- arifনবাগত
- Posts : 5
স্বর্ণমুদ্রা : 1350
মর্যাদা : 20
Join date : 2021-05-21
আধুনিক রম্য গল্প
Fri May 21, 2021 4:58 pm
পুকিং পুকিং শব্দে একে একে অনেক মেসেজ আসতে থাকে মেসেঞ্জারে। মোবাইল না খুলেই বলে দেয়া যায় সব মেসেজ মিতুর। সব জায়গায় তারাহুড়ো। মেয়েটা একটুও স্থির না। ইথার কণার মত ইতস্তত দৌড়ায়। এতক্ষণে ভাবসম্প্রসারণ লিখে ফেলেছে। দেরী করলে রচনা লিখে ফেলবে। মোবাইল নিতে যাব এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল। পার্সেল এসেছে আমার নামে। খুলে দেখি হালের ট্রেন্ড ইলিয়েনের পাঞ্জাবি, মিতু'ই পাঠিয়েছে। সাথে ছোট্ট চিরকুট, "আমাল নিব্বার জন্য "
এতক্ষণে বুঝলাম এত মেসেজের কারণ।
- থেংকিউ ফর দা গিফ্ট বাবু
- আর থেংকিউ দেয়া লাগবে না। এটা পড়ে শিরিষতলায় চলে এসো। আমি অপেক্ষায় থাকবো
- এক্ষুণি আসছি বাবু
এটা আমার প্রথম প্রেম। প্রেমের বয়স মাত্র সাতদিন। অনেক কষ্টে ও দেখা করতে রাজি হয়েছে। আজ আমাদের প্রথম দেখা।
আমি উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছি। এডমিশনের প্রিপারেশন চলছে। কিন্তু করোনা এসে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল। একে একে সব বন্ধু গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে নিল। এখন জাতি আমায় মেনে নিচ্ছে না। তাই এক বন্ধুর পরামর্শে টিন্ডারে আইডি খুলে বসা। লাইটরুম দিয়ে ঘষে মেজে মাঞ্জামারা একটা ফটো সাঁটিয়ে দিলাম। তারপর রাইট সোয়াইপ করতে করতে বুড়ো আঙুলের সিক্সপ্যাক হবে দশা এমন সময় পিক্সআর্টের রেইনবো ইফেক্ট সাথে ফিউম ফিল্টার মারা এক নিব্বির সাথে ম্যাচ। তারপর তথৈবচ...
মিতুর ডাক্তারি পড়ার শখ। কিন্তু এবার টেকা হয়নি। তাই প্রাইভেটে পড়বে সিদ্ধান্ত নিল। ওদিকে আমার টার্গেট ইঞ্জিনিয়ারিং। কিন্তু পড়ালেখা মোটেই হচ্ছে না। তাই ঠিক করেছি আমরা একে অপরকে ভালবাসা দিয়ে পড়ার টেবিলে বসাব। ও আমার নিব্বি আমি ওর নিব্বা
মাত্র সাতদিনের প্রেমে গত পাঁচদিন আমায় কোন না কোন গিফ্ট পাঠিয়েছে। আমি কিছু দিতে চাইলে ও রাগ করে বসে। ওর বাসার ঠিকানাই দিতে চায় না। তাই কিছু দেয়া হয়নি।
আজ ওর জন্য টকটকে লাল গোলাপ নিলাম। শিরিষতলায় গিয়ে দেখি এক অপ্সরী বসা। চিনতে এতটুকু ভুল হয়নি আমার নিব্বিটাকে। বন্ধুরা ওকে দেখলে জ্বলেপুড়ে ছাড়খার হবে শিওর। গোলাপটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিতে হাত অবশ হয়ে যাচ্ছিল। ও খপ করে আমার হাত থেকে গোলাপ নিয়ে হি হি করে হাসতে লাগল। গোলাপ পেয়ে মেয়েটা কি যে খুশি যেন আমি তাকে কোন অমূল্য উপহার দিয়েছি।
আমরা অনেক্ষণ ধরে আড্ডা দিলাম। ও আবার বাকি নিব্বিদের মত বোরিং না। বাবু খাইছো? আমাকে মোটা লাগছে? আজ কি হয়েছে জানো টাইপ টিপিক্যাল প্রশ্ন করে না।
আমাদের আলোচনায় ছিল আল পাচিনো, আইজ্যাক আসিমভ, গঙ্গা থেকে ভলগা, নূহ ক্যাম্প থেকে বার্নাবু, সুপারনোভা, ডোয়ার্ফ স্টার, কার্ল মার্ক্স সহ তাবৎ বিচিত্র বিষয়। আমার পছন্দের সব টপিকই ওর সাথে অদ্ভুত মিল।
এসব আলোচনা করতে করতে ও আমার হাতে একটা বাক্স হাতে ধরিয়ে দিল। খুলে দেখি আইফোন ১২ প্রো। গত পরশু টিউশনি থেকে ফেরার পথে লেগুনায় পকেটমারে মোবাইল নিয়ে যায়। একথা তাকে বলতেই সে আমাকে নতুন কিনতে মানা করে। বলে ওর পুরনো একটা ফোন আছে। কিন্তু তাই বলে এভাবে চমকে দেবে ভাবতে পারিনি। কত পূণ্যের ফলে এরকম একটা গফ পাওয়া যায় ভাবা যায়?
আড্ডা দিতে দিতে কখন যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধা হয়ে এল খেয়ালি নেই। এদিকে বেশ খিদেও পেয়েছে।
খেতে আসলাম এক কাবাব হাউজে। ভরপুর খাওয়া দাওয়া হল। একেতো আড্ডাবাজ তারপর ভোজন রসিক এমন গফ পেয়ে আমি যারপরনাই খুশি। খোদার কাছে শুকরিয়া জানালাম এমন গফ যেন আল্লাহ সবাইকে দেয়।
খাওয়ার বিলটা আমাকে কোন ভাবেই দিতে দিলই না বরং আমি ওকে পৌঁছে দেয়ার বদলে ও আমাকে পৌঁছে দেয়ার জন্য সিএনজিতে ওঠাল। মাঝপথে আমার প্রিয় কোণ আইসক্রিম কিনে দিল। খেতে খেতে ওর কাঁধে মাথা রেখে গল্প করছি। কখন যে ঘুম আসল টেরই পেলাম না।
ঘুম ভেঙ্গে দেখি হাসপাতালে শুয়ে আছি। বাম চোখে ব্যান্ডেজ। সামনে একজন ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছে। উনি আমার চোখ খুলতে দেখে বললেন "খুব বেঁচে গিয়েছেন এবার। একটা চোখ আর কিডনি নিয়েছে খালি"। অপেক্ষা করুন এক্ষুনি পুলিশ আসবে।
ডাক্তারের কথা শুনে বাঁ পাশের কোমরে হাত দিয়ে দেখি ব্যান্ডেজ করা। বাংলা ছবির মতো মনে হলো স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেলো নাকি ডাক্তার কি বলে এসব!
একটুপর পুলিশ এগিয়ে এসে বললো "আপনি কি মি.বন্ধন?" মাথা উপর-নিচে করে "হ্যাঁ" জানলাম। উনি বললেন আপনার সাথে কি ঘটেছিল সব বিস্তারিত ভাবে বলুন তো শুনি। পুলিশ কে সব ঘটনা খুলে বললাম। উনি শুনার পর বললেন " হায়রে বলদা বেডা আজকালকার দিনে ৭ দিন প্রেম করে এতো টাকা কোনো মেয়ে খরচ করে বলদ কোথাকার! শহরে ইদানীং একটা চক্র নেমেছে। এদের কাজ হচ্ছে স্বাস্থ্যবান মানুষদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা। আগে থেকেই অনলাইনে নজরদারীতে রেখে তাদের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে বাগে নিয়ে আসা। তারপর প্রেমের ফাঁদে ফেলে সুযোগ বুঝে কিডনি আর চোখ চুরি করা। গত তিন মাসে এমন ৮ টা কেস ঘটেছে। আপনি ৯ নাম্বার। সবার একটা করে কিডনি আর চোখ অথবা যেকোন একটা মানে যেটা ভাল সেটা নিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। আপনাকে রাতে রাস্তায় পাওয়া গিয়েছে। সেখান থেকে টহলদার পুলিশ তুলে এনে এখানে ভর্তি করে।
সব শুনে দুঃখে বাইংমাছ হয়ে গেলাম। বাসায় জানানোর জন্য পকেটে হাত দিয়ে দেখি আইফোন নাই। ডাক্তার কে ডাক দিয়ে বললাম " ডাক্তার আমার আরেকটা কিডনি বের করে নেন। এই জীবন রাখমু না"।
এইভাবে, আইফোনের বদলে কিডনি, জামা কাপড়ের বদলে চোখ না খুঁইয়ে সেগুলোর যত্ন নিন। জীবিত অবস্থায় ব্যবহার শেষে মরার পর দান করে আরেকটা জীবন বাঁচাতে বা আলো ফোটাতে পারেন অনায়াসে। মৃত্যুর পর চক্ষুদান মানে মরণোত্তর চক্ষুদান বিষয়ক যাবতীয় প্রশ্ন উত্তর এবং দান করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন কমেন্টে দেয়া লিংকে।
colected
এতক্ষণে বুঝলাম এত মেসেজের কারণ।
- থেংকিউ ফর দা গিফ্ট বাবু
- আর থেংকিউ দেয়া লাগবে না। এটা পড়ে শিরিষতলায় চলে এসো। আমি অপেক্ষায় থাকবো
- এক্ষুণি আসছি বাবু
এটা আমার প্রথম প্রেম। প্রেমের বয়স মাত্র সাতদিন। অনেক কষ্টে ও দেখা করতে রাজি হয়েছে। আজ আমাদের প্রথম দেখা।
আমি উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেছি। এডমিশনের প্রিপারেশন চলছে। কিন্তু করোনা এসে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল। একে একে সব বন্ধু গার্লফ্রেন্ড জুটিয়ে নিল। এখন জাতি আমায় মেনে নিচ্ছে না। তাই এক বন্ধুর পরামর্শে টিন্ডারে আইডি খুলে বসা। লাইটরুম দিয়ে ঘষে মেজে মাঞ্জামারা একটা ফটো সাঁটিয়ে দিলাম। তারপর রাইট সোয়াইপ করতে করতে বুড়ো আঙুলের সিক্সপ্যাক হবে দশা এমন সময় পিক্সআর্টের রেইনবো ইফেক্ট সাথে ফিউম ফিল্টার মারা এক নিব্বির সাথে ম্যাচ। তারপর তথৈবচ...
মিতুর ডাক্তারি পড়ার শখ। কিন্তু এবার টেকা হয়নি। তাই প্রাইভেটে পড়বে সিদ্ধান্ত নিল। ওদিকে আমার টার্গেট ইঞ্জিনিয়ারিং। কিন্তু পড়ালেখা মোটেই হচ্ছে না। তাই ঠিক করেছি আমরা একে অপরকে ভালবাসা দিয়ে পড়ার টেবিলে বসাব। ও আমার নিব্বি আমি ওর নিব্বা
মাত্র সাতদিনের প্রেমে গত পাঁচদিন আমায় কোন না কোন গিফ্ট পাঠিয়েছে। আমি কিছু দিতে চাইলে ও রাগ করে বসে। ওর বাসার ঠিকানাই দিতে চায় না। তাই কিছু দেয়া হয়নি।
আজ ওর জন্য টকটকে লাল গোলাপ নিলাম। শিরিষতলায় গিয়ে দেখি এক অপ্সরী বসা। চিনতে এতটুকু ভুল হয়নি আমার নিব্বিটাকে। বন্ধুরা ওকে দেখলে জ্বলেপুড়ে ছাড়খার হবে শিওর। গোলাপটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিতে হাত অবশ হয়ে যাচ্ছিল। ও খপ করে আমার হাত থেকে গোলাপ নিয়ে হি হি করে হাসতে লাগল। গোলাপ পেয়ে মেয়েটা কি যে খুশি যেন আমি তাকে কোন অমূল্য উপহার দিয়েছি।
আমরা অনেক্ষণ ধরে আড্ডা দিলাম। ও আবার বাকি নিব্বিদের মত বোরিং না। বাবু খাইছো? আমাকে মোটা লাগছে? আজ কি হয়েছে জানো টাইপ টিপিক্যাল প্রশ্ন করে না।
আমাদের আলোচনায় ছিল আল পাচিনো, আইজ্যাক আসিমভ, গঙ্গা থেকে ভলগা, নূহ ক্যাম্প থেকে বার্নাবু, সুপারনোভা, ডোয়ার্ফ স্টার, কার্ল মার্ক্স সহ তাবৎ বিচিত্র বিষয়। আমার পছন্দের সব টপিকই ওর সাথে অদ্ভুত মিল।
এসব আলোচনা করতে করতে ও আমার হাতে একটা বাক্স হাতে ধরিয়ে দিল। খুলে দেখি আইফোন ১২ প্রো। গত পরশু টিউশনি থেকে ফেরার পথে লেগুনায় পকেটমারে মোবাইল নিয়ে যায়। একথা তাকে বলতেই সে আমাকে নতুন কিনতে মানা করে। বলে ওর পুরনো একটা ফোন আছে। কিন্তু তাই বলে এভাবে চমকে দেবে ভাবতে পারিনি। কত পূণ্যের ফলে এরকম একটা গফ পাওয়া যায় ভাবা যায়?
আড্ডা দিতে দিতে কখন যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধা হয়ে এল খেয়ালি নেই। এদিকে বেশ খিদেও পেয়েছে।
খেতে আসলাম এক কাবাব হাউজে। ভরপুর খাওয়া দাওয়া হল। একেতো আড্ডাবাজ তারপর ভোজন রসিক এমন গফ পেয়ে আমি যারপরনাই খুশি। খোদার কাছে শুকরিয়া জানালাম এমন গফ যেন আল্লাহ সবাইকে দেয়।
খাওয়ার বিলটা আমাকে কোন ভাবেই দিতে দিলই না বরং আমি ওকে পৌঁছে দেয়ার বদলে ও আমাকে পৌঁছে দেয়ার জন্য সিএনজিতে ওঠাল। মাঝপথে আমার প্রিয় কোণ আইসক্রিম কিনে দিল। খেতে খেতে ওর কাঁধে মাথা রেখে গল্প করছি। কখন যে ঘুম আসল টেরই পেলাম না।
ঘুম ভেঙ্গে দেখি হাসপাতালে শুয়ে আছি। বাম চোখে ব্যান্ডেজ। সামনে একজন ডাক্তার দাঁড়িয়ে আছে। উনি আমার চোখ খুলতে দেখে বললেন "খুব বেঁচে গিয়েছেন এবার। একটা চোখ আর কিডনি নিয়েছে খালি"। অপেক্ষা করুন এক্ষুনি পুলিশ আসবে।
ডাক্তারের কথা শুনে বাঁ পাশের কোমরে হাত দিয়ে দেখি ব্যান্ডেজ করা। বাংলা ছবির মতো মনে হলো স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে গেলো নাকি ডাক্তার কি বলে এসব!
একটুপর পুলিশ এগিয়ে এসে বললো "আপনি কি মি.বন্ধন?" মাথা উপর-নিচে করে "হ্যাঁ" জানলাম। উনি বললেন আপনার সাথে কি ঘটেছিল সব বিস্তারিত ভাবে বলুন তো শুনি। পুলিশ কে সব ঘটনা খুলে বললাম। উনি শুনার পর বললেন " হায়রে বলদা বেডা আজকালকার দিনে ৭ দিন প্রেম করে এতো টাকা কোনো মেয়ে খরচ করে বলদ কোথাকার! শহরে ইদানীং একটা চক্র নেমেছে। এদের কাজ হচ্ছে স্বাস্থ্যবান মানুষদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা। আগে থেকেই অনলাইনে নজরদারীতে রেখে তাদের পছন্দ অপছন্দ নিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে বাগে নিয়ে আসা। তারপর প্রেমের ফাঁদে ফেলে সুযোগ বুঝে কিডনি আর চোখ চুরি করা। গত তিন মাসে এমন ৮ টা কেস ঘটেছে। আপনি ৯ নাম্বার। সবার একটা করে কিডনি আর চোখ অথবা যেকোন একটা মানে যেটা ভাল সেটা নিয়ে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। আপনাকে রাতে রাস্তায় পাওয়া গিয়েছে। সেখান থেকে টহলদার পুলিশ তুলে এনে এখানে ভর্তি করে।
সব শুনে দুঃখে বাইংমাছ হয়ে গেলাম। বাসায় জানানোর জন্য পকেটে হাত দিয়ে দেখি আইফোন নাই। ডাক্তার কে ডাক দিয়ে বললাম " ডাক্তার আমার আরেকটা কিডনি বের করে নেন। এই জীবন রাখমু না"।
এইভাবে, আইফোনের বদলে কিডনি, জামা কাপড়ের বদলে চোখ না খুঁইয়ে সেগুলোর যত্ন নিন। জীবিত অবস্থায় ব্যবহার শেষে মরার পর দান করে আরেকটা জীবন বাঁচাতে বা আলো ফোটাতে পারেন অনায়াসে। মৃত্যুর পর চক্ষুদান মানে মরণোত্তর চক্ষুদান বিষয়ক যাবতীয় প্রশ্ন উত্তর এবং দান করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে ক্লিক করুন কমেন্টে দেয়া লিংকে।
colected
arafat alam, Towhid Sadik, Fatbot, noyon, Sahin, Santo, Shuvo and লেখাটি পছন্দ করেছে
Abdur rahim পছন্দ করেনি
Permissions in this forum:
You cannot reply to topics in this forum