- Sinthia Debnathনবাগত
- Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1307
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-04
অদ্ভুত কান্না
Fri Jun 04, 2021 10:20 pm
( ১ম পর্ব )
.
কে কাদে ওখানে, কে ?
হাবিব তুমি কি কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছ ?
হাবিব, এই হাবিব , প্লিজ ঘুম থেকে উঠো, রান্নাঘরের ওদিকে কে জানি কাদছে।
- হাবিব হাই তুলতে তুলতে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল; ' ডাকছো কেন ? এই মাঝরাতে কে আবার কাদবে ? বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টির শব্দ বোধহয় তোমার কাছে কান্নার শব্দ মনে হচ্ছে, ঘুমাও তো নাদিয়া।'
-নাদিয়া আত্মবিশ্বাসের সাথে আবার বলল, 'না হাবিব, কান্নার শব্দ শুনে আমার ঘুম ভাঙেছে, এখন আর শুনতে পাচ্ছি না, তুমি বাতিটা একটু জ্বালাও প্লিজ, আমার খুব ভয় করছে।'
চোখ কচলাতে কচলাতে হাবিব ঘুম থেকে উঠলো, বাথরুম-রান্নাঘর সবকিছু দেখে এলো, কোথাও কিছু নেই।
- হাবিব নাদিয়ার দিকে একটু মনযোগ দিয়ে তাকালো, ওর চেহারায় প্রচন্ড ভয়ের ছাপ, সে ভেবে পাচ্ছে না বিয়ের দু'সপ্তাহ হলো এরকম আগে কখনো হয়নি, আজ হঠাৎ করে নাদিয়া এরকম করছে কেন! যাইহোক, ওর ভয় দূর করার জন্য রুমের বাতি অন রেখে কিছুক্ষণ বসে থাকা উচিৎ, হাবিব একটা সিগারেট বের করে আগুন ধরাতে ধরাতে তার মনে হলো নাদিয়ার বাড়ি থেকে একটা ফোন এসেছিলো, এর পর থেকে নাদিয়ার মাঝে কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, কিন্তু বাড়ি থেকে বড়জোর দুঃসংবাদ আসতে পারে, এতে রাতে কান্না-টান্না শুনার কি আছে ? তাছাড়া বাড়ি থেকে খারাপ সংবাদ এলে তাকে জানানোর কথা। হাবিব সিগারেট টানতে টানতে এসব ভাবছে।
নাদিয়া হঠাৎ করে বিড়বিড় করে বলল, 'হাবিব, হাবিব, তুমি হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছ! কে জানি বুকে ছাপা কষ্ট নিয়ে হাসছে, এরকম হাসি দেখলে আমার ভয় লাগে হাবিব।'
হাবিব ভ্রু কুচকে তাকালো, নাদিয়ার শরীর ঘেমে গেছে, ধীরে ধীরে ওর চেহারা কেমন যেনো অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে, ভয়ে পেলে এমন হয় নাকি ?
খানিক পরেই কারেন্ট চলে গেলো, বাহিরে বাতাসের সাথে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, তাই মনেহয় কারেন্ট চলে গেছে।
কারেন্ট চলে যাবার সাথে সাথে নাদিয়া হাবিবের হাতটা শক্ত করে ধরলো।
-হাবিব নাদিয়াকে বুকের সাথে আগলে নিয়ে বলল, 'নাদিয়া ওসব কিচ্ছু না, ঘুমাও তো।'
আমি মোমবাতি জ্বালাচ্ছি তুমি ভয় পেওনা, কেমন ? '
-নাদিয়া কাপা গলায় বলল, 'না, না হাবিব, তুমি আমাকে শক্ত করে জরিয়ে থাকো, আমাকে কে জানি ডাকে, তুমি মোমবাতি জ্বালাতে গেলে আমাকে নিয়ে যাবে।'
হাবিব নাদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবছে ওর কি হলো, নতুন বউয়ের এই অস্বাভাবিক আচরণ আবার সবাইকে জানানো উচিৎ হবেনা, ওর বাড়িতে একটা ফোন দেবো নাকি ?
ফোন বাজছে, কেউ ধরছে না, বোধহয় এতো রাতে কেউ জেগে নেই, টানা তিনটে ফোন দেবার পরও কেউ ধরলো না।
হঠাৎ করে নাদিয়া হাবিবকে ছেড়ে দিলো, তারপর বিড়বিড় করে বলল, 'হাবিব তুমি আমার কাছে এসো না, তুমি কাছে আসলে আরও বেশি কাদে, দড়ি হাতে নিয়ে আসে তোমাকে বেধে ফেলতে।'
কিছুক্ষণ পর কারেন্ট এসেছে, অন্ধকার রুম আলোকিত হয়েছে, নাদিয়ার অবস্থা দেখে হাবিব রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলো।
ঘেমে একদম ভিজে গেছে, চুলগুলো এলোমেলো, ওর পরনে কাপড় ঠিকটাক নেই।
ভুতপ্রেতে হাবিব বিশ্বাস করেনা, কিন্তু নাদিয়ার সাথে এসব হচ্ছে কেন ? কার কান্না শুনতে পায় ? সে নাদিয়ার কাছে গেলে আরও বেশি কে কাদে! কেন কাদে ?
- নাদিয়াকে এখন একটু স্বাভাবিক লাগছে দেখে হাবিব জিজ্ঞেস করল, 'তুমি কাকে দেখতে পাও নাদিয়া, তাকে কি তুমি আগে থেকে চিনতে ?'
- নাদিয়া চমকে গিয়ে বলল, কাকে দেখতে পাবো আবার, তোমার মাথা কি ঠিক আছে ? দাঁড়াও আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসি ?'
- হাবিব আরও অবাক হলো, নাদিয়া খুব স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে, চিরচেনা হাসিখুশি চেহারায় কথা বলছে, মনে হচ্ছে এতক্ষণ যা ঘটেছে সব ভুলে গেছে, না হয় এতক্ষণ মজা করেছে।'
- নাদিয়া চা বানাতে রান্নাঘরে গেলো, হাবিব নাদিয়ার ফোনের প্যাটার্ন জানে, তাই ফোন হাতে নিয়ে কললিস্ট চ্যাক করে দেখলো, লাস্ট দু'টা হিন্দু ছেলেমেয়ের নামে কল এসেছে, একজনের নাম চৈতালী বিশ্বাস, আরেকজনের নাম অনুপম রায়। এদের কাউকে হাবিব চিনে না।
সে নাদিয়ার ফেইসবুকে ঢুকার চেষ্টা করছে, একাউন্ট লগআউট থাকায় ঢুকতে পারলো না, হঠাৎ মনে হল ম্যাসেঞ্জার চ্যাক করা যেতে পারে, ম্যাসেঞ্জারে গিয়ে দেখলো প্রথম ম্যাসেজটা চৈতালী থেকে এসেছে, শেষ ম্যাসেজটা হলো, 'জবিদাস আর নেই নাদিয়া।'
নাদিয়া ম্যাসেজটা সিন করেনি, সিন না করায় বোধহয় চৈতালী আবার কল দিয়েছিল।
কিন্তু হিন্দু ছেলে-মেয়েদের সাথে নাদিয়ার সম্পর্ক কি ? আর জবিদাস কে ?
চৈতালীর নাম্বারে কল দিয়ে দেখবো নাকি ? না থাক, রাত অনেক হয়েছে, তারচেয়ে বরং ওর নাম্বার সেভ করে রাখি, হাবিব চৈতালীর নাম্বার সেভ করবে এমন সময় রান্নাঘর থেকে চিৎকার শুনতে পেলো, হাবিব দৌড়ে গিয়ে দেখলো নাদিয়া মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, এরিমধ্যে রান্নাঘরের জানালার আয়না একটা ভেঙে পড়লো, এই আয়না আগেও কিছুটা ভাঙা ছিলো, বাতাসের সাথে টুকরো টুকরো হয়ে আয়না ভেঙে পড়ছে।
হাবিব নাদিয়াকে কোলে করে বিছানায় এনে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো, কিছুক্ষণ পর নাদিয়া চোখ খুলে হাবিবের কলার ধরে টেনে শক্ত করে বুকের সাথে জরিয়ে ধরে বলল, 'ছাদে কে যেন হাটে, স্বাভাবিক হাটা না, পা টেনে টেনে হাটছিল, আমি বললাম কে ? কে ওখানে হাটে ? সাথে সাথে আয়না ভেঙে পড়লো।'
-নাদিয়ার অবস্থা দেখে হাবিব চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলল, 'এখন ঠিক আছো তুমি ?'
-'নাদিয়া আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল, 'হ্যা ঠিক আছি, তুমি আমাকে শক্ত করে ধরো, আরও শক্ত করে।'
ছোট বাচ্চাদের মতো নাদিয়া গুটিশুটি খেয়ে হাবিবের এক হাত শক্ত করে ধরে ঘুমিয়ে গেলো। ঘুমে হাবিবের চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসায় গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। খানিক পরে ঘুম ভেঙে গেল নাদিয়ার বিড়বিড় শুনে, লক্ষ করে দেখলো কাকে যেন বলছে, 'ছেড়ে দিলাম, আমি হাবিবকে ছেড়ে দিলাম।'
খানিকক্ষণ হাবিবের পুরোপুরি ঘুম ভেঙে গেলো, পাশে হাত দিয়ে দেখে নাদিয়া বিছানায় নেই।
চলবে
Ahsan Habib Tushar
.
কে কাদে ওখানে, কে ?
হাবিব তুমি কি কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছ ?
হাবিব, এই হাবিব , প্লিজ ঘুম থেকে উঠো, রান্নাঘরের ওদিকে কে জানি কাদছে।
- হাবিব হাই তুলতে তুলতে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল; ' ডাকছো কেন ? এই মাঝরাতে কে আবার কাদবে ? বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে, বৃষ্টির শব্দ বোধহয় তোমার কাছে কান্নার শব্দ মনে হচ্ছে, ঘুমাও তো নাদিয়া।'
-নাদিয়া আত্মবিশ্বাসের সাথে আবার বলল, 'না হাবিব, কান্নার শব্দ শুনে আমার ঘুম ভাঙেছে, এখন আর শুনতে পাচ্ছি না, তুমি বাতিটা একটু জ্বালাও প্লিজ, আমার খুব ভয় করছে।'
চোখ কচলাতে কচলাতে হাবিব ঘুম থেকে উঠলো, বাথরুম-রান্নাঘর সবকিছু দেখে এলো, কোথাও কিছু নেই।
- হাবিব নাদিয়ার দিকে একটু মনযোগ দিয়ে তাকালো, ওর চেহারায় প্রচন্ড ভয়ের ছাপ, সে ভেবে পাচ্ছে না বিয়ের দু'সপ্তাহ হলো এরকম আগে কখনো হয়নি, আজ হঠাৎ করে নাদিয়া এরকম করছে কেন! যাইহোক, ওর ভয় দূর করার জন্য রুমের বাতি অন রেখে কিছুক্ষণ বসে থাকা উচিৎ, হাবিব একটা সিগারেট বের করে আগুন ধরাতে ধরাতে তার মনে হলো নাদিয়ার বাড়ি থেকে একটা ফোন এসেছিলো, এর পর থেকে নাদিয়ার মাঝে কিছু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে, কিন্তু বাড়ি থেকে বড়জোর দুঃসংবাদ আসতে পারে, এতে রাতে কান্না-টান্না শুনার কি আছে ? তাছাড়া বাড়ি থেকে খারাপ সংবাদ এলে তাকে জানানোর কথা। হাবিব সিগারেট টানতে টানতে এসব ভাবছে।
নাদিয়া হঠাৎ করে বিড়বিড় করে বলল, 'হাবিব, হাবিব, তুমি হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছ! কে জানি বুকে ছাপা কষ্ট নিয়ে হাসছে, এরকম হাসি দেখলে আমার ভয় লাগে হাবিব।'
হাবিব ভ্রু কুচকে তাকালো, নাদিয়ার শরীর ঘেমে গেছে, ধীরে ধীরে ওর চেহারা কেমন যেনো অপরিচিত হয়ে যাচ্ছে, ভয়ে পেলে এমন হয় নাকি ?
খানিক পরেই কারেন্ট চলে গেলো, বাহিরে বাতাসের সাথে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে, তাই মনেহয় কারেন্ট চলে গেছে।
কারেন্ট চলে যাবার সাথে সাথে নাদিয়া হাবিবের হাতটা শক্ত করে ধরলো।
-হাবিব নাদিয়াকে বুকের সাথে আগলে নিয়ে বলল, 'নাদিয়া ওসব কিচ্ছু না, ঘুমাও তো।'
আমি মোমবাতি জ্বালাচ্ছি তুমি ভয় পেওনা, কেমন ? '
-নাদিয়া কাপা গলায় বলল, 'না, না হাবিব, তুমি আমাকে শক্ত করে জরিয়ে থাকো, আমাকে কে জানি ডাকে, তুমি মোমবাতি জ্বালাতে গেলে আমাকে নিয়ে যাবে।'
হাবিব নাদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ভাবছে ওর কি হলো, নতুন বউয়ের এই অস্বাভাবিক আচরণ আবার সবাইকে জানানো উচিৎ হবেনা, ওর বাড়িতে একটা ফোন দেবো নাকি ?
ফোন বাজছে, কেউ ধরছে না, বোধহয় এতো রাতে কেউ জেগে নেই, টানা তিনটে ফোন দেবার পরও কেউ ধরলো না।
হঠাৎ করে নাদিয়া হাবিবকে ছেড়ে দিলো, তারপর বিড়বিড় করে বলল, 'হাবিব তুমি আমার কাছে এসো না, তুমি কাছে আসলে আরও বেশি কাদে, দড়ি হাতে নিয়ে আসে তোমাকে বেধে ফেলতে।'
কিছুক্ষণ পর কারেন্ট এসেছে, অন্ধকার রুম আলোকিত হয়েছে, নাদিয়ার অবস্থা দেখে হাবিব রীতিমতো ভয় পেয়ে গেলো।
ঘেমে একদম ভিজে গেছে, চুলগুলো এলোমেলো, ওর পরনে কাপড় ঠিকটাক নেই।
ভুতপ্রেতে হাবিব বিশ্বাস করেনা, কিন্তু নাদিয়ার সাথে এসব হচ্ছে কেন ? কার কান্না শুনতে পায় ? সে নাদিয়ার কাছে গেলে আরও বেশি কে কাদে! কেন কাদে ?
- নাদিয়াকে এখন একটু স্বাভাবিক লাগছে দেখে হাবিব জিজ্ঞেস করল, 'তুমি কাকে দেখতে পাও নাদিয়া, তাকে কি তুমি আগে থেকে চিনতে ?'
- নাদিয়া চমকে গিয়ে বলল, কাকে দেখতে পাবো আবার, তোমার মাথা কি ঠিক আছে ? দাঁড়াও আমি তোমার জন্য চা করে নিয়ে আসি ?'
- হাবিব আরও অবাক হলো, নাদিয়া খুব স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে, চিরচেনা হাসিখুশি চেহারায় কথা বলছে, মনে হচ্ছে এতক্ষণ যা ঘটেছে সব ভুলে গেছে, না হয় এতক্ষণ মজা করেছে।'
- নাদিয়া চা বানাতে রান্নাঘরে গেলো, হাবিব নাদিয়ার ফোনের প্যাটার্ন জানে, তাই ফোন হাতে নিয়ে কললিস্ট চ্যাক করে দেখলো, লাস্ট দু'টা হিন্দু ছেলেমেয়ের নামে কল এসেছে, একজনের নাম চৈতালী বিশ্বাস, আরেকজনের নাম অনুপম রায়। এদের কাউকে হাবিব চিনে না।
সে নাদিয়ার ফেইসবুকে ঢুকার চেষ্টা করছে, একাউন্ট লগআউট থাকায় ঢুকতে পারলো না, হঠাৎ মনে হল ম্যাসেঞ্জার চ্যাক করা যেতে পারে, ম্যাসেঞ্জারে গিয়ে দেখলো প্রথম ম্যাসেজটা চৈতালী থেকে এসেছে, শেষ ম্যাসেজটা হলো, 'জবিদাস আর নেই নাদিয়া।'
নাদিয়া ম্যাসেজটা সিন করেনি, সিন না করায় বোধহয় চৈতালী আবার কল দিয়েছিল।
কিন্তু হিন্দু ছেলে-মেয়েদের সাথে নাদিয়ার সম্পর্ক কি ? আর জবিদাস কে ?
চৈতালীর নাম্বারে কল দিয়ে দেখবো নাকি ? না থাক, রাত অনেক হয়েছে, তারচেয়ে বরং ওর নাম্বার সেভ করে রাখি, হাবিব চৈতালীর নাম্বার সেভ করবে এমন সময় রান্নাঘর থেকে চিৎকার শুনতে পেলো, হাবিব দৌড়ে গিয়ে দেখলো নাদিয়া মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, এরিমধ্যে রান্নাঘরের জানালার আয়না একটা ভেঙে পড়লো, এই আয়না আগেও কিছুটা ভাঙা ছিলো, বাতাসের সাথে টুকরো টুকরো হয়ে আয়না ভেঙে পড়ছে।
হাবিব নাদিয়াকে কোলে করে বিছানায় এনে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলো, কিছুক্ষণ পর নাদিয়া চোখ খুলে হাবিবের কলার ধরে টেনে শক্ত করে বুকের সাথে জরিয়ে ধরে বলল, 'ছাদে কে যেন হাটে, স্বাভাবিক হাটা না, পা টেনে টেনে হাটছিল, আমি বললাম কে ? কে ওখানে হাটে ? সাথে সাথে আয়না ভেঙে পড়লো।'
-নাদিয়ার অবস্থা দেখে হাবিব চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলল, 'এখন ঠিক আছো তুমি ?'
-'নাদিয়া আরও শক্ত করে জরিয়ে ধরে বলল, 'হ্যা ঠিক আছি, তুমি আমাকে শক্ত করে ধরো, আরও শক্ত করে।'
ছোট বাচ্চাদের মতো নাদিয়া গুটিশুটি খেয়ে হাবিবের এক হাত শক্ত করে ধরে ঘুমিয়ে গেলো। ঘুমে হাবিবের চোখের পাতা বন্ধ হয়ে আসায় গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। খানিক পরে ঘুম ভেঙে গেল নাদিয়ার বিড়বিড় শুনে, লক্ষ করে দেখলো কাকে যেন বলছে, 'ছেড়ে দিলাম, আমি হাবিবকে ছেড়ে দিলাম।'
খানিকক্ষণ হাবিবের পুরোপুরি ঘুম ভেঙে গেলো, পাশে হাত দিয়ে দেখে নাদিয়া বিছানায় নেই।
চলবে
Ahsan Habib Tushar
Abid faraje, Ayrin kaTun, Sk nadim, Hasibul hasan santo, Abul basar, Santa akter, Sk sagor and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Sinthia Debnathনবাগত
- Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1307
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-04
Re: অদ্ভুত কান্না
Fri Jun 04, 2021 10:20 pm
( ২য় পর্ব )
.
নাদিয়াকে বিছানায় না পেয়ে হাবিব চমকে উঠলো, চারদিকে মুয়াজ্জিনের কন্ঠে ভেসে আসছে, 'আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম'।
হাবিব কিছুক্ষণ পর আন্দাজ করলো বাথরুমে পানির শব্দ, সেখানে গিয়ে দেখলো পানির ট্যাপ ছাড়া, কিন্তু নাদিয়া নেই।
হঠাৎ রান্নাঘর থেকে একটা আওয়াজ আসলো, 'আমি এখানে'।
হাবিব চমকে উঠলো, রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো নাদিয়া সেখানে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ছে। নাদিয়াকে পেয়ে হাবিব একটু স্বস্তিবোধ করলো, রান্নাঘরে একটা চেয়ারে বসে হাবিব সিগারেট বের করে আগুন ধরালো, এতক্ষণ পর মনে পড়লো তার ঘুম ভেঙেছে নাদিয়ার বিড়বিড় করে উল্টা-পাল্টা শব্দ শুনে, 'ছেড়ে দিলাম, আমি হাবিবকে ছেড়ে দিলাম'। সে ভেবে পাচ্ছে না সেটা ভুল শুনছে নাকি সত্য শুনছে, সত্য হবার কথা, আজ সারারাত নাদিয়া যেসব অস্বাভাবিক আচরণ করছে, তাতে সত্যিই শুনছে, কিন্তু নাদিয়া রুমে নামাজ না পড়ে রান্নাঘরে কেন ? এতক্ষণে নাদিয়ার নামাজ শেষ হয়ে গেছে।
নাদিয়া স্বাভাবিকভাবে হাবিবের দিকে তাকালো, তারপর জায়নামাজ তুলতে তুলতে বলল, 'হাবিব তোমাকে চা করে দেই ?'
নাদিয়ার স্বাভাবিকভাবে কথা বলা দেখে হাবিবের এখন রাগ হচ্ছে , সারারাত কি সব আজগুবি কান্না শুনে ভয় পেলো, আমাকে কাছে যেতে দিলো না, কাছে গেলে নাকি রান্নাঘরের ওদিকে কে আরও বেশি কাদে, এখন সব ভুলে গেছে, সারারাত ঘুমাতে পারিনি ওর যন্ত্রনায়।
হাবিব কিছুটা বিরক্তির গলায় বলল, 'তুমি রান্নাঘরে নামাজ পড়তে আসছো কেন ?'
নাদিয়া সেই চেনাজানা ভঙ্গিতে বলল, 'তুমি ঘুমোচ্ছিলে তাই ভাবলাম রুমের বাতি জ্বালিয়ে নামাজ পড়লে ডিস্টার্ব হবে।'
-কিন্তু সারাটা রাত তুমি বলছিলে রান্নাঘরের দিকে কে জানি কাদে, আমি তোমার কাছে গেলে আমাকে মেরে ফেলবে বলে আমাকে দূরে থাকতে বলছিলে, এসব কি তোমার এখন মনে আছে ?
-নাদিয়া খুব আগ্রহী হয়ে বলল, 'তাই নাকি ? আমি এসব বলছি নাকি ? আমার তো কিছু মনে পড়ছে না, তোমার মাথা ঠিক আছে তো হাবিব ?'
নাদিয়া এমনভাবে কথা বলছে এখন হাবিবের নিজের কাছে মনে হচ্ছে সে নিজেই হয়তো এতকিছু স্বপ্নে দেখছে, তার নিজেরই হয়তো মাথা ঠিক নেই।
নাদিয়া কাছে এসে বলল, 'কি হইছে তোমার ? কি চিন্তা করছো ?'
-'না, কিছু না, তুমি চা দাও তো।'
একটু পর ফোন বেজে উঠলো, হাবিব ফোন হাতে নিয়ে দেখলো নাদিয়ার বাড়ি থেকে কল আসছে, তার এতক্ষণে মনে পড়লো রাতে নাদিয়ার অস্বাভাবিক আচরণ দেখে সে নাদিয়ার বাসায় কল দিয়েছিল। হাবিব ভাবছে নাদিয়ার যেহেতু কিছু মনে নেই, তাহলে ওর সামনে কল ধরা উচিৎ হবেনা। তাই বাহিরে গিয়ে কল ধরলো।
-'হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম'।
-'ওয়ালাইকুম আসসালাম, কি বাবা এত রাতে কল করছিলে যে ! কোনো সমস্যা বাবা ?'
-'হ্যা আম্মু, সমস্যাটা হচ্ছে নাদিয়া মাঝরাতে হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠলো, তারপর একবার বলে রান্নাঘরের ওদিকে কে কাদে, আরেকবার বলে হাসে, আরেকবার বলে ছাদে কে জানি পা টেনে টেনে হাটছে, তাছাড়া রান্নাঘরে একবার অজ্ঞান হয়েও পড়েছিল , তাই ভয় পেয়ে কল দিয়েছিলাম।'
-'কি বলো বাবা ! এতকিছু হয়ে গেলো ? কখন থেকে এমন করছিলো ?'
-'হঠাৎ করে মাঝরাতে এমন করছিল, কিন্তু একবার সন্ধ্যায় ওর একটা কল আসে, এরপর দেখলাম ওর মন খারাপ, জিজ্ঞেস করলাম কার কল ছিলো, ও বলল বাড়ি থেকে।'
-'না বাড়ি থেকে তো কেউ কল দেয়নি।'
- হ্যাঁ , আমি ওর কললিস্ট চ্যাক করে দেখছি বাড়ি থেকে কোনো কল আসেনি, দুটা হিন্দু ছেলে-মেয়ের নামে কল আসছে, একজনের নাম চৈতালী আরেকজনের নাম অনুপম রায়, ওরা কারা আম্মু ?'
- 'ওরা নাদিয়ার ক্লাসমেট, আচ্ছা বাবা এখন ফোন রাখছি।'
হাবিব ফোন রেখে ভাবছে, চৈতালী আর অনুপমের কথা বলতেই উনি তড়িঘড়ি করে ফোন কেটে দিলেন নাকি ? উনি কি এব্যাপারে আর কথা বাড়াতে চান নি ? চৈতালীর সাথে ফোনে কথা বলার বিষয়টা নাদিয়াও গোপন রাখছিল, ওরা আমার কাছ থেকে কিছু একটা গোপন রাখছে, কিন্তু চৈতালী নাদিয়াকে লাস্ট ম্যাসেজ দিয়েছিল, 'জবিদাস আর নেই নাদিয়া।' চৈতালী যদি নাদিয়ার ক্লাসমেট হয়, জবিদাস কে ? জবিদাস আর নেই মানে, জবিদাস হয়তো মারা গেছে, কিন্তু এটা আমার কাছে নাদিয়া গোপন রাখলো কেন ! চৈতালীর নাম্বার যেহেতু সেভ করে রেখেছিলাম তাকে ফোন করে দেখা যেতে পারে। হাবিবের হঠাৎ খেয়াল পড়লো নাদিয়া রান্নাঘরে নেই। খুজতে খুজতে গিয়ে দেখলো রুমের ফেইচওয়াশ, ক্রিম, যা কিছু আছে সব বারান্দায় নিয়ে নাদিয়া একটা গাছের দিকে ছুড়ে মারছে, আর বিড়বিড় করে বলছে; 'যা, যা এখান থেকে।'
হাবিব নাদিয়াকে গিয়ে ধরতেই আচমকা সে ভয় পেয়ে গেলো, 'আর বলতে লাগলো, ছাড়, ছাড় আমাকে, হাবিব কই তুমি, আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, কই তুমি হাবিব।'
- হাবিব বুঝতে পারছে, নাদিয়া তাকে এখন চিনতে পারছেনা, তাই হাত ছেড়ে দিয়ে বলল 'আরে আমিই তো হাবিব ।'
- নাদিয়া হাবিবের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়লো, হাবিব ধীরে ধীরে নাদিয়াকে কোলে করে বিছানায় এনে রাখলো।
নাদিয়া ঘুমিয়ে গেছে, হাবিব ভুতপ্রেতে বিশ্বাস না করলে ও এখন ভাবছে নাদিয়াকে ভুতপ্রেতে ধরলো নাকি ?
কিন্তু এখন তার মাথায় ঘুরছে চৈতালী আর জবিদাসের ব্যাপারটা, এদের বিষয়টা কেন তারা মা-মেয়ে দু'জন আমার কাছ থেকে আড়াল রাখতে চাচ্ছে !
চৈতালীকে কল দিতে হবে, নাদিয়াকে ঘুমে দেখে হাবিব বারান্দায় গেলো, চৈতালীর নাম্বার বের করে কল দিলো, কিন্তু কল বাজতে বাজতে কেটে আসছে, টানা চারটা কল দেবার পর একটা ম্যাসেজ আসলো, 'কে আপনি ? আমি অপরিচিত কারো নাম্বার রিসিভ করিনা।'
-'আমি হাবিব, নাদিয়ার বর।'
-'ও আচ্ছ, এখন দেন কল।'
হাবিব আবার কল দিলো।
কল রিসিভ করে ওপাশ থেকে এক যুবতী মেয়ে বলল, 'আদাব দাদা, কেমন আছেন ?'
-'ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন, আমি যদি ভুল না হই, তাহলে আপনি নিশ্চয় চৈতালী।'
-' হ্যাঁ দাদা আমি চৈতালী, কিন্তু আপনি আমার নাম্বার সংগ্রহ করে কল দেবার কারণ কি ? আমাকে চেনারও তো কথা না।'
-'একটা বিষয় জানার জন্য কল দিলাম, আমাকে একটু বলবেন জবিদাস কে ?
- 'নাদিয়া কি আপনাকে জবিদাসের কথা কিছু বলছে ?'
হাবিব বুঝতে পারলো মেয়েটা খুব চালাক, নাদিয়া যা বলছে সেটাই আমাকে বলতে চাচ্ছে।
হাবিব কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে বলল, নাদিয়াকে ওসব জিজ্ঞেস করিনি, আমি ওর ম্যাসেঞ্জারে দেখলাম আপনি একটা ম্যাসেজ করছেন 'জবিদাস আর নেই।'
- 'জবিদাস আমাদের ক্লাসমেট সে গতকাল মারা গেছে।'
- 'তোমাদের ক্লাসমেট মানে ছেলেটার বয়স তেমন বেশি ছিলোনা, কিভাবে মারা গেলো ?'
- চৈতালী প্রশ্নকে এড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল 'নাদিয়া কেমন আছে দাদা ?'
হাবিব বুঝতে পারলো চৈতালী এব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে।
-'জবিদাস কিভাবে মারা গেলো, সেটা বললেন না যে চৈতালী ?'
-' আব্বু ডাকছেন আমার ফোন রাখতে হবে দাদা, বলেই ফোন কেটে দিলো চৈতালী।'
হাবিব ভেবে পাচ্ছেনা, নাদিয়া এবং ওর আম্মু চৈতালীর ব্যাপারটা আড়াল করলেন, এখন জবিদাসের ব্যাপারটা চৈতালী আড়াল রাখলো। এখানে রহস্য কি ? নাদিয়াদের গ্রাম "হরিপুর" এ আমার যেতে হবে, জানতে হবে জবিদাস কিভাবে মারা গেছে, এর মারা যাওয়াটা আমার কাছে গোপন রাখার কারণ কি! নাদিয়ার সাথে জবিদাসের কিরকম সম্পর্ক ছিলো !
কিন্তু নাদিয়াকে এই অবস্থায় এখানে রেখে কিভাবে যাবো।
আজ শুক্রবার অফিস নেই, নাদিয়াকে কি বলে বাহিরে যাবো, সেটাও ভাবার বিষয়।
হাবিব নাদিয়াদের বাসায় কল দিলো, ফোন ধরলেন নাদিয়ার আম্মু।
-'হ্যালো আসসালামু আলাইকুম আম্মু।'
-'ওয়ালাইকুম আসসালাম, বাবা এখন নাদিয়ার অবস্থা কিরকম ?'
-'আম্মু নাদিয়ার অবস্থা তো ধীরে ধীরে আরো খারাপ হচ্ছে, প্লিজ আপনারা কেউ আসেন, আমার খুব ভয় করছে।
-'বাবা তোমার বাড়িতে জানাও নি ?'
-'না আম্মু, সবাইকে জানাতে চাচ্ছি না।'
দুপুরে নাদিয়ার আম্মু আসলেন, হাবিব তাদেরকে বলল, আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি, সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরবো।
হাবিব বাইক নিয়ে হেলমেট পড়ে হরিপুর রওয়ানা দিলো, যাতে কেউ সহজে চিনতে না পারে।
হরিপুর হিন্দু পাড়ার দিকে ঢুকলো হাবিব, সেখানে রাস্তার মোড়ে একজন বৃদ্ধলোক পেয়ে হাবিব জিজ্ঞেস করলো জবিদাসকে চিনেন আংকেল ?'
- ' হ চিনি, গতকাল ছেলেটা মারা গেছে।'
-' কিভাবে মারা গেলো আংকেল ?'
- বৃদ্ধলোক ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল, 'আপনি আইনের নাকি নিউজের লোক বলেন তো, কথাটা বলেই লোকটা হাটা শুরু করলো।'
এভাবে কয়েকজন মানুষকে জিজ্ঞেস করার পর কেউ পরিষ্কার কিছু বলেনি, আইনের লোক মনে করে সবাই এড়িয়ে যাচ্ছে।
শেষমেশ একটা স্কুল ড্রেস পড়া বাচ্চা ছেলেকে পেয়ে হাবিব জিজ্ঞেস করলো, 'জবিদাস কে চেনো বাবু ?'
-'হ চিনি, কাইলকা সবাই আগুন দিছে ভাইয়াকে।'
-'তুমি কি জানো জবিদাস কিভাবে মারা গেছিল।'
-'গলায় দড়ি দিয়ে জবিদাস ভাইয়া জিব্বা বের করে মারা গেছে।'
সাথে সাথে ছেলেটাকে একজন মুরুব্বী ডেকে নিয়ে গেলো, মনে হচ্ছে মুরুব্বী এতক্ষণ নজর রাখছিলো হাবিবের দিকে।
সন্ধ্যা হবার আর বেশি বাকি নেই, বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে, হাবিব ভাবছে জবিদাস গলায় ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করলো কেন ? আর এটা চৈতালী এবং তারা মা-মেয়ে আমার কাছে গোপন রাখলো কেন ?
এরিমধ্যে ফোন বেজে উঠলো, ফোন বের করে দেখলো বাসা থেকে কল আসছে।
-'হ্যালো, নাদিয়া।'
-'বাবা আমি নাদিয়ার আম্মু বলছি, তুমি কই তাড়াতাড়ি বাসায় আসো, নাদিয়া খুব পাগলামী করছে, কিছুক্ষণ পর পর অজ্ঞান হয়ে যায় আবার বমি ও করে।'
হাবিব তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলো, এতক্ষণে নাদিয়া ঘুমিয়ে গেছে, হাবিব জবিদাসের কথা তার শাশুড়িকে বলবে কিনা ভাবছে। না থাক, তারা যেহেতু বিষয়টা আড়াল রাখতে চাচ্ছে, আড়াল থাক।
নাদিয়ার আম্মু আমতা আমতা করে বললেন, 'বাবা, নাদিয়ার অবস্থা তো দেখলাম খুব খারাপ, ওরে মনেহয় ভুতপ্রেত কিছু একটা ধরছে, আমি বলি কি আমাদের হরিপুরে একজন হিন্দু কবিরাজ আছে। ভুতপ্রেত এবং আত্মা তাড়ানোর জন্য উনার অনেক নামডাক, নাদিয়াকে একদিন সেখানে নিয়ে যাই।'
-' কথাটা শুনে হাবিবের মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো, আশেপাশে এতো মুসলমান কবিরাজ থাকতে উনি হিন্দু কবিরাজে যেতে চাচ্ছেন কেন ?
নাদিয়াকে তো জিনে ও ধরতে পারে, উনার মাথায় আত্মা বা ভুতপ্রেত আসলো কেন ?
তাছাড়া নাদিয়াকে যদি ভুতপ্রেত বা আত্মা ধরে থাকে, তাহলে সে নামাজ পড়বে কেন ? জিনে ধরলে নামাজ পড়তে পারে।
হাবিব তার শাশুড়ি আম্মুকে স্বাভাবিকভাবে বলল, 'আচ্ছা আম্মু, কাল সকালে আমরা হরিপুর যাচ্ছি।'
হাবিব তার রুমে চলে গেলো, নাদিয়া ঘুমোচ্ছে, নতুন বউ, দু'দিন হলো কাছেই যেতে পারছেনা, হাবিব নাদিয়ার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। অসম্ভব সুন্দর লাগছে নাদিয়াকে, নাদিয়ার কপালে আলতো করে একটা চুমো দিলো।
নাদিয়ার আচমকা ঘুম ভেঙে গেলো।
-হাবিবের দিকে তাকিয়ে খুব খুশী হয়ে বলল,'তুমি চলে আসছো, কথাটা বলে হাবিবের এক হাত ধরে আবার বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে পাড়লো।'
নাদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে হাবিব, হঠাৎ নাদিয়া ঘুমের মধ্য ওপাশ ওপাশ করতে শুরু করলো, দেখে মনে হচ্ছে সে খুব কষ্ট পাচ্ছে, আম্মু আম্মু বলে হাবিব ডাকতে শুরু করলো, নাদিয়ার আম্মু তড়িঘড়ি করে রুমে আসলেন, এসে দেখলেন নাদিয়ার মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে ।
হাবিব ভাবছে, নাদিয়া হয়তো স্বপ্নে কোনোকিছু দেখে ভয় পাচ্ছে, ওর ঘুম ভাঙানো উচিৎ।
নাদিয়াকে ডাকতে শুরু করলো হাবিব, কিছুক্ষণ পর নাদিয়া চোখ খুলেই হাবিবের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো। হাবিব বুঝতে পারছে তাকে যেকোনো কারণে চিনতে পারছেনা নাদিয়া, তার চেহারায় অন্যকেউকে দেখতে পাচ্ছে হয়তো।
-নাদিয়ার আম্মু বললেন, 'বাবা, আমি আজ নাদিয়ার কাছে থাকি, তুমি বরং আমার রুমে চলে যাও।'
-'আজকেও নাদিয়ার থেকে দূরে থাকতে হবে, এটা ভেবে হাবিবের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।'
হাবিব রুমে এসে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছে, নাদিয়াকে ভুতপ্রেত বা আত্মা ধরতে পারে আবার নাদিয়া নামাজ পড়ে, জবিদাস ফাস লেগে মারা গেলো ! এটা সবাই আবার কাছ থেকে গোপন রাখছে, রহস্যটা কি ?
- চলবে...
.
নাদিয়াকে বিছানায় না পেয়ে হাবিব চমকে উঠলো, চারদিকে মুয়াজ্জিনের কন্ঠে ভেসে আসছে, 'আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম'।
হাবিব কিছুক্ষণ পর আন্দাজ করলো বাথরুমে পানির শব্দ, সেখানে গিয়ে দেখলো পানির ট্যাপ ছাড়া, কিন্তু নাদিয়া নেই।
হঠাৎ রান্নাঘর থেকে একটা আওয়াজ আসলো, 'আমি এখানে'।
হাবিব চমকে উঠলো, রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো নাদিয়া সেখানে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ পড়ছে। নাদিয়াকে পেয়ে হাবিব একটু স্বস্তিবোধ করলো, রান্নাঘরে একটা চেয়ারে বসে হাবিব সিগারেট বের করে আগুন ধরালো, এতক্ষণ পর মনে পড়লো তার ঘুম ভেঙেছে নাদিয়ার বিড়বিড় করে উল্টা-পাল্টা শব্দ শুনে, 'ছেড়ে দিলাম, আমি হাবিবকে ছেড়ে দিলাম'। সে ভেবে পাচ্ছে না সেটা ভুল শুনছে নাকি সত্য শুনছে, সত্য হবার কথা, আজ সারারাত নাদিয়া যেসব অস্বাভাবিক আচরণ করছে, তাতে সত্যিই শুনছে, কিন্তু নাদিয়া রুমে নামাজ না পড়ে রান্নাঘরে কেন ? এতক্ষণে নাদিয়ার নামাজ শেষ হয়ে গেছে।
নাদিয়া স্বাভাবিকভাবে হাবিবের দিকে তাকালো, তারপর জায়নামাজ তুলতে তুলতে বলল, 'হাবিব তোমাকে চা করে দেই ?'
নাদিয়ার স্বাভাবিকভাবে কথা বলা দেখে হাবিবের এখন রাগ হচ্ছে , সারারাত কি সব আজগুবি কান্না শুনে ভয় পেলো, আমাকে কাছে যেতে দিলো না, কাছে গেলে নাকি রান্নাঘরের ওদিকে কে আরও বেশি কাদে, এখন সব ভুলে গেছে, সারারাত ঘুমাতে পারিনি ওর যন্ত্রনায়।
হাবিব কিছুটা বিরক্তির গলায় বলল, 'তুমি রান্নাঘরে নামাজ পড়তে আসছো কেন ?'
নাদিয়া সেই চেনাজানা ভঙ্গিতে বলল, 'তুমি ঘুমোচ্ছিলে তাই ভাবলাম রুমের বাতি জ্বালিয়ে নামাজ পড়লে ডিস্টার্ব হবে।'
-কিন্তু সারাটা রাত তুমি বলছিলে রান্নাঘরের দিকে কে জানি কাদে, আমি তোমার কাছে গেলে আমাকে মেরে ফেলবে বলে আমাকে দূরে থাকতে বলছিলে, এসব কি তোমার এখন মনে আছে ?
-নাদিয়া খুব আগ্রহী হয়ে বলল, 'তাই নাকি ? আমি এসব বলছি নাকি ? আমার তো কিছু মনে পড়ছে না, তোমার মাথা ঠিক আছে তো হাবিব ?'
নাদিয়া এমনভাবে কথা বলছে এখন হাবিবের নিজের কাছে মনে হচ্ছে সে নিজেই হয়তো এতকিছু স্বপ্নে দেখছে, তার নিজেরই হয়তো মাথা ঠিক নেই।
নাদিয়া কাছে এসে বলল, 'কি হইছে তোমার ? কি চিন্তা করছো ?'
-'না, কিছু না, তুমি চা দাও তো।'
একটু পর ফোন বেজে উঠলো, হাবিব ফোন হাতে নিয়ে দেখলো নাদিয়ার বাড়ি থেকে কল আসছে, তার এতক্ষণে মনে পড়লো রাতে নাদিয়ার অস্বাভাবিক আচরণ দেখে সে নাদিয়ার বাসায় কল দিয়েছিল। হাবিব ভাবছে নাদিয়ার যেহেতু কিছু মনে নেই, তাহলে ওর সামনে কল ধরা উচিৎ হবেনা। তাই বাহিরে গিয়ে কল ধরলো।
-'হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম'।
-'ওয়ালাইকুম আসসালাম, কি বাবা এত রাতে কল করছিলে যে ! কোনো সমস্যা বাবা ?'
-'হ্যা আম্মু, সমস্যাটা হচ্ছে নাদিয়া মাঝরাতে হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠলো, তারপর একবার বলে রান্নাঘরের ওদিকে কে কাদে, আরেকবার বলে হাসে, আরেকবার বলে ছাদে কে জানি পা টেনে টেনে হাটছে, তাছাড়া রান্নাঘরে একবার অজ্ঞান হয়েও পড়েছিল , তাই ভয় পেয়ে কল দিয়েছিলাম।'
-'কি বলো বাবা ! এতকিছু হয়ে গেলো ? কখন থেকে এমন করছিলো ?'
-'হঠাৎ করে মাঝরাতে এমন করছিল, কিন্তু একবার সন্ধ্যায় ওর একটা কল আসে, এরপর দেখলাম ওর মন খারাপ, জিজ্ঞেস করলাম কার কল ছিলো, ও বলল বাড়ি থেকে।'
-'না বাড়ি থেকে তো কেউ কল দেয়নি।'
- হ্যাঁ , আমি ওর কললিস্ট চ্যাক করে দেখছি বাড়ি থেকে কোনো কল আসেনি, দুটা হিন্দু ছেলে-মেয়ের নামে কল আসছে, একজনের নাম চৈতালী আরেকজনের নাম অনুপম রায়, ওরা কারা আম্মু ?'
- 'ওরা নাদিয়ার ক্লাসমেট, আচ্ছা বাবা এখন ফোন রাখছি।'
হাবিব ফোন রেখে ভাবছে, চৈতালী আর অনুপমের কথা বলতেই উনি তড়িঘড়ি করে ফোন কেটে দিলেন নাকি ? উনি কি এব্যাপারে আর কথা বাড়াতে চান নি ? চৈতালীর সাথে ফোনে কথা বলার বিষয়টা নাদিয়াও গোপন রাখছিল, ওরা আমার কাছ থেকে কিছু একটা গোপন রাখছে, কিন্তু চৈতালী নাদিয়াকে লাস্ট ম্যাসেজ দিয়েছিল, 'জবিদাস আর নেই নাদিয়া।' চৈতালী যদি নাদিয়ার ক্লাসমেট হয়, জবিদাস কে ? জবিদাস আর নেই মানে, জবিদাস হয়তো মারা গেছে, কিন্তু এটা আমার কাছে নাদিয়া গোপন রাখলো কেন ! চৈতালীর নাম্বার যেহেতু সেভ করে রেখেছিলাম তাকে ফোন করে দেখা যেতে পারে। হাবিবের হঠাৎ খেয়াল পড়লো নাদিয়া রান্নাঘরে নেই। খুজতে খুজতে গিয়ে দেখলো রুমের ফেইচওয়াশ, ক্রিম, যা কিছু আছে সব বারান্দায় নিয়ে নাদিয়া একটা গাছের দিকে ছুড়ে মারছে, আর বিড়বিড় করে বলছে; 'যা, যা এখান থেকে।'
হাবিব নাদিয়াকে গিয়ে ধরতেই আচমকা সে ভয় পেয়ে গেলো, 'আর বলতে লাগলো, ছাড়, ছাড় আমাকে, হাবিব কই তুমি, আমাকে নিয়ে যাচ্ছে, কই তুমি হাবিব।'
- হাবিব বুঝতে পারছে, নাদিয়া তাকে এখন চিনতে পারছেনা, তাই হাত ছেড়ে দিয়ে বলল 'আরে আমিই তো হাবিব ।'
- নাদিয়া হাবিবের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়লো, হাবিব ধীরে ধীরে নাদিয়াকে কোলে করে বিছানায় এনে রাখলো।
নাদিয়া ঘুমিয়ে গেছে, হাবিব ভুতপ্রেতে বিশ্বাস না করলে ও এখন ভাবছে নাদিয়াকে ভুতপ্রেতে ধরলো নাকি ?
কিন্তু এখন তার মাথায় ঘুরছে চৈতালী আর জবিদাসের ব্যাপারটা, এদের বিষয়টা কেন তারা মা-মেয়ে দু'জন আমার কাছ থেকে আড়াল রাখতে চাচ্ছে !
চৈতালীকে কল দিতে হবে, নাদিয়াকে ঘুমে দেখে হাবিব বারান্দায় গেলো, চৈতালীর নাম্বার বের করে কল দিলো, কিন্তু কল বাজতে বাজতে কেটে আসছে, টানা চারটা কল দেবার পর একটা ম্যাসেজ আসলো, 'কে আপনি ? আমি অপরিচিত কারো নাম্বার রিসিভ করিনা।'
-'আমি হাবিব, নাদিয়ার বর।'
-'ও আচ্ছ, এখন দেন কল।'
হাবিব আবার কল দিলো।
কল রিসিভ করে ওপাশ থেকে এক যুবতী মেয়ে বলল, 'আদাব দাদা, কেমন আছেন ?'
-'ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন, আমি যদি ভুল না হই, তাহলে আপনি নিশ্চয় চৈতালী।'
-' হ্যাঁ দাদা আমি চৈতালী, কিন্তু আপনি আমার নাম্বার সংগ্রহ করে কল দেবার কারণ কি ? আমাকে চেনারও তো কথা না।'
-'একটা বিষয় জানার জন্য কল দিলাম, আমাকে একটু বলবেন জবিদাস কে ?
- 'নাদিয়া কি আপনাকে জবিদাসের কথা কিছু বলছে ?'
হাবিব বুঝতে পারলো মেয়েটা খুব চালাক, নাদিয়া যা বলছে সেটাই আমাকে বলতে চাচ্ছে।
হাবিব কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে বলল, নাদিয়াকে ওসব জিজ্ঞেস করিনি, আমি ওর ম্যাসেঞ্জারে দেখলাম আপনি একটা ম্যাসেজ করছেন 'জবিদাস আর নেই।'
- 'জবিদাস আমাদের ক্লাসমেট সে গতকাল মারা গেছে।'
- 'তোমাদের ক্লাসমেট মানে ছেলেটার বয়স তেমন বেশি ছিলোনা, কিভাবে মারা গেলো ?'
- চৈতালী প্রশ্নকে এড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করল 'নাদিয়া কেমন আছে দাদা ?'
হাবিব বুঝতে পারলো চৈতালী এব্যাপারটা এড়িয়ে যেতে চাচ্ছে।
-'জবিদাস কিভাবে মারা গেলো, সেটা বললেন না যে চৈতালী ?'
-' আব্বু ডাকছেন আমার ফোন রাখতে হবে দাদা, বলেই ফোন কেটে দিলো চৈতালী।'
হাবিব ভেবে পাচ্ছেনা, নাদিয়া এবং ওর আম্মু চৈতালীর ব্যাপারটা আড়াল করলেন, এখন জবিদাসের ব্যাপারটা চৈতালী আড়াল রাখলো। এখানে রহস্য কি ? নাদিয়াদের গ্রাম "হরিপুর" এ আমার যেতে হবে, জানতে হবে জবিদাস কিভাবে মারা গেছে, এর মারা যাওয়াটা আমার কাছে গোপন রাখার কারণ কি! নাদিয়ার সাথে জবিদাসের কিরকম সম্পর্ক ছিলো !
কিন্তু নাদিয়াকে এই অবস্থায় এখানে রেখে কিভাবে যাবো।
আজ শুক্রবার অফিস নেই, নাদিয়াকে কি বলে বাহিরে যাবো, সেটাও ভাবার বিষয়।
হাবিব নাদিয়াদের বাসায় কল দিলো, ফোন ধরলেন নাদিয়ার আম্মু।
-'হ্যালো আসসালামু আলাইকুম আম্মু।'
-'ওয়ালাইকুম আসসালাম, বাবা এখন নাদিয়ার অবস্থা কিরকম ?'
-'আম্মু নাদিয়ার অবস্থা তো ধীরে ধীরে আরো খারাপ হচ্ছে, প্লিজ আপনারা কেউ আসেন, আমার খুব ভয় করছে।
-'বাবা তোমার বাড়িতে জানাও নি ?'
-'না আম্মু, সবাইকে জানাতে চাচ্ছি না।'
দুপুরে নাদিয়ার আম্মু আসলেন, হাবিব তাদেরকে বলল, আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি, সন্ধ্যার আগেই বাসায় ফিরবো।
হাবিব বাইক নিয়ে হেলমেট পড়ে হরিপুর রওয়ানা দিলো, যাতে কেউ সহজে চিনতে না পারে।
হরিপুর হিন্দু পাড়ার দিকে ঢুকলো হাবিব, সেখানে রাস্তার মোড়ে একজন বৃদ্ধলোক পেয়ে হাবিব জিজ্ঞেস করলো জবিদাসকে চিনেন আংকেল ?'
- ' হ চিনি, গতকাল ছেলেটা মারা গেছে।'
-' কিভাবে মারা গেলো আংকেল ?'
- বৃদ্ধলোক ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলল, 'আপনি আইনের নাকি নিউজের লোক বলেন তো, কথাটা বলেই লোকটা হাটা শুরু করলো।'
এভাবে কয়েকজন মানুষকে জিজ্ঞেস করার পর কেউ পরিষ্কার কিছু বলেনি, আইনের লোক মনে করে সবাই এড়িয়ে যাচ্ছে।
শেষমেশ একটা স্কুল ড্রেস পড়া বাচ্চা ছেলেকে পেয়ে হাবিব জিজ্ঞেস করলো, 'জবিদাস কে চেনো বাবু ?'
-'হ চিনি, কাইলকা সবাই আগুন দিছে ভাইয়াকে।'
-'তুমি কি জানো জবিদাস কিভাবে মারা গেছিল।'
-'গলায় দড়ি দিয়ে জবিদাস ভাইয়া জিব্বা বের করে মারা গেছে।'
সাথে সাথে ছেলেটাকে একজন মুরুব্বী ডেকে নিয়ে গেলো, মনে হচ্ছে মুরুব্বী এতক্ষণ নজর রাখছিলো হাবিবের দিকে।
সন্ধ্যা হবার আর বেশি বাকি নেই, বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে, হাবিব ভাবছে জবিদাস গলায় ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করলো কেন ? আর এটা চৈতালী এবং তারা মা-মেয়ে আমার কাছে গোপন রাখলো কেন ?
এরিমধ্যে ফোন বেজে উঠলো, ফোন বের করে দেখলো বাসা থেকে কল আসছে।
-'হ্যালো, নাদিয়া।'
-'বাবা আমি নাদিয়ার আম্মু বলছি, তুমি কই তাড়াতাড়ি বাসায় আসো, নাদিয়া খুব পাগলামী করছে, কিছুক্ষণ পর পর অজ্ঞান হয়ে যায় আবার বমি ও করে।'
হাবিব তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরলো, এতক্ষণে নাদিয়া ঘুমিয়ে গেছে, হাবিব জবিদাসের কথা তার শাশুড়িকে বলবে কিনা ভাবছে। না থাক, তারা যেহেতু বিষয়টা আড়াল রাখতে চাচ্ছে, আড়াল থাক।
নাদিয়ার আম্মু আমতা আমতা করে বললেন, 'বাবা, নাদিয়ার অবস্থা তো দেখলাম খুব খারাপ, ওরে মনেহয় ভুতপ্রেত কিছু একটা ধরছে, আমি বলি কি আমাদের হরিপুরে একজন হিন্দু কবিরাজ আছে। ভুতপ্রেত এবং আত্মা তাড়ানোর জন্য উনার অনেক নামডাক, নাদিয়াকে একদিন সেখানে নিয়ে যাই।'
-' কথাটা শুনে হাবিবের মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো, আশেপাশে এতো মুসলমান কবিরাজ থাকতে উনি হিন্দু কবিরাজে যেতে চাচ্ছেন কেন ?
নাদিয়াকে তো জিনে ও ধরতে পারে, উনার মাথায় আত্মা বা ভুতপ্রেত আসলো কেন ?
তাছাড়া নাদিয়াকে যদি ভুতপ্রেত বা আত্মা ধরে থাকে, তাহলে সে নামাজ পড়বে কেন ? জিনে ধরলে নামাজ পড়তে পারে।
হাবিব তার শাশুড়ি আম্মুকে স্বাভাবিকভাবে বলল, 'আচ্ছা আম্মু, কাল সকালে আমরা হরিপুর যাচ্ছি।'
হাবিব তার রুমে চলে গেলো, নাদিয়া ঘুমোচ্ছে, নতুন বউ, দু'দিন হলো কাছেই যেতে পারছেনা, হাবিব নাদিয়ার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। অসম্ভব সুন্দর লাগছে নাদিয়াকে, নাদিয়ার কপালে আলতো করে একটা চুমো দিলো।
নাদিয়ার আচমকা ঘুম ভেঙে গেলো।
-হাবিবের দিকে তাকিয়ে খুব খুশী হয়ে বলল,'তুমি চলে আসছো, কথাটা বলে হাবিবের এক হাত ধরে আবার বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে পাড়লো।'
নাদিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে হাবিব, হঠাৎ নাদিয়া ঘুমের মধ্য ওপাশ ওপাশ করতে শুরু করলো, দেখে মনে হচ্ছে সে খুব কষ্ট পাচ্ছে, আম্মু আম্মু বলে হাবিব ডাকতে শুরু করলো, নাদিয়ার আম্মু তড়িঘড়ি করে রুমে আসলেন, এসে দেখলেন নাদিয়ার মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছে ।
হাবিব ভাবছে, নাদিয়া হয়তো স্বপ্নে কোনোকিছু দেখে ভয় পাচ্ছে, ওর ঘুম ভাঙানো উচিৎ।
নাদিয়াকে ডাকতে শুরু করলো হাবিব, কিছুক্ষণ পর নাদিয়া চোখ খুলেই হাবিবের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো। হাবিব বুঝতে পারছে তাকে যেকোনো কারণে চিনতে পারছেনা নাদিয়া, তার চেহারায় অন্যকেউকে দেখতে পাচ্ছে হয়তো।
-নাদিয়ার আম্মু বললেন, 'বাবা, আমি আজ নাদিয়ার কাছে থাকি, তুমি বরং আমার রুমে চলে যাও।'
-'আজকেও নাদিয়ার থেকে দূরে থাকতে হবে, এটা ভেবে হাবিবের মনটা খারাপ হয়ে গেলো।'
হাবিব রুমে এসে শুয়ে শুয়ে চিন্তা করছে, নাদিয়াকে ভুতপ্রেত বা আত্মা ধরতে পারে আবার নাদিয়া নামাজ পড়ে, জবিদাস ফাস লেগে মারা গেলো ! এটা সবাই আবার কাছ থেকে গোপন রাখছে, রহস্যটা কি ?
- চলবে...
Abid faraje, Ayrin kaTun, Sk nadim, Hasibul hasan santo, Abul basar, Santa akter, Sk sagor and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Sinthia Debnathনবাগত
- Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1307
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-04
Re: অদ্ভুত কান্না
Fri Jun 04, 2021 10:21 pm
(৩য়_পর্ব )
.
বিজ্ঞানমনষ্ক হাবিব ক'দিন আগেও ভুতপ্রেতে বিশ্বাস করতো না ! অথচ নাদিয়ার অস্বাভাবিক কার্যকলাপে সে আজ ভুতপ্রেত নিয়ে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের মাঝামাঝি বসবাস করছে, হাবিবের শাশুড়ি রেহানা বেগমের উদ্যোগে আজ তারা রওয়ানা দিচ্ছে হরিপুর, উদ্দেশ্যে ভুতপ্রেত-আত্মা তাড়ানোর কবিরাজ নির্মুল বিশ্বাসের কাছে নাদিয়াকে নিয়ে যাওয়া।
রেহানা বেগমের মাথায় কবিরাজ ঢুকছে, আর হাবিবের মাথায় ক'দিন যাবত ঢুকে আছে, যেদিন রাতে নাদিয়া রান্নাঘরে কান্নার শব্দ শুনতে পেলো, সেদিন সন্ধ্যায় রান্নাঘরে নাদিয়া একা ছিলো, তখন চৈতালী তাকে ফোন করে জবিদাসের ফাস লেগে মরে যাবার কথা বলেছিল, আমি যখন রান্নাঘরে গেলাম, গিয়ে দেখলাম নাদিয়াকে অস্বাভাবিক দেখাচ্ছে, যেটাকে তখন আমি মন খারাপ ধরেছিলাম, মন খারাপ দেখে আমি নাদিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, কে ফোন দিয়েছিল ? নাদিয়া তখন চৈতালীর কথা আড়াল রেখে বললো, 'বাড়ি থেকে কল আসছে'। তখন তাকে এতো অস্বাভাবিক দেখাচ্ছিল যে, আমি উল্টা জিজ্ঞেস করার সাহস পাইনি, 'কি কথা হলো যার কারণে তোমার মন খারাপ ?'
এদিকে রেহানা বেগম এবং চৈতালীকে যখন আমি জিজ্ঞেস করলাম অল্পবয়সী জবিদাস কিভাবে মারা গেলো ? তারা তখন গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাওয়ার ব্যাপারটা আড়াল রাখার জন্য প্রশ্নটাই এড়িয়ে গেলো, কিন্তু হরিপুর গিয়ে জানলাম জবিদাস গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করছে, জবিদাস কেন আত্মহত্যা করলো সেটা এখনও জানা হয়নি, সেটা আমার জানতে হবে,
হরিপুর যাবার জন্য তারা একটা সিএনজি ভাড়া নিলো, নাদিয়া এখন খুব স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে, দেখে কেউ বলতে পারবেনা নাদিয়া মানসিকভাবে অসুস্থ।
কবিরাজ নির্মুল বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে গাড়ী থামলো, রেহানা বেগম গিয়ে দরজার কড়া নাড়াচ্ছেন, একজন খাটো করে কালো লোক দরজাটা খুলে দিলেন, উনার গায়ে কোনো কাপড় নেই পরনে শুধু একটা সাদা ধবধবে লুঙ্গী আছে, মাথার মধ্যে একটা লাল সুতো বাধা।
উনি দরজা খুলে বললেন, আপনারা ঐ ঘরটায় গিয়ে বসেন।'
হাবিব বুঝতে পারলো, এই ঘরে নির্মুল বিশ্বাস রুগী দেখেন।
ঘরের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের অদ্ভুত অদ্ভুত গাছ ।
হাবিব রেহানা বেগমকে বলল, 'কবিরাজ কই ?'
রেহানা বেগম মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, 'আরে যে দরজা খুলে দিলো উনিই কবিরাজ নির্মুল বিশ্বাস ।'
হাবিবের এখানে একদম ভালো লাগছেনা, কিরকম অন্য গ্রহে চলে আসছে মনে হচ্ছে।
এতক্ষণে নির্মুল বিশ্বাস আসলেন, আসার পর উনার বসার একপাশে আতর জ্বালাতে জ্বালাতে বললেন, 'আপনারা 'খাঁন' বাড়ি থেকে এসছেন মনে হয়।'
-রেহানা বেগম বললেন, 'হ্যা আমরা খাঁন বাড়ি থেকে এসছি।'
-'খান সাহেব নিশ্চয় জানেন না আপনারা একজন হিন্দু কবিরাজের কাছে আসছেন।'
- 'জ্বী উনি জানেন না।'
হুম জানলে আপনাদের আসতে দিতেন না, এখন বলেন কেন এসছেন ?
-রেহানা বেগম বলতে শুরু করলেন 'আমার মেয়েটা কিছুদিন যাবত মাঝরাতে কান্না শুনে ঘুম থেকে উঠে, মাঝেমাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়, রান্নাঘরে গেলে নাকি শুনতে পায় কে ছাদে পা টেনে টেনে হাটছে, জ্বামাই বাবাকে কাছে যেতে দেয়না, গেলে নাকি জ্বামাইকে মেরে ফেলবে, কিছুদিন যাবত সে এরকম অবস্থা করছে।
-নির্মুল বিশ্বাস মুচকি হেসে বললেন, 'রেহানা বেগম, আমার ধারণা, আপনি জানেন আপনার মেয়েটার কেন এমন হচ্ছে, না হলে আপনি আমার কাছে নিয়ে আসতেন না, আপনার মেয়ের নাম নাদিয়া, তাই তো ?'
- ' হ্যাঁ ওর নাম নাদিয়া ।'
-'জবিদাস যেদিন আত্মহত্যা করছে সেদিন থেকে আপনার মেয়ে এরকম করছে, এটা যে আত্মার প্রতিশোধ সেটা তো স্পষ্ট বুঝতে পারছেন রেহানা বেগম, জবিদাস কেন মারা গেছে এলাকার সবাই এখন কমবেশি জানে।'
-'রেহানা বেগম কিছুটা বিব্রতবোধ করলেন, তারপর বললেন, 'কবিরাজ সাহেব, আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়নি, ওর নাম হাবিব, আমার মেয়ের জামাই।'
হাবিবের মাথাটা ঝিমঝিম করা শুরু হয়ে গেলো, একটু আগে সে কি শুনলো, কবিরাজ কি বলতে চাইলেন, 'জবিদাস যেদিন আত্মহত্যা করছে, সেদিন থেকে নাদিয়ার সমস্যা দেখা দিছে, সেটা তিনি বলছেন আত্মার প্রতিশোধ , সাথে সাথে শাশুড়ি আম্মু বিষয়টা আমার কাছ থেকে আড়াল রাখার জন্য কৌশলে কবিরাজকে জানিয়ে দিলেন আমাদের জামাই সাথে আছে। রহস্যটা কি ? তাছাড়া জবিদাসের আত্মা কেন নাদিয়ার উপর প্রতিশোধ নিবে! হাবিব অন্যমনষ্ক হয়ে এসব ভাবছে।
রেহানা বেগম কবিরাজকে বললেন আপনার নাম্বারটা দেন, প্রয়োজনে কল দেবো, এখন আমরা উঠছি।
তারা বাড়ির পথে রওয়ানা দিলো, হাবিব তাকিয়ে দেখলো, নাদিয়ার চোখমুখে ভয়ের ছাপ ভেসে উঠছে।
নাদিয়া কি এমন করলো, যার কারণে জবিদাসের আত্মা নাদিয়ার উপর শাস্তি নিচ্ছে, তাছাড়া মৃত মানুষের আত্মা আবার প্রতিশোধ নিতে পারে নাকি ? কীসব আজগুবি কথাবার্তা এসব ! নাদিয়া কবিরাজের কথাটা নিজ কানে শুনেছে আত্মা তার উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে, এরপর থেকে নাদিয়াকে চিন্তিত মনে হচ্ছে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, আশেপাশের বাতির আলো নাদিয়ার মুখে এসে পড়ছে, অসম্ভব সুন্দর একটা মুখ, দেখলে শুধু দেখার ইচ্ছে করে।
এতক্ষণে তারা বাসায় পৌছে গেলো, নাদিয়াকে নিয়ে রেহানা বেগম নামলেন, হাবিব সিএনজির ভাড়া দিয়ে তাদের পেছন পেছন যাচ্ছে, ভাবছে আজ রাত সে নাদিয়ার সাথে থাকবে।
রাতের খাবার খেতে সবাই একসাথে বসলো, কবিরাজের কথা শুনার পর থেকে নাদিয়া কিরকম নিরব হয়ে গেছে, হাবিব মোটেও বিশ্বাস করছে না আত্মা প্রতিশোধ নিবে, কিন্তু নাদিয়া হয়তো সেটা বিশ্বাস করে বসে আছে, আচ্ছা জবিদাস যেদিন আত্মহত্যা করছে সেদিন কি নাদিয়াকে কেউ বলেছে জবিদাসের আত্মা তোকে ক্ষমা করবেনা, কবিরাজের কথায় যতটুকু বুঝা গেলো, জবিদাসের আত্মা কিসের একটা প্রতিশোধ নিবে নাদিয়ার উপর, নিশ্চয় নাদিয়া জবিদাসের সাথে এমন কোনো অপরাধ করেছে, আর সেটা এলাকার কমবেশি মানুষ জানে, তাহলে চৈতালী বা অনুপম রায় নাদিয়াকে ঐদিন সন্ধ্যার সময় বলতে ও পারে, 'তোকে জবিদাসের আত্মা ক্ষমা করবেনা, জবিদাসের আত্মা তার প্রতিশোধ নিবে।'
কিন্তু চৈতালীর সাথে আমার কথা হইছে, অনুপমের সাথে হয়নি।
হঠাৎ হাবিবের বিষম লেগে যাওয়ায় বলল, 'পানি পানি'।
নাদিয়া হাবিবের চোখমুখ লাল দেখে অস্থির হয়ে গেলো, পানি এগিয়ে দিয়ে বলল, 'ঠিক আছো হাবিব, কি হইছে তোমার ? রীতিমতো কান্না শুরু করে দিলো নাদিয়া।'
-হাবিব ভাবছে নাদিয়া এতো অস্থির হলো কেন ? অন্যমনষ্ক হয়ে খাবার খেলে বিষম লাগা স্বাভাবিক, কিন্তু নাদিয়া এই বিষম লাগাতে কি আত্মার প্রতিশোধের কিছু দেখছিলো নাকি ?
হাবিব নাদিয়াকে মুচকি হেসে বলল, 'বিষম লাগছিলো, এখন আমি ঠিক আছি, কিন্তু তুমি ঠিক নেই নাদিয়া, তুমি আত্মার প্রতিশোধ খুজে বেরাচ্ছ ?'
খাবার শেষে হাবিব রেহানা বেগমকে বলল, 'আম্মু আজকে আমি নাদিয়ার সাথে থাকবো।'
-'কিন্তু নাদিয়া যদি ভয় পায়।'
-'তখন না হয় আপনাকে ডাকবো।'
নাদিয়া এবং হাবিব ঘুমোতে গেলো, ঘুমে নাদিয়ার চোখ বন্ধ হয়ে আসলো, হাবিব ঘুমোতে পারছেনা এলোমেলো চিন্তায়, ভাবছে নাদিয়াকে জবিদাসের কথা জিজ্ঞেস করবে, জবিদাস কেন মারা গেলো, জবিদাস কেন তার উপর প্রতিশোধ নিবে ? সে কি অপরাধ করেছে ?
তবে হাবিব তার জায়গা থেকে নিশ্চিত আত্মা কখনো প্রতিশোধ নিতে পারেনা, ইসলাম বা বিজ্ঞান কোনোকিছু এটা গ্রহণ করেনা, এই ধারণাটা হিন্দু ধর্ম থেকে এসেছে, কিন্তু বাংলাদেশের মুসলমান সবসময় হিন্দুদের সংস্পর্শে ছিলো, তাই কিছু সংখ্যক মুসলমান হয়তো মনে করে মৃত ব্যাক্তির আত্মা তার উপর প্রতিশোধ নিতে পারে, নাদিয়া ও তাদের দলের একজন। কিন্তু নাদিয়ার সাথে যা ঘটছে তা তো আমি নিজেই দেখছি, সেটা কেন হচ্ছে নাদিয়ার সাথে, নাদিয়াকে কি ডাক্তার দেখাবো ? নাকি আমি একা গিয়ে কোনো সাইকোলজিস্টের কাছ থেকে পরামর্শ নেবো, হুম তা করা যেতে পারে। তার আগে আমার জানতে হবে নাদিয়া আর জবিদাসের কি সম্পর্ক ছিল ? জবিদাসের সাথে কি এমন করেছিল নাদিয়া, যার জন্য নাদিয়া এবং ওর আম্মু বিশ্বাস করছেন নাদিয়ার উপর জবিদাসের আত্মা প্রতিশোধ নিতেই পারে।
হঠাৎ নাদিয়া ঘুমের মধ্য হাবিবকে খামচে ধরলো, তারপর ঘুম থেকে উঠলো, হাবিব নিরব দর্শকের মতো দেখছে নাদিয়ার আচরণ। নাদিয়া একদম ঘেমে গেছে, হাবিব নাদিয়াকে মুচকি হেসে বলল, ' জবিদাসের আত্মা বুঝি স্বপ্নে প্রতিশোধ নিতে আসছিলো ?'
-নাদিয়া কাপা গলায় বলল, ' হ্যাঁ, এসছিল প্রতিশোধ নিতে, তোমাকে বেধে রেখে আমাকে এক অন্ধকার ঘরে নিয়ে কাপড়-চোপর টেনেটুনে ছিড়তে শুরু করলো, কিন্তু
তুমি কি করে জানলে হাবিব ?'
-'আরও অনেক কিছু জানতে পারতাম আমি, যদি জবিদাসের বিষয়টা আমাকে স্পষ্টভাবে বলতে, কবিরাজের কথায় যতটুকু বুঝলাম তুমি জবিদাসের কোনো ক্ষতি করেছো, তাই ওর আত্মা তোমার উপর প্রতিশোধ নেবে।
-হাবিব আমি ক'দিন যাবত ভাবছি তোমাকে জবিদাসের বিষয়ে সবকিছু বলবো, কাল ডায়েরিতে আমি সব লিখে রেখেছি, আমার খুব বেশি অপরাধবোধ হচ্ছে, তোমাকে না জানালে আমি শান্তি পাবো না। ডায়েরি টেবিলে রাখছি, আমি ঘুমিয়ে গেলে তুমি পড়ে নিও ।'
-চলবে
Abid faraje, Ayrin kaTun, Sk nadim, Hasibul hasan santo, Abul basar, Santa akter, Sk sagor and লেখাটি পছন্দ করেছে
- Sinthia Debnathনবাগত
- Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1307
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-04
Re: অদ্ভুত কান্না
Fri Jun 04, 2021 10:21 pm
(৪র্থ পর্ব শেষাংশ )
.
নাদিয়া ঘুমোচ্ছে, ভয় পেলে মানুষ যেভাবে গুটিশুটি খেয়ে ঘুমায় সেভাবে। হাবিব টেবিলে গিয়ে বসল। ডায়েরি সমনে রাখা, এই ডায়েরি তার অনেক প্রশ্নের জবাব
দেবে। 'জবিদাস কে ?' জবিদাস আত্মহত্যা করল কেন ? জবিদাসের আত্মহত্যার ব্যাপারটা সবাই তার কাছে আড়াল রাখলো কেন ? জবিদাসের সাথে নাদিয়া কি এমন করলো যার জন্য নাদিয়া এবং রেহানা বেগমের মাথায় ঢুকে আছে জবিদাসের আত্মা প্রতিশোধ নেবে ? স্ট্রে-তে হাবিব সিগারেট রাখলো ।
ডায়েরি হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করলো।
'জবিদাস নামে আমার একটা ক্লাসমেট ছিল। আমরা প্রথম শ্রেনী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত একই ক্লাসে পড়তাম। জবিদাস পড়ালেখায় এতটাই ভালো ছিল যে প্রতিটা বার্ষিক পরিক্ষায় জবিদাস হতো এক নাম্বার আর আমি দুই, এটা নিয়ে আমার পরিবারের সবাই খুবই বিরক্ত ছিলো। কারণ আমাদের এলাকায় হিন্দু মুসলমান সংখ্যার দিক থেকে প্রায় সমান, টাকা-পয়সা শিক্ষা-দীক্ষা সবদিকে কেউ কারো থেকে পিছিয়ে ছিলো না, তাই হিন্দু-মুসলমানের মাঝে প্রায় প্রতিটা বিষয়ে প্রতিযোগিতা লেগেই থাকতো। পানিকে জল বললেই আব্বু চোখ রাঙানি দিতেন কারণ হিন্দুরা পানিকে জল বলে। এরকম অবস্থা ছিলো আমাদের।
.
বাংলা সিনেমার সুবাদে ক্লাস সিক্সে থাকতেই আমরা প্রেম-ভালোবাসা বুঝে ফেলেছিলাম, জবিদাস একদিন স্কুল ছুটির পর আমাকে একটা চিঠি দিলো, ক্লাস সিক্সের একটা ছেলে যেভাবে চিঠি লিখতে পারে সেভাবে লিখে আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে , আমি সেই চিঠি নিয়ে আম্মুকে দেখালাম। আম্মু সাবধান করে দিলেন ওর সাথে না মিশতে, জবিদাসের সাথে আমি এরপর থেকে কথা বলিনা, সেও আমার সাথে কথা বলেনা, কারণ ক্লাসের সবাইকে আমি চিঠি দেখিয়েছি, সবাই এখন জবিদাসকে নিয়ে রসিকতা করে, সিক্সের বার্ষিক পরিক্ষা এসেছে, খুব পড়াশুনা করে পরিক্ষা দিলাম, কারণ 'খাঁন বাড়ির' মেয়ে একটা হিন্দু ছেলের পেছনে থাকবে সেটা হতে পারেনা। পরিক্ষা শেষ হলো, রিজাল্ট বের হল। সেই একই অবস্থা, জবিদাস এক নাম্বার আমি দুই, পরিবারের সবার আশার মুখে আবার ছাই পড়লো। আম্মু কিছুটা বিগড়ে গেলেন, রাতে আমার পড়ার টেবিলে এসে বললেন, 'তোকে না জবিদাস প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল, তুই কাল জবিদাসকে গিয়ে বলবে তুইও প্রেম করতে চাস তার সাথে, তবে ক্লাসের বা এলাকার কেউ যেনো না জানে, জানলে আমার আব্বু-আম্মু মারবেন।'
- আমি অবাক হয়ে বললাম, 'কেন আম্মু ?'
- আম্মু মুচকি হেসে বললেন, 'প্রেম করলে ওই ছেলের পড়ালেখায় মন বসবেনা, তখন তুই হবে ক্লাসের এক নাম্বার ছাত্রী। তারপর জবিদাসের সাথে কথা বলা বন্ধ।
আম্মুর সব সময় ছেলেমানুষীর অভ্যাস ছিলো, উনি নিজেকে খুব বুদ্ধিমান মনে করতেন, তাছাড়া আব্বুর একজন অবাধ্য স্ত্রী, আব্বুকে না জানিয়ে যেকোনো কাজ করা উনার শখ ছিলো বলতে পারেন, যেমন হিন্দু কবিরাজের কাছে আমাকে নিয়ে যাওয়া ।
যাইহোক, আমি তখন ছোট ছিলাম, তাই ক্লাসের এক নাম্বার ছাত্রী হতে পারবো শুনেই আমি খুশি।
জবিদাসের সাথে আমি সম্পর্ক করলাম, বিকেলবেলা আমাদের বাড়ির সামনে ঘোরাঘুরি করা, সকালে আমার অপেক্ষায় রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা তখন জবিদাসের রুটিন হয়ে গেলো।
জবিদাস আমার প্রেমে এতটাই পাগল হয়ে গেছিল যে, সারাক্ষণ আমার চিন্তাভাবনায় সে থাকতো, পড়ার টেবিলে তার মন বসতো না, আমি তাকে পড়ালেখায় পেছনে ফেলবার জন্য সম্পর্ক করলেও একসময় জবিদাসের নিষ্পাপ-সরল ভালোবাসা দেখে সামান্য হলেও তার প্রতি আমার প্রেম জাগতে শুরু হয়। কিন্তু আমি কখনো হিন্দু কাউকে বিয়ে করবো এটা চিন্তাও করতে পারিনা, তাছাড়া আমার পরিবার খুব ধার্মিক, এরকম কিছু হলে পরিবারের সবাই আত্মহত্যা করবে না হয় আমাকে কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। কিন্তু জবিদাস আমার ছলনা বুঝতে না পেরে প্রথম থেকে নিজের ধর্মকে তুচ্ছ করে প্রেমে মত্ত হয়ে যায়, আমি চিন্তা করিনি জবিদাস আমার প্রেমে এতটাই সিরিয়াস হয়ে যাবে, জানলে এরকম ছলনা হয়তো করতাম না, মাঝে মাঝে এটা নিয়ে আমার অপরাধবোধ হয়, কিন্তু তাকে বিয়ে করা আমার দ্বারা সম্ভব ছিলো না, তবে বিয়ের আগ পর্যন্ত মাঝেমাঝে আমরা কথা বলতাম, একসময় আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায় তোমার সাথে, জবিদাস বিভিন্নভাবে বিয়ে আটকাতে চাইলেও তাদের পরিবার হুমকির মুখে পড়ে, তাদের ধর্মের মানুষ চায়নি মুসলমান একটা মেয়েকে বিয়ে করুক, এদিকে আমাদের প্রভাবশালী খাঁন গোত্রের হুমকির কাছে জবিদাসের কিচ্ছু করার ছিলো না, পরিবারের কথা মতো আমার বিয়ে হয় তোমার কাছে, বিয়ের পর আমি বিভিন্ন এঙ্গেলে তোমার প্রেমে পড়ি, তাই জবিদাসকে আমার স্মৃতি থেকে মুছতে আরও সহজ হয়ে যায়, হিন্দু ক্লাসমেটদের মাঝে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো চৈতালীর সাথে, একদিন সন্ধ্যায় চৈতালী আমাকে ফোন করে বলে, 'জবিদাস ফাস লেগে মারা গেছে, এলাকার সবাই তোকে দোষী করছে, কিন্তু হিন্দু মাতুব্বররা এটা নিয়ে ঝামেলা করতে চাইছেন না বলে সবাই মুখ বন্ধ করে আছে।'
তারপর অনুপম রায় আমাকে ফোন করে, সেও ছিলো আমাদের ক্লাসমেট, জবিদাসের খুব কাছের বন্ধু, অনুপম রায় ফোন করে কাদতে কাদতে আমাকে গালাগালি শুরু করলো, আর বলতে লাগলো, 'দেখে নিস, জবিদাসের আত্মা তোকে ক্ষমা করবেনা, এ জগতে মানুষের মন ভাঙার বিচার হয় না, ভালোবাসায় প্রতারিত হলে আদালতে মামলা হয়না, কিন্তু জবিদাসের আত্মার আদালতে ঠিকই ছলনাময়ীর সাজা হবে, কাদতে কাদতে অনুপম এই কথাগুলো বলে ফোন রেখে দিলো, ভয়ে আমার গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো, আরেকটা ভয় ছিলো তুমি যদি জানতে পারো তাহলে আমাকে ঘৃণা করবে।
তারপর সত্যি সত্যি শুরু হলো জবিদাসের আত্মার প্রতিশোধ নেয়া, তুমি কাছে আসলে জবিদাসের আত্মা কষ্ট পায় তাই, জবিদাসের আত্মা আরও কষ্ট পেয়ে কাদতে শুরু করে।
হাবিব আমি জানি, আত্মা যাদের উপর প্রতিশোধ নেয়, তারা কখনো রেহাই পায়না, আমিও পাবো না, আমাদের এলাকায় এরকম অনেক গল্প শুনেছি, গল্পের ভয় পড়েছি, হিন্দি ইংলিশ ফিল্ম দেখেছি, আমি জানি আত্মার প্রতিশোধ কতো জঘন্য, আমার এখন তোমার জন্য কষ্ট হয় হাবিব, তোমার জীবনটাও আমি বিষাদময় করে তুলছি।
ক্ষমা করে দিও, যদি আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে চলে যাই।'
হাবিব চিঠিটা পড়ে আরেকটা সিগারেট ধরালো, ভাবছে রেহানা বেগমকে বলবে হিন্দু কবিরাজের সাথে আর কোনো যোগাযোগ না করতে, চিঠি পড়ে হাবিব যতটুকু বুঝতে পারলো, নাদিয়া ধরেই নিয়েছে জবিদাসের আত্মা তার উপর জঘন্য কোনো প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বে, এটা তার জন্য খুব খারাপ ব্যাপার, তাছাড়া নাদিয়ার ছলনার জন্য একটা ছেলে আত্মাহত্যা করছে এটা থেকে অপরাধবোধ আসতে পারে, নাদিয়ার ডায়েরি পড়ে বুঝলাম সে খুব বেশি ভূতপ্রেত, আত্মার গল্প শুনেছে দাদা-দাদীর কাছ থেকে, তাছাড়া এলাকায় হিন্দু অধিকাংশ, ক্লাসে হিন্দু সহপাঠীও ছিল, সব মিলিয়ে নাদিয়ার একটা কাল্পনিক চিত্র আকা আছে আত্মা কিভাবে প্রতিশোধ নেয়, এরকম অবস্থাতে মানুষ ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা অস্বাভাবিক, সেটা একজন সাইকোলজিস্টের কাছে জানতে হবে, তাছাড়া ছাদের উপরে কেউ পা টেনে টেনে হাটতে শুনা, কিছুদিন এরকম স্বপ্ন দেখে হাটা শুনে একসময় মানসিক অবস্থা এতটাই কি খারাপ হতে পারে যার জন্য সরাসরি কিছু একটা দেখবে, অথবা শুনবে, আমার চেহারায় অন্য কাউকে দেখে ভয় পাবে, এটা জানতে হবে।
হাবিব এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো, হঠাৎ নাদিয়া ঘুমের মধ্য চিৎকার দিয়ে উঠলো হাবিবকে না পেয়ে, হাবিবের ঘুম ভেঙে যাবার পর বাতি জ্বালিয়ে নাদিয়ার কাছে গেলো, নাদিয়ার হঠাৎ মনে পড়লো হাবিব ডায়েরিটা পড়েছে, সে মুখ অন্যদিকে দিয়ে শুয়ে পড়লো, হাবিব নাদিয়াকে বলল, 'ফজরের আজান তো পড়ে গেছে, নামাজ পড়বে না ?'
-নাদিয়া তড়িঘড়ি করে উঠে বসে বলল, 'কখন আজান পড়লো শুনলাম না তো, যাই অযু করে নামাজ পড়ে আসি।'
-হাবিব মুচকি হেসে বলল, 'আজান পড়লে তো শুনবে ?'
- 'তাহলে দুষ্টামী করলে যে ?'
-'দুষ্টামী করে দেখলাম আজকাল হিন্দুদের আত্মাও নামাজ পড়ে কিনা।'
-নাদিয়া ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললো, 'মানে ?'
-হাবিব এবার উঠে বসে একটা সিগারেট বের করলো, 'সিগারেট টানতে টানতে বলল, জীবনে অনেক ভূতপ্রেতের গল্প তো শুনেছো, কখনো কি শুনছো, হিন্দুদের আত্মা যার উপর ভর করে সে নামাজ পড়ে ?'
-নাদিয়া গরগর করে বলতে শুরু করলো, 'না, ভুতপ্রেত বা আত্মা হচ্ছে খুবই খারাপ, জিনের মধ্য যারা জিন্না মুমিন তারা ধরলে মানুষ নামাজ কালাম পড়ে।'
-'তোমাকে তো জিন্নে মুমিন ধরার কথা না, হিন্দু আত্মা ধরার কথা, তাহলে তুমি নামাজ পড়ছো কেন সেটা ভাবতে ভাবতে অযু করে নামাজ পড়ে এসো, আজানের সময় হয়ে গেছে।'
-নাদিয়া বাথরুমে গিয়ে পানির ট্যাপ ছাড়ার সাথে সাথে সে শুনতে পেলো কে জানি খিলখিল করে হাসছে, ট্যাপ বন্ধ করলো আবার হাসি বন্ধ, নাদিয়া দৌড়ে এসে বলল, 'হাবিব আমাকে জবিদাসের আত্মা মনে হয় নামাজ পড়তে বাধা দিতে চাচ্ছে, তুমি আমার সাথে বাথরুমে এসে দাড়িয়ে থাকো, আমি অযু করবো।
হাবিব দাঁড়িয়ে আছে,
নাদিয়া অযু করার পর হাবিব অযু করে দু'জন নামাজ পড়লো।'
-নামাজ শেষ করে নাদিয়া চা করতে গেলো, হাবিব জানে আজকে নাদিয়া একা রান্নাঘরে গেলে সমস্যা হতে পারে, তাই সে চেয়ার নিয়ে রান্নাঘরে বসলো, তারপর দু'জন চা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে গল্প করতে করতে চা খাচ্ছে।
হাবিব ভাবছে এখন নাদিয়ার সাথে গল্প করতে করতে ধীরে ধীরে ওর ভিতরের ভয় দূর করতে হবে।
-'নাদিয়া তুমি কি বিশ্বাস করো মৃত মানুষের আত্মা প্রতিশোধ নিতে পারে, মৃত মানুষের আত্মা মানুষের উপর ভুতপ্রেত হয়ে ভর করে ।'
-নাদিয়া চা-এর কাপ থেকে চুমুক তুলে বলল, 'হ্যা এটা তো সবাই বিশ্বাস করে, এইতো গেল বছর অমুকের ভুতে ধরেছিল, কিছুদিন আগে তমুকের উপর পেত্নী ভর করেছিল, নাদিয়া এরকম হাজারটা উদাহরণ দিতে শুরু করলো।'
-হাবিব নাদিয়ার কথার মাঝখানে বলল, 'কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনা।'
-'তুমি বিশ্বাস করোনা কেন ?'
হাবিব মনে মনে ভাবছে, মানুষ ধর্মের প্রতি বেশী দূর্বল থাকে, শুধুমাত্র ধর্মের কথা মানুষ যুক্তি ছাড়া অন্ধভাবে বিশ্বাস করতে পারে, তাই নাদিয়াকে প্রথমে ধর্ম দিয়ে বুঝানো যেতে পারে।
-হাবিব চ-এর কাপটা হাত থেকে রেখে বলল, 'কারণ ইসলাম এসব আত্মায় বিশ্বাস করেনা, মানুষের মৃত্যুর পরে তার আত্মা ভূতপ্রেত হয়ে মানুষের উপর ভর করতে পারে সেটা ইসলামে নেই, আর যারা এসব বিশ্বাস করবে আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করবেন না।'
-নাদিয়া তেমন একটা আগ্রহ না দেখিয়ে বলল, 'ও আচ্ছা।'
হাবিব ভাবছে একটু বিস্তারিত বলে ট্রাই করা যেতে পারে।
'আত্মহত্যাকারী বা অপঘাতে মৃত ব্যক্তির আত্মা
‘ভূত’ হয়ে দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ায়, কথাটা সত্যি কিনা মিথ্যা একজন আলেমকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, উনি উত্তরে যা বলেছেন, আমি কাল রাতে আমার একটা ডায়েরিতে লিখে রাখছি, সেটা আমি নিয়ে আসছি, ডায়েরিটা হবিব নাদিয়ার কাছে দিয়ে
চা-এর কাপে চুমুক দিলো, আর নাদিয়া ডায়েরি বের করে পড়তে শুরু করলো ' ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী কোনো মানুষ মৃত্যুর পর পুনর্জন্ম লাভ করে বা পুনরায় দুনিয়ায় আগমন করতে পারে না। কেননা মৃত্যুর পর ইমানদার সৎকর্মশীল মানুষের রুহ ‘ইল্লিয়্যিন’ নামক জায়গায় অবস্থান করে বলে কোরআনে আছে।
তাতে তারা কিয়ামত পর্যন্ত পরম শান্তিতে অবস্থান করবে। সেই শান্তির জায়গা থেকে কেউ পৃথিবীতে আসতে চাইবে না।
আর অবিশ্বাসী-পাপী এবং ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের লোকদের রুহ ‘সিজ্জিন’ নামক জায়গায় অবস্থান করে। এটি একটি বন্দিখানা, এতে তারা হাশরের মাঠে বিচারকার্য শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত অশান্তি ভোগ করতে থাকবে। চাইলেও পৃথিবীতে আসতে পারবেনা, বিচারকার্য শেষে তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (দেখুন : সুরা মুতাফিফফীন : ৭-১৮)
এরূপ কোনো কোনো হাদিসমতে শহীদদের রুহ সবুজ পাখির সুরতে আল্লাহর আরশের নিচে উড়তে থাকবে। ছোট শিশুদের রুহও মৃত্যুর পর ঊর্ধ্বাকাশের কোনো আনন্দময় জায়গায় বিচরণ করবে। হাশরের দিবসে সবার দুনিয়াবি শরীরের সঙ্গে রুহ একত্রিত হয়ে পুনরুত্থিত হবে।
মৃত্যুর পর কেউ ফিরে আসবে না ।
পৃথিবীতে পুনর্জন্ম, জন্মান্তর এ ধরনের কল্পনার কোনো বিশ্বাস ইসলাম সমর্থন করে না। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজে কিছু অবাস্তব ও আজগুবী কথা প্রচলিত রয়েছে, যার সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন অনেকে বলে থাকে, মৃত্যুর পর প্রতি সোমবার তারা দুনিয়াবি ঘরে আসে। কেউ কেউ বলে, এক মাস পর্যন্ত তার রুহ ঘরের চারপাশে বিভিন্ন প্রাণীর ছবি ধরে এসে ঘোরাফেরা করে এবং তার আত্মীয়স্বজনদের দেখে। কেউ কেউ বলে, জুমা, ঈদ, শবেবরাত ও শবেকদরে তার ঘরের দরজায় ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে আসে। কোথাও প্রচলিত আছে যে খারাপ মানুষের রুহ পৃথিবীতে এসে মানুষদের জিনের ন্যায় আসর করে। আসলে এসব ধারণা উপমহাদেশের মুসলিম সমাজে হিন্দুদের সংস্রবে থাকার কারণে ছড়িয়েছে। এসবের সঙ্গে ইসলামের ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই।
নাদিয়া ডায়েরিটা পড়ে খুব আগ্রহ নিয়ে বলল, 'তাহলে আমার সাথে যা হচ্ছে সেটার ব্যাখ্যা কি ?'
নাদিয়া এমনভাবে হাবিবকে ব্যাখ্যার কথা জিজ্ঞেস করলো, হাবিবের ব্যাখ্যার উপর যেনো অনেক কিছু নির্ভর করছে।
-হাবিব বলল, 'নাদিয়া তুমি হয়তো জানো, আমার এক বন্ধু সাইকোলজিস্ট, সে দেশের বাহিরে থাকে, আমি গতরাতে তোমার ডায়েরি পড়ে তাকে ফোনে বিস্তারিত বলেছি, সে বলল, দুশ্চিন্তা, ভয়, মানসিক চাপে হ্যালুসিনেশন ঘটে থাকে। একটা শোনার হ্যালুসিনেশন আর অপরটা দেখার হ্যালুসিনেশন!। কানের হ্যালুসিনেশন প্রায়ই ক্ষেত্রে সেকেন্ড পারসন হ্যালুসিনেশন হয়ে থাকে। কানে কানে কেউ বলে যায় ‘তুই শেষ’, ‘সামনে তোর মরণ’।
বিষণ্ন রোগী কানে ভেসে আসা কথাগুলোকে একদম যৌক্তিক ধারণা করে মাথা পেতে নেয়।
হ্যালুসিনেশনে ব্যক্তি যখন কানে গায়েবি আওয়াজ শুনে সেটা কান্না হাসি যেকোনো কিছু হতে পারে, তখন ব্যক্তি তাতে কোন এক ধরনের প্রতিক্রিয়া করে থাকে, প্রথমদিকে ব্যক্তি বেশ আতঙ্কিত হয়। সে মনের এসব অনুভূতি বুঝে উঠতে পারে না। এ কারণে অনেকটা অবাক হয়ে চারপাশে তাকাতে থাকে। অনেকে সারাক্ষণ বক বক করে। তারা আসলে কানের আওয়াজগুলোকে প্রশ্ন করে। অনেকে সামনের লোককে আঘাত পর্যন্ত করতে পারে। কারণ হ্যালুসিনেশনে কানে কোনো আদেশ আসতে থাকে। এর নাম কমান্ড হ্যালুসিনেশন।
স্বাভাবিক সুস্থ মানুষও ইলিউশনের শিকার হতে পারেন। যখন সন্ধ্যায় আলো কমে আসে তখন সামনের ঝোপকে মনে হয় কেউ যেন বসে আছে।
-নাদিয়া তোমার এরকম হওয়া খুব স্বাভাবিক ছিলো, কারণ তোমার জন্য একটা ছেলে আত্মহত্যা করছে, এটা তোমাকে অপরাধবোধে ভোগাচ্ছিল, তুমি নিজের কাছে নিজে অপরাধী ছিলে, তাছাড়া অনুপম রায় যখন বলল, 'তোমাকে জবিদাসের আত্মা ক্ষমা করবেনা, তার সাথে অবিচারের প্রতিশোধ নেবে, তখন তোমার দাদা-দাদীর বলা আত্মার গল্প, আর ভুতুড়ে গল্প উপন্যাস ইংলিশ হরর ফিল্মের অভিজ্ঞতায় কাল্পনিক একটা চিত্র তোমার চোখের সামনে ভাসছিলো, কিভাবে ভুত আসে কিভাবে শাস্তি দেয় এইসব তোমার চোখের সামনে ভাসছিল, তারপর রাতে ঘুমে রান্নাঘরে কান্নার শব্দ শুনে তুমি ভাবলে বাস্তবে কেউ কাদছে, রান্নাঘরে যখন চা- করতে গেলে তখন বাতাসের সাথে খুব বৃষ্টি ছিলো, তখন ছাদের পাশের আম গাছের ঢাল বাতাসের সাথে বারবার ছাদে লাগছিল আর তোমার কানে আসছিলো কে পা টেনেটেনে হাটছে, এসব হবার প্রধান কারণ ছিলো তুমি বিশ্বাস করে নিয়েছিলে আত্মা তোমার উপর শাস্তি নিবে, এতে তোমার ভিতরে এক ধরনের ভয় জমাট বেধেছিল , এতকিছুর পর হ্যালুসিনেশন হওয়া খুব স্বাভাবিক।
তোমার ভেতর থেকে আত্মার
ভয় দূর করতে হবে, কারণ এটা তোমার ধর্ম গ্রহণ করেনা, বিজ্ঞান ও গ্রহণ করেনা। না হলে ধীরে ধীরে তোমার এমন কিছু একটা হবে, সবাই ধরে নিবে এটা আত্মার শাস্তি।
যদি তুমি আমার কথাগুলো বিশ্বাস করো আর আত্মার বিশ্বাস থেকে বের হয়ে আসতে পারো, তাহলে কবিরাজ নির্মল বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করতে তোমার আম্মুকে নিষেধ করবে। তারপর আমরা না হয় কোনো ভালো ডাক্তারের কাছে যাবো।
নাদিয়া বসা থেকে উঠে গিয়ে রেহানা বেগমের মোবাইল থেকে কবিরাজ নির্মল বিশ্বাসের নাম্বার ডিলিট করলো।
তারপর সে আবার বারান্দায় এসে বলল, 'হাবিব, আমার বিশ্বাস, তুমি এখন আমার কাছে আসলে আর কেউ আরও বেশি রান্নাঘরের দিকে কান্না করবেনা।'
ভ্রু কুচকে হাবিব নাদিয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়ালো, অনেকদিন পর নিজের বউকে বুকে জড়িয়ে নেয়ার জন্য, এই সুন্দর কুয়াশার সকালে নাদিয়ার কপালে আলতো করে একটা চুমো আঁকার জন্য।'
-সমাপ্তি
Abid faraje, Ayrin kaTun, Sk nadim, Hasibul hasan santo, Abul basar, Santa akter, Sk sagor and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum