আমি আসব। চুপচাপ ধীর পায়ে এসে তোমায় কোলে তুলে নেব। তারপর যখন তুমি চোখ খুলবে, চারপাশে অচেনা দেয়াল, অচেনা আসবাবপত্র, পায়ের নিচে অচেনা কার্পেট। তুমি তখন এঘর-ওঘর ছুটতে থাকবে। একসময় যখন সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠবে, দেখবে নির্জন পাহাড়ের চূড়ায় মাথা উঁচু করে একটা বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। একলা একটা বাড়ি। যতদূর চোখ যায়, জনমানবের চিহ্ন মাত্র নেই। সেই একলা বাড়ির ছাদে একা একা দাঁড়িয়ে আছো। তুমি তখন চিৎকার দেবে। দূর দূর পর্যন্ত তোমার গলায় আওয়াজ পৌঁছাবে। কিন্তু কেউ সাড়া দেবে না। একটা পাখিও না। আমি তখন তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াব...'
ফোন কেটে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল লীনা। একতরফা কোনো কিছুই তার ভালো লাগে না। হোক তা ভালোবাসা, ঘৃণা বা অন্য কিছু।
আরো একবার ফোন বাজল। লীনা ক্লান্তি ভরা শরীর নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। রিসিভ করতেই, 'আচ্ছা, তোমার কি মনে হয় না তুমি পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দরী? তোমার কি কখনোই মনে হয়নি, তোমাকে কেউ একজন চুরি করে নিয়ে যাবে? কিংবা, আয়নার সামনে দাঁড়ালে কখনো মনে হয়নি এ অপার সৌন্দর্যে কারোর নজর লেগে যেতে পারে? আচ্ছা, তোমার সৌন্দর্য কি সত্যিকারের পরীদের মতো? না কি তার চেয়েও বেশি?'
লীনা কিছু বলছে না। চুপচাপ শুনছে শুধু।
'বললে না তো, তোমাকে হঠাৎ তুলে নিয়ে গেলে খুশি হবে কিনা?'
লীনা শুধু বলল, 'মোটেও খুশি হব না।'
'তাই? তাহলে দরকার নেই। নেব না। আচ্ছা, তোমার গলায় তাবিজ ঝুলানো দেখলাম। শুনেছি ভূতের ভয় থাকলে অনেকে গলায় তাবিজ ঝুলিয়ে রাখে। তুমি কি ভূতে বিশ্বাস করো?'
লীনা এক টানে গলার তাবিজ ছিঁড়ে টেবিলের উপর রেখে বলল, 'আমার গলায় তাবিজ নেই।'
.
সেদিনের পর থেকে তিন দিন হতে চলল আতিফের ঘুম নেই। চোখ বন্ধ করলেই সেই লোকটার মুখ ভেসে উঠে। সে বলেছে, আতিফ তার প্রিয়জন হারাতে চলেছে। কিন্তু কাকে হারাতে চলেছে, তা বলে যায়নি। হতে পারে লোকটা মাতাল কিংবা পাগল। কিন্তু লীনার কথা যা বলেছে তা কিন্তু মিথ্যে নয়। সত্যিই লীনার কোমড়ে কাটা দাগ আছে। লীনার কোমড়ের কাটা দাগ লোকটা দেখল কীভাবে! এ কথাটা ভীষণ ভাবাচ্ছে তাকে। ভাবতে ভাবতে একসময় স্থির করল, লোকটার সাথে দেখা করবে। কিন্তু তার ঠিকানা তো আতিফের কাছে নেই। শুধু নাম জানা আছে, তানিম হাসান।
ভারী কাপড় গায়ে দিয়ে রাতেই বেরিয়ে পড়ল আতিফ। যেতে হবে গোরস্থানে। যেখানে লাশ দাফন করা হয়। লোকটাকে খুঁজে বের করার এটাই একমাত্র রাস্তা। সে কবর খুঁড়ে।
নির্জন রাস্তা। আশপাশে বাড়িঘর নেই। আছে শুধু গাছপালা। ঘন জঙ্গল পেরিয়ে গোরস্থানে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল, অন্ধকারে কেউ একজন কোদাল দিয়ে কবর খুঁড়ছে। আতিফ একটু এগিয়ে যেতেই লোকটা আতিফের চোখ বরাবর টর্চ মারল। গর্ত থেকে উঠে এসে বলল, 'এসেছেন? জানতাম আপনি আসবেন।'
আতিফ ভালো করে তাকিয়ে দেখল, সেদিনের সেই লোকটা। মাথায় গামছা। পরনে লুঙ্গি আর পাতলা টি-শার্ট। কনকনে শীতে তার একটুও ঠান্ডা লাগছে না।
আতিফ বলল, 'কবর খুঁড়ছেন কেন?'
'একটা মানুষের জন্য। আজ রাতেই মরবে। তখন তো আমি ঘুমিয়ে পড়ব। তাই আগেভাবে খুঁড়ে রাখছি। আপনি হঠাৎ রাত্রিবেলা এখানে? ভয়ডর নেই নাকি আপনার?'
'লীনার ব্যাপারে জানতে এসেছি।'
লোকটা খিকখিক করে হেসে বলল, 'নিজের বউয়ের কথা অন্য একটা পুরুষের কাছে জানতে এসেছেন! আজব মানুষ তো আপনি!'
.
তিন দিন হতে চলল, সেই অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসেনি। গত তিনদিন লীনা এক মুহূর্ত শান্তিতে বসতে পারেনি। ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও সে একই জিনিস স্বপ্নে দেখেছে। দেখেছে, সে উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। তার এক হাতে ঘড়ি। অন্য হাতে হ্যান্ডমাইক। সে চিৎকার দিয়ে ডাকছে, এই যে শুনছেন? কোথায় আপনি? দেখা নেই কেন আপনার? ঘুম ভাঙতেই সে মুচকি হেসেছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেছে সত্যি সত্যি ছুটে যেতে তার কাছে। খুব কাছে গিয়ে বলতে, কী হলো, হঠাৎ চুপ করে গেলেন যে?
সন্ধ্যার পর থেকে লীনার অস্থির লাগছে। মনে হচ্ছে এখনই সেই লোকটার কণ্ঠস্বর না শুনতে পেলে সে পাগল হয়ে যাবে। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সে ফোন হাতে নিলো। মনে মনে ভাবল, লেকটাকে আচ্ছা করে বকা দেবে। কিন্তু হলো তার উল্টো। লোকটা ফোন ধরতেই তার রাগ কমে এল। বুক কাঁপতে লাগল। কতকী ভেবে রেখেছিল বলবে বলে। এক মুহূর্তে সব গুলিয়ে ফেলল সে। মুখ দিয়ে শুধু একটি কথাই বেরোল, 'কোথায় ছিলেন এতদিন?'
'যেখানে এতকাল ছিলাম। ভয়ে ফোন দেইনি।'
'কীসের ভয়?'
'একটি প্রশ্ন করে ফেলব। তোমার সেটা ভালো না-ও লাগতে পারে। সেই ভয়ে ফোন দেইনি।'
'কী সেটা?'
'তোমার প্রথম স্বামীর নাম কী?'
লীনা স্তব্ধ হয়ে গেল। এক মুহূর্তে মনের সাতরং অন্ধকারে ঢেকে গেল। এতদিন সে ঘোরের মধ্যে ছিল। আজ প্রথমবার মনে হলো, সে তো অন্য একজনের স্ত্রী। বিবাহিতা নারী পরপুরুষের প্রেমে মত্ত, এতো ভালো লক্ষণ না! সত্যিই কি লীনা অচেনা মানুষটার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে? না কি খনিকের মোহ মাত্র? কিন্তু এর আগে যে তার এমন হয়নি কখনো! কখনো কাউকে এতটা কাছের মনে হয়নি। কাউকে এতটা আকুল হয়ে ডাকতে ইচ্ছে করেনি। এতটা মুগ্ধ হয়ে ভাবেনি সে কারোর কথা। এ সবই কি ভুল? সবকিছু থেকেই কি লীনা দূরে সরে যেতে হবে? সব ভালোলাগা চাপা দিতে হবে তার?
(চলবে)
মো. ইয়াছিন
সবার জীবনে একবার প্রেম আসে। লীনার হয়তো আজ এসেছে। হয়তো এক্ষুণি...
লীনা বসে বসে ভাবছিল লোকটার কথা। এই প্রথমবার ফোনে কারোর কণ্ঠ এত ভালো লাগল তার। মনে হচ্ছিল লোকটা কবিতার লাইন গড়গড় করে পড়ে শোনাচ্ছে। আর লীনা মুগ্ধ নয়নে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। আচ্ছা, লোকটা কি কবি? নাহলে এত সুন্দর করে বর্ণনা দিলো কীভাবে! তার গায়ের রং, চোখ, ঠোঁট, কোমড়...
লজ্জা পেলে লীনার চোখের পাপড়ি দ্রুত লাফাতে থাকে। আজ লাফাচ্ছে। শত চেষ্টা করেও স্বাভাবিক করা যাচ্ছে না। লীনা ধীর পায়ে উঠে জানালার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। মনে মনে ভাবল, যদি এখনি ঝপ করে বৃষ্টি নামত? এখন তো শীতকাল। সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে কুয়াশা পড়তে শুরু করেছে। রাস্তায় টিমটিমে আলো। যেদিকে চোখ যায় শুধু কুয়াশা আর কুয়াশা। তবু মনে হলো ল্যাম্পপোস্টের নিচে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে।
ফোন বাজতেই লীনার বুক কেঁপে উঠল। সেই লোকটা নয়তো! রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে, 'এই শীতের সন্ধ্যায় আমার বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে ভিজতে ভিজতে জোছনা দেখি। সেই জোছনার আলো গায়ে মাখি সারা রাত। কিন্তু শীতকালে বৃষ্টি আসবে কীভাবে?'
লীনা বিস্মিত হলো। একি! লোকটা লীনার মনের কথা জানল কীভাবে! টেলিপ্যাথি নয় তো?
'একদিন মাঝরাতে নীরবে আসব। তুমি তখন চুপটি করে ঘুমিয়ে আছো। দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। তবু আমি আসব। চুপচাপ ধীর পায়ে এসে তোমায় কোলে তুলে নেব। তারপর যখন তুমি চোখ খুলবে, চারপাশে অচেনা দেয়াল, অচেনা আসবাবপত্র, পায়ের নিচে অচেনা কার্পেট। তুমি তখন এঘর-ওঘর ছুটতে থাকবে। একসময় যখন সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠবে, দেখবে নির্জন পাহাড়ের চূড়ায় মাথা উঁচু করে একটা বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। একলা একটা বাড়ি। যতদূর চোখ যায়, জনমানবের চিহ্ন মাত্র নেই। সেই একলা বাড়ির ছাদে একা একা দাঁড়িয়ে আছো। তুমি তখন চিৎকার দেবে। দূর দূর পর্যন্ত তোমার গলায় আওয়াজ পৌঁছাবে। কিন্তু কেউ সাড়া দেবে না। একটা পাখিও না। আমি তখন তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াব...'
ফোন কেটে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল লীনা। একতরফা কোনো কিছুই তার ভালো লাগে না। হোক তা ভালোবাসা, ঘৃণা বা অন্য কিছু।
আরো একবার ফোন বাজল। লীনা ক্লান্তি ভরা শরীর নিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। রিসিভ করতেই, 'আচ্ছা, তোমার কি মনে হয় না তুমি পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দরী? তোমার কি কখনোই মনে হয়নি, তোমাকে কেউ একজন চুরি করে নিয়ে যাবে? কিংবা, আয়নার সামনে দাঁড়ালে কখনো মনে হয়নি এ অপার সৌন্দর্যে কারোর নজর লেগে যেতে পারে? আচ্ছা, তোমার সৌন্দর্য কি সত্যিকারের পরীদের মতো? না কি তার চেয়েও বেশি?'
লীনা কিছু বলছে না। চুপচাপ শুনছে শুধু।
'বললে না তো, তোমাকে হঠাৎ তুলে নিয়ে গেলে খুশি হবে কিনা?'
লীনা শুধু বলল, 'মোটেও খুশি হব না।'
'তাই? তাহলে দরকার নেই। নেব না। আচ্ছা, তোমার গলায় তাবিজ ঝুলানো দেখলাম। শুনেছি ভূতের ভয় থাকলে অনেকে গলায় তাবিজ ঝুলিয়ে রাখে। তুমি কি ভূতে বিশ্বাস করো?'
লীনা এক টানে গলার তাবিজ ছিঁড়ে টেবিলের উপর রেখে বলল, 'আমার গলায় তাবিজ নেই।'
.
সেদিনের পর থেকে তিন দিন হতে চলল আতিফের ঘুম নেই। চোখ বন্ধ করলেই সেই লোকটার মুখ ভেসে উঠে। সে বলেছে, আতিফ তার প্রিয়জন হারাতে চলেছে। কিন্তু কাকে হারাতে চলেছে, তা বলে যায়নি। হতে পারে লোকটা মাতাল কিংবা পাগল। কিন্তু লীনার কথা যা বলেছে তা কিন্তু মিথ্যে নয়। সত্যিই লীনার কোমড়ে কাটা দাগ আছে। লীনার কোমড়ের কাটা দাগ লোকটা দেখল কীভাবে! এ কথাটা ভীষণ ভাবাচ্ছে তাকে। ভাবতে ভাবতে একসময় স্থির করল, লোকটার সাথে দেখা করবে। কিন্তু তার ঠিকানা তো আতিফের কাছে নেই। শুধু নাম জানা আছে, তানিম হাসান।
ভারী কাপড় গায়ে দিয়ে রাতেই বেরিয়ে পড়ল আতিফ। যেতে হবে গোরস্থানে। যেখানে লাশ দাফন করা হয়। লোকটাকে খুঁজে বের করার এটাই একমাত্র রাস্তা। সে কবর খুঁড়ে।
নির্জন রাস্তা। আশপাশে বাড়িঘর নেই। আছে শুধু গাছপালা। ঘন জঙ্গল পেরিয়ে গোরস্থানে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল, অন্ধকারে কেউ একজন কোদাল দিয়ে কবর খুঁড়ছে। আতিফ একটু এগিয়ে যেতেই লোকটা আতিফের চোখ বরাবর টর্চ মারল। গর্ত থেকে উঠে এসে বলল, 'এসেছেন? জানতাম আপনি আসবেন।'
আতিফ ভালো করে তাকিয়ে দেখল, সেদিনের সেই লোকটা। মাথায় গামছা। পরনে লুঙ্গি আর পাতলা টি-শার্ট। কনকনে শীতে তার একটুও ঠান্ডা লাগছে না।
আতিফ বলল, 'কবর খুঁড়ছেন কেন?'
'একটা মানুষের জন্য। আজ রাতেই মরবে। তখন তো আমি ঘুমিয়ে পড়ব। তাই আগেভাবে খুঁড়ে রাখছি। আপনি হঠাৎ রাত্রিবেলা এখানে? ভয়ডর নেই নাকি আপনার?'
'লীনার ব্যাপারে জানতে এসেছি।'
লোকটা খিকখিক করে হেসে বলল, 'নিজের বউয়ের কথা অন্য একটা পুরুষের কাছে জানতে এসেছেন! আজব মানুষ তো আপনি!'
.
তিন দিন হতে চলল, সেই অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসেনি। গত তিনদিন লীনা এক মুহূর্ত শান্তিতে বসতে পারেনি। ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও সে একই জিনিস স্বপ্নে দেখেছে। দেখেছে, সে উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে। তার এক হাতে ঘড়ি। অন্য হাতে হ্যান্ডমাইক। সে চিৎকার দিয়ে ডাকছে, এই যে শুনছেন? কোথায় আপনি? দেখা নেই কেন আপনার? ঘুম ভাঙতেই সে মুচকি হেসেছে। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেছে সত্যি সত্যি ছুটে যেতে তার কাছে। খুব কাছে গিয়ে বলতে, কী হলো, হঠাৎ চুপ করে গেলেন যে?
সন্ধ্যার পর থেকে লীনার অস্থির লাগছে। মনে হচ্ছে এখনই সেই লোকটার কণ্ঠস্বর না শুনতে পেলে সে পাগল হয়ে যাবে। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে সে ফোন হাতে নিলো। মনে মনে ভাবল, লেকটাকে আচ্ছা করে বকা দেবে। কিন্তু হলো তার উল্টো। লোকটা ফোন ধরতেই তার রাগ কমে এল। বুক কাঁপতে লাগল। কতকী ভেবে রেখেছিল বলবে বলে। এক মুহূর্তে সব গুলিয়ে ফেলল সে। মুখ দিয়ে শুধু একটি কথাই বেরোল, 'কোথায় ছিলেন এতদিন?'
'যেখানে এতকাল ছিলাম। ভয়ে ফোন দেইনি।'
'কীসের ভয়?'
'একটি প্রশ্ন করে ফেলব। তোমার সেটা ভালো না-ও লাগতে পারে। সেই ভয়ে ফোন দেইনি।'
'কী সেটা?'
'তোমার প্রথম স্বামীর নাম কী?'
লীনা স্তব্ধ হয়ে গেল। এক মুহূর্তে মনের সাতরং অন্ধকারে ঢেকে গেল। এতদিন সে ঘোরের মধ্যে ছিল। আজ প্রথমবার মনে হলো, সে তো অন্য একজনের স্ত্রী। বিবাহিতা নারী পরপুরুষের প্রেমে মত্ত, এতো ভালো লক্ষণ না! সত্যিই কি লীনা অচেনা মানুষটার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে? না কি খনিকের মোহ মাত্র? কিন্তু এর আগে যে তার এমন হয়নি কখনো! কখনো কাউকে এতটা কাছের মনে হয়নি। কাউকে এতটা আকুল হয়ে ডাকতে ইচ্ছে করেনি। এতটা মুগ্ধ হয়ে ভাবেনি সে কারোর কথা। এ সবই কি ভুল? সবকিছু থেকেই কি লীনা দূরে সরে যেতে হবে? সব ভালোলাগা চাপা দিতে হবে তার?
(চলবে)
মো. ইয়াছিন
Abid faraje, Ayrin kaTun, Tasmia haq, Hasibul hasan santo, Abul basar, Santa akter, Sk sagor and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Anikaধুমকেতু
- Posts : 20
স্বর্ণমুদ্রা : 1324
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-01
Re: অচেনা তুমি
Fri Jun 04, 2021 9:57 pm
শেষ পর্ব
মেয়েদের বিয়ের পর বাপের বাড়ি আর নিজের থাকে না। বাপের বাড়ির মানুষেরাও তখন পরিবর্তন হয়ে যায়। লীনার ক্ষেত্রেও তাই হলো। ক'দিন ধরে লীনার মায়ের ব্যবহার অবিশ্বাস্য পরিবর্তন হয়েছে। আজ তো মুখের উপর বলেই দিলেন, 'এখানে বসে আছিস কেন? বিয়ে দিয়েছি এখানে বসিয়ে রাখার জন্য?'
লীনা রাগে, ক্ষোভে ব্যাগ গুছিয়ে চলে এসেছে। আতিফ তাকে দেখে অবাক। একের পর এক প্রশ্ন করেই চলেছে। লীনা জবাব দেয়নি। চুপচাপ মুখ কালো করে হাঁটু ভাঁজ করে বিছানায় বসে আছে। আতিফ বসে আছে তার সামনে। এটা-সেটা জিজ্ঞেস করছে। লীনা জবাব দিচ্ছে না। এতে বিন্দুমাত্র সংকোচ না করে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে সে। লীনা হঠাৎ চোখ রাঙিয়ে বলল, 'আপনি সেদিন আমাকে চড় মেরেছিলেন কেন?'
মুহূর্তেই আতিফের মুখ কালো হয়ে গেল। সে আসামির মতো মাথা নিচু করে ধীর স্বরে বলল, 'এখনও রেগে আছো?'
লীনা ঠোঁট ফুলিয়ে বারান্দায় চলে গেল। আতিফ গেল তার পিছু পিছু। সূর্য ডুবি ডুবি করছে। একটু পর অন্ধকার নামবে। বারান্দায় একজোড়া চড়ুই পাখি ছিল। লিনার পায়ের শব্দ পেয়ে উড়ে গেল। উড়ে উড়ে কোথায় যে চলে গেল, লীনা দেখতে পেল না। এদিক-ওদিক তাকিয়ে পিছন ফিরতেই আতিফের সাথে ধাক্কা খেল। আতিফ লীনার কাঁধে হাত রেখে বলল, 'বোসো, বলছি সব।'
লীনা বসল। আতিফ বলতে শুরু করল, 'সেদিন রাতে তোমার কথায় রেগে গিয়েছিলাম। তাই চড় মেরেছি। তুমিই বলো, সদ্য বিয়ে করা বউ যদি সিগারেট খেতে চায় তখন কি কোনো পুরুষের মাথা ঠিক থাকবে?'
লীনা গম্ভীর ভাব নিয়ে বলল, 'কিন্তু আমি তো খাওয়ার জন্য সিগারেট চাইনি। আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম, আপনি স্মোক করেন কিনা। স্মোক করলে আপনার কাছে সিগারেট থাকত তাই...'
'আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো এমন হবে না।'
'প্রথম দিনেই চড় মেরেছেন এখন বলছেন আর হবে না?'
'বিশ্বাস করো, আর কখনো তোমার গায়ে হাত তুলব না। সেদিন তুমি তোমার বাবার বাড়ি গিয়ে আমাকে গালি দিয়েছো, জানোয়ার বলেছো তবুও তো আমি কিছু বলিনি। কই, কিছু বলেছি? কারণ আমি জানি ভুলটা আমারই ছিল...'
.
'আকাশের লক্ষ-কোটি তারকারা চেয়ে আছে একটি মেয়ের দিকে। পৃথিবীর মাটিতে দোতলা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি। ফোন কানে লাগিয়ে চুপটি করে কী যেন শুনছে সে।'
সত্যিই তো! লীনা দোতলা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। লীনা অবাক হয়ে বলল, 'আমি ছাদে আছি আপনি জানলেন কীভাবে?'
'জানি, আমি সব জানি। আমি এ-ও জানি, তুমি এখন একটা কালো শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছো। বাঁ হাতে সিটি গোল্ডের একজোড়া চুড়ি। ডান হাতে ঘড়ি। শীত নিবারনের জন্য একটা চামড়ার জ্যাকেট। তবে জ্যাকেটটা তোমার না। কোনো এক পুরুষ মানুষের।'
'এতকিছু জেনেও ফোন দেন কেন?'
'শোনার জন্য।'
'কী শোনার জন্য?'
'তোমার কণ্ঠস্বর। কী মধুর! যত শুনি, শুধু শুনতেই মন চায়...'
'কে আপনি?'
'তোমার ছায়া। আচ্ছা, একটা জিনিস খেয়াল করেছো?'
'কী?'
'রেগে থাকলে তোমাকে যতটা সুন্দর দেখায়, কান্না করলে দ্বিগুণ সুন্দর দেখায়। আজ যখন কান্না করছিলে, ইচ্ছে করছিল তাকিয়েই থাকি তোমার দিকে...'
'আজ কেঁদেছি তাও জানেন!'
'বললাম তো সব জানি।'
লীনা আমতা আমতা করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, তখনই ওপাশ থেকে, 'আর কতক্ষণ ছাদে দাঁড়িয়ে থাকবে? নিচে এসো। খাবার রেডি।'
লীনা চেঁচিয়ে বলল, 'কী!'
তার মানে অচেনা নাম্বারে এতদিন যার সাথে কথা বলেছে সে আর কেউ না আতিফ নিজেই ছিল! গোপনে গোপনে এতবার সে আতিফের প্রেমে পড়েছে! এতবার যাকে ভেবেছে, সে আতিফ!
লীনা ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। টেবিলে খাবার সাজিয়ে বসে আছে আতিফ। লীনাকে দেখে বলল, 'বোসো।'
লীনা বসতে বসতে বলল, 'এতদিন আপনিই আমাকে ফোন দিয়েছেন?'
আতিফ লীনার প্লেটে ভাত দিতে দিতে বলল, 'কেন, আমি ফোন দিতে পারি না?'
.
বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে এক দৃষ্টিতে লীনার দিকে তাকিয়ে আছে আতিফ। তার সামনে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছে লীনা। সে মাঝে মাঝে চোখ টিপে চেয়ে দেখছে আতিফের মুখ। হঠাৎ উঠে বসে বলল, 'একটা কথা বলি?'
আতিফ খানিকটা ইতস্তত করল। হুট করে লীনা উঠে বসবে, তা হয়তো ভাবেনি সে। কিছুক্ষণ পর বলল, 'একটা কেন, হাজারটা বলো।'
'তার আগে কথা দিন, কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না৷'
'আচ্ছা, কথা দিলাম।'
লীনা ভয়ে ভয়ে বলল, 'এর আগে আমার একবার বিয়ে হয়েছিল...'
আতিফ তাচ্ছিল্য করে বলল, 'ওঃ, এই কথা! আমি জানি তো।'
লীনা ভ্রু কুঁচকে বলল, 'আপনি জানেন! কীভাবে জানেন?'
'তানিম আমাকে সব বলেছে। বেচারা নিজের দোষে ব্যবসায় লস করে তোমার উপর দায় চাপাচ্ছে। এ যুগে কেউ এসব কুসংস্কার বিশ্বাস করে? হা হা হা!'
লীনা বিছানা ছেড়ে নামল। ধীর পায়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। আতিফ লীনার গায়ে জ্যাকেট পরিয়ে দিয়ে বলল, 'কী শীত পড়েছে বাবা! ঠান্ডা লাগতে এক মুহূর্ত লাগবে না৷'
লীনা চুপচাপ হেঁটে বেরিয়ে গেল। আতিফ কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর লীনাকে খুঁজতে খুঁজতে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠল। দেখল, ছাদের রেলিংয়ে বসে আছে লীনা। একটু এদিক-সেদিক হলেই ছিটকে পড়বে। আতিফ দ্রুত এগিয়ে যাবার জন্য পা বাড়াচ্ছিল, তখনই লীনা বলল, 'এগোবে না। আর এক পা এগোলে ছাদ থেকে ফেলে দেব।'
আতিফ বলল, 'কী বলছো লীনা! কাকে ফেলে দেবে?'
লীনা রেলিংয়ে বসে পা দোলাতে দোলাতে বলল, 'তোমার বউকে। সে এখন আমার কাছে বন্দী।'
'আমার বউকে ফেলে দেবে মানে! কে তুমি?'
'আমি ভূত।' বলে নেমে এলো লীনা। আতিফের সামনে এসে ফিক করে হেসে ফেলল। বলল, 'ভয় পেয়েছেন? হি হি হি!'
আতিফ লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, 'এমনিতে আমি ভূতে বিশ্বাস করি না। তবে এখন মনে হচ্ছিল, চোখের সামনে ভূত দেখছি। ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে, উফ!'
লীনা আতিফের চোখের দিকে চেয়ে বলল, 'ভেবেছিলাম আপনি খুব সাহসী। কিন্তু আপনি তো... হি হি হি!'
(সমাপ্ত)
মো. ইয়াছিন
মেয়েদের বিয়ের পর বাপের বাড়ি আর নিজের থাকে না। বাপের বাড়ির মানুষেরাও তখন পরিবর্তন হয়ে যায়। লীনার ক্ষেত্রেও তাই হলো। ক'দিন ধরে লীনার মায়ের ব্যবহার অবিশ্বাস্য পরিবর্তন হয়েছে। আজ তো মুখের উপর বলেই দিলেন, 'এখানে বসে আছিস কেন? বিয়ে দিয়েছি এখানে বসিয়ে রাখার জন্য?'
লীনা রাগে, ক্ষোভে ব্যাগ গুছিয়ে চলে এসেছে। আতিফ তাকে দেখে অবাক। একের পর এক প্রশ্ন করেই চলেছে। লীনা জবাব দেয়নি। চুপচাপ মুখ কালো করে হাঁটু ভাঁজ করে বিছানায় বসে আছে। আতিফ বসে আছে তার সামনে। এটা-সেটা জিজ্ঞেস করছে। লীনা জবাব দিচ্ছে না। এতে বিন্দুমাত্র সংকোচ না করে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে সে। লীনা হঠাৎ চোখ রাঙিয়ে বলল, 'আপনি সেদিন আমাকে চড় মেরেছিলেন কেন?'
মুহূর্তেই আতিফের মুখ কালো হয়ে গেল। সে আসামির মতো মাথা নিচু করে ধীর স্বরে বলল, 'এখনও রেগে আছো?'
লীনা ঠোঁট ফুলিয়ে বারান্দায় চলে গেল। আতিফ গেল তার পিছু পিছু। সূর্য ডুবি ডুবি করছে। একটু পর অন্ধকার নামবে। বারান্দায় একজোড়া চড়ুই পাখি ছিল। লিনার পায়ের শব্দ পেয়ে উড়ে গেল। উড়ে উড়ে কোথায় যে চলে গেল, লীনা দেখতে পেল না। এদিক-ওদিক তাকিয়ে পিছন ফিরতেই আতিফের সাথে ধাক্কা খেল। আতিফ লীনার কাঁধে হাত রেখে বলল, 'বোসো, বলছি সব।'
লীনা বসল। আতিফ বলতে শুরু করল, 'সেদিন রাতে তোমার কথায় রেগে গিয়েছিলাম। তাই চড় মেরেছি। তুমিই বলো, সদ্য বিয়ে করা বউ যদি সিগারেট খেতে চায় তখন কি কোনো পুরুষের মাথা ঠিক থাকবে?'
লীনা গম্ভীর ভাব নিয়ে বলল, 'কিন্তু আমি তো খাওয়ার জন্য সিগারেট চাইনি। আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম, আপনি স্মোক করেন কিনা। স্মোক করলে আপনার কাছে সিগারেট থাকত তাই...'
'আমার ভুল হয়ে গেছে। আর কখনো এমন হবে না।'
'প্রথম দিনেই চড় মেরেছেন এখন বলছেন আর হবে না?'
'বিশ্বাস করো, আর কখনো তোমার গায়ে হাত তুলব না। সেদিন তুমি তোমার বাবার বাড়ি গিয়ে আমাকে গালি দিয়েছো, জানোয়ার বলেছো তবুও তো আমি কিছু বলিনি। কই, কিছু বলেছি? কারণ আমি জানি ভুলটা আমারই ছিল...'
.
'আকাশের লক্ষ-কোটি তারকারা চেয়ে আছে একটি মেয়ের দিকে। পৃথিবীর মাটিতে দোতলা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি। ফোন কানে লাগিয়ে চুপটি করে কী যেন শুনছে সে।'
সত্যিই তো! লীনা দোতলা বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে আছে। লীনা অবাক হয়ে বলল, 'আমি ছাদে আছি আপনি জানলেন কীভাবে?'
'জানি, আমি সব জানি। আমি এ-ও জানি, তুমি এখন একটা কালো শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছো। বাঁ হাতে সিটি গোল্ডের একজোড়া চুড়ি। ডান হাতে ঘড়ি। শীত নিবারনের জন্য একটা চামড়ার জ্যাকেট। তবে জ্যাকেটটা তোমার না। কোনো এক পুরুষ মানুষের।'
'এতকিছু জেনেও ফোন দেন কেন?'
'শোনার জন্য।'
'কী শোনার জন্য?'
'তোমার কণ্ঠস্বর। কী মধুর! যত শুনি, শুধু শুনতেই মন চায়...'
'কে আপনি?'
'তোমার ছায়া। আচ্ছা, একটা জিনিস খেয়াল করেছো?'
'কী?'
'রেগে থাকলে তোমাকে যতটা সুন্দর দেখায়, কান্না করলে দ্বিগুণ সুন্দর দেখায়। আজ যখন কান্না করছিলে, ইচ্ছে করছিল তাকিয়েই থাকি তোমার দিকে...'
'আজ কেঁদেছি তাও জানেন!'
'বললাম তো সব জানি।'
লীনা আমতা আমতা করে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, তখনই ওপাশ থেকে, 'আর কতক্ষণ ছাদে দাঁড়িয়ে থাকবে? নিচে এসো। খাবার রেডি।'
লীনা চেঁচিয়ে বলল, 'কী!'
তার মানে অচেনা নাম্বারে এতদিন যার সাথে কথা বলেছে সে আর কেউ না আতিফ নিজেই ছিল! গোপনে গোপনে এতবার সে আতিফের প্রেমে পড়েছে! এতবার যাকে ভেবেছে, সে আতিফ!
লীনা ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। টেবিলে খাবার সাজিয়ে বসে আছে আতিফ। লীনাকে দেখে বলল, 'বোসো।'
লীনা বসতে বসতে বলল, 'এতদিন আপনিই আমাকে ফোন দিয়েছেন?'
আতিফ লীনার প্লেটে ভাত দিতে দিতে বলল, 'কেন, আমি ফোন দিতে পারি না?'
.
বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে এক দৃষ্টিতে লীনার দিকে তাকিয়ে আছে আতিফ। তার সামনে ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছে লীনা। সে মাঝে মাঝে চোখ টিপে চেয়ে দেখছে আতিফের মুখ। হঠাৎ উঠে বসে বলল, 'একটা কথা বলি?'
আতিফ খানিকটা ইতস্তত করল। হুট করে লীনা উঠে বসবে, তা হয়তো ভাবেনি সে। কিছুক্ষণ পর বলল, 'একটা কেন, হাজারটা বলো।'
'তার আগে কথা দিন, কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না৷'
'আচ্ছা, কথা দিলাম।'
লীনা ভয়ে ভয়ে বলল, 'এর আগে আমার একবার বিয়ে হয়েছিল...'
আতিফ তাচ্ছিল্য করে বলল, 'ওঃ, এই কথা! আমি জানি তো।'
লীনা ভ্রু কুঁচকে বলল, 'আপনি জানেন! কীভাবে জানেন?'
'তানিম আমাকে সব বলেছে। বেচারা নিজের দোষে ব্যবসায় লস করে তোমার উপর দায় চাপাচ্ছে। এ যুগে কেউ এসব কুসংস্কার বিশ্বাস করে? হা হা হা!'
লীনা বিছানা ছেড়ে নামল। ধীর পায়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। আতিফ লীনার গায়ে জ্যাকেট পরিয়ে দিয়ে বলল, 'কী শীত পড়েছে বাবা! ঠান্ডা লাগতে এক মুহূর্ত লাগবে না৷'
লীনা চুপচাপ হেঁটে বেরিয়ে গেল। আতিফ কিছুক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর লীনাকে খুঁজতে খুঁজতে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠল। দেখল, ছাদের রেলিংয়ে বসে আছে লীনা। একটু এদিক-সেদিক হলেই ছিটকে পড়বে। আতিফ দ্রুত এগিয়ে যাবার জন্য পা বাড়াচ্ছিল, তখনই লীনা বলল, 'এগোবে না। আর এক পা এগোলে ছাদ থেকে ফেলে দেব।'
আতিফ বলল, 'কী বলছো লীনা! কাকে ফেলে দেবে?'
লীনা রেলিংয়ে বসে পা দোলাতে দোলাতে বলল, 'তোমার বউকে। সে এখন আমার কাছে বন্দী।'
'আমার বউকে ফেলে দেবে মানে! কে তুমি?'
'আমি ভূত।' বলে নেমে এলো লীনা। আতিফের সামনে এসে ফিক করে হেসে ফেলল। বলল, 'ভয় পেয়েছেন? হি হি হি!'
আতিফ লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, 'এমনিতে আমি ভূতে বিশ্বাস করি না। তবে এখন মনে হচ্ছিল, চোখের সামনে ভূত দেখছি। ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে, উফ!'
লীনা আতিফের চোখের দিকে চেয়ে বলল, 'ভেবেছিলাম আপনি খুব সাহসী। কিন্তু আপনি তো... হি হি হি!'
(সমাপ্ত)
মো. ইয়াছিন
Abid faraje, Ayrin kaTun, Tasmia haq, Hasibul hasan santo, Abul basar, Santa akter, Sk sagor and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum