- Salman Joyনবাগত
- Posts : 1
স্বর্ণমুদ্রা : 1307
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-05-24
অদ্ভুত ভয়
Mon May 24, 2021 8:25 pm
এই গরম থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য অনেক কষ্ট করে একটা টিউশনি ম্যানেজ করেছি।
তাও আমার বাসা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। যাতায়াত ভাড়া মাসে ৭৮০ টাকা চলে যাবে এই ভয়ে প্রতিদিন দুই কিলোমিটার হেঁটে হেঁটে যাই আর আসি।
অর্থাৎ দিন মোট চার কিলোমিটার হাঁটি। মনকে সান্তনা দেই এই বলে যে " ডেইলি চার কিলোমিটার হাটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। "
আজ টিউশনির বয়স বিশ দিন হয়েছে। মাইনে এখনো ঠিক করিনি। তবে আন্টি মানে আমার ছাত্রের মা একবার মাইনে নিয়ে কথা বলতে চাইছিলেন। আমি হাত উঁচু করে উনাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছি " আরে আন্টি এইসব কথা রাখেন তো! টাকা-পয়সা ব্যাপার না। আমি তো আপনার ছেলের মত-ই। আপনার মন চাইলে টাকা দিয়েন আর নইলে দেওয়ার দরকার নেই "
আন্টি এতোটাই আশ্চর্য হয়েছেন যে উনাকে দেখে মনে হলো উনি নেপালের ভূমিকম্প চোখের সামনে দেখছেন। মর্মবিদ্ধ হরিণীর মত আমার দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকলেন তারপর বিড়বিড় করে বললেন " আসলে বাবা তোমাকে দেখলেই বুঝা যায় তুমি যে ভদ্র ঘরের ছেলে"
আমি একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নিঁচু করে ফেললাম।
আজ মাসের বেশ অর্ধেক দিন কেটে গেল অথচ আমি একদিনই টিউশনি ফাঁকি দেইনি। ঝড়-বৃষ্টি তোয়াক্কা না করে প্রতিদিন জাস্ট টাইমে গিয়ে অয়নদের বাসায় হাজির হই! অয়ন আমার ছাত্রেন নাম। এবার ক্লাস সিক্সে পড়ে। ওকে পড়ানোর টাইম শেষ হয়ে গেলেও এক্সট্রা আরো দুই ঘন্টা মনযোগ দিয়ে পড়াই।
এইতো দুই দিন আগের কথা। অয়নকে পড়াচ্ছিলাম এমন সময় আন্টি এসে আমাকে বললেন,
" বাবা, আজ তুমি একটু আগে চলে যাও! আমরা অয়নকে নিয়ে একটু বেড় হব"
"আরে আন্টি কী বলেন এইসব? ওর তো এখনো ১৫টা ম্যাথ বাকী। একটু অপেক্ষা করুন। দুই ঘন্টার ভেতরেই আমি শেষ করার চেষ্টা করব।"
আন্টি আর কিছু বললেন না। কিছু একটা ভাবলেন হয়তো। তবে ছাত্রকে তখন ঠিক বাংলা ছবির বাপ্পারাজের মতো লাগছিল। যেন এইমাত্র বড়সড় ছ্যাকা খেয়েছে।
গতকাল অয়নের আব্বু আমাকে কল দিয়ে বলছিলেন
" বাবা, তোমাকে আজ আসতে হবে না! অয়নের মাথা ব্যাথা করছে"
"আংকেল, অয়নের তো এক মাস পরে পরীক্ষা। না পড়লে পিছে পরে যাবে তো! আচ্ছা, আপনি চিন্তা কইরেন না! আমি অয়নের জন্য মাথা ব্যাথার ট্যাবলেট নিয়ে আসছি। মাথা ব্যাথা সেরে যাবে।"
"আচ্ছা বাবা দেখ! তোমার ইচ্ছা।" বলে আংকেল ফোন কেটে দিলেন।
টিউশনির প্রথম শুক্রবারে যেদিন বৃষ্টিতে ভিজে অয়নকে পড়াতে গিয়েছিলাম। আন্টি আমার দিকে এমনভাবে থাকালেন যেন মনেহল উনি বহুবছর আগে বিলীন হয়ে যাওয়া ডাইনোসার কে দেখছেন। ভ্র কুঁচকে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
"আরে! আরে! শুক্রবারে তুমি আসলা কেন? এই বৃষ্টিতে ভিজে না আসলেও তো পারতা।"
"আন্টি, থামুন তো! অয়ন তো আমার ছোট ভাইয়েরই মতোই। ওর ভালো রেজাল্ট করানোই তো আমার দায়িত্ব। আপনি শুধু শুধু টেনশন কইরেন না।"
আন্টি শুধু বাংলা ছবির আনোয়ারা বেগমের মত থাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে। দেখে মনে হলো কৃতজ্ঞতায় উনার মুখ আটখানা। অয়ন তখন গেম খেলতে ছিল।আমাকে দেখেই সে আঁতকে উঠল। যেন এইমাত্র কেউ ওর কলিজায় বুলেট মেরেছে।
আজকে শুক্রবার! প্রতিদিনের মত আমি অয়নকে পড়াচ্ছি। হঠাৎ আন্টি আমার পাসে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে বললেন,
"বাবা, আগামী সপ্তাহ তোমার আসতে হবে না! আমরা অয়নকে নিয়ে তার নানু বাড়ী যাব "
"আরে আন্টি কী বলেন এইসব?"
"হ্যা বাবা, অয়নের নানু খুব অসুস্থ। আর ওখানেও অনেকদিন ধরে যাই না"
"আচ্ছ যান! তবে অয়নকে রেখে যান! আমি প্রতিদিন আমার মেস থেকে খাবার এনে দিব আর ওকে মনযোগ দিয়ে অনেক টাইম পড়াব।"
" নাহ! বাবা। তোমার এতে কষ্ট হবে আর অয়ন ছোট মানুষ থাকতে পারবে না"
আমি আর কিছু বললাম না। তবে অনেক কষ্ট হচ্ছিল। অয়নকে অনেকদিন পড়াতে পারবো না।
একটু পর আংকেল এসে আমার কাছে এক হাজার টাকার ছয়টা চকচকে নোট ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
"বাবা, কিছু মনেকর না। এগুলো রাখো। সামনের মাস থেকে আরো বাড়িয়ে দেবো। আর অয়নের প্রতি তোমার এত্ত ভালোবাসা দেখে সত্যিই আমি অবাক। ভালো থেকো। কয়দিন পর আবার দেখা হবে। নিজের খেয়াল রেখো।"
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম "আচ্ছা, আপনারাও ভালো থাইকেন। যত সম্ভব তাড়াতাড়ি ফিইরেন। আমি পথচেয়ে থাকব।"
হয়ত সামনের মাস থেকে আংকেল আমার বেতন আরো বাড়িয়ে দেবেন। তবে আমার একটাই ভয়! একটাই চিন্তা! ওনারা যদি কখনো জেনে যান এই গরমে উনাদের বাসায় লাগানো ইয়ারকন্ডিশনের বাতাস খাওয়ার জন্য আমি একদিনও টিউশনি মিস দেই না! অয়নকে এত্ত কেয়ার করি। তখন আমার কী হবে?
আমার খুব ভয় হচ্ছে।
হাসান মাহমুদ ইমন
তাও আমার বাসা থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। যাতায়াত ভাড়া মাসে ৭৮০ টাকা চলে যাবে এই ভয়ে প্রতিদিন দুই কিলোমিটার হেঁটে হেঁটে যাই আর আসি।
অর্থাৎ দিন মোট চার কিলোমিটার হাঁটি। মনকে সান্তনা দেই এই বলে যে " ডেইলি চার কিলোমিটার হাটা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। "
আজ টিউশনির বয়স বিশ দিন হয়েছে। মাইনে এখনো ঠিক করিনি। তবে আন্টি মানে আমার ছাত্রের মা একবার মাইনে নিয়ে কথা বলতে চাইছিলেন। আমি হাত উঁচু করে উনাকে থামিয়ে দিয়ে বলেছি " আরে আন্টি এইসব কথা রাখেন তো! টাকা-পয়সা ব্যাপার না। আমি তো আপনার ছেলের মত-ই। আপনার মন চাইলে টাকা দিয়েন আর নইলে দেওয়ার দরকার নেই "
আন্টি এতোটাই আশ্চর্য হয়েছেন যে উনাকে দেখে মনে হলো উনি নেপালের ভূমিকম্প চোখের সামনে দেখছেন। মর্মবিদ্ধ হরিণীর মত আমার দিকে অনেকক্ষণ চেয়ে থাকলেন তারপর বিড়বিড় করে বললেন " আসলে বাবা তোমাকে দেখলেই বুঝা যায় তুমি যে ভদ্র ঘরের ছেলে"
আমি একটু লজ্জা পেয়ে মাথা নিঁচু করে ফেললাম।
আজ মাসের বেশ অর্ধেক দিন কেটে গেল অথচ আমি একদিনই টিউশনি ফাঁকি দেইনি। ঝড়-বৃষ্টি তোয়াক্কা না করে প্রতিদিন জাস্ট টাইমে গিয়ে অয়নদের বাসায় হাজির হই! অয়ন আমার ছাত্রেন নাম। এবার ক্লাস সিক্সে পড়ে। ওকে পড়ানোর টাইম শেষ হয়ে গেলেও এক্সট্রা আরো দুই ঘন্টা মনযোগ দিয়ে পড়াই।
এইতো দুই দিন আগের কথা। অয়নকে পড়াচ্ছিলাম এমন সময় আন্টি এসে আমাকে বললেন,
" বাবা, আজ তুমি একটু আগে চলে যাও! আমরা অয়নকে নিয়ে একটু বেড় হব"
"আরে আন্টি কী বলেন এইসব? ওর তো এখনো ১৫টা ম্যাথ বাকী। একটু অপেক্ষা করুন। দুই ঘন্টার ভেতরেই আমি শেষ করার চেষ্টা করব।"
আন্টি আর কিছু বললেন না। কিছু একটা ভাবলেন হয়তো। তবে ছাত্রকে তখন ঠিক বাংলা ছবির বাপ্পারাজের মতো লাগছিল। যেন এইমাত্র বড়সড় ছ্যাকা খেয়েছে।
গতকাল অয়নের আব্বু আমাকে কল দিয়ে বলছিলেন
" বাবা, তোমাকে আজ আসতে হবে না! অয়নের মাথা ব্যাথা করছে"
"আংকেল, অয়নের তো এক মাস পরে পরীক্ষা। না পড়লে পিছে পরে যাবে তো! আচ্ছা, আপনি চিন্তা কইরেন না! আমি অয়নের জন্য মাথা ব্যাথার ট্যাবলেট নিয়ে আসছি। মাথা ব্যাথা সেরে যাবে।"
"আচ্ছা বাবা দেখ! তোমার ইচ্ছা।" বলে আংকেল ফোন কেটে দিলেন।
টিউশনির প্রথম শুক্রবারে যেদিন বৃষ্টিতে ভিজে অয়নকে পড়াতে গিয়েছিলাম। আন্টি আমার দিকে এমনভাবে থাকালেন যেন মনেহল উনি বহুবছর আগে বিলীন হয়ে যাওয়া ডাইনোসার কে দেখছেন। ভ্র কুঁচকে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
"আরে! আরে! শুক্রবারে তুমি আসলা কেন? এই বৃষ্টিতে ভিজে না আসলেও তো পারতা।"
"আন্টি, থামুন তো! অয়ন তো আমার ছোট ভাইয়েরই মতোই। ওর ভালো রেজাল্ট করানোই তো আমার দায়িত্ব। আপনি শুধু শুধু টেনশন কইরেন না।"
আন্টি শুধু বাংলা ছবির আনোয়ারা বেগমের মত থাকিয়ে থাকলেন আমার দিকে। দেখে মনে হলো কৃতজ্ঞতায় উনার মুখ আটখানা। অয়ন তখন গেম খেলতে ছিল।আমাকে দেখেই সে আঁতকে উঠল। যেন এইমাত্র কেউ ওর কলিজায় বুলেট মেরেছে।
আজকে শুক্রবার! প্রতিদিনের মত আমি অয়নকে পড়াচ্ছি। হঠাৎ আন্টি আমার পাসে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে বললেন,
"বাবা, আগামী সপ্তাহ তোমার আসতে হবে না! আমরা অয়নকে নিয়ে তার নানু বাড়ী যাব "
"আরে আন্টি কী বলেন এইসব?"
"হ্যা বাবা, অয়নের নানু খুব অসুস্থ। আর ওখানেও অনেকদিন ধরে যাই না"
"আচ্ছ যান! তবে অয়নকে রেখে যান! আমি প্রতিদিন আমার মেস থেকে খাবার এনে দিব আর ওকে মনযোগ দিয়ে অনেক টাইম পড়াব।"
" নাহ! বাবা। তোমার এতে কষ্ট হবে আর অয়ন ছোট মানুষ থাকতে পারবে না"
আমি আর কিছু বললাম না। তবে অনেক কষ্ট হচ্ছিল। অয়নকে অনেকদিন পড়াতে পারবো না।
একটু পর আংকেল এসে আমার কাছে এক হাজার টাকার ছয়টা চকচকে নোট ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
"বাবা, কিছু মনেকর না। এগুলো রাখো। সামনের মাস থেকে আরো বাড়িয়ে দেবো। আর অয়নের প্রতি তোমার এত্ত ভালোবাসা দেখে সত্যিই আমি অবাক। ভালো থেকো। কয়দিন পর আবার দেখা হবে। নিজের খেয়াল রেখো।"
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম "আচ্ছা, আপনারাও ভালো থাইকেন। যত সম্ভব তাড়াতাড়ি ফিইরেন। আমি পথচেয়ে থাকব।"
হয়ত সামনের মাস থেকে আংকেল আমার বেতন আরো বাড়িয়ে দেবেন। তবে আমার একটাই ভয়! একটাই চিন্তা! ওনারা যদি কখনো জেনে যান এই গরমে উনাদের বাসায় লাগানো ইয়ারকন্ডিশনের বাতাস খাওয়ার জন্য আমি একদিনও টিউশনি মিস দেই না! অয়নকে এত্ত কেয়ার করি। তখন আমার কী হবে?
আমার খুব ভয় হচ্ছে।
হাসান মাহমুদ ইমন
Sahin, Santo, Shuvo, Hasibul hasan, Akash, Atif, Onik and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum