- Tarek Hossain Rimonনবাগত
- Posts : 2
স্বর্ণমুদ্রা : 1354
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-13
Age : 28
Location : South patenga, Chittagong
আমরা সবাই সুখী হতে চায় কিন্তু সুখী হওয়ার আসল রহস্য আমাদের অজানা!
Mon Jun 14, 2021 4:43 pm
আমাদের চিন্তাজগতে সুখ জিনিসটার মানে কি?সুখি হওয়ার কারন যখন সফল হয় তখন সুখ জিনিসটা কতোদিন যাবৎ স্থায়ী হয়?সুখ বিষয়টা কি বিজ্ঞানের ভাষায় আপেক্ষিক নাকি পরম!ইসলামের ভাষায় সুখ বলতে কি বুঝায়!
আমি ছোটবেলা থেকে সুখ বিষয়টার মানে খুজতে খুজতে এই পর্যন্ত বেড়ে উটেছি।আমার জন্ম হয়েছে একটি যৌথপরিবারে যেখানে আমি একসাথে আমার দাদা,দাদী,চাচা,ফুফি,বাবা,মা কে যৌথভাবে বসবাস করতে দেখেছি।তখন আমার পরিবারের কর্তা ছিলো আমার দাদা,ওনি পেশায় একজন হাফেজ এবং এলাকায় ওনার যথেষ্ট সুনাম-খ্যাতি ছিল।আমার পরিবারের সবকিছু ওনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতো।আমার জন্মের নয় থেকে দশবছরের মাথায় দাদার মৃত্যু হয়।এর পরে আরো কয়েকবছর আমাদের পরিবার যৌথ ছিলো।পরবর্তীতে বিশেষ কোন কারনে আমার পরিবারের যৌথ অবস্থার অবসান হয়।আমার বাবা পেশায় একজন একটি ক্ষুদ্র আর্থিক ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক ছিলেন।ওনার চাকরি থেকে যা বেতন পেতো তা দিয়ে আমার পরিবার কোনভাবে চলে যেতো।ওনার বেতন কম হওয়ায় ওনি পারিবারিক খরচের জন্য প্রতিদিন আমার মাকে যা দিতো তা যথেষ্ট ছিলো না!তাই আমি যখন স্কুলে যেতাম তখন আমি যদি আম্মুর কাছে টাকা নেওয়ার জন্য বা কোন খেলনা কেনার জন্য বায়না ধরতাম তখন আম্মু আমাকে তা ইচ্ছা থাকলেও দিতে পারতো না।ঐ সময়ে আমার ক্লাসমেইট,বন্ধু,বান্ধুবীদের তাদের বাবা-মা স্কুলে আসার সময় অনেক কিছুই কিনে দিতো,তারা সবসময়ই স্কুলে আসার সময় পাচঁ থেকে দশ টাকা নিয়ে আসতো এবং প্রতিদিনই তারা চকোলেট, আইসক্রিম সহ আরো অনেক কিছু কিনে খেতো, তখন আমি তাদের দিকে চেয়ে থাকতাম এবং ভাবতাম ইশ!!আমার মা যদি আমাকেও প্রতিদিন ওদের মতো টাকা দিতো তাহলে আমিও ওদেরমতো এতোসব কিনে খেতে পারতাম তখন কতো না খুশি হতাম আমি!!!ঐসময়ে আমার কাছে সুখ বলতে মনে হতো শুধু এগুলোই পাচঁ,দশ টাকা এবং খেলনা!পরক্ষনেই আবার ভাবতাম আমার মা-বাবার কি দুষ!বাবার বেতন কম তাই হইতো এগুলো আমি এখন পাচ্ছি না হইতো কোনদিন যদি বাবা অনেক টাকা আয় করে তাহলে আমিও ওদের চেয়েও বেশি টাকা নিয়ে স্কুলে যাবো,ওদের চেয়েও আরো ভালো খেলনা আমি কিনে নিবো!এবং খেলবো!
পরবর্তীতে আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন বাসায় জায়গার সংকুলান কম হওয়ায় আমি আমার নানু বাসায় থাকতে শুরু করি।আমার বন্ধুরা যখন আলাদা রুমে আলাদাভাবে পড়ার টেবিলে পড়াশুনা করে তখন আমি আম্মুর থাকার খাটে বসে বসে পড়ি।তখন থেকে মনের মধ্যে সবসময়ই একটা প্রশ্নই বেজে উটতো!ইশ!! আমার যদি সুন্দর একটা ঘর হতো যেখানে আমার জন্য আলাদা একটা রুম হবে,আলাদা একটা পড়ার টেবিল হবে তখন আমি কতোই না ভালোভাবে মনযোগ দিয়ে পড়তে পারতাম ইশ!!যদি এমন হতো!!!
ক্লাস ফোর থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত আমি সুখ বলতে মনে করতাম একটি সুন্দর ঘর,একটি নিজস্ব একান্ত রুম এবং একটি পড়ার টেবিল!
দশম শ্রেণীতে থাকাকালীন সময়ে স্কুল এবং প্রাইভেট শিক্ষকদের মুখে শুনতাম যদি এসএসসি নামক পরীক্ষায় এ+ তুলতে পারি তাহলে জীবনটা অনেক সফল হয়ে যাবে এবং অনেক অনেক বেশি টাকা-পয়সা আয় করতে পারবো! এরইমধ্যে এসএসসি টেস্ট এক্সামের পর বাবা একদিন আমাকে সন্ধ্যা বেলায় বাসায় এসে বললো এসএসসি পরীক্ষায় এ+ পেতে হবে রিমন কিন্তু!!তখন বাবার কথা শুনে মনে হলো এ+ পেলে হইতোবা আমি আমার সবস্বপ্ন পূরন করতে পারবো!তাই আর দেরি না করে রাত-দিন উজাড় করে দিয়ে এক প্রত্যাশিত স্বপ্নকে পূর্ণতা দেওয়ার লক্ষে এগিয়ে যেতে থাকলাম!
০৭ই মে ২০১২ সালে আমার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলো এবং আমি আমার বহুল কাংখিত এ+ অর্জন করে ফেললাম এবং আমি আমার বাবার মুখের আনন্দ দেখে মনে মনে ভাবলাম এই বুঝি সত্যিকারের আসল সুখ!!!৭ই মে ২০১২ এই দিনটির কথা আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না!!এই সুখ অনেকদিন যাবৎ আমার মধ্যে স্থায়ী ছিলো!
এসএসসির ফল প্রকাশের পর বাবার কাছে বায়না ধরলাম আব্বু এবার তো আপনার স্বপ্ন পূরন করলাম অন্তত এবারতো আপনি আমাকে একটা উপহার দিতে পারেন!!
আব্বু বললো কি উপহার চাস তুই?আমি খুশিতে আত্বহারা হয়ে বললাম একটা সাইকেল কিনে দিতে হবে! আব্বুও সেদিন আমার কথা রেখেছিলো এবং একটি সাইকেল কিনেও দিয়েছিলো!
তখন আমার কাছে মনে হয়েছিলো এই সাইকেলই আমার জীবনের সত্যিকারের সুখ!!!!
এই সুখ আমার কাছে একমাস মতো স্থায়ী ছিলো এরপরে আর সাইকেল ভালো লাগে না!!!
পরবর্তীতে আমি বিএএফ শাহীন কলেজে এইচএসসি-১ম বর্ষে ভর্তি হয়।কলেজের প্রায় শিক্ষকদের মুখে শুনি ভবিষ্যৎ মানে বুয়েট,চুয়েট,সরকারি মেডিক্যাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়......।তখন থেকে মনের মধ্যে গোপন স্বপ্নের বীজ বুনতে শুরু করি।মনে মনে নিজেকে বলতাম সবসময়ই যেভাবেই হোক আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারি মেডিক্যালে ভর্তি হইতে হবেই!স্বপ্নের বীজ এতোটা গাঢ় ছিলো যে এসব প্রতিষ্ঠানে চান্স না পেলে আমি অন্য কোথাও পড়াশুনা করবোই না বলে সিদ্ধান্ত নিলাম!এটা আমার অহংকার ছিলো না! শুধুমাত্র চ্যালেঞ্জ ছিলো!
তখন আমার কাছে সুখ মানে মনে হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি মেডিক্যাল.......।।।
আল্লাহর ইচ্ছায় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি মেডিক্যাল এর ফলাফলে সারা বাংলাদেশ এর মধ্যে খুব কাছাকাছি ওয়েইটিং লিস্টে ছিলাম।ওয়েইটিং সিরিয়াল অনুযায়ী সরকারি মেডিক্যালে হইতো পড়ার সুযোগ হতো না কারন মেরিট লিস্টের বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরা মেডিক্যালে পড়ার সুযোগটা মিস করে না তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ ছিলো।।আর্থিক কারনে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ আমি কাজে লাগাতে পারি নি।হ্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবেই হোক আমি পড়ার দুঃসাহস করতাম যদি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার চান্স না হতো!
আল্লাহর অশেষ রহমতে তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সবকটি বিভাগে আমি মেরিট লিস্টে স্থান অর্জন করি।
ঐ সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে পারাটা আমার কাছে সুখ বলে মনে হতো!
পরিবর্তীতে অনার্স-২য় বর্ষে থাকাকালীন সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হয় আমার।পারিবারিক অভাব অনটন ছিলো ঐসময়ে দুর্বিষহ!বাবার চাকুরী নেই তখন পরিবারে আমি সবার বড় এরমধ্যে আমার ছোট দুভাই রয়েছে!তাদের পড়াশুনার খরচ চালানো থেকে পরিবারটা দুবেলা ভাত খেয়ে কিভাবে চলবে তখন সেই টেনশনটা ছিলো আমার কাছে সবচেয়েও বড় বিষয়!তাই চিন্তা করতাম যদি চাকুরীটা হয়ে যায় তাহলে হইতো পরিবারের সব দুঃশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে এবং পরিবারের সুখ ফিরে আসবে!তাই শুরু হলো নতুন এক চ্যালেঞ্জ মুকাবিলা টার্গেট যেভাবেই হোক এই চাকুরী আমাকে পেতে হবে!এরই মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর অনেকেই আমাকে নিরুৎসাহিত করা শুরু করেছে তাদের সবার মুখে একটাই কথা সরকারি চাকুরী মানে ঘুষ ছাড়া সম্ভব নই!!!!তবে আমি হতাশ হই নি আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আমি যদি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয় তাহলে অবশ্যই আমাকে তারা চাকুরীর হতে বাদ দিতে পারবে না তাই আমি সেই প্রতিজ্ঞায় অটল থেকে ভাইবা পরীক্ষা মুকাবিলা করলাম পরবর্তীতে আমি আল্লাহর অশেষ রহমতে সরকারি চাকুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়।
ঐসময়ে আমার কাছে সরকারি চাকুরী পাওয়াটায় সুখ
বলে মনে হতো!
আর এখন আমি বর্তমানে সরকারি চাকুরীতে কর্মরত আছি তবে তা আমার কাছে এখন সুখের মূল উৎস বলে মনে হয় না!
এখন আমার কাছে সুখ বলতে মনে হয় যে কোন একদিন যদি আমি বিসিএস ক্যাডার হই তবেই আমি চুড়ান্ত সুখী হবো!!!!
উপরের এতোসব লিখার একটাই উদ্দেশ্য
যেসব বিষয়কে আমরা সুখের উপকরণ বা কারন মনে করি তা আসলে সুখের কারন বা উপকরণ নই!কারন যে সব সুখকে আমরা সুখ বলে কল্পনা করি তার স্থায়ীত্ব বেশিসময় টিকে থাকে না তাই একটা সুখের কারন সফল হলেও আমরা আরো একটি বিশেষ সুখের সন্ধানে মরিয়া হয়ে উটি।যেসব বিষয় আমাদের কাছে সুখ বলে মনে হয় তা যদি সম্পূর্ণরূপে স্থায়ী হতো তাহলে তখন সেটি আমাদের কাছে প্রকৃত সুখ হতো! এখন কথা হচ্ছে সেসব সুখ কি সম্পূর্ণ রুপে স্থায়ী হয়???উত্তর অবশ্যই না যার কারনে আমরা এখনো সুখের সন্ধানে ব্যাস্ত! তবে সন্ধান পাচ্ছি না।আমি বর্তমানে বিশ্বাস করি যদি কোনো একদিন আমি যদি বিসিএস ক্যাডার হয়েও যায় তারপরেও আমি প্রকৃত সুখি হবো না কারন সেই সুখও চিরস্থায়ী হবে না! যদিও বিসিএস ক্যাডার হওয়ার সুখ বেশিরভাগ সময়জুড়ে আমার মনের মধ্যে সুখের বাতাস বয়ে দিলেও অন্ততপক্ষে যখন আমার মৃত্যু হবে তখনতো এটির শেষ হবে!!!!তাই না!!!!অর্থাৎ আমাদের সবধরনের সুখের সীমা সর্বোচ্চ মৃত্যু পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে!!!এর বেশি না!তাই আমরা সবাই সুখী হওয়ার জন্য যাই করি না কেনো তা আমাদেরকে প্রকৃত সুখী বানাবে না কারন আমাদের প্রত্যেকেরই মনের মধ্যে এটি গাথা আছে যে তা এক সময় শেষ হয়ে যাবে!
তাহলে এমন কি উপকরণ আছে বা বিশেষ কারন আছে যার মাধ্যমে আমি প্রকৃত সুখী হতে পারবো?
হ্যা আছে! সেই বিশেষ উপকরণ আছে ইসলাম ধর্মে!!।কোরআন বলছে সুখ মানে হচ্ছে আল্লাহর কাছে নিজেকে সপে দেওয়া বা বিসর্জন দেওয়া।তার মানে হচ্ছে আল্লাহ যেভাবে সন্তুষ্ট হয় সেভাবে কাজ করা।যদি আপনি আল্লাহর কাছে নিজেকে সপে দেন বা বিসর্জন দেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করেন তাহলে আল্লাহ তার বিনিময়ে আপনাকে দিবেন অনন্ত সুখের জান্নাত এবং দুনিয়ায় বেছে থাকাকালীন সময়ে দিবেন মনসিক সুখ।এবার চিন্তা করুন আপনি যদি এমনটি করেন তাহলে আপনি আল্লাহর কাছ থেকে যা পাবেন তা কিন্তু সম্পূর্ণরূপে স্থায়ী যা শেষ হবে না কখনো!!তাহলে আপনি আমি কি করছি এই দুনিয়ায় এমন মরিচীকার পেছনে দৌড়াচ্ছি যেখানে প্রকৃত সুখ নেই যা একসময় শেষ হয়ে যাবে!!!!
তাই আমাদের সবাইকে প্রকৃত সুখের পেছনে দৌড়ানো উচিত যেখানে আপনি ভিক্ষুক হয়েও আপসুস করবেন না কারন আপনি জানেন অর্থ বা ধনসম্পদ প্রকৃত সুখের উৎস নই!আবার অধিক অর্থ বা ধনসম্পদ পেয়েও আপনি অহংকারী হয়ে উটবেন না যেখানে আপনি জানেন এসব অর্থ বা ধনসম্পদ প্রকৃত সুখের উৎস নই!!!!!
আল্লাহু আকবার
আমি ছোটবেলা থেকে সুখ বিষয়টার মানে খুজতে খুজতে এই পর্যন্ত বেড়ে উটেছি।আমার জন্ম হয়েছে একটি যৌথপরিবারে যেখানে আমি একসাথে আমার দাদা,দাদী,চাচা,ফুফি,বাবা,মা কে যৌথভাবে বসবাস করতে দেখেছি।তখন আমার পরিবারের কর্তা ছিলো আমার দাদা,ওনি পেশায় একজন হাফেজ এবং এলাকায় ওনার যথেষ্ট সুনাম-খ্যাতি ছিল।আমার পরিবারের সবকিছু ওনার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতো।আমার জন্মের নয় থেকে দশবছরের মাথায় দাদার মৃত্যু হয়।এর পরে আরো কয়েকবছর আমাদের পরিবার যৌথ ছিলো।পরবর্তীতে বিশেষ কোন কারনে আমার পরিবারের যৌথ অবস্থার অবসান হয়।আমার বাবা পেশায় একজন একটি ক্ষুদ্র আর্থিক ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষক ছিলেন।ওনার চাকরি থেকে যা বেতন পেতো তা দিয়ে আমার পরিবার কোনভাবে চলে যেতো।ওনার বেতন কম হওয়ায় ওনি পারিবারিক খরচের জন্য প্রতিদিন আমার মাকে যা দিতো তা যথেষ্ট ছিলো না!তাই আমি যখন স্কুলে যেতাম তখন আমি যদি আম্মুর কাছে টাকা নেওয়ার জন্য বা কোন খেলনা কেনার জন্য বায়না ধরতাম তখন আম্মু আমাকে তা ইচ্ছা থাকলেও দিতে পারতো না।ঐ সময়ে আমার ক্লাসমেইট,বন্ধু,বান্ধুবীদের তাদের বাবা-মা স্কুলে আসার সময় অনেক কিছুই কিনে দিতো,তারা সবসময়ই স্কুলে আসার সময় পাচঁ থেকে দশ টাকা নিয়ে আসতো এবং প্রতিদিনই তারা চকোলেট, আইসক্রিম সহ আরো অনেক কিছু কিনে খেতো, তখন আমি তাদের দিকে চেয়ে থাকতাম এবং ভাবতাম ইশ!!আমার মা যদি আমাকেও প্রতিদিন ওদের মতো টাকা দিতো তাহলে আমিও ওদেরমতো এতোসব কিনে খেতে পারতাম তখন কতো না খুশি হতাম আমি!!!ঐসময়ে আমার কাছে সুখ বলতে মনে হতো শুধু এগুলোই পাচঁ,দশ টাকা এবং খেলনা!পরক্ষনেই আবার ভাবতাম আমার মা-বাবার কি দুষ!বাবার বেতন কম তাই হইতো এগুলো আমি এখন পাচ্ছি না হইতো কোনদিন যদি বাবা অনেক টাকা আয় করে তাহলে আমিও ওদের চেয়েও বেশি টাকা নিয়ে স্কুলে যাবো,ওদের চেয়েও আরো ভালো খেলনা আমি কিনে নিবো!এবং খেলবো!
পরবর্তীতে আমি যখন ক্লাস ফোরে পড়ি তখন বাসায় জায়গার সংকুলান কম হওয়ায় আমি আমার নানু বাসায় থাকতে শুরু করি।আমার বন্ধুরা যখন আলাদা রুমে আলাদাভাবে পড়ার টেবিলে পড়াশুনা করে তখন আমি আম্মুর থাকার খাটে বসে বসে পড়ি।তখন থেকে মনের মধ্যে সবসময়ই একটা প্রশ্নই বেজে উটতো!ইশ!! আমার যদি সুন্দর একটা ঘর হতো যেখানে আমার জন্য আলাদা একটা রুম হবে,আলাদা একটা পড়ার টেবিল হবে তখন আমি কতোই না ভালোভাবে মনযোগ দিয়ে পড়তে পারতাম ইশ!!যদি এমন হতো!!!
ক্লাস ফোর থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত আমি সুখ বলতে মনে করতাম একটি সুন্দর ঘর,একটি নিজস্ব একান্ত রুম এবং একটি পড়ার টেবিল!
দশম শ্রেণীতে থাকাকালীন সময়ে স্কুল এবং প্রাইভেট শিক্ষকদের মুখে শুনতাম যদি এসএসসি নামক পরীক্ষায় এ+ তুলতে পারি তাহলে জীবনটা অনেক সফল হয়ে যাবে এবং অনেক অনেক বেশি টাকা-পয়সা আয় করতে পারবো! এরইমধ্যে এসএসসি টেস্ট এক্সামের পর বাবা একদিন আমাকে সন্ধ্যা বেলায় বাসায় এসে বললো এসএসসি পরীক্ষায় এ+ পেতে হবে রিমন কিন্তু!!তখন বাবার কথা শুনে মনে হলো এ+ পেলে হইতোবা আমি আমার সবস্বপ্ন পূরন করতে পারবো!তাই আর দেরি না করে রাত-দিন উজাড় করে দিয়ে এক প্রত্যাশিত স্বপ্নকে পূর্ণতা দেওয়ার লক্ষে এগিয়ে যেতে থাকলাম!
০৭ই মে ২০১২ সালে আমার এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলো এবং আমি আমার বহুল কাংখিত এ+ অর্জন করে ফেললাম এবং আমি আমার বাবার মুখের আনন্দ দেখে মনে মনে ভাবলাম এই বুঝি সত্যিকারের আসল সুখ!!!৭ই মে ২০১২ এই দিনটির কথা আমি কোনদিন ভুলতে পারবো না!!এই সুখ অনেকদিন যাবৎ আমার মধ্যে স্থায়ী ছিলো!
এসএসসির ফল প্রকাশের পর বাবার কাছে বায়না ধরলাম আব্বু এবার তো আপনার স্বপ্ন পূরন করলাম অন্তত এবারতো আপনি আমাকে একটা উপহার দিতে পারেন!!
আব্বু বললো কি উপহার চাস তুই?আমি খুশিতে আত্বহারা হয়ে বললাম একটা সাইকেল কিনে দিতে হবে! আব্বুও সেদিন আমার কথা রেখেছিলো এবং একটি সাইকেল কিনেও দিয়েছিলো!
তখন আমার কাছে মনে হয়েছিলো এই সাইকেলই আমার জীবনের সত্যিকারের সুখ!!!!
এই সুখ আমার কাছে একমাস মতো স্থায়ী ছিলো এরপরে আর সাইকেল ভালো লাগে না!!!
পরবর্তীতে আমি বিএএফ শাহীন কলেজে এইচএসসি-১ম বর্ষে ভর্তি হয়।কলেজের প্রায় শিক্ষকদের মুখে শুনি ভবিষ্যৎ মানে বুয়েট,চুয়েট,সরকারি মেডিক্যাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়......।তখন থেকে মনের মধ্যে গোপন স্বপ্নের বীজ বুনতে শুরু করি।মনে মনে নিজেকে বলতাম সবসময়ই যেভাবেই হোক আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারি মেডিক্যালে ভর্তি হইতে হবেই!স্বপ্নের বীজ এতোটা গাঢ় ছিলো যে এসব প্রতিষ্ঠানে চান্স না পেলে আমি অন্য কোথাও পড়াশুনা করবোই না বলে সিদ্ধান্ত নিলাম!এটা আমার অহংকার ছিলো না! শুধুমাত্র চ্যালেঞ্জ ছিলো!
তখন আমার কাছে সুখ মানে মনে হতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি মেডিক্যাল.......।।।
আল্লাহর ইচ্ছায় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি মেডিক্যাল এর ফলাফলে সারা বাংলাদেশ এর মধ্যে খুব কাছাকাছি ওয়েইটিং লিস্টে ছিলাম।ওয়েইটিং সিরিয়াল অনুযায়ী সরকারি মেডিক্যালে হইতো পড়ার সুযোগ হতো না কারন মেরিট লিস্টের বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রীরা মেডিক্যালে পড়ার সুযোগটা মিস করে না তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ ছিলো।।আর্থিক কারনে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ আমি কাজে লাগাতে পারি নি।হ্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবেই হোক আমি পড়ার দুঃসাহস করতাম যদি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার চান্স না হতো!
আল্লাহর অশেষ রহমতে তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সবকটি বিভাগে আমি মেরিট লিস্টে স্থান অর্জন করি।
ঐ সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে পারাটা আমার কাছে সুখ বলে মনে হতো!
পরিবর্তীতে অনার্স-২য় বর্ষে থাকাকালীন সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হয় আমার।পারিবারিক অভাব অনটন ছিলো ঐসময়ে দুর্বিষহ!বাবার চাকুরী নেই তখন পরিবারে আমি সবার বড় এরমধ্যে আমার ছোট দুভাই রয়েছে!তাদের পড়াশুনার খরচ চালানো থেকে পরিবারটা দুবেলা ভাত খেয়ে কিভাবে চলবে তখন সেই টেনশনটা ছিলো আমার কাছে সবচেয়েও বড় বিষয়!তাই চিন্তা করতাম যদি চাকুরীটা হয়ে যায় তাহলে হইতো পরিবারের সব দুঃশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে এবং পরিবারের সুখ ফিরে আসবে!তাই শুরু হলো নতুন এক চ্যালেঞ্জ মুকাবিলা টার্গেট যেভাবেই হোক এই চাকুরী আমাকে পেতে হবে!এরই মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর অনেকেই আমাকে নিরুৎসাহিত করা শুরু করেছে তাদের সবার মুখে একটাই কথা সরকারি চাকুরী মানে ঘুষ ছাড়া সম্ভব নই!!!!তবে আমি হতাশ হই নি আমি মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম আমি যদি নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয় তাহলে অবশ্যই আমাকে তারা চাকুরীর হতে বাদ দিতে পারবে না তাই আমি সেই প্রতিজ্ঞায় অটল থেকে ভাইবা পরীক্ষা মুকাবিলা করলাম পরবর্তীতে আমি আল্লাহর অশেষ রহমতে সরকারি চাকুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়।
ঐসময়ে আমার কাছে সরকারি চাকুরী পাওয়াটায় সুখ
বলে মনে হতো!
আর এখন আমি বর্তমানে সরকারি চাকুরীতে কর্মরত আছি তবে তা আমার কাছে এখন সুখের মূল উৎস বলে মনে হয় না!
এখন আমার কাছে সুখ বলতে মনে হয় যে কোন একদিন যদি আমি বিসিএস ক্যাডার হই তবেই আমি চুড়ান্ত সুখী হবো!!!!
উপরের এতোসব লিখার একটাই উদ্দেশ্য
যেসব বিষয়কে আমরা সুখের উপকরণ বা কারন মনে করি তা আসলে সুখের কারন বা উপকরণ নই!কারন যে সব সুখকে আমরা সুখ বলে কল্পনা করি তার স্থায়ীত্ব বেশিসময় টিকে থাকে না তাই একটা সুখের কারন সফল হলেও আমরা আরো একটি বিশেষ সুখের সন্ধানে মরিয়া হয়ে উটি।যেসব বিষয় আমাদের কাছে সুখ বলে মনে হয় তা যদি সম্পূর্ণরূপে স্থায়ী হতো তাহলে তখন সেটি আমাদের কাছে প্রকৃত সুখ হতো! এখন কথা হচ্ছে সেসব সুখ কি সম্পূর্ণ রুপে স্থায়ী হয়???উত্তর অবশ্যই না যার কারনে আমরা এখনো সুখের সন্ধানে ব্যাস্ত! তবে সন্ধান পাচ্ছি না।আমি বর্তমানে বিশ্বাস করি যদি কোনো একদিন আমি যদি বিসিএস ক্যাডার হয়েও যায় তারপরেও আমি প্রকৃত সুখি হবো না কারন সেই সুখও চিরস্থায়ী হবে না! যদিও বিসিএস ক্যাডার হওয়ার সুখ বেশিরভাগ সময়জুড়ে আমার মনের মধ্যে সুখের বাতাস বয়ে দিলেও অন্ততপক্ষে যখন আমার মৃত্যু হবে তখনতো এটির শেষ হবে!!!!তাই না!!!!অর্থাৎ আমাদের সবধরনের সুখের সীমা সর্বোচ্চ মৃত্যু পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে!!!এর বেশি না!তাই আমরা সবাই সুখী হওয়ার জন্য যাই করি না কেনো তা আমাদেরকে প্রকৃত সুখী বানাবে না কারন আমাদের প্রত্যেকেরই মনের মধ্যে এটি গাথা আছে যে তা এক সময় শেষ হয়ে যাবে!
তাহলে এমন কি উপকরণ আছে বা বিশেষ কারন আছে যার মাধ্যমে আমি প্রকৃত সুখী হতে পারবো?
হ্যা আছে! সেই বিশেষ উপকরণ আছে ইসলাম ধর্মে!!।কোরআন বলছে সুখ মানে হচ্ছে আল্লাহর কাছে নিজেকে সপে দেওয়া বা বিসর্জন দেওয়া।তার মানে হচ্ছে আল্লাহ যেভাবে সন্তুষ্ট হয় সেভাবে কাজ করা।যদি আপনি আল্লাহর কাছে নিজেকে সপে দেন বা বিসর্জন দেন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করেন তাহলে আল্লাহ তার বিনিময়ে আপনাকে দিবেন অনন্ত সুখের জান্নাত এবং দুনিয়ায় বেছে থাকাকালীন সময়ে দিবেন মনসিক সুখ।এবার চিন্তা করুন আপনি যদি এমনটি করেন তাহলে আপনি আল্লাহর কাছ থেকে যা পাবেন তা কিন্তু সম্পূর্ণরূপে স্থায়ী যা শেষ হবে না কখনো!!তাহলে আপনি আমি কি করছি এই দুনিয়ায় এমন মরিচীকার পেছনে দৌড়াচ্ছি যেখানে প্রকৃত সুখ নেই যা একসময় শেষ হয়ে যাবে!!!!
তাই আমাদের সবাইকে প্রকৃত সুখের পেছনে দৌড়ানো উচিত যেখানে আপনি ভিক্ষুক হয়েও আপসুস করবেন না কারন আপনি জানেন অর্থ বা ধনসম্পদ প্রকৃত সুখের উৎস নই!আবার অধিক অর্থ বা ধনসম্পদ পেয়েও আপনি অহংকারী হয়ে উটবেন না যেখানে আপনি জানেন এসব অর্থ বা ধনসম্পদ প্রকৃত সুখের উৎস নই!!!!!
আল্লাহু আকবার
Tarek Hossain Rimon, Tawhid sikdar, Masum khan, Mahmud hasan, Ayan ahmed, Sipon howladar, Sabbir ahmed and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum