- Sonchitaধুমকেতু
- Posts : 15
স্বর্ণমুদ্রা : 1313
মর্যাদা : 10
Join date : 2021-06-06
তিনটি ভৌতিক গল্প
Sun Jun 06, 2021 12:44 am
১.
'বাহ, নেকলেসটাতো বেশ সুন্দর। কোথা থেকে কিনলে?'
'কিনি নি। আমার মায়ের নেকলেস এটা।'
'ওহ আচ্ছা। খুব সুন্দর, অসাধারণ।'
প্রশংসা করতে করতে অর্পার গলার নেকলেসটার দিকে তাকিয়ে থাকে রুনা। এরকম একটা নেকলেস কেনার খুব শখ ছিলো তার। বোঝাই যাচ্ছে অর্পা নেকলেসটা বিক্রি করবে না, মৃত মায়ের শেষ স্মৃতিচিহ্ন কেই বা বিক্রি করতে চায়? তবুও এই নেকলেসটা তার চাই, যে কোনো ভাবেই হোক।
পার্টি থেকে ফেরার সময় রুনা অর্পাকে জড়িয়ে ধরে বললো, 'যাই এখন। অনেক সুন্দর একটা পার্টি দিলে। অনেক এনজয় করলাম।' অর্পা টেরও পেল না, এই ফাঁকেই রুনা তার গলা থেকে নেকলেসটা খুলে লুকিয়ে ফেলেছে।
নিজের ঘরে এসে নেকলেসটা নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো রুনা। কি অদ্ভুত সুন্দর নেকলেসটা, এমন সুন্দর এক নেকলেস যে এখন কেবল তার সেটা ভাবতেই বুকটা আনন্দে ভরে গেলো। এই নেকলেসটা এখন আর সে কিছুতেই হাতছাড়া করবে না। নেকলেসটা বিছানার পাশে রেখে রুনা শুয়ে পড়লো, সকালে উঠে সূর্যের চকচকে আলোয় আবার সে নেকলেসটাকে দেখতে চায়।
মাঝরাতে রুনার ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে উঠেই বিছানার পাশে তাকালো নেকলেসটা দেখার জন্য, দেখলো ওটা জায়গামতোই আছে। কিন্তু ঘরে কেমন একটা পঁচা, বাজে গন্ধ। গা গুলিয়ে উঠলো রুনার, ভাবলো ঘরের কোন কোণে মনে হয় ইঁদুর মরে পড়ে আছে। সকালে উঠে সাফ করতে হবে, এখন খুব ঘুম পাচ্ছে ওর। ঘুমানোর চেষ্টাতেই বাম পাশ থেকে ডানপাশে ফিরলো সে, কিন্তু যা দেখলো তাতে ভয়ে জমে গেল।
ও দেখতে পেল এক বুড়ি মহিলা মশারিতে ভর দিয়ে ঝুঁকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার মুখের মাংস যেন পঁচে গলে পড়ছে, চোখ দুটো টকটকে লাল। সে রাগী গলায় রুনাকে বললো, 'তোর এতো লোভ? আমার মেয়ের কাছ থেকে আমার দেয়া জিনিস চুরি করেছিস। তোকে আমি ছাড়বো না।' রুনা কিছুই বলতে পারলো না, ভয়ে তার সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগলো।
পরেরদিন অর্পা তার স্বামী সাহেদের কাছে গিয়ে হাসিমুখে বলতে লাগলো,'জানো, কাল রাতে মা এসেছিলেন। পার্টিতে যে নেকলেসটা হারিয়ে ফেলেছিলাম, সেটা ফেরতে দিতে।' সাহেদ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অর্পার পাগলামিটা আবার বেড়েছে। ওকে আবার সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
ওদিকে রুনা আহমেদের বাসায় ততক্ষণে কান্নার রোল পড়ে গেছে। কাল রাতে মারা গেছে রুনা। ডাক্তার সন্দেহ করছেন স্ট্রোক, নয়তো হার্ট অ্যাটাক। তবে সবাই বলাবলি করতে লাগলো, সকালে যখন রুনাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়, তখন নাকি তার চোখদুটো সম্পূর্ণ খোলা ছিলো, আর মুখে ছিলো ভয়ানক আতংকের ছাপ। যেন কাল রাতে ভয়ঙকর কিছু একটা দেখে প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলো সে।
২.
কয়েকদিন ধরেই আনিস সাহেব বাসার ছাদে মার্বেল খেলার আওয়াজ পান। আজও পাচ্ছেন। আজ আর তিনি কৌতূহল সামলাতে পারলেন না, সিঁড়ি বেয়ে চুপিচুপি ছাদে উঠে গেলেন কে ছাদে আছে দেখার জন্য।
দেখলেন দুটো বাচ্চা ছেলে মার্বেল খেলছে, এদের তিনি আগে কখনো দেখেননি। এরাই তবে প্রতিদিন বিরক্ত করে? আজ তবে এদের একটা শিক্ষা দিতে হবে।
আনিস সাহেব আড়াল থেকে বেরিয়ে ধমক দিয়ে বললেন, 'এই, কি হচ্ছে? এটা মার্বেল খেলার সময়?'
ছেলে দুটো তাকে দেখে ভয়েই আধমরা। একজন কোনোরকমে আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁপতে কাঁপতে বললো, 'ভাইয়া, তুই না বলেছিলি এ বাসায় কেউ থাকে না? তাহলে এ লোকটা এলো কোথা থেকে?'
আনিস সাহেব রাগী গলায় বললেন, 'ভূত হয়ে এসেছি। আরেকদিন যদি তোদের এখানে দেখেছি তো ঘাড় মটকে রক্ত চুষে খাব। যা, পালা এখন।' বলতে না বলতেই ছেলে দুটো দৌড়ে এ বাড়ির লাগোয়া পাশের বাড়ির ছাদে লাফিয়ে চলে গেল। সেখান থেকে এক দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে।
আনিস সাহেব সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় ভাবতে লাগলেন, তিনি যখন জীবিত ছিলেন তখনও বাচ্চারা তাকে ভীষণ জ্বালাতো। মরার পরও এদের জ্বালাতন থেকে রেহাই পাওয়া গেল না।
চলবে
Raihan khan, Tanusri roi, Badol hasan, Mr faruk, Rokeya hoq, Asha islam, Abir nill and লেখাটি পছন্দ করেছে
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum