- Sinthia Debnathনবাগত
- Posts : 8
স্বর্ণমুদ্রা : 1307
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-04
অদ্ভুত শব্দটা
Fri Jun 04, 2021 10:35 pm
সত্য ঘটনা ...
ভূতের গল্প আমি আগেও অনেক লিখেছি। তার মধ্যে বেশ কিছু সত্য ঘটনাও আছে। তবে আজকে যে কাহিনীটা বলব, সেটা গত রাতে ঘটে যাওয়া একটা অদ্ভুত ঘটনা। ভৌতিক কি না জানি না, তবে ঘটনাটার কথা মনে পড়লে এখনও আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে।
আমি সাধারণত রাতের বেলায় লিখি। মানে অফিস থেকে ফিরে পরিবারের সাথে সময় কাটিয়ে রাত বারোটা সাড়ে বারোটা নাগাদ লিখতে বসি। এটা আমার বহুদিনের অভ্যাস। বাড়ির সবাই মানে আমার স্ত্রী আর ছেলে ঘুমিয়ে পড়লে আমি ল্যাপটপ খুলে বসি। তবে ইদানীং এই নিয়মে একটু ব্যঘাত ঘটছিল। তার কারণ হল আমাদের এই ছোট্ট শহরে করোনার দাপট। আমি যে কোম্পানিতে চাকরি করি, সেখানে প্রায় প্রতি দুজনের মধ্যে একজন করোনা পজিটিভ আর মৃতের সংখ্যাও বেশ বেশি। তাই এই সব চিন্তার জন্য ঠিক লেখায় মন দিতে পারছিলাম না। কিন্তু গতকাল লিখতে বসতেই হল। আমার খুবই পরিচিত একজন তার পত্রিকার জন্য একটি গল্প চেয়েছেন। তাই অগত্যা সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ল্যাপটপ খুলে বসলাম। ঘড়িতে তখন প্রায় রাত সাড়ে বারোটা।
আমাদের এই দিকটায় ইয়াস ঝড়ের প্রকোপ সেরকম না হলেও বৃষ্টি চলছে সেই থেকেই। একদিন থামে তো পরের দিন মুষলধারায় ভাসিয়ে দেয় সব। গত কাল সন্ধ্যে থেকেই চলছে অঝোর ধারায় বর্ষণ আর তার সাথে সমান পাল্লা দিয়ে চলছে মেঘের গর্জন। রাতের দিকে একটু কমলো দেখে আমি জানলা খুলে লেখা শুরু করলাম। প্লটটা মোটামুটি ঠিকই ছিল, মায়া সভ্যতার এক মন্দির নিয়ে কাহিনী। মিনিট দশেক হবে লিখছি, এমন সময় আবার শুরু হল বৃষ্টি। আমাদের এখানে বৃষ্টি হলেই কারেন্ট অফ করে দেওয়া হয়। আমি সেই ভয়ে চটপট উঠে পড়লাম। ভাবলাম জানলাগুলো বন্ধ করে শুয়ে পড়ি। কারেন্ট অফ হলে আবার অন্ধকারে হাতড়ে মরতে হবে। তাড়াতাড়ি জানলা বন্ধ করে দেখি সামনের দরজার নিচ দিয়ে জল ঢুকছে। ভাবলাম তৎক্ষণাৎ একটা কাপড় দিয়ে সেটাকে না আটকালে ঘরে জল থইথই হয়ে যাবে। বারান্দায় রাখা থাকে বেশ কিছু ঘর মোছার কাপড়। সেই দিয়ে দরজার তলায় দিচ্ছি, এমন সময় আমার কানে এল একটা অদ্ভুত শব্দ। বৃষ্টির অঝোরধারার শব্দ ছাপিয়ে আরও একটা শব্দ।
খুট… খুট…খুট।
মিনিট খানেক চুপ করে বুঝতে চেষ্টা করলাম শব্দের উৎসটা। শব্দটা আসছে আমাদের ফ্যাটের করিডোর থেকে। আমি যে ফ্ল্যাটটায় থাকি, তার প্ল্যানটাও বেশ অদ্ভুত। লিফট থেকে নামলে চারদিকে চারটে করিডোর চলে গেছে আর সেই করিডোরের দুই পাশে চারটে চারটে করে ফ্ল্যাট। আমাদের এই দিকটায় চারটে ফ্ল্যাটের মধ্যে দুটো খালি, বাকি দুটোতে লোক আছে, আমরা আর পাশের ফ্ল্যাটে পটনায়কবাবু। যাই হোক, আরও দুই এক মিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে শুনতে লাগলাম শব্দটা। দরজার নিচ দিয়ে করিডোরের আলো আসছে না। বুঝলাম সিকিউরিটি আলো বন্ধ করে দিয়েছে নিচ থেকে। ঘড়িতে দেখলাম সময় পৌনে একটা। যে শব্দটা আসছে, সেটার কোন ছন্দ নেই, কিন্তু শব্দটা ক্রমাগত হয়েই চলেছে। আমি সামনের ঘরের আলোটা জ্বালাইনি, ভিতরের ঘর থেকে যে আলো আসছিল সেই আলোতেই কাজ করছিলাম।
আরও একটু শোনার পর শব্দটা খুব চেনা চেনা ঠেকলো। এই শব্দ আমি আগেও শুনেছি, একবার নয়, একাধিকবার। কিসের শব্দ, কিসের শব্দ? হঠাৎ মনে পড়ে গেল শব্দটার কথা। এটা নেল কাটার দিয়ে নখ কাটার শব্দ। ঠিক, এটা নখ কাটারই শব্দ। আর শব্দটার উৎসটাও এবার আমার কাছে স্পষ্ট। আমার পাশের ফ্ল্যাটের পটনায়েক বাবু নখ কাটছেন। এটা ওনার বরাবরের স্বভাব। দরজা খুলে, করিডোরে দাঁড়িয়ে নখ কাটা। তা বলে এত রাতে? একবার ভাবলাম বেরিয়ে জিজ্ঞেস করি, কিন্তু পর মুহূর্তে একটা কথা মনে পড়তে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। পটনায়ক বাবু এখন নখ কি করে কাটবেন, উনি তো হাসপাতালে! গতকাল সকালেই ওনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একা মানুষ, সংসার নেই। তার মধ্যে কোভিড। কোম্পানির লোক সকালে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। শ্বাস কষ্ট হচ্ছিল শুনেছিলাম। কিন্তু সকালে গিয়ে বিকেলে ছেড়ে দিল? আমার কেমন একটু অস্বস্তি হতে শুরু করেছে। হাতের তালু ঘেমে উঠছে ধীরে ধীরে। একটা অজানা ভয় গ্রাস করছে আমাকে। কতক্ষন এইভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না। হুঁশ ফিরল একটা প্রচণ্ড বাজ পড়ার শব্দে। কোন রকমে পা চালিয়ে গিয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানায়। বেড রুমে ঢোকার আগে পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছিলাম সেই শব্দ। খুট...খুট...খুট।
আজ সকালে শব্দটার কথা আমার স্ত্রীকে বলতে যাব, এমন সময় ফোন করলেন আমার কলিগ সুমিত কুমার। ওনার মুখে খবরটা শুনে রাতের ভয়টা যেন আবার চেপে ধরল আমাকে। পটনায়ক বাবু গতকাল রাত এগারোটা নাগাদ মারা গেছেন। কোভিড বলে হাসপাতাল থেকে বডি দেয়নি।
ভূতের গল্প আমি আগেও অনেক লিখেছি। তার মধ্যে বেশ কিছু সত্য ঘটনাও আছে। তবে আজকে যে কাহিনীটা বলব, সেটা গত রাতে ঘটে যাওয়া একটা অদ্ভুত ঘটনা। ভৌতিক কি না জানি না, তবে ঘটনাটার কথা মনে পড়লে এখনও আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে।
আমি সাধারণত রাতের বেলায় লিখি। মানে অফিস থেকে ফিরে পরিবারের সাথে সময় কাটিয়ে রাত বারোটা সাড়ে বারোটা নাগাদ লিখতে বসি। এটা আমার বহুদিনের অভ্যাস। বাড়ির সবাই মানে আমার স্ত্রী আর ছেলে ঘুমিয়ে পড়লে আমি ল্যাপটপ খুলে বসি। তবে ইদানীং এই নিয়মে একটু ব্যঘাত ঘটছিল। তার কারণ হল আমাদের এই ছোট্ট শহরে করোনার দাপট। আমি যে কোম্পানিতে চাকরি করি, সেখানে প্রায় প্রতি দুজনের মধ্যে একজন করোনা পজিটিভ আর মৃতের সংখ্যাও বেশ বেশি। তাই এই সব চিন্তার জন্য ঠিক লেখায় মন দিতে পারছিলাম না। কিন্তু গতকাল লিখতে বসতেই হল। আমার খুবই পরিচিত একজন তার পত্রিকার জন্য একটি গল্প চেয়েছেন। তাই অগত্যা সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ল্যাপটপ খুলে বসলাম। ঘড়িতে তখন প্রায় রাত সাড়ে বারোটা।
আমাদের এই দিকটায় ইয়াস ঝড়ের প্রকোপ সেরকম না হলেও বৃষ্টি চলছে সেই থেকেই। একদিন থামে তো পরের দিন মুষলধারায় ভাসিয়ে দেয় সব। গত কাল সন্ধ্যে থেকেই চলছে অঝোর ধারায় বর্ষণ আর তার সাথে সমান পাল্লা দিয়ে চলছে মেঘের গর্জন। রাতের দিকে একটু কমলো দেখে আমি জানলা খুলে লেখা শুরু করলাম। প্লটটা মোটামুটি ঠিকই ছিল, মায়া সভ্যতার এক মন্দির নিয়ে কাহিনী। মিনিট দশেক হবে লিখছি, এমন সময় আবার শুরু হল বৃষ্টি। আমাদের এখানে বৃষ্টি হলেই কারেন্ট অফ করে দেওয়া হয়। আমি সেই ভয়ে চটপট উঠে পড়লাম। ভাবলাম জানলাগুলো বন্ধ করে শুয়ে পড়ি। কারেন্ট অফ হলে আবার অন্ধকারে হাতড়ে মরতে হবে। তাড়াতাড়ি জানলা বন্ধ করে দেখি সামনের দরজার নিচ দিয়ে জল ঢুকছে। ভাবলাম তৎক্ষণাৎ একটা কাপড় দিয়ে সেটাকে না আটকালে ঘরে জল থইথই হয়ে যাবে। বারান্দায় রাখা থাকে বেশ কিছু ঘর মোছার কাপড়। সেই দিয়ে দরজার তলায় দিচ্ছি, এমন সময় আমার কানে এল একটা অদ্ভুত শব্দ। বৃষ্টির অঝোরধারার শব্দ ছাপিয়ে আরও একটা শব্দ।
খুট… খুট…খুট।
মিনিট খানেক চুপ করে বুঝতে চেষ্টা করলাম শব্দের উৎসটা। শব্দটা আসছে আমাদের ফ্যাটের করিডোর থেকে। আমি যে ফ্ল্যাটটায় থাকি, তার প্ল্যানটাও বেশ অদ্ভুত। লিফট থেকে নামলে চারদিকে চারটে করিডোর চলে গেছে আর সেই করিডোরের দুই পাশে চারটে চারটে করে ফ্ল্যাট। আমাদের এই দিকটায় চারটে ফ্ল্যাটের মধ্যে দুটো খালি, বাকি দুটোতে লোক আছে, আমরা আর পাশের ফ্ল্যাটে পটনায়কবাবু। যাই হোক, আরও দুই এক মিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে শুনতে লাগলাম শব্দটা। দরজার নিচ দিয়ে করিডোরের আলো আসছে না। বুঝলাম সিকিউরিটি আলো বন্ধ করে দিয়েছে নিচ থেকে। ঘড়িতে দেখলাম সময় পৌনে একটা। যে শব্দটা আসছে, সেটার কোন ছন্দ নেই, কিন্তু শব্দটা ক্রমাগত হয়েই চলেছে। আমি সামনের ঘরের আলোটা জ্বালাইনি, ভিতরের ঘর থেকে যে আলো আসছিল সেই আলোতেই কাজ করছিলাম।
আরও একটু শোনার পর শব্দটা খুব চেনা চেনা ঠেকলো। এই শব্দ আমি আগেও শুনেছি, একবার নয়, একাধিকবার। কিসের শব্দ, কিসের শব্দ? হঠাৎ মনে পড়ে গেল শব্দটার কথা। এটা নেল কাটার দিয়ে নখ কাটার শব্দ। ঠিক, এটা নখ কাটারই শব্দ। আর শব্দটার উৎসটাও এবার আমার কাছে স্পষ্ট। আমার পাশের ফ্ল্যাটের পটনায়েক বাবু নখ কাটছেন। এটা ওনার বরাবরের স্বভাব। দরজা খুলে, করিডোরে দাঁড়িয়ে নখ কাটা। তা বলে এত রাতে? একবার ভাবলাম বেরিয়ে জিজ্ঞেস করি, কিন্তু পর মুহূর্তে একটা কথা মনে পড়তে আমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। পটনায়ক বাবু এখন নখ কি করে কাটবেন, উনি তো হাসপাতালে! গতকাল সকালেই ওনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। একা মানুষ, সংসার নেই। তার মধ্যে কোভিড। কোম্পানির লোক সকালে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। শ্বাস কষ্ট হচ্ছিল শুনেছিলাম। কিন্তু সকালে গিয়ে বিকেলে ছেড়ে দিল? আমার কেমন একটু অস্বস্তি হতে শুরু করেছে। হাতের তালু ঘেমে উঠছে ধীরে ধীরে। একটা অজানা ভয় গ্রাস করছে আমাকে। কতক্ষন এইভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না। হুঁশ ফিরল একটা প্রচণ্ড বাজ পড়ার শব্দে। কোন রকমে পা চালিয়ে গিয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানায়। বেড রুমে ঢোকার আগে পর্যন্ত শুনতে পাচ্ছিলাম সেই শব্দ। খুট...খুট...খুট।
আজ সকালে শব্দটার কথা আমার স্ত্রীকে বলতে যাব, এমন সময় ফোন করলেন আমার কলিগ সুমিত কুমার। ওনার মুখে খবরটা শুনে রাতের ভয়টা যেন আবার চেপে ধরল আমাকে। পটনায়ক বাবু গতকাল রাত এগারোটা নাগাদ মারা গেছেন। কোভিড বলে হাসপাতাল থেকে বডি দেয়নি।
Sk nadim, Tasmia haq, Sume akter, Hasibul hasan santo, Abul basar, Santa akter, Sk sagor and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum